হিন্দুত্ববাদিদের ঠিকেদারিত্বে ভারতীয় দর্শন এবং অতীত কি নিরাপদ?
হিন্দুত্ববাদিরা যে হিন্দুধর্মের সন্ধানে, তা অস্তিত্বহীন অতীত। বরং তা ইসলাম বা আব্রাহামিক মনোলিথিক ধর্মগুলির ভারতীয় সংস্করন।
একটু উদাহরন দিচ্ছি। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের তক্ষশীলার শিক্ষক এবং পরবর্ত্তী জীবনের রাজনৈতিক গুরু বিষ্ণুগুপ্ত ( চানক্য) তৎকালীন ব্রাহ্মণ আচার্য্য। কিন্ত কি আশ্চর্য্য! চন্দ্রগুপ্ত মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়সে রাজত্ব ত্যাগ করে জৈন ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন! ভিক্ষু হওয়ার আগে উনি চানক্যর কাছে যান। চানক্য মোটেও অসন্তুষ্ট হন নি যে তার প্রিয়তম ছাত্র ব্রাহ্মন্য ধর্ম না নিয়ে জৈন ভিক্ষু হচ্ছে। তার আক্ষেপ ছিল- এই সব ভাববাদি দর্শনগুলি ভারতের দুর্বল রাজনৈতিক ভিত্তির মূল কারন। চন্দ্রগুপ্তের প্রধান অমর্ত্য ছিলেন রাক্ষস। তিনি আবার বৌদ্ধ। চন্দ্রগুপ্ত পুত্র বিম্বিসার ছিলেন আরেক নাস্তিক দর্শনের অনুগামী-অভাজিকা। যা আজ লুপ্ত। বিম্বিসার পুত্র সম্রাট অশোক আবার বৌদ্ধ ধর্মের জন্য নিজেকে উৎসর্গিত করলেন।
অর্থাৎ প্রাচীন ভারতের দিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই?
প্রথমত একাধিক জীবন দর্শনের সমাহার। সেখানে নাস্তিক, আস্তিক, ভিক্ষু-সব ধরনের আধ্যাত্মিক জীবনের স্বাধীনতা।
দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ন -পারিবারিক বা রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে কিছু ছিল না । চন্দ্রগুপ্ত, বিম্বিসার, অশোক-পিতামহ থেকে দৌহিত্র-সবাই যে যার নিজের ধর্ম বেছেছেন। অর্থাৎ এরা নিজেদের আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমে নিজেদের মার্গে এসেছেন। এমন কি স্ত্রীর ধর্মও স্বামীর ধর্ম থেকে আলাদা হত। অর্থাৎ আজকে যে ভেঁড়ার পালের ধর্ম আমরা দেখি-যে সবাইকে এক পথ অনুসরন করতে হবে-প্রাচীন ভারতে এই ধরনের ধর্মীয় অত্যাচারের চিহ্ন এসেছে অনেক পরে। আদিতে সবার মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা ছিল-সবাই নিজের মত করে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে নিত।
এই আধ্যত্মিক বা ধর্মীয় স্বাধীনতার রাজনৈতিক অধিকার লুপ্ত হতে শুরু করে গণরাজ্য গুলির বিলুপ্তির সাথে সাথে। প্রাচীন ভারতের এই ধর্মীয় স্বাধীনতার সাথে, গণরাজ্যগুলিতে মানুষের স্বাধীনতার বিশেষ সম্পর্ক আছে। ষোলটি আদি জনপদগুলিতে গণতন্ত্রের অস্তিত্বের কারনেই প্রাচীন ভারতে সহস্র দর্শন শতপুষ্পে প্রস্ফুটিত। কিন্ত আস্তে আস্তে গণরাজ্য গুলিতে গণপরিশদ ক্ষমতা হারাতে শুরু করলে সম্রাটের হাতে অধিক ক্ষমতা আসে। রাজধর্ম ক্রমশ প্রজাদের ধর্মে পরিনত করার একটা প্রবণতার জন্ম হয়।
জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই । কোন ধর্ম, বিজ্ঞান বা যুক্তি দিয়ে “জীবনে কি করিতে হইবে বা করা উচিত” তার উত্তর খোঁজা অসম্ভব। কারন এটি একটি অর্নিয়াক প্রশ্ন। আবার আমরা যা কিছু করছি-প্রতিটা মুহুর্তে আমাদের সিদ্ধান্ত, আমাদের জীবনের “আপাত উদ্দেশ্য”-অর্থাৎ যেটিকে আমরা উদ্দেশ্য বলে মনে করছি-সেটাই আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তর আসল চালক।
