লিখেছেন: মিলন আহমেদ
সন্ধ্যার পর রেলগেট দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের দু’একজনকে দেখা যায়। মুখে পাওডার মেখে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যায় কারো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। খরিদ্দারের অপেক্ষায়। মাঝে মাঝে চারিদিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে হয়তো ভাবছে এই একজন খরিদ্দার জুটবে। সবাই ওদেরকে ’পতিতা’ বলে। সবাইকে দোষ দিয়েই বা লাভ নেই। স্বয়ং অভিধানেও শব্দটি রয়েছে। কিন্তু তন্নতন্ন করে সকল অভিধান খুঁজেও ওই শব্দটির কোনো পুরুষবাচক প্রতিশব্দ পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ পুরুষেরা ’পতিত’ বা এজাতীয় কোনোকিছু হয় না। সেদিন ওইরকম একজন মেয়েকে দেখে একটু দূরে মোটর সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুপিসারে লক্ষ্য করলাম। মনে হচ্ছিল কাছে এগিয়ে গিয়ে হাতে দু’শ টাকা দিয়ে বলে দেই, আজকের মতো তোমার বাসায় ফিরে যাও। কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। শুধু সামাজিকতার কারণেই সম্ভব হয় না তা নয়, সম্ভব না হওয়ার আর একটি কারণ একজনকে একদিন টাকা দিয়ে যেহেতু ওদের দূরাবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। তাই গাড়ি ষ্টার্ট দিয়ে চলে যাই। কখন সে খরিদ্দার পেয়েছিল তা জানি না। ওরা যৌনকর্মী। টাকার বিনিময়ে ওরা পুরুষকে ওদের দেহ ব্যবহারের সুযোগ দেয়। টাকা নিয়েছে কিন্তু দেহ দেয়নি এমন কথা আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি। কিন্তু একজন বা দু’জনের জন্য চুক্তি করে নিয়ে গিয়ে বিশ/ত্রিশ জন পুরুষ মিলে গণধর্ষণ করে টাকার পরিবর্তে মারপিট করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা কম ঘটে না। শুধু তাই নয় মাঝে মাঝেই পাটের ক্ষেতে বা আখের ক্ষেতে ওদের বিবস্ত্র লাশ দেখতে পাওয়ার খবর পাওয়া যায়। মজাকরে ওদেরকে গণধর্ষণ করে, খুন করে আনন্দ পায় এবং বিবস্ত্র অবস্থায় লাশ ফেলে রেখে সে দৃশ্য উপভোগ করে। লাশ পাওয়ার পর সমাজের ভদ্র মানুষেরা ওই মৃত মেয়েটির লাশের প্রতিও ঘৃণা ছুঁড়ে দিয়েই তৃপ্তি পায়।
পতিতাবৃত্তির ইতিহাস খুঁজতে আমরা যদি একটু পেছনে যাই দেখতে পাব সমাজের আদিম অবস্থায় আজকের মতো পরিবার প্রথা ছিল না। মানুষ দলবদ্ধভাবে বাস করতো। মর্গানের মতে, এক একটা গোষ্ঠীর মধ্যে অবাধ যৌন মিলন চলতো। সেখানে প্রত্যেক পুরুষেরই প্রত্যেক নারীর উপর সমান অধিকার ছিল, আবার প্রত্যেক নারীরও প্রত্যেক পুরুষের উপর সমান অধিকার ছিল। অবশ্য অবাধ যৌন মিলনের স্তর এতই সুদূর অতীত হয়ে গেছে যে বর্তমানে তার শেষ চিহ্নটিও আবিস্কার করে প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আজকের মানুষ সভ্যতার যে স্তরে পৌঁছেছে তাতে অবাধ যৌন মিলনের স্তর সম্পর্কে বলতে এখন লজ্জা পায়। যাই হোক তারপরেই মানুষ পদার্পণ করেছিল যৌথ বিবাহের যুগে। বাকোফেন এ বিষয়ে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা করেন এবং ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মধ্যে থেকে এর প্রমাণও হাজির করেছেন। যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় নারীদের প্রাধান্য ছিল। কারণ উক্ত ব্যবস্থায় সন্তানের বাবা কে তা বুঝতে পারা অসম্ভব ছিল, কিন্তু মাকে চিনতে ভুল হত না। সে সময় অনেক দম্পতি তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে একত্রে বসবাস করতো, সেখানে নারী যে ঘর-সংসার দেখাশোনার কাজ করতো তা পুরুষের খাদ্য সংগ্রহের কাজের সমান সামাজিক প্রয়োজন বলে বিবেচিত হত। তারপর মানব পরিবারের ক্রমবিকাশের পরবর্তী স্তরে আর যৌথ পরিবার প্রথা টিকলো না। যৌন সম্পর্কের আওতা থেকে প্রথমে নিকটতম লোকদের তারপর একটু দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বাদ দিতে থাকায় যৌথ পরিবার প্রথা লোপ পেল। অবশেষে একজোড়া নর-নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল পরিবার। বিশ্বের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসমূহের পারিবারিক সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করলে এখনও এসব তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। বলা যেতে পারে যে একবিবাহ প্রথা প্রবর্তনের পিছনে নিয়ামক হিসেবে প্রধান ভূমিকা ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব। পরিবর্তিত উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে অর্থাৎ সম্পত্তির উপর যৌথ অধিকারের স্থলে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলেই একবিবাহমূলক পরিবার প্রথার উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং অবাধ যৌন