নারীকে পরিত্যাজ্য ভাবার পরও পুরুষ তাকে সর্বাংশে অস্বীকার করতে পারে নি। ঘুরেফিরে নারীর চারপাশে পুরুষ তৈরি করেছে নিজের আবর্ত। আবার পুরুষের প্রয়োজন শেষ হলে নারীকে ছুড়ে ফেলে দিতেও কার্পণ্য না করার দৃষ্টান্ত জাতকগুলোতে পাওয়া যায়। এখন আমরা একটি বিখ্যাত জাতক নিয়ে আলোচনা করবো যার নাম অলম্বুষা জাতক। এই জাতকে বিখ্যাত ঋষ্যশৃঙ্গের উপাখ্যান বর্ণীত রয়েছে। সংস্কৃত বা বাংলায় আমরা তাকে ঋষ্যশৃঙ্গ নামে চিনলেও পালি ভাষায় তিনি ইসিসিঙ্গ (Isisinga) নামেই সমাধিক পরিচিত। আমি আমার লেখায় ঋষ্যশৃঙ্গ নামটাই ব্যবহার করলাম।
অলম্বুষা জাতক ত্রিপিটকের সূত্র পিটকের খুদ্দক নিকয়ের জাতকের অন্তর্গত জাতক কাহিনীর ৫২৩ নম্বর জাতক। এই জাতকের বর্তমানবস্তুতে কোন এক ভিক্ষু তার স্ত্রীর প্রলোভনে ধর্মকর্ম বাদ দিয়ে গৃহস্থের জীবন শুরু করেছিলো। তখন বোধিসত্ত্ব ঐ ভিক্ষুকে উপদেশ দেন এই বলে যে,
“দেখো এই রমণী তোমার অনর্থকারিণী, ইহারই জন্য তুমি ধ্যানভ্রংশবশত তিন বৎসর মূঢ় ও বিধ্বংস হইয়া পড়িয়াছিলে। অতঃপর সংজ্ঞা লাভ করিয়া অতি দুঃখে পরিবেদন করিয়া বেড়াইয়াছিলে।”
এই জাতকের অতীতবস্তুতে জানা যায়, বোধিসত্ত্ব পুরাকালে কাশীরাজ্যের কোন এক ব্রাহ্মণকুলে জন্ম নিয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে অরণ্যবাসী হন। অরণ্যে কোন এক মৃগী বোধিসত্ত্বের বীর্যমিশ্রিত তৃণ ভক্ষণ করে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপরে বোধিসত্ত্বের আশ্রমের চারপাশে সেই মৃগী বিচরণ করতে থাকেন। অবশেষে ঐ মৃগী একটি মানবশিশু প্রসব করেন আর সেই মানবশিশুকে বড় করে তুলেন তার পিতা বোধিসত্ত্ব। এই শিশুর নাম হলো ঋষ্যশৃঙ্গ। শিশুটি বড় হলে বোধিসত্ত্ব তাকে প্রব্রজ্যা দিলেন এবং এর সাথে সাথে নারীর স্বভাব সম্পর্কে জ্ঞানদান করতে লাগলেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঋষ্যশৃঙ্গ কখনোই নারী দেখেন নি, তার পিতার মুখ থেকেই নারী সম্পর্কে যা জানার জেনেছেন।
এরপর ঋষ্যশৃঙ্গ ধ্যানমগ্ন হয়ে হিমালয়ে বসবাস করতে লাগলেন। ঋষ্যশৃঙ্গের কঠোর সাধনা দেখে অন্য সাধুরা হিংসায় জ্বলে গিয়ে পরিকল্পনা করলেন ধ্যান ভঙ্গের। তারা অতীব রূপসী অলম্বুষাকে পাঠালেন ঋষ্যশৃঙ্গের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য। অপ্সরা অলম্বুষা ভয়ে ভয়ে শেষপর্যন্ত তাপস সন্নিধানে উপনীত হলেন। অলম্বুষার রূপ দেখে বিস্মিত হলেন তাপস ঋষ্যশৃঙ্গ। তিনি অলম্বুষাকে প্রশ্ন করেন –
কে তুমি তড়িৎকান্তি
দাড়ায়ে ওখানে,
পূর্বাকাশে শুকতারা প্রভাতে যেমন?
