মূল লেখকঃ ডোনাল্ড বার্থেলম (আ সিটি অব চার্চেস, ১৯৭৩)
“হ্যাঁ, আমাদের এই শহরটিকে একটি পুরোদস্তুর গির্জার শহর বলতে পারেন।”- মিঃ ফিলিপস্ বললেন। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় সিসিলিয়া। ফিলিপসের হাতের ইশারা অনুসরণ করে শহরটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করছিল সে। সত্যিকার অর্থেই,
গির্জায় গিজ গিজ করছে পুরো শহর। বিচিত্র সব স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সগৌরবে দাড়িয়ে থাকা গির্জাগুলোর কিনার ঘেঁষে বয়ে গেছে সড়কটির উভয় পাশ।
‘বেথেল ব্যাপটিস্টের’ ঠিক পরেই আছে ‘হোলি মশিয়ে ফ্রি ব্যাপটিস্ট’, ‘সেইন্ট পলস ইপিস্কিপলের’ পরে ‘গ্রেস ইভানজেলিকাল কাভোনন্ট’। এরপরেই আছে ‘ফার্স্ট ক্রিশ্চিয়ান সাইন্স’, ‘দ্যা চার্চ অব গড’, ‘অল সোল্স’, ‘আওয়ার লেডি অব ভিক্টরি’, ‘দ্যা সোসাইটি অব ফ্রেন্ডস’, ‘দ্যা এসেম্বলি অব গড’, ‘দ্যা চার্চ অব দ্যা হোলি অপোস্টল’, এবং আরও কত কি। সমকালীন ডিজাইনের ব্যাপক কল্পনাশ্রয়ী আর আকাশচুম্বী স্থাপনাগুলোর পাশে অনেকটা গাদাগাদি করেই দাড়িয়ে ছিল ঐতিহ্যবাহী বিল্ডিংগুলোর চূড়া আর টাওয়ারসমুহ ।
“এই শহরের লোকদের গির্জার প্রতি রয়েছে অসম্ভব টান।” মিঃ ফিলিপস্ জানায়।
“ঠিক আছে, আমার মানিয়ে নিতে কোন সমস্যা হবে না।” সিসিলিয়া মনে মনে ভাবে। একটি রেন্ট-এ-কার কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিস খোলার মিশন নিয়ে সে প্রেস্টার শহরে এসেছে ।
“আমি কিন্তু খুব একটা ধার্মিক নই, ” – রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফিলিপসকে সিসিলিয়া বলল।
“এখন নন বা এখন পর্যন্ত নন।” – লোকটি উত্তর দেয়, -“জানেন না হয়ত, এই শহরের গির্জা-প্রিয় বাসিন্দাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই তরুণ। আশা করছি, আপনি অল্পদিনেই আমাদের সম্প্রদায়ের সাথে পুরো মিশে যাবেন। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আপনি কোথায় উঠবেন তা সেটল্ করা। এখানকার অধিকাংশ লোকই তাদের পছন্দমাফিক গির্জায় বসবাস করে। আমাদের প্রায় সবগুলো গির্জাতেই অনেক অতিরিক্ত কক্ষ খালি পড়ে আছে। বিশেষ করে, আমার কাছে কিছু ঘণ্টাঘর অ্যাপার্টমেন্টের খোঁজ আছে, যা আপনাকে দেখাতে পারি। কিন্তু তার আগে বলুন, আপনি কেমন দামের ফ্ল্যাট খুঁজছেন?”
কথা বলতে বলতে তারা একটি মোড় ঘুরল। মোড়ের অপর পাশে আরও অনেকগুলো গির্জা তাদের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। একে একে তাদের অভ্যর্থনা জানাল ‘সেইন্ট লুক’স’, ‘দ্যা চার্চ অব দ্যা ইপিফানি’, ‘অল সেইন্টস ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স’, ‘সেইন্ট ক্লেমেন্টস’, ‘ফাউন্টেন ব্যাপ্টিস্ট’, ‘ইউনিয়ন কংগ্রেগেশনাল’, ‘সেইন্ট অ্যানারজিরিস’, ‘টেম্পল ইমানুয়েল’, আর ‘দ্যা ফার্স্ট চার্চ অব খ্রিস্ট রিফরমড’। গির্জাগুলো মুখব্যাদান করে দাড়িয়ে ছিল। ভিতর থেকে ঝাপসা আর নিষ্প্রভ আলোর রেখা দৃশ্যমান হচ্ছিল।
“আমি একশ দশ ডলার পর্যন্ত যেতে পারি,” সিসিলিয়া বলল, “আচ্ছা, আপনাদের এখানে এমন কোন অট্রালিকা আছে, যা গির্জা নয়?”
