ফেসবুক বা স্যোশাল নেটওয়ার্কের রাজনৈতিক চর্চাকারীদের মধ্যে বাম বা ডান মনোভাবা সম্পন্ন লোকেদের একবল্গা লজিকের সাথে আমরা কমবেশী সবাই পরিচিত। পার্টিভক্ত অন্ধ, ধর্মান্ধ, তাত্বিক অন্ধ ইত্যাদি ভক্তিভাবের প্রকাশ শুধু বাঙালী না পৃথিবীর সব দেশে, সব সমাজেই দৃশ্যমান। ধর্মে অন্ধ হয়ে বিবর্তনকে অস্বীকার করা বা পার্টিতে অন্ধ হয়ে স্টালিন বা কমিনিউজমের নৃশংস ইতিহাসকে বুর্জোয়া মিডিয়ার ছল বলা, মূলত একই মানসিক ব্যধির দুই পিঠ।
কিছুদিন আগে ব্রেভিককে নিয়ে লিখতে গিয়ে,আমাকে অনেকের কাছেই ব্যখ্যা করতে হয়েছে কেন দক্ষিনপন্থী হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্টদের সাথে “বামপন্থী” কমিনিউস্টদের একসারিতে রেখেছি। এদের অনেকেই বামঘেঁসা বা কমিনিউস্ট প্রীতির আঁতুরঘরের গন্ধমাখা লোকজন। এদের বক্তব্য কমিনিউস্টরা যদি খারাপ কিছু করেও থাকে তা মেহনতি মানুষের জন্যেই করেছে। সেখানে ধর্ম শোষক শ্রেনীর সহায়ক ছারা অন্য কিছুত না!
সমস্যা হচ্ছে, যারা সিপিএমের এই ৩৫ বছরের দুস্বপ্নের দিনগুলি পশ্চিম বঙ্গে কাটিয়েছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই মানবেন পার্টি এই রাজ্যে শোষক শ্রেনীর শত্রু না, বন্ধুই ছিল। অন্যথা, কিছু সম্ভব ছিল না। হয় ও নি। এটা ত সাম্প্রতিক বাস্তব।
ইতিহাসে তাকালে দেখা যাবে, ধর্ম মাত্রেই প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। স্যোশাল জাস্টিস এবং ইনজাস্টিস সব কিছুই হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মগ্রন্থগুলির উপপাদ্য। আমেরিকার রিপাবলিকান বা টি পার্টি ছারা আর কোন সামাজিক আন্দোলন বা আদর্শবাদ আমার জানা নেই যা গরীব দরদি না। বস্তত ধর্ম গ্রন্থগুলির মধ্যে ধর্মীয় সমাজতন্ত্রের বা ভাববাদি সমাজতন্ত্রের ছোঁয়া সব সময় ছিল-এবং তার পরেও তারা শাসক শ্রেনীয় সহায়ক হিসাবেই আবির্ভূত। মার্ক্স কথিত বস্তুবাদি সমাজতন্ত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি-লেনিনিজম সব থেকে কুখ্যত শাসক এবং অত্যাচারীদেরই জন্মদাত্রী। এবং একটু ভাবলে দেখা যাবে, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরনের জন্যে এমনটা হওয়ারই কথা।
এই নিয়েও আগেই বিস্তারিত লিখেছি-কিভাবে একটি বাম আন্দোলন আস্তে আস্তে দক্ষিন পন্থী আন্দোলনে ইউ টার্ন নিয়ে থাকে ( যা ধর্ম, লেনিনবাদ , মাওবাদ সবার জন্যেই প্রযোজ্য )।
(২)
আমি এই প্রবন্ধ লিখছি সম্পূর্ন অন্য কারনে। বহুদিন থেকেই দেখছিলাম, কমিনিউস্টরা কমিনিউস্ট ইতিহাসের সব নির্মম দিক নিয়ে গর্ব করে। সাঁইবাড়ির খুনী থেকে স্টালিনের খুন গুলিকে এরা শ্রেণীযুদ্ধে ” প্রয়োজনীয়” মনে করে। এবং এটাই পার্টি লাইন।
সমস্যার শুরু এখান থেকেই। কারন এদের মতবাদ বা কমিনিউজমের শাস্বত মতবাদ হচ্ছে কমিনিউজমই আসল
মানবতাবাদ। মার্ক্স ব্যাপারটাকে এভাবে লিখেছিলেনঃ
“… communism, as fully developed naturalism, equals humanism, and as fully developed humanism equals naturalism; it is the genuine resolution of the conflict between man and nature and between man and man – the true resolution of the strife between existence and essence, between objectification and self-confirmation, between freedom and necessity, between the individual and the species. Communism is the riddle of history solved, and it knows itself to be this solution”..
কমিনিউজমের উৎস সন্ধানে, বা মানুষ কেন কমিনিউস্ট হতে চায়, তার মূলে ঢুকতে গেলে, এই বাক্যটির গুরুত্ব অপরিসীম।
কারন যারা কমিনিউজমের বিশ্বাস করে, তারা মনে করে কমিনিউজমই হচ্ছে একমাত্র রাজনৈতিক আদর্শবাদ যা মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে প্রকৃতির, অস্তিত্বের সাথে প্রয়োজনীয়তার, স্বাধীনতার সাথে প্রয়োজনীয়তার, ব্যাক্তির সাথে প্রজাতির দ্বন্দের অবসান ঘটাতে সক্ষম। এবং কমিনিউজম হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক দর্শন ( যা প্রকৃতি বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে আসে)।
কমিনিউস্টরা ধর্মীয় বা ব্যক্তি স্বতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে যে মানবতার সংজ্ঞা তাতে “বিশ্বাস” করে না। মানুষ তাদের কাছে সমাজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। লুইস আলথুজার নামে একজন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাকচারালিস্ট ( যিনি একজন অন্ধ স্টালিন ভক্ত ছিলেন), বুর্জোয়া দের দেওয়া মানবতার সংজ্ঞাকে ( অর্থাৎ সবার ওপর মানুষ সত্য ) মানবিক বিভ্রম বলে আখ্যায়িত করেছেন!
“humanism” means the illusion that individual human beings are autonomous, thinking subjects, whereas for structuralists (and poststructuralists), individual human beings are nothing but unconscious agents of structural forces, in much the same way as organisms are agents for the spread of a disease. Thus structuralists associate humanism with a naive and unproblematic conceptions of language and consciousness, and illusory belief in the autonomy of human beings.
অর্থাৎ হে কমিনিউস্ট বৃন্দ- বর্তমান সমাজের মানবিকতার ব্যখাতে ভুলিও না-কমিনিউজমের সেই সোনার ম্যাজিক বলই আসল মানবিকতা! সাঁইবাড়ির প্রনব সাঁই বা ষষ্টি দুলেদের কুপিয়ে কাটা সেই মহান মানবিক সমাজের প্রতিষ্ঠার জন্যেই দরকার!
(৩)
আলথুজারকে নিয়ে চিন্তা নেই-ভদ্রলোক বিজ্ঞানের দর্শন বিশেষ কিছু বুঝতেন না। যা লিখেছেন, তা বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক দার্শনিকদের চোখে বালখিল্যই হবে। এই প্রবন্ধ লেখা এই কারনে, যে মার্ক্সের ওই মারাত্মক দাবি-কমিনিউজম হচ্ছে সকল বিভেদের সমাধান, সেটা কতটা বালখিল্যতা বা হাস্যকর তা বিচার করা।
প্রথমেই বিশ্লেষণ করা দরকার বিভেদ কেন?
মার্ক্সত, ইয়ে মানে হেভিওয়েট দার্শনিক। তার একবাক্যের ওজন চোদ্দমন। সাধারন মাথাতে ঢোকাতে গেলে কিলোতে ঢোকানোই ভাল। উনার দাবীগুলিকে ১, ২, ৩…এইভাবে ভাংলে গোঁজামিল, বা যুক্তির বৃত্তীয় ভুল খুব সহজে ধরা যাবে,
উনার প্রথম দাবী-কমিনিউজম একধরনের ন্যাচারালাজিজম বা প্রাকৃতিক দর্শন। যেসব দর্শন ভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে যাবতীয় প্রশ্নের মিমাংসা করা যায়, তাদের বলে প্রাকৃতিক দর্শন। প্রথম দাবীটিই ভুল। কমিনিউজম বিজ্ঞানের দর্শনের প্রথম ধাপ-ফলসিফিকেশন উপপাদ্যটিই মানে না। ফলসিফিকেশনের সাদামাটা মানে আ) সব তত্ত্বই ভুল হতে পারে ক) তাই সব তত্ত্বের বাতিলযোগ্যতার পরীক্ষা দরকার। মার্ক্সীয় বিপ্লবের তত্ত্ব সর্বত্রই ভুল প্রমাণিত-তবুও কমিনিউস্টদের চোখে তা বাতিলযোগ্য না! এটি বহুচর্চিত -স্যার কার্ল পপার এবং মার্ক্সীয় অপবিজ্ঞান নিয়ে আগে অনেক লিখেছি।
এরপরে যদি ধরেও নিই, কমিনিউজম বিজ্ঞানভব (!), তারপরে রাউন্ড টুতে প্রশ্ন আসবে, মানুষে মানুষে বিভেদের কি কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র -বা কার্য কারন সূত্র সম্ভব?
