আমরা সুদীর্ঘকাল মোঘল শোষণ, ইংরেজ শোষণ ও পাকিস্তানি শোষণে শোষিত ছিলাম। ইতিহাস বলে, শোষকগোষ্ঠীরা আমাদেরকে নির্যাতন ও শোষণ করেছিল বিভিন্ন ভাবে। আমরা বিভিন্ন বহিঃশত্রু ও শোষকের নাগপাশে বন্দি ছিলাম। এখন আমরা মুক্ত। আমাদের দেশ স্বাধীন, আমরা স্বাধীন। তাই আমাদেরকে হত্যা, ধর্ষণ বা যে কোনো প্রকারের নির্যাতন করার জন্য আর কোনো বহিঃশত্রুর দরকার নেই। আমরা এখন প্রতিনিয়তই চাক্ষুষ দেখতে পাই, আমাদের স্বাধীন দেশের মাটিতেই উৎপাদিত হচ্ছে অতি উন্নতমানের খুনি, চোর-ডাকাত, ধর্ষক ও এই ধরনের ইত্যাদি মহাগুণে গুণান্বিত মহামানবের দল। বাংলা টিভির সংবাদ বা বাংলা পত্রিকা খুললেই দেখতে হয় হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, আগুন, জ্বালাপোড়া। এসব এখনকার নিত্যনৈমিত্তিক অপরিহার্য্য ব্যাপার। এ ছাড়া দিনকাল চলতেই পারে না। পত্রিকা খুললে, টিভির খবর দেখলে ভয়ে গা শিউড়ে উঠে, চোখের পাতা আপনিই বুজে আসে। পুরো বাংলাদেশ যেন বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। নানা ভাবে মানুশ বধ হচ্ছে প্রতিদিন।
কিছু মানুশকে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে, তালাবন্দি করে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়িয়ে মানুশকে কয়লা বানানোর ঘটনাকে আমি দুর্ঘটনা বলব না। আমি বলব, মানুশ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর এটা একটা সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা। এই ঘটনা অহরহ ঘটেই যাচ্ছে। স্থায়ী কোনও প্রতিকারের বন্দোবস্ত দেখলাম না আজও। এখানে শ্রমিকের সেইফটির কোনও ব্যবস্থাই নেই। তার উপরে তাদেরকে কয়েদির মত তালাবন্দি করে কাজ করানো হয়। কারণ ছোটলোক হতদরিদ্র শ্রমিকগুলি নাকি একেকটা বড় বড় চোর। ওরা কোটি কোটি টাকার সুঁই-সুতো চুরি করে পালায়। তাই সুঁই-সুতো রক্ষার এই উত্তম নিরাপদ ব্যবস্থা। এতে কয়েকটা ছোটলোক পুড়ে মরলে অসুবিধে কোথায়? আর বড়লোক মালিকেরা একেকজন মহাসিদ্ধ পুরুশ। উনারা চুরি-চামারি করেন না। চুরি হয়ে থাকলেও তালাবন্দি করে কিভাবে মানুশের হাতে কাজ করানো হয়? এটা কতটুকু অমানবিক! দাসপ্রথা তবে কি আজও রয়ে গেছে বাংলাদেশে?