“সত্যি বলতে কি, নেই,” মিঃ ফিলিপস বললেন। “অবশ্য আমাদের অনেকগুলো সুন্দর গির্জা রয়েছে, যেগুলো একাধিক কাজে লাগানো হচ্ছে।” এরপর সে একটা সুদৃশ্য জর্জিয়ান অট্টালিকার সম্মুখভাগের দিকে ইশারা করে। “যেমন ধরুন, এই বিল্ডিংটি একাধারে প্রটেস্টান্ট গির্জা এবং শিক্ষা বোর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পরেই যে ‘অ্যান্টিউক পেন্টিকস্টাল’ নামক গির্জাটি দেখতে পাচ্ছেন, তাতে একটি সেলুন পর্যন্ত রয়েছে!” সত্যি সত্যি একটা লাল-সাদা আর ডোরা কাটা সেলুন-স্ট্যান্ডের আবছা অবয়ব ভেসে উঠল অ্যান্টিউক পেন্টিকস্টাল গির্জার সম্মুখভাগে।
“আচ্ছা, এখানকার মানুষজন গাড়ি ভাড়া করে তো? করে থাকলে তার তেমন কোন সুব্যবস্থা এই মুহুর্তে আছে নাকি এই শহরে? ” সিসিলিয়া জিজ্ঞেস করে।
“দুঃখিত, আমি সঠিক বলতে পারব না।” মিঃ ফিলিপস বললেন। “তবে একটা কথা। গাড়ি ভাড়ার কথা উঠলেই কিন্তু অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গটি চলে আসে। অথচ এখানকার বেশিরভাগ মানুষ শহরের ভিতর থাকতেই মনে হয় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমাদের এখানে অনেক ধরনের কাজ-কর্ম আছে সত্যি। কিন্তু আমাকে যদি প্রেসটার থেকে কোন কাজ শুরুর কথা ভাবতে হত, আমি গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা কস্মিনকালেও বেছে নিতাম না। তবে তাতে কিছু আসে যায় না, আমার ধারণা, আপনি সাফল্য পাবেন।” – বলতে বলতে ফিলিপস সিসিলিয়াকে ছোট্র অথচ ইট, ইস্পাত আর কাচের চোখ ধাঁধানো সম্মুখভাগ দিয়ে গড়া আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর একটি চরম নিদর্শন দেখালেন। “ওটা ‘সেইন্ট বারনাবাস’। চমৎকার এক দল মানুষ থাকে ওখানে। অতীব সুস্বাদু স্পাগেটি দিয়ে সান্ধ্য-ভোজন সারেন তারা।”
সেইন্ট বারনাবাসের মধ্য থেকে অন্তত কয়েকটি মাথা সিসিলিয়ার নজরে এলো, যারা জানালা দিয়ে সমানে উকি মারছিল। কিন্তু যখন তারা আবিষ্কার করল, সিসিলিয়া তাদের স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছে, মাথাগুলো নিমিষেই উধাও হল।
“একটি ছোট্র জায়গায় এত বেশী গির্জা থাকার ব্যাপারটা কি আপনার কাছে স্বাস্থ্যকর মনে হয়?” সিসিলিয়া তার গাইডকে জিজ্ঞেস করে। “ আপনি মনে হয়, আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন। আমার মতে, এক জায়গায় এত বেশী গির্জার উপস্থিতি ভারসাম্য লঙ্ঘন করে।”
“আমরা আসলে আমাদের এই গির্জাগুলোর জন্যই বিখ্যাত।” মিঃ ফিলিপস্ উত্তর দেন। “এগুলো খুবই শান্তিপ্রিয়, এই গির্জাগুলোর দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হয়নি কখনো। আর দেখুন, বলতে বলতে ঠিক তেমন একটা গির্জাতেই এসে পড়েছি আমরা।”
