নীপা ও শাহেদের বিয়ের দুই বছর কেটে গেল। কী চমৎকার যে কেটেছে দুটি বছর! মনে হয় যেন কেবল দুটি ক্ষণ। এত আনন্দ, এত হাসি, এত প্রেম, এত সুখের দুটি বছর জীবনের উপর দিয়ে যেন মুহূর্তেই ফুড়ুৎ করে উড়াল দিয়ে চলে গেল। আসলে অত্যন্ত আনন্দের সময়গুলির মনে হয় ডানা আছে। ওরা অতি দ্রুত উড়ে যায়। নীপা-শাহেদের প্রেমের বিয়ে। পাঁচ বছর গভীর প্রণয় ছিল দু’জনের মধ্যে। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে খুব ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হয় তাদের। ছোট্ট একটি ছিমছাম পরিবার তাদের। ছোটবেলায় শাহেদের বাবা মারা যান। মা আছেন। আর আছে শায়ান। শাহেদের একমাত্র ছোটভাই। অত্যন্ত আদরের ভাই তার। যখন বাবা মারা যান শাহেদ তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। আর শায়ান একেবারেই শিশু তখন। কত কষ্টে যে কেটেছে বাবা মারা যাবার পরে তাদের দিনগুলি। কত কষ্টে ছোটবেলা থেকেই সে ছাত্র পড়িয়ে নিজের ও শায়ানের পড়ার খরচ জোগাড় করেছে। না খেয়ে থেকেছে কতবেলা। অফ, সেসকল দিনের কথা মনে পড়লে তার এখনও কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।এখন তাদের চারজন সদস্যের ছোট্ট সুখের সংসার। শাহেদ একটি এনজিওতে চাকরি করে। ভালই বেতন। শায়ান বিএ ক্লাসে পড়ে। মফস্বল শহরে থাকে ওরা পৈত্রিক বাড়িতে।
কয়েকদিন ধরে নীপার কী যেন হয়েছে। সে বায়না ধরেছে শাহেদকে বিদেশে পাঠাবে আরো বেশি অর্থ উপার্জন করতে। এ বায়না শুনে শাহেদের মনে হলো, তার মাথায় যেন চাঁদ ছিঁড়ে পড়েছে। বলো কী তুমি নীপা? কোন দুঃখে আমি তোমাদের ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়ে পড়ে থাকবো? আমাদের কি খাওয়া-পরার অভাব আছে?
নীপা বলে, শুধু খাওয়া-পরাই জীবনের সবকিছু? আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ নয়। তবে মানুষে কি নিজের অবস্থা দিনদিন ভালো করবার চেষ্টা করে না?
তোমার কি মনে পড়ে না নীপা, আমাদের বিয়ের আগের সেই সকল উত্তাল দিনগুলির কথা? যখন আমাদের একদিন দেখা না হলেই আমরা দু’জনে দুদিকে অস্থির হয়ে পড়ে থাকতাম। আমাদের পৃথিবী অর্থহীন হয়ে যেত। আমাদের বিয়েতে আমাদের দুপক্ষের পরিবার রাজি হবে কিনা, আমরা পরস্পরকে পাবো কিনা এ চিন্তায় আমাদের বুক ঝড়ো হাওয়ায় বাসা থেকে পড়ে যাওয়া ভীরু পাখির বাচ্চার মতন দুরুদুরু কাঁপতো। আজ আমরা দুজন দুজনাকে পেয়েছি। আমাদের প্রেম সার্থক। আমাদের জীবন শান্তিতে ভরে রয়েছে। আর আজ তুমিই আমায় তোমার কাছ থেকে সুদূর অজানায়, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে চাইছ নিঠুরের মতো?
চোখের আড়াল হলেই কি মনের আড়াল হয়, বলো শাহেদ? বিয়ের আগে আমরা দু’জন যখন দু’বাড়িতে থাকতাম তখন কি আমাদের মনের দূরত্ব ছিল? আমাদের মন কি সে সময় একাকার হয়ে ছিল না, শারীরিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও? আমাদের শরীর সীমিত। শরীরর সাধ্য সীমিত। কিন্তু মন অসীম। মনের সাধ্যও অসীম। মন সব দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে নিমেষেই। তাছাড়া পৃথিবী ত এখন হাতের মুঠোয়। কোনো দূরত্বই এখন আর দূর নয়। আমরা ফোনে কথা বলতে পারবো যখন তখন। স্কাইপে দেখতে পারবো দুজন দুজনাকে। আর তুমি ত আসবেই কিছুদিন পর পর।
কিন্তু আমার জন্য ঘর হতে অঙিনাই যে বিদেশ নীপা। তুমি যে আমার নীপছায়া। তোমার আঁচলের সুশীতল ছায়ার তলেই আমি আজীবন থাকতে চাই। তোমার পরশ পাবো না আমি! তোমার স্নিগ্ধ নিঃশ্বাস পড়বে না আমার বুকে! তোমার চুলের, তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ পাবো না আমি! এই শিশিরভেজা চোখগুলি আমার দিকে অমন আকুল করে তাকিয়ে থাকবে না!চাইলেই আমি আলিঙ্গনে একাকার হতে পারবো না আমার প্রিয়ার সাথে! তোমার মৃদু মৃদু হৃৎ-স্পন্দন শুনতে শুনতে ঘুমবো না আমি! এই সদ্যফোটা গোলাপের পাপড়ির মতন ঠোঁটগুলি আমি চাইলেই ছুঁতে পাবো না! তাছাড়া এই গোলাপি ওষ্ঠাধারে লালনীল পদ্মই বা এঁকে দেবে কে শুনি।
সবই হবে শাহেদ। আমরা পরস্পরকে হৃদয় দিয়ে সর্বক্ষণ অনুভব করবো। আমার হৃদয়ে যে হাজার রঙের পদ্ম তুমি এঁকে দিয়েছ তোমার প্রগাঢ় ভালোবাসা দিয়ে তা কি কোনোদিন মুছে যাবার, বলো? আজকাল অনেকেই ত বিদেশে যায় উন্নত জীবন গড়তে। আমার দুলাভাই গেল। পরে আপাকেও নিয়ে গেল। আমার বান্ধবীদের অনেকের বরই ত বিদেশে থাকে। কতো ভালো আছে ওরা দেখো। একদিন আমাদের সন্তান হবে। ওরা অনেক ভালো স্কুলে পড়বে। বড় হয়ে বিদেশে পড়তে যাবে। শহরে আমাদের নিজেদের সুন্দর একটা বাড়ি হবে। এমন সুন্দর, সাজানো স্বপ্ন কে না দেখে বলো? তোমার এনজিও’র চাকরিতে আমরা খাচ্ছি পরছি। কিন্তু শুধু খেয়ে পরেই কি আমাদের সারাটি জীবন যাবে? মানুষ কি নিজের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করে না? আমাদের কি স্বপ্নও দেখতে নেই? কষ্ট তো আমারও হবে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে। তবে এই কষ্ট যে সাময়িক। একদিন হয়ত তুমি আমাকেও নিয়ে যাবে তোমার কাছে। অথবা কয়েক বছরের মধ্যে দেশে কোনো ব্যবসা শুরু করে চলে আসবে দেশে।
