৬ই মার্চ যখন তানভীর মোহাম্মদ ত্বকির নিখোজ হওয়ার খবরটা শুনতে পাই আনুমানিক রাত ১০টায়। বিজ্ঞান বক্তা আসিফের কাছে জানতে পারলাম রাব্বি ভাইয়ের বড় ছেলে ত্বকির ফোন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ আছে, অর্থাৎ পাওয়া যাচ্ছে না । শুনেই ভীষণ আতঙ্কিত আর অসহায় বোধ করলাম আর সাথে সাথে আমার যত কাছের মানুষজনকে জানাতে লাগলাম এই সংবাদ। তাদের কেউ কেউ আমার উৎকণ্ঠা দেখে বলেছিল কিশোর ছেলে; প্রেমঘটিত ব্যাপার হতে পারে অথবা কাল এ-লেভেল পরীক্ষার ফলাফল দিবে সেজন্য ফলাফল খারাপ হবে ভেবে বাড়ি খেকে চলে যেতে পারে! আমার কিন্তু মনে হয়েছিল এর নেপথ্যে নারায়ণগঞ্জে গড ফাদার নামে যারা পরিচিত তাদের হাত আছে। নারায়ণগঞ্জের সাঙস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বীর দীর্ঘসময় ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ডই গড ফাদারদের কোপানলে রেখেছে তাকে অনেকদিন ধরে। অতএব বিষয়টাকে এত সহজভাবে দেখে দেরি করার অবকাশ নেই। কারণ সে আমাদের প্রিয় রাব্বি ভাইয়ের সন্তান। যিনি জীবনের প্রায় সবটুকু সময় নারায়ণগঞ্জবাসীর সাংস্কৃতিক বোধ জাগিয়ে রাখা আর সন্ত্রাসমুক্ত রাখার স্বার্থে কাজ করেছেন। বিশেষত বাস আন্দোলনে ভাড়া কমানো, এবং মেয়র নির্বাচনে আইভির কোনো জটিলতা ছাড়া জিতে আসার পিছনে তার অবদান অনস্বীকার্য।
আমি পেশাগত কারণে ঢাকায় অবস্থান করলেও নারায়ণগঞ্জে বেড়ে উঠেছি। এখনও মাঝে মাঝে নানা সাংস্কৃতিক আর বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্র্রহণের চেষ্টা করি। কৈশোর থেকেই তার নাম শুনেছি; তারপর সময়ের সাথে সাথে তার সক্রিয় ভূমিকা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ আর আত্মপ্রত্যয়ী পথচলা সামনে থেকে দেখেছি। তার দৃঢ়তা আর ব্যক্তিত্বের সামনে কোন অশুভ শক্তিই নারায়ণগঞ্জ শহরে মাথা চারা দিয়ে উঠতে পারছিল না। এগুলোই তার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর শক্রুর জন্ম দিয়েছিল সম্ভবত।
পরদিন সকালে কর্মস্থলে চলে যাই। আমার সকল সহকর্মী আর বন্ধুদের জানাই এই উৎকণ্ঠার সংবাদ।বারবার সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম বেশি দেরী হলে ত্বকিকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। দেখতে দেখতে একদিন দুইরাত পার হল। সকলের উৎকণ্ঠা তখন তুমুলে। প্রশাসনও নাকি হন্যে হয়ে খুজছে! কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। শুক্রবার সকালে প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা চলে গেলাম। আমি অনেকবার চিড়িয়াখানা গিয়েছি কিন্তু এবারের মতো অনাসৃষ্টি আর বেহাল অবস্থা কখোনোই দেখিনি। এদিকে ক্যামেরাটাও আনতে ভুলে গিয়েছি। আনতে পারলে অনেক প্রমাণসহ লেখা তৈরি করা সম্ভব হত। প্রতিটা প্রাণীকে দেখে মনে হচ্ছিল অসাড় আর প্রাণহীন। রয়েলবেঙ্গল টেইগার, ওরাং-ওটাং, সিংহ, সারস, সজারু, কুমির সব যেনো চরম নৈরাজ্য আর অবহেলার শিকার। কোনোভাবেই এই সকল আর মেনে নেয়া যায় না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ থেকে আমার এক পরিচিত মানুষের কাছ থেকে ভয়াবহ সেই সংবাদটি জানলাম। জানাল আমাদের রাব্বি ভাইয়ের ছেলে ত্বকির মৃতদেহ পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যার তীরে, কুমুদীনীর আশেপাশে। কেপে উঠলাম আর হু-হু করে কেঁদে উঠলাম। এই কান্না রক্তপিশাচদের প্রতি ঘৃণা আর প্রতিবাদের; সেইসাথে নিজেদের আত্মগ্লানি আর প্রশাসনের ব্যর্থতার। কীভাবে এই শোকের ভার বয়ে বেড়াবো আমরা; প্রশাসনের এই ব্যর্থতার দায়ভার কার? শৈশব থেকে বয়োজৈষ্ঠদের কাছে শুনে এসেছি একজন বাবার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি তার কাধে সন্তানের লাশ। আজীবন ভালো কাজের পুরুস্কার হিসেবে নৃশংশভাবে হত্যা করা সন্তানের মৃতদেহ বয়ে বেড়াতে হবে রাব্বী ভাইকে! কী মর্মান্তিক।
