স্বদেশী আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশদের অনুগত পুলিশ বাহিনীর কাছে অনেক নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু তবু জেলের ভেতরে বন্দি থাকার সময় কিছু সুযোগ সুবিধা পেত। তারা এক সাথে থাকতে আলাপ করতে, আড্ডা দিতে পারতো। তাদের ছিল বই পড়া,লেখা লেখা করা এমন কিছু ছোট ছোট মিটিং ও তারা জেলের ভেতরে করতে পারতো।
অনেক জেলে এই রাজবন্দীদের কাছে শিক্ষা পেয়ে অনেক সাধারণ কয়েদী তাদের জীবন পাল্টে যায়। তারা জেল থেকে বের হয়ে রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠে। জেল তখন বন্দি খানা থাকলেও বন্দিদের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বলা যেত। গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের কর্মীরা এবং বামপন্থীরা এক সাথেই জেলে কাটাতেন রাজ বন্দি হিসেবে। জেল থেকে বের হওয়ার পর তাদের অনেকের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আসত। কেউ কেউ জেলে বসে নতুন আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দল পরিবর্তন করতেন।
আমরা নতুন দেশ পাকিস্তান তৈরী করলাম। এবার সবই মুসলমানের দেশে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষাই চোখে মুখে ছিল। বৃটিশ পুলিশ যেভাবে আমাদের নির্যাতন করতো নিশ্চয় আমার দেশের পাকিস্তানী পুলিশ এমন করতে পারবে না। কেন না তারাও তো পাকিস্তানি, তারাও তো মুসলমান। কিন্তু ভুল ভাঙ্গতে বেশি দেরি হয়নি।
বৃটিশ আমলে রাজবন্দীদের জন্য ১৯৪০ সালের যে “সিকিউরিটি প্রিজনারস রুলস” ছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর “ইস্ট বেঙ্গল স্পেশাল পাওয়ার অর্ডিনান্স” পাশ করার সময় তা বাতিল করা হয়। ফলে রাজবন্দীদের মযার্দা জেলা শাসকের ইচ্ছানুযায়ী দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীতে নেমে আসে। রাজবন্দীদের মর্যাদা ও সুযোগ হ্রাস পায়।
পাকিস্তান সরকার গঠন করেই এই রাজবন্দী সুবিধা বাতিল করে দেয়। কেন দেয়? নিজ দেশের লোকদের কি তারা রাজনীতি করতে দেবে না? যদি দেয় তবে তাদের কেন এই সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেয়া হলো? বাস্তবতা হলো বৃটিশ আমলের পুলিশের চেয়ে এই পাকিস্তান আমলের পুলিশ অনেক গুন বেশি নির্যাতন শুরু করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন রকম সন্দেহ হলেই তাকে জেলে পুড়ে দেয়া হলো। কোন আন্দোলন সংগ্রামই সমর্থন করতে চাইল না পাকিস্তানের শাসক।
আমরা ১৯৭১এ মুক্তি পেলাম। পাকিস্তানি ভুত আমাদের মাথা থেকে নামল। এবার আমরা বাঙ্গালি। মায়ের পেটের ভাই সবাই। এবার নিশ্চয় আমাদের উপর আমাদের পুলিশ ভাইরা আর নির্যাতন করবে না! তারা তো আমারই ভাই,বন্ধু কিন্তু এবারও দেখা গেল আমাদের হতাশ হবার পালা।
গতবছর রাজপথে বিএনপির চিপ হুইপ কে প্রকাশ্যে রাস্তায় পুলিশ পিটিয়েছে। কেউ কেউ দেখি উল্লাসিত। দিয়েছে আজকে মাইর… কেউ বলে কি দৌড়টা দিল দেখলেন…। আমি বিএনপি সমর্থন করিনা। কিন্তু এই উল্লাস আমার রক্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আমি আমার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করেছি। এই জয়নাল আবেদিন ফারুক তো কেবল বিএনপির নেতা নয়, তিনি আমাদের মহান সংসদের সদস্য। আমারা তাকে ভোট দিয়ে সংসদের পাঠিয়েছি। সে কি কাজ করেছে তার উপর ভিত্তি করে আমরা আবার তাকে বাতিল করার এখতিয়ার রাখি। সংসদ যদি আমাদের গর্বের স্থান, হয় সংসদ যদি আমাদের সম্মানের স্থান হয় তবে আমাদের প্রতিনিধিকে কোন সাহসে পুলিশ পিটায়? অন্যায় করলে অবশ্যই আইন আছে তাকে ধরে আনতে পারে, আদালতে সোপর্দ করতে পারে কিন্তু লাঠিপেটা করার এই জঘন্য কাজ করতে কে পুলিশকে উৎসাহিত করেছে?
বিএনপি নেতা ফখরুলকে ২৬টি মামলা দেয়া হয়েছে আন্দোলনের সময়। এর মাঝে দেখলাম একটি হলো ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে ঢিল ছুড়েছে। কি হাস্যকর মনে হচ্ছে না। এমন হাস্যকর পরিস্থিতি কি ভাবে তৈরী হলো? এই পুলিশ দিয়েই এই অকাজটা সরকার করলো। মির্জা ফখরুল যদি দেশের জন্য হুমকি হয় তবে অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করা হোক। তাকে রাজনৈতিক মামলা দিয়ে জেলে রাখা হোক। কিন্তু এই ধরনের মিথ্যা আর হাস্যকার মামলা দিয়ে কেন তাকে বন্দি রাখা হলো? আওয়ামীলীগ কি কোন আন্দোলন ই করতে দিবে না?
আমরা ভুলে যাইনি তারেক জিয়া তার সেই দাপটের কথা। ভাওয়াল গজারি বন থেকে পুলিশকে লাঠি সরবরাহ করা হয়েছিল আওয়ামীলীগের নেতাদের পিটাতে। আজ আওয়ামীলীগ কি তার ই প্রতিশোধ নিচ্ছে? তাহলে আমরা কেন বিএনপিকে ভোট না দিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলাম। তারা মিলেমিশেই যদি আমাদের নির্যাতন করবে তবে আমরা কেন তাদের নতুন করে ভোটে ভোট জয় যুক্তি করি।
এখনকার প্রধান দুটি দলই অন্য দলের লোকদের সহ্য করতে পারে না। এরা মনে করে তাদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। বৃটিশ আমলে আমরা যে রাজনৈতিক অধিকার পেলাম,পাকিস্তান আমলেও আমরা যে রাজনীতি করার অধিকার পেলাম। এত বছর পরে এই স্বাধীন দেশে কেন সেই অধিকার পাব না। জাতীয় কমিটির জ্বালানী মন্ত্রনালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে সৈকত মল্লিকের পায়ে শর্টগান ঠেকিয়ে গুলি করেছে এই পুলিশ। দেশের সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে প্রতিবারই রক্তাক্ত হয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু কেন?
আমি এই দেশের কোন ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে রাস্তায় বের হতে সাহস পাইনা। পুলিশ ক্রমেই মারাত্বক হয়ে উঠছে আগে লাঠি পেটা করতে। এখন নিরীহ মিছিলে টিয়ার গ্যাসের পাশাপাশি গরম পানি নিক্ষেপ করে। পেপার স্প্রে সামনাসামনি স্প্রে করে অসহ্য যন্তনা দেয়। আর আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি বলেন এই বিষয়ে আমাদের কথা বলার কোন অধিকার নেই। সাংবাদিক,শিক্ষক,শ্রমিক এমন কোন শ্রেণি নেই যাকে পুলিশ সামনে পেলে বিনা উস্কানিতে আক্রমন করে না। এমন কোন আন্দোলন নেই যা পুলিশ দিয়ে ভেঙ্গে দিতে চায়নি। কিন্তু কেন?কেন সরকার এত উন্মাদ হয়ে উঠেছে?
আমরা বাঙ্গালীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর যুদ্ধ করে পরাজিত করেছি। আন্দোলন করা আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। আমরা দমে যেতে পারিনা। আমরা অন্যায় দেখলেই রুখে দাঁড়াব। নির্যাতন দেখলেই প্রতিবাদ করবো। কারন আমরা বাঙ্গালী। আমরা জানি কি ভাবে নরপশুদের দেশ ত্যাগ করাতে হয়। আমরা জানি কি করে শাসকদের জুলুমকে প্রতিহত করতে হয়।
নির্যাতনের বিরুদ্ধে,অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন আমাদের অধিকার। আমারা স্বাধীন দেশের নাগরিক কথা বলাও আমাদের অধিকার। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক এই দেশের সম্পদ লুটেরাদের কাছ থেকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। আপনাদের কাছে কোন সহানুভুতি চাইনা ,চাই অধিকার। রাজপথ থেকে গ্রেফতার করতে পারেন, তবে আমাদের যেন রাজবন্দী মর্যদা দেয়া হয়। আপনারাও এই পথেই রাজনীতি করেন তবে অন্যকে রাজনৈতিক সম্মান দিতে আপনাদের এত আপত্তি কেন? আপনারা আর নীচ হীন হবেন না। আপনারা নিজেদের এত নীচে নামিয়ে এনেছেন যে কাউকে ময়লা গাড়িতে ঢিল ছোড়ার জন্য গ্রেফতার করতে পারেন। কাপুরুষের মতো রাস্তায় পুলিস দিয়ে পায়ে গুলি করতে পারেন।এবার সাহসী হোন । আন্দোলনে ভয়ে যদি ভীত হন তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন । এই চক্রান্ত না করে আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে তাদের ফাঁসিতে ঝুলাতে পারেন, আমাদের আপত্তি থাকবে না।তবু আমরা বলতে পারব রাষ্ট্র রক্ষার জন্য আপনারা এই সব করছেন। কিন্তু এই সব নোঙরামি কেন?
পুলিশ যা করে থাকে তার জন্য পুলিশ ত দায়ী নয়। তারা ত কেবল ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারের আদেশ নির্দেশ পালন করে। প্রতিবাদী বা সাধারণ জনগণের উপর পুলশ দিয়ে নির্যাতন করানর ব্যাপারে আওয়ামিলিগ ও বিএপি ত একই। এদের মধ্যে কোন গুণগত পার্থক্য আছে কি?
@তামান্না ঝুমু,
আমার কাছে কোন পার্থক্য নেই। ক্ষমতায় যায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় এবং টিকে থাকে পুলিশের সহায়তায়।
বাংলাদেশ সত্যিই মনে হয় Twilight Zone এর দেশে পরিনত হয়েছে। কোনো কিছুই আর ধ্রুবক নয়। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় ,
তাজরীনে শ্রমিক নিহত হওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মালিকের যদি কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে, কর্তৃপক্ষ বা তার কোনো এজেন্ট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি জড়িত থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা নাশকতা-তত্পরতার কোনো প্রমাণ পাইনি।’
তাজরীনের মালিককে গ্রেপ্তার সমাধান নয়
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-27/news/324541
সংসদে দাড়িয়ে শেখ হাসিনা সরাসরি বললো নাশকতার প্রমান পাওয়া গেছে। ভিডিও প্রমান পাওয়া গেলো। কয়েকটি গ্রেপ্তারও করা হলো। কতোজন কতো কিছু লিখলো। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছে ‘নাশকতা-তত্পরতার কোনো প্রমাণ পাইনি।’
@সফিক,
সামনে নির্বাচন। ভোট করতে তো টাকা লাগবে। এই সময় কি ব্যবসায়ীদের বিরক্ত করলে চলে? আর শ দুয়েক শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জন্য নিজেদের মাঝে সমস্যা সৃষ্টি কে করতে চায় বলেন? :-X
ডাইনোসররে মুক্তমনায় দেখে ভালো লাগছে। আশা করি নিয়মিত থাকবেন।।
@প্রণব,
নিয়মিত বিষয়টা আমার রক্তেই নেই। তাই ….. :))
“যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ” কথাটার তাৎপর্য আজ কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছি লেখাটা পড়ে।
@মাহফুজ,
ঠিক মাহফুজ ভাই। আস্থা রাখাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
আমাদের ডক্টরেট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব ভালো একটা প্রিসিডেন্স সৃষ্টি করেছেন। বিরোধীনেতাকে পেটানো এখন সরাসরি পদক আর প্রমোশনের ক্রাইটেরিয়া। হয়তো বছর দুয়েক পরে কেউ উনাকে পিটিয়েই সরাসরি পুলিশের আইজি কিংবা একুশে পদক পাবে।
@সফিক,
ভাবছিলাম মখা আসার পর কিছুটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমাদের সরকার প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে সব সময় এই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পদে এমনই নির্লজ্জদের পাঠানো হবে । আমাদের চেয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব মনে হয় অনেক কম।
@সফিক,
কথাটি কি উনি সত্যি বলেছিলেন? আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি। ডিরেক্ট লিঙ্ক আছে?