শেষ পর্যন্ত শাহেদকে রাজি হতেই হলো। নীপার যুক্তির কাছে শাহেদের আবেগ হার মানলো। শাহেদ মালয়েশিয়া যাবার জোগাড়-যন্ত্র করতে শুরু করলো। প্লেনের টিকেট, ভিসার মূল্য মিলিয়ে অনেক টাকার অংক। তার কিছু জমানো টাকা ছিল। বাকি টাকা জোগাড় করলো কিছু জমি বন্ধক দিয়ে। নীপা বলেছিল, আমার গয়না বেচে দাও। শাহেদ বলেছে, আমার প্রাণ থাকতে যেন আমি তোমার গয়নায় হাত না দেই। তার বিদেশে যাবার দিন হাজির হলো। সবার মন ভার, চোখ ভেজা, কণ্ঠ জড়ানো। তবুও বিদায় দিতে হয়। চলে যেতে দিতে হয়। শাহেদকে নিয়ে প্লেন উড়ে গেল পাখির মতন। আস্তে আস্তে ক্ষুদ্র হতে হতে শূন্যে মিলিয়ে গেল ছোট্ট পাখিটি। নীপা, মা, শায়ান এরা তিনজন মলিন মুখে ঘরে ফিরে এলো শাহেদকে বিদায় দিয়ে। বিদেশ বিভূঁইয়ে শাহেদের শুরু হলো এক অপরিচিত অন্য রকম জীবন। হাহাকারপূর্ণ, শূন্য, ধূধূময়, বিরহকাতর জীবন। যে কোম্পানিতে কাজ দেবার নিশ্চয়তা দিয়ে তার কাছে ভিসা বিক্রি করা হয়েছিল, সে গিয়ে দেখল সেখানে তার জন্য কোনো কাজ নেই। ছোট একটা বাসায় তাকে গাদাগাদি করে কয়েকজনের সাথে থাকতে হচ্ছে। দিনে সবাই কাজে চলে যায়। ফিরে রাতে। সে সারাদিন কয়েদীর মতন একা বাসায় পড়ে থাকে। সবাইকেই রান্না করতে হয়। শাহেদ রান্না করবে কী করে? জীবনে ত কোনোদিন রাঁধেনি সে। তবুও রাঁধতে হয়। নিজের রান্না মুখে দিয়ে তার নিজেরই চোখ মুখ বিকৃত আকার ধারণ করে। অন্যেরা খাবে কিকরে? রাস্তা চেনে না। ভাষা জানে না। কারুর সময় নেই তাকে নিয়ে বেরুবার। সবাই ব্যস্ত। সে কাজের খোঁজে বের হয়। নিরাশ হয়ে মলিন মুখে ফিরে আসে। একমাস পরে কারখানায় একটি কাজ পেলো শাহেদ। রাতের শিফটে কাজ। সন্ধ্যায় কাজে চলে যায় সে। ফেরে ভোররাতে। এসে রান্না করে খেয়ে সকালে ঘুমুতে যায়। রোবটের মত কাজ করে চলেছে শাহেদ। কাজ আর ঘুম। ঘুম আর কাজ। এইই তার জীবন। সময় পেলেই দেশে ফোন দেয় শাহেদ। সবার সাথে কথা বললে মনটা একটু শীতল হয়। প্রবাসে তার কষ্টের কথা ভুলক্রমেও সে কারুকে জানতে দেয় না। সে বলে, এখানে সে খুব ভালো আছে। বেতন পেলেই দেশে পাঠিয়ে দেয়।
ওদিকে বাড়িতে চারিদেকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা বেড়ে চলেছে। তাদের পোশাক-আশাক, চাল-চলনে আভিজাত্য বেড়েছে। নতুন আসবাব, নতুন টিভি ইত্যাদি নিত্যনতুন দ্রব্যসামগ্রীর আগমন ঘটছে। আহা পরিবারের কেউ বিদেশে থাকলে কত সুখ! নীপার মাঝে মাঝে শাহেদের জন্য মন খারাপ লাগে অবশ্য। তবে শাহেদ প্রতিদিনই একাধিকবার কল করে। বলতে গেলে মন খারাপ করার অবকাশই দেয় না সে। শায়ানের সাথেও তার এখন বেশ ভালো সময় কাটছে। শায়ান ভাবীকে সিনেমায় নিয়ে যায়। ভাবীর সাথে বসে ছক্কা ও দাবা খেলে, গল্প করে। ভাবীর মুখ গোমরা দেখলে তার ভালো লাগে না। শাহেদ মালেশিয়া যাবার ৮মাস পরে একটি সোনার গয়নার সেট কিনে পাঠিয়েছে নীপার জন্য। খুব সুন্দর দেখতে। চকচকে কাঁচা সোনা। সুন্দর ডিজাইন। এত চমক, এত আনন্দ অপেক্ষা করছিল তার জন্য! খুশিতে নীপার চোখ ছলছল করতে লাগলো। আহা, জীবন কতো সুন্দর! দেখতে দেখতে আড়াই বছর কেটে গেল। শাহেদ এখনও বাড়িতে এলো না। বাড়িতে টাকা পাঠানোর পর তার হাতে আর তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। বাড়িতে আসা বিরাট খরচান্ত ব্যাপার। সে অল্প অল্প করে টাকা জমাচ্ছে বাড়ি আসবার জন্য।
নীপা আর শায়ান দাবা খেলছে একদিন। হঠাৎ ভাবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শায়ান বলল, কী ব্যাপার রঙ্গিলা ভাবী, তোমার শরীরের ভূগোল যে বিস্তৃতি লাভ করছে দিনদিন! ইন্ডিয়া দখল করে নেবে নাকি? নীপার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কী যা-তা বলছ? সত্যিই কি তাই? নয় তো কি? কোনো খবর নেই তোমার নিজের শরীরের? নীপা অস্থির হয়ে উঠল। কেঁদে দিলো আষাঢ়ের বৃষ্টির মত ঝুম ঝুম করে। আমি ত কিছুই বুঝতে পারিনি। আমি ত কিছুই জানি না। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো আমায়। একটা ব্যবস্থা করো। ভাবীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো শায়ান। মাকে বলে গেল, ভাবীর প্রেসার বেড়ে গেছে, তাই ডাক্তার দেখানো দরকার। ডাক্তার সবকিছু পরীক্ষা করে বললেন, নীপা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শুনে নীপার মগজ ভনভন করতে লাগলো। বললো, ডাক্তার যে করেই হোক, যত টাকাই লাগুক ব্যবস্থা করুন। আমি এই বাচ্চা চাই না। ডাক্তার বললেন, বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। সন্তান জন্ম দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নীপা আগের চেয়ে একটু মুটিয়ে গেছে। সে মনে করেছিল পেটটা তাই একটু বেড়ে গেছে। ওটা চোখে পড়ার মতনও নয় অবশ্য। তাছাড়া প্রেগনেন্সির কোনো লক্ষণই খাওয়াদাওয়া বা অন্য কিছুতে আসেনি। হায় হায় কী হয়ে গেল। কী হবে এখন? সারা পথে শায়ান নীপাকে গঞ্জনা করল। বাড়িতে এসে শায়ানের দু’পা জড়িয়ে ধরে হাহাকার করে কাঁদতে লাগলো নীপা। চলো শায়ান, আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে আমাদেরকে কেউ চিনবে না। এ সন্তান আমাদের দুজনের। ওর দিকে আমরা মানুষের ঘৃণার দৃষ্টি পড়তে দেবো না। মানুষের ঘৃণার বাক্য শুনতে দেবো না আমরা ওকে। আমরা দুজনে মিলে আমাদের সন্তানকে মানুষ করবো। শায়ান লাথি মেরে নীপাকে ফেলে দিয়ে বললো, কোথায় গিয়ে অপকর্ম করে পাপের বোঝা বাঁধিয়েছিস পেটে। সেই পাপের বোঝা এখন আমার উপর চাপাতে চাইছিস মাগী? মা শুনতে পেলেন তাদের সব কথোপকথন। বুঝতে পারলেন সবকিছু। ঝাড়ু হাতে নিয়ে তেড়ে এলেন নীপার দিকে। বললেন, খবরদার মাগী। আমার নিস্পাপ ছেলেকে কলঙ্ক দিবি তো। তুই দূর হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। নইলে গলায় দড়ি দিয়ে মর। আমার বাড়ি অপবিত্র করেছিস তুই। নীপা ছিন্নলতার মতন লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। জ্ঞান হারালো। দুই ঘণ্টা পরে জ্ঞান ফিরে এলো তার। উঠে বললো, আম্মা দেখুন জ্বীনভাই আমার জন্য আপেল-কমলা নিয়ে এসেছে। আপনাদেরও দিতে বলেছে। নিজের আলমারি থেকে শাড়ি,গয়না, পারফিউম ইত্যাদি জিনিস এনে একে একে দেখিয়ে বলছে, দেখুন সে আমার জন্য কতকিছু এনেছে। শাশুড়ির চোখ তো ছানাবড়া নীপার কথা শুনে। কী যা-তা বকছিস। নষ্টামিতে ধরা পড়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি? না আম্মা, বেশ কিছুদিন যাবত জ্বীনভাইটা আমার পিছু নিয়েছে। সে আমাকে ভালোবাসে। আমাকে বিয়ে করে জ্বীনরাজ্যে নিয়ে যেতে চায়।। দেখুন না, এই যে সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখুন, আকাশ-পাতাল লম্বা সে। তার চোখ থেকে নূর বেরুচ্ছে। কেমন সুন্দর তার গায়ের গন্ধ। আমার প্রেমে সে হাবুডুবু খাচ্ছে আকাশে পাতালে। আমার পেটের সন্তান তো তারই। মা বললেন, আরে ঠিকই তো। মা এগিয়ে গিয়ে নীপাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভালো বুদ্ধিই তো বের করেছিস। নইলে এই কলঙ্ক থেকে আমার নিষ্পাপ শায়ানকে কি করে বাঁচাতাম? শাহেদকেই বা বোঝাতাম কী বলে? এবার মা দৌড়ে গিয়ে কয়েকজন প্রতিবেশিনীকে ডেকে আনলেন। দেখাতে লাগলেন জ্বীনের দেওয়া সমস্ত বিরল উপহার ও খাদ্য সামগ্রী। দেখোই না বুবু, এই রকম আপেল কি এই দুনিয়ায় পাওয়া যায়? এই রকম শাড়ি-গয়না-পারফিউম কি এই জগতে পাওয়া যায়? জ্বীনবাবাজি আমার বৌমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। বড়ই ভদ্র ঘরের সন্তান। আমাকে পায়ে ধরে সালাম করে। সবাই বললো, সত্যিই তো। এই রকম জিনিসপত্র এই দুনিয়ায় থাকতেই পারে না। তা আমরাও একটু জ্বীনবাবাকে চোখে দেখতে চাই। না না, তা হবার নয়। আমাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা দিলে তার জ্বীনত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তোমরা কিছু আপেল-কমলা নিয়ে যেতে পারো। সবাই আপেল-কমলা নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরে গেল।
শাহেদের কানে গেলো জ্বীনের গল্প। সে গল্প শুনে হাসে। ভাবে সবাই মজা করছে তার সাথে। একদিন জ্বীনের ঔরষজাত একটি শিশুপুত্র জন্ম নিলো নীপার গর্ভ থেকে। শাহেদের কাছে এই খবর গেল। তার মনে হলো তার মাথায় সূর্য ছিঁড়ে পড়েছে। সে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এদিকে মহাধুমধামে জ্বীনপুত্রের নাম রাখার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। জ্বীনবাবা তার পুত্রের জন্য জান কোরবান করতে প্রস্তুত। সবার জন্য উপহার এনে ভরিয়ে ফেলেছে সে ঘরদোর। তার পুত্রের নাম রেখেছে সে ওমর ফারুক।
জ্বলন্ত মন নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতন শাহেদ বাড়িতে ছুটে এলো। ময়লা জামা, উস্কোখুস্কো ময়লা চুলদাড়ি, ফ্যাকাশে মুখ, পাথর চোখ নিয়ে পাগলবেশে সে ঘরে ঢুকলো। তখন জ্বীনপুত্রকে নিয়ে সবাই আনন্দরত। শাহেদ বলতে লাগলো যন্ত্রের মতো, আমি রোবটের মতো খেটে টাকা পাঠাচ্ছি তোমাদের সুখের জন্য। বাবা মারা যাবার পর থেকে নিজের চিন্তা না করে মা-ভাইয়ের চিন্তা করেছি। আমি ছেঁড়া জামা পরে শায়ানকে নতুন জামা পরিয়েছি। আর তোমরা সবাই মিলে আমাকে এতবড় ধোঁকা দিতে পারলে? তারপর আবার নাটকও করছ। মা তুমিও কী করে পারলে এ নাটকে অংশ নিতে? নীপার দিকে তাকাতে বা তার সাথে কথা বলতে শাহেদের ঘেন্না হচ্ছে। সে মাকে বললো, মা ওকে বলো সব গুছিয়ে নিতে। আমি আজকের মধ্যেই তালাকের ব্যবস্থা করছি। নীপা দৌড়ে এসে বলল, দ্যাখো এই বাচ্চা জ্বীনের। আল্লাপাক সাক্ষী। আমি মিথ্যে বললে এই মুহূর্তেই আমার মাথায় সাত আসমান ভেঙে পড়বে। শাহেদ বললো, জ্বীনের সাথে শুয়ে যখন বাচ্চা পয়দা করেছ তখন জ্বীনের সাথেই সুখের সংসার পাতো গিয়ে। শাহেদের ইচ্ছে করছে জীবন্ত মাটির নিচে ঢুকে যেতে। এই লজ্জাবনত মুখ সে কি করে মানুষকে দেখাবে। দু’পক্ষের কয়েকজন লোক ডাকলো সে আজকে বিকেলে। সে আজই সব চুকিয়ে দিতে চায়। যার দেহমনে অন্য পুরুষ, তার সাথে অপ্রোয়জনীয় কাগুজে সম্পর্ক যত তাড়াতাড়ি ছিন্ন করা যায় তত তাড়াতাড়ি মুক্তি। বৈঠক বসেছে। একই নাটক চলছে এখনও। জ্বীনের দেওয়া সমস্ত উপহার এনে দেখাচ্ছে নীপা লোকজনদের। শাহেদ দেখে চিনতে পারে