আধুনিক জীববিজ্ঞানের অগ্রগতি এখন জীবাণু অস্ত্রের সম্ভাব্য উৎপাদন যে কোন ইচ্ছুক পক্ষের সাধ্যের নাগালে নিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয় , সেই সাথে জীবাণু অস্ত্রের কার্যকারিতাকে অতীতের চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে পারলে মাত্র কয়েক কিলোগ্রাম বোটালিনামের (Botulinum toxin) মত নিউরোটক্সিন দিয়ে সমগ্র মানব জাতিকে নিশ্চিন্হ করে দেয়া সম্ভব যা কিনা একটা ছোট খাটো ল্যাবে উৎপাদন করা সম্ভব। সমসাময়িক জীববিজ্ঞানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন একটা জীবাণুতে প্রয়োজনীয় জীনগত পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন এমনভাবে করা সম্ভব যে প্রচলিত প্রতিরোধক কিংবা প্রতিষেধক সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, কোন একটা বিশেষ ভাইরাসকে একটা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর জেনোটাইপ লক্ষ্য করে এমনভাবে বানানো যেতে পারে যাতে করে কেবলমাত্র ঐ জাতিগোষ্ঠীর মানুষই আক্রান্ত হয়।ব্যাকটেরিয়ার বেলায় যক্ষ্মা (Tubercle Bacillus) অথবা এনথ্রাক্সের ( Bacillus Anthracis) প্রতিরোধক টিকা নেয়া থাকলেও নিজেদের নিরাপদ মনে করার কোন কারণ আমাদের নেই কারণ ল্যাবে এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর জীনে নির্দিষ্ট পরিব্যক্তি ঘটিয়ে টিকা প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াবানানো কঠিন কোন কাজ নয়। জীনগত পরিব্যক্তি এখন কেবলমাত্র প্রকৃতির একান্ত খেয়াল নয় , একজন জীববিজ্ঞানী চাইলেই সেটা করতে পারেন । জৈব অস্ত্র কনভেনশন (BWC) ১৯৭২ –এ সবরকম জৈব অস্ত্রের ব্যবহার, উৎপাদন এবং মজুদ করন নিষিদ্ধ করা হয় এবং এই কনভেনশন স্বাক্ষরের ১০ বছরের মধ্যে সকল স্বাক্ষরদানকারী পক্ষকে বিদ্যমান অস্ত্রের মজুদ এবং উৎপাদনকারী অবকাঠামো ধ্বংস করতে বলা হয়। কিভাবে এই চুক্তি যথার্থভাবে কার্যকর এবং বলবৎ করা হবে তা এখন পর্যন্ত একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টিকে জৈব অস্ত্রের ব্যবহার এবং উৎপাদন করা হতে বিরত রাখা অত্যন্ত কঠিন বিষয় কেননা তারা কোন চুক্তি স্বাক্ষর করে না এবং সেই সাথে চুক্তির শর্তাবলী মানতেও তারা বাধ্য নয়। অতএব , ভবিষ্যতে কোন রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রহীন পক্ষ দ্বারা জীবাণু তথা জেনেটিক অস্ত্রের ব্যবহার একটা বাস্তব এবং সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করার দাবী রাখে।
ব্যবহারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
জৈব রাসায়নিক পদার্থবাহী জীবাণু অস্ত্র বিশেষ লক্ষ্য অর্জনে ব্যবহৃত হতে পারে । লক্ষ্যস্থল এবং তার আশে পাশের এলাকাসহ সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থলের অধিবাসীদের উপর বিরূপ শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তার করা যার মধ্যে অন্যতম। জৈব রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা সংঘটিত প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষনিক কিংবা বিলম্বিত হতে পারে। একটা সম্পূর্ণ এলাকা দীর্ঘমেয়াদী আক্রান্ত করতে যেখানে অধিক পরিমাণে জৈব কম্পাউন্ড প্রয়োজন , অতর্কিত আক্রমণে স্বল্প পরিমাণ কম্পাউন্ড পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করলে আরও বেশী মরণঘাতী ফলাফল পাওয়া সম্ভব।এছাড়া জীবাণুরা নিজেরাই দ্রুতহারে বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। জীবাণু অস্ত্র দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পরে উপসর্গসমূহ বিশ্লেষণ করে কারণ সনাক্ত করা অর্থাৎ জীবাণু অস্ত্রের আক্রমণ যে হয়েছে সেটা সনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হওয়ায় তা আক্রমণকারী পক্ষকে বাড়তি কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। অত্যাধুনিক নিক্ষেপণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে হাতে তৈরী বিবিধ ডিভাইস (improvised devices) এক্ষেত্রে রাষ্ট্র অথবা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে পারে।
জৈব অস্ত্র কি ?
জৈব অস্ত্রে থাকে জৈব উপাদান যা মানুষ , জীবজন্তু এবং উদ্ভিদদের রোগাক্রান্ত করে তোলে। প্রচলিত জৈব উপাদানসমূহকে প্যাথোজেন(pathogens), টক্সিন (toxins), জৈবনিয়ন্ত্রনকারী(bioregulators) ও প্রিয়ন (prions) –এই চার শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।
১। প্যাথোজেন(pathogens) : প্যাথোজেন রোগাক্রান্তকারী অণুজীব যেমন , ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস কিংবা রিকেটসিয়া । প্রকৃতিতে বিদ্যমান এবং বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তিসহ কৃত্রিম রিকম্বিনান্ট ডিএনএ তথা আধুনিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি দ্বারা মর্জিমাফিক পরিবর্তনযোগ্য।
২। টক্সিন (toxins : এক ধরনের জৈব বিষ যা জীবদেহের (অণুজীব, সাপ, কীট, মাকড়সা, সামুদ্রিক জীব, উদ্ভিদ ইত্যাদি) স্বাভাবিক মেটাবোলিজমের ফলশ্রুতিতে নির্গত হয়। কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপাদনযোগ্য। টক্সিন দুই রকমের:
ক) সাইটোটক্সিন (Cytotoxins) : কোষ বিধ্বংসী , যেমন রিসিন (ricin)
খ) নিউরোটক্সিন (Neurotoxins) : কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিকল কারী , যেমন বোটালিনাম টক্সিন।
৩। জৈবনিয়ন্ত্রনকারী(bioregulators) : একধরনের জৈবরাসায়নিক কম্পাউন্ড যা কোষ পর্যায়ের কার্যক্রম এবং দেহের সক্রিয় উপাদান সমূহ যেমন এনজাইম ও ক্যাটালিস্টদের নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক দেহে স্বল্প পরিমাণে বিদ্যমান হলেও অধিক মাত্রায় রয়েছে নিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা। যেমন , সাবস্ট্যান্স পি (Substance P)।
৪। প্রিয়ন (prions ) : এক ধরনের প্রোটিন যা মস্তিষ্কের কোষে প্রবেশ করে সেখানকার প্রোটিনকে প্রিয়নে রূপান্তর করে যার ফলে একসময় মস্তিষ্কের আক্রান্ত কোষের মৃত্যু ঘটে এবং মস্তিষ্কের টিস্যুতে প্রিয়ন ছড়িয়ে দেয়। এই প্রিয়নগুলো মস্তিষ্কের অন্যান্য কোষগুলো আক্রান্ত করে ধ্বংস করে দেয় যার ফলশ্রুতিতে মৃত্যু অনিবার্য। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯৬ সালে ব্রিটেনের ম্যাড কাউ (mad cow epidemic) মহামারীর কথা বলা যেতে পারে যা মানব দেহে সংক্রমিত হয়ে ক্রয়েটসফেল্ট ইয়াকব বা Creutzfeldt–Jakob disease রোগ সৃষ্টি করে ।
ভাইরাস | ব্যাকটেরিয়া | টক্সিন | রিকেটসিয়া |
Chikungunya Dengue Ebola Monkeypox Variola (গুটিবসন্ত) |
Bacillus Anthracis (এনথ্রাক্স) Salmonella Typhi (টাইফয়েড জ্বর) Vibrio Cholerae (কলেরা) Yersinia Pestis (প্লেগ) |
Botulinum Toxins Conotoxin Ricin Saxitoxin Verotoxin |
Coxiella Burnetii Rickettsia Quintana Rickettsia Prowasecki Rickettsia Rickettsii |
সম্ভাব্য ব্যবহার
১।মানববিধ্বংসী : জৈব এন্টি পার্সোনেল উপাদান সরাসরি মানব দেহে ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে তাৎক্ষনিক মৃত্যু এবং বিকলাঙ্গতা অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে যেসকল উপাদান ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস , রিকেটসিয়া , বায়োরেগুলেটর এবং টক্সিন।
২।পশুবিধ্বংসী : এগুলো গবাদি পশু সম্পদ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বানানো হয়। বিশেষ রোগ ছড়িয়ে একটা দেশের গবাদি পশু নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে সেই দেশের খাদ্য সরবরাহে ক্ষতিসাধন এবং অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোই এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য।
৩। শষ্যবিধ্বংসী : একটা দেশের উদ্ভিদ এবং কৃষিকাজে সংশ্লিষ্ট চারা গাছে রোগের বিস্তার ঘটিয়ে খাদ্য সংকট সৃষ্টি এবং অর্থনীতিকে পঙ্গু করা এখানে মূল উদ্দেশ্য যাতে করে জনগনের বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধাচরন করার ক্ষমতা ব্যপকভাবে হ্রাস পায়।
৪। বস্তুবিধ্বংসী : বস্ত্র , চামড়া, রাবার ইত্যদি বিনষ্টকারী ফুঙ্গি (fungi) ছড়িয়ে দিয়ে মজুদ নষ্ট করে অর্থনীতিতে ব্যপক ক্ষতিসাধন করা হয়। কিছু চরমজীবি ব্যাকটেরিয়া পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ হতে শক্তি সন্চয় করে এবং এরা জ্বালানী সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দিতে পারে।
কার্যকারিতা ও স্হায়িত্বকাল
জৈব অস্ত্রে ব্যবহৃত জৈব উপাদান সমুহের কার্যকারীতা এবং স্হায়িত্বকাল নির্ভর করে পরিবেশ ও সেই পরিবেশে ঐ জৈব উপাদান সমুহের টিকে থাকার ক্ষমতার উপর। অতিবেগুনী রস্মির(UV) বিকিরণ , আপেক্ষিক আদ্রতা , বায়ুর বেগ এবং তাপমাত্রা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জৈব উপাদানসমূহের কার্যকারিতা ও স্হায়ীত্বকাল বৃদ্ধি করা সম্ভব।
(চলবে)
তথ্যসূত্র :
DoD- Chemical and Biological Defense Program Annual Report to Congress, Vol. I, April 2002.
Office of the Secretary of Defense, Proliferation: Threat and Response, US Government
Printing Office, January 2001.
Joint Publication 1-02, Department of Defense Dictionary of Military and Associated Terms,
as amended through 05 June 2003.
Brigadier General (BG) Russ Zajtchuck, et al. (eds.), Textbook of Military Medicine:
Medical Aspects of Chemical and Biological Warfare, Office of the Surgeon General, 1997,
Chapter 11, “Incapacitating Agents.”
Anna Johnson-Winegar, PhD, Assistant to the Secretary of Defense, Memorandum,
Subject: Interim Certification of Chemical and Biological Data, December 27, 2001.
Office of the US President, The Biological and Chemical Warfare Threat, 1999.
Centers for Disease Control and Prevention (CDC), Office of Health and Safety (OHS),
“BMBL Section VII: Agent Summary Statements, Section VII-D: Prions,” 17 June 1999,
http://www.cdc.gov/OD/OHS/BIOSFTY/bmb14/bmbl4s7d.htm, 19 August 2003.
Ruth Levy Guyer, “Research in the News: Prions: Puzzling Infectious Proteins,”
http://scienceeducation.
nih.gov/nihHTML/ose/snapshots/multimedia/ritn/prions/prions1.html, 8 August 2003.
AFMAN 10-2602, Nuclear, Biological, Chemical, and Conventional (NBCC) Defense
Operations and Standards (Operations), 1 December 2002.
USDA, APHIS, “Protocol for Military Clearance,” 18 June 2001.
BG Russ Zajtchuk, et al. (eds.), Textbook of Military Medicine: Medical Aspects of
Chemical and Biological Warfare, Office of the Surgeon General, 1997, Chapter 21, “The
Biological Warfare Threat.”
TM 3-216/AFM 355-6, Technical Aspects of Biological Defense, 12 January 1971.
BG Russ Zajtchuk, et al. (eds.), Textbook of Military Medicine: Medical Aspects of
Chemical and Biological Warfare, Office of the Surgeon General, 1997, Chapter 20, “Use of
Biological Weapons.”
খুব সুন্দর একটি পোস্ট।
সম্ভাব্য ব্যবহার গুলো দেখি সব বিধ্বংসী। মানব কল্যাণে কি এর কোন ব্যবহার আছে?
বানায়াছ কত অস্ত্র তুমি
নিজেরে মারিবে বলে??
জীবানু অস্ত্র বিষয়ে অনেক তথ্য জানলাম। খুব ভাল লেগেছে লেখাটা।
@শাখা নির্ভানা,
ধন্যবাদ । আগামী পর্বে আমি বিস্তারিতভাবে বিষয়টার আরো গভীরে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ।
সংশপ্তকের এ লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ। জৈব অস্ত্র আনবিক বোমার চেয়েও কুশলী, ঢের বড় মরণাস্ত্র হতে চলেছে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের উপায়ও সার্বিকভাবে আমাদের অজানা। এ লেখাগুলো পড়লে আমিও অসহায় হয়ে ভাবি – এই মানব সমাজ শেষপর্যন্ত টিকে থাকবে তো? সাদ্দাম, বিন লাদেনদের কথা না হয় বাদ দেই – সামান্য বন্দুক হাতে পেলেই একজন স্কুলছাত্র শুটিং সুরু করে – এ আমেরিকায় হর হামেশাই দেখা যায়, সেখানে জৈবঅস্ত্র ব্যবহারের জ্ঞান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছালেও কেউ এর অপব্যাবহার করবে বা – এটা খুবই অলৌকিক ব্যাপার হবে। এই অস্বস্তিটা নিয়েই আমাদের হয়ত আগামী দিনগুলোর পথ চলতে হবে আমাদের সকলের।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ। প্রথমেই বলতে হয় যে , জৈব অস্ত্রের যাবতীয় উপকরণ আমাদের সবার আশে পাশেই আছে। প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশিই হবে। কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন লোকেরও অভাব নেই। একটা নিউক্লিয়ার বোমা বানাতে যেখানে কয়েক বছর সময়সহ একটা সম্পূর্ণ রিঅ্যাক্টরের দরকার সেখানে একটা মাঝারি থেকে ছোট মাপের ল্যাবে এক সপ্তাহে কোটি কোটি মানুষ মারার জৈব উপাদান বানানো যায়। শুধু এক শিশি পরিমান সে রকম কিছু ঢাকার মত জনবহুল একটা শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ছেড়ে দিলে কি ঘটতে পারে ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে। অথচ এসব নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই।
(Y)
খুবই ভয়ংকর কথা। আমি ভয় পাই এজন্য জে, মানব জাতি কবে যেন নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে। বেশি ভয় লাদেন ভাইদের নিয়ে।
@বাসার,
আমারও একই ভয় ।
পড়লাম পোস্ট, বরাবরের মতোই চমতকার। এই কথাটা খুবই ভালো লাগলো যে আপনি বিজ্ঞানের সাথে সাহিত্য মিশাতে নারাজ, আমিও তাই। আমি মনে করি পপবিজ্ঞানের অবজেক্টিভ হওয়া উচিত মানবমানসে ‘Science is Sexy’ এই ম্যাসেজটা পাস করার মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানে আগ্রহী করিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞানীর যোগান নিশ্চিত করা, কখনই লেই পিপলদের জন্য কাটিং এজ বিজ্ঞানের উন্মোচনগুলো আধো আধো বোলে কমিউনিকেট করে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের আবছা আবছা ভাবে অবগত রাখা নয়। লোর্ড রবার্ট উইন্সটনের একটা কথা আছে-
এই ব্যাপারটা কিন্তু বেশ গুরুত্বপুর্ণ, একটি জাতি চলে বিজ্ঞানে তার (অথবা তার আশেপাশের অন্যান্য জাতির) বৈজ্ঞানিক আগ্রগতি দিয়ে। মানুষ এটা পছন্দ করুক আর নাই-ই করুক তারা তাদের ওয়ালেট থেকে ছেঁকে ছেঁকে পেনী বের করে জাতির বিজ্ঞান ফান্ড করছে। তাই তাদেরকে কিছুটা বিজ্ঞান অবশ্যই জানা উচিত, এইটা তাদের সিভিক রেস্পন্সিব্লিটি। পপবিজ্ঞান আধো আধো বোলে বিজ্ঞান কমিউনিকেট করে জনমানসে সত্যকারের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিষ্টাই ডিফিকাল্ট করে তুলছে। বিজ্ঞান সহজ নয়, বিজ্ঞান কঠিন জটিল এবং এইটা করতে হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনী করা লাগে; তারপরও বিজ্ঞান মহত; বাস্তবতাকে বোঝার স্ট্রাগল, বাস্তবতাকে মডেল করা প্রেডিক্ট করার স্ট্রাগল মহত না হলে আর মহত কি?? সো, এই মহত্বের স্বাদ যদি তুমি পেতে চাও তাহলে কঠিন পথেই তোমাকে সেটা পেতে হবে, এই গন্তব্যে পৌছানোর কোন শর্টকাট নেই। এবং প্রত্যেকের এই মহত্বের স্বাদলোভী হওয়া আমাদের মানবপ্রজাতির জন্যও কিন্তু গুরুত্ব এবং তাতপর্যপুর্ণ যেটা কিনা লোর্ড রবার্ট উইনস্টন বললেন, যে- একটি আলোকিত সমাজ গড়া সম্ভব কেবলমাত্র একটি বিজ্ঞান শিক্ষিত সমাজ গড়ার মধ্য দিয়ে।।
@আল্লাচালাইনা,
ব্যস্ততার মাঝেও সময় নিয়ে আমার লেখা পড়ে যে যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করলেন , এতেই আমার পরিশ্রম সার্থক । কামনা করি সবাই আপনার মন্তব্যের নির্যাসটুকু উপলব্ধি করতে সক্ষম হোক।
লেখাটার আগামী পর্বে জৈব অস্ত্রের সার্বিক modus operandi নিয়ে আলোচনা করবো বলে আশা করছি।
লেখাটা ভাল হয়েছে পরবর্তিলেখার অপেক্ষায় থাকলাম, তবে যত সহজ ভাবে আপনি বললেন অত সহজ নয় ব্যাপারটা, কেউ চাইলেই জীবনু অস্ত্র বানাতে পারে না, তার জন্য অনেক কিছু প্রয়োজন এবং লোক চক্ষুর অন্তরালে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করা সহজ নয় এবং যা খুবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।সুধু বিবেকহীন মানুষই কাজটা করতে পারবে।
মানুষ মানুষের জন্য কাজ করুক তাকে হত্যা করার জন্য নয় এই আমাদের প্রত্যাশা।
@সীমান্ত ঈগল,
এমন কামনা আমাদের সবার। পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
(Y)
ভাল লাগছে, চলুক।
@সৈকত চৌধুরী,
জৈব অস্ত্রের সন্ত্রাসের উপর ভিত্তি করে একটা মুভি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর । ছবিটির নাম ‘কনটেইজন’ (Contagion) । ছবিটা সুযোগ পেলে দেখতে পারেন। নিচে ছবিটার ট্রেইলার দিলাম :
httpv://www.youtube.com/watch?v=4sYSyuuLk5g
(Y)
@রৌরব,
(D)
খুবি ইন্টারেস্টিং পোষ্ট। আচ্ছা আপনি যে সব জীবাণু অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের কথা বলেছেন তা কি এখন পর্যন্ত কোন একটি দেশ অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে? আমার মনে এই প্রশ্ন আসবার কারণ আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরানের আহমেদিনেজাদের একটি অভিযোগ।
আমি জানি হাইটেক যন্ত্র ব্যবহার করে আবহাওয়ার পরিবর্তন আর জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার এক না। তারপরও জানতে চাই-এখন পর্যন্ত কোন একটি দেশ অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে জীবাণু অস্ত্র ব্যবহার করেছে কি?
@জাহিদ রাসেল,
করেছে , তবে সেগুলোর সাথে তাদের সরাসরি জড়িত করার মত অকাট্য প্রমান পাবলিক ডোমেইনে পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষরাই জানেন যে কত ভয়াবহ তা হতে পারে।
অন্যদের কথা বলতে পারবো না, তবে আমি আপনার বিজ্ঞানভিত্তিক লেখার জন্য অপেক্ষা করি… যে কারণে আপনার ব্যক্তিগত ব্লগ দুটোর মধ্যে এখানে নোঙ্গর বেশী ভালো লাগে। অনেক ব্যস্ততায় থাকার কারণে পড়ে শেষ করতে পারিনি অনেক লেখাই, সময় পাচ্ছিনা নিজের শুরু করা সিরিজগুলো চালিয়ে যাবার। তবে আশা করছি, হারিয়ে যাবো না বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির জগত থেকে। 🙂
একটা সাজেশন, পাঠ্যবইয়ের ভাষায় না লিখে সহজ বোধ্য কথাচ্ছলে লিখলে পড়ার আগ্রহ তৈরী হয়। অধিকাংশ মানুষ বই পড়ার জন্য সময় রাখে না, কিন্তু গল্প শুনতে ভালোবাসে। আমিও বাসি। 🙂
আমার প্রিয় একজন বিজ্ঞান লেখকের ঠিকানা দিয়ে যাই, যার কথায় কথায় অনুজীবের প্রতি ভালোবাসা চোখে পড়ে যায়। অনেক কিছু নিয়ে লিখলেও অনুজীব নিয়ে মাঝে মাঝেই লেখেন তিনি 🙂
http://www.sachalayatan.com/anarjo_sangeet
@নীল রোদ্দুর,
বিষয়টা আমি জানি । তবে আমার পাঠকদের বুদ্ধিবৃত্তির উপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে। যারা পপুলার সাইন্স পড়তে অভ্যস্ত আমি তাদের আবার পাঠ্যবই পড়ায় ফিরে যেতে বলছি কারন পাঠ্যবইগুলোতেই আসল বিজ্ঞান আছে। আমি বিজ্ঞানের সাথে সাহিত্য মেশানোর সম্পূর্ণ বিরোধী সব সময় ছিলাম এবং এখনও আছি। সাহিত্য অনুরাগীদের জন্য লিখলে বিজ্ঞান অনুরাগীরা আমার লেখা পড়বে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@সংশপ্তক,
আমি মনে হয় অন্যভাবে বলতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে পারিনি…
এই কথাটা বলে কি আমরা ইন্টেলেকচুয়াল এলিটিসিজমএর ধারনাকে দাড় করাতে চাচ্ছি? যারা বুঝবেনা, তাদের দরকার নেই আমার লেখা পড়ার? শুধু মাত্র বোদ্ধা শ্রেনীর পাঠকেদের স্বাগত আর বাকিদের জন্য দুয়ার বন্ধ?
সাহিত্য আর বিজ্ঞান একসাথে কিভাবে মেশে? কল্পবিজ্ঞানে সাহিত্যের সাহিত্য কল্পনা বিজ্ঞানের সুগন্ধ সবই মেশে, ঐটা সাহিত্য। কিন্তু যে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিজ্ঞানে অনাগ্রহী পাঠককেও পড়তে আগ্রহী করে তোলে, তাও সাহিত্য! তাহলে আমি দুঃখিত, কোনদিন মনে হয় বিজ্ঞান লেখক হতে পারবো না। সাহিত্যিকই না হয় রয়ে গেলাম। আমার কাছে সায়েন্টিফিক আমেরিকানের লেখার ভঙ্গি গুলোও সহজবোধ্যই লাগে। চিন্তা করছি, তাদের সবাই কি কেবলই সাহিত্যিক? :S
পাঠ্যবইয়ের ভাষার চেয়েও কঠিন করে, কেবল মাত্র গবেষকদের বোঝার জন্য লেখার পথ সমভবত খোলা আছে, সায়েন্স জার্নাল গুলো।
অপাত্রে ঘি দিলে ঘি নষ্ট হয়, কাজে লাগে না। আবার কিছু খাবার রান্নার সময় ঘি নয়া দিলে রান্নাট অসমাপ্ত রয়ে যায়। রাধুনীকে বুঝতে হয়, কোথায় কি দেয়া যায়। কিছু মনে করবেন না, কথায় কথায় কেমন ভারী ভারী কথা বলে ফেললাম, ছোট বাচ্চাদের পাকামো বলে মনে হচ্ছে এখন। 🙂
ভালো লাগলো। পরের পর্বে জীবানু অস্ত্র ব্যবহারের ইতিহাস সম্পর্কে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদ।
@সাদাচোখ,
ধন্যবাদ। প্রাসঙ্গিকভাবে ইতিহাস এসে যাবে।
@সংশপ্তক,
আপনার পোস্টটি পড়ে ভাল লেগেছে,
জীবাণু অস্ত্রের ইতিহাস সম্পর্কে আমি যেমনটা জানি, প্রাচীনকালে কোন সৈন্য বসন্ত বা প্লেগের মত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার পক্ষের অন্য সৈন্যরা সেই লাশ রাতে প্রতিপক্ষ শিবিরের নিকটে রেখে আসত। যাতে ঐ রোগের জীবাণু দ্বারা তাদের প্রতিপক্ষও আক্রান্ত হয়। এই স্ট্র্যাটেজি নাকি কার্যকরও ছিল বলে শুনেছি।
@অভীক,
হ্যা, অথবা ব্যালেস্টিক অস্ত্র ব্যবহার করে সেই সব জীবানু আক্রান্ত শব দেহ কোন নগর অবরোধের সময় প্রাচীর বেস্টিত নগরের অভ্যন্তরে ছুরে দেয়া হতো যাতে নগরবাসীরা মহামারীর শিকার হয়। নিচে একটা ব্যালেস্টিক অস্ত্র প্রাচীন রোমান বাল্লিসতা (Ballista) একজন রোমান সৈনিকের পাশে দেখা যাচ্ছে :
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/e/eb/2-talent_caliber.jpg[/img]
বাহ চমৎকার! একেবারে উইকির মতন সাজিয়ে লেখা হয়েছে।
চলুক। (Y)
@সাইফুল ইসলাম,
উইকির লোকেরা নিজেরা কিন্তু কিছুই লেখে না । কয়েক হাজার পেশাদার এনালিস্ট উইকির ডাটাগুলো সাধারন মানুষের জন্য উপযোগী করে সাজিয়ে পরিবেশন করে।
এতদিন শুধু জীবাণু অস্ত্রের কথাই শুনেছি; কিন্তু ব্যাপারটা সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারনা ছিল না। এই লেখার মাধ্যমে নতুন অনেক কিছুই জানতে পারলাম। তবে কি করে মাত্র কয়েক কেজি নিউরোটক্সিন দিয়ে সমগ্র মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যায়, তা একটু বিস্তারিত জানালে, খুব খুশি হব। প্রবল আগ্রহ রয়েছে পরবর্তী পর্বগুলোও পড়ার। লেখককে অনেক ধন্যবাদ!
@কাজি মামুন,
যে সে নিউরোটক্সিন নয় , Botulinum toxin হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ নিউরোটক্সিন। মাত্র ২৫-২৭০ ন্যানোগ্রাম কোন ভাবে শরীরে প্রবেশ করলে নির্ঘাৎ মৃত্যু।
নিচে একটা রিসার্চ পেপার দিয়ে দেই , সময় পেলে পড়তে পারেন।
“Botulinum Toxin as a Biological Weapon: Medical and Public Health Management”
Journal of the American Medical Association 285 (8): 1059–1070. doi:10.1001/jama.285.8.1059. PMID 11209178.
এতো দেখছি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। থ্রিলারেই শুধু এই অস্ত্রের কথা পড়েছি। সত্যি সত্যি যে এই অস্ত্র থাকতে পারে কখনো ভাবি নি।
ছোট্ট একটা জিজ্ঞাসা আছে। তাত্ত্বিকভাবে জেনেটিক যুদ্ধাস্ত্রকে খুবই মারাত্বক মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে কি অতটা মারাত্মক বিপদ আছে? প্রয়োগ বলতে আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে যে কোনো দেশ কি এই অস্ত্র তৈরি করা বা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিরিয়াস ছিল কি না? গুলি বোমা মেরে মানুষ মারা এক জিনিস আর জীবাণু ব্যবহার করে মানুষ মারা একেবারেই ভিন্ন জিনিস। ব্যবহারকারী দেশের জনগণইতো এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে আগে রুখে দাঁড়াবে, তাই না?
@ফরিদ আহমেদ,
দেশের জনগনকে অন্ধকারে রেখে অনেক দেশেই অনেক কিছু করে। ধরা পড়ার পর জাতীয়তাবাদ উস্কে দেয়া হয় কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই তারা দেন। আমি যেটাকে সবচেয়ে ভয় পাই তা হলো , এসব নোংরা কাজকে যখন রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি গোষ্টীর কাছে আউটসোর্স করা হয়। তাতে সাপও মরে লাঠিও ভাঙ্গে না।