‘বাঁশের কেল্লা’ নামে জামায়াত-শিবিরের আন্তর্জালিক তৎপরতামূলক একটি প্রচারমাধ্যমের অপপ্রচার দেখে ‘বাঁশের কেল্লা’ কনসেপ্টটির সুলুক সন্ধানে প্রবৃত্ত হই। বাঁশের কেল্লা আসলে কী? তারা এই ধারণাটা কোত্থেকে পেল? অনুসন্ধানটা চলছিল ধীর গতিতে।
‘বাঁশের কেল্লা’র ধারণাটা তারা নিয়েছে বৃটিশবিরোধী তথাকথিত যোদ্ধা মির নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের ইতিহাস কথিত ‘বাঁশের কেল্লা’ দূর্গ থেকে। কৈশোরে জেনেছি, মানে আমাকে জানানো হয়েছে, তিতুমীর ইতিহাসের মহানায়ক। তিতুমীর ছিলেন বৃটিশ-বিরোধী এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন মহান বীরযোদ্ধা! আসলে কি তাই? বৃটিশ-বিরোধিতার মধ্য দিয়ে তিতুমীরের জিহাদ শুরু হয়েছিল, নাকি হিন্দু-বিরোধিতার মধ্য দিয়ে? তিতুমীর কি ভারতদেশকে ভালোবেসে বৃটিশের বিরোধিতা করেছিলেন, নাকি এই দেশকে ‘দারুল ইসলামে’ রূপান্তরিত করতে বৃটিশ-বিরোধিতা করেছিলেন? ইতিহাসের এই সত্যটুকু জানতে আরেকটু পেছনে ফিরে তাকাতে হয়।
উদারবাদী সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে শায়খ আহম্মদ শিরহিন্দি নামের এক ইসলামি কট্টরপন্থীর উদ্ভাস ঘটে, যিনি নিজেকে ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানি’ বলে দাবি করেছিলেন। এ কথা সবার জানা, ভারতে ইসলাম এসেছিল সুফিদের মাধ্যমে। সুফিরা যে ইসলাম আমদানি করেছিলেন, ভারতে এসে তা হিন্দু ধর্মের সঙ্গে মিশে তার আদি রূপ ধরে রাখতে পারেনি। বহু হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকেও গ্রহণ করে নিতে হয়েছিল ইসলামকে। ফলে মরু-আরবের ইসলাম ও গঙ্গা-ভারতের ইসলামের মধ্যে একটা বড় ধরনের ফারাক তৈরি হয়। প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী শায়খ আহম্মদ শিরহিন্দি ভারতের এই সমন্বয়ধর্মী ইসলামকে ইসলাম বলে স্বীকার করতেন না। এ দেশীয় ইসলামের বিলুপ্তি সাধন করে তিনি আরবিয় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে স্বচেষ্ট হয়েছিলেন। মুসলিম সুফি আল-আরাবির সমন্বয়ধর্মী তত্ত্ব নির্মূল করে তিনি শরিয়ত-ভিত্তিক এক গোঁড়া সুফিবাদের প্রবর্তন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ ভারতে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালিয়েছিলেন।
তার মৃত্যুর পর, মোগল সাম্রাজ্যের পতনকালে উদ্ভাস ঘটল আরেক কট্টরপন্থীর, তার নাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি। দুঃখজনকভাবে তিনিও ভারতীয় ইসলামকে অস্বীকার করে আরবিয় ইসলামকেই এদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন―যেটা করেননি সুলতানি আমলের সম্রাটগণ, মোগল আমলের সম্রাটগণ―একমাত্র আওরঙ্গজেব ছাড়া। কাফের হিন্দুদের দমন করে দেহলভি ভারতকে পরিণত করতে চাইলেন ‘দারুল ইসলামে।’ কিন্তু তার আশা পূরণ হলো না। তার মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব গ্রহণ করলেন সায়িদ আহমদ বেরলবি নামের আরেক কট্টরপন্থী। ‘তরিকায়ে মুহম্মদিয়া’ নামের, যা ইতিহাসে ভারতীয় ওয়াহাবি আন্দোলন নামে পরিচিত, জেহাদি সংগঠন গঠন করে হিন্দু ধর্ম তথা পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে আল্লার রাজত্ব কায়েম করার তত্ত্বে পরম বিশ্বাসী ছিলেন এই ইসলামি পণ্ডিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, উপমহাদেশে ‘দারুল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বালাকোটের যুদ্ধে মর্মান্তিক ভাবে তার মৃত্যু হয়।
