‘ছিল এক ভাজা মাংসের ভক্ত,
দেখে কোরবানির ছুরি-টুরি-রক্ত
মাখন হৃদয় তার হাউমাউ কাঁদত!
দুপুর বেলা, এলে গরম গরম গোশত,
মসলার মৌ ঘ্রানে ভুলে যেত সে কষ্ট,
ডুবি নাক-মুখ-হস্ত, ভুঁড়িখানা ঠিক ভরত’
যদিও এক পরিচিত-জনকে নিয়ে এই পদ্য-প্রচেষ্টা, আশে-পাশে তাকালেই এমন ভুরি ভুরি ভোজন-রসিক চোখে পড়বে আমাদের। তারা নাক ডুবিয়ে মাংস ভক্ষণ করতে পারেন, কিন্তু মাংস কর্তন, বা ভুঁড়ি ছেদন একেবারেই সহ্য করতে পারেন না, কোরবানির সময় জবাই-কৃত পশুর গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে থাকলে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন, সাময়িক জ্ঞানও হারান কেউ কেউ। ডাক্তারি ভাষায় ‘দুর্বল চিত্তে’র এই মানুষগুলি কিন্তু আবার পরিপূর্ণ সবল হয়ে উঠেন প্লেট-ভর্তি মাংসের গন্ধে!
অনেকে আবার এতটা দুর্বল চিত্তের নন, তারা পশুর হাড্ডি, মাংস, রক্ত, নাড়ি-ভুঁড়ি দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যান না, কিন্তু অনুভব করেন সভ্যতার অভাব। কেন রে ভাই, রাস্তায়, বাড়ি-ঘরে, ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনেই চালাতে হবে এই রক্তোৎসব?? এগুলো কি আমাদের বাচ্চাদের কোমল হৃদয়ে কুঠরাঘাত করে না? তাদের কি করে তুলে না হিংস্র? এই অমানবিক কাজগুলো কি একটু আড়ালে আবডালে করা যায় না? এই প্রজাতির মানুষেরা উৎসব করে পশুহত্যা পছন্দ করেন না বটে, তবে উৎসব করে মাংস খেতে ভালবাসেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে হপ্তা হপ্তা দামী রেস্টুরেন্টে চলে যান। বিফ বার্গার অথবা বটি কাবাবের ভোজে হন মাতোয়ারা ।
আমেরিকা, ক্যানাডা অথবা পশ্চিম ইউরোপের ধনী কোন দেশের কোন ধনী রেস্টুরেন্টে বসে বিফ বার্গার বা স্যান্ডউইচ চিবোন যারা, তারা যদি একটু কম খেতেন, তাহলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে আর অভুক্ত থাকতে হত না। কেন এই অতি উন্নত দেশগুলোতে পশু খাদ্য উৎপাদনের জন্য এমনকি অর্ধেকের বেশি জমি ছেড়ে দিতে হয়? কেন তাদের জন্য এত্ত এত্ত খাদ্যের যোগান দেয়া হয়, যা দিয়ে পুরো বিশ্বের অনাহারী পেটগুলি ভরিয়ে তোলা যায়?? কারণ আর কিছুই নয়, পশুসম্পদ শিল্পপতি-গণেরা এই জমি বা খাদ্যের জন্য অকাতরে অর্থ বিলোতে সক্ষম, কারণ তাদের মাংস-খেকো কাস্টমারদের হাতে অঢেল ধন-মানিক, তারা যতটা না প্রয়োজন, তার চেয়েও অনেক বেশী মাংস চিবোনই না শুধু, চর্বিত চর্বণও করেন পশুকুলের মত! আর দেখুন, এই লোকগুলির চর্বি কমানোর জন্য ডাক্তার বা ব্যয়ামগারেরও অভাব নেই কিন্তু। পরিসংখ্যান মেলে, একটি বড়সড় ষাঁড়ের পেটে যে পরিমাণ পানি যায়, তা দিয়ে একটি সাবমেরিন বিধ্বংসী জাহাজ ভাসানো যায়। যেখানে মাত্র ২৫ গ্যালন পানি দিয়েই এক পাউন্ড গম উৎপাদন করা যায়, সেখানে এক পাউন্ড মাংস উৎপাদনে প্রয়োজন পড়ে প্রায় ২৫০০ গ্যালন পানি। মাংস উৎপাদকেরা নাকি পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান শিল্প দূষক, তাদের কারণে পৃথিবীর তাবৎ নদী আস্তে আস্তে মরেই যাচ্ছে না শুধু, দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশের বিস্তীর্ণ অববাহিকায়। আশ্চর্য শোনালেও সত্য, পৃথিবীর তাবৎ মানব প্রজাতিকে ৫ বার খাওয়ানো যায় এমন সয়াবিন এবং দানাদার খাদ্যশস্য শুধুমাত্র আমেরিকার পশু-শিল্পের জন্য ব্যয়িত হয়। আমেরিকার গরু, শুকর, মুরগী, ভেড়া প্রভৃতি অমূল্য পশুসম্পদ খেয়ে ফেলে দেশটির ৯০ ভাগ গম, ৮০ ভাগ খাদ্যশস্য, ৯৫ ভাগ যব। আমেরিকার মোট কৃষিজ ভূমির অর্ধেকেরও কম ব্যবহৃত হয় মানবসম্পদের ভোগের নিমিত্তে। পশুকূলকে ছেড়ে দিতে হয় অর্ধেকেরও বেশী! তাহলে বুঝুন!!
আরও এক প্রজাতির লোক আছেন, যারা সুরম্য প্রাসাদে বসবাস করেন, ঝকঝকে তকতকে রাজপথে রাজার মত করে হাঁটেন, আর মনে মনে ভাবেন, কবে যে এই পৃথিবী থেকে প্রাণীহত্যার মত একটি নৃশংস ঘটনার বিলোপ হবে!! আশ্চর্য হল, এই শ্রেণীর লোকেরা ভুলেই যান, তার জন্য এই মনোরম শহরটির পত্তন ঘটাতে বিনাশ করতে হয়েছে বেশুমার বন-জংগলের, জান গেছে কতশত অবলা জানোয়ারের!! এই ভাবুক লোকটিকে এই সুসভ্য আর সুশোভিত শহরটি ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে থাকতে বলুন না! দেখবেন, আপনার উপর তেড়ে আসবে!!
অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা চল্লিশ হাজার বছর ধরে প্রকৃতির সাথে এক সম-অংশিদারিত্বের জীবন যাপন করেছে। তারা নিজেদেরকে জঙ্গলের তত্ত্বাবধায়ক মনে করত, কখনোই জংগলের প্রাণী বা উদ্ভিদকুলের অঘোষিত মালিক বনে যেত না। এই লোকগুলি শিকারও করত, কিন্তু কখনই তা ধ্বংস ডেকে আনত না সেই আদিম পৃথিবীতে। এতই ভারসাম্যপূর্ণ ছিল তা! তারা এমনকি একটি গাছকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবনটা দিয়ে দিতে থাকত সদা-প্রস্তুত। কিন্তু পরে উপনিবেশবাদীরা এসেছে যখন, তারা প্রকৃতি তো ধ্বংস করেছেই, সঙ্গে বিনাশ করেছে ঐ আদিবাসী গোষ্ঠীটিকেও। যারা তাদের সার্থক ক্রীতদাস বনতে পেরেছে, তারাই শুধু বেঁচে যেতে পেরেছে। আর ঐ সেট্লারদের হাতেই কিন্তু গড়ে উঠেছে আজকের ঝকঝকে তকতকে অস্ট্রেলিয়া….তাহলে বুঝুন, সভ্যতার সাথে কি মারাত্মক সংশ্লেষ রয়েছে বলির!!!! পশু শুধু নয়, মানুষকেও যার যূপকাষ্ঠে দাড়াতে হয়েছে বারবার….
এবার আসা যাক আর এক দলের কথায়। তারা পেট পুড়ে মাংসই খায় না শুধু, পশুহত্যার ব্যাপারেও তাদের দারুণ উৎসাহ! তাদের মতে, প্রাণীর কি অনুভূতি আছে নাকি? তাহলে তাদের কর্তনে কি এমন ক্ষতি? প্রাণী হত্যা ও তার মাংস ভক্ষণ তাদের কাছে কোন অমানবিক বিষয়ই নয়। তাদের প্রশ্ন: যদি আহারের জন্য প্রাণী হত্যা এতই খারাপ, তাহলে বনের জন্তুদের কি প্রাণী হত্যায় বাঁধা দেয়া উচিত নয়? বা, একটি কীটের জীবনও কি গুরুত্বপূর্ণ নয়??? খাদ্যচক্র ভেঙ্গে দাও তাহলে! বৃহৎ মাংসাশী প্রাণী কর্তৃক ক্ষুদ্র প্রাণীদের আহারে পরিণত করা প্রসঙ্গে ডঃ লিভিংস্টোনের সেই অমর বানী এদের কাছে বাইবেল:
‘..কোন ব্যথার ধারণা বা ভীতির অনুভূতি ছিল না। ক্লোরোফরম দেয়া রোগীদের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থাকে, মানে, তারা পুরো অপারেশনটাই দেখে, কিন্তু ছুরিকে অনুভব করতে হয় না তাদের…. এই বিশেষ অবস্থাটি মাংসাশী প্রাণীদের হাতে মারা যাওয়া সব প্রাণীর মধ্যেই অনুভূত হয়; এবং আমাদের দয়াবান প্রভুর তরফে মৃত্যু ব্যথা উপশমের একটি বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে দেখা যেতে পারে একে..’
কিন্তু যারা শুধু উদ্ভিদ খায়, প্রাণী খায় না, তাদের বেলা? তারা কি দ্বিচারিতা করেন উপরোল্লিখিত প্রজাতির মানুষগুলোর মত? না, তারা কোন দ্বিচারিতা করেন না। তাদের যেই কথা, সেই কাজ। তারা বলেন, মাংস ছোঁবও না, খাবোও না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কেন মাংসের মত অতিশয় মজাদার (মাংস-ভক্ষকদের মতানুযায়ী) একটি জিনিস চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার শখ থেকে বঞ্চিত রাখেন নিজেদের? অবলা প্রাণীগুলার প্রতি মায়া? প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা?? নাকি দেবতাকে খুশী-করণ চেষ্টা?? দেবতাকে খুশী করার আশায় কেউ যদি মাংসের বাটি থেকে মুখ সরিয়ে রাখেন, মহৎ মানবের খেতাব একখানা জুটে যাবে সন্দেহ নেই; কিন্তু দেখা দেবে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিদ্বন্দ্বী!! কারণ মানিকগঞ্জের সলিমুদ্দিন, যে নিজের কষ্টের টাকায় একখানা গরু কোরবানি দিয়েছিল, সে বলবে, আমি কি তবে সৃষ্টিকর্তাকে খুশী করতে চেয়ে অন্যায় করেছি ? সলিমুদ্দিন যখন মাংস খায়, তখন সেও কি ‘দেবতার প্রসাদ’ এর মত পবিত্র কোন খাদ্যানুভূতির অংশীদার হতে চায় না? যেখানে বিশ্বের প্রায় ৭ ভাগ মানুষ ভেজিটেরিয়ান, সেখানে ইন্ডিয়াতেই এই অনুপাত প্রায় তিরিশ শতাংশের কাছাকাছি। মাংস না খাওয়ার সাথে ধর্মের যে কি ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে, তা তো এই অনুপাত থেকেই সম্যক বোঝা যায়।
পশু-মাংস খান না, এমন অনেকে আবার পশু বলী দিতে একটুও কার্পণ্য করেন না। আর সেও করা হয় দেবতাকে খুশি করতে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভস্ম-বলী দিতে দেখা যায় যেখানে স্বর্গের দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয় দাহকৃত মাংস, অন্যদিকে, রক্ত আর অন্ত্রাদি নিবেদিত হয় মৃত্তিকা-দেবীর উদ্দেশ্যে। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আতোয়ার রহমানের বইতে পাওয়া যায়:
মানুষ উপায়নের জন্য সব সময়ই বেছে নিয়েছে খুত-হীন ও স্বাস্থ্যবান পশু। পরোক্ষত, তার প্রিয় পশুকে। হিন্দু শাস্ত্র যখন বাঘ, সিংহ ইত্যাদির মত বন্য পশু বলিদানের অনুমোদন দেয়, তখন অবশ্য প্রিয় অপ্রিয় বিচারের অবকাশ রাখেনি। এসব পশু বলিদানের কথা বলা হয় সম্ভবত এগুলিকে শক্তির প্রতীক বলে ধরে নিয়ে। অন্যদিকে, মোষ, ষাঁড়, পাঠা, এবং মর্দা শুয়োর বলি দিয়েছে হিন্দু সমাজ, তাদের উর্বরতা আর প্রজনন শক্তির প্রতীক ভেবে।
অনেকে প্রাণী খান না, কিন্তু প্রাণীর চর্বিতে নির্মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, প্রাণী হত্যার উপর নির্ভরশীল যে বিশাল পশম বা চামড়া ইন্ডাস্ট্রি, তার উৎপাদিত পণ্য ভোগে তাদের দ্বিধা নেই বিন্দুমাত্র। তবে প্রাণী না-খাওয়াদের দলে আর এক প্রজাতির মানুষ পাওয়া যায়, যারা প্রাণীর দেহ টুকরো টুকরো করে গবেষণা করেন বৃহত্তর মানবকল্যানের উদ্দেশ্যে; হয়ত ক্যানসারের মত প্রাণঘাতী রোগ সারাতে তাদের কোরবানি দিতে হয় অসংখ্য প্রাণী। মনুষ্যত্বের ছলে এখানেও যে পশুত্ব বিরাজ করে, তার প্রমান মেলে, জর্জ বার্নার্ড শ’এর নীচের কমেন্টটিতেঃ
যদি একটি গিনিপিগকে যৎসামান্য জ্ঞানলাভের জন্য হত্যা করা জায়েজ হয়, তাহলে গিনিপিগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি জ্ঞানলাভের স্বার্থে একটি মানুষকে স্যাক্রিফাইস করা সহি হবে না কোন যুক্তিবলে?