এ দেশে সোহেল তাজ মন্ত্রী হতে পারবে না, পারবে এসব লোকেই।
@আদিল মাহমুদ,
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে আহত করা পুলিশের বিতর্কিত ডিসি হারুন অর রশীদ এর ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ পাওয়া নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে এমন একটা খবর পত্রিকায় পড়েছি, লিংক খুঁজে বের করতে সময় লাগবে। বিশ্বজিৎ হত্যার সময় নাকি এই প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা পুলিশ হারুন অর রশীদ সামনেই উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে অভিযুক্ত পুলিশদের তাদের মাথায় হেলমেট পরা থাকার কারণে সনাক্ত করা যায় নি। কী চমৎকার শুনা গেল! কাল অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসলেও এ অবস্থার উন্নতি হবেনা।
দায়ভারের কথা বলছেন? সব দায়ভার সরকারের, আর কারো নয়। জনগন কেন সচেতন নয়? এটার দায়ভারও সরকারের। সব কিছুর মূলে অসুস্থ রাজনীতি, স্বার্থপর, লোভী, অশিক্ষিত অসৎ রাজনীতিবিদগণ। মূর্খ জনগণ কেন এদের ক্ষমতায় বসায়? অসৎ রাজনীতিবিদরা নিজের পেট রাজনীতি করেও, অন্যায়ভাবে লুটপাট করেও কিছুটা গরীবকে দেয়, অন্যরা (তথাকথিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি ও বামরা) এ টুকুও গরীবের জন্যে করেনা। আর এ দেশে নিরক্ষর অসচেতন গরীবের সংখ্যাই বেশী। এদেরকে শিক্ষিত করে তোলার দায়ীত্ব সরকারের।
পেপার স্প্রে ব্যবহার করা নিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশকে আক্রমন করলে পুলিশ ফুলের মালা নিয়ে সেখানে যাবেনা। এই দাম্ভিকতা মূর্খ রাজনীতিবিদদেরই মানায়। দূর্ভাগ্যবশত এদের সাথে মাঝে মাঝে মোলাকাত হয়। দেখেছি এরা কত বড় ইডিয়টের (কপি রাইট, ব্লগার ফারমার) দল, কী বলে আর কী যে বুঝে তা নিজেই বুঝেনা। এদের অহমিকা, স্পর্ধা, দাম্ভিকতা দেখলে অবাক হতে হয়। বলে কী, পেপার স্প্রে জীবনের জন্যে হুমকি নয়। আরে বেটা আগে তোর মুখে মেরে পরীক্ষা কর, তারপর মানুষের উপর মারবি। একটাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বিশ্বজিৎ হত্যার ব্যাপারে। উত্তর দিল, আরে ভাই, আপনাদের দেশেও (ইংল্যান্ডে) এ রকম হাজার ঘটনা ঘটছে কিন্তু মিডিয়ায় সেই নৃসংশতা দেখায় না, আমরা মিডিয়াকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি তাই আপনারা বিদেশ থেকেও দেখতে পান। সে আরো বলে, জামাত বি এন পির আমলেও এ সব ঘটেছে বরং অনেক বেশী ঘটেছে, কারো কোন বিচার হয় নি আমরা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতেছি। আমি বললাম তারা অধম বলেই আপনাদেরকে উত্তম মনে করে ভোট দিয়েছি। সে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল। হাসিটায় প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ আর দূর্বিত্তপনা ছিল।
বি এন পির এক সাংসদ পাপিয়া নামের একটা ইডিয়টকে দেখলাম সংসদে দাঁড়িয়ে গরুর রচনা আবৃতি করছে কবিতার সুরে। বেহালা হাতে বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে যে মহিলা শরিয়ত-মারিফতের মালজোড়া গাওয়ার কথা, সে এসেছে সংসদে বাউল গান শুনাতে। আমরা কেমন দূর্ভাগা জাতী।
@আকাশ মালিক,
দোষ অবশ্যই জনগণেরও আছে। প্রতি বছর আমরাই তো মখাদের সংসদে পাঠাই। একটা বিড়ির লোভে তাদের ভোট দেই। “না” ভোট উঠিয়ে দিয়েছে কিন্তু ভোটের লাইনে দাঁড়াতে তো আমাকে কেউ বাধ্য করছে না। তাহলে এত উপচে পড়া ভিড় কেন হয়? কেন আমরা বিএনপি আর আওয়ামীলীগের নমিনেটেড দুইজনের মধ্যে একজনকে বাছাই করার মতো হেঁয়ালিতে অংশ গ্রহন করি।
আপনার সাথে সহমত সে আসলেই ইডিয়েট, পেপার স্প্রে যাদের উপর ব্যবহার হয়েছে তারা কেউ আক্রমন করেনি।
@ডাইনোসর,
আপনি কি দেশে থাকেন ভাই নাকি বাইরে? দেশে থাকলে তাহলে ভোট দিয়েন না। আমিও ভোট না দেবার সিদ্ধান্ত অনেকদিন আগেই নিয়ে ফেলেছি।আমার বিশ্বাস যে আরো অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন,যদিও জানিনা যে ভোট আসলে তারা আদৌ ভোট না দিয়ে বসে থাকবে কিনা। অবশ্য ভোট কেন্দ্রে না গেলেও আপনার পক্ষ থেকে জাল ভোট পড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সবদলকেই একই ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে, নিজদের ভোটটা নষ্ট করে দেয়া যেতে পারে।ওটাই একমাত্র রাস্তা( জাল ভোটের হাতথেকে অন্তত নিজের ভোটটাকে বাঁচানো) বলে আমার মনে হয়েছে।
@অর্ফিউস,
আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভোট দিতে যাব না। জাল ভোট যদি দেয়ার সুযোগ থাকে তবে আমি যাওয়ার আগেই দিয়ে দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কিছু করার থাকবে না।
@আদিল মাহমুদ,
এই লিংকে দেখুন,
@আদিল মাহমুদ,
স্যরি, আসেনি
http://alalodulal.org/2013/01/25/mkalamgir/
@সফিক,
এই ধরনের নিউজ এখন আর পড়ি না। কার উপর বিশ্বাস রাখবো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপর নাকি পত্রিকার উপর?
পুলিশের রাজনীতির কথা বলতে চাইনি। বলতে চেয়েছি রাজনীতিকদের পুলিশী আচরণের কথা।
@ডাইনোসর,
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার চিন্তাশীল মন্তব্য এবং লেখা সব সময়ই পড়ার চেষ্টা করি। মুক্তমনায় আরো নিয়মিত লিখবেন আশা করি।
@অভিজিৎ,
আপনার কমেন্ট পেলে সবার মতো আমারও অন্য রকম অনুভুতি হয়।
চেনা চেনা লাগে…
@আদিল মাহমুদ,
😀
খামোখা পুলিশকে সিঙ্গেল আউট করে লাভ নেই। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের কোন বিভাগটা দক্ষ ? সড়ক ও জনপদ বিভাগের কথা সবার আগে বলতে হয় ! তারপর বাকী গুলোর কথা বলে সময় নষ্ট করা আর কি।
@সংশপ্তক,
ইয়েস মিনিস্টার দেখছিলাম একটার পর একটা পর্ব। দক্ষতা ওয়াজ নেভার দ্য পয়েন্ট অব সিভিল সার্ভিস। 🙂
সিভিল সার্ভিসের অদক্ষতা জনসেবাকে ব্যাহত করে। এর আবার ভালো দিকও আছে। ফ্যাসিবাদী কিংবা কমিউনিস্ট সরকারের আরোপমূলক নীতিরও বাস্তবায়ন স্থবির করে দেয় সিভিল সার্ভিসের ফাইল চালাচালি আর রেডটেইপগিরি করে। সেটা বরং শাপে বর। সোভিয়েত ইউনিয়ন তার নীতির বাস্তবায়নের পথে একটা বড় বাঁধা মনে করতো আমলাতান্ত্রিকতাকে। হোয়াট এ ব্লেসিং দে য়আর! এ জন্যে ফ্যাসিবাদী ও কমিউনিস্ট সরকার আমলাদের মাঝে রাজনৈতিক নিয়োগের বাইরেও পৃথক রাজনৈতিক সংস্থা, নিজের অঙ্গসংগঠনের ব্যবহার এগুলোর উপর নির্ভর করে থাকে তার নীতিমালার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে। সরকারের অনিষ্টকর নীতির অধীনে দুর্নীতিই মঙ্গলময় হয়ে ওঠে। :-[
@সংশপ্তক,
এটাই আমি এ প্রসংগে বলি, যদিও পুলিশকে গাল আমিও দেই। গোটা সিষ্টেমের পরতে পরতে যেখানে সমস্যা, সেখানে এক পুলিশ বাহিনী সত, কর্তব্য পরায়ন, ন্যায় পরায়ন হয়ে উঠবে এমন আশা করাটাই তো বোকামি। ভাবখানা এমন যে দেশের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, আইনজীবি, ব্যাবসায়ী, মন্ত্রী এমপি, সাংবাদিক সকলেই নিজ নিজ দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে কেবল বেপথে চলছে পুলিশরাই।
আসলে পুলিশ, ডাক্তার এই দুই পেশার লোকের হাতে জীবন মরনের ব্যাপার নির্ভর করে বলে এদের ত্রুটি বিচ্যূতি বেশী করে চোখে লাগে।
এ লেখায় অবশ্য এ ভাব আসেনি, পুলিশ কেন লাইনচ্যূত হয় তার একটা বড় কারনই এসেছে। সোজা কথায় পুলিশ ও সরকারী দলের মধ্যে সব সময়ই অঘোষিত (কে জানে লিখিতও হতে পারে!) বোঝাপড়া থাকে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা হবে, তার বিনিময়ে তাদের দূর্নীতি অনাচার বিষয়ে নীরবতা পালন করা হবে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মতে দুর্নীতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেয়ে বেশি অবশ্যম্ভাবী। বরং দুর্নীতি এমন সুরক্ষিত সিস্টেমে ঘটমান থাকে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়াটাকে সে ফ্যাসিলিটেট করে। উল্টোটা না।
এখন রাজনৈতিক পক্ষের সাথে আঁতাত এক সমস্যা। অথচ আমাদের হাতে খোলা একমাত্র পথ হচ্ছে সেই রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগেই অবস্থান্তর। সমস্যার সমাধান কী?