ফিলিপস্ একটা দরজা খুললেন। এরপর তিনি এবং সিসিলিয়া ধুলোমাখা সিঁড়ি বেয়ে ক্রমেই উপরে উঠত লাগলেন। আরোহণ শেষে তারা একটা সুষম আকৃতির চৌকোনা কক্ষে প্রবেশ করলেন। ঘরটির চতুর্দিকই জানালা পরিবেষ্টিত ছিল। ঘরটির মধ্যে চোখে পড়ার মত ছিল একটি শয্যা, একটি টেবিল, দুটো চেয়ার, কিছু প্রদীপ এবং একটি পাপোষ। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে ঘরটির ঠিক কেন্দ্রভাগেই ঝুলে ছিল চারটি অতিকায় ব্র্যাসের তৈরি ঘণ্টা।
“কি অসাধারণ দৃশ্য! জলদি আসুন এদিকে ,আর চোখ মেলে তাকান।” ফিলিপস চিৎকার করে ডাকেন সিসিলিয়াকে।
“তারা কি এই ঘণ্টাগুলোকে সত্যি সত্যি বাজায়?” সিসিলিয়া জিজ্ঞেস করে।
“দিনে তিনবার,” মিঃ ফিলিপস হাস্যোজ্জল মুখে জানান। “সকালে, দুপুরে এবং রাত্রে। অবশ্য যখন এগুলো বাজানো হবে, আপনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নইলে এই ঘন্টাদেবিগুলোর যেকোনোটি আপনার মাথায় আঘাত করে বসতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যেই আপনার খেল খতম করে দিতে পারে। ”
“সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই সহায়! ” অনিচ্ছা স্বত্বেও বেরিয়ে আসে সিসিলিয়ার মুখ দিয়ে। তারপর সে বলে, “আমার ধারণা, কেউ এই ঘণ্টাঘরগুলোতে বাস করে না, আর আর সেজন্যই এগুলো ফাঁকা থাকে সবসময়। ”
“আপনি তাই মনে করেন?” মিঃ ফিলিপস্ জিজ্ঞেস করেন।
“আপনি শহরের নতুন আগন্তুকদেরই কেবল এগুলো গছিয়ে দিতে পারবেন,” সিসিলিয়া অভিযোগের সুরে বলে।
“আমি কখনোই এই কাজ করতে যাব না,” ফিলিপস্ বলেন। “করলে তা হবে খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃত্ব-চেতনার পরিপন্থী।”
“এই শহরটি যে কিছুটা ভুতুড়ে, তা কি আপনি জানেন?”
“তা হতে পারে। কিন্তু আপনার এখুনি এ ধরনের কথা বলা উচিত হচ্ছে না, যেহেতু সবে এলেন এই শহরে। আপনার অন্তত কিছুটা সময় চলাফেরা আর সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ঠিক আছে, আপনার যদি উপরের তলার ঘণ্টাঘর অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে অসুবিধা হয়, আমি আপনাকে কেন্দ্রীয় ‘প্রেজবিটেরিয়ান চার্চের’ বেসমেন্টে একটি অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে আপনাকে ওটি ভাগাভাগি করে নিতে হবে অন্যদের সাথে। ওখানে এই মুহূর্তে আরও দুজন মেয়ে বাস করছে। ”
“কারো সাথে শেয়ার করায় আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই,” সিসিলিয়া বলল। “আমি একান্তই নিজে থাকার জন্য নিজের মত করে একটি ঘর চাই। ”
“কেন,” রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফিলিপস্ কৌতূহলী চোখে জিজ্ঞেস করেন। “একা একটি ঘর দিয়ে আপনি কি করবেন? কোন বিশেষ উদ্দেশ্য আছে নাকি?”
“কি করব জানতে চাচ্ছেন?” সিসিলিয়া পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। “আসলে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নেই। আমি শুধুমাত্র চাই….”
