লিখেছেনঃ সৌরদীপ
.
” যখন ছোট ছিলাম, বাসায় অনেকগুলো বিড়াল ছিল। তাই খুব ছোট থেকেই বিড়ালের প্রতি একটা বিশেষ অনুভূতি কাজ করত। শুধু বিড়াল না, অন্য পশুপাখিদের প্রতিও একটা বিশেষ টান ছিল। ছোট থাকতেই বাসা থেকে জেনেছি বিভিন্ন পশুপাখি সম্পর্কে, গাছপালা সম্পর্কে। ডিসকভারি-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে অনুষ্ঠানগুলো দেখতাম, ইংরেজি ভালোমতো না বুঝলেও শুধু গাছপালা-পশুপাখিগুলোকেই অনেক আগ্রহের সাথে দেখতাম। একটু বড় হয়ে এ বিষয়ে অনেক বই পড়েছি, পরিবেশ সম্পর্কে ভালোমতো জানতে চেষ্টা করেছি।
খুব ছোট থেকেই একটা জিনিস দেখে আসছি – আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পরিবেশের ব্যপারে একদমই চিন্তা করে না। “পশুপাখি দিয়ে হবে টা কী” – এ রকম চিন্তার মানুষ অনেক দেখেছি। প্রায়ই দেখি এলাকার রাস্তায় থাকা কুকুরগুলোর গায়ে কে বা কারা গরম পানি ঢেলে দিয়েছে, বা কোন কিছু দিয়ে ছ্যাকা দিয়েছে, বিড়ালগুলোর দিকে ছোট ছোট বাচ্চারা ঢিল ছুঁড়ছে আর খুব ব্যপারটা খুব উপভোগ করছে, পাখি বলতে তো কাক ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়েনা, সেগুলোও রেহাই পায় না ঢিলের হাত থেকে। গাছপালার ব্যপারে এদেশের মানুষ আরও একধাপ এগিয়ে – কোথাকার জমির গাছ কেটে সেটা বিক্রি করা যায়, সেখানে কত বড় দালান বানানো যায়, এসব পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন তো চলছেই। ছোট থেকেই টেক্সটবইগুলোতে আমাদের শিক্ষা দেয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কেন প্রয়োজন, কীভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে হয়। আফসোস; এই শিক্ষা কেবল পরীক্ষার খাতায় ভালো নম্বর পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সমস্যাটা হলো, পরিবার থেকে যদি এ শিক্ষা না দেওয়া হয়, বাস্তবে এর প্রয়োগ আশা করা উচিত না। ছোটকালে ‘ব্যাম্বি’র গল্প আমরা পড়েছি, সেখানে দেখানো হয়েছে বনের পশুপাখিদের উপর মানুষের তান্ডবের ঘটনা। আমরা খালি গল্পটা পড়েছি, বাস্তবে এর থেকে শিক্ষা নিতে পারি নি। এর শিক্ষা গ্রহণ করার মতো ক্ষমতা একটা শিশুর সরল মস্তিষ্কে থাকলেও আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে তা নষ্ট করে দেয়। এদেশের মানুষের দরকার অর্থ-বিত্ত, পরিবেশ দিয়ে হবে টা কী! মাঝে মাঝে দেখি স্কুলগুলোতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি হয়, সরকারিভাবে বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপন হয়, পত্রিকা-টিভি চ্যানেলে সেগুলোর ছবি দেখানো হয়, কিন্তু যে সময় একটা গাছ লাগানো হয়, সে সময়েই তার পিছে কতগুলো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তা আড়ালেই থেকে যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারনে যেসব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুকির মুখে রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একে তো এই সমস্যা, এর মধ্যে আমাদের দেশে বনভূমির পরিমানও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পরিবেশ রক্ষা করতে চাইলে বনভূমি রক্ষা কতটা প্রয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের বনের কথা বললে সবার আগে আসে সুন্দরবনের কথা। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রের কারনে সারাবিশ্বে এ বন পরিচিত। বেশ কিছুদিন আগেও প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের সময় এদেশে সরকারের মধ্যে, মানুষের মুখে সুন্দরবন নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছিল। পরিবেশগত দিক দিয়ে সুন্দরবন যেমন আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পর্যটনখাতেও এর গুরুত্ব অনেক। কিন্তু বন আছে বলেই শুধু অহংকার করলেই তো হবে না, একে সংরক্ষণের জন্যও অনেক কিছু করা দরকার। সে ব্যপারে আমাদের সরকার বা মানুষেরা কতটা সচেতন? আজ একটা জিনিস দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াটের(২x৬৬০) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকার ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমার স্বল্পজ্ঞানে আমি যতটুক বুঝি, একটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশে অনেক দূষণ করতে পারে, বনের পাশে এটা করা হলে এটা বনভূমির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। বিশ্বে বিদ্যুৎশক্তির শতকরা ৪১% উৎপাদিত হয় কয়লা থেকে, এর মধ্যে একটি ৫০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩৭ লক্ষ টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড, ১০ হাজার টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ৭২০ টন কার্বন মনোক্সাইডসহ আরো অনেক দূষনকারি পদার্থ নির্গত হচ্ছে [সূত্রঃ The Union of Concerned Scientists]। উন্নত দেশসমূহের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লোকালয় বা বনভূমি থেকে দূরে কোন স্থানে করা হয় যেন তার দূষণের প্রভাব কম হয়, আর সেখানে আমাদের দেশের প্রধান বন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে এ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! এমনিতেই আমাদের বনভূমির পরিমান কমছে, পরিবেশের বারোটা বেজেই চলছে। পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষনিধন ইত্যাদি কারণে সুন্দরবন ধবংসের মুখে, তার উপর এরকম একটা সিদ্ধান্ত কীরূপ প্রভাব ফেলবে, তা রীতিমত চিন্তার বিষয়। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমান পানি প্রয়োজন। পশুর নদী থেকে ঘন্টায় প্রায় ২৪/২৫ হাজার ঘনমিটার হারে পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেওয়া হলে নদীর উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সেচ কাজে সমস্যা, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবনধারণে সমস্যা দেখা দেবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত দূষিত পানি নদীতে মিশে পশুর নদীর পানি দূষিত করবে, যার প্রভাব পড়বে সুন্দরবনের জীবকূলের উপর।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি টেনে নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে এলাকাবাসীরা পানি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে প্রতিদিন কয়লা জ্বালাতে হয় ২.৪ হাজার টন, যা থেকে প্রতিদিন ৩০০ টন ছাই জমা হচ্ছে [সূত্রঃ প্রথম আলো,০৫.১২.২০১০]। এ হিসাব অনুযায়ী, সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সেখানে বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ টন কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যাবহ্রত হলে ৩০ লক্ষ টন ছাই বর্জ্য উৎপাদিত হবে। এখন প্রশ্ন আসে ছাই ব্যাবস্থাপনার; বর্জ্য ছাই সঠিকভাবে রাখা না হলে তা থেকে বিষাক্ত ধাতব উপাদান মাটি ও পানির মারাত্বক দূষণ ঘটাতে পারে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুতকেন্দ্রের সন্নিকটে দেখা যায় যে, বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত কালো পানি চারপাশের কৃষিজমিতে মিশে যাচ্ছে। কৃষিজমিগুলোর রং-ই পরিবর্তন হয়ে কালচে হয়ে গেছে এবং মাটির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। একই ঘটনা যদি সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও ঘটে, পরিবেশের কী অবস্থা হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের দেশে বিদ্যুৎসমস্যা