এই সায়িদ আহমদ বেরলবি যখন হজ্বযাত্রার উদ্দেশে কলকাতায় আসেন তখন বহু বঙ্গবাসী তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এসব শিষ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন বারসতের মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর। পেশাদার কুস্তিগীর ছিলেন তিতুমীর। যৌবনে নদীয়ায় এক হিন্দু জমিদারের অধীনে লাঠিয়ালদের সর্দারি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং বিচারে কারাদণ্ড ভোগ করেন। কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে যশোহর জেল থেকে বেরিয়ে তিনি বেরলবির ‘তরিকায়ে মুহম্মদিয়া’য় যোগ দেন। এই তিতুমীর পরবর্তীকালে শিরিয়তী বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামের প্রবেশ ঘটান বঙ্গদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিময় সমাজজীবনে।
তিতুমীরের উদ্ভাসের আগে ঊনিশ শতকের প্রারম্ভে বাংলাদেশে একটি মিশ্র সামাজিক এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজ করত। হিন্দু মুসলমানের জীবনযাত্রার মধ্যে কিছু কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও তারা মূলত একটি জাতিগোষ্ঠিই ছিল―সে জাতির নাম বাঙালি। ঐহিক কারণে উভয়ের মধ্যে বিবাদ ঘটলেও উপাসনা-আরাধনার কারণে বিবাদ কখনো ঘটত না। কারণ মারেফতি ইসলামের সাহায্যে ইসলামায়িত নিম্নবর্গের গ্রামীণ মুসলমানদের মধ্যে জেহাদি তত্ত্ব তখনো প্রবেশ করেনি। ফলে তাদের আচার-আচরণ ছিল সম্পূর্ণ মানবিক। বঙ্গদেশের মুসলমানরা চেহারায় ও বেশভূষায় হিন্দুদের থেকে পৃথক ছিল না। খাটো ধুতি, কাঁধে গামছা―এই ছিল গ্রামের সাধারণ মুসলমানদের পোষাক। দাড়ি রাখা বা না রাখার বাছবিচার ছিল না। নামও ছিল তাদের হিন্দুঘেঁষা। যেমন পুরুষদের নাম দায়েম, কায়েম, সাজন, দানেশ, শেহেজান, শিহান, মধু এবং মেয়েদের নাম বাতাসী, কুড়ানী, শারী, শোভানী ইত্যাদি। এই মুসলমানরা নামাজ পড়ত ঠিকই, তবে একটিও আরবি শব্দের অর্থ না জেনেই। তাদের মূল সংস্কৃতিটি ছিল পীর-ফকিরের সংস্কৃতি―যা হিন্দুও নয়, মুসলমানও নয়, এমনকি দুয়ের সঠিক মিশ্রণও নয়। সেই সংস্কৃতি ছিল বাংলার চিরন্তন লোকসংস্কৃতি।
তিতুমীর তার এলাকায় ওয়াহাবিদের নিয়ে দল গঠন করে স্থানীয় মুসলমানদের বাধ্য করলেন নাম পরিবর্তন করতে, আরবিয়দের মতো জোব্বা পরতে, দাড়ি রাখতে। স্থানীয় মুসলমানরা মহরমের দিনে স্থানীয় দরগাতে ‘নজর’ দিত। তিতুমীরের অনুসারীরা এসবের বিরোধিতা করত। তারাগানিয়া গ্রামে একবার তিতুমীরের অনুসারীরা মহরম অনুষ্ঠানে বাধা দেয় এবং দরগায় লাথি মারে। এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানরা নালিশ করল জমিদারের কাছে। এই শুরু হলো জমিদারের সঙ্গে তিতুমীরের বিবাদ, শুরু হলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ থামাতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হলো ইংরেজ সরকার। মামলা হলো তিতুমীর ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। ফলে হিন্দুদের মতো ইংরেজ সরকারও তিতুমীরের বিরোধী পক্ষ হয়ে গেল। তিতুমীরের দল নারকেলবেড়িয়ার মৈজুদ্দিন বিশ্বাসের জমিতে অজস্র বাঁশ দিয়ে এক বুরুজ বানালো―যেটা পরিচিতি লাভ করল ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে। সেই কেল্লায় অস্ত্রশস্ত্র জমাতে লাগল তারা। ঐ কেল্লা থেকেই তিতুমীর ঘোষণা করলেন হিন্দু বিরোধী এবং বৃটিশ বিরোধী যুগপৎ আন্দোলন। কীভাবে হিন্দু-বিরোধী? তিতুমীর যেদিন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন সেদিনই তার অনুসারীরা পুঁড়ার বাজার আক্রমণ করে মহেশ চন্দ্র ঘোষের একটা গরু ছিনিয়ে নিয়ে সেটি মন্দিরের সামনে কেটে গরুর রক্ত ছিটিয়ে দিল মন্দিরের গায়ে ও বিগ্রহে। লুট করল অসংখ্য হিন্দুবাড়ি, বেশ কজন হিন্দুকে বিবস্ত্র করে মারধর করল। তার জিহাদ যদি শুধু ইংরেজদের বিরুদ্ধেই হয়, তাহলে হিন্দুদের উপর তার এই অত্যাচার কেন? তিতুমীরের এই সাম্প্রদায়িক জেহাদি কর্মকাণ্ড দমনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলো ইংরেজ সরকার। ইংরেজ বাহিনীর গোলার আঘাতে ধ্বংস হলো তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, পঞ্চাশ জেহাদিসহ মারা গেলেন তিতুমীর।
এই হচ্ছে তিতুমীর, এই হচ্ছে তার বাঁশের কেল্লা। এই তিতুমীরই এখন জামায়াত-হেফাজত অনুসারীদের মহানায়ক। তিতুমীর আধা-ইসলামি মানবতাবাদী জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ ইসলামায়িত করতে গিয়ে বিচ্ছিন্নতার তত্ত্বই প্রচার করেছিলেন। সমন্বয়বাদী আধা মুসলমানদের মানসিকতার পরিবর্তন করার জন্য তিনি যা প্রচার করলেন, অধুনা জামায়াত-হেফাজতের মতো, তা ছিল সম্পূর্ণ অমানবিক, এই দেশের সংস্কৃতি বহির্ভূত একটি অকাজ। শায়খ আহম্মদ শিরহিন্দি এই ভারতদেশে সাম্প্রদায়িকতার যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন, সেই আগুন দেহলভি, বেরলবি, তিতুমীরদের হাত হয়ে সাড়ে তিন শ বছর ধরে ধূমায়িত হতে হতে একসময় প্রবল বেগে প্রজ্জ্বলিত হয়ে বিচ্ছিন্ন করেছে উপমহাদেশের মৈত্রীসূত্র।
দুঃখিত, ভারতবর্ষের একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে, ইতিহাসের একজন নগণ্য পাঠক হিসেবে আমি কোনোভাবেই তিতুমীরকে ইতিহাসের মহানায়ক বলতে পারছি না। ক্ষমা করবেন ইতিহাসবেত্তাগণ।
পড়ে ভালো লাগলো
@ অতিথি লেখক
জনাব, এই লেখার উৎস ইতিহাসের প্রায় গোটা পঞ্চাশেক বই। নির্দিষ্ট কোনো বই নয়। আপনি চাইলে আমি পঞ্চাশটি বইয়ের তালিকাই দিয়ে দেব। কিন্তু বইয়ের রেক থেকে নামিয়ে বইগুলো লিস্ট দেয়া একটা যজ্ঞ। খুব কষ্ট হবে আরকি।
পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে আমাদের সরকারের বড্ড বেশি হম্বিতম্বি স্বভাব। আজ যদি ইতিহাসবেত্তাগণ তিতুমীরকে সাম্প্রদায়িকতা উত্থানের একজন পুরোধা হিসেবে অ্যাখ্যা দেন, তাহলে কি সেটা পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে?