একটু পরেই একজন নারী শিক্ষাকর্মী ফোনে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে ফেললেন। এটা সেই বিশেষ পরিবারের কাজ, জামাতবাহিনীর নয়। এ থেকেই বোঝা যায় সাধারণ জনতা আর অন্ধ নয়, আর ধোকাবাজী নয়, আর কীসের ভয়। আমরা ভয়ে-আতঙ্কে আর পিছিয়ে থাকতে চাই না। চাই সুবিচার। আমার নিকটজন অনেকেই তাৎক্ষণিক ছুটে গেলেন সেখানে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করে যাচ্ছি দেশের জন্য। এটাকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল বোঝা হবে। আমরাও সরব হতে পারি । শাহবাগ প্রজন্মচত্ত্বর বা জাগরণ মঞ্চ এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমাদের আঙ্গুল তুলে সেই শিক্ষাই দিয়ে গিয়েছে। ৪২ বছরের বয়ে যাওয়া গ্লানি মুছে ফেলার সময় কেবল শুরু হয়েছে। শেষ হতে তো অনেক পরীক্ষা দিতে হবে আমাদের। সেদিন ছিল ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এদেশের নারীরাও এখন পিছিয়ে নেই; তারাও শতভাগ শক্তি নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার।
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেছে এরপর: এদেশে এরকম ঘটনা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে; এরকম মৃত্যুর জন্য আমরা কাউকে শাস্তি পেতে দেখছি না। তারা সকলেই সাগর-রুনী, বিশ্বজিৎ হত্যাসহ সকল নৃশংস হত্যার বিচার চায়। তবে নারায়ণগঞ্জের বিষয়টা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। প্রথমে রাব্বি ভাইয়ের ভাগ্নে: তরুণ ব্যবসায়ী আশিক ইসলাম, তারপর সাংস্কৃতিক কর্মী দিদারুল আলম চঞ্চল, তারপর তরুণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা ভুলু অবশেষে আমাদের মেধাবী কিশোর ত্বকী! কোনো রহস্যই আজ অবধি উন্মোচন হয় নি।উত্তর একই প্রশাসন অন্ধকারে।
আমি ত্বকিকে দেখেছি: ৩১ আগস্ট ২০১২ বিজ্ঞান সংগঠন ডিসকাশন প্রজেক্ট ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ব্লু-মুন উৎসবে শীতলক্ষ্যার ৫নং ঘাটে; দেখেছি ৩১ আগস্ট ২০১২। ডিসকাশন প্রজেক্টের বিজ্ঞান বক্তৃতায় সুধীজন পাঠাগারে; সবশেষে দেখেছি ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ টাউ ফিজিক্স বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সুধীজন পাঠাগারে। সেই স্বপ্রভ মেধাবী কিশোর একজন সংস্কৃতিকর্মীর সন্তান হয়েও বিজ্ঞানকে বেছে নিয়েছিল জীবন চলার পাথেয় হিসেবে। আমরা বিজ্ঞানকর্মীরা যখন লড়াই করছি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে আমাদের উপলব্ধিকে আর গভীর জায়গায় নেয়ে যাওয়ার জন্য। তখন পিতা-পুত্রের এই সমন্বয় ও স্ফুরণকে আমরা এভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম! এ দেশ হারালো এক প্রতিভাবান সন্তান। এই অসীম দু:খজনক দায়ভারকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। তাহলে সবকিছু অর্থহীন হয়ে যায়।