এসব তার পাঠানো জিনিস। সে চুপ করে থাকে। তার খুব ঘেন্না হচ্ছে এ বিষয়ে কথা বলতে। বিজ্ঞ বিচারকরা বলছেন, তুমি যখন এই নিষ্পাপ মেয়েটিকে কলঙ্ক দিলে, তাকে যখন তুমি রাখবেই না, তোমাদের বিয়ের কাবিন তো ৬ লক্ষ ১টাকা। পুরো টাকাটা এখনই গুনে নীপার হাতে দিয়ে তাকে বিদায় দাও। শাহেদ বললো, এত টাকা এখন আমার হাতে নেই। আমার কাছে ২লাখ টাকা আছে। বাকি টাকা আমি আস্তে আস্তে দিয়ে দেবো। সবাই বললো, না। এই মেয়েটিকে তোমার ঠকানো চলবে না। এটা তার পাওনা। তাকে নগদ দিয়ে দিতে হবে। আমার কাছে যে এখন ২লাখের বেশি এক টাকাও নেই। তাহলে তুমি বরং নীপার কাছে মাফ চাও। সে দয়া করে মাফ করলেই মাফ। আমাদের কিচ্ছু করার নেই। শরিয়তী ব্যাপারে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিয়ে গুনাহগার হতে পারবো না বাপু। শাহেদ বললো, মাফ চাইছি না আমি, শুধু সময় চাইছি। নীপা বললো, আমার পাওনা আমি ছাড়বো কেন? আমি তো কারুর দয়া-দাক্ষিণ্য চাইছি না। এটা আমার অধিকার। আমার পাওনা। এক পয়সাও মাফ করবো না। শাহেদ বেরিয়ে গেল টাকা জোগাড় করতে। যে করেই হোক তাকে টাকা জোগাড় করতেই হবে আজ রাতের মধ্যে। বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করলো সে। বাকি টাকা জোগাড় করল রাতারাতি কম দামে পৈত্রিক জমি বিক্রির বায়না করে। সে গুনে গুনে ৬লাখ ১টাকা বিচারকমণ্ডলীর হাতে তুলে দিলো। বিচারকরা তুলে দিলেন নীপার হাতে। বললেন, গুনে নাও। নীপা টাকা গুনতে গুনতে উদ্ধতকণ্ঠে বলতে লাগলো, এ আমার দেনমোহরের টাকা, এ আমার নারীত্বের সম্মান, আমার সম্মানিত অধিকার, আমার পাওনা। কেন ছাড়বো আমি? এক পয়সাও ছাড়বো না।
প্রথমত, লেখিকাকে ধন্যবাদ কারন লেখাটা পড়ে পাঠক হিসেবে আমার ভাল লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় তার নিপুণ হাতের ছোঁয়া পেয়েছি আমি…যদিও কিছু জায়গায় মনে হয়েছে, বড্ড তাড়াতাড়ি হল, আর একটু বিশদ হলে ভাল হত ( যেমন, দেবর ভাবির সম্পর্কের অংশটা) কিন্তু সর্বোপরি আমার কাছে ভাল লেগেছে। সবার কাছেই একই প্রশ্ন দেখলাম, যে মেয়েটা তো কোন শাস্তি পেল না? অবশই আমার এ উত্তর তার পক্ষে নয়… কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, সরাসরি শাহেদ হয়ত তাকে শাস্তি দিতে পারেনি…কারন তালাক তার জন্য প্রাপ্ত শাস্তি নয়, তবে শাস্তি সে পেয়েছে…সে তার জীবনে ভরসা করার মত মানুষ হারিয়েছে, হারিয়েছে সত্যি ভালবাসা, মায়ার বন্ধন যা দিয়ে তাকে জড়িয়ে রেখেছিল শাহেদ। যদি বিশ্বাস করে ধরার মত হাত না থাকে পাশে, তাহলে সে জীবন এমনিতেই বৃথা… আর এ হাতটি বাবা, মা, ভাই, বোন কিংবা কোন বন্ধুর নয় শুধুমাত্র জীবন সঙ্গীর ই হতে হয়। আর সে হাত টি সে হারিয়েছে। হয়ত আমরা মানুষেরা এসব মানুষকে শাস্তি দেই না বা দিতে পারি না কিন্তু উপরে একজন আছেন, যিনি মানুষের কর্মগুনের ফলাফল যথাযথ ভাবে দিয়ে থাকেন। বাস্তব শাহেদ এর জন্য অনেক কষ্ট জমা রইল বুকে, আর চোখে রইল তার জন্য অনেক সম্মান। লেখিকাকে আবার ও ধন্যবাদ অল্প কথায় সুন্দর করে বলার জন্য।
এটি একটি গল্প। গল্পের ঘটনার চেয়ে চরিত্রের মানসিক দন্ধ প্রকাশ করাই লেখকের উদ্দেশ্য থাকে। গল্পে লেখক কোন চরিত্রের পক্ষ নেন নাই। কোন চরিত্রের দায় লেখকের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক না। একটি সত্য ঘটনা নিয়ে গল্পটি লিখেছেন লেখক যা তিনি শুরুতে বলে দিয়েছেন। কোন চরিত্র নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চাইলে করতেই পারেন কিন্তু চরিত্রের দায় লেখকের ওপর চাপানো ঠিক না বরং এমন কেন হয় তা আমরা আলোচনা করতে পারি, আমাদের চারিপাশে এমনটা কেন ঘটছে তা আলোচনায় আস্তে পারে। সামাজিক,অরথনইতিক এবং মনবইজ্ঞানিক দৃষ্টি কোন থেকে।
লেখিকার কাছে আমার ২ টা প্রশ্ন ছিল ” ১ শাহেদকে দেশের বাইরে পাঠানো টা কি নিপার প্লান ছিল যাতে করে সে তার দেবরের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে পারে? ২ নিপার গর্ভে সন্তান আসলো । সে এতটাই অসাবধান ছিল! গল্পে আপনি তাকে অনেক বুদ্ধিমতি , যুক্তিবাদী শিক্ষিত মেয়ে হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার উপর সে একজন বিবাহিত মেয়ে যার ৫ বৎসরের প্রেম এবং ২ বৎসরের বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা। এমন কি তার দেবরও বি এ পড়ুয়া। এত বড় একটা ভুল কিভাবে করতে পারল ?
@Shoaib Mahmud, প্রেমের মত প্রাথমিক রিপু (basic instinct) এ কি যুক্তিচিন্তা কাজ করে নাকি?
গল্পটা ভাল লেগেছে। কিন্তু মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খটকা লেগে আছে জীনের কোথাগুলোর জন্য, জীনকে নিয়ে সবাই নাটক করল ! মেয়েটা কি সুন্দর পার পেয়ে গেল! শুধু কষ্ট পেল বেচারা শাহেদ ? গল্পের শেষে মেয়ের জন্য একটা শাস্তির বেবস্থা রাখলে ভাল হত । Happy Ending হতো । মেয়েটার প্রতি প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
@Shoaib Mahmud,
শায়ানের জন্যে শাস্তি কেন নয়? অথবা শাহেদ- শায়ানের মার জন্য?
আর ভাইটার প্রতি? মায়ের প্রতি?