চ্যাতনা ইজ নাথিং। অনলি ভোটব্যাংক ইজ রিয়েল।
@গুবরে ফড়িং, ইংরেজ বিতারণে তিতুমীরের ভূমিকা কতটুকু ছিলো বলে আপনার মনে হয়? এর জন্য মনে মনে তাকে কিছু প্লাস পয়েণ্ট দিন। এবার ভাবুন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিতুমীর অধ্যায়ের পরবর্তী সাম্প্রদায়িক মানসিকতা, দাঙ্গা, ধর্মবাদী রাষ্ট্র পাকিস্তানের অভ্যুদয়, বাঙ্গালীর ওপর চালিত সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক শোষণ, গণহত্যা, ধর্ষণ থেকে শুরু করে আজ অবধি তথাকথিত সেকুলার সরকারের মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ-এসব ঘটনাপ্রবাহে তিতুমীরের নীতির প্রভাব কতটুকু? এর জন্য তাকে কিছু মাইনাস মার্ক দিন। কোনটা বেশি হলো?
তিতুমীর না আসলেও ভারতবর্ষ স্বাধীন হতো। কিন্তু ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার উত্থানে তিতুমীর অবশ্যই একজন পুরোধা। যে মুখে ভগত সিংকে বিপ্লবী বলা হয় সে মুখে তিতুমীর-শরীয়তউল্লাহকে ইংরেজ বিতারক বললে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারি না।
দয়া করে সোর্স-এর নাম জানাবেন? কোথা থেকে এগুলো জানলেন?
ভাই গুবরে ফড়িং, হাসা বা কাঁদার মতো কোনো প্রশ্ন তো করিনি আপনাকে। আমার তো মনে হয়নি আপনি আইএস এর সমর্থক। আমি কোথাও একথা বলিনি যে আমার মত যে না মানে সে আইএস-এর সমর্থক। বিতর্কটা শুরু একটা সূত্র হিসেবে জানতে চেয়েছিলাম আপনি আইএস-এর কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন কিনা। যেহেতু আপনি আমার প্রশ্নটিকে ইতিবাচকভাবে না নিয়ে নেতিবাচকভাবে নিলেন না, সেহেতু বিতর্কটা অব্যাহত রাখা গেল না। ভালো থাকবেন।
তথ্যগুলি বেশ চমকপ্রদ, সব সত্য হলে তীতুমীর সম্পর্কে প্রচলিত ধারনাকে বেশ খানিকটাই পালটে দেয়। সাধারন নিয়ম হল কোন প্রচলিত ধারনার বিপরীতে কোন নুতন তথ্য বিশ্লেষন লেখা হলে সেখানে মোটামুটি গ্রহনযোগ্য সূত্র রেফার করতে হয়। অন্তত মুক্তমনায় আমি সেটাই আশা করি।
তীতুমির সম্পর্কে ওয়েবে সামান্য সার্চে খুব বেশী কিছু পেলাম না। তিনি ওয়াহাবী ধারার ভক্ত ছিলেন এটা অবশ্য পেলাম উইকিতে। কিন্তু হিন্দু বিদ্বেষ আপনার লেখায় যেভাবে এসেছে তা পেলাম না, যদিও তার মানে এই না যে লেখা ভুল। উইকি খুবই দূর্বল সত্য হতে পারে। তাই মূল সূত্রের খোঁজ করছি।
উইকিতে আছে তীতুমির তার এলাকায় হিন্দু জমিদারদের মুসলমানদের ধর্মীয় কিছু অধিকার হরনের ব্যাপারে প্রতিবাদী হয়ে পড়েন, সম্ভবত সেখান থেকেই গোলমালের শুরু। তীতুমির দেখছি হিন্দু জমিদারদের বিদ্বেষমূলক আইনের বিরুদ্ধে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছেও নালিশ করেছিলেন, কিন্তু কোন ফল পাননি। এ দিকটা আপনার লেখায় আসেনি।
Titu Mir opposed a number of discriminatory measures in force at that time which included taxes on mosques and the wearing of beards. The rift between Titu Mir and his followers on one side, and the local Zamindars supported by the British rulers on the other side, continued to widen, and armed conflict broke out at several places
