এ রাজ্যের মসজিদের ইমামদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলগুলির মৌনতা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ইমামদের মাসিক ভাতা, বাসস্থান নির্মানে অর্থসাহায্য, সন্তান পালনে অর্থসাহায্য – সবে মিলে যে বিশাল প্যাকেজের সগর্ব ঘোষণা হল তারপর কেবলমাত্র বিজেপির রাহুল সিনহা ছাড়া কারোর কোনো ফোঁসফাঁস দেখা গেল না। সবাই যেন কোনো এক কারনে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। ‘সেকুলার’ বামফ্রন্টের শাসনকালে আমরা দেখেছি দুর্গাপুজো-কালিপুজো-ইদ-ইফতার পার্টিতে ‘কমরেড’দের সক্রিয় অংশগ্রহন। তাদের আঙুলের ইশারায় সুদুর মুম্বই থেকে লাস্যময়ী তারকারা পুজো উদ্বোধন করতে এবঙ্গে ছুটে আসতেন। ‘সেকুলার’ দেশের নাস্তিক ‘কমরেড’ তাদের পুরোনো দিনগুলো ভুলতে পারছেন না বলেই কি নতুন সরকারের এরকম নির্লজ্জ মুসলিম তোষনের বিরুদ্ধে ট্যাঁ ফোঁ করছেন না।
সংবিধান অনুযায়ী ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু রাষ্ট্রনেতারা বরাবরই তার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ। এদেশে হিন্দু ছাড়া অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সবাই ছাগলের তৃ্তীয় ছানার মত। আমরা বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, শিখ প্রভৃতি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যেকার নিরন্তর টেনশন, তা থেকে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। আর এসবের মধ্যে রাষ্ট্রনীতিকার এবং রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত থাকে এও আমরা দেখেছি। আবার প্রচুর নেতাকে দেখেছি প্রগতিশীলতার মুখোশ পরে থাকতে। দীপা মেহতার ‘ওয়াটার’ সিনেমার শুটিং সেটে হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালিয়েছিল। সেই ঘটনার প্রতিবাদে এবঙ্গের বুদ্ধিজীবিরা তাদের নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে সরব হয়েছিল। অথচ ‘গদর’ সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের ক্ষোভ সিনেমা হলে আগুন পর্যন্ত লাগিয়েছিল। অথচ এই সংঘবদ্ধ গুন্ডাগিরির বিরুদ্ধে এবাংলার তৎকালীন বুদ্ধিজীবি মহল ছিল আশ্চর্য রকমের নীরব। এখন পরিবর্তনের যুগেও দেখছি সরকারি বা বেসরকারি বুদ্ধিজীবিদের অবস্থান বদল হয়নি।
আসলে, কথায় ও কাজে এক হওয়াটা একটা অভ্যেসের ব্যাপার। সেটা সততার অভ্যেস। ভন্ডামিটাও একটা অভ্যেস। নিজেদের স্বার্থের জন্য জনগনকে ঠকানোর অভ্যেস। ইমাম ইস্যুতে সেটিই বিরোধী দলগুলিকে পেয়ে বসেছে। ভারতকে খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষ করার প্রতিজ্ঞা না করে কোনো রাজনীতিক সকালে ব্রেকফাস্ট করেননা। সমস্ত অ-বিজেপি দল বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক বলে গাল পাড়ে। অথচ দেখুন এই অ-বিজেপি দলগুলির নেতা মন্ত্রীরা প্রকল্পের শিলান্যাস, উদ্ধোধন সহ সমস্ত রকমের রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপে ধর্মীয় আচার পালন করেন, শিক্ষায়তনে ধর্মীয় প্রার্থনা ও পুজো বজায় রাখেন, ভোটব্যাঙ্ক অক্ষূণ্ণ রাখতে ধর্মীয় উৎসবে হুল্লোড় করেন, ধর্মগুরুদের পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ ভিক্ষা করেন, অমরনাথ-হজের মত ধর্মীয় যাত্রাতে সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। এগুলো সবই কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। সোজা বাংলায় বললে সংবিধান বিরোধী কাজ। ১৯৮৯ সালের ‘রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল(অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্টের’ ২৯ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল অধর্মনিরপেক্ষ কাজকর্মের সাথে যুক্ত হলে সেই দলের রেজিষ্ট্রেশন খারিজ করা হতে পারে। কিন্তু এই অভিযোগে এখনও কোনও