ছেলেবেলা থেকেই বাবু ও আরিফের মধ্যে বন্ধুত্ব। তারা এক সাথে স্কুলে যেত, একই ক্রিকেট দলে খেলতো আর তাদের নিজেদের মধ্যে কোন গোপনীয়তা ছিল না- অবশ্য একটি ছাড়া, যা সম্প্রতি দেখা দিয়েছে। একদিন যখন তারা ঢাকা শহরের কোথাও দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলো, এমন সময় আরিফ হঠাৎ কয়েক মুহূর্তের জন্য বিব্রতকর ভাবে নিশ্চুপ হয়ে যায়।
– “বাবু, শোন তোকে আমার কিছু বলার ছিল…”
– “কি ব্যাপারে,দোস্ত?”
– “আমি তোর সাথে পুরোপুরি সৎ ছিলাম না রে… মনে আছে যখন আমি তোকে বলেছিলাম যে আমি সেই মেয়েটিকে সত্যি খুব পছন্দ করি? সেটা আসলে সত্যি না। আসলে আমি তার ভাইকে পছন্দ করি। আমি সমকামী”।

এই অপ্রত্যাশিত স্বীকারোক্তিতে বাবু হকচকিয়ে গেল এবং কী বলবে বুঝতে পারলো না। বরং সে উঠে দাঁড়াল এবং হেঁটে চলে গেল। পরবর্তি দিনগুলোতে আরিফ যতবারই তাকে ফোন দিল, কোন সাড়া পেল না। অবশেষে ছয় মাস পর আরিফ বাবুর কাছ থেকে সাড়া পেল। এরপর বহু সন্ধ্যায় দীর্ঘ আলাপচারিতার পর তারা আবার পরষ্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠলো। বাবু উপলব্ধি করলো যে, আরিফ সমকামী হওয়া সত্ত্বেও তাদের শৈশবের মধুর স্মৃতি আর যে ভাল সময়গুলো তারা একসাথে কাটিয়েছে তা মিথ্যা হয়ে যায়নি। বাবু তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরিফকে সে যা, সেই হিসেবেই গ্রহণ করতে শিখলো- অর্থাৎ আরিফ ঘটনাচক্রে সমকামী।

সমকামী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, উভকামী (Lesbian, Gay and Bisexual বা LGB) মানুষেরা আমাদের ভাই, বোন, বন্ধু, প্রতিবেশী, আমাদের শিক্ষক এবং আমাদের সতীর্থ। সমকামীতা এবং উভকামীতা মানব ইতিহাসে সব সময়ই প্রতিটি সমাজ ও প্রতিটি সংস্কৃতির অংশ হয়ে ছিল এবং আছে। আর ব্যাপক প্রাণীকুলেও এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে যে, ১০০ জনের মধ্যে ১ থেকে ১০ জন যৌণভাবে বা রোমান্টিকভাবে সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ন্যূনতমপক্ষে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অন্ততঃ ১৫ লক্ষ সমকামী বা উভকামী রয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক থাকা সত্ত্বেও (যা প্রায় কাতারের পুরো জনসংখ্যার সমান) LGB অদৃশ্য সংখ্যালঘু হিসেবে গন্য হয়ে আসছে।

স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মক্ষেত্রে LGB দের প্রতি বৈষম্য তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সুবিচার থেকে বঞ্চিত করে। প্রায়শঃই আতঙ্ক, সংশয় এবং অপরাধবোধের মধ্যে ক্লিষ্ট থেকে তারা পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের কাছ থেকে খুব কমই সহায়তা পায়। বাংলাদেশ পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, সমলিঙ্গের মধ্যে যৌণ মিথস্ক্রিয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। ফলশ্রুতিতে, খুব কম জনই তাদের যৌন প্রবনতা বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে। অধিকন্তু, বেশীর ভাগই বাধ্যতামূলক গোঁড়ামী, দিকভ্রষ্ট ধারণা এবং সুবিচার আর নৈতিকতার পরিহাসের বেড়াজালে পড়ে মিথ্যা ও গোপনীয়তার জীবন যাপনে বাধ্য হয়। এখনও নারীদের জীবনের মোক্ষ হিসেবে বিপরীতগামী (heterosexual) বিবাহ বিবেচিত, আর সমকামী নারীদের প্রতি সহনশীলতা বিশেষভাবে কম। তারা দ্বিগুন ভাবে নিষ্পেষিত।