অনেকে জামাত শিবিরের কথা বলেছেন।কিন্তু এভাবে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখবো এক ধরনের সম্পর্ক আছে এই সমস্ত গড ফাদারদের সাথে। সে যেই কারণে হয়ে থাকুক না কেন, যুদ্ধাপরাধিদের বিচার না করাটা হয়েছে দেশের জন্য ল আ্যন্ড অর্ডারের ভায়োলেশন বা আইন এবং জবাবদীহিতা থেকে সরে যাওয়া। আর তা থেকে তৈরি নৈরাজ্য এবং সুবিধাবাদীদের জায়গা দখলের প্রক্রিয়া। এই ল অ্যান্ড অর্ডারের ভায়োলেশন থেকেই সুবিধাবাদীদের কালো টাকার পাহাড় গড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। কালো টাকা জন্ম দেয় গড ফাদারের, আইন এবং প্রশাসনকে শেষ করে দেয়, বর্বরসব কর্মকাণ্ডের দিকে নিয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জে ত্বকি হত্যা তার বর্বতম উদাহরণগুলো একটি।
শুক্রবার ১৫ মার্চ ২০১৩ নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে ত্বকী হত্যার পিছনে শামীম ওসমানের হাত আছে বলে বক্তারা বলেন।
প্রিয় আইভি আপা, আমরা দেখেছি রাব্বি ভাই কীভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আপনার পাশে দাড়িয়েছিলে্ন।তখন থেকেই মনে শঙ্কা আর ভয় ছিল রাব্বি ভাইকে নিয়ে! কিন্তু কখনও ভাবিনি এই সকল কাজের খেসারত হিসেবে দিতে হবে নিজের সন্তানকে বিসর্জনের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে তার পাশে আপনি আপনার সমগ্র শক্তি নিয়ে দাড়িয়েছেন দেখে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আপনার পাশে আছি। আপনি বার্তা পৌছানোর চেষ্টা চালিয়ে যান প্রশাসনকে যে- সকল নৈরাজ্য, অপরাধ আর সন্ত্রাসের একটা শেষ পরিণতি আছে! আমরা সেই পরিণতির দিকেই যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জের সকল সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী আর আমজনতা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন সাধুবাদ জানাই তাদের। মশাল মিছিলে নারীরা সাহসের সাথে বলেছে “গডফাদারের কালো হাত/ভেঙ্গে দাও/গুড়িয়ে দাও।” গড আর ফাদার আমাদের দৃষ্টিতে শান্তির দুটো শব্দ। আসুন আমরা বলি: “পিশাচদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও; গুড়িয়ে দাও/হত্যাকরীকে জেনেও নিরব; প্রশাসন জবাব দাও।”
ত্বকীর বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা। আশা করি অপরাধীরা দ্রুত গ্রেপ্তার হবে এবং ত্বকীর পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
যারা এই ওয়েব সাইট পরিদর্শন করেন, তারা সকলেই আমেরিকান সিনেমাwild W”ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েষ্টWild w” দেখে থাকবেন । পাচ শত বছর পূর্বকার ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ইষ্ট এর বহু নায়ক এখন মার্কিনিদের কাছে পুজনীয় । বাংলাদেশ এখন ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ইষ্ট এর যুগ অতিক্রম করছে । তাই পত্রিকা খুললেই হত্যা রাহাজানির খবর পাওয়া যায় ।অতএব বর্তমান অবস্থা সমাপ্তির জন্য আমাদেরকে আরো কিছু কাল অপেক্ষা করতে হবে ।
যে সব কারন রাজাকার, মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তার মধ্যে একটি কারন হল আওয়ামী লীগের ব্যার্থতা ও ব্যাপক দুবৃত্তায়ন।
যুগে যুগে এসব শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারি, লক্ষীপুরের তাহেরদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি ধারার ছাতা বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। এ জন্যই রাজাকারি মানসিকতার লোকে আওয়ামী লীগের নানান কুকর্ম দেখিয়ে বলতে পারে যে এসব মানবাধিকার বিরোধী নয়, এসবের বিচার করবে কে, কবে আন্দোলন হবে?
