লিখেছেনঃ কফিল কাঙ্গাল


ধার্মিকরা যায় বেহেস্তে, পাপীরা দোযখে, কিন্তু যারা ধার্মিকও নয়, পাপীও নয়, তারা কেথায় যাবে? অর্থাৎ যারা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বিশ্বাস করে না, অথচ অন্যায়ও করে না, তারা কোথায় যাবে? প্রশ্নটির উত্তর ধর্মগ্রন্থে আছে কিনা জানা নেই। আমি যেহেতু বেহেস্ত-দোযখ, আল্লা-হরি বিশ্বাস করি না, সেহেতু মৃত্যু পরবর্তী চিন্তাও নেই। ধর্মের যুক্তিহীন, কাল্পনিক ও গাজাখোরি যেসব মিথ মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তার মধ্যে অন্যতম, মোহাম্মদের বুক চিঁড়ে তার হৃদয়টা নাকি আল্লা পরিষ্কার করে দিয়েছিল। এমনই বৈজ্ঞানিক আল্লা এবং পেয়ারা নবী; যারা নাকি একটি রিক্সা পর্যন্ত তৈরি করতে পারেনি! তরবারি হাতে ধর্ম প্রচারের জন্য সারা জীবন কষ্ট করতে হয়েছে, বোমা, বন্দুক, আগ্নেয়াস্ত্র… এসব তৈরির বুদ্ধিও তাদের মাথায় আসেনি; যদি আসতো তাহালে আজ আর সারা পৃথিবীতে একটিও অন্য ধর্মের লোক থাকতো না। এমন বিজ্ঞানে পূর্ণ খোদার নাজেলকৃত পুস্তক যার হাতে এলো, তিনি কিনা কিছুই আবিস্কার করতে পারলো না, সেটাও কি আজকের ইণ্টারনেটের যুগে বিশ্বাস করতে হবে? যা কিছু আবিষ্কার সবই করলো গিয়ে ওই কাফের-নাছাড়ারা; এটা কি একটুখানি দুঃখের বিষয়। কাফের-নাছাড়াদের দেশে শিশু জন্ম নেয় মানুষ হয়ে, আর আমাদের দেশে জন্ম নেয় ধার্মিক হয়ে। অর্থাৎ আমরা শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই তার কানে ঢুকিয়ে দেই নিজ নিজ ধর্মবাণী যাতে সে বড় হতে হতে আরো বেশি অভ্যস্থ হয়ে পড়ে এবং লেখাপড়া করে বড় বৈজ্ঞানিক হলেও শিশুবেলার প্রথার বাইরে গিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দূরে থাক, একটি প্রশ্নও করতেও পারে না।

পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের তীব্র আকাঙ্খা, আপ্রাণ চেষ্টা ও সমর্থন, যেন নিজ ধর্মীয় সম্প্রদায় দিয়ে সারা বিশ্ব ভরে যায়, অন্য ধর্মীয়রা যেন তার ধর্মে বিশ্বাসী হয়, কারণ তারটাই সর্বশ্রেষ্ঠ। যেমন, খ্রীস্টানগণ বলেন, তোমরা সমস্ত জগতে যাও, তার ধর্ম প্রচার করো। তারা বিশ্বাস করে শেষকালে পৃথিবীতে একটি ধর্মই থাকবে এবং তাহলো, খ্রীস্টধর্ম। তেমনি মুসলমানেরাও তাই বিশ্বাস করে ও আপ্রাণ চেষ্টা করে। তবে প্রশ্ন, পৃথিবীতে যদি শুধু একটি ধর্মের লোকই থাকতো, তথাপিও কি শান্তি আসতো? যারা ভাবছেন, হ্যাঁ, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি প্রতিদিন খবর শুনুন, দেখুন, পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে, ইরাকে… কি হচ্ছে? শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানি, ইমাম মেহেদীর অনুসারীরা কিভাবে রক্তের হলিখেলা খেলছে। একসময় খ্রীস্টানরাও তাই-ই করতো, কিন্তু তাদের বিদ্যা-বুদ্ধির উন্নতির সাথে সাথে ওপথ থেকে ফিরে এসেছে। যাহোক, প্রশ্ন করুন, ধর্মের প্রতিটি বক্তব্যের উপর, উত্তর নিজে নিজেই পাবেন, অন্যকে জিজ্ঞেস করতে হবে না। প্রশ্ন করুন, ধর্ম কবে এসেছে এবং মানুষ কবে এসেছে? মানুষ না বাঁচলে ধর্মের কি উপায় হবে? ধর্ম বাঁচলে মানুষের লাভ নেই। তবে হ্যাঁ, প্রকৃত মানব-ধর্ম অবশ্যই বাঁচাতে হবে; যা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো চায় না। যাহোক, সেদিন আমার ধর্মিক স্ত্রীর কথায় প্রশ্নগুলো জাগলো।

হঠাৎ সেদিন স্ত্রী বলে উঠলো, তুমিই বেহেস্তে যাবে!
আমি তো হতবাক! স্ত্রী আমাকে ধর্মকর্ম করার অনুরোধ করলে ইনিয়ে-বিনিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই। স্ত্রী যতোই বলে তুমি গাধা-বোকা-গরু-ছাগল… আমি ততোধিক বলি, ঠিক-ঠিক…। তার ধারণা, আমি নাকি আমার প্রায় সব বন্ধুদের মধ্যে বেশি লেখাপড়া শিখে, বেশি বুদ্ধিমান হয়েও ওদের মতো বিরামহীনভাবে গাড়ি-বাড়ির উপর গাড়ি-বাড়ি দূরের কথা একটা বাড়ি-গাড়িও করতে পারি নাই, সমাজে সম্মানিত স্থানগুলোর একটিও আমার জন্য নয়, আজীবন অতি সাধারণ একটা ব্যবসা নিয়েই সন্তুষ্ট আছি, টাকা পয়সা যা আয়, তাতে সুনামির বেগে প্রবাহিত বাজারদরের সাথে পাল্লা দেয়া সম্ভব নয়।
বললাম, ওদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান কিনা জানিনা, তবে একথা সত্য, বন্ধুরা আমার চেয়ে কোটি-কোটি গুণ অসৎ, দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদী এবং ধূর্ত খেঁকশিয়াল প্রকৃতির।

বললো, ধূর্ত না হলে এদেশে কেউ কিছু করতে পারে? এজন্যই তো তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না, যেখানে সমস্যা, সেখান থেকে লেজ গুটিয়ে আসো, তাইতো জীবনে কিছু হলো না।

বললাম, থাক ওসব। আমি কেন বেহেস্তে যাবো তাই বলো, আমি তো ধর্মকর্ম করি না। তাছাড়া এদেশে এতো ধার্মিক থাকতে, আমার মতো কাফের কিভাবে সেখানে যাবে?

