সমকামিতা নিয়ে যুক্তিবাদি বনাম লিব্যারালদের যুদ্ধ এখন একদম সামনাসামনি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রবীর বাবু এই ইস্যুটা উস্কেছেন অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এইদিন আসবে সেটা জানতাম। কারন আমাদের লাইফ স্টাইল এবং যৌন নির্বাচনের অধিকাংশ কারন এখনো আমাদের জানা নেই অথবা এই জাতীয় প্রশ্নগুলি বিজ্ঞানের গণ্ডীর বাইরে কারন পপারিয়ান ফলসিফিকেশনে এসব প্রশ্নের টেস্টেবিলিটি নেই । গত দুই দশকে সমকামিতার ওপর যত বৈজ্ঞানিক গবেষনা হয়েছে, তার অধিকাংশই আজ ভুল বলে প্রমানিত। কেও গে হয়ে জন্মায় না -আবার গে হওয়াটা রোগ ও না যে সারানো যাবে। ফলে যুক্তি, বিজ্ঞান দিয়ে সমকামিতা ভুল না ঠিক-এগুলো কোনদিন নির্নয় করা যাবে না । সমকামিতা স্বাভাবিক যৌনতা এই নিয়ে বিজ্ঞানে দ্বিমত নেই । সেই অব্দি ঠিক ছিল। কিন্ত স্বাভাবিক যৌনতা মানেই সমাজে গ্রহণযোগ্য-এই যুক্তি মানতে গেলে, বাকী অনেক কিছু যৌনতা যা স্বাভাবিক-যেমন পরকীয়া, পিডোফেলিয়া-ইত্যাদি সব কছুই বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা বলে পরিচিত-সেসব কিছুও গ্রহণযোগ্য হয়। সুতরাং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক যৌনতা, তাই সমকামিতা গ্রহণযোগ্য, এই দৃষ্টিভংগী নিলে তা যুক্তিতে টিকবে না ।
তাহলে কেন আমরা সমকামিতাকে সমাজে স্বাভাবিক যৌন আচরন বলে গ্রহণ করবো-আর পিডোফেলিয়া হবে পানিশেবল অফেন্স ? খুব স্বাভাবিক ডিমার্কেশন হবে, এই ধরনের যৌন আচরন সমাজের জন্য ক্ষতিকর কি না । দুটো ব্যপা্রে ফ্যক্ট চেক করাই যায়। (১) সমকামিদের মধ্যে কি যৌন রোগ বেশী? (২) সমকামী দম্পতিরা কি সন্তান মানুষ করতে ব্যর্থ ? (১) এবং (২) এর ক্ষেত্রে উত্তর কনক্লুসিভ না । সন্তান মানুষের ক্ষেত্রে লেসবিয়ান দম্পতিরা সবার থেকেই এগিয়ে। মোদ্দা কথা সমকামিতা সমাজে ক্ষতি করে এমন অনেক অভিযোগ, স্টাডি ইত্যাদি রক্ষণশীল গ্রুপ গুলো করেছে-কিন্ত কোনটার রেজাল্ট এখনো পর্যন্ত প্রশ্নাতীত ভাবে সঠিক না ।
ফলে যেহেতু সমকামিতা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান এবং জৈববিজ্ঞানের গবেষনাগুলি প্রশ্নাতীত না এবং প্রায়শই কয়েক বছরের মধ্যে ভুল প্রমান হয়ে যাচ্ছে-বাস্তব সম্মত অবস্থান হচ্ছে, সমাজে সমকামিতাকে স্বীকার করে নেওয়া-কারন ঐতিহাসিক ভাবে সব দেশেই সমকামিতা ছিল। আরো সঠিক ভাবে বললে প্রাচীন ভারতীয়, গ্রীস বা রোমান সম্প্রদায় ছিল উভকামী। রোমান মিলিটারী যুদ্ধে বাইরে থাকলে, সেনা ছাউনিতে ছিল সমকামী। আবার যুদ্ধ শেষে বৌএর কাছে ফিরত দু দশটা যৌন দাশদাশী নিয়ে। এমন কোন সভ্যতা জানা নেই যেখানে সমকামিতা বা উভকামীতা ছিল না । এসব নিয়ে প্যাগান সমাজে লোকে মাথা ঘামাত না । সমকামিতা যে অপরাধ – সেটা মূলত এসেছে খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ইত্যাদি আব্রাহামিক ধর্মগুলির মধ্যে বিশুদ্ধ যৌনতার আইন আনতে। প্যাগান সংস্কৃতিতে সমকামিতাকে কখনোই অস্বাভাবিক আচরন বলে ধরাই হত না । হমোফোবিয়া, পরকীয়ার বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা, গণিকাদের সামাজিক অবস্থানের অবক্ষয়-এসব প্যাগানিজম খারাপ প্রমান করতে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদি খ্রীষ্ঠান এবং ইসলামি সভ্যতার দান। রক্ষণশীলতা বলতে আজকে যেটা বোঝায় সেটা শ্রেফ জুডিও-খ্রীষ্ঠান-ইসলামিক সংস্কৃতি। প্যাগানদের থেকে আমরা ভাল , আমরা বিশুদ্ধ, প্যাগানিজম পাপ-ইত্যাদি প্রমান করতে প্যাগানদের যৌন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যতসব আইন এবং অপসংস্কার চালু হয়-তার মধ্যে হমোফোবিয়াও ছিল।
সুতরাং সমকামিতার পক্ষে এবং বিপক্ষে বিজ্ঞান ও যুক্তি ইনকনক্লুসিভ হলেও ইতিহাস খুব পরস্কার যে ইহা ছিল মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। খ্রীষ্ঠান এবং ইসলাম ধর্ম – ধর্মীয় ক্লাব কালচার চালু করতে-এসব নিশিদ্ধ বলে ঘোষনা করে যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মোহনবাগানের সমর্থক তাই ইলিশ খাবে না এর বেশী কিছু না ।
প্রবীর বাবুদের যুক্তিবাদি সংগঠনের অবস্থান নিয়ে আমার কিছু বলার নেই । উনার লেখাপত্র ছোটবেলায় পড়েছি। তখন ভালোই লাগত। বর্তমানে সমকামিতা, সাম্যবাদ, মার্ক্সবাদ ইত্যাদি নিয়ে উনার লেখা বা ভাষন শুনে মনে হয়েছে বিজ্ঞান এবং দর্শনে উনার প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও নেই । আর উনার চেল্যাদের সোশালমিডিয়াতে দেখে মনে হচ্ছে এরা হিন্দু হনু, ইসলামিক ছাগুদের তৃতীয় অবতার -একই রকম অশিক্ষিত এবং অসহিষ্ণু। এই ধরনের অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করার দ্বায়িত্ব কেও কেও কেন নিচ্ছে সেটাও পরিস্কার না । তবে ইতিহাস নির্মম । খারাপ লাগছে এইভেবে, ইতিহাসে প্রবীর বাবুর স্থান হবে জোকার নায়েকের সাথে-ভুলভাল অপবিজ্ঞানের প্রচারক হিসাবে।
আমি একটা জিনিস বুঝলাম না. প্রবীর ঘোষের লোকজন বলছে যে সমকামটা ৩৭৭ ধারার মধ্যে পরে না কারণ সমকামীদের মধ্যে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে সেক্স সম্ভব নয়. তাহলে সমকামিতা অপ্রাকৃতিক সেক্স নয়. তাহলে এটা প্রাকৃতিক বলে ওনারা স্বীকার করছেন. আবার নিজেদের সাইট ওনারা দেখছেন যে সমকামিতা disfobiya অর্থাৎ মানসিক রোগ. তো ওনারা তো নিজেই স্ববিরোধী.
একটা আরো মজার ব্যাপার. লিঙ্গ প্রবেশ কোথায় হবে? যোনিতে না পাযুতে না মুখে? কোনটা অপ্রাকৃতিক?
সমকামিতাকে সমর্থন করতেন অভিজিৎ রায়। প্রবীরদা তার বিরোধিতা করাতেই সবচেয়ে বেশি সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একের পর এক লিঙ্ক তুলে সমকামিতাকে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে।
জবাব দিতে কিছু পড়াশুনা করতে হল। তাতে দেখলাম সারা পৃথিবীতে মানসিক রোগ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেস (ISD) ও ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার (DSM)কে মান্যতা দেওয়া হয়।
এর আধুনিকতম ভার্সন হল ICD10 ও DSM5। এতে সমকামিতা ও অন্যান্য জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডারগুলিকে এখনও ‘ডিসফোবিয়া’ ববলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে এবিষয়ে বিজ্ঞানীদের ভিতরও তীব্র মতানৈক্য আছে। ‘ডিসফোবিয়া’ শব্দটির অর্থ নিজ যৌনতা নিয়ে তীব্র অসন্তোষজনিত বিশৃঙ্খলা। অর্থাৎ, স্বাভাবিক নয়।
আচ্ছা যদি ভবিষ্যতে একে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রূপে গণ্য করা হয় তাহলে কী হবে?