এই ধাঁধা বা পারাডক্স মানবজীবনের সব থেকে বড় ট্রাজেডি এবং বৈচিত্রের ও মূল কারন। জীবনের উদ্দেশ্যই আমাদের চালনা করছে-আবার এদিকে জীবনের উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তার কোন উত্তর পাওয়া সম্ভব না ।
ফলে প্রত্যেকের জীবন অজানার উদ্দেশ্যে তার নিজস্ব যাত্রা। প্রাচীন ভারতে এই জন্য প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব আধ্যাত্মিক যাত্রাপথের স্বাধীনতা পেয়েছে।
ইসলাম বা খ্রীষ্ঠান ধর্ম মূলত “সাম্রাজ্য” প্রতিষ্ঠার ধর্ম । যদিও এই দুই ধর্মের শুরু “সাম্রাজ্যর” বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই। ফলে এই দুই ধর্ম মানুষকে তার নিজস্ব পথের স্বাধীনতা দেয় নি-জনগনকে ভেড়ার পাল বানিয়ে, রাজ্য শাসন করাই আব্রাহামিক ধর্মের মূল উদ্দেশ্য।
ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদের উৎস লোকমান্য তিলক এবং বিবেকানন্দের হাত ধরে। হিন্দু জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দু পরিচয়ের ভিত্তিতে গৌরবান্বিত হওয়া-যাতে লোকেরা খ্রীষ্ঠান বা মুসলমান না হয়। এর থেকে যে কাল্পনিক হিন্দু ধর্মের বা সনাতন ধর্মের আমদানী হয়-তার সাথে ইসলাম বা খ্রীষ্ঠান ধর্মের ভেড়াল পালের গোষ্ঠিবাজির মিল আছে। প্রাচীন ভারতের ধর্মীয় উদারতা বা স্বাধীনতা কোনটাই হিন্দুত্ববাদিদের সনাতন ধর্মে নেই।
বর্তমানে হিন্দুত্ববাদিরা যে সনাতন ধর্মের স্বপ্নে বিভোর-সেরকম কিছু ভারতে ছিল না । যেটি ছিল, তা হচ্ছে নিজস্ব আধ্যত্মিক জীবন নির্বাচনের সম্পূর্ন স্বাধীনতা। হিন্দুত্ববাদিদের সনাতন ধর্ম আসলেই ইসলাম বা খ্রীষ্ঠ ধর্মের আদলে তৈরী অলীক কাল্পনিক এক ধর্ম।
ধর্ম কোন ism নয়, জীবনের গতির আঞ্চলিক অনুশাসনের ক্রমবর্ধিত ধারা। সেখানে বৌদ্ধ, হিন্দু উভয়ই সম্পৃক্ত। যখন যেমন ধারা যে ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেই ভাবেই ছড়িয়েছে। কোন এক সময়ে বৌদ্ধদের প্রচার দেশে বিপুল আকার ধারণ করতে চলেছিল সেই সময়ে আদি শঙ্করাচার্য কোমরে গামছা বেঁধে জাইগানটিক অ্যান্টি ফোর্স শক্তি নিয়ে বৈদিক বাদকে অস্ত্র করে সারা ভারতবর্ষে প্রচারে সাফল্য অর্জন করলেন। বর্তমান সমাজে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রতিযোগীতায় কোন ধর্মই কাজ করেনা। বেশীর ভাগ লোকই হিন্দু বা মুসলিম শব্দের মানেই বোঝেনা। পারিবারিক জন্মসূত্রতেই ধর্মের পরিচয় দিয়ে খালাস হয়ে যায়। আপনিযে তথে্যর উপর ভিত্তি করে এগোচ্ছেন তাতে কোন এক জায়গায় এসে বিবেকানন্দকেও হয়তো condemn করতে হবে। @ বিপ্লব পাল।
নিজস্ব আধ্যত্মিক জীবন নির্বাচনের স্বাধীনতা কিন্তু এখনো আছে, অন্তত এখন পর্যন্ত। হিন্দু পরিবারে মধ্যে সবাই যে একই সম্প্রদায়ে বিশ্বাসী হবে তার কোন মানে নেই। আজকের শহুরে হিন্দু মধ্য বিত্ত পরিবারে আকছার দেখা যায়, কেউ হয়েত বিশ্বাসী, কেউ নয়, আবার বিশ্বাসীদের মধ্যেও অনেক আলাদা আলাদা বিশ্বাস। আজকাল আনেকেই নিজেদের পরিচয় দেন, spiritual but not religious বলে। ভারতে বৌদ্ধরা জনসংখ্যার ১-২ % হবে, কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের বা বৌদ্ধ ধর্মে ঘেঁষা mindfulness meditation retreat গুলর জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলিতে মূলত হিন্দুরাই কিন্তু যায়।এবং এতে সামাজিক বাঁধার সুর কিন্তু পাওয়া যায় না।