অলম্বুষা নিজের পরিচয় দিয়ে উদ্দেশ্য গোপন করে ঋষ্যশৃঙ্গকে আমন্ত্রণ জানান এই বলে যে,
এস মোরা রতিসুখে ভুঞ্জি এ আশ্রমে
এস প্রিয়, আলিঙ্গনে বদ্ধ হই মোরা
নানাবিধ রতিসুখ করি আস্বাদন।
ঋষ্যশৃঙ্গ তার পিতার মতো বনের এখানে ওখানে নিজ প্রচেষ্টায় বীর্যপাত করলেও রতিসুখ কি জিনিষ তা তিনি জানতেনই না। রতিসুখ তো দুরের কথা অলম্বুষার পূর্বে তিনি জীবনে কখনো নারীই দেখেন নি। কিন্তু অলম্বুষা রমণীজনোচিত মায়ামোহে আবদ্ধ করে ঋষ্যশৃঙ্গকে শয্যায় গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে রতিরঙ্গে তিনটি বছর কেটে যায়। এরপর ঋষ্যশৃঙ্গের তপস্যাহীন সময় পার করার জ্ঞান হয়। তখন অলম্বুষার প্রতি ভয়ানকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দিতে চাইলে অলম্বুষা অভিশাপের ভয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলে।
অলম্বুষা জানায়, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসলেও এখন সে ঋষ্যশৃঙ্গকে ভালোবেসে ফেলেছে। সে ঋষ্যশৃঙ্গকে ছাড়া অন্য কিছু কল্পনাও করতে পারে না, এইভাবে অনন্ত জীবন যদি পার হতো, আহ কি ভালোই না হতো। কিন্তু ঋষ্যশৃঙ্গ আর নারীমোহে তার জীবন অপচয় করতে চাইলেন না। তার মনে পড়ে গেলো পিতার উপদেশবানী –
নারীগণ ফুল্ল কমলের মতো
হরে মন, লয় বিপদে টানিয়া
জানে যেন ইহা পুরুষে সতত
বক্ষে রমণীর আছে গণ্ডদ্বয়
থাকে যেন ইহা মনেতে তোমার।
অবশেষে ঋষ্যশৃঙ্গ অলম্বুষার ভালোবাসার কানাকড়ি মূল্যায়ন না করেই তাকে ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ঋষ্যশৃঙ্গ সারাজীবন ধরে কঠোর তপস্যা করেন আর দুঃখ করেন তার তিনটি বছর নারীঘটিত দুর্মতিতে অতিবাহিত করার জন্য। পুরুষ নারীকে প্রয়োজন শেষে ত্যাগ করার অনেক দৃষ্টান্ত সেই প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। এমনকি পুরুষ তার প্রয়োজন মিটিয়ে নিজের ভুলের জন্য আজীবন আপসুস করতে পারলেও যে রমণী তাকে ভালোবাসে তার কথা একবারও চিন্তা করতে চায় না। এরপরও তারাই মহাপুরুষ হয়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়।
আরেকটা ব্যপার এখানে লক্ষণীয় যে, হিন্দু সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে বৌদ্ধভিক্ষু প্রব্রজ্যা গ্রহণকারী বা মুসলিম সূফীদের মধ্যে যারা নারীদেরকে তাদের সাধনার প্রতিবন্ধকতা মনে করতো তারা নারীর বিকল্প হিসেবে হস্তের দ্বারস্থ হতে কুণ্ঠিত হতো না। জনৈক এক সাধুর জনপ্রিয় একটি উক্তি ছিলো,
থাকিতে নিজ হস্ত কেন হবো অন্যের দ্বারস্থ?
এই জন্যই বনে সাধনা করতে গেলেও বনের এখানে ওখানে তাদের বীর্য পাওয়ার গল্প শোনা যেত। এগুলো আবার পশুপাখি তাদের খাদ্যের সাথে খেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ার গল্পও আমরা পেয়ে থাকি বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে।
বৌদ্ধধর্মানুযায়ী নারীগণ শুধু সাধনার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীই নয় তারা সামগ্রিক অশুদ্ধতার প্রতিমূর্তিও। এই বিষয়ে আমরা এখন আলোচনা করবো মহাহংস জাতক নিয়ে। মহাহংস জাতক ত্রিপিটকের জাতক কাহিনীর ৫৩৪ নম্বর জাতকের অন্তর্গত। এই জাতকের কাহিনীতে বর্ণীত আছে – পুরাকালে বারাণসীরাজের ক্ষেমা নামে একজন অগ্রমহিষী (অনেকগুলো স্ত্রীর মধ্যে প্রধান স্ত্রী) ছিলেন। তার হংসের মুখে ধর্মকথা শোনার আকাঙ্ক্ষা ছিলো, যদিও তার স্বামী তার আকাঙ্ক্ষার মূল্যায়ন করতে চায় নি।
