‘সারাদিন নর্দমা ঘাটা যার স্বভাব, ফুলের গন্ধ তার নাকে যায় না’। গান্ধী কি বলেছিলেন কথাগুলো? যেই বলুন, মালালা প্রসঙ্গে বাঙালির ফেসবুকিয় বুদ্ধিজীবীতার নমুনা দেখে আমার নিরেট মাথায় কেন যেন এ কথাগুলোই বারে বারে ঘুরে ফিরে উঠে আসছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবছরও পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিদ্যা সহ বিভিন্ন শাখায় নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে (আর এ নিয়ে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ পত্রিকায় ‘নোবেল পুরস্কার এবং আমার অনিয়ত ভাবনা‘ শিরোনামে), যদিও এ নিয়ে লোক জনের খুববেশি আগ্রহ কিংবা উৎসাহ লক্ষ্য করিনি। কিন্তু মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০১৪) বিজয়ের খবর পত্রিকায় আসার পর থেকেই ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে নিরন্তর বানী প্রক্ষেপণের মহড়া। এর মধ্যে আবার কেউ কেউ মালালা সম্বন্ধে একবিন্দু না জেনে তার কাজ, কিংবা অবদান সম্বন্ধে এতটুকু জ্ঞান না রেখে গালির তুবড়ি ছোটাচ্ছেন অহর্নিশি – “একটা গুলি খায়াই নোবেল পায়া গেল?” কেউ বা বলছেন, “মালালা একটা গুলি কেয়ে নোবেল পাইল, আমারে কামান মারো”,কেউ আবার বলছে, “একটা গুলি খাওয়া ছাড়া মালালার শান্তিতে কি অবদান আছে কইবেন কেউ?”
বেচারি মালালা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী হয়েও গালি খাচ্ছেন তালিবানদের, ইসলামিস্টদের, মৌলবাদীদের। পাশাপাশি দেশপ্রেমিক বাঙালিদের, জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশীদের, সেক্যুলারিস্টদের, কমিউনিস্টদের। সবার।
তালিবানি ইসলামিস্ট ঘরনার লোকজন মালালার উপর কেন ক্ষ্যাপা তা বোধ হয় বিশ্লেষণ না করলেও চলবে। কিন্তু অন্যরা? অন্যদের ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং!
‘পাইক্কা বিরোধী’ দেশপ্রেমিক বাঙালিরা, জাতীয়তাবাদী বাংলাদেশীরা, সেক্যুলারিস্টদের কিছু অংশ ক্ষ্যাপা, কারণ পাকিস্তানের সবকিছুই তাদের কাছে হারাম, এমনকি তাদের কেউ ‘যদি ফুল নিয়ে আসে তবুও’। তাদের বাঙালিপনা এমনই যে উর্দু ফার্সি শব্দ, মায় ভাষাও জঘন্য, যদিও তাদের অনেক কথাতেই উর্দু শব্দের আধিক্য চোখে পড়বে, রুনা লায়লার ‘দমাদম মাস্কালেন্দার’ তো বটেই এমনকি বলিউডি সিনেমার কিছু কিছু চোস্ত উর্দু ডায়ালগও তাদের ঠোটস্থ। তাতে কি? ‘পাইক্কার সাথে সম্পৃক্ত’ যে কোন কিছুতেই ‘গাইল’ দিতে হবে না? এদের কাছে তালিবানও যা, আসমা জাহাঙ্গিরও যা, পারভেজ হুদোভয়ও যা, মালালাও তা।
কমিউনিস্ট আর বাম ঘরনার লোকজনের কাছে মালালার পুরস্কার কেবলই ‘পশ্চিমা পুঁজিবাদী চাল’। এদের অনেকে নিশ্চিত,মালালাকে ‘খাড়া’ করা হয়েছে ইসলাম আর আইসিসের বিপরীতে ‘প্রোপাগান্ডা’র মেশিন হিসেবে। এদের একজন মধ্যে একজন দেখলাম গ্রামসীয় হেজিমনি কায়দায় তত্ত্ব দিয়েছেন, ‘আইসিস আর ইসলামোফোবিয়ার দ্বন্দ্বে এবারের নোবেল পিস প্রাইজ হিসেবে মালালার নির্বাচন তাৎপর্যময়’।
এবারে যারা মনে করেন গুলি খাওয়া ছাড়া মালালার কোন অবদান নেই, তারা বোধ হয় জানেনও না গুলি, খাওয়ার তিন বছর আগে – মাত্র ১১ বছর বয়সে বিবিসি সাইটে মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং তালিবানদের প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্লগিং শুরু করেছিলেন মালালা। মাত্র এগারো বছর বয়সে ব্লগিং শুনে হয়তো অনেকে ‘অসম্ভব’ ভেবে নাক কুঁচকাতে পারেন, যেমনটি কুঁচকেছেন এক বন্ধু আমার এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস ফেসবুকে দেবার পর। কিন্তু আমার অভিমত হল, এগারো বছরের মেয়ে অবশ্যই ব্লগিং করতে পারেন। আর উদ্যোগটা যেহেতু বিবিসির, তাই উনাকে ব্লগিং করতে সাহায্য করার লোক ছিল বিবিসি থেকে। আর বিবিসির কিন্তু উর্দু সহ ২৬টি ভাষার সার্ভিস আছে। আর বলা বাহুল্য, উনাকে কেউ গবেষণা-প্রবন্ধ লিখতে বলেনি, মালালা যা লিখছিলেন তা একটা ডায়রির মতো। Gul Makai (পশতুন লোকগীতির এক বীর নারী) ছিল তার পেন নেইম। সেটা করা একেবারে অসম্ভব কিছু ছিল না মালালার জন্য। মালালা তার স্কুলের শীর্ষ স্থানীয় ছাত্রী ছিলেন, প্রায় প্রতি বছরই প্রোক্টর হিসেবে নির্বাচিত হতেন। আমি যখন এ লেখাটা লিখছি তখন আমার হাতে এ বছর প্রকাশিত ‘আই এম মালালা’ বইটা ধরা। সেখানে স্কুলের অগণিত ট্রফি হাতে মালালার ছবিও আছে। আর মালালার বাবা ছিলেন শিক্ষক, এবং এক সময় স্কুলের প্রিন্সিপাল। তাই মালালার পক্ষে ইংরেজিটা রপ্ত করা সহজ হয়েছিল। তার বাবা আমেরিকান সিরিয়ালের বিভিন্ন ডিভিডি মালালাকে কিনে দিতেন তার ইংরেজিটা পোক্ত করার জন্য। মালালার অন্যতম পছন্দের একটি টিভি প্রোগ্রামের ডিভিডি ছিল Ugly Betty। মালালা তার বইয়ে লিখেছেন –
My father wanted me to continue to improve my English. So he encouraged me to watch a DVD that one of te journalists in Islamabad had given to me: a TV program called Ugly Betty. I loved Betty, with her big braces and her big heart…. My favourite part though, was seeing Betty’s father cook for her instead of vise versa!
অবশ্য ব্লগিং যে মালালা করবেনই তা তিনি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেননি। এই সময়টা পাকিস্তানের জন্য এক বিশাল ক্রান্তিলগ্ন। মাত্তা, মিঙ্গোরা সহ সোয়াতের মতো পাকিস্তানী পশতুন এলাকাগুলো একেবারে আফগানিস্তানের বর্ডার সংলগ্ন এলাকা। এ এলাকাগুলো আফগানী তালিবানরা ক্রমশ দখল করে নিচ্ছিল। মেয়েদের স্কুল জোর করে বন্ধ করে দিচ্ছিল। তালিবানরা জায়গাগুলো দখল করে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো নিষিদ্ধ করতে থাকে, বাধ্যতামূলকভাবে নিকাব, বোরখা প্রভৃতি পড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ঠিক এই সময়টাতেই বিবিসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে ব্লগিং এর। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাত্র ছাত্রীদের কেউ রাজি না হওয়াতে অনেকটা বাধ্য হয়েই মালালাকে এ দায়িত্ব নিতে হয়। মালালা অবশ্য শুরু থেকেই ছিলেন কিছুটা বিদ্রোহী। মুখ ঢাকা, বোরখা পরার বিরুদ্ধে ছিল সোচ্চার। আমি I am Malala থেকে প্রাসঙ্গিকভাবে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি –
I told my parents that no matter what other girls did, I would never cover my face like that. My face was my identity. My mother who is quite devout and traditional, was shocked. Our relatives thought I was very bold (some said rude). But my father said, I could do as I wished. “Malala will live as free bird” he told everyone.