খুব সহজ ব্যপার। বাইরে চোখ রাখুন-দেখবেন দুজন পুরুষ মারামারি করে মূলত সম্পদ এবং নারীর অধিকার নিয়ে। “শ্রেণী” যুদ্ধের একমাত্র কারন না-নারী, জাতি, প্রজাতি-আরো অনেক কিছুই বিবাদের কারন হতে পারে। এই জটিল সিস্টেমকে কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রে বাঁধা সম্ভব না।
আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি। পাওলি দাম নামে এক বাঙালী “মেইনস্ট্রুম” অভিনেত্রী, ছত্রাক নামে এক সিনেমাতে সম্পূর্ন নগ্ন শয্যদৃশ্যে অভিনয় করে বেশ সামাজিক ঝড় তুলেছেন। রক্ষণশীল বনাম প্রগতিশীল বাঙালীরা দ্বিধাভিকক্ত।
কে ঠিক? এর বিচারে কোন বিজ্ঞান বা যুক্তিবাদ চলে না। কারন পাওলি দাম নগ্ন হয়ে ঠিক করেছেন না ভুল করেছেন, তার ফলসিফিকেশন সম্ভব না। কারন এটা ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন। অর্থাৎ এই বিভেদের মূলে যেতে “একক” কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র ব্যর্থ।
আরো উদাহরণ দিচ্ছি। ধরা যাক কমিনিউজম এসেই গেল। কিন্ত তার মানে ত এই নয় রক্তমাংসের মানুষগুলো সব রোবট হয়ে গেল। তখন কমিনিউস্ট সমাজে যদি একজন সুন্দরী মেয়েকে দশজনের ভাল লাগে, তাহলে কি হবে? তাহলে দশজনের মধ্যে গন্ডোগলের সম্ভাবনা নেই? নাকি কমিনিউজমে সাম্যবাদের সূত্র মেনে দশপুরুষই নারীটিকে ভোগ করবে? বা “কমিউন” ম্যারেজ চালু হবে? মানে দশটা পুরুষ দশটা নারীকে বিয়ে করবে! তাতেও কি গন্ডোগল কমবে বলে মনে হয়?
মোদ্দা কথা এমন এক জটিল সামাজিক সিস্টেমের কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র হয় না। সেখানে সমাজের কার্যকারন সব বুঝিয়াছি এবং তার বৈজ্ঞানিক সূত্র আবিস্কার করিয়াছি এমন দাবী বেশ বালখিল্যতাই বটে।
এবার আসি রাউন্ড তিনে। মার্ক্স আরো দাবী করছেন, কমিনিউজম মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয়র মধ্যে বিভেদ মেটাবে। এটা সত্যই আরো বড় গোলা।
জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নটা যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞানের বাইরে। যদি ধরে নেওয়া যায়, জীবনে উদ্দেশ্য বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়, অর্থাৎ জেনেটিক সারভাইভালই আমাদের উদ্দেশ্য, তাহলে বিজ্ঞান কিন্ত মানব সমাজ এবং মানবতার অনেক কিছুই ব্যখ্যা করতে পারবে না। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যদি, দুই সন্তানের মধ্যে একজন পঙ্গু হয়ে জন্মায়, মা কিন্ত পঙ্গু সন্তানকেই বেশী যত্ন করে যদিও এটা জেনেই যে সে প্রজননে অক্ষম। আলট্রুইজম বা উপকারিতা বেঁচে থাকার উপায় বটে কিন্ত অনেক ধরনের আলট্রুইজম বা উপকারীতার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাই সম্ভব না। এটা ঠিক যে জীবনের উদ্দেশ্যের ৯০% জীববিজ্ঞানদিয়ে ব্যখ্যা করা যায়-কিন্ত যে সন্নাসী হতে চাইছে-তার ব্যখ্যা কি? অনেক দম্পতিই আজকাল চাইল্ডলেস বাই চয়েস থাকছে-তার পেছনেই বা কি যুক্তি?
তাদের জীবনের উদ্দেশ্যকি ভুল যেহেতু তা “ন্যাচারালাজিম” না???
যে ড্রাগ, নারী আসক্ত হয়ে জীবন কাটাচ্ছে সেও কি ভুল?
এই ঠিক বা ভুলের মাপকাঠি কি করে ঠিক করবে? আর ৫০০ মিলিয়ান বছর বাদে সৌর জগত সম্পূর্ন ধ্বংস হবে-আরো সূদূরে এই মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে, আবার বিন্দুতেই শেষ হবে। সুতরাং কে কি করল, তাতে মহাবিশ্বের ইতিহাস বদলাচ্ছে না। জীবনটা সাময়িক,সময়ের খুব ক্ষুদ্র স্কেলে করা জ্যাঠামি। কে সন্নাসী হয়ে কাটাল, কে পরকিয়া করে কাটাল-কে বেশ্যাগৃহে কাটাল-তাতে মানুষ এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যত কিছুই বদলাবে না।
সুতরাং ঘুরেফিরে আমরা সেই বৃত্তেই ফিরে আসি-সেখানে মানুষই একমাত্র সত্য। মানুষের হাতে তৈরী ধর্ম বিজ্ঞান কমিনিউজম, ক্যাপিটালিজম কোন তত্ত্বই মানুষের থেকে বড় হতে পারে না। অন্তিম বিচারে এর সবকিছুর ওপরেই মানবতার জয় ঘোষিত হবেই। সুতরাং কোন আদর্শবাদের দোহাই দিয়ে অমানবিক কোন কাজই সমর্থনযোগ্য না-এবং তা সব থেকে বড় অশিক্ষার ও কুশিক্ষার পরিচয়।
সত্যের অনুসন্ধান নয়, “কমিউনিষ্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভুল” লেখাটির মুখ্য উদ্দেশ্য কমিউনিষ্টদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা । তাছাড়া মানবতা সম্পর্কে লেখকের ধারণাও স্বচ্ছ নয় । মানবতা একটি আপেক্ষিক শব্দ । মার্ক্সের ভাষ্য অনুযায়ী সামাজিক চিন্তাধারার বা সচেতনার উপর মানবতা নির্ভরশীল (রৌরব কর্তৃক উদ্ধৃত ওয়েব সাইট) । ফলে বুর্জোয়া ও সর্বহারারা মানবতা সম্পর্কে একই চিন্তাধারা পোষণ করে না । তাছাড়া ভাব ও বস্তু শব্দ দু’টির শেষে “বাদ” শব্দটি যুক্ত হওয়ায় লেখক ভাববাদ ও বস্তুবাদকে এক করে ফেলেছেন । অক্টোবর বিপ্লবের শত্রুদের চিহ্নিত না করে লেখক দোষালেন স্ট্যালিনকে, যিনি হিটলারের সৈন্যবাহিনীকে রুখে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন । একই ঘটনাকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিতে অবলোকন করে ।
জীবন, বিশ্বজগৎ, খন্ডখন্ড প্রাকৃতিক প্রকাশ ও সামাজিক ঘটনাগুলিকে আমরা যেভাবে দেখি তার সমষ্টিগত নাম বিশ্বদৃষ্টি । গোটা জগৎ সম্পর্কে বিশ্বদৃষ্টির সাধারণ ধারণার নাম জ্ঞান । আর জ্ঞানের উৎস হলো বিজ্ঞান । কিন্তু এই জ্ঞানের প্রকারভেদ আছে । প্রতিটি বিজ্ঞান বস্তুজগতের এক একটি শাখা । পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, জীববিজ্ঞান বা অন্যান্য বিজ্ঞান এমন সব বিশেষ বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে অনুসন্ধান করে যেগুলি প্রাকৃতিক ঘটনার একাংশের বিকাশ নিয়ন্ত্রিত করে । প্রকৃতি, সমাজের ও চিন্তাজগতের সমস্ত ঘটনাকে বিজ্ঞানের যে বিধি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়, সেই বিধিগুলির বিজ্ঞানের নাম দর্শন । কমিউনিষ্টরা এই দর্শনের কথাই বলে । কিন্তু লেখক ঘুরপাক খাচ্ছেন স্যার কার্ল পপারের ফলসিফিকেশন তত্ত্বের মধ্যে, যা দর্শনশাস্ত্রসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কর্তৃক স্বীকৃত নয় ।
পদার্থবিজ্ঞানের জনক নিউটন সপ্তদশ শতাব্দির পদার্থবিদ । ফলে নিউটনের কোন তত্ত্বই তিনশত বছর পরবর্তী কাল, অর্থ্যাৎ বিংশ শতাব্দির দার্শনিক স্যার কার্ল পপারের ফলসিফিকেশন তত্ত্বের বেড়াজাল অতিক্রম করে নাই বিধায় লেখকের ভাষ্য অনুযায়ী ভুল । অন্যদিকে কার্ল মার্ক্স উনবিংশ শতাব্দির সমাজবিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক । উনবিংশ শতাব্দির মার্ক্সীয় তত্ত্ব বিংশ শতাব্দির অস্বীকৃত ফলসিফিকেশন তত্ত্ব অনুসরণ করে নাই বিধায় মার্ক্সীয় তত্ত্বকে ভুল বলে লেখক সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন । হাতি-ঘোড়া গেল তল/মশা বলে কত জল ।
ভারতীয় বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বিধি অনুযায়ী সিপিএম ৩৫ বছর ধরে পশ্চিম বঙ্গের রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে, উক্ত শাসনামলকে ডঃ পালের মতো শিক্ষিত মধ্যবিত্তের কাছে দুস্বপ্ন বলে মনে হয়েছে । কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদেরকে ভোট দিয়েছে । ডঃ পালেরা বুর্জোয়া গণতন্ত্র চান, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোটের উপর আস্থা রাখেন না । সিপিএম শোষকদের শ্ত্রু নয়, বন্ধু হিসাবেই ডঃ পালের কাছে মনে হয়েছে । তাই তিনি মমতার তৃণমূল কংগ্রেস ও মূল কংগ্রেস জোট জয়ী হয়েছে বিধায় খুশী । আন্না হাজারির মতে কংগ্রেস ও জনতা পার্টির মধ্যে ভ্রষ্টাচারদের অবস্থান । আলোচ্য এই দল দু’টির সহায়ক শক্তি হলো তৃণমূল । এখন দেখার বিষয় বহুরূপী মমতা পশ্চিম বঙ্গের জনতাকে কি উপহার দেন ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
মার্কসের একটি বক্তব্যের বিরুদ্ধে তিনটি যুক্তি দিয়েছি। তার উত্তর কই? সেগুলো বাদ দিয়ে অনেক কথা লিখে ফেললেন ত। আর মমতার বিরুদ্ধে ইদানিং আমি ছারা ( সিপিএম বাদ দিলে) ত কেও লেখে না পশ্চিম বঙ্গে ! এত অনুমাননির্ভর কথা বলেন কেন?