নিঃসন্দেহে অনেক বড় সমস্যা, এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবেশের কম ক্ষতি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে প্রযুক্তি ও সম্পদ প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে নেই। এজন্য প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে পেট্রোলিয়াম ক্রয় করে উৎপাদন, অথবা বিদ্যুৎ ক্রয় করা হচ্ছে, যা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। এজন্য নিজেদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানীর উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে, প্রাকৃতিক গ্যাসও দিন দিন অনেক কমে আসছে, এজন্য দূষণ হলেও জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার ছাড়া তেমন কোন উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে কি অন্য কোথাও এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেত না, বেঁছে ঠিক সুন্দরবনের পাশেই নিতে হলো??? কিছুদিন আগেও জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল, আর সেই দেশেই ভূমিকার সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে! অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সহ ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়েছেন। এদেশের আরো কত মানুষ রয়েছে, এ প্রতিবাদে তাদেরও অংশ নিতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে অসচেতনতার কথা আগেই লিখেছি, তবু অন্তত সুন্দরবনকে দেশের সম্পদ মনে করে যেন তারা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, সেটুক আশা করি। তবে এই প্রতিবাদ যেন শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রতিবাদ হয়।
এ লেখাটির উদ্দেশ্য শুধু সুন্দরবন রক্ষার জন্য নয়, সমগ্র পরিবেশ রক্ষার জন্য। আজ সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়ায় ব্যপারটি সবাইকে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন আমাদের চারপাশে যে ভাবে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, সে ব্যপারে কতজন সচেতন? আমাদের দেশের গাছপালা কমছে, কমছে পশুপাখিদের থাকার স্থানও। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা-পশুপাখি দিন-দিন কমছে। তার উপর পশুপাখিগুলো হচ্ছে মানুষের অত্যাচারের শিকার। মানুষই পৃথিবীতে সব নয়, এই পশুপাখিগুলোরও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সবার কাছে অনুরোধ, প্লিজ, ওদের বাঁচার সুযোগ দিন, সুযোগ দিন যেন ওরাও স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারে। বর্তমানে অনেক উদ্ভিদ-প্রাণি বিলুপ্তপ্রায়, পরিবেশরক্ষার স্বার্থে অন্তত এগুলোকে রক্ষা করুন। ”
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
কিন্তু এই পরিবেশ নিয়ে আমরা যদি নিজেকে প্রশ্ন করি, যে কেন আমাদের পরিবেশ আজ বিলুপ্তির পথে? এটার উত্তর হয়তো আমরা নিজেরাই পেয়ে যাব। সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, এই সম্পদের সাথে সাথে আমাদের বিদ্যুৎও খুব প্রয়োজন। তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রির কাছে আবেদন, প্রাকৃতিক সম্পদ যেন রক্ষা পায় সাথে বিদ্যুৎ সংকটও যেন দূর হয়।
অনেক জরুরি আর সুন্দর টপিক তুলে ধরেছেন। (Y)
কদিন আগে সরকার সুন্দরবনকে ভোট দেয়া নিয়ে নিজেই এত উত্সাহ দেখালো, অন্যদেরকেও উত্সাহিত করলো আর এখন এতবড় মারাক্তক একটা পরিবেশ বিরোধী কাজ করছে? :-X
ঢাকার পরিবেশ এর কথা বললে এখানের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে । যখন তখন রাস্তার ড্রেন এর ময়লা তোলা হচ্ছে বাড়ির সামনে, সেটা ওভাবেই থাকছে, ওয়াসার পানির লাইন তো কদিন পর পর ই সওয়ারেজের লাইনের সাথে এক হয়ে যাচ্ছে ।