মালালা তার প্রথম ব্লগটি লেখেন ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে, ‘I am afraid’ শিরোনামে। এর পর থেকে লিখেই গেছেন; তালিবানদের বিরুদ্ধে ব্লগিং যখন শুরু করলেন তখন থেকেই মৃত্যু হুমকি পেয়েছিলেন অজস্র। তার লেখায় এমনই আক্রান্ত বোধ করেছিলো তালিবানি জঙ্গিরা যে, যে বাসে করে মালালা স্কুল থেকে ফিরতো সেখানে তারা হামলা করে বসে। দু’জন তালিবানি যুবক বাসে উঠে রাইফেল তাগ করে তার সহপাঠীদের দিকে এবং তাদের বাধ্য করা হয় বাসের মধ্যে মালালা কোন্ জন সেটা চিনিয়ে দিতে। সহপাঠীদের একজন ভয় পেয়ে চিনিয়ে দিলে তৎক্ষণাৎ মালালাকে গুলি করা হয়।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও তিন দিন মালালা সংজ্ঞাহীন ছিলেন। জ্ঞান ফিরেছিলো ইংল্যান্ডে নেয়ার পর। সেখানে সার্জারি করে তার গলার কাছ থেকে বুলেট অপসারণ করা হয়েছিল, এমনকি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ থামাতে খুলির কিছু অংশ কেটে বাদ দিতেও হয়েছিল।
যারা মালালাকে আজ উঠতে বসতে গাল দিচ্ছেন, তাদের কেউ কি অনুধাবন করতে পারছেন যে সময়টা হেসে খেলে বেড়াবার বয়স, তার সেই ‘মেয়েবেলা’তেই কি রকম ‘চাইল্ডহুড ট্রমা’র মধ্যে দিয়ে মেয়েটাকে যেতে হয়েছিল? শুধু এই কারণেই তো মালালা শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতা পেতে পারেন আমাদের । তার আগের কিংবা পরের কাজ এবং পুরস্কারগুলো যেমন, নারীশিক্ষার জন্য মালালা ফাণ্ড গঠন, মৌলবাদ বিরোধিতা, ২০১৩ সালে ইউএন এ তার ঐতিহাসিক বক্তৃতা, ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন’স পিস প্রাইজের জন্য ডেসমণ্ড টুটুর নমিনেশন, শাখারভ পুরস্কার, টাইম ম্যাগাজিনের চোখে ২০১৩ সালের ‘অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তি’ নির্বাচিত হওয়া – সেগুলো না হয় বাদই দিলাম।
যাহোক, অনেক হাবিজাবি স্ট্যাটাসের ভিড়ে শিবরাজ চৌধুরীর এই স্ট্যাটাসটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, এটি পড়তে অনুরোধ করি –
“একটা গুলি খায়াই নোবেল পায়া গেল?” পাবলিকের কথায় মনে হয় গুলি খাওয়াটা মনে হয় খুব ইজি, যে কেউ খাইতে পারে। অক্টোবর ২০১২ তে মালালা গুলি খাইছিল। কেন খাইছিল সেইটা কি কেউ জানে? এইটুক একটু জানাই।
পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় যখন তালিবানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হল, তালেবান কী করল? এরা খালি গোলাগুলি ছাড়া সবকিছুই ব্যান করতে পারে। মেয়েদের স্কুলের কথা তো আর বলাই বাহুল্য। এইসব যখন শুরু হইছে, তখন বিবিসি উর্দু চিন্তা করল যে ওইখানের আম আদমিরা কী ভাবতেছে সেইটা ফোকাসে আনা উচিত, এনোনিমাসলি। মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন সাহেব একটা স্কুল চালান। তাঁর সাথে পরিচয় ছিল বিবিসি উর্দুর স্থানীয় প্রতিনিধির। তাকে বলার পর এই ব্যাপারে স্টেপ নেয়া হল। কিন্তু তালেবান এর ভয়ে কেউ রাজি হচ্ছিল না। আয়েশা নামের একটা মেয়ে, যে কিনা মালালার চেয়ে বয়সে বড় ছিল, সে প্রথমে রাজি হয়েছিল। পরে তাঁর অভিভাবকরা পারমিট করে নাই। পরে জিয়া সাহেব রিস্ক নিয়ে নিজের মেয়েকেই এই দায়িত্ব দেন। মালালাকে তিনি ওই অস্থিতিশীল অঞ্চলেই নিজে পড়াতেন, অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করতেন মালালার সাথে- মালালা ইংলিশ, উর্দু এবং পশতুতে ফ্লুয়েন্ট। যারা সমালোচনা করল, তারা ভুলে যাচ্ছে যে, সোয়াত উপত্যকা ছেড়ে উনি পরিবার নিয়ে করাচি, পিন্ডি চলে যেতে পারতেন। যান নাই কেন? জিয়া সাহেব নিজেও একজন এডুকেশন এক্টিভিস্ট। যাইহোক, মালালা তখন ব্লগ লেখা শুরু করল। [ লিঙ্ক এখানে : “ডায়েরি অফ আ পাকিস্তানি গার্ল”]। মালালা মাত্র ১১ বছর বয়সে করাচি প্রেসক্লাবে তালিবান শাসন নিয়ে বলেছিল। উইকিপিডিয়া থেকে তুলে দিলাম। ওখানে লিঙ্ক দেয়া আছে। “How dare the Taliban take away my basic right to education?” Yousafzai asked her audience in a speech covered by newspapers and television channels throughout the region”
বিবিসির ব্লগ সূত্রে ওকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস একটা ডকুমেন্টারি বানাবে বলে ঠিক করল। যাইহোক, এইভাবে তালিবান মালালারে চিনল। এরপরে টার্গেট করল। দা রেস্ট ইজ হিস্ট্রি।
সুতরাং, মালালা খালি গুলি খায়াই নোবেল পায় নাই। সোয়াতের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে থেকে যে এতটুকু সাহস নিয়ে এগিয়ে এলো তালেবানের বিরুদ্ধে, এতো অনিরাপদ জীবন নিয়েও যে তারা ওই জায়গা থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাবার কথা ভাবে নাই, এইসব নিয়ে দেখি কারো মাথাব্যথা নাই।
যাই হোক, এই বেলায় আরেকটু পো* মারি। মালালা গুলি খাবার আগেই সে চিলড্রেন রাইটস এক্টিভিস্ট হিসেবে পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু(আমি নিশ্চিত, জাতি টুটুরেও চিনে না) ২০১১ সালে মালালাকে ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন’স পিস প্রাইজের জন্যে নমিনেট করেছিলেন। পুরষ্কার আরেকজন পেয়েছিল সেবার। তবে মালালার ব্যাপারে বলা হয়েছিল, “Malala dared to stand up for herself and other girls and used national and international media to let the world know girls should also have the right to go to school”
সুতরাং, আবালামি করার আগে একটু জাইনা নিলে ভাল হয়”।
হ্যাঁ, আবলামি করার আগে জেনে নিলে ভাল হয়, এমন উপদেশ শিবরাজ চৌধুরী দিচ্ছেন বটে, কিন্তু যাদের দিচ্ছেন, তাদের কাছে এটা উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতোই। এরা জানার চেয়ে আমার আপনার চোদ্দগুষ্টি নিয়ে ‘গাইল’ দিতে ওস্তাদ। এতো জানার সময় কোথায় এদের?
গত বছর টিভিতে জন স্টুয়ার্টের ‘ডেইলি শো’ দেখছিলাম বলে মনে আছে। সেখানে একটি পর্বে মালালাকে আনা হয়েছিল। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল –
‘তোমাকে যারা গুলি করেছিল, আবার যদি তাদের কারো সাথে মুখোমুখি হতে হয়, তবে তুমি কি বলবে?’
উত্তরে মালালা বলেছিল –
‘আমি বলব, মেয়েদের পড়ালেখার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি তোমার মেয়ের শিক্ষার জন্যও আমি লড়ব’।
httpv://www.youtube.com/watch?v=gjGL6YY6oMs
আমরা বুড়ো-হাবড়ারা যখন এ ওর পেছনে লাগাতে ব্যস্ত, ব্যস্ত কথার তুবড়ি ছোটাতে আর কিছু না পড়ে না জেনে ফেসবুকিয় বুদ্ধিজীবীতা জাহির করতে, তখন এই ১৬/ ১৭ বছরের মেয়েটা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে কাজ করতে হয়।
আমি আমার স্ট্যাটাসটা ফেসবুকে দেয়ার পর অবধারিতভাবে সেই স্পর্শকাতর বিষয়টিও উঠে এসেছে। যে পাকিস্তান, তার মিলিটারি ত্রিশ লক্ষ বাঙালীর হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী তার সবকিছু অস্বীকার করাটা দোষের কোথায়? এমনটি লিখেছেন এক ফেসবুক বন্ধু স্ট্যাটাসের মন্তব্যে। আমি বলব, কেউ কিন্তু অস্বীকার করছে না যে পাকিস্তানী সেনারা আমাদের ত্রিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছিল। আমরা তার প্রতিবাদ করছি, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিও চাচ্ছি। ঘৃণিত পাকসেনাদের বিচারও দাবী করছি, দেশে, এবং আন্তর্জাতিকভাবেও। আমি নিজেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি নিজেও বড় হয়েছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিমণ্ডলেই। তাই ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ জিনিসটা এতো সংকীর্ণ হবার কথা নয় যে, একটি সাহসী মেয়ে তালিবানদের বিরুদ্ধে একা যুদ্ধ করছে, নারী শিক্ষার প্রসারে কাজ করছে – অথচ তাকে আমরা সাধুবাদ দিতে পারব না, প্রশংসা করতে কুণ্ঠিত হব। এটা করলে আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই অপমান করা হয়। আসুন আমরা বিশ্বমানব হতে শিখি। বাঙালিত্বের অপর নাম যে বিশ্বমানব হবার শিক্ষা – তা ভুলে যাই কেন?