আপনার দাবীর সমর্থনে (মূলত বিধর্মী বিদ্বেষ, হিন্দুদের পেছু লাগা……) সূত্রগুলি খোলাসা করে সরাসরি কোট করলে ভাল হয়। হিন্দু জমিদারদের বিদ্বেষমূলক আইনের প্রতিবাদ করা নিশ্চয়ই কোন ওয়াহাবি করে থাকলে সেটাকে হিন্দু বিদ্বেষ বলা যায় না। যাই হোক, সূত্রের অপেক্ষায় থাকলাম, প্রচলিত ধারনার বাইরে নুতন জিনিস জানতে সব সময়ই আগ্রহ হয়।
@আদিল মাহমুদ,
স্বকৃত নোমান কি রেফারন্স দেন আমিও জানার অপেক্ষায় রইলাম। তবে আমি একটা দিয়ে যাই – এই বইটাতে হয়তো কিছু তথ্য পেতে পারেন তিতুমীরের ওহাবী কাম জিহাদী কাজকর্মের –
God’s Terrorists: The Wahhabi Cult and the Hidden Roots of Modern Jihad, Charles Allen।
এক ইসলামের সৈনিক জিহাদী জোশে সেই বই থেকে কিছু অংশ কপি করেছেন এখানে, অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে – Non-Muslim author’s biased terminologies at use throughout the text 🙂
কিন্তু এই লাইনগুলো ভাবনার মতো –
পাশাপাশি দেখুন –
ইত্যাদি।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ, এমন কিছুই চাচ্ছিলাম। শুধু আমি নিজে এই এই বার করেছি বলে কিছু লিখলে, বিশেষ করে রেফারেন্স ছাড়া প্রচলিত ধারনার বিপরীতে কিছু লিখলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা।
হিন্দু জমিদাররাও দেখা যায় মুসলমানদের প্রতি ধর্মীয় বিদ্বেষ মনোভাব পোষন করছিল। তীতুমির কট্টর ওয়াহাবি ধারায় দিক্ষীত হলেও নিঃসন্দেহে এ ব্যাপারটারও প্রভাব ছিল বলে মনে হয়।
জনাব গুবরে ফড়িং,
আপনার কাছে আমার ছোট্ট একটি প্রশ্ন, আপনি কি ইরাক-সিরিয়ার আইএসকে সমর্থন করেন?
যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনার সঙ্গে বিতর্কে যাব না। যদি না হয় তাহলে তিতুমীর বা শরীয়তউল্লাহর ‘আন্দোলন’ নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা হবে। ভালো থাকবেন।
@স্বকৃত নোমান,
হাসব না কাঁদব, তাই বুঝতে পারছি না।
আপনার প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে যাবেন; কিন্তু তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিনতোঃ ঠিক কি কারণে আপনার মাথায় এসেছে যে, আমি আইএসের সমর্থক হয়ে থাকতে পারি? আপনার পোস্টের সাথে একমত না হলেই আইএস সমর্থক?
তাছাড়া, উপরের মন্তব্যে করা ‘বেশীর ভাগ মানুষই খুব বড় আদর্শের জন্য যুদ্ধ করে না, নিজস্ব আংগিকে নিজের পরিমন্ডলের যুদ্ধটাই সে করে, তবু তা গুরুত্বহীন হয়ে যায় না, কেননা, এমন সব অনেক যুদ্ধ নিয়েই তো হয় সবার যুদ্ধ।’ — এই লাইনটি দিয়ে কি বুঝেছেন, তাও জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
তাছাড়া, ‘তিতুমীরের এই সাম্প্রদায়িক জেহাদি কর্মকাণ্ড দমনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হলো ইংরেজ সরকার।’– এই লাইনটিরও কিছু বিশ্লেষন আশা করছি, মানে, ইংরেজদের এত জনদরদি বলে মনে হল কেন, তাও জানাবেন কিন্তু পারলে। তিতুমীর না হয় খারাপ, কিন্তু এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ইংরেজরা উত্তম বলিয়া পরিগণিত হইবেন???