আর স্যার পপার গ্রহণযোগ্য না হলে, পৃথিবীর সব বিজ্ঞান জার্নালগুলো তুলে দিতে হবে, কারন তারা পপারিয়ানকেই একমাত্র গ্রহনযোগ্য মানে। এটা আমি বার বার লিখছি। পপারিয়ানের বিরুদ্ধে আরেকটিই শক্তিশালী বিজ্ঞানের দর্শন আছে যা পপারকেই উন্নীত করে-সেটা ক্রিটিকাল রিয়ালিজম-সেটা নিয়েও একটা কমেন্ট দিয়েছি। একটু দেখে নি।
পয়েন্টে উত্তর দিলে ভাল হয়।
@বিপ্লব পাল,
আবহমান কাল থেকে আপেল মাটিতে পড়ে । আপেল মাটিতে পড়ার বিজ্ঞান ভিত্তিক কারণ নিউটন উদ্ঘাটন করেছেন । তেমনি সমাজ পরিবর্তনের বিজ্ঞান ভিত্তিক কারণ মার্ক্স উপস্থাপন করেছেন । সমাজ পরিবর্তনের বিকল্প কারণ উল্লেখ না করে ফলসিফিকেশন তত্ত্ব দিয়ে মার্ক্সীয় তত্ত্ব নাকচ করা অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে ।
তত্ত্ব আলোচনার জন্য বিজ্ঞান জার্নালগুলি ব্যবহৃত হয় । অতএব কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করা এবং উক্ত বিষয়টি গ্রহনযোগ্য হওয়া এক জিনিষ নয় ।
কোন বিষয়ের সমালচোনা করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির উপর জ্ঞান অর্জন করা জরুরী, যার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
@বিপ্লব পাল,
আমি রূদ্রের মন্তব্যে প্রেক্ষিতে একটা জিনিস খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে লুইস আলথাজার-এর যে বক্তব্য আপনি দিয়েছেন সেটা তাঁর উদ্ধৃতি নয়, বরং তাঁর মতের একটা সারমর্ম (অন্য কারো লেখা)। এখানে পেলাম এটা —
http://www.marxists.org/glossary/terms/h/u.htm
এ জিনিসটা বোধহয় পরিষ্কার করলে ভাল হত, আমি ওটাকে উদ্ধৃতি মনে করেছিলাম। এবং, সরাসরি আলথাজারের উদ্ধৃতি তুলে দিলেই তাঁর মতটা কি, ভাল বোঝা যেত।
@রৌরব,
আলথুজার মার্কস পরবর্তীকালের সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন কমিনিউস্ট তাত্ত্বিক এবং স্টালিনের অন্ধ ভক্ত। স্টালিনের অমানবিক কীর্তিকলাপের সমর্থনে সব থেকে বেশী “দার্শনিক” পেপার উনিই নামিয়েছিলেন। এগুলো কমিনিউস্ট চর্চাকারীদের মধ্যে অজানা না।
কৌতুহলোদ্দীপক “কমিউনিস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভূল” শিরোনামের লেখাটি শুধু বিভ্রান্তির জন্ম দিল |
শিরোনাম দেখে মনে হবে লেখাটি সমালোচনামূলক; কমিউনিজম, যা মার্কসীয় দর্শনের অংশমাত্র তার ভুলত্রুটি আলোচনা করাই এর মূল উদ্দেশ্য | কিন্তু রচনায় তেমন সকল উপাদান অনুপস্থিত | কমিউনিজম কি তার কোনো আলোকপাত তো নেই ই, কমিউনিজম এর “বৃত্তীয় ভূল” বা ওই জাতীয় কোনো আলোচনা’র পরিবর্তে এখানে যা হয়েছে তা মোটামুটি পাঠকদের অন্ধকারে রেখে একপেশে কুত্সা রটনা | আপনি কি ধরেই নিয়েছেন যে পাঠকরা কমিউনিজম এর ধারণা’র সাথে পরিচিত? অথবা মার্ক্সের যে উদ্ধৃতিটুকু দিয়েছেন তাতেই কমিউনিজম সম্পর্কে পাঠককে সচেতন করে আপনার গালিগালাজ সুস্থভাবে হজম করানো সম্ভব? বস্তুত: উদ্ধৃতিটুকু’র মূল রচনা’র বিষয়বস্তু, সেখানে এই অংশটুকু’র প্রাসঙ্গিকতা সর্বোপরি অংশটুকু’র ত্রুটি কোথায় তাও আপনি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেননি | উদ্ধৃতিটুকু কমিউনিজম এর সম্ভাব্য সফলতা’র একটা রূপরেখা বলা যেতে পারে…কিন্তু কমিউনিজম হলো সমাজ বিকাশের চূড়ান্ত রূপ | “তাত্ত্বিক”, “অবাস্তব”, “অসম্ভব” এই ধরনের শব্দের ব্যবহার ত্রুটি খোঁজা’র চেয়ে নিছক বলপূর্বক আক্রমণের মাধ্যমে পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঠককে প্রভাবিত করার চেষ্টা | যদি কমিউনিস্ট সমাজ সমাজবিকাশের নিয়মে এবং মানুষের সতত চেষ্টায় অর্জিত চূড়ান্ত আদর্শ সমাজ না হয়ে আপনা’র বক্তব্যমত “তাত্ত্বিক” সমাজব্যবস্থা হয়ে থাকে তাহলে সেই সমাজের স্বপ্ন দেখতে সমস্যা কোথায়? আপনরা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী’র কোনো স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়না, তবে আমেরিকাপ্রীতি দেখে যদি ধরে নেই গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেন, সেই গণতন্ত্রের মূল বক্তব্যকে কি আপনি তাত্ত্বিক বলবেন না? আমেরিকাসহ তাবৎ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা আজ যে তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা কি সত্যি ই গণতন্ত্র? অথবা আপনি যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেন, তাইবা দেখেন কিভাবে? অতি মাত্রায় আদর্শিক…এটা কমিউনিজম এর ত্রুটি হলো কি করে? একটা মানদন্ড মেনে না চললে অথবা একটা মানদন্ডের দিকে অগ্রসর না হলে মানব সভ্যতার বিকাশকে আপনি কোন পথে চালিত করতে চান? “এই ঠিক বা ভুলের মাপকাঠি কি করে ঠিক করবে? আর ৫০০ মিলিয়ান বছর বাদে সৌর জগত সম্পূর্ন ধ্বংস হবে-আরো সূদূরে এই মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে, আবার বিন্দুতেই শেষ হবে। সুতরাং কে কি করল, তাতে মহাবিশ্বের ইতিহাস বদলাচ্ছে না। জীবনটা সাময়িক,সময়ের খুব ক্ষুদ্র স্কেলে করা জ্যাঠামি। কে সন্নাসী হয়ে কাটাল, কে পরকিয়া করে কাটাল-কে বেশ্যাগৃহে কাটাল-তাতে মানুষ এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যত কিছুই বদলাবে না।” এ দিয়ে আপনি কি বোঝাতে চান?? যেহেতু মহাকাল এবং মহাবিশ্বের ইতিহাসে মানব সভ্যতার ব্যাপ্তিকাল এবং মানবজীবনকাল নেহায়েতই তুচ্ছ, নগণ্য সেহেতু নিজেদেরকে অদৃষ্টের হাতে সঁপে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবেন? নাকি বাউল হবেন?
“সুতরাং ঘুরেফিরে আমরা সেই বৃত্তেই ফিরে আসি-সেখানে মানুষই একমাত্র সত্য। মানুষের হাতে তৈরী ধর্ম বিজ্ঞান কমিনিউজম, ক্যাপিটালিজম কোন তত্ত্বই মানুষের থেকে বড় হতে পারে না। অন্তিম বিচারে এর সবকিছুর ওপরেই মানবতার জয় ঘোষিত হবেই। সুতরাং কোন আদর্শবাদের দোহাই দিয়ে অমানবিক কোন কাজই সমর্থনযোগ্য না-এবং তা সব থেকে বড় অশিক্ষার ও কুশিক্ষার পরিচয়।” এই বাক্যটি হলো আপনার সকল বাক্যের চেয়ে স্ব-বিরোধী এবং দ্বিধাময়ী | ” অন্তিম বিচার ” এবং ” মানবতার জয় ” এই দুটো শব্দের একটা সঠিক চিত্রায়ন আপনার দৃষ্টিতে কেমন তা সত্যি জানতে ইচ্ছে করছে | মানবতার জয়ের রূপরেখাটি আপনার কাছে কেমন???
পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের ৩৫ বছরের যে দু:স্বপ্ন আপনি পাঠককে দেখানোর চেষ্টা করে কমিউনিজমকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এবং সমাজের কদাকার রূপের সাথে গুলিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন, তা আপনার একান্তই নিজস্ব দু:স্বপ্ন কিনা তাও ভাববার বিষয় |
সোশ্যাল জাস্টিস, ইনজাস্টিস ধর্মীয় গ্রন্থগুলি এবং ধর্মের উপপাদ্য ছিল এবং কমিউনিজমের ও তাই… এই ধরনের আরো অনেক বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আপনি মার্ক্সিজম এবং ধর্মকে গুলিয়ে ফেলেছেন | সোশ্যাল জাস্টিস ধর্মের উপপাদ্য ছিল এবং তা শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে….কিন্তু শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবার পেছনে ধর্মের মূল অস্ত্র হলো পরকালভীতি | আপনার বক্তব্যটা কি এরকম “যেহেতু সোশ্যাল জাস্টিস এর কথা বললেই তা শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে অতীতে, সুতরাং সোশ্যাল জাস্টিস নিয়ে কথা বলা নিষেধ অথবা যারা ভবিষ্যতেও এ নিয়ে কথা বলবে তারাও শাসক এবং শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে “???
আপনার গুলিয়ে ফেলার বিষয়টি বেশ লক্ষ্যনীয়ভাবে প্রকট | রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা আপনারই আরেকটি রচনা “ব্রেভিক এবং মুসলিম বিদ্বেষী দক্ষিণপন্থার উত্থান ” রচনাটিতে আপনি লিখেছেন “ইউরোপের প্রবল মুসলিম বিদ্বেশ-যা এতদিন শুধু কথাতে বুঝেছি, আজ গোটা বিশ্ব বুঝল এন্ড্রেস ভেরিং ব্রাভিকের গণহত্যার মাধ্যমে। কমিনিউস্ট তথা কালচারাল মার্ক্সিস্টদের প্রতি তার ঘৃণা এত গভীরে, বামপন্থী তরুণ তরুণীদের একটি পলিটিক্যাল ক্যাম্পের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো” | মুসলিম বিদ্বেষ এবং কমিউনিস্ট বিদ্বেষ আপনি গুলিয়ে ফেলেছেন অবলীলায়….আপনি আরো লিখেছেন “ফলে ইসলাম এবং কমিনিউজমের বিরুদ্ধে যুব সমাজের ক্রমবর্ধমান রাগ পৃথিবীর প্রায় সব অমুসলিম দেশেই ( যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ৫-১০% বা তারও বেশী ) ক্রমঃবর্ধমান” | কমিউনিজম এর যে সংজ্ঞা, বিশ্বের কোথাও সেই কমিউনিজম আছে নাকি? কয়েকটা উদাহরণ দিতে পারবেন যেখানে তরুনরা কমিউনিজম বা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে তেমন ক্ষুব্ধ?? বরং আমি দেখি বিশ্বজুড়ে অনেক তরুণ মার্কসীয় দর্শন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠছে | প্রথমত: আপনি যদি ব্রেভিক এর মত সাইকোপ্যাথ যুবকের রাগের কথা বুঝিয়ে থাকেন তাহলে আর কোনো কথা বাকি থাকেনা | দ্বিতীয়ত: ব্রেভিক বলেছে তার আক্রোশ অভিবাসী মুসলিমদের প্রতি; কোনো কমুনিস্ট বিদ্বেষের কথা তার মুখ থেকে শোনা যায়নি | এটা নিতান্তই আপনার কল্পনাপ্রসূত | (Wikipedia এবং অন্যান্য সংবাদ দ্রষ্টব্য) | তার আক্রমনের শিকার ছিল কিছু শিশু এবং আয়োজক ছিল বামপন্থী দলের কিছু তরুণ তরুণী !!!!! তথ্যের এমন গুলিয়ে ফেলাটা সচেতনভাবে করেছেন কিনা তা’র উত্তর দিচ্ছি একটু পরেই |
“কমিউনিস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভূল” রচনাটি আগাগোড়াই আক্রমনাত্মক বাক্য এবং শব্দের পরিচর্যিত সঙ্গমক্ষেত্র | লুইস আল্থুজার কে তা জানিনা, কিন্তু তার যে উদ্ধৃতিটুকু আপনি দিয়েছেন, তাতে কমিউনিজম শব্দটি অনুপস্থিত | অথচ অর্থ করার বেলা আপনি এই শব্দটি দু-দুবার ব্যবহার করেছেন | অতিকথনের এতটুকু সুযোগ আপনি হাতছাড়া করতে নারাজ !!! বস্তুত, উদ্ধৃতিটুকু পুঁজিবাদী, ভোগবাদী তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষকে যেভাবে মূল্যায়ন করে তার আদর্শ চিত্রায়ন | বর্তমান বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের মানুষের জীবনাচরণের দিকে তাকালে এই দৃশ্য চোখে পড়ে |
আপনার রেফারেন্স রচনা ” কমিউনিস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভূল” এর একটি বাক্য অবশ্য সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে দেয়….”যদিও বাস্তবে আমেরিকা বসনিয়া এবং আফগানিস্তানে মুসলমানদের মুক্তই করেছে!” এর সারমর্ম করলে দাড়ায় আপনি চলমান বিশ্বের অনেক সত্যকে আড়াল করতে চান সচেতনভাবে অথবা বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনি অজ্ঞ | যেমন ধরুণ….আমেরিকা ইরাকের মত একটি সমৃদ্ধশালী দেশকে ধংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে; মানুষের মুক্তি… মানব অধিকার রক্ষার যুদ্ধের নামে আমেরিকা আফগানিস্তানের মানুষের জীবনকে করেছে খেলনা (উইকিলীকস দ্রষ্টব্য , গুয়ানতানামো বে কেলেঙ্কারী এবং সি আই এ এর মানবধিকার লঙ্ঘনের সাতকাহন; আরো ভালো ধারণা পেতে ট্যাক্সি টু দা ডার্ক সাইড, ২০০৭ ডকুমেন্টারিটা দেখতে পারেন ); অদূর ভবিষ্যতে চীনের শীর্ষায়ন ঠেকাতে চীনের জ্বালানি তেলের অন্যতম উত্স আফ্রিকান দেশগুলির নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে আমেরিকা লিবিয়া’র মত একটি সমৃদ্ধ দেশকে বিবস্ত্র করার উন্মাদনায় মেতেছে ; টুইন টাওয়ার ধ্বংস যে খোদ আমেরিকা’র কারসাজি এটা মোটামুটি বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য….এবং এই ‘প্রতারণার ধারণা ‘তে (conspiracy theory ) বিশ্বাসী হাজার হাজার আমেরিকান বেশ কিছু সংগঠন গড়ে তুলেছে খোদ আমেরিকাতেই ….এই আমেরিকাতে অসংখ্য মানুষ চিকিত্সাসেবা অথবা স্বাস্থ্যবীমা’র ব্যয় নির্বাহের সামর্থ্য রাখেনা…….
মুক্তমনাতে এ ধরনের তথ্য বিকৃতকারী, গোঁড়ামিপূর্ণ, একপেশে, হঠকারী, অপ্রতুল তথ্যের সমাহারী এবং পাঠককে বিভ্রান্তকারী রচনা’র প্রকাশ সত্যি পাঠককে হতাশ করে !
