আন্তর্জালের “খাসি” নামকরণের মাহাত্ন্য বোধ করি সবাই জানেন। রাজাকারদের দোসরদের ছাগু বললে যতটা অপমানবোধ করে, কোনো অবিশ্বাসীকে খাসি বলা হেতু অপমানবোধ তার চাইতে অনেক বেশি হয় স্বাভাবিকভাবেই। যদিও জানা তথাপি আলোচনার সুবিধার্থে খাসির প্রচলিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছি-
খাসিঃ আমি যতদূর জানি সামহোয়্যার ইন ব্লগে একজন স্বনামধন্য ব্লগারের নামের প্রারম্ভে খাসি যুক্ত করে টিটকারি মারা হতো। সেখান থেকেই খাসি নামকরণের উৎপত্তি। এখানে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয় ছাগুরা প্রকাশ্যে রাজাকারদের পক্ষে ঢাল ধরে, আর খাসীরাও একই কাজ করে একটু ঘুরিয়ে!
ব্যাখ্যাঃ আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাইদি নিঃসন্দেহে রাজাকার। আর ছাগুদের কাজই হচ্ছে এটা প্রচার করা যে সাইদি রাজাকার নয়, বরং মাসুম বাচ্চা, ইসলামের সেবক ইত্যাদি ইত্যাদি (অবচেতনে কিন্তু মেনে নিচ্ছে গণিমতের মাল, যুদ্ধবন্দীনী ধর্ষণ এসব অধুনা সমাজব্যবস্থায় ঘৃণিত 😉 )। অন্যদিকে যেসব মুক্তমনারা হিউমেন রাইট ওয়াচ কিংবা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত তারা সেসব প্রতিষ্ঠানের শেখানো বুলি তোতাপাখির মতো আওড়ান বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়! তারা ফাঁসির বিপক্ষে নানারকমভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিশাল লেকচার ঝাড়েন যা মোটামুটিভাবে রাজাকারদের পক্ষেই যায়। এ কারণে তাদেরকেও একই গোত্রভুক্ত করা হয়েছে।
এখন আসি কীভাবে খাসির কথা রাজাকারদের পক্ষে যায় সে প্রশ্নে…
এটা খুবই সহজ। মানবতার দোহাই দিয়ে “কোনো মানুষকেই ফাঁসি দেয়া যাবেনা” – এটুকু বলার মাধ্যমে কার্যত রাজাকারদের ফাঁসির বিপক্ষেই বলা হয়। আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ জন করে মানুষ দুর্ঘটনায়, অপঘাতে, রাজনৈতিক হামলায় মৃত্যুবরণ করেন। সেমতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গলার স্বর ৩৬৫ দিনই উঁচু থাকার কথা। অথচ হয় তার উল্টো! এ থেকেই কি বোঝা যায় না কে কার পরপাস সার্ভ করছে?
সমস্যাটা যেহেতু “ফাঁসি হ্যাঁ” আর “ফাঁসি না” নিয়ে তো আসুন, ফাঁসির ব্যাপারে একটু ইতিহাস চর্চা করে আসি!
ফাঁসি কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ছিলো না। এটা বৃটিশদের শেখানো। বৃটিশরা আসার আগে এখানটায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো চারভাবে।
১. শূলে চড়ানো (লম্বা বল্লমের উপরে বসায়া দেয়া, যেন বল্লম পশ্চাৎদ্দেশ দিয়া ঢুকে আর মাথা দিয়া বের হয়)
২. হাতির পায়ের নিচে ফেলে দেয়া
৩. ধারালো অস্ত্রের এক কোপে শরীর হতে ধর আলাদা করে ফেলা
৪. কামানের নলের সাথে বেঁধে কামান দাগানোর মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়া
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারো উপর দয়া করতে চাইলে ৩ নম্বরটা আর খেপা থাকলে ৪ নম্বরটা ব্যবহার করা হতো।
ইউরোপিয়ানরা এদিকে আসার আগেই মৃত্যুদন্ড নিয়ে অনেক গবেষণা সেরে ফেলেছিলো। পুড়িয়ে মারা, কুপিয়ে মারা, আটকে রেখে তিলে তিলে মারা, বিষ খাইয়ে মারা, গিলোটিনে শিরোচ্ছেদ, কুড়াল দিয়ে কল্লা কাটা এসব পার করে তাদের তখন মনে হয়েছে, ফাঁসি সবথেকে কম বর্বরোচিত উপায়ে মৃত্যুদণ্ড। তারা এসে আমাদেরকে এই ফাঁসি তত্ত্ব শেখালো, আমরা মেনে নিলাম। আমরা যখন ইংরেজদের বিতাড়ন পরবর্তী লাভ-লোকসানের হিসেব কষতে ব্যস্ত, ইউরোপিয়ানরা (সেই সাথে আমেরিকান ও রাশিয়ানরা) তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে (এ পয়েন্টটা মাথায় রাইখেন)।