কিন্তু ক্ষেমা তার দোহদের সময় আবার সুবর্ণহংসমুখে ধর্মকথা শুনতে চাইলো। যারা দোহদের অর্থ জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, দোহদ হচ্ছে গর্ভকালীন ইচ্ছা। বোঝা যায় সন্তান জন্মানোর সময় নারী তার ইচ্ছাপূরণের সুযোগ পেতো। পুরুষ সম্ভবত দয়া করেই এই ইচ্ছাটা পূরণ করতো কারণ তৎকালীন সময়ে সন্তান জন্ম দেয়া মানে মৃত্যুকে দর্শন করার মতো ছিলো। তাছাড়া বিশেষ করে যে পুত্রসন্তানটি জন্মাবে সেটি তো পুরুষের, নারী তো শুধু পুত্রসন্তান জন্মানোর আধার মাত্র।
দোহাদ বলেই রাজা অবশেষে সুবর্ণহংস এনে দিতে রাজি হলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে ২ টি হংস পাওয়া গেলো, এদের একটির নাম হচ্ছে ধৃতরাষ্ট্র এবং আরেকটির নাম হচ্ছে সুমুখ। ধৃতরাষ্ট্র তার নিজের স্ত্রীর জন্য বিলাপ করতে থাকলে সুমুখ তাকে স্ত্রীজাতি সম্পর্কে উপদেশ দেন এভাবে –
রমণী যে শ্রেষ্ঠরত্ন, এ প্রলাপ করো তুমি
অর্ধ উন্মক্ত হইয়া নিশ্চয়।
সাধারণ ভোগ্যা তারা, শৌণ্ডিকের পানাগার
যথা সর্ব অধিগম্য হয়।
মায়া তারা মরীচিকা, রোগ-শোক-উপদ্রব
সর্ববিধ অশান্তিনিধান।
প্রখরা পাপের পঙ্কে, বান্ধে তারা জীবগণে
তাহা হতে নাই পরিত্রাণ।
দেহরূপ গুহামধ্যে, মৃত্যুপাশসমা তারা
পদে পদে বিপদ ঘটায়।
এহেন রমণীগণে, যে জন বিশ্বাস করে
নরকূল অধম সে নিশ্চয়।
এভাবে সুমুখের উপদেশ থেকেই জাতকটিতে বুঝানো হলো যারা এতো অনাসৃষ্টির মূল নারীকে বিশ্বাস করে তারা মানুষেরও অধম। এই পিতৃতান্ত্রিক ধর্মকথা আবার একজন নারীই ভক্তিভরে শ্রবণের জন্য বায়না ধরে তার পতির কাছে! সত্যিই প্রতিটি ধর্মে নারী নিষ্পেষিত হলেও নারীবিরোধী ধর্মকথা শোনার আগ্রহ নারীদেরই কেন বেশী তা আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলুম না!
আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন Alambusā-Jātaka ও MAHĀHAṀSA-JĀTAKA ।
(চলবে)
অনুগ্রহপূর্বক আমাকে একটি তথ্য দেবেন কেউ? নিলয় নীলের এই ধারাবাহিকের এই ষষ্ঠ পর্বে বলা আছে ‘চলবে’। নিলয় নীল কি সপ্তম পর্ব লিখেছেন? নাকি এটাই শেষ পর্ব।
জাতক সাহিত্য যে রকম রকম সুদূরপ্রসারী হয়ে ইউরোপে বিস্তার লাভ করেছে, তা বিস্ময়কর । যেমন – চসার, বোকাচ্চিও, হেরাডটাস আরও অন্যদের রচনায় তা বিশেষভাবে ঠাই পেয়েছে। তার মূলে রয়েছে গল্পের ন্যারেটিভ স্ট্রেটেজি । তাই আজ পর্যন্ত কোন গবেষক,জাতক কে ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করেন নি, যা আপনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন ।খুদ্দক নিকায়ে বা দীঘ নিকায়ে যার উল্লেখ রয়েছে,তা হল বুদ্ধের লেকচার এর সহায়ক ,যেখানে বুদ্ধ নিজে বক্তা, তা এসেছে উপমা হিসেবে ,যুক্তির উপাদান হিসেবে । তাও কতটুকু মৌলিক তা নিয়ে পন্ডিত দের মতভেদ আছে । -+
নিলয়, আপনি তো সোৎসাহে লিখে চলছেন । কেন লিখছেন সেটা জানেন, কিন্তু যা লিখছেন, তা কী সাহিত্য, নাকি ইতিহাস তা ঠিক কত ধাতস্থ করেছেন তা বুঝা যাচ্ছে না । বুদ্ধ তো কোন মিথ নয় । মুহাম্মদ কে আনতে হয় যখন ইসলামের প্রসঙ্গ আসবে, সেরকম বুদ্ধকে আনতে হবে,কারন তিনি তো ব্যক্তি – একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। তাঁর জীবদ্ধশাকে ধর্ম হিসেবে ধরতে হবে। বোধি সত্ব একটা রূপক,তিনি কোন ঐতিহাসিক চরিত্র নন। জাস্ট এ মেটাফর । নিছক কল্পনা প্রসূত । যাকে আপনি জাতিস্মর বলতেই পারেন । তাই একটা সাহিত্য নিয়ে তাঁর ধর্ম (Basket of tools) কে আলোচনা লজিক্যাল নয় ।
