(১)
সেটা দশ বছর আগের কথা। হঠাৎ মাথায় এল আরে পুরুষ জাতিটার আসলেই কোন ভবিষ্যত নেই। বড়জোর আর হাজার বছর। তারপরেই পুং লিঙ্গ বলতে কিছু থাকবে না ( আর্টিকলটা এখানে আছে https://sites.google.com/site/biplabpal2000/Future_of_Males.pdf )।
কারনটা আসলেই সহজ। যা কিছুর জন্ম সবটাই বিবর্তনের কারনে। প্রকৃতির আদিতে সবই একলিঙ্গ-বা এক অর্থে নারীই বলব যারা নিজেদের প্রজননে সক্ষম। বিবর্তনের পথে পুরুষ লিঙ্গের আমদানির দরকার হল বিবর্তনে গতি আনতে। উভয় লিঙ্গের ক্রমোজমের ক্রসওভার থেকে অনেক বেশী মিউটেশন সম্ভব। অনেক বেশী বৈচিত্র। ফলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাজটা সহজ হয়, কাকে পরিবেশের সাথে বেশী টিকিয়ে রাখবে। [১]
অর্থাৎ বায়োলজির গ্রান্ড স্কীমে পুরুষের ভূমিকা ওইটুকুই। জিনে বৈচিত্র আনতে সাহায্য করা। পশুকুলে বাবারা সন্তানের দেখাশুনা করে-সেই রেওয়াজ একদমই নেই। স্পার্ম ছড়ানো ছাড়া পুরুষের কাজ পশুকূলে সীমিত।
মানবকুল অনেক জটিল। প্যালিওলিথিক সমাজ পর্যন্ত পুরুষের ভূমিকা সমাজে কি ছিল-তা সবটাই স্পেকুলেটিভ। তবে সমাজ যে সেখানেও মাতৃতান্ত্রিক ছিল সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। নারীর অবস্থানের অবনমন হতে শুরু করে কৃষিভিত্তিক সমাজের উত্থানের সাথে সাথে। এর মূল কারন ছিল দুটো। প্রথমত চাষের কাজের জন্য সমাজে ক্রমবর্ধমান সন্তানের চাহিদা। এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব। এর মধ্যে প্রথমটাই মূল কারন নারীর অবনমনের। সেই কালে শিশুমৃত্যুর হার এত বেশী ছিল মাত্র দুটি সন্তানকে যুবক অবস্থায় টানতে ছটি শিশুর জন্ম দিতে হত। [২] ফলে অধিকাংশ নারীকে বাধ্য করা হত আটটি কি দশটি সন্তানের জন্ম দিতে। “বাধ্য” টা শব্দের ভূল প্রয়োগ। ধর্মের মাধ্যমে অশিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের মাথায় সন্তান ধারনের মাহাত্ম্য ঢোকানো সব ধর্মগ্রন্থেই পাওয়া যাবে। কিন্ত পাশাপাশি এটাও সত্য-এটা না হলে সেই যুগে মহামারী যুদ্ধের ফলে মানব জনসংখ্যা কমতে কমতে, মানুষের বেঁচে থাকাটাই সংকটপূর্ন হতে পারত। কিন্ত এটা ভাবার কারন নেই মধ্যযুগে নারীদের যৌন স্বাধীনতা ছিল না। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় মৃত্যু হত মায়েদের। ফলে মেয়েরাও জানতেন তাদের জীবন সংক্ষিপ্ত-তাই জীবনের মধু ছাড়া যাবে না। হেলিওনিক এবং রোমান সভ্যতায় এই উদাহরন অজস্র [৩]।
মেয়েদের বর্তমান স্বাধীনতার ধারনা মোটেও কোন দর্শনপ্রসূত ডিম্ব না। এটি উনবিংশ শতকে শিল্প বিপ্লবের ফল। [৪] শিশুমৃত্যুর হার কমতে মেয়েদের আর ছটি সন্তান ধারনের কোন প্রয়োজনিয়তা রইল না । অন্যদিকে গ্রাম থেকে শহরায়ন এবং শিল্পের কারনে নিউক্লিউয়ার ফ্যামিলির উদ্ভবে মেয়েদের ও কাজে যাওয়ার প্রয়োজন হল। আমেরিকাতে এটা শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ছেলেরা ছিল যুদ্ধে। আমেরিকান ওয়ার মেশিনের উৎপাদনের পুরোভাগে ছিল মেয়েরা। ভারতে মেয়েরা ব্যপকভাবে কাজে আসতে শুরু করে সাত এবং আটের দশকে।