@রুদ্র,
কমেন্টে ঝাঝা। (Y) (Y)
@রুদ্র,
পাঠকদের অন্ধকারে রাখা? আসলে আপনি আমার আগের লেখাগুলো পড়েন নি। কমিনিউজম নিয়ে লেখাগুলোর ছোট্ট একটা সংকলন এখানে রাখা আছেঃ
কমিনিউস্ট পাপের গল্প
সব থেকে বড় কথা কমিনিউজম নিয়ে লোকের মধ্যে যেসব ভুল ধারনা আছে, তার একটা লিস্ট আমি বহুদিন আগেই বাড় করেছি- এই লিস্টটা পড়লেই সহজেই বোঝা যাবে কমিনিউজম নিয়ে আপনার ভুল ধারনা প্রচুর।
রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আপনার কিছু ভুল ধারনা আছে। সেটা আরো অনেক বাঙালীরই আছে। আসুন, দেখি আপনার চিন্তার ভুল কোথায়
(১) আপনার ধারনা সমাজের ” ডেটারমিনিস্টিক” প্রগতি, বা লক্ষ্যের দিকে প্রগতি সম্ভব। যা কমিনিযউজমের মূল উপপাদ্য ও বটে। রাজনৈতিক দর্শনে একে বলে হিস্টরিসিজম।
কিন্ত হিস্টরিসিজম মানলে সামাজিক বিবর্তনের অস্তিত্ব থাকে না। বিবর্তন আনডেটার মিনিস্টিক। সমাজের বিবর্তন হয় আবহাওয়া এবং প্রযুক্তির আবিস্কারের ওপর ভিত্তি করে। এই দুটিই আনডেটারমিনিস্টিক। যেমন ইতিহাসে তাকালে দেখবেন প্রতিটা শিল্প বিপ্লব সমাজের পরিবর্তন এনেছে-কিন্ত সেই শিল্পের আবিস্কার সম্পূর্ন আনডেটারমিনিস্টিক। কালকে কৃত্রিম শালকসংশ্লেষ আবিস্কার হলে বা সুপার এফিসিয়েন্ট সোলার সেল আবিস্কার হলে, পৃথিবীর সমাজটাই বদলে যাবে।
বা ধরুন ইন্টারনেটের জন্যে দেশের দ্রুত বিলুপ্তি হচ্ছে-সরাসরি গণতন্ত্র এখন সম্ভব-এটাও প্রযুক্তির ফসল। ইন্টারনেট না আসলে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ভাবাই যায় না। এর জন্যে রাজনৈতিক কাঠামোটাই বদলে যাবে। এটা কেও ১৯৫০ সালে বলতে পারত না।
(২) গণতন্ত্র কোন তাত্ত্বিক বা কোন রাজনৈতিক কাঠামোই না। কারন এটি শুধু একটি সিস্টেম যা সমাজ বিবর্তনকে সহায়তা করে। এটির কোন রূপ নেই। বা সময় এবং প্রযুক্তির সাথে তা বদলাবে।
“বিবর্তনের ” দুটি এলিমেন্ট লাগে- মিউটেশনের মাধ্যমে অনেক সমাজ ব্যবস্থার জন্ম এবং তার মধ্যে থেকে যোগ্যতর সমাজব্যবস্থার নির্বাচন। বিবর্তনের এই পদ্ধতি একমাত্র গণতান্ত্রেই সম্ভব-কারন মুক্ত নির্বাচন ছারা যোগ্যতর সমাজব্যবস্থাকে বাছার কোন উপায় থাকে না।
গণতন্ত্রই একমাত্র ন্যচারালিস্টিক পলিটিক্যাল ফিলজফি-বা প্রাকৃতিক রাজনৈতিক দর্শন। বাকী সব কিছু কৃত্রিম বা মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক দর্শন।
আমেরিকাকে কি এই প্রবন্ধে সমর্থন করা হয়েছে? কমিনিউজমের বিপক্ষে বলা মানেই আমেরিকাকে সমর্থন করা? এই ধরনের যুক্তি কোথা হইতে পেলেন? :lotpot: বরং আমি এই প্রবন্ধেই লিখেছি, ধনতন্ত্র প্রসূত কোন অমানবিক কাজ ও সমর্থনযোগ্য না। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে আপনার যুক্তির ভিত খুব দুর্বল। অবশ্য সব কমিনিউস্টদের যুক্তির ভিত দুর্বলই হয়।
ও আচ্ছা। এবার বোঝা গেল। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। তাহলে লিবিয়া সমৃদ্ধ ছিল? লিবিয়ার ডিক্তেটর গদ্দাফি তার ৮১জন নারী দেহরক্ষীদের নিয়ম করে রেপ করতেন-বিরোধি যেকোন ভয়েস তুললেই সে লোপাট হয়ে যেত। গদ্দাফির বিরুদ্ধে লিবিয়ানদের কোন বক্তব্যই কি নিউজে পড়েন না?
আর ৯/১১ এর চক্রান্ত তত্ত্ব? এগুলো নিয়ে যেসব ঠিক ঠাক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পেপারে বেড়িয়েছে, কোনটিই চক্রান্ত তত্ত্বের দিকে নির্দেশ করে নি। এই ধরনের চক্রান্ত তত্ত্ব ভুলভাল লোকেদের, ভুল্ভাল কল্পনা । সময় নষ্ট । পারলে চক্রান্ত তত্ত্বের সমর্থনে বৈজ্ঞানিক কোন পেপার দেখান। উলটো দিকে, চক্রান্ত তত্ত্ব যে সম্পূর্ন বিজ্ঞান অজ্ঞদের প্রচার তার সপক্ষে বেশ কিছু গবেষণালদ্ধ ফল আছে। এই নিয়ে ফালতু সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই।
অদৃষ্টের হাতে সঁপে দিতে বলা হয় নি। বলা হয়েছে, জীবনের উদ্দেশ্য কি তাই নিয়ে ধার্মিক এবং কমিনিউস্টদের জ্যাঠামো বন্ধ করতে।
হ্যা, তারাও শোষকই হবে। কারন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনই শোষনমুক্তির একমাত্র পথ। আদর্শভিত্তিক ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে “আদর্শ” ক্ষমতার সেন্টারের কাজ করে। এই নিয়ে ফুকোর অনেক কাজ আছে। পড়ে নেবেন। শোষনমুক্তির একমাত্র পথ গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন-আদর্শবাদের পথে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরন না। এই নিয়ে প্রচুর লিখেছেন চমস্কি-আমি নিজেও বাংলাতে লিখেছি বেশ কিছু প্রবন্ধ।
@বিপ্লব পাল,
ক. প্রদত্ত লিঙ্ক অনুযায়ী যে লেখাগুলো পাওয়া যায় তার কোনটাই মার্ক্সবাদ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নয়…..গতানুগতিক কমিউনিজম এর অন্যান্য সমালোচক এর লেখার মতই পাঠকদের সাথে প্রতারণার সংকলন….যেখানে মূল বিষয় নিয়ে কোনো সুষ্ঠু আলোচনা নেই…গালিবাজি এবং একপেশে ( biased ) কথাবার্তা দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে |
খ. ‘কমিউনিস্ট পাপের গল্প’ শিরোনাম দেয়া হয়েছে কিন্তু মার্ক্সিজম এবং কমিউনিজম এর পাপ হয় কিভাবে ? এগুলো কোনো ব্যক্তি নয়…ব্যক্তি র দর্শন এক নয়……এটি হলো পাঠকদের সাথে প্রতারণা (deception). দেখতে সাদামাটা হলেও এধরনের কৌশল অবলম্বনকারী লেখকরা খুব সচেতনভাবেই এই কাজটি করেন | একই কাজটি আপনি করেছেন আপনার আলোচ্য লেখায়, “কমিউনিস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভূল” এ | মার্ক্সিজম এর ব্যাপারে কোনো আলোকপাত নেই,
“কমিনিউস্টরা ধর্মীয় বা ব্যক্তি স্বতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে যে মানবতার সংজ্ঞা তাতে “বিশ্বাস” করে না”
ধরনের মনগড়া, বল্গাহীন, নির্লজ্জভাবে গোঁজামিল দেয়া.. বাক্য লিখেই দায়িত্ব শেষ!!! একজন মানুষের একজন সতন্ত্র ব্যক্তি যতটুকু, ততটুকুই সে সামাজিক জীব | কমিউনিজম নিয়ে আপনার লেখাগুলোর অন্যান্য অংশ নিয়ে সমালোচনা করার উপযুক্ত স্থান এটা নয় এবং যৌক্তিকতাও নাই, কেন সেটা বলছি একটু পরেই |
গ. “ডেটারমিনিস্টিক” প্রগতি, বা লক্ষ্যের দিকে প্রগতি সম্ভব। যা কমিনিযউজমের মূল উপপাদ্য ও বটে। রাজনৈতিক দর্শনে একে বলে হিস্টরিসিজম। কিন্ত হিস্টরিসিজম মানলে সামাজিক বিবর্তনের অস্তিত্ব থাকে না। বিবর্তন আনডেটার মিনিস্টিক।”
…এই ধরনের বড় বড় সংগা দিয়ে অনেক “গ্যাপ” পূরণের চেষ্টা’র জবাব শুধু এইটুকু দিয়ে বলতে চাই…বিবর্তন পুরোপুরি “undeterministic” নয় |
ঘ. ““বিবর্তনের ” দুটি এলিমেন্ট লাগে- মিউটেশনের মাধ্যমে অনেক সমাজ ব্যবস্থার জন্ম এবং তার মধ্যে থেকে যোগ্যতর সমাজব্যবস্থার নির্বাচন। বিবর্তনের এই পদ্ধতি একমাত্র গণতান্ত্রেই সম্ভব-কারন মুক্ত নির্বাচন ছারা যোগ্যতর সমাজব্যবস্থাকে বাছার কোন উপায় থাকে না।”গণতন্ত্রই একমাত্র ন্যচারালিস্টিক পলিটিক্যাল ফিলজফি-বা প্রাকৃতিক রাজনৈতিক দর্শন। বাকী সব কিছু কৃত্রিম বা মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক দর্শন।”
আশা করি আপনি বর্তমান বিশ্বের (যেমন ধরুন আমেরিকার) গণতন্ত্রের সাথে আপনার উল্লেখিত গণতন্ত্রকে “গুলিয়ে” ফেলেন নি | তাহলে কোনো একদিন আপনার “তাত্ত্বিক” গণতন্ত্র বাস্তবে রূপ নেবে সেই স্বপ্ন দেখতে কোনো দোষ নেই | আপনি কি দেবদূত এ বিশ্বাসী নাকি যে কিনা এসে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাবে মানব সমাজ ব্যবস্থার??
ঙ.” আমেরিকাকে কি এই প্রবন্ধে সমর্থন করা হয়েছে? কমিনিউজমের বিপক্ষে বলা মানেই আমেরিকাকে সমর্থন করা? এই ধরনের যুক্তি কোথা হইতে পেলেন?”
“কোথা হইতে পাইলাম” তার উত্তর আগের মন্তব্যেই জানিয়েছি: ”যদিও বাস্তবে আমেরিকা বসনিয়া এবং আফগানিস্তানে মুসলমানদের মুক্তই করেছে!” …..এই দায়িত্বজ্ঞানহীন, দালালধর্মী বাক্যটি আপনারই লিখা “ব্রেভিক এবং মুসলিম বিদ্বেষী দক্ষিণপন্থার উত্থান ” রচনা থেকে উদ্ধৃত | সত্যি বলতে কি এই একটি বাক্যই আপনার সকল “বিচ্যুতি”র উত্তর সার্থকভাবে দিয়ে দেয় | বসনিয়া ও আফগানিস্তান এর পাশে ইরাক এর নামটা ব্যবহার করতে ভয় পেয়েছিলেন নাকি?