একমত। মজার বিশয় হল, এই জীবনের পরম উদ্দেশ্য না থাকার মত ভাল আর কিছুই নেই। আমরা স্বাধীন নিজেদের মত করে জীবনের মানে খুঁজে নিতে, আবার জীবনের যে মানে খুঁজতেই হবে তারও কোন আবশ্যকতা নেই!
এ বিশয় আরও জানার আগ্রহ থাকল। তিলক, বিবেকানন্দ ও গীতা, নিয়ে যা অল্প কিছু বলেছেন তা খুবই ইন্টারেস্টিং।
বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় প্রকৃতপক্ষে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতিভূ, তিনি বেদকে ঈশ্বরের বানী বলে স্বীকার করেননি, হিন্দু ধর্মের সকল অনৈসর্গিক বা অলৌকিক ঘটনাকে অমূলক প্রমাণ করেও হিন্দু ধর্মের নৈসর্গিক বা লৌকিক ভিত্তির উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ছিলেন সৎ সাহসী। তিনি আব্রাহামিক ধর্মসমূহের ঈশ্বরের ধারনাকে শিশুসুলভ বলে অভিহিত করেছেন— “…যদি কেহ প্রাচীন য়িহুদীদিগের দৃষ্টান্ত দেখাইয়া বলেন যে, তাহারা প্রাচীন গ্রীক প্রভৃতি জাতির অপেক্ষায় সভ্যতায় হীন হইয়াও ঈশ্বরজ্ঞান লাভ করিয়াছিল, তদুত্তরে বক্তব্য এই যে, য়িহুদীদিগের যে ঈশ্বরজ্ঞান বস্তুতঃ ঈশ্বরজ্ঞান নহেন। জিহোবাকে আমরা আমাদের পাশ্চাত্ত্য শিক্ষকদিগের কৃপায় ঈশ্বর বলিয়া বিশ্বাস করিতে শিখিয়াছি, কিন্তু জিহোবা য়িহুদীদিগের একমাত্র উপাস্য দেবতা হইলেও ঈশ্বর নহেন। তিনি রাগদ্বেষপরতন্ত্র পক্ষপাতী মনুষ্যপ্রকৃত দেবতামাত্র। পক্ষান্তরে সুশিক্ষিত গ্রীকেরা ইহার অপেক্ষা উন্নত ঈশ্বরজ্ঞানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। খৃষ্টধর্ম্মাবলম্বীদিগের যে ঈশ্বরজ্ঞান, যিশু য়িহুদী হইলেও, সে জ্ঞান কেবল য়িহুদীদিগেরই নিকট প্রাপ্ত নহে। খৃষ্টধর্ম্মের যথার্থ প্রণেতা সেণ্ট পল। তিনি গ্রীকদিগের শাস্ত্রে অত্যন্ত সুশিক্ষিত ছিলেন।” আব্রাহামিক ধর্ম হিসেবে ইসলামের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। ইসলাম সৃষ্টিকর্তার মনোনীত ধর্ম…… একথা কোন বর্বর আরবের মুখেই মানায়!!! বস্তুত, ধর্মের সমাজবৈজ্ঞানিক পাঠ দ্বারা ঐ জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা-মনঃস্তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, আর কিছুই না।।
@সন্তোষ,
১০০% সঠিক। ধর্ম একটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক পরিচিতি ছারা কিছুই না।
সব মুসলমানই তাই বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করলেই মানুষ বর্বর হয় না। মানুষের ঈশ্বর বিশ্বাসের কারন বাচ্চাবয়েস থেকে ঈশ্বর ভীতি-যা একধরনেই ব্রেইন ড্যামেজ। ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের মনে ঈশ্বর/আল্লা জুজুর ভয় না ঢোকালে, একটিও ঈশ্বরবিশ্বাসী মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া যেত না।
ছোট্র কলেবরের এইসব লেখা, কিন্তু এক একটা সাক্ষাৎ বুলেট! বা, বোমা!
