***

সকালে কেবল ঘুম থাইকা উঠছি। কে যানি আইসা দরজায় ঠক ঠক করতেছে। চোখ কচলাইতে কচলাইতে দড়জা খুইলা দেখি চকচকা জামা পড়া দুই পাবলিক খাড়ায় রইছে। একজন বাঁইট্টা আর একটা লম্বু। জিগাইলাম-

: কি চাই।

হেরা বিগলিত হাসি দিয়া কথা শুরু করলো।

: আমি হইলাম জব্বার (বাঁইট্টা ডা), আর এইডা হইলো কুদ্দুছ।

: ঠিক আছে, এবার কন কি চাই।

: আমরা আপনারে জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দেওনের লাই্গা ডাকতে আইছি। বহুত ফায়দা হৈব।

: কি!!

হেঁচকি খাইলাম একটা।

: কি কইতাছেন এইগুলা? হেমায়েতপুর থেইকা পলায়া আইছেন নাকি?

: জী না জনাব।

: তাইলে জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিতে কইতেছেন ক্যান? আমি হ্যার পাছায় চুম্মা দিবার যামু ক্যান?

: কারন হ্যার পাছায় চুম্মা দিলে হে আপনারে কুটি কুটি টেকা দিবো।

: ওই মিয়া, মাথা ঠিক আছেনি?

: হ, ঠিকাছে। পাছায় চুম্মা না দিলে হ্যায় আপনার পাছায় লাথথি দিয়া এই গেরাম থেইকা খ্যাদায় দিবো।

: সাত সক্কাল বেলা কোন পাগল ছাগলের পাল্লায় পড়লাম?!

: জয়নাল ব্যাপারী হইলো কুটি পতি। হ্যায় পারেনা এমন কুনো কাম নাই। এই গ্রামডা হ্যার “রেস্ট্রি” করা সম্পত্তি।

: তো কি হইছে?

: অই মিয়া, আপনারে এত কথা কইতে হইবো ক্যান? চলেন একসাথে গিয়া জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিয়া আসি। একটা চুম্মা দিলে কি হয়?

: না, চুম্মা দিলে কিছু হয়না। কিন্তু…

: তাইলে আর তালগাছের মতন খাড়ায় রইছেন ক্যান। ইসতিরি করা একখান কাপড় পিন্দা আসেন, চটপট কয়ডা চুম্মা দিয়া আসি।

: আপনেরা কি পরতেক দিন জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দেন?

: আবার জিগায়। পরতেক দিন।

: আর হ্যায় লগে লগে আপনাগো কুটি ট্যাকা দেয়?

: না, তা দিবো ক্যান? যে দিন আমরা গেরাম ছাইড়া যামুগা, সেইদিন সব ট্যাকা একসাথে পামু।

: তো গেরাম ছাড়া যাইতেছেন না ক্যান?

: জয়নাল ব্যাপারীর যদ্দিন না কইবো, তদ্দিন গেরাম ছাড়া যাওয়া যাইবো না।

: খাইছেরে…। আপনেরা এমন কারো নাম কইতে পারবেন, যে জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিছে, গেরাম ছাইড়া গেছে আর কুটি টেকাও পাইছে?

: আমার আব্বায় গেরাম ছাইড়া গেছে। আমি শিওর হ্যায় কুটি টেকা পাইছে। কারন বাজান দিনে রাতে জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিতো।

: ক্যান, গেরাম ছাইড়া যাওনের পর আপনার বাপের লগে আপনার কথা হয় নাই?

: তা হইবো ক্যামনে? জয়নাল ব্যাপারী তো সেইডা করতে দিবো না।

: তাইলে নিশ্চিত হইলেন ক্যামনে যে গেরাম ছাড়লেই আপনেরা টেকা পাইবেন।

: কুটি টেকা না পাইলেও গ্রামে থাকতেই জয়নাল ব্যাপারী কিছু কিছু টেকা দেয়। এই যেমন সেদিনই তো হাটে গিয়া আমি রাস্তায় ৫০০ টেকার একখান নোট কুড়ায়া পাইছি। এই আকালের বাজারে জয়নাল ব্যাপারী ছাড়া এই ট্যাকা আমারে কে দিবো? ৫০০ টেকা… হু হু বাবা…