মিলনের যুগে এবং যৌথ পরিবারের যুগে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো লিঙ্গ বৈষম্য ছিল না। লিঙ্গ বৈষম্য শুরু হয়েছে পুরুষরা যখন থেকে একচেটিয়া সম্পত্তির মালিক হয়েছে এবং তখন থেকেই একবিবাহমূলক পরিবার প্রথার প্রচলনও ঘটেছে। উহাই ছিল নারী জাতির ঐতিহাসিক মহা পরাজয়। সে সময় থেকেই ঘর সংসারের কাজকে আর সামাজিক কাজ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, সাংসারিক কাজকর্মগুলো তখন হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত বিষয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও তা মূল্যায়িত হয় না। স্ত্রী হয়ে দাঁড়ায় পারিবারিক দাসী, বঞ্চিত হয় ধনসম্পদের মালিকানা থেকে। ঠিক ওই সময় থেকেই মেয়েদেরকে নামানো হয়েছে বেশ্যাবৃত্তিতে, যা সম্পূর্ণভাবে পুরুষ আধিপত্যের দ্বারা সৃষ্ট। পুরুষ যখন চেয়েছে উত্তরাধিকারী হিসেবে তার সম্পদ যেন নিজের নির্দিষ্ট সন্তান ছাড়া আর কেহ না পায়, তখনই তারা একবিবাহ প্রথার প্রবর্তন করেছে। কাজেই শুরু থেকেই একবিবাহ বাধ্যতামূলক শুধু নারীর জন্যে, মোটেই তা পুরুষের জন্যে নয়। দলগত বিবাহ প্রথার যৌন স্বাধীনতা শুধু নারীরাই হারালো, পুরুষদের বেলায় তা হলো না। ফলে তখন থেকেই পুরুষের জন্যে একাধিক স্ত্রীর রাখার বৈধতার পাশাপাশি গোপনে বা প্রকাশ্যে বহুপত্নী ব্যবহারে অথবা বেশ্যার ব্যবহারের প্রচলন চলে আসছে। ঘরের স্ত্রীর যৌনাঙ্গে লোহার বেড়ি পরিয়ে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রেখে পুরুষের বিভিন্ন যায়গায় যৌনকর্ম করে বেড়ানোর ইতিহাস বেশি দিনের পুরোনো নয়। বাস্তবিক পক্ষে পুরুষদের ক্ষেত্রে আজও কিছুটা দলগত বিবাহ প্রথা বিদ্যমান, যা নারীর জন্য নয়। তাই একাধিক পুরুষের সাথে নারীর যৌনতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয় এবং যার জন্য আইনের দৃষ্টিতে, ধর্মীয় রীতিতে এবং সমাজের কাছে তাদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয় অপরপক্ষে পুরুষের ক্ষেত্রে তাহলো সম্মানের কাজ, যদিও কোনো কোনো সময় উহা পুরুষের নৈতিক পদস্খলন হিসেবে দেখা হয় তবে হাসি মুখেই তা মেনে নেয়া হয়। একই কারণে অভিধানে ‘পতিতা’ শব্দটি থাকলেও ‘পতিত’ নামক কোনো শব্দ নেই এবং থাকার কথাও নয়। সুতরাং ঐতিহাসিকভাবে ইহাই প্রতিষ্ঠিত এবং বাস্তব সত্য এই যে, যখন থেকে একবিবাহ প্রথার উদ্ভব হয়েছে তখন থেকেই স্ত্রীর পাশাপাশি বেশ্যারও সৃষ্টি হয়েছে। এঙ্গেলস তাঁর ‘পরিবার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি’ নামক বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থে বলেছেন, “বেশ্যাদের থেকে সেই স্ত্রীর পার্থক্য কেবল এই যে, সে সাধারণ বেশ্যাদের মতো রোজই নিজের দেহকে দিন-মজুরের মতো ভাড়া খাটায় না, কিন্তু তার দেহকে সে একেবারেই চিরকালের দাসত্বে বিক্রি করে দেয়।” কিন্তু এত কিছুর পরেও সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় যে, একবিবাহ প্রথার উদ্ভব ছিল সভ্যতার ক্রমবিকাশের পথে একধাপ অগ্রগতি। তাই এঙ্গেলস ইহাও মনে করেছেন যে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে প্রেমময় এবং মধুর, থাকবে না কোনো লিঙ্গ-বৈষম্য। যাইহোক পতিতাবৃত্তি চলে আসছে লক্ষাধিক বছর পূর্বে থেকে এবং ধর্মগুলি এসেছে মাত্র দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে। লক্ষ্য করার বিষয় যে সকল ধর্মই এসব ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এসেছে। ক্রীতদাসীর সাথে যৌনকর্মের পক্ষে যেমন অধিকাংশ ধর্মই রায় দিয়ে আসছে তেমনি নারীর দেহ বিক্রয় করার অর্থও মন্দিরের তহবিলে জমা হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। মহাভারতে উল্লেখ আছে যে, একজন বেশ্যা ভাল প্রকৃতির হলে উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। একইরূপ মত পোষণ করতে দেখা যায় বৌদ্ধ ধর্মের বিধানেও। আর্মেনিয়ার আনাইতিস দেবতার মন্দিরের ক্রীতদাসীরা, করিন্থের আফ্রোদিতে দেবতার মন্দিরের ক্রীতদাসীরা, ভারতীয় মন্দিরসমূহের দেবদাসী নর্তকীরা, পর্তুগীজ বায়াদের নর্তকীরা সবাই ছিল দুনিয়ার সেরা বেশ্যা। এভাবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি, সহস্রাব্দের পর সহস্রাব্দ ধরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। এক কথায় বলা যেতে পারে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে নারী ও পুরুষের মাঝে বিরাজমান বৈষম্যের এক শোচনীয় পরিণতির নাম হচ্ছে পতিতাবৃত্তি।