যদিও গবেষণাগারে মানুষকে পরীক্ষার উপকরণ তেমনটা হতে হয় না, তবু মানুষ যে গিনিপিগের চেয়েও বেশি মাত্রায় বলি হচ্ছে না, তা জোর দিয়ে বলা যায় কি? যদি তেমন কোন ব্রেকথ্রু হওয়ার আশা থেকেই থেকত, তাহলে কি আর মানুষ বসে থাকত? তেমনতরো বড়সড় আবিষ্কারের জন্য অসংখ্য মানুষকে বলি না দিয়ে? মানুষ যে আদতে একটি প্রাণীই!!! তাই খুব বেশী ভরসা পাই কোথা?
যদিও পরীক্ষাগারে অ্যানিম্যাল টেস্ট করা হচ্ছে প্রোডাক্ট সেফটির কথা বলে, এর ভিতর রয়েছে শুভংকরের ফাঁক। Herbert Gundersheimer নামক একজন আমেরিকান ডাক্তার আসল রহস্য ফাঁস করে দিয়েছেন এভাবে:
বাস্তবে এই টেস্টগুলো ভোক্তাদের অনিরাপদ পণ্য থেকে কোন সুরক্ষাই দেয় না, বরং এইগুলো ব্যবহৃত হয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি দায় থেকে প্রতিরক্ষা দিতে।
সবশেষে আরও এক প্রজাতির মানুষের কথা, প্রাণী না খাওয়ার ব্যাপারে যাদের রয়েছে জোর দার্শনিক যুক্তি। এরা যেন গ্রীক দার্শনিক প্লুটার্ক (খ্রিস্টাব্দ ৪৬-১২০) এর সার্থক উত্তরসূরি। প্লুটার্ক এক পর্যায়ে বলেছিলেন:
প্রানীমাংস যদি ভক্ষণ করতেই হয়, তাহলে ছুরি আর কাঁটাচামচের পরিবর্তে জন্তুদের মত করে খাওয়াই শ্রেয়তর।
Baron Cuvier নামক একজন প্রসিদ্ধ অ্যানাটমিস্ট এর মতে, মানুষের হাত, দাঁত, বা চোয়ালের গঠন এমন যে, ফলমূল, শেকড় আর সবজিজাতীয় খাবারই তার জন্য সত্যিকারের (প্রাকৃতিক) খাবার বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, মানুষ কি সে প্রাকৃতিক খাদ্যে সন্তুষ্ট থেকেছে?? বরং সে শিকারে নিপুন দক্ষতা অর্জন করেছে অন্য মাংসখেকো প্রাণীগুলোর মতই। মাংসাশী অন্য প্রাণীগুলোর সঙ্গে এখন তার মূল পার্থক্য হচ্ছে, মাংসাশী প্রাণীগুলো জংলি কায়দায় খাদ্য সংগ্রহ করে, আর মানুষ সভ্য কায়দায় আধুনিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সেগুলোকে (সুসভ্য ও শৃংখলাবদ্ধভাবে ? ?) সংগ্রহ করে আর পরে মাংস কেটে, মসলা মাখিয়ে সুসভ্য নাগরিকের মত ভোগ করে। তাই নয় কি??
আসলে কোন সুনির্দিষ্ট নৈতিকতা দাড় করানো যায় না, বলি, পশু হত্যা, মাংস ভোজনের পেছনে। আর এগুলি ভাল কি মন্দ, তার বিচার আসলেই গুরুত্বহীন যতক্ষণ না আমরা ঠিক করি আমরা কি চাই! আমরা কি এমনটাই চাই যে, কোন একটি বিশেষ প্রজাতি সুখ ভোগ করতে পারবে না অন্য একটি প্রজাতির কষ্টের বিনিময়ে?? সত্য হল, আমরা তা কখনই চাই না। মানুষ অন্য প্রজাতির কষ্ট থোরাই কেয়ার করে!! আদতে মানুষ যেমন শ্রেষ্ঠত্ব চায় অন্য প্রাণীদের উপর, তেমনি উন্নত মানুষকূলও চায় শ্রেষ্ঠত্ব দুর্বলের মানুষের উপর। আশ্চর্য হল, মানুষ নিজেদের শ্রেষ্ঠ দাবি করতে যেয়ে নিজেদের পশুত্বের পরিচয়টিকে কিন্তু আরও পরিষ্কার করে তোলে! বস্তুত, আদিম পাশবিক রীতি তো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠারই রীতি……
এই সহস্রাব্দের শুরুতেই ২০০১ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রায় ৬ মিলিয়ন স্বাস্থ্যবান গরুকে পুড়িয়ে মেরেছিল; হত্যাযজ্ঞটি এত বিশাল ছিল যে, সেনাবাহিনী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। কারণ কি জানেন? গরুগুলো ভাইরাস আক্রান্ত ছিল, মানব-দরদি ব্রিটিশ সরকার বিন্দুমাত্র রিস্ক নিতে চায়নি, শুধু এফেক্টেড ফার্মগুলোই তারা বিনাশ করেনি, সঙ্গে আশেপাশের খামারগুলিও নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলে তারা, যেগুলিতে এমনকি ভাইরাস সংক্রমণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই বিশাল গণহত্যায় মাইলের পর মেইল দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল। খ্যাতনামা বিজ্ঞানী প্রফেসর ফ্রেড ব্রাউন একে ‘বারবারিক কন্ডাক্ট’ আর ‘মানবতার জন্য একটি লজ্জা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এই তো সেদিন অস্ট্রেলিয়ার জনৈক নিক বোথা তার খামারের ৩০০০ গরুকে শুট করার সিদ্ধান্ত নেন। বোথা খামারটি ক্রয় করেছিলেন গরুগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খামার থেকে খালাস করার শর্তে, যেহেতু সেগুলোকে খাওয়ানোর মত যথেষ্ট ঘাস ছিল না, আর ইন্দোনেশিয়ায় গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়ায় সেগুলো বিক্রি করাও সম্ভব ছিল না বোথার পক্ষে। ফলে বাধ্য হয়ে, গরুগুলিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বোথাকে। মজার ব্যাপার হল, ইন্দোনেশিয়ার কসাইখানায় গরুগুলির প্রতি যে নিষ্ঠুরতা করা হচ্ছিল, তার প্রতিবাদেই কিন্তু গরু রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলাফল দেখুন: হাজার হাজার গরুকে আরও মর্মান্তিক পরিণতি ভোগ করতে হয়!!
আচ্ছা, ভাইরাস আক্রান্ত হলে বা খামার খালি করার প্রয়োজন হলেই যে গরুগুলিকে মেরে ফেলা হচ্ছে, তা কি মানুষের পশুত্বের লক্ষণ?? সত্য হচ্ছে, মানুষ নিজেই পশু, আর শুধু গরু নয়, প্রয়োজনে তারা মানুষকেও গণহত্যার শিকার করে! এমন ইতিহাস ত ভুরি ভুরি রয়েছে!
Jeremy Bentham (1748–1832) তার The Principles of Morals and Legislation গ্রন্থে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ফরাসিরা ইতিহাসের যে অমোঘ পরিক্রমায় একজন মানুষের গায়ের রং-কে আজ আর দাস হওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ বলে মনে করছে না, ঠিক সেই পথেই, এমন দিন আসবে, যখন পায়ের সংখ্যা, চামড়ার লোমশ ভাব বা os sacrum এর বিলুপ্তি কোন সেন্স-ওয়ালা প্রাণীকে নিগৃহীত করার জন্য যথেষ্ট কারণ বলে আর বিবেচনা করবে না মানব প্রজাতি। তবে বাস্তব হল, কার বিচারশক্তি/সেন্স আছে, আর কার নেই তার বিবেচনা কি মানুষ প্রজাতি কখনো করেছে?? একটি কীটের চেয়ে একটি ঘোড়ার বেশী মর্যাদা পাওয়া উচিত, বা একটি ঘোড়ার চেয়ে একটি একদিনের শিশুর জীবন বেশী মর্যাদা পাওয়া উচিত, যদি প্রাণীটির বিচারশক্তিই হয় নিয়ামক। কিন্তু আমরা কি দেখি? পাশ্চাত্যের একটি ধনী লোক হয়ত ৩য় বিশ্বের হাজার হাজার শিশুর চেয়ে একটি ঘোড়ার যত্নে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। আবারও প্রমাণ মিলল, মানুষ একটি প্রাণীর মতই আচরণ করে, সে তার নিজস্ব চাহিদা বা পছন্দকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে, বাস্তব দুনিয়ায় নৈতিকতার আসলেই কোন অস্তিত্ব মানুষ রাখেনি।
আতোয়ার রহমান বলেন:
বলি হিসেবে প্রাণ দিতে কেউ কখনো স্বেচ্ছায় খাঁড়ার নিচে ঘাড় পেতে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। বলি-দাতারা সব সময়ই বলিদানের উদ্দেশ্যে মানুষ সংগ্রহ করেছে ছলে বলে কৌশলে, দুর্বল শ্রেণী থেকে। কখনো দাসদের। কখনো বন্দীদের। দুই-একটি ক্ষেত্রে অপহরণের অভ্যাসও বলি-দাতাদের ছিল।
আসলে মানুষের সাম্প্রতিক ইতিহাস তো দুর্বলের উপর শক্তিশালীর জয়ের ইতিহাস, সভ্যতার বিনির্মাণও এই পথেই। সে হিসেবে আমরা মানুষেরাও কি নিরাপদ? একসময় মানুষকেই বলি হতে হত দেবতার শক্তিবৃদ্ধির আশায়, বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পাপের প্রায়শ্চিত্ত থেকে রক্ষা পেতে। এখন সভ্যতা অনেক এগিয়েছে। কিন্তু মানুষ কি আর বলী হচ্ছে না? হিরোশিমা বা নাগাসাকিতে যা হয়েছে? মানুষ যে নীতির উপর ভর করে বলি দেয় বা মাংস খায়, ঠিক সেই নীতির প্রতিফলনেই কি হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা পড়েনি???
C. S. Lewis এর একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি রয়েছে:
In justifying cruelty to animals we put ourselves on the animal level.
আমরা পশু হতে চাই না। পশু হত্যা, চামড়া ছিলা, আর মাংস খাওয়ার মধ্যে একপ্রকার অসভ্যতার, জংলি-পনার ছোঁয়া আছে, সে যতই মসলা মাখাই না কেন, বা আগুনে ছেঁক দিয়ে, আর মসৃণ টেবিলে সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করি না কেন বা মার্কেটগুলিতে মনোরম পরিবেশে সাজিয়ে রাখি না কেন। বাস্তবতা হল, আমাদের মানবিক বোধকে (যাকে নিয়ে আমরা অহংকার করি) বলি দিয়েই আমরা পশু খাই , খেয়েই চলেছি সেই আদি যুগ থেকে, নিজেদের পশুর স্তরে নামিয়ে…শুধু সমস্যা হল, ব্যাপারটা আমরা স্বীকার করতে চাই না…… মানুষের জ্ঞান মানুষকে এইটুকু অন্তত শিখিয়েছে যে, নিজেকে পশু ভাবা খুব বোকামি!!! চিন্তা করার ক্ষমতা দিয়ে মানুষ অনেক বেশী শৈল্পিক ও সভ্য কায়দায় মাংস খাওয়া রপ্ত করেছে। শুধু তাই নয়, পশুদের থেকে নিজেদের পার্থক্যকে পরিষ্কার করার জন্য জান-প্রাণ দিয়ে যুক্তির পসরা সাজিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি হিরোশিমা, নাগাসাকি, টুইন টাওয়ার, বা সাম্প্রতিক সিরিয়া মানুষের সভ্যতার পোশাক শুধু খুলেই নিচ্ছে না, আদি ও অকৃত্রিম উলঙ্গ চেহারাটি ফিরিয়ে দিচ্ছে! আসলে, সভ্য জ্ঞান ও আধুনিক কলাকৌশল দিয়ে মানুষ নিজের পশুত্বকে আবডালে নিয়ে যেতে পারে শুধু, পশুত্বকে বিসর্জন দিতে পারে না কখনই। সেটি ডালের ফাকে ফাকে ঠিকই ঝুলে পড়ে!