“সেরকম হলে তা এখানকার রীতিনীতির সাথে হবে একেবারেই বেমানান। এখানকার অধিকাংশ মানুষই অন্য কোন মানুষের সাথে একত্রে থাকেন। যেমন, ধরুন, স্বামী-স্ত্রী। বা, অনেক সন্তান আছে যারা থাকে মায়ের সাথে। এছাড়া, যারা পরিবার ছাড়া থাকেন, তাদের সঙ্গে থাকেন রুমমেট। এটাই এখানকার স্বাভাবিক রীতি।”
“সে যাই হোক, আমি আমার জন্য একান্ত নিজস্ব ও আলাদা একটি থাকার জায়গা চাই, ব্যাস। ”
“এটা কিন্তু খুবই অস্বাভাবিক।”
“এসব বাদ দিন। সোজাসুজি বলেন, আপনাদের এমন কোন থাকার জায়গা আছে এই মুহূর্তে? আমি বলতে চাইছি, ঘণ্টাঘর ছাড়া?”
“এরকম জায়গা নেই বললেই চলে,” পরিষ্কার প্রত্যাখ্যান ঝরে পড়ে ফিলিপসের কণ্ঠে। “আমার ধারণা, আমি আপনাকে বড়জোর একটা কি দুটো দেখাতে পারি।”
মিঃ ফিলিপস্ এরপর ক্ষণিকের বিরতি নেন, কি যেন ভাবেন।
“আমাদের মাঝে ভিন্ন মূল্যবোধ খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়, যদিওবা থাকে, তা পারিপার্শ্বিক কম্যুনিটিগুলো থেকেই ছড়িয়ে থাকবে হয়ত। ” ফিলিপস্ ব্যাখ্যা করে। “জানেন, আমাদের নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে? এমনকি সিবিএস টিভির সান্ধ্যকালিন খবরে আমাদের নিয়ে একবার চার মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছে। সম্ভবত তিন-চার বছর পূর্বে। ডকুমেন্টারিটির নাম ছিল ‘সিটি অব চার্চেস’।”
“সবই বুঝলাম। কিন্তু আমার নিজের থাকার একটা আলাদা ঘর চাই যে করেই হোক,” সিসিলিয়া বলে, “বিশেষ করে, আমাকে যদি এখানে থাকতেই হয় এবং কাজ চালিয়ে যেতে হয়।”
“আপনার এই আচরণ খুবই অদ্ভুত আর হাস্যকর,” মিঃ ফিলিপস্ বলেন। “আচ্ছা, আপনি কোন সম্প্রদায়ের বলুন তো?”
সিসিলিয়া জবাব দেয় না। সত্যি বলতে কি, সে নিজেকে কোন সম্প্রদায়ভুক্ত হিসেবে ভেবে দেখেনি কখনো। নিজেকে আগাগোড়া একজন স্বাধীন মেয়ে হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত সে।
“আমি জানতে চাচ্ছি, আপনি কোন সম্প্রদায়ের মানুষ? অথবা, আপনার আধ্যাত্মিক শক্তিতে কোন বিশ্বাস আছে কিনা?” মিঃ ফিলিপস্ পুনরাবৃত্তি করেন।
“আমি আমার ইচ্ছেগুলোকে স্বপ্নে পেতে পারি,” সিসিলিয়া এবার উত্তর দেয়, “আমি যেমনটা চাই, ঠিক তেমন স্বপ্নই দেখতে পারি। আমি যদি এমন স্বপ্ন দেখতে চাই যে, আমি চমৎকার সময় কাটাচ্ছি প্যারিস বা অন্য কোন সুন্দর শহরে, আমাকে যা করতে হয়, তা হল, ঘুমিয়ে পড়া এবং কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তগুলো আমার স্বপ্নে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। আবারো বলছি, আমি যেমনটা চাই, ঠিক তেমন স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা আমার আছে।”
“সেক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন অধিকাংশ সময়?” সিসিলিয়ার দিকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন মিঃ ফিলিপস্ ।
“আমার অধিকাংশ স্বপ্নগুলোই যৌনতাকে ঘিরে হয়। ” সিসিলিয়া আর ফিলিপসের তোয়াক্কা করছিল না।
“শুনে রাখুন, প্রেস্টার সে ধরনের কোন শহর না,” ফিলিপস্ চোখ সরিয়ে নিয়ে বললেন।