আর যে সব বাম ঘরনার লোকজন মালালার পুরস্কারের পেছনে যথারীতি, ‘পশ্চিমা চক্রান্ত’-এর গন্ধ পাচ্ছেন, হেজিমনির হেঁজেল গোঁফে তা দিয়ে ভাবছেন হঠাৎ করেই আইসিস ঠেকাতে এ বছর মালালাকে নির্বাচন করা হয়েছে নোবেলের জন্য, তারা জানেনও না যে, আসলে মালালার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল গত বছরই। গতবছরই মালালা পুরস্কার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। সে সময় বহু বিখ্যাত জনের পক্ষ থেকে পিটিশন করা হয়েছিল যেন মালালা এটি পান। ২৫৯০০০ সাক্ষর জমা হয়েছিল সপ্তাহখানেকের মধ্যেই, এমনকি রিচার্ড ডকিন্সের মতো বিজ্ঞানীর পক্ষ থেকেও ক্যাম্পেইন করা হয়েছিল। ২৫৯টি নমিনেশনকে পেছনে ফেলে মালালা এগিয়েও ছিলেন, কিন্তু গতবছর তিনি নোবেল কমিটির বিবেচনায় উত্তীর্ণ হননি। কিন্তু গতবার নোবেল না পেলেও সবাই বুঝেছিল মালালার নোবেল-প্রাপ্তি কেবল সময়ের ব্যাপার। তো এ বছর তিনি নোবেল পেলে সেটা ভুঁইফোড় ভাবে কিংবা ‘আইসিস আর ইসলামোফোবিয়া’কে ট্যাকেলের জন্য হবে কেন, তা আমার বোধগম্য হল না কোনভাবেই।
অবশ্য এর মাধ্যমে আমি বোঝাতে চাইছি না যে, নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। অবশ্যই আছে। ওবামা, রুজভেল্ট, হেনরি কিসিঞ্জারের মতো লোকজন এই পুরস্কার পেয়েছেন, যা অবশ্যই বিতর্কিত। কিন্তু এ পুরস্কার তো মার্টিন লুথার কিং, শাঙ্খারভ, মাদার তেরেসা, নেলসন মেন্ডেলাও পেয়েছেন। সেটা ভুলে গেলে চলবে কেন? মালালা এ পুরস্কার পেলে সেটা ঘৃণিত বা হবে কেন, আর নোবেল-পিস-প্রাইজের কবরই বা হবে কেন? মালালার পুরস্কারে খুশি না হতে পারি, অন্ততঃ ঘৃণা করার মতো তো কিছু ঘটেনি।
আরেকটি ব্যাপার। মালালার এ পুরস্কারের প্রচার আর বিতর্কে কৈলাস সত্যার্থীর পুরস্কার প্রাপ্তির ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে গেছে। তার “বাচপান বাঁচাও” আন্দোলন ভারতের শিশুদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখনও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী অধিকারবঞ্চিত সুযোগসুবিধা বঞ্চিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে, এখনো যে কৈলাস সত্যার্থী মতো লোকজন এ জন্য কাজ করে চলেছেন সেটাই আশার কথা।
তারচেয়েও বড় কথা, উপমহাদেশের দুই চিরশত্রুদেশ অন্তত একটি ব্যাপারে এক হয়ে পুরস্কার ভাগ করে নিতে যাচ্ছে। এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বলাই বাহুল্য।
সারা পৃথিবীর থেকে অনেক সুভেচ্ছা রইল মালালার জন্য। আরেকটি অনুরোধ রইল , এই বিশ্বকন্যার কাছে সকল বিশ্ববাসীর একটি অনুরোধ , দ্য়া করে
আরেকটি মালালা তৈরি করে দাও। ছড়িয়ে পড়ুক বিদ্রোহ চারিদেকে এই নোংরা মৌলবাদের বিরুদ্ধে।
আমার মনে হয়েছে একজন মুক্তচিন্তার মানুষ এভাবেই দেখবে পুরো বিষয়টা। আমরা যারা লেখালিখি করি তারা জানি- লেখালিখি বিষয়টা যতটা না আনন্দ বা জ্ঞান বিতরণের তারচেয়ে অনেক বেশি মূল্যবোধের। আপনি আজ আমাদের মাঝে নেই অভিজিৎ দা, কিন্তু মননে সৃজনে ঘিরে আছেন সর্বত্র!
আমি মনো করি ‘মালালা’ একটি প্রতিবাদের নাম।নোবেল পুরস্কার আমার কাছে কোন মুখ্য বিষয় নয়,মুখ্য হচ্ছে মালালা।যে, সমস্ত নারী সমাজের পক্ষে হীন পুরুষতান্ত্রিক, ধর্মীয় লেবাস দারি,নিচু বুদ্ধি সম্পন্ন মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে, নারী শিক্ষা ও সম অধিকার আদায়ে। আমি মালালাদের সাথে আছি,থাকব এবং থাকব।
শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক আলোচনা একটি বাৎসরিক কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে।ধন্যবাদ অভিজিৎ রায়কে মালালার নোবেল পুরস্কার বিজয় নিয়ে লিখে মুক্ত-মনায় একটি আলোচনার সূত্রপাত করার জন্য।এ বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনায় ( মন্তব্যে) আমি আমার মানসিক অবস্থানকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।
গুরুত্বপূর্ণ লেখা (Y) । শান্তি পুরস্কার নিয়ে মনে হয় বিতর্ক না হওয়াটাই এখন ব্যতিক্রম হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রথম কথা হচ্ছে আমি মালালার নোবেলের বিপক্ষে নই। আসলে ঠিক এই কথাটা না বলে আমার বলা উচিত মালালা ঠিক যেই কারণে নোবেল পেয়েছে আমি তাঁর বিপক্ষে নই। এটা যদি আমেরিকার সাজানো নাটকও হয় তাতেও আমার বিন্দুপরিমান আপত্তি নেই। কেন নেই সেই কথাটা আগে বলছি।
ধরে নেই মালালকে প্রথমে যুদ্ধ বিগ্রহ এলাকা (মডারেট মুসলমান এবং কমিউনিজম সাপোর্টার্দের মতে তেল এর জন্য যুদ্ধ লাগিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব) দিয়ে তাকে বুঝানো হলো তুমি অসহায়, তোমার বাকস্বাধীনতা নেই, তোমার শিক্ষার অধিকার নেই, এরপর তাকে বিবিসি কর্তৃক পরিবেশ দিয়ে ব্লগিং এ আনা হলো, এরপর তাকে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে চলার পথ মসৃণ করা হলো, এরপর তাকে আস্তে আস্তে লাইমলাইটে আনা হলো, কায়দা করে গুলি করে বাচিয়ে তোলা হলো। এরপর নোবেল দিয়ে ‘মালাল’ সিনেমার সমাপ্তি ঘটানো হলো… যদি এই ধরণের নাটক ঘটেও থাকে তারপরো আমার বিন্দুপরিমাণ অভিযোগ নেই। বরং আমি খুশী হবো এটা ভেবে যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মালালার বয়সী মেয়েরা যারা প্রতিটা ঘন্টায় নানাভাবে নিগৃত হচ্ছে তাদের বেশীরভাগ এই নাটক ধরতে না পেরে ইন্সপায়ার্ড হবে, সোচ্চর হবে নিজের অধিকার সম্পর্কে। ঠিক যেমন কিছু কিছু চলচিত্র আমাদেক নতুনভাবে বাঁচার প্রেরণা দেয় এরকম প্রেরণা দিবে তাদেরকেও। আজ সকালেও ডেইলি স্টারে পড়লাম যে দুইজন ধর্ষিত হওয়া মেয়ের একজন আত্মহত্যা করেছে। সে কি অন্যায় করেছিল যে এতোটা লজ্জা নিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে? সে কি পারতো না নিজের বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ে সোচ্চর হয়ে মানুষের মতো বাঁচতে? পারতো, কিন্তু তাকে এই মেসেজ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। মালালার ঘটনাটি যদি সে জানতো (মিথ্যা হোক আর সত্য) তাহলেও সে হয়তো কিছুটা হলেও অনুপ্রেরণা পেত। আজ মালালার নোবেল পাওয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি কিশোরির বাবা মা একবার হলেও মালালার নাম মুখে আনবে। এতে ঐ কিশোরিটি একবারের জন্যে হলেও ভাববে নতুন করে কলম উঠিয়ে নেওয়ার, চাইবে মনের ভিতরে চেপে থাকা কথাগুলো প্রকাশ করার। এই কোটি কোটি মেয়ের মধ্যে থেকে যদি লাখ লাখ মেয়েও কলম ছেড়ে না দেয় তাহলেও আগামী ৫০ বছরে পুরো বিশ্বের সিনারিও পাল্টে যাবে!! আর তাই আমি মোটেও ব্যস্ত না মালালার নোবেল প্রাপ্তি কোনো সাজানো নাটক বা ভুল স্বিদ্ধান্ত কিনা…