দলের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল হয়নি। একবার যদিও শিবসেনার বিরুদ্ধে উগ্রধর্মবাদী প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল এবং সেই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন শিবসেনার রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের হুমকি দিয়েছিল, কিন্তু শিবসেনার পালটা হুমকিতে সব ঠান্ডা মেরে যায়। শিবসেনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল তাদের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করতে হলে ভারতের বড় মাপের সমস্ত দলের রেজিষ্ট্রেশন একই অভিযোগে বাতিল করতে হবে।
দিল্লি, পঞ্জাব, কর্নাটক, হরিয়ানাতে বহু বছর ধরেই ইমামদের ভাতা দানের সরকারি রেওয়াজ রয়েছে। মমতা বন্দোপাধ্যায় এখন এরাজ্যেও ধর্মীয় সুড়সুড়ির এই গুরুত্বপূর্ণ তাসটি খেললেন মাত্র। লক্ষ্যণীয় যে, এ রাজ্যের মসজিদে মসজিদে থাকা ইমামদের বেশিরভাগেরই বেশভূষো, খাদ্যাভাস, জীবনধারণের মান বেশ ভালো, স্বচ্ছল। সোজাকথায় বললে মাসের আড়াই হাজার টাকার ভাতা তাদের জীবনে নতুন করে কোনো পরিবর্তন আনবেনা। তাদের এই স্বচ্ছলতার পেছনের কারণটি নিয়ে আর বিশদে যাচ্ছিনা। তাছাড়া তাদের অনেকেই ভাতা চাইছেন না। কারন ইমামদের অনেকেই মনে করেন, তারা যে কাজ কাজ করেন অর্থাৎ, নমাজ পড়তে সাহায্য করা বা ধর্মীয় কাজকর্মের পরিচালনা করা এসবের জন্য কোনোও ব্যক্তি বা সরকারি অর্থ নেওয়ার বাধা রয়েছে খোদ কোরানেই। কোরানে (১২/১০৪) আল্লা বলছেন, “তুমি তোমার কাজের জন্য তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি করিও না। ইহাতো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র”। কোরানের ২/৪১ তে আছে, “ আমার আয়াতের বিনিময়ে সামান্য মূল্যও তোমরা গ্রহণ করিও না”।
তবুও ইমামদের সরকারি সাহায্য দেওয়ার অর্থহীন প্রচেষ্টার একমাত্র উদ্দেশ্য আগামী নির্বাচনগুলিতে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক আরও নিশ্চিত করা। আমরা সবাই জানি মুসলিম ভোট ধর্মীয় ভাবাবেগে কী পরিমান পরিচালিত হয়। সেজন্য মুসলিম প্রধান অঞ্চলের কোনও নির্বাচনে কোনও অমুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনা কোনো দলই। তাই আড়াই হাজার নয়, ষোল-আনা দেওয়ার মত কোনো ‘সিম্বলিক’ ভাতা দিলেও সাধারণ মুসলমান ভোটদাতাদের কাছে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ মেসেজটিতে খুব একটা ঘাটতি পড়ত না।
পরিশেষে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তিনটি নোট রইলো। প্রথমতঃ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ইমামদের ভাতা দিয়ে, হাজার হাজার মাদ্রাসা তৈরি করে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মুসলিম জনসাধারণকে গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবেননা, বরং তাদেরকে আধুনিক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার আওতায় আনতে ওই টাকা ব্যয় করুন। ইমামরা যে ধর্মের মনিটর সেই ধর্মে আছে, “ এবং তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাক, যাবত অশান্তি দূরীভূত না হয়, এবং আল্লাহর জন্য (অর্থাৎ আল্লাহর পথে চলার জন্য) আদদ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হয়। তারপর যদি তাহারা বিরত হয় তবে অত্যাচারীদের উপর ব্যতীত শত্রুতা নাই”। “অতএব যখন নিষিদ্ধ মাসগুলি অতীত হইয়া যায় তখন সেই মোশরেকদিগকে কতল কর, যেখানে তাহাদিগকে ধৃত কর এবং অবরোধ করিয়া রাখ এবং প্রত্যেক ঘাঁটি-স্থলে তাহাদের জন্য ওঁত পাতিয়া বস; কিন্তু যদি তৌবা করে এবং সালাত দাড় করে এবং জাকাত দেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল রহিম”( কোরান ২/১৯৩, ৯/৫)। ইসলাম ধর্মের পুরোহিত ইমামদের বিশ্বাস করতেই হবে যে, “অবাধ্য স্ত্রীদের প্রহার করা উচিৎ,”(সুরা নিসা ৩৪)। “চারটি পর্যন্ত বিবাহ করা পূণ্যকর্ম”(সুরা নিসা ৩)।