এক.
আজকে ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন ব্লগ, ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম বাঙলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে!আপামর জনতা রাতারাতি দেশপ্রেমিক হয়ে উঠেছে, দেশকে গঠন করার কাজে হাত দিতে একে ওকে ডেকে তুলছে। ব্যাপারটা বেশ আশাব্যঞ্জক। এটাও আশাব্যঞ্জক যে এই কাজটি বাঙলাদেশীরা সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত করে আসছে। যেটা অন্যান্য জাতি হয়ত এতদিন ধরে করতে পারে নি। কারন তারা ততদিনে খাবার ভাত, পড়ার কাপর জোগাড় করে ফেলেছে। কিন্তু আমরা সেই জাতি, যারা বিজয় দিবসে দেশপ্রেমিক হই, তারপরের দিবসগুলোতে আত্নপরিচয় সংকটে ভুগি, অন্যের পশ্চাৎদেশ ভোগ করি, এবং দিন শেষে ঘরে গিয়ে নিদ্রাদেবীর কন্ঠলগ্না হই। আমাদের জীবনে আবার বিজয় দিবস আসে, আমরা আবার সহসা দেশপ্রেমিক হই এবং দিনশেষে সব ভুলে যাই।

দুই.
বাঙালির মতন আত্নসম্মানহীন জাতি পাওয়া সম্ভব নয়। কারন এদের থেকে আত্নসম্মানহীন জাতি আর পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার বই থেকে শুরু করে, উচ্চবিদ্যালয়, কলেজগুলোতে যেভাবে শেখানো হয় বাঙালি বীরের জাতি, তাতে করে অন্তত একজন বীরও যদি এই চল্লিশ বছরে প্রসব করতে পারত বাঙলাদেশ, তাহলেও তাকে এই মিথ্যাচার থেকে অব্যাহতি দেয়া যেত।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে ঘুড়ে দাঁড়ায়, তাকে বীর বলে না, তাকে বলে ভৃত্য। বীর প্রথম আঘাতেই জ্বলে উঠবে। লড়ে যাবে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত।

তিন.
মোঘলদের আগমনের পরে বাঙালি স্তুতি করেছে মোঘলদের, ইংরেজদের আগমনের পরে ইংরেজদের এবং সর্বশেষে পাকিস্তানিদের। এবং সবচেয়ে হতাশাজনক চিত্র হল এই তিন বিজাতীয় বর্বরদের প্রশংসা করার মতন লোক আপনি যত চাইবেন ততই পাবেন, আজকের এই ১৬ই ডিসেম্বরে, বাঙলাদেশের তথাকথিত স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও। এই না হলে বীরের জাতি!

দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ না খেয়ে থাকলেও যদি তাকে স্বাধীনতা বলা যায় তাহলে বাঙলাদেশীরা স্বাধীন। হত্যাকারী মামুর খালুর হাতের জোরে যদি হত্যার দায় এড়াতে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে বাঙলাদেশের মতন স্বাধীনতা আর কোথাও নেই। বাঙলাদেশ তুমি মহান। মহান তোমার স্বাধীনতা।

চার.
ডিসেম্বর আসার পর থেকেই ফেসবুকে বিশেষ করে, বাঙলাদেশের পতাকা প্রোফাইল পিকচার করার আহবান জানিয়ে অনেক অনেক অনুরোধ, পেজের ইনভাইটেশন পেয়েছি। তাদের যুক্তি হল, এই মাসে পতাকা প্রোফাইল পিকচার করে আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই আমরা দেশপ্রেমিক। মূর্খরা কিভাবে বুঝবে দুনিয়ার বেশীরভাগ মানুষ এটাই জানেই না যে বাঙলাদেশ নামে একটা দেশ আছে! আমি আমার দেশকে ভালোবাসি এটা প্রমানের সবচেয়ে ভালো উপায় কী? প্রোফাইল পিকচারে দেশের পতাকা দেয়া? তাহলে বাঙলাদেশের সবচেয়ে খাঁটি দেশপ্রেমিক হল সচিবালয়ের গোবৎসগুলো। বাঙলাদেশের প্রধান গাভি থেকে শুরু করে গাধারা দেশকে ভালোবাসার কথা বলতে বলতে মুর্ছা যান। কিন্তু তাতে করে দেশের হয়েছেটা কী? লবডঙ্কা!

আমি মোটেই বলছি না কেউ দিলে সেটা দোষ। আমি বলতে চাচ্ছি, বাঙালিকেই এসব পুতুপুতু দেশপ্রেম মানায়।

পাঁচ.
আজকে ১৬ই ডিসেম্বর, ২০১১। বাঙলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে এসেছিল, ১৯৭১এর এই দিনে। মাঝখানে সময়ের ব্যাবধান ৪০বছর হলেও, পরিস্থিতি সেই সত্তরেই আছে। এক সেকেন্ডও আগায় নি। তখনও মানুষ না খেয়ে থাকত, এখনও থাকে। তখনও কিছু শুকরশাবক দেশকে ভালোবেসে গাড়ি চড়ে হাওয়া খেত, এখনও খায়, তবে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউতে করে। সবার কাছে এটাকে স্বাধীনতা মনে হলেও আমি এটা দাসত্বই বলব। বাঙলাদেশের স্বাধীনতার মুখে আমি থুতু মারি। কারন আমি জানি আমি স্বাধীন নই। আমরা বাঙলাদেশীরা কখনও স্বাধীন ছিলাম না।