সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান পত্রিকায় বেশ কিছুকাল আগে প্রকাশিত একটি লেখার সূত্রে এই পোস্টের অবতারণা। এই লেখাটা শুরু করার আগেই একজন বিজ্ঞান গবেষক হিসেবে একটা কথা সবাইকে মনে করিয়ে দি – কোরিলেশন ডাজ নট ইক্যুয়েট অর সিগনিফাই কজেশন, অর্থাৎ দুটি ঘটনার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে বা সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকলেও একে অন্যের কারণ বা নিদান হবেই সে কথা ধ্রুবসত্য নয়। এই ব্যাপারে অবশ্য সংখ্যাতত্ত্ববিদরা অনেক ভাল বোঝাতে পারবেন, কিন্তু এই মৌলিক ধারণাটি আমরা যারা যুক্তিবাদী এবং প্রমাণ-নির্ভর চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করে থাকি, তাদের মনে রাখা প্রয়োজন।
আইচ্ছা যাউকগা। আসল গল্পটা আমার এই জ্ঞানদানের থেকে অনেক বেশী উৎসাহবর্দ্ধক। মানুষের মস্তিষ্ক এবং ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে ইদানীং অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে মস্তিষ্কের ওপর বিভিন্ন ধর্মাচরণ সংক্রান্ত কাজ, যেমন ধ্যান এবং প্রার্থনা, তার আপাত ফলাফল বা অ্যাকিউট এফেক্ট নিয়ে, আবার কিছু কাজ হয়েছে ধর্মের দীর্ঘসাময়িক বা ক্রনিক ফলাফল নিয়ে। সাধারণ ভাবে এই কাজগুলো তে যারা ধার্মিক ক্রিয়াকল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাদের মস্তিষ্কের আয়তন বা কার্যকুশলতার তুলনা করা হয়েছে নির্ধার্মিক-দের বা যারা ধার্মিক হলেও ততটা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করেনা তাদের সঙ্গে। আবার কিছু পরীক্ষা হয়েছে একই লোকেদের নিয়ে, দুটো সময়বিন্দুতে – যখন তারা ধর্মের চর্চা করতনা, এবং যখন সেই একই লোক অতোঃপর ধ্যান-প্রার্থনা-ধর্মানুষ্ঠান ইত্যাদিতে সময় দিয়েছে।
অনেক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, অতি উদ্বেগ বা অ্যাংজায়েটি, মানসিক অবনমন বা দৌর্মনস্য বা ডিপ্রেশন-এর ওপর ধর্মের ফলাফল সুখকর। আবার প্রচুর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ধর্মের ফলাফল হানিকারক। বিশেষত, যারা ধর্মীয় ভাবে সংখ্যালঘু বা ধর্মের কারণে অত্যাচারিত, তাদের জীবনে অনেক বেশী স্ট্রেস এবং উদ্বেগের উপস্থিতি থাকে। আবার অনেক সময়ে, এই উদ্বেগের কারণ হয় ধর্মবিশ্বাস, যখন লোকে মনে করে বা তাদের বলা হয় যে ঈশ্বর তাদের শাস্তি দিচ্ছে, অথবা তাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাদের ধর্মমতের মিল হচ্ছে না। মূল কথাটি এখানে বলা যেতে পারে, যে যেহেতু ধর্মের পুরোটাই মন গড়া, তাই কার ওপরে তার কিরকম এফেক্ট হবে সেটা অনেকাংশেই তাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার ওপর নির্ভর করে।
আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এমি ওয়েন এবং তার সহকর্মীরা একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন, তাতে একটি আশ্চর্য জিনিষ জানা গেছে। আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যেখানের একটি অংশের নাম হল হিপ্পোক্যাম্পাস। এই অংশটি মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেমের একটা অঙ্গ, এবং এর কাজ হল আবেগ-এর নিয়ন্ত্রণ আর স্মৃতি তৈরী করা। এই গবেষণাতে অংশগ্রহণ করেছে ৫৮-বছর বা ততোধিক বয়েসের মোট ২৬৮ জন মহিলা ও পুরুষ, এবং এতে তুলনা করা হয়েছে নির্ধার্মিক লোকদের সঙ্গে ধর্মপালনকারী মানুষের। ধার্মিক লোকেদের আবার একাংশ হল সেই সব মানুষকে নিয়ে যাদের কোন জীবন-পরিবর্তনকারী ধার্মিক অভিজ্ঞতা (লাইফ চেঞ্জিং রিলিজিয়াস এক্সপীরিয়েন্স) ঘটেছে, বা যারা নিজেদের আত্মশনাক্ত করে বর্ন-এগেইন বা পুনর্জাত খ্রীষ্টান হিসেবে। খ্রীষ্টধর্মে এই পুনর্জন্মের অর্থ হল আধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম বা পুনর্জাগরণ, যা সেই সব মানুষের হয় যারা জীবনের কোন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যীশুকে মুক্তিদাতা হিসেবে মেনে নেয়। উইকিপিডিয়া-তে এর ওপর আর্টিকলটি বেশ জ্ঞানগর্ভ।
এই গবেষণায় ওয়েন-এর দল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এম আর আই ব্যবহার করেন হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন মাপতে। তাতে দেখা গেছে, যে যে সমস্ত লোকেদের কোন জীবন-পরিবর্তনকারী বা লাইফ চেঞ্জিং ধার্মিক অভিজ্ঞতা ঘটেছে, তাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন অনেক গুণে ছোট। শুধু তাই নয়, প্রোটেস্টান্ট এবং ক্যাথলিক-দের মধ্যে যারা পুনর্জাত খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী তাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন সাধারণ খ্রীষ্টানদের থেকে ছোট, এবং এই পরিবর্তন তাদের ঐ অংশের ডান এবং বাঁ দুই ভাগেই দেখা গেছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে দেখা গেছে যে যারা নির্ধার্মিক, তাদেরও হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন বেশ ছোট। গবেষকদল এই ফলাফলের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যাদের ধার্মিক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, বা যারা কোন অতি-সংকটের পরিস্থিতির মধ্যে ধর্ম খুঁজে পায়, তাদের অনেক বেশী স্ট্রেস থাকে, এবং এটা জানা আছে যে স্ট্রেস-সংক্রান্ত হরমোন, কর্টিসল-এর প্রভাবে সময়কালে হিপ্পোক্যাম্পাস-এর সংকোচন ঘটে থাকে।
কিন্তু এটাও তাহলে হয়ত সত্যি যে এখনকার সমাজে, বিশেষত যেই সব সমাজব্যবস্থায় ধর্মোন্মাদনা বর্তমান, সেই সমাজে যারা নাস্তিক বা নির্ধার্মিক, তারাও অত্যন্ত মানসিক ক্লেশের মধ্যে থাকেন, এবং সেই কারণেই তাদেরও মস্তিষ্কের ওই অংশের সংকোচন ঘটে।
ওয়েন-এর স্টাডিটিতে যে প্রকল্প (হাইপোথিসিস)-টি নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, তার ফলাফলকে একটি সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা যেতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তনের হ্রাসপ্রাপ্তির ঘটনা অজানা নয়। সেক্ষেত্রে, এটা হতেই পারে যে নাস্তিক বা নির্ধার্মিকদের ওই আয়তনের পরিমাপ তাদের বয়স-হিসেবে নর্মাল; মনে রাখা দরকার যে ওই স্টাডিতে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৫৮ এবং উর্দ্ধে। অল্প বয়সে ধর্মের সঙ্গে পরিচিতি, মনে অল্প অল্প ভক্তিভাব জাগা, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, ইত্যাদির ফলে প্রভূত আবেগের উদ্রেক হতে পারে – এবং আবেগ-এর সঙ্গে হিপ্পোক্যাম্পাসের যোগাযোগ সুজ্ঞাত। বিশেষত, বিপরীতধর্মী আবেগ সমূহ, ধর্মের বৈপরীত্য সম্পর্কে ধারণা, সিলেক্টিভ মেমোরী এবং কগ্নিটিভ ডিজোনেন্স (বৈপরীত্যের ধারণা কে জ্ঞানতঃ আলাদা করে রাখা) – তার মানসিক চাপ, চারপাশের বিভিন্ন ধ্যানধারণার সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা, ইত্যাদির ফলে হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তনের অতিবৃদ্ধি (হাইপারট্রোফি) ঘটা হয়ত খুবই সম্ভব, যার ফলে ধর্মবিশ্বাসীদের ওই আয়তন বড় হয়। কিন্তু যাদের তথাকথিত ধার্মিক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, বা যারা কোন অতি-সংকটের পরিস্থিতির মধ্যে ধর্ম খুঁজে পায় – একবার ধর্মীয় মৌলবাদ মাথায় ঢুকে গেলে তখন পুরোটাই বিশ্বাসনির্ভর, তখন আর কোন দ্বন্দ্ব নেই, দ্বিধা নেই, এবং সেই কারণেই আর কোন দীর্ঘসাময়িক বা ক্রনিক আবেগে উত্তালতার প্রশ্ন থাকে না – তাই তখন আবার হিপ্পোক্যাম্পাস ছোট হয়ে ধর্মপ্রাপ্তির আগের নর্মাল আয়তনে ফিরে আসে।
আমি জানিনা আমার এই লাইনের চিন্তাটি একটা বিচারযোগ্য হাইপোথিসিস কিনা, কারণ মস্তিষ্ক প্রত্যঙ্গ এবং মনোবিদ্যার কার্যকরী সম্পর্কের বিষয়ে আমার জ্ঞান সীমিত। এইখানেই আবার করে সেই শুরুর আপ্তবাক্যটি মনে রাখা দরকার। মস্তিষ্কের গঠন বা কাজের সঙ্গে ধর্মের কার্য-কারণ সম্পর্ক বা কজাল রিলেশনশিপ স্থাপন করা খুবই দুরুহ। এই বর্তমান ফলাফলের আরো অনেক ব্যাখ্যা হতে পারে। যেমন লাইফ চেঞ্জিং ঘটনার থেকে বেশী জরুরী হতে পারে সেই পরিবেশ বা পরিস্থিতি যা থেকে সেই ঘটনার উৎপত্তি ঘটে। আবার, যদিও গবেষকরা মনে করছেন যে স্ট্রেসের কারণে এরকম হয়, বর্তমান স্টাডিতে স্ট্রেসের সঙ্গে সরাসরি কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় নি, কারণ শুধুমাত্র আপাতকালীন বা অ্যাকিউট স্ট্রেস-ই মাপা হয়েছে, দীর্ঘসাময়িক স্ট্রেস নয়। কিছু কিছু ধরণের মৃগীরোগী, যাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের আয়তন ছোট হয়, তারা অতি-ধার্মিক বা হাইপার-রিলিজিয়াস হয়ে পড়ে বিনা স্ট্রেস-এই। আবার এটাও হতে পারে, যে যারা অতি-ধার্মিক তারা সহজেই স্ট্রেস-এ আক্রান্ত হয় জীবনে, যার একটা কারণ হতে পারে যে বেশীরভাগ ধর্মেই পার্সোনাল রেস্পন্সিবিলিটি বা নিজস্ব দায়িত্বের শিক্ষা দেওয়া হয় না – সব ঈশ্বরে-সমাপন বা পরিপূর্ণ-নিবেদন গোত্রীয় বিশ্বাসধর্মী ধারণার ওপরে জোর দেওয়া হয়।
ক্রিয়া-পরিমাপক বা ফাংশনাল এম আর আই-র প্রযুক্তি এখনও শৈশবস্থায় আছে। ধীরে ধীরে আমরা মস্তিষ্কের কাজ এবং তার ওপর ধর্মের প্রভাবের কথা আরও জানতে পারব নিশ্চয়।
অনেক কঠিন লেখা..আরও বিস্তারিত তথ্য দরকার। 😕
@মার্ক শুভ, কি ধরণের তথ্য খুঁজছেন যদি বলে দেন, তাহলে চেষ্টা করতে পারি।
চমৎকার লিখেছেন। এ ধরণের প্রবন্ধ আরো বেশি করে আসা উচিৎ মুক্তমনায়।
(Y)
তবে কিছু ক্ষেত্রে আমি খেই হারিয়েছি। যেমন, আপনি একবার বলেছেন –
কিন্তু আবার পরে বলেছেন –
আমার কাছে ব্যাপারটা পরস্পরবিরোধী বলে মনে হচ্ছে। ধার্মিকদের হিপোক্যাম্পাসের আকার যদি বিশ্বাসের কারণে বড় হয়ে থাকে, তাহলে বর্ণ এগেন খ্রিস্টান বা ধার্মিকদের ক্ষেত্রেও তারা ধার্মিক হবার পরে হিপোক্যাম্পাসের আকার বেড়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো। তা না হয়ে বর্ণ এগেন ধার্মিকদের হিপোক্যাম্পাসের আকার কম পাওয়া গেল। এর ব্যাখ্যা হিসেবে যা পাওয়া গেছে, সেটা এক ধরণের ‘যাস্ট সো স্টোরি’ বলে মনে হল। আকার যদি উলটো পাওয়া যেত, তাহলে আবার এই ব্যাখ্যার স্টোরি হত ভিন্ন রকম। এক্ষেত্রে আপনার সাথে সংসপ্তকের আলোচনাটুকু বেশ যুক্তিগ্রাহী মনে হয়েছে।
লেখাটা কিন্তু আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। অবশ্য এর পেছনে একতা কারণ আছে। পিএইচডি করার সময় আমার কাজের অংশ হিসেবে মস্তিস্কের মডেল করতে হয়েছিল। হিপোক্যাম্পাস নিয়েও কাজ করেছিলাম অনেক। অনেক সেগুলো সবই বায়োমেকানিকাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে, আনবিক পর্যায়ে নয়। আত্মা নিয়ে পাঁচ পর্বের একটা সিরিজ লিখেছিলাম একসময়, সেটার চতুর্থ পর্বে মরণ প্রান্তিক অভিজ্ঞতা (near death experience) নিয়ে আলোচনা করার সময় মডেলের একটা ছবিও দিয়েছিলাম, দেখতে পারেন এখানে। হিপো বাবাজিও খুব ছোট করে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
আরো লিখুন এ ধরণের বিষয় নিয়ে।
@অভিজিৎ, প্রথমে, ধন্যবাদ। 🙂
যে অংশটি আপনার পরস্পরবিরোধী মনে হয়েছে, সেখানে আমারও প্রথমে খটকা লেগেছিল। তবে স্টাডিটির প্রবর্তকরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, আর আমি যে বিপরীত ব্যাখ্যার কথা বলেছি – দুটির সংশ্লেষ করলে আপনি দেখবেন একটা কথা প্রতীত হয়, সাধারণ ঈশ্বরবিশ্বাসী বা ধার্মিক মানুষের সঙ্গে ওই অতিভক্ত, অতিবিশ্বাসী, লাইফ-চেঞ্জিং রিলিজিয়াস এক্সপীরিয়েন্স প্রাপ্ত লোকজনের অনেক তফাৎ আছে। সেই তফাৎ যে আল্টিমেটলি মস্তিষ্কের কারণে হবে, সেটাই যুক্তিযুক্ত, নয় কি?
@কৌশিক, উপায় নাই। ভাল এখন বলতেই হবে।
The time for action is now :guli: :guli:
@অরণ্য, ভাল ঠিক বলছেন কিনা বুঝতে পারলাম না। তবে গোলাগুলি দেখে একটু ভয়ে ভয়ে রইলাম। :lotpot:
বেশ ভাল লাগল আপনার নুতন লেখার অপেক্ষায় রইলাম ।
@ডারউইনের ভুত, চেষ্টা করব। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগল…এইরকম তথ্যমুলক পোষ্ট পড়তে ভালো লাগে…
এই পোষ্টটি আগে বোধহয় ধর্মকারীতে আগে পড়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
@রাহনুমা রাখী, ‘বোধহয়’ নয়, নিশ্চয় পড়েছিলেন। তবে এখানের লেখাটি আরেকটু পরিমার্জিত। তাছাড়া, আমার ধারণায় ধর্মকারী আর মুক্তমনার পাঠকসমষ্টি একটু ভিন্ন, যদিও – স্বাভাবিকভাবেই – কিছু ক্রস-ওভার নিশ্চয় আছে।
মস্তিষ্কের উপর ধর্মের প্রভাব কতটুকু আমি জানি না, তবে ধর্মের উপর যে মস্তিষ্কের ব্যাপক প্রভাব তা আমি বলতে পারি। ধর্ম নিয়ে আল্লাহ (?), ভগবান (?), ঈশ্বর(?), রাসুল, নবী, দেবদেবী, মউলোভী, পোপ, আচার্য , হুজুর খাজুর রা যে যুগে যুগে সুজুগে হুজুগে কতটা মস্তিষ্কের ব্যবহার(?) করেছেন তার হিসাব নাই!
@অরণ্য, ভাল বলেছেন।
হুমম, ইন্টারেস্টিং। ধর্মীয় চিন্তাভাবনা বা পরিবেশের সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে এরকম গবেষণা হলে তা খুবই ইন্টারেস্টিং হবে।
(Y) এই বিষয়ের উপর আরো লেখা আসুক।
@স্বাধীন, ধন্যবাদ আপনাকে। আমি চেষ্টা করব নিশ্চয়।
লেখাটা পড়লাম আগ্রহ নিয়ে এবং সেই সঙ্গে মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হলো । নাস্তিকতা এবং আস্তিকতাকে পর্যবেক্ষক নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে নির্নয় করার কি কোন পন্হা এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ? কেউ নিজেকে আস্তিক বা নাস্তিক দাবী করলে বিজ্ঞান কি সেটাকে মস্তিষ্কের গঠন ভেদে বস্তুনিষ্টভাবে নির্নয় এবং যাচাই করতে পারে ?
বিজ্ঞানের কোন শাখায় গবেষণা করছেন জানতে পারি কি ?
এছাড়া, মস্তিষ্কের মত একটা অত্যন্ত জটিল এলাকা নিয়ে লিখতে বসে যদি লেখেন ,
পাঠকেরা একটু বিপদে পড়ে যাবেন বৈ কি । যাহোক , হিপোক্যামপাস এলাকার যে জীনগুলো প্রোটিন এনকোড করে তার মধ্যে NR3C1 জীন অন্যতম যায় ব্যপ্তি ওখানকার বেশীরভাগ এলকা জুড়ে। এই জীন নিয়ে যে গবেষণা এ পর্যন্ত হয়েছে তাতে আবেগের (?) সাথে এই জীনের সরাসরি সম্পর্ক বের মনে হয় কঠিনই।
@সংশপ্তক,
না। এই যে ‘দাবী’র কথা আপনি বলেছেন, সেটা শুধু আবেগবশত দাবীর কথা নয়, একটা ফাংশনাল প্রোপোজিশন। আস্তিক হতে গেলে একভাবে ব্যবহার করতে হয়, একভাবে চলতে হয়। নাস্তিক হতে গেলে আরেকভাবে। এর প্রত্যেকটাই মাল্টিফ্যাকটোরিয়াল, বহুকারণসমন্বিত। তাই তাকে মস্তিষ্কের গঠন-এর মত একটা সিঙ্গল ফ্যাকটরের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করাটা অকারণ এবং অনুচিত রিডাকশনিজম। যে স্টাডিটির কথা আমি উল্লেখ করেছি, সেটা একান্তই অবজার্ভেশনাল, তথ্যাহরণ এবং তার সম্পর্কে চিন্তনই এর মূল উদ্দেশ্য।
আমি একজন ইমিউনোলজিস্ট, জীবাণুঘটিত রোগ নিয়ে কাজ করি।
না, পাঠকদের বিপন্ন করতে চাইনা, কিন্তু মাফ করবেন, আমার কথাটির সঠিক অর্থ হয়ত আপনি ধরতে পারেননি বলে মনে হচ্ছে। জরুরী প্রত্যঙ্গ হিসেবে মস্তিষ্কের সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল; তার গঠন এবং কার্যাবলী সম্পর্কে আমি পরিমিতভাবে অবহিত। কিন্তু মনোবিদ্যা আমার বিষয় নয়, তার কমপ্লেক্সিটি নিয়ে আমার জ্ঞান ভাসা ভাসা। এবং এই দুই ডিসিপ্লিনের মধ্যেকার যে সেতুবন্ধন – মস্তিষ্ক এবং মনোবিদ্যার কার্যকরী সম্পর্ক বা ফাংশনাল রিলেশনশিপ – সেটি একটি বর্তমানের অত্যন্ত স্পেশালাইজড এবং অর্বাচীন ফিল্ড, তার সম্পর্কে আমি সত্যিই অত্যন্ত সীমিতজ্ঞানের অধিকারী। আশাকরি বোঝাতে পারলাম।
তবে তার মানে এই নয়, যে একটা প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক স্টাডি বা তৎসংক্রান্ত কোন পেপার পড়ে তার মর্মোদ্ধার করতে একান্তই অপারগ হব। বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বা সায়েন্টিফিক মেথড-এর সঙ্গে আমার সম্যক পরিচয় আছে।
আপনার এই শেষ বাক্যটির অর্থ আমার কাছে পরিষ্কার হলোনা। যদি দয়া করে একটু বুঝিয়ে দেন, বাধিত হব।
@কৌশিক,
NR3C1 একটা নিউক্লিয়ার রিসেপটর জিন । হাইপোক্যামপাসে এটার উপস্হিতি খুবই উচ্চ মাত্রায়। নিউক্লিয়ার জীন হওয়ার কারনে সে ডিএনএ -র সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে এবং অন্যান্য তৎসংশ্লিষ্ট জীনদের আচরণ নিয়ন্ত্রন করতে পারে। হরমোনিক ব্যবস্হায় স্টেরয়েড এবং থাইরয়েড জাতীয় হরমোনের মত অনু গুলোর বার্তা গ্রহন করার ক্ষমতাও এর রয়েছে।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে একটা কথা না বললেই নয় । মস্তিষ্ককে ঠিক মত বুঝতে হলে , শুধু তার এনাটমি বুঝলে চলবে না। অন্যরা তো বটেই, নিউরো বিজ্ঞানীদের পর্যন্ত এখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কেননা এমনকি তাদের কাছেও একটা পিরামিডাল কোষ অন্য দশটার মতই মনে হবে। মস্তিষ্ককে ঠিক মত বুঝতে হলে এর সূক্ষ অনু এবং কোষ সমূহের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আবশ্যক যেটা একজন পুরোদস্তর আনবিক জীব বিজ্ঞানীর কাজ।
@সংশপ্তক, আমি জানিনা আমার ব্রাউজারগত কারণে কিনা, আমি মুক্তমনার ব্লগে ইংরেজী হরফে লেখা অক্ষর গুলো দেখতে পাইনা। সেই কারণে আপনার আগের কমেন্টে আমি এন আর ৩ সি ১-এর বদলে শুধু “৩১ জীন” এই কথাটা দেখতে পাচ্ছি। সেইজন্যই আমার বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। আপনার এবারকার কমেন্টটা আমার ই-মেইলে পৌঁছনোর দরুণ আসল শব্দটা দেখতে পেলাম। আপনার মত –
এর সঙ্গে আমি শতকরা ১০০ ভাগ সহমত। শুধু মস্তিষ্ক নয়, এটা যে কোন প্রত্যঙ্গের ক্রিয়াদি বোঝার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে আপনার ওই “নিউরো বিজ্ঞানীদের পর্যন্ত এখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে” কথাটা ঠিক মানতে পারলাম না শুধুমাত্র এই কারণে যে বর্তমানে যে কোন প্রসেস বোঝার জন্য মলিকিউলার বায়োলজীর হাতিয়ার ব্যবহৃত হয়ে থাকে, এবং সেই দিক থেকে নিউরোবায়োলজিস্ট-রা ব্যতিক্রম নন।
আপনি এন আর ৩ সি ১-এর কথা বলেছেন। অনুমান করছি এটা আপনার প্রিয় জীন (ওয়াই এফ জি = ইয়োর ফেভারিট জীন); হয়ত এটা নিয়ে কাজ করেন। 😀 সুতরাং আপনার অজানা নয় যে এই জীনটির দায়িত্ব হল একটি প্রোটিন রিসেপ্টর তৈরী করা যেটি গ্লুকোকর্টিকয়েড (একধরণের স্টেরয়েড)-কে চিনতে এবং ধরে রাখতে পারে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের নিউরোন কোষে এই রিসেপ্টর টি থাকে এবং গ্লুকোকর্টিকয়েড এসে লাগলে এটি নেগেটিভ ফীডব্যাক-এর মাধ্যমে নিউরোনের স্ট্রেস রেসপন্সকে কমিয়ে দেয়। সাদা কথায় বলতে গেলে, নিউরোন যাতে অতিরিক্ত স্ট্রেস-এ উত্তাল না হয়ে পড়ে, তার বন্দোবস্ত করে। আপনি যে ঈঙ্গিত করেছেন এন আর ৩ সি ১ নিয়ে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে মানুষ এবং মনুষ্যেতর প্রাণীতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে শিশুকালে কয়েকটি বিশেষ ধরণের স্ট্রেসফুল ঘটনার সম্মুখীন হলে – যেমন, মায়ের কাছ থেকে অবহেলা (ম্যাটার্নাল নেগলেক্ট), উৎপীড়ন (চাইল্ড অ্যাবিউস) ইত্যাদি – এন আর ৩ সি ১-এর জীনটি সেই প্রোটিন রিসেপ্টরটি তৈরী করা কমিয়ে দেয়। এর ফলে বয়সকালে নিউরোন-এর উপর স্ট্রেস-এর এফেক্ট অনেক বেশী মাত্রায় হয়, যা নিউরোন-এর পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর।
কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য জিনিস মনে রাখা খুব প্রয়োজন। শিশুবয়সের স্ট্রেস যে ওই জীনের উপর কাজ করে, সেটা কিন্তু সরাসরি নয়। এই এফেক্টটিকে বলা হয় ‘এপিজেনেটিক‘; অর্থাৎ জীন থেকে প্রোটিন তৈরী হবার পদ্ধতিটা সাধারণভাবে সোজা রাস্তায় বা লিনিয়ার ভাবে চললেও, শিশুবয়সের স্ট্রেস-এর কাজটা অন্য কোন ফ্যাক্টর-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যার একটি হ্ল এন জি এফ ১এ।
এপিজেনেটিক এফেক্ট-এর সবচেয়ে বড় মুশকিল হল সেগুলোকে এখনো পুরোপুরি ডিফাইন করা যায়নি। কিভাবে হয়, সেটা অনেকটা পরিষ্কার, কিন্তু কেন এবং কোন পথে হয় সেগুলো ততটা নয়। সেই কারণেই রিডাকশনিস্ট অ্যাপ্রোচ, সবকিছুর কার্যকারণ সম্পর্ককে গুটিয়ে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট ধারণায় এনে ফেলা, সবসময় কাজ করে না। মলিকিউলার বায়োলজিস্টরা এই ভাব চিন্তা করতে অভ্যস্ত হয় পড়েন বলে অনেক ক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণ চিত্রটি – বিগ পিকচার – দেখতে অপারগ হন। এর বিরুদ্ধে গবেষকদের সচেতন থাকাটা একান্ত প্রয়োজন।
@কৌশিক,
আমার কোন প্রিয় জীন নেই কারন বেশীর ভাগ জীনের ফাংশনগুলোই এখন পর্যন্ত সুচারু ভাবে চিহ্নিত করা যায় নি। এটা করতে হলে কড়া রিডাকশনিজমের প্রয়োজন আছে ।
অন্যদিকে মানব জিনোম প্রজেক্টের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে প্রায় সাত বছর হবে। বাকী কাজ শেষ হতে শত বছরও লেগে যেতে পারে। বড় ক্যানভাসে কিছু দেখার আগে খুটিনাটি বিষয়গুলো জানাটা খুবই জরুরী ।
তথাকথিত স্ট্রেস লেভল নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই কারন এসব গবেষণা নিয়ে যারা কাজ করেন তারা অানবিক পর্যায়ের বিষয়াদি তাদের গবেষণাপত্রে এড়িয়ে চলেন। রিডাকশনিজম হোক আর বিগ পিকচারই হোক , কোন হাইপোথিসিসকে তত্বের পর্যায়ে আনতে হলে ফলসিফাইয়েবল হতে হবে, নাল হাইপোথিসিস কমপ্লায়ান্ট হতে হবে, কয়েকশ ল্যাবে রেপলিকেবল হতে হবে বড় রকমের বিচ্যুতি ছাড়া। শুধু পরিসংখ্যানিক উপাত্ত দিয়া কাজ হবে না।
@সংশপ্তক,
আমীন!
সুন্দর, ভবিষ্যতে আরো লেখা আশা করছি ।
@লাট্টু গোপাল, ধন্যবাদ। নিশ্চয় চেষ্টা করব।
এ ধরনের লেখা আমি ভালো পাই। 🙂 চলুক।
@নিটোল, আমার সৌভাগ্য। চেষ্টা করব।
আপনার জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ টি বেশ ভালই লাগল।এরুপ বৈজ্ঞানিক তথ্যপুর্ন প্রবন্ধ আরো লিখবেন।
ধন্যবাদান্তে,
আঃ হাকিম চাকলাদার
নিউ ইয়র্ক