আসলে ক্ষমতাবিস্তারের ফল নয় এটি (যেমনটা আপনি লিখেছেন), বরং মনে হয়, কারণ, মানে, এই কারনেই জরুরি হয়ে উঠেছিল এক ছাতার তলে সবাইকে দাড় করানোর!
আমি শিক্ষিত হয়েছি, আগের থেকে, বিপ্লবদা!
হ্যা দাদা, জীবনের কোন পরম উদ্দেশ্য নেই। জৈবিক মৃত্যু হয়তো একদিন আমার দেহকে ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যে পরিণত করবে, আমার শরীরের অস্থিমজ্জার অনু-পরমাণু মিশে যাবে প্রকৃতিতে, তবু আমি জানি জীবিতাবস্থায় আমার প্রতিটি পদক্ষেপ, কার্যকলাপ, আমার চিন্তা, আমার দ্বারা উচ্চারিত অথবা লিখিত প্রতিটি শব্দ, এই প্রকৃতিতে (এবং মানুষের সংবেদন-পরিমন্ডলে) কোথাও না কোথাও কোনো পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে চলছে। আমার প্রতিটি কার্যকলাপ পরিবর্তিত করছে আশেপাশের সংবেদন-পরিমন্ডলকে, যা আবার প্রভাবিত করছে অন্য মানুষকে।
এইভাবেই আমি থেকে যাচ্ছি, অদৃশ্য আমি থেকে যাচ্ছি এমনকী মৃত্যুর পরেও। শক্তিশালী প্রতিভাধর মানুষের তৈরি সংবেদন-পরিমন্ডলকে আমরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারি তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে, কেননা তা বহু মানুষকে সরাসরি সংবেদন যোগায় (যেমন রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের মনকে নাড়া দেয়, মার্ক্সের ক্যাপিটাল আমাদের এ সমাজকে বুঝতে শেখায়)। কিন্তু প্রতিটি মানুষই কম-বেশি এরকমভাবে তার ছাপ রেখে যায় তার সংবেদন পরিমন্ডলে যা আবার ছাপ ফেলে অন্যের ওপর। আমাদের অজস্র অদৃশ্য পূর্বপুরুষের কার্যকলাপের রেশ রয়ে গেছে আমাদের সংবেদন-পরিমন্ডলে, তার তা থেকেই সংবেদন নিয়ে আমরা আজকের “আমি”, আজকের “ব্যক্তি-মানুষ”। আমাদের এই গোটা প্রজন্মের মৃত্যুর পরেও আমরা অল্পবিস্তর হলেও টিকে থাকবো উত্তরপ্রজন্মে, আমাদের ক্রিয়াকলাপে পরিবর্তিত সংবেদন-পরিমন্ডল তৈরি করবে নতুন প্রজন্মের মানুষ ও তাদের সৃষ্ট সংবেদন-পরিমন্ডলকে।
সুতরাং যে আমি প্রতিনিয়ত মরে যাচ্ছি নতুন আমির জন্মের কারণ হয়ে, সেই আমিই আবার হয়তো বহুকাল টিকে থাকছি অন্য কোনো আমি”র মাঝে সংবেদন-সাগরে এক ক্ষুদ্র সংবেদন তরঙ্গ হয়ে….