তথ্যসূত্রঃ
১.লোককৃতি বিচিত্রা- আতোয়ার রহমান
২.Ethical Dilemma
৩.অন্যান্য ইন্টারনেট উৎস
চমৎকার একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ।
মুক্তমনায় আগে অনেক মন্তব্য করা হত। এখনও মুক্তমনায় ঢু দিয়ে মাঝে মাঝে পড়লেও ব্যস্ততা ও অলসতার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন্তব্য করা হয় না।
তবে আপনার পোস্টে মন্তব্য না করে পারলাম না কারন এই বিষয়টা আমাকে ছোটবেলায় অনেক ভাবিয়েছে। ছোটবেলায় মাঝে মাঝেই মাংস ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাংসের আসক্তি এমনই যে ইহা ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রেই শক্ত হয়ে যায়।
ভেজ-নন ভেজের বিতর্ক একেবারে নতুন নয়। যে সভ্যতাতেই মানুষ চিন্তার অবকাশ পেয়েছে, সেখানেই কাউকে না কাউকে এই বিষয়টি ভাবিয়েছে। আর ভারতবর্ষে যে এই বিষয়টি সুপ্রাচীন তা মনুসংহিতা ও মহাভারতের শান্তিপর্বে যুধিষ্টির ও ভীষ্মের কথোপকথন থেকে বুঝা যায়। সেখানে মাংস শব্দের এই অর্থ করা হয়েছে – আমাকে (মাং) সে (সঃ) পূর্বজন্মে খেয়েছে অতএব আমি তাকে খাব।
যদিও মনুসংহিতা ও শান্তিপর্বের মাংস সম্বন্ধীয় অংশটুকু বুদ্ধের পরে সংযোজিত হয়েছে কিনা তা আমি জানি না কারন বুদ্ধের অহিংস ধর্মের মধ্য দিয়েই ভারতে প্রানীহত্যার প্রতি ঘৃনার অধিক প্রসার ঘটেছিল।
তবে যেটাই হোক, এখানে অনেকে যেরকম মনে করছেন যে ঈশ্বরের তুষ্টির জন্য ভারতে অনেকে নিরামিষাশী হচ্ছে, বিষয়টা আগে কখনোই এরকম ছিলনা। অধিকাংশ ভারতীয় দর্শনে স্বর্গ, নরক, সৃষ্টিকর্তা এসবের ভূমিকা বড়ই গৌন তবে হ্যা পুনর্জন্মের ধারনা ভারতের প্রায় সব ধর্মদর্শনেই উপস্থিত।
যাইহোক যে বির্তক নতুন নয় তা নিয়ে আমি আর শুধু শুধু অধিক বিতর্কে যেতে চাই না।
আমি শুধু ক্যানিবালিজম সম্বন্ধে মুক্তমনার পাঠকদের মতামত জানতে চাই।
পৃথিবীর অনেক স্থানেই ক্যানিবালিজম এখনও আছে। উইকি থেকে দেখলাম মাত্র ২০০০ বছর আগে গ্রেট ব্রিটেনে ক্যানিবালিসম প্রচলিত ছিল। এবং ৩০০ বছর আগেও ব্রিটিশ রাজপরিবারে অনেকের খাবারের পাত্রেই নাকি গোপনে মানুষের মাংস থাকত।
এবং এখনও নাকি ২৫% ব্রিটিশ মানুষের মাংস খেতে আগ্রহী।
ইন্দোনেশিয়ার ওই মহিলার কথাটা সবাই নিশ্চয়ই জানেন যিনি অনেক মানুষকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখে খেয়েছিলেন এমনকি বন্ধুবান্ধবকেও খাইয়েছিলেন।
নিচের লিংকগুলো দয়া করে একটু দেখেন
এরথেকে কিন্তু এটা খুব স্পষ্টই যে আমাদের এমনকি মানুষের মাংস খাবার প্রতিও লালসা আছে। শুধু নিজেদের সভ্য ভাবি এবং নৈতিকতা ও সামাজিক কারনেই আমরা ওই কাজটা করি না।(যেরকম ভেজিটেরিয়ানরা নিজেদের নৈতিকতার জন্য মাংস খায় না)
এরকম মানুষরা কিন্তু অপ্রয়োজনে মানুষ হত্যা করেনি। শুধু নিজেদের জৈবিক ক্ষুধা মেটাবার জন্যই এরকম কাজ করেছিলেন।
অনেক মাংসাহারী মানুষের মাংস আহারের এই প্রথাকে যেরকম ভাবে দেখবে অনেক ভেজিটেরিয়ানও পশুর মাংস আহারকে একই রকম দৃষ্টিতে দেখতে পারে। তাই ভেজিটেরিয়ানদের সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গেলে আমাদের এটা চিন্তা করা উচিত যে আমি যদি এমন একটা সমাজে বাস করতাম যেখানে অনুন্নত দেশের বাচ্চাদের মাংস ছাড়া অধিকাংশ মানুষের একবেলাও চলে না তবে সে সমাজে আমার অবস্থা কি হত?
মন্তব্যই তো hyperlinked হয়ে গেল। 🙁
আমি তো শুধু লিংক এর address টা দিতে চেয়েছিলাম। যাইহোক এখন মন্তব্যগুলোতে ক্লিক করেই লিংকে যেতে হবে।
@রনবীর সরকার,
আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলাম। দয়া করে নিচের লিংক টাও দেখুন।
http://www.justanswer.com/uk-law/6bews-want-eat-human-flesh-uk-possible-legal.html
@রনবীর সরকার,
সাবাস,এইটা তো খুবই ভাল সংবাদ দেখতেসি।কোরিয়ান রা কুকুর খায় তাই ব্রিটিশ আমেরিকান এদের কুকুরের জন্য দরদে বুক ফাইটা যায়, বাচ্চার মা আর বাচ্চা হাইটা যায়, আর কুত্তা থাকে মায়ের কোলে, এই না হলে আধুনিকতা!!
তা এরা কি নরবলি প্রথা পুনরায় চালুর মাধ্যমে মাংস খেতে চায়, নাকি মানুষের চাষবাস করে খেতে চায় ( আগে যেমন ক্রীতদাসের চাষ করত) ? ভাবনার বিষয়। :-s
@অর্ফিউস,
আমার শেষের লিংকটা দেখুন।
http://www.justanswer.com/uk-law/6bews-want-eat-human-flesh-uk-possible-legal.html
@রনবীর সরকার, দেখেছি লিঙ্কটা। আর বাংলাদেশের নরভোজী খলিলুল্লাহর কাহিনীও পড়লাম। আচ্ছা খলিলুল্লাহ হয়ত পাগল ছিল, কিন্তু যুক্তরাজ্যের ২৫% মানুষ তো আর একসাথে পাগল হতে পারে না তাই না? বেশ ভয় পাইয়ে দেয়ার মত খবর কিন্তু।
এইরকম মানসিকতা যদি ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মধ্যেও চলে আসে, আর যদি তারা সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে? স্বজাতিরই ( মানব জাতি!) যে খাবারে পরিনত হয়ে যাব না এর কি নিশ্চয়তা আছে???
@অর্ফিউস, আজ মানুষ খেতে চাইছে এই ২৫%! মানে প্রায় ১.৬ কোটি মানুষ!এই ১.৬ কটির মধ্যে যদি মাত্র ১% এরও এই শখ বাস্তবে পরিনত করার ইচ্ছা জাগে তাহলে? জাগবে না যে সে নিশ্চয়তা কোথায়?
শখ বাস্তবে পরিনত করার ইচ্ছা জাগলেও ওটাকে মনে হয় গোপনেই চরিতার্থ করতে হবে। আমাদের স্বার্থেই আমরা এরকম শখকে বাস্তবায়িত হবার সামাজিক অবস্থা সৃষ্টি করব না।
যাহোক আমার কথা হল এরা যদি বলে যদি আমরা গরু, শূকর খেতে পারি তবে মানুষের মাংস কেন খেতে পারব না? তবে সেই যুক্তিকে আমরা কি করে খন্ডন করব? আমার একটি লিংকে একজন মানুষের মাংস খেকো বলেছে মরা মানুষের মাংস খাওয়া অন্য প্রাণীর মাংস খাওয়া থেকে অধিকতর নৈতিক কারন এক্ষেত্রে আমি কাউকে হত্যা করছি না ।(এই লোকটি আবার যেসকল মানুষ মারা যায় তাদের কবর থেকে ওঠিয়ে খাওয়ার দলে আমাদের দেশের ওই পাগলটার মতো আরকি, এই পাগলটাও তো শুধু মর্গের লাশের কলিজা খেত, )
@রনবীর সরকার,
সেতো অবশ্যই, মানবতা দিয়ে যুক্তিটা খন্ডন করা সহজ নয়, যদি মানুষের প্রাণ আর পশুর প্রাণ এক করে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে নর খাদকদের আমলে ফিরে যাওয়া যেতে পারে।যুদ্ধ কর, বিজিত দলের মানুষ জন কে রেঁধে খাও। এছাড়া তো আর উপায় দেখি না যদি যুক্তিটাই সর্ব ক্ষেত্রেই আসল হয়।
একইভাবে যুদ্ধ বন্দিনীদের ধর্ষণ করা এবং রক্ষিতা বানিয়ে মহান হওয়া যেতে পারে যেমন পৌরাণিক ট্রয়ের যুদ্ধে একিলিসের সুপুত্র নিওপটলেমাস হেক্টরের স্ত্রী যে কিনা তার মায়ের বয়সী তাকে রক্ষিতায় পরিনত করেছিল, তার আগে হেক্টরের শিশু পুত্রকে জবাই করতে ভোলে নি!! এতে কোন অন্যায় নেই, হাজার হলেও সু সভ্য গ্রীক কিনা!!
এমন মহানুভবতার ইতিহাস আপনি ভুরি ভুরি পাবেন ইতিহাস ঘাটলেও। কি আর বলব বলেন এই বিতর্ক কোনদিন থামবে না। তবে মধ্য পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে অতি প্রগতিশীলতা বা অতি প্রতিক্রিয়া শিলতাকে বর্জন করে, যদিও সেক্ষেত্রে আরেকটা প্রশ্ন করা যায় যে এই মধ্য পথের মানদন্ড নির্ধারন করবে কে!!!
আমরা দিন দিন আপোষহীন হয়ে পড়ছি মনে হয়। এটা ভাল লক্ষণ।এতে ভবিষ্যতে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ বেধে গেলে দুনিয়া থেকে আমরা যদি সাফ হয়ে যাই, সেটাই মনে হয় ভাল। তবু আমরা আপোষ করব না।
“হাঁকে বীর শির দেগা, নেহি দেগা আমামা”
যাক দুনিয়া রসাতলে যাক, কিছুই যায় আসে না তাতে, যতক্ষন বেঁচে আছেন ভালভাবে আর আনন্দে বাঁচুন।
এই যুক্তরাজ্য নামের ছোট্ট দ্বীপটি তে একসময় এদের পুর্বপুরুষরাই নরবলি দিত না?সেল্টিক সভ্যতায় তো নরবলি প্রথা ছিল তাই না?
@অর্ফিউস,
সংবাদটা ভাল কি মন্দ তা বুঝতে পারছি না। তবে সব সমাজেই ভাল মন্দ থাকবে। এই ব্রিটেনেই তো সর্বপ্রথম ইন্টারন্যাশনাল ভেজেটেরিয়ান সোসাইটা গঠিত হয়েছিল। অথচ এই ব্রিটিশদের মধ্যেও এমন লোক আছে যারা শুধু পশু মাংস খেয়েই তৃপ্ত না, মানুষের মাংসও খেতে চায়।
@রনবীর সরকার,
বাংলাদেশেও এরকম একজন ছিল। আর আড়ালে আবডালে আরো আছে কিনা কে জানে।
http://taiyabs.com/2010/04/10/27363/
@রনবীর সরকার,
এই বিতর্ক এই পোস্টের লক্ষ্য নয়, ভেজ ভাল না ননভেজ ভাল- এই ধরণের বিতর্কে এই পোস্ট যেতেই চায় না। শুধু দ্বিচারিতাগুলি আর তার কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে। যার ফলাফল দাঁড়িয়েছে, মানুষ পশু ছাড়া আর কিছুই নয়, যত সে সভ্যতার মোড়কে নিজেকে সাজিয়ে রাখুক।
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার এই তথ্যটি জানানোর জন্য। পোস্টটিকে সমৃদ্ধ করল নিশ্চিত।
এই তথ্য ও লিংকের জন্যও অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া। আতোয়ার রহমান জানিয়েছেন,
নরবিজ্ঞানিদের কথায়, – Of all the worldly manifestation of the life force, the human undoubtedly impressed men as the most valuable and thus the most potent and efficacious as ablation
এখন বলুন, নরবলী আর নরমাংস খাওয়া – এর মধ্যে কোনটি বেশী খারাপ?
ঠিক। তবে কালি যার নামে বলি দিতে সবচেয়ে উপভোগ করে ভারতীয়রা, তাকে এ দেশে এনেছিলেন বৌদ্ধ তান্ত্রিকরাই। তাছাড়া, গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মে পশু হত্যার উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু।
হ্যাঁ, এইটাই তো এই লেখার বটম লাইন। সংশপ্তক ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে লিখেছিঃ মানুষ পশু, এ ছাড়া আর কিছু নয়, তার সব কার্যাবলীকে পশু-আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, মানুষের অতি উন্নত মগজ শুধু এই ‘পশুত্ব’কে আকর্ষণীয় ‘মানবতা’র মোড়কে লুকিয়ে রাখার কলা-কৌশল সরবারহ করে থাকে, পার্থক্য থাকলে অন্য পশুদের সাথে এখানেই আছে মানুষের পার্থক্য।
নৈতিকতার জন্য??? কত পার্সেন্ট ভেজিটিরিয়ান??? যারা দেবতার নির্দেশে ভেজ হয়, তাদের নৈতিকতাটা ঠিক কি, একটু বুঝিয়ে বলবেন, রণবীরদা???
এই নৈতিকতা আসলে একটা ভুয়া জিনিস। সভ্য মানুষের কান্ডকীর্তি। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে মানুষের আরোপিত।
@কাজি মামুন,
এই লেখার বদৌলতে বহু তথ্য জানা গেল। ব্রিটেন কোনদিন বেড়াতে যাব না মোটামুটি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
আমাদের সুপার পশু ভাই মাঝে মধ্যে বেশ দামী কথা বলেন।
ক্যানিবলিজম সম্পর্কে সভ্য রীতি/নৈতিকতার দায় যাইই বলা হোক না কেন সেটাও আসলে বিবর্তনশীল, পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলে। আজকের পৃথিবীতে হঠাত ভয়াবহ কোন বিপর্যয়ে প্রচন্ড খাদ্যাভাব ঘটলে বহু সভ্য লোকেই নরমাংস ভক্ষনেও আপত্তি করবে না। নরমাংস ভক্ষনের পক্ষেও তখন চোখা চোখা যুক্তি আনা হবে। বেহুদা মাটিতে পঁচে গলে ব্যাক্টেরিয়ার খোরাক হতে পারলে আর মানুষের খাদ্য হয়ে সমাজসেবায় লেগে গেলে উপকার ছাড়া অপরকার কোথায়??? আধুনিক কালেও তেমন কিছু চরম পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে যেখানে সকলে না হলেও অনেকেই নরমাংস ভক্ষন করতে বাধ্য হয়েছে। নিজের দরকার মতই নৈতিকতা সভ্যতার সংজ্ঞা মানুষ বদলে নেবে।
@আদিল মাহমুদ,
কেনরে ভাই?ব্রিটেন যাবেন না কেন? এই নরমাংস ভোজন করতে ইচ্ছুক এই নব্য সম্প্রদায়ের ভয়ে নাকি?? :-O
@আদিল ভাই,
এই সুপার পশু ভাইটা আবার কে!!