@রূপম (ধ্রুব),
পুলিশের ব্যাপারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করাটা একটা বড় কারন বলেই মনে করি, তবে একমাত্র কারন নয় বলাই বাহুল্য।
সমাধান কি? আমিও জানি না। আমার মনে হয় সমস্যা আসলে পুলিশ বা রাজনৈতিক দল কোন রকমের সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে নয়, সমস্যা ব্যাক্তি ‘আমরা’ তেই। সোজা কথায় ব্যাক্তি আমিদের আমিত্ব একটা ন্যূনতম পর্যায়ে না আসলে স্বাধীনতা, গনতন্ত্র, ধর্ম সব কিছুই ফেল মারতে বাধ্য।
@আদিল মাহমুদ,
এজন্যেই প্রচলিত ধারণার বিপরীতে গিয়ে বলছিলাম যে – আমার মনে হয় – ইভেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না ঘটলেও দুর্নীতি থাকতোই। এতোটাই বিরাজময়তা তার। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার একটা বড় কারণ ঠিকই, দুর্নীতিকে আরো রিইনফোর্স করে।
আমাদের সচেতনতা আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বানাবে। সামাজিক সাংস্কৃতিক উত্তরণ। কিন্তু মানুষের মূল স্বভাব, ক্ষমতার প্রকৃতি, আমলাতান্ত্রিকতার স্বরূপ, সেগুলো তো আর পাল্টাচ্ছে না। সরকারের সিভিল সার্ভিসের দুর্নীতি অদক্ষতা তো যুক্তরাষ্ট্রেও আছে, স্রেফ উপরের তলায় চলে গেছে। আপাতত মনে হয় আমরা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র হতে পারলেই সই। তবে এটা মানতে হবে যে এই সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্যে সহায়ক ন্যূনতম ব্যবস্থা যেমন মানুষের স্বাধীনতা, ভিডিও তোলার ও প্রকাশের অধিকার ও গণতন্ত্র অপরিহার্য।
@আদিল মাহমুদ,
এখানে অবশ্য ডায়নোসর সাহেব বাংলাদেশের রাজনীতিকদের পুলিশী আচরণের ব্যপারে প্রশ্ন তুলেছেন। এখন প্রশ্ন হল যে , বিষয়টায় কোন নতুনত্ব আছে কি না। সৈনিকরা যুদ্ধক্ষেত্রে কেন গুলি চালায় ? যুদ্ধক্ষেত্রে গোলন্দাজ বাহিনী , জঙ্গী বিমান কেন ব্যবহার হয় ? শল্যবিদেরা কেন ছুড়ি কাঁচি ব্যবহার করেন ? আপনিই বা কেন নক্সা আঁকতে অটোক্যাড কেন ব্যবহার করেন ? ফ্যাসিবাদী ইতালী , নাৎসী জার্মানী এবং কমিউনিস্ট দেশগুলোয় রাজনীতিকেরা যে পুলিশী আচরণ করতো এবং এখনও করছে সে তুলনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকদের অনেক নরমই বলতে হয়। যে দেশের জিডিপি বৃটেনের জিডিপির এক আনাও নয় , যে দেশে আয়করযোগ্য আয় সত্বেও কেউ এক পয়সা আয়কর দেয় না , সেখানে ষোলআনা বৃটিশ রাজনীতির দাবী করাটা মামাবাড়ীর আবদারই বটে !
রাজনীতিকদের রাষ্ট্র চালাতে হয় এবং রাষ্ট্র চালাতে গেলে রাষ্ট্রীয় আইন বলবৎ রাখতে হয়। মিছিলকারীরা ভাঙচুর করেন , সম্পত্তি ধ্বংস করেন যা তাদের বাপের সম্পত্তি নয় । এসব থেকে নাগরিকদের কাউকে না কাউকে তো বাঁচাতেই হবে , না কি ? রাষ্ট্র চালানো অনেক জটিল বিষয়। গনতান্ত্রিক দেশে সংসদ এবং নির্বাচন ব্যতীরেকে ভিন্নমত পোষনের জন্য আন্দোলনের নামে সহিংসতাকে যদি আমরা সমর্থন করি , তাহলে তো প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিতে হয়। সামরিক অভ্যুত্থানে তাহলে অসুবিধা কোথায় ? যতদিন বাংলাদেশে আন্দোলনকারীরা দায়িত্বশীল আচরণ করতে শিখবে না ততদিন পুলিশী আচরণ করা ছাড়া কোন উপায় নেই রাজনীতিকদের হাতে। পুলিশী আচরণ যদি পছন্দ না হয় অসুবিধা নেই । সেক্ষত্রে এই অসভ্য দেশের কপালে ফৌজি আচরণই লেখা থাকবে ।
@সংশপ্তক,
– এত কড়া কথা তো সরাসরি বলা যায় না, বিশেষ করে নিজেকেও যখন দেশবাসী হিশেবে দায়ের শরিক হতে হয়। ওপরে কথাটি ঘুরিয়ে অন্যভাবে বলেছিলাম,
– আমার সব সময়ই মনে হয়েছে যে বাংলাদেশ পাকিস্তান দুটো দেশই বেশ অপরিপক্ক অবস্থায় স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। আমাদের দেশের অবস্থা এমনই জটিল যে ঠিক কার ওপর দায় চাপানো যায় সেটাই নির্ধারন করার উপায় থাকে না। ঢাকার ট্রাফিকের অবস্থা দেখে বার বার মনে হচ্ছিল এটাই দেশের প্রকৃত চেহারা। বিদেশে রাস্তায় অন্য কারো সাথে গাড়ি লেগে গেলে কাউকে না কাউকে দায় নিতে হয়, কারন কেউ না কেউ ট্রাফিক আইন ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছায় হোক ভংগ করেছে। ব্যাতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে ৫০-৫০ দায় ভাগ হতে পারে। ঢাকা শহরে তা নির্ধারনের কোন উপায় নেই, কারন ট্রাফিক আইন কেউই মানে না (এ অবস্থায় যে মানতে চায় তারও মানার কোন উপায় নেই)। রাস্তার মার্কিং, সিগনাল এসব হল শোভাবর্ধনের জন্য। যেখানে কেউই আইন মানে না সেখানে দায় কিভাবে কারো ওপর দেওয়া যায়?
বিশ্বের আর ক’টা দেশের গন্ডায় গন্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটিন করে নিয়মিত ভিসি হঠানোর আন্দোলন গড়ে ওঠে, হাসপাতালের ভেতর তুচ্ছ কারন নিয়ে মারামারি হয় কেউ বলতে পারেন? কেবল অমূকের দায়, দলবাজি, চাঁদাবাজি, দূর্নীতি……এসবের বাইরে যে বৃহত্তর চিত্র সেটা কিভাবে অস্বীকার করা যায়?
ক’দিন আগে তাজরিন গার্মেন্টেসের আগুনে মানুষ হত্যা নিয়ে কত মাতম সকলে করলাম, ফলাফল কি? তখনই বলেছিলাম যে আমাদের আহাজারিতে কিছুই হবে না। সেই দেখেন আবারো আরেক গার্মেন্টসে আরো কিছু লোকে পুড়ে মরল, কারন যাইই হোক সেই একই চিত্র, ফায়ার সেফটি ছিল একেবারেই কাগুজে। তখন আরেকটি কথা বলেছিলাম যে যে সমাজে দায় নেবার মত লোক থাকে না সে সমাজ থেকে ভয়াবহ কিছু হতে পারে না। সভ্যতার বড় নির্ধারক দায় নেবার মানসিকতা থাকা।
@আদিল মাহমুদ,
অপরিপক্ব শব্দটি ব্যবহার করলে ধরে নেয়া যায় এর বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ স্বাধীন হবার যোগ্য হয়ে ওঠার একটা মাপকাঠি আছে। এই রকম কোন মাপকাঠি ধরে স্বাধীনতা দিতে থাকলে আমরা কবে নাগাদ স্বাধীনতা পাবার যোগ্য হয়ে উঠতাম? অথবা আদৌ কি কোনদিন যোগ্য হয়ে উঠতাম? কিংবা প্রশ্ন রাখা যায় পৃথিবীর কোন পরাধীন দেশ কি স্বাধীনতা পাবার যোগ্য কোনোদিন হয়ে উঠত? অথবা ঘুরিয়ে বলা যায় তাদের কি যোগ্য হয়ে উঠতে দেয়া হত? কেবল পরাধীন হয়ে থাকলেই কি আমরা মানুষ হিসেবে যথেষ্ট সভ্য হয়ে উঠতাম?
প্রশ্নগুলো নিজেকেই করছি। জবাব চাইছি না।
যেই সব দেশে বড় সড়কে মোটরগাড়ি কোন সংঘর্ষ ছাড়াই তুমুল বেগে ছুটে চলতে পারে, তাদের দেশের মাত্র ৫০ বছর আগের ইতিহাস এত চমকপ্রদ নয় মনে হয়। এই যে বদলে যাওয়া, এটি কেবল ৫০ বছর সময় দিয়ে বিবেচনা করলে সময়ের উপর অন্যায় করা হবে। ইতিহাস বলে, ওদের ৫০ বছরের উন্নতির পেছনে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক এবং নৃতাত্ত্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষের মতন প্রতিটি জাতির জনগোষ্ঠীর চরিত্র ভিন্ন। এই চরিত্র রাতারাতি বদলাবার নয়। জাতির বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বভাব বদল কোন পারমানবিক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা ভাল একটা সড়ক তৈরি অথবা কম্পিউটারের একটা হার্ডডিস্ক আর প্রোগ্রাম বদলের মতন বাহ্যিক বিষয় নয়। এই বদলটা ভেতর থেকে হতে হয়। ভেতর বলতে কয়েক প্রজন্ম ধরে পরিশোধনের মাধ্যমে। এর জন্য সময় লাগবে।
@পথিক পরাণ,
আপনার বেশীরভাগ কথাই সত্য, বড় ধরনের দ্বি-মতের অবকাশ দেখি না তবে প্রকাশ করার ভাষা বা অনুভূতি হয়ত আমার ভিন্ন। যেসব প্রশ্ন করেছেন সেসবের জবাব আমার কাছেও নেই, নেই বলেই মাঝে মাঝে ভাবি।
৫০ বছরের তত্ত্ব সম্পর্কে কিছু বলার ছিল, আপাতত হাতে সময় নেই।
হার্ডডিস্ক পরিবর্তনের মত নয় জানা কথা, তবে সেই কাংখিত পরিবর্তন কতদিনে হতে পারে বলে আপনি আশা করেন? কত প্রজন্ম লাগবে বলে মনে করেন? প্রশ্নর সঠিক জবাব আপনি বা আর কেউ দিতে পারবেন এমন আশা অবশ্য এখন করছি না।
প্রতিটা অঞ্চলেরই জনগনের কিছু বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, সত্য কথা। এই উপমহাদেশে ভারত পাকিস্তান এক সাথে স্বাধীন হয়ে, ভারতের থেকে পার ক্যাপিটা সম্পদ এ অগ্রগামী থেকেও আজ বিশ্ব দরবারে পাকিস্তানের করুন হাল আর ভারতের উচ্চাসনের কারন কি মনে করেন? বাংলাদেশের অবস্থাও পাকিস্তানের মত না হলেও (যদিও অর্থনীতির বিচারে পাকিস্তান এগিয়ে) আশাপ্রদ নয় বলাই বাহুল্য। ভারত ‘৪৭ সালে স্বাধীন হবার পর ৪০ যোগ দিলে, ‘৮৭ সালের ভারত আর আজকের বাংলাদেশ কি সমতূল্য ছিল বলা যায়? রাতারাতি উন্নতি হয় না জানা কথা।
ওপরের কথাগুলি এ কারনে বললাম যে যারা এমন ধরনের কথা বলেন যে অমূক উন্নত জাতিও মাত্র অত বছর আগে মিসকিন ছিল, অতএব কিছু সময় গেলে আমরাও উন্নত হয়ে যাব এমন ধরনের সরল তত্ত্বে আমি তেমন ভরসা পাই না বলে।
@আদিল মাহমুদ,
সহমত। এটা আমি বহুবার বলেছি এবং আবার বলছি যে , সামাজিক ডি এন এ – পরিবর্তন কেবল সামাজিক বিবর্তনের মাধ্যমেই ঘটে । বিপ্লবের দ্বারা বা অন্য কোন উপায়ে রাতারাতি জোর করে আরোপ করা যায় না । হ্যা , রাতারাতি রাষ্ট্রের রূপরেখা, সরকার ইত্যাদি হয়তোবা বিপ্লবের দ্বারা বদলানো যায়। কিন্তু সমাজের ডি এক এ একই থাকে যার প্রতিলিপি একইভাবে প্রতিনিয়ত তৈরী হতে থাকে।
যা কিছু চারপাশে দেখছেন সেটা বাংলাদেশের মত আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে চলতেই থাকবে । কেন? এজন্য এখানকার সামাজিক ডাইনামিক্সটা বোঝা দরকার। জানেন নিশ্চয়ই যে , ইংরাজীতে wag the dog বলে একটা কথা আছে । এখানে কুকুর = রাষ্ট্র এবং লেজ মানে সমাজ । কুকুর লেজ নাড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে লেজ (মানে সমাজ) কুকুরকে নাড়ায় । এই ডাইনামিক্সটা প্রতিটা আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে দেখা যায় যা থেকে উত্তরনের জন্য সামাজিক বিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই।
আপনি আমি যে এসব জিনিষ আলোচনা করছি তা ঐ সামাজিক বিবর্তনেরই অংশ। আপনার আমার মত লোক ধীরে ধীরে সম্পূর্ন জনগোষ্টীকে প্রতিস্হাপিত করবে এবং তখনই বিবর্তনটা খালি চোখে ধরা পরবে।
বিবর্তন বিপ্লবের মত ভোঁতা একটা বিস্ফোরণ নয় , বরং একটা চলমান প্রক্রিয়া যেটাকে ইচ্ছে করলেই কেউ বদলাতে পারে না। সফল বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফেরত যাওয়ার উদাহরণ ভুঁড়ি ভুঁড়ি দেয়া যায়।
@সংশপ্তক,মালয়েশিয়া, ইন্দোনাশিয়া তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে কম সামন্ততান্ত্রিক ছিলো না ৫০ বছর আগে। ওদের ওখানে সামাজিক বিবর্তনটা ভিন্ন হলো কেনো? ওদের কি সামাজিক ডিএনএ কি বেশী প্লাস্টিক ছিলো?