২০০২ সনে বাংলাদেশের সমকামী পুরুষদের (Men sex who have sex with men বা MSM) সবচেয়ে বৃহত্তর সংগঠন বন্ধু স্যোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (Bandhu Social Welfare Society বা BSWS) ১২৪ টি স্বচিহ্নিত নারী সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের উপর জরিপ চালায় যা তর্ক সাপেক্ষে স্থানীয় LGB গোষ্ঠীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ। প্রতি দুই জনের মধ্যে একজন সাক্ষাৎদানকারী বলেছে যে, সে স্কুল বা কলেজে হয়রানির শিকার হয়েছে। প্রতি চার জনের মধ্যে তিন জন, যারা তাদের আত্মীয় পরিজনকে নিজের যৌন প্রবণতা সম্পর্কে জানিয়েছে। তারা বলেছে যে তারা তাদের পরিবারের কাছ থেকে খুব নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছে; যেমন মারধর, বিয়েতে বাধ্য করা, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত, বাড়ি থেকে বের করে দেয়া অথবা তাদের সমকামীতা থেকে আরোগ্যের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সদস্য, স্থানীয় মস্তান, বন্ধুস্থানীয় কেউ অথবা পরিবারের কোন সদস্য দ্বারাও নিগৃহিত হয়েছে। জরিপে ৮০ জনের মধ্যে ২৯ জন BSWS কে এই মর্মে রিপোর্ট করেছে যে, তারা আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হয়েছে অথবা পুলিশ অফিসাররা তাদের ধর্ষন সহ বিভিন্ন যৌন নিপীড়ন চালিয়েছ। অন্যান্যরা তাদের উপর মারধর, বলপ্রয়োগে অর্থ আদায়, গতিবিধি বাধাগ্রস্ত করা, হুমকি এবং ব্ল্যাকমেইল করার কথা জানিয়েছে। ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং সিলেটের সমকামীরা রিপোর্ট করেছে যে, তাদের পুলিশ ব্যারাক বা পুলিশ চৌকিতে ধরে নিয়ে গিয়ে দলগত ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ধরনের জবরদস্তি যৌণক্রিয়া খুবই অনিরাপদ যা প্রায়শইঃ গুরুতর শারীরিক জখমের কারণ হয়; যেমন মলনালী ফেটে যায়, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরন হয় ইত্যাদি। ২০০৩ সালে হিউম্যান রাইট ওয়াচ (HRW) –এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এ ধরনের ঘটনাগুলো মাঝে মধ্যেই ঘটে এবং এ থেকে বাংলাদেশে LGB গোষ্ঠীর উপর সহিংসতার ধরনই প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশে সমকামীদের প্রতি স্থানিক তীব্র আতঙ্ক ও ঘৃণার কারণে LGB দের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুখ-সমৃদ্ধির উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখের দ্বারা পরিচালিত ১০২ জন সমকামী পুরুষের উপর এক সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে যে, এদের মধ্যে শতকরা ৩২ জনের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার নজির রয়েছে এবং শতকরা ৪৭ জন অন্ততঃ একবার হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা সফরে এসে আমি মামুন ও সাখাওয়াত (আসল নাম নয়) নামের যথাক্রমে ২৩ বছরের শিক্ষার্থী এবং ২৬ বছর বয়স্ক সাংবাদিকের সাথে পরিচিত হই। দু’জনই সমকামী।