আমার বাসার পানি ফুটিয়ে ফিল্টার করে খাওয়া শর্তেও সারা বছর আমার বাসার মানুষগুলোর ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হতো । এর কারন হিসেবে আবিষ্কার করলাম আমার বাসার পানি । আমাদের পানি আই.সি.ডি.ডি.আর.বি তে টেস্ট করিয়েছিলাম, সেখানে জীবননাশক ভয়ঙ্কর কোন জীবানু নেই যে ছিল না । এতদিন কিভাবে যে সেই পানি খেয়ে বেচে আছি সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার । তারপর থেকে কেনা মিনারেল জারগুলো ব্যাবহার করছি । পেপারে লিখালিখি হয়েছে বড় বড় মিনারেল ওয়াটার কোম্পানিগুলো নিয়েও । আমাদেরটা টেস্ট করিয়েছি, এবং নিরাপদ। এখন ডাক্তার এর পেছন যে পয়সা খরচ হতো তার অর্ধেকে পানি কিনে খাচ্ছি ।
আমাদের সি বিচ গুলো দেখলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়, এত সুন্দর সি বিচটাকে কি আবর্জনাময় করে তুলেছে । একটা করে বিচ এর জায়গা নষ্ট হচ্হে, সেটা পরিত্যেক্ত করে নতুন আরেকটা জায়গা তৈরী করছে ।
জনসংখা নিয়ন্ত্রণ ও ভীষন বড় একটা ইসু । পরিবেশ আর জনসংখা দুটি ই ওতপ্রোতভাবে জড়িত । এন জি ও গুলো মানুষের মোটিভেশন নষ্ট করে ফেলেছে, সরকার এর কথা তো থোরাই কেয়ার করে জনগণ । কিভাবে জাগবে এই জাতি, কিভাবে সচেতনতা বেড়ে উঠবে সেটা সত্যি ভাবিয়ে তোলে ।
অনেক বড় একটা বুম হওয়া উচিত ।
@নিলীম, ধন্যবাদ। আর আসলেই, অবহেলার কারনে আজ আমাদের পরিবেশের এই অবস্থা। শুধু তো সরকারের দোষ দিয়েও লাভ হবে না, মানুষেরা সচেতন না হলে কোন কিছুই হবে না। তবে সরকারেরই পদক্ষেপ নিতে হবে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, আর আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য।
আপনার শেষ কথাটার সাথে সহমত।
আমি বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখি। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট একটা দেশে ১৬ কোটির বেশী মানুষ। আমার ধারণা ১৭-১৮ কোটির মধ্যে হবে। দেশের সর্বত্র শুধু মানুষ আর মানুষ। দেশী বন জঙ্গল কেটে , খাল বিল ভরাট করে, ফসলি জমি বিনাশ করে শুধু মানব বসতি । বঙ্গোপসাগরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ও প্রত্যন্ত চর ও দ্বীপগুলোও মানুষে ভর্তি। মানুষ ছাড়া দেশে আর কিছু চোখে পড়ে না। এমতাবস্থায় বিদ্যুতেরও দরকার, দরকার তার কারখানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরিবিলি জায়গা। কিন্তু জায়গা কোথায়? সব জায়গাতেই তো মানুষ ঘরবাড়ী করে বসে আছে। তাই এখন আর সুন্দরবন বান্দরবন দেখার সুযোগ নেই সরকারের সামনে। আপনারা পরিবেশ নিয়ে এত কথা বলেন এত চিন্তা আপনাদের, জনসংখ্যার যে বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে , সে সম্পর্কে পুরো নির্বিকার কেন? একটা লেখাও তো দেখি না কারও এ ব্লগে। মনে পড়ে একবার এ অধমই একটা লিখেছিলাম এ সমস্যার ওপর। আপনাদেরকেই বা বলি কেন, দেশের সরকারও যে কোন চিন্তা ভাবনা করছে তার কোন লক্ষন দেখা যায় না। সবার বোঝা উচিত, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে থাকলে পরিবেশ রক্ষা কোন সমস্যা হয় না। দেশের অবস্থা যা দাড়িয়েছে তাতে আমার বক্তব্য হয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার জরুরী অবস্থা জারি করে। নতুবা , শুধু কয়টা বাঘ আর হরিণের জন্য বহু হাজার বর্গকিলোমিটার উর্বর জমি পতিত ফেলে রাখার কোন মানে হয় না, মানুষের তো বসবাসের একটা ঠাই দরকার। আর পরিবেশের ভারসাম্য? সুন্দরবন এমন কোন মহা পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করে না বাংলাদেশের জন্য। গত সিডর ও আইলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে – বিশ্ব উষ্ণায়নের