বললো, তোমার তো কোনকিছুতেই আসক্তি নেই, প্রয়োজন নেই, খাবারে স্বাদ হলো কি হলো না, বুঝতে পারো না। পোষাক-আশাক-জুতা-সেন্ডেলে সৌন্দর্য আছে কিনা তাতে কিছু যায় আসে না, শুধু নিজের ব্যবসা, বই আর খবর শোনা! টেনশনহীন! কোন চিন্তা-ভাবনা তোমার নেই! এমন লোকদেরই তো আল্লা পছন্দ করেন!
ধর্ম নিয়ে কুটক্তি করলে সে রেগে যায়, তাই ভয়ে ভয়ে বলালাম, ভুল কথা। ধর্মপুস্তক অনুসারে আর যা-ই করি না কেন, ধর্মকর্ম না করলে বেহেস্তে যাওয়া যায় না। অর্থাৎ তুমি যতোই নির্লোভ, অনাসক্ত হও, সৎ হও… কাজ হবে না; খোদা এবং নবী-রাসূলদের প্রচারিত জাত-ধর্ম পালন না করলে কেউ বেহেস্ত যাবে না, গ্যারান্টি। তাই তো ইসলামী এ রাষ্ট্রের সকলেই খাদ্যে বিষ, ওজনে চুরি, কালোবাজারি, ফটকা-ব্যবসা, খুন-খারাবি, ঘুষ-দুর্নীতি… সব করে কিন্তু ধর্মের নিয়ম-কানুন পালন করতে ভুল করে না। শোন নাই, সারাবছর পাপ করে যদি তুমি শবেবরাতের রাতে সারারাত ইবাদত বন্দেগী কর, মাফ চাও তো সারাবছরের পাপ ধৌত হয়ে যায়। আবার সারা সপ্তাহ পাপ করে শুক্রবার মসজিদে গিয়ে আল্লা ও হুজুরদের কাছে কান্নাকাটি করলেও সারা সপ্তাহের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খাদ্যে বিষ বিশেষ করে শিশুখাদ্যে বিষ দেও, ঘুষ খাও… ওসব কিছু না আল্লার ইবাদত না করলে বেহেস্তে যাওয়া যাবে না। প্রশংসা না করলে, প্রার্থনা না করলে আল্লা খুশি হন না। যেমন ক্ষমতাধর অসৎ মানুষ, তুমি যতো তাদের পদলেহন করতে পারবে ততো ধনী হতে পারবে; ওদের খুশি না করে বড়লোক হওয়া যায় না। ধর্মের বিধানও ঠিক তদ্রপ, দুর্নীতিতে যতোটুকু অন্যায় হচ্ছে, তার সবটুকুই কেটে যায় ধর্মপালনে। আজীবন পাপ করে শেষ বয়সে হজ্জ করে সব ধৌত করা যায়! তাহলে পাপ করতে দোষ কি? এ দোষ তো ধর্মেরই। কারণ অন্যায় করেও ধর্মীয় বিধানের ফাঁকফোঁকর দিয়ে মাফ পাবার রাস্তা তো পেয়ার নবীরাই করে দিয়েছে। তবে এরূপ পাপ ক্ষমার জন্যও খোদাকে ঘুষ দিতে হয়, অর্থাৎ খোদার নিকট কাঁদলেই হবে না, সাথে সাথে কিছু টাকা না দিলে কিন্তু তা কবুল হয় না। যেমন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হজ্জ করে সৌদির সম্পদ বৃদ্ধি না করলে সারা জীবনের পাপ ধৌত করা যায় না। হুজুর-পাদ্রি-ঠাকুর এদের কথামত মসজিদ-মন্দির-গির্জায় গিয়ে দান না করলে যেমন ওরা বাঁচে না, তেমনি আল্লা-হরি-গডও বাঁচে না। শোন না প্রতি শুক্রবার মাইকে ঘোষণা দিয় হুজুর বলে, ওমুক ভাই ১০০০ টাকা দান করেছে খোদা তুমি তারা গুণাহ মাফ করে দেও…। তাছাড়া জুম্মায় হুজুরগণ একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যারা এ জুম্মায় আসছে তাদের পূর্বেকার পাপ ধৌত হয়ে গেছে… যারা একবার হজ্বে যায় তাদের আজীবনের পাপমোচন হয়ে যায়…। তাইতো পাপের মহোৎসব চলছে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে। তবে আমি যেহেতু ধর্ম পালন করি না, আবার জেনেশুনে কোন অন্যায়ও করি না, সেহেতু বেহেস্ত বা দোযখ কোনটাতেই যাবার যোগ্য নই।
স্ত্রীর প্রশ্ন, তাহলে তুমি কোথায় যাবে?
সমস্যা ওটাই। আল্লার প্রকৃত বান্দা নবী-রাসূলরা স্বর্গ-নরক সৃষ্টির সময় বোধকরি এটা ভাবে নাই যে, এর মাঝামাঝি একটা স্থান প্রয়োজন, না হলে ধার্মিকও নয়, পাপীও নয়, এরূপ অবাধ্যরা যাবে কোথায়? যারা আল্লার বা ভূতের (শয়তানের) ভয়েও ভীত নয়। তবে খাঁটি-সত্য হলো মরণেই সব শেষ, এরপর আর কিছু নাই…। আত্মা বলে কিছু নেই, স্বর্গ-নরকও নেই, তা ওকে বোঝানো যাবে না। তাই বললাম, কোথায় যাবো তা তো জানি না, বোধ করি এসব লোকদের জন্য আল্লা কোন স্থান ঠিক করে নাই। হয়তো এরা মহাশূন্যে ভাসতে থাকবে। ঠিক কষ্টও পাবে না আবার আনন্দেও থাকবে না। ডাগর আঁখির হুরীদের সাথে কৃষ্ণলীলা করা যাবে না, অথচ লোভ-লালসা জাগবে…।
কি যে বলো, দেখো আল্লাকে নিয়ে এরূপ মন্তব্য করা ঠিক না। ওতে অমঙ্গল হয়!

আরেকদিনের ঘটনা। স্ত্রীর ফুফু, বয়স ৮০’র কাছাকাছি। দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত। বললো, একটু দোয়া-দরুদ পড়ো ফুফু যেন সুস্থ হয়।
বললাম, ওনার বয়স তো প্রায় ৮০, তাই না! অতএব যতো দোয়া-দরুদ করো না কেন ওতে লাভ নেই। তাছাড়া ওনার ক্যান্সার, ক্যান্সার না হয়ে সর্দি-কাশির মতো সস্তা রোগ হলে হয়তো দোয়াদরুদ পড়ে, টেনেটুনে দু’একবছর বাঁচানো যেতো। এখন আর দোয়া-দরুদেও কাজ হবে না। শোন, খোদা যদি সত্যি থাকেও, তবে সে মাফ করলেও বয়স কখনো মাফ করে না। ওনাকে তো বয়সে ধরেছে, খোদার এখানে কিছু করার নেই। বয়স খোদার চেয়েও শক্তিশালী! এই বয়সে রোগকে যদি কেউ পরাস্ত করতে পারে, তা খোদা নয়, বিজ্ঞান…।
যেই না এপর্যন্ত বলা, অমনি বাঘিনীর হুংকার দিয়ে বললো, দেখ সব সময় তামশা করবে না, খোদা তোমাকে শাস্তি দেবেন!
বললাম, শাস্তি দিলে খোদা হবে স্বৈরাচারি, কারণ ধর্মজীবিদের বক্তব্য অনুসারে খোদা নিরপরাধকে শাস্তি দেয় না।
কে নিরাপরাধ, তুমি?
তা নয় তো কে? আমি তো জেনেশুনে অন্যায় করি না, তাহলে আমার অপরাধ কি?
তুমি আল্লা-খোদা বিশ্বাস করো না, আর তুমি কিনা বলছো নিরাপরাধ?
তুমিই তো সেদিন বললে, আমি বেহেস্তে যাবো কারণ আমি নিরাসক্ত, লোভ-লালসাহীন… ইত্যাদি।
বলেছি, তাতে কি? সেজন্য তুমি আল্লা-খোদা নিয়ে মশকরা করবে?
আরে রেগে যাচ্ছে কেন? আমি তোমার আল্লা-খোদা নিয়ে…।
এই তো এখনই করলে, তোমার আল্লা-খোদা আবার কি কথা?
ওই হলো।
হয়নি। বলো, আলহামদুলিল্লাহ! খোদার মহা-আশির্বাদে ভালো আছি, বেঁচে আছি!
শোন, এই যে তুমি সেদিন আমার বন্ধুদের কথা বলছিলে। তুমি কি জানো, তারা কে কি করে আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে?
না জানি না, জানার ইচ্ছেও নেই, বড়লোক হয়ে সুখে আছে, তোমার মতো ভাড়াবাড়িতে থাকতে হয় না, পরের কথা শুনতে হয় না, মাথা নিচু করে বাস করতে হয় না, নিজের বাড়ি-গাড়ি তো হয়েছে।
হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু একটি বিষয় জানো না, টাকা-পয়সায় সুখ হয় না। সুখ কেউ কাউকে দিতে পারে না, সুখ পেতে হয়, এদেশের বেশিরভাগই সেটা জানে না, তাই যতো সম্পদের মালিক হোক না কেন, উপর-উপর সুখ-সুখ ভাব দেখালেও ওরা কেউ সুখে নেই। ছোটবেলায় পড়েছি “স্বাস্থ্যই সুখের মূল।” ওরা সুখ পায় ধন-সম্পদে; আমি পাই স্বাস্থে। গত পনের বছর যাবৎ ওরা কেউ আর সুখে নেই। ওরা প্রত্যেকেই হার্ট অথবা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। শহরের বড় বড় ডাক্তার ওদের পেছনে লেগে আছে। আর আমি, দেখ, পঞ্চাশ পার করার পরও এই তো সেদিন দুপুর ও রাতে ২টি করে ৪টি ডিম খেলাম, কই কিছু তো হয়নি! তাছাড়া ঢাকার মতো বিশ্ব নোংরা শহরে থেকেও কোন ডাক্তার বা ওষুধও লাগে না, এখনো জ্বেদ করে এক কেজি মাংস, চার-পাঁচটা ডিম একসাথে খেলেও কিছু হয় না। অথচ হার্ট এবং ডায়াবেটিসের রোগি বলে ডাক্তার ওদের খাবার রুটিন করে দিয়েছে, হয়তো একটা রুট বা কলার অর্ধেক খেতে বলেছে, তাই খাচ্ছে আর বাঁচার তাগিদে ডাক্তারের কথামতো হাঁটছে আর হাঁটছে। আমার তো এখনো ওসবের প্রয়োজন হয় না; তবে বাড়াই করছি না, যে বয়স হয়েছে তাতে যেকোন সময় রোগাক্রান্ত হতে পারি, কারণ তোমার আল্লা মাফ করলেও বয়স কখনো মাফ করবে না। যাহোক, এই যে আমি ওদের চেয়ে কমপেক্ষ পনের বছর বেশি সুস্থ্য থাকলাম, রহস্যটা কি? আর সুখ যে কি জিনিষ ওরা তা বুঝতেই পারলো না; কারণ ওরা কেবল টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদের পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই, সুখের পেছনে ওরা ছুটে না, সুখ শুধু হাতড়ে বেড়ায়। একজন তো মরে-মরে অবস্থা, তিন-চারটে বাড়ি ভাড়া দেওয়া, এরপরেও একটা মার্কেট কেনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কি হবে এসব করে বলো? আমাদের সৌখিনতার টাকা-বাড়ি-গাড়ি নেই, তবে খাবার ও থাকার স্থানের তো কখনোই অভাব হয়নি। তাহলে কেন এহেন সুখের আশা। এখন যা বয়স তাছাড়া মহা-ধার্মিকদের এ দেশের অতিলোভ-অতিলাভে উম্মত্ত মহান-ধার্মিকরা যেভাবে খাবারে বিষ দিচ্ছে, তাতে আমরা এখন মহা-ঝুঁকির মধ্যে আছি, যেকোন সময় যেকোন রোগে আক্রান্ত হতে পারি। তবে এপর্যন্ত যে সুস্বাস্থে আছি এটা কি কম তৃপ্তি?
গিন্নি বললো, বলো আলহামদুল্লিলাহ! খোদার প্রশংসা করো। কারণ তার দয়া না হলে এরূপ সুস্বাস্থ্য থাকতো না।
বললাম, তার দয়া তো চাইনি। যে চায় না, খোদা কি তাকেও দেয়? তাছাড়া কেউ তো তার কাছে সুস্বাস্থ্য চায় না, চায় ধন-সম্পদ। আমিও চাইলে ধন-সম্পদই চাইতাম যাতে একটি সুন্দর রাজপ্রাসাদ হয়, সুন্দর দামি গাড়ি হয়, বহুবিবাহের সুযোগ, হুরী, সুরা ইত্যাদি পাই…!
আবার মশকরা। শোন, খোদা ইচ্ছে করলে এমনিও দিতে পারে।
কেন? না চাইলে তিনি দেবেন কেন? এমন তো কথা ধর্মপুস্তকে নেই। পেয়ারা নবীজিও এমন কথা বলেনি। দিনরাত ইয়া নবী… ইয়া খোদা… করে দু’জনেরই সমানভাবে প্রশংসা না করলে তারা খুশিই হয় না, তাহলে আমি যে ভালোমন্দ বোঝার পর থেকে তাদের কাউকে ডাকিই না, তথাপিও আমাকে কেন দিবে?
এটা তার ইচ্ছে। তার ইচ্ছের বাইরে কিছু হয় না, তিনি যখন যা চান তাই হয়।
বললাম, কথাটা মোটেও ঠিক না। এখন যদি তোমার বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করি তারা কি তোমাকে বাঁচাতে পারবে? আগে এক গর্ভে সন্তান হতো ২০-২৫টি এখন তোমার ইচ্ছামত ২-১টি বানাতে পারে এটাও কি তার ইচ্ছা? যাকগে, যদি এতোই বিশ্বাস পেয়ার নবী ও খোদায় তাহলে পৃথিবীর সব মোল্লাদের একস্থানে জড়ো করে তোমার ফুফুকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি এনে দোয়া-দরুদ পড়াও দেখি ক’দিন বাঁচে! তিনদিনও তো টিকবে কিনা সন্দেহ। অথচ উন্নত চিকিৎসা দিলে হয়তো দু’চার মাস এমনকি আরো বেশিও বাঁচতে পারে।
তুমি আসলেই একটা বোকা! যার যখন যাবার সময় হয় তখন তাকে চলে যেতে হয়। আল্লা জিব্রাইল পাঠালে কেউই আর থাকতে পারে না।
বেশ তো, তাহলে আর কেন দোয়াদরুদ করা! আল্লা যদি এখন জিব্রাইল পাঠায় তো ওনাকে নিয়ে যাবেই। আবার ক’দিন পরে হলেও নিয়ে যাবেই, তা দোয়া-দরুদের প্রয়োজনটা কি? দোয়াদরুদ যদি আল্লা কবুল করে তবে তো তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করা হবে! অর্থাৎ তিনি হয়তো এখনই ওনাকে নিতে জিব্রাইল পাঠিয়েছে কিন্তু ডাক্তারগণ তার নাকেমুখে কি যে ঢুকিয়ে রেখেছে জিব্রাইল তা চিনেই না। তাই জিব্রাইল কেন স্বয়ং খোদারও সাধ্য নেই তা খুলে ওকে নিয়ে যায়! সেদিন তোমাকে একটি সিনেমা দেখিয়েছিলাম মনে আছে?
কোন সিনেমা?
ওই যে ভানু, আজ্ঞে ঢাকার ভানুর সিনেমা, “যমালয়ে জীবন্ত মানুষ।”
হ্যাঁ। ওটা তো হিন্দুদের যমালয় নিয়ে গাজাখোরি সিনেমা।
বললাম, ওটা হিন্দুদের যমালয় হোক আর মুসলমানের জিব্রাইয়ালয় হোক কথা কিন্তু একই।
কিভাবে?
বললাম, শুধু হিন্দুদের যমালয় নয়; তুলনা করলে হিন্দু ধর্মের প্রায় পুরোটাই অনুকরণ-অনুসরণ করেই পৃথিবীর প্রায় সব ধর্ম নিজেদের স্বর্গ বা বেহেশ্ত, নরক বা দোযখ অথবা অন্যান্য প্রথাগুলো সাজিয়েছে। যেমন, হিন্দুরা প্রণাম করে মুসলমানেরা সেজদা দেয়, হিন্দুদের স্বর্গের সুখের বর্ণনা আর মুসলমানের বেহেশতের সুখের বর্ণনা প্রায় একই। তবে মুসলমানরা আরেকটু বাড়িয়ে সেখানে ডাগর আঁখির শত-সহস্র হুরপরী রেখেছে পুরুষের ভোগের জন্য কিন্তু নারীদের ভোগের জন্য তা নেই। নারীরা হয়তো সেখানেও সতীন নিয়ে জ্বলতেই থাকবে। তাদের ইচ্ছার কোন মূল্য তারা সেখানেও পাবে না। এ প্রসঙ্গে আমার এক ব্যক্তির কথা মনে পড়ছে। তার মুখের কথা, জানি না সত্য কিনা, সে বানিয়ে বলছিল। তিনি নাকি এক হুজুরকে প্রশ্ন করেছিল, হুজুর বেহেশতে কি বিয়ে আছে? উত্তরে হুজুর নাউজিবিল্লাহ, নাউজিবিল্লাহ… করতে করত বললো, না। তিনি এরপর বলেছিলেন, তাহলে সেখানে গিয়ে পুরুষেরা যে সত্তর হাজার হুরপরী, গেলমাল (কচি কচি সুন্দর চেহারার বালক) পাবে তাদের সাথে তো সেক্স করবে, তাহলে বেহেশতটা কি বেশ্যাখানা নয়? এরপর হুজুর তার উপর খুব রেগে গিয়ে কথা বন্ধ করে দিয়েছিল। যাকগে বলছিলাম, ধর্মীয় প্রথার ব্যাপারে। স্বর্গ-নরকে যাবার নিয়ম-কানুন প্রায় সব ধর্মেই এক। বিশেষ করে স্বর্গে যেতে হলে মুসলমানদের ভাষায় পুলসেরাত আর হিন্দুদের ভাষায় বৈতরণী পার হতে হয়। উভয়েই বিশ্বাস করে খোদা বা ভগবান আরশে বা সিংহাসনে বসে রাজার ন্যায় পৃথিবী শাসন করে, অথচ সে নাকি নিরাকার! যে নিরাকার তার সিংহাসনের কি প্রয়োজন? খোদা বা ভগবানের সকলেরই উজির-নাজিরের ন্যায় স্বর্গদূত বা ফেরেশতা আছে, তাদের একেকজনের দায়িত্বও ভাগ করা আছে, যেমন যমদূত বা জিব্রাইল! হিন্দু-খ্রীস্টানে উপবাস করে, মুসলমানে রোজা রাখে, হিন্দু বলিদান করে, মুসলমানে কোরবাণী দেয়। মুসলমানে মাজার জিয়ারত করে, হিন্দুরা কবর-পূঁজা করে। পীর-দরবেশ, সাধু ইত্যাদিতে সকলের বিশ্বাসই এক ও অভিন্ন। তাদের অলৌকিক ক্ষমতায় হিন্দু-মুসলমান সব একই বিশ্বাস পোষণ করে। সব ধর্মই শয়তানে বিশ্বাসী, শয়তান ছাড়া ধর্ম হতে পারে না। শয়তান নাকি খোদার সৃষ্টি, আমার প্রশ্ন কেন সে শয়তান সৃষ্টি করেছিলো, তাহলে কি করে বলি তার ইচ্ছা সৎ এবং মহৎ? খোদা ও ভগবান প্রশংসায় খুশি হয়। তাদের সৃষ্ট আদি একজন মানুষ আছে, মনু বা আদম। মক্কা-মদিনা, গয়া-কাশি-বৃন্দাবন এসব স্থানে গেলে পাপ মোচন হয় এসব প্রথাও একই সূত্রে গাঁথা। আত্মার অমরত্বেও সকলেই বিশ্বাস করে। ধর্মযুদ্ধেও সমানভাবে বিশ্বাসী হিন্দু-মুসলমান-ইহুদি-খ্রীস্টান… তবে মুসলমানেরা এর উপর জোর দেয় বেশি। মালা বা তসবিহ টিপি খোদা বা ভগবানের নাম জপা তো একই। হিন্দুরা তাদের ভাষায়, মুসলমানের নিজ ধর্মীয় ভাষায় ছালাম দেয়। হুরপরী, হুরেগেলমাল, গর্ন্ধবী, পিশাচ, ভূত… ইত্যাদিতে বিশ্বাস একই। আল্লা-খোদা, ভগবান-ঈশ্বর সকলেরই (বাংলাদেশের প্রতিটি অফিসের দালালদের ন্যায়) মিডিয়া আছে, যারা খোদার পুত্র বা সমকক্ষ এবং যাদের অবিশ্বাস করা, মানে কাফের হওয়া; এসব নবীদের সুপারিশ ছাড়া শেষবিচারে রেহাই নেই; এরা হলো, মুসা, ঈসা, মোহাম্মদ… হিন্দুদের অবশ্য অনেক দেবতা, পার্থক্য কিন্তু সামান্যই। মানুষ মরলে তার কাছে যায়, সে বিচার করে পাপ-পূণ্যের, বলিদান বা কোরবানীতে পাপমোচন, ধর্মীয় স্থান দর্শনে পাপমোচন…। ধর্মকে শক্তিশালী, ধর্মীয় উম্মাদনা বৃদ্ধি করতে বংশবৃদ্ধির উৎসাহ সব ধর্মেই আছে, তবে মুসলিম ধর্মে এবিষয়ে বদ্ধপরিকর; ফলে পৃথিবীতে যেসব দেশের মানুষ না খেয়ে মরে তারা প্রায় সবাই মুসলিম দেশেরই। মরার পরে চিতায় বা কবরে দেয়ার সময় পাদ্রি-হুজুর-ঠাকুর ডাকো তাদের পকেটেও কিছু দাও, আবার শ্রাদ্ধ-শান্তি বা চল্লিশা না করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা বেহেশত বা স্বর্গে যাবে না বলে বিরাট খরচ করো, এখানেও হুজুর-পাত্রি-ঠাকুরের পকেটে কিছু দাও। সবাই নিজ নিজ ধর্মের নবী-দেবতাদের সকলের উপরে এবং নিজ ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে। সবাই মনে করে স্বর্গ উপরদিকে আর নরক নিচেরদিকে বা সাগরতলে। হিন্দুদের ছুত-অচ্ছুত, মুসলমানের হারাম-হালাল। তবে আর যাই বলি না কেন, ধর্মীয় ঘৃণা সকলের মধ্যেই কমবেশি আছেই। প্রায় প্রতিটি ধর্মই বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়েও মারমারি-কাটাকাটি এবং রক্তপাত ঘটিয়ে চলছেই বিষেশ করে সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামের মধ্যেই এসব বেশি। সবাই বিশ্বাস করে ঝড়-বাদল, খরা, মহামারী, রোগবালাই হয় ভগবান বা খোদার অভিশাপে। সব ধর্মই ভৌতিক ধর্মীয় গল্পে বিশ্বাস করে, সকলেই একান্ত প্রিয়জন হলেও অন্ধকারে কবর বা চিতার নিকট যেতে ভয় পায়। ধর্মের নামে আত্মাহুতি দেওয়াকে গৌরব এবং নিশ্চিত বেহেশতে যাবার সহজ উপায় বলে বিশ্বাস করে সকলেই। ধর্মরাক্ষয় মানুষ হত্যা করলে পাপ হয় না এটাও সকলেই বিশ্বাস করে। এসবই তো একই প্রথা, রীতি-নীতি সর্বোপরি একই বিশ্বাস এতে ভিন্নতার কি আছে? ভিন্নতা যা আছে আমাদের প্রশ্নহীনতা, বোঝার ভুল এবং ভুল বোঝানো। একটু চিন্তা করো দেখ সব ভন্ডামো ছাড়া কিছু না। ধর্ম যদি সত্যি হবে তবে একই ধর্মের মধ্যে এতো বেশি মতভেদ কেন? খোদা নিজেও তো বিভন্ন কারণে প্রশ্নবিদ্ধ…।
ধমক দিয়ে স্ত্রী বললো, চুপ করো। খোদার কুদরতি নিয়ে আবার মশকরা! তোমার শাস্তি আছে।
তা জানি। তবে শাস্তি যদি কেউ দেয় তো দিবে বয়স এবং বিভিন্ন ভাইরাস; খোদা নয়। কারণ বয়স হলে মানুষ দুর্বল ও রোগাক্রান্ত হবেই। এখানে খোদা কিছুই করতে পারে না, তাহলে তার বিশ্বস্ত অনুসারী, সীমিত জ্ঞানের নবী-রাসূল এবং ধর্মজীবিরা অসুখে ভোগে কেন? মরে কেন? মুসা, ঈসা, মোহাম্মদ… এরা তাহলে মরলো কেন? এরা কি মরতে চেয়েছিলো? বাঁচার জন্য এরা কি আকুতি-মিনতি করে নাই?
না, তোমাকে নিয়ে আর পারা যাবে না, দিন-দিন তুমি আরো বেশি কাফের হয়ে যাচ্ছে।
বললাম, পারবে কেন, তোমরা তো ভরদুপুরে হাতড়ে বেড়াও। যা বাস্তব, যা দেখতে পাচ্ছো, তাতে বিশ্বাস না করে, বিশ্বাস করছো যা দেখা যায় না তাতে।

এরপর প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, আজকাল অনেক গাড়িতে আরবী এবং ইংরেজিতে একটি কথা দেখা যায়। আরবী জানি না, তবে ইংরেজি কিছুটা জানি বিধায় বুঝি যে, ইসলামিস্টরা কতোটা জঘন্য!
স্ত্রী গলা চড়িয়ে বললো, কিসে জঘন্য?
বললাম, ঢাকার প্রায় অর্ধেক গাড়িতেই ইংরেজিত লেখা:- “দেয়ার ইজ নো গড এক্সেপ্ট আল্লা, মোহাম্মদ ইজ হিজ প্রফেট” কথাটির অর্থ কী?
অর্থ তো ঠিকই আছে!
কি করে ঠিক আছে? আল্লা ছাড়া এদেশে কোন গড/ঈশ্বর নেই, মোহাম্মদই সব, ঈসা, মুসা এরা কেউ না, তাই না?
অকপটে বললো, থাকতে পারে, তবে তা মিথ্যা। আল্লা এবং মোহাম্মদই শ্রেষ্ঠ!
বললাম, তাহলে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা যারা আল্লাকে বিশ্বাস করে না, এমনকি ঘৃণা করে তাদেরকে আল্লা জন্ম দিয়েছে কেন?
বললো, তা আল্লা জানে।
তুমি কি বুঝতে পারো যে, এই কথাটির মধ্যে দিয়ে ইসলাম কিরূপ ঘৃণা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে?
ঘৃণা কিসের? ইসলামে যারা বিশ্বাস করে তারাই প্রকৃত মানুষ।
এটাও ঘৃণার কথা। তা কখনোই হতে পারে না। সব ধর্মেই ঘৃণার কথা থাকলে ইসলামে যেরূপ ঘৃণার কথা আছে তা অন্য ধর্মে নেই।
তুমি কি করে জানলে?
আমি জানি কারণ আমি কোরান পড়েছি। তুমি পড়ো নাই। যেমন পড়ে না এদেশের শতকরা ৯৯.৯৯ জনই। অনেক হুজুরও কোরান পড়ে না, পড়লেও তার অতি সহজ অর্থ বোঝে না। তারা তাদের পূর্বসূরীদের নিকট থেকে যা শিখে আসে তাই বলে এবং পকেট ভরে টাকা, পেট ভরে খাবার অতি সহজেই পেয়ে যায়, যথাযথ সম্মানও পায়, তাই বেশি কিছু শেখার দরকারও পড়ে না। কেবল কয়েকটি মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারলেই পাদ্রি-হুজুর-ঠাকুরদের দাপট দেখে কে! তোমার মতো এদেশের সকলেই শুনে (সুন্নি) মুসলমান, পড়ে না। আর পড়লেও তার মধ্যে যেসব জঘন্য কথা লেখা আছে তা তোমরা বিশ্বাস করো না।
তুমি কিন্তু মারাত্মক পাপের কথা বলছো! কারণ ওটা খোদার নিজের বাণী তুমি তার সমালোচনা করছো কোন সাহাসে? দোযখে গিয়ে যে যাতনা ভোগ করবে তা তুমি জানো?
জানি। তবে আমি ওসবে বিশ্বাস করি না তাই ওর ভয়ও নেই। বলোতো খোদা সব জানলে, সব করলে কেন খোদার দেশের অর্থাৎ মুসলিম দেশের শিশুরা কেন, কাফেরদের দেশের শিশুদের চেয়ে ক্ষুধায় বেশি কষ্ট পায়। ক্ষুধার জ্বালায় গরুর পাছা থেকে গোবর চেটে খায়? শকুনটিই বা কিসের আশায় আছে? অন্যদিকে গড/ঈশ্বরের দেশের শিশুরা পঞ্চামৃত খায়! বলতে পারো, ছবির এ শিশুগুলো কোন কোন দেশের? আল্লার দেশের না ঈশ্বরের/গডের দেশের? কোথায় এদের জন্মদাতা আল্লা?
উত্তর নেই।

.

fgh

যাহোক এরপর কথা না বাড়িয়ে কয়েকটি সত্য ঘটনার কথা বললাম।
বললাম, আমরা ধার্মিক হই কিন্তু মানুষ হই না। মানুষ হতে ধর্মের প্রয়োজন নেই, কিন্তু ধর্মের মানুষের প্রয়োজন আছে, মানুষ না থাকলে ধর্ম থাকে না। মানুষের সৃষ্ট এরূপ ধর্মই পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। যেমন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইরাক, ইরানসহ ইসলামি দেশগুলো। ইসলামের সম্পূর্ণটা যদি কেউ মান্য করে অর্থাৎ হাদিস বাদ দিলাম কোরানে যা লেখা তাই যদি ফলো করতে হয় তবে সে আর যাই থাকুক না কেন, মানুষ থাকতে পারবে না। তাকে হিংস্র হতেই হবে, অস্ত্র ধারণ করে খোদার রাজ্য বৃদ্ধি করার জন্য অন্য ধর্মালম্বীদের কোতল করতে হবে, ঘৃণা করতে হবে ইত্যাদি। মুসলমানরা যেমন বিশ্বাস করে, এখানে আল্লা ছাড়া অন্য কোন গড/ঈশ্বর থাকতে পারে না, থাকা উচিতও নয়, তদ্রপ অন্যরাও বিশ্বাস করে এখানে আল্লা নেই, আল্লার জিকির যারা করে তারা বিভ্রান্ত এবং তারা নরকে যাবেই। ধর্ম যে মানুষকে মানুষ করে না তার কয়েটি সত্য ঘটনা বলছি।


ক’দিন পরিচিত এক ব্যবসায়ী তার হাতের কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে বললো, তার গ্রামে একটি মসজিদের জন্য নিজেদের ৬ শতক জায়গা দান করেছেন। মসজিদ কমিটি পৌরসভা থেকে পাশকৃত নকশা অমান্য করে তার দানকৃত জায়গা ছাড়াও আরো ৩ শতক জায়গা জুড়ে মসজিদের ফাউন্ডেশন দিয়ে ফেলেছে। খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে হুজুরদের ডেকে প্রতিবাদ করলে তারা তা মানছে না, পরে তিনি থানায় মামলা দিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে কোর্টে মামলা করেন। মামলার রায় আসতে আসতে মসজিদের ফাউন্ডেশন শেষ। রায় তার পক্ষ থাকলেও জায়গা দখল করতে পারছে না। এমতাবস্থায় তিনি ঢাকা ফিরে তার পরিচিত এক এস.পি’র বাসায় উপঢৌকন নিয়ে গিয়ে তাকে দিয়ে ফোন করিয়ে আপাতত কাজ বন্ধ করতে পারলেও জায়গার দখল পাননি। তিনি এখন আরেকটি কেস করার পরিকল্পনা করছেন। পুলিশও মসজিদ কমিটির পক্ষ নিয়ে কাজ করছে, কারণ তা আল্লার ঘর বলে কথা। আল্লার ঘর কেউ ভাঙ্গতে পারে না এটাই বিধান। আল্লার ঘর ভগবান এবং ভগবানের ঘর আল্লায় ছাড়া ভাঙ্গতে পারে না, যেমন, ’৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছিল ভগবানের দল এবং সে দাঙ্গার ফলে এদেশের ভাঙ্গা হয়েছিলো বহু মন্দির। তখন এক বুড়োকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, নানা মন্দির কারা ভেঙ্গেছে? উত্তরে বুড়ো বলেছিলেন, ভগবানে ঘর খোদায় ভেঙ্গেছে! যাহোক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যদি এহেন কাজ করতে পারে, তাহলে জনসাধারণের ভরসার স্থান আর থাকলো কোথায়? খোদা কি এ জবরদখলে হুকুম দিয়েছিলো তার বান্দাদের? না দিলে মোল্লারা কি করে সাহস পেলো? দিলেই বা কি করে খোদা ন্যায়পরায়ণ থাকলো? খোদার হুকুম ছাড়া কি এ জবরদখল হয়েছে? মোল্লাদের বক্তব্য অনুসারে মোটেও না। তাহলে এখন আল্লাকে কেন কোর্টে ওঠানো যাবে না? আল্লা নিজের জন্য অন্যের জাগয়া দখল করেছে, অথচ ওই ব্যবসায়ী টাকা ছড়িয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কি প্রমাণিত হচ্ছে না যে আল্লার শক্তির চেয়ে টাকা অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে আল্লাও টাকা পছন্দ করে। টাকা ছাড়া তার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তাই অল মাইটি মানি আমাদের যা দিতে পারে, আল্লা তা পারে না। তাইতো আমরা আরো বেশি বেশি লোভী হয়ে যাচ্ছি।
প্রায় বিশ/পঁচিশ বছর পূর্বের কথা। আমার এক খ্রিস্টান সহকর্মী নিখোঁজ হলে, তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। দু’দিন পর পত্রিকার একটি খবর দেখে তার আত্মীয়-স্বজন, পুলিশসহ ১২নং মিরপুর গিয়ে একটি কবর খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে। তখন মিরপুরে এতো ঘনবসতি ছিল না। ১২ নম্বরের কোন এক কানাগলিতে তার এক বন্ধু তাকে কায়দা করে এনে ভাড়াকরা গুন্ডা দিয়ে খুন করে একটি বস্তির ঘরে ফেলে গেলে স্থানীয়রা তাকে সনাক্ত করার জন্য তার প্যান্ট খুলে দেখলো তার লিঙ্গ কাটা নেই, তাই তারা ধরে নিলো সে হিন্দু। অতঃপর ঠাকুর ডেকে হিন্দুশাস্ত্র মতে মুখে অগ্নিসংযোগ করে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনি হিন্দুদের ভগবানের ইচ্ছাতে তার নিকট যাবর মতো মন্ত্র সঙ্গে নিয়ে গেছেন! লাশ উদ্ধারের পর আবার আত্মীয়-স্বজনরা পাদ্রি ডেকে খ্রিস্টান ধর্মমতে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুনরায় কবর দেয়। আমার ওই সহকর্মী তাহলে কার কাছে গেলো, ভগবান নাকি ঈশ্বরের কাছে? হিন্দুর ভগবান কি খ্রিস্টানের ঈশ্বরের কাছে পরাজিত হলো?
আর একটি ঘটনা, এদশের নয় বিদেশের। এক ব্যক্তি হুজুর ডেকে তার মৃত ছেলেকে কোরানশরীফের বিধানমতে সমস্ত শেষকৃতানুষ্ঠান শেষে যখন কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন তার হিন্দু ধর্মালম্বী স্ত্রী বাধা দিলো। ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর অমতে কিছু করতে পারলেন না, তিনি ছেলের লাশ মায়ের হাতে সঁপে দিলে, মা ঠাকুর ডেকে হিন্দু শাস্ত্রমতে সৎকার করলো। তাহলে মুসলমানের আল্লা কি হিন্দুর ভগবানের নিকট পরাজিত হলো? আর ওই ছেলেটিই বা কার কাছে গেলো? ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় আমরা এতোটাই অন্ধ যে মনুষ্যত্ব বোধ এখানে কোনই কাজ করে না। প্রশ্ন হলো খোদা-ভগবান-গড এরা কি ভিন্ন ভিন্ন স্বত্ত্বা নাকি একই স্বত্ত্বা? অনেকে বলেন যে নামেই ডাকো না কেন তারা এক। কিন্তু তা কি করে? তাহলে কেন এমন বিদঘুটে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ তারা তাদের নবী-রাসূল, দেবতাদের মাধ্যমে প্রচার করে পৃথিবীতে এক মহা-রক্তারক্তি বাঁধিয়ে রেখেছে? আদৌ তারা কি মানুষের শান্তি চায়?
যাহোক, আমরা এমনই ধার্মিক যে মৃতদেরও এর হাত থেকে রেহাই নেই। আমাদের ধার্মিকতা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা দিন-দিনই ধার্মিক হচ্ছি কিন্তু মানবতা হারাচ্ছি। আমরা প্রতিনিয়তই অতিলোভী হচ্ছি, তাই-না দেখে আল্লা/ভগবানেরাও কি লোভী হচ্ছে? ধর্মও নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, কতো বেশি ধার্মিক হলে মানবতা ভুলুণ্ঠিত হবে না? কতো বেশি লোভী হলে তা সর্বোচ্চ লোভ? কতো বেশি ধনী হলে, সর্বোচ্চ ধনী? কতো বেশি হিংস্র হলে তা হিংস্রতা? কতো বেশি পশু হলে তা পশুত্ব? কতো ধন-সম্পদ লুটতরাজ যথেষ্ট, কতো গরিবের জায়গা-জমি দখল যথেষ্ট, কতো ক্ষদ্র ব্যবসায়ী গিলে খাওয়া যথেষ্ট? কতো বেশি লাভ পেলে তা সর্বোচ্চ লাভ! কতো বড় চুরি বিচারের কাঠগরায় ওঠার জন্য যথেষ্ট! কতোখানি প্রতারণা হলে, প্রতারণা বলা হবে না? রাষ্ট্রের কতো বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিকে, ক্ষতি বলা হয়? কতো বড় স্টকমার্কেট কেলেংকারিকে, কেলেংকারি বলা যাবে? কতো বেশি জালিয়াতি করলে তাকে জালিয়াত বলা যাবে? কিছুই বলা যাবে না, কারণ ক্ষমতাধরগণের হাতেই ধর্ম এবং রাষ্ট্রের সব চাবিকাঠি। সমাজে ক্ষমতাধর ধার্মিকরা, রাষ্ট্রে ক্ষমতাধর অসৎরা। তাই তারা যা করে তাতে সাধারণের সমর্থন বা মতামতের তোয়াক্কা করে না। ক্ষমতা না থাকলে ছেঁছড়া চোর হওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃত দুর্নীতিবাজ হওয়া যায় না। তাই তো আমরা সকলেই চাই ক্ষমতা, হোক তা ধর্মীয়, হোক তা রাষ্ট্রের ক্ষমতা।
জতিগতভাবে আমরা আর কতো ঘুষ খেলে তার পর্যাপ্ত হবে? কতো বেশি দুর্নীতি করলে তৃপ্ত হবো? দুর্নীতিতে কতোবার ফার্স্ট হলাম, কিন্তু তাতে তৃপ্ত নই, অতৃপ্ত আমরা এখন ছোঁব হিমালয়, এখন ভাঙ্গবো নিজেদের রেকর্ডখানি। দুর্নীতিই তো আরো ক্ষমতাবান হওয়ার সিঁড়ি। অতি-মুনাফা, অতি- ক্ষমতা, অতি-আমিত্ব, অতি-অহংকারই আজকালকার সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার গুণাবলী! কতো বড় নেতা, যথেষ্ট নেতা! কতোখানি মতা, যথেষ্ট ক্ষমতা! কতো গলাবাজি, যথেষ্ট গলাবাজি! কতো অভিনয়, যথেষ্ট অভিনয়? কতো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক যথেষ্ট! কতো বেশি জাহাজ-উড়োজাহাজ থাকলে যথেষ্ট! কতো বেশি ট্যাক্স ফাঁকি যথেষ্ট? কতো বেশি নকল টাকা, নকল সার্টিফিকেট তৈরি যথেষ্ট? কতো বেশি চেক জালিয়াতি যথেষ্ট? খাদ্যে কতো বেশি ভেজাল দেওয়া যথেষ্ট? কতো বিষ দিয়ে ফল, শাক-সব্জি, দুধ, মাছ… সংরণ যথেষ্ট? কতো বেশি ডাক্তারি ফি নিলে তা পর্যাপ্ত? কতো বেশি ভূমিদখল করলে, ভূমিদস্যুদের বিচার হবে? কতো বেশি গরিব চুষলে তা অন্যায়ের তালিকায় পড়বে? কতো বেশি বিখ্যাত হলে যথেষ্ট? কতো বেশি ক্ষমতা আকড়ে থাকা যথেষ্ট? কতো বেশি ধার্মিক হলে তা মনুষ্যত্ব নষ্ট করে না? কতো মিলিয়ন টাকা হলে তৃপ্ত হবো, কতো বিলিয়ন যথেষ্ট বিলিয়ন? এক জীবন পার করতে কতো বিলিয়নের প্রয়োজন? কতো বেশি টাকা হলে একজন মূর্খও সমাজের/রাষ্ট্রের/রাজনীতির নেতৃত্ব পায়? কতো টাকা হলে একজন মানুষ সুখী থাকবে, তৃপ্ত হবে? কতো বেশি টাকা হলে পরমায়ু কিনতে পারা যায়? কতো বেশি ক্ষমতাধর হলে তা যথেষ্ট, ধর্ম তার সীমানা নির্ধারণ করে দেয় নাই, তাই আমাদের লোভেরও সীমা নাই। ধর্মকে কেউ অপমান করলে তার মুন্ডুপাত না ঘটিয়ে ছাড়ে না যে জাতি, সে জাতির এ অধঃপতন কেন?

রাজনৈতিক দুর্বাত্তায়নের বিরুদ্ধে ধার্মিকরা একদমই চুপ কেন? প্রতিনিয়তই দেখা যায় ধর্মীয় ও ডানপন্থী দল এবং জনসাধারণ ধর্ম রায় চিৎকার করে, ধর্ম গেলো, ধর্ম খেলো বলে। কিন্তু নৈতিকতা যে কখন চলে গিয়ছে সে বিষয়ে কারো হুশ নেই। কারণ এটা ধার্মিকদের দেশ, মানবতার দেশ নয়! গান্ধীজির কথায়, “পৃথিবীতে নৈতিকতার চেয়ে বড় কোন ধর্ম নেই।” বাঙালির যে নৈতিকতা নেই তা নিয়ে কেউ চিৎকার না করলেও সংবিধান থেকে ধর্ম মোছা যাবে না, বরং পারলে আরো বেশি করে লাগাও, না হলে আমরা কিসের ধার্মিক। ধর্মরাষ্ট্র হলে লাভ সকলেরই, ধর্মের চাদরে সব ঢেকে রেখে লুটপাট অত্যন্ত সহজ। ওরা ধার্মিক বলেই নৈতিকতা বুঝে না, কারণ ধর্ম দিয়ে সব ঢাকা যায়। যেমন বিএনপি হৈ-চৈ বাধিয়েছে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার পথ ঠিক রাখার জন্য এতে সমর্থন দিচ্ছে জামায়াত। কিন্তু ধার্মিকদের দল জামায়াত-বিএনপি এরা কিন্তু একটি দিনও দুর্নীতি ধ্বংস হোক এ নিয়ে আন্দোলন করেনি, হরতাল ডাকেনি, কারণ তারাও যে দুর্নীতিবাজ। ক্ষমতায় থাকাকালে তারাও তে একই কথা বলেছে একই কাজ করেছে, আবারও ক্ষমতায় গিয়ে তা করবে। হাসিনাও বিরোধীদলে থাকাকালীন যা বলেছে, যা করেছে, খালেদাও তাই বলছে ও করছে। এদেশে ধার্মিকরা যেমন নৈতিকতা বিবর্জিত, তেমনি রাজনীতিবিদরাও। কার কতো বেশি কালো টাকা হলে নির্বাচনে নমিনেশন পাবে সেই চেষ্টায় ওরা উম্মাদ? শত মিথ্যাচার করলেও ওদের মিথ্যাবাদী বলা যাবে না। মন্ত্রী-এমপি’রা জঘন্য ভাষা ব্যবহার করলেও কিছু বলা যাবে না। লাঠিয়ালি করলে ওদের লাঠিয়াল বলা যাবে না। রাস্তাঘাট মনুষ্য চলাচলের অনুপোযোগী হলেও বলা যাবে না। গাড়ি দুর্ঘটনায় শত শত মরলেও প্রতিবাদ করা যাবে না। আর কতো নোংরামো করলে ওরা লজ্জা পাবে? হয়তো কখনো না, কারণ ওরাই তো সব নোংরার জন্মদাতা! কতো কদর্য, কুৎসিত, বেহায়াপানা করে ক্ষমতা যাওয়া যায় সে চেষ্টায় ওরা ব্যস্ত। জাহান্নামে যাক দেশের সাধারণ মানুষ ওতে ওদের কষ্ট নেই, লজ্জা নেই, ক্ষমতাই ওদের সব। প্রশ্ন করলে, প্রতিবাদ করলে, টুটি চেপে ধরে জেলে পুরবে, মিথ্যা মামলা, হামলা করে ডিজিটাল চুলায় জ্বালিয়ে দিবে। এই তো সোনার বাংলার ধার্মিক রাজনীতিবিদ!

এদেশে একজন আন্না খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, সিনেমার একজন প্রখ্যাত অভিনেতা সেদিন হুমকি দিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশ থেকে ধরে এনে ফাঁসির ব্যবস্থা না করলে তিনি ওইসব দেশ, যেসব দেশে খুনিরা পালিয়ে আছে, সেইসব দেশের দূতাবাসের সামনে গিয়ে আমরণ অনশন করবেন। বঙ্গবন্ধুর খুনির ফাঁসি হোক সেটা আমিও চাই। কারণ এরূপ নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে যারা বুক ফুলিয়ে গর্ব করেছে তাদের বিচার হওয়া অবশ্যই উচিত। কিন্তু এদেশে কি একজন দেশপ্রেমিকও নেই যিনি আন্নার ন্যায় এমন বিশাল একটি কাজ করতে পারেন। আসলে আমরা কঠিন কাজ করতে চাই না। কারণ আমাদের দেশের দুর্নীতর শিকড় গত ৪০ বছরে এতো গভীরে গিয়েছে যে শিকড় উপড়ে ফেলার জন্য ইস্পাত কঠিন নেতা ও সর্বোপরি দেশপ্রেমিকের প্রচণ্ড অভাব। তাই আমরা সহজ কাজ করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যস্ত। একজন ব্যারিস্টার বলেছেন, আন্না হতে তিনি রাজি কিন্তু এতে জনগণের সমর্থন পাওয়া যাবে কিনা, সেটাই প্রশ্ন। ওনার সাথে আমি একমত। কারণ জনগণ হাসিনা-খালেদায় বিভক্ত। ভরদুপুরে হাসিনা বা খালেদা যদি বলে এখন গভীর রাত তার অনুসারীরাও তাই বলে। এ জাতির বড়ো সমস্যা অন্ধ আনুগত্য। আমাদের অন্ধ আনুগত্য যেমনি ধর্মের প্রতি তেমনি নেতা-নেত্রীর প্রতি। আমরা মনে করি ওমুক নেতা-নেত্রী না হলে দেশ অচল হয়ে যাবে। এসব অন্ধ ভক্তি থেকে এ জাতি কতোদিনে মুক্তি পাবে তা বলা যাচ্ছে না, তবে এর হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য মুক্তচিন্তার বিকল্প নেই। অথচ বিজ্ঞ শ্রেণী যেমন, আইনজীবি, পেশাজীবি, সাংবাদিকরাও আজ অন্ধ ভক্তির দাসে পরিণত হয়েছে। তাদের উগ্র কথাবার্তা, আচার-আরচণ দেখে মনে হচ্ছে দেশপ্রেম বলতে তাদের মধ্যে কিছু নেই, আছে শুধু স্বার্থপরতা। যে নেত্রী যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তার স্তুতি গান করাই যেন বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, টিভি চ্যানেলগুলোর একমাত্র কাজ। এর কারণ সেখানে তাদের স্বার্থ জড়িত। রোড এক্সিডেন্টে সাধারণ মানুষ কাতারে কাতারে মরলেও দেশে তেমন একটা উচ্চবাচ্য হয় না। যখন ভিআইপ বা বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু হয় যেমন, মিশুক-মাসুদসহ কয়েকজন অকালে ঝরে গেলেন, আমরা সকলেই ব্যথিত। এরূপ মৃত্যু কারো কাম্য নয়, কিন্তু সারা বাংলাদেশটাই তো মৃত্যুফাঁদ। এর কোথাও একবিন্দু নিরাপদ স্থানে আছে কি? মিশুক-মাসুদরা বিশিষ্ট বলেই তাদের অকাল মৃত্যু নিয়ে যেমন হৈ-চৈ হচ্ছে তেমন হৈ-চৈ সাধারণদের মৃত্যুর বেলায় হয় না কেন? (দয়া করে আমার প্রশ্নটি অন্য অর্থে ব্যবহার করবেন না)। প্রতিটি জীবনই তো মূল্যবান, প্রতিটি মায়ের সন্তানই তো সন্তান। তাহলে চট্টগ্রামে একট্রাক শিশু মরলে এতো হৈ-চৈ কোথায় ছিল? এদেশের বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিকরা… মিশুক-মাসুদের মৃত্যু নিয়ে যেভাবে কোমর বেঁধে নেমেছে, এর আগে যদি নামাতেন তাহালে হয়তো আমরা এদের অকালে হারাতাম না। এরপরও হবে না যদি এ আন্দোলন কোনভাবে থেমে যায়, সরকার চাইবে এবং চেষ্টাও করবে যেন থেমে যায়, কারণ এদেশের বিবেক যারা তারাও এখন হাটে বিকায়। যোগাযোগ মন্ত্রীকে নিয়ে সংসদে শেখ হাসিনার বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এ নিয়ে ক’টি বুদ্ধিজীবি বিশেষ করে বামদলের নেতারা প্রতিবাদ জনিয়েছে আমার জানা নেই। এরূপ বক্তব্য শুনে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুরা সংসদে মহাজোটের বিড়াল হয়ে কেন যে থাকে তাও প্রশ্নবিদ্ধ। জাতি কোথায় যাচ্ছে, দিক নির্দেশনা দেবার জন্য কোন আন্না কি উঠে দাঁড়াতে পারবে না এদেশে? নাকি আমরা সকলেই দ্ই পরিবারের দালাল-বাটপারে পরিণত হয়ে আজীবন কাটাবো?
হিন্দু কাফেরদের দেশে যদি মহাত্মা গান্ধী এবং আন্না হাজারে, পশ্চিমা কাফেরদের দেশে যদি মার্টিন লুথার কিং এবং লেনসন মেন্ডেলা থাকতে পারে, তাহলে মুসলমান ধার্মিকদের দেশে থাকবে না কেন? তাহলে কি আমরা সব মুসলমানরাই অসৎ, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ? দুর্নীতি নিয়ে কোন মুসলমান, মাওলানা, হুজুর, পীর, দরবেশ রাস্তায় নেমে কোনপ্রকার জোরালো প্রতিবাদ করেছে বলে কেউ দেখেনেছন বা শুনেছেন? অথচ ধর্ম নিয়ে কুটুক্তি করলে, সংবিধানে তা যুক্ত না করলে, ইসলামিক দলগুলো গর্জে ওঠে। মেয়েদের সমান অধিকারের প্রশ্নে ইসলামি দলগুলো যা করলো তার যদি সিকিভাগও দুর্নীতি রোধের জন্য করতো তাহালেও বুঝতাম তারা অন্তত ভন্ড না। অতএব পশ্চিমা কাফের রিচার্ড রাইটের কথাই শতভাগ সত্য, “দিনের আলোয় ওরা অন্ধকারের সাক্ষাৎ পায়; ভর দুপুরে হাতড়ে বেড়ায়, যেন গভীর রাত।”

কফিল কাঙ্গাল, আগৈলঝাড়া, বরিশাল।