একদা পৃথিবীর ইতিহাসে দুইটি দেশ ছিল। তাহাদের একটির নাম দেই আর আরেকটির নাম নেই। উহারা বন্ধু রাষ্ট্র। উহাদের মধ্যে কোন প্রকার দ্বন্দ ছিল না। নেই দেশটি ছিল অনেক বড় আর দেই ছিল অনেক ছোট।একটি ছফুট লম্বা দেহের সাথে একটি ছইঞ্চি শিশ্নের আয়তনে যে পার্থক্য হইবে ঐ দুটি দেশের আয়তনেও তেমনই পার্থক্য হইবে। দেই দেশ শাসন করিত একজন রাণী এবং নেই দেশ শাসন করিত একজন রাজা। উক্ত রাজা-রানীদের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বর্তমান ছিল। যদিও দুষ্ট লোকেরা নিন্দা করিত এই বলিয়া যে দেই-এর রাণীর সহিত নেই-এর রাজার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। রাজা রাণীদের ঐরকম একটু অভ্যেস হইয়াই থাকে তাহা মুখপোড়া নিন্দুকেরা বুঝিতে চাহিত না। অবশ্য তাহাতে দেই নেই এর রসের জলকেলীতে মোটেই বাধা পড়ে নাই। তবে একদিন একটি দূর্ঘটনা ঘটিয়া গেল।

রাজা এবং রাণী সাধারনত দুই দেশের সীমান্তে দেখা করিত। আশেপাশে পাইক পেয়াদারা পাহারা দিত। তাহাদের জলকেলী খেলার সময়ে সীমান্ত পথে সমস্ত যাতায়াত বন্ধ ছিল। কিন্তু এক গরু ব্যাবসায়ী তাহার গরু লইয়া সেইদিনই সেইখান দিয়াই সীমান্তের ঐপাড়ে গরু বিক্রি করিতে যাইতেছিল। সদা প্রস্তুত পেয়াদারা তাহাকে প্রথমে আটকাইল।

কিন্তু গাড়োল ব্যাবসায়ী তাহা না বুঝিতে চাইয়া বার বার যাইবার জন্যে অনুনয় করিতে থাকিল। পেয়াদা সর্দার বলিল ,ওহে তুই যাইতে পারবি না, কারন এখন রাজারানী জলকেলী খেলিতেছে। ব্যাবসায়ী তাহার পরেও অনুনয় করিতে লাগিল।

তখন সর্দার বলিল, ঠিক আছে তবে।তুই আমার বন্ধু দেশের মানুষ বলিয়া তোকে একখানা ছাড় আমি দিতে পারি। ব্যাবসায়ী আনন্দিত হইয়া উঠিল। পেয়াদা বলে, তুই যদি আমাকে ১০টি স্বর্ণমূদ্রা দিস তাহা হইলে আমি তোকে ওপারে যাইতে দিতে পারি। উহা শুনিয়া গরু ব্যাবসায়ীর উজ্জ্বল মুখ অন্ধকার হইয়া আসে।
বলিল, আমি কোথা হইতে এত পয়সা পাইব হুজুর? আমি গরীব ব্যাবসায়ী!
পেয়াদা তাহার দাবীতে অটল।
তখন লোকটি বলিল, হুজুরের দয়া হইলে আমি একটি প্রস্তাব দিতে পারি।

কী?