এই সময়টায় অর্থাৎ আশির দশকের দিকে ইউরোপ আমেরিকায় এক বিরাট জ্ঞানী এবং তাত্ত্বিক শুশীল সমাজ তৈরী হলো, যাদের উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বাতিল করা।
এরাই গত বিশ পঁচিশ বছর ধরে বিভিন্ন রকম প্রভাব খাটিয়ে ইউরোপের অধিকাংশ দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাদন্ডের বিধান পাশ করিয়েছে। আমেরিকাতেও ৩২ টা স্টেটে মৃত্যুদন্ড আছে, বাকি ২০ টা তে নেই। আমি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাথে একাত্নতা পোষণ করি একটা পয়েন্টে এসে! আসলেই সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। এটা গুরু অন্যায়ে লঘু দণ্ড। তাদের যা অপরাধ তাতে গণধোলাই কিংবা ইউরোপে এক সময় যা প্রচলিত ছিলো- উঁচু কোন টাওয়ারের সর্বোচ্চ কক্ষে (যেখানে জানাল মানে হচ্ছে নাগালের বাইরে ৮ইঞ্চি বাই ৮ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা) খাবার এবং পানি ছাড়া আটকে রেখে তিলে তিলে মারা টাইপের শাস্তি হলে উপযুক্ত হতো… :yahoo:
আরেকটা বড় রকমের সমস্যা হলো, ইউরোপ বা আমেরিকার কারাগার ব্যবস্থাপনার সাথে আমাদের মত দেশের কারাগার ব্যবস্থাপনার পার্থক্য যেনো স্বর্গ আর নরক! আমাদের দেশের জেলসমূহে মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সবই মেলে। কে কি ধরণের অপরাধী তার চাইতে বড় ইস্যু হচ্ছে কার কত টাকা। আমরা যদি আজ নিজামীকে ফাঁসি না দিয়ে আজীবন কারাবাসের ব্যবস্থা করি, নিজামী চাইলে জেলে বসেই দল চালাতে পারবে। ইউরোপ বা আমেরিকায় এই ধরণের অপরাধীর জন্য হাই সিকিউরিটি আইসোলেটেড সেল আছে, যা অনেকটা ব্যাঙ্কের ভল্টের মত ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। এমতাবস্থায় মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধীকে জেলে আজীবন রাখা মানেই স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত সে আরামদণ্ডে দণ্ডিত হলো।
সেক্ষেত্রে ফাঁসির চাইতে মানবিক আর কোনো দণ্ড হতে পারে না; এটাই ঠিক। ঐ পশ্চিমা মানবতাতত্ত্ব আমাদের ব্যবস্থাপনার সাথে কোনোভাবেই খাপ খায় না।
মোদ্দা কথা, হিউম্যান রাইটস হচ্ছে ইউরোপিয়ান সুশীলদের সেই সংগঠন যারা গোড়া থেকেই মৃত্যুদন্ড বিরোধীতা করে আসছে। কিন্তু এদের সমস্যা হচ্ছে, যখন তালিবান বা আইএস ধর্মের নামে খুন করে বা আফ্রিকায় সম্পদ লুন্ঠনের জন্য জাতিগত যুদ্ধ উস্কে দেয়া হয় বা আলবেনীয়া-কাসাভো-বসনীয়ায় এথনিক ক্লিনজিং-এর নামে মুসলিম নিধন করা হয়, হিউম্যান রাইটস এগুলোকে মনে করে কোলাটোরাল ড্যামেজ (কোন বড় উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে ক্ষয়ক্ষতি মেনে নেয়া হয়)। যখন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়, শুধু তখন তারা মানবতার লংঘন খুঁজে পায়! :negative:
এখানে আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কী সেই উদ্দেশ্য যার কারণে হিউমেন রাইটস মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফ্রিকায় সংঘঠিত পারস্পরিক হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়?