মুক্তমনায় স্বাগতম।
@তামান্না ঝুমু,
আগেও লিখেছেন। মানে, প্রথম পোস্ট নয়।
আমার এখন মনে হয় আমরা সাংস্কৃতিকভাবেই সাম্প্রদায়িক – হিন্দু, মুসলিম সবাই। আগেও ছিলাম, এখন আছি। মাঝে সাঝে ইংরেজবিরোধী আন্দোলন, কিংবা মুক্তিযুদ্ধ, শাহবাগ আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার – এধরণের কিছু ঘটনায় আমরা আশায় বুক বাধি, কিন্তু শেষ্পর্যন্ত আত্মসমর্পন করতে হয় সেই তিতুমীর কিংবা শফি হুজুরেই।
আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, সেখানে কিছু রেফারসেন্স হাজির করে বলেছিলাম বেবল তিতুমীর, হাজি শরিয়তুল্লাহরাই না, এমনকি বাংলার সুফীরা – যারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামের প্রসার ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হয় (যেমন খাজা মইনুদ্দিন চিস্তি, নিজামুদ্দিন আউলিয়া ও শাহ জালাল), তাদের মধ্যেও জিহাদের উপকরণ ছিল যথেষ্ট পরিমাণেই।
যদিও স্বকৃত নোমান তীতুমীরের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে লিখেছেন, তবে সে ধরনের সাম্প্রদায়িকতা কেবল মুসলিমদের মধ্যে ছিল না, ছিল হিন্দুদের মধ্যেও বহুল পরিমাণেই। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ইতিহাস-ভিত্তিক’ উপন্যাস লিখতে গিয়ে কেবল হিন্দু সন্ন্যাসীদের লড়াইকেই প্রাধান্য দিইয়েছিলেন; তাঁর রচনার বিষয়বস্তু করলেন, কোন মুসলিম ফকিরদের নামগন্ধও তাতে ছিল না । দেবী চৌধুরানীকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়েছেন, সত্যানন্দকে বীরের গৌরব দিয়েছেন, কিন্তু মজনু শাহ্র নামটি উল্লেখ করার উদারতা পর্যন্ত দেখাতে পারেননি। তার অনেক উপন্যাসই সাম্প্রদায়িকতাদোষে দুষ্ট। তিনি মীর মোশারফ হোসেনের ‘জমিদার দর্পন’এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, বলেছিলেন, ‘আমরা পরামর্শ দেই এ সময় এ গ্রন্থের বিররণ বন্ধ হউক’। সাম্প্রদায়িকতার উল্লেখ পাওয়া যায় এমনকি শরৎচন্দ্রের অনেকে লেখাতেও। যদিও এই শরতচন্দ্রই গফুরের মত চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু প্রবন্ধ লেখার সময় মুসলিমবিদ্বেষকে অগ্রাহ্য করতে পারেননি।
ব্যাপারটা ঠাকুর পরিবারের জন্যও সত্য। যেমন, দ্বারকানাথ তার সময়ে যথেষ্টই সাংস্কৃতিক-ভাবে অগ্রসর একজন মানুষ ছিলেন; শিল্প সাহিত্যের প্রতি ছিলো তার প্রগাঢ় অনুরাগ, কিন্তু তিনিও কৃষক শ্রমিকদের সমাবেশ, দাবী দাওয়া আর আন্দোলনকে তিনি কখনোই ভাল চোখে দেখতেন না। সেজন্যই দ্বারকানাথ আর তার ঘনিষ্ট বন্ধু ‘বাংলার রেনেসাঁর পথিকৃত’ রামমোহন একসময় নীলকরদের শোষণ উৎপীড়নের বিরুদ্ধে কৃষকদের গৌরবময় সংগ্রামকে ‘সংস্কারবদ্ধ মনের অদূরদর্শী আস্ফালন’ বলে বক্রোক্তি করেছিলেন । ১৮২৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর দ্বারকানাথ ইংরেজদের কাছ থেকে সুবিধাভোগী মুৎসুদ্দি-জমিদারশ্রেনীর অন্যান্য প্রতিভুদের (যেমন, রাজা রামমোহন, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ) সাথে কলকাতার