এ ক ম ত। সমাজ বিজ্ঞানীরা এখন এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন, সারা বিশ্বের আদিবাসীরাই প্রকৃতি, পাহাড়, জঙ্গল ও জলার প্রকৃত সংরক্ষক। কারণ তারা বংশ পরম্পরায় লব্ধ হাজার বছরের বাস্তবজ্ঞান থেকে জানেন, কি করে প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়। তারা প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সক্ষম।
[img]https://fbcdn-sphotos-h-a.akamaihd.net/hphotos-ak-prn2/1236335_450093995103891_186695963_n.jpg[/img]
আর এ-ও সত্যি, খাদ্য বৈচিত্রতার কারণে আদিবাসী মানুষ প্রকৃতি থেকে সংগ্রহিত খাবার-দাবারেই মিটিয়ে নেন তাদের পুষ্টিগুনও। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে বৈরিতার কারণ অসংখ্যবার খাদ্য সংকট হয়েছে, দেখা দিয়েছে নিরব দুর্ভিক্ষ, কিন্তু পাহাড়ি মানুষ বন থেক সংগ্রহিত খাদ্যের কারণে শেষ পর্যন্ত আর না খেয়ে কখনই থাকেননি; ভাত বা আলু নয়, সংস্কার বাদ দিতে পারলে বাঙালি সমাজেও খাদ্য বৈচিত্র যোগ করা সম্ভব।
ব্যতিক্রমী নোটে ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ, ব্যতিক্রমী চিন্তাটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, যা এই পোস্টে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে, সন্দেহ নাই।
এই পোস্ট মানুষের চিরাচারিত খাদ্যাভাসকে কটাক্ষ করতে চায় না, দ্বিচারিতাকে সমালোচনা করে, সংস্কারকে ছাড়তে বলে। ঠিক আছে, তুমি মাংস বা উদ্ভিদ, যা ইচ্ছে করে, খাও না। কিন্তু ঝেড়ে ফেল সংস্কার।
সংস্কার মানতে যেয়ে দুর্ভিক্ষে মারা যেও না। একজন মানুষ হিসেবে পশুর মত এই চাওয়াটাকে আমি প্রশ্রয় দেব……দরকার হলে অন্য প্রানী বা উদ্ভিদ খাও….কিন্তু বেঁচে থাক।
অমানবিক শব্দটা হজম হচ্ছে না। কি করি। মানুষ কি কখনো অমানুষের কাজ, মানে অ – মানবিক কাজ করতে পারে? দিন শেষে ওই কাজটা কিন্তু মানুষই করেছে। খামোখাই মানুষের করা কাজকে অমানুষের কাজ বা অমানবিক বলাটা কি ঠিক হচ্ছে?
@কাজী রহমান,
হাজার হাজার বাক্য দিয়ে যা হয়না, একটি বাক্যেই তা হয়…….আপনি কবি, সেজন্যই পারেন, এভাবে এক কথায় বুলস আইকে হিট করতে…
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
লেখককে ধন্যবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করার জন্য। কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে লেখক হয়তো তার যুক্তিগুলো সেরকম জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেননি কিন্তু যে মাংস ভোজন নিয়ে পরস্পরবিরোধীতার কথা লেখক বোঝাতে চেয়েছেন , সে ব্যপারে সহমত পোষণ করছি।
বৈজ্ঞানিক তথা যৌক্তিক দর্শন সবাই গ্রহন করতে প্রস্তুত নয়। এর প্রথম কারণ জ্ঞানের স্বল্পতা এবং দ্বিতীয় কারণ স্বার্থের সংঘাত। ধর্ম , উগ্র মানবতা ও পরিবেশবাদ , লিঙ্গবাদ , রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদার অযৌক্তিক ভাববাদকে পুঁজি করে যারা পেট চালান , তারা স্বভাবতই যৌক্তিক দর্শনের বিরোধীতা করবেন তথাকথিত ‘নৈতিকতার’ অজুহাত তুলে। সমস্যা হচ্ছে যে , নৈতিকতার কোন নির্দিষ্ট গোলপোস্ট নেই যা ইচ্ছামতন পরিবর্তন করা যায়। যে কাজ করলে এক সময় পুরস্কার পাওয়া যেত , এখন সেই কাজ করলে হয়তো স্হান কাল পাত্র ভেদে শাস্তি মিলবে। যে মানবতার গান এখন চারপাশে শোনা যায় , তার বয়স মানব ইতিহাসের তুলনায় এক শতাংশও নয়। মানব জাতিকে সংগ্রাম করে বরফ যুগের মত কঠিন চড়াই উৎরাই সাফল্যের সাথে পার হতে হয়েছে এসব ভন্ড রসিকতার সাহায্য ছাড়াই। মানুষ প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকতে পেরেছে তার সহজাত পশু প্রবৃত্তির কারণেই , ডায়নোসরের মত বিশালকায় প্রাণীরা যেখানে ব্যর্থ।
মানুষ শুধু পশুই নয় ,বৈজ্ঞানিক তথা যৌক্তিক দর্শনে মানুষ একটি সুপার পশু এবং আমি সে জন্য গর্ব বোধ করি । আমার বুকে চাপড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করে যে , আমি একটি গর্বিত প্রাইমেট। ভন্ড ভাববাদীদের নিয়ে কোন চিন্তা না করলেও চলবে কারণ বেলা শেষে তারা নিতান্ত অনিচ্ছায় হয় বাঘের পেটে যাবে না হয় ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য হবে । এতেও যদি তারা কোন রকমে বাঁচেও , প্রাকৃতিক নির্বাচনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে দীর্ঘ মেয়াদে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের কাছে ভাববাদের চাইতে পশুত্ব অনেক বেশী প্রিয় – সারভাইবাল অব ফিটেস্ট।
@সংশপ্তক,
চমৎকার বলেছেন ভাই।১০০% সহমত। এইসব ভাববাদীরা যাই বলুক মাংস আমি খাবই, এটাই সাফ কথা।
মামুন ভাইয়ের লেখাটা প্রথমে আমার বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন বুঝতে পেরেছি যে উনি নিরামিষাশী দের সাফাই গান নাই পরোক্ষ ভাবে, বরং তাদের দ্বি চারিতার সমালোচনা করে লিখেছেন।
@সংশপ্তক ভাই,
লেখাটি ঠিক একথাটিই বলতে চেয়েছে। অনেকেই এই পোস্টের মধ্যে ভেজ-নন ভেজ বিতর্ক দেখতে পেয়েছেন। কেউ (যেমনঃ অরফিয়াস ভাই) মনে করছেন, ভেজদের পক্ষে সাফাই, কেউ (যেমনঃ বিষন্নতা) মনে করছেন নন-ভেজদের পক্ষে ওকালতি সুকৌশলে। আসলে এই পোস্টে ভেজ-ননভেজ উভয়েরই দ্বিচারিতা দেখাতে চেয়েছে, খুঁজতে চেয়েছে এর কারণ। সবশেষে, এই অমোঘ সত্যটিই চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে: মানুষ পশু, এ ছাড়া আর কিছু নয়, তার সব কার্যাবলীকে পশু-আচরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, মানুষের অতি উন্নত মগজ শুধু এই ‘পশুত্ব’কে আকর্ষণীয় ‘মানবতা’র মোড়কে লুকিয়ে রাখার কলা-কৌশল সরবারহ করে থাকে, পার্থক্য থাকলে অন্য পশুদের সাথে এখানেই আছে মানুষের পার্থক্য।
হ্যাঁ, মানুষ এ গর্বটি করতে পারেই, পশুকুলে সে অবশ্যই বিশেষ কিছু…..দরকার নেই মানবিকতা, সৌন্দর্য-বোধ, মহত্ত্ব ….এসব ভেগ (এই অর্থে ভেগ বললাম, কারণ বাঘের জন্য বাঘবিকতা বা ডাইনোসরদের জন্য ডাইনোবিকতা ত আবিষ্কৃত হয়নি!!) টার্মের আশ্রয় নেওয়ার…….মানুষ যে পৃথিবী শাসন করছে, অন্য প্রাণী তার দাসত্ব মেনে নিয়েছে, এই দিবালোকের মত সত্য ঘটনাই তো যথেষ্ট মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য পশুকুলে……..সুতরাং, মানুষ একটি পশু এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পশু জানা ইতিহাস অনুযায়ী……….তাই সমস্ত মানুষ নিজের প্রজাতিটি নিয়ে অহংকার করতেই পারেন, দ্বিচারিতা বা মহৎ টার্মগুলি ইউজ না করেই…….এটাই লেখাটির সারমর্ম।
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, সংশপ্তক ভাই।
@কাজি মামুন,
মনুষত্বের বলিহারি , মানব শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে যারা দিবা নিদ্রায় ডুবে আছেন , তাদের জন্য অবশ্য দুঃসংবাদও আছে ! জীব জগতে ভাইরাস এবং প্রাইয়ন নামে যে বেয়ারারা বসবাস করে এবং এক শ্রেনীর ছদ্ম জ্ঞানী দাম্ভিক মানুষ যাদের কিনা জীব বলে স্বীকারই করে না , সেই ভাইরাস এবং প্রাইয়নদের কাছে মানবকুল এখনও অসহায়। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা যত দ্রুত তাদের ভোল পাল্টান , তাদের চেয়েও দ্রুতগতিতে ভাইরাসেরা চেহারা বদলায়। টাকায় অনেক কিছু মিললেও এই ভাইরাস বাবাজীকে যে শুধু টাকার জোরে কাবু করা যায় না সেটা ফ্লু এবং এইডসের পেছনে ট্রিলিয়ন ডলার পানিতে পড়ার পরেও অনেকে মানতে চান না। তারা অবশ্য গোপনে মানেন তবে উপার্যন বন্ধ হবে বিধায় প্রকাশ্যে মানেন না !প্রাইয়নদের সম্পর্কে তো বিষয়টা আরও রহস্যময় ! এক সময় ব্রিটেনে ৬ লাখ গরুকে মরতে হয়েছে এই প্রাইয়নকে ঠেকাতে , মানুষকে ম্যাড কাউ অসুখ থেকে বাঁচাতে।
উপরের পোস্ট, মন্তব্য এবং আরো কিছু পোস্ট পড়ে নিজস্ব কিছু চিন্তা, চেতনা শেয়ার না করে পারছি না। এসব লেখায় মানবিকতার দৃষ্টিকোন থেকে প্রায়ই নিরামিষ ভোজি এবং মাংস ভক্ষকদের এক পর্যায়ে ফেলা হয়। বলা হয় নিরামিষ ভোজির পশুর প্রতি মায়া এক ধরণের ভণ্ডামী, কারণ তারাও বৃক্ষ হত্যা করে।আসলে নিরামিষ ভোজিরা ভণ্ড না যারা নিরামিষ ভোজিদের আমিষ ভোজির সাথে এক কাতারে ফেলেন তারাই ভণ্ড, এ বিষয়টি আগে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত- একজন মাংস ভক্ষক এর মাংসের যোগান দাতা প্রাণীটিকে বহু উদ্ভিদ হত্যা করে লালন পালন করতে হয় তার পর সেই প্রাণীটিকে হ্ত্যা করে মাংস ভক্ষক এর মাংসের যোগান দিতে হয়। অতএব একজন মাংস ভক্ষক পশু তো হত্যা করছেনই পরোক্ষ ভাবে প্রচুর উ্দ্ভিদও হত্যা করছেন। অথচ এই মাংস ভক্ষক যদি তার মাংসের যোগান দাতা প্রাণীটিকে উদ্ভিদ না খাইয়ে নিজে খেতেন তবে অপেক্ষাকৃত অনেক কম উদ্ভিদ হত্যা করতে হতো এবং অনেক কম মানুষকে অনাহারে থাকতো । যা উপরের পোস্ট পড়লেই স্পষ্ট হবে।
দ্বিতীয়ত- উদ্ভিদের প্রাণ আছে এ কথাটি মানুষ জানতে পেরেছে খুব বেশি দিন আগে নয়। তাছাড়া উদ্ভিদের স্নায়ুতন্ত্র সুসংগঠিত না হওয়ায় তাদেরও যণ্ত্রণার অনুভূতি প্রণীর মতই তীব্র কিন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তৃতীয়ত- একজন নিরামিষ ভোজি ব্যক্তি বৃক্ষ নিধন না করেও তার ফল খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারেন বা তিনি যদি খাদ্য শস্য খান (চাল, ডাল, আটা) তাহলেও বলা যায় না তিনি উদ্ভিদ হত্যা করে খাবার সংগ্রহ করছেন। কারণ বেশির ভাগ খাদ্য শস্য উৎপাদনকারি উদ্ভিদে্রই ফসল প্রদানের পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জীবন অবসান হয়।
চতুর্থত- প্রতিটি প্রাণীকেই জীবন ধারণের জন্য কোন না কোন ভাবে জীব হত্যা করতে হয়,এটাই প্রকৃিতর নিয়ম। এমতাবস্থায় আপেক্ষাকৃত কম জীব হত্যা করে বা যতটা সম্ভব দূরবর্তী( মানুষ থেকে) প্রজাতির জীব হত্যা করে জীবন ধারণ করাটাই অধিক মানবিক।
পরিশেষে বলতে হয় যে, একজন মানুষ খেকো (যদি থাকতো) মানুষ আর একজন পশু খেকো মানুষ কে যেমন মানবিকতার দৃষ্টিকোন থেকে এক পর্যায়ে ফেলা যায় না, অনুরুপ ভাবে একজন পশু খেকো মানুষ আর একজন উদ্ভিদ খেকো মানুষকেও মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে এক পর্যায়ে ফেলা যায় না।
@বিষন্নতা,
প্রথমেই বলি, আপনি যেভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, তা খুব প্রশংসনীয়। আসলে কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠা বা চাপিয়ে দেয়া এই পোস্টের লক্ষ্য নয়, মূলত আমাদের ভাবনাগুলোকে পরস্পরের সাথে শেয়ার করা এবং চিন্তার জগৎকে আরও ঋদ্ধ করাই এর লক্ষ্য।
তবে দুঃখজনক হলে আলোচনাটি যে মোড় নিয়েছে, তা এই পোস্ট চায়নি। ভেজিটেরিয়ান বনাম নন-ভেজিটেরিয়ান- এই বিতর্ক এই পোস্টের কাঙ্ক্ষিত নয়।
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, এই পোস্টে মাংস-খেকো/উদ্ভিদ খেকো সবারই দ্বিচারিতা (যা নজরে পড়েছে পোস্ট-কারকের) তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের খাদ্যভাস, হোক ভেজ, বা ননভেজ……নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস নেই পোস্ট লেখকের। জীবনের প্রয়োজনে, অভ্যাসের বশে খাও না, কিন্তু কেন কর দ্বিচারিতা…..এই হচ্ছে মূল প্রশ্ন এই পোস্টের, সকলের প্রতিই, ভেজ ও ননভেজ উভয়েরই…
উদ্ভিদের কি প্রাণ নেই, যে এটা খাওয়ার পরও ভেজরা নিজেদের মহৎ দাবী করে?? এই বহুল প্রচারিত ও প্রচলিত প্রশ্নটি, লক্ষ্য করলে দেখবেন, বিষন্নতা, যে মূল পোস্টে নেই। শুধু প্রতিফলন ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবেই কিছু বলা হয়েছে এ প্রশ্নে।
তাহলে ননভেজদের কি দ্বিচারিতা দেখানো হয়েছে পোস্টে?? আপনার জন্য সারসংক্ষেপ তুলে দিচ্ছি:
১.ভেজরা কি কারণে মাংস এভয়েড করে?? আপনি বলতে পারেন, অনেক অনেক মহৎ কারণ রয়েছে এর পেছনে। কিন্তু বাস্তবতা হল, যেখানে বিশ্বের প্রায় ৭ ভাগ মানুষ ভেজিটেরিয়ান, সেখানে ইন্ডিয়াতেই এই অনুপাত প্রায় তিরিশ শতাংশের কাছাকাছি। সুতরাং, মাংস না খাওয়ার পেছনে যে ঈশ্বরকে খুশী করাই আসল কারণ, অন্তত মেজরিটি ভেজদের জন্য, তা আশা করি, আর ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আর এইখানেই আসে দ্বিচারিতার প্রশ্ন। একজন ঈশ্বরকে খুশী করা ভেজ যদি আরেক জন ঈশ্বরকে খুশী করা ননভেজকে বিদ্রূপের তীর ছুড়ে দেয় সৃষ্টিকর্তার নামে পশু উৎসর্গের জন্য, তখন ব্যাপারটি দ্বিচারিতা হয়ে দাঁড়ায় না কি?? একজন ভেজের যদি ঈশ্বরকে খুশী করার অধিকার থাকে, একজন ননভেজের নয় কেন??