তখন একজন যুক্তিবাদী হিসেবে মেনে নেব। কিন্তু, সমকাম, উভকাম, পশুকাম নিয়েই যাদের দিন কাটে, সর্বক্ষণ যৌনতার চিন্তাকারী এই মানুষরা লম্পট হবেই। এবং এদের দিয়ে সাম্যের আন্দোলন কোনও দিনই হবে না- সেকথা আমরা অস্বীকার করতে পারি কি? সবচেয়ে মজার বিষয় সাম্যকামী প্রবীর ঘোষ অভিজিৎ রায়ের সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলেছেন তা হল, তিনি ছিলেন শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সমর্থক।
অর্থাৎ সমাজে হুজুর-মজুর সম্পর্ক থাকবেই এবং শক্তিমানরা লুন্ঠন চালিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
একবার, শোষণকে স্বাভাবিক বলে মনে করলে তার প্রতিরোধ অর্থহীন হয়ে পড়ে।
অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ভারত ও বাংলাদেশে গড়ে উঠতে থাকা সাম্যবাদী আন্দোলনের পক্ষে ধ্বংসাত্মক হতে পারে বুঝতে পেরেই প্রবীরদা সকলকে সাবধান করতে চেয়েছেন।
সম্ভবত, সমকামীদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা শূণ্যের কোঠায় থাকায় তারা এই বক্তব্যটির কোনও বিরোধই করেননি।
পরিশেষে বলি, প্রবীর ঘোষ কোনও দিনই নিজেকে সর্বজ্ঞ বলে জাহির করে কোনও ‘প্রফেটিক’ সংগঠন চালান না।
তাঁর বই পড়লেই দেখতে পেতেন লেখা আছে, আমি এতো দূর পর্যন্ত ভাবতে পেরেছি, আপনারা আরও এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি কোনও দিনই চান না কালের নিয়মে তিনি মারা গেলেই সংগঠন বন্ধ হয়ে যাক। তাই তিনি আমাদের মতন অতি তুচ্ছ ছেলেদের হাতে ধরে লিখতে শেখান, প্রুফ রিডিং শেখান।
আর কোনও অভিজিৎ যাতে রাস্তায় পড়ে না মরে, সেজন্যই তিনি নিজের অভিজ্ঞতা সবাইকে শেয়ার করে বোঝাতে চেয়েছেন কীভাবে কোটিপতি ধর্মগুরুদের ভান্ডাফোড় করেও বেঁচে থাকতে হয়।
গভীর অনুতাপের বিষয় যে আপনারা তাঁর কথার মর্মোদ্ধার করতে না পেরে তাঁর বাপান্ত করে ছাড়লেন।
আভিজিত রায়,পান্সারে ও দাভলকারের মৌলবাদ বিরোধী,কুসংস্কার বিরোধী অবস্থানকে সন্মান জানিয়েও কিছু কথা আমাদের মনে রাখা দরকার, কোন ধর্মীয় উৎসবে মানুষকে শুভেচ্ছা জানানো অর্থ পরোক্ষভাবে তাকে ধর্ম পালনে উৎসাহিত করা যা একজন যুক্তিবাদীর পক্ষে অনুচিত বলে মনে করি আর গণেশ পূজা বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করাতো চরম বিজ্ঞান বিরোধী ওঁ যুক্তিবাদ বিরোধী কাজ।নাস্তিকতা বা কুসংস্কার বিরোধিতা হল বিশ্বাস(Faith) এবং অবশ্যই প্রগতিশীল কিন্তু যুক্তিবাদ হল একটি সামগ্রিক দর্শন(philosophy) আরও ব্যাপক তার পরিধি।যুক্তিবাদী সাজা যায় না,অবিরত অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠতে হয়।
যারা কীট পতঙ্গ, পশু পাখীর সমকামিতার উদাহরণ দিয়ে তাদের অস্বাভাবিক কাম চাহিদা চরিতার্থ করার আন্দোলন করছে। তাদের সংঙ্গে তান্ত্রিকদের কোনো পার্থক্য নেই। যারা বেষ্যাবৃত্তি আইনি করার আন্দোলনে নেমেছে, তারা তাদের মা বাবা, ভাই বোন সবাইকে তাদের কামের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করবে। ওইসব আন্দোলনকারী আর তন্ত্র সাধনাকারী তান্ত্রিকদের কী কোনো পার্থক্য আছে ? মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশের ইতিহাস থেকে জানা যায় মানুষ কিছু অভ্যাস পশু পাখি জন্তুজানোয়ার থেকে আলাদা করেছে, তার প্রথমটি হল কাম চিন্তা। যারা অবাধ যৌন্যতা, বহুগামীতা, সমকামিতা, অজাচার, বেষ্যাবৃত্তির মত আদিম প্রবৃত্তি বলে আন্দোলন করছে।তার আবার পশু পাখি জন্তুজানোয়ারের মত বা সেই উপরে উল্লেখিত ‘তান্ত্রিক ‘ দের মত মানববলির অধিকার আন্দোলনে নামবেন? নিদেনপক্ষে চুরিডাকাতির (পরুন আদিম ) পক্ষে রাস্তায় নামুন??
আপনারা নামুন বা নামুন ওইসব অপরাধ (ভারত সহ পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে) আপনাদের সমর্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শোষক শাষক শ্রেণীর সাহায্যে চলছে ওইসব নৃশংস মানব সভ্যতা ধংসকারী খুন, ধ্র্ষণ, রাহাযানী। কোথাও প্রাতিষ্ঠানিক র্ধমের নামে, কোথাও চরম প্রশাসনিক উৎশৃখলতার প্রকাশ ঘটছে ওইসব ‘আদিম প্রবৃত্তি’। সিরিয়ার র্ধমান্ধ আই. স. থেকে ভারতে ৭০ বছর বৃদ্ধা র্ধষন; চরম র্ধমান্ধতা থেকে চরমকাম। দুটিই অস্বাভাবিক, অমানুষিক , সভ্যতার পরিপন্থি।
যেখানে র্ধমীয় প্রতিষ্টান অসহায় হয়ে তাদের ঈশ্বরের আস্থা না রেখে সামাজিক আইনের দারস্থ। সেখানে ওইসব ব্যাভিচারী মানুষিক রুগীদের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী আন্দোলনকে ঘোলা করে দিতে ব্যস্ত শোষক শাষক থেকে সভ্যতাকে আদিমতায় নিতে ব্যস্ত প্রগতিশীলরা (স:)।
ওইসব ধান্দাবাজ বিকৃতকামী র্ধমান্ধদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির আন্দোলন চলছে চলবে।
প্রশাসনের সদিচ্ছার প্রতি সন্ধেহ রেখেও ভারতের সাংবিধানিক আইনি ব্যবস্থা বলবত করুন, আইনি বইয়ে আবদ্ধ না রেখে।
প্রশাসনের প্রতি অনুরধ :-
১) বিকৃতকামী র্ধষকদের ফাঁসি দিতে হবে।
২) সমকামী, বিকৃতকামীদের বিরুদ্ধে যে আইন আছে ( ৩৭৭ ধারা ) প্রয়োগ করতে হবে।
৩) বেষ্যাবৃত্তি রোধে যে PITA আইন আছে প্রয়োগ করতে হবে। (হিস্যা নিয়ে চেপে গেলে চলবেনা)
৪) আজাচার, নারীত্ব এ অপমানকর প্রতিষ্টানীক র্ধমাচারন আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করতে হবে।
৫) র্পনোগ্রার্ফী, নগ্নতার বহুগামিতার রদ্ধে যে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
৬) বিভিন্ন মিডিয়ার দায়বদ্ধতার প্রতি সর্তক থাকবে, না থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭) র্ধমান্ধতা, অলৌকিকতা বিরুদ্ধে যে আইন আছে তার প্রয়োগ।
৮) র্ধমীয় শিক্ষার বদলে মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে।
৯) বিজ্ঞান শিক্ষা, যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসার করতে হবে।
১০) প্রশাসনকে মানুষের নূন্যতম অধিকার সমন্ধে জানার ব্যবস্থা করতে হবে।
বহু আইন তৈরি হওয়ার পর ব্যবহার করেনি প্রশাসন। খাতায় রেখে কি লাভ??(ও হিস্যা!!)
যুক্তি-তর্কের বিষয় নিয়ে একটা মানুষের মতের সাথে অন্য আরেক জনের মত পার্থক্য হতে পারে বা থাকতে পারে। বিজ্ঞানে বহু পর্যবেক্ষণ আছে যা নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীও বিভিন্ন মত প্রকাশ করে থাকে। সমকামিতা প্রচীন যুগ থেকে থেকে থাকলেও বিভিন্ন মহলে এটি এখনো বিতর্কিত বিষয় – সামাজিক, নৈতিক, আইনগত এবং আরো অনেক কারণে এটা স্বীকৃত নয় সবার কাছে। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে প্রবীর ঘোষ এবং অভিজিৎ রায়ের মধ্যে মত পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই মত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে এক জনকে অন্য জনের থেকে বড় বা ছোট করে দেখা, অথবা “ইতিহাসে প্রবীর বাবুর স্থান হবে জোকার নায়েকের সাথে-ভুলভাল অপবিজ্ঞানের প্রচারক হিসাবে,” ইত্যাদি এমন সব মন্তব্য করা মুক্তমন কিংবা যুক্তিবাদী মনের পরিচয় কি?