গরু ব্যাবসায়ী বলিল, আমি তো এখন গরু বিক্রি করিতে যাইতেছি সেইজন্যে আমার নিকট এখন কোন পয়সা নাই। তবে আমি বিক্রি করিয়া ফিরিয়া আসার সময় পয়সা থাকিবে এবং তখন হুজুরের পয়সা আমি দিতে পারিব।

পেয়াদা চিন্তিত প্রসাদ পাল হইয়া ভাবিল, দেখিল রাজা রাণীর জলকেলী তখন পিক-আপ মোমেন্টে। তাহাদের শিৎকারে গাছের পাখি পর্যন্ত পলাইয়া গিয়াছে। এমন কী ব্যাবসায়ীর গরুগুলোর মধ্যে পর্যন্ত চাঞ্চল্য লক্ষ করা যাইতেছে। এখন যদি উহাকে যাইতে দেই তাহা হইলে রাজা রাণী টের পাইবে না। চামে দিয়া বামে আমার একটা আয়ও হইয়া যাইবে। এই ভাবিয়া সে রাজী হইল এবং ব্যাবসায়ীকে যাইতে দিল।

কিন্তু পথিমধ্যে ব্যাবসায়ী ডাকাতের কবলে পড়িয়া সমস্ত গরু হারাইয়া ফকির হইয়া গেল। কাঁদিতে কাঁদিতে সে যখন সীমান্তে ফেরত আসিল তখন রাজা রানীর খেলাধুলা শেষ হইয়া যাওয়ায় তাহারা চলিয়া গেলেও ঐ পেয়াদাটি নটি বাড়ির কথা চিন্তা করিয়া তাহার তিন নম্বর পা’টি চুলকাইতেছিল। ব্যাবসায়ীকে দেখিয়া সে লাফাইয়া লাফাইয়া আসিল এবং তাহার পাওনা টাকা চাইল।
ব্যাবসায়ী তাহাকে সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলিল। বলিল আপনার দেশের ডাকাত আমার সমস্ত গরু কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে।

কিন্তু পেয়াদা উহা শুনিবে কেন? নটি বাড়ির নতুন নটিটির কথা ভাবিয়া ভাবিয়া সে এত সময় পার করিয়াছে। এখন এই ধুনফুন কথা শুনিয়া কেন সে স্বপ্নে পানি ঢালিয়া দিবে? সে যতই পয়সা চায় ব্যাবসায়ী ততই কাঁদিয়া ওঠে। কিন্তু তাহাতে পেয়াদার মন মোটেই গলিল না। গলিবেই বা কী করিয়া। এতক্ষন রাজা রানীর চিৎকার এবং শিৎকারে তাহার শরীর হইতে কম তরল বাহির হইয়াছে? তরলশুন্য শরীর এখন গলিবে কী উপায়ে?

অতঃপর অগ্নিশর্মা হইয়া ব্যাবসায়ীকে সে বেধরক পিট্টি লাগাইল। লাগাইবে নাই বা কেন? তাহার প্রাপ্য পয়সা দেয় না? কত বড় সাহস এই ছোট্ট ব্যাবসায়ীর!! পিট্টি দিতে দিতে তাহাকে ল্যংটো করিয়া ফেলিল। শ্যালক বেত্তমিজ!! আমার সহিত ঝামেলা করিস!

উক্ত ঘটনায় দেই এবং নেই দেশের মানুষেরা সরব হইয়া উঠিল। তাহারা যত ধরনের চিৎকার চেচামেচি করা যায় তাহা করিতে লাগিল। উহাতে বিরক্ত হইয়া নেই দেশের রাজা উক্ত পেয়াদাকে কয়েকদিনের জন্যে নটি বাড়িতে থাকিতে বলিল। আর দেই দেশের রাণীর কানে সমস্ত চিৎকার শিৎকার হইয়া বাজিতে থাকিল। কারন তাহার কিছু দিন আগেও নেই দেশ হইতে সে “”ঐ বছরের শ্রেষ্ট তোষামোদকারী”” হইবার গৌরব অর্জন করিয়াছে। এত তাড়াতাড়ি সে এই ভালোবাসা ভুলিয়া যায় কী করিয়া?? তাই সে এ সমস্ত চেচামেচিতে কান দিল না। সে উদগ্রিব হইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল কবে আবার রাজার কঠিন বাহুবলে নিজেকে সপিয়া দিতে পারিবে এই ভাবিয়া।

এরপর হইতে নেই এবং দেই আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।