মামুনের বর্ণনা অনুযায়ী, নিজেকে সমকামী হিসেবে মেনে নেয়াটা তার “জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম ব্যাপার” ছিল। ১৩ বছর বয়সে যখন সে প্রথম অন্য ছেলেদের শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করে, তখন সে ভাবলো তার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন গলদ আছে এবং সে এর পরিবর্তনের আশায় পথ চেয়ে থাকলো। সে ভাবলো সে বিয়ে করে জীবনের বাকী সময় তার যৌন প্রবনতাকে গোপন করে রাখবে। তারপর সে ইন্টারনেটে সমকামীতার উপর গবেষনা শুরু করলো এবং আবিষ্কার করলো যে এটা পৃথিবীর অন্য অংশে গ্রহণযোগ্য এবং স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত। সে যে সমকামী, এটা মেনে নিতে তাকে আরও ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ইদানিং সে প্রতিদিন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবে। কেননা, এ দেশে তার জীবদ্দশায় LGB দের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তিত হওয়ার ব্যাপারে সে আশাবাদী নয়। “আমি আমার দেশ এবং পরিবারকে ভালবাসি কিন্তু আমি স্বাভাবিক এবং স্বাধীন জীবন যাপন করতে চাই। মিথ্যার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই না। এখানে থাকলে আমি অসমকামী জীবন কাটাতে পারবো না। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার চাইতে সারা জীবন একা কাটানই ভাল”। যদিও সে তার বাবা মা’কে তুলনামূলক ভাবে উদার মনে করে, কিন্তু তার ভয় হয়তো এমন দিন আসবে যখন তাকে বেছে নিতে হবে হয় তার বাবা মা অথবা একটি খাঁটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন।

সাখাওয়াতের জ্ঞান হবার পর থেকেই সে অন্য পুরুষের প্রতি রোম্যান্টিক আকর্ষন বোধ করতো। ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে আলাদ বাস করায় সে ঢাকা বসবাসরত সমকামীদের আশ্রয় পায়। সে বয়েজ অফ বাংলাদেশ (Boys of Bangladesh বা BoB) –এর সদস্য হয়, যা সমকামী পুরুষদের একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে সে যৌন প্রবণতার মনস্তত্ব এবং রাজনীতি বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারে। চার বছর ধরে সাখাওয়াতের একটি পুরুষের সাথে গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক চলছে। সে বাংলাদেশে থেকে LGB বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসার পর আমার সাথে বাংলাদেশের অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে ২৩ বছরের বিবিএ-এর ছাত্রী ফারহিনার (তার আসল নাম নয়) পরিচয় হয়। সে ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের পছন্দ করে এবং নিজেকে সমকামী নারী হিসেবে চিনতে পারে। পাছে তার বাবা মা তাকে অস্বীকার করে এই ভয়ে সে তাদেরকে এ ব্যাপারে কিছুই জানতে দেয়নি এবং অন্য একটি নারীর সাথে সম্প্রতি গড়ে উঠা তার সম্পর্ক গোপন রেখেছে। সাখাওয়াতের মতো তার ব্যতিক্রমী যৌন প্রবনতার সমর্থনে সে কোন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পায়নি। ফারহিনা আমাকে বলেছে যে, পুরুষের চাইতে নারীর উপর অল্প বয়সে বিয়ে করার চাপ বেশী থাকে। তার ভাষায়, “কোন ছেলেকে যদি বিয়ে করতে আমাকে চাপ দেয়া হয়, আমি হয়তো আত্মহত্যা করবো। আমি যা নই তা হওয়ার চাইতে মরে যাওয়া ভাল”। সে যা, সেই হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সে গ্র্যাজুয়েশনের পরই দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবছে।

ইন্টারনেট হচ্ছে তাদের সবার জন্য পরামর্শ এবং সহায়তা পাওয়ার একটি মূল্যবান উৎস এবং এই উৎস তারা যা- তা মেনে নিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যতদূর সম্ভব মানসম্মত তথ্য পাওয়ার জন্য বিশেষত LGB তরুনদের জন্য, ইন্টারনেট ব্যবহার করা উত্তম। এর মাধ্যমে অন্যান্য LGB দের সাথেও যোগাযোগ করা যায় এই ঠিকানায়ঃ www.itgetsbetter.org, tiny.cc/lgb-bd এবং Wikipedia। দুর্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের সুবিধা বিত্তবানদের মধ্যেই সীমিত, সেহেতু অল্প সংখ্যকই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।