এদিকে রাস্তার উভয় পার্শ্বে অবস্থিত গির্জাসমুহের দরজাগুলি খুলে যাচ্ছিল, কিছু লোক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছিল এবং গির্জার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিসিলিয়া ও ফিলিপসকে স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিল।
একজন তরুণ হঠাৎ দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে এলো এবং অশান্ত স্বরে চিৎকার করে বলতে লাগল, “এই শহরের প্রত্যেকেরই গাড়ি আছে। এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যার গাড়ি নেই।”
“সে কি সত্য বলছে?” সিসিলিয়া মিঃ ফিলিপস্কে জিজ্ঞেস করে।
“হ্যাঁ, এ কথা মিথ্যে নয়,” ফিলিপস্ জবাব দেয়, “ আসলেই কেউ এখানে গাড়ি ভাড়া করে না। গত একশ বছরেও কাউকে গাড়ি ভাড়া করতে দেখা যায়নি।”
“তাহলে আর এখানে থাকার কোন প্রয়োজন দেখছি না আমি,” সিসিলিয়া বলে। “বুঝেছি, অন্য কোথাও ভাগ্যান্বষনের চেষ্টা করতে হবে আমাকে।”
“না, না, আপনাকে অবশ্যই থাকতে হবে।” ফিলিপস্ বলে, “ইতিমধ্যে আপনার জন্য ‘মাউন্ট মোরিয়া ব্যাপ্টিস্টের’ মিলনায়তন কক্ষে একটি কার রেন্টাল অফিস রেডি করা হয়েছে। সেখানে একটি কাউন্টার, টেলিফোন এবং গাড়ির চাবির র্যাকও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আর একটা ক্যলেন্ডারও আছে।”
“আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না,” সিসিলিয়া বলে। “আসলে এখানে থাকার কোন যুক্তিসংগত ব্যবসায়িক কারণই আমি খুঁজে পাচ্ছি না। ”
“তা না থাকুক , আমরা আপনাকে চাই,” মিঃ ফিলিপস্ বলেন। “আমরা চাই, আপনি নিয়মিত বিজনেস আওয়ারে কার-রেন্টাল এজেন্সির কাউন্টারটির পেছনে দাড়িয়ে থাকবেন – আপনার এই কাজ আমাদের শহরটিকে এক প্রকার পূর্ণতা দান করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”
“আমি পারব না,” সিসিলিয়া বলে। “আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।”
“আপনাকে অবশ্যই পারতে হবে। এটা একটা অনিবার্য কাজ।”
“আমি যদি থাকি, সেক্ষেত্রে আমি কিন্তু স্বপ্ন দেখতে শুরু করব,” সিসিলিয়া বলে, “আর এমন সব স্বপ্ন যা আপনারা পছন্দ করবেন না।”
“দেখুন, একটা বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। আমাদের মধ্যে, মানে, এই শহরবাসীর মধ্যে, কেন জানি না, একটা অতৃপ্তি কাজ করে সবসময়,” মিঃ ফিলিপস্ বলেন, “আমরা সত্যি ভীষণ অতৃপ্ত, ভয়ানক রকমের অসুখী। কোথাও নিশ্চয় একটা গলদ আছে! হয়ত কোন শূন্যতা!”
“আমি যদি এই শহরে থেকে যাই, তাহলে অনেক গোপন বিষয় কিন্তু আমার স্বপ্নে উঠে আসবে,” সিসিলিয়া বলে। “আপনাদের আফসোসের সীমা থাকবে না কিন্তু তখন।”
“দেখুন সিসিলিয়া, প্রেস্টার অন্য সব শহরের মতই। শুধু একটাই পার্থক্য, আর তা হল, আমরা বিশুদ্ধ। আমাদের অতৃপ্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বিশুদ্ধ পথেই তা আনতে হবে। আর সেজন্যই আপনার মত একজন কার-রেন্টাল গার্ল দরকার আমাদের। ঐ কাউন্টারটির পেছনে দাড়িয়ে থাকার জন্য একজন কাউকে ভীষণ দরকার আমাদের। ”
“আপনাদের আশা পূর্ণ হবে না। আমি এমন সব জীবনের স্বপ্ন দেখব, যাকে আপনারা ভয় পান, অশুদ্ধ মনে করেন।” সিসিলিয়া প্রায় হুমকি দেয় ফিলিপস্কে।