২.ধরে নিচ্ছি, আপনার মত মহৎ উদ্দেশ্যে মাংস বর্জনকারী ভেজরাই পৃথিবীতে মেজরিটি ভেজ। তাহলে আর একটি দ্বিচারিতার প্রসঙ্গ উঠবেই। কিছু মনে করবেন না ভাই, আপনাকেই সরাসরি প্রশ্ন করছি, আপনি জুতো পড়েন তো? বা উলের জ্যাকেট গায়ে চাপান তো? মুক্তমনা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে, তাই প্রশ্নটি করলাম। দয়া করে পারসোনালি নেবেন না। এই প্রশ্নটির উদ্দেশ্য, আপনাকে বিদ্রূপ করা নয়। প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে আমাদের মগজকে ঝালাই করার লক্ষেই এর অবতারণা।
এ কথা দিয়ে কি বোঝাতে চাইলেন? উদ্ভিদের প্রাণ থাকার কথা জানলে, ভেজদের জন্ম হত না?? ভেজদের জন্ম তাহলে সায়েন্সের সাথে সম্পর্কিত? সায়েন্স বলেছিল, উদ্ভিদের প্রাণ নেই, আর তাই দুনিয়াব্যাপি ভেজজাতির জন্ম হইয়াছিল??
দেখুন, আপনি ভাল করেই জানেন, সায়েন্সের সাথে নয়, বরং ধর্মের সাথেই রয়েছে ভেজ জাতির জন্মের আদি ইতিহাস।
এই না বললেন, উদ্ভিদের প্রাণ আছে – এটি আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল? তাহলে, হঠাৎ উদ্ভিদের প্রাণকে দুর্বল করে দেখানোর প্রয়াস কেন?? দেখুন, ভেজ যুক্তিগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার কি বিপুল আগ্রহ আপনার!! মুক্তমনা কিন্তু ঠিক এরই বিরোধী। আপনার যদি কোন বিশ্বাস থাকে আর সে বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা হয়, আপনি হয় পালটা চ্যালেঞ্জ করুন, নইলে মেনে নিন, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস আঁকড়ে থাকবেন না। আর মুক্তমনা এইটাই চায়। কামনা করে, তবে অবশ্যই জোর করে না।
আর যে কষ্টের অনুভূতির কথা বলেন, সেখানে নন-ভেজদেরও তো যুক্তি আছে। পোস্ট থেকেই তুলে দিচ্ছি:
তাহলে বুঝুন, আপনি একাই কষ্টের অনুভূতি নিয়ে চিন্তা করেন না। ননভেজরাও করে!
কিন্তু এই পোস্ট বলছে, মানুষের মানবিকতা পাশবিকতা থেকে আলাদা কিছু নয়, সভ্য-জ্ঞান দিয়ে নিজের পশুত্বকে আবডাল করার একটি পদ্ধতি। বাঘের যেমন থাকতে পারে বাঘবিকতা, তেমনি মানুষের আছে মানবিকতা। আদতে মানুষও পশুর মতই, খাদ্য সংগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব করার তার ইচ্ছা পশুদের থেকে পৃথক নয়। হোক সে ভেজ, বা ননভেজ। সবারই রয়েছে পাশবিকতা। ভেজদের মহৎ ভাবার কোন কারণ নেই। তাদের ভেজ-পনা ভেজালে পরিপূর্ণ। ঈশ্বরে বিশ্বাস বা বংশগত অভ্যাস বা সংস্কৃতি থেকেই এর উদয়। ভেজরা যদি পশুর মায়াতেই পশুমাংস পরিহার করে, তাহলে তাদের হাত পশু ত দূরের কথা, এমনকি মানুষের রক্তে রক্তাক্ত হতে দেখা যায় কেন??
যে ভেজ, সে ভেজ থাকুক। যে নন-ভেজ, সে তাই থাকুক। কোন দলের পক্ষ নেয়া হয়নি এখানে। শুধু বলা হচ্ছে, দয়া করে, দ্বিচারিতাগুলি পরিহার করুন। আপনি ভেজ বা ননভেজ যাই হন না কেন, এজন্য আপনি নিজেকে মহৎ দাবী করতে পারেন না বা পশুদের প্রতি মায়াদার মানবিক প্রমাণ করতে পারে না।
আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছি, বিষন্নতা। আপনার নাম বিষন্নতা কেন, জানতে মন চাইছে।
@কাজি মামুন,
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রথমেই কিছু বিষয় বলে রাখা প্রয়োজন। যদিও বিষয়টি মূখ্য নয় তারপরও বলে রাখি আমি চল্লিশোর্ধ একজন পুরুষ। জীবনের প্রায় বিশ বছর বিষন্নতা আমার নিত্য সঙ্গি বলে “বিষন্নতা” নামটি বেছে নিয়েছি। আমার এর আগের মন্তব্যেও বলেছিলেন আপনি আমার উত্তরের অপেক্ষায় আছেন, সেখানে আপনার মন্তব্যের প্রত্যুত্তর আমি দিয়েছি, কিন্তু তা আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আমি নিজে মুক্তমনা কিনা জানিনা তবে মুক্তমনা হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে নিজের বিশ্বাস বা যুক্তির উপর সন্দেহ পোষণ করা যা আমি সব সময়ই করে থাকে।
আপনার সব যুক্তির জবাব দিতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে, তাছাড়া আপনার বক্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে আপনি কিছুটা উত্তেজিত এ অবস্থায় আর যুক্তি তর্ক করা চলে না। ভেজদের জন্মের আদি ইতিহাস সায়েন্স নয় বরং ধর্মের সাথে সম্পর্কিত এ কথা আমি আস্বীকার করিনা।”জীব হত্যা মহাপাপ” মূলতঃ ধর্মের এ বাণী থেকেই আদি ভেজেটেরিয়ানের উৎপত্তি। কিন্তু বিজ্ঞান যদি তখনই বলতো যে বৃক্ষেরও প্রাণ আছে তবে কি ধর্মের ঐ বাণীর আলোকে আর ভেজদের উৎপত্তি হতো? তবে বর্তমান ভেজদের উৎপত্তি সায়েন্সের আলোকে।
উপরে আমি বলেছি আমি মাংস খাই না, তবে মাছ খাই, তাই আমি ভেজেটারিয়ান নই। তাই নিজেকে শ্রেষ্ঠ দেখানের জন্য এ যুক্তি তর্কের অবতারণা নয়।বরং যাদেরকে আমি মানবতার দৃষ্টিকোন থেকে আমার নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করি তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য এ যুক্তি তর্কের অবতারণা।
আমি হয়তো মুক্তমনা, তবে এতটা মুক্তমনা নই যে কোন মানুষের ভাল কাজের পেছনে ঈশ্বর আছে না সায়েন্স আছে তা আগে খুঁজে বেড়াবো। মাদার তেরেসা দুস্থ মানুষের সেবা করেছেন এটাই আমার কাছে মূখ্য, তিনি কাজগুলো মানবতার দিকে চেয়ে করেছেন না ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য করেছেন সেটার খোঁজ করা আমার কাছে নিত্যান্তই গৌন।
ধন্যবাদ।
মুক্তমনায় মামুন বাবুর সেরা লেখা মনে হয় পাওয়া গেল।
নৈতিকতা, মানবতা, নিষ্ঠুররা…সোজা কথায় মূল্যবোধ এসব কিছুর সংজ্ঞাই বিবর্তনশীল এবং আপেক্ষিক। সোজা কথায় মানুষ নিজ স্বার্থের সাথে এসব কিছু নিয়েই কম্প্রোমাইজ করে একটা মাঝামাঝি অবস্থান নেয়। সত্য হল স্বার্থপরতা ছাড়া বাঁচার কোন পথ নাই। ফুড চেইনের নিয়মই তাই, বড় শক্তিশালী প্রানী ছোট দূর্বলদের খেয়ে বাঁচবে। প্রানধারনের জন্য যে মাত্রাতেই হোক অপর কারো প্রানহানী কোন না কোন ভাবে ঘটাতে হয়ই। এর কোন বিকল্প এখনো বার হয়নি। ভেজিটেরিয়ান অবশ্যই প্রানীর খাচ্ছে না তবে ক্ষুদ্র হলেও অন্য কিছুর জীবন সেও ঠিকই নিতে বাধ্য।
আমেরিকার লোকে মহানন্দে গোমাংস খায়, কিন্তু কোরিয়ানরা কুকুর খায় শুনলে অনেক কুকুর প্রিয় আমেরিকান ইউরোপীয়ান অজ্ঞান হবার দশা হয়।
আজকের দিনে মোটামুটি বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ধর্মীয় কারনে বলি দেওয়া সমর্থন করে না, যদিও তাদের অনেকেই মাংসভোজী। মাংসের জন্য পশু হত্যা জায়েজ করতে আমরা বলে থাকি যে পশু তো পশুই, জন্মই হয়েছে মানুষের কাজে লাগার জন্য, সর্বোপরি পশুদের আবেগ/অনুভূতি (যন্ত্রনা নয়) এসব নেই। আজকাল অনেক প্রানীর ক্ষেত্রেই প্রমান হচ্ছে যে পশুদের বুদ্ধিবৃত্তি যতটা নিম্নমানের মনে করা হত আদতে ততটা নিম্ন মানের অনেক পশুরই নয়।
মাংসখেকোদের ভোগবাদের ভয়াবহ যে চিত্র এখানে এসেছে তার যথাযথ মানবিক বিকল্প কি হতে পারে? আমেরিকান বা ব্রিটিশরা রাতারাতি ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেলে কি অধিকতর কোন মানবীয় সমাধান হবে? এটা ঠিক যে বহু অবলা প্রানীর প্রান বাঁচবে। সেটা মন্দ না। তবে তারা ভেজিটেরিয়ান হলেও কি তাদের উতপাদিত উদ্ভিদজাত উদ্ধৃত শস্য তারা গরীব দেশগুলিতে বিনা মাগনায় পাঠিয়ে দেবে? পূঁজিবাদের সহজ নিয়মেই সেটা দেবে না।
ছবিতে যেই বার্গারের ছবি দিছেন দেখে আমারই মনে হচ্ছে এখনই দোকানে দৌড় দেই যদিও বস্তুটি আমার সে পরিমান পছন্দের নয়।
@আদিল ভাই,
আপনার মন্তব্য আশা করেছিলাম, কারণ হল, আপনার উৎসাহ কখনো এই অধমের পিছু ছাড়ে না। উৎসাহবৃষ্টির জন্য মুক্তমনার সুনাম রয়েছে, আর আপনি সেই বৃষ্টির অন্যতম উৎপাদক।
কোট করার জন্য আপনার মন্তব্যটি ভালমত অনুসন্ধান করছিলাম, কিন্তু দেখলাম, পুরো মন্তব্যটিই কোট করতে হয় সেক্ষেত্রে। ছোট অথচ সুন্দর এই মন্তব্যটি লেখাটির মূল সুর শুধু ধারণই করেনি, একে সমৃদ্ধ করেছে বহুগুণে।
ভেজিটিরিয়ান হলেই অবলা প্রানীর প্রাণ বাঁচবে, নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে, আদিল ভাই??? অবলা প্রাণ কি শুধু খাদ্য উৎপাদনেই ব্যয় হচ্ছে নাকি? ভেজিটিরিয়িনরা শাল-জুতো পরেন না?? আরও অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে ভেজিটিরিয়ানদের ভোগ থেকে বেঁচে যাওয়া পশুগুলোকে ঠিকই কাজে লাগান হবে।
খুব ভাল একটা পয়েন্ট এনেছেন, আদিল ভাই। সে জন্যই পূঁজিবাদ আর পশুবাদে আমি কোন পার্থক্য দেখি না।
@কাজি মামুন,
প্রসংশা শুনলে সকলেরই ভাল লাগে, আমারো লাগেঃ)। আমার হাতে সাহিত্য ফাহিত্য একেবারেই আসে না, নইলে আরো যে কত কি লিখতাম। এমন লেখা পড়লে তবেই না মুক্তমনার ইউনিকনেস বোঝা যায়।
কথা সত্য। পশুকে মহা সমারোহে উতপাদন, লালন পালনের মূল উদ্দেশ্য কেবল খাদ্য নয়, অন্য আরো বহু বিলাস ব্যসনও আছে যেগুলি আরো অনেক বেশী বিরক্তির উদ্রেক যোগায়। আমার মন আসলে ছবির বার্গারের মধ্যেই পড়েছিল, অন্য কিছু মাথায় আসেনি। যাকে বলে মাথা আউলা অবস্থায় ছিল।
একটি শুধু লিঙ্ক দেই। একবার শুধু একবার ঢূঁ মারেন, মানব সভ্যতার ওপর ঘৃনা যদি না আসে তবে বলতে হবে আধুনিক সভ্যতাও আমাদের কিছুই শেখাতে পারেনি। আপনি যেই দেশে আছেন সেই দেশকে ধরা হয় বর্তমান বিশ্বের মানবাধিকার স্কেলে সেরাদের অন্যতম। সেই কানাডার লোকদের কাজকারবার দেখেন। চীনাদের আর কি দোষ দেব।
এই বিলাস ব্যাসনের স্বভাব, লোভ কিভাবে নিবৃত্ত করা সম্ভব? আমি আশাবাদী একদিন বিজ্ঞান হয়ত যে কারনে কিছু মানুষ লোভী হয়, নির্দয় হয় এবং বাকিরা নির্লিপ্ত হয় সে কারনগুলি বার করতে পারবে।