৫০ এর দশকে দ: কোরিয়ার মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের চেয়ে কম ছিলো। জাপানী কলোনী থেকে সদ্যমুক্ত কোরিয়ার সমাজও পাকিস্তানের চেয়ে খুব উন্নত ছিলো বলা যাবে না। সেখানেই বা পরিবর্তনটা ভিন্ন হলো কেনো?
@সফিক,
মুক্ত বাজার? অবাধ পুঁজিবাদ? অর্থনৈতিক মুক্তি?
@রূপম (ধ্রুব),তাহলে তো বলতে হয় সামাজিক বিবর্তন তো আর শুধু endogenous variable দ্বারা নির্ধারিত নয়, exogenous variable এর অনেক ভূমিকা আছে।
কোন জাতি কি ধরনের path বাছাই করছে, কি ধরনের নেতৃত্ব পাচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন। এজন্যেই বলছি যে ডিএনএ’র মতো উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত জাতিগত দোষের কারনেই আমাদের এই দূরাবস্থা এটা একটা অতিসরলীকরন যার মধ্যে insight বেশী নেই।
@সফিক,
এখানে ভৌতিক ডি এন এর কথা বলা হচ্ছে না। ডি এন এ বলতে সামজিক পরিচিতর মৌলিক বৈশিষ্ঠগুলোকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া ডি এন এ -তে জাতিগত দোষের উপর গবেষণা তেমন একটা হয়নি এবং এটাকে সাধারণত নিরুৎসাহিতই করা হয়।
অন্যদেশের দিকে না তাকিয়ে আমাদের নিজেদের দিকেই তাকানো দরকার। ১৯৫০ বলতে বৃটেন থেকে স্বাধীনতার মাত্র তিন বছর পরের কথা। তখনও রাজনীতিতে চোর গুন্ডা বদমাস চৌকিদার ফালু লালু ভুলু দুলু আসেনি , সিভিল সার্ভিসে ইংরেজ ভাব তখনও বহাল , প্রশ্নপত্র চুরি করে আক্কাস মিয়ার ছেলের সিভিল সার্ভিসে ঢুকে চুরি চামারি করা তখনও শুরু হয় নি। সেই সময়কার সিভিস সার্ভেন্টদের কথা এখনও বয়স্করা প্রশংসার সাথে উচ্চারণ করেন। কিন্তু আমরা সেটা ধরে রাখতে পারি নি। খেই হাড়িয়ে ফেলেছি। বাকীরা সবাই এগিয়ে গেছে আর আমরা বালুতে মুখ গুজে ঝড় থামানোর চেষ্টা করছি। শুনলে অবাক হবেন যে , বাংলা-পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে কম সামরিক বাজেট দিয়েছিলেন আইয়ুব খান যা তার পূর্বসূরীদের চেয়েও কম ছিল । পাকিস্তান তো শেষ , বাংলাদেশ আজ শেষ হলে কি হবে চাপার জোড়ে বাঙালীকে এখন কে ঠেকায় ? দেশের আইন কানুন জেলা , প্রশাসন , যে কয়টা মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে , রেল লাইন বসেছে , অবকাঠামো তৈরী হয়েছে তার কয়টায় ফালু লালু ভুলু দুলুদের নাম লেখা আছে । যে জায়গা থেকে উদ্ধার করে বৃটিশরা আমাদের যেখানে ছেড়ে গিয়েছিল সেখান থেকে উল্টোদিকে যাত্রা আমাদের।সারভাইবাল ফিটনেট বাড়ানোর বদলে সামাজিক মিউটেশনগুলো ক্যান্সার আকারে দেখা দিয়েছে যা কোরিয়ানদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। সব প্রাইমেটই যদি বিবর্তিত হয়ে মানুষ হতে পারতো তাহলে কাদের আমার বান্দর বলতাম , বলেন ?
@সংশপ্তক,
কোরিয়ান এক জাতির ভিতরে আবার যখন উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনায় যাওয়া যায়, তখন বিষয়টা পাজলিং হয়ে যায়। সেখানে নেতৃত্বটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। একই অবিভাজিত জাতি তারা। একটা যুদ্ধের সমাপ্তি সীমানাটা একই ভূখণ্ডের দুটি অংশের একেবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাগ্যকে নির্ধারণ করে দিয়েছে।
ব্যাপারটা জনতা ও নেতৃত্বের একটা ডুয়েট বলা চলে। নেতৃত্ব যদি সমগ্র জনগোষ্ঠিকে জিম্মি করে ফেলে, তখন সেই ভায়োলেন্সের মুখে সেই জাতি কেনো তার স্বাধীনতা আদায় করে নিতে পারলো না, সেই দোষারোপ কতোটা করা যায় সেটা বিচার্য।
@রূপম (ধ্রুব),
স্বাধীনতা একটা আপেক্ষিকতা মাত্র। জনতা কক্ষপথ পরিবর্তন করে এক বিন্দু ছেড়ে অন্য বিন্দুকে ঘিরে আবর্তিত হয়। সোভিয়েত সমর্থন প্রত্যাহারে যেমন পূর্ব জার্মানী পশ্চিম শিবিরে চলে এসেছে , চীনা সমর্থন প্রত্যাহারে তেমনি উত্তর কোরিয়া জাপ-মার্কিন শিবিরে চলে আসবে। এটা সময়ের ব্যপার মাত্র। আধুনিক গনতন্ত্রের বয়স মানব ইতিহাসের তুলনায় এক ক্ষুদ্র সময়কাল। মানব ইতিহাসের বেশীরভাগ সময় মানুষ একনায়কতান্ত্রিক শাসনে বসবাস করে এসেছে সমাজ সৃষ্টির পর থেকে। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে মানুষ শক্ত এবং আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্বের অধীনে থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে বলেই প্রতীয়মান হয় – যেমন নেকড়েদের একটা নেতা থাকে , মৌমাছিদের আছে। নেতৃত্ব দূর্বল হয়ে পরলে সবল নেতৃত্ব সেই শূন্যতা পূরণ করে। প্রাণী জগতে এটাই নিয়ম। মানুষও একটা প্রানী – কোন সৃষ্টিকর্তার দূর্বোধ্য খেলার ঘুঁটি নয়। ঐশী প্রতিনিধির বদলে আমরা যেদিন নিজেদের জীবজগতের একটা প্রানী হিসেবে গন্য করতে শিখবো , অনেক জটিল বিষয়ই স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেবে আমাদের দৃষ্টির আঙিনায়। কিন্তু এটা হবার নয় কারণ আমরা মানব সুপ্রিমিস্ট সিন্ড্রোমে ভুগছি – সবার উপরে মানব সত্য ব্লা ব্লা ব্লা ! আমাদের ধ্বংসই আমাদের সমস্যার চুড়ান্ত সমাধান।
কারন এইবার আমরা বিএনপি কে ভোট দিব তাই।তারপরের বার আবার আওয়ামী লীগ কে।এভাবেই চলতে থাকবে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশ………………..।
@অর্ফিউস,
কথা সত্য বলছেন। এর বাইরে আমাদের কেউ স্বপ্ন দেখাতে পারছেনা।
আমাদের দেশের সমস্যা হল “পুলিশ” কনসেপ্টের সাথেই কেউ ঠিক ভাবে পরিচিত নয়। গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রে পুলিশ একটি সিভিলিয়ান বাহিনী। এর কোন সামরিক ঐতিহ্য থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।
পুলিশের জন্য কতগুলো প্রস্তাবনা (মূল লেখা) –
১। পুলিশের মধ্য এই স্পিরিট আনতে হবে যে তারা “সিভিলিয়ান” আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সার্ভিস। পুলিশে “স্যালুট” বিশেষভাবে “অর্ডার আর্মস-প্রেজেন্ট আর্মস” সহ অন্যান্য সামরিক কায়দা কানুন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণ ভাবে সাধারণ স্যালুট এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় “থৃ ভলি” রাখা যেতে পারে। সিভিলিয়ান বাহিনী হিসেবে রাজনৈতিক নেতা কিংবা বিচারপতিদের স্যালুট দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
২। যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি এবং তা একাডেমিক যোগ্যতার তার সাথে তাদের প্রফেশনাল প্রবলেম সল্ভিং যোগ্যতা সবচাইতে বড় মাপকাঠি হতে হবে।
৩। নেতাদের তদবির বন্ধ করা বিশেষভাবে ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা। আর নেতাদের বাচ্চা-কাচ্চা কিংবা চামচা হতে পুলিশকে দূরে রাখা অতীব জরুরী।
৪। নেতাদের মাথায় রাখা উচিত বেশিরভাগ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি পুলিশবাহিনীর বিগবস ক্ষমতা হারাবার পর পুলিশি মাইর খেয়েছেন। মানুষ সাধারণত তাদের কর্মজীবনের সাবেক বসদের সম্মান করে এমনকি সিনিয়র হয়ে গেলেও “স্যার” সম্বোধন করে। কিন্তু পুলিশ তাদের সাবেক রাজনৈতিক বসদের কিভাবে গায়ে হাত তুলে এটা সবাই যানে। এর জন্য পুলিশের দায় আসলেই অনেক কম, মূল দায়ী ওই রাজনৈতিক নেতারা।
৫। পুলিশকে পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে। নাহলে যা চলছে তা আরও খারাপের দিকে হবে।
৬। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর পুলিশ সদস্যদের সুযোগসুবিধার কথা ভাবতে হবে। প্রথমশ্রেণীর পুলিশ সদস্যদের সুযোগসুবিধা সরকারের অন্যান্য বিভাগের প্রথমশ্রেণীর কর্মকর্তা থেকে ক্ষেত্র বিশেষে অনেক বেশি তবে অন্যান্য পদবীর সদস্যদের সুবিধা ঠিক ততটাই কম।
৭।অবশ্যই পুলিশের উপযুক্ত আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম এর ব্যাবস্থা করতে হবে।
আমাদের দেশে পুলিশের অবস্থা, এমন যেন সীমান্ত রক্ষী প্যারামিলিটারি বাহিনী বিজিবির আভ্যন্ত্যরীন কাউন্টারপার্ট এটা!!