তারমানে এই না যে সমতার অধিকার সব দেশে প্রতিষ্ঠিত। ভারত কি আমেরিকা সব দেশেই কর্মজীবি মায়েদের বেশ সমস্যা। যাদের দুটি সন্তান-তাদের অনেকেই পেশা ছেড়ে সন্তানপালনে নিজেদের ক্যারিয়ার ত্যাগ করেছেন। [৫] কিচেন থেকে ডিশওয়াশার-সর্বত্র অটোমেশনের ফলে সাংসারিক কাজের ভার অনেক কমেছে। কিন্ত সন্তানপালনের জন্য কোন রোবট এখনো দেখা নেই । ফলে সন্তানপালনের গুরু দায়িত্বটা এখনো মেয়েদেরই। জানি না প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ভবিষ্যতটা কি।
(২)
সমস্যা হচ্ছে সেই দিন আজ আগতপ্রায় যেখানে নতুন ভ্রুনের সম্পূর্ন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্ভব। ফলে বায়োলজির গ্রান্ডস্কীমে পুরুষের মূল কাজ-জেনেটিক ভ্যারিয়েশন-তার দরকার নেই। মেশিনই সেই কাজ করে দিতে পারবে।
সুতরাং মেয়েদের পুরুষকে দরকার হবে কেন?
সেক্সের কারনে? দৈহিক চাহিদা মেটাতে?
সেখানেও পুরুষের ভবিষ্যত উজ্জ্বল না। স্পিলবার্গের এ আই এ অর্গা মেকার চরিত্রগুলি মনে আছে? হ্যা আর দু দশকের মধ্যেই বাজারে আসতে চলেছে পুরুষ সেক্স রোবট । যারা শরীরে শারুখ খান, প্রেমে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ! এবছরই সনির আর এন ডি এই ধরনের হিউমানয়েডের আবিস্কারের কথা ঘোষনা করে যার মধ্যে আবেগ থাকবে [৬]। টোশিবার গবেষনাগারে তৈরী হিউমানয়েড কেঞ্জি সংবাদ শিরোনামে এসেছিল আগের বছর। যে মেয়েটা তাকে প্রেমের পাঠ শেখাচ্ছিল, কেঞ্জি তাকে কদিন বাদে এমন ভাবে জাপটে ধরে, গবেষনাটাই থামিয়ে দিতে হয় [৭]। এগুলো সবে শুরু।
বর্তমানে আমেরিকাতে ডিল্ডোর বাজার খুব ভাল। ৩০% রেটে বাড়ছে ১৫ বিলিয়ান ডলারের মার্কেট। দেখা যাচ্ছে কি বিবাহিত, কি অবিবাহিত সব মেয়েরাই একাধিক সেক্স টয় কিনছেন। এতটাই যে ২০০৮ সালের রিশেসনে শুধু একটা শিল্পই বেড়েছিল-এটা হচ্ছে এই এডাল্ট টয়। আমেরিকাতে মেয়েরা যৌন আনন্দ খুঁজছেন নতুন নতুন সেক্স টয় এর মাধ্যমে। হিউমানয়েড সেক্স রোবট অনেক দূর। এখনই জাস্ট একটু ইন্টেলিজেন্ট সেক্স টয়ের জন্যেই মেয়েরা আস্তে আস্তে সেক্সের জন্য পুরুষ ছেরে নিজের সেক্সটয়ের ওপর ভরসা করছেন বেশী। কারন অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স ডিল্ডোগুলির ডিজাইন এত অদ্ভুত এডভ্যান্সড, অধিকাংশ মেয়েরা মনে করছেন, ডিল্ডোগুলি পুরুষদের থেকে অনেক বেশী আনন্দ দিতে সক্ষম [৮][৯][১০]। বর্তমানে এত ভাল সিলিকন পলিমার বেড়িয়েছে এবং ইলেকট্রনিক্সের মাধ্যমে ডিল্ডোগুলিতে উত্তাপ ও প্রানসঞ্চার করা সম্ভব হচ্ছে , অধিকাংশ মেয়ে মনে করছেন, এগুলির প্লেজার কোশেন্ট পুরুষ লিঙ্গের চেয়ে শতগুন ভাল।
তাহলে একজন মেয়ের জীবনে পুরুষের দরকার কেন? সন্তানের বায়োলজিক্যাল বাবার দরকার এমনিতেই হবে না।তাহলে বাবার দরকার সন্তান পালনের কাজটা ভাগ করে নিতে। সেই দরকারটা দুই দশকে চলে যাচ্ছে না-কিন্ত আগামী শতাব্দিতে অবশ্যই সন্তান পালনে বাবার দরকার হবে না। কারন সেই রোবট বা হিউমানয়েড।
একজন সন্তানের কি দরকার? সঠিক গাইডান্স। বাজে কাজ থেকে আটকানো। পড়াশোনাতে সাহায্য করা। খেলতে, খেলা শেখাতে সাহায্য করা। এর কোনটা একজন হিউমানয়েড বাবার থেকে খারাপ করবে?