অভিজিৎ ভাইয়ের মৃত্যু অনেক পরিচিত মানুষের অপরিচিত চেহারা সামনে এনেছে …… দুঃখজনক
[যুক্তিপূর্ণ বানানরীতি অনুসরণ করে যৌন পরিচয় বনাম লিঙ্গ পরিচয় — ১ রচনাটি পুনরায় উদ্ধৃত করলাম । বিদেশী শব্দের বানানরীতির ক্ষেত্রে ‘ইয়েস’ কিংবা ‘য়িএস’ অথবা ‘য়িয়েস’ নয়, বরং ‘য়’-কে ‘Y’ সমতুল্য ধ’রে স্বরবর্ণ উচ্চারণে সর্বক্ষেত্রেই স্বরবর্ণ অর্থাত্ ‘ইএস’ বানানরীতি অনুসরণ করা হ’লো (শুধুমাত্র বিদেশী শব্দের ক্ষেত্রে; দেশী, তদ্ভব, তত্সম ও অর্ধতত্সম শব্দাবলির ক্ষেত্রে প্রচলিত বানানরীতিকে শ্রদ্ধা ও অগ্রাধিকার প্রদর্শন করা হয়েছে, বাকিটা ইউনিকোড বাংলা টাইপিঙের মর্জ়ি অনুসারে) । বাংলা বানানে শব্দের শেষে কোন স্বরচিহ্ন না থাকলে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না, এতে হসন্ত (্) ব্যবহারের প্রয়োজন নেই । তবে বিদেশী শব্দের প্রথম ও মধ্যবর্তী কোন বর্ণে স্বরধ্বনি থাকলে সেখানে হসন্ত (্) ব্যবহার করেছি । বাংলায় প্রচলিত বর্ণমালায় বিদেশী শব্দ ও বিজ্ঞান-বিষয়ক শব্দ ব্যবহারে কিছু সমস্যা রয়েছে । এক্ষেত্রে আমি হিন্দি-হিন্দুস্তানি/নাগরীউর্দুতে ব্যবহৃত নাগরীলিপির অনুকরণে, F = ফ়্ (F for ‘Fun’ in English), ইংলিশ V = ভ়্ (V for ‘Van’ in English), ইংলিশ Z = জ়্ (Z for ‘Zoo’ in English), ব্যবহারের পক্ষপাতি । কারণ প্রচলিত বাংলা বর্ণমালার জ্ = ইংলিশ J, এবং ‘ই’ স্বরোচ্চারণের পূর্ববর্তী G (Jam, Giraffe), ফ্ = Ph (Phulpur), ভ্ = Bh (Bharat) । বাংলায় ‘জ়্’ বর্ণটির ব্যবহার পশ্চিম বাংলার কিছু পত্রিকায় দেখেছি । এছাড়া বাংলায় ‘অন্তস্থ ব (ব্)’ বর্ণটি বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে থাকলেও ‘বর্গীয় ব (ব্)’-এর সাথে এর বর্ণগত বিভেদ নেই এবং বাংলা উচ্চারণে বাস্তবে এটি ব্যবহৃত হয় না । কিন্তু বিদেশী শব্দগুলোতে ‘অন্তস্থ ব’ প্রায়শই ব্যবহৃত হওয়ায় বিদেশী শব্দের ‘অন্তস্থ ব’ (নাগরী ‘व’, কিছু কিছু Romance এবং Nordic ভাষায় ‘V’, Cyrillic ‘В’, ﻭ, ইত্যাদি)-কে বাংলায় ‘ভ়্’ দ্বারা চিহ্নিত করেছি ।]
যৌন পরিচয় বনাম লিঙ্গ পরিচয় — ১
সমকামিতার পক্ষে-বিপক্ষে : ভূমিকা
সমকামিতা মানুষের সহজাত স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য কিনা তা দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয় । একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানুষের অভিভাবকের ভূমিকা নিতে পারে না । একটি রাষ্ট্রকে স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তখনই অভিহিত করা যায় যখন এর নাগরিকেরা পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করেন ।
যেসব রাষ্ট্রে সমলিঙ্গ বিয়ের আইনগত স্বীকৃতি চালু রয়েছে সেগুলো হচ্ছে : আর্জেণ্টিনা (Argentina), ব্রেজ়িল (Brazil), কানাডা (Canada), নিউ জ়িল্যাণ্ড্ (New Zealand) (নিয়ু [Niue], দা কুক আইল্যাণ্ড্জ়্ [The Cook Islands] ও টোকেলাউ [Tokelau] ব্যতীত নিউ জ়িল্যাণ্ডে ১৯ অগাস্ট্ ২০১৩ তারিখ থেকে সমলিঙ্গ বিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে), নর্ওএ (Norway), সাউথ আফ়্রিকা (South Africa), উরুগুএ (Uruguay) (উরুগুএ [Uruguay]-তে ১ অগাস্ট্ ২০১৩ তারিখ থেকে সমলিঙ্গ বিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে), ইউরোপিআন ইউনিঅন (European Union, EU)-ভুক্ত দেশগুলোর ভেতর বেল্জিআম (Belgium), ডেন্মার্ক (Denmark) (ফ়্যারো আইল্যাণ্ড্জ়্ [Faroe Islands] ও গ্রিণ্ল্যাণ্ড্ [Greenland] ব্যতীত), ফ়্র্যান্স্ (France), আইস্ল্যাণ্ড্ (Iceland), পোর্টুগ্যাল (Portugal), স্পেইন (Spain), সুইডেন (Sweden), দা নেদার্ল্যাণ্ড্জ়্ (The Netherlands) (আরুবা [Aruba], কুরাসাও [Curaçao] ও সেইণ্ট্ মর্টেন [St. Maarten] ব্যতীত), মেক্সিকো (Mexico)-র অঙ্গরাষ্ট্র ও প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর ভেতর কুইন্তানা রু অঙ্গরাষ্ট্র (State of Quintana Roo) ও মেক্সিকো সিটি ফ়েডারেল ডিস্ট্রিক্ট্ (Mexico City Federal District), এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র (USA)-এর অঙ্গরাষ্ট্র ও প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর ভেতর কানেটিকাট (Connecticut), ডেলাওঅ্যার (Delaware), আইওঅ (Iowa), মেইন (Maine), মেরিল্যাণ্ড্ (Maryland), ম্যাসাচুসেট্স্ (Massachusetts), মিনিসোটা (Minnesota), নিউ হ্যাম্প্শায়ার (New Hampshire), নিউ ইঅর্ক্ (New York), রোড আইল্যাণ্ড্ (Rhode Island), ভ়ার্মণ্ট্ (Vermont), ওঅশিংটন (Washington) অঙ্গরাষ্ট্র (State)-সমূহ ও দা কোকুইল ইণ্ডিঅ্যান ট্রাইব (The Coquille Indian Tribe), দা ডিস্ট্রিক্ট্ অব কলাম্বিআ (The District of Columbia), দা লিট্ল্ ট্র্যাভ়ার্স্ বে ব্যাণ্ড্জ়্ অব ওডাওঅ ইণ্ডিঅ্যান্স্ (The Little Traverse Bay Bands of Odawa Indians) ও দা সুকুআমিশ ট্রাইব (The Suquamish tribe) প্রশাসনসমূহ । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যে আধুনিক সেক্যুলার গণতান্ত্রিক দেশগুলো সমলিঙ্গ বিয়ের সমর্থনে আইন তৈরি করেনি তাদের বিষয়টি এই নয় যে তারা সমকামীদের বিরোধী, বরং উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে সমকামীদের বিরোধিতা করা হয় না । এই দেশগুলোতে বিয়ের আইন তৈরির অর্থ মানে এই নয় যে রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন সংস্কৃতিকে পরিচালিত করছে, বরং এই আইন প্রতিষ্ঠা ও না প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মূলত সম্পদ ও দায়দেনার বণ্টনকেন্দ্রিক । অর্থাত্ সমকামী বিয়ের বিষয়ে আধুনিক পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল মাথাব্যথাটি সমকামী বিয়ে ‘সঠিক নাকি ভুল’ — এটা নয়, বরং মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে উত্তরাধিকার ও তালাকের ক্ষেত্রে সম্পদ বণ্টনের বিষয়ে, দত্তক সন্তানের বিষয়ে, কোন শিশু (সাধারণভাবে যাকে অসমকামী ধরে নেয়া হচ্ছে) সমকামী দম্পতি পরিবারে বড় হওয়ার বিষয়ে, টেস্ট্-টিউব শিশু এবং ভাড়া করা গর্ভধারণের বিষয়ে, ক্লোন-কৃত (Cloned) শিশু ‘সন্তান’ কিনা তার আইনগত ব্যখ্যার সুরাহা হয়নি), ইত্যাদি । আর বিয়ের আইন না থাকা মানে এই নয় যে সেখানে সমকামিতা অবৈধ, বরং ব্রিটেনের মতো আরও কিছু দেশ ও অঙ্গরাষ্ট্র রক্ষণশীল রাষ্ট্রগুলোর সমকামীদেরকে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ দেয় । অর্থাত্ সমকামী বিয়ের আইনগত স্বীকৃতি না থাকা মানে সমকামীদের অস্বীকৃতি জানানো নয়, সমকামী বিয়ের আইনগত স্বীকৃতি আছে এমন কিছু দেশের থেকে ব্রিটেন বা জার্মানির মতো দেশে সমকামীদের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজ অনেক বেশি উদার ।