টাউন হলে একটি সভায় মিলিত হয়ে নীলকর সাহেবদের সমর্থনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেন বলে নানা ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে সমস্ত হিন্দুবিপ্লবীদের কথা জানা যায় – অরবিন্দ, বাল গঙ্গাধর তিলক – এদের কাজ কারবার সাম্প্রদায়িকতাদোষে দুষ্ট ছিল। গঙ্গাধর তিলক সাম্প্রদায়িকতাকে গণসংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন – গণপতি উৎসব ,শিবাজি উৎসব প্রভৃতি পালনে উৎসাহিত করতেন। অরবিন্দ ঘোষ তো গীতা থেকে বিপ্লবের উপকরণ পেতেন এটা তো সবাই জানে।ধর্মের উপর মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাস্র কারণে বিপ্লবী অরবিন্দ বিপ্লব ফিব্লব সব বাদ দিয়ে ঘোষ রূপান্তরিত হলেন সাধক অরবিন্দে পরিণত হয়েছিলেন।
আশা করব স্বকৃত এগুলো নিয়েও ক্রমান্বয়ে লিখবেন।
মুক্তমনায় স্বগতম জানাচ্ছি।
@অভিজিৎ, @স্বকৃত নোমান
অভিজিৎ রায় আর স্বকৃত নোমান, উভয়ের বিশ্লেষণ, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিকেই সাধুবাদ জানাই। তবে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতার উদাহরণ বাংলাদেশের সময় বিবেচনায় অনেক মুসলিমদের মধ্যে প্রতিহিংসার সৃষ্টি করে যা হয়তো বা যৌক্তিক, তবে প্রত্যাশিত নয়। ইতিহাসের স্বার্থে, সত্যের খাতিরে তা উল্লেখ্ও হয়তো অনিবার্য। তবু ও এসব অপ্রিয় সত্য যেন সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে না দেয় তা ও বিবেচ্য হ্ওয়া প্রয়োজন।
।
যাহোক, স্বকৃত নোমানের মত পাঠ্য বই আমাকেও তিতুমীরকে বীর ভাবতে শিখিয়েছিল। লেখকের ইতিহাস সন্ধান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক চেতনার মূলোৎপাটনে সহায়ক হোক।
‘‘তিতুমীর ও ‘বাঁশের কেল্লা’র সুলুক সন্ধান” পড়ে আমার তাৎক্ষণিক মনে হলো বিশ্ববিদ্যারয়ের তিতুমীর হল আর তিতুমীর কলেজের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব উপস্থাপন কি সাম্প্রদায়িকতা দুষ্টে দুষ্ট হবে?
@অভিজিৎ বাবু ,
ঠিকই বলেছেন| বামপন্থী আদর্শ ঢোকার আগে, ভগৎ সিংহ, HSRA র আগে, বাংলা তথা ভারতের বিপ্লব প্রচেষ্টা মোটামুটি গীতাভিত্তিক ছিল| এই চিন্তাধারা প্রবর্তনের পান্ডা হলো স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হওয়া ভগিনী নিবেদিতা | পরজন্ম – ক্ষত্রিযত্ত্ব – আত্মার অবিনশ্বরতা প্রভৃতি আজগুবি ব্যাপার নিয়ে মাথা ফাটাফাটি হত ভালই| আমি এই সকল বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ বা দেশভক্তিকে অশ্রদ্ধা করছিনা| কিন্তু রাজনীতি ভুলভাল হলে, বিপ্লব এবং তার পরিনাম ভুলভাল হয়! সেইখান থেকেই সমালোচনা | কোথায় একটা পড়েছিলাম (বা শুনেছিলাম) অনুশীলন সমিতির সদস্যরা যখন কারাগারে, ইংরেজ পুলিশ দুষ্টুমি করে তাদের হাতে মার্কসবাদী লিটারেচার দেব শুরু করে যাতে তারা নিজেদের মধ্যে মার্ক্সবাদের দর্শন ও তার ইন্টারপ্রিটেশন নিয়ে তর্কবিতর্ক এবং ঝগড়াঝাটি করে মরে! সত্যিমিথ্যা জানিনা, ব্যাপারটা পড়ে বেশ মজা লেগেছিল!