কঠিন সত্য হচ্ছে একটা হিউমানয়েড বায়োলজিক্যাল বাবার থেকে এই কাজটা অনেক বেশী ভাল করবে।
সুতরাং খুব পরিস্কার চিন্তা করলে-একজন মেয়ের জীবনে পুরুষ নির্ভরতা কমতে শুরু করেছে বিংশ শতাব্দি থেকেই। একবিংশ শতাব্দির শেষে একজন মেয়ের জীবনে পুরুষ হবে “অপশনাল”। দরকার হবেই না।
(৩)
এই জন্যেই নারীবাদী আলোচনা আমার ভীষন হাস্যকর লাগে। হ্যা, মেয়েদের ওপর নানান কারনে নানান অত্যাচার হচ্ছে -এটা ঠিক। কিন্ত সেটা মানুষ হিসাবেই প্রতিবাদ করা যায়। যদি লিঙ্গের প্রশ্ন ওঠে-তাহলে আসলে কিন্ত পুং লিঙ্গের ভবিষ্যত বিলুপ্তপ্রায়। সুতরাং লিঙ্গ রাজনীতির ক্ষেত্রে সব থেকে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ওঠা উচিত-পুরুশের ভবিষ্যত কি হবে?
নারীরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছে-তা ঐতিহাসিক, সামাজিক বিবর্তনের প্রয়োজনে। আর পুরুষ বিলুপ্তির সম্মুখীন সেই বিবর্তনের হাত ধরেই।
তাই নারীবাদি আলোচনা আমার কাছে অতীত, অপ্রাসঙ্গিক।
অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক এই শতাব্দির শেষে পুরুষের ভবিষ্যত কি হবে?
[1]http://www.ted.com/conversations/2925/can_evolution_explain_why_all.html
[2]https://www.princeton.edu/~pswpc/pdfs/scheidel/040901.pdf /
[3]http://ancienthistory.about.com/od/sexualit1/g/moichos.htm
[4]http://www.gilderlehrman.org/history-by-era/jackson-lincoln/essays/women-and-early-industrial-revolution-united-states// http://www.loyno.edu/~kchopin/Women’s%20Rights.htm
[5]http://www.workingmother.com/research-institute/what-moms-choose-working-mother-report
[6]https://inlportal.inl.gov/portal/server.pt/community/ethical_considerations/543
[7]http://ieeexplore.ieee.org/xpl/login.jsp?tp=&arnumber=1545061&url=http%3A%2F%2Fieeexplore.ieee.org%2Fiel5%2F10375%2F32977%2F01545061.pdf%3Farnumber%3D1545061
[8]http://www.alternet.org/sex-amp-relationships/what-15-billion-sex-toy-industry-tells-us-about-sexuality-today
[9]http://www.forbes.com/sites/rakeshsharma/2013/07/31/lets-talk-about-sex-silicon-valleys-efforts-to-disrupt-the-adult-toy-industry/
[10]http://rt.com/usa/recession-sex-industry-toy-531/
টেকনোলজির কথাই যদি বলেন তাহলে কৃত্রিম গর্ভাশয় বা ইনকিউবেটর সম্ভবত পুরুষদের টিকিয়ে রাখবে। তখন নারীদের ছাড়াই বংশবিস্তার করাও সম্ভব হবে। তাই এখন আসলে কিছুই বলা যায়না। নারী পুরুষ দুটোই টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে সুদূর ভবিষ্যতে বেশিদিন বাঁচার স্বার্থে মানুষ আর বায়োলজিক্যাল মানুষ থাকবে কিনা সেটা চিন্তার বিষয়। তখন হয়তো সব অংগই আরও টেকসই ও সুবিধাজনক কোন পদার্থ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হবে। নারী পুরুষ বলে আলাদা কিছু থাকা তখন অর্থহীন হবে।