@আদিল মাহমুদ,
সঠিক।
আওয়ামেলীগ সরকার পদ্মাসেতু প্রকল্প loss করতে প্রস্তুত, কিন্তু আবুল হোসেনকে loss করতে রাজী নয়।
তবে এতদসত্বেও আমার নিকট জামাত-শিবির এর রক্ষক বিএনপি হতে আওয়ামেলীগই ভাল।
আপনি কী মনে করেন?
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
এক আবুলকে বাঁচাতে এত মরনপণ লড়াই করা হয়নি এটা নিশ্চিত। এ নিয়ে আপাতত কিছু না বলাই ভাল, আর বলার মত দালিলিক কোন তথ্য প্রমানও নেই। হতাশা ছাড়া আর কিছুই মনে আসে না। জামাত শিবির বিএনপির বাইরে এদের দিকেই আমাদের তাকাতে হয়।
হিংস্র হায়েনা আর নেকড়ে থেকে নেকড়ের সাথেই দোস্তি করতে হয়।
আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি যেখানে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজে পড়তে হয় মানুষ হত্যার নানা রোমহর্ষক ঘটনা। কয়েকদিন তা নিয়ে খবরের কাগজগুলো বেশ সোচ্চার থাকে। এরপর খবরগুলো হারিয়ে যায় দৃশ্যপট থেকে। বাংলাদেশের বিগত ও বর্তমান সরকারের আমলে আমরা এই ধরনের অনেক খুনের ঘটনা পরেছি যার কোন বিচার তো দুরের কথা আসামী পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। রাজনীতির বলি হিসেবে যে হত্যাকাণ্ড গুলো ঘটে সেখানে বারবার প্রশাসনকে বলতে শুনি তারা অন্ধকারে আছে। আমার মনে হয় সময় হয়েছে প্রশাসনের বলার যে তাদেরকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে।
আমি চাইনা যে, ত্বকী হত্যার ঘটনা অন্যান্য খুনের ঘটনার মতো কালের বিবর্তনে বিচার বিহীন ভাবে চাপা পরে যাবে। তবে এই ব্যাপারে সরকারের অবস্থান এখন পর্যন্ত আশাব্যাঞ্জক নয়। আশা করি ত্বকী হত্যার ঘটনা সরকার নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে। ত্বকী খুন হওয়ায় তার পরিবারের পর কার যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তা হল সরকার। কারন ত্বকী বেঁচে থাকলে হয়ত তার কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল হত।
@প্রশ্নকারী,
আমার এবং সম্ভবতঃ পত্যেকেরই মনের কথা।
খালেদা ইয়াসমিন কে অনেক ধন্যবাদ। ত্বকীর মতো এমন মৃত্যু আমাদের ভাবায়। প্রশ্নের মুখে দাড় করায়, আয়নায় ফিরে তাকাতে বাধ্য করে। যে সন্তানের জন্য যুদ্ধ করি, আন্দোলন করি – তাকে বাচিয়ে রাখতে না পারলে … আমার বর্তমানে আমার আগামীকে খুন করে আততায়ী, আর আমি চেয়ে থাকি অতীতে।
এই হত্যাকান্ডকে নিন্দা করার ভাষা নেই। রাজনীতিকরা তাদের পেশাগত কারনে রাজনীতি করে। তার মাশুল
দিতে হয় অসহায় কিশোর এবং জনগনকে। এর থেকে পরিত্রান পাবার উপায় আপাতত দেখছিনা।
@আফরোজা আলম,
আমারো একই অন্তরের বক্তব্য।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য!
