কেউ আমাকে একটু কষ্ট করে বোঝাবেন, জীবনের উদ্দেশ্য কি? সত্যি বলছি, এই ব্যাপারে বিশেষ অজ্ঞ আমি। বিশেষ সন্দিহান। ছোটবেলায় না হয় শুনেছিলাম – স্বর্গ-নরক আছে, স্বর্গে যেতে হলে তাই ভাল কাজ করতে হবে। ধর্মের কথা থাক। ধর্ম যখন ছেড়েছি, তখন না হয় স্বর্গ-নরকের কথাও বাদ দিলাম। কিন্তু ছোটবেলার আরেকটা শিক্ষার কথা এখনো ছাড়তে পারিনি। কেন পারিনি তাও জানিনা। কিছু জিনিসকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেতে কি? জানি না। তবে কথাটা মনে মনে মানি – “মানুষ বাঁচে কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়”। কিন্তু যখনই এ কথার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে যাই, বেয়াড়া মন তখন বলে, জীবনেরইতো কোন অর্থ নেই, আর দশটা প্রাণীর মতো আমিও একদিন মরে যাবো। বিজ্ঞান বলে, আমারতো নয়ই, বিশেষত্ব নেই কারো মাঝেই। এ অবস্থায় “কর্মের মধ্যে বাঁচা”-র মতো দার্শনিক অবস্থানের গুরুত্ব কোথায়? আমরা কি নিজেরা বেঁচে থাকার অর্থ বের করার জন্য শুধু-শুধুই কিছু অর্থহীন অর্থ দাঁড় করাচ্ছি না?

তবে একটা সত্য ক্ষণে-ক্ষণে উপলব্ধি করি, মহৎ কাজ করলে অন্যের সম্মান পাওয়া যায়, সম্মান পেতে ভাল লাগে। ভাল কাজ করলে অন্যের বাহবা পাওয়া যায়, বাহবা পেতে ভাল লাগে। আমি চাই অন্য কেউ আমার কাজের প্রশংসা করুক, প্রশংসা পেতে ভাল লাগে। ভাল লাগে অন্যরা আমার কাজের প্রতি সমর্থন জানালে; ভাল লাগে আমার প্রতি, আমার কাজের প্রতি অন্যদের আকর্ষণ দেখলে।

এই ভাল-লাগা-গুলোর মাঝে কেমন যেন একটা শো-অফ টেন্ডেন্সি আছে, তাই না? নিজে যা করি, তা অন্যদের দেখানোর ব্যাপার আছে, তাই না? এই “শো-অফ” জিনিসটাকে আবার বিশেষ অপছন্দ। তাই নিজেকে সেই শো-অফের তালিকায় দেখলে খারাপ লাগে। চোখের সামনে দেখতে পাই – প্রায় প্রতিটা মানুষ নিজেকে বিজ্ঞাপন বানিয়ে প্রচার করছে। এক শিক্ষককে যেকোন কথার শুরুতেই তাই বলতে শুনি – “When I was in Japan, …”। মেইলের শেষে তাই দেখতে পাই – “Sent from my iPhone”। কিংবা কারো সাথে গল্প করতে গেলেই শুনতে পাই – “আমার বেলায় কি হয়েছে জানো …”। মুক্তমনাতেও দেখতে পাই – “এ নিয়ে আমিও একটা লেখা লিখেছিলাম, এই যে লিংক …”। আমি নিশ্চিত এ ধরনের শো-অফকে অপছন্দ করেন সবাই, বিশেষ করে অন্যের বেলায় হলেতো অবশ্যই। সমস্যা কেবল নিজের বেলায় এ তত্ত্ব প্রয়োগের ব্যাপারে। সকলেই বলবেন, “আমিতো করিনা।” নিজেকে এ সমস্যার বাইরের কেউ বলে দাবি করছি না, তবে অন্যদের এ ধরনের আচরণ দেখে মনে মনে ঠিকই হাসি। 🙂 আর নিজের জন্য মনে মনে একটা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করি – “আমি আমার কাজ করে যাই, এতে যদি কেউ ভাল বলে তো বলুক, প্রশংসা করে তো করুক, সেদিকে মাথা না ঘামাই।”

কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে কী হয়, বলুন। না হয় নিজের কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করলাম না, কিন্তু আমিতো ঠিকই জানি, একটুখানি সম্মানের জন্য কীরকম মুখিয়ে থাকে মন! একটুখানি প্রশংসা কীরকম উৎসাহিত করতে পারে আমায়! আচ্ছা, এই কারণে কি আমাকে ভন্ড বলা যেতে পারে? সততার সাথে বলি – আমার মনে হয় আমাকে ভন্ড বলা যেতেই পারে। এরপর মন ফিরে যায় আগের জায়গায়, এবার দেয় ভিন্ন যুক্তি – কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকার মানে কি? পরবর্তীতে কেউ সম্মানের সাথে বলবে, ‘অমুকে’ তমুক কাজ করছিলো – এইতো? তাহলে আমি যদি সেইভাবে বাঁচতে চাই, আমি যদি আমার কাজের জন্য অন্যের কাছ থেকে প্রশংসা প্রত্যাশা করি, তাহলে আমাকে ভন্ড বলা হবে কেন? একটু পরেই যুক্তি-তর্ককে বিদায় করে দেয় মন। তার কাছে একটা প্রবোধ তৈরিই থাকে – “হলাম না হয় ভন্ড, এরকম ভন্ড সবাই, কেউ স্বীকার করে, কেউ করে না।”

আচ্ছা, ভন্ড হলেই বা ক্ষতি কি? জীবনের কি কোন অর্থ আছে? কোন উদ্দেশ্য আছে? মনের মধ্যে বাজতে থাকে “Shall We Dance?” সিনেমার “মানুষ কেন বিয়ে করে?” প্রশ্নটার উত্তর, যার মধ্যে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সত্য আছে কিনা তাই ভাবি –

Because we need a witness to our lives. There’s a billion of people on the planet. What does any one life really mean? But in a marriage, you are promising to care about everything – the good things, the bad things, the terrible things, the mundane things… all of it, all the time, every day. You’re saying “Your life will not go unnoticed, because I’ll notice it. Your life will not go unwitnessed, because I’ll be your witness.”