: দেখেন ভাইজানেরা। সাত সক্কালে উইঠা আপনাগো ফাও প্যাচাল শুইনা মেজাজ কইলাম বিলা হইতেছে…

: আরে মিয়া, এইডা হইল কুটি টেকার মামলা। আর কথা আছে, আপনি জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা না দিলে হ্যায় কিন্তু আপনারে গেরাম থেইকা খ্যাদাইবো।

: ঠিক আছে, কুটি ট্যাকা পাইলে পাছায় চুম্মা দিতে সমস্যা নাই। তয় এইডা টেকার বিষয়ডা নিশ্চিত হওন দরকার। আমি জয়নাল ব্যাপারীর লগে কথা কইতে চাই।

: জয়নাল ব্যাপারী কারো লগে কথা কয় না। কেউ তারে দেখবার পায় না।

: তাইলে আপনেরা হ্যার পাছায় চুম্মা দেন কেমনে?

: ব্যাপারীর পাছা উদ্দেশ্য কইরা আমরা বাতাসে চুম্মা দিই। অথবা মোকলেছের পাছায় চুম্মা দিই, হ্যায় এইডা জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় পৌঁছাইয়া দেয়।

: এই মোকলেছ আবার কেডা?

: মোকলেছ হইলো আমাগো এক দোস্ত। আমাগো চুম্মা জয়নাল ব্যাপারী পাছায় পৌঁছানির দায়িত্ব হ্যায় পাইছে।

: এই মোকলেছই আপনাগো জয়নাল ব্যাপারীর কাহিনী কইছে?

: আরে নাহ্। বহুদিন আগে জয়নাল ব্যাপারী মোকলেছের কাছে একখান চিঠি দিছে। সেইডাতে সব কিছু ল্যাখা আছে। সেই চিঠি ফটোকপি কইরা আমরাও সাথে রাখছি। চাইলে দেখাইতে পারি।

: দেখান দেখি।

হ্যারা পকেট থেইকা ন্যাত ন্যাতা এক টুকরা কাগজ বাইর কইরা আমারে দিলো। সেইখানে আঁকাবাঁকা অক্ষরে কি সব লেখা। আমি পড়তে শুরু করলাম।

এই চিঠি জয়নাল ব্যাপারীর আড়ৎ থেকে নাযিল হইতেছে
১. মহান জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দাও, তোমাদিগকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হইবে।
২. তাড়ি খাইবার সময় সাবধানে খাইবে।
৩. যারা তোমাদের পছন্দ করেনা, তাদের পাছায় লাথি দিয়া গ্রাম ছাড়া করিবে।
৪. ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিবে।
৫. এই চিঠির যাবতীয় দায় দায়িত্ব জয়নাল ব্যাপারীর।
৬. চাঁদ আলুর ভর্তা দিয়া তৈরি।
৭. জয়নাল ব্যাপারীর কথায় কোন ভূল নাই।
৮. প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার পর ভাল করিয়া হাত ধুইবে।
৯. খবরদার তাড়ি সেবন করিবেনা।
১০. আলু ভর্তা দিয়া ভাত খাবার সময় ডাল নেওয়া যাইবে না।
১১. যেইসব গর্ধব তোমাদের মত জয়নাল ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিবে না, তাদের পাছায় লাথি দিয়ে গ্রাম ছাড়া করিবে।

: এইডা তো মনে হইতেছে মোকলেছের হাতের লেখা।

: হু, মোকলেছই তো লেখছে। জয়নাল ব্যাপারী মুখে কইছে আর মোকলেছ লেখছে।

: মোকলেছ যে জয়নাল ব্যাপারীর নাম ভাঙ্গায়া খাইতেছে না, সেইডার প্রমান কি?

: ধূর মিয়া, কি কন এইসব। চিঠিতেই তে লেখা আছে যে “এই চিঠির যাবতীয় দায় দায়িত্ব জয়নাল ব্যাপারীর”।

: আপনাগো কাছে টেকা দেওনের কথা শুইনা ভাবছিলাম জয়নাল ব্যাপারী মনয় খুব দয়ালু। কিন্তু তার পাছায় চুম্মা না দিলেই গেরাম ছাড়তে হইবো, এইডা কেমুন কথা?