এবার আসি গুবরে ফরিং এর কমেন্ট এর ব্যাপারে। উনার কমেন্টের বিপরীতে আপনি একপর্যায়ে বলেছেন মাদার তেরেসা, লুথার কিং এর জীবনের কালো অধ্যায়ের কথা। (যদিও তেরেসার দারিদ্যতার কোটেশনের সাথে আমি একমত, তবুও প্রাসঙ্গিকতা টেনে আমি এটা এড়িয়ে গেলাম) মালালার জীবনে যে এর থেকে কালো অধ্যায় আসবে না, তাঁর কোনোই কিন্তু গ্যারান্টি নেই। আর মালালার অবদান বলতে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার আগে আসলে কি কিছু আছে? হ্যাঁ আমি স্বীকার করে নিয়েছি যে নোবেল পাওয়ার পর সে হচ্ছে এখন সিম্বোলিক ক্যারেক্টার। পৃথিবী এখন থেকে কিশোরীদের যেকোনো অগ্রধিকারের প্রতিক হিসাবে তাঁর কথা তুলে ধরবে, মেয়েরা এতে উৎসাহিত হবে… তাই নোবেল পাওয়ার পর তাঁর কারণে শান্তি আসবে এই ব্যাপারে আমার সন্দেহ নাই বললেই চলে। কিন্তু নোবেল পাওয়ার আগে সে ‘শান্তির দূত হিসাবে কাজ করেছে’ এতে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সে শান্তি কায়েম করেনি, বরং সে শান্তি চেয়েছে, নির্বিগ্নে পড়ালেখা করার শান্তি চেয়েছে, বাক স্বাধীনতার শান্তি চেয়েছে, গুলি খাওয়ার পরও শান্তি চেয়েছে… কথা হচ্ছে স্বাধীনতা সে শুধু একাই চাইছে না, ঠিক এই মূহুর্তে যেই মেয়েটে ধর্ষিত হলো, বা যে নারীটি স্বামীর হাতে মার খেলো, বা যেই মেয়েটি পড়ালেখার স্বপ্ন ছেড়ে পা দিয়ে সেলাই মেশিন ঘুড়ালো, তারা সবাই কিন্তু স্বাধীনতা চাইছে, মুক্তি চাইছে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে এদের আওয়াজ পৃথিবীর অনেকের কানেই পৌছাছে না, কারণ তারা সেই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে মুক্তি চাইছে না যেটা দিয়ে অনেকেই শুনতে পাবে। মালালা চেয়েছে ব্লগের মাধ্যমে, যার আওয়াজ অনেকের কানেই পৌছেছে। তাই ‘মুক্তি চাওয়া’ আর ‘মুক্তি যোদ্ধা’ এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখানে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে সে যে কিনা ঐ ব্লগিং প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে মালালার জন্য। এরকম মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু বিশ্বে কোটি কোটি আছে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মালালার মতো নারীকে ‘আওয়াজ’ তোলার জায়গা করে দিচ্ছে। তাই শান্তিতে নোবেল দিলে এদেরকেই দেওয়া উচিত। মালালার মুক্তি চাওয়ার বিষয়টি অনেকটা মিলে যায় বারাক ওবামার শান্তি বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপনের কথার সাথে, যার কারণে নোবেল কমিটির মন গলে শান্তিতে তাকে নোবেল প্রাইজ দিয়ে দিলো! যদি বারক ওবামা তাঁর কথাতে ঠিক থাকতে পারতো তাহলে হয়তো আজ তাঁর নোবেল প্রাইজ নিয়ে সমালোচনা উঠতো না, আর নোবেল কমিটিও সমালোচিত হতো না। তাই আস্তে ধীরে সবকিছু বিবেচনা করে সময় নিয়ে আরো কয়েক দশক বা বছর পরে মালালাকে কি দেওয়া যেত না? এখন এমন অনেকেই আছে যারা সারাটা জীবন শান্তির জন্য কাজ করে পলান সরকারের মতো কবরে দুই ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই বছরেই হয়তো এদের অনেকেই মারা যাবে। তাই তাদেরকেই কি আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল না? আমি জানি নোবেল কোনো একক স্বিদ্ধান্তে দেওয়া হয়না। কিন্তু বিশ্ব দেখেছে বিজ্ঞদের প্রাপ্ত ভোটেও নোবেলের অযোগ্য অনেককে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে। হিটলার এবং স্তালিন কে যেখানে শান্তিতে নোবেল প্রাইজের জন্য নিমিনেশন করা হয়েছিল সেখানে এই ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার প্রদান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করাটা মোটেও অহেতুক নয়। তবে আমি এটাও জানি সময়ই বলে দিবে মালালার নোবেল প্রাপ্তি কতটুকু সার্থকতাপূর্ণ না বা সার্থকতা বিবর্জিত। ভালো থাকবেন।
আমেরিকা মালালারে বলে নাই যে তালেবানদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে হবে।মালালা তালেবানদের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ চালিয়ে যখন গুলিবিদ্ধ হয় তখন আমেরিকা মালালাকে নিয়ে কিছু কৌশলী সিদ্ধান্ত নেয়।বুদ্ধিজীবীদেরকে নিজেদের হাতে রাখার জন্য নোবেল দেয়াটা তাদের কৌশল।কিন্তু এখন যারা মালালাকে সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলে গালি দিচ্ছে তাদের মধ্যে মৌলবাদীদের একচোখা নীতির প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি।এই মেয়েটা পাকিস্তানের মত একটা দেশে থেকে তালেবানদের সাথে যে নীতিগত যুদ্ধ চালিয়েছে সেটাকে অস্বীকার করলে জ্ঞানপাপী হতে হবে।কোন মানুষই সমালোচনার উর্ধ্দে নয়।কিন্তু তা করতে হবে গঠনমূলক এবং যৌক্তিক উপায়ে।
@রসি মজুমদার,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের প্রতিটি বাক্য যৌক্তিক। সবাই আপনার মতো স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী হলে আর এ লেখাটা লিখবার প্রয়োজন পড়তো না।
লেখাটি পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
“কারো অনুভুতিতে আঘাত করার স্বাধীনতা না থাকলে বাকস্বাধীনতার কোন অর্থ হয় না” – সালমান রুশদীর কথাটা দিয়েই শুরু করতে হচ্ছে। আমাদের অধিকাংশেরই তাই মনে হয়। আমরা অন্যকে খোঁচা না দিয়ে কিছু বলতে পারিনা। কেউ অনেক যুক্তি নিয়ে এসেও অনেক কিছু প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। নইলে আপনিও এমন ভাবে শুরু করতেন না।
আমি বেশি কিছু বলবোনা,
এক, মালালা এমন কিছু করেনি যে জন্য সে নোবেল পুরস্কার পাবে। আশা করি এর জন্য যুক্তির পাহাড় হাজির করতে হবেনা।
দুই, মালালার থেকে হাজার নয় খুঁজলে বরং লাখ-এর কম পাওয়া যাবেনা যারা এই নোবেল পাওয়ার যোগ্য। আশা করি অসংখ্য উদাহরণ এর সমাগম এর প্রয়োজন নেই।
আর তিন বলার আগে ব্যক্তিগত একটা কথা না বললেই নয়, আপনি মনে হয় দেশে থাকেন না। তাই অনেক কিছুই ভুলে যান, তাই মনে করেন দেশের সবাই বুঝি পাক বিরোধী বলেই এমনটা বলছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে চেতনা না দেখিয়ে আগে দেশের জাতীয় চেতনাটা দেখান। আমরা ভুলিনা দেশটাকে। আমরা এখানে প্রতিদিন বাঁচি। আশা করি এটা ভুলে যাননি-
“Absolutely gutted #Bangladesh canceled cricket tour of #Pakistan!: That not tiger move but cat,” said Pakistani teenager Malala Yousafzai on Twitter.