এক্ষেত্রে অনেকে বলতে চান সমকামীরা একসাথে থাকুক, অধিকার ভোগ করুক, কিন্তু বিয়ের দরকার কি, বিয়ে না করলেও বা কি এসে গেলো, যেখানে ইউরোপে অবিবাহিত হেটারোসেক্সুআল জুটির সংখ্যা বাড়ছে । তাছাড়া ব্রিটেন বা জার্মানির মতো দেশে সমকামী সম্পর্ক অনেক বেশি স্বাধীন যেখানে তাঁদের শুধু ‘বিবাহিত দম্পতি’র অধিকারটুকু দেয়া হয়নি, তাতেও কিছু যায় আসে না কারণ টিন-এইজ হেটারোসেক্সুআল-দের সহবাস সংস্কৃতি তো বটেই, বহু পূর্ণবয়ষ্ক দম্পতিও সারা জীবন আইনগত ‘বিয়ে’ করেন না । এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে হোমোসেক্সুআল-দের বিবাহ প্রথা, দত্তক সন্তান গ্রহণ, পারিবারিক সম্পদ বণ্টন, এমনকি নিজের (অনেকের ক্ষেত্রে) বায়োলজিক্যাল সন্তানের প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সমকামী সঙ্গীর সাথে যৌথভাবে ‘বাবা-মায়ের’ ভূমিকা নেয়া — এই ইচ্ছাগুলোর বিরোধিতা আমরা করতে পারি না । এই পৃথিবীতে আমার পছন্দই ঠিক, অন্যের পছন্দ ঠিক নয় — এরকম রায় দেয়ার অধিকার আমাদের কেউ দেয়নি । নিজেদেরকে নিজেরা অন্যের চেয়ে সেরা ভাবতে পারি বটে, কিন্তু বাস্তবে তা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না ।
সমকামিতা স্বাভাবিক না বিকৃতি তা নির্ণয় করার দায়িত্ব আধুনিক রাষ্ট্রের নয় । পূর্ণবয়ষ্ক নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নাক গলানো তার দায়িত্ব নয় । রাষ্ট্র তখনই নাক গলাতে পারে যখন এক ব্যক্তি কর্তৃক অন্য বা অন্যদিগের শারিরীক, আর্থিক ও সুনামগত ক্ষতির কারণ ঘটতে পারে । রাষ্ট্র কখনোই নাগরিকদের অভিভাবক হতে পারে না, নাগরিকেরাই রাষ্ট্রের অভিভাবক । একটি রাষ্ট্রকে তখনই স্বাধীন বলা চলে যখন তার নাগরিকেরা স্বাধীন হয়, শুধু একারণে একটি রাষ্ট্রকে স্বাধীন বলা যায় না যে এর প্রশাসকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিভূ কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর স্বজাতীয় । প্রকৃতিজগতে ব্যক্তি একটি স্বাধীন স্বত্ত্বা । রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ভেতর একটি ভারসাম্য অবস্থান কাম্য ।
সমকামিতার বিষয়ে একটি ধারাবাহিক রচনা লেখার ইচ্ছায় বক্ষ্যমান নিবন্ধটি লিখছি । মনে রাখতে হবে যে এই লেখায় আমি সমকামিতার পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় যুক্তিই প্রদর্শন করবো, তার সাথে সমলিঙ্গ বিয়ের বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গীর সম্পর্ক নেই । আমি আগেই বলে রাখছি যে ব্যক্তিস্বাধিনতার স্বার্থে আমি পূর্ণবয়সীদের সমলিঙ্গ বিয়ের সমর্থক, কিন্তু সমকামিতা প্রাণী-মানবের (প্রাণী হিসেবে মানুষের) সহজাত মৌলিক পরিচয়ের অংশ কিনা সে ব্যাপারে আমি এখনও নিশ্চিত নই ।
প্রচলিত সংজ্ঞানুসারে প্রাণিজগতের কাম বা যৌনতার শ্রেণীবদ্ধকরণের জটিলতা রয়েছে । প্রচলিত সংজ্ঞানুসারে তিন (৩)-টি মতান্তরে চার (৪)-টি সেক্সুআল অরিএণ্টেশন (Sexual Orientation)-এর পরিচয় প্রচলিত : (১) অসমকামিতা (Heterosexuality) (২) সমকামিতা (Homosexuality) (৩) উভকামিতা (Bisexuality) এবং অনেকের মতে চতুর্থ (৪র্থ) সেক্সুআল অরিএণ্টেশন হচ্ছে নিষ্কামিতা (Asexuality) । এছাড়া অনেক ধরণের কামাচরণ (Sexual Behaviour) ও যৌন পরিচিতি (Sexual Identity)-কে এই সেক্সুআল অরিএণ্টেশন-গুলোর বাইরে ধরা হয়, যেমন পরাকামিতা (Paraphilia) । এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে পরাকামিতাকে সকলেই (যৌনবিজ্ঞানী, মনোবিদ, যৌনমনোবিদ, মনোসমীক্ষণবিদ, নৃতাত্ত্বিক) কামবিকৃতি (Perversion) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । পিডোফিলিআ (Paedophilia), স্বমেহন (Self-abuse), খ্রোণোফিলিআ (Chronophilia), মৃতকামিতা (Necromancy), পশুগমন (Bestiality বা Zoophilia), সর্বকামিতা (Pansexuality), ইত্যাদি কামাচরণ (Sexual Behaviour) এবং বিভিন্ন প্রকার কাম ফ়েটিশ (Sexual Fetish) ‘পরাকামিতা’ (Paraphilia)-র অন্তর্ভুক্ত । প্রচলিত সংজ্ঞার দুর্বলতা হচ্ছে কামাচরণ ও যৌন পরিচিতি-গুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে শ্রেণীবদ্ধকরণের জটিলতা এবং পরষ্পর বিরোধী সংজ্ঞা প্রদান । অনেকে শুধুমাত্র অসমকামিতা (Heterosexuality)-কেই সত্যিকার যৌন পরিচয়ের স্বীকৃতি দেন (Straightsexuality) ।
অনেকে বলতে পারেন সমকামিতা ও নিষ্কামিতা বিতর্কিত বিষয়, এনিয়ে আলোচনার কি আছে, কিন্তু ইউ.এন. (United Nations, UN)-এর অঙ্গসংগঠন ডাব্লিউ.এইচ.ও. (World Health Organization, WHO)-র মতে কোন সেক্সুআল অরিএণ্টেশন (Sexual Orientation)-কেই অস্বাভাবিকতা (Disorder) হিসেবে গণ্য করা যাবে না (WHO, ICD-10 Version:2010) । এক্ষেত্রে সেক্সুআল অরিএণ্টেশন বলতে প্রচলিত সেক্সুআল অরিএণ্টেশনের ধারণাকেই বোঝানো হচ্ছে, অর্থাত্ Heterosexuality, Homosexuality, Bisexuality ও Asexuality । প্রচলিত এসব সেক্সুআল অরিএণ্টেশন-গুলোর ভেতর সেসব কামাচরণগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে আচরণগুলো আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে অন্যের ক্ষতি করে না বা শিশু ও প্রাণীজগত্-সহ কারো অধিকার লঙ্ঘন করে না । সেক্সুআল অরিএণ্টেশনের এই প্রচলিত মতামতে শুধুমাত্র স্ত্রীলিঙ্গ ও পুরুষ — এই দুটি লিঙ্গ পরিচয় এবং পেনিট্রেটিভ় যৌনকার্য (Penetrative Sex) ও নন-পেনিট্রেটিভ় যৌনকার্য (Non-penetrative Sex)-কে ধরা হয়েছে । কিন্তু এতে কিছু জটিলতা রয়েছে ।
আমি আলোচনার সুবিধার্থে সর্বসম্মতভাবে প্রাণীজগত (Kingdom of Animalia)-র সব ধরণের কাম আচরণের ভেতর পরাকামিতা (Paraphilia)-কে কামবিকৃতি (Perversion) হিসেবে এবং স্ট্রেইট সেক্সুআলিটি (খাঁটি অসমকামিতা বা Heterosexuality)-কে সহজাত (Natural) হিসেবে চিহ্নিত করছি । আমার বাকি আলোচনা হবে বহুলিঙ্গকামিতা (Polysexuality), সমকামিতা (Homosexuality) ও নিষ্কামিতা (Asexuality) প্রাণীর সহজাত (Natural) বৈশিষ্ট্য কিনা তার পক্ষে ও বিপক্ষে যত ধরণের যুক্তি ও উদাহরণ দেয়া সম্ভব তা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করা । তবে এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, কামাচরণগুলোর প্রচলিত সংজ্ঞাগুলোর সাথে আমি একমত এবং এর সাথে আমার কোন দ্বন্দ্ব নেই, কিন্তু প্রচলিত সংজ্ঞাগুলোর সাথে আমার মতানৈক্য হচ্ছে দ্বিলিঙ্গ (Gender Binary) দৃষ্টিভঙ্গীর সেক্সুআল অরিএণ্টেশন শ্রেণীকরণ ও সুকৃতি-বিকৃতি (Natural or Perversion) বিবেচনার মানদণ্ড । যেমন, উভকামিতার ক্ষেত্রে ‘উভলিঙ্গ’-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তেমনি পেনিট্রেটিভ় সেক্স্ (Penetrative Sex) ও নন-পেনিট্রেটিভ় সেক্স্ (Non-penetrative Sex)-এর বাইরে ‘অস্পর্শ যৌনতা’ নিয়েও কোন সংজ্ঞা নেই । তাছাড়া এসব সেক্সুআল অরিএণ্টেশন-গুলোর ভেতর সেসব কামাচরণগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে আচরণগুলো আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে অন্যের ক্ষতি করে না বা শিশু ও প্রাণীজগত্-সহ কারো অধিকার লঙ্ঘন করে না, যেখানে মনোবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে ‘রাষ্ট্রনৈতিক’ দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে । যৌনতার ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ হিসেবে পরিচিত প্রত্যঙ্গগুলোর ব্যবহার থাকতেই হবে এমন নয় । যে প্রক্রিয়া কিংবা চিন্তা মস্তিষ্কের যৌনানুভূতিকে উদ্দীপ্ত করে অর্গ্যাজ়্ম্ (Orgasm) ঘটাতে সক্ষম তাই কাম/যৌনতা বা Sexuality । তবে এক্ষেত্রে প্রাইমারি কিংবা সেকেণ্ডারি যৌন অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গ বলে পরিচিত অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গসমূহের ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে, যখন এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সরাসরি অংশগ্রহণ না করিয়ে যদি মস্তিষ্ক পুরোপুরি একটি যৌনকার্য সমাধা করতে সক্ষম হয় তবে একে আমরা বলতে পারি অস্পর্শ যৌনতা । মাস্টার্বেশন অস্পর্শ যৌনতা নয় । স্বমেহন এবং মাস্টার্বেশন এক নয় । মাস্টার্বেশন (Masturbation) বলতে Non-penetrative Sex-কে বোঝানো হয়, যার নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি নেই এবং যা নিজে কোন যৌন পরিচিতি নয় । যেমন, নি:সঙ্গ কল্পনাকামিতাকে প্রাইমারি কিংবা সেকেণ্ডারি যৌন অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গ বলে পরিচিত অঙ্গ ও প্রত্যঙ্গসমূহের ব্যবহারের মাধ্যমে ও ব্যবহার ব্যতিরেকে একাকি কল্পনাকামী রতিক্রিয়াকে উল্লেখ করছি স্বমেহন বা Self-abuse হিসেবে, যদি এটা নিজ যৌনাঙ্গ-স্পর্শে হয় তবে এটা স্পর্শ স্বমেহন (যা মাস্টার্বেশনের মাধ্যমে হচ্ছে), যৌনাঙ্গ-স্পর্শে না হলে অস্পর্শ স্বমেহন । মাস্টার্বেশনের কোন পদ্ধতি যদি একাকি যৌনতায় ব্যবহৃত হয় তবে সেটি স্বমেহন । অন্যদিকে একাধিক সমলিঙ্গের মানুষের ভেতর মিউচুআল মাস্টার্বেশন (Mutual Masturbation) সমকামিতার অন্তর্ভুক্ত, একাধিক বিপরীতলিঙ্গের মানুষের ভেতর মিউচুআল মাস্টার্বেশন অসমকামিতার অন্তর্ভুক্ত, একাধিক সম লিঙ্গের ও অসম লিঙ্গের মানুষের ভেতর মিউচুআল মাস্টার্বেশন উভকামিতার অন্তর্ভুক্ত, তেমনি পশুগামিতার ক্ষেত্রেও মিউচুআল মাস্টার্বেশনের প্রচলন রয়েছে । সমকামী, অসমকামী, উভকামী পরিচিতির ক্ষেত্রে Penetrative Sex প্রয়োজনীয় নয় এবং সমলিঙ্গের শিশুর প্রতি যৌনাচরণ প্রদর্শন সমকামিতা নয় বরং লিঙ্গপরিচয় নির্বিশেষে যেকোন শিশুর প্রতি যৌনাচরণ প্রদর্শনই পিডোফিলিআ (Paedophilia) । কিশোরকামিতা বা Ephebophilia, খ্রোণোফিলিআ — এগুলো পিডোফিলিআ নয়, যদিও এগুলোও বিকৃতি এবং পরাকামিতার অন্তর্ভুক্ত (এগুলো ক্রমাণ্বয়ে আলোচিত হবে) ।
নৃতত্ত্ব (Anthropology), মনোবিদ্যা (Psychology), মনোসমীক্ষণবিদ্যা (Psychoanalysis), বায়োলজি অব জেণ্ডার (Biology of Gender) প্রভৃতি বিষয় সরাসরি বিজ্ঞান (Science)-এর অন্তর্ভুক্ত নয় । কিন্তু এই বিষয়গুলো এবং বিজ্ঞান — উভয়েরই উন্মেষ বস্তুবাদী দর্শন (Materialist Philosophy) থেকে । যে বিষয়গুলো বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যাত হয় না তা এই জাতীয় বিষয়গুলো দ্বারা আমরা ব্যাখ্যার চেষ্টা করি । এক্ষেত্রে যুক্তি প্রদর্শন করা হয় সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত মত মেনে নিয়ে এবং বিজ্ঞানবিরোধী কোন মতকে গ্রহণ না করে । যেমন, মানুষের নারী ও পুরুষ সমান – এটা বিজ্ঞান দ্বারা সরাসরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, কিন্তু বায়োলজি অব জেণ্ডার দ্বারা সম্ভব, তাও আবার বিভিন্ন বিষয়ে বায়োলজি বিজ্ঞানের মতামতকে ব্যবহার ক’রে ।
ছদ্মপ্রাণবিজ্ঞান বা সিউডোবায়োলজি (Pseudobiology) থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি । সিউডোবায়োলজিকে এড়ানোর জন্য কতগুলো বিতর্কিত বিষয়কে একদমই গ্রহণ করা হয়নি এবং অন্যের মতামত হিসেবেও গ্রহণযোগ্য হবে না । সমাজভেদে এগুলোর প্রচারণা একেকভাবে হচ্ছে, যেমন :
• মানুষের পুরুষ স্ত্রীলিঙ্গের চেয়ে উচ্চতায় বড়, স্ত্রীলিঙ্গের চেয়ে বুদ্ধিমান ।
• মানুষের কোন নির্দিষ্ট জেণ্ডার আগে বয়ো:সন্ধিতে পৌঁছে ।
• মানুষের কোন নির্দিষ্ট জেণ্ডার আগে বার্ধক্যে পৌঁছে ।
উপরের কোনটিই Homo sapiens মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নয় ।
• পুরুষসমকামীদের কথিত ‘পুরুষত্ব’ কম বা স্ত্রীসমকামীদের গর্ভধারণ ক্ষমতা নেই ।
• সমকামীদের জন্য ‘অমুক-অমুক’ রোগ বিস্তার হয় ।
ইত্যাদি ।
প্রচলিত এরকম কিছু বিষয় একদম ভ্রান্ত ।
স্ত্রীলিঙ্গবাদী ও সমকামীরা অনেকদিন ধরেই একশ্রেণীর বিজ্ঞানী কিংবা চিকিত্সা বিজ্ঞানী পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার । ব্যক্তি ও রাষ্ট্রভেদে এই মিথ্যাচার প্রবণতাগুলোর অন্যতম হচ্ছে :
• প্রাণীজগতে ঘ’টে চলা সমকামী ও উভকামী আচরণগুলোকে লুকোনো । সমকামী ও উভকামীদের জিন্গত উত্তরাধিকার (Genetic Inheritance)-এর ঘটনা লুকোনো ।
• সুস্পষ্টভাবে পুরুষ শিশুদের কামাচরণ (পুরুষদের সেক্সুআল রেস্পন্স্ সায়িক্ল্ (Sexual Response Cycle)-এর শৈশব বিকাশ) ও বালক বয়সীদের বীর্যোত্পাদনকে লুকোনো এবং স্ত্রীলিঙ্গের তুলনায় তার বয়ো:সন্ধির বয়সকে দেরিতে দেখানো ।
• পুরুষের অ্যাণ্ড্রোপজ় (Andropause)-কে লুকোনো ।
• মেনোপজ় (Menopause) পরবর্তী নারীর পুরুষের তুলনায় প্রবল যৌনাবেগ (সমাজভেদে বয়সী নারীর স্বমেহন কিংবা কিশোরকামী প্রবণতাসহ) ও ভালো স্মৃতিশক্তি) এই বিষয়গুলোকে লুকোনো (নারীর দীর্ঘায়িত Sexual Response Cycle) ।
• যৌনতার বিষয়ে মস্তিষ্কই প্রধান সঞ্চালক – একে গুরুত্বহীনতা দেয়া ।
• মানুষের ভেতর পুরুষের তুলনায় নারীর লম্বা হওয়ার ঘটনা এর বিপরীত অর্থাত্ নারীর তুলনায় পুরুষের লম্বা হওয়ার ঘটনার মতোই স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও পুরুষের নারীর তুলনায় লম্বা হওয়াকে প্রাণী হিসেবে মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রচারণা ।
• এমনকি অতিলৌকিকতা, রোগ সারানোর বা রোগমুক্তির ক্ষেত্রে অলৌকিক (Miracle) বলে প্রচলিত ঘটনাগুলোর সপক্ষে প্রচারণা, কোন প্রাণীর উপাঙ্গে বা শিশুর শরীরে অলৌকিক চিহ্নের সচিত্র প্রচারণা, ইত্যাদি ।
• অনেক সময়ে জরিপ বা Poll-এর দোহাই দিয়ে সংগঠিতভাবেই নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গীর প্রচারণা চালানো । বায়োলজি বিজ্ঞানের জগতে স্বীকৃত কিছু জার্ণাল্ও এর বাইরে নয় ।
• সর্বোপরি বিবর্তনতত্ত্ব (Theory of Evolution)-কে বিতর্কিত করার চেষ্টা যেখানে বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রূণের বিভিন্ন অবস্থার তুলনামূলক বিচার, বিলুপ্ত প্রত্যঙ্গের উপস্থিতির বিদ্যমান চিহ্ন এবং বিভিন্ন প্রাণীর গৃহপালিত স্পেসিসের উত্পত্তি যা মানুষের ইচ্ছায় মানুষের চোখের সামনে ঘটেছে (যেমন গৃহপালিত কুকুর (Domestic dog : Canis lupus familiaris)-এর উত্পত্তি ধূসর নেক্ড়ে (Grey wolf : Canis lupus lupus) থেকে, গৃহপালিত বিড়াল (Domestic cat : Felis silvestris catus) বনবিড়াল (Wild cat : Felis silvestris silvestris) থেকে, গৃহপালিত গরু (Cattle : Bos primigenius taurus ও Bos primigenius indicus) বণ্য গরু (Aurochs : Bos primigenius primigenius) থেকে, ইত্যাদি) — এগুলো খুব সুস্পষ্টভাবে বিবর্তনতত্ত্বকে সমর্থন করে । বিবর্তনতত্ত্ব দ্বারাই শুধুমাত্র যৌনতা/কাম-এর বিভিন্ন আচরণের ব্যাখ্যা করা সম্ভব । এখানে বিবর্তনতত্ত্ব শুধুমাত্র বায়োলজিস্ট-দের প্রচলিত মতামত নয় তবে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গী একই ।