‘তুমি আমাদের,” ফিলিপস্ এবার সিসিলিয়ার হাত চেপে ধরে। “আমাদের কার-রেন্টাল গার্ল, দয়া করে শান্ত-সুবোধ বালিকার মত আচরণ কর, এখানে জোর খাটিয়ে কোন লাভ হবে না, বুঝলে, কিছুই করতে পারবে না তুমি।”
“তাই নাকি? দাঁড়ান, সময় হলেই দেখতে পাবেন,” সিসিলিয়া বলে।
আনুবাদ অনেক ভালো হয়েছে, আর গির্জার কথা শুনে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। দেশে আমার বাসার পাশেই একটা গির্জা ছিলো, শৈশবে অবাক চোখে দেখতাম ওদের ধর্মক্ষণ।
@ঐশ্বরিক,
অনেক অনেক ধন্যবাদ আর ফেব্রুয়ারির রক্তিম শুভেচ্ছা আপনার জন্য ! (F) (F)
@কাজি মামুন,
অনুবাদক হিসাবে আত্মপ্রকাশ। স্বাগতম। গাল্পিক অনুবাদক হলে তো পাঠকদের বেশ লাভ।
@গীতাদি,
সবসময় আপনার উৎসাহ পেয়ে এসেছি। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
দিদি, এমনিতে গল্প পড়তে যেয়ে মনে হয়, সব বুঝে ফেলেছি। কিন্তু অনুবাদে নেমে দেখলাম, বোঝার ঢের বাকি থাকে আমাদের। প্রতিটি শব্দের অর্থ, আবার তার সঙ্গে আমাদের ভাষার সাথে মানানসই করে তোলা কষ্টকর একটা কাজ, রীতিমত ঘাম ঝরিয়েছে আমার।
শেষমেশ, গল্পের শেষ সংলাপ সিসিলিয়ার কন্ঠেঃ wait and see – এর জুতসই মানে এখনো বের করতে পারিনি। বুঝুন অবস্থা!
তাই অনুবাদক নয়, অনুবাদ প্রচেষ্টাকারিই মনে হয় পারফেক্ট হবে।
দিদি, আপনি এবার লিখবেন না? বইমেলা নিয়ে? আমি প্রথম দিন ১৬ টা ৫০% কমিশনের বই বগলদাবা করে বাসায় ফিরেছি। (F)
ফেব্রুয়ারির রক্তিম শুভেচ্ছা।
ভাল লেগেছে অনুবাদ। এই কাজ আমার দ্বারা কখনও হবার নয়।
@তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ, আপু। জানি না, মুক্তমনার নীতিমালা লঙ্ঘন করছি কিনা। তবে মনের একটা গোপন কথা বলে ফেলি (অনভিপ্রেত হলে মার্জনা করবেন!)। কিছু কিছু জায়গায় সিসিলিয়ার সাথে আপনার মিল খুঁজে পাই। বিশেষ করে, প্রথা ভাঙ্গার সাহসের জায়গাগুলোতে।
@কাজি মামুন,
সে আর কইতে-
বিশেষ করে,
‘নূরানী নি:সীম অন্ধকারে’
প্রথা ভাঙ্গার সাহসের জায়গাগুলোতে
আর রয়েছে কোরানের আয়াতগুলোতে।
পাই তার ই-বইতে।
@মাহফুজ,
লজ্জা লজ্জা লাগছে কিন্তু পড়িতে।
@কাজি মামুন,
কী যে বলেন, মামুন ভাই!
লজ্জায় মরে যাই।
বেশ সুন্দর অনুবাদ, একটানা পড়ে গেলাম। 🙂
@মইনুল ভাই,
এইডা আমেরিকান গল্প। আমেরিকার ভাব-ভাষা আপনি ঢের ভাল বুঝেন আমার চেয়ে। সেইডা কতটুকু আনতে পারছি, জানি না।
এইডা আমার প্রথম অনুবাদ প্রচেষ্টা। গল্পটা যখন প্রথম পড়ি, দারুণ লাগে আর মুক্তমনার জন্য মানানসই মনে হয়। তাই জীবনে যা কখনো আগে করি নাই, সেই কাজটাতে হাত দেই। কিন্তু হাত দিয়াই পড়ি ফ্যাসাদে। গল্প পইড়া বুঝা আর অনুবাদকরনের লাইগা বুঝার মইধ্যে যে এত্ত এত্ত পার্থক্য, তা আগে বুঝি নাই। যেই শব্দডারে আন্দাজে বুইঝা আগাই গেছিলাম পড়নের সময়, অনুবাদ করনের সময় তার মানে খুজতে যাইয়া পড়ি মহাবিপাকে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পারছি। তবে আমি নিশ্চিত অনেক ভুল ত্রুটি হইছে। তাই ‘অনুবাদ প্রচেষ্টা’ এইরকম একটা শব্দ ট্যাগাইতে চাইছিলাম। কিন্তু পারি নাই। তালিকার বাইরের কোন শব্দ ট্যাগানোর কোন উপায় আছে, মইনুল ভাই?