আপনি ভাবলেইতো হয়ে গেলনা যে, মালালা পাকিস্তানি বলে তার নোবেল পুরস্কার এর বিপক্ষে চলে যাবে বাংলাদেশ। এটা পাকিস্তান বা আমেরিকা নয় যে, অন্য দেশের অভ্যন্তরিণ ব্যাপার নিয়ে মাথাব্যথা করতে হবে। আগে খুঁজে দেখুন কেনো বাঙ্গালিরা মালালাকে অপছন্দ করে।
@শান,
আমি সালমান রুশদীর কথাটা সঠিক মনে করি। কারো অনুভুতিতে আঘাত করার স্বাধীনতা না থাকলে বাকস্বাধীনতার সত্যই কোন অর্থ হয় না। কেন করি সে ব্যাখ্যায় আর নাই বা গেলাম। আজকে ইরতিশাদ আহমদ একটা লেখা লিখেছেন সেটা পড়লেও আশা করি বুঝতে পারবেন।
সেই চেতনাটা ঠিক কিরকমের? “একটা গুলি খায়াই নোবেল পায়া গেল?” টাইপের স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুক সয়লাব করে রাখা? না ভাই সরি, সেরকমের ‘দেশের জাতীয় চেতনা’ আমার নাই। দেশ নিয়ে আমার কোন ‘আলাদা অনুভূতি’ নাই। দেশে সংখ্যালঘু মানুষের উপর যখন অত্যাচার হয় আমি তার প্রতিবাদ করি। শেখ মুজিব ও তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক একটা গান লেখার জন্য তন্ময় মল্লিককে যখন সাত বছরের জেল দেয়া হয়, আমি তার বিপক্ষে দাঁড়াই। আমার দেশের সেনাবাহিনী যখন কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে, আদিবাসীদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়, ধর্ষণ করে, আমি দেশের ভাবমূর্তির কথা ভেবে বসে থাকি না। স্যামুয়েল জনসনের এই কথাটা আমি খুব মানি – “Patriotism is the last refuge of a scoundrel.”
সেটা আপনার পর্যবেক্ষণ। আপনার এই পর্যবেক্ষণের সাথেও সবাই একমত হবেন তা নয়। আমার লেখাতেই এর বিপরীত যুক্তি আছে। কিন্তু সেগুলোতে আর নাই বা গেলাম এখানে।
যে টুইট নিয়ে এত মাতোয়ারা, সেই টুইট মালালা ভুল বুঝতে পেরে পরে মুছে দিয়েছিলেন। আর এই টুইট যে আমি সমর্থন করি তা নয়। আমি মালালার এই কাজের সাথে মোটেই একমত নই। কিন্তু এর সাথে তার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। জেমস ওয়াটসন ডিএনএ আবিস্কারের জন্য নোবেল পেয়েছেন, কিন্তু তার মনোভাব অনেক ক্ষেত্রেই রেসিস্ট। সেই জাত্যাভিমানী মনোভাবের সাথে আমি একমত নই, কিন্তু তা বলে সেটা জেমস ওয়াটসনের কাজকে ছোট করে না। মালালা তার নারী শিক্ষা বিষয়ক কাজের মাধ্যমেই পরিচিত হয়েছেন। কত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে, যুদ্ধ করতে হয়েছে, তার উপকরণ আপনি ‘আই এম মালালা’ গ্রন্থে পাবেন। তারপরেও আপনি মালালাকে অপছন্দ করতেই পারেন, সেই অধিকার আপনার আছে। আমারো অধিকার আছে অহেতুক নিন্দা বা উন্নাসিকতা দেখলে তা নিয়ে লেখার।
ভাল থাকবেন।
মালালার নোবেল পা্ওয়ায় যে অস্বস্তি মুসলিম বিশ্বে তার কারণ মালালার লড়াইটা ইসলামের বিরুদ্ধে বলে। তালেবানরা নিসন্দেহে ইসলামী আইন অনুযায়ী শাসন কার্য চালিয়েছে। সেই শাসনে নারীদের স্বাভাবিক শিক্ষাদীক্ষা, অধিকার স্বীকার করার কথা নয়। মজাটা হচ্ছে যারা এতকাল তালেবানদের মধ্যযুগীয় ইসলামী রীতিকে “এটা প্রকৃত ইসলাম নয়” বলে আসছিল তারাই মালালার নোবেল পুরস্কারে অস্বস্তিতে ভুগছে! কারণ মালালার লড়াইটা শরীয়ার বিরুদ্ধে। রক্ষণশীল ইসলামের বিরুদ্ধে। মালালার নোবেল ফের ইসলামী শাসনকে আলোচনায় টেনে এনেছে। লাদেন প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নয় যারা বলেছে তারাদেরই ছিল লাদেনের জন্য গোপন সহানুভূতি। ছিল অবচিত মনের সমর্থন। যদিও লাদেন, তালেবানরা “সহি ইসলাম” নয়!
চলার পথে আমরা যখন ঘোলাটে, দ্বিধান্বিত, প্রচারে বিভ্রান্ত তখনই অন্ধকারে বাতিঘর হয়ে আসেন অভিজিৎদা। এই লেখাটি তিনি না লিখলে আমারও “আমেরিকার আগ্রহ” জাতীয় প্রচারনায় দ্বিধান্বিত মন কাজ করতো। অভিদা, আমার ধন্যবাদ জানবেন।
@সুষুপ্ত পাঠক,
লজ্জায় ফেলে দিলেন একেবারে! 😛
আপনারা আমার চেয়ে অনেক ভাল লেখেন। আপনার গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যাটাসগুলো তো গুণে মানে অনন্য। মুক্তমনাতেও নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
@অভিজিৎ,
মুক্তমনা আমাদের! আমরা মুক্তমনার!
তালিবান গোষ্ঠী ছাড়াও মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর পাকিস্থানী ও মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভের একটা বড় কারণ হলো, তাঁর প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘i am malala’৷ মালালা ইউসুফজাইয়ের আত্মজীবনী ‘i am malala’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বইটি নিয়ে পাকিস্থান ও মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ পাকিস্তানের বেসরকারি স্কুলগুলোর একটি সংগঠন মালালা ইউসুফজাইয়ের প্রকাশিত বই ‘i am malala’ নিষিদ্ধ করেছে৷ কারণ তাদের দাবি, বইটি তরুণ শিক্ষার্থীদের নীতিভ্রষ্ট (অর্থাৎ, কট্টর পন্থা ত্যাগ করে মানসিকভাবে “উদার”) করতে পারে৷
পাকিস্তানের রক্ষণশীলদের দাবি, আত্মজীবনীমূলক বইটিতে ইসলাম ধর্মের মহানবী মোহাম্মদ এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মর্যাদাহানি করা হয়েছে৷ ডানপন্থিরা আরো দাবি করেছে, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া মালালা তাঁর বইয়ে “সালমান রুশদি” এবং সংখ্যালঘু “আহমেদিয়া” সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ আহমেদিয়াদের পাকিস্তানে ‘অমুসলিম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পাকিস্থানের সরকার বইটির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না নিলেও ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগের সদস্য রফিক রাজওয়ানা জানিয়ে ছিলেন, আত্মজীবনীটি ‘বিতর্কিত’ এবং সরকার প্রয়োজন মনে করলে সেটি নিষিদ্ধ করবে৷ রফিক রাজওয়ানা আরও বলেন,
@তারিক,
ধন্যবাদ মহামূল্যবান এই তথ্যগুলোর জন্য। আমি আসলে এই মুহূর্তে ‘আই এম মালালা’ বইটা পড়ছি। এবং কথাগুলো সত্য – বইটি কট্টরপন্থা ত্যাগ করে উদারপন্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েই লেখা। তালিবানী মৌলবাদীদের হাতে পড়লে শিক্ষা, সংস্কৃতি কিভাবে বিনষ্ট হয়, কিভাবে মেয়ারা গৃহবন্দি হয় – এই বইটা তার দালিলিক প্রমাণ।
মালালা বইয়ের কোথাও কিন্তু ইসলামকে আঘাত করেনি, বরং ইসলামের প্রতি তার অনুরাগই প্রকাশ পেয়েছে বইটিতে। কিন্তু হলে কি হবে, ব্যাপারটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেমন ঘটে – মালালা আক্রমণ করেছে তালিবানী মৌবাদীদের – অথচ তারা, অন্তত তাদের অনেকেই একে ইসলামের উপর আঘাত হিসেবে নিয়েছে। তাই বইটি নিষিদ্ধ করার দাবী জোরদার হচ্ছে। অথচ হওয়া উচিৎ ছিল ঠিক বিপরীত। ইসলামের ইমেজ সঠিক করার জন্যই তালিবানী চিন্তা বাদ দিয়ে মালালার মত উদারপন্থি চিন্তায় বেরিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা গাড়িকে উলটো দিকে চালাতেই বদ্ধপরিকর, কি আর করা!