@সংবাদিকা,
পুলিশের মূল সমস্যা এর আইন/ স্যালুট/ রাজনৈতিক তদবীরে নয়। বরং মূল সমস্যা হচ্ছে পুলিশকে তার কাজের জন্য সচরাচর জবাবদিহি করতে হয়না। পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ করে কোন লাভ হয় না, কেননা সেই নালিশ অন্য একজন পুলিশ তদন্ত করে। পুলিশ এক্ট ১৮৬১ এর কোথাও পুলিশকে কারো তাঁবেদারি করতে বলা হয়নি। পি আর বি এর কোথাও বলা হয়নি পুলিশ বাহিনী পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
থানায় প্রতি মাসে যতোগুলোগুলো মামলা হয়, তার সবগুলো কি রাজনৈতিক? মোটেও না। অথচ দোহাই দেয়া হয় নেতারা মামলা প্রভাবিত করে। মামলার আসামীরা কি করে ধরা পড়ে আর ছাড়া পায়, কিভাবে একটা মামলার চার্জশিট হয় অথবা ফাইনাল রিপোর্ট যায়- এর সবকিছুই কি রাজনৈতিক? কিছুটা প্রভাব থাকতে পারে- কিন্তু আমি বলব, এর পেছনে মূল কারণ পুলিশের কোন জবাবদিহিতা নেই। পুলিশ আইনে পাওয়া ক্ষমতাটুকু ঠিকই ব্যবহার করে, কিন্তু বিভিন্ন আইনে যে দায়িত্ব দেয়া আছে, সে দায়িত্বকে থোরাই কেয়ার করে।
@পথিক পরাণ,
এখানে আমি এটা মোটেও “মূল” সমস্যা বলিনি। এটা অন্যতম সমস্যা এবং খুব স্পষ্ট করেই বলেছি এখানে কিসে সমস্যা। পুলিশ নিজেকে আনেক সময় প্যারামিলিটারি ফোর্স মনে করে এবং ঔপনিবেশিক আমলে এটাকে মূলত এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছিল তবে তারা নিজেদের দেশে পুলিশকে ভিন্ন রূপে সাজায়।
এটা মনে হয় একটু ইউটোপিয়ান চেতনা হয়ে গেল!!! আইনে সবই তো থাকে। ভালো ভালো কথা… এখানে কার্জকারিতা মূখ্য!
মোটেও সব রাজনৈতিক নয়। তবে অনেক মামলায় রাজনৈতিক চাপের কারণে, পুলিশের উপর আর নৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকেনা রাজনীতিবিদদের। এটা একটা ডোমিনো ইফেক্ট…… এবং এটা আপ টু বটম……
@সংবাদিকা,
মানুষের ইন্সেন্টিভে মনোযোগ দিতে হবে। বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অদক্ষতা আর আমলাতান্ত্রিকতা হার্ডলি এ প্রবলেম। কারণ তেমন প্রতিষ্ঠান একটা উদাহরণ তৈরি করার আগেই নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান অদক্ষতা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়েও টিকে থাকতে পারে কারণ তার ফ্রি ও গ্যারান্টিড মানি সাপ্লাই আছে। অদক্ষতার সাথে ফান্ড কাটার সম্পর্ক দুর্বল। আমলাতান্ত্রিকতার সাথে ফান্ডের সম্পর্ক আরো সুখের। যতো বেশি স্টাফ আর কমিটি, ততো বেশি ফান্ড।
কিছু হারানোর ভয় না থাকলে তারা দক্ষ ও ন্যায়ানুগভাবে কাজ করবে কীসের বেসিসে? পথিক পরাণ মনে হলো সেদিকটাতেই আলোকপাত করছেন। জবাবদিহিতা। আর জবাবদিহিতা সিভিল সার্ভিসের গণ্ডিতে গিয়ে শেষ হলে সেখানে আশার আলো আর দেখা লাগবে না। আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠি শাসনের চেয়ে গণতন্ত্র একারণেই উত্তম যে এর একটা ফিডব্যাক লুপ আছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক নেতা তথা মন্ত্রীকে তার গদির ভয়ে ন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর চেয়ে বড় সাস্টেনেবল জবাবদিহিতা কমই আছে। নাথিং এল্স গনা ওয়ার্ক। বেশি বেতন, আধুনিক সরঞ্জাম, এগুলোর কোনোটাই ন্যায়ানুগ আচরণকে উৎসাহিত করার কাছাকাছিও যায় না। আমাদের পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের সুযোগ পেয়েছে, তাতে তার আগ্রাসী ও অন্যায় চরিত্র বেড়েছে না কমেছে?
আমরা ভাবতে পারি যে গণতন্ত্র তো আমাদের দেশে একেবারেই কাজ করছে না। হারুন যে ফারুককে পেটালো সেটা ধরুন। এক অর্থে কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সরকার আগেও বহুবার এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে জানতেও পারেন নি। এবার এটা বেটার হয়েছে যে মিডিয়া শক্তিশালী ও ক্রিয়াশীল হওয়ায় ভিডিও হয়েছে। ইন্টারনেট সুপ্রাপ্য হওয়ায় যারা টিভিতে ওটা মিস করেছে, তারা পরে ফেইসবুকে বা ইউটিউবে দেখে নিয়েছে। সরকার সরকারের কাজটিই করেছে, সবসময় যেটা করতো, কিন্তু মানুষ জেনেছে, মানুষ ফুঁসেছে। আরো ফুঁসবে। গণতন্ত্র সৎ উদার মহৎ নেতার দ্বারা উন্নত ও সংশোধিত হয় না। গণতন্ত্র উন্নত হয় গদি-লোভী রাজনৈতিক নেতা জনগণের ফুঁসানো স্তিমিত করার জন্যে তার নষ্টামিতে ছাড় দিয়ে। এতে খুব যে ওলটপালট হয়ে যাবে রাতারাতি তা নয়। কিন্তু এভাবেই গণতন্ত্র এগোয়। কোনো মহৎ নেতার পদক্ষেপেও না। কোনো হাইপোথেটিকাল দক্ষ প্রশিক্ষিত সিভিল সার্ভিসের গুণেও না। ওগুলোতে উন্নতির বিন্দুমাত্র আশাও নেই।
@রূপম (ধ্রুব),
১। প্রথমত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারী প্রতিষ্ঠান আরও সঠিক করে করে বললে রাষ্ট্র যন্ত্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা দেওয়া ঠিক নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাত্রই প্রফিট ম্যাক্সিমাইজিং এটা টিপিক্যাল কর্পোরেট/প্রাইভেট কোম্পনি হোক কিংবা সোশ্যাল কোম্পানি হোক (অনেক সামাজিক ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তি দ্বিমত করতে পারেন আর্গুমেন্ট করলে শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে করতে পারবেন কিন্তু তিনিও মানবেন প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তা না)।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ কি ব্যাপারটা এখানে উল্লেখ করা বাহুল্য।
২।সমস্যাটা যেহেতু আপ-বটম তাই এখানে রাজনীতিবিদ মূল না হলেও প্রথম সমস্যা।
৩। জবাবদিহিতা কাগজে কলমে খুব ভালো ভাবেই আছে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক প্রভাব থাকে তাহলে জবাবদিহিতা কার কাছে??? পুলিশের ঠিকই জবাবদিহিতা আছে এবং যাকে তাদের দেওয়া প্রয়োজন তাকে ঠিকই দেয়। একটা ব্যাপার আলোকপাত করতে হয়, বাংলাদেশ পুলিশে কোন কার্যকরী ডি-ফ্যাক্টো চেইন অফ কমান্ড নেই। একটি বিশেষ জেলার চুনোপুঁটি কর্মরতরা তাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কোন তোয়াক্কা করেনা!! আর বিশেষ দলের বলাই বাহুল্য!!!!! সুতরাং যারা একটু নড়ে চড়ে বসতে চায় তারাও নিজের আখের গোছায়।
৪। সুযোগ সুবিধার কথা…… আসলেই আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে। আমাদের পুলিশ বাহিনীর স্ট্রাকচার পশ্চিমা পুলিশ বাহিনীর স্ট্রাকচার হতে পুরো ভিন্ন। পুলিশে আক্ষরিক অর্থেই চারটি শ্রেণী আছে। এখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং তৃতীয় শ্রেণীর সুযোগ সুবিধার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তারা যে সুবিধা ভোগ করেন তা সামরিক বাহিনীর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা পারেনা। সেই তুলনায় অন্যান্য পদমর্জাদার পুলিশ সদস্যরা কিছুই পায়না!!!!
৫। বিশ্বের ইতিহাসে এটা মনে হয় বিরল, এমন প্রকাশ্য অন্যায় করার পর তাকে (হারুনকে) মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তো দূরের কথা। এসবের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর অন্যান্য সদস্যারা কি মেসেজ পেল?? পদোন্নয়নের মূল মাপকাঠি যোগ্যতা নয়, সরকার দলের নেতাদের খুশি।
৬।রাজনৈতিক ব্যাপারটা গুলো সেই ব্রিটিশ আমলেই লুকানো থাকতনা সুতরাং এটা জানা যেত ১০০ বছর আগে হলেও।
সমস্যা হল, এখানে ধনী ব্যক্তিদের জন্যই আইন। অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি জেল খাটছে আরেকজনের অপরাধে আর খুনের আসামী- দুর্নীতির আসামী অর্থ আর পরিবারের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছে।
৭। যারা দেশের ব্যবস্থাপনা করবে তারা ঠিক না হলে যাদের দিয়ে ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করা হয় তারা ঠিক হবেনা।
সুতরাং, সবার আগে রাজনীতিবিদদের ঠিক হতে হবে।
@সংবাদিকা,
আমি সরকারি প্রতিষ্ঠান আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনা করি নি। অদক্ষতা আর আমলাতান্ত্রিকতা কেনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হার্ডলি এ প্রবলেম আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইনেভিটেবল সেটা বলতে চেয়েছি।
এটা একটা মিথ, এটাই আমার প্রস্তাব। রাজনীতিবিদরা ঠিক হয় না। রাজনীতিবিদরা সর্বদাই গদি-লোভী ও ধনীর বন্ধু। সমাজ উন্নত হয় আগে, সেটার সচেতনতা ও প্রতিফলন পড়ে গিয়ে রাজনীতিতে।
@রূপম (ধ্রুব),
ঠিক হওয়া বলতে ইউটোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড এর নিরিখে নয়…… নূন্যতম…. সেই সঙ্গে তাদের যারা নির্বাচিত করে অর্থাৎ আমদেরও অনেক উন্নয়নের প্রয়োজন।
@রূপম (ধ্রুব),
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সরকারী প্রতিষ্ঠানে ওভাবে নেওয়া যায়না এবং তা নেওয়ার কথাও নয়।
যেখানে নিয়ম থাকবে সেখানে আমলাতান্ত্রিকতা উপজাত হিসেবে থাকবেই। সুবিশাল মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট কোম্পানিতেও আমলাতান্ত্রিকতা ( ব্যাবস্থাপনা জটিলতা / নির্বাহীতান্ত্রিকতা!!!) কম হয়না ……
@সংবাদিকা,
ঠিক। সে কারণে তারা ভলনারেবলও হয়ে ওঠে। তখন রাজনৈতিক বন্ধুরা তাদেরকে টু বিগ টু ফেইল বলে বাঁচায়। বড় কর্পোরেটদের এই টপ টু বটম স্ট্রাকচার তাদের বৃহত্তম দুর্বলতা।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার চিন্তাচেতনা গুলো আজকাল আমাকে খুব ভাবাচ্ছে ভাই। আচ্ছা আপনি কি মনে করেন তাহলে? ফরাসী বিপ্লবের মত কোন বিপ্লব হওয়া উচিত বাংলাদেশে, এইসব রাজনীতিবিদ দের কে লাইনে আনতে?কিন্তু বাংলাদেশে কি এটা আদৌ সম্ভব?