• প্রকৃত উভলিঙ্গের সঠিক বায়োলজিক্যাল মর্যাদা নিশ্চিত না করা ।
• বংশবৃদ্ধিকে যৌনতা ও ‘যৌনাঙ্গ’-এর একমাত্র কাজ হিসেবে দেখানো ।
• ‘যৌনাঙ্গ’ বলতে শুধুমাত্র প্রজনন অঙ্গগুলোকেই বোঝানো ।
• ‘আনন্দের জন্য যৌনতা শুধুমাত্র মানুষ ও ডল্ফিনের ভেতর প্রচলিত’ — এ ধরণের ডাঁহা মিথ্যা প্রচার করা ।
ইত্যাদি ।
মানুষের নারী-পুরুষের পার্থক্য হিসেবে শুধুমাত্র সেগুলোকেই ধরা হবে যা সবসময়েই শতকরা একশো ভাগ (১০০%) ক্ষেত্রেই পার্থক্য রূপে থাকে । যেমন, নারী ও পুরুষের বিভিন্ন হর্মোন্ অনুপাতের পার্থক্য, কিছু হাড়ের পার্থক্য, পেশী-চর্বি অনুপাতের পার্থক্য, সর্বোপরি যৌনাঙ্গগুলোর পার্থক্য, ইত্যাদি । কোন প্রাণী-প্রজাতি বা স্পেসিসের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় মনে রাখা উচিত্ : (১) যে শারীরিক বৈশিষ্ট্য / আচরণ / শারীরক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট স্পেসিসের সকল সদস্যের ক্ষেত্রে শতকরা একশো ভাগ (১০০%) প্রযোজ্য নয়, তা ওই স্পেসিসের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না । (২) কোন স্পেসিসের কিছু সদস্যের ভেতর যদি ওই প্রজাতি (Species)-র অন্য সদস্যদের চেয়ে ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য থাকে তবে তা ওই স্পেসিসের অন্য সদস্যদের সাথে প্রজননের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রযোজ্য হওয়া সম্ভব ।
প্রাণবিজ্ঞান মানুষের শুধুমাত্র তিনটি লৈঙ্গিক অবস্থা (Gender)-কে ব্যাখ্যা করতে পারে । মনোদৈহিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বায়োলজি অব জেণ্ডার আরও বেশি লৈঙ্গিক অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম ।
[চলবে]
14th June 2013
হোমোসেক্সুয়ালিটি জেনেটিক কিনা এই নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক চলেছিল। কোন কনক্লুসিভ প্রমান পাওয়া যায়নি আগে। অতি সম্প্রতি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে এটা একমাত্র কারন না হলেও অন্তত পুরুষ সমকামিতার ক্ষেত্রে জীনের সাথে সম্পর্ক আছে। যদিও পরিবেশ/সংস্কৃতিরও ভূমিকা আছে। জেনেটিক কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য কাউকে বিকৃতমনা বলা যায় কি? তার চেয়েও বড় কথা, এই তথ্য প্রকাশ করলে তারা সমকামিতা প্রমোট করছে এই আজগুবি অভিযোগ করা কতটা সূস্থ মাথার কাজ? যেসব বিজ্ঞানী গবেষনা করে বার করেছেন সমকামিতার সাথে জেনেটিক লিঙ্ক আছে তারা সমাজে সমকামিতা প্রমোট করছেন? কি প্রমোট হল আর কি বাতিল হল সে চিন্তা করে বিজ্ঞান চলে? প্রবীর বাবুর মতন যুক্তিবাদী দাবীদারও যখন এই ধরনের চিন্তা করেন তখন হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
পেডোফিলিয়াও কিছু মানুষ জন্ম থেকেই পায়। যেমন মানুষের মাঝে অন্য আরো অনেক প্রানীর মতই দেখা যায় আপাত চোখে অনেক অস্বাভাবিক যৌনাচরন যাদের ফেটিশ বলা হয়। দুজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক লোকে সম্পূর্ন স্বেচ্ছায় নিজেরা কি করে সে দিয়ে কারো কিছু যায় আসে না। এ কারনেই পেডোফিলিয়া আর সমকামিতা এক করে দেখা যায় না, খুবই সরল। পেডোফিলিয়াও কিছু লোকে জন্মগত ভাবে পায় বলা মানে পেডোফিলিয়া প্রমোট করা নয়।
কথায় আছে, তর্ক মানুষকে যুক্তিবাদী করে তোলে । প্রবীর মিত্রও একজন যুক্তিবাদী মানুষ । উনি হয়তো নিজেকে আপডেট করে নেবেন । বিপ্লব পালের লেখাটা ভাল লেগেছে । যুক্তি চলুক অবিরাম ।
ফেবু’তে প্রবীর ঘোষের খবরটি জেনে কষ্ট পেয়েছি। মৌলবাদ যে কোনো শিবিরে জন্মাতে পারে। হোন না তিনি আমাদের বালক বেলার নায়ক। 🙁
বিপ্লব দা’কে সমসাময়িক বিষয়টিতে আলোকপাত করার জন্য সাধুবাদ। চলুক।
“Pedophilia has been described as a disorder of sexual preference, phenomenologically similar to a heterosexual or homosexual sexual orientation because it emerges before or during puberty, and because it is stable over time.[46] These observations, however, do not exclude pedophilia from the group of mental disorders because pedophilic acts cause harm, and pedophiles can sometimes be helped by mental health professionals to refrain from acting on their impulses which cause harm to children.[47] ” কিন্ত একে মানসিক রোগভুক্ত করা হয়েছে, কারন ইহা সমাজের জন্য ক্ষতিকর । কিন্ত হমোসেক্সুয়ালিটির মতন এরো ক্কোন ট্রিটমেন্ট নেই । হমোসেক্সুয়ালিটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হলে, তাকেও পিডোফেলিয়ার মতন রোগভুক্ত করা হত। এছাড়া পিডোফেলিয়া এবং হমোসেক্সুয়ালিটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই http://en.wikipedia.org/wiki/Pedophilia
আপনি উইকিপিডিয়ার যে রেফারেন্স টানছেন তা বলছে, “ফেনোমেনোলজিক্যালি” এটা অন্যান্য সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সের মত একটা প্রেফারেন্স । কিন্তু ক্যাটাগরীক্যালি একটা বিকৃত মানসিকতাকে অন্যান্য সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সের মতই স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেয়াটা একটু বেশি ওভার দা টপ হয়ে যাচ্ছে, যেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান এটাকে মানসিক রোগ বলছে ।
অন্যান্য যে কোন সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের সাথে পিডোফিলিয়ার একটা মুল তফাৎ হচ্ছে কনসেন্ট । অন্যান্য যে কোন স্বাভাবিক যৌনাচারন, তাতে পার্টিসিপেট করা ব্যক্তিদের সম্মতিতে হয়, যেটা পিডোফিলিয়ের ক্ষেত্রে সত্য নয় এবং এটা ধর্ষন । এইসব ব্যপারগুলো পরিষ্কার না করে মোটা দাগে পিডোফিলিয়াকে সমকামীতাকে সাথে তুলনা করলে সমকামীদের অপমান করা ছাড়া কোনভাবে সাহায্য করা হয় মনে হয় না ।
========
মামুনুর রশীদ
mamunbabu2001 at gmail dot com
সেই সংবাদ শুনেও ও বধির কেন, তুই করলি না কেন তোর শেষ প্রতিবাদ
প্রথমত পিডফেলিয়া স্বাভাবিক যৌনতা নয় >>>
যেহেতু পিডোফিলিয়া সমাজে বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর -এবং সমাজ তীব্র ভাবেই এর বিরোধিতা করে, সেই জন্য পিডোফিলিয়াকে রোগভূক্ত করা হয়েছে। ডঃ বার্নাডের মতন বিজ্ঞানীরা যারা এই পিডোফিলিয়া নিয়ে কাজ করেছেন, তারা কিন্ত বলছেন পিডোফিলিয়া, হমোসেক্সুয়ালিটির মতন নর্মাল ওরিয়েন্টেশন —”
Through my psychotherapeutic practice, as advisor in forensic cases, through Enclave, COC and NVSH, and by means of personal contact, I have met more than a thousand people with paedophile feelings during the course of the years. The number of children I met who had contacts with adults was over three thousand. When I review in my mind all these cases, I can only come to the following conclusions:
People with paedophile feelings are just like other people; the variability in paedophiles is probably as great as that in the general population. A child who is interested in sexual contacts with adults is as normal as the child who is not interested in such contacts.