@অর্ফিউস, মেয়েটার প্রতি রাগের কারন সে ভুল করেছে , তার উপর ভিত্তি করে নাটক সাজিয়েছে , আবার টাকার জন্য এমন আশ্চর্য ধরনের খারাপ ব্যাবহার ।এই গল্পের মুল চরিত্র নিপা নামের বিবাহিতা মেয়ে। তার মা বা ভাইকে লেখিকা অতটা প্রাধান্য দিয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়নি। যদি তাই হতো তাহলে দেবর-ভাবির সম্পরকের বিবরণটা আরেকটু বিশদ হতো। শাস্তি সবারই পাওয়া উচিৎ শাহেদ বেচারা বাদে।
@Shoaib Mahmud,
ভুল করেছে? আমি তো বলব যে সে ক্ষমাহীন পাপ করেছে। না পাপের ধর্মীয় সংজ্ঞা দিচ্ছি না।পশ্চিমা দেশে যারা ধর্মহীন তারাও ( সিংহ ভাগ ) চিটিং কে ক্ষমা করে না।
ঠিক বলেছেন। অথচ দেখেন ট্র্যাজেডি টা। দোষী সবাই পার পেয়ে গেল। বিবাহিত নিপা পার তো পেলই সাথে পেল দেন মোহরের পুরা ৬ লাখ টাকা! আর শাস্তি পেল বেচারা শাহেদ, যে কিনা নিরাপরাধ আর ভাল মানুষ। কিন্তু এইটাই যেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোষী ব্যক্তি খালাপ পাবে বেকসুর। আর শাস্তি, গঞ্জনা সব জুটবে নির্দোষের ভাগ্যে।
যেমন রেপ ভিক্টিমদের ভিতর যারা আত্ম হত্যা করছে তারা কিন্তু কেউই দোষী না। অথচ ধর্ষক বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় আর আমাদের সমাজ থুতু দেয় রেপ ভিক্টিম কে। তার জীবন অতিষ্ট করে দেয়, এমনকি প্রিয় (!) বাবা মায়ের কাছেও সে হয়ে পড়ে ঘৃণার পাত্রী।অনেক বাবা মাই চায় যে মেয়েটি তাদের মুক্তি দিক। বেচারা মেয়েটাও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় পতিতা অপবাদ মাথায় নিয়ে!! হায়রে সভ্যতা!! 🙁
অফ টপিক ঃ বাংলাদেশে আমি ধর্ষনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত বলে মনে করি।
@অর্ফিউস,
এর প্রয়োজন নেই কারণ এর চেয়েও ভালো ব্যবস্থা বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০০ ধারায় রাখা হয়েছে। ১০০ ধারা আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আক্রমণকারীকে হত্যার অনুমতি দিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে , ধর্ষণকারী বা ধর্ষণে উদ্যত ব্যক্তি উভয়ই এই ধারার আওতায় আছে এবং এদেরকে হত্যা করলে তা আত্মরক্ষা বলে পরিগণিত হবে। বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় জেতার হার খুবই কম বিধায় এই ১০০ ধারার সূযোগ নেয়াই শ্রেয়তর বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের মত ব্যক্তির আত্মরক্ষার অধিকার খুব কম পশ্চিমা দেশেই দেখা যায় যদিও এর সূযোগ নেয়া বা না নেয়াটা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
THE PENAL CODE, 1860
100. The right of private defence of the body extends, under the restrictions mentioned in the last preceding section, to the voluntary causing of death or of any other harm to the assailant, if the offence which occasions the exercise of the right be of any of the descriptions hereinafter enumerated, namely:-
Firstly.-Such an assault as may reasonably cause the apprehension that death will otherwise be the consequence of such assault;
Secondly.-Such an assault as may reasonably cause the apprehension that grievous hurt will otherwise be the consequence of such assault;
Thirdly.-An assault with the intention of committing rape;
Fourthly.-An assault with the intention of gratifying unnatural lust;
Fifthly.-An assault with the intention of kidnapping or abducting;
Sixthly.-An assault with the intention of wrongfully confining a person, under circumstances which may reasonably cause him to apprehend that he will be unable to have recourse to the public authorities for his release.
@সংশপ্তক ভাই,
ধন্যবাদ আপনার তথ্যের জন্য। কিন্তু এখানে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। যেমন ধরেন যে যে বা যারা ধর্ষন করতে আসবে, তাদের সাথে সেই মেয়েটির মারামারি করে জেতার সম্ভাবনা কতটুকু? খালি হাতে তো এমনকি একজন ধর্ষক পুরুষের সাথেই মেয়েটার পারার কথা না গায়ের জোরে। সেক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র কাজে দেবে অনেক ভাল। আর আগ্নেয়াস্ত্রের তো বিকল্প দেখি না।কারন যদি মেয়েটির হাতে চাকু টাইপ কিছু থাকে তবু মনে হয় না কয়েকজন কে একবারে সামাল দিতে পারবে!!
কিন্তু কথা হল, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা কি সহজ বিষয়? আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স কি সহজে দেয়া হয়? আর দিলেও বা কয়জন কে দেয়া হবে? সেক্ষেত্রে কি সব মানুষের হাতে আত্মরক্ষার জন্য আগেয়াস্ত্র তুলে দেবে সরকার?
আর যদি তুলে দেয় সেক্ষেত্রে যে বাংলাদেশের মানুষ যদি নিজের কোন হিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে সেই অস্ত্রের অপব্যবহার করে আর তারপর অজুহাত দেয় আত্ম রক্ষার, তাহলে? সেটা কি খুব সহজে সামাল দেয়া যাবে??
@অর্ফিউস,
আত্মরক্ষা করে সামাল দেবেন। এর উত্তর তো আগেই ১০০ ধারায় দিয়েছি (Firstly.-Such an assault as may reasonably cause the apprehension that death will otherwise be the consequence of such assault;)। নিজেকে নিজে বাঁচাতে না পারলে কেউ আপনাকে বাঁচাতে পারবে পারবে না , এমন কি পুলিশও না। পুলিশ আসবে শুধু সুরুতহাল প্রতিবেদন করার জন্য , এর পর ময়না তদন্ত। পুলিশের দশ দিন আর আততায়ীর মাত্র একদিন।
এটা কোন কথা হল নাকি , মশায় ? যাহোক, আইনের সব কালা ভেল্কি বাজী এখানে তুলে দিতে চাই না। মনে রাখবেন , আইনের পাতায় যাই লেখা থাকুক না কেন , আঁধার আকাশে যত তারা , আইনেরও ঠিক ততগুলো ধারা । (@)
@সংশপ্তক ভাই,
কেন ভাই, কি বললাম!! আত্মরক্ষা করতেতো অস্ত্র লাগবেই নাকি? না হলে একটা মেয়ে কিভাবে শুধু হাত দিয়ে আত্ম রক্ষা করতে পারবে কয়েকজন পুরুষের বিরুদ্ধে, যারা কিনা রেপের উদ্যেশ্য নিয়ে আসে?? অবশ্য জুডো কারাত শেখা যেতে পারে, তবে সে মেলা ঝক্কির ব্যাপার!!
হুম!! :))
গল্পের কিছু ই বুঝলাম না। স্বামীকে ধোঁকা দিলাম, দেবরের সাথে মজা করলাম আবার দেন মোহরে
র সন টাকা পেলাম ।
এখানে শায়ান আর নীপা দুজনেই অপরাধ করেছে।দুজনেই প্রতারক। একজন ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরেকজন জীবন সঙ্গীর বিরুদ্ধে। কোনটা বেশি অপরাধ? যেটাই বেশি অপরাধ হোক সেটা হয়ত বিচার্য বিষয় এখন আর নয় কারন সাজা পেয়েছে মাত্র একজন। আর তারচেয়েও বড় সাজা পেয়েছে বেচারা শাহেদ। করুনাই হচ্ছে আমার তার জন্য।
ভালবেসে বউ আর নিজের ভাইয়ের কাছে কি পেল সে? এ জন্যেই sacrificial lamb প্রজাতিকে আমি করুনা করি। আবার মাঝে মাঝে মায়াও হয়। শাহেদ তো গিয়েছিল বউয়ের আবদারেই সংসারে সমৃদ্ধি আনতে। এজন্যেই মনে হয় সব আবদারে কান দেয়া উচিত নয়। আর কান দেয়া বা না দেয়াও হয়ত কথা নয়, যেখানে বিশ্বাস ঘাতকতা আছে, সেখানে আর যাই হোক মঙ্গলময় কিছুই থাকতে পারে না।
আচ্ছা একটা কথা, শায়ানের মা কি বুঝতে পেরেছিল যে শায়ান দোষী?নাকি সত্যিই জীনের কেচ্ছায় বিশ্বাস করেছিল?যদি মা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে থাকে তবে সে নিজেই শাহেদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছে। সেক্ষেত্রে এমন মায়ের পেটে জন্ম নেয়ার চেয়ে কিছু সন্তান হয়ত সাপের সাথেই প্রেম করে পরিনতিতে ছোবল খেয়ে মারা যেতে চাইবে; আমি হলেও সেটাই চাইতাম।
@অর্ফিউস, ওহ তামান্না ঝুমু, শায়ানের ব্যাপারে বলব যে সে তার প্রতিপালক বড় ভাইয়ের সাথে বেইমানী করেছে। কাজেই এই জানোয়ারটাকে আসলে কি যে করা উচিত ছিল বুঝতে পারছি না।
@অর্ফিউস,
এই ধরনের কর্ম জানোয়ারেরা করে না। মানুষেরাই করে থাকে। দুটি মানুষের মধ্যে যখন মন বা দেহ বা দেহমন উভয় প্রকারের সম্পর্ক গড়ে উঠে তখন কার সাথে কার কি সম্পর্ক, এ সম্পর্ক সমাজের চোখে মন্দ কিনা বা অন্য কারুর প্রতি এ সম্পর্ক দ্বারা অন্যায় করা হচ্ছে কিনা এ সব ব্যাপারে বিচার বিবেচনা করার যুক্তি কাজে আসে না। দেবর-ভাবীর সম্পর্ক আমাদের সমাজ সংস্কৃতিতে বিরল ব্যাপার নয়। অনেক বিশাল ব্যক্তিদের জীবনেও ঘটেছে এমন ঘটনা।এটা নৈতিকতার বিচারে অবশ্যই অন্যায়। এবং শায়ান অন্যায় করেছে তার ভাই ও ভাবী দুজনের সাথেই। ভাবীর সাথে অন্যায় হয়েছে এ জন্যই যে, সে যখন তার সাথে দূরে পালিয়ে যেতে চেয়েছে শায়ান তাতে রাজি ত হয়নিই বরং তাদের পরস্পরের সম্পর্ক পর্যন্ত অস্বীকার করেছে।
@তামান্না ঝুমু,
দেখেন, অভিজিৎ দার লেখা একটা সিরিজ পড়েছিলাম মেলা আগে। “সখী ভালবাসা কারে কয়” এই নামে ।আমিও এখানে বলতে চাই যে সখী ভালবাসা কারে কয়, অথবা সম্পর্ক কারে কয়? স্পমাজের চোখে ভাল কি মন্দ সেটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না। আমি বলছি বিশ্বাস ঘাতকতার কথা। যদি দেবর ভাবী এতই দিওয়ানা হবে তবে যা প্রকাশ্যে কাজ টা কর।
পুর্বের সঙ্গীর সাথে সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে দেবর ভাবী ফুর্তি কর, তাতে কি মাথা ব্যথা থাকতে পারে মুক্ত মনের মানুষদের? কথা এক্টাই আর তা হল যে এইটা প্রকাশ্যে করার সাহস হল না?