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে যে তত্বাবধায়ক সরকার ছিল, সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সেনাবাহিনীর যে কেলেঙ্কারি হয়ে গেল সেটার কথা?সেখানে কয়েকজন শিক্ষকের দাবীর মুখে সেনা বাহিনী কিন্তু তাদের ধরে নিয়ে গেছিল। তার পরের ঘটনা আমরা সবাই জানি, টাদের পরিবর্তিত আর অনুপপ্ত কণ্ঠস্বর শুনে।কিছু পত্রিকা মনে হয় সমালোচনা করেছিল। আমার নিজেরও মনে হয়েছে যে আর্মি ধরে নিয়ে যাবার পরেই( খাঁটি বাংলা বললে ডলা দেবার পরেই;আর্মি তো আর তাদেরকে চা বিস্কিট খাওয়াবার জন্যে ধরে নিয়ে যায়নি)দিবার পরেই শিক্ষক রা আসলে নিজদের ভুল স্বীকারের নামে তথাকথিত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলেন;আর্মির বিরুদ্ধে কথা বলার পাপের। কি সাঙ্ঘাতিক তাই না?তাহলে ফরাসী বিপ্লব টাইপ কোন বিপ্লব করতে গেলে,মানুষের ভাগ্যে না জানি কত যন্ত্রনাই আছে।তৎকালীন ফরাসী রাজাও কি এত খারাপ ছিলেন, যতটা খারাপ আমাদের বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদেরা?
@অর্ফিউস,
কিন্তু আমার মতে রাজনীতিবিদদের লাইনে আনা যেহেতু একটা মিথ, সুতরাং বিপ্লবে ফিপ্লবেও যে সেটা হবে না বলে মনে করি তা বলাই বাহুল্য। বিপ্লব করে একচেটিয়া ক্ষমতা শ্রেণীর বাইরের শ্রেণী। তার হাতে যেহেতু একচেটিয়া ক্ষমতা নেই, ক্ষমতার সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহার নিয়ে সে নানা জল্পনা কল্পনা করতে পারে। কিন্তু একবার বিপ্লবে জয়লাভ করে ফেললে ক্ষমতার একচেটিয়া কর্তৃত্ব তখন তার দখলে। ক্ষমতার সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহারের চিন্তা ভাবনা তখন জানালা দিয়ে পালাবে। সেটাই ক্ষমতার স্বরূপ। ক্ষমতা সাধুতার বিষয় নয়। এমন কি সে অনেক কষ্টেশিষ্টে যদি ন্যায়নিষ্ঠা বা তার কথিত নীতি বজায় রাখার চেষ্টা করে, যেমন কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো, তাতে দুটো সমস্যা হয় – ১) সে চলে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম তার নীতি চালু রাখবে সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই, অর্থাৎ সাস্টেইনেবল নয়, ২) তার এই ন্যায়নিষ্ঠার ফলে তার শাসনের সাবজেক্ট মানুষজনকে অপরিসীম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ফলে বিপ্লব স্রেফ ক্ষমতা বদলের নাম, চরিত্র বদলের নয়।
আমি মনে করি, ক্ষমতার পিছনে যে, সে তার ক্ষমতা ধরে রাখতে তৎপর হবেই। শোষিত যখন ক্ষমতার পেছনে, তখন সেই শাসক আর অন্যরা শাসিত। প্রোলিতারিয়েতের শাসনে প্রোলিতারিয়েতরা শাসক, তারা আর কোনো অসহায় ভিক্টিম নয়, সাধু সন্তও নয়, তাদের শাসনের বিশেষ কোনো গুণগত ভিন্নতাও থাকবে না। ক্ষমতার মালিক অন্য সব ক্ষমতাধারীর মতোই আচরণ করবে। ক্ষমতা কোনো মিন্স নয়, ক্ষমতা হচ্ছে এন্ড।
উপায় হচ্ছে একচেটিয়া ক্ষমতার পরিধিকে ধীরে ধীরে সীমিত করা। লক্ষ্য করুন, বিপ্লবের মাধ্যমেও নয়, সহিংস উপায়েও নয়। সহিংসতা ক্ষমতাধারীকে শক্তিশালী করে কেবল। কারণ সেটা দমনের জন্যে ক্ষমতাধারী তখন যত্রতত্র তার নিজস্ব আইনি সহিংসতা প্রয়োগের ছুতো পেয়ে যায়। ফলে অসহিংস উপায়ে প্রতিবাদ ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের বলার স্বাধীনতা, সামাজিক স্বাধীনতা, ব্যবসা ও বিনিময়ের স্বাধীনতা এই ধরনের ন্যূনতম বিষয়গুলো চাওয়াটা বলা যায় একটা সাস্টেনেবল ও কার্যকর উপায়। এর জন্যে জনগণের মানসপটের উন্নয়ন প্রয়োজন। তারা যদি মনে করে একটা শ্রেণীর হাতে অঢেল ক্ষমতা থাকাটা জরুরি, যেমন তারা যদি ভাবে যে বিভিন্ন জনসেবা শিক্ষা চিকিৎসা একমাত্র রাষ্ট্রই দিতে পারে, ব্যবসায় হাত দেয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য, জঙ্গি নির্মূলে মানুষের স্বাধীনতার সঙ্কোচন একটা অপরিহার্য ত্যাগ, তাহলে রাজনীতিবিদেরা আনন্দের সাথে ক্ষমতার বিস্তার ঘটাবে, ক্ষমতার আর সীমিত হওয়া লাগবে না। তবে মানুষ যদি মনে করে যে যত্রতত্র রাষ্ট্রের হানা দেয়ার এখতিয়ার থাকার প্রয়োজন নেই, গদি-লোভী গণতান্ত্রিক নেতা তখন চাপের মুখে তার সরকারকে সীমিত করতে চাইবে। এর জন্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই কাম্য। অন্য কোনো তন্ত্রে এইসবের আশা করাও বৃথা। আস্ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
বি কেয়ারফুল হোয়াট ইউ উইশ ফর। বেশি বেশি সরকার চাইলে বেশি বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার তার সাথে প্যাকেজে পাওয়া যাবে। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),ফরিদ জাকারিয়া’র The Future of Freedom: Illiberal Democracy at Home and Abroad (২০০৩) বইটা পড়েছেন কি? ওখানে তিনি দেখিয়েছেন যে liberty এবং democracy সমার্থক নয়। অনেক দেশেই constitutional liberty আগে এসেছিলো গনতন্ত্রের আগে। গনতন্ত্র অনেক সময়েই elected tyranny তে পরিনত হয়। বইটা লেখার আগে জাকারিয়া একটা বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখেছিলেন এই জিনিষটি নিয়েই১৯৯৭ এ। সেটার পিডিএফ
http://www.closer2oxford.ro/uploads/2012/06/12/The_Rise_of_Illiberal_Democracy.gf1ruw.pdf
@সফিক,
ঠিকই। আমি গণতন্ত্র অ্যাজ অপোজ্ড টু সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র অর্থে ব্যবহার করেছি। কিন্তু গণতন্ত্রেরও তো ফ্যাসিবাদ কিংবা tyranny of the majority হতে বাঁধা নেই। এর বিপরীতে ইনেলিনিয়েবল রাইট্স থাকা জরুরি। যেটাকে রিপাবলিক বলা যায়। কিন্তু শব্দ নিয়ে তর্ক গ্যাঞ্জামের। উত্তর কোরিয়ার অফিশ্যল নাম Democratic People’s Republic of Korea। ডেমোক্র্যাসি কিংবা রিপাবলিক কোনোটিই নয়, কিন্তু দুটো নামই নিয়ে বসে আছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে রিপাবলিক কীভাবে গঠন করবেন? ইনেলিনিয়েবল রাইট্সের মানসিকতা সমাজ থেকে আগে গঠিত হয়ে আসবে, নাকি কোনো মহান নেতা সেটা প্রদান করবেন? যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দেয়া যায় যে তাদের ফাউন্ডিং ফাদার্সরা মহামানব ছিলো, তারা তাদের জাতিটার উত্তরণ ঘটিয়েছিল। আবার এটাও লক্ষ্যণীয় যে তাদের এই ভিশনকে আপহোল্ড করার মতো পর্যাপ্ত মানসিকতাও কিন্তু সমাজে বিরাজমান ছিলো। তাদের এই ভিশনকে সাস্টেইন করার স্ট্রাকচার কিন্তু সমাজে বিদ্যমান ছিলো।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ১৯৭২ এর সংবিধান পড়ুন। এর মৌলিক অধিকার অংশ কিন্তু যথেষ্ট সুচিন্তিত ও প্রশংসনীয়। কিন্তু তাকে সাস্টেইন করার মতো মানসিকতা সমাজে উপস্থিত ছিলো কি? ফলে মৌলিক অধিকারকে ওভাররাইড করার অধিকার সংসদকে দেয়া হলো সংসদে বিল পাশ করেই। অনেক সংশোধনী রিভোক্ড হলো, এটা হয় নি। বরং এখন সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলা রাষ্ট্রদ্রোহ। চিন্তা বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চুলোয় যাক।
এখন ব্যাপারটাকে দুইভাবে দেখতে পারেন। এক হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা সমাজের বাইরের হস্তক্ষেপের উপর নির্ভর করে। ১৯৭১ এর পরে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মুক্ত বাজারের পথে হাঁটলে সমাজে লিবার্টিকে ধারণ করার একটা মানসপট আপসেই তৈরি হয়ে যেতো। আবার দুই, এভাবে ভাবতে পারেন যে বাংলাদেশ কেনো মুক্ত বাজারের পথে হাঁটলো না তার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী অংশ এই বামপন্থী নয়তো সেই বামপন্থী ছিলো। তার ওপর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান তখন প্রায় সুনির্দিষ্ট ছিলো। দেখার দুটো উপায়ই কাজের এখানে।
@রূপম (ধ্রুব),
আমাদের এ প্রকারের বিশেষণ সযতনে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। আমেরিকানরা নিজেরাই এমন করেনা। তবে হ্যা, তারা তাদের পরবর্তী অনেক সদ্য স্বাধীনপ্রাপ্ত দেশের ফাউন্ডিং ফাদার্সদের থেকে অনেক দিক থেকে শ্রুড এবং দূরদর্শী ছিল আবার অনেক দিক থেকে সমসাময়িক অন্যান্য অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের থেকে অনেক দিক দিয়ে চিন্তা-চেতনায় অনেক পিছিয়ে ছিল।
@সংবাদিকা,
আপনি আমার কথা যে বুঝতে পারেন নি, সেটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। আমি অতি অগ্রসর মহানেতা তত্ত্বেই আস্থাশীল নই। ফলে এই ভাষ্য আমার নয়। আমি বলতে চেয়েছি তেমন অনেকে বলতে পারে। মহা, মহান, মহৎ শব্দগুলো কিঞ্চিৎ তাচ্ছিল্য ছাড়া আমি সাধারণত ব্যবহার করি না।
@রূপম (ধ্রুব),
এখন বুঝেছি। ওটা স্যাটায়ার ছিল…… স্য্যাটায়ারের পর যে হালকা তাচ্ছিল্য থাকে ওটার অনুপস্থিতির কারণে এটা আসলে ধরতে পারিনি। তাছাড়া ব্লগে অনেক ব্লগারের অন্ধ পশ্চিমা প্রীতি দেখে বিষয়টি আরও দ্যার্থক হয়ে যায়।
ক্ল্যারিফিকেশনের জন্য ধন্যবাদ 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
সেটা খুব সঠিক কথা বলেছেন।
এটা পরিষ্কার হল না!যেমন ধরুন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কথা আপনি বললেন।তাঁর উত্তরসুরীরা তার মত ন্যায়নিষ্ঠ নাও হতে পারেন, কিন্তু তার ন্যায়নিষ্ঠার জন্য জনগন কে ভুগতে হবে কেন?একটু পরিষ্কার করে বলবেন কি?নাকি ক্যাস্ট্রোর বিরোধিতা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিউবার( এতে অবশ্যই কিউবার জনগণ সমস্যা ফেস করছে) উপর খড়গহস্ত সেটা বুঝাতে চেয়েছেন?