বাংলাদেশেও সেই ধারাবাহিকতা যথারীতি চলে আসছে। এদেশে বহু পতিতালয় ছিল এবং এখনও বেশ কিছু রয়েছে। পতিতালয়ের সংখ্যা কমলেও পতিতার সংখ্যা বেড়েছে এবং এখনও বেড়ে চলেছে বলেই মনে হয়। এদেশে পতিতার সংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান যদিও নেই, তবে বাংলাপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে সে সংখ্যা এক লক্ষের কিছু কম বা বেশি। বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তিকে অনুমোদনের জন্যে তেমন আইন না থাকলেও ১৮ বছরের উপরের যুবতীদের এফিডেভিটের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তি গ্রহনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। একটা বিষয় কি কেহ ভেবে দেখেছে তারা কেন ওই পেশায় এসেছে? আমার জানা মতে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় একজন মেয়েও স্বেচ্ছায় উক্ত পেশা গ্রহন করেনি। ওদের বেশিরভাগই কোনো না কোনো পুরুষের ষড়যন্ত্রের শিকার। প্রেমের অভিনয় করে অথবা মিথ্যা চাকুরী দেওয়ার কথা বলে নাটক সাজিয়ে সহজ সরল মেয়েকে ঠান্ডামাথায় ডেকে নিয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রী করে দেওয়ার খবর যেমন আমরা অহরহ দেখি তেমনি স্বামী নামক দেবতাকেও তার স্ত্রীকে সেখানে বিক্রী করে টাকা গুণে নেওয়ার খবর আমরা মাঝে মাঝেই দেখতে পাই। আবার অত্যাধিক দারিদ্রের তাড়নায় ক্ষুধার জ্বালা মেটাতেও এ পেশা বেছে নেয় কিছু সংখ্যক মেয়ে। সকল যৌনকর্মীরই এ পেশায় আসার সূত্রপাতটা এভাবে সম্পূর্ণ নিজের অনিচ্ছায় ঘটেছে। ‘বড় হয়ে আমি একজন পতিতা হব’- এই বাসনা কি একজন মেয়েরও ছিল? অর্থাৎ কোনো মেয়েই পেশা হিসেবে স্বেচ্ছায় তা বেছে নেয়নি বরং নিশ্চিত তাকে বাধ্য করা হয়েছে। পূর্বটেংরী ঊচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বিশ্বাস বললেন, “সবচেয়ে নিরাপরাধী যদি কাউকে বলতে হয় তাহলে পতিতাদেরকেই বলতে হবে এবং সবচেয়ে পবিত্র আয় যদি কেহ করে থাকে তাহলে পতিতারাই তা করে।” তাহলে এ পেশায় আসার জন্যে কোনো মেয়েই কি সামান্যতম অপরাধী? মোটেই নয়। সুতরাং রেলগেটে যে মেয়েটিকে খরিদ্দারের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম সেও অপরাধী নয়। কিন্তু সমাজের চোখে সে ঘৃণিত! শুধু ঘৃণিত বললে ভুল, চরমভাবে দূষিত! মৃত্যুর পর তার লাশটাও নিকৃষ্ট। সাধারন মানুষের জন্য যেসকল কবরস্থান উম্মূক্ত রাখা হয় সেখানে কোনো পতিতার মৃতদেহকে সমাহিত করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু যে মানুষটি কোনো অপরাধই করলো না, সে কিভাবে ঘৃণিত হলো? এ প্রশ্নের উত্তর কি কেহ খুঁজেছে? যেহেতু সমাজ ওদেরকে মিথ্যে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে তাই আমি বলবো ওরা ঘৃণিত নয়, প্রকৃতপক্ষে সমাজটাই ঘৃণিত। শুনে দুঃখ পেতে হয় যে, আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবি তাদের লেখনীতে পতিতাদেরকে আবর্জনা এবং পতিতালয়কে ডাস্টবিনের সাথে তুলনা করে থাকেন। আমি তাদেরকে ধিক্কার জানিয়ে বলতে চাই যারা নিরাপরাধ অসহায় নারীদেরকে আবর্জনা বলতে পারে প্রকৃতপক্ষে তারাই আবর্জনা। এসব বুদ্ধিজীবি নামধারী আবর্জনার দুর্গন্ধেই দেশেরও একই দূরাবস্থা। আবার কেহ কেহ পতিতাবৃত্তির মধ্যে শিল্পগুণ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন, আমি তাদেরকে পতিতাদের দালাল ছাড়া কিছুই মনে করি না। ওদের নিয়ে তেমন গবেষণাও এদেশে পরিচালিত হয়নি। নেই তেমন চিকিৎসার ব্যবস্থা। এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওদের এক-চতুর্থাংশই গনোরিয়া বা ক্ল্যামিডিয়া রোগে ভুগছে। সিফিলিসের হারও আশংকাজনক। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে ইতোপূর্বে প্রকাশিত সরকারের এইডস সংক্রান্ত কৌশলগত প্রকল্প প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জরিপ করা ৯৮৪ জন পতিতার মধ্যে ৫৪%-এর বর্তমানে বা পূর্বে সিফিলিস আছে বা ছিল। পতিতারা ঘৃণিত বা অবহেলিত হলেও তাদের কাছে যাচ্ছে কিন্তু সব শ্রেণীর পুরুষই। ডোম থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক, ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধসহ সকলশ্রেণীর পুরুষদেরই কিছু অংশ নিয়মিত পতিতালয়ে যায়। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, মেয়েগুলি স্বেচ্ছায় সেখানে না আসলেও খরিদ্দারগুলি কিন্তু স্বেচ্ছায় যায়। পতিতাদের নাম নিবন্ধিত হয় কিন্তু সেখানে গমনকারী পুরুষদের নাম তালিকাভূক্ত হয় না। আজ থেকে তের বছর আগে (১৯ আগষ্ট’ ১৯৯৯) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন পতিতালয়ে গমনকারী পুরুষদের নামও নিবন্ধিত করা উচিত যাতে সমাজ জানতে পারে কারা পতিতালয়ে যায়। কিন্তু তিনি শুধু বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেননি। পতিতালয়ের নির্দিষ্ট স্থানে যেমন ওরা রয়েছে তেমনই রয়েছে ভাসমান হিসেবে, তাছাড়া বহু আবাসিক হোটেলেও গোপণে পতিতাবৃত্তি চলে আসছে। যে প্রকারের পতিতাই হোক না কেন তার দেহ বিক্রী করা আয়ের খুব কম অংশের মালিকই সে হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার দালাল, পুলিশ, বাড়ির মালিক, মাস্তান, পাতিনেতা এমন কি কিছু বড় নেতার পকেটেও ওই টাকা চলে যায়। মাঝে মাঝে পতিতাদের পুনর্বাসনের কথা বলে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতে ৩৫০ জন পুলিশের একটি দল টানবাজার পতিতাপল্লীতে বর্বরভাবে হামলা চালিয়ে অমানবিকভাবে তাদেরকে উচ্ছেদ করেছিল। সেসময় সেখানকার প্রায় পাঁচ হাজার পতিতার নেতৃত্ব দিচ্ছিল সাথী নামক একজন পতিতা। দুদিন অনাহারী অবস্থায় সাথী তার কোলের শিশুকে দেখিয়ে বলেছিল ওকে যারা জন্ম দিয়েছে সেই লোকেরাই তাদের উচ্ছেদ করছে।
নিউইয়র্ক শহরে দশ বছর যাবৎ যৌনকর্মীর কাজ করতো স্টেলা র্মা নামক একজন মেয়ে। যৌনকর্মীরা সমাজের অন্য দশজনের থেকে কম মেধাবী বা কম যোগ্যতাসম্পন্ন একথা একশতভাগ মিথ্যা প্রমাণ করেছে স্টেলা র্মা। পরবর্তীতে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অত্যন্ত ভাল ফলাফল করে খ্যাতির সাথে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। কাজেই আমরা যাদেরকে পতিতা বলছি তারা অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসেনি বরং সাধারন মানুষের মতোই স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়েছিল এবং আমাদের মতই ক্ষুধা, পিপাসা, ঘুম, ক্লান্তি, অনুভূতি সবকিছু নিয়েই একইরকম মানুষ। যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলবো, অন্যরা তোমাদের যতই ঘৃণা করুক, প্রকৃতপক্ষে তোমরা ঘৃণিত নও, তবে তোমাদের ওই পেশাটা বাদ দিতে হবে। যৌনকর্ম হবে তোমার অনুভূতিকে তৃপ্ত রাখার জন্যে একমাত্র ভালবাসার মানুষের সাথে। টাকার বিনিময়ে শরীর দেওয়া মানেই দাসত্ব। কাজেই ওই যৌনদাসত্ব থেকে বের হয়ে এসে সোজা হয়ে দাঁড়াও, সকল প্রকার দাসত্বের বিরুদ্ধে লড়াই কর, স্টেলা র্মা এর নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর, যদি তা পার তবে আমি তোমাদের সালাম দেব। আর বিবেকবান সকল মানুষের কাছে আমার আহবান, আসুন পতিতাবৃত্তির মতো মারাত্মক ব্যাধির হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করি এবং নারী-পুরুষ সবার জন্যে একটি আধুনিক প্রেমময় সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি।
লেখকঃ কলেজ শিক্ষক এবং নারীবাদীকলামিস্ট, ঈশ্বরদী, বাংলাদেশ।
ই-মেইলঃ [email protected]
মুহম্মদের সময় আরবে বহুঈশ্বরবাদী ধর্মের বদলে একেশ্বরবাদী ধর্মের আরম্ভ থেকে আরও অনেক পরিবর্তন যখন সম্ভব হয় তবে কি ক্রীতদাস প্রথাও বিলুপ্ত মুহম্মদ করতে পারতেন না ?
ভাল
কেউ যদি নিজে থেকে পতিতাবৃত্তিতে আসতে চায় সেক্ষেত্রে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।কিন্তু আমাদের সমাজ যখন যারা চায় না তাদেরকে পতিতাবৃত্তির দিকে ঠেলে দেয় সেটা অত্যন্ত ঘৃণিত ব্যাপার।কিন্তু আসল কথা হল আমাদের সমাজ পতিতাদের মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না,যা অন্যায়।আমরা কি পারিনা পতিতাদের মানুষের মত ব্যবহার পাওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিতে?
কোন পেশা বা ব্যাবসা নির্ভর করে চাহিদার উপর। যেহেতু “কামের” চাহিদা কোনদিনও শেষ হবে না, তাই এই পেশাও কোনদিন শেষ হবে না। এখন সময় হয়েছে এই পেশাজীবীদের সম্মানের চোখে দেখার, আর যাই হোক তাঁরা কিন্তূ পরিশ্রম করে আয় করে, তাঁরা দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের চেয়ে অনেক ভাল।
সবচেয়ে বড় কথা, তারাও আমাদের মত মানুষ।
ধন্যবাদ এরকম একটা Important বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ।
খুব ই ভালো লাগলো পরে ।
শেয়ার করলাম (PDF আকারে) ।
কিছু মনে করবেন না ।
নিচে লেখকের নাম দেয়া আছে । 🙂
নাইস।। (D)
পতিতারা নয়, বরং সমাজটাই ঘৃণিত – এই দৃষ্টিভঙ্গী যেভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ভাল লাগলো। স্বাগতম! (F)
কেবল লেখা নয়, সেই সাথে লেখা সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নিলে আরো ভাল লাগতো।
@বিপ্লব পাল,
biological determinism এর সমস্যা এবং এর রাজনৈতিক মতাদর্শগত অবস্থান নিয়ে অনেক লেখা পাবেন। আশাকরি এ নিয়ে গুগলিং করেবেন। ধন্যবাদ।
বলিষ্ঠ জনমত তৈরিতে এই ব্যাপারে অনেক লেখা আসা খুব দরকার। যত্ন করে কাজটি করেছেন সেজন্য সাধুবাদ।
স্বাগতম।
যারা আরো একটু পড়তে চান, তাদের জন্য এ বিষয়ে আপনার তথ্যভাণ্ডার থেকে কিছু কিছু তথ্যসূত্র দিয়ে দিলে ভালো হত।
আপনি লিখেছেন
বক্তব্যগুলোর সমর্থনে কিছু সূত্র দিয়ে দেবেন নাকি?