ত্বকির অকাল মৃত্যু একজন পিতা হিসাবে আমাকে ভীষন আলোড়িত করেছে। এটি শুধু হত্যা নয়, চরম নির্যাতন করে হত্যা। চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, অণ্ডকোষ থেতলানো হয়েছে; আরো কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে জানি না। খবরে প্রকাশ এর আগেও নারায়নগঞ্জে এধরনের গুমখুন হয়েছে এবং মৃতদের শরীরে একই ধরনের অত্যাচারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অপরাধীরা যেহেতু একটি প্যাটার্ন ধরে অপরাধ সংঘটিত করে, এটা ধরে নেয়া যায় যে ত্বকিসহ সবগুলো খুনই একই পেশাদার খুনীর হাতের কাজ। জামাত-শিবিরকে পুরোপুরি সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া না গেলেও ত্বকির পিতার বিরুদ্ধপক্ষ দেশে চলমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে নিয়েছে, সেই সম্ভাবনাই বেশী।
গড ফাদারদের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের মাখামাখি কখনই ভাল কিছু বয়ে আনে না। এককালের সাংবাদিক পেটানো গডফাদার জয়নাল হাজারী আজ রাজনৈতিকভাবে পরিত্যক্ত। নারায়নগঞ্জের গডফাদারদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে উঠলে এদেরও একই পরিণতি হবে বলে আশা করি।
“পিশাচদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও; গুড়িয়ে দাও
হত্যাকারীকে জেনেও নিরব; প্রশাসন জবাব দাও।”
এই হত্যাকান্ড নিয়ে কোন রাজনীতি না বিচার চাই …
শামীম ওসমানের নাম যখন আসছে সেহেতু ধরে নেয়া যায় এই হত্যাকান্ড নিয়ে রাজনীতি হবে।
খবরে প্রকাশ, এই কিশোর হত্যার জন্য এখন সরাসরি দোষারোপ করা হচ্ছে শামীম ওসমানকে। একই অবস্থান নিয়েছেন নিহতর পরিবার, সাধারণ মানুষ, এমনকি সিটি মেয়র আইভি।
আওয়ামী রাজনীতিতে এটি খুবই চমকপ্রদ। আ’লীগই শামীম ওসমান তৈরি করে, আবার এদের বিরুদ্ধে তারাই আইভিকে দাঁড় করায়।
😛
@বিপ্লব রহমান,
স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে একটা পার্থক্য আছে। আর এসব নেতা আওয়ামীলীগ করলেও ইনু-মিনু-বড়ুয়া গং দের মত পরজীবী নয়। মেয়র আইভী নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
@সংবাদিকা,
ওপর থেকে অনেকটাই তাই। কিন্তু তলিয়ে দেখলে হয়তো একমত হবেন এই প্রশ্নে যে:
জাতীয় বা স্থানীয়– সব রাজনৈতিক ক্ষমতার বিন্যাস প্রকাশ পায় নানান আচরণে; রাজনৈতিক কমর্সূচিতেও । বিশেষ করে আ’লীগ-বিএনপি’র মতো দল, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কোথাও তারা দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা করে না, তাদের ক্ষেত্রে এই আচরণ ও কর্মসূচির রূপ খুবই বিচিত্র। হোক এর নেতা শামীম বা নেত্রী আইভি। এ কারণেই তারা কেন্দ্রীয় আশির্বাদে জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচন করে, ক্ষমতা বিস্তারে দলীয় কোন্দল, সন্ত্রাস, খুন, চাঁদাবাজী, রাহাজানিসহ সব ধরণের অপকর্ম করে; এসব কর্মকাণ্ড বৈধতা দিতে আবারো দল, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ ও জনগণের নাম ভাঙায়। বাহ্যরূপটি যতোই বৈরি হোক না কেনো; ক্ষমতার অন্তর্রুপটি কিন্তু অবৈরি। …
একারণে কালই যদি শেখ হাসিনা আইভিকে ধমক দিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেন, দেখবেন সুরসুর করে তিনি শামীমের সঙ্গে গিয়ে চা খাবেন; সব বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়ে সাংবাদিক ডেকে ফটো সেশন করে বলবেন, আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আমরা দুইজন একই মায়ের পেটের ভাইবোন।