চ. “বরং আমি এই প্রবন্ধেই লিখেছি, ধনতন্ত্র প্রসূত কোন অমানবিক কাজ ও সমর্থনযোগ্য না। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে আপনার যুক্তির ভিত খুব দুর্বল। অবশ্য সব কমিনিউস্টদের যুক্তির ভিত দুর্বলই হয়।”
আপনি তো মশায় ভারী কারিশমাটিক :-s ! যে লেখাটি ইতিমধ্যে “মুক্তমনা”য় প্রকাশিত হয়ে গেছে, তাতে নিজে নিজে বিকৃতি ঘটিয়ে ফেলছেন!!!! “ধনতন্ত্র প্রসূত কোন অমানবিক কাজ ও সমর্থনযোগ্য না” এই বাক্যটি কি আপনার “কমিউনিস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভূল: পর্ব-২ ” এ আসছে?
ছ. ” ও আচ্ছা। এবার বোঝা গেল। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। তাহলে লিবিয়া সমৃদ্ধ ছিল? লিবিয়ার ডিক্তেটর গদ্দাফি তার ৮১জন নারী দেহরক্ষীদের নিয়ম করে রেপ করতেন-বিরোধি যেকোন ভয়েস তুললেই সে লোপাট হয়ে যেত। গদ্দাফির বিরুদ্ধে লিবিয়ানদের কোন বক্তব্যই কি নিউজে পড়েন না?”
বস্তুত লিবিয়া একটি সমৃদ্ধ দেশ ছিল যার মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় ১৪,০০০ মার্কিন ডলার, যা উঠতি ভারতের বর্তমান মাথাপিছু আয়ের প্রায় ৫ গুন, লিবিয়া’তে শুধু বাংলাদেশের শ্রমিক ছিল ৮০,০০০ এর ও বেশি | গাদ্দাফি’র দেহরক্ষীদের নিয়ে পরিবেশিত সি এন এন , ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য প্রবাহের খবরগুলি শুনেছি এবং দেখেছি ! এইসব শুনে বাংলা’র চটি সাহিত্যের কথা মনে পড়ে যায় | বস্তুত অতিরঞ্জন, বল্গাহীনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এইসব খবর অতীতের অনেক মিথ্যাচার কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে |
আপনার এই বাক্যটি পড়ে আপনার সম্পর্কে যে ধারণাগুলি করা সম্ভব
১. কুয়ো’র ব্যাং এর মতই জ্ঞানের বহর আপনার…পশ্চিমা গণমাধ্যম এ যার আদর্শ পাঠ, যারা কিনা পয়সাওয়ালাদের স্বার্থে দিনকে রাত র রাতকে দিন করে, যেখানে উইকিপিদিয়া ‘তে গাদ্দাফি’কে নিয়ে লিখা বর্ণনা মুহুর্তেই সম্পূর্ণ এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে !!!
২. আপনার মন্তব্যের জবাবও আপনার রচনার মত শিষ্টাচারহীন ! আমি চেষ্টা করেছি আপনার মত করে জবাব দেবার , আপনাকে অনুভব করানোর জন্য ! কিন্তু আমি আসলে এমন শিষ্টাচারহীন নই | এবং আমি সত্যি সকল খাঁটি জ্ঞানের প্রতি উন্মুক্ত রাখি নিজেকে, আপনার মত ভাব ধরি না অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে, অন্যের ধার করা বুলি’র পাশাপাশি আমার নিজের কিছু বিচারবুদ্ধি আছে | শুধুমাত্র সংজ্ঞা এবং মুখস্থকরণের মাধ্যমে আমার চিন্তাশক্তি খুইয়ে ফেলিনি আমি |
জ. ” আর ৯/১১ এর চক্রান্ত তত্ত্ব? এগুলো নিয়ে যেসব ঠিক ঠাক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পেপারে বেড়িয়েছে, কোনটিই চক্রান্ত তত্ত্বের দিকে নির্দেশ করে নি। এই ধরনের চক্রান্ত তত্ত্ব ভুলভাল লোকেদের, ভুল্ভাল কল্পনা । সময় নষ্ট । পারলে চক্রান্ত তত্ত্বের সমর্থনে বৈজ্ঞানিক কোন পেপার দেখান। উলটো দিকে, চক্রান্ত তত্ত্ব যে সম্পূর্ন বিজ্ঞান অজ্ঞদের প্রচার তার সপক্ষে বেশ কিছু গবেষণালদ্ধ ফল আছে। এই নিয়ে ফালতু সময় নষ্ট করার ইচ্ছা আমার নেই। ”
আপনার এই কথাটি পুরোপুরি আমেরিকান সরকারে’র বক্তব্যের নকল | “গবেষণালব্ধ ফল”এর মাকাল ফল পাঠককে না খাইয়ে আপনার যদি কুয়ো থেকে বেরিয়ে মুক্তমনা হবার ইচ্ছে ও সময় হয় কখনো তাহলে নিচের সংযুক্তিগুলো অনুসন্ধান করবেন:
http://www.globalresearch.ca/index.php?context=va&aid=26627
ঝ. ” অদৃষ্টের হাতে সঁপে দিতে বলা হয় নি। বলা হয়েছে, জীবনের উদ্দেশ্য কি তাই নিয়ে ধার্মিক এবং কমিনিউস্টদের জ্যাঠামো বন্ধ করতে। ”
গুলিয়ে ফেলা এবং শিষ্টাচারহীনতা আপনার অনবদ্য সম্পত্তি সে কথা আগেই বলেছি , কিন্তু আপনার এই বাক্যটি হয়েছে দাম্ভিক একনায়কের মত….আপনি কোন জ্যাঠা যে কমিউনিস্টদের জ্যাঠামি বন্ধ করতে বলেন??
ঙ. “শোষনমুক্তির একমাত্র পথ গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন-আদর্শবাদের পথে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরন না ”
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আপনি সত্যি সত্যি দেবদূতের অপেক্ষায় বসে আছেন সেটা এতটা স্পষ্ট ছিলনা এতক্ষণ 🙂
@রুদ্র,
জ্যাঁ পল সাত্রের নাম শুনেছেন? অস্তিত্ববাদকে যিনি জনপ্রিয় করেছিলেন। নিজে স্বঘোষিত মার্ক্সবাদি ও ছিলেন। তিনিও মার্ক্সবাদের সাথে ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদের সমন্বয় করতে গিয়েছিলেন। ফল হয়েছিল এই যে ক্ল্যাসিকাল মার্ক্সবাদিরা তাকে প্রত্যাখান করেছিল-কারন মার্ক্সের তত্ত্ব মানুষ সম্পূর্ন সামাজিক জীব এবং “ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদ” মার্ক্সবাদি তত্ত্বের আলোকে ভাববাদ!
মার্ক্সবাদ নিয়ে একটু পড়াশোনা করে, এই তর্ক করতে আসলে ভাল হত!
না। বাক্যটি এই প্রবন্ধেই ছিল। একটা প্রবন্ধ না পড়ে তর্ক করতে আসার অভ্যেস আপনার আছে, সেটা বিলক্ষন বোঝা যাচ্ছে।
সুতরাং ঘুরেফিরে আমরা সেই বৃত্তেই ফিরে আসি-সেখানে মানুষই একমাত্র সত্য। মানুষের হাতে তৈরী ধর্ম বিজ্ঞান কমিনিউজম, ক্যাপিটালিজম কোন তত্ত্বই মানুষের থেকে বড় হতে পারে না। অন্তিম বিচারে এর সবকিছুর ওপরেই মানবতার জয় ঘোষিত হবেই। সুতরাং কোন আদর্শবাদের দোহাই দিয়ে অমানবিক কোন কাজই সমর্থনযোগ্য না
তাহলে উদাহরণ দিন। যেকটি আদর্শ সমাজ জোর করে করার চেষ্টা হয়েছে তাতে কোটি কোটি লোক প্রাণ দিয়েছে। দুর্ভিক্ষ নেমেছে। কোনটাই টেকে নি। উদাহরন ছারা, উত্তর হাস্যকর। অগ্রহণযোগ্য। :lotpot:
হ্যা, তার অই ১৪,০০০ ডলারের মধ্যে ১০,০০০ ডলার যেত গদ্দাফির পরিবারের জন্যে। এটা চেপে গেলেন কেন?? এই তথ্য অস্বীকার করার ক্ষমতা আছে?? যেভাবে গদ্দাফিকে আপনি সমর্থন করছেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে তার গণধর্ষণ সমর্থন করছেন ( মনে রাখবেন, এটা তাদের দেহরক্ষিনীদের ইন্টারভিউ থেকে বেড়িয়ে এসেছে ), তাতে বোঝা যাচ্ছে, আপনাদের মতন বামলোক থাকা মঙ্গল-কারন এই ধরনের লোক, যারা একজন ডিকেটরের গোটা দেশের লুন্ঠন এবং গণ ধর্ষন সমর্থন করে-তারা যদি নিজেদের বাম বলে দাবি করে, ভুল ভাল বামপন্থী ধারনার প্রতি লোকের বিতৃষ্ণা বাড়বে। সুতরাং ধন্যবাদ এই অংশটির জন্যে।
আরেকটু গুগল করা শিখুন। এর বিরুদ্ধে বেড়নো সব উত্তর পেয়ে যাবেন। এই ফালতু কিছু উন্মাদ অশিক্ষিতদের চক্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে সময় নষ্ট করছি না এখানে।
আমি না, সময় এবং জনগণই বলে দেবে। আপনারা বধির, কালের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন না।
কেও শিখতে না চাইলে তাকে শিক্ষিত করা যায় না। ফুকোর তত্ত্বে খুব ভাল ভাবে ব্যখ্যা করা আছে ইতিহাস থেকে-কিভাবে আদর্শবাদি সরকার, ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট সরকারের রূপ নিয়ে থাকে-হিটলার, লেনিন, স্টালিন, পলপট-বর্তমানে কিং জং সেই ভয়ংকর রাজনৈতিক মডেলের ফসল যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরন হয় আদর্শকে কেন্দ্র করে। যা অতীব ভয়ংকর এক রাজনৈতিক সিস্টেম- যা ইতিহাস প্রমাণিত।
গণতন্ত্রে জনগণই একমাত্র দেবদূত- গনদেবতাই একমাত্র দেবতা। যদি ভরসা করতেই হয়, আশা রাখতেই হয়, সেই জণগণতন্ত্রেই আশা রাখতে হবে-কারন, তাই একমাত্র উন্নততর বিবর্তনের সূচনা করে।
@রুদ্র,
যেকোনো নিরপেক্ষ পাঠককে আপনার ও বিপ্লব-দা’র লেখাটি পড়তে দিন; পরে তার কাছ থেকে শুনুন কোন লেখাটি তাদের কাছে বিকৃত, গোঁড়ামিপূর্ণ, একপেশে আর হঠকারী মনে হয়েছে। কমিউনিস্ট মৌলবাদের কথা আগে কেবল শুনেছিলাম; কিন্তু এখন বিশ্বাস করি।
@কাজি মামুন,
” কমিউনিস্ট মৌলবাদের কথা আগে কেবল শুনেছিলাম; কিন্তু এখন বিশ্বাস করি। ”
বেশ তবে কাজী মামুন সাহেব, বিপ্লব পালরা সফলতা পাচ্ছেন তাহলে একটু একটু করে…..কিছুদিন পর বিপ্লব পালেরা আপনাকে বলবে “গরু আকাশে উড়ে” , প্রথমে আপনি শুনবেন….তারপর একটু একটু করে বিশ্বাস করবেন, তাই না?