Paedophilia is, first and foremost, not a problem for the paedophile; it is apparently also not a problem for the child. Paedophilia is primarily a problem for the non-paedophile, for society.
Our attitude towards paedophilia can very well be the touchstone for the way we can and dare feel about sexuality in general and that of children in particular.
Heterosexuality, homosexuality, bisexuality and paedophilia should be considered equally valuable forms of human behavior.
Paedophiles can enrich society by bringing into it new perspectives”https://www.ipce.info/ipc…/Library/dutch_movement_text.htm
প্রথমত পিডফেলিয়া স্বাভাবিক যৌনতা নয়. পরকিয়া স্বাভাবিক যৌনতা. স্বাভাবিক যৌনতা গ্রহনযোগ্য হলে পরকিয়া, অজাচার ( ভাই-বোনের সেক্স, দেবর- বৌদির সেক্স), শিক্ষক-ছাত্রীর সেক্স, শিক্ষিকা-ছাত্রের সেক্স ইত্যাদি সবই সমাজের দৃষ্টিতে গ্রহনীয় হওয়া উচিত.
প্রবীর ঘোষের ব্যাপারে অনেক অজানা তথ্য উঠে আসছে. আপনাদের অনেক ধন্যবাদ. এতে প্রবীর বাবুর জীবনের আরেকটা দিক খুলে যায়. এর সাথে যোগ করুন পাড়াতে মাস্তানি, নকশাল গুন্ডামি, ইত্যাদি; তাহলে ওনাকে আরো ভালো করে চেনা যাবে.
প্রবীর ঘোষের বক্তব্য প্রকাশিত হবার পর অনেক sponsored বুলবুলির ডাকাডাকি শুনছি, পড়ছি। ইংলিশ-এ বললে বলতে হয় He has again hit where it hurts. লেখাটা ভীমরুলের চাকেই ঢিল মেরেছে। কিন্তু এতো দেখছি ভীমরুলের বদলে মশা-মাছি ভনভন করছে। যাই হোক, প্রবীর ঘোষকে নিয়ে কুৎসা, ব্যাঙ্গ ইত্যাদি একাধারে হাস্যকর এবং ওনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সাম্যের আন্দোলন, যুক্তিবাদী আন্দলনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেবার আর একটা অক্ষম চেষ্টা।
যাইহোক, যতটা সম্ভব সংযত হয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া দেবার চেষ্টা করছি:
১। কেউ-কেউ, সাম্যবাদী আন্দোলনকে পরিণত করতে চাইছেন ‘সমকামিবাদ’-এ। একটু কৌতূহল আছে জানার, ওই আন্দোলনের পতাকায় ঠিক কিসের ছবি থাকবে? শ্রেণী-সংগ্রামের জায়গায় “পায়ু-প্রহার”-এর তত্ব?
জানিয়ে রাখি, এই ধরণের অপপ্রচার, প্রবীর ঘোষের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা যুক্তিবাদী আন্দোলন কে আরও সঙ্গবদ্ধ, উদ্বুদ্ধ করবে। সহযোদ্ধাদের কাছে আহ্বান, এই ধরণের যে কোনও লুম্পেন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, আন্দোলন তীব্রতর করুন।
যে সব রাজা/ রানীদের এঁটো চেটে এসব মাতলামি চলছে, তাঁরা আমাদের অজানা নয়।
গত ১১-ই ডিসেম্বর, ২০১৩, ভারতের শীর্ষ আদালত জানালো, সমকামিতা বা সম-লিঙ্গ প্রেম অসাংবিধানিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালত এই রায় দিলেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৭ অনুযায়ী।
ঠিক তার পর দিন থেকেই, দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার একটা বিরাট অংশ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাহাকার করে উঠলো। এই আস্ফালনে সামিল করা হলো, বলিউড থেকে টলিউডের বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের। দুর্নীতিতে ডুবে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মহামাতা’ শ্রীমতী সনিয়া এবং তাঁর আস্তাবলের দুই ‘নন্দী-ভৃঙ্গী’ জানালেন যে সরকার এই রায়ের বিপক্ষে, কারণ, এটা নাকি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ!!! ওয়াহ! ক্যা বাত হ্যায়! ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সমস্ত আইনের পক্ষে চিকন গলা তোলা এই সব সন্ত্রাসবাদের বাবা-মায়েরা উতলা হচ্ছেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র নিয়ে!
আমরা এটাও লক্ষ রাখছি যে সমকামিতার পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন কিছু রাজনৈতিক দল, কারণ, শেষমেশ ‘সমকামী’ রাও তো তাদের কাছে এক ‘ভোট-ব্যাঙ্ক’।
এই বিষয়ে আমরাও বহু প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ, আমাদের অবস্থান এই তৈরি করা হুজুগের বিরুদ্ধে। হ্যাঁ, আমরা বিজ্ঞানের, প্রগতির, স্বাধীনতার, যুক্তির এবং সাম্যের পক্ষে, এবং তাই দ্বিধাহীন ভাবে কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি। অনেকেই আমাদের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হুজুগের স্রোত-এর উল্টোদিকে সাঁতার কাটতে দেখে।
বিভিন্ন গণমাধমের খবর পড়ে-শুনে মনে হচ্ছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা কে যারা ধিক্কার জানাচ্ছেন, তাদের প্রতিবাদের মুল সুর হলো যে এটা কোনও ব্যক্তির নিজের পছন্দ মতো যৌন-সঙ্গী বেছে নেবার ‘মৌলিক অধিকার’-কে লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ কিনা, এই রায় যৌন-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
তাহলে, প্রথমে আমরা মৌলিক অধিকার দিয়ে শুরু করি। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলো লেখা আছে। এই অধিকার গুলোকে ৬ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন :-
১। সাম্যের অধিকার
২। স্বাধীনতার অধিকার
৩। শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার
৪। ধর্মীয় অধিকার
৫। সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার
৬। শাসন-তান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার
সুতরাং, ‘যৌন-স্বাধীনতা’ বলে যেটা প্রচার করা হচ্ছে, সেরকম কিছুই আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না।
আচ্ছা, নাই বা থাকলো, আসুন দেখি আমরা যুক্তির চোখে যৌন-স্বাধীনতা বলতে কি বুঝি। আমরা যৌন-স্বাধীনতা বলতে মনে করি প্রাপ্ত-বয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, মতাদর্শ-গত মিল ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক প্রেমময় মানসিক/ শারীরিক সম্পর্ক। এই স্বাধীনতায় শোষণ নেই, কোনও বিনিময় মূল্য নেই। নেই কোনো অজাচার।
যারা চীৎকার করে ‘পারস্পরিক সম্মতি’-তে গড়ে ওঠা সমস্ত যৌনসম্পর্ক-কেই স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন-আপনারা নিশ্চয়ই পিতা-কন্যা, মাতা-পুত্র, ভাই-বোন ইত্যাদির মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিতে গড়ে ওঠা যৌন-সম্পর্ককেও উদাত্ত কণ্ঠে স্বাগত জানাবেন। স্বীকৃতি দেবেন যৌন-ব্যবসাকেও। যদি আপনাদের পরিবারের কেউ বা নিকটজন এই ব্যাবসায় আসতে চায়, নিশ্চয়ই উচ্ছ্বসিত বোধ করবেন। যদি বলেন ‘না’, তবে আপনাদের ‘যুক্তি’-র জালে নিজেরাই জড়িয়ে যাবেন, কারণ, এখানেও আছে যৌন-সঙ্গী বেছে নেবার ( আপনাদেরই ভাষায় ) অবাধ স্বাধীনতা ।
এবার আসি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায়, যা নিয়ে এত হই-চই। এই ধারা অপ্রাকৃতিক অপরাধ সম্পর্কিত। কি বলা আছে সেখানে? যা আছে, অবিকৃতভাবে এখানে তুলে দিলাম-“ যদি কেউ স্বেচ্ছাকৃত ভাবে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো পুরুষ, স্ত্রী বা পশুর সাথে যৌন সংসর্গ করে-তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর অবধি সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে, এবং সে অর্থদণ্ড দিতেও দায়ী থাকবে।
এটা গ্রেপ্তার যোগ্য ও জামিন অযোগ্য অপরাধ।
ব্যাখ্যা-এই ধারায় বলা অপরাধের জন্য যৌন সংসর্গে লিঙ্গ প্রবিষ্ট হলেই যথেষ্ট হবে।“
যারা এই ধারা বাতিলের দাবী নিয়ে, যৌন-স্বাধীনতার ধ্বজা ধরে গলা ফাটাচ্ছেন, তাদের কাছে বিনীত ভাবে জানতে চাই- কোনো সমকামী ‘দম্পতি’-র মধ্যে যৌন সংসর্গ কিভাবে সম্ভব, যা আপনাদের মতে প্রকৃতির নিয়ম মেনে বা না মেনে? পুরুষের সঙ্গে পুরুষের? নারীর সাথে নারীর? অথবা পুরুষ বা নারীর সাথে কোন পশুর???