সরকার কিছু মানুশকে তার পালিত র্যানব ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে গুলি করিয়ে মারায়। র্যা্ব, পুলিশদের তো আর বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেয়া যায় না! তাছাড়া দেশের জনসংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের একটা দায়িত্ব আছে না, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের! কিছু মরছে গাড়ি চাপা পড়ে, কিছু মরছে লঞ্চ ডুবিতে। কারুর বা কেটে দেয়া হচ্ছে রগ, কিছু মরছে নেতা-নেত্রীদের লেলিয়ে দেয়া গুণ্ডাপাণ্ডাদের রড ও চাপাতির আঘাতে বা গুলিতে। তাতে কি? কেউ মারছে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে, কেউ মারছে, ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়ে। নেতা-নেত্রীরা, তাদের ক্যাডারেরা এবং বড়লোকেরা বেঁচে থাকলেই হলো সহিসালামতে। ছোটলোকদের এত বাঁচার কী দরকার? ওদের এত বাঁচার খায়েস কেন? দাঙ্গাহাঙ্গামা বা হানাহানিতে সব সময় দেখা যায় সাধারণ মানুশের সন্তানদের। কেউ বা মারছে, কেউ বা মারছে। কখনও নেতাদের সন্তানদের হানাহানিতে অংশ নিতে কিংবা অপঘাতে মরতে কেউ শুনেছে? নেতারা এবং তাদের সন্তানেরা সর্বদা থাকেন নিরাপদ দূরত্বে। উনারা ভাল ভাল খান, ভাল ভাল পরেন। বেশিরভাগ নেতা-নেত্রীর সন্তানেরাই থাকে বিদেশে। আত্মসাৎকৃত বা লুণ্ঠিত টাকায় বিদেশে লেখাপড়া করে, অতি উন্নত ও নিরাপদ জীবন যাপন করে। নিজের সন্তানকে নিরাপদে রেখে তারা পরের সন্তানকে ব্যবহার করেন নিজেদের গুণ্ডাবাহিনী ভারী করতে। পুরো জাতির সন্তানকে যদি তারা নিজের সন্তানের মত না ভাবতে পারেন, নিজের সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সাথে সাথে যদি পুরো জাতির নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের চিন্তা না করতে পারেন, তাহলে তারা পুরো জাতির দায়িত্ব নেন কোন আক্কেলে? শুধু ভাল ভাল খাওয়া-পরা আর উড়োজাহাজে চড়ে ঘন ঘন বিদেশযাত্রার জন্যে? আর সাধারণ মানুশের সন্তানেরাও কেন ব্যবহৃত হতে যায় নেতাদের হাতে?
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছেন, তারা নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া আর কি কি কাজ করেছেন দেশ ও দশের জন্য? সব নেতা-নেত্রীদের মধ্যে গুণগত কি কোনও পার্থক্য আছে? শুধু দলের নামগুলি ভিন্ন। এ ছাড়া তেমন কোনও তফাত তো দেখি না। খুনি, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, দেশদ্রোহীরা বুক ফুলিয়ে হাঁটে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে, দৈনিক অপকর্ম করে চলে নিশ্চিন্তে, পরম সুখে শান্তিতে বাস করে বাংলার মাটিতে। খুন হয়, ধর্ষিত হয়, নির্যাতিত হয় নির্দোষেরা। আমরা তাদের বদৌলতে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে চলেছি বার বার। এ তো বিশাল গৌরবেরই কথা।
প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, প্রতিদিন প্রাণ ঝরছে, লুণ্ঠিত হচ্ছে কারুর না কারুর মান-সম্ভ্রম। অন্যায়-অবিচার চলছে কারুর না কারুর উপর। পুলিশবাহিনী কাছে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ মারা গেলে তার লাশ নিয়ে নেতাগণ মেতে উঠেন নিজ নিজ রাজনৈতিক ব্যবসায়। হাত-পা নেড়ে, গলায় রক্ত তুলে চিৎকার চেঁচামেচি করেন। এতে করে ভিকটিমের বা তার পরিবারের কি লাভ হয়? লাভ হয় নেতাদের। অমানুশের হাতে, অব্যবস্থার হাতে মানবতার ও মানুশের মৃত্যু আর কত? অসভ্যের হাতে সভ্যতা ও সভ্যের মৃত্যু আর কত? স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে জন্মানোটাই কি এখন পাপ বলে বিবেচিত? অপমৃত্যুতে, ধর্ষণে, নিপীড়নেই করতে হবে সেই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত? এ-ই কি স্বাধীনতা? এ-ই কি গণতন্ত্র? দেশ কি যমপুরী বা মরণকুপে পরিণত হয়েছে? রাজনৈতক ক্যাডারেরা কি একেকটা যমদূত? কারুর কি রেহাই নেই এই অত্যাচার ও অপমৃত্যু হতে? ৩০ লক্ষ বীর তাঁদের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন কি এই রকম একটি দেশ গঠনের জন্য? বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করাত পর, দেশ এখন কার কবলে পড়ল? এর চেয়ে তো ভাল, বড় একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানানো হোক; সেখানে দেশের র সকল নির্দোষ মানুশকে ধরে ধরে এনে মেরে ফেলা হোক। বেঁচে থাকুন শুধু রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ, তাদের গুন্ডাপান্ডা আর বড়লোকেরা।
@তামান্না ঝুমু,
আপনার লেখার সাথে শতভাগ সহমত পোষন করছি।
“বড় একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানানো হোক; সেখানে দেশের র সকল নির্দোষ মানুশকে ধরে ধরে এনে মেরে ফেলা হোক। বেঁচে থাকুন শুধু রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ, তাদের গুন্ডাপান্ডা আর বড়লোকেরা।”
রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ, তাদের গুন্ডাপান্ডা আর বড়লোকেরা পরোক্ষভাবে এটাই চায়।
আপনার আরো লেখা পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ। (F)
@ভক্ত, ধন্যবাদ পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য।
মানুষ এখন আর মানুষ নেই। পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে।
@শরীফ খান, পশুরা কি মানুশের চেয়ে খারাপ? পৃথিবীতে যত অন্যায় হয় তার জন্য কি পশু দায়ী, নাকি মানুশ দায়ী?