শাহেদের ঠোঁটে চুম্বন দিয়ে, বিশ্বস্ত থাকার অভিনয় করে কেন দেবরের সাথে গোপনে লটর পটর করতে হবে? নিজেকে সবার সামানে সতি প্রমানের জন্য?আবার ভাবির সাথে যদি ফস্টি নস্টি করবিই তবে ভাইকে এত সমীহ করা কেন মুখে মুখে?এর নামই মনে হয় তলে গাছ কাটা আর উপরে পানি ঢালা!
আসেন দেখি প্রকাশ্যে কাজ করলে কি হত। যেহেতু সবাই শাহেদের পোষ্য, কাজেই পেটে লাথি পড়ার ভয়েই কাজ টা প্রকাশ করা হল না ( বিশ্বাস করেন, দেহপসারিনিদের আমি এইসব প্রতারকের থেকে অনেক ভাল মনে করি, এরা নিজের গতর বেচে খায়,অন্য কারো অন্ন ধ্বংস করে, সেই অন্নদাতার সাথে বেইমানী করে না।এখানে পরের অন্ন ধংসকারী দেবর ভাবী দুজনেই । যদিও সমাজ দেহ পসারিণীদের মারাত্বক ঘৃণার চোখে দেখে আর সমাজের মাথারাই পতিতালয় যায় রাতের আধারে!) ।
এখানে আমার মুল বক্তব্য হল প্রতারনা করা। পরকিয়া কেউ করলে সেক্ষেত্রে সোজা ছাড়াছাড়ি, এর থেকে বেশি কোন কিছু মানে শারীরিক নির্যাতনের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু প্রতারনা করাটা কি কোনদিন ভাল কাজ হতে পারে? যদি সেটা ভাল কাজ হয় তবে ঘুষ খাওয়া কেন মন্দ কাজ বলতে পারেন? কেন ক্রিকেটারদের ঘুশ কেলেংকারীতে আজিবন নিষিদ্ধ হতে হয়? দেশের সাথে বেইমানী করেছে তাই? সেক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী বা অন্নদাতা এবং জীবন দাতা ভাইয়ের সাথে এবং নিজ সন্তানের সাথে বেইমানীর কেন কোন সাজা থাকবে না? কেন এটিকে স্বাভাবিক ভাবতে হবে? পরকিয়া হয়ত স্বাভাবিক। কে করবে আর কে করবে না সেটা নিজেদের চয়েস। কিন্তু প্রতারনা করা কি কোন চয়েস হতে পারে? সেক্ষেত্রে ঘুষ খাওয়াটা আরো বেটার চয়েস হতে পারে। আর যাই হোক সব ক্ষেত্রেই তো ঘুষ অন্য কারো ক্ষতি খুব বেশি করছে না। একজন খেলোয়াড় ঘুষ খেয়েছে এতে তো আর দেশপ্রেম নামের আজব জিনিসটি ছাড়া কিছুই আহত হয়নি!!
আমার আপত্তি আর ঘৃণাটা এখানে এদের পরকিয়া নয় এই প্রতারনাটাই।
চিটিং স্পাউসের থেকে আমি বরং সুইঙ্গার স্পাউসদের কেই বাহবা দেই। এখানে অন্তত প্রতারণার স্থান নেই। কেন প্রতারনা কে আমি এত ঘৃণা করি জানেন? কারন প্রকাশ্য শত্রু থেকে বন্ধু বেশী শত্রু অনেক বেশি ভয়াবহ, ঠিক যেমন নেকড়ে থেকে ভেড়ার ছদ্দবেশে নেকড়ে তথা রুপকথার মায়া নেকড়ে অনেক ভেশি ভয়ঙ্কর।
@অর্ফিউস,
সেক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী, বা অন্নদাতা এবং জীবন দাতা ভাইয়ের সাথে এবং নিজ সন্তানের সাথে বেইমানীর কেন কোন সাজা থাকবে না?