একেবারে অপ্রাসংগিক হয়তো নয়, তাই জিজ্ঞেস করছি: প্রবন্ধের শুরুতে ছবিদুটোর পারষ্পরিক সম্পর্ক কি?
@নূপুরকান্তি,
(১) কার্ল মার্কস এবং লালন ফকির ( প্রসেনজিত) দুজনেরই দাঁড়ি আছে।
(২) এখানে লালন মানবতার প্রতীভূ হিসাবে হাজির।
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ।
প্রসেনজিৎ মনে হয় কার্ল মার্কস এর চরিত্রেও বেশ উতরে যাবে। কি বলেন?
আপনার সুলিখিত প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ।
পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসন ও কমিউনিজম নিয়ে আলাদা করে লিখবেন কি?
আপনি মার্ক্সবাদ কততুকু বুঝেছেন জানি না তবে একমত হতে পারলাম না , ধর্মের সাথে মার্ক্সবাদ এর তুলনা ??
@SHOWKOT,
ইহকালের স্বর্গ ছারা লেনিনবাদের সাথে ধর্মের পার্থক্য যদি দয়া করে একটু বুঝিয়ে বলেন। আমি ত পাই নাই। শিখিতে দোষ নাই যদিও। মার্ক্সবাদের সাথে ধর্মের তুলনা কিন্ত করছি না- করছি মার্ক্সবাদি দের সাথে ধার্মিকদের তুলনা।
@বিপ্লব পাল,
ইয়ে, বিপ্লবদা- আপনার পড়া বর্ণপরিচয়তে কি ‘ড়’ নেই?
@অনামী,
আমি যদ্দুর কোথায় জেনেছিলাম বাংলা বর্ণমালাতে ড় এর ব্যবহার ৮% এর মতন। আমরা ইঞ্জিনিয়ার মানুষত-সুবিধার্থে ৯২% টা ১০০% করে দিয়েছি :-X
ডঃ বিপ্লব পালের মার্কসবাদের উপর আগেও লিখেছেন–তবে মনে হচ্ছে এই লেখাটি অন্য ধরণের, মানে কার্ল মার্কসের চিন্তাধারা বা দার্শনিকতার সরাসরি অসার্থতা প্রমাণ করা। আমি কিছু বুঝলাম কিছু বুঝলাম না।
বুয়েটে ছাত্র ছাকাকালীন আমাদের এক বিশাল অংশ মার্কসের ভক্ত ছিলাম, আরা তখন মার্কসীয় ভাবধারায় বিশ্বাস না করলে বিপ্লবী অথবা বুদ্ধিমান মনে করা হত না। প্রচুর পড়াশোনা করেছিল মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন নিয়ে। ডাস ক্যাপিটাল, দাইলেক্টিকাল ম্যাতিরিয়ালিজম, হিস্টরিচাল ম্যাটিরিলিজম অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। এরপর অনেক দিন চলে গেছে। অনেক কিছুই ওলটপালট হয়েছে–সেই সাথে আমারও চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন এসেছে।
তবে মার্কসীয় তত্ত্ব কি ভুল না সত্য তা আমি এখনও নিশ্চিত নই।
ইসলামের (মানে মূহাম্মদের) সাথে মার্কসের চিন্তার মিল আছে এই ধারণা আমার মন হয় নিতান্তই অমূলক। বিপ্লব পাল যদি এই মিলের কিছু উদাহরণ দিতেন তবে রচনাটা আরও জোরালো হত।
ইসলাম কি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই–মানে মার্কস যেই ভাবে সমাতন্ত্রের ধাপে ধাপে—অবশেষে সম্যতন্ত্রে (কমুনিজম) উত্তরণ সেই ভাবে? আমার ত মনে হয় না।
ইসলাম চায় সমগ্র বিশ্বব্যাপি শরীয়া কায়েম করতে। শরীয়া কী সমাজতন্ত্রের বীজ বপন করবে?–জগত জুড়ে? আমার ত তা মনে হয় না।
যাই হোক, বিপ্লব পালের লেখায় চিন্তার কিছু খোরাক আছে।
@আবুল কাশেম,
আমি যে যুক্তি দিয়েছি তা ইসলামের জন্যে এবং ইসলামিস্টদের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য। ইসলামিস্টরাও কমিনিউস্টদের মতন মনে করে ইসলাম এবং ইসলামি সমাজ হচ্ছে সেই সমাধান যাতে তারা ইহকাল ও পরকালে সব কিছু পেয়ে যাবে। কিন্ত সেই ধরনের চিন্তা যে অজ্ঞতা এবং অন্ধত্ব ছাড়া অন্য কিছু না, সেটা এই প্রবন্ধে দেওয়া আমার যুক্তিগুলি দেখলেই বোঝা যাবে।
তবে ইসলাম সংক্রান্ত ব্যপারগুলো বৌদ্ধিক দিক দিয়ে এত নিম্নমানের, অত নীচে নামতে রুচি হয় না, সময় খরচ করতেও ভাল লাগে না। কমিনিউস্টদের যাও বা নুন্যতম ইন্টেলেকচুয়াল স্টান্ডার্ড আছে, ইসলামিস্টদের সেটুকুও নেই-একদম গরু গাধার দল। জাকির নায়েকের লেভেল আর কি :-X
@বিপ্লব পাল,
হাঁ, সহমত–তবে–
ইসলামিস্টরা একেবারেই গরু গাধা নয়–এরা অনেক সময় হিংস্র ও বর্বর।
জীবন জীবনের মতই সুন্দর, এই সৌন্দর্যকে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করা অর্থহীন কারন যার সাথে তুলনা করা হয় তা কখনই জীবনের মত বৈচিত্রময় নয়। এই বৈচিত্রময়তার জন্যই জীবন মূল্যবান যার জন্য বেঁচে থাকতে ভালো লাগেস অর্থহীন মনে হয় হাজারটা প্রত্যাদেশ আর শব্দ দূষন করা সব উচ্চারন। মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মৌলবাদ, মুজিব অথবা জিয়াবাদ সমান অর্থহীন ভিক্ষেরি, পূঁজারি অথবা পুঁজিপতির কাছে কিন্তু সবার কাছেই তার নিজেস্ব বোধ আর জীবন মূলবান। মানুষের সবচেয়ে বড় বৈশষ্টি নিয়ম ভাঙ্গার বৈশিষ্ট, তাই তো সে বেশিক্ষন অন্যের চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম পালন করেনা তার ব্যক্তিগত জীবনচর্চায়। যেখানেই সে সুযোগ পায় সেখানেই সে নিয়ম ভাঙ্গে তইতো হাজার বছর ধরে মৌ-লোবি দের চোখ রাঙ্গানির পরেও টিকে থাকে পতিতাল, মনে মনে ইচ্ছেমত বলৎকার করে ক্ষমতাবান কোন মানবী, পোপের অপছন্দের পরেও কথিত সভ্যরা সমকামিতাকে স্বাভাবিকভাবে। একজনের প্রনিত নিয়ম কখনও অন্যের জন্য প্রযোজ্য হতে পারেনা।কমনিজমের এই নিয়মের বাড়াবাড়িকে অপনি অন্য সব প্রগতি বিরোধি নিয়মের সাথে তুলনা করেছেন যদিও তারা নিজেদের প্রগতিবাদি বলে থাকে, আপনার মত আমিও সর্বান্তকরনে বিশ্বকরি যেকোন নিয়মই পরিশেষে ব্যর্থ এবং ব্যার্থ।
@ফাহিদ, :guru: :lotpot: :hahahee:
@ফাহিদ,
” অনুমানে শুরু, সমাধা অনিশ্চয়ে
জীবন পীড়িত প্রত্যয়ে প্রত্যয়ে “(প্রতীক্ষা, দশমী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
প্রথমেই বিপ্লব-দাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সাময়িক বিরতি দিয়ে আবারো একটি মূল্যবান লেখা উপহার দেয়ার জন্য! আর অশেষ কৃতজ্ঞতা- ন্যাচারালাজিজম, ফলসিফিকেশন, স্ট্রাকচারালিস্ট ইত্যাদি শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য!