ভুলবশতঃ মাঝে মাঝে ভাবা হয় যে, যৌন প্রবণতা “একটি পছন্দ” অথবা “একটি অসুখ”- যার কোনটাই সঠিক নয়। এটা মনুষ্য যৌনতার একটি স্বাভাবিক দিক। সমকামী সম্পর্ক নারী-পুরুষের সম্পর্কের মতই প্রাকৃতিক এবং মানবিক বন্ধনের একটি স্বাস্থ্যকর ধরন। একজন ব্যক্তির যৌন ঝোঁক বা প্রবণতা সেই ব্যক্তির একটি অংশ এবং প্রত্যেকেরই তারা যা, সে জন্যই সম্মানের প্রাপ্য। LGB রা বিশেষ অধিকার দাবী করে না বরং তারা তাদের মানবিক অধিকারের স্বীকৃতি চায়। সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা সমকামীতাকে আনুকূল্য দেখায় না এবং বর্ণবৈষম্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। LGB দের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ এবং হয়রানী করা, তাদের সমান সুযোগ এবং সম্মান দিতে অস্বীকার করা অথবা তাদের অভিযুক্ত করা ইত্যাদি আচারনিষ্ঠ বা সভ্য- কোনটাই নয়, বরং এগুলো অনৈতিক।

সমমনা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যৌনক্রিয়া একটি সহজাত ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং সহিষ্ণুতা ও সম্মানের মূল্য দেয়- এমন সমাজের সরকার দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিৎ নয়। তবুও আইনবিধিমালার ৩৭৭ ধারা ঠিক তাই করছে। ৩৭৭ অনুচ্ছেদ মর্যাদা এবং সমতার মৌলিক নীতিগুলোর সাথে স্ববিরোধী এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙঘন করে। এটা সামাজিক হীনম্মন্যতাকে বেগবান, অন্যান্য বৈষম্যকে উৎসাহিত, গনস্বাস্থ্য উদ্যোগকে অবমনিত করে- যার ভিত্তি কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। বাংলাদেশ আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৩৭৭ অনুচ্ছেদ “জীবনের অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিস্তৃত সংজ্ঞানুযায়ী সাংবিধানিক ভাবে রক্ষিত গোপনীয়তার (privacy) অধিকারকে লঙঘন করে”। সুপ্রিম কোর্টের আইনবিদ সারা হোসেইন অনুচ্ছেদ ৩৭৭ কে আরও দেখেন বৈষম্য-বিরোধী ধারা এবং বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বারা নিশ্চিতকৃত সম অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হিসেবে।

যদিও ৩৭৭ অনুচ্ছেদ প্রায় ব্যবহৃত হয়ই না, কিন্তু এটা LGB গোষ্ঠীর জন্য ডেমোক্লেস (Damocles) এর তরবারীর মতো এবং গোঁড়া ও অসহিষ্ণুদের দ্বারা এটাকে অজনপ্রিয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেয়ার আগেই সাবধান হতে হবে। একটি স্বাধীন এবং গনতান্ত্রিক জাতি হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অনুচ্ছেদ ৩৭৭ রদ করা একটি অখন্ড পদক্ষেপ। এটি রদ বা বাতিল করলে LGB, যারা ধর্ষনের শিকার- তাদের জন্য, দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই নালিশ করা এবং পুলিশের সেই অস্ত্র কেড়ে নেয়া সম্ভব হবে যার দ্বারা তারা নাকাল, নির্যাতিত এবং ব্ল্যাকমেইল হচ্ছে। যদিও সাখাওয়াত অভিযুক্ত হতে ভয় পায় না, তথাপি সে রাষ্ট্রের চোখে একজন অপরাধী। LGB অধিকারের সমর্থনকারী হিসেবে সে বিশ্বাস করে যে, অনুচ্ছেদ ৩৭৭ বাতিল করলে “তা LGB গোষ্ঠীকে প্রকাশিত হওয়া সহজতর করার মাধ্যমে আরও ভাল দৃষ্টিগ্রাহ্যতা এনে দেবে”।

ফারহিনা, মামুন, সাখাওয়াত এবং অন্যান্য LGB মানুষদের জন্য আমাদের মনযোগ এবং সমর্থন প্রাপ্য। অন্যদিকে, LGB গোষ্ঠী গোঁড়ামী এবং অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্বের কিছু অংশ অবশ্যই গঠন করতে পারবে। আমাদের সবার এটা নৈতিক দায়িত্ব এই আন্দোলনে শরিক হওয়া এবং মানুষ হিসেবে সবার কদর সমান- এই দৃষ্টিভঙ্গীর সপক্ষে সহিষ্ণুতা এবং সম্মানের জন্য লড়ে যাওয়া।