যাহোক, ধন্যবাদ আপনাকে।
@অভিজিৎ ভাই,
তালিবানদের কঠোর নিয়ম-কানুনের বিরুদ্ধে কথা বলা আসলে ইসলামী আইনের বিরুদ্ধেই কথা বলা, কারণ তালিবানেরা পাকিস্থানে কট্টর ইসলামী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মুমিন-মুসলমানদের কাছে ইসলামী আইনের শাসনের বিরোধীতা করা আর ইসলামের বিরোধীতা করা সমান “অপরাধ”। খুবই অল্প সংখ্যক মুসলমানই আছে যারা ইসলাম ধর্ম মানে, কিন্তু ইসলামী আইনের শাসন চায় না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়তো তালিবান-বান্ধব পাকিস্থানীরা মালালার আত্মজীবনীমূলক বইটিতে ইসলাম বিরোধীতা খুঁজে পায়। আমি বাংলাদেশেও অনেক মানুষকে এই একই যুক্তিতে মালালার নারী শিক্ষা, মৌলবাদ বিরোধীতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গির লেখালেখির বিরোধীতা করতে দেখেছি। 🙁
প্রথম কমেন্টে এই অসাধারণ লেখাটার জন্য ধন্যবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂
১।মালালার থেকে যোগ্য কেউ যদি পুরস্কার না পায়, তার অর্থ এই হয় না যে মালালা অযোগ্য হয়ে গেলো।
২।কই এদেশে মালালার মতো সাহসী কয়জন আছে? আমি খুব একটা উদাহরণ খুঁজে পাই না।
৩।মালালা তো একাধিকবার বলেছে,”ড্রোন হামলায় নিরপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছে। এটা জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছে। এরচেয়ে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায় শিক্ষার পেছনে অর্থব্যয় করলে।” এটাও কি আমেরিকার শিখিয়ে দেয়া?
@লাবিব ওয়াহিদ,
ধন্যবাদ আপনাকে। শেষ পয়েন্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মালালা অনেক কিছু বল্লেও সে করে নি…? গাজার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় সে জাস্টিন বিবারের সাথে স্কাইপে কথোপকথনে মেতে ছিল এবং ক্রিকেট খেলা নিয়ে বেস্ত ছিল । আর মালালা কাহিনী দৈনিক ডনেই প্রমাণ করে দিয়েছে…যাই হোক এখন বুঝলাম ও দেখালামঃ নাটক করেও নোবেল পাওয়া যায় ।
–ধন্যবাদ
@আরাফাত রহমান,
আপনিও এইরম আরেকটা নাটক করে নোবেল নিয়ে বাড়ি ফেরেন, আমরা দেখি, কেমন?
দারুণ সময়োপযোগী লেখা । আমিও প্রথমে না জেনে মালালার নোবেল প্রাপ্তিতে সন্দিহান ছিলাম । পরে যখন পড়তে শুরু করলাম এবং জানতে শুরু করলাম তখন আমার ভুল ধারণাগুলো আস্তে আস্তে পরিস্কার হতে শুরু করলো । ধন্যবাদ সময়োপযোগী লেখার জন্য আপনাকে ।
@এ. কে. এম সাঈদ,
ধন্যবাদ আপনাকে।
@অভিজিৎ, আপনাকওে ধন্যবাদ। আর খুব শীঘ্রই নতুন বই আশা করছি।
ভিষন সময়োপযোগী লেখা। এই লেখার মাধ্যমে বাঙালী চরিত্রের একটা অন্ধকার দিক উন্মোচিত হয়েছে। মুর্খতা নিয়ে গর্ব করা বাঙালী চরিত্রের পরিবর্তন সহজে হবে বলে মনে হয় না। শুধু মালালা নয়, অনেক বিশ্বজনিন বাঙালীকেও তাদের স্বজাতিরা অভিনন্দিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিশেষে লেখাটার জন্যে ধন্যবাদ।
@শাখা নির্ভানা,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পাঠ করার জন্য, এবং সময় করে মন্তব্য করার জন্য।
নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রায় সময়ই বিতর্ক বয়ে আনে। প্রাথমিক উচ্ছাস কেটে যাবার পর ইউনুসের নোবেল শান্তি প্রাপ্তি নিয়ে বাংগালীই সবচেয়ে সমালোচনামূখর হয়েছিল।
মালালা নিঃসন্দেহে গুলি খাওয়া, তাও আবার আমেরিকার শত্রু তালেবানদের হাতে গুলি খাওয়ার চাইতেও কিছু যোগ্যতা আছে। এতে বিতর্ক নাই। শিক্ষিত বাংগালী যথারীতি ক থেকে কলা বোঝার সাথে সাথে কলিকাতাও বুঝে যায়। কিছু না জেনে কেবল আন্দাজের ওপর ভর করে কি রকম অর্থহীন বিতর্ক কুতসিত ভাষায় করা যায় সেটা সকলেই জানি। তালেবান তো কোন ছার, আমাদের দেশে শফি হুজুরদের ভয়েই প্রগতিশীল সমাজের মূল অংশ রাতারাতি কিভাবে ফনা নামিয়ে গর্তে ঢুকে গেছিলেন তা আমরা এই সেদিন হেফাজতি উত্থানের সময় দেখেছি। সেখানে তালেবান শাসিত অঞ্চলে একটা পূঁচকে মেয়ের দূঃসাহসের প্রসংশার আগে আমেরিকা টান মারা কতটা সূস্থ মাথার কাজ? মৌলবাদী বা আধুনিকতার ছাপমারা মৌলবাদীদের কথা বাদ থাক, প্রগতিশীল বলে দাবীদারদেরও যদি ঘটে এটা না ঢোকে তবে কি করা যাবে? ইসলাম্ফোবিয়ার প্যারালাল আমেরিকা ফোবিয়াও নিশ্চয়ই আছে।
মালালাকে প্রমোট করার সাথে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই এর সম্পর্ক কি? মালালা কি বাংলা ব্লগের নাস্তিকদেরইসলাম বা নবী রসূল সমালোচনা করে মত লিখে বেড়ায়? তেমন কিছু চরিত্র যেমন ননী দারউইশ, আয়ান হিসরি আলী এই জাতীয় কিছু চরিত্র কেন নোবেল পায় না? আমার জানা মতে মালালা নারী শিক্ষার কথা বলে – ইসলামে পূর্ন বিশ্বাসী দাবীদার মডারেটদের মতে তো ইসলামের সাথে নারী শিক্ষার কোন বিরোধ নেই, তার মানে মালালা নিশ্চয়ই ইসলামের পক্ষেই কাজ করছে। ইসলাম বিদ্বেষী আমেরিকা তাহলে মালালাকে প্রমোট করে নোবেল পাইয়ে ইসলামের পক্ষেই কাজ করছে কেন বলা যাবে না?
কথা হল মালালার অবদান কি নোবেল পাবার যোগ্য? আমার কাছে জবাব নেই, কারন এর সুনির্দিষ্ট জবাব হতে পারে না। কেউ যদি মনে করেন যে মালালা পাবার যোগ্য ছিল না সেটা নিয়ে বিতর্কের তেমন কিছু দেখি না, তাহলে আমাকে প্রমান করতে হবে কেন অন্য আরো অনেকের চাইতে সে বেশী যোগ্য, সেটা করার ক্ষমতা আমার নেই, সম্ভবত কারোই নেই। খালি গুলি খাওয়ার কারনে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার বিশ্লেষন যারা করেন তাদের মনোচিকিতসা প্রয়োযন সেটাই বলব।
@আদিল মাহমুদ,
একমত। তবে কিছু পয়েন্টে বিতর্ক যে হতে পারে না তা নয়। উপরে গুবরে ফড়িং এর সাথে আলচনা করেছি। তবে এর কোন সঠিক উপসংহার বোধ হয় নেই।
উগ্র ধর্মীয় বা এথনিক জাতীয়তাবাদীদের কথা আলাদা, যেকোন বিচারে জাতীয়তাবাদই মুখ্য হয়ে উঠে তাদের কাছে এবং অন্য সব জাতিকে তীব্র ঘৃনা করতে শুরু করে এইসব অসুস্থ মানুষেরা।
কিন্তু এছাড়াও আর এক দল লোক যে মালালার নোবেল প্রাপ্তিতে বিরক্তি প্রকাশ করছে, তার মূলে মেয়েটির প্রতি অশ্রদ্ধা নেই কিন্তু অভিজিৎদা। মালালার অনেক সাহসী কাজ রয়েছে ঠিক, কিন্তু নোবেল বলতে আমরা এমন কিছু বুঝি থাকি, যার জন্য যুগ যুগ ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। বড় বড় নোবেল লরিয়েট তাদের যুগান্তকারী গবেষনা বা কর্মের ঠিক কত বছর পরে নোবেল পেয়েছেন?