খুবই চিন্তার মধ্যে ফেলে দিলেন ভাই। আগে এমন করে ভেবে দেখিনি। তবে মনে হয় আপনার কথাটা অনেকটাই সঠিক।
আমারও সেটাই মনে হয়, রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের আসলেই দরকার আছে বলে আমার মনে হয়।কারন দেখুন যদি রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করে তবে কিন্তু একশ্রেণীর লোক বসুন্ধরা। যমুনার মত শপিং মল করবে, আরেকদল লোকের অবস্থা নাই বা বললাম। বেকায়দায় বেশি পড়ে সম্ভবত মধ্যবিত্ত।এদের প্রায়শ মিশতে হয় সমাজের তথাকথিত উচুতলার মানুষদের সাথে। অথচ তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।
রাষ্ট্রের এখতিয়ার সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, তবে আমি মনে করি যে লোক যে অনুপাতে আয় করবে সেই অনুপাতে ট্যাক্সের হার বাড়ানো উচিত রাষ্ট্রের।আর মানুষের সম্পদ জমানর প্রবণতার মধ্যেও একটা সীমা থাকা দরকার। যেমন ধরুন যারা চাকরি করেন তারা তো সীমিত আয়ের মানুষ।অসৎ পথ না ধরলে তাদের টাকা তারা জমাতে পারেন, কারন সৎপথে থেকে চাকরি করে আর কতি বা জমান যাবে !আর ব্যক্তিগত লেভেলে ব্যবসার জন্য শুধু ক্ষুদ্র ব্যাবসা গুলিকেই ব্যক্তি মালিকানাধীনে ছেড়ে দিয়ে, মাঝারী আর বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলি রাষ্ট্রের হাতে থাকলেই মনে হয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব।কি মনে হয় আপনার? যেমন ধরুন যে ক্ষুদ্র ব্যাবসা করে মানুষ ভাল কোন চাকরি করার থেকে খুব বেশি ইনকাম করতে পারে না, কাজেই সম্পদের পাহাড় জমানোর সম্ভাবনাও থাকে না।এগুলো আমার নিজের অভিমত মাত্র, জানিনা এর যৌক্তিকতা কতটুকু।তবে সমাজ তন্ত্র আর পুঁজিবাদ দুটিকেই আমার গোলমেলে মনে হয়।পুঁজিবাদ কে একটু বেশি গোলমেলে লাগে।
হ্যাঁ সেটাই। সতর্ক ভাবেই চিন্তা করা লাগবে দেখছি 🙂
@অর্ফিউস,
কিউবার মানুষের দুর্ভোগের কথা বলতে চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অবরোধ দোষণীয়, কিন্তু সেটা ক্যাস্ট্রোর প্রোপাগান্ডাতেই কাজে লাগে বেশি। ক্যাস্ট্রো তো স্বনির্ভরতাই চায়। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সাহায্য না পাওয়া নিয়ে তার এতো অভিযোগ কেনো তবে?
কিউবার মানুষের অপরিসীম দুর্ভোগের কথা ভাবুন। রেশনের খাদ্য সরবরাহ কখনো আসে, কখনো আসে না। কালোবাজারি করে লোকে খেয়ে পড়ে চলছে অনেকখানে। সেটা তো সেই পুঁজিবাদের দ্বারস্থই হওয়া। বাজার বিবর্তন বান্ধব, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বিবর্তন অবান্ধব। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। কিউবা সোভিয়েতের সাহায্য নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে, সোভিয়েত যাবার পর বাইরের সাথে বাণিজ্যের জন্যে একটা জোন খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে, যেটা তার অর্থনীতিকে বড় একটা সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু তার সেই বাণিজ্যিক প্র্যাকটিসও অসৎ। যখন তখন খুশি সে অন্যের সাথে বাণিজ্য চুক্তি লংঘন করে ওঠে। কিউবার যে চিকিৎসা ব্যবস্থার সুনাম, সেটা তাদেরই সরকারি রিপোর্ট। সেখানের সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ছবি, বর্ণনায় চিকিৎসার অব্যবস্থা, জোরজবরদস্তি চিকিৎসা, অঙ্গ কর্তন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াশীল ঔষধ প্রয়োগ এসব উঠে এসেছে। মানুষের মতপ্রকাশের সভা সমিতির বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা নেই। অন্যদিকে ক্যাস্ট্রো ফ্যামিলি গড়ে তুলেছে বিশাল প্রাসাদ। তার ও তার বন্ধুদের পরিবারের চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা আলাদা ও অতি উন্নত। বাইরে থাকা যারা চিকিৎসা কিংবা টুরিস্ট সেবা নিতে যায়, তারা যেসব স্থান থেকে সেইসব সেবা ভোগ করে, সেগুলো কেবল সরকারি লোক, ক্যাস্ট্রোর বন্ধু ও পরিবারের জন্যে উন্মুক্ত, সাধারণ মানুষের জন্যে নয়। এইসব হলো ওনার ন্যায়নিষ্ঠার ফল। সমাজতন্ত্র অ্যাট ইট্স বেস্ট। এর চেয়ে বেশি ভালোভাবে সমাজতন্ত্র প্রয়োগ বলতে আর কী বোঝাতে পারে? সকল সেবার জাতীয়করণ করা হয়েছে, সোভিয়েত পতনের পর সাম্রাজ্যবাদ, নিওলিবারেলিজম আর মুক্ত বাজার থেকেও যোজন যোজন দূরত্বে আছে। চিকিৎসক আর মুটে মজুর সমান বেতন পাচ্ছে, যাতে চিকিৎসক অর্থের জন্যে কাজ করে গ্রিডি না হয়ে ওঠে, কেবল মাত্র মহৎ ও মহান নৈতিক চিকিৎসকসুলভ মানসিকতা থেকে চিকিৎসা করে। এজন্যে চিকিৎসকেরা বরং টুরিস্ট সেবায় যেতে আগ্রহী বাড়তি টিপ্স পাবার তথা সমাজতন্ত্রের ঘৃণ্য পুঁজির আশায়। মনে রাখবেন, পৃথিবীর অধিকাংশ স্বৈরশাসকই মহৎ মহান নীতিবান। তারা তাদের নীতির প্রতি একাগ্র। কেবল টাকাপয়সার লোভ থাকলে আমাদের দেশের মন্ত্রীদের মতো হলেই তাদের চলতো। কিন্তু তারা এর চেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এবং এর জন্যে তারা তাদের নীতির বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় নিয়োজিত হয়। আর ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে নীতিবান ন্যায়নিষ্ঠ নেতার কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার বলি হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। হিটলার আর স্ট্যালিনদের কি নিজস্ব নীতির ব্যাপারে নীতিবান বলবেন নাকি দুর্নীতিপরায়ণ বলবেন? মহান নেতা মহাজন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর জয় হোক।
@রূপম (ধ্রুব),
এটাকে তো মোটেই ন্যায়নিষ্ঠা বলা যাবে না।এটাতো পরিষ্কার স্বজনপ্রীতি।
হুম সেটা ঠিক আছে। আমি কিন্তু আসলে সমাজতন্ত্রী না। বরং এইসব দিকে কিছুটা বিভ্রান্ত অবস্থায় আছি বলতে পারেন। সত্যি যদি এসব কথা সঠিক হয় তাহলেতো সমাজতন্ত্রেই আসলে আরো কম সংখ্যক লোকের হাতে পুঁজি জমে যাচ্ছে।সম্ভবত অবাধ পুঁজিবাদের বিরোধী আমি।আসলে স্বীকার করতে বাধা নেই, অর্থনিতির এই জটিল বিষয়গুলো সম্বন্ধে এক্সপার্ট আমি না।আলোচনা করি শুধু মাত্র মতবিনিময় করে আরো ভালভাবে বুঝা জন্য।
আপনার ২টি মন্তব্যই পড়লাম।খুব গুছিয়ে বলেছেন। এ নিয়ে আপনার বা কারো কোন লেখা আছে কি? থাকলে দিন একটু পড়ে দেখি। এতে হয়ত অনেক কিছুই আরো উপকার হবে। 🙂
@অর্ফিউস,
সমাজতন্ত্রে সবার বিনামূল্য ও সমান সেবা প্রাপ্য। এখন অতি উন্নতমানে হাসপাতাল আর হোটেলগুলোতে দেশের সকল জনগণকে থাকার সুযোগ দিলে কীভাবে সেটা টিকিয়ে রাখবেন? ফলে এখানে কেবল দুটো চয়েজ। হয় রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্যে সেগুলো সংরক্ষণ করুন, নয়তো উঠিয়ে দিন। প্রথমটাই একমাত্র বাস্তবসম্মত চয়েজ। উত্তর কোরিয়াতেও একই ব্যবস্থা। জনগণকে বোঝানোও হয় যে সরকারি লোকদের কঠিন কঠিন কাজ করার জন্যে এইসব সুবিধার প্রাপ্তিটা জরুরি। সমাজতান্ত্রিক কাঠামোতে এটা আমার মতে ন্যায়নিষ্ঠই। আপনার আমার পছন্দ না হওয়াটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আপনাকেই তো মনে হয় এর আগে কয়েকটা লেখার সন্ধান দিয়েছিলাম। না দিয়ে থাকলে এখন দেই। অস্ট্রিয়ান স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদ মারি রথবার্ডের লেখা লিবার্টারিয়ান ম্যানিফেস্টোর দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদ অনুবাদ করেছিলাম এই পয়েন্ট অব ভিউয়ের একটা সূচনা হিসেবেই। নাহলে কোথা থেকে শুরু করা যাবে, সেটা একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সূচনার জন্যে এটা হয়তো খারাপ না। এখান থেকে দ্বিতীয় অধ্যায়টা কনটিনিউ করতে পারেন। বইটা ফ্রি পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। আমি অবশ্য প্রথম এটা দিয়ে শুরু করি নি বলাই বাহুল্য। কারণ প্রথমেই এর খোঁজ পাই নি। পেলে নিশ্চয়ই এটা আগে পড়তাম। রথবার্ডের রচনা, থমাস জেফারসন, থমাস পেইন, ফ্রিডরিখ হায়েক, ম্যাট রিডলির rational optimist বইটি, এইসব পড়ে রাষ্ট্র ও অর্থনীতির বৈবর্তনিক ভিত্তি, সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নে পুঁজিবাদ তথা স্বেচ্ছাকৃত বিনিময়ের ভূমিকা, সহিংসতার ভূমিকা এইসব সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এরপর মনে করেছি যে নৈতিক ভিউ পয়েন্টটা বোঝার জন্যে ওই দ্বিতীয় অধ্যায়টা একটা চমৎকার শুরু হতে পারে।