আসলেই প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধর্মই কিন্তু গরীব দরদি; তারপরও আদর্শবাদের দোহাই দিয়েই সব ধরনের অন্যায় হয়ে চলছে।
আমি যখন ধর্ম ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পড়তে শুরু করি, তখন প্রায়ই আমার ধন্দ লেগে যেত; দেখতাম যে দুটোতেই তো ভুরি ভুরি ভাল কথা লেখা হয়েছে; তারপরও এদের মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্ক কেন? আসলে এখন বুঝতে পারি, এদের দ্বন্দ্ব আদর্শের নয়, শোষকের চেয়ার দখলের স্বার্থের দ্বন্দ্ব।
আমার পর্যবেক্ষণ কিন্তু ভিন্ন। আমি দেখেছি কিভাবে ‘mentally and physically disabled or differently able’ মানুষেরা পরিবারে এবং সমাজে তীব্র নিপীড়ন আর বৈষম্যের শিকার হয়! এমনকি মায়েরাও পঙ্গু সন্তানদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলা করেন। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় এবং তাকে সহজেই অভিজিত-দার ‘মানব প্রকৃতির জীববিজ্ঞানীয় ভাবনা’ নামক ই-বুক অনুযায়ী পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত ‘Malleable Genome’ এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
বিপ্লব-দা, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, দেশপ্রেম-গোত্রপ্রেম-জাতিপ্রেম-তন্ত্রপ্রেম হলো সব নষ্টের মুল; আমার মতে, পৃথিবীতে একটাই আদর্শবাদ থাকা উচিত- তা হলো মানবতাবাদ বা মানবপ্রেম!
@কাজি মামুন,
আমি খুন নিশ্চিত নয় মানুষের ব্যবহারের সবযটাই এম্পিরিসিজিম দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। সমকামিতা নিয়ে সকল গবেষণা লদ্ধ বায়োলজির রেজাল্ট পরবর্তী কালে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কার্য কারন সম্পর্ক আছে মানেই সেখানে বৈজ্ঞানিক “সূত্র” র অস্তিত্ব আছে এমনটা ভাবা ঠিক নাও হতে পারে। যেখানে একাধিক বৈজ্ঞানিক কার্য-কারন সূত্র কাজ করছে, যেমন মানুষের ব্যবহার, সেখানে অভিজ্ঞতাবাদি বৈজ্ঞানিক সূত্রের অবতারনা না করে শুধু বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষনগুলিকেই আমরা বৈজ্ঞানিক সত্য বলতে পারি। এই ধারনাকে বিজ্ঞানের দর্শনে ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজম বলে যে রে ভাস্কর জনপ্রিয় করেছেন গত তিন দশকে। সামাজিক বিজ্ঞানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূত্র আবিস্কার করতে গিয়ে দেখা গেছে একটি মাত্র না অসংখ্য জটিল কার্যকারনের ফলে মানুষের ব্যবহার বা সমাজ চলে। সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সূত্র আবিস্কার করতে হবে এমন মানে নেই-শুধু বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষ নই যথেষ্ট।
যেমন মানুষ কেন সন্নাসী হয় বা চাইল্ডলেস বাই চয়েস থাকে, সেটা মেলিয়েবল ইন্টালিজেন্স বলে নিউরোসায়েন্সের একটি শাখা দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়-যে মন হচ্ছে প্লাস্টিক এবং তা আমাদের নানান ইনপুটের ফলে পরিবর্তিত হতে পারে।
যেমন বিবেকানন্দে রচনা পড়ে অনেকেই সন্নাসী হয়েছে, যা স্বাভাবিক জৈবিক মনের বিরুদ্ধে। কিন্ত মন প্লাস্টিক-ফলে, বিবেকানন্দের প্রভাব জৈবিক তাড়নার থেকে বেশী হতেই পারে। এসবই বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়-কিন্ত এগুলোর জন্যে সূত্রের দরকার নেই। দুই জমজ ভাই দুজনেই বিবেকানন্দ পড়ে একজন সন্নাসী হয়েছে আরেকজন বেশ্যাগমন করেছে-এমন ও দেখেছি। সুতরাং সব কিছুতে সূত্রের প্রাদুর্ভাব না আনায় ভাল। বরং ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজমের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ গুলিকেই আমরা ভাল করে করতে পারি/
@বিপ্লব পাল,
দাদা, এবার শিখলাম ”ক্রিটিকাল রিয়ালিজম”।
:candle: :thanks:
বিপ্লব পালকে ধন্যবাদ একটি সুন্দর লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। জীবন যদি একটি অপরিকল্পিত ঘটনার (accident) ফসল মাত্র, তার কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। কাজেই, জীবনের উদ্দেশ্য খোজা বোকামি মাত্র। একই সমস্যা রয়েছে মার্ক্সের Perfect Society-র ধারনায়। Perfect Society কি সেটা আমাদের পক্ষে জানা কখনোই সম্ভব নয়। কাজেই মনগড়া এমন এক ধারনা তৈরী করে তা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তপাত মহাবোকামি। আর এমন বেকুবিপনার ফসল যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে কমিউনিস্ট বিশ্বে।
@অবিশ্বাসী,
ইসলাম, হিন্দু, কমিনিউজম-সর্বত্র সমস্যা এই যে এরা একটা পারফেক্ট সোসাইটি বা আদর্শ সমাজে বিশ্বাস করে, যা দার্শনিক এবং বাস্তবে অসম্ভব। এবং সেই ধরনের অন্ধ ধারনার বশবর্তী হয়ে, এরা খুনোখুনি এবং মৌলবাদকে হৃদয়ে পোষন করে। আমি মূলত এটাই দেখাতে চেয়েছি আদর্র্শ সমাজ কল্পনা-এবং বাস্তবে তেমন হওয়া অসম্ভব কারন জীবনের পরম উদ্দেশ্য থাকতে পারে না।
@বিপ্লব পাল,
বেশ ভাল লিখেছেন। চিন্তা উদ্দীপক অনেক মাল মসলা আছে।
আমার মনে হয় এখানে একটা তথ্যগত ভুল আছে। আমার জানা মতে সৌর জগত ধংস হবে ৫ বিলিয়ন বছর পরে, অর্থাত ৫০০ মিলিয়নের চাইতে দশগুন বেশী সময় পরে।
এটা কি বল্লেন বুঝতে পারলামনা। আমাদের ষাট সত্তর বছরের জীবনে যা ঘটবে সেটাই আমাদের জন্য প্রাসংগিক এবং গুরুত্বপুর্ণ; মহাবিশ্বের ভবিষ্যত বদলাবে কি বদলাবেনা সেটার সাথে আমাদের সুখ দুঃখের কোন সম্পর্ক নেই। অতএব অন্য মানুষ যদি এমন কিছু করে যা কারো জীবনকে প্রভাবিত করে তাহলে অবশ্যই সেটা তাকে আনন্দিত কিংবা বিচলিত করবে। যেমন ধরুন যদি কারো স্বামী/স্ত্রী পরকিয়া করে তাহলে তিনি নিশ্চয় নির্বিকার থাকবেননা। আর যদি প্রভাবিত না করে তাহলে অবশ্যই সেখানে কারো নাক গলানোর কোন দরকার নেই। কিন্ত এই দুই ক্ষেত্রের কোনটার সাথেই মহাবিশ্বের ভবিষ্যতের কোন সম্পর্ক দেখছিনা।
@হারুন উজ জামান,
হ্যা, ভুল সংশোধনের জন্যে ধন্যবাদ। ওটা ৫ বিলিয়ান বছরই হবে। সৌরজগতের আয়ু ১০-১২ বিলিয়ান বছর-আমরা ৫ বিলিয়ান বছর কাটিয়ে দিয়েছি।
নিশ্চয় থাকবে না। আমার বক্তব্য ছিল- সমস্ত উদ্দেশ্যই আপাত, পরম না। জীবনের পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু হয় না।
পরকীয়া কি খারাপ? নিশ্চয় খারাপ যদি তা অন্য পার্টনারের জন্যে দুঃখের কারন হয়। কিন্ত পরকীয়া কি ” একদম” করা উচিত না? এটা এবসলুউট বাজে? আমি প্রশ্নবিদ্ধ করছি সেই এবসলুটিজমকে। এই পরম নৈতিকতা বলে কিছু থাকতে পারে না এবং তার কারন অবশ্যই মহাজাগতিক। মানুষের উৎপত্তিই এক মহাজাগতিক এক্সিডেন্ট থেকে-পৃথিবী, প্রাণ থাকার পরেও মানুষ নাও আসতে পারত-টিরেক্সের বংশরাই টিকে যেত যদি না একটা এস্ট্রেয়েড ধাক্কা না মারত। তেমনি অন্তিম নিয়তি যেহেতু সেই শুন্যেই ফিরে যাওয়া সেহেতু জীবনের সব উদ্দেশ্যই সময়ের ক্ষুদ্র স্কেলে একটা আপাত কনসিডারেশন।