সংশোধনঃ জীবন সঙ্গীর পরে একটি কমা “,” হবে।
@অর্ফিউস,
একই সাথে দুটি সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া আমি অবশ্যই অনৈতিক মনে করি। একজনের সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় যদি অন্য কারুর সাথে সম্পর্ক হয়ে যায় তবে আগের সম্পর্কটি চুকিয়ে ফেলা দরকার বলে আমার মনে হয়। তবুও অনেককিছু থেকে যায়। সমাজ, সংসার, পরিবার, সন্তান আরো অনেককিছু। হুমায়ূন আহমেদ দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন প্রথম স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু কিছুদিন তো তাদের সম্পর্কের কথা গোপন ছিল। একজনকে ছেড়ে তিনি আরেকজনকে গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম জনের সাথে লুকোচুরির খেলা না খেললেও তার নিজের সন্তানদের সাথে কি তিনি অন্যায় করেন নি? অনেকে সন্তানের কথা ভেবেই লুকোচুরির আশ্রয় নেয় হয়ত। অন্যায় তো মানুষেই করে। সাধারণ মানুষে তো করেই, অসাধারণ ব্যক্তিরাও করেন কখনো কখনো। বিল ক্লিন্টনের কথা বলা যায় এক্ষত্রে, কবি নজরুলও তার বিয়ের পরেও একাধিক নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথকে তাঁর যেই দাদা সবচেয়ে বেশি স্নেহ করতেন সেই জ্যোতিরীন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরি দেবী ও রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কথা কে না জানে? কোন একটা বিষয়ে আমরা সবাই হয়ত জানি যে, এই কাজটি অন্যায় কাজ। তবুও আমরা মানুষেরা অন্যায় করি। কারণ মানুষ অন্যায় করে। তাই বলে সবাই করে না কিন্তু।
@তামান্না ঝুমু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিল ক্লিনটন কেউ অসাধারণ মানুষ না। এই অসাধারন শব্দটাতেই আমার আছে ঘোরতর আপত্তি। এইসব থেকেই পুজা অর্চনা এবং ধর্মীয় অনাচারের জন্ম হয়। মানবতা হয়ে পড়ে গৌণ। তাদের কির্তী অসাধারন।শচীন টেন্ডুলকারের কির্তীও ক্রিকেট জগতে সম্ভবত অনন্তকাল বেঁচে থাকবে, কিন্তু মোটের উপর সে বা তারা আমার আপনার মতই সাধারন মানুষ। যাই হোক আলোচনার বিষয় এটি নয়।
ঠিক সন্তানদের সাথেও এখানে অনাচার করা হয়েছে। এই প্রতারণাটা শুধু হুমায়ুন আহমেদ তার স্ত্রীর সাথেই না, সন্তানদের সাথেও করেছেন; সন্তান্দের মায়ের সাথে প্রতারনার পর । শুনেছি যে শাওনের সাথে পরকিয়ার জের ধরেই প্রথম স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় তার।
কাজেই পরকিয়া শব্দটাই আমার কাছে ঘৃণ্য। যেহেতু আমাদের সমাজে ওপেন রিলেশনশিপ সম্ভব না, কাজেই পরকিয়া করা, বা একজনের সাথে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আরেকজনের প্রেমে পড়ে যাবার সস্তা মানসিকতাকেই চীটিং বলা হয়; আর আমার ভাষায় চীটের কোন ক্ষমা নেই। তার সাথে আর সম্পর্ক চলতে পারে না, কারন চিট আর সেই সম্পর্কের যোগ্যতা রাখে না।চিটিংএর শিকার ব্যক্তিটি ( লিংগ নির্বিশেষে) আরো অনেক ভাল কিছু পাবার যোগ্য।
যাহোক যদি সংসারে বা সম্পর্কে বনিবনা না হয় তবে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করার পরেই কেবল আরেকজন কে নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে।তার আগে ভেবে সেই সম্পর্ক ছেদ করলে সেটাও চিটিং।আর এটা ক্ষমার অযোগ্য। আমার মতে চিট ২য় সুযোগের যোগ্যতা রাখে না। একবারের চীট হল সারাজীবনের জন্য চিট। তবে কেউ যদি চিটিং পার্টনার কে ক্ষমা করে তবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে এমন ব্যক্তিকে আমি মেরুদন্ডহীনই বলব;অনেকেই সেটাই বলবে।
তাতো অবশ্যই।সবাই অপরাধ করে এমনটা তো বলিনি!
@তামান্না ঝুমু,
তারিক ও পলাশের মন্তব্যের উত্তর দিলে আমার মনের ভেতরে উঁকি দেয়া না বলা প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যেতাম। কিছুদূর অগ্রসর হয়েই ভেবেছিলাম ‘ঘরে বাইরে’ এর সন্দীপ বাবুর মক্ষীরাণী বিমলাকে না পাই, এখানে ‘নষ্টনীড়’ এর জীবন্ত সশরীরে উপস্থিত চারুলতাকে পেয়ে যাব। নাহ, নীপা বিমলাও হলোনা চারুও হতে পারলোনা। আহা! চারু। চোখের চাহনীতে ছিল আগ্নেয়গিরির বিষ্ফোরণ, বুকে ছিল গভীর সমুদ্রতলের সুনামীর ঢেউ। অতীতে রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’ অনেকবার পড়েছি আজ আবার পুরোটাই পড়লাম। শুধু তাই নয়, পুরাতন ভিডিও খুঁজে বের করে চারুলতা আবার দেখলাম। কবি গুরুর মত করে পৃথিবীর আর কে কবে গল্প লিখতে পেরেছে, কল্পনায় দর্শন করতে পেরেছে মানুষের অন্তরের গভীরের ভালবাসা, অভিমান, সুখ, বেদনা, প্রেমানুভুতি আমি জানিনা।
কিছু কথা বলি, ভবিষ্যতে কোন লেখায় কাজে লাগতে পারে।
প্রথমেই শিরোনাম- ‘ভালোবাসার প্রতিদান ও সম্মানের অধিকার’
কার ভালবাসা, কে কাকে কী প্রতিদান দিলো? ‘সম্মানের অধিকার’ বলতে কী বুঝাতে চেয়েছেন?
আমি ডাক্তার নই নারীও নই তাই জানিনা ছয় মাস পরে নীপা কীভাবে আশচর্যান্বিত হয় তার দেওরের কথায় নিজের পেটের দিকে চেয়ে? বুড়ি শাশুড়িই বা কিছু টের পায়না কী ভাবে?
জ্বীনের সন্তান সকলেই বিশ্বাস করে নিল এই যুগেও?
সমালোচনার উদ্দেশ্যে নয়, কথাগুলো বললাম সহকর্মী বা শুভানুধ্যায়ী হিসেবে। গল্পের ভীত বাস্তব সন্দেহ নেই, সেই বাস্তবতাকে গল্পে ফুটিয়ে তুলতে, পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কল্পনার মাধুরী দিয়ে কিছু ফুল না হউক মঞ্জুরী মুকুল তার শাখা-প্রশাখায় জুড়িয়ে দিতে হয়। এটা বোধ হয় সকল গল্প লেখকেরাই করেন।
@আকাশ মালিক,
‘ভালোবাসার প্রতিদান ও সম্মানের অধিকার’
ভালোবাসার প্রতিদান বলতে এখানে নীপার প্রতি শাহেদের অগাধ ভালোবাসা ও শাহেদের অনুপস্থিতিতে নীপা শাহেদের সাথে উপর দিয়ে ভালবাসার সম্পর্ক রেখেও ভেতরে ভেতরে অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা, প্রতারণা যা-ই বলা হোক করেছে তাকেই শাহেদের প্রতি নীপার প্রতিদান বলে বোঝাতে চেয়েছি।
অনেক মেয়েরই পিরিয়ড অনিয়মিত থাকে। যাদের শরীর একটু মোটা ধরনের ও প্রেগনেন্সিতেও যাদের খাওয়াদাওয়ার সমস্যা বা অন্য কোনো প্রকারের লক্ষণ দেয়া যায় না তাদের প্রেগনেন্সি বুঝতে না পারারই কথা। আমার এক বান্ধবীর ননদের তিন বাচ্চা। প্রতি প্রেগনেন্সিতেই তার ৫-৬ মাস পেরিয়ে গেলে ডাক্তারের কাছে রিগুলার চেক-আপ করাতে গেলেই সে জানতে পারে যে সে অন্তঃসত্ত্বা। আরেক পরিচিত মেয়ের কথা বলছি, সে একটু মোটা ধরনের। তার হাই ব্লাড প্রেসার। প্রেসার খুব বেড়ে যাওয়ায় একদিন ডাক্তারের কাছে গেল সে। ডাক্তার সবকিছু চেক করে বলল, সে সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং সে দিনই সিজারিয়ান করে তার বাচ্চাটি বের করে নেয়া হয়। কারণ তার প্রেসার এতই বেশি ছিল যে, তা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। প্রিম্যাচিউর বাচ্চাটিকে আরো দু’মাস হাসপাতালের কেয়ারে রাখা হয়েছিল।
নীপার গর্ভধারণের কথা তার শাশুড়ি আরো আগে বুঝতে পেরেছিল কিনা আমি আসলে জানি না। তবে সে তার ছোটছেলেকে নির্দোষ প্রমাণ করবার জন্য জ্বীনের কাহিনী নিজের উদ্যোগে ছড়িয়েছিল, এবং নীপার স্বামী বিদেশ থেকে এসে নীপাকে তালাক দিয়েছিল দেনমোহরের সমস্ত টাকা দিয়ে, এটা জানি।
এ যুগেও অসংখ্য মানুষে বিশ্বাস করে যিশু কুমারী মেরি ও ঈশ্বরের পুত্র। আরো অসংখ্য মানুষে বিশ্বাস করে ঈশ্বরের হুকুমেই যিশুর জন্ম কুমারী মরিয়মের গর্ভে। এবং এই দুই ধরনের বিশ্বাসীরা সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী।
@তামান্না ঝুমু,
অথচ দেখেন, শাহেদ তার আরেক ছেলে! এক ছেলের বজ্জাতি ঢাকতে গিয়ে আরেক ছেলের সাথে নিজের মাই বেইমানী করল? এই গল্পে এই মা টাই কি সবচেয়ে বড় ভিলেইন নয়?