আর অর্থনৈতিক ভিউ পয়েন্ট বোঝার জন্যে ফ্রেডরিক হায়েক আর ম্যাট রিডলির rational optimist বইটা, বিবর্তনীয় অর্থনীতি নিয়ে মাইকেল শারমারের একটা রিভিউ আছে, সেটাও সাহায্য করতে পারে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়েও পড়াশোনা করতে পারেন [১],[২]।
মূল স্বতঃসিদ্ধ হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংরক্ষণ ও অপরের সাথে স্বেচ্ছায় বিনিময়ের অধিকার এবং এটার প্রয়োজনীয়তা বিবর্তনীয় ও অর্থনৈতিকভাবে উপলব্ধি। এটা মেনে নিলে বাকি সব, যেমন অবাধ পুঁজিবাদ, যৌক্তিকভাবে ফলো করে। সমাজতন্ত্র দুটোকেই ডিনাই করে। ডিনাই করা থেকে যৌক্তিকভাবে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা ফলো করে। আবার একটু মেনে একটু ডিনাই করা, অর্থাৎ অধিকার মেনে নিয়ে সেখানে একটা পিঠাভাগকারী গোষ্ঠির হস্তক্ষেপকে মেনে নিলে সেটা দাঁড়ায় আমাদের বর্তমান ব্যবস্থা। এভাবে দেখলে মতবাদগুলো অন্তত বুঝতে সুবিধা হয়। তারপর পছন্দ অপছন্দ শেষ বিচারে যার যার নিজের ব্যাপার। কেউ অন্যের উপর হস্তক্ষেপ পছন্দ করবে, কেউ করবে না, এই আর কি। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
আসলে আদর্শবাদের বুলি দিয়েই আমরা সবাই পরিচালিত হই, অন্তত অতীতে হয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই।
যদি প্রথম চয়েসটাই হয় সমাজতন্ত্রের আসল কথা, তবে কথা ও কাজের যে কোন মিল নেই বুঝতেই পারছি।
যদি সাম্যবাদই হয় তবে সবার জন্য সমান হওয়াটাই ছিল বাঞ্ছনীয়।সেটা না হলে এটাকে সঠিক পথ বলার কোন কারন নেই।
হ্যাঁ আমাকেই দিয়েছিলেন,সাথে প্রাইভেট পুলিশ প্রোটেকশনের চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে 🙂 , তবে এগুলোর মধ্যে মাত্র একটা এখন পুনরায় দিলেন।আপনার লেখা “আমাদের ঈশ্বর গুলো” এটা আমি পড়েছি।
অনুবাদ টা পড়া হয় নি ভাল করে।পরের লিঙ্ক গুলো নতুন। আপনার লেখাতে দাঁত বসানোটা বেশ কঠিন 😀 । এবার আরো মনোযোগ দিয়ে সময় নিয়ে পড়ব ধীরে ধীরে। পড়া শেষ হলে কিছু প্রশ্ন চলে আসতে পারে।কারণ স্বাধীনতা বাদ সম্পর্কে আমি আগে থেকে অবগত নই;এটা মোটামুটি নতুন আমার কাছে, এটা জানেন আপনি। 🙂 অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@অর্ফিউস,
মুক্তমান লেখক রৌরবের অনুবাদ আমি কেন রক্ষণশীল নই (ফ্রিডরিখ হায়েক) ও সাধারণ জ্ঞান (টমাস পেইন) এর কথা বলতে ভুলতে গিয়েছিলাম। এমন গুরুত্বপূর্ণ লেখার অনুবাদ বাংলায় অপ্রতুল।
@রূপম (ধ্রুব), হুম ভাই এইবার একেবারে সব লিঙ্ক সেভ করে রাখলাম পিসি তে।যেন মিস না হয় একটাও। 🙂
@রূপম (ধ্রুব), আপনাকে একটা ই বার্তা পাঠিয়েছি ভাই। সময় করে দেখে নিয়েন।
@অর্ফিউস,
রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে এর কী ব্যাত্যয় ঘটে? রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপেও প্রিসাইসলি তাই ঘটে। বাড়তি পাওনা হচ্ছে নেতা ও আমলা গোষ্ঠি মাঝখানে পিঠাভাগ করার নামে নিজেদেরও অন্নসংস্থান করে নেয়। ফলে যদি মনে করে একটা শ্রেণীর হাতে অঢেল ক্ষমতা থাকাটা জরুরি, তাহলে ক্ষমতার আর সীমিত হওয়া লাগবে না। বেশি বেশি সরকার চাইলে বেশি বেশি ক্ষমতার অপব্যবহার তার সাথে প্যাকেজে পাওয়া যাবে। সরকারকে যত্রতত্র হস্তক্ষেপের এখতিয়ার দিতে চাইলে তাহলে তার অপব্যবহার দেখলে আর অভিযোগ করারও কোনো মুখ থাকে না। আপনি আপনার দেখভালের সব দায়িত্ব আমার উপর তুলে দিয়ে যদি বলেন অন্যায় করছি কেনো, তাহলে সেটার যৌক্তিকতা কতোটা থাকে?
শপিং মল হলে খালি শপের মালিক টাকা কামায় আর ক্রেতা টাকা হারায় নাকি দুজনেই লাভবান হয়? যেই বিনিময়ে একজনের লাভে অন্যের ক্ষতি হয়, সেটাকে অর্থনীতি ও গেইম থিওরিতে বলে জিরো সাম গেইম। বাজারে বিনিময় নন-জিরো সাম গেইম। শপিং মল থেকে পণ্য ক্রয়ে কেবল শপের মালিক লাভ করছে না, ক্রেতারও প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করে সে ক্রেতাকে লাভবান করছে, যেই পণ্য দিয়ে সে তার প্রয়োজন মেটাতে পারছে। এটাই পুঁজিবাদের মূল বিষয়। দুজন মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছাকৃত বিনিময়। যতোক্ষণ পুঁজির মালিক বা অন্য কোনো পক্ষ এই বিনিময়ে বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার দ্বারস্থ হচ্ছে না, ততোক্ষণ এই পুঁজিবাদকে বলা চলে অবাধ পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র পুঁজিবাদে হস্তক্ষেপ করে। পুঁজির মালিক রাষ্ট্রের একচেটিয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজের সুবিধা করে নেয়, তখন বিনিময়টা আর ফেয়ার থাকে না। তখন ঘটে শোষণ। পুঁজিবাদের সমস্যাটা মানুষের স্বেচ্ছাকৃত বিনিময়ে না, সেটা বরং আশীর্বাদ। মার্চেন্ট অব ভেনিসের Portia থেকে ঊদ্ধৃত করে বলা যায় –
পুঁজিবাদ যখন সহিংসতার সাথে অর্থাৎ রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে দল পাকায়, তখন শুরু হয় সমস্যা, অন্যায্যতা, শোষণ। এখানে দোষ কাকে দিবেন, মানুষের স্বেচ্ছাকৃত পারস্পরিক বিনিময়ের স্বাধীনতাকে, নাকি সহিংসতার ব্যবহারকে? সমাজতন্ত্র সমস্যাটা বিনিময়ে দেখতে পায়, সহিংসতাকে সে গ্লোরিফাই করে।
একজন মানুষের অনেক পুঁজি জমিয়ে ফেলাটাকে ভীষণ সমস্যা মনে করছেন, কিন্তু সেই বাড়তি টাকাটা যে আয় করে নি সেই রাজনৈতিক নেতা আর সরকারি আমলার হাতে তাদের নিজের খুশিমতো ব্যয় করতে দেয়াটাতে কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন না, এটা একটু অদ্ভুত না? বাড়তি টাকাটা যে আয় করে নি তাকে যদি “জনকল্যাণে” খরচ করতে দেন, আর সে যেহেতু রক্তমাংসের মানুষ, সে তো তার নিজের স্বার্থ শতভাগ অটুট রেখেই এর ব্যবহার করবে। এটাকেই বলেছিলাম বি কেয়ারফুল হোয়াট ইউ উইশ ফর। যতো আয় ততো ট্যাক্স, সেই টাকায় গরীবের কল্যাণ হবে এমন বলাটা সহজ। এখানে টাকাটা যে ক্ষমতার একচেটিয়া অধিকারী গোষ্ঠি চালাচালি করছে, সেটাকে অদৃশ্য কল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অন্যায়ের সুযোগ অঢেল। কোনো এক জাদুর বলে ক্ষমতার একচেটিয়া অধিকারী গোষ্ঠি এই অর্থের বৈজ্ঞানিক সৎ মহৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যবহার করে উঠবে, এমন ভাবনাটা অবান্তর। নাকি মানুষ তার অর্জিত অর্থ পুঞ্জীভূত করতে পারছে না, এতেই খুশি?
@রূপম (ধ্রুব),
রূপম ভাই
অল্প কথায় খুব সুন্দর গুছিয়ে বলেছেন। এই বিষয়টিকেই আমি জবাবদিহিতা ভাবছি। এইযে ধরুন বিশ্বজিতের ঘটনাটিই- একটা ভিডিও ফুটেজ না থাকলে অন্য হাজারটা মৃত্যুর মতন আমরা কিছুই জানতে পেতাম না। আঘাতে আঘাতে মরে যাবার আগে একটা মানুষের করুণ আর্তি অনেকে জানতে পেত না। চাপাতি সাকিলের বাবা জানতে পেত না কোনোদিন তাঁর সন্তান কেমন জঘন্য একটা কীটে পরিণত হয়েছে। অথবা ধরুন নোয়াখালীতে যে ছেলেটিকে পুলিশ জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল মেরে ফেলার জন্য। একটা ভিডিও ফুটেজ পেছনের কালো হাতগুলোকে উন্মোচিত করেছে।
আজকে প্রধান মিডিয়াগুলো যে সব অনাচার লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে কোথাও কোথাও, ব্লগ অথবা ফেইসবুক সেগুলোকেও কিন্তু সামনে তুলে আনছে। এক সময় হাজার টন টি আর কাবিখার হিসাব কেবল পি আই ও আর নেতারা জানত। আজ সেই সব প্রকল্পের কাজ বুঝে নিতে মানুষ প্রশ্ন তুলতে পারছে। এমনকি পদ্মা সেতু আর বিশ্বব্যাংক নিয়েও খুব অজ পাড়াগাঁয় চায়ের দোকানে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে। এটি কিন্তু পরিবর্তন। জবাবদিহিতার দিকে। এই পরিবর্তন বড়জোর এক দশকের ভেতর হয়েছে। আমরা বদলাতে পারছি অনেক কিছুই ভেতরে ভেতরে। পরিবর্তন যদি হয়, তবে এই করেই হবে।
একজন ওবায়দুল কাদের কতজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের স্বভাব বদলাতে পারবেন মনে হয়?