লিখেছেনঃ সিদ্ধার্থ

পূর্বে ডালি ডালি শিউলির সুবাস এর মতন স্নিগ্ধ আনন্দ নিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হলেও বর্তমান সময়ে তা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সনাতনীদের জন্য আতঙ্কস্বরূপ। বিগত বছরে আমরা দেখতে পেয়েছি কীভাবে ঘর-বাড়ি পুড়েছে, কত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পূজা মণ্ডপে কুরআন রেখে আসেন এক মুসলিম ব্যক্তি, সেই দায়ে ঘর পুড়ে সনাতনীদের, প্রতিমা ভাঙ্গা যায় শত মন্দিরের। সেই ধারাবাহিকতা খুবই নিষ্ঠার সাথে বজায় রেখেছে আমাদের শান্তিপ্রিয় কতিপয় মুসলিম ভাইয়েরা। সংখ্যালঘুরা যে তাদের সকল ক্ষোভ মেটানোর জায়গা, সেই ২০০১ সালের ঘটনা মনে আছে আপনাদের? কীভাবে শত শত মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে, জ্বলেছে হিন্দুর ঘর? বিএনপি-জামায়াত নামক সন্ত্রাসীদলের ক্ষমতায়ন এ দেশ দেখেছে সংখ্যালঘুদের উপর ভয়াল থাবা, নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে সেই সকল সন্ত্রাসীদের দল। সেই তাণ্ডব এখন কিছুটা কমলেও চিরতরে নির্মূল হয়নি। আমাদের স্মৃতিশক্তি এতই দূর্বল যে মীর্জা ফখরুলেরা জোর গলায় সম্মেলনে দাবী করে কিছুই হয় নি ২০০১ এ , এবং বর্তমান সরকার ট্রাইবুনাল করে বিচারে কথা বল্লেও সেই রায় আর আসে না। কি ভয়ানক ছিলো ২০০১, সে শুধু ২০০১ এর ভুক্তভোগী সংখ্যালঘুরাই জানে।

 

এবারো পূজিত দেবীর মূর্তি ভাঙা দিয়েই শুরু হয় পূজো। ২৭ শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে প্রতিমা ভাঙচুর হলো অথচ বাংলাদেশের কোনো মিডিয়া সরব ছিলো না, প্রতিমা ভাঙচুর এর বিষয়টী বাপ্পাদিত্য বসু তার ভেরিফাইড পেইজ এ শেয়ার করেন। সংখ্যালঘুদের উপর এইযে অত্যাচার প্রকাশ্যে আসছে না, এর দায় কার? কার ইশারায় চুপ থাকে এরা? হলুদ সাংবাদিকগণ কী সবুজ থাকতে এসব চেপে যান? যাহোক প্রতিমা ভাঙচুর দিয়ে শুরু হলো এবারের পূজো। সংখ্যালঘুদের উপর এইযে নিপীড়ণ চলে আসছে, কোথায় সরকার?

 

আজ মহা অষ্টমী, অথচ ঢাকের আওয়াজ নেই, সংখ্যালঘুদের উপর এইযে অত্যাচার হচ্ছে বৈধভাবে, আমরা এটাকে সুপেরিয়র এফেক্ট হিসেবে বলতে পারি।বৈধভাবে সরকারকে প্রভু মেনে তার নিয়মে পূজো করা, ঢাক বাজানোর সময় সীমা বরাদ্দ, কই ঈদের সময় এই ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তো নামাজের সময়সীমা কমায় না? তাহলে সব চাপই কি সংখ্যালঘুদের উপর? সব হামলা তাদের উপর? এভাবে যে দিন দিন অত্যাচারিত হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘুরা এর দায় আসলে কার? সরকারের না আমাদের শান্তিপ্রিয় মুসলিম ভাইদের? ইসলাম ধর্মের মহানবী কে গাল মন্দ করলে পুরো ইসলাম সমাজ তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, কিন্তু এইযে বিভিন্ন জায়গায় কমেণ্ট বক্সে দেবী কে নিয়ে অশ্লীল, কুরুচিকর মন্তব্য করা হচ্ছে সেগুলো? আদতে এসব যে সকল মুসল্লি ভাইয়েরা করছেন তাদেরকে হয়তো শেখানো হয় নি মায়ের সম্মান করা। দেবী হিসেবে না হোক একজন নারী হিসেবেও দুর্গা কে বিবেচনা করা হলে এসব মন্তব্য দ্বারা বোঝা যায় যে তাদের ধর্ম তাদেরকে নারীদের সম্মান করা শেখায় না। চিরজীবন নারীরা তাদের দাসী।

 

প্রতি মায়ের মধ্যে দুর্গা জেগে উঠুক, সকল আত্যাচার বিনাশ হোক মাতৃ শক্তির ক্রোধে। দুর্গা কে প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে জেগে উঠুক নারীরা। নারীদের সম্মান করতে না জানা সকল অসুর নিপাত যাক মায়েদের হাতে।