জাতীয় থেকে স্থানীয়– সব নষ্ট রাজনীতিতে এমন কীর্তি বহুবার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। …
আপনাকে ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
চমৎকার বিশ্লেষন! সহমত।
@বিপ্লব রহমান, সবকিছুর সরলীকরণ ঠিক নয়
@আসিফ,
এ ক ম ত। বিশেষ করে রাজনীতির ক্ষেত্রে কথাটি খুব বেশী প্রযোজ্য। এই জন্য রাজনীতির বিন্যাসকে তলিয়ে দেখতে বলি। এর শেকড়-বাকড়-শাখা-উপশাখা সমেত। রাজনৈতিক দর্শনটি তো বটেই। 😉
আপনাকে ধন্যবাদ।
পিশাচদের গা ছোঁয়া সমস্থ বাতাস দুষিত করছে আমাদের প্রতিদিনের শ্বাসবায়ু। লম্বা লম্বা দাঁত হোক আমারও, আমিও পিশাচ হবো। আমিও রক্ত খাবো। ভালবাসা নাকের ফুটো দিয়ে বের করে দিবো। আবেগ? হুম, টয়লেটে যাক। অস্তিত্ব, সেতো অনেক আগেই হুমকিতে ছিল, আজ আমিও বিলীন করলাম। আমিও অন্ধ আজ থেকে, ধর্মান্ধ। বেজায় আস্তিক। রাজনীতিবিদের মত সত্যবাদী। ওদের মত তোষামোদী। চুলোয় যাক ব্যক্তিত্ব, কেরোসিন দে, জ্বালিয়ে দেই।
ত্বকী হত্যার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ তার সন্দেহের তালিকায় শুরু থেকেই জামায়াত-শিবিরকে দুই বা তিন নাম্বারে রেখেছেন। কারণ তারা জানেন জনাব রফিউর রাব্বি তাঁর দীর্ঘ সাংস্কৃতিক-নাগরিক-সামাজিক আন্দোলনের জীবনে অনেক স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থহানি ঘটিয়েছেন। সুতরাং তাঁর অপরাধের (!) দায়ভার তো তাঁকে কোন না কোনভাবে নিতেই হবে। এজন্য ৮ই মার্চের প্রতিবাদ সমাবেশেই গডফাদারদের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে।
গত বেয়াল্লিশ বছরে দেশে মোট কতগুলি খুনের ঘটনা ঘটেছে আর তার বিপরীতে কতগুলি খুনের মামলা হয়েছে এবং কতগুলি খুনের ঘটনায় খুনীর (খুনীদের) যথোপযুক্ত শাস্তি হয়েছে? আমরা জানি, পরিসংখ্যান নিলে এটা প্রমাণিত হবে যে, মোট খুনের সংখ্যার বিপরীতে মামলার সংখ্যা কম আর শাস্তির সংখ্যা আরো কম। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই দেশে অনেক পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গঠিত স্বাধীন দেশে এই অপসংস্কৃতির অবসান হওয়া উচিত ছিল। তার পরিবর্তে খোদ মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচার না হবার এক ন্যক্কারজনক উদাহরণের মাধ্যমে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরো জাঁকিয়ে বসেছে।
এদেশে অসংখ্য চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় পুলিশ কোন কিনারাই করতে পারে না। এটা যতটা না পুলিশের পেশাগত অদক্ষতার জন্য ঘটে তারচেয়ে বেশি ঘটে পুলিশের কাজে ঊর্ধ্বতন মহলের (প্রশাসনিক-রাজনৈতিক নানাবিধ) অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে। এই হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি বন্ধ না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
“নো ওয়ান কিল্ড ত্বকী” বলার মতো পরিস্থিতি হোক সেটা আমরা চাই না। তবে আমরা যেমনটাই কামনা করি না কেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে আজ পর্যন্ত গডফাদারদের কিছু হয়নি (যদি না প্রতিপক্ষের হাতে ঘায়েল হয়), হবেও না।