বুদ্ধ অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে তাঁর শিষ্য প্রশিষ্য বর্গ মিলিত হয়ে মহা সাঙ্গিতির মাধ্যমে তাঁর শিক্ষা গুলো সুসংবদ্ধ আকারে গ্রথিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, যা ইতিহাসে সুবিদিত । সংস্কৃতে যা ত্রিপিটক(three basket) সে সময়ে তাঁর আলোচনা বা ধর্মোপদেশ(discourse), সংঘ এর নিয়মাবলী(monastic rules) এবং ধর্মের দার্শনিক ,মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা সম্বলিত(Philosophical and psychological discourse) এই তিন বিষয় কে আলাদা করে যে গ্রন্থের সুচনা হয়েছিল সংস্কৃতে যা ত্রিপিটক(three basket) নামে খ্যাত । সেখানেই কোন কোন জায়গায় জাতক এর প্রসঙ্গ দেখা যায় । বক্তব্যের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে জাতকের কাহিনী র প্রসঙ্গ এসেছে। যেখানে বক্তা স্বয়ং বুদ্ধ, কাহিনীর সময়কাল অতীত ,কাহিনীর নায়ক বোধিসত্ব । সেখানে বোধি সত্ব মাছ, পাখি , জীব জন্তু , দেবতা, ইন্দ্র, বাহক ,দ্বার রক্ষী, দড়া বাজি কর , চন্ডাল, কৃষক, বনিক ইত্যাদি রূপে আবির্ভূত । কামের প্রসঙ্গ, নারীর চারিত্রিক চপলতার প্রসঙ্গ , তাঁর বিশ্বাসহীনতার প্রসঙ্গ এসব উপাদান গুলো ততকালীন ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার ইঙ্গিত বাহী । অতীতের সাথে বর্তমানের যুগল সম্মিলনে বোঝানো হয়েছে মানবের পূর্ণতা প্রাপ্তির উৎস তাঁর অতীত সুকর্ম । সেই সুত্রে এসেছে জন্মান্তর বাদ । এখানে উল্লেখ প্রাসঙ্গিক হবে যে, প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা এবং ভারতের বৌদ্ধ সভ্যতা সমসাময়িক। এই উভয় সভ্যতার মাঝে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুগভীর সাদৃশ্য দেখা যায় , যা সত্যি ই চিত্তাকর্ষক । যেমন গ্রীক দার্শনিক পিথাগোরাস এবং বুদ্ধ সমসাময়িক বা পিথাগোরাস তাঁর অব্যবহিত কিছু আগে । পিথাগোরাসের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে তিনিও ও তাঁর অতীত জন্ম সম্পর্কে অবহিত ছিলেন । বুদ্ধের ক্ষেত্রেও তা আমরা দেখতে পাই যে, বুদ্ধ জাতিস্মর ছিলেন। জাতকের ৫৫০(বা ৫৪৭)টি কাহিনীতে জাতিস্মর বুদ্ধ সেই অতীত জন্মের কাহিনী বলছেন । ধর্মীয় বিশ্বাসের এই অংশটা ছাপিয়ে জাতক হয়ে উঠেছে বিশ্ব সাহিত্যের অনতিক্রম্য একটা নিদর্শন। যা পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর আদি রূপ কে অতিক্রম করে তাঁর বর্ণনার কৌশল , সমসাময়ীক লোক গাথার সাথে মিশে একই কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে তা নবজন্ম পেয়েছে। প্রসঙ্গটা ছিল, ধর্মের ইতিহাসে নারীর অবস্থান ।সকল ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে তাঁর মানবিক সম্মান থেকে বঞ্চনার চিত্র দেখাতে গিয়ে, একই সমান্তরালে বৌদ্ধ ধর্মীয় ইতিহাসে ও যে নারী কে যথেচ্ছ অসম্মান করা হয়েছে তা প্রতিষ্টিত করা করা । জাতক সাহিত্যের ৫৫০ টি গল্প থেকে ‘কুনাল জাতক’ নামে একটি জাতকে নারীর প্রতি প্রবল ঘৃণা এবং অবমাননাকর উপমা মিশ্রিত কাহিনীর উদাহরন ।
