ফলসিফায়েবিলিটি, পপারীয় ভাববাদ এবং বাতিলযোগ্যতার কল্পকথা
লিখেছেন – রবিউল ইসলাম
পপার কাণ্টের ভাববাদী দর্শনকে অনুসরণ করেছেন । বলার অপেক্ষা রাখেনা, যে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে ভাববাদের স্থান নেই-বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও বিজ্ঞানচর্চা আপন বৈশিষ্ট্যে বস্তুবাদী, কারণ বস্তুনিষ্ঠতা বিজ্ঞানচর্চার প্রধান শর্ত । একজন বিজ্ঞানী আদর্শের দিক দিয়ে ভাববাদী হলেও বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে নিজের অজান্তেই বস্তুবাদী পথ অবলম্বন করেন । পপার ভাববাদের ক্ষেত্রে কান্টের দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে একমত ছিলেনঃ “It is our ideas which give form to reality, not reality which gives form to our ideas.” পপারের ভাববাদী চিন্তাধারার প্রমাণ হচ্ছে- তিনি নিজেকে একজন ‘অগতানুগতিক কান্টবাদী’ ১ বলে বর্ণনা করেছেন; অর্থাৎ তিনি কান্টের জ্ঞানতত্ত্বকে আংশিকভাবে গ্রহণ করেছেনঃ “ কান্ট এব্যাপারে সঠিক ছিলেন যখন বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি যা এর বিধানগুলিকে-এর ধারণাগুলিকে, এর নিয়মগুলিকে আমাদের ইন্দ্রীয়বোধের অপরিস্ফুট স্তুপের উপর আরোপ করে । এবং এর মাধ্যমে সেগুলিতে শৃঙ্খলা নিয়ে আসে । যে ব্যাপারটিতে তিনি ভুল করেছেন তা হলো, তিনি দেখতে পাননি যে, আমরা আমাদের এই আরোপ করার ক্ষেত্রে কমই সাফল্য লাভ করি ।২ আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ভাববাদী হয়ে তিনি মার্ক্সীয় সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার অধিকার চর্চা করেন কি করে ।
পপারের ‘ত্রিজগৎ তত্ত্ব’ রচিত হয়েছে ভাববাদকে নিয়ে । পপার ভাববাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাহ্যিকভাবে ও স্থূলভাবেঃ “To me idealism appears absurd” (Objective Knowledge, p.41); “I was thoroughly opposed to every idealism” (Objective Knowledge, p. 323). তারপরও কেউ যখন পপারের ‘ত্রিগজৎ তত্ত্ব’ পরীক্ষা করে দেখেন, ভাববাদী সুরটি গোপন থাকেনা । উদাহরণস্বরুপ, জগত ১, ২ এবং ৩ সম্পর্কিত বেশকিছু আলোচনার একটিতে তিনি লিখেছেনঃ “আমি জগত তিনকে অবশ্যম্ভাবীরুপেই মানবমনের সৃষ্টি বলেই গণ্য করি । আমরাই জগত-৩ এর বস্তুগুলিকে সৃষ্টি করি………এই বস্তুগুলির নিজস্ব সহজাত অথবা স্বায়ত্ত্বশাসিত আইন রয়েছে যেগুলো উদ্দ্যেশ্যবিহীন এবং অচিন্তিতপূর্ব ফলাফল রয়েছে……… আমাদের উপর এই পালটা প্রতিধ্বনি বা প্রতিক্রিয়া আমাদের পারিপার্শ্বিক বস্তুগত পরিবেশের প্রতিধ্বনির চাইতেও শ্রেষ্ঠতর” (Unended Quest, p. 186) । অন্যত্র তিনি ‘বস্তুগত মন’ বা ‘আত্মা’ নিয়ে লিখেছেন (Objective Knowledge, p. 149) । তিনি এও লিখেছেন যে, “তৃতীয় জগত হচ্ছে……অতিমানব”, এটা “তার সৃষ্টিকর্তাকে ছাড়িয়ে যায়” (Objective Knowledge, p. 159). কিন্তু, নিশ্চিতভাবেই সীমাতিক্রমী মন বা আত্মার ধারণা যা(পপারের ভাষায়) ‘মানবসত্ত্বাগুলোকে প্রভাবিত করে তাদের বস্তুগত পরিবেশের চাইতে বেশী’, তা সহজবোধ্যভাবে ভাববাদেরই উদাহরণ ।
পপারের সমালোচনামূলক যুক্তিবাদ(Critical Rationalism) বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলির খন্ডনযোগ্যতা দিয়ে বিজ্ঞানকে অবিজ্ঞান থেকে পৃথক করেছে । পপারের আদর্শ উদাহরণ ছিল নিউটনীয় পদার্থবিদ্যা যা মূলগতভাবে আইন্ষ্টাইন কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হয়। তুলনামূলক বিচারে কম দার্শনিকই একে বরণ করেছেন । টম সেট্ল্ (Tom Settle), যিনি The Philosophy of Karl Popper এর একজন অন্যতম প্রধান অবদানকারী, ১৯৭২ সালে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেনঃ বিজ্ঞান ও অবিজ্ঞানের মধ্যে সীমারেখা টানার বিচারিক মানদন্ড হিসাবে ফলসিফায়েবিলিটি এবং সমালোচনামূলক নীতি(যুক্তিশাস্ত্র) একই সাথে কাজ করেনা ।১৪ অন্য যারা অবদান রেখেছেন তাঁরা এতে একমত । এদের মধ্যে রয়েছেন এ যে আইয়্যার, উইলিয়াম সি নীল, ইম্র্ লাকাটোস, গ্রোভার মেক্সোয়েল, এবং হিলারী পুটনাম ।
গ্রোভার মেক্সোয়েল যুক্তিনির্দেশ করে দেখান যে, “সব মানুষ মরণশীল”-বাক্যটি নিখুঁতভাবেই একটি বৈজ্ঞানিক বিবৃতি যা বাতিলযোগ্য (Falsifiable) নয় ।১৫ গণিতশাস্ত্রের স্বতঃসিদ্ধগুলি (Axioms) খন্ডন করা যায় না(বাতিলযোগ্যতার শর্ত)। সুতরাং, ডিমার্কেশন তত্ত্ব অনুযায়ী গণিতশাস্ত্র বিজ্ঞান নয় । কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্র অবিচ্ছেদ্য । উদাহরণস্বরুপ, গণিতশাস্ত্র ছাড়া কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে প্রকাশ করা কঠিনই বটে ।
বিবর্তনবাদের মত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি কি বাতিলযোগ্য (Falsifiable) ? বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীগণ সেইসব তত্ত্বগুলিকে কি পরিত্যাগ করেন যখন একটি প্রেডিক্শন মিথ্যা প্রমাণিত হয় ? অন্য কথায়, ফলসিফায়েবিলিটি কি বিজ্ঞানকে অবিজ্ঞান থেকে পৃথক করে ? অবশ্যই না । একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে এমনভাবে পরিবর্তিত করা যায় যে, তত্ত্বের শাঁস বা কেন্দ্রীয় অনুমানগুলিকে সত্য ও প্রশ্নাতীত বলে মেনে নেয়া হয়, কিন্তু কিছু পারিপার্শ্বিক বা প্রান্তিক অনুমানকে পরিবর্তিত করা হয় যাতে সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী নজীরের সংগে মেলে । আলবার্ট আইন্ষ্টাইনের জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটির প্রাথমিক সূত্রায়ন নির্দেশ করে যে ‘মহাবিশ্ব অবশ্যই সম্প্রসারিত হচ্ছে’ । এমন একটা ঘটনা যা তখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত হয়নি । তিনি তত্ত্বের সঙ্গে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক যোগ করেন তত্ত্বকে পর্যবেক্ষণের সংগে নির্ভুলভাবে মেলানোর জন্য । পরবর্তীকালে, মহাবিশ্বের আপাত সম্প্রসারণ আবিষ্কৃত হয় এবং মহাজাগতিক ধ্রুবক নীরবে ঝরে পড়ে ।
(মহাবিশ্বের) সম্প্রসারণ আবিষ্কার এবং মহাবিস্ফোরণের প্রমাণকে (বা নজীর) জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্বের পাকাপাকি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে । কেউ সহজেই দেখতে পাবেন যে, যদি (মহাবিশ্বের) সম্প্রসারণ ধরা(আবিষ্কার) না পড়তো, মহাজাগতিক ধ্রুবক থেকে যেতো এবং তত্ত্বটি পাকাপাকিভাবে নিশ্চিত হতো পর্যবেক্ষণ দ্বারা ।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলিকে পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মেলানোর জন্য সেগুলোর পরিবর্তন সাধন আজও চলছে । ডারউইনীয় বিবর্তনবাদ জীবাষ্ম রেকর্ডে বিরাট সংখ্যক মধ্যম পর্যায়ের বা স্তরের জীবের গাঠনিক রুপ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল । ঐসবের কোনটাই ডারউইনের সময়ে আবিষ্কৃত হয়নি । কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া জীবাষ্ম রেকর্ড দীর্ঘ ব্যাপ্তির স্থবিরতা প্রদর্শন করে চলেছে । প্রদর্শন করে চলেছে প্রজাতিগুলির আকষ্মিক আবির্ভাব ও আকষ্মিক অন্তর্ধান । মিসিং লিংক (Missing Lingk) কোন সমাধানহীন অবস্থায়ই রয়ে গেছে । তারপরও বেশিরভাগ বিজ্ঞানী বিবর্তন তত্ত্বকে পরিত্যাগ করেননি । বিবর্তনবাদের প্রখ্যাত জনপ্রিয়তা সৃষ্টিকারী স্টিফেন যে গোল্ড “Punctuated Equillibrium”-এর প্রস্তাব করেন, যাতে বিবর্তন বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীতে অত্যন্ত দ্রুত ঘটে, যা কদাচিতই জিবাষ্মরুপে রেকর্ড রেখে যায় জীবাষ্মরেকর্ডের সঙ্গে বিবর্তন তত্ত্বের সমন্বয় ঘটানোর জন্য । বিবর্তনের সাক্ষ্যপ্রমাণ বা নজীরের অভাবই বিবর্তনের প্রমাণ হয়ে উঠেছে । জটিল প্রাণীর শরীরতন্ত্রগুলি যে, নতুন অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদির দরুন শারীরিক গঠনের পরিবর্তন থেকে জাত-এই মূল অনুমানটি সংরক্ষিত রাখা হয় তত্ত্বের কম গুরুত্বপূর্ণ বিশদ বিষয়গুলির পরিবর্তনের মাধ্যমে ।
ফলসিফায়েবিলিটি একটি কল্পকথা । পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের বিশৃঙ্খল বাস্তব জগতে তত্ত্বগুলিকে প্রায়শই পরিবর্তন করতে হয় নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণের সঙ্গে মেলানোর উদ্দ্যেশ্যে । যেহেতু কোন তত্ত্বকে, স্ববিরোধী পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণ ফলাফলের সঙ্গে মেলানোর উদ্দ্যেশ্যে, Ad Hoc অনুমান দিয়ে পরিবর্তন করা যায়, কোন তত্ত্বই কড়াকড়িভাবে বাতিলযোগ্য (Falsifiable) নয়-সেটাকে বিজ্ঞান বলা হোক আর না-ই হোক ।
বিচারের মানদন্ড হিসেবে বাতিলযোগ্যতা (Falsifiability) প্রায়ক্ষেত্রেই বৈষম্যমূলক । বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে অজনপ্রিয়, অগতানুগতিক, অথবা নতুন তত্ত্বগুলির ক্ষেত্রে ফলসিফায়েবিলিটির গুনটি কড়াকড়িভাবে দাবী করা হয় । স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলিকে বলে বাতিলযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয় এমনকি যদিও স্ববিরোধী ঊপাত্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য সেগুলিকে প্রায়ই পরিবর্তন করা হয়ে থাকে । একটা তত্ত্বের পরিমার্জন বা পরিবর্তনকে বাতিল করার মানদন্ডের যে প্রয়োজনীয়তা সেটা হয় প্রত্যাখ্যান করা হয়, নতুবা উল্লেখই করা হয়না-একটা নিশ্চয়তার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে । (তত্ত্ব) বাতিলের মানদন্ড যে উল্লেখ করা হয়না তার কারণ, সেগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ভ্রমপ্রবণ ব্যাক্তিগত বিচার বা মতামতের ব্যাপার । বিজ্ঞানকে অবিজ্ঞান থেকে পৃথক করার ক্ষেত্রে ফলসিফায়েবিলিটি ডক্ট্রিন কেবলমাত্র নিশ্চয়তার একটি মরীচিকাই সৃষ্ট করে আর কিছু নয় ।