– ব্যাপারটা বেশ জটিল। পুঁজিবাদকে যতই গাল দেই, সকলেই তার কাছেই আত্মসমপর্ন করেই তৃপ্তি পাই, বলতে গেলে মুখিয়ে থাকি। পূঁজিবাদ আমি যতটা বুঝি যারা যোগ্য (বলা ভাল প্রতিযোগিতায় যারা এগিয়ে থাকতে পারে) তাদের নিরাপত্তা দেয়, এই মোটিভেশনের মার নেই। এটা অনেকটা সার্ভাইভাল ফর দ্যা ফিটেষ্টের মত। সাম্যবাদ শুনতে যতই ভাল লাগুক আসলে অবাস্তব। পূজিবাদের মন্দ দিক বহু আছে, তার একটি হল ফাউ বিলাস ব্যাসন……যার সাক্ষাত বলি হচ্ছে বহু প্রানী, এমনকি বহু মানূষ। কথা হল এর থেকে মুক্তি কিভাবে সম্ভব? আমি সোজা সমাধান দেখি না, একমাত্র ধর্মওয়ালারা দাবী করে তাদের হাতেই সমাধান আছে। তাদের সমাধানের উপায় আলোচনার যোগ্যও নয়। এ প্রশ্ন ভাবতেই হবে বেশী বেশী করে।
@আদিল মাহমুদ,
তার দরকার কি ভাই? এমনিতেই যা লেখেন সেইটাই বা কম কি? সাহিত্য আপনি লিখতে শুরু করলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তারকা খ্যাতি পেয়ে যাবেন, সেক্ষেত্রে আমরা এই আদিল ভাইকে হারাব। তারকারা সাধারন মানুষের কাছে থাকতে পারে না। তারচেয়ে বরং আমাদের কাছেই থাকুন। (F)
একটা প্রশ্ন করি, আপনার সেই সিরিজটা কি সময়ের অভাবে আর এগিয়ে নিতে পারছেন না? মানে ধর্ম শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠের কথা বলছি। সিরিজটা দারুন উপভোগ করছিলাম, তবে ৩য় পর্ব পড়ে থেমে গেছি। কারন ৫ম পর্যন্ত পড়লে পরের গুলার জন্য অপেক্ষা করাটা কষ্টকর হবে। প্লিজ সময় করে লেখাটা শেষ করবেন কিন্তু। একটা বিশেষ অনুরোধ আপনার প্রতি।
@অর্ফিউস,
কিছু কথা থাক না গোপন……
আচ্ছা আদিল ভাই, গোপনই থাকুক তাহলে 🙂
@কাজি মামুন,
ভাই আমিও পুঁজিবাদ কে পছন্দ করিনা একেবারেই। তবু সমাজতন্ত্রীদের মতও হতে পারি না। এটাকে আমার বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে না।সেক্ষেত্রে আমি এই দুইয়ের মাঝে যেটা আছে, সেইটাকেই পুঁজিবাদের বিকল্প এবং ভাল বিকল্প মনে করি। জানি না আমার চিন্তা ধারা সঠিক না ভুল!! তবু সমাজতন্ত্র আমার কেন জানি হজম হয় না, যদিও এই জিনিসের প্রতি আমার আগে একটা মোহ ছিল।
আর আপনার লেখাটা ভাল লেগেছে মানে বিশ্লেষণটা আর কি। তবে মন্তব্য করি নাই এই বিষয়ে কারন ওই এক্টাই দেখেন আদিল ভাইকে বলেছি। গরু ভুনা। আশা করি মনে কিছু নিবেন না!! ভাল কথা একটা প্রশ্ন করি? আপনি কি ভেজিটেরিয়ান? শুধুই কৌতূহল বশে প্রশ্নটা করলাম।
@আদিল ভাই,
ভাইরে, সারা দুনিয়ার মানুষ ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেলেও মনে হয় আমি হতে পারব না। আমার প্রিয় খাবার হল ভাত আর গরুর মাংস ভুনা। আপনার প্রিয় খাবার কি জানাবেন।
তবে আমার এই মন্তব্য পড়লে মামুন ভাই কষ্ট পেতে পারেন। কিন্তু কি করব বলেন, মাংস আমাকে কম পক্ষে সপ্তাহে দুদিন হলেও ( এটা মিনিমাম আর কি ) খেতেই হবে, মানে গরু ভুনা আর কি!! 🙁
@অর্ফিউস,
মাংস জাতীয় যাইই কিছু হোক সবই আমার প্রিয় খাদ্য। মামুন মিয়ার এই হৃদয়গ্রাহী লেখা পড়ার পর কাল রাতেই বাসার কাছের হোটেলে গিয়ে ষ্টেক খেয়ে আসছি আঁশ মিটায়।
@আদিল মাহমুদ, মাশাল্লাহ আদিল ভাই :-p
কাজি মামুন ভাই,
আগেই ডিসক্লেইমার দিয়ে নেই। আপনার লেখা সাধারণতঃ ভাল লাগে, তবে কেবল “ভাল লাগে”-টাইপ মন্তব্য করতে ইচ্ছে হয় না বলে মন্তব্য করা হয় না। আজকে মন্তব্য না করে পারছি না, কারণ আপনার লেখার মূল বক্তব্য ঠিক বুঝতে পারিনি। অন্যভাবে নিবেন না যেন। 🙂
হ্যাঁ, সফিক ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে আপনার মতামত দেখেছি – সভ্যতার দ্বিচারিতা দেখাতে চেয়েছেন।
কিন্তু এই দ্বিচারিতা দেখাতে গিয়ে কিছু কিছু উদাহরণ টেনে এনেছেন, যেগুলো আসলেই দ্বিচারিতা কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। যেমন – ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ৬ লাখ গবাদিপশু নিধন। আমরা সাধারণতঃ পশু রক্ষাকে সভ্যতা বলি, এর সাপেক্ষে এ ঘটনাকে কি কোনভাবে অসভ্যতা বলতে চান? এতসব বিতর্কের আগে ঠিক করে সভ্যতার সংজ্ঞা দেয়া জরুরি। সভ্যতাকে যদি কেবলই পশু নিধনের মাপকাঠি দিয়ে মাপা হয়, তাহলে ৬ লাখ পশুনিধনকে অসভ্যতা বলা যায় বৈকি। কিন্তু যদি তা না হয় (আমি নিশ্চিত আপনি পশুনিধনকেই একমাত্র মাপকাঠি মনে করেন না), সভ্যতার মাপকাঠি হিসেবে মানুষের টিকে থাকার গুরুত্ব যদি বেশি থাকে, তাহলে কিন্তু একে অসভ্যতা বলা যাবে না। একই যুক্তি অনুসারে, এ ঘটনাকে সভ্যতার দ্বিচারিতাও বলা যাবে না কিন্তু। এখন তাহলে প্রশ্ন, সভ্যতার মাপকাঠি কি?
লেখাটা পড়তে পড়তে আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় এসেছিল। কিন্তু সব মনে নেই এখন। এছাড়া একবারে সব বলার মানেও নেই। হয়তো সে প্রসংগগুলো প্রাসংগিকভাবেই চলে আসবে। আপাততঃ আরেকটা মৌলিক প্রশ্ন করি- পাশবিকতা আর মানবিকতার মধ্যে পার্থক্য করা হবে কিভাবে? লেখা পড়ে মনে হলো – পাশবিকতা আর মানবিকতা দুই মেরুর জিনিস। অথচ নির্মম সত্য হলো, মানুষও কিন্তু এক ধরনের পশু। মানুষ আগে পশুশ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত, এরপর মানুষ হিসাবে বিশেষ শ্রেণীভুক্ত। প্রশ্ন হলো, মানুষ এবং মানুষের নীতিবোধ কি কেবলই মানবিকতা দ্বারা বিচার করা হবে? নাকি এর মধ্যে পাশবিকতাও থাকবে? বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রাণিহত্যা কি পাশবিকতা নাকি মানবিকতা? ক্ষুধা নিবারণের প্রয়োজনে প্রাণিহত্যা কতটুকু পাশবিক আর কতটুকু মানবিক? প্রাণিহত্যা যদি পাশবিক হয়, উদ্ভিদ হত্যাও কি পাশবিক নয়? না হলে, কেন নয়? উভয়েইতো জীব। আরো জেনারেলাইজ করা যায়, তবে, আপাততঃ এখানেই থামছি।
@প্রতিফলন ভাই,
প্রথমেই বলি, আপনার মন্তব্য খুব করে আশা করছিলাম। এবং আপনার যে অনেক প্রশ্নও থাকবে, তাও আশা করেছিলাম। কারণ আপনাকে বরাবরই খুব যুক্তিশীল মনে হয়েছে এবং অনেকের মত আমিও সেই কারণে আপনার ভক্ত।
আসলে ভাইয়া আমি কিন্তু গবেষক নই। আমি নিজেও যখন এই বিষয়ে পড়ছিলাম, অনেক অনেক প্রশ্নের উদয় হয়েছিল মাথায়। এবং অনেক সংশয়। বিষয়গুলো এমন, যে খুব সুনির্দিষ্ট একটা সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। লেখার শেষ মুহূর্তেও অনেক নতুন চিন্তা মাথায় এসেছে এবং আগের যুক্তিগুলো উল্টে-পাল্টে দেখতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত একটি বটম লাইনে এসেছি মনে হয়, যা পরে বলছি। তবে আর আগে বলে নেই, যেহেতু আমি কোন গবেষক নই, আমার বটম লাইনও চূড়ান্ত কিছু নয়, এবং সেটা নিয়ে আঁকড়ে পড়ে থাকব, ততটা নির্বোধও নই। আসলে এ ধরণের লেখাগুলির মূল উদ্দেশ্য নিজের ভাবনাগুলো শেয়ার করা, পাঠকদের মতামত থেকে নিজেকে আরও ঋদ্ধ করা, প্রয়োজনবোধে নিজেকে শুধরে নেয়া। বিজ্ঞান গবেষণার মত একটি বিষয়কে প্রমাণ করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠা করা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়।
ভাই, এখানেই আমার ভাবনাটি পরিষ্কার হবে মনে হয়। মানুষের টিকে থাকার গুরুত্ব বেশি, কারণ এই সভ্যতা মানুষের তৈরি। আপনি সভ্যতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু সে সংজ্ঞা মানুষের টিকে থাকার গুরুত্ব, তার চাওয়া-পাওয়া এগুলোকে কেন্দ্র করেই নির্ধারিত হয়, তাই নয় কি? মানুষ যদি চায় যে, আর কোন প্রাণী বিলুপ্ত হতে দেয়া যাবে না, তাহলে তাই সভ্যতা। আবার মানুষ যদি চায়, একটি ঝকঝকে শহর বানাতে হবে মানুষের সর্বাত্মক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এমনকি হাজার হাজার বন জংগল বলি দিয়ে, তাহলে তাই সভ্যতা। মানুষ যদি মনে করে, ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করতে আক্রান্ত ফার্মের সব পশুকে আগুনে পুড়িয়ে মারলেই হবে না, সঙ্গে ছাই করে দিতে হবে আশেপাশের অনাক্রান্ত ফার্মগুলোকেও, তাহলে তাই সভ্যতা। মানুষ যদি মনে করে, একটি প্রাণঘাতী রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে প্রয়োজনে হাজার হাজার প্রাণী বলি দিতে হবে, তাহলে তাই সভ্যতা। মানুষ এভাবে সভ্যতার সংজ্ঞা নিজেদের প্রয়োজন মাফিক উল্টে-পাল্টে নেয় আর কি!
না, লেখাটি তা বলতে চায়নি, প্রতিফলন ভাই। মানুষ অবশ্য পাশবিকতা আর মানবিকতাকে আলাদা করতে পছন্দ করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করতে। কিন্তু এই পোস্ট যা বলতে চেয়েছে, তা হল, মানুষও একটি প্রাণী, তার সাথে একটি প্রাণীর আসলেই পার্থক্য নেই, মানুষের মানবিকতা একটি শব্দই কেবল, যেমন ডাইনোসর যদি আজও পৃথিবীর কিং থাকত, তাদের থাকত ডাইনোবিকতা, বাঘের বেলায় হয়ত থাকত বাঘবিকতা…….আদতে, মানবিকতা আসলে পাশবিকতাই।
পুরোটাই পাশবিক। তবে মানুষ ক্ষুধার জন্য প্রাণীহত্যা করলে একে মানবিক বলতে পারেন, আর বাঘ করলে বলতে বাঘবিক। কিন্তু খেয়াল করুন, উভয়ই পাশবিক।
কেন নয়? এখানেই তো আরও একটি সভ্যতা-কেন্দ্রিক দ্বিচারিতা আবিষ্কার করা যায়, যা লেখায় আসেনি। তাই বিষয়টি উল্লেখ করে ভালই করেছেন, প্রতিফলন ভাই।
মানুষ নিজের খাদ্যের প্রয়োজনে উদ্ভিদ হত্যা করতে পারে, কিন্তু সেখানে নির্মমতা দেখতে পায় না। কারণ উদ্ভিদগুলো কথা বলতে পারে না, উদ্ভিদের রক্ত দৃশ্যমান হয় না, কান্নাজড়িত চিৎকার শুনতে পাওয়া যায় না। তাই সভ্য মানুষের দাবি, উদ্ভিদ হত্যা কর, কিন্তু পশু হত্যা কর না——–আরেকটা দ্বিচারিতা।
দেখুন, প্রতিফলন ভাই, মানুষ নিজের প্রয়োজনে উদ্ভিদ খায়, মাছ খায়, পশু খায়। শুধু তাই না, উলের শাল গায়ে দেয়, মার্কেটগুলোতে অরিজিনাল চামড়ার জুতো না পেলে সে ভীষণ মন খারাপ করে। এভাবে সমস্ত মৌলিক চাহিদা নিবারণে তাকে হত্যা করতে হয়। আমি বলছি না, এগুলো ভাল বা মন্দ। এগুলোর ভাল বা মন্দত্বের বিচারের চেয়েও বড় প্রশ্ন হল, এগুলো মানুষের জন্য প্রয়োজন। এ নিয়ে এই পোস্টের কোন প্রশ্ন নেই। এই পোস্টের আপত্তি হল, মানুষের দ্বিচারিতা। মানুষ পশু খাচ্ছে, গায়ে দিচ্ছে, শহর বানাচ্ছে, সব করছে, তবু বলছে, পশু হত্যা নির্মম বা অমানবিক। এগুলি দ্বিচারিতা ছাড়া আর কি?