আমরা প্রয়শ সাহিত্য এবং ধর্ম কে একসাথে ঘুলিয়ে ফেলি। ধর্মীয় আবেগের বশে মানুষ এ দুয়ের মোটা দাগের দুরত্বকে মুশে দেবার প্রয়াস পেয়েছে। যা একদিকে যেমন ধর্মের মৌলিক বিষয়ের অর্থ হানি হয়েছে অপরদিকে তার সাহিত্য রস ধর্মীয় জাতাকলে পক্কাহঘাত গ্রস্ত হয়েছে। যেমন মহাভারত,রামায়নের মতো পৌরাণিক মহাকাব্য যা বিশ্ব সাহিত্য সৃষ্টির ভান্ডারে অতুলনীয় গৌরবের আসনে না থেকে তা হয়ে উঠেছে ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি বিশ্বের প্রাচীন সাহিত্যের অনবদ্য অলংকার এই জাতক সাহিত্য ও ধর্মীয় উপাচারে ভূষিত হয়ে একই পরিনতির সুত্রপাত করেছে। ধর্ম বা ধর্মীয় ইতিহাস কে কেন্দ্র করে যুগে সাহিত্য রচিত হয়েছে। তা হয় উপন্যাস না হয় কাব্য । কারবালার যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে যেমন ‘বিষাদ সিন্ধুর’ মতো গ্রন্থ রচিত হয়ে বাঙলা সাহিত্যে, তেমনি রবীন্দ্র কাব্য সাহিত্য আলোকিত করে আছে মহাভারত ,রামায়ন এবং জাতকের অনেক সমৃদ্ধ কাহিনী । এরকম অজস্র উদাহরণ সমগ্র বিশ্ব সাহিত্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কিন্তু মানুষের ধর্মীয় আবেগ কিছুতেয় সায় দিতে চায় না যে , এসব নিছক সাহিত্য সৃষ্টি ,ধরমের অংশ নয় । হতে পারে তাতে ধর্মের নৈতিকতাকে ,তাঁর মরমবানীর উপাদান কে লেখক তুলে আনার প্রয়াস পেয়েছেন,কিন্তু তার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, তা হচ্ছে মানুষের চিত্ত বিনোদন ।যুগে যুগে ,কালে কালে তাঁর উপাদান গুলো বদলেছে,কিন্তু উদ্দেশ্য থেকে গেছে একটাই।
জাতক সাহিত্যের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও,দেখা যাবে ধর্মের মর্ম বাণী কে অবলম্বন করে প্রাচীন ভারতের সামাজিক , সাংস্কৃতিক চিত্র কী ভাবে নৈপুণ্যের সাথে চিত্রায়িত হয়েছে।
। আমার জানামতে,বুদ্ধের কোন discourse (সুত্র) এ নারী কে নিয়ে আলাদা বক্তব্য নেই। বুদ্ধ sexist ছিলেন কীনা, তাঁর জীবনী থেকে সেটা বের করতে পারেন, তাহলেই প্রমান করতে পারবেন যে ,তাঁর ধর্মে নারীর অবমাননা বিদ্যমান। আমি তা পাইনি। তিনি তাঁর সংঘ কে নারী থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চেয়েছেন। সেটা একটা সেনা বাহিনীর নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয় হতে পারে, এ ছাড়া আর কোন ঘটনা বা বক্তব্য আমার জানা নেই । আপনি পারলে বের করবেন । কিন্তু জাতক নয়
বুদ্ধের জীবদ্ধশায় এমন কোন ঐতিহাসিক ঘটনা নেই, যেখানে প্রমাণিত হয়েছে নারীকে অমর্যাদা করা হয়েছে। আপনার জাতকের উদাহরণ তো অনেক দূরে ।বিশাখা, ক্ষেমা, উতপলাবর্না ,পটাচারা এসব ঐতিহাসিক নারী চরিত্র বুদ্ধের জীবদ্ধশায় আমরা পাই , যারা ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। যেমন পাই আম্রপালীর মতো নগর বেশ্যাকে, যার আতিথ্য বুদ্ধ স্বয়ং গ্রহন করেছিলেন ।
এর পর আসা যাক বৌদ্ধ সমাজে নারী র অবস্থান কী। ধর্মে যা থাকবে,সমাজে ও তাই থাকবে, যেমন ইসলাম । ১৯৭৯ এ আগষ্ট ,university of western Australia তে অনুষ্টিত