এখনো দুনিয়ায় অসংখ্য মানুষ রয়েছেন, যারা নিরবে নিভৃতে কত অসামান্য কাজ করে যাচ্ছেন, কত বাঁধা পেরিয়ে, যুগ যুগ ধরে, কিন্তু তাদের খবর পৌঁছেছে নোবেল কমিটির নিকট? এইসব লোকদের কাজ বা সংগ্রাম বা ত্যাগ মালালার থেকেও অনেক অনেক বেশী সমাদৃত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু না আমরা তাদের জানি, না চিনি! এইসব লোকদের পাশে তো আর বিবিসি ছিল না, বা, এই লোকগুলি হয়ত পাকিস্তানের ওয়াজিরস্তানের বহুল প্রচারিত মৌলবাদি এলাকার নন, এদের দেশ পাকিস্তানও নয়, যেখান থেকে একটি মেয়ের সংগ্রাম অনেক বেশী আকুল করে তুলবে বিশ্ববিবেককে!
আচ্ছা ধরুন, কৈলাস সত্যার্থীর কথা, এই লোকটির কথা এমনকি ভারতীয়রাও জানত না, কিন্তু মালালাকে সবাই জানে, চিনে। আপনি বলছেন, মালালার গত বছরই নোবেলের দ্বারপ্রান্তে ছিল, কিন্তু কৈলাস? কৈলাস কেন গত বছরও আলোচনায় ছিল না? অথবা, কৈলাসের নোবেল প্রাপ্তিতে আপনি কি সামান্য হলেও অবাক হননি? মালালার নোবেলে যে বিশ্বমিডিয়া বা বলতে গেলে, পশ্চিমা মিডিয়ার বিশেষ ভূমিকা আছে, তা একেবারেই অস্বীকার করা সম্ভব, অভিজিৎদা? নইলে মালালার আগেও আরও কয়েক ডজন লোকের নোবেল যে পাওয়ার কথা!
এমনকি আমাদের দেশেও মালালার মত সাহসী কিশোরী আছে, তাদের কেউ বিবিসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়নি, কিন্তু তবু তারা সমাজের অচলায়তন ভাঙ্গতে লড়াই করে যাচ্ছে, মালালা গুলি খেয়ে তাও পশ্চিম অব্ধি পৌঁছতে পেরেছেন, কিন্তু আমাদের দেশের ঐ নাম না জানা মেয়েগুলি হয়ত ঢাকা অব্ধি পৌঁছুতে পারে না, তার আগেই মৃত্যু হয় তাদের, নোবেল প্রাপ্তির আগেই!
পাশে বিবিসি থাকলে সাহসী হওয়া কিছুটা সুবিধাজনক, আর একজন পাকিস্তানি সাহসি মেয়ের দিকে মিডিয়ার ঝোক যতটুকু, ঠিক ততটুকু কখনোই ঘটবে না বাংলাদেশের এমন একটি মেয়ের জন্য। এ কারনেই ইরাকের ফুটবল টিম নিয়ে স্পেশাল রিপোর্ট দেখায় বিবিসি/সিএনএন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হওয়ার সুবাদে এ কারণে কিছুটা এগিয়ে থাকেন মালালা, কিছুটা স্কোর বেশী পেয়ে যান, এমনকি যা তার কাজ দাবী করে তার চেয়েও।
মালালা তো আমাদের সবারই শ্রদ্ধেয়, শুধুমাত্র উগ্র ধর্মীয় বা এথনিক জাতীয়তাবাদী ছাড়া সবাই শ্রদ্ধা করতে বাধ্য ছোট্র এই সাহসী মেয়েটিকে। কিন্তু কথা হচ্ছে, শ্রদ্ধা এবং সহমর্মীতা এক জিনিস, আর নোবেল আর এক জিনিস। আমরা জানি, নোবেল পেতে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে হয়, থাকতে হয় ভূমিধ্বস কোন কৃতিত্ব, একজন মাদার তেরেসা, একজন নেলসন ম্যান্ডেলা, একজন মাথাই, একজন লুথার কিং ….. বলতে কি, মালালার মত কাজ আমাদের দেশের অনেক তরুন-তরুনিকেও করতে দেখেছি। এবং মালালার মত তাদেরও শ্রদ্ধা করি। এবং এও ভাবি যে, এই তরুনদের ম্যান্ডেলা বা তেরেসা হতে আরও বহু ক্রোশ পথ পাড়ি দিতে হবে।
এই বক্তৃতা মালালার একান্তই নিজস্ব? আমরা নিঃসন্দেহ?
টাইম ম্যাগাজিনের সার্টিফিকেট তাহলে নোবেলের একটি পূর্বশর্ত বা নোবেল পাওয়াকে জাস্টিফাই করে? টাইম ম্যাগাজিন বা বিবিসি বা নোবেল কমিটি সবাই কি একই ….. না?
এই কথাটি সত্যি স্পর্শ করেছে, অভিজিৎদা। এবং মালালার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ কথার পরা আর কথা চলে না, অভিজিৎদা। মুক্তিযুদ্ধ বা চেতনা নিয়ে গুতোগুতি/বাগাড়ম্বর করতে যেয়ে অনেকে মুক্তিযুদ্ধকেই খাটো করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ভুলুন্ঠিত করে।
@গুবরে ফড়িং,
বেশ যুক্তিপূর্ন কথা।
@গুবরে ফড়িং,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। বিভিন্ন মন্তব্যের ভিড়ে আপনার মন্তব্যটি ব্যতিক্রম। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আপনার কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব।
তবে সেখানে যাবার আগে একটি প্রয়োজনীয় প্রশ্ন।
মালালা সম্পর্কিত যে প্রশ্নগুলো আপনি করছেন, সেটা কি একজন বাঙালির ক্ষেত্রে হলেও করতেন, নাকি মালালা কেবল পাকিস্তানী বলে করছেন?
প্রশ্নটা করলাম এজন্য যে আমরা অনেকেই দাবী করি যে উগ্র দেশপ্রেম কিংবা স্বজাত্যবোধের ঊর্ধ্বে, কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের প্রশ্ন করা থেকেই ভেতরের অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। আজকে যদি মালালার বদলে মালালার বয়সী বাংলাদেশি একটি মেয়েকে নোবেলের জন্য মনোনীত করা হতো, আপনি কি সেই একই ‘সৎ সাহসের’ সাথে কিংবা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্নগুলো করতেন?