: ঠিকই তো কইছে। দেখেন না চিঠির ৭ নম্বরে ল্যখা রইছে – “জয়নাল ব্যাপারীর কথায় কোন ভূল নাই।”

: এইডা দিয়া প্রমাণ হয়না যে এই পুরা কাহিনী মোকলেছ বানায় নাই।

: মহা যন্ত্রণায় পড়লাম দেখি। চোখ দুইটা খুইলা ভালো কইরা চিঠিখান পড়েন। সাফ সাফ লেখা রইছে যে .. “তাড়ি খাইবার সময় সাবধানে খাইবে”, “ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিবে”, “প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার পর ভাল করিয়া হাত ধুইবে”। সগ্গলেই জানে যে এইগুলা সত্যি কথা। তাইলে অবশ্যই চিঠির বাকি কথাগুলা সত্য হইবোই হইবো।

: ক্যান, চিঠি ৯ নম্বরে তো ল্যাখা আছে যে “খবরদার তাড়ি সেবন করিবেনা”, এই ডা তো ২ নম্বরের পুরা উল্টা কথা। আবার ৬ নম্বরে লেখছে “চাঁদ আলুর ভর্তা দিয়া তৈরি”। অই মিয়া আমারে ছাগল মনে করছেন নাকি?

: ২ আর ৯ নম্বর একটা আরেকটার উল্টা কথা না। ২ নম্বরে যা আবছা আবছা বলা হইছে, ৯ নম্বরে সেইডা পরিষ্কার কইরা বলা হইছে। আর আপনে চান্দে গেছেন নাকি? চান যে আলু ভর্তা দিয়া তৈরি না, সেই কথা কে কইলো আপনেরে?

: ছাগলের মত কথা কন ক্যান? আম্রিকা থাইকা ডজন খানেক লোক চান্দে গেছে। হ্যারা দেখছে চান্দে খালি পাথর আর পাথর। সেই পাথর হ্যারা পকেটে কইরা নিয়াও আসছে।

: সেই পাথর যে আলু ভর্তা থাইকা তৈরি হয়নি, সেইডা আপনেরে কে কইছে? আর বৈজ্ঞানীকেরা অহরহ ভূল করে, কিন্তু আমাগো জয়নাল ব্যাপারী কক্ষোনো ভূল করেনা। চিঠির ৭ নম্বরে সেই কথা পষ্ট কইরা ল্যাখা আছে।

: ভাই জানেরা একটু মাথা খাটায়া চিন্তা করেন। আপনারা কইতেছেন জয়নাল ব্যাপারী যা কইবো, সবই ঠিক। কারন চিঠিতে লেখা আছে। আবার চিঠিতে যেইডা লেখা আছে, সেইটাও ঠিক। কারন চিঠিতে লেখা আছে যে জয়নাল ব্যাপারীর সব কথাই ঠিক। কুমিরের এক বাচ্চারে সাতবার দেখানির মত কাহিনী এইডা। এই ভূয়া চক্করটা বুঝবার পারতেছেন না ক্যান?

: এই বিষয়গুলা আপনি এখন বুঝবেন না। একবার খালি ব্যাপারীর পাছায় চুম্মা দিয়া দেখেন। সব কিলিয়ার হইয়া যাইবো। আপনার দিল সীলমোহর হইয়া আছে। চুম্মা দিলে সেইডা ছুইটা যাইবো।

: তাইলে ১০ নম্বরের আলুভর্তা ভাতের লগে ডাইল না খাওনের কাহিনীডা কিলিয়ার করেন। আমি তো ডেইলি ডাইল দিয়া আলুভর্তা ভাত খাই। কুন সমস্যা নাইতো।

: কি? ডাইল দিয়া আলুভর্তা ভাত খান? আমি কানে আঙ্গুল দিছি। আপনার কথা শুনুম না। আপনি মানুষ না, শয়তান। জয়নাল ব্যাপারী আপনার পাছায় লাথ্থি দিয়া গেরাম থেইকা খেদাইবো। তখন আমরা গলা চড়ায়া হাসুম। চল কুদ্দুস, আজ ব্যাপারীরে ১০ টা চুম্মা বেশি দিমু। এই শয়তানের লগে বেশিক্ষণ থাকলে আমাগো বিশ্বাসও ঢিলা হইয়া যাইবো।

এই কইয়া হ্যারা দুইজন রাগে গজগজ করতে করতে চইলা গেল। আমিও পাগল ছাগলের পাল্লা থাইকা বাঁচলাম। 🙂