এ যুগে সাগরের জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর ক্ষমতা নেই সুন্দরবনের। কারন সাগরের উচ্চতা উপকূলীয় বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের ভূমির উচ্চতার চেয়ে বেশ বেশী বর্তমানে। তাই সুন্দরবনের সাধ্য নেই সাগরের পানি ঠেকানোর। আমরা যথেচ্ছ আদম সন্তান জন্ম দিয়ে দেশটাকে মানব জঞ্জালের ভাগাড় করে তুলব , এর পর পরিবেশের ভারসাম্য বলে চেচামেচি করব- এটা এক ধরণের আতলামি মনে হয় আমার কাছে। বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যা পরিবেশ ভারসাম্য নয়, বরং জন মাত্রা ছাড়া বিস্ফোরণ।
@ভবঘুরে, আপনার একটা কথার সাথে একমত যে সরকারের প্রয়োজন জনসংখ্যার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু আপনার অনেক কথার সাথে একমত নই।
আমার লেখাতেই উল্লেখ করেছি যে আমাদের দেশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিন্তু তাই বলে সুন্দরবনের পাশেই কেন করতে হবে? দেশে যে সব কয়লাখনিগুলো রয়েছে, সেগুলোর নিকটে কি এগুলো করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেত না? সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা ভারত থেকে আমদানী করার কথা, এবং তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৭.২৫ টাকা খরচ পড়বে, যেখানে বড়পুকুরিয়ার কেন্দ্রে দেশীয় কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে সাড়ে পাঁচ টাকা/ইউনিট। অর্থনৈতিক দিক থেকেও এ কেন্দ্র লাভজনক হবে না। এছাড়া বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট মেরামত ও নবায়নে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অন্তত বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা বাড়বে। আর দেশে অন্য যে সব কয়লাখনিগুলো রয়েছে, সেসব স্থানে কয়লা উত্তোলন শুরু করে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার অংশ পড়ে, যার প্রায় ৭৫% অঞ্চল বনভূমি। এই অংশটুকে যে গাছপালা আছে, তা বাংলাদেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এমনিতেই গাছপালা নেই, যেখানে আমাদের এগুলো সংরক্ষণ প্রয়োজন, সেখানে এই বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। আর সুন্দরবন বাংলাদেশের জলজ ও বনজ সম্পদের একটি প্রধান উৎস। সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল, এ কথাটা ভেবে দেখেছেন যে সুন্দরবন না থাকলে তাদের কী হবে? আর আগেই লিখেছি, মানুষ নিজের স্বার্থ ছাড়া বোঝে না, অন্য প্রাণির দিয়ে কী হবে – সে কথাটাই বাঘ-হরিণ নিয়ে আপনার কথাটায় আবার প্রকাশ পায়।
আর জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ, না হলে ধীরে ধীরে আরো ক্ষতিই হতে থাকবে।
মানুষ তো সহজে বাস্তবতার মুখোমুখি হ’তে চায় না। সে বরং আড়াল করেই বেঁচে থাকতে চায়। এতে একটু আরাম বোধ হয়। তাই আসন্ন বিপদ বা বিপন্ন সময়ের কথাগুলো বারবার বলে যাওয়া উচিত। আপনাকে অভিন্দন, যে পথে সহজে কেউ হাঁটতে চায় না, আপনি সে পথেই পা বাড়িয়েছেন।
আবারো অভিন্দন। আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে নিয়মিত লেখার।
পৃথিবীকে মৃত্যু শয্যায় শুইয়েও, আমাদের ঘুম ভাঙ্গছে না। সহজে ভাঙ্গবে বলে, মনে হয় না। আমরা কি কখনো একবার, অন্তত একবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি, কি পরিমান অপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে? আর এ সব করতে গিয়ে কি পরিমাণে দূষণ ঘটানো হচ্ছে।
পৃথিবী বাঁচলে, মানুষ বাঁচবে, এটা জানার জন্য আমাদের গবেষণার দরকার নেই, শুধু এটুকু মাথায় থাকলে আমরা এ প্রশ্নও করতে পারি, বেঁচে থাকার জন্য আমরা কতটুকু বিনাশ করবো, আমাদের দরকার-ই বা কতটুকু?