হাজী শরিয়তউল্লাহও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন বীর হিসেবেই পরিচিত; তো ফরায়েজী (নামটি খেয়াল কইরা) আন্দোলন করেও কি করে হয়ে গেলেন ইতিহাসের নায়ক? একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তারা সবাই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্যই লড়েছিল?
একাত্তরে যেমন যে কৃষকটি, তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল যে পাক বাহিন্ তার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে, বা, বৈষম্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল যারা, তারাও করেছিল যুদ্ধ, আর এগুলি ছিল খুবই নিজের যুদ্ধ। বেশীর ভাগ মানুষই খুব বড় আদর্শের জন্য যুদ্ধ করে না, নিজস্ব আংগিকে নিজের পরিমন্ডলের যুদ্ধটাই সে করে, তবু তা গুরুত্বহীন হয়ে যায় না, কেননা, এমন সব অনেক যুদ্ধ নিয়েই তো হয় সবার যুদ্ধ।
তিতুমীর বা হাজি শরিয়তউল্লাহ তাদের ধর্মীয় বৃত্তে থেকেই যুদ্ধ করেছেন, ঐ যুগে এই বৃত্তের বাইরে তাদের দেখতে চাওয়া কি খুব স্বাভাবিক চাওয়া? কিন্তু তিনি যুদ্ধ করেছেন তো সত্য? ব্রিটিশদের তাড়াতে চেয়েছেন তো সত্য? অসীম সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তো সত্য? তাদের যুদ্ধ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল কি না? অন্য সব লড়িয়েদের?
তাহলে এই আপনার উপসংহার? ইংরেজগণে যে সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করে না! আজকের টনি ব্লেয়ার, ক্যামেরুনদের দেখিয়া তো তেমনই প্রতীতি হয়! কি আর করা!
তৎকালীন বাঙলায় যে সমস্ত জমিদাররা জমিদারি করত তাদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা কেমন ছিল বলে আপনার ধীর গতির অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন আমাদের একটু জানাবেন কি?
@সাইফুল ইসলাম,
অনেকদিন আপনার লেখা পাই না কেন?
@তামান্না ঝুমু,
আপনাদেরগুলো পড়েই শেষ করতে পারি না। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
বেশি মাত্রাতেই ছিল বলে মনে হয় | শুধু হিন্দু বেশি ছিল বললে ঠিক বলা হয়না | উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই প্রধানত জমিদার থেকে সমাজের মাথা হত | মুসলমান জমিদাররাও বেশিরভাগ মোগল পাঠান তুর্কীদের বংশধর ছিল| নিম্নবর্ণের নমশুদ্র ইত্যাদিদের বা বাঙালি জেলে-জোলার ব্যাটা যারা মুসলমান হয়েছিল, তাদের আর জমিদারী করা হয়ে ওঠেনি|
@অনামী,
আপনি কিচ্ছু জানেন না। এতদিন অপেক্ষা করেও উত্তর যখন পাচ্ছি না লেখকের কাছ থেকে তখন ধরে নিচ্ছি তিনি যে অর্ধশত বই ধীর গতিতে পাঠ করে এই লেখাটি প্রসব করেছেন সেখানে এই ব্যপারে কিছু ছিল না। উনি অর্ধশতাধিক বই পাঠ করেছেন এই বিষয়ে। আপনি কয়টি পড়েছেন যে এমন চোটপাট দেখাচ্ছেন?