অপশনাল নয়, অপারেশনাল (Operational ) থাকবে। পারস্পারিক সম্পর্ক বিলোপ হবার কথা নয়।আর মেয়ের জীবনে পুরুষ অপশনাল ধরনের ভাবনা তো র্যাডিক্যাল নারীবাদীদের।
নারীবাদী আলোচনা ভীষন হাস্যকর লাগার মত বিষয় কি! এমন মানসিকতা হলে তো আর কথাই চলে না।
ইন্টারেস্টিং আর্টিকেল।
যৌনপজননের মাধ্যমের বংশবিদ্ধারের কিছু সুবিধা আছে বলেই ‘সেক্স’ ব্যাপারটা বিবর্তনের চালিকা শক্তি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রথমত – ভ্যারিয়েশন । যদি অযৌনপ্রজনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে, তাহলে জনপুঞ্জে কোন ভ্যারিয়েশন থাকে না। ফলে কোন এক সময় বাজে মিউটেশনের ফসল হিসেবে কোন একটায় মড়ক লাগলে পুরো প্রজাতিতে তা ছড়িয়ে পড়বে আর প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যৌন প্রজনন জীবজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক প্রকরণ বা ভিন্নতা তৈরি করে বলে মনে করা হয়, যা বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। এর ফলে জনপুঞ্জে উন্নত বৈশিষ্ট্যের বিস্তার ঘটে। এছাড়া, যৌন প্রজনন প্রজন্মে খারাপ মিউটেশনেরর লোড কমিয়ে আনে এবং বিভিন্ন প্যারাসাইটিক আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে অনুমিত হয়। ব্যাপারটা অন্য সব প্রানীর মত মানুষের বেলাতেও সত্য। কাজেই রাতারাতি আমি পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা দেখছি না, যদিও ভবিষ্যৎ টেকনোলজি ক্লোনিং সহ অন্য ব্যাপারগুলোকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটার উপর অনেকাংশেই ব্যাপারটা নির্ভর করছে। মানুষ টেকনোলজি দিয়ে বিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এবং রাখছে।
একটা প্রশ্ন –
আমার ধারণা ছিল, তুমি এই উনিভার্সাল মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ধারনা – যা মর্গান এঙ্গেলসরা করে গেছেন, সেটার বিরোধী। স্টিফেন গোল্ডবার্গ এর ‘The Inevitability of Patriarchy’ গ্রন্থে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের বহু মিথ খণ্ডন করার কথা কিন্তু আগে তুমিই বলেছ। এ ছাড়া ফিলিপ ডেভিসের Goddess Unmasked কিংবা সিন্থিয়া এলারের The Myth of Matriarchal Prehistory প্রভৃতি গ্রন্থ এবং আধুনিক কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করেছে যে, পুরোপুরি মাতৃতান্ত্রিক সমাজ মানব সমাজে কখনই সম্ভবত ছিল না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু জায়গায় মাতৃতন্ত্রের প্রকাশ দেখা গেলেও এটি কোন সময়েই মানব সমাজের সামগ্রিক বৈশিষ্ট (Universal Matriarchy) ছিলো না।
এখানে বিপরীতটা শোনাচ্ছ কেন, খোলসা কর।
@অভিজিৎ,
গোল্ডবার্গের থিসিস মেল ডমিনেশন নিয়ে। এই যে সব সমাজেই পুরুষ ডমিনেট করবে। তার সাথে নারীর সামাজিক অবস্থানের সম্পর্কর খুব বেশী যোগ নেই। নারীর সামাজিক অবস্থান নির্ভর করে নারী কতটা উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর সরাসরি মালিকানা পাচ্ছে এবং সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাচ্ছে।
প্যালিওলিথিক সমাজে উৎপাদন বলতে ত কিছু ছিল না-বনের খাদ্য সম্পদই মানুষের সম্পদ ছিল। সামাজিক মালিকানা বলতে সন্তানদের মালিকানা-আর সেটা মায়েদেরই ছিল। কৃষিভিত্তিক সমাজে সন্তানদের মালিকানা জমির, ফসলের মালিকানা সব পুরুষের হাতে আসে।
ছেলেরা মেয়েদের ওপর ডমিনেট করে মানেই মেয়েদের সামাজিক অবস্থান ভাল বা খারাপ এটা গোল্ডবার্গের তত্ত্ব না।
@বিপ্লব পাল,
আমার বক্তব্য কেবল গোল্ডবার্গের থিসিস নিয়ে ছিল না, আমার প্রশ্ন ছিল ‘ইউনিভার্সাল মাতৃতন্ত্র’ কিংবা ‘মাতৃতান্ত্রিক সমাজ’ বলে একটা সময় আসলেই কিছু ছিল কিনা এ নিয়ে। সাম্প্রতিক এন্থ্রোপলিজাকাল বেশ কিছু ডেটা এর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় (এখানে)। তুমিই কিন্তু একটা সময় জোরে সোরে বলতে মরগানের অনুকল্প যে পুরনো এবং ভুল তা বোঝাতে। এখানে বিপরীত কথা বলছ কেন সেটাতেই কৌতুহলী হয়েছিলাম।
@অভিজিৎ,
আরেকটা কথা-উভলিঙ্গ শুধু ভ্যারিয়েশনই দেয় না কম্পিটিশন ও দেয় সিলেকশনে। রিপ্রোডাক্টিভ সিলেকশনে কম্পিটিশন ও একটা বড় কারন উভলিঙ্গের সাফল্যের পেছনে।
পুরুষের জীবনেই কি নারী নির্ভরতা থাকার খুব দরকার? আমার experience কম হতে পারে। কিন্তু আমি দেখেছি, একটা ছেলে একা একা ভালোই বাঁচতে পারে, মেয়েরাই যাকে বলে craves companionship. কারোর জীবনেই কেউ অপরিহার্য নয়, সেটা সময়ের সাথে আরও বেশি মানুষ বিশ্বাস করতে শিখবে। সত্যি বলতে কি তাতে যেটা হবে, in future এই marriage জিনিষটাই উঠে যাবে আর সেটা ভালোই।
পুরুষ সেক্স রোবোটের থেকে বাজারে অনেক বেশি চলবে মেয়ে সেক্স রোবোট। কারন খুব সহজ। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বেশি অরথ, disposable income পুরুষের হাতেই বেশি, তারা spend করতে পারে অনেক বেশি। ভারতের একটু উচ্চ আয় সম্পন্ন মানুষদের মধ্যে নারী পুরুষের অনুপাত খুব কম। পুরুষ female sex toy use করে আনন্দ পেতে শুরু করলে বিবাহযোগ্যা, পরভোজী, sorry হোম মেকাররা কার ঘাড়ে চাপবেন? গর্দভ বং স্ত্রৈণ নাহলে উচ্চ রোজগার করা পুরুষ নিশ্চয়ই তার অল্প রোজগার করা বা আদৌ না করা স্ত্রীকে ডিলডো কিনে দেবে না। Pampering ছাড়া চলে না, এমন মামনিরা আর টিকতে পারবে না female sex toy বাজারে এসে গেলে। আর কিজন্য তাদের pamper করবে ছেলেরা? Money talks, money is worshipped by the market আর সেই money আছে পুরুষের হাতেই বেশি। অতএব পুরুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই।
@ইন্দ্রনীল বসু,
তথ্য অন্য কথা বলছে। মেয়েদের জন্য সেক্স টয়ের বিক্রি ছেলেদের ২০ গুন প্রায়! মেয়েরা সেক্সটয় ছেলেদের থেকে অনেক বেশী ব্যবহার করে-এর একটা কারন সেফটি বোধ হয়। আরেকটা কারন ভ্যাজাইনাল এক্সপেরিয়েন্স পেতে ফ্লেক্সলাইটে ( পুরুষের জ্ন্য যে সেক্স টয়) বাইরের লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করতে হয়। ভ্যাজাইনাল লুব্রিকেশনের জন্য মেয়েদের এটা দরকার হয় না-ফলে মহিলাদের সেক্সটয় ব্যবহার ছেলেদের থেকে অনেক বেশী।
@বিপ্লব দা, সেতো এই মুহূর্তে টেকনোলজির সীমাবদ্ধতা। প্রযুক্তির যে পর্যায়ে sophisticated male humanoid তৈরি হবে, ছেলেদের জন্যও female humanoid তৈরি হবে। সেক্সের চাহিদা মেটানোর রোবোট যে আসবেই, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হল, মানসিক চাহিদা মেটাতে পারবে কিনা? একাকীত্ব কার বেশি হয়? মনের প্রয়োজন-ই বা কার বেশি? এই ব্যাপারে আমি চারপাশে যা দেখছি, যে যত truly educated, aware, যত বেশী দৈনন্দিন কাজের বাইরে অনেক কিছু চিন্তা করে, পড়াশুনো করে, তার মানসিক সঙ্গীর চাহিদা তত কম হয়। আমেরিকায় জানি না, ভারতে এখনো এরকম মেয়ে খুব কম, % আসেই না। ছেলেরাও যে মানসিক ভাবে খুব independent, তা নয়, তবু মেয়েদের চেয়ে on an average বেশি। সোজা হিসেব দেখ, মুক্তমনা বা ফেসবুকে এইসব টপিকে কটা মেয়ে লেখে, তাদের % ফেসবুকে total মেয়েদের % থেকে কম হবে।
সুতরাং, মেয়েদের পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন এখনও ছেলেদের নারী সঙ্গীর থেকে বেশি। ছেলেরা বউয়ের মধ্যে কখনো প্রেমিকা, কখনো বোন, কখনো মা – এইসব দ্যাখে, অনেকে বলেন। এগুলো বোকা বোকা। আসল কথা হল বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী/সঙ্গিনী খুঁজতে competition কে বেশি ফেস করে? এখনো ছেলেরাই বেশি ফেস করে। ভারতের শিক্ষিত, corporate, professional জগতে এটা ভয়ানকভাবে বোঝা যায়। অনেক ছেলের হাতে টাকা আছে, কিন্তু প্রেমিকা/বউ পাচ্ছে না। মেয়েদের অত টাকা থাকে কি? তাই বাজারের নিয়মে female humanoid আগে তৈরি হবে। বাজারদেবতা টাকার বশ আর টাকা কার হাতে বেশি? বাবা বা স্বামী যতক্ষণ তার মেয়ে বা স্ত্রীকে টাকা না দিচ্ছে, ভারতের বেশির ভাগ মেয়ের male robot কেনার টাকা হবে না।
আপনার যুক্তি মানতে পারছি না, তবে সে কথা থাক। ধরলাম পুরুষ থাকবে না একসময় সেটাই সত্য, কিন্তু তারপরেও নারীবাদী আলোচনা অতীত করে দেয়া যায় না পুরুষ বিলুপ্তির আগে। ঠিক যেমন ধর্ম বা জাতীয়তাবাদের ভালো-খারাপ নিয়ে আলোচনা বাদ দেয়া যায় না ভবিষ্যতে এগুলো না থাকার সম্ভাবনা আছে দেখে কারণ বর্তমানে এগুলোর বিশাল ইমপ্যাক্ট আছে। ভবিষ্যতের কথাতো অবশ্যই ভাবতে হবে, কিন্তু “নারীবাদি আলোচনা আমার কাছে অতীত, অপ্রাসঙ্গিক” এভাবে বর্তমানকে উপেক্ষা করা বোধহয় যায় না।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
নারী কে নারী হিসাবে দেখবোই বা কেন? বৈষম্যের শুরু সেখানেই। তাদের মানুষ হিসাবে দেখলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
@বিপ্লব পাল,
একমত। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু এমন অনেক সমস্যা তৈরি হয়ে গিয়েছে যেগুলো (প্রায়) সবসময়ই শুধু নারীদেরই মোকাবেলা করতে হয়, তাই এখনো এ ধরণের আলোচনা করার সময় মনে হয় শেষ হয়ে যায় নি।
অসাধারণ! আর বিপ্লবদার কাছ থেকে আমরা এমন লেখাই আশা করে থাকি। বৈপ্লবিক, প্রচলিত চিন্তা-ভাবনাকে ভেঙ্গেচুরে দিয়ে, নিথর-নিস্তব্ধ করে দেয়া …
বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন, বিপ্লবদা? কেন উভয় লিঙ্গ থেকেই মিউটেশন হয় অনেক বেশী?
পৌরুষের অহমিকায় অহর্নিশি ভুগতে থাকা পুরুষেরা নির্ঘাত তেড়ে আসবে, কিন্তু আসলেই কথাটার মধ্যে অসত্য নেই এতটুকু এবং এককালে মানব পুরুষের তাও স্পার্ম ছড়ানোর যে দায়িত্বটুকু ছিল, সেটুকুও যখন আর থাকছে না ভবিষ্যতে, তখন ডি ক্যাপ্রিও পুরুষ বিলুপ্তি প্রজেক্ট নিয়ে ভাবতে পারে, বাঘ প্রজেক্ট বাদ দিয়ে, বিশেষত চাচা আপন প্রান বাঁচা বলে কথা! :))
@গুবরে ফড়িং,
উভলিঙ্গ হলে দুটো সুবিধা। কম্পিটিশন। সেরা এবং সফল পুরুশের ডিএনএটাই বেশী নিশিক্ত করে। এতে ভাল ( মানে পরিবেশের সাথে বেশী উপযুক্ত) নির্বাচন হয়-যে সুযোগ একলিঙ্গের স্পেশিসে নেই। ফলে বিবর্তনের গতি ত্বরান্বিত হয়।
অর্থনৈতিক সচ্ছ্বলতা থাকার পর এবং ডিলডো দিয়ে তৃপ্তি লাভ করার পর একজন নারী খুজে একজন পুরুষ যার সাথে মন খুলে কথা বলা যায়, সুখ দুঃখের গল্প ভাগাভাগি করা যায়। নারীর মানসিক তৃপ্তির জন্য একজন পুরুষের দরকার হচ্ছে ততদিন, যতদিন না পুরুষের মত চৌকস হিউমানয়েড তৈরি করা যায়। আর, পুরুষই বা কেন এমন হিউমানয়েড তৈরি করবে যেটা তার অস্তিত্ব বিলীন করে দেবে? অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিলে পুরুষ অবশ্যই এমন একটা পথ বের করবে যেটা নারীকে ভুল পথে চালাবে, জুজুর ভয় দেখিয়ে নারীকে নিয়ন্ত্রন করবে। বরাবরের মতই পুরুষরা যা করে।
@রিক,
মেয়েদের মনের গোপন কথা মেয়েরা না বুঝলেও হিউমানয়েডরা আরো অনেক ভাল বুঝবে।এই বছরই সনি একপিস হিউমানয়েড বাজারে আনছে যা আবেগ বুঝতে সক্ষম। এ সবে শুরু। দেখ কি হয়। মেয়েদের কথা হিউমানয়েড মেয়েদের থেকেই বেশী বুঝবে বলে আমার ধারনা।
@বিপ্লব পাল,
আবেগ বুঝতে পারা রোবট তৈরি করা গেলে খুশিই হব। সনি যাই দাবী করুক, এখনো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে পর্যায়ে আছে তাতে মেশিন লার্নিং করে ছোটখাট আবেগ হয়ত বুঝানো যাবে, কিন্তু মানুষকে প্রতিস্থাপন করতে পারে এমন সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি হতে এখনো অনেক দেরী। সে জন্য নতুন ধরণের ম্যাথমেটিকাল যে ফ্রেমওয়ার্ক দরকার সেটা এখনো আমাদের হাতে নেই।
তবে একবার সত্যিকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বানানো যখন আমরা শিখে ফেলবো তখন মানব সমাজ অনেক বদলে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।