বাংলাদেশে দরকার একটা বড় ধরনের সুনামির,সব অমানুষ মরে হাতেগুনা কিছু মানুষ বেঁচে থাকবে ।
@নিগ্রো,
আর সেই কিছু মানুষের মধ্যে আপনি ও আপনার পরিবার অবশ্যই বেঁচে থাকবে। সাথে থাকবে কিছু বন্ধু ও বঁধুর পরিবার। সকলেই এমনটা চাইবে। আসলে মৃত্যু কোন সমাধান নয়। বরং জেগে ওঠা দরকার। সুনামি হয়ে। 🙂
অমানুষ না হয়ে উপায় আছে বলেন! ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, মোঘল, পাকিস্তানী কাদের রক্ত আমাদের শরীরে নাই বলেন। তাও আবার সব জাতির সব খারাপ মানুষদের রক্ত। আমরা অমানুষ হব না তো কারা হবে!!
আমরা যে পুরোপুরি অমানুষ হয়ে গেছি এ তারই প্রমাণ।
@আকাশ মালিক, গুটিকয় অমানুশের পক্ষে মানুশের সমাজের শান্তি বিনষ্ট করা কতই না সহজ বাংলাদেশে! বিচার চাইতে গেলে অত্যাচারিতকে আরও বেশি করে অত্যাচারিত হতে হয়, প্রাণ হারাতে হয়।
গতরাত থেকে আমি শুধু বিশ্বজিৎএর মায়ের কথা ভাবছি। তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে, আর সেই দৃশ্য টিভিতে দেখানো হয়েছে বারবার। উহঃ এই মার এই কষ্ট বর্ণনার ক্ষমতা কি কারো বা কোনো ভাষার আছে? আমি যতবার এই মায়ের কথা ভাবছি, আমার মাথাটা আরো একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ।
@আদনান আদনান, বাঁচার জন্য কী আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ছেলেটা! দৌড়ে দৌড়ে পালাচ্ছিল যমদূতদের কাছ থেকে। পারল না বাঁচতে। এভাবে জনসমক্ষে, পুলিশের সামনে, ক্যামেরার সামনে, সারা বিশ্বের সামনে এতগুলি অমানুশ মিলে একটা মানুশকে মেরে ফেলল!
@তামান্না ঝুমু,
রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে একবার শিবিরের ছেলেরা অন্য দলের এক ছেলেকে চাকু মেরে পেট থেকে সব বের করে দিলো। আমরা দূরের থেকে তা দেখেই ভয়ে পালালাম। আমরা কিন্তু কেউ সাহস করে কেউ তাকে বাঁচাতে যাই নি। আমি এরকম ঘটনার ভিতরে ২ বার পড়েছি একটু দূর থেকে। আমি জানি মানুষ এতো ভয় পেয়ে যায় যে তাদের পক্ষে আসলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। মুখে অনেক কিছু আমরা বলি, কিন্তু ঘটনা ঘটার সময় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বুঝলাম সাধারণ মানুষেরা আর সাংবাদিকেরা সাহস করে এগিয়ে যেতে পারেনা, কিন্তু পুলিশরা কি করলো?
আমার বাড়ির প্রায় সবাই আওয়ামিলীগ করে। আমার এক মামা গ্রামে একবার এক খুনের কেসে পড়ে গেলো। এদিকে তার একটা চাকরির কথা চলছে। শহর থেকে যখন পুলিশ আসে, তখন আমার মামার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে যে, আমি রফিক। আমার মামার বেষ্ট ফ্রেন্ড আমার মামার হয়ে ৫ বছর জেল খাঁটে। এ এক বিশাল কাজ বন্ধুর জন্য। কিন্তু সামনের পরে যখন খুন হয়, আমার দেখা মতে তখন সব মানুষই একটা একরকম নীরবতার মধ্যে চলে যায়।
ধন্যবাদ।