international conference of Indian studies শীর্ষক সম্মেলনে women in primitive Buddhism নামক একটা গবেষনা পত্রে দেখানো হয়েছে শ্রী লঙ্কা, থাইল্যান্ড , মিয়ানমার এবং তিব্বত এর নারীদের জীবন ব্যবস্থার সাথে পশ্চিমা নারীদের জীবন ব্যবস্থার কোন বৈসাদৃশ্য নেই, বরং নারী বাদিদের কাছে তা হবে বীজমন্ত্রের মতো। স্বয়ং আমি মিয়ানমারের মাতৃ তান্ত্রিক সমাজের উপাদান দেখে বিস্মিত হয়েছি ।
১৭৬৯ খ্রি এর একটা ঘটনা বলি । বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে সে সময়কার ডাচ শাসক স্রীলঙ্কার ক্যান্ডির প্রধান বৌদ্ধ পুরহিত এর কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন,ধরমে তা কতটুকু বিবেচ্য ।বৌদ্ধ ভিক্ষু যে উত্তন ডাচ গভর্নর এর কাছে পাঠিয়েছিলেন,বিবাহ বিচ্ছেদ নিস্পত্তির জন্যে, ইতিহাসে তা ‘লাক্রাজলাসিরিতা’ নামে খ্যাত । সেখানে দেখা গেছে,তাতে পুরুষের ইচ্ছা কে প্রাধান্য দেয়া হয়নি ।নারীকেই প্রমান করতে হবে তিনি তাঁর পুরুষের প্রতি অনুরক্ত নন । নারীর বসন ব্যসনে বিবাহিতা বা বিধবাদের কোন পার্থক্য নেই, বিধবাদের নেই কোন রীতিগত বাধা । এমনকি পুনর বিবাহে ও । বিধবাদের সম্পত্তির রয়েছে উত্তরাধিকার । এমনকি উপপত্নির ও রয়েছে বিবাহিতার সম মর্যাদা । সন্তানের বৈধতা ।মনু সনহিতায় আছে একমাত্র পুত্র ই মুখাগ্নি করবে,কিন্তু বৌদ্ধ নারীরা পিতা মাতার মুখাগ্নি করার কোন বাধা নেই ।
http://www.sacred-texts.com/bud/j5/j5029.htm – লিঙ্ক এ এর কাহিনী আপনি নেন নি, নিয়েছেন ছন্দোবদ্ধ কাহিনী যা ,আদি জাতক নয় ।এই ছন্দ বদ্ধ পদ্য গুলো রচিত হয়েছে অনেক অনেক পরে,এবং সেখানে প্রবিষ্ট হয়েছে আপন মনের মাধুরি । জাতক সাহিত্যের যে আদি উদেশ্য ছিল তা এই সব পদ্যে সম্পূর্ণ নগন্য করে,আপন রস সৃষ্টি কে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা হয়েছে ।
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন একজন মানুষ, তিনি দেবতা বা এ ধরনের কিছু ছিলেন না। যে অর্থে আমরা ধর্ম বুঝি, সেই প্রচলিত অর্থে বৌদ্ধ ধর্ম ‘ধর্ম’ নয় । বুদ্ধের ধর্মে(শিক্ষায়) স্বর্গ নরক, পাপ এসব নেই । যেখানে ঈশ্বর থাকবে, সেখানে এসব থাকবে । পাপ থাকবে কারন ঈশ্বর তাঁর জন্যে শাস্তি রেখেছে । পুন্য থাকবে, কারন তাঁর জন্যে স্বর্গ থাকবে ।কর্ম, কর্ম ফল্কে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন,এই মুহুতের আমি যা ,তা গত মুহুতের আমি র ফল । এবং শরীর টা রিসাইকেল আইটেম কিন্তু মন বা চেতনা সাইকেল আইটেম ,সেটার মৃত্যু নেই যাকে তিনি বলেছেন লাইফ সাইকেল(জন্মজন্মান্তর) । গৌতম বুদ্ধ যা বলেছেন, তা হচ্ছে নৈতিকতা । তিনি নৈতিকতার কিছু টুলস(হাতিয়ার) দিয়েছেন, যা দিয়ে মানুষের মনে এবং কর্ম জীবনে সৌন্দর্য নির্মাণ কর যায়। সেই টুলস যে যত দক্ষতার সাথে ব্যবহার করবে, সে তত বেশী সৌন্দর্য তৈরি করতে পারবে । তাঁর ধর্ম কোন নির্দিষ্ট সেক্ট(সম্প্রদায়ের) নয়। সেখানে কোন আচার নেই, তাই তা ইউনিভার্সাল বা সর্ব মানবিক ।জাতক হচ্ছে মুলত সাহিত্যের অংশ, যেমন বুদ্ধের ইমেজ একটা শিল্পের সবাক ইম্প্রেশন ।তিনি তাঁর প্রিসেপ্ট (নিয়ম/শীল) এ কোথাও বলেন নি পাপ – বলেছেন অসুন্দর । তিনি বলেন নি ,’আমাকে পুজা দাও,আমার সামনে নত হও,আমি আশীর্বাদ করব’,মন্দিরে আসো,সেখানে আমি আছি ইত্যাদি,মানুষ তাঁকে ভুল বুঝেছে….তাঁর আমিত্ব নেই্ , আমিত্ব নিরবাপিত,সেটাই নির্বাণ । বৌদ্ধ ধর্ম হছে এগনস্টিক বা অজ্ঞেয় বাদি, যা ঈশ্বরে অজ্ঞ এটাই বুঝায় । নাস্তিক রা পরোক্ষে ঈশ্বরকে স্বীকার করে(মানি না বলার মাঝে), কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম তাও স্বীকৃতি দেয় না।
তোমার লেখা পড়ছি , যথেষ্ট তথ্যবহুল । লেখ আর পরবর্তীতে তর্কে যাব ।
নারীর প্রতি বুদ্ধ নিজে যে কতটা সমদর্শী ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় দীঘ নিকায়ের সিগালিক সূত্তে । এই সূত্তে তিনি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর পাঁচটি কর্তব্য এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর পাঁচটি কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন । এখানে বুদ্ধ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, একজন স্বামীর তাঁর স্ত্রীকে সম্মান দেওয়া উচিত, অবজ্ঞা করা উচিত নয় এবং সংসারে কর্তৃত্ব দেওয়া উচিত । নীচে Wisdom Publications, Boston থেকে প্রকাশিত Maurice Walshe কৃত অনুবাদ (“The Long Discourses of the Buddha”) থেকে এই সূত্তের প্রাসঙ্গিক অংশটি উদ্ধৃত করা হল –
“There are five ways in which a husband should minister to his wife … : by honouring her, by not disparaging her, by not being unfaithful to her, by giving authority to her, by providing her with adornments. And there are five ways in which a wife, thus ministered to by her husband … will reciprocate : by properly organising her work, by being kind to the servants, by not being unfaithful, by protecting stores, and by being skilful and diligent in all she has to do.”
লক্ষণীয়, দীঘ নিকায় কিন্তু সূত্ত পিটকের মধ্যে প্রাচীনতম এবং এর বেশির ভাগ সূত্তকেই পণ্ডিতেরা স্বয়ং বুদ্ধের উক্তি বলে মনে করেন । এটি খুদ্দক নিকায়ের মতো মূলত পরবর্তী সংযোজন নয় । এই প্রবন্ধের লেখক খুদ্দক নিকায়কে অবলম্বন করে পরবর্তীকালের বৌদ্ধদের নারীবিদ্বেষী বলে সমালোচনা করেছেন ভালো কথা, কিন্তু তিনি ঐ সূত্র ধরে স্বয়ং বুদ্ধকেও একই স্তরে টেনে নামাতে চেয়েছেন বলেই এত কথা বলতে হল ।
@সৌমেন পাত্র, আপনার মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করি । বরং ইতিহাসে দেখা গেছে, কুলহীনা,সম্মানহীনা নারীদের বুদ্ধ সবার উরধে স্থান দিয়েছেন। যেমন আম্রপালঅইতিহাসি ঘটনা ঐতিহাসিক । ইন্ডিয়ান আরকিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এখনও সেই স্মৃতিকে সংরক্ষন করছে । চন্ডালিকা,বাসবদত্তা বা শ্রীমতির কথা বাদই দিলাম
নিলয় নীল, বৌদ্ধ ধর্ম অত্যন্ত জ্ঞানীর ধর্ম । তাই বুদ্ধ শব্দের অর্থ জ্ঞানী বলা হয়েছে। আপনি এখনও বুদ্ধ আর বৌদ্ধ শব্দের অর্থ বুঝতে পারননি। কি করে এই জ্ঞানী ধর্ম সম্পর্কে আপনার বোধগম্য হবে। এ ধর্ম নিয়ে শত শত হাজারে হাজার লোক তাদের সারা জীবনটাই ফেলে দিয়েছেন। তবুও তারা এ ধর্ম সম্পর্কে সঠিক মমার্থ বুঝতে সক্ষম হননি। আপনি ভাসা ভাসা অধ্যয়ন করে কি বুঝতে পারবেন। সে জন্যে আপনি নেগেটিভটাই তুলে ধরেছেন। যদি শিক্ষা গ্রহন করার মানসে অধ্যয়ন করতেন তাহলে ভালোটাই তুলতে পারতেন। আপনি যদি এ ধর্ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অভিধর্ম পিটক অধ্যয়ন করুন।
এই সিরিজের সবকটি লেখা পড়লাম । নিঃসন্দেহে তথ্যপূর্ণ লেখা । তবে বেশ কয়েকজন পাঠক একটি বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, জাতকের গল্পগুলি (যাদের উপর ভিত্তি করে প্রবন্ধটি লেখা হচ্ছে) সত্যিই গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, নাকি তাঁর পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যরা রচনা করেছিলেন । আমি এই ব্যাপারে একটি ছোট তথ্য যোগ করতে চাই । জাতকের গল্পগুলি রয়েছে সুত্ত পিটকের পঞ্চম তথা শেষ খণ্ডে, যার নাম খুদ্দক নিকায় । প্রাথমিকভাবে প্রথম চারটি নিকায়তে (দীঘ, মজঝিম, সংযুত্ত ও অঙ্গুত্তর নিকায়) যেসব সুত্তকে ঠাই দেওয়া সম্ভব হয়নি, সেগুলিকে রাখা হয়েছিল এই খুদ্দক নিকায়তে, অনেকটা “বিবিধ”-এর মতো । ফলে তখন এই নিকায়টি ছিল সবচেয়ে ছোট, যে কারণে এর খুদ্দক (ক্ষুদ্র) নামকরণ । কিন্তু পরে পরে বৌদ্ধরা নতুন নতুন সুত্ত রচনা করতে থাকায় এবং সেগুলিকে এই খুদ্দক নিকায়ে রাখতে থাকায় এটি কালক্রমে হয়ে ওঠে পাঁচটি নিকায়ের মধ্যে বৃহত্তম (জাতকের গল্পগুলি খুব সম্ভব এরকম পরবর্তী সংযোজন) । এই কারণে আধুনিক পণ্ডিতেরা বুদ্ধের প্রকৃত দর্শনকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রথম চারটি নিকায়কেই প্রামাণ্য হিসেবে ধরেন (যদিও সেগুলির মধ্যেও পরে অনেক প্রক্ষিপ্ত অংশ ঢুকেছে), খুদ্দক নিকায়কে নয় ।
@সৌমেন পাত্র,
ধন্যবাদ আপনাকে এই তথ্যগুলো দেবার জন্য। এর আগেও আমি জাতক গৌতম বৌদ্ধর কি না সে সম্পর্কে একাধিকবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। অনলাইন ও অফলাইন বিভিন্ন ঘাটাঘাটি করে বিভিন্ন মত পেয়েছি। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে জাতকগুলো বেশীরভাগই earliest Buddhist literature বলে দাবী করা হয়েছে। এর অনেক জাতক সেই বৌদ্ধর সময়কাল থেকেই প্রচলিত ছিলো। তবে তারপর থেকে জাতক কাহিনীগুলো বিভিন্ন ধরণের রংচং মাখানো অসম্ভব কিছু নয়। অনেক জাতক নতুন সংযোজিত হয়েছে বলেও অনেক বৌদ্ধশাস্ত্রী মত প্রকাশ করেন। জাতক কাহিনীগুলোর মধ্য হিন্দু ধর্মের প্রভাব খুব লক্ষণীয় বলেই এই মতকে হেঁসে উড়িয়ে দেয়া যায় না। জাতক যদি পরিবর্ধন, পরিবর্তন ও সংশোধন হয়েও থাকে তাও হয়েছে বৌদ্ধ অনুসারীদের দ্বারা। এরাই হচ্ছেন সেই অনুসারী যারা গৌতম বৌদ্ধকে ভগবানের ব্যপারে কিছু না বলতে শুনলেও গৌতম মারা গেলে তাকেই ভগবান বানিয়ে দেন। সুতরং এদের দ্বারা সব কিছুই সম্ভব।
@নিলয় নীল, কেউ অজ্ঞতা বশত কোন বিকৃতি ঘটালে, তা আপনি কেন অনুসরন করবেন ? বুদ্ধের চিন্তা কোন ঘেরাটোপে আবদ্ধ নয় । আপনি তাঁর ধর্মের মৌলিক বিষয়ের উপর পোড়া শোনা করেন , এভাবে না জেনে এতো বিশ্বব্যাপী যার গবেষনা বিস্তৃত, তাঁকে নিয়ে হাল্কা উপস্থাপনা করা কতটুকু সঙ্গত ? আপনি যদি চান, কিছু এনালাইটিক্যাল গ্রন্থের নাম দিতে পারি । তাহলে অল্প সময়ে হয়তো একটা ধারনা পেতে পারেন । আর বলি, উইকি পিডিয়া দেখে ধারনা নেয়া একেবারেই উচিত না, যেখানে অনেক বিশ্বখ্যাত যুগন্ধর মনিষীরা লেখে গেছেন বুদ্ধ কে নিয়ে ।
মোদ্দা কথায় জাতক তথা খুদ্দক নিকায়ের সিংহভাগ গ্রন্থই প্রাচীন বা early Buddhism এর অন্তর্গত নয়। সেই বই গুলোর নিরিখে বুদ্ধের দর্শনকে বিচার করা অবিমৃশ্যতা বৈ কিছুই নয় ।