মানুষ যা করছে, বেঁচে থাকার তাগিদে করছে। যেকোন পশু বা প্রাণীই তাই করে। এতে আপত্তি নেই। আপত্তি হল, সে ইনিয়ে-বিনিয়ে নিজের পশুত্বকে খালি আড়াল করতে চায়, অস্বীকার করতে চায়। মানুষের সভ্য জ্ঞান, বুদ্ধি আর উন্নত মগজ এই ব্যাপারে ভূমিকা রাখছে মনে হয়। এই উন্নত মগজ তাকে হাজার হাজার যুক্তি সাপ্লাই দেয় নিজের পশুত্বকে সভ্যতার চাদরে ঢেকে রাখার জন্য।
মানুষ যে নিজেকে পশু হিসেবে মানতে চায় না, নিজেকে যে সবার সেরা ভাবতে চায়, এটাও কি পশুত্বের একটি লক্ষণ নয়??????
অনুসন্ধান, যুক্তি, নৈতিকতা এবং আবেগের সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ লেখাটা বেশ ভাল লাগলো। খাদ্য চক্রের দোহাইটা যদিও সহ্য করা যায় কিন্তু গেম-কিলিং এবং পূণ্য অর্জনের খাতিরে পশুহত্যা পাশবিক স্বভাবের চেয়ে গর্হিত। কারন পশুরা কখনও খাদ্যের প্রয়োজন ছাড়া পশু হত্যা করে না।
ছিঁচকে চোর আর পেশাদার খুনি দু’জনই আপরাধী এ কথা সত্য, তবে তাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য হল আপরাধের মাত্রায় (degree of offense) । আপনার এ লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে হয় আপনার মধ্যে “মাত্রা”
বোধ কম, অথবা এ বিষয়টি ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছেন।ধন্যবাদ।
@বিষন্নতা,
কে ছিঁচকে চোর? কে পেশাদার খুনি?? আপনার কথায় প্রতীয়মান হচ্ছে, আপনি উৎসব করে পশু-হত্যাকারীদের ‘পেশাদার খুনি’ আর রেস্টুরেন্ট বা বিয়েবাড়িতে মাংস দিয়ে উদরপূর্তকারীদের ‘ছিঁচকে চোর’ ঠাওরাচ্ছেন………..সাধু! সাধু! আসলে আমাদের এই সভ্য ভাবনাগুলোকে আঘাত করতেই এই পোস্টের অবতারণা……..
আচ্ছা, ধরুন, আপনি আপনার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মারতে চাইছেন, কিন্তু একজন সুসভ্য, স্ট্যাটাস-ওয়ালা লোক হিসেবে আপনি নিজের হাতে খুনের মত অসভ্য কম্মটি করতে পারেন না। তাই নিয়োগ দিলেন একজন ‘পেশাদার খুনি’। সে আপনার হয়ে খুনের কাজটি করে দিল। এখন আপনি হলেন ‘ছিঁচকে চোর’, আর সে হল ‘পেশাদার খুনি’, তাই তো??
পশুহত্যা অমানবিক মনে হয়, রক্ত, ছিন্ন-ভিন্ন নাড়ি-ভুঁড়ি দেখলে গা গুলিয়ে যায়, তাহলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন না কেন??? আপনি মাংস খাবেন মৌজ করে, আর আর একজন মানুষ আপনার চোখের আবডালে গরু কাটবে, ব্যাপারটা দারুণ, তাই না???? আপনার সভ্যতাও টিকে থাকল, আর মাংসের মত উপাদেয় খাবারও পেটে ঢোকাতে পারলেন, বেশ তো!!
ভেবে দেখুন, আপনি আপনার রসনাকে তৃপ্ত করার জন্য একজন খুনি নিয়োগ করেছেন কিন্তু, আর সে লোকটিকে নাম দিয়েছেন কসাই, তাকে দিয়ে আপনিই কিন্তু হত্যা করাচ্ছেন………আশ্চর্য হল, এই আপনিই, যিনি কিনা খুনির মন্ত্রণাদাতা, ঐ লোকটিকে কসাই গালি দিয়ে বেশ বাহবা কুড়োবেন।
মাংস-খেকোদের জন্যই দুনিয়ায় অসংখ্য পশু খামার গড়ে উঠেছে, তাদের জন্য কি অকল্পনীয় অর্থ আর সম্পদ ব্যয় হয়, তা পোস্টে দেয়া পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন। মাংস-খেকোরা যদি দ্বিচারিতা ত্যাগ করে মাংসভোজী কিছুটা কমাত, তাহলে আফ্রিকার কিছু শিশু অন্তত বাঁচার সুযোগ পেত।
আর আমার মনে হয়েছে, আপনার বোঝার ক্ষমতা কম। এই পোস্টে মাংস খাওয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন অবস্থান নেয়া হয়নি, শুধু পশু হত্যা ও মাংস খাওয়া কেন্দ্রিক দ্বিচারতিগুলো দেখানো হয়েছে। পারলে সফিক ভাইয়ের করা কমেন্টের উত্তরে চোখ বুলান, ওখানে পোস্টের মূল কথাগুলো সংক্ষেপে লেখা হয়েছে।
যাহোক, আপনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব পোস্টটি পাঠের জন্য এবং মন্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্যের জবাবে আমি যা লিখেছি, তার উদ্দেশ্য আপনার প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ নয়। আসলে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হোক, তেমনটাই চাইছিলাম, আর আপনি আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে আবারো ধন্যবাদ।
আপনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।
@কাজি মামুন,
মন্তব্যের জবাব দেওয়ায় ধন্যবাদ। আপনি উপরে যে উদাহরণটি দিলেন সেটি এ বিষয়ে ঠিক জুতসই মনে হল না। কারণ একজন ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করা অপিরহার্য নয় বা শত সহস্র যুগের প্রচলিত অভ্যাসের অংশ নয়। এখানে মাংস খাওয়ার ব্যাপারে মানুষের আদি অভ্যাস এবং ফুড চেইনের বিষয়টি স্মরণ রাখা প্রয়োজন, তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে মাংস খাওয়া বন্ধ করে পশু হত্যার (উৎসব করে পশু হত্যা নয়) বিপক্ষে কথা বললে বিষয়টি অধিক নৈতিক হয়।কিন্তু মাংস খেয়েও কেউ যদি উৎসব করে পশু হত্যাকে (সেটা কুরবানি, বলি বা শিকার যা’ই হোক না কেন) অনৈতিক বলেন তাকে কি দ্বিচারিতা বলা যায়? একটি উদাহরণ দেই,
ধরেন একজন খুনির আপনি মৃত্যুদণ্ড চাচ্ছেন । সরকার সে খুনিকে আপনার হাতে তুলে দিয়ে বলল একে উৎসব করে হত্যা কর। তখন আপনি কি একে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত বলবেন, না বিশ্বের কোন বিবেক বান মানুষ একে সঠিক সিদ্ধান্ত বলবে?
সভ্য জগতের সকল দেশেই খুনির মৃত্যুদণ্ড (যদিও শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড থাকা উচিত না অনুচিত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ) কার্যকর করা হয় লোক চক্ষুর অন্তরালে এবং পেশাদার ব্যক্তি দ্বারা। এটাই সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত সভ্য পন্থা।
সমাজে কিছু কাজ থাকে যে গুলো প্রয়োজন, কিন্তু নিষ্ঠুর (যেমন জল্লাদ, বা কসাইয়ের কাজ), আর এ নিষ্ঠুর কাজ গুলো সমাজের সকলে না করে যদি নিদির্ষ্ট কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে করানোর কথা বলা হয় তাহলে কি এটা দ্বিচারিতা হবে, না সমাজের জন্য ক্ষতিকর হবে?
এখানে উল্লেখ্য যে আমি মাংস ভক্ষণ করি না। ধন্যবাদ।
@বিষন্নতা,
সভ্য জগতের সকল দেশে মৃত্যুদণ্ডই নেই।
@মামুন,
গণহত্যায় না গোহত্যায়!
@গীতাদি,
অধমের খুব কম পোস্ট আছে যা আপনার উপস্থিতিতে ধন্য হয়নি……তাই এই পোস্টে আপনাকে না দেখে হতাশ হইনি, বললে মিথ্যে বলা হবে। যা হোক, শেষ পর্যন্ত আসার জন্য ধন্যবাদ, দিদি।
চমৎকার বলেছেন, দিদি! এই পোস্ট যে ‘ভেজ বনাম ননভেজ’ টাইপের বিতর্ককে কেন্দ্র করে লেখা হয়নি, বরং মানুষের দ্বিচারিতাকে টার্গেট করা হয়েছে (ভেজ, ননভেজ নির্বিচারে), তা শেষ পর্যন্ত সবাইকে বোঝাতে পেরেছি কিনা জানিনা। মানুষের দ্বিচারিতা অনুসন্ধান করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছি, মানুষ হোক ভেজ বা ননভেজ, কোনভাবেই আদর্শ দেখাতে পারে না, তার এমনটা হওয়ার পেছনে, ভেজ-ননভেজদের কোন নৈতিকতা থাকতে পারে না, এখানে আছে শুধু জৈবিক/সামাজিক/নৃতাত্বিক তাগিদ, এ ছাড়া আর কিছু নেই। মানুষ শেষ বিচারে পশুদের মত প্রাণীই, কেউ বা তৃণভোজী, কেউ বা মাংশাহারী! পশুদের আছে পাশবিকতা, মানুষের আছে মানবিকতা এবং চুড়ান্ত বিচারে পাশবিকতা মানুষেরই অপেক্ষাকৃত বড় মগজের অবদান, নিজের পশুত্বকে কৃষ্টি-কালচার-নীতি-মানবিকতা নামক ভেগ টার্মগুলির মোড়কে ঢাকার একটি চেষ্টা মাত্র!
ইচ্ছে করেই লিখেছি, দিদি!!! মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ বলে কি তার বেলাতেই শুধু গণহত্যা প্রযোজ্য হবে? সংশপ্তক ভাইয়ের ভাষাতেই বলি,
দরকার নেই কোন দ্বিচারিতার, যার গাছ খেতে ভাল লাগে, খাক, যার অন্য পশু, খাক। খাদ্যচক্রের নিয়মই তো তাই। মানুষের যুগ-যুগান্তের খাদ্যাভাস নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস নেই এই পোস্টের, দ্বিচারিতার ধার না ধেরেও মানুষ নিজেকে সর্বশেষ্ঠ দাবী করতে পারে, তবে সে পশুশ্রেষ্ঠ হিসেবেই, আর কিছু হিসেবে নয়……….
খুব দুর্বিনীত হলে ক্ষমা করবেন, গীতাদি………
মামুন, লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। সংবেদনশীল প্রানীদের মানুষ কেমনকরে যে জড় পদার্থের মতো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে এটা চিন্তা করতেই খারাপ লাগে। কিন্তু আক্ষেপ করা ছাড়া এখন আর কি করার আছে? জৈবিক তাগিদকে নৈতিক তাগিদের উপরে স্হান দেয়ার আশা করাটা উচ্চাশা।
তবে লেখায় হত্যার মাধ্যমে নিষ্ঠুরতা দেখানোর চেয়ে, ফ্যাক্টরী ফার্মিং এর নিষ্ঠুরতা দেখালে আরো ভালো হতো মনে হয়। এইভাবে পশুপালন এতোটাই অমানবিক যে এর পরে মৃত্যুই অনেক শ্রেয় মনে হবে।
@সফিক ভাই,
সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন, আপনার কাছ থেকে একটা কমেন্ট আসবে, আশাই করিনি। এমন না যে, আপনি এই অধমের কোন লেখায় কখনো প্রণোদনামূলক কমেন্ট করেননি, কিন্তু সাম্প্রতিক বাদ অনুবাদের পর……… 🙂
বুঝতেই পারছেন, বিমলানন্দ হইতেছে অন্তরকোণে……
ব্রিটেনে ২০০১ সালে যে গণহত্যা (Mass Cull) হয়েছে, প্রায় ৬,০০,০০০.০০ পশুকে জীবন্তসমাধি প্রদান করেছেন বিশ্বসভ্যতার অহংয়ে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষগুলো, সেগুলো কোথাকার প্রানী ছিল?? ফার্মের পশুই তো ছিল সেগুলো, নাকি???
এই লেখাটার মূল বক্তব্য, যা মনে হয়, আপনি ঠিকই ধরতে পারছেন, তা হল, পশু হত্যা, আর তার মাংস ভক্ষন নিয়ে আমাদের সভ্যতাকেন্দ্রিক দ্বিচারিতা!!!!!
আমরা উৎসব করে বার্গার-কাবাব খাইব, কিন্তু উৎসব করে পশুবলিদানকে চরম বিতৃষ্ণা জানাইব!
আমরা দেবতাকে খুশি করিতে নিরামিষভোজি হইব, কিন্তু জুতা-স্যান্ডেল-শাল-সোয়েটার ঠিকই পরিধান করিব!