তথ্যসূত্র –
১. Unended Quest, p. 82.
২. Objective KnowledgeConjectures and Refutations, VII; London: Routledge, 1989.
৩. Realism and the Aim of Science; London: Routledge, 1992.
৪. এই প্রস্তাবটি ভিত্তিবাক্য হিসেবে প্রথম জ্যান্ সি লেস্টার কর্তৃক ব্যবহৃত হয় নিম্নোক্ত গ্রন্থেঃ ‘Liberty, Welfare and Anarchy Reconciled’; London, McMillan, 2000. যেসব প্রখ্যাত বিজ্ঞানী পপারের প্রভাবকে স্বীকার করে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জ্যাকব ব্রনৌস্কি (Jacob Bronowski), জন ইক্লেস (John Eclles), পিটার মেডাওয়ার (Peter Medawar) এবং জন মেয়নার্ড স্মীথ (John Maynard Smith).
৫. The Open Society and Its Enemies; Vol. 2, London, Routledge and Kegan Paul, 5th ; Edition, 1966; Ch. 2, p. 13.
৬. The Open Society and Its Enemies; Vol. 2, p.375.
৭. Unended Quest ; London: Fontana/Collins, 1976; p. 24.
৮. Objective Knowledge, London : Oxford, 1972 ; p. 360.
৯. Unended Quest ; p. 24.
১০. The Philosophy of Karl Popper; Book 2, p. 1019.
১১. Unended Quest, p. 52.
১২. Objective knowledge, P. 96.
১৩. Unended Quest, p. 146-7.
১৪. The Philosophy of Karl Popper; Book 2; p. 719
আলোচনাটাতে আ হা মহি উদ্দীন ভাই এক জায়গাতে বেশী তেনা পেঁচিয়ে আলোচনা সামনে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
অফ-টপিক: এই লেখাটা পড়ে মাথায় গিট্টু লেগে গেছে।
১। লেখাটি লিখেছেন- রবিউল ইসলাম। কিন্তু তিনি একটিও মন্তব্য করেন নি। ব্যাপারটা কেমন যেন মনে হচ্ছে। তবে কি আমাদেরই কেউ একজন ছদ্ম নামে লিখলেন এবং আলোচনায় অংশ নিলেন?
২। হাসির কোন ব্যাপার না হলেও হাসি থামাতে পারছিনা।
আ হা মহি উদ্দীন ভাই= সেতারা হাশেম বোন; লিঙ্গান্তরের এই সমীকরণটি মেলাতে পারছিনা। নাম গোপন করা ঠিকাছে কিন্ত লিঙ্গ গোপন করলেতো আলোচনায় মাঝে মাঝে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্যের প্রতিবাদও তিনি করলেন না।
@হেলাল,
ব্যক্তি নয়, বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করুন ।
আমার মতো মানুষেরা মনে করে, আদি মানব জ্ঞান হলো লজিক বা যুক্তি । চিন্তা থেকে জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে । মস্তিষ্কের ক্রিয়া হলো চিন্তা । মস্তিষ্ক হলো বস্তু এবং চিন্তা হলো দুই প্রকার, যথাঃ ভাববাদী ও বস্তুবাদী চিন্তা ।বস্তুবাদী চিন্তার জন্য প্রয়োজন লজিক বা যুক্তির । লজিক বা যুক্তির অপর নাম দর্শন । আর এই দর্শন থেকে পদার্থবিদ্যার উৎপত্তি, যা আগেও বলা হয়েছে ।
প্রকৃতিবিজ্ঞান হলো বস্তুর গুনাগুন, বৈশিষ্ট, গতি-প্রকৃতি, আচার-আচরন, পরিমান প্রভৃত নির্ণয় সম্পর্কীয় । প্রকৃতিবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা হলো পদার্থবিদ্যার উপজাত । সমাজবিজ্ঞান ও তার উপজাত শাখাবিজ্ঞানগুলি হলো মানবের বিভিন্ন কর্মকান্ড । কান টানলে যেমন মাথা চলে আসে, তেমনি দর্শন জার্নাল টান দিলে সব শাখার জার্নাল চলে আসে । তবে প্রথমে আসে বিজ্ঞান জার্নাল । কারন বিজ্ঞান জার্নাল বলতে বুঝায় পদার্থবিদ্যার জার্নাল । কিন্তু পদার্থবিদ্যা হলো দর্শনের অংশ । তাই এই দুই জার্নালের কথা বললেই প্রকৃতি ও সমাজ বিজ্ঞানের সকল শাখার জার্নালের কথাই চলে আসে ।
পপারের ফলসিফিয়েবিলিটি ও রেভেন প্যারাডক্স নিয়ে কেউ কেউ আমাকে কটাক্ষ করছেন । কিন্তু তারা নিজেরা কি বুঝেন, তা তারা ব্যাখ্যা করছেন না । এই ব্যাখ্যা না করার পিছনে যে মানসিকতা কাজ করছে, তা হলো আমরা যখন বুঝি না তখন অন্য কেউও বুঝে না । তাই যিনি বুঝেন না, তার মানসিক প্রবনতা হয় যিনি বুঝার চেষ্টা করছেন তাকে কটাক্ষ করা । যার অর্থ দাড়ায় কটক্ষকারীরা হীনমনতায় ভুগছেন ।
পপারের মতে কোন হাইপোথেসিস সত্য বলে গ্রহন করা যাবে না, যতক্ষন পর্যন্ত হাইপোথেসিসটি পপার ফলসিফিয়েবিলিটি থেকে পরিচয়পত্র গ্রহন না করা হয় । কিন্তু পর্যবেক্ষণ, শনাক্তকরণ/একীকরণ, বর্ণনা, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধান, তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রভৃতি যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সূচনাবিন্দুরূপে উপস্থাপিত ভাবকে হাইপোথেসিস বলে । কিন্তু ফলসিফিয়েবিলিটি শর্ত আরোপের ফলে প্রকৃতি ও সমাজ বিজ্ঞানের সকল তত্ত্বগুলিকে পপার নাকচ করে দিলেন । ফলে পপারের মতে ডারইউনের প্রানী বিবর্তন তত্ত্বসহ অনেক তত্ত্বই ভুল হিসাবে গণ্য হবে । তাই বলা যায় লজিক/যুক্তির উপর শর্ত আরোপ করা যায় না ।
কিছু কাক কালো, আবার কিছু কাক ধোয়াটে । কেউ কালো কাক দেখে সিন্ধান্ত টানলেন কাক কালো । আবার ধোয়াটে কাক দেখে কেউ সিন্ধান্ত টানলেন কাক ধোয়াটে । আর একজন সিন্ধান্ত টানলেন কালো পাখিরা কাক বা ধোয়াটে পাখিরা কাক । ফলে কালো কোকীল এবং ধোয়াটে শালিক কাক হয়ে গেল । এই সর্বজনীনকরণ লজিক/যুক্তি হতে পাড়ে না । এই সর্বজনীনকরন মূলক লজিক/যুক্তিকে বলে র্যায়ভেন প্যারাডক্স ।
মার্ক্স এবং ডারইউনের তত্ত্ব সব চেয়ে অধিক সমালোচিত ও এখনও সমালোচনা চলছে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে অধিক সময় লেগেছিল । বিশেষজ্ঞদের মতে এই দুই তত্ত্বের প্রত্যেকটির সমালোচনার কমপিউটার এন্ট্রি ৩০ মিলিয়নের উপর ।
বিগ ব্যাং বা আইনেষ্টাইনের কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রভৃতি তত্ত্বর সাথে বিজ্ঞানীরা তাদের পূর্বকার উদ্ভাবিত তত্ত্বের যোগ সূত্র এখনও স্থাপন করতে পাড়েনি বিধায় তত্ত্বগুলি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি । এই যোগ সূত্র ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত যে হবে তা জোর দিয়ে বলা যায় ।
আলোচ্য লেখাটি যখন শেষ পর্যায়, তখন রৌরবের উপর আমার পূর্বেকার মন্তব্যের রৌরবের প্রতি উত্তর আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে । আমি একই লেখকের, একটি পপারের ফলসিফিয়েবিলিটি ও অন্যটি হেম্পেলের র্যা্ভেন প্যার্যাউডক্স, যথাক্রমে ফলসিফিয়েবিলিটি ও র্যাবভেন প্যার্যা ডক্স এর উপর ধারণা দেয়ার জন্য ভিন্ন দুই সময় দুইটি প্রবন্ধ প্রেরন করেছিলাম । লজিক/যুক্তি অনুযায়ী বক্তব্যের অংশ পুর্ণ বক্তব্যের ভাবকে প্রকাশ করে না, যা আপনি করেছেন । তাছাড়া কোন প্রবন্ধটির উপর আওলোচনা করতে আপনি ইচ্ছুক তাও উল্লেখ করেন নাই । তাই আপনার বক্তব্য বুঝতে আমি ব্যর্থ হয়েছি ।
যাহা হউক, উক্ত প্রবন্ধ দু’টি থেকে ফলসিফিয়েবিলিটি ও র্যাতভেন প্যার্যােডক্স সম্পর্কে আমি যা বুঝেছি তা আলোচ্য প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করেছি । আলোচ্য এই লেখাটি আরম্ভ করেছিলাম অভিজিতের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার লক্ষ্যে । এই বিষয়গুলির উপর আপনাদের ধারণা ব্যক্ত করতে পাড়েন ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনাকে নিয়ে সমস্যা হল, আপনি টু দ্য পয়েন্ট আলোচনা করেন না। যেখানে আপনাকে রিফিউট করা হচ্ছে সেখানে আর আলোচনা না করে নীচে এগাদা সংগতিহীন কথামালা সাজিয়ে একটা বড় মন্তব্য করে চলে যান। তখন আবার অন্যদের উপর দায়িত্ব বর্তায় লাইন বাই লাইন সেগুলোর ভুল ধরিয়ে দেয়ার। সেটাতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিলে আবার কখনো নাকি সুরে কান্নাকাটি করে বলতে থাকেন, ‘আপনাকে কখন কে বেশ্যা বলেছে, কিংবা অমুকের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে চাননা ইত্যাদি। অবান্তর প্রসঙ্গে চলে যান। ফলে আলোচনা কোন সুনির্দিষ্ট জায়গায় থাকে না, শাখামৃগের মতো আলোচনা এ গাছ থেকে ওগাছে কেবল লাফিয়ে বেড়াতে থাকে। যদিও এই মন্তব্যে কান্নাকাটি করেননি, কিন্তু এই মন্তব্যেও আপনি লঙ্কা জয়ের মতো এক বিরাট লাফ দিয়েছেন আর ঘোত পাকিয়েছেন অজস্র বিষয়ে। যেগুলো নিয়ে অযথা ঘোট পাকাচ্ছেন সেগুলো স্পষ্ট করা যেতে পারে আরো একবার, দেখা যাক কতদূর যাওয়া যায় –
ভাল কথা। সেটা মেনে লেখার আগে নিজের যুক্তিগুলো আরেকটু ভালভাবে যাচাই করলে সবাই উপকৃত হয়। না হলে ‘যুক্তি’র সংজ্ঞাই বদলে যাবে।
আপনি একটা ভুল কথা দিয়ে আগের মন্তব্য শেষ করেছিলেন, সেটা ঢাকতে এখন আরো দশটা ভুল কথা বলা শুরু করেছেন। পৃথিবীতে কোথাও কেউ বলছে না যে, কেবল দুই ক্যাটাগরির জার্নাল আছে- ‘বিজ্ঞান জার্নাল’, ‘দার্শন জার্নাল’। আপনি শুরুই করেছেন ভুল তথ্য দিয়ে। আমি আপনাকে প্রত্যুত্তরে বলেছিলাম মাত্র দুই ধরনের জার্নাল থাকলে – সামাজিক জার্নালগুলোর কি হবে অর্থনীতির গবেষণামূলক জার্নালের কি হবে? আপনি এখন যুক্তি নিয়ে এসেছেন – ‘কান টানলে মাথা আসে’র মতো দর্শন জার্নালের কথা বললে নাকি সব জার্নালের কথা চলে আসে, তাই আলাদা করে সমাজ বিজ্ঞানের জার্নালের কথা বলার দরকার নাই। ভাল কথা, আপনার কথা যদি মেনেও নেই, তারপরেও প্রথমেই আপনার বক্তব্য স্ববিরোধিতায় আচ্ছন্ন। প্রথমেই বলে রেখেছেন, দর্শন থেকে পদার্থবিদ্যার উৎপত্তি, তাহলে আলাদা করে পদার্থবিজ্ঞান জার্নালের কথাও তো বলার দরকার ছিলো না। দর্শনের কান টানলে তো পদার্থবিজ্ঞান চলে আসার কথা ছিল। সেখানে কিন্তু তা করেন নি, দর্শনকে এক ক্যাটাগরিতে রেখেছেন, আর পদার্থবিজ্ঞানকে রেখেছেন আরেক ক্যাটাগরিতে। প্রকৃতিবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যদি পদার্থবিদ্যার উপজাত হয়, তবে পদার্থবিজ্ঞান আবার দর্শনের উপজাত। অথচ ক্যাটাগরি করার সময় দর্শনের বাইরেও পদার্থবিজ্ঞান আরেকটা ক্যাটাগরি করে রাখবেন, অথচ পদার্থবিজ্ঞানের যেগুলো উপজাত সেগুলোর জার্নাল উহ্য থেকে যাবে! এই লজিক দুর্বল শুধু নয়, চরমভাবে ভ্রান্ত। বস্তুত, যে কোন গবেষকই জানেন যে – পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য যেমন পদার্থবিজ্ঞানের জার্নাল আছে, তেমনি সমাজবিজ্ঞানের গবেষনার জন্য সামাজিক জার্নাল আছে, অর্থনীতির গবেষণার জন্য অর্থনীতির জার্নাল আছে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারং জার্নাল আছে, মেডিকেল এবং ক্লিনিকাল গবেষণার জন্য ক্লিনিকাল জার্নাল আছে ইত্যাদি। স্পেসিফিক বিষয়ের জন্য জেন্ডার, নারীবাদ প্রভৃতির উপর আরো অনেক জার্নাল আছে। সেগুলোতে না হয় নাই বা গেলাম।
রেভেন প্যারাডক্স যেহেতু আপনার আমদানী, সেহেতু সেটা পরিস্কার করা আপনারই দায়িত্ব ছিল। দর্শন নিয়ে এত কথা কপচাচ্ছেন, কিন্তু ‘বার্ডেন অফ প্রুফ’ এর কথা ভুলে বসে থাকলে হবে? যারা আপনার মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন (আমি সহ অনেকেই) তারা সবাই পপারের ফলসিফায়াবিলিটির ব্যখ্যা দিয়েছেন, উদাহরণ দিয়েছেন। একদম প্রথম মন্তব্য থেকেই তা করা হয়েছে। ফলসিফায়াবিলিটি কি এবং ফলসিফিকেশনের সাথে পার্থক্য কোথায় সেটাও পরিস্কার করা হয়েছে। অথচ সেগুলো সব এড়িয়ে গিয়ে বলে দিলেন, ‘ব্যাখ্যা না করার পিছনে যে মানসিকতা কাজ করছে, তা হলো আমরা যখন বুঝি না তখন অন্য কেউও বুঝে না’। হীনমন্যতায় যে কে ভুগছে এই মন্তব্য থেকেই কিন্তু সব পরিস্কার।
কোথায় পেয়েছেন যে, পপার প্রকৃতি ও সমাজ বিজ্ঞানের ‘সকল তত্ত্বগুলিকে’ নাকচ করেছেন? তিনি নাকচ করেছেন সেগুলোকেই যেগুলো পরীক্ষা করে যাচাই করা যায় না। যেগুলো পরীক্ষা করে যাচাই করা যায় না সেটা বিজ্ঞানের অংশ হবে কি করে? ফলসিফায়াবিলিটির ক্রাইটেরিয়া না থাকলে যে কোন অপবিজ্ঞানকেই বিজ্ঞান বলে চালানোর চেষ্টা হবে- স্পিরিচুয়ালিটি, তুক তাক সবই। ব্যাপারটা খুব সহজ। কেউ যদি বলেন ‘ইলেকট্রন প্রতোনের চেয়ে ভারী’ – এটা ফলসিফায়েবল কারণ আমরা পরীক্ষা করে এটার সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি। কিন্তু কেউ যদি বলেন –
‘যতবারই আমার কম্পিউটার হ্যাং করে যায়, ততোবারই একটা অদৃশ্য ইউনিকর্ণ আমার পিসির সামনে দিয়ে চলে যায়’ ।
এটা একটা আনফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট কারণ অদৃশ্য ইউনিকর্ণ সত্যই যায় কিনা তা পরীক্ষা করে সত্যমিথ্যা যাচাই করা যাবে না। ঠিক একইভাবে গ্রহ নক্ষত্রের আকর্ষণ মাধ্যাকর্ষণ দিয়ে ব্যাখ্যা না করে স্প্যাগেটি মনস্টার দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাইলে সেটাও এক ধরণের আনফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট হবে। বস্তুত ফলসিফায়াবিলিটিই অপবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান থেকে পৃথক রাখে। এটা বুঝতে খুব অসুবিধা হচ্ছে?
পুরোপুরি ভুল কথা। বিবর্তন সম্পূর্ণ ফলসিফায়েবল (মানে, পরীক্ষা করে ভুল প্রমাণ করা যেতে পারে), ফলসিফায়েড নয়। একদম উপরে আমার প্রথম মন্তব্য দেখুন। কেউ প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগে খরগোশ বা স্তন্যপায়ী প্রানীর ফসিল খুজে পেলে সেটা বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করে দেবে। ঠিক একইভাবে কেউ বিবর্তনের যাত্রাপথে স্ট্যাটিক ফসিল রেকর্ড (অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে ফসিল রেকর্ডের কোন পরিবর্তন হয়নি) খুঁজে পেলে, কিংবা বোরাক, সেন্টুর (অশ্বমানব) কিংবা মারমেইডের (মৎসকন্যা) মতো হাইব্রিড প্রাণী খুঁজে পেলে কিংবা ফসিল রেকর্ডের সাথে জেনেটিক্সের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যদি মিল না পাওয়া গেলে বিবর্তনকে ভুল প্রমান করে দিবে। বিবর্তন তাই ফলসিফায়েবিলিটির বাইরে নয়। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত সেটা করতে পারেনি বিধায় তত্ত্বটি এখনো ফলসিফায়েড হয়নি। সোজা হিসেব।
উল্লেখ্য পপার প্রথমে বিবর্তনকে আনটেস্টেবল ভাবলেও পরবর্তীতে সেটা ফলসিফায়েবল এবং টেস্টেবল বলে স্বীকার করে স্টেটমেন্টও দিয়েছিলেন (“Natural Selection and Its Scientific Status” (Miller 1985, 241-243; see also Popper 1978)। আপনি সেটার খবর হয়তো জানেন না।
সম্পূর্ণ গুলিয়েছেন। বেসিক থেকে শুরু করুন। ‘সব কাক কালো’ -এটা আসলেই একটা ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। এখন কেউ পর্যবেক্ষণ করে কোথাও অন্য রঙের কাক পেলেই সেই স্টেটমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে। পর্যবেক্ষণ করা সেই কাক সাদা হোক, ধোয়াটে হোক কিংবা বেগুনি হোক, কিংবা হোক তামাটে- য়াগেকার করা ‘সব কাক কালো’ এই স্টেটমেন্ট বাতিল বা ফলসিফায়েড হয়ে যাবে। এর জন্য কোন শালিকের কাক হবার দরকার নেই, কিংবা কাকেরও কোকিল হবার দরকার নেই। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল – ফলসিফাই করার মত গুন স্টেটমেন্টে ছিলোই, যেটা আমার আগেকার উদাহরণের অদৃশ্য ইউনিকর্ণের উপমায় ছিল অনুপস্থিত। পপার বলেছেন সেগুলো স্টেটমেন্টকেই আমরা বৈজ্ঞানিক বলব যেগুলোর মধ্যে ফলফিফিকেশন গুণ হিসেবে বিদ্যমান থাকবে।
বিগ ব্যাং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি? এস্ট্রোফিজিক্সের যে ক’টি ধারণা বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে এবং জনমানসে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, বিং ব্যাং তত্ত্ব তার মধ্যে অন্যতম। ইনফ্যাক্ট যে কোন এট্রোফিজিক্সের বই শুরুই হয় বিগ ব্যাং এর ধারণা দিয়ে। মহাবিশ্বের ইতিহাস নিয়ে পাঠ্যপুস্তক কেউ লিখতে চাইলে তারা মূলতঃ বিগ ব্যাং থেকেই শুরু করেন। কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন সহ বহু প্রমাণ (১৯৭৮ এ পেনজিয়াস এবং উইলসন এই আবিস্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পান) বিগ ব্যাংকে সদর্পে বিজ্ঞানের জগতে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। আর আপনি বলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি?
আর ‘আইনেষ্টাইনের কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ বলতে কি বুঝিয়েছেন? আইনস্টাইন যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টের উপর যা কোয়ান্টাম ফিজিক্সে তার প্রামাণ্য অবদান। যদিও আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার জন্যই বেশি বিখ্যাত, কিন্তু তার নোবেল পুরস্কার ছিলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উপরেই। এটাও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, তা না হলে তিনি নোবেল পেতেন না, এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যে কোন টেক্সট বইয়ে আইনস্টাইনের ‘কোয়ান্টা’ এবং ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্টের উল্লেখ থাকে। আইনস্টাইন যেটা করেননি বা পারেননি তা হল কোয়ান্টাম বলবিদ্যারদ্যার পরবর্তী বিকাশের (হাইসেনবার্গ, শ্রোডিংগার প্রমুখ) ইন্টারপ্রিটেশনের সাথে (বিশেষতঃ বোরের দেয়া ইণ্টারপ্রিটেশন) একাত্ম হতে।
আপনি কেন ‘আইনেষ্টাইনের কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ এনে আগডুম বাগডুম করে অযথাই জল ঘোলা করে চলেছেন বুঝতে পারছি। এর আগে কোন রেফারেন্স ছাড়াই বলে দিয়েছিলেন, প্রকাশিত তত্ত্বটি যদি স্বীকৃত কোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে প্রকাশিত তত্ত্বটি স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ হয়। আমি উদাহরণ দিয়ে দেখালাম যে, আপনার বক্তব্য ভুল। বিগ ব্যাং থিওরী স্টেডি স্টেট থিওরীর সাথে ছিলো সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাতে বিগ ব্যাং প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাও ছিলো নিউটনের পরম সময়ের ধারণার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কিন্তু সেজন্য আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার স্বীকৃতি লাভে অসুবিধা হয়নি। আপনি সেগুলোর কোন গ্রহনযোগ্য উত্তর না দিয়ে অযথাই ‘আইনেষ্টাইনের কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ নিয়ে আসলেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অংশ নয়, দুটো আলাদা গণ্ডী। আপনি মূলতঃ একটি ভুল করে সেটা স্বীকার না করে আরো দশটি ভুল করেন সেটাকে ঢাকতে। এতে করে কিন্তু কোন লাভ হয় না।
এটা রবীন্দ্রনাথেরও দাঁড়ি আছে, রাম ছাগলেরও দাঁড়ি আছে – অতএব রবীন্দ্রনাথ রামছাগল – এই টাইপের যুক্তি। মার্ক্সের আর ডারউইনের তত্ত্বের সমালোচনার এন্ট্রি ৩০ মিলিয়নের উপর হলেই মার্ক্সের থিওরী ডারউইনের থিওরীর মত সঠিক (বা বেঠিক) হয়ে যায় না। গুগুল সার্চ করে কত সমালোচনা পাওয়া গেল সেটা কোন তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্রাইটেরিয়া নয়। তত্ত্বকে সঠিক হতে হলে নিজগুণে সঠিক হতে হবে সেটা মার্ক্সেরই হোক আর ডারউইনেরই হোক, গুগুল সার্চে ত্রিশ মিলিয়ন নাকি পঞ্চাশ মিলিয়ন এন্ট্রি পাওয়া গেল তার ভিত্তিতে নয়। কেউ গুগুল এন্ট্রি করে হিটলারেরও ৩০ মিলিয়নের উপর সমালোচনা পেতে পারেন, তা বলে হিটলার মার্ক্সও হবেন না, ডারউইনও হবেন না।
বায়োলজিকাল কোন জার্নালেই বিবর্তনের বিরোধিতা করা হয় না, বরং ডাবঝানস্কি যে কথাটা বহু আগেই বলে গেছেন – “বিবর্তনের আলোকে না দেখলে জীববিজ্ঞানে কোন কিছুরই অর্থ হয় না” – এটা এখন বায়োলজির যে কোন গবেষকই জানেন। সেজন্য ডারউইনের তত্ত্ব বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বই, গুগল সার্চে কত মিলিয়ন সমালোচনা পাওয়া গেল তা নয়।
আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনার যুক্তির দুর্বলতাগুলো? আপনি নেট থেকে ‘ফলস ডাইলেমা’ আর ‘স্ট্রম্যান ফ্যালাসি’ গুলো একটু দেখে নিন। আপনি নিশ্চয় এখন এও বুঝতে পারছেন কেন বক্তব্যকে যুক্তিনিষ্ঠ করে গড়েতুলতে হলে কন্ডিশন বা শর্ত আরোপ করা হয়। না হলে উপরের মত কুযুক্তি দিয়ে যে কেউ পার পেয়ে যেতে পারে। সে হিসেবে কার্ল পপার সঠিক উপসংহারেই পৌঁছেছেন বলা যায়।
যা হোক আমি আশা করব, মহিউদ্দীন সাহেবের মন্তব্যের যে অংশগুলো রিফিউট করেছি, সেগুলোর উনি যৌক্তিক জবাব এই থ্রেডেই দেবেন, তা না করে দু দিন পর হঠাৎ আরেক প্রস্থ মহাকাব্য – যার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়ের কোন সম্পর্ক থাকবে না – সেরকম কিছু লেখার নীচে হাজির করলে আলোচনা কোন সুনির্দিষ্ট দিকে যাবে না, এটি এখনই বলে দেয়া যায়। তবে এ ধরণের সম্পর্কহীন শেষ মন্তব্য করে মেকি জয়ের আস্বাদন লাভ করা যাবে বৈকি, তা মন্তব্য যতই অন্তঃসারশূন্য হোক না কেন।
@অভিজিৎ,
হ্যা, আপনার কথা সত্য, বর্তমান কালে জ্ঞানের অনেক শাখা আছে এবং সংশ্লিষ্ট জ্ঞান শাখার জার্নালও আছে । কিন্তু আমার বক্তব্য আরম্ভ হয়েছিল আদি অর্থাৎ প্রাচীনকাল দিয়ে, যখন লজিক/যুক্তি বা দর্শন ছাড়া আর কোন জ্ঞানের শাখা ছিল না বিধায় তাদের জার্নালও ছিল না ।
এখন প্রশ্ন হলো আদি কালকে কেন নিয়ে আসলাম? উত্তর হলো, লজিকের/যুক্তির প্রথম শর্ত অনুযায়ী বিশ্বব্রম্মান্ডের কোন ঘটনা বা বিষয় ঐশ্বরিক বা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, সকল ঘটনা বা বিষয়ই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল । অতীত কালের মধ্যই বর্তমান কাল নিহিত । তাই বর্তমান কালকে বিশ্লেষণ করতে হলে অতীত কাল চলে আসবে ।
কিন্তু আপনি অতীত কালকে ছাড়াই বর্তমান কালকে বিশ্লেষণ করতে চান, অর্থ্যাৎ বর্তমান কালকে বিচ্ছিন্ন ভাবে বিশ্লেষণ করতে চান, যা লজিক/যুক্তির প্রথম শর্ত ভঙ্গ হয় । তাছাড়া বক্তব্যের খন্ডিত অংশ পূর্ণ বক্তব্যকে প্রতিনিধিত্ব করে না, লজিক/যুক্তির এই শর্তটিও ভঙ্গ করে চলছেন । ফলে আপনার টু দ্য পয়েন্ট, আর আমার টু দ্য পয়েন্ট এর মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায় । তাই এই পার্থক্য যখন নিরসন করতে পারছি না, তখন গালাগালি খাওয়ার চেয়ে এখানেই ক্ষান্ত দেয়া উচিত বলে মনে করি ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
প্রাচীনকাল দিয়ে আরম্ভ হোক, আর বর্তমান কাল দিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে একেক জায়গায় একেক লজিক দিলে তা খাটবে না। আপনি যদি দর্শন থেকে পদার্থবিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে বলে মনে করেন, এবং তাদের জন্য পৃথক জার্নালের ব্যবস্থা রাখেন, তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের থেকে যে শাখাগুলোর জন্ম হয়েছে সেগুলোর জন্যও আলাদা জার্নাল রাখতে হবে। মাঝখানে এসে থেমে গেলে চলবে না। এইটুকুই বলার ছিল।
আপনার অন্য পয়েন্টের ভুলগুলো আগেই ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, আর সে নিয়ে আপনার এবারকার মন্তব্য থেকে আর কোন নতুন কিছু পাওয়া গেলো না, বরং শেষ করেছেন এই বলে –
আপনাকে কোথাওই গালাগালি দেয়া হয় নি। তবুও আপনি সেদিকেই নিয়ে যতে চান বার বার। এই স্ট্রাটিজিতে লাভ হবে না তেমন। তবে ক্ষান্ত যখন দিতে চাচ্ছেন, দিতে পারেন নির্দ্বিধায়।
ভাল থাকুন।
@অভিজিৎ,
আ হা মহিউদ্দিনের “আরেক প্রস্থ মহাকাব্য” থেকে আমি যা উদ্ধার করলাম তাহল একপ্রকারের naive কিন্ত চরমপন্থী rationalism:
এটাই হল মূল কথা। Rationalism-এর কোন coherent সমর্থক মুক্তমনায় থাকলে এ তর্কটা হয়ত অবান্তর নয়, কিন্তু এক্ষেত্রে চুল-ছেঁড়া আলোচনায় প্রবিষ্ট না হওয়াই বোধহয় উত্তম।
@অভিজিৎ,
এখানে মনের মাধুরীর কোন বিষয় নেই, আছে ইতিহাস, যা লজিক/যুক্তির উপর নির্ভরশীল । গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টলের মত ব্যক্তিরা ঐ কালে ছিলেন একাধারে দার্শনিক ও পদার্থবিদ । তাই এটা মনে করার কোন বিষয় নয় ।
যারা কোন বিষয় বা ঘটনাকে ঐশ্বরিক বা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখেন, তাদের কাছে লজিক/যুক্তি হলো অনড় বা স্থিত, যার মধ্যে আপনিও অনর্ভুক্ত । আর আমরা যারা বিষয় বা ঘটনাকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল মনে করি তাদের কাছে লজিক/যুক্তি স্থান, কাল ও পাত্র নির্ভর । তাই আপনার কাছে মনে হয়েছে যে একাক জায়গায় একাক লজিক/যুক্তি প্রয়োগ করছি ।
যারা সব কিছুকে ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে মনে করেন এবং যারা বিষয় বা ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখেন, তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো ১০-২০ ডিগ্রী । কিন্তু এই দুই গ্রুপের সাথে আমাদের পার্থক্য হলো ১৮০-১৬০ ডিগ্রী । তাই আপনার অনড় লজিক/যুক্তির সাথে স্থান, কাল ও পাত্র নির্ভর লজিক/যিক্তির পার্থক্য হলো ১৬০ ডিগ্রীর ।তাই বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত হয়ে, “বিচ্ছিন্ন ও অনড়” না “স্থান, কাল ও পাত্র নির্ভর” লজিক/যুক্তিতে আপনি আস্থাবান তা ব্যক্ত করুন । আপনার লজিক/যুক্তি পছন্দের উপর নির্ভর করে আমার ক্ষান্ত হওয়া ।
তথাস্তু, আমিও ক্ষান্ত দিতেই চাচ্ছি। আমারও অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছে নেই। তাই এই পুরো থ্রেডে মহীউদ্দিন সাহেবের বিভিন্ন মন্তব্যের যুক্তির ভুলগুলোর একটা তালিকা আরেকবার দেখে নিয়ে আমি ইস্তফা দিচ্ছি –
১) উনি প্রথমেই শুরু করেছিলেন এই বলে –
যেটা ছিল ভুল। আমি বলেছিলাম ফলসিফায়েবিলিটির অর্থ ফলসিফাইড প্রমান করা নয়, বরং পরীক্ষণযোগ্যতা আর বাতিলযোগ্যতা আরোপ করা। এই ক্রাইটেরিয়াগুলো না থাকলে কোন ধারণা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না।
২) উনি বলেছিলেন –
উত্তরে আমি বলেছিলাম –
আমি আপনাকে বেশ্যা টেস্যা কিছুই বলিনি। অযথা নিজেকে ভিক্টিমাইজড করবেন না । আমি কখনোই আপনাকে কিছু বলিনি, উনিই বরং একসময় মুক্তমনার মডারেটরদের ‘ঘেউ ঘেউ করা কুকুর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, নামে বেনামে গালিগালাজ করেছিলেন, সেগুলো সবাই জানে।
এই যে আপনার সাথে দীর্ঘ আলোচনা হল, কোথাও আমি একটাও কুশব্দ প্রয়োগ করিনি। আলোচনা সবাই দেখেছে। উনি আর এ নিয়ে কোন কথা বলেননি, যদিও গালাগালির কল্পকথা ইনিয়ে বিনিয়ে আবারো এনেছিলেন একদম শেষে।
৩) উনি বলেছিলেন,
আমি দেখিয়েছিলাম -কোন তত্ত্বকে প্রকাশিত এবং প্রতিষ্ঠিত হতে হলে পুরোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয় বহু সময়েই। বিগ ব্যাং থিওরী স্টেডি স্টেট থিওরীর সাথে ছিলো সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাতে কি বিগ ব্যাং প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাও ছিলো নিউটনের পরম সময়ের ধারণার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কিন্তু স্বীকৃতি লাভে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
৪) উনি বলেছিলেন,
এই মনগড়া ক্যাটাগরির কোন রেফারেন্স দিতে উনি সমর্থ হননি। আমি দেখিয়েছিলেম এ ক্যাটাগরি ভুল। পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য যেমন পদার্থবিজ্ঞানের জার্নাল আছে, তেমনি সমাজবিজ্ঞানের গবেষনার জন্য সামাজিক জার্নাল আছে, অর্থনীতির গবেষণার জন্য অর্থনীতির জার্নাল আছে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য ইঞ্জিনিয়ারং জার্নাল আছে, মেডিকেল এবং ক্লিনিকাল গবেষণার জন্য ক্লিনিকাল জার্নাল আছে ইত্যাদি। উনি সেটা মেনেও নিয়েছিলেন, কিন্তু তারপর আবারো আদিকালে কি ছিলো ইত্যাদি বলে আপনার ভুল কথার বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছেন শেষ দুটি মন্তব্য জুড়ে যেটার আসলে কোনই অর্থ হয় না।
৫) উনি বলেছিলেন,
আর আমি উনার লেখা থেকেই উদ্ধৃত করে দেখিয়েছি – উনার মত যুক্তিবান (মনে করা) মানুষেরাই ফলস ডাইলেমা’ আর ‘স্ট্রম্যান ফ্যালাসি’ দিয়ে আক্রান্ত।
৬) উনি বলেছিলেন,
আমি দেখিয়েছি যে পপার তা করেননি। তিনি নাকচ করেছেন সেগুলোকেই যেগুলো পরীক্ষা করে যাচাই করা যায় না। যেমন পিসির হ্যাং করে যাওয়ার সাথে অদৃশ্য ইউনিকর্ণ থাকার অনুকল্পটি আনফলসিফায়েবল, কারণ সেটা পড়িক্ষা করে যাচাই করা যায় না। কিন্তু ইলেকট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারী – এই অনুকল্প পরীক্ষা করে যাচাই করা যায়, তাই এটা বিজ্ঞানের অংশ। উনি এর কোন জবাব দেন নি।
৭) উনি বলেছিলেন,
আমি দেখিয়েছিলাম এটি ভুল। বিবর্তন সম্পূর্ণ ফলসিফায়েবল (মানে, পরীক্ষা করে ভুল প্রমাণ করা যেতে পারে), ফলসিফায়েড নয়। পপার যে পরে বিবর্তনকে ফলসিফায়েবল আর টেস্টেবল বলেছিলেন, সেটার রেফারেন্সও দেয়া হয়েছে। উনিএর উত্তরে কিছু বলেননি।
৮) উনি ‘সব কাক কালো’ এই স্টেটমেন্টের বিপরীতে রেভেন প্যারাডক্স নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, বলেছিলেন,
আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘সব কাক কালো’ -এটা আসলেই একটা ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। এখন কেউ পর্যবেক্ষণ করে কোথাও অন্য রঙের কাক পেলেই সেই স্টেটমেন্ট বাতিল হয়ে যাবে। পর্যবেক্ষণ করা সেই কাক সাদা হোক, ধোয়াটে হোক কিংবা বেগুনি হোক, কিংবা হোক তামাটে- আগেকার করা ‘সব কাক কালো’ এই স্টেটমেন্ট বাতিল বা ফলসিফায়েড হয়ে যাবে। এর জন্য কোন শালিকের কাক হবার দরকার নেই, কিংবা কাকেরও কোকিল হবার দরকার নেই।
৯) উনি সম্পূর্ণ ভুল ভাবে বলেছিলেন-
আমি বলেছিলাম এটা ভুল। অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের যে ক’টি ধারণা বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে এবং জনমানসে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, বিং ব্যাং তত্ত্ব তার মধ্যে অন্যতম। ইনফ্যাক্ট যে কোন এট্রোফিজিক্সের বই শুরুই হয় বিগ ব্যাং এর ধারণা দিয়ে। আর আইনস্টাইন যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টের উপর যা কোয়ান্টাম ফিজিক্সে তার প্রামাণ্য অবদান। দুটোই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। উনি এর উত্তরে আর কিছু বলেননি।
১০) উনি হাস্যকরভাবেই গুগল এন্ট্রির উদাহরণ এনে মার্কসকে ডারউইনের সাথে এক কাতারে ফেলে বলেছেন –
আমি দেখিয়েছিলাম – এটা রবীন্দ্রনাথেরও দাঁড়ি আছে, রাম ছাগলেরও দাঁড়ি আছে – অতএব রবীন্দ্রনাথ রামছাগল – এই টাইপের যুক্তি। মার্ক্সের আর ডারউইনের তত্ত্বের সমালোচনার এন্ট্রি ৩০ মিলিয়নের উপর হলেই মার্ক্সের থিওরী ডারউইনের থিওরীর মত সঠিক (বা বেঠিক) হয়ে যায় না। গুগুল সার্চ করে কত সমালোচনা পাওয়া গেল সেটা কোন তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্রাইটেরিয়া নয়। তত্ত্বকে সঠিক হতে হলে নিজগুণে সঠিক হতে হবে সেটা মার্ক্সেরই হোক আর ডারউইনেরই হোক, গুগুল সার্চে ত্রিশ মিলিয়ন নাকি পঞ্চাশ মিলিয়ন এন্ট্রি পাওয়া গেল তার ভিত্তিতে নয়। কেউ গুগুল এন্ট্রি করে হিটলারেরও ৩০ মিলিয়নের উপর সমালোচনা পেতে পারেন, তা বলে হিটলার মার্ক্সও হবেন না, ডারউইনও হবেন না। এটারও কোণ উত্তর পাওয়া যায় নি,
১১) বরং উনি শেষ করেছিলেন এই বলে –
আবারো তাকে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছিল যে তাকে কোন গালাগালি করা হয়নি আমার তরফ থেকে। উনি কোন রেফারেন্স দিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবারেও।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মহীউদ্দিন সাহেব আমার দেয়া যুক্তিগুলোর খণ্ডন করেননি, বরং আমাকে এখন অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলছেন, যে আমি নাকি লজিক/যুক্তিকে ‘ঐশ্বরিক বা বিচ্ছিন্ন ভাবে’ দেখছি, আর উনি নাকি দেখছেন ‘পরস্পর সম্পর্কযুক্ত’ হিসেবে। আমি মহীউদ্দিন সাহেবের দশ/এগারো টি ভুল যুক্তি/কথার তালিকা দিয়েছি, যেগুলোর জোরালো কোন খণ্ডন উনার থেকে পাওয়া যায়নি, অনেক ক্ষেত্রে এড়িয়েই গেছেন। কাজেই কে যুক্তিকে ঐশ্বরিক বা বিচ্ছিন্ন ভাবে’ দেখছে আর কে ‘পরস্পর সম্পর্কযুক্ত’ হিসেবে দেখছে – যারা উপরের আলোচনা প্রত্যক্ষ করেছেন সবাই মোটামুটি বুঝেছেন বলে আমি আশা করছি। পুরো আলোচনার বিচারের ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিয়ে আমি এবং মহীউদ্দিন সাহেব এই অনর্থক তর্ক থেকে ক্ষান্ত দিতে পারি সানন্দে।
পুনশ্চ
কোন তত্ত্ব প্রকাশের আন্তর্জাতিক জার্নাল দু’টি, যার একটিকে বলে বিজ্ঞান জার্নাল এবং অন্যটি হলো দার্শন জার্নাল । এই দু’টি জার্নাল ঐক্যমত পোষণ করলেই তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পায় । তাই স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে যে কোন তত্ত্ব এই দু’টি জার্নালে প্রকাশিত হয় । প্রকাশিত তত্ত্বটি যদি স্বীকৃত কোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে প্রকাশিত তত্ত্বটি স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ হয় । জার্নাল দুটিতে প্রকাশিত পপারের ফলসিফিয়েবিলিটি তত্ত্বটি এখনও বিবেচনাধীন । তাই বলা হয়েছে তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নয় । নেট থেকে উদ্ধৃত প্রবন্ধটি ভাল করে পড়ুন, তাহলে বুঝবেন স্থলাভিষিক্ত বলতে কি বুঝানো হয়েছে ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
এই ক্যাটাগরি কি আপনার করা নাকি? পৃথিবীতে খালি দুই ক্যাটাগরির জার্নাল আছে? ‘বিজ্ঞান জার্নাল’, ‘দার্শন জার্নাল’ ? সামাজিক জার্নালগুলো কি হবে? অর্থনীতির গবেষণামূলক জার্নালের কি হবে? নারীবাদের উপরও জার্নাল আছে, জানেন? পৃথিবীতে খালি সাদা আর কালোর মতো ‘একটিকে বলে বিজ্ঞান জার্নাল’ এবং ‘অন্যটি হলো দার্শন জার্নাল’ বলে চলে গেলেই হবে নাকি?
এটা বোকার মত কথা হল। নতুন তত্ত্বকে প্রকাশিত এবং প্রতিষ্ঠিত হতে হলে পুরোন তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয় বহু সময়েই। বিগ ব্যাং থিওরী স্টেডি স্টেট থিওরীর সাথে ছিলো সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাতে কি বিগ ব্যাং প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাও ছিলো নিউটনের পরম সময়ের ধারণার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাতে কি হল? আইনস্টাইনের তত্ত্ব কি ‘স্বীকৃতি লাভে ব্যর্থ’ হয়েছে? বিজ্ঞানের কাজ কেবল ধর্ম আর ডগমার অনুসারীদের মত পুরোন তত্ত্বের স্তব করা নয়। নতুন অনুসন্ধানে পুরানো বিষয়ের সাথে সংঘর্ষ হতেই পারে, এবং হয়ও।
ধর্মগুরুর মত এটা করুন ওটা করুন বললে তো হবে না। লেখাটা পড়েই আমি আমার অভিমত দিয়েছি। আপনার মত মার্ক্সিস্টরা স্বীয় ধারণায় মনেই করবেন, ‘তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নয়’, কারন ওটা আপনাদের ডগমার ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছে। কিন্তু অন্ধ হলে তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। পরীক্ষণযোগ্যতা ছাড়া কোন তত্ত্বই বিজ্ঞানে অন্তর্ভুক্ত হয় না, সেটা আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন।
@অভিজিৎ,
সাদা কালোর এই ব্যাপারটা কিন্তু Raven Paradox এর অংশ। অতএব সাবধান।
@রৌরব,
হাঃ হাঃ তাই তো দেখি – এই সাদা ও কালোর মাঝে আরো যে অনেকগুলি রং আছে, (যাকে নাকি বলে Raven Paradox ) -এই জ্ঞান দিয়ে গেলেন উপরেই – সেই তিনিই আবার ‘বিজ্ঞান জার্নাল’ আর ‘দার্শন জার্নাল’ ছাড়া আর পৃথিবীতে কিছু খুঁজে পান না। অন্য জার্ণালগুলো তার আরো যে অনেকগুলি রং এর মতই সময় এবং সুযোগ মত জানালা গলে পালিয়ে যায়! এই না হলে আর Raven Paradox ।
নেট থেকে যার বক্তব্যটি উদ্ধৃতি হয়েছে, তিনি কোন যদু-মধু নন, তিনি একজন সিসটেম গবেষক ও পেশাদার সমালোচক । ভদ্রলোকের যুক্তির সাথে ঐক্যমত পোষণ করি বিধায় এবং টু দ্য পয়েন্টে উত্তর দেয়ার লক্ষ্যে তার বক্তব্য উদ্ধৃত করেছি । কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার বা ঐ ভদ্রলোকের লজিক বা যুক্তি বুঝতে অভিজিৎ অক্ষম । ফলসিফিয়েবিলিটি নামের শর্ত আরোপ করে যুক্তি/লজিক প্রয়োগ করা যায় না ।
পপার সব কিছু মূল্যায়ন করতে চান সাদা ও কালো হিসাবে । এই সাদা ও কালোর মাঝে আরো যে অনেকগুলি রং আছে, তা তিনি বিবেচনায় নিতে চান না । এটাকে বলে Raven Paradox ।আশা করি রৌরব তার উত্তর পেয়ে গেছেন ।
বিজ্ঞানের যে সকল শাখা পর্যবেক্ষণমূলক এবং বর্ণনামূলক সেগুলোকে পপার বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করতে চান না । অভিজিতের সমস্যা হলো তিনি ডুডুও খাবেন, আবার টামুকও খাবেন, অর্থ্যাৎ তিনি পপারের ফলসিফিয়েবিলিটি তত্ত্বে আস্থা রাখেন, আবার ডারিউনের প্রানী বিবর্তন তত্ত্বকেও বিজ্ঞান মনে করবেন । যাক, তিনি যা খুশি তাই করতে পাড়েন, আমার মতো আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে কোন লাভ নাই ।
নেট থেকে উক্ত লেখাটি উদ্ধৃত করার আর একটি কারণ হলো, আমি অভিজিতের সাথে সরাসরি বিতর্ক নামের আলোচনা করতে ইচ্ছুক নই । কারন সব দোষ জনাবা (মুক্তমনা এডমিনের মতে বেশ্যা) সেতারা হাশেম নামধারী মহিউদ্দীন নামের নন্দ ঘোষের । তাই আর অপমানিত হোতে চাই না । আমি তখনই অভিজিতের সাথে বিতর্কে/আলোচনায় অবতীর্ণ হবো, যখন বুঝবো তিনি আমাকে আর অপমানিত করবেন না । আপনার জন্য রইলো সুভকামনা ।
আপনাকে জনাবা মুক্তমনা এডমিন বলে নি, বলেছি আমি। মুক্তমনা এডমিন একটা নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ, নিরপেক্ষ এবং নিরাকার বহুসত্ত্বার মিশ্রন। খামোখা তাঁকে এর মধ্যে জড়াবেন না।
আপনি হয়তো মজার বিষয়টা খেয়াল করেন নি। আহা মহিউদ্দীন যে সেতারা হাশেম নামধারী নন্দঘোষ সেটা কিন্তু আপনি নিজেই স্বীকার করে ফেললেন। অথচ মাত্র কদিন আগেই না কী বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন আমার বিরুদ্ধে। 🙂
এই বিষয়টা অন্যদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। আপনি যখন অভিকে বলেন যে, আমার বা ঐ ভদ্রলোকের লজিক বা যুক্তি অভিজিৎ বুঝতে অক্ষম, তখন তাঁকেও অপমান করা হয়।
@আ হা মহিউদ্দীন,
আমি আপনাকে বেশ্যা টেস্যা কিছুই বলিনি। অযথা নিজেকে ভিক্টিমাইজড করে মেকি সহানুভূতি আদায়ের ধান্ধা করে লাভ হবে না। আমি কখনোই আপনাকে কিছু বলিনি, আপনিই বরং একসময় মুক্তমনার মডারেটরদের ‘ঘেউ ঘেউ করা কুকুর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন, নামে বেনামে গালিগালাজ করেছিলেন, সেগুলো সবাই জানে। মুক্তমনার প্রতি এত বিরাগ, অথচ ঠিকি দু দিন পর পর ঘুরে ঘুরে মুক্তমনাতেই চলে আসেন। তা আসুন কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু এখানে আলোচনা করতে চাইলে সুস্থভাবে আলোচনা করুন। পপারের কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, সেটা বাদ দিয়ে আমার সাথে আপনি কেন আলোচনা করতে চান না, আর বেশ্যা টেস্যা প্রসঙ্গ নিয়ে অবান্তর প্রসঙ্গ আসলেন, যেগুলো আমি কখনোই আপনাকে বলিনি। অবান্তর বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে বহু ব্লগ সাইট আছে এখন। সেখানে গিয়ে আলোচনা করতে পারেন। কেউ বাধা দিবে না।
@আ হা মহিউদ্দীন,
স্পষ্ট হয় নি, এবং ভবিষ্যতেও হবে না বলে আশা রাখি।
@রৌরব,
আপনার বক্তব্য “স্পষ্ট হয় নি, এবং ভবিষ্যতেও হবে না বলে আশা রাখি” লজিক বা যুক্তির কোন ধারায় এই বক্তব্য পড়ে তা যদি বুঝেন, তাহলে রাভেন প্যারাডক্স বুঝবেন ।আর যদি না বুঝেন,তা হলে বলতে হয়, যারা জেগে ঘুমায় তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানো যায় না । তবে যাই হউক, নীচের প্রবন্ধটি পড়ুন ।
RAVEN PARADOX
THE FLAWS IN THE SCIENTIFIC METHOD
All scientists use reasoning and logic at some stage, to create hypotheses and design robust experiments.
by Martyn Shuttleworth (2008)
HEMPEL’S LOGIC
In a beautiful and elegant treatise, the German philosopher Carl G Hempel, in 1965, showed that there were flaws in these long-established processes. His Raven Paradox called into question the established processes of inductive reasoning, generalization and falsifiability.
THE INDUCTIVE HYPOTHESIS
Imagine that a scientist, after years of going for long walks in the countryside, observes that every single raven he has ever seen is black.
As a dutiful researcher, he uses inductive reasoning to postulate the hypothesis:
“All ravens are black.”
This is a perfectly acceptable conditional hypothesis. Firstly, it is testable, because you could sample raven populations and verify that they are all black.
The statement is also falsifiable because even one non-black raven amongst the sampled population would disprove the hypothesis.
This is all great science, so far, following the established methods of inductive reasoning. The researcher could even design an experiment to sample raven populations, with thousands of ravens observed.
If they are all black, the hypothesis is supported and plausible. Over time, repeated experiments and observations further confirm this and the hypothesis becomes accepted as a law.
THE PROBLEM OF GENERALIZATION AND FALSIFIABILITY
The first part of the Raven Paradox proposal questions the process of generalization.
It is practically impossible to sample every single raven in the world and there may be a few non-black individuals. Hempel was not trying to comment upon the exact science, but as an interesting aside, about 1 in 10 000 raven eggs contain partially or fully albino birds.
Most albino birds are more visible to predators, suffer from health problems and may be a localized phenomenon. The odds of seeing an albino raven are very small and sightings are extremely rare. A researcher could sample many thousands of Ravens and not see one white bird, even though they do exist.
Thus, the notion of falsifiability is questioned and undermined by the Raven Paradox. Although the original hypothesis is technically falsifiable, in practical terms it is very difficult to disprove, because the chances of observing a white Raven are very slim.
Even if you sampled the entire known population of ravens, there may be an undiscovered group containing a non-black individual.
FLAWS IN THE INDUCTIVE REASONING PROCESS
The next part of the Raven Paradox questions the processes of inductive and deduction reasoning that are an integral part of the scientific process.
When a researcher states that all ravens are black, the laws of logic demand that this conditional statement has a contrapositive, statement.
Therefore, according to inductive reasoning, “Everything that is not black is not a raven.” This means that every non-black object observed, that is not a raven, equally strengthens the hypothesis. There are a countless number of non-black objects in the universe and we should pity the poor statistician who has to analyze this!
To take the analogy further, another researcher in another part of world, through fluke, may have only seen one raven in their life, which happened to be white. Their deduced hypothesis may be that “All ravens are white.” Every non-white object, which is not a raven, strengthens this opposing hypothesis too. This is the Raven Paradox.
THE END OF THE SCIENTIFIC PROCESS?
What does this paradox mean? Has the world of science come crashing down around our ears?
The answer is a resounding NO!
The Raven Paradox is a useful philosophical observation and helps to ensure that we constantly probe and test the steps of the established scientific processes.
The examples given in the paradox are simplistic and unlikely, merely serving as an exercise to test the boundaries of the philosophy of science.
In reality, for the vast majority of cases, Hempel’s treatise makes no difference and the normal reasoning and experimental design processes work perfectly well.
The paradox does not detract from science, but actually enhances it, by preventing scientists from believing that they have proved something beyond doubt.
The Raven Paradox should remind every scientist of the dangers of generalization and that they must ensure that all hypotheses are realistically falsifiable. If the researcher has said, “All ravens in Norway are black”, this is more realistic as ornithologists could feasibly observe every raven in Norway.
PARADIGM SHIFTS
Even long-standing theories, which became established as laws and immovable paradigms, can be proved incorrect over time.
Science is really all about testing probabilities and assumption. If something has a 99% chance of being correct then it should be accepted as the likely explanation.
The chances of someone seeing only one raven in their life, which happens to be white, are tiny.
However, this is not the same as impossible and that possibility must never be ignored. This is why all experiments are rigorously validated and reviewed before gaining widespread acceptance, to minimize the effects of the Raven Paradox.
For example, Newton’s laws were accepted as truth until Einstein’s theories blew them out of the water.
In turn, General Relativity is not the answer to fundamental physics and has been superseded by other theories.
This is how science evolves, by challenging and adapting established paradigms and laws. The creation of Chaos Theory was a perfect example of ‘maverick’ scientists chipping away at the established laws until the theory could no longer be ignored. It eventually burst into the public consciousness and fractal models appeared as prints on T-Shirts.
Hempel’s Raven Paradox stands to remind us all that no theory, however established, should be immune to challenge or debate. As new evidence is uncovered, science must adapt and change to assimilate the new data.
Report Spelling Errors
Read more: http://www.experiment-resources.com/raven-paradox.html#ixzz1SvMlMte7
@আ হা মহিউদ্দীন,
আমার ইনিশিয়াল মন্তব্য ছিল:
তার জবাবে আপনি এই প্রবন্ধ পাঠালেন যেখানে বলা হচ্ছে
অসংখ্য ধন্যবাদ 😀
এনিওয়ে, যদিও আমার প্রাথমিক মন্তব্য ছিল ফলসিফায়িবিলিটি নিয়ে, পুরো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়ে নয়, তারপরও প্রবন্ধ যখন একটা টুকেছেন….
প্রাবন্ধিক যথারীতি ভুল করে বসে আছেন। chances very slim বলেই তো ফলসিফায়েবিলিটি একটি open ended process! এখানে undermine তো দূরের কথা, ধারণাটি সমর্থন পেল বলে মনে হচ্ছে। লাখ বছর পরেও সাদা, কালো, বেগুলি, গু-কালার ইত্যাদি raven থাকার সম্ভাবনা রয়ে গেল বলেই না ফলসিফায়েবিলিটির সম্ভাবনাও রয়ে গেল, এবং সেই সম্ভাবনা কখনই কাটিয়ে দেয়া চলেনা!!!
তবে Raven Paradox এর মূল ব্যাপার ফলসিফায়েবিলিটি নয় মোটেই, বরং ইনডাকটিভ রিজনিং, যেটাকে মাঝারি ধরনের ইন্টারেস্টিং বলেছি আগেই।
equally? দার্শনিকদের সমস্যা হল, তারা quantitatively চিন্তা করতে মোটামুটি অক্ষম। একটি quantitative phenomena কে বড় বড় ক্যাটাগোরাইজেশনের উপর প্রক্ষিপ্ত করে অযথাই মোচড়ামোচড়ি করতে থাকেন। উইকিপিডিয়ায় যে বেয়েসিয়ান ব্যাখ্যাটি দেয়া হয়েছে, চোখ বুলিয়ে তাকে মন্দ মনে হয় নি।
ধর্মবেত্তা এবং কমিউনিস্টদের এই কথাটি না শুনিয়ে বিজ্ঞানীদের কেন বলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সাধারণ কথ্য ভাষায় “beyond doubt” কথাটি ব্যবহার করলেও doubt যে সবসময়ই থেকে যায় এটা না বুঝতে কোন বিজ্ঞানীকে আমি দেখিনি।
আমার কাছে ফলসিফিয়াবল (Falsifiable) শব্দটির অর্থ হলো Capable of being falsified or able to be proven false, and therefore testable.
অতএব আমি বা লেখক কোন কিছুই গুলিয়ে ফেলি নাই ।
স্থলাভিষিক্ত ও পরিমার্জিত শব্দ দু’টির অর্থ ভিন্ন ।
Falsifiability, as defined by the philosopher, Karl Popper, defines the inherent testability of any scientific hypothesis.
by Martyn Shuttleworth (2008)
Science and philosophy have always worked together to try to uncover truths about the world and the universe around us. Both are a necessary element for the advancement of knowledge and the development of human society.
Scientists design experiments and try to obtain results verifying or disproving a hypothesis, but philosophers are the driving force in determining what factors determine the validity of scientific results.
Often, they even determine the nature of science itself and influence the direction of viable research. As one theory is falsified, another evolves to replace it and explain the new observations.
One of the tenets behind science is that any scientific hypothesis and resultant experimental design must be inherently falsifiable. Although falsifiability is not universally accepted, it is still the foundation of the majority of scientific experiments.
WHAT IS FALSIFIABILITY?
In its basic form, falsifiability is the belief that for any hypothesis to have credence, it must be inherently disprovable before it can become accepted as a scientific hypothesis or theory.
For example, if a scientist asks, “Does God exist?” then this can never be science because it is a theory that cannot be disproved.
The idea is that no theory is completely correct, but if not falsified, it can be accepted as truth.
For example, Newton’s Theory of Gravity was accepted as truth for centuries, because objects do not randomly float away from the earth. It appeared to fit the figures obtained by experimentation and research, but was always subject to testing.
However, later research showed that, at quantum levels, Newton’s laws break down and so the theory is no longer accepted as truth. This is not to say that his ideas are now useless, as the principles are still used by NASA to plot the courses of satellites and space probes.
Popper saw falsifiability as a black and white definition, that if a theory is falsifiable, it is scientific, and if not, then it is unscientific. Whilst most ‘pure’ sciences do adhere to this strict definition, pseudo-sciences may fall somewhere between the two extremes.
PSEUDO SCIENCE
According to Popper, many branches of applied science, especially social science, are not scientific because they have no potential for falsification.
Anthropology and sociology, for example, often use case studies to observe people in their natural environment without actually testing any specific hypotheses or theories.
Whilst such studies and ideas are not falsifiable, most would agree that they are scientific because they significantly advance human knowledge.
Even ‘pure’ or ‘true’ science must make compromises and assumptions on occasion. The testing of any theory must take into account the equipment and resources available.
Falsifiability is not a simple black and white matter because a theory, which is difficult to falsify at the time, may be falsified in the future.
The Raven Paradox shows the inherent danger of relying on falsifiability, because very few scientific experiments can measure all of the data, and rely upon generalization.
CONCLUSION
For many of the pure sciences, the idea of falsifiability is a useful tool for generating theories that are testable and realistic.
If a falsifiable theory is tested and the results are significant, then it can become accepted as a scientific truth.
The advantage of Popper’s idea is that such truths can be falsified when more knowledge and resources are available. Even long accepted theories such as Gravity, Relativity and Evolution are increasingly challenged and adapted.
The major disadvantage of falsifiability is that it is very strict in its definitions and does not take into account that many sciences are observational and descriptive.
Pseudo sciences undertake research without an initial theory or hypothesis. On the other hand, theories such as ‘Intelligent Design’ would be classed as scientific, because they have a falsifiable hypothesis, however weak.
Read more: http://www.experiment-resources.com/falsifiability.html#ixzz1SlP8xNvU
@আ হা মহিউদ্দীন,
Raven paradox টা মাঝারি রকম ইন্টারেস্টিং মনে হল, তবে উইকিপিডিয়া পড়ে ঠিক বুঝলাম না ফলসিফায়েবিলিটির সাথে সম্পর্কটি। প্যারাডক্স-ম্যারাডক্স সত্বেও “সব কাক কালো” স্টেটমেন্টটি ফলসিফায়েবল।
@আ হা মহিউদ্দীন,
ঠিক যে জায়গাটায় প্রশ্ন বা বিভ্রান্তি ছিল সেটার টু দ্য পয়েন্ট উত্তর না দিয়ে নেট থেকে অন্যের পুরো লেখা উঠিয়ে দিয়ে লাভ কি?
দেখুন, আপনি আগেই বলেছিলেন, পপারের ফলসিবিলিটি দর্শনের কাজ হলো বিজ্ঞানের ফলাফলের বৈধতা নির্নয়ের ফ্যাক্টরগুলিকে ফলসিফাইড প্রমান করা ।
কিন্তু আমি বললাম – পপারের ফলসিফায়াবিলিটি (ফলসিবিলিটি নয়)র ধারণার অর্থ হল যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্মানের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ যোগ্যতা আর বাতিলযোগ্যতাকে বৈশিষ্ট হিসেবে রাখতে হবে,…
আমি এটা বলার পর এখন বলছেন – আপনার কাছে ফলসিফায়েবল শব্দের অর্থ হল – “Capable of being falsified or able to be proven false, and therefore testable”.
এটা ঠিক আছে, মেনে নিলাম। কিন্তু প্রথমে যেটা বলেছিলেন সেটা ঠিক নয়। সেটা এখনো ভুল। Capable of being falsified মানে ফলসিফাইড প্রমান করা নয় (যেটা আপনি আগে প্রথম মন্তব্যে বলেছিলেন); Capable of being falsified মানে ভুল প্রমাণ করার যোগ্যতা বা এক কথায় বললে – ‘বাতিলযোগ্যতা’ কিংবা ‘মিথ্যাপ্রতিপাদনযোগ্যতা’ বলা যায়। মানে যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মিথ্যা প্রতিপাদন করার মত গুন থাকতে হবে। এটাই মোদ্দা কথা। সমস্ত বৈজ্ঞানিক জার্নালে কোন কিছুকে যখন তত্ত্ব হিসেবে যখন গ্রহণ করা হয়, বাতিলযোগ্যতা একটি যথার্থ ক্রাইটেরিয়া হিবেই গৃহীত হয় সব সময়ই।
এ নিয়ে বেশি কিছু আর বলার না থাকলে এখানেই ক্ষান্ত দেয়া যায়।
আপনার লেখা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতি ফলসিফিকেশান একনিষ্ঠ নয়, এই অনুযোগ করছেন। এটা অবশ্য পপার নিজে অবগত ছিলেন। পূর্বাভাস না মিললে ঘোষণা দিয়ে সাদা পতাকা উড়িয়ে তত্ত্বকে বাতিল করার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে তত্ত্বকে পরিমার্জন করা হয়। এটাকে অনেকটা এভাবে দেখতে পারেন যে আসলে নীরবে পূর্বের তত্ত্বকে বাতিল করা হয়েছে। পরিমার্জিত তত্ত্বটি নতুন তত্ত্ব।
আমার ইদানিংকার ভাবনা বলি। বিজ্ঞানের প্রকৃত জগত বা বাস্তবতা কী? বিজ্ঞানের তত্ত্ব যেহেতু পর্যবেক্ষণ দ্বারা যাচাই হতেই হয়, ফলে বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষকের অস্তিত্ব হলো স্বীকার্য। কারণ পর্যবেক্ষক বিনা পর্যবেক্ষণের কথা বলা অর্থহীন। ফলে বিজ্ঞানের বাস্তবতা হলো পর্যবেক্ষকের বাস্তবতা। এর বাইরে পর্যবেক্ষক-নিরপেক্ষ প্রকৃত-জগতের বাস্তবতার কথা বলার মধ্যে স্বর্গপ্রাপ্তি-অভিলাষের একটা ওজর আছে।
বিজ্ঞানে অনেক সময়ই নৈর্ব্যক্তিকতার দাবি করা হয়। কিন্তু নৈর্ব্যক্তিকতার যেকোন দাবি কিন্তু বিপদাপন্ন। কীভাবে নির্ধারণ করা যাবে যে পর্যবেক্ষক ক ও খ একই বস্তু দেখছেন? কোনও মহাপর্যবেক্ষক কী বিদ্যমান যিনি সেটা নিশ্চিত করবেন। এমন কেউ নেই। ফলে নৈর্ব্যক্তিকতার একমাত্র যাচাই হলো পর্যবেক্ষক ক ও খ উভয়েই মাথা নেড়ে নেড়ে বলবে, হুঁ, হুঁ, একই বস্তুই দেখছি আমরা। পর্যবেক্ষক ছাড়া যেহেতু পর্যবেক্ষণ নেই, ব্যক্তি ছাড়াও নৈর্ব্যক্তিকতা নিশ্চিত করার উপায় নেই। ফলে নৈর্ব্যক্তিকতা বিজ্ঞানসুলভ নয়। ব্যক্তিক অভিজ্ঞতাই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। আর নৈর্ব্যক্তিকতা হলো যাচাইবিহীন গণিতের মতো। কারও কারও পর্যবেক্ষণ-ঊর্ধ্ব প্রকৃত জগতের মতো।
আমার লাস্ট ফেইসবুক নোটঃ
@রূপম (ধ্রুব),
মানে রূপম দেখছে বলেই চাঁদ ওঠে???
মানব সভ্যতার ,জৈবিক ইতিহাসের আগে চাঁদের অস্তিত্ব ছিল না?
@রূপম (ধ্রুব),
(Y), যথারীতি।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার মন্তব্য দেখার পর আমার রবীন্দ্রনাথ আর আইনস্টাইনের বিখ্যাত ডায়লগগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যেটা নিয়ে আমি আমার রবীন্দ্রে বিজ্ঞান লেখাটা লিখেছিলাম –
আইনস্টাইন : মহাবিশ্বের স্বরূপ নিয়ে দুটি ধারণা রয়েছে – জগৎ হল একটি একক সত্তা যা মনুষ্যত্ত্বের ওপর নির্ভরশীল, এবং অন্যটি হল জগৎ একটি বাস্তবতা যা মনুষ্য উপাদানের ওপর নির্ভর করে না।
রবীন্দ্রনাথ : যখন আমাদের মহাবিশ্ব মানুষের সাথে ঐকতানে বিরাজ করে তখন শাশ্বত, যাকে আমরা সত্য বলে জানি, হয়ে দাঁড়ায় সৌন্দর্য, আমাদের অনুভুতিতে।
আইনস্টাইন : এটি মহাবিশ্ব সম্পর্কে পরিশুদ্ধভাবেই মানবীয় ধারণা।
রবীন্দ্রনাথ : এ ছাড়া অন্য কোন ধারণা থাকতে পারে না। এই জগৎ বস্তুত মানবীয় জগৎ- এর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিও হল বিজ্ঞানী মানুষের দৃষ্টি। সুতরাং, আমাদের ছাড়া বিশ্ব জগতের অস্তিত্ব নেই; এটি হল আপেক্ষিক জগৎ, যার বাস্তবতা আমাদের চেতনার ওপর নির্ভরশীল । যুক্তি ও আনন্দভোগের কতিপয় প্রামাণ্য রয়েছে যার মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হয়; এই সত্যই হল শাশ্বত মানুষের প্রামাণ্য যার অভিজ্ঞতা পুঞ্জীভুত হচ্ছে আমাদের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই।
আইনস্টাইন : এ তো হল মনুষ্য সত্তার উপলব্ধি।
রবীন্দ্রনাথ : হ্যাঁ, এক শাশ্বত সত্তা। আমাদের এটি উপলব্ধি করতে হবে আমাদের আবেগ ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। আমরা মহামানবকে এভাবেই উপলব্ধি করি, আমাদের সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে, যে মহামানবের কোন স্বতন্ত্র সীমাবদ্ধতা নেই; এটি হল সত্যের নৈর্ব্যাক্তিক মানবীয় জগৎ। ধর্ম এসব সত্যের উপলব্ধি করে, এবং আমাদের গভীরতম কামনার সাথে সংযোগ স্থাপন করে; সত্য সম্পর্কে আমাদের ব্যক্তি চেতনা বিশ্বজনীন তাৎপর্য অর্জন করে থাকে। ধর্ম সত্যের ওপর মূল্যবোধ আরোপ করে থাকে, এবং আমরা জানি যে এর সাথে আমাদের স্ব ঐকতানের মিলনের মধ্য দিয়ে এই সত্য মঙ্গলময় বলে প্রতিভাত হয়।
আইনস্টাইন : সত্য তাহলে, অথবা সৌন্দর্য মানুষের অস্তিত্ব নিরপেক্ষ কিছু নয় ?
রবীন্দ্রনাথ : না। আমি তা মনে করি না।
আইনস্টাইন : মানুষের অস্তিত্ব যদি নাই থাকে, তাহলে বেলভেদরের অ্যাপোলোর সৌন্দর্যের অস্তিত্ব থাকবে না ?
রবীন্দ্রনাথ : না।
আইনস্টাইন : সৌন্দর্য সম্পর্কে আপনার এ ধারণার সাথে আমি এক মত, কিন্তু সত্য সম্পর্কে এ ধারণার সাথে একমত নই।
রবীন্দ্রনাথ : কেন নন ? সত্য তো মানুষের ভেতর দিয়েই প্রতিভাত হয়।…
স্টিফেন হকিং এর গ্রান্ড ডিজাইন বইয়ে মডেল সেন্ট্রিক রিয়ালিজম বা প্রতিরূপ কেন্দ্রিক বাস্তবতা পড়ার পর নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়