@টুটন দাশ,
আপনি যেটা লিখেছেন সেটাকেই ভারতীয় দর্শনে অদ্বৈতবাদের ভিত্তি। অর্থাৎ “আমি” নামে যে চেতনা-তার বিশ্বচেতনার ক্ষুদ্র এবং অখন্ড অংশ। এই যে “আমি” নামে চেতনা-তা গড়ে উঠেছে কত শত লেখকের/বই এর লেখা, শিক্ষক, বন্ধু, পরিবারের শিক্ষা/চেতনা, মহাবিশ্ব, পৃথিবীর কত রূপ/আবিস্কার-এই সমগ্র জ্ঞাত বিশ্বজগতের চেতনার এক ক্ষুদ্র প্রতিফলন “আমি”।
দাদা, হিন্দুত্ববাদীরা কি তাহলে ইসলাম বা খ্রীষ্ঠান ধর্মের ভেড়াল পালের গোষ্ঠিবাজির আদলে সনাতন ধর্মকে রিফর্ম করতে চাচ্ছে??
@টুটন দাশ,
সনাতন ধর্ম বলে কোন কালে কিছু ছিল না। যেমন ছিল না মহম্মদ বলে কেও। সবই সময়ের প্রয়োজনে গড়ে তোলা মিথ, রূপকথার গপ্প। এই নিয়ে পড়ে লিখব বিস্তারিত ভাবে। ভাবতে অবাক লাগে কত লোক মহম্মদ আর সনাতন ধর্মের নামে একে অন্যর সাথে মারামারি করছে যেখানে দুটোর সবটাই অস্তিত্বহীন রূপকথা। আমি এই নিয়ে পরে আরো লিখব। মহম্মদ যে রূপকথা তা আমার ব্লগেই পাবেন।
@বিপ্লব পাল,
মিথ নিয়ে বিশ্লেষনমূলক লেখাগুলো পড়তে আমিও বেশ আগ্রহবোধ করি। আমি নিজেও মহাভারতের মিথ নিয়ে কিঞ্চিত ড্রাফট্ শুরু করছি কিন্তু মুক্ত-মনা পর্যন্ত সেটা আনার দিবাস্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছি (যদিও এসব বিষয়ের তথ্যনির্ভর বিশ্লেষন এবং যুক্তির পোষ্টমর্টেমের উপযুক্ত ল্যাব এই মুক্তমনা ব্লগ) । কতৃপক্ষ যেখানে আমার মন্তব্য মডারেশন করতে দিন পার করে দিচ্ছেন সেখানে আর সদস্যপদ আশা করাটাও নিরাশার সামিল।
যাইহোক, দাদা আপনার সেই লেখাগুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ভারতীয় দর্শনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়ে লেখাটা বেশ ভাল লাগলো। কিন্তু এটা এত সংক্ষেপে এবং তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। বিশেষ করে তীলক ও বিবেকানন্দ কিভাবে হিন্দুত্ববাদকে কমন আইডেন্টিটি হিসবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করলেন সেটা আমার জানার ছিল।
@রওশন আরা,
এটা বেশ লম্বা গল্প। আসলে লেখার সময় নেই, তাও লিখতে গিয়ে এসব সংক্ষেপে সেরেছি। এই নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইল। যেমন গীতার কেবল মাত্র একটা কপি ছিল কাশ্মীরের সভাগৃহে। গীতা বইটা নিয়ে হিন্দুদের কেও কিছু জানত না সেই অষ্টদশ শতাব্দিতেও। কিন্ত কোরান এবং বাইবেলের একটা প্রতিদ্বন্দী দাঁড় করাতে গীতাকে হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসাবে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা হল। অবশ্য কোরান এবং বাইবেলের ইতিহাস ও সমান উত্তেজনাপূর্ন ঢপবাজি। এসব লিখতে গেলে ঠগ বাছতে গা উজার হবে। অবসর পেলে সব নিয়েই লিখব। আপাতত যা বুঝি, যেটা হচ্ছে ঢপবাজি এবং রূপকথার চূড়ান্ত ফর্ম হচ্ছে এই সব ধর্মগুলি।
বিপ্লবদা,
হ্যাঁ খাঁটি কথা।