আমরা ঝকঝকে তকতকে রাস্তায় পশুরক্ষার দাবীতে মিছিলে সামিল হইব, কিন্তু এই রাস্তাটিকে পশুদের হাতে ছাড়িয়া দিতে কিছুতেই রাজি থাকিব না, যদিও পশুদের অভয়ারন্য সাফসুতরো করিয়াই একদা এই কাঁচের মত রাস্তাগুলি একদা বানান হইয়াছিল…
সবশেষে, আমার বটম লাইনঃ আমরাও পশু, আদিমকাল থেকে আমাদের বেড়ে উঠা সেই পথেই… শুধু সভ্য জ্ঞান ও কলাকৌশল দিয়ে আমরা এই পরিচয়টিকে লুকিয়ে রাখি… মানুষের অপেক্ষাকৃত রিচ মগজ মানুষকে এই ছলা-কলার সুযোগটুকু করে দিয়েছে শুধু!! আর কোন অবদান নেই সেই অতি উন্নত মগজের!!!!
@কাজি মামুন,বাদানুবাদ রাজনীতি নিয়ে। রাজনীতি জীবনের সব নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণও নয়। আর ছয়-সাত মাস পর, দেশে যাই হোক, রাজনীতি আবার গৌন হয়ে যাবে। রাজনীতি ছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে যেখানে মতের মিল-অমিল নিয়ে শিষ্টভাবে তর্ক-বিতর্ক চলবে।
@কাজি মামুন,
একটা শুণ্য কমিয়ে দিন, ৬ মিলিয়ন হবে ৬০ মিলিয়ন নয়।
উৎসব করে বার্গার খাওয়া আর উৎসব করে পশুবলিদান, এ দুয়ের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য-উপলক্ষ্য সমান না। কার জন্যে বলিদান আর কেন উৎসব? বার্গার খাওয়া্র উপলক্ষ্য উৎসব করে পশুহত্যা নয়।
যাক উপরের ঐ একটি বাক্যের সাথে আমার অমতটুকু জানালাম। লেখার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য মহৎ তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের সাথে লেখাটি শেয়ার করার জন্যে- (Y) (F)
@আকাশ মালিক ভাই,
বুঝতে পারছি না, চোখ কার নষ্ট হইছে, আপনার না আমার?? একজনের তো নির্ঘাত নষ্ট হইছে…….আমি তো পোস্ট বা কমেন্টের কোথাও ৬ মিলিয়ন বা ৬০ মিলিয়ন – কোনডাই দেখতেছি না……….দুজায়গাতেই ৬ লাখ চক্ষে পড়তেছে আমার……..
আমি কি কোথাও কইছি, এ দুয়ের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য-উপলক্ষ সমান????
যত খুশি বার্গার খান, কেউ তো মানা করতেছে না………আকাশ-দা, ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, এই পোস্টের উদ্দেশ্য মাংস খাওয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন অবস্থান গ্রহণ করা না। শুধু দ্বিচারিতাগুলি নিয়ে আপত্তি।
যদি উৎসব করে বলিদানকে আপনি ঘেন্না করেন, তাইলে উৎসব করে বার্গার খাওয়াকে ঘেন্না করবেন না কেন? বলিদানকারীরা বলতে পারে, তারা তো বার্গার-চোষকদের চেয়ে মহৎ, কারণ তারা নিজেদের জন্য না, একজন সৃষ্টিকর্তার জন্য স্বার্থ ত্যাগ করে বলি……….
আর দেখেন, রেস্টুরেন্টের প্রয়োজন মেটাতে কি অকল্পনীয় অর্থ আর সম্পদ ব্যয় হয়। পোস্টে বিস্তারিত পরিসংখ্যান আছে। তবু কিছু চুম্বক অংশ তুলে দিচ্ছি আপনার সুবিধার্থে:
তাহলে বলুন, ঈশ্বরপুজকরা বার্গারপুজকদের থেকে কিছুটা হলেও কি ভাল নয়?? বার্গারপুজকদের অতি-প্রয়োজন মেটাতে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে অনাহারী থাকতে হয়। আর অন্যদিকে, ঈশ্বরপুজকরা তো আর নিজের জন্য করে না……পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি……..
সবশেষে, মানুষের যুগ-যুগান্তের খাদ্যাভ্যাসকে কটাক্ষ করা এই পোস্টের লক্ষ্য নয়। এই পোস্ট দেখাতে চেয়েছে মানুষ আসলে কি! মানুষ যা, মানুষ আসলে তাই…….সভ্য মানুষের একটা নিজস্ব বস্ত্রাভ্যাস বা খাদ্যভাস রয়েছে, কিন্তু সে অনেক দ্বিচারিতা করে, ঐ দ্বিচারিতাগুলিই এই পোস্টের টার্গেট….
মাংস খাওয়া নিয়ে আপত্তি নেই, কিন্তু মাংসও খাব, আবার পশু হত্যাকে নির্মমও বলব, আর ঐ নির্মম কাজ করিয়ে নিতে ‘কসাই’ নামক একজন ‘অমানুষ’কেও নিয়োগ করব—————এই দ্বিচারিতাগুলি বন্ধ হওয়া দরকার, মালিকদা!!!!!
@কাজি মামুন,
বয়স হইছেতো চোখ আমারই নষ্ট হওয়ার কথা। অংকে খুবই কাঁচা তাই ৬,০০,০০০.০০ এ দশমিক দিয়ে দুই শুণ্য কেন দিলেন বুঝি নাই। আর যদি ২০০১ সালের ব্যাপক পশু হত্যার Mass Cull সংখ্যাটা ছয় লাখ বলেন তাহলে এখানেও তথ্যের ভুল হলো বোধ হয়। কারণ সংখ্যাটা ছিল ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন, ৬ বা ৭ লাখ নয়। ১০ মিলিয়নে বোধ হয় ১ কোটি হয়, ৬ মিলিয়নে? আমার ভুল হলে শোধরায়ে দিবেন প্লিজ আমি মোটেই মাইন্ড করবোনা। ‘বিশ্ব জুড়ে পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র——‘।
তামান্নাকে যা বলেছেন, এর পরে আর কিছু আমার বলার নেই, হয়তো আপনাকে বুঝাতে পারিনি আমি কী বলতে চেয়েছি।
@আকাশ মালিক ভাই,
আপনার সে আশা আর পূরণ হল না, কারণ আপনি জ্ঞানী মাস্টারদের মত ঠিকই ভুল ধরিয়ে দিলেন। সংখ্যাটি ৬.০০ মিলিয়নই হবে। ধন্যবাদ, মালিকদা।
আপনার এই ভুল শোধরানো একই সঙ্গে দুঃখের আর সুখের আমার জন্য।
দুঃখ হলঃ অতি সত্বর চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে আমাকে। পাওয়ারের যে বারোটা বাজছে, তাতে কুনো সন্দেহ নাই।
সুখ হলঃ লেখাটির দাবিগুলো আরও শক্ত হইল। (নিহতের সংখ্যা বাড়াইয়া লেখার ভিত্তি মজবুতের চিন্তা করতেছি, দেখেন, অধমের চিন্তাও কি পাশবিক!!!)
তামান্না আপাকে করা প্রশ্নগুলোর উত্তর পাইলে ভাল লাগত। উত্তরগুলি আপনেও দিতে পারেন, আকাশদা। সে ক্ষেত্রে হয়ত বুঝাইতে পারবেন আমগো। একটা কথা, আমি কিন্তু বুঝতে বেশি পছন্দ করি। তাই আপনার কাছ থেকে বুঝতে পারলে খুশী হব।
@কাজি মামুন,এখানে একটা ব্যপার আছে। ফ্যাক্টরী ফার্মিং এর সময় যত যন্ত্রনার মধ্যেই থাকুক যখন গরু, ভেড়া, শুকরকে হত্যা করা হয় তখন সরকার নির্দেশিত একটি বিশেষ পদ্ধতিতেই কেবল হত্যা করা যায়। সেটা হলো মাথার মধ্যে এক ধরনের বিশেষ পিস্তল ঠেকিয়ে সরাসরি পশুর মগজে একটি গজাল মেরে দেয়া যেনো দ্রুত যন্ত্রনাবিহীন মৃত্যু হয়। ইউরোপ-আমেরিকায় পশু জবাই করতেই বিশেষ পারমিশন লাগে। কেবল মাত্র এই ভাবে মগজে গুলী করাটিই সাধারন ভাবে আইনানুগ।
এই বিশেষ ধরনের পিস্তলকে আবার বলা হয় Humane Killer, মানবিক হত্যাযন্ত্র। কয়েকটি ছবি।
[img]http://www.nrvoutdoors.com/HUMANE%20KILLERS/PITHING.jpg[/img]
[img]http://www.nrvoutdoors.com/HUMANE%20KILLERS/SCHERMER%20KILLER%20CAPTIONED.jpg[/img]
আসলে পৃথিবীর প্রকৃতিতে সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যেই খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে আমরা কখনও কেউ খাদক আর কেউ খাদ্য। শুধু মানুষ নয় অন্যান্য উদ্ভিদ-প্রাণীর মধ্যেও রয়েছে এই সম্পর্ক। উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। আমাদের কাছে উদ্ভিদ হত্যা প্রাণী হত্যার চেয়ে কম নৃশংস বা একেবারেই অনৃশংস মনে হয়। কারণ উদ্ভিদের কান্না, চিৎকার আমরা শুনতে পাই না। তাদের রক্তকে আমাদের কাছে রক্ত মনে হয় না। আমরা সকল প্রাণি ও উদ্ভিদই ইকোসিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত। এবং মানুষের অবস্থান এই সিস্টেমের শীর্ষস্থানে অবস্থিত। মানে আমরা অনেকটা সবর্ভুক।
বেঁচে থাকবার জন্য ত খেতেই হয়, সেটা হোক প্রাণি বা উদ্ভিদ। তবে উদ্ভিদ উৎপাদন যেহেতু প্রাণী উৎপাদনের চেয়ে কম ব্যয়বহুল এবং উদ্ভিদ থেকে আমরা মোটামুটি সবকিছুই পেতে পারি প্রয়োজনীয়, এবং অধিকতর সুস্থ থাকতে পারি, এবং উদ্ভিদ আমাদের পরিবেশ বন্ধু ইত্যাদি কারণে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আমরা প্রাণীর চেয়ে উদ্ভিদের পরিমাণ বেশি রাখতে পারি। আর পূণ্যের আশায় বিভিন্ন ধর্মে যে হত্যোৎসব পালন করা হয় তা প্রশ্নাতীতভাবেই ঘৃণ্য। তেমনি পশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা না করিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করা ঘৃণ্যতম।
@তামান্না ঝুমু,
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভাল কথা, কিন্তু পেটপুজোর আশায় যে ব্যাপক মাংস উৎসব চলে বিয়েবাড়িগুলিতে বা যেকোন পালাপার্বনে, তা বোধহয় আর ঘৃন্য নয়???
আর যারা মাংস খায় না, তারা কি কোন পূন্যের আশা করে না ???
কিন্তু শুধু খাদ্যাভাসেই??????????????
ভাল একটা উলের জ্যাকেট বা এক জোড়া মসৃণ জুতো বা উত্তম মানের প্রসাধনী ছাড়া আমাদের চলবে তো???
শুধু খাদ্যাভাস দিয়েই খরচ বাঁচাতে চাইছেন??
কিন্তু ধরুন, আমাদের সুস্থ করে তোলার জন্য একটি প্রাণীকে কাটা-ছেড়া করা দরকার??? তখন? অনুমোদন মিলবে তো?
@কাজি মামুন, ন?
আমরা যে গাছ লাগাই, ফুলের বাগান, ফলের বাগান করি তা কি গাছেদের ভালর জন্যে? নাকি আমাদের ভালোর জন্য বা প্রয়োজনে? গাছেদের কোনো সমস্যা হলে আমরা এখন তার বৈজ্ঞানিক সমাধান করি, কীটনাশক দেই। কিন্তু কেন? গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, খাদ্য দেয়, ফুল দেয়, সৌন্দর্য দেয়, আনন্দ দেয়। আমরা গাছের অক্সিজেন সেবন করে জীবন বাঁচাই, ফুল খাই,ফুলের মধু খাই, ফল খাই, ব্যবসা বাণিজ্য করি এসবের। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করি। আসবাবপত্র বানাই গাছ দিয়ে, ঘরবাড়ি বানাই। আরও কত কি। বেঁচে থাকতে হলেই খেতেই হবে। সেটা উদ্ভিদ বা প্রাণী যেটাই হোক না কেন। প্রাণী হত্যা নৃশংস, উদ্ভিদ হত্যা নৃশংস নয় কি?
এক কথাই চমৎকার ও তথ্যবহুল – ধন্যবাদ সুন্দর একটি লিখার জন্য।
ভাবছিলাম আসলে মানুষের মানবিক আচরনের উৎপত্তি হয় কোত্থেকে … ঠিক তখন ই আপনার এই পোস্ট খুঁজে পেলাম । চমৎকার , তথ্যবহুল । 🙂
মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশের সাথে তার বাজে দিক গুলোও বিকশিত হয়েছে চরম আকারে । আমরা প্রকৃতির সন্তানদের মানুষ ও পশু এই দুইভাগে ভাগ করতে পছন্দ করি । আমরা বাদে আর কোন পশু গণহত্যা চালায় না … অথচ গণহত্যাকে আমরা বলি পাশবিক!!!
আমার মতে গণহত্যাকে অমানবিক বলা যেতে পারে কিন্তু পাশবিক বলাটা হয়ত ঠিক নয় ।
@মইন ভাই,
কি অসাধারণ কথা বললেন!! আমাদের সভ্যতাকেন্দ্রিক একটি দ্বিচারিতা (যা তুলে ধরা এ পোস্টের লক্ষ্য) খুব সুন্দর করে তুলে ধরলেন।
আমরা আমাদের মানবিকতা নিয়ে অনেক অহং করি, পদ্য গাঁথি, আর পাশবিকতাকে ঘেন্না করি, কিন্তু ধরা যাক, একটি পশুকে অপশন দেয়া হল, তুমি মানবিকতা পছন্দ কর, নাকি পাশবিকতা পছন্দ কর। কি মনে হয়? পশুটি কি উত্তর দেবে? আমার ধারণা, পশুটি কিন্তু পাশবিকতাই বেছে নেবে, কারণ তার কাছে পাশবিকতা মানবিকতার চেয়ে অনেক অনেক উত্তম!!!!!! উন্নত মগজের অভাবে পশুটি শুধু পদ্য রচনা করতে পারবে না!!