“ স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র, তাই তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে খুশি প্রবেশ করতে পারো”(সুরা বাকারা ২২৩)। এরকম বিশ্বাসের সাথে সরাসরি জড়িত থাকা লোকেদের হাতে সরকারি কোষাগার শূণ্য করা হচ্ছে কেন জনগণ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হল, ইমামদের দিয়ে নানা ধরনের জনকল্যান মুলক সরকারি মেসেজ যেমন, পালস পোলিও, জণ্ডিস টীকাকরণ, এইডস সচেতনতা, বিবাহ নিবদ্ধীকরণ ইত্যাদির প্রচার করানো হবে সেজন্যই নাকি এই ভাতা। অবিজ্ঞানসম্মত এবং মৌলবাদী ধারণায় বিশ্বাসী ইমামদের নিয়ে এরকম জনকল্যানমূলক প্রচার কতটা যুক্তিযুক্ত তা একবারও ভেবে দেখা হল না? আমাদের রাজ্যের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে বা তাদের ভাতা বাড়িয়ে কি এই কাজ করা যেত না? যেসব জনস্বার্থ মামলা হচ্ছে সেখানে এরকম প্রশ্ন উঠতেই পারে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যদি পশ্চিমবংগকে হরিয়ানা বা কর্ণাটক ভাবেন তাহলে ভুল করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ উত্তরপ্রদেশের গত বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চোখ রাখুন। নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নির্লজ্জ ভাবে মুসলিম তোষনে নেমেছিল। নির্বাচনে তাদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। তাই ম্যরাল অফ দ্য স্টোরি- সাধু সাবধান।
তৃ্তীয়তঃ ইমামভাতা ঘোষনার পরে পরেই পূরোহিত সম্প্রদায় তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। এবার সম্ভবত পাদ্রীরা নামবে। এভাবে ধর্মগুরুদের আস্কারা দিয়ে ভবিষ্যতে নতুন করে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে বা অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হলে তার দায় কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
পূরোহিত সম্প্রদায় তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে।
যারা কোরান থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিতে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
তবে কেউ কেউ এমন ভাবছেন যে লেখাটি একটু বেশি একপেশে হয়ে গেছে, তাদের জন্য বলি, যেহেতু এই লেখাটি একটি সরকারি পদক্ষেপের সমালোচনা করে লেখা, তাই কেবলমাত্র ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছি। প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন এর বাইরে বেরিয়ে অন্যান্য ধর্মের রেফারেন্স টানতে গেলে হয়ত লেখাটি আরও বেশি নিরপেক্ষতার পোশাক পরানো যেত, কিন্তু সেই অনর্থক পোশাকে চেহারাটি লাগত অতিরিক্ত মেদবহুল। আর কেউ আমার মানসিকতার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে এই ব্লগে আমার অন্যান্য লেখা গুলি একটু দেখে নিতে অনুরোধ করছি। আমাদের এখানে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ম্যাগাজিনে লক্ষ লক্ষ প্রবন্ধ বেরোয়। আমি নিজেই কয়েকশো লিখেছি। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে লিখছেন এমন লেখক খুবই কম। সরকারি বিজ্ঞপ্তির পরদিনই খুবই তাড়াহুড়ো করে আমার এই লেখাটি একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে পাঠিয়েছিলাম। গত দু সপ্তাহে তাদের তরফে কোনো উচ্চবাচ্য না দেখে মুক্তমনায় দিলাম।
বিঃদ্রঃ আমার কিছু ফেসবুক ফ্রেণ্ড এই লেখাটিতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়ে আমাকে গালমন্দ করা শুরু করেছেন।
@বিপ্লব দাস, সমালচনার জন্য তৈরি হন আপনি কুরআনের ব্যাপারে যে ভুল তথ্য সমূহ দিয়েছেন সেটা ঠিক করে আমি একটা পোস্ট লিখতেছি আপনাকেও লিংক পাঠাবো। আশা করি আলোচনার জন্য আসবেন (N) (N)
@বিপ্লব দাস,