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। লেখার প্যারাগুলো আরেকটু ছোটো ছোটো করলে মনে হয় আরো ভালো হতো। চালিয়ে যান (Y) ।
ভাই বিপ্লব পাল@, দয়া করে দক্ষিন ভারতের “নায়ার”, “বান্ট”, এবং উত্তর ভারতের “খাসী” বা “খাসীয়া”, “জইন্তা” ও “গারো” – আদিবাসী দের ব্যাপারে একটু খোজ খবর নেন, তাহোলে আর বলবেন না যে, মর্গান “রুপকথা লিখে গেছেন”। এবং
“মাতৃতান্ত্রিক সমাজ সম্পূর্ন কাব্যিক কল্পনা” যে নয় বরং তা এভিডেন্স বেইসড সেটাও বোঝা হবে। “মাতৃতান্ত্রিক সমাজ” মানে কিন্তু ভুল্ভাবে ধরে নেয়া পিত্রিতান্ত্রিক সমাজের বিপরিত না, বাংলাতে “মাতৃসুত্রিয়” বলালে হয়তো বুঝতে সুবিধা হয়।
মিলন আহমেদ@ আপনার লেখাটার সবচেয়ে ভালো লেগেছে যে, আপনি “পতিতা আদিম পেশা” যে না, সে সম্পর্কে আলো ফেলার জন্য। আরো লিখুন। ধন্যবাদ।
@খান আসাদ,
http://en.wikipedia.org/wiki/The_Inevitability_of_Patriarchy
পুরুষতন্ত্রের অভিসম্ভাবী ডমিন্যান্স নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানে অনেক গবেষণা।
আসলে পুরুষ হতে লজ্জা করে এইসব নিরপরাধ মেয়েদের কথা ভেবে
ভাই আপনার লেখাটা আমার ভাল লেগেছে……। কারন অল্পের মধ্যে শেষ করেছেন। পড়ে ভাল লাগল আবার কষ্ট ও লাগল।
এই লেখাতে যে ইতিহাস বা নৃতত্ত্ব লেখা আছে, তা সম্পূর্ন রূপকথা।
[১] অবাধ যৌনাচারের অস্তিত্ব হোমো ইরেক্টাস বা হমো স্যাপিয়েন্সের যেটুকু ইতিহাস আমরা জেনেছি, তার কোথাও পাওয়া যায় নি। লেখক মর্গানের নাম নিয়েছেন-মর্গান ১৫০ আগে এই সব রূপকথা লিখে গেছেন। হমো ইরেক্টাসদের আবিস্কার এই সেই দিনের ঘটনা-বা হমো ইরেক্টাস থেকে হমো স্যাপিয়েন্সের বিবর্তন এখনো পরিস্কার না। আবার প্যালিওলিথিক হমোস্যাপিয়েন্স থেকে নিওলিথিক সমাজের বিবর্তনের কোন পরিস্কার ইতিহাস এখনো নেই। এই ধরনের তথ্য কে বিজ্ঞান বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন মর্গান, এবং তার ওপর ভিত্তি করে এঙ্গেলেস। বাস্তব হচ্ছে, এসব নিয়ে যথেষ্ঠ প্রমান-যথা যথেষ্ঠ পরিমান ফসিল, গুহাচিত্র এখনো নেই। প্যালিওলিথিক যুগ থেকে নিওলিথিক যুগে মানব সমাজের বিকাশ এখনো বেশ ভাসা ভাসা।
[২] এই টুকু অন্তত জানা গেছে, হমো ইরেক্টাসদের মধ্যে মেয়েরা বড় হলেই অন্য গ্রুপে চলে যেত। কারন নিজেদের গ্রুপের মধ্যে মেয়েদের যৌন সংসর্গ করতে দেওয়া হত না-যেহেতু তার থেকে অনেক জেনেটিক সমস্যা সহ সন্তানদের জন্ম হত।
[৩] মাতৃতান্ত্রিক সমাজ সম্পূর্ন কাব্যিক কল্পনা-এমন কোন সমাজের পক্ষে কোন প্রমাণ কোথাও নেই। হ্যা সমাজে মেয়েদের পজিশনের হেরফের হয়েছে- কিন্ত পুরুষ প্রধান না, এমন আদিম সমাজের সুনির্দিষ্ঠ কোন প্রমান নেই।
@বিপ্লব পাল,
সকল দুঃখ দূর্দশা বিনাশকারিনী‘দূর্গতিনাশিনী’দেবী দূর্গা ও তার অবতার কালী, ভগবতী, ভবানী, অম্বিকা, ললিতা, গৌরী, কুণ্ডলিনী, জবা, রাজেশ্বরীর দেশের মানুষ হয়ে যদি এ ভাবে সরাসরি বলেন-‘মাতৃতান্ত্রিক সমাজ সম্পূর্ন কাব্যিক কল্পনা’ তাহলে কেমনে হবে? প্রাচীন ব্যবিলন, সুমেরীয়, মিশর, গ্রিস, রোমক, ফিনিসীয়, ভারতীয় ও এমনকি আরব সভ্যতায়ও দেবীদের যে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল, এর কারণটা কী হতে পারে বলে করেন? প্রাচীন ইউরোপে ঈশ্বর ছিল না। ছিল শুধু ঈশ্বরীরা। তারাই দোর্দণ্ড প্রতাপময়ী, সর্বত্র বিরাজমান এবং অক্ষয় শক্তির অধিকারিণী ছিলেন। মানুষ এই দেবীদের ভয় পেত, পূজা করত এবং মানত।
এটা কি মাতৃতান্ত্রিক সমাজরীতির লক্ষণ হতে পারেনা?। ইহুদি-খ্রিষ্টান-ইসলাম ধর্মের উদ্ভব ও এই তিন ধর্ম কর্তৃক অন্যান্য ধর্মের অবলুপ্তির সাথে ‘নিয়মতান্ত্রিক পিতৃতন্ত্রের (সিস্টেমেটিক প্যাট্রিয়ার্কি)’ উদ্ভব জড়িত কিনা, সে প্রশ্ন করাই যায়। প্রাচীন দেবী প্রধান ধর্মগুলোর কাহিনী তথকালীন সমাজের বাস্তব চিত্র পঠন-পাঠনে বিলুপ্ত মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এখনও ভারত ও বাংলাদেশের কিছু কৃষীজীবী অঞ্চলে (খাসিয়া ও পাহাড়ি জনগুষ্ঠি) মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়।
এই মুক্তমনায়ই একবার বোধ হয় আলোচনা উঠেছিল যে, মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলতে আদৌ পৃথিবীতে কোন কালে কোন সমাজ ব্যবস্থা ছিল কি না। এটার সঠিক একটা উত্তর এখনও বোধ হয় পাওয়া যায়নি।