@আকাশ মালিক,
সম্মানের অধিকারের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। শাহেদের কাছে সেই মুহূর্তে দেনমোহরের পুরো টাকাটা ছিল না। সে কিছুটা সময় চেয়েছিল টাকা যোগার করতে। বিচারকরা বলেছিলেন, না, নগদ এই মুহূর্তেই দিয়ে দিতে হবে সব টাকা। নীপা বলেছিল, সে একটাকাও মাফ করবে না। কারণ এটা তার নারীত্বের সম্মান, তার অধিকার।
আমার পরিচিত অনেক উচ্চশিক্ষিত মহিলারাও দেনমোহরকে তাদের নারী জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান ও সর্বোচ্চ মর্যাদা মনে করে।
@তামান্না ঝুমু,
অথচ তবু তার মা চুপ করে ছিল!!! শাহেদ দেনমোহরের টাকা জোগাড় সেই মুহুর্তে না করতে পারলে কি বিচারকরা শাহেদ কে বাধ্য করত ওই বিশ্বাস ঘাতিনী স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতে? তবু কেন তার মা চুপ করে ছিল? এ কেমন মা যে কিনা নিজের ছেলের সাথেই বেইমানী করতে পারে? থুতু দেই আমি এমন মা কে।
অবশ্য দিনকাল বদলে গেছে। আজকাল কিছু মা যেখানে পরকিয়া করতে যেয়ে নিজের শিশু সন্তানকেও হত্যা করতে ছাড়ে না, সেখানে আর কি বলার থাকতে পারে???? কিছুই না। সব মাই তার সন্তান কে ভালবাসে, এর নেতিবাচক বাক্যটা ইংরেজিতে যেন কি করা হয়? নিশ্চয়ই জানেন!! যদি এখন বদলে না ফেলা হয় তবে মনে হয় বদলে ফেলার সময় এসেছে।
নেতিবাচক বাক্য হওয়া দরকার কিছু মা সন্তান কে হত্যা করে।
কাল সাপের চুম্বনও এর চেয়ে মধুর।
@তামান্না ঝুমু, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
ধরুন আমার কাছে একজন লোক মোটা অংকের টাকা গচ্ছিত রাখল, প্রমান ছাড়া শুধুমাত্র আমাকে বিশ্বাস করে। আমি তার টাকাটা মেরে দিলাম।কেস হল আমার নামে। আমি আদালতে ঝানু উকিল ধরে বেকসুর খালাস পেয়ে গেলাম এবং নির্দোষ প্রমানিত হলাম আর সমাজ প্রকৃত নির্দোষ মানুষ টিকে ( পাওনাদার) দোষী সাবস্ত্য করল এবং তাকে প্রতারক অপবাদ দিল আমার মত নিষ্পাপ (!) আর মাসুম লোকটির বিরুদ্ধে প্রতারনার মিথ্যা (?) মামলা করার জন্য। সমাজ সেই পাওনাদার কে ঘৃণা করল আর আমি পেলাম হাত তালি। এতে কি হল? সবাই জানল যে আমি নির্দোষ। কিন্তু আমি নিজে তো জানি যে আমি অপরাধী। কাজেই সমাজের চোখে নির্দোষ প্রমাণ হলেও কি নিজের কাছে আমি নির্দোষ হলাম, নাকি সত্যটা উলটে গেল? আমি কিন্তু ঠিকই জানলাম যে আমিই আসল শয়তান।
একই রকম কথাবার্তা একটি ধর্ষিতা মেয়ের ক্ষেত্রেও খাটে যখন সে পতিতা প্রমানিত হয়ে আত্ম হত্যা করে, আর সবাই ধর্ষকের জয়গান করে। কিন্তু এতে কি ধর্ষক নির্দোষ হয়ে গেল? না হল না তাই না?
@তামান্না ঝুমু,
এখানে আমি জানোয়ার বলতে বনের পশুকে না বরং প্রতারকদের বুঝিয়েছি। আপনি কি স্বর্গ আর নরকের বিশ্বাস করেন? আমি করি না বা মাথাই ঘামাই না। বরং আমি এই কবিতাটিকেই বেশি প্রাধান্য দেই।
“কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদুর
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুরাসুর
…………….”
জ্বীন শুধু শায়ানকে বাঁচায়নি, একই সঙ্গে গল্পটিকেও বাঁচিয়েছে। নইলে পুরো গল্পটিই যে খুব চেনা!
সত্য ঘটনার তথ্যটুকু কেন দেয়া হল, তা বুঝতে অক্ষম।
@কাজি মামুন,
ঘটনাটি বেশ কিছুদিন যাবত বারবার মনে পড়ছিল আমার। ভাবছিলাম কিছু লেখা যায় কিনা। সত্য ঘটনার তথ্য এ জন্যই দেয়া যে, আমাদের সব সময় একটা সাধারণ ধারণা থাকে সকল অন্যায় কেবল পুরুষেরাই করে, আর নারীরা কেবল শিকার হয় অত্যাচার, অবিচার, অন্যায় ইত্যাদির। এই ধারণা সব সময় সত্যি নয়। নারীরাও অপরাধ করে, আর নির্দোষ পুরুষেরাও তার শিকার হয়।
এ গল্পটি আমার দেখা একটি সত্য ঘটনার উপরে লেখা। শুধু পাত্র-পাত্রীর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি আমি।
@তামান্না ঝুমু,
অবাক হইলাম ! পাড়া-প্রতিবেশি কিংবা আত্তীয়-স্বজনেরা সবাই কি ঐ জ্বীনের গল্প বিশ্বাস করেছিল ?
গল্পটিতে “নীপা” নামের চরিত্রটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে । :clap
(কৌতুহলবশত প্রশ্নটি করলাম, আপনার গল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন উদ্দেশ্যে নাই।)
@তারিক, সবাই বিশ্বাস করেছিল নীপার জ্বীনপ্রেমিকের গল্প। এমন কি আমিও। ঈসার পিতৃবিহীন জন্মকাহিনী আজও যে কোটি কোটি মানুষে বিশ্বাস করে।এবং এদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী মানুষও রয়েছে।
@তামান্না ঝুমু,
এটা কত বছর আগেকার ঘটনা তামান্না ঝুমু? জাস্ট কৌতুহল, এই আর কি ……
@তামান্না ঝুমু, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেন প্লিজ।
এই ঘটনাটা কত সালের দিকে ঘটেছিলো, আমি স্রেফ দেখতে চাই যে এটা কতদুর অতীতের কাহিনি। সাল বলতে না পারলে অন্তত দশকটা বলেন।