এ বোধটুকু জাগ্রত হলে, ‘দুখিয়ার কুঠি-র’ সেইসব নায়কেরা তাদের বাজার হারাবে। হারাবে কি?
পরিবেশের উপর এখানে কিছু কার্টুন পাবেন, ভাল লাগলে লাগতেও পারে।
http://stephaniemcmillan.org/
@স্বপন মাঝি, ধন্যবাদ।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, আমার বন্ধুদের মধ্যেই দেখে এসেছি যে তারাই পরিবেশ রক্ষার ব্যপারে কতোটা উদাসীন ছিল। স্কুলে পড়ার সময়ই দেখেছি আবর্জনা ফেলে ফেলে স্কুলের পুকুরটা কীভাবে নষ্ট করা হয়েছে। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা হতো। অনেক সময় নিয়েছে বন্ধুদের বুঝাতে যে তারা যা করছে সেটা ঠিক না। তবে এখন অনেকজনকেই বুঝাতে পেরেছি।
আর লিংকটার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
খুব ভালো লেখা। দরকারি। পরিবেশ নিয়ে কেউ বোধ হয় লিখতে চায় না। আপনি লিখেছেন, একটা ভালো কাজ হোল।
স্বাগতম (C)
@কাজী রহমান, ধন্যবাদ।
@সৌরদীপ, মুক্তমনায় স্বাগতম। সুন্দর লিখেছেন।
@তামান্না ঝুমু, ধন্যবাদ।
পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়ে মুক্তমনায় যাত্রা শুরু করার জন্য অভিনন্দন। এই যে সাপ দেখলে মার, পাখি দেখলে মার, বানর বা হনুমান দেখলে মার, ব্যাঙ দেখলে মার, শেয়াল দেখলে মার, কুকুরের সঙ্গম দেখলে মার, মানুষ মার, যা দেখ তাকেই মার, তাতে পরিবেশের যত ক্ষতিই হোক কিছু লোক তাতে কেমন যেন তৃপ্তি পায় নিজেকে বাহাদুর ভাবে। এই যে শুধু মারমার একটা ভাইরাস কবে থেকে আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তা রীতিমত গবেষণার বিষয়।
@রাজেশ তালুকদার, ধন্যবাদ। আর মানবজাতি বড়ই বিচিত্র, যার সাথে পারা সম্ভব, তার বিরুদ্ধেই সক্রিয়।
চমৎকার লিখেছেন। এই যে বলেছেন – “খুব ছোট থেকেই একটা জিনিস দেখে আসছি – আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ পরিবেশের ব্যপারে একদমই চিন্তা করে না। “পশুপাখি দিয়ে হবে টা কী” – এ রকম চিন্তার মানুষ অনেক দেখেছি” – এটা খুবই ঠিক কথা। পরিবেশের কথা আমরা একদমই ভাবতে শিখিনি ছোটবেলা থেকেই। রাস্তা ঘাটে থুতু ফেলা, যত্র তত্র গাছ কেটে রাখা, ময়লা আবর্জনা ফেলে রাস্তার পাশে স্তুপ করে রাখা – এইগুলোর সাথে আমাদের পরিচয় এত বেশি যে পরিবেশ বলে যে কিছু আছে তাই ভুল গেছি আমরা। ঢাকা বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত নগরী। এর মাঠ ঘাট, রাস্তা ঘাট আকাশ বাতাস সবই কালো ধোঁয়ার দূষণে রোগাক্রান্ত! এই অবস্থা থেকে উত্তোরণ কবে হবে, কিংবা আদৌ হবে কীনা কে জানে।