অশ্লীলতা এড়িয়ে, যথাসম্ভব শোভন/ শালীন ভাষায় বলতে পারি, যারা পারস্পরিক ‘সম্মতি’ তে ঘটা সবরকমের যৌন-স্বাধীনতা নিয়ে সরব-তারা কি পিতা-কন্যা, মাতা-পুত্র…এসব ছাড়াও পায়ু-মৈথুনের আইনি অধিকার চাইছেন? এই হলো তাহলে তাদের মতে ব্যক্তিস্বাধীনতা! যৌন-স্বাধীনতা! জানিনা, প্রায় ১২ বছর আগের মতন, আবার স্লোগান উঠবে কিনা-“অমুক খাটিয়ে খাই, তমুকের অধিকার চাই।”
অনেকেই আছেন যারা বিষয়টা নিয়ে হয়তো একটু বা বেশ বিভ্রান্ত। আবার একটা বড় অংশ সব জেনে বুঝেই চূড়ান্ত যৌন-অজাচারের পক্ষে এক গন-উন্মাদনা করতে চাইছেন। তোল্লাই দিতে চাইছেন এক লুম্পেন সংস্কৃতিকে।
এটা নিঃসন্দেহেই এক সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস। এই আগ্রাসন থামাতে প্রয়োজন পাল্টা আগ্রাসনের, যা বয়ে আনবে সুস্থ সংস্কৃতির ঝোড়ো বাতাস, যার শিরায়-শিরায় জানান দেবে দিন বদলের চেতনার তীব্র আকুতি।
তাই, আহ্বান রাখছি সমস্ত সুস্থ চিন্তাসম্পন্ন, সাম্যকামী মানুষের কাছে-আসুন, রুখে দাঁড়ান। কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে আমরা সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি এই নোংরা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যা সমাজের একটা অংশকে নিশ্চিতভাবেই ঠেলে দিতে পারে সীমাহীন নৈরাজ্য ও অজাচারের অন্ধকার দুনিয়ায়।
সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী, নির্মাণও।
আমরা প্রস্তুত।
Anabil Sengupta
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বক্তব্য —- যৌন-স্বাধীনতা না চূড়ান্ত অজাচার???
প্রবীর ঘোষ
গত ১১-ই ডিসেম্বর, ২০১৩, ভারতের শীর্ষ আদালত জানালো, সমকামিতা বা সম-লিঙ্গ প্রেম অসাংবিধানিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আদালত এই রায় দিলেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৭ অনুযায়ী।
ঠিক তার পর দিন থেকেই, দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার একটা বিরাট অংশ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাহাকার করে উঠলো। এই আস্ফালনে সামিল করা হলো, বলিউড থেকে টলিউডের বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের। দুর্নীতিতে ডুবে থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মহামাতা’ শ্রীমতী সনিয়া এবং তাঁর আস্তাবলের দুই ‘নন্দী-ভৃঙ্গী’ জানালেন যে সরকার এই রায়ের বিপক্ষে, কারণ, এটা নাকি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ!!! ওয়াহ! ক্যা বাত হ্যায়! ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সমস্ত আইনের পক্ষে চিকন গলা তোলা এই সব সন্ত্রাসবাদের বাবা-মায়েরা উতলা হচ্ছেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র নিয়ে!
আমরা এটাও লক্ষ রাখছি যে সমকামিতার পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন কিছু রাজনৈতিক দল, কারণ, শেষমেশ ‘সমকামী’ রাও তো তাদের কাছে এক ‘ভোট-ব্যাঙ্ক’।
এই বিষয়ে আমরাও বহু প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ, আমাদের অবস্থান এই তৈরি করা হুজুগের বিরুদ্ধে। হ্যাঁ, আমরা বিজ্ঞানের, প্রগতির, স্বাধীনতার, যুক্তির এবং সাম্যের পক্ষে, এবং তাই দ্বিধাহীন ভাবে কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি। অনেকেই আমাদের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হুজুগের স্রোত-এর উল্টোদিকে সাঁতার কাটতে দেখে।
বিভিন্ন গণমাধমের খবর পড়ে-শুনে মনে হচ্ছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা কে যারা ধিক্কার জানাচ্ছেন, তাদের প্রতিবাদের মুল সুর হলো যে এটা কোনও ব্যক্তির নিজের পছন্দ মতো যৌন-সঙ্গী বেছে নেবার ‘মৌলিক অধিকার’-কে লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ কিনা, এই রায় যৌন-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
তাহলে, প্রথমে আমরা মৌলিক অধিকার দিয়ে শুরু করি। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলো লেখা আছে। এই অধিকার গুলোকে ৬ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন :-
১। সাম্যের অধিকার
২। স্বাধীনতার অধিকার
৩। শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার
৪। ধর্মীয় অধিকার
৫। সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার
৬। শাসন-তান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার
সুতরাং, ‘যৌন-স্বাধীনতা’ বলে যেটা প্রচার করা হচ্ছে, সেরকম কিছুই আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না।
আচ্ছা, নাই বা থাকলো, আসুন দেখি আমরা যুক্তির চোখে যৌন-স্বাধীনতা বলতে কি বুঝি। আমরা যৌন-স্বাধীনতা বলতে মনে করি প্রাপ্ত-বয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, মতাদর্শ-গত মিল ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক প্রেমময় মানসিক/ শারীরিক সম্পর্ক। এই স্বাধীনতায় শোষণ নেই, কোনও বিনিময় মূল্য নেই। নেই কোনো অজাচার।
যারা চীৎকার করে ‘পারস্পরিক সম্মতি’-তে গড়ে ওঠা সমস্ত যৌনসম্পর্ক-কেই স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন, তাদের কাছে প্রশ্ন-আপনারা নিশ্চয়ই পিতা-কন্যা, মাতা-পুত্র, ভাই-বোন ইত্যাদির মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিতে গড়ে ওঠা যৌন-সম্পর্ককেও উদাত্ত কণ্ঠে স্বাগত জানাবেন। স্বীকৃতি দেবেন যৌন-ব্যবসাকেও। যদি আপনাদের পরিবারের কেউ বা নিকটজন এই ব্যাবসায় আসতে চায়, নিশ্চয়ই উচ্ছ্বসিত বোধ করবেন। যদি বলেন ‘না’, তবে আপনাদের ‘যুক্তি’-র জালে নিজেরাই জড়িয়ে যাবেন, কারণ, এখানেও আছে যৌন-সঙ্গী বেছে নেবার ( আপনাদেরই ভাষায় ) অবাধ স্বাধীনতা ।
এবার আসি ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায়, যা নিয়ে এত হই-চই। এই ধারা অপ্রাকৃতিক অপরাধ সম্পর্কিত। কি বলা আছে সেখানে? যা আছে, অবিকৃতভাবে এখানে তুলে দিলাম-“ যদি কেউ স্বেচ্ছাকৃত ভাবে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো পুরুষ, স্ত্রী বা পশুর সাথে যৌন সংসর্গ করে-তবে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছর অবধি সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে, এবং সে অর্থদণ্ড দিতেও দায়ী থাকবে।
এটা গ্রেপ্তার যোগ্য ও জামিন অযোগ্য অপরাধ।
ব্যাখ্যা-এই ধারায় বলা অপরাধের জন্য যৌন সংসর্গে লিঙ্গ প্রবিষ্ট হলেই যথেষ্ট হবে।“
যারা এই ধারা বাতিলের দাবী নিয়ে, যৌন-স্বাধীনতার ধ্বজা ধরে গলা ফাটাচ্ছেন, তাদের কাছে বিনীত ভাবে জানতে চাই- কোনো সমকামী ‘দম্পতি’-র মধ্যে যৌন সংসর্গ কিভাবে সম্ভব, যা আপনাদের মতে প্রকৃতির নিয়ম মেনে বা না মেনে? পুরুষের সঙ্গে পুরুষের? নারীর সাথে নারীর? অথবা পুরুষ বা নারীর সাথে কোন পশুর???
অশ্লীলতা এড়িয়ে, যথাসম্ভব শোভন/ শালীন ভাষায় বলতে পারি, যারা পারস্পরিক ‘সম্মতি’ তে ঘটা সবরকমের যৌন-স্বাধীনতা নিয়ে সরব-তারা কি পিতা-কন্যা, মাতা-পুত্র…এসব ছাড়াও পায়ু-মৈথুনের আইনি অধিকার চাইছেন? এই হলো তাহলে তাদের মতে ব্যক্তিস্বাধীনতা! যৌন-স্বাধীনতা! জানিনা, প্রায় ১২ বছর আগের মতন, আবার স্লোগান উঠবে কিনা-“অমুক খাটিয়ে খাই, তমুকের অধিকার চাই।”
অনেকেই আছেন যারা বিষয়টা নিয়ে হয়তো একটু বা বেশ বিভ্রান্ত। আবার একটা বড় অংশ সব জেনে বুঝেই চূড়ান্ত যৌন-অজাচারের পক্ষে এক গন-উন্মাদনা করতে চাইছেন। তোল্লাই দিতে চাইছেন এক লুম্পেন সংস্কৃতিকে।
এটা নিঃসন্দেহেই এক সাংস্কৃতিক সন্ত্রাস। এই আগ্রাসন থামাতে প্রয়োজন পাল্টা আগ্রাসনের, যা বয়ে আনবে সুস্থ সংস্কৃতির ঝোড়ো বাতাস, যার শিরায়-শিরায় জানান দেবে দিন বদলের চেতনার তীব্র আকুতি।
তাই, আহ্বান রাখছি সমস্ত সুস্থ চিন্তাসম্পন্ন, সাম্যকামী মানুষের কাছে-আসুন, রুখে দাঁড়ান। কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে আমরা সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি এই নোংরা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যা সমাজের একটা অংশকে নিশ্চিতভাবেই ঠেলে দিতে পারে সীমাহীন নৈরাজ্য ও অজাচারের অন্ধকার দুনিয়ায়।
সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী, নির্মাণও।
আমরা প্রস্তুত।