@বিপ্লব পাল,
আপনার প্রথম দুটি পয়েন্টের সঙ্গে এ ক ম ত। আপনার সঙ্গে আরেকটু যোগ করে বলতে চাই, লেখা হিসেবে এটিকে বেশ দুর্বল লেখাই মনে হয়েছে। পেশার মর্যাদা না থাকার কারণেই দেহ ব্যবসা খুব খারাপ — এমন আপ্তকথায় আপত্তি আছে বৈকি। বরং এ পেশাটি যে কোনো সৃজনশীল পেশাই নয়, এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও প্রচুর — এইসব গুরুতর বিষয় লেখাটিতে উপেক্ষা করা হয়েছে।
যা হোক। আপনার তৃতীয় পয়েন্টটিতে আমার বেশ খানিকটা আপত্তি আছে।
মান্দি বা গারো আদিবাসী সমাজ পুরোপুরি মাতৃতান্ত্রিক। পেশাগত কারণে এই সমাজটিকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখছি। গারো মেয়েরাই উত্তোরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হন, পরিবারের কর্তৃত্ব তাদের হাতেই থাকে। ছেলেরা বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি যায়, সেটিই হয় তার বাড়ি।
তবে এখন প্রাচীন আদিবাসী সমাজ-সংস্কৃতি অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। পুঁজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের স্পষ্ট প্রভাব গারো সমাজেও পড়ছে। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন, মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী সমাজ এমন আরো আছে। মারমারাও আংশিক মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।
চমৎকার একটি টপিক নিয়ে লিখেছেন।চাকুরীর সুবাদে আমি একবার টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম,কিছুদিন ছিলামও।শহর ঘোরার অংশ হিসাবে পুরানো স্কুটার স্ট্যান্ডের অদিকে গিয়েছিলাম, যখন বুঝতে পারলাম এখানেই টাঙ্গাইলের পতিতালয়টি অবস্থিত তখন তীব্র কৌতুহল বশতঃ আমি ভেতরে যাই।সেখানে আমি যা দেখেছি তা আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবনা।ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা খদ্দেরের আশায় টিনের ঘরের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ কেউ দেদারছে সিগারেট টাঞ্ছে।কোন এক অপরাধে একজন বয়স্ক পতিতা বাচ্চা একটা মেয়েকে আশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছে।
অখানে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে যে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব আমরা করি পতিতালয় কিংবা পতিতারা তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ অথচ আমরা তীব্রভাবে তা অস্বীকার করি শুধুমাত্র নিজেদের পবিত্র ভাবার জন্য। আমার বিশ্বাস বেশীরভাগ পতিতারা জানে এই তাথাকথিত পবিত্র সমাজ ব্যবস্থায় ওদের কোন ঠাই নেই। তাই ওরা চরম অনিচ্ছা সত্বেও এই ব্যবসা চালিয়ে যায়।সত্যি যদি ওরা অন্য কোন সম্মান জনক পেশার সুযোগ পেত তবে ওরা অবশ্যই সেটা গ্রহন করত।
যে বাচ্চাটা পতিতালয়ে জন্মালো সে জানেনা তাঁর বাবা কে, তাই বাবাহীন জীবনের অভিশাপযুক্ত দীর্ঘশ্বাস থেকে বাচতে পারিনা আমরা কেউই। :-Y
পরিশেষে লেখককে (F)
(Y) @মিলন আহমেদ, ভালো লেগেছে। শেষদিকটা তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছেন মনে হয়েছে। সমাজের এসব প্রান্তিক মানুষগুলোকে নিয়ে আমাদের মত শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সময় কই? আমরা মধ্যবিত্তরা কেবলই গা বাঁচিয়ে কোনমতে রাতের খাবার খেয়ে পরদিন চাকুরিতে যাবার ব্যবস্তায় থাকি। আমরা কেবলই নিজেদের নিয়েই ভেবে চলেছি। বিমল মিত্রের ”সাহেব বিবি গোলাম” এ তখনকার জনজীবনের সাথে রক্ষিতা আর বেশ্যাবৃত্তির একটা পরিচয় পাওয়া যায়। ২-৩ বছর আগে হরিশংকর জলদাস “কসবি” লিখে অবহেলিত জনগোষ্ঠির বেশ্যা হয়ে উঠার করুণ চিত্র একেঁছেন এ উপন্যাসে।
আপনার সুন্দর লেখার জন্য আবারো ধন্যবাদ। আরো তথ্যভিত্তিক লেখা পাবো সে আশায় আছি। (Y)
মানুষের প্রাগৈতিহাস এতই জটিল যে এবিষয়ক যেকোন থিয়োরীই সম্ভাব্য গল্পগাঁথার বেশি কিছু নয়। কাজেই–
এসব অত কন্ফিডেসন্স নিয়ে না বলাই ভাল। এটা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন কি তাও আমার কাছে স্পষ্ট নয় যেখানে সংশ্লিষ্ট জলজ্যন্ত মানুষ গুলিকে কথা বলাই যথেষ্ট।
এদিকে আবার বলছেন ১ লক্ষ বছর ধরে “পতিতা”-বৃত্তি চলে আসছে যা কিনা উপরের উদ্ধৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
যাহোক, বাংলাদেশের পতিতাদের অমানবিক অবস্থা সম্বন্ধে যা বলেছেন তা নিঃসন্দেহে সঠিক। বাংলাদেশী কোন মেয়েই ইচ্ছাক্রমে পতিতাবৃত্তি করেনা, এটা সুনিশ্চিতভাবেই ঠিক না, তবে statistically আপনার বক্তব্য ভুল বলবার কোন কারণ নেই।
যদিও আপনার মন্তব্য বাংলাদেশের বিশেষ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে লেখা, তারপরও যখন বিদেশী যৌনকর্মীদের কথা তুলেছেন কাজেই ধরে নিচ্ছি যৌন কর্ম নিয়ে in principle আলাপ নিয়ে আপনার আপত্তি থাকবেনা। এক্ষেত্রে আর পাঁচটা পেশার মত (আইনী ও নিরাপদ) যৌন কর্মকে ১১০% ভাগ সমর্থন না করার কারণ দেখিনা। বিদেশী বহু যৌনকর্মী যে উচ্চশিক্ষিত বা নারীবাদী বা আরো-একশ-গুণের-অধিকারী, এটা আসলে ওভাবে আলোচনারই প্রয়োজন পড়ে না (বিদেশে, বাংলাদেশে এগুলো তুলে ধরার মূল্য নিশ্চয়ই আছে)। Belle De Jour এর বই বা sex-positive feminist দের লেখালেখি ঘেঁটে দেখতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। আমি মনে করি পতিতাবৃত্তির কারণ ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে আরো গভীর গবেষণামূলক বিষদ আলোচনার প্রয়োজন ছিল। জীবিকার সাথে জীবনের সম্পর্ক আর টিকে থাকার প্রশ্নে জীবনের কাছে নীতি-বাক্য, শালীনতা, ভদ্রতা, ধর্ম, মানবতা অর্থহীন হয়ে যায়। এর সাথে জড়িত আছে সমাজ, পরিবার, প্রথা, ধর্ম, রাষ্ট্র ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনা। শুধু অর্থই নয়, এর পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে যার কিছুটা আপনি উল্লেখ করেছেন। এক সময় হিন্দু সমাজে হাজার হাজার বিধবারা শুধু যৌনক্ষুধা নিবারণের জন্যে বেশ্যা হয়েছে। মুসলমানদের অনেক মেয়ে বাবা মার পছন্দে বিয়ে না হওয়ার কারণে পতিতা হয়েছে এমন প্রচুর উদাহরণ আছে। সুতরাং সমস্যার মূলটা অনেক গভীরে।
পেশাটা বাদ দেয়ার সাথে অন্যের ঘৃণার সম্পর্কের চেয়ে অর্থের সম্পর্কটা আসল, ঠিক না? আর যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিকার মূলধন অর্থের সুরাহা না হচ্ছে ততক্ষণ পেশাটাকে রেখে দিয়ে ঘৃণাটাকে উঠিয়ে দিলে কেমন হয়, অর্থাৎ ‘পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়’?
এ কথা শুধু পতিতারা শুনবে আর কাবিন- মোহরানায় বিক্রীত বিবাহিত স্ত্রীরা বাদ যাবে কেন? এক দিক দিয়ে অলস অকর্মট পরজীবী বিবাহিত স্ত্রীদের তুলনায় পতিতারা স্বাধীন স্বাবলম্বি না?
ইংল্যান্ডের একজন পতিতার ইন্টারভিউ থেকে কিছুটা তুলে দিচ্ছি। প্রশ্ন করা হয়েছিল- এমন মৃত্যুঝুকি পূর্ণ অবস্থায় নিজেকে ফেলার অর্থটা কী? তিনি বলেন-
‘The more desperate you are, the more you’re going to put yourself in danger’.
সো, ডিসপারেইট ফর হোয়াট? নিশ্চয়ই জীবন। বেঁচে থাকা, টিকে থাকার শেষ অবলম্বন।
আবার কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন-
“Even if I found a man I could tell what I’ve done, at the back of his mind he will not trust me. It puts you in quite literally a no-man’s land.
আগে তাদেরকে গ্রহণ করে নেয়ার মানসিকতা সমাজে গড়ে উঠতে হবে ঠিক না?
ভদ্র মহিলা তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘জীবনে এতো বেশী বিবাহিত ভদ্র ঘরের শিক্ষিত সুশীল নামের পুরুষদের দেখেছি যারা তাদের স্ত্রীদের ঘরে রেখে আমার কাছে এসেছেন- I will never trust a man again’.
আলোচনা চলুক, আমি পতিতাবৃত্তির সমর্থক মনে করার কোন কারণ নেই, শুধু সমস্যার বিভিন্ন দিকটার প্রতি একটু ইঙ্গীত করলাম।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনি যেহেতু একজন নারীবাদী কলামিস্ট তাই এ ধরণের লেখা আপনার কাছ আরো কামনা করি।
যৌনদাসীই যদি রক্ষিতা হয় তাহলে এই স্ট্যাটাস পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহম্মদেরও ছিলো। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ভারত তার অন্ধকার দিককে কাটিয়ে উঠেছে আরও উঠবে। কিন্তু ইসলাম তার অন্ধকার দিক কাটাবে কিভাবে ?
@হৃদয়াকাশ,
মুহাম্মদের যৌনদাসী ছিল কি ছিল না তার সাথে এই লেখার সম্পর্ক কি?
আপনার কি মনে হয় মুসলিমরা এখনো যৌনদাসী বা রক্ষিতা রাখাকে সমর্থন করে?
@সৈকত ভাই,
আপনারে একটা গল্প কই।
এক পোলা পরীক্ষার জন্য রচনা শিখছে একটা। কুমিরের রচনা। কিন্তু পরীক্ষা হলে যাইয়া দেখে রচনা আসছে “তোমার পরিবার”। পোলা পরছে ফান্দে। শিখছে একটাই। এইটাতো লিখতে হইব মাস্ট। তো পোলা লেখা শুরু করছে। আমার নাম অমক। আমার আব্বা আছে ,মা আছে। আমাদের পরিবার একান্নবর্তী পরিবার। আমরা সবাই একসাথে থাকি। কিছুদিন আগে আমার বাবা তার শ্যলককে আমাদের বাসায় এনেছে থাকার জন্য। একালার লোকজন বল “লোকটা খাল কেটে কুমির এনেছ”। আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন “কুমির” কী জিনিস। কুমির একটি সরিসৃপ প্রানি, এর দুইটা চক্কু, একটা ল্যাজ…………বইলা পুরা কুমিরের রচনায় ঝাপাইয়া পরল।
কোন কোন বলদ ইসলাম ছাড়া আর কিছু দেহে না জগতে। এই কাঠবলদ্গুলারে দেখলেই হরমোন চঞ্চল অইয়া ওঠে। পাগল পানিতে চুবাইলে হুনছি মানুষ হইয়া যায়।
@সাইফুল ইসলাম,
কুমির যেই খালে থাকতো তার পাশে ছিলো একটা জঙ্গল,সেইখানে জঙ্গীদের ট্রেনিং হতো,জঙ্গীগুলা ছিলো মুসলমান,ইসলাম একটি জঙ্গীবাদী ধর্ম,তারা বোমা ফুটানো আবিষ্কার করসে 😛 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
রচনার নাম “শবে বরাত”। :hahahee: :hahahee:
@সাইফুল ইসলাম,
আপনার সমালোচনা অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল, গল্পের আদলে তা আকর্ষণীয়ও হয়ে উঠেছিল, হৃদয়াকাশের ভুল-বার্তাও স্পষ্ট পড়া যাচ্ছিল। কিন্তু আপনার মন্তব্যের শেষ প্যারটিতে এসে ধাক্কা খেয়েছি।
একান্তই অনাবশ্যক। মুক্তমনা সুস্থ বিতর্কের যে সংস্কৃতি তৈরি করেছে, আপনার এই কথাগুলি তার সাথে একেবারেই যায় না। মুক্তমনার একজন সিনিয়র ব্লগার হিসেবে আপনি মুক্তমনার ঐতিহ্য ধরে রাখবেন, এটাই প্রত্যাশিত। ভাল থাকবেন।
@কাজি মামুন,
আফনের আল্লা রাসূলের দোহাই আমারে পুতুপুতু কতা হুনাইবেন না।
যারা খালি খালি একটা পুরা জাতিরে দুই অক্ষর নেট ঘাইট্যা যা ইচ্ছা তাই কয় হেই সমস্য হৃদয়াকাশ নামের আকাশ গুলারে বাঁশ না দেওয়ার কোন যৌক্তিক কারন নাই। কিছু শিখাইলে টাশ টাশ কতা কইতে থাকা আকাশগুলারে শিখান। আমারে ক্ষ্যামা দেন।
@সাইফুল ইসলাম,
কোন প্রতিক্রিয়াশীতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজে প্রতিক্রিয়াশীল হওয়া কোন কাজের কথা নয়। কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে গেলে তা ভদ্রভাবে এবং ভদ্র ভাষাতেই করা উচিত, না হলে কেবল ভাষার কারণে অন্যান্য মানুষের কাছে তা ভুল বার্তা পৌঁছায়। কিছু মনে করবেন না, আপনার অনেক মন্তব্যই যুক্তিসংগত এবং একইসাথে গালাগালিতে ঠাসা। কেবল গালাগালির কারণে আপনার যুক্তিসংগত কথাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কুৎসিত লাগে। কাজি মামুন বোধ করি সে ব্যাপারেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই দৃষ্টি আকর্ষণকে “পুতুপুতু কতা” আখ্যা না দিয়ে, তার মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারলে বোধ করি সকলেরই ভাল হতো। ভাল থাকবেন।
@প্রতিফলন, অপরাধের দন্ড দেওয়া প্রতিক্রিয়াশীলতা আর সুশীল সমাজের প্রতিনিধির মতো তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে চুপ থাকা প্রগতিশীলতা?বাহ!
@হৃদয়াকাশ,
আপনার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে ইসলামই রক্ষিতা রাখার প্রচলন করেছে, এই প্রথার লালন করছে এবং এই প্রথা ইসলামের একটি অন্ধকার দিক !?
চমত্কার লাগল বিষয়টা।আর আপনার উপস্থাপন করার ক্ষমতাও এক কথায় অসাধারন।ভাল থাকবেন।
পতিতাবৃত্তি না থাকলে “উনাদের” মানসিক তৃপ্তি আসে না। পতিতাবৃত্তি পুরুষশাষিত সমাজের গর্বের অন্ধকার উপস্থাপন। একসময়ে ভারতে রক্ষিতা রাখা সামাজিক স্ট্যাটাসের চিহ্ন ছিল। ঠিক কী কারনে এখন আমাদের উপমহাদেশে এই প্রথাটা ঘৃণ্য হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
চমৎকার একটা টপিক নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ জানবেন। আরো লিখুন।