ফারনাজ ঠিক করেন নাই। ব্যবসা করবেন ঠিক আছে, উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করা দোষের কিছু না। কিন্তু জাতীয় শোকের একটা দিনে উদ্ভট পোষাকের ফ্যাশনের সাথে ততধিক আপত্তিকর শব্দমালা নিয়ে একটা জাতীয় দৈনিকের পাতায় হাজির হওয়া গর্হিত অপরাধ সন্দেহ নাই। ফলে, প্রতিবাদ হয়েছে ফেসবুকে, প্রতিবাদ হয়েছে ব্লগে। সকলের সম্মিলিত প্রতিবাদ ফারনাজকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য করেছে দেখে আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু বিষয়টা আর ভালো লাগার পর্যায়ে থাকেনি যখন দেখি এক শ্রেণীর ব্লগার-ফেসবুকার ফানাজের পেইজে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে ভাষায় তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সেটাকে ভারবাল এবিউস ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। নারীর কোন কুকর্মের একমাত্র শাস্তি যেন তাকে ধর্ষণ করায়, তা সে শিশ্ন দ্বারাই হোক, বা হোক লেখা বা কথা দ্বারা। অবাধ্য নারীকে, শত্রু নারীকে বিছানায় নিজের নিচে এনে ফেলতে না পারলে কোথায় আর পুরুষের বীরত্ব?

আমার আরো বেশি খারাপ লাগে, আমি আরো বেশি শংকিত হয়ে উঠি তখনই, যখন দেখি এই সব ফেসবুকার-ব্লগার তরুণরা আসলে বাঁশেরকেল্লা গ্রুপের কেউ নন; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, দেশের পক্ষে, মানুষের পক্ষে এরা দিনমান লেখালেখি করে থাকেন। অথচ অদ্ভুত কথা এই যে মনের গহীন ভেতরে এরা মানুষের দলে নারীকে ঠাঁই দেয় না, এদের দেশে নারী পুরুষের বাধ্য জানোয়ার মাত্র, এদের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান কেবলমাত্র সুকোমল প্রেরণাদাত্রী হিসেবে। যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এদের নিরন্তর লেখালেখী, লেখা পড়ে মনে হয় সেই মুক্তিযুদ্ধে বিজিত পক্ষের নারীকে বিজয়ী পুরুষের অধিকার করার মধ্যেই যেন মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র গর্ব ! একদিকে বাংলাদেশ আর এক দিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা এই সব ছেলেদের কমেন্ট জীবিত কোন মুক্তিযোদ্ধা যদি দেখে থাকেন লজ্জা পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তিনিও নিশ্চিত লজ্জিত হতেন।

আরো মজার ব্যাপার হলো, এই সব তরুণরা একুশে ফেব্রুয়ারিকে অপমান করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করলেন শুধু ফারানাজকে। অথচ প্রতিবেদনটি ‘শৈলী’-তে ছেপে আরো বড় অন্যায় করেছে সমকাল। তাদের বিরুদ্ধে কিন্তু এদের উচ্চারণে কোন ক্ষোভ নেই। কেন? সমকালের সম্পাদক পুরুষ বলে ? ফারনাজের বড় অপরাধ কি তবে নারী হওয়া, দেখতে সুন্দর এবং বয়সে তরুণ হওয়া ?