এবারে আসি আপনার মূল পয়েন্টগুলোতে –
অবশ্যই। কিন্তু একটি জিনিস আপনি ভুলে গেছেন, মালালা নোবেল পেয়েছেন শান্তিতে। পদার্থবিজ্ঞান কিংবা মেডিকেলে কিন্তু নোবেল পাননি, যে তাকে ‘যুগ যুগ ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে’ হবে। গুনলেও অসুবিধা ছিল না, কিন্তু এটি এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। আসলে ‘যুগান্তকারী গবেষণা বা কর্মের ঠিক কত বছর পরে নোবেল পেয়েছেন’ এই প্রশ্নটিই এখানে মিসপ্লেসড। মালালা তার এই ছোট বয়সেই এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন, এবং এটিকে যেভাবে সাহসের সাথে মোকাবেলা করেছেন যে, অনেক ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ মানুষই তা পারেননি। মালালার ক্ষেত্রে সুযোগের ব্যাপারটা আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু সুযোগ পেয়েও যে অনেকে কাজে লাগাতে পারেননা, কিছু করতে পারেননা তা তো হরহামেশাই দেখা যায়। মালালা পেরেছেন, সেটা বাস্তবতা।
এটা যে কোন জায়গায়, যেকোনো কাজের প্রেক্ষাপটেই সত্য। আপনি পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আইনস্টাইন বা হকিং এর নাম যেমন শোনেন, অন্য কোন পদার্থবিজ্ঞানীর নাম কি শোনেন? কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেননি বলেই তাদের কাজের যে মূল্য নেই তা তো নয়। বহু বিজ্ঞানী আছেন যারা নীরবে নিভৃতে কত অসামান্য কাজ করে যাচ্ছেন, কত বাঁধা পেরিয়ে, যুগ যুগ ধরে, কিন্তু আইনস্টাইন বা হকিং এর মতো পপুলার কি হয়েছেন? হননি। কিন্তু হননি বলে যে তাদের কাজের কোন মূল্য নেই তা তো নয়। কিন্তু আবার উলটোভাবে, আইনস্টাইন বা হকিং পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন বলে তাদের ঘার ধরে নামিয়ে আনতে হবে তাও কিন্তু নয়। যেহেতু অন্য অনেক ভাল ভাল বিজ্ঞানী তাদের মতো পপুলারিটির জায়গায় আসতে পারেননি, আমরা তাদের জানি, না চিনি, কিন্তু তা বলে আইনস্টাইন বা হকিং এর অবদানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ফেলতে হবে তা কিন্তু নয়।
আরেকটা উদাহরণ দেই। ব্লগিং অনেকেই করছেন, কিন্তু যে কোন কারণেই হোক বাংলাদেশের ব্লগার হিসেবে বাইরের পৃথিবীতে সবাই পরিচিত নন। আসিফ মহিউদ্দীন পরিচিত হয়েছেন – সে তার লেখালিখির জন্যই হোন, আর মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হবার কারণেই হোন। অনেকেই হয়তো বলবেন আসিফের চেয়ে অনেক ভাল ব্লগার দেশে আছেন, তার চেয়েও অনেক ভাল হয়তো অনেকে লিখতে পারেন, কিন্তু পরিচিতি এবং সাফল্য অনেক সময় কেবল ‘কতটুকু ভাল’ তা দিয়েই নির্ধারিত হয় না, অনেক সময়ই সুযোগ পাওয়া এবং প্রাপ্ত সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগানোর উপরও নির্ভর করে। আর সর্বোপরি যে আদর্শের জন্য কাজ করছেন সেই ‘প্যাশন’টা বজায় থাকাও চাই। গুলি খাবার পর মালালা তার সংগ্রাম ছেড়ে দিতে পারতেন, অনেকেই তা করেন, করবেন। বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগারদের উপর দমন নিপীড়ন শুরু হল, তখন অনেক নাস্তিক ব্লগারই লেখালিখি ছেড়ে দিয়েছেন, অনেকেই গর্তে লুকিয়েছিলেন, সেটা তো চোখের সামনেই দেখা। মালালাও সেরকম কিছু করতে পারতেন। তা হলে আর তিনি মালালা হতেন না বলাই বাহুল্য। এই ক্রেডিটটা তাকে দিতেই হবে।
আপনি কি এ ব্যাপারটাতে পুরোপুরি নিশ্চিত? সুযোগ কিন্তু অনেক ভাবেই আসে। কিশোরী বয়সেই আসতে হবে তা নয়, অন্য সময়েও। তসলিমা নাসরিনের কথাই ধরুন। তসলিমার মাথার দাম যখন হাঁকা হল, মোল্লারা যখন তার নামে রাস্তায় মিছিল করল, যখন সরকার থেকে, রাষ্ট্র থেকে নিপীড়ন নির্যাতন শুরু হয়েছিল, পশ্চিমা বিশ্ব কিন্তু তসলিমার পাশেও দাঁড়িয়েছিল। তাঁকে দেশ থেকে বের করে আনা, বাইরে থাকার ব্যবস্থা করা, এমনকি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের ব্যবস্থাও। কিন্তু সবার পক্ষে লড়াইটা নোবেল পুরস্কারের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এর কারণ বিবিধ।
এছাড়াও অনেক উদাহরণই আছে। দেশে এনজিওর কি রকমের রমরমা ব্যাবসা, আপনি জানেন। এরা এ ধরনের কেস লাইম লাইটে আনার জন্য, ফাণ্ডিং এর জন্য অনেক সময়ই মুখিয়ে থাকে। কিন্তু সবাই মালালা হয়ে উঠে না। এটাই ফ্যাক্ট।
তো? নোবেলও কেউ না কেউ পায়। পাবে। আমার আপনার সবাইকে পছন্দ হতে হবে তাও নয়।
হাঃ হাঃ …যাদের নাম করলেন, তাদের কি কালো দিক নেই? মাদার তেরেসা মাফিয়া ডন, কালোবাজারিদের কাছ থেকে নিয়মিত পয়সা নিতেন, দারিদ্রকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করতেন (The suffering of the poor is something very beautiful and the world is being very much helped by the nobility of this example of misery and suffering। “You are suffering, that means Jesus is kissing you!” এগুলো মাদার তেরেসার উক্তি), কণ্ডম ব্যবহারে বাধা দিতেন, এগুলো কি আপনি জানেন? ক্রিস্টোফার হিচেন্স একটা পুরো বই লিখেছেন ‘মিশনারি পজিশন’ বলে, পড়ে দেখতে পারেন। মার্টিন লুথার কিং এরও অনেক কালো দিক আছে , তিনি যে ‘সিরিয়াল এডালটার’ (যেমন এখানে দেখুন) ছিলেন তা কি আপনি জানতেন?
হ্যাঁ, মালালা মাদার তেরেসা কিংবা মার্টিন লুথার কিং হননি। হবার দরকারও নেই। মালালা তার নিজের মতোই কাজ করুক।
সন্দেহ যখন আপনি উত্থাপন করছেন, এর পেছনে প্রমাণ আনার দায়িত্ব আপনার। 🙂
তা হয়তো করেনা, কিন্তু ব্যাপারটাকে strengthen করে। নোবেল প্রাপ্তি বাদ দেই, মালালা ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজের জন্য নোমিনেটেড হয়েছেন, পাকিস্তানের প্রথম ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ প্রাইজ’ পেয়েছেন, শাখারভ প্রাইজ পেয়েছেন, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এম্বাসেডর অব কনসায়েন্স এওয়ার্ড পেয়েছেন। এমনকি গত বছরই তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য নমিনেশনের তালিকায় ছিলেন। এগুলো হয়তো কোনটাই তার এবারের পুরস্কারের পূর্বশর্ত নয়, কিন্তু অন্ততঃ তাকে অযোগ্য প্রতিপাদন করে না, এটা অন্ততঃ বোঝা যায়।
আমারও 🙂
ধন্যবাদ, ভাল লাগলো আলোচনা করে।
মালালা সম্বন্ধে এই সুন্দর লেখাটির জন্য লেখককে অনেক অনেক অভিনন্দন ! যে সব বাঙালিরা মালালার নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে নিন্দার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন তাদের মধ্যে বাঙালির চিরাচরিত চরিত্র – পরনিন্দা আর পরশ্রীকাতরতার বৈশিষ্ঠটাই আবার ফুটে উঠলো !
@অমল রায়,
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য।
অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ। এই লেখাটির খুব দরকার ছিল। মালালা সম্পর্কে যাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ঘোলাটে আপনার এই লেখায় তাঁদের কিছুটা হলেও বোধোদয় হবে আশা করি। অভিনন্দন মালালা। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে কৈলাস সত্যার্থী এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে তাঁর নোবেল পুরষ্কার পাবার আগপর্যন্ত আমি কিছুই জানতাম না। কৈলাস সত্যার্থীকে নিয়ে একটা লেখা কি আশা করতে পারি?
@প্রদীপ দেব,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, লেখাটি পড়ার জন্য।
মালালার নোবেল পাওয়া প্রসঙ্গে যাদের চুল্কাচ্ছে; লেখাটি মূলত তাদের জন্য।
মালালার অবদানকে অস্বীকার করে নিজেদের যে শুধু অন্ধ প্রমান করছেন তাই নয়; বরং আমার চোখে আপনার সম্মান আর আপনার বিচার বুদ্ধি জ্ঞান সম্পর্কে আমার ধারনা মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছেন।
মনে মনে যারা তালেবান সমর্থন করেন এবং তালেবান যোদ্ধা এবং তেঁতুল হুজুরের মতন মনে করেন মেয়েদের ক্লাস ৪ এর বেশী পড়ার দরকার নেই এবং “বোকা হারামের” মতন মনে করেন ইসলামে নারী শিক্ষা হারাম তাদের কাছে মালালাকে তিতা লাগাই স্বাভাবিক।
যদি না না হয় তবুও আপনি মালালাকে নিয়ে মজা করেন তার মানে আপনি মালালা সম্পর্কে কিছু জানেন ই না।
মালালাকে নিয়ে একটা লেখা লিখছিলাম; এই লেখায় সব লেখা হয়ে গিয়েছে বলে আর লিখলাম না। আগ্রহীরা মালালার ২০১৪ সালের শান্তিতে নোবেল জয় এবং তার অবদান সম্পর্কে জানতে লেখাটি পড়তে পারেন 🙂
মালালাকে নোবেল জয়ের জন্য শুভেচ্ছা।
মালালা হল গোবরে পদ্মফুল; পাকিস্থানেও যে “বুদ্ধিমান এবং সত্যিকারের মানুষ” জন্মে সেটা মালালাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
মালালার জন্য অনেক শুভ কামনা; আরও শত বছর অন্ধকারে আলোর মশাল হয়ে তুমি পথ দেখাও সেই প্রত্যাশা 🙂
লেখককে সুন্দর এই পোষ্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
খুব দরকার ছিল লেখাটির 🙂
@এম এস নিলয়,
আপনেরেও ধইন্যা! :))
:thanks: