অনেকদিন ধরেই আবার লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছিতো যাচ্ছিইই… কিছু বেরোচ্ছে না। খালি বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা। কিছুই সাজাতে পারি না। সব ঘোলা করে ফেলি… তার কিছু নিদর্শন আসলে এই লেখাটা! 🙁

১- একজন মানুষের জীবনে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ন? দায়িত্ববোধ?

(“জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয়। এই জীবন সে পায় মাত্র একবার বাঁচবার জন্য। এমন ভাবে বাঁচতে হবে তাকে যাতে বছরের পর বছর লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করার জন্য পরে যন্ত্রণাভরা অনুশোচনায় ভুগতে না হয়, যাতে বিগত জীবনের গ্লানিভরা হীনতার জন্য লজ্জার দগ্ধানি তাকে সইতে না হয়। এমন ভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে সে যেন বলতে পারে : আমার সমস্ত জীবন, সমস্ত শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো আদর্শের জন্য- মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামের আদর্শ। এবং তার জন্য জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে পাছে হঠাৎ কোন ব্যাধি বা কোন মর্মান্তিক দূর্ঘটনা জীবনে আকস্মিক ছেদ টেনে দেয়।”- ‘ইস্পাত’ উপন্যাসে নিকোলাই অস্ত্রোভস্কি)

নাকি যেমন ইচ্ছে বাঁচা?

(“এমন মানব জনম আর কি হবে?…মন যা করো ত্বরাই কর এই ভবে!!”- ফকির লালন সাঁই)

যা ইচ্ছে করলাম।

জীবন-যাপনের এই পন্থা কে বাতলে দেবে? নিজেই নিজেকে? নাকি পরিবার? নাকি সমাজ? নাকি পৃথিবী?!!! সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কোন মানুষের জীবন কিসে পূর্নতা পায়?

( “…এ কথাটাই মনের ভেতরে ভেতরে গুমরে গুমরে গুমরে মরে! হবে হবে বলেও হলো না কিছুই দাদা – এ পাড়া ও পাড়া সে পাড়া ঘুরে”- অঞ্জন দত্ত)

আদৌ কি মানুষের জীবন পূর্নতা পায়?(এটা অসম্ভব একটা ব্যপার) এটা থেকে আরেকটা প্রশ্ন আপনা আপনিই এসে যায়। তা হলো পূর্নতার সীমা নির্ধারিত হয় কিসে? এ প্রশ্ন আপাতত এখানেই মুলতুবি, নাইলে এটা নিয়েই মহাভারত লিখে ফেলা যাবে!! (হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর হঠাৎই এ প্রশ্নটা আমার মাথায় চেপে বসেছে। কেন সেটা পড়ে বলব)

২- মানুষের নিজ নিজ দ্বিচারিতা (দ্বিচারিতা না বলে দ্বৈতসত্তা বা একাধিক সত্তার উপস্থিতি বলা মনে হয় বেশি ভালো) থেকে কি মানুষের কোন মুক্তি আছে? সবাই কি আমরা কম বেশি অদ্ভুত সত্তাগুলো দ্বারা আক্রান্ত না? (প্রশ্নটা এর থেকে বেশি পরিস্কার আপাতত করতে পারছি না বলে দুঃখিত। পাল্টাপাল্টি কথাবার্তার মধ্যদিয়ে আশা করি আরো পরিস্কার হবে)

৩- সত্যের মাপকাঠি কি? পূর্ন সত্য কি আদৌ মানুষের সামনে আসে কখনো (বিজ্ঞানকে আমি এই প্রশ্নের বাইরে রাখতে চাচ্ছি। কিন্তু সেটা উচিত হবে কি? বিজ্ঞানও কি পূর্ণসত্যটা দিতে পারে সবসময়)? (এই প্রশ্নটা লিখতে গিয়ে ব্যটম্যান এর “দ্য ডার্ক নাইট” এর একদম শেষ মুহুর্তের একটা ডায়লগ মনে পড়ছে- “sometimes truth isn’t good enough. sometime people deserve more”। আমার কাছে মনে হয় যে কিছু কিছু সময়ের জন্য না, প্রায় সবসময়ই ‘সত্য’ মানুষের জন্য খুব বেশি ভালো না। প্রায় প্রতিটা সত্যই মানুষকে প্রচন্ড ধাক্কা দেয়! অসুস্থ করে দেয়! :/ )

৪- আগের প্রশ্নটা লেখার পর এই প্রশ্নটা খানিকটা অবান্তর লাগবে জানি! তবুও লিখি! ইতিহাস কি কখনোই পূর্ণ সত্য বলে? আরো অদ্ভুত ভাবে বললে বর্তমানের কাছ থেকেই যখন পূর্ণ সত্য আশা করতে পারছি না, সেখানে ইতিহাস আর রূপকথার মধ্যে কি খুব বেশি পার্থক্য আছে? (বেশি মাত্রায় অদ্ভুত শোনাচ্ছে কি?! এ প্রসঙ্গে ভলতেয়ারের একটা উক্তি না দিয়ে পারছি না,

“আসলে ইতিহাস মৃতদের নিয়ে এক গাদা ভেলকি দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। ভবিষ্যতের জন্য আমরা যা চাই তার সঙ্গে খাপ খাওয়াবার জন্যই আমরা অতীতকে করি আমাদের ইচ্ছা মতো রূপান্তরিত। পরিনামে ইতিহাসই প্রমাণ করে যে ইতিহাস দিয়ে প্রমাণ করা যায় সব কিছুই।”

এবং আরো একটা ভলতেয়ার,

“পুরোনো মিথ্যা যখন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় তখনই রাজনীতি তাকে ব্যবহার করে খাদ্য হিসাবে আর জনগণ তাই পুরে দেয় নিজেদের মুখে- এ চলতে থাকে ততদিন, যতদিন না আরেক কুসংস্কার এসে এটাকে না করে ধ্বংস এবং রাজনীতি প্রথম বারের মতো দ্বিতীয় ভুল থেকেও হয় উপকৃত।”)

৫- পাপ-পূন্য, ন্যায়-অন্যায়, অপরাধ এসব বিচারের মাপকাঠি কি আদৌ করা সম্ভব? প্রতিটা মানুষের জীবন কি স্বতন্ত্র না? একজন মানুষ কি সারা জীবনও আরেকজন মানুষের সাথে থেকেও তাকে পুরোপুরি বুঝতে পারে? তাহলে কিসের যোগ্যতায় একজন মানুষ আরেকজনের বিচার করতে যায়?( দুটা উক্তি মনে পড়ছে। উক্তি গুলো কাদের সেটা মনে নেই। # “আমার জীবনকে বিচার করতে হলে আগে আমার জুতো পায়ে দিয়ে আমার পোশাক পড়ে আমার রাস্তায় হেঁটে দেখ। তারপর কথা বলতে এস।” # “অন্যকে বিচার করার আগে আপন দর্পণে নিজেকে দেখে নাও।” বব মার্লের একটা আছে,

“who are you to judge the life i live? I’m not perfect and I don’t have to be! Before you start pointing fingers, make sure your hands are clean.”

)। বিচার বলতে যে শুধু ন্যায়-অন্যায়, অপরাধ এ ধরনের ব্যপারের বিচার বুঝাচ্ছি তা কিন্তু না। মানুষ হিসাবে অন্য মানুষের কাজের সমালোচনা বা আমার চিন্তা ভাবনার সাথে মিললনা বলে অন্যদের চিন্তা ভাবনাকে অগ্রাহ্য করা এসব কেও বুঝাচ্ছি। (সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার্থে হয়তো অপরাধীদের বিচার করতে হয়। কিন্তু গভীরে যেতে থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাবে যে এই সব বিচারও ঐ অপরাধী ব্যক্তির উপর অন্যায় করা ছাড়া কিছু নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো সোজাসুজিই অপরাধীর অপরাধ পাওয়া যায়।)

৬-

“কিছু মানুষকে সবসময় বোকা বানানো সম্ভব। সব মানুষকেও কিছু সময় বোকা বানানো সম্ভব। কিন্তু সব মানুষকে সব সময় বোকা বানানো সম্ভব না।”

– আব্রাহাম লিঙ্কন।
তাহলে কোন কিছুর ব্যপারে সত্য মিথ্যার সিদ্ধান্ত আমি কিসের ভিত্তিতে নিব? জ্ঞানী ব্যক্তিরা কি বলল তার ভিত্তিতে? কিন্তু জ্ঞানীরাওতো মিথ্যা বলে থাকে, ভূলও করে থাকে। অনেকে বলেন যে সমাজের আর দশজন যা বলেন তাই সঠিক। কিন্তু সমাজের আর দশজনও তো সবসময় সঠিক বলেন না। এমনকি অধিক সন্নাসীতে গাঁজন নষ্ট হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে, কারন একঝাঁক মানুষ যখন একত্রিত হয় তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হুজুগের উপরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে যায়! নিজের বিচার বুদ্ধির উপর ভরসা করব?!! সেটাওতো বেশ রিস্কি!! 😛

৭- মানুষ তার হাত আর পায়ের মধ্যে বিভেদ করে। হাত পায়ের থেকে উত্তম। মানুষের গায়ে পা লাগানো অসম্মানের। এমনকি মানুষ তার দুই হাতের মধ্যেও বিভেদ করে। বাম হাত দিয়ে খেতে চায় না, ঘূষ নেয়ার মত খারাপ কাজ কে বাম হাতের কাজ বলে। নিজ দেহের অপরিহার্য অঙ্গ গুলোতেই মানুষ এত এত বিভেদ করে রেখেছে যেখানে, সেখানে কি আমরা কোন ভাবেই মানুষের কাছ থেকে সাম্যবাদী সমাজের আশা করতে পারি?

৮- লেখক সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার এর “সমাত্মজীবনী” বইটা পড়তে গিয়ে একটা অংশে এই কথাটা পড়েছিলাম। এখন নিজের ভাষায় লিখছি। আমরা বোরকা পড়ার বিরোধিতা করি। বলি যে বোরকা দিয়ে মেয়েদের মানসিকতা সংকীর্ণ করে দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে আরো বেশি ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে, হাবি জাবি। তাইলে আমাদের পোশাক পড়াটাও কি একধরনের সংকীর্ণতার পরিচয় নয়? পরিবেশগত নিরাপত্তার খাতিরে পোশাক পড়াটা ঠিক আছে। কিন্তু যেখানে পরিবেশ গত নিরাপত্তার প্রশ্ন অর্থহীন (যেমন ঘরের ভেতর অথবা সব জায়গাতেই এমনকি চলাফেরার যানবাহনেও এখন পরিবেশ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা আছে) সেখানে পোশাক পরাটাও কি অর্থহীন নয়? সবাই হয়তো বলবেন নগ্নতা যৌন উত্তেজক… কিন্তু চিন্তা করে দেখুন যে কথাটা কতখানি সত্যি? প্রকৃতির অন্য প্রাণীরা কি পোশাক পরে? অথবা ন্যুডিস্ট কলোনী গুলোতে যেখানে মানুষরা সারাদিনই প্রায় নগ্ন থাকে সেখানে কি মানুষ নগ্নতা দেখে উত্তেজিত হয়? তাহলে সেক্ষেত্রে আমি যদি বলি পোশাকই আসলে যৌন উত্তেজক তাহলে কথাটা কি খুব বেশি ভূল হবে? কোন স্বাভাবিক বস্তুকে বা স্বতস্ফুর্ত ব্যপারকে যখন কিছু একটা আরোপ করে লুকায়ে রাখার চেষ্টা করা হয় তখনই কি সেটা আরো অস্বাভাবিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে না? যেমন নিষিদ্ধঘোষিত বই গুলো বেশি চলে!! (এখন হয়তো সবাই বলবে যে সাধারন পোশাকের সাথে বোরকার তুলনা চলে না। পোশাক পড়াটা আমাদের জন্য এখন সাধারন ব্যপার এবং সামাজিক রীতি হয়ে গেছে, বোরকা না। কিন্তু আমি আসলে এই সামাজিক রীতিটাকেই প্রশ্ন করছি।
অশ্লীলতা নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলির কোন একটা লেখায় কোন একটা গল্প ছিল। গল্পটা এমন যে, কোথাও এক শিল্পী কে নগ্ন নারী দেহ আঁকার অপরাধে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে আদালতে নেয়া হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত শিল্পী তখন ঐ ছবিটার নারী দেহটার পায়ে মুজো এঁকে দিয়ে বিচারক কে বলেন,”নগ্নতা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এর উপর যখন কিছু আরোপ করা হয় তখনই একে অশ্লীল করে তোলা হয়।” (উক্তিটা ঠিক এরকমই কিনা মনে নাই)

৯- মানুষ কোথায় আশ্রয় খোঁজে? নিজের তৈরি করা ঘরে? নাকি ঘরের ভেতরের মানুষের কাছে? শারীরিক আশ্রয় (যৌনতা বুঝাচ্ছিনা, প্রকৃতি থেকে আশ্রয় নেয়া অর্থে বললাম।) বেশি জরুরী? নাকি মানসিক?

(আসলে আমি নিজেই জানি যে এসব প্রশ্নের তেমন কোন অর্থ নাই। এগুলা অনর্থক অর্থহীন প্রশ্ন। যেগুলার উত্তরের কোন সীমা নাই। এগুলো নিয়ে তর্ক করতে গেলে সাত জনমেও তর্ক হয়তো শেষ হবে না!! কিন্তু আমার মাথায় যে জট লেগে আছে সেটাতো কিছুটা ভাগাভাগি করা হবে!!)

এটা পোস্ট করতে ইচ্ছা করতেসে না!! 🙁