এর জবাবে বলা যায়- এই হিউম্যান রাইটসের বড় বড় কর্তাদের শেয়ার আছে সমরাস্ত্র শিল্প, খনিজ আহরণ, ব্যাংকিং ইত্যাদিতে। ধরা যাক আফ্রিকার ছোট্ট দেশ লাইবেরিয়া। গরীব দেশ কিন্তু খনিজে সমৃদ্ধ। এখন প্রথমত বলা হলো, এরা অসভ্য প্রযুক্তিবান্ধব নয় তাই এরা গরীব। তাহলে এদেরকে সভ্য করতে হবে। দেশটাতে কয়েকটা গোত্র বাস করে যারা শত শত বছর যাবত পারস্পরিক মারামারি করে আসছে। যে কোন একটা গোত্রকে সিলেক্ট করা হবে, যারা দেশের উন্নতি করে উল্টিয়ে ফেলবে! কোন একটা দেশের (অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমেরিকা) সহায়তায় সেই গোত্রকে উন্নত অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হবে, যা দিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করবে, খনিজ তুলবে, দেশ গড়বে…
প্রাথমিকভাবে সিলেক্টেড গোত্র অস্ত্র পেয়ে বাকিদের পাইকারী হারে খুন করে একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ে নিবে। এবার খনিজ আহরণ করার পালা। ইউরোপ বা আমেরিকা বা অধুনা চায়না থেকে কোম্পানি যাবে যারা শেয়ারে খনিজ তুলে দেবে। ধরা যাক লাইবেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধান খনিজ হীরা। ডিল হবে- সরকার পাবে ৫০, কোম্পানি পাবে ৫০। এই হীরা ধুয়ে তো আর পানি খাওয়া যাবে না! বিক্রি করতে হবে। কিনবে আবার ইউরোপের হীরা কার্টেল, যাদের সিস্টার কনসার্ন হচ্ছে ঐ ৫০শতাংশ শেয়ার নেয়া হীরা উত্তোলক কোম্পানী। এদিকে বাকি গোত্রগুলোও চুপটি করে বসে না থেকে কারো না কারো কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং আগের মার খাওয়ার শোধ তোলার চেষ্টা করবে। সরকারের উপরে হামলা চলতে থাকবে, হামলাকারীরা “পাখির চোখ” করবে ঐ সরকারী ৫০ শতাংশ হীরাকে। কোম্পানীগুলোর প্রস্তাব হবে ওপেন, ক্ষমতায় যেই আসুক তাদের সাথেই সেম চুক্তি থাকবে। এদিকে হিউম্যান রাইটসের বক্তব্য হচ্ছে, যে ক্ষমতায় আসবে সে’ই দেশের খনিজ সম্পদ দিয়ে দেশ গড়বে। দেশ গড়ার মত ভালো কাজ যেখানে হচ্ছে, সেখানে কে ক্ষমতায় গেলো আর ক্ষমতায় যেতে গিয়ে কত হাজার মারলো সেটা বিষয় নয়। ব্যবসা, সভ্যতা এবং উন্নতির জন্য কোলাটোরাল ড্যামেজ… আমরা একে ব্যবসার একটা পলিসিও বলতে পারি; যদিও পলিসিটা ভয়ঙ্কর… 🙁
এখন আসি আমাদের দেশ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ স্টেবল; এর সভ্যতা আছে, কোনো রকম যুদ্ধ টুদ্ধ নেই আবার গলাধঃকরণ করার মত খনিজও নেই। দেশে অপরাধ হয় মারাত্মক রকমের বেশি। আর ঘাঘু অপরাধীরা দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে ফাঁসি দিয়ে দেয়া হয়। এটা মানবাধিকার সংস্থার চোখে সভ্যতার অপমান! অর্থাৎ যেখানে ব্যবসা আছে, সেখানে মানবতা দরকার নেই; যেখানে ব্যবসা নেই, সব মানবতা তাদের উপরে উপুর করে ঢেলে দে…
তাদের ভাবখানা অনেকটা এমন- আপনি আপনার দেশে আগামীকাল থেকে সমস্ত রকমের মানবতা বজায় রাখবেন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। পর্শুদিন থেকে ফাঁসি বন…
এইটা কোনোভাবে কি সম্ভব?
শেষ কথাঃ পৃথিবীতে যে কোনো যুদ্ধে যারা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি প্রদানের কথা আমরা সবাই জানি। নিজের বেলায় ষোলো আনা আর আমার বেলায় আট আনা? এটা আমি মেনে নিবো কেনো?
যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের ডেট পড়লে আমেরিকা হতে ফোনকল মাগনা আসে না। এখন জামাত-শিবির যদি ইউরোপভিত্তিক হিউমেন রাইটস কে কিনে নেয় তাহলে এ সংস্থার ছায়াতলে যারা আছেন তারা জামাত-শিবিরের পারপাস সার্ভ করবে সেটাই স্বাভাবিক…
তবে আমরা কিন্তু “রাজাকার ইস্যুতে, মানবতা মুছে ফেলি টয়লেট টিস্যুতে…”
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ইমরান ওয়াহিদ
সম্পাদনাজনিত ব্যাখ্যাঃ আমি আরেকজনের কাছে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই না করেই সরাসরি ব্লগে দেয়ার মতো বোকামি করেছি। এর জন্য সকালেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। যে অংশটুকুতে তথ্যগত ত্রুটি ছিলো সে অংশ না থাকলেও লেখার মূলভাবের হেরফের হয়না। আমার প্রশ্ন হলো আরো কয়েকটা পয়েন্ট থাকলেও সেদিকে কেউ যাচ্ছেনা কেনো? আমার দেয়া শিরোনামটা কি ভুল? ভুল হলে কেনো ভুল?
রাজাকারদের তো যঠেষ্ট মানবতা দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে আমার।
শিরোনামটা আপনি ব্যবহার করেছেন বটে তবে আপনার ‘দেয়া’ কিন্তু নয়! এটি ছড়াকার আকতার আহমেদ এবং মৃদুল আহমেদের ছড়া বইয়ের নাম! এভাবে তাদের রচিত লাইন শিরোনামে ব্যবহার করার জন্য আগে থেকেই পোস্টে কৃতজ্ঞতা স্বীকার প্রয়োজনীয় ছিলো, আপনি করেন নি। এখন নিজের দেয়া বলছেন দেখে প্রসঙ্গটা তুলতে বাধ্য হলাম।
বুঝতে পারছি যাচাই না করে লেখার কারণে কিছু তথ্যগত ভুল এবং আমার মনের ভাব প্রকাশের দূর্বলতা হেতু লেখাটি আধাখেঁচড়া টাইপের হয়ে গেছে। এটাও উপলব্ধি করেছি যে মাথায় রাজ্যের ঝামেলা নিয়ে আসলে বস্তুনিষ্ঠ লেখা সম্ভব না…
আশা করি পরবর্তীতে এ শিক্ষা কাজে লাগাতে পারবো…
মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
ভালো থাকবেন 🙂
সৈকত চেৌধুরী@ শন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ছাগু শব্দের উৎপত্তি জানার যেমন আগ্রহ থাকে ঠিক তেমনি খাসি শব্দের উৎপত্তি জানার আগ্রহও অনেকের থাকতে পারে। আর আমি তো কারো নাম এখানে উল্লেখ করিনি, সেক্ষেত্রে মুক্তমনার কোন নীতিমালার সাথে লেখাটি সাংঘর্ষিক তা জানালে প্রীত হতাম।
সম্পুর্ন বাজে একটা লেখা। এটি মুক্তমনার নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। অন্য কোন ব্লগে কাকে কী বলা হত সেগুলো মুক্তমনায় টেনে আনার কী মানে তা পরিষ্কার নয়। লেখাটি ডিলিট করার জন্য লেখককে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
ক্ষমা করবেন। খাঁসি সংক্রান্ত আলাপ দিয়ে শুরু করা এ লেখাটা অপ্রাসঙ্গিক এবং বালখিল্য মনে হলো।
ফেসবুকের সাথে মুক্তমনার পার্থক্যটা মনে রাখতে হবে। এখানে এই জাতের বড় ধরনের তথ্যগত ত্রুটি একেবারেই খাপ খায় না। যে কোন তথ্যই আজকাল যাচাই করা ক’মিনিটের ব্যাপার মাত্র……
বেশ বড়সড় কিছু তথ্যগত ভুল আছে।
– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুধু ইউরোপিয়ানরা করেনি। ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া সকলে করেছিল। এটা খুব বড় ভুল নয় বাকিগুলার তুলনায়।