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ। (F) আসলে ভারতীয় উপমহাদেশের সব জায়গাই একই অবস্থা। তাই আমার কেন জানি মনে হয়, ধর্মীয় লোকদের চেয়ে রাজনীতিবিদরা বেশি ভয়ঙ্কর। লেখার এক পর্যায়ে আপনার পক্ষপাতিত্ব কিছুটা চোখে পড়ার মত। যেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভোট ব্যাংক একটা ফ্যাক্টর, সেহেতু এর বিরুদ্ধে কোন বাস্তব প্রতিবাদ দেখা যাবে না মেজর কোন পলিটিকাল পার্টি থেকে।
ইমাম, সাধু,পাদ্রী সবার ভাতা বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। এম্নিতেই ধর্মের কারনে কত সমস্যা, আর আস্কারা দিলে এর মাত্রাটা ভীষণভাবে বেড়ে যাবে যা মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক হবে সন্দেহ নাই।
@আমি আমার,
না। যদিও মেজর পলিটিক্যাল পার্টিরা নীরব। তবুও জনগণ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে সরকারি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনটে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। মামলার প্রথম দিনেই বিচারক সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, যদি সরকার এর মধ্যে ভাতা দেওয়া শুরু করে আর মামলা হেরে যায়, তাহলে ঐ দেওয়া টাকা ইমামদের কাছে থেকে ফেরত নেবে কি ভাবে?
এরকম বলার কারন হল- কিছুদিন আগে বেআইনি চোলাই মদ খেয়ে শ দুয়েক মানুষ মারা যান। ঘটনা ঘটার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবগারি দপ্তরের গাফিলতি ঢাকতে সরকার প্রত্যেক মৃতের পরিবার পিছু দু লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষনা করে। এই শস্তা রাজনীতি শেষ পর্যন্ত সরকারের বাঁশ হয়ে যায়। কারন, এভাবে জনগনের করের টাকা নয়ছয় করা যায় কিনা সে নিয়ে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থের মামলা হয়েছে, এবং প্রায় প্রতিটি মামলায় সরকার বেশ বিপাকে পড়ে টাকা বিলোনো বন্ধ রেখেছে।
‘কত ধানে কত চাল
খিচুরিতে কত ডাল’
এর মতই সব কিছু চলছে আপনার ভারতের মত বাংলাদেশেও।
এখনও টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার চলছে ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রবীন্দ্র সার্ধবর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠান। যেখানে ভারতের অর্থ মন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও উপস্থিত। উদ্ধোধনী বক্তৃতায় শেখ হাসিনা আগে রবি ঠাকুরের কবিতার দুই লাইন আবৃত্তি করে পরে বললেন বিসমিল্লাহ রাহেমানুর রহিম।
বিসমিল্লাহ রাহেমানুর রহিম দিয়ে শুরু করেননি দেখে খুশির রেশ না কাটতেই বিসমিল্লাহ রাহেমানুর রহিম বললেন। তবে তা বললেও এর তাৎপর্য নিঃসন্দেহে বিঘ্নিত হয়েছে। হা! হা!হা!।
এ নিয়ে তাকে ঝামেলায় পরতে না হলেই ভাল। তবে এ হাসিনাই রাজনৈতিক কারনে সংবিধানের শুরুর লাইনটি কাটতে পারেনি।
@গীতা দাস,
দিদি, বাংলাদেশ এর অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে এখানে এখন আর ইসলাম বিরোধিতা চলে না।
হাসিনা সরকার চলে গেলেই আবার শুরু হবে ২০০১ এর সেই সংখালঘু নির্যাতন।
বছর দশেক আগেও অনেক ধর্ম নিরপেক্ষ নাম মুস্লিম সমাজে দেখেছি, কিন্তু এখন আর সেভাবে দেখা যায়না। হেজাব বোরখা এর প্রতাপ যেভাবে বারছে, তা দেখে খুব ভীত হইয়ে যাই।
আমাদের সময়ের যে মেয়েরা ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্ন্য লড়াই করেছিলো তারাই আজ হেজাব পরে ঘুরে বেরায়। ৯৬ এর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েরা কোন মেয়ে বোরখা পড়লে তার বোরখা ছিড়ে ফেলতেও শুনেছিলাম। আজ তারা কোথায়? আর এখন মেয়েরা টিপ পরলেও ধর্ম বিরোধী বলে আখ্যা দেয় এসব ইমাম রা।
মুস্লিমরা আগে মুসলিম তারপর মানুষ।
আর বাংলাদেশ এর সংবিধান সংশোধন করে কি যে বানালো তা আর কি বলব।
শিবসেনা কিন্তু সত্য বলেছে। একই কথা বাংলাদেশের মৌলবাদী দলগুলোও দাবী করতে পারে!