তবে কেনো যানি মনে হয় এই গনরাজ্য গুলির রাষ্ট্রের সার্বিক সার্বভৌমত্ত্ব নিশ্চিত করার ক্ষমতা তখন ছিলোনা। সে কি অধিকতর গনতান্ত্রিক অধিকার বোধ থেকেই উৎসারিত কোন কারণ? যা ব্যাক্তিকে ব্যক্তির মাঝেই রাখতো অবরুদ্ধ! সামাজিক এমনকি পারিবারিক বন্ধনে তৈরী হতো শীথিলতা। তৈরী হতো স্বার্থপরতা এবং অবগুন্ঠিত মনোজাগতিক পরোম্পরা! যার কারনেই আমরা দেখি ভারতীয় উপমহাদেশ বার বারই আক্রান্ত হয়েছে বিদেশী শক্তির হাতে! তাতে করে একটা বিষয় সম্ভবতঃ উপরি হিসেবে এসেছে সেটা হলো সহস্র দর্শনের প্রস্ফূটিত সৌরভ! আর একটা কথা এখানে উল্লেখ্য যে এই বারংবার আক্রমনের যে অভিযোজিত প্রভাব তা বোধ করি বাংলা অঞ্চলেই বেশী পরেছিলো! মেধায় মননে বাঙ্গালীর উৎকর্ষতাও হয়তো সেকারনেই প্রকৃতিগত ভাবে ছিলো ভিন্ন ও কিছুটা উন্নতরই। তবে সেই ভয়টা আমারো যেমনটি আপনি লিখেছেন, একালের হিন্দুত্ত্ববাদীরা তাদের মননে যে জাতীয়তাবাদের উদ্গীরণ ঘটাতে চলেছেন তা আব্রাআহামিক ধর্মগুলোর সাম্রাজ্যবাদী দর্শনেরই নামান্তর মাত্র! এতে করে ভারতও কি হালের সিরিয়া-অপগানিস্তানের পথে হাঁটতে শুরু করলো ? সে ধরনের সম্ভাবনা কতোটুকু দেখছেন? সে সম্ভাবনা না থাকারই বা কি কারণ বলে মনে করেন?
@কেশব কুমার অধিকারী,
না। হিন্দুত্ববাদিরা বেসিক্যালি ভারতের ব্যবসায়ী শ্রেনীর হাতের পুতুল। তারা ব্যবসার উন্নতিতেই কাজ করবে। বড়জোর নাইট ক্লাবের ব্যবসা বা টুরিজমের ব্যবসার একটু আঘাত আসতে পারে। তার বাইরে কিছু হবে না।
হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ে মুক্তমনায় ইদানীং লেখা একদমই আসে না। তাও ভাল তুমি কিছু লিখছ। এটা দরকার।
মহাজাগতিক স্কেলে চিন্তা করলে আসলেই তাই। কিন্তু সবার মাথায় এটা একবার গেঁথে গেলে কিন্তু বিপদ। পৃথিবীটা আসলে চলবে না আর। কি বল? 🙂
পদার্থবিজ্ঞানের চোখে জীবনের উদ্দেশ্য হল ফেইথফুলি এন্ট্রপি বাড়ানো। জন্মের পর থেকে সারা জীবন ধরে আমরা এনট্রপি বাড়িয়ে বাড়িয়ে প্রকৃতিতে তাপগতীয় অসাম্য তৈরি করি, আর শেষ মেষ পঞ্চত্ব প্রাপ্তির মাধ্যমে অন্যান্য জড় পদার্থের মত নিজেদের দেহকে তাপগতীয় স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসি। কি বল?
আর বায়োলজিকালি, জীবনের উদ্দেশ্য হল নিজের জিন ছড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি। বিবর্তনীক দায়িত্ব পালন আর কি!
বাকি সব ইল্যুশন 🙂
@অভিজিৎ,
সমস্যা হচ্ছে আসলেই ত কোন উদ্দেশ্য নেই। কেও চাইল্ডলেস বাই চয়েস থাকতেই পারে। তাতেও ভুল নেই।
সেই জন্যেই সবার চিন্তার স্বাধীনতাটা আগে দরকার। যেযার পথে চিন্তা করুক। সবাই নিজের মার্গ খুঁজে পাক। রেজিমেন্টেড ধর্ম বা কমিউনিজম এই স্বাধীনতার বিরোধি। যেটা আসল সমস্যা।
ভারতে এখন চারিদিকে বিজেপি। পশ্চিম বঙ্গেও মনে হচ্ছে বিজেপি ২০১৬ সালেই চলে আসবে চালকের আসনে। এখন তারা প্রধান বিরোধি। ভুয়ো ধর্মনিরেপেক্ষ পার্টি গুলি ধরাশায়ী।