আপনার লেখাটি যদি কোন কাজে আসে তাও অনেক। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। প্রথম লেখা হিসেবে খুবই ভাল হয়েছে। নিয়মিত অংশগ্রহণ কাম্য।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ অভিজিৎ দা। কথাটা ঠিকই বলেছেন যে ঢাকা শহরের এই অবস্থা থেকে আদৌ উত্তরণ হবে কী না, তা সন্দেহের বিষয়। তবে একটু সচেতন হলে অন্তত দূষণের মাত্রা যদি আর না বাড়ে, তা পরিবেশের জন্য একটু হলেও ভালো হবে।
পরিবেশ শুধু বাংলাদেশ কেন , সারা পৃথিবীতেই বহুল আলোচিত।
ষোল কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশে পরিবেশের দিকে যত্নবান হওয়া যে
কতটা দরকারী দেশের বেশীরভাগ মানুষের চেতনায় তার কোন প্রতিফলন নাই।
সারাদেশের বনজঙ্গল সাফ, গাছ কাটা, কীটনাশক, বিষাক্ত জিনিস নদী-নালায় গড়াতে
দেয়া , চলছে অবিরাম!
সরকারের উচিত পরিবেশ ক্ষতিকারকদের জরিমানার ব্যবস্থা নেয়া ও
গণমাধ্যম গুলোতে পরিবেশ রক্ষার প্রচারনা করা।
আসলেই গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা!
@লাইজু নাহার, ধন্যবাদ।
বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যম, টিভি শো, নাটক, চলচিত্রতে দেখা যায় পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রচার চালানো হয়। আমাদের দেশেই ব্যতিক্রম।
মুক্তমনায় স্বাগতম,ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার জন্য। যারা দেশটা নোঙরা বলে অভিযোগ করে তাদেরও অহরহ দেখি যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশটাকে আরো নষ্ট করতে যেটা দেখলে আমার খুব খারাপ লাগে(আমি নিজে চেষ্টা করি নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া ময়লা না ফেলতে)।
@রামগড়ুড়ের ছানা, ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, কথাটা ঠিকই বলেছেন। মাঝে মাঝে অবাক লাগে এই ভেবে যে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটা তো তেমন কষ্টের কিছু না, তাও এত অবহেলা কেন!
“হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলা দেশ…”
জানিনা কবিতার এই পংক্তি আর কতদিন অর্থবহ থাকবে 🙁
তোমার প্রথম লেখা ছাপা হলো, তাও মুক্তমনাতে, এটা একটা বড় অর্জন। অভিনন্দন সৌরদীপ। লেখা খুব ভাল হয়ছে।
@আসিফ মহিউদ্দীন, লেখালেখিতে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
@আসিফ মহিউদ্দীন,
আপনাকে অনেকদিন পরে মুক্তমনায় দেখে খুব ভাল লাগছে। নিয়মিত আসা যায়না?
@তামান্না ঝুমু, আমি আন্তঃব্লগীয় রাজনীতিতে( :-X ) এমন দৌড়ের উপরে থাকি, শান্তিমত ব্লগিং হয়ে ওঠে না। তবে চোখ রাখি নিয়মিত।
আচ্ছা, আজকে একটা লেখা লিখছি, সেটা মুক্তমনাতেও দেবো। ভাল থাকবেন। 🙂
চমৎকার হয়েছে। সময় উপযোগি।
(Y)
@আসরাফ, ধন্যবাদ। 🙂