ইমাম/আচার্যদের বেশ-ভুষো, খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারণ সর্বদাই সচ্ছল থাকে। নজরুলের ভাষায়:
মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত-রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি।…
আর সাধারণ মুসলিম/হিন্দুদের অবস্থা? সেও নজরুল লিখে গেছেন অনেক আগেইঃ
এই সাধারন মানুষের জন্য ভাতার ব্যবস্থা তাই আমারও দাবী।
কথাটা মনে হয় এমন ছিল না; বাংলাদেশের অন্যতম মুক্তচিন্তা মুহম্মদ হাবিবর রহমান এর ‘কোরান শরিফ, সরল বঙ্গানুবাদ’-এ পাচ্ছি,
তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিৎনা দূর হয় ও আল্লাহর ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু যদি তারা বিরত হয়, তবে জুলুমকারীদের ছাড়া (কারও ওপর) হস্তক্ষেপ করা চলবে না। (২/১৯৩)
তবে কোরানের অর্থের প্রাসঙ্গিকতা আছে, নইলে আপনার কাছে বিপরীতধর্মী মনে হবে, যেমন নীচের আয়াতটি দেখুন:
একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার সমান অপরাধ। (মায়েদা, ৩২)
অথবা,
অন্যের দেবতাকে গালি দিও না। (আনআম, ১০৮)
আমার কথা হচ্ছে, ভুরি ভুরি ভাল কথা- নিষ্ঠুরত্ব সব ধর্মেই আছে।
অবিজ্ঞানসম্মত এবং মৌলবাদী ধারণায় বিশ্বাসী ইমামদের নিয়ে এরকম জনকল্যাণমূলক প্রচার কতটা যুক্তিযুক্ত তা একবারও ভেবে দেখা হল না?
আমাদের দেশেও এ কাজটি করা হচ্ছে। তবে যেহেতু আমাদের সমাজের বেশীরভাগ মানুষই এখনো ধর্মাশ্রয়ী, যাদের কাছে ইমাম/পুরুতের স্থান আল্লাহ/ভগবানের পরেই, তাই এইসব ধর্মগুরুকে দিয়ে যদি কিছু আধুনিক ধ্যানধারণা ঐ সকল ধর্মাশ্রয়ী মানুষদের মাঝে ঢোকান যায়, তবে ক্ষতি কি? কেউ কেউ বলতে পারেন, কাটা দিয়ে কাটা তোলা।
‘ইমামত’ দ্বীনে মোহাম্মদীর ছ’টি মূলনীতির মধ্যে অন্যতম। ইমাম মানে নেতা, যাকে সামনে রেখে আমাদের কর্ম ও চিন্তা বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু বাস্তবে সে-ই নেতা কৈ? বিশ্বে আজ দক্ষ সুযোগ্য সৎ শান্তিকামী নেতার বড়ই অভাব! যিনি বৈজ্ঞানিক/দার্শনিক জ্ঞান সম্পন্ন সম্যক জ্ঞানী, যিনি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং বিভিন্ন নানা রকম সমস্যা সমাধান করবে!
আমাদের সমাজে পরিবারের দুষ্ট-প্রকৃতি, অবাধ্য বকাটে ছেলেকে সাধারনতঃ পিতা-মাতারা মাদ্রাসায় পাঠায় তাকে ভালো হওয়ার জন্যে আর তারাই পরবর্তীতে হয় আমাদের ইমাম বা নেতা! সত্যি এ বড়ই হাস্যকর বিষয় এখনও সমাজে চলিতেছে!!!!