– ইলেক্ট্রিক চেয়ার ব্যাবহার শুরু হয়েছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধের বহু আগে, প্রথম নিউ ইয়র্কে, ১৮৯০ সালে। ইউরোপে এই পদ্ধুতি কোথাও ব্যাবহার হয়েছে বলে শুনিনি।
– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধপরাধীরা মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলে মোটামুটি সকলকে ফাঁসীই দেওয়া হয়েছে, ক্ষেত্রে বিশেষে ফায়ারিং স্কোয়াড, ইলেক্ট্রিক চেয়ারে নয়। ইলেক্ট্রিক চেয়ার শুধুমাত্র ৬ জন জার্মান স্পাইকে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকায়, তা যুদ্ধপরাধ চার্জে নয়।
– বিষাক্ত ইঞ্জেকশন ব্যাবহার আমেরিকায় প্রথম শুরু হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধেরও বহু পর, ১৯৭৭ সালে প্রথম। এর সাথে ইলেক্ট্রিক চেয়ার অপ্রতূলতার সম্পর্ক নেই। ইলেক্ট্রিক চেয়ারের গ্রহনযোগ্য অপেক্ষাকৃত মানবিক পদ্ধুতি হিসেবে এর ব্যাবহার শুরু হয়।
মৃত্যুদন্ড দিলেই অপরাধ কমে আর না দিয়ে শুধু কারাদন্ড দিলে অপরাধ বেড়ে যায় এই ধরনের ধারনা বদল হবার বহু বাস্তব তথ্য প্রমান পরিসংখ্যান আছে। এটাকে শুধু মাত্র তাদের বেলায় পরের বেলা……সুশীল সমাজের প্রভাব খাটানো…… এভাবে বিবেচনা করাটা বেশ শস্তা এপ্রোচ।
কোন দেশে নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড থাকলে সেটার প্রয়োগ সাজা পদ্ধুতি বদল না হওয়া পর্যন্ত থাকবে, এটাই মোদ্দা কথা। এর সাথে মানবিকতা, ইউরোপ আমেরিকা কি করেছে বা করছে সেগুলির তেমন সম্পর্ক নেই। ইউরোপ আমেরিকার অভিজ্ঞতা বিবেচ্য হবে আইনী গবেষনার ক্ষেত্রে।
@আদিল মাহমুদ, অসংখ্য ধন্যবাদ ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য। একজন তথ্য দিলো আর আমি সেগুলো অন্ধের মতো ব্যবহার করেছি। তাড়াহুড়োয় যাচাই করা হয়নি… :-X
ঠিক করে দিচ্ছি…
@আদিল মাহমুদ ভাই,
এই লেখাতে তথ্য সরবরাহের ভার আমার ছিলো, তথ্যের ভুলের ব্যাপারে লেখকের দোষ অর্ধেকের অনেক কম। আমি অত্যন্ত দুঃখিত ভুল তথ্য উপস্থাপন করার জন্য।
মানছি।
কিন্তু লেখার মূল যুক্তি নিয়ে তো কিছুই বললেন না। ঐকপত্য বোধহয় বলতে চাচ্ছেন, “বাংলা দেশের বাস্তবতাকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে কেন?
@ইমরান ওয়াহিদ,
লেখার মূল যুক্তি নিয়ে বলিনি এটা ঠিক নয়।
আগের কমেন্ট থেকে আবারো কোট করছিঃ
– কথা অত্যন্ত পরিষ্কার। যুদ্ধপরাধীদের জন্যই আমাদের দেশে হঠাত করে ফাঁসী বা মৃত্যুদন্ড প্রথা আরোপ করা হয়নি। মৃত্যুদন্ড আগে থেকেই ছিল……বহু লোকে নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে শাস্তি পেয়ে ফাঁসীতে ঝুলেছে, মৃত্যুদন্ড সাংবিধানিকভাবে রোহিত করার আগ পর্যন্ত আরো অনেকে ঝুলবে। যুদ্ধপরাধীদের জন্য যেমন বিশেষ কঠোর সাজার প্রশ্ন আসে না তেমনি বিশেষ মানবতার প্রশ্ন আসে না। এটার জন্য আমেরিকা ইউরোপ কি করেছে না করেছে……সাত কাহন দেখার কোন দরকার নেই। সম্পূর্ন ইস্যু বিহীন বিতর্ক।
অনেক দেশের মত মৃত্যুদন্ড প্রথা বিলুপ্ত করতে চাইলে সেটা এক কথা। বিতর্ক হতে পারে সেটা নিয়ে। যে প্রথা আইনসিদ্ধ ভাবে বছরের পর বছর আছে সে প্রথায় বিশেষ কিছু লোকে ঝুললে মানবতার সমস্যা হবে এই ধরনের আজগুবি ইস্যুতে বিতর্কের কিছু নেই।