পরিশেষে, এই হাবিজাবি প্রচেষ্টারেও যেইভাবে উৎসাহিত করলেন, তা খালি মুক্তমনাতেই মেলে। অধমের তরফ হইতে অশেষ ধন্যবাদ জানবেন।
ফেব্রুয়ারির রক্তিম শুভেচ্ছা (F) !
@কাজি মামুন,
সবার সব লেখাইতো প্রচেষ্টা, তাই আলাদা করে সেটা আমরা কেউ বলি না।
আপনার অন্য লেখায়ও দেখেছি, কেমন জানি একটা আত্মবিশ্বাসের অভাব। আপনার লেখা অন্যদের কেমন লাগবে, সেটা নিয়ে হয়তো আপনি চিন্তিত থাকেন। আপনার লেখা যথেষ্ট ভালো। কিন্তু, সেটা যদি নাও হয়, তাতে কি যায় আসে। তাই, বলে আপনি কি লিখবেন না! অবশ্যই লিখবেন। একটা লেখা শেষ করার যে আনন্দ সেটা পেতে লিখবেন। আস্তে আস্তে ঠিকই বুঝে যাবেন আরো একটু ভালো কিভাবে করা যায়। আপনি নিজেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিতে পারবেন। একটা লেখা লেখতে পরিশ্রম আছে, কষ্ট আছে। অনেক দিন বা বছর পর যখন নিজের লেখাগুলো দেখবেন, বেশ ভালো লাগবে। মনে হবে কিছু একটা জীবনে করেছি, কষ্ট করে লেখাগুলো লিখেছি। এগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিমত, শেয়ার করলাম আপনার সাথে।
আর এই অনুবাদটার কথা বলছি। বাংলা অনুবাদ পড়তে গেলে ধাক্কা খেতে হয়, ফ্লো টা থাকে না। সেই জন্য বললাম , আপনার অনুবাদটা একটানা পড়লাম, অর্থাৎ, ফ্লো আছে। আর অনুবাদের আরেকটা সুবিধাও আছে। পরে যদি কোনো শব্দ ভালো না লাগে বা যথার্থ মনে না হয়, তাহলে পরিবর্তন করে দিবেন।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা। (W)
@কাজি মামুন,
শুনলেন তো, এ রকম সকলে বলেন না। ওনাদের মত পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাকারী কিছু মানুষ না থাকলে চুনোপুটিরা কবেই বিলুপ্ত হয়ে যেতো। গল্পটা তো ভালই অনুবাদ করেছেন।
@আকাশ মালিক ভাই,
মূল গল্পটা কি পড়েছেন? ইন্টারনেটে সহজলভ্য। এটাকে পুরো ভাবানুবাদ বা পুরো আক্ষরিক অনুবাদ বলা যাবে না। মোটের উপর আক্ষরিক অনুবাদের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কয়েক জায়গায় কিছু নতুন বাক্য জুড়ে দিয়েছি, মইনুল ভাই যে ফ্লো এর কথা বললেন, তা ধরে রাখার জন্য। এমন বাক্যের সংখ্যা চার-পাঁচটির বেশি হবে না।
এটি আমার প্রথম অনুবাদ চেষ্টা, তাই একটা টেনশান তো থেকেই যায়।
কয়েকটি বাক্যের অনুবাদ নিয়ে আমি এখনো সন্তুষ্ট না। যেমন, মূল গল্পের শেষ বাক্যে সিসিলিয়ার উক্তি ছিল: Wait and see. এই লাইনটির যথাযথ অনুবাদ কি হতে পারে, অনেক ভেবেছি। শেষ পর্যন্ত যা লিখলাম, তা এখনো মনঃ-পুত হয়নি।
যাহোক, উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।