আপনার প্রদত্ত কোরানের রেফারেন্স গুলি বোধ হয় সংশোধন করা প্রয়োজন, কারনঃ-
২ঃ১৯৩। এবং তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাক, যাবত অশান্তি দূরীভূত না হয়, এবং আল্লাহর জন্য (অর্থাৎ আল্লাহর পথে চলার জন্য) আদদ্বীন প্রতিষ্ঠিত না হয়। তারপর যদি তাহারা বিরত হয় তবে অত্যাচারীদের উপর ব্যতীত শত্রুতা নাই।
৯/৫ঃ- অতএব যখন নিষিদ্ধ মাসগুলি অতীত হইয়া যায় তখন সেই মোশরেকদিগকে কতল কর, যেখানে তাহাদিগকে ধৃত কর এবং অবরোধ করিয়া রাখ এবং প্রত্যেক ঘাঁটি-স্থলে তাহাদের জন্য ওঁত পাতিয়া বস; কিন্তু যদি তৌবা করে এবং সালাত দাড় করে এবং জাকাত দেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল রহিম।
২৯/৭৩ঃ- নং কোন বাক্য নাই তাই খুঁজে পেলাম না? আপনার লেখাটি অনেক চিন্তা ও ভাবনার বিষয় আছে, আপনাকে ধন্যবাদ (Y)
@শামিম মিঠু,
ভুলগুলি শুধরে দিয়েছি, একটু দেখে নেবেন।
@কাজি মামুন,
আমি আপনার সাথে সহমত যে আমার কোটেশনগুলোর ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়া উচিৎ ছিল। আমিও বিস্মিত যে এই প্রথম আমি একসাথে এতগুলো কোটেশন ভুলভাল লিখলাম। মুল বই থেকে না তুলে অযথা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রেফারেন্স বই থেকে তোলায় এমনটা হয়েছে।
কোরান ও নবীর বিধান মতে মুসলিমরা জীবিকা নির্বাহ করবে কাফেরদেরকে চুষে, হোক সেটা লুট-পাট করে, কিংবা জিজিয়া, খারাজ ইত্যাদি উচ্চ হারের বৈষম্যমূলক কর আদায়ের মাধ্যমে। ইংরেজরা সে রেওয়াজের সমাপ্তি ঘটালেও স্বাধীন ভারতে তা তিলে তিলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
‘ধর্মগুরুদের আস্কারা ক্ষতিকর’ লেখাটাতে এই ব্যাপারটার প্রভাব যথেষ্ট দেখিনি।
ঈমামদের ধর্মের চামড়া ছিলেছেন বটে তবে পূরোহিত পাদ্রীদের বেশ করে ছাড় দেওয়ায় লেখাটা কারো কারো কাছে বেশ একপেশে লাগতে পারে।
রণদীপম বসু ‘র এই লেখাটা একটু না’হয় হাইলাইট করিঃ
|মনু’র বৈদিক চোখ: নারীরা মানুষ নয় আদৌ|পর্ব-০৪/..|
ধর্মগুলো সব একই ব্যাপার। আপনার কথা ধরেই বলি
ক্ষমতাবানদের ক্ষমতায় টিকে থাকার ব্রহ্মাস্ত্র বহুকাল ধরেই তো ধর্ম। ওরা ওটা কোন না কোন লেবাস পরে ব্যাবহার করবেই। এ আর নতুন কি?
পশ্চিম বঙ্গের অবস্থা জানাবার জন্য ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিপ্লব। আপনাদের এই লেখা থেকে পশ্চিমবঙ্গে কী হচ্ছে তার একটা ধারনা পাই। সাবাই দেখছি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক হাতে রাখতে চায়, নির্লজ্জ তোষণেও তাদের আপত্তি নেই। কবে যে এই শিকল ছিঁড়বে!
মুক্তমনায় আরো নিয়মিত লিখলে খুশি হই।
ইমামদের দিয়ে কতটা জনকল্যাণ মূলক কাজ হবে তা নিম্নের ভিডিওটিতে একজন প্রতিষ্ঠিত ইমামের বয়ান শুনলেই একটু অনুমান করতে পারবেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=Ulyfz28f6mo
@জিল্লুর রহমান,
ভিডিও টি কি ভয়ংকর! কি যে ভয়ংকর! খুব ছোটবেলায় অন্ধকারে ভুতের যেমন ভয় পেতাম, কি ভীষণ ভয়, এই মানুষ নামের অমানুষদের কথা গুলো শুনলে সেই ভয়টি ফিরে আসে। নিজের সত্তা হারানোর ভয়, পশু দের জয়ী হবার ভয়। মানবিক, চিন্তাশীল, আর বুদ্ধিমান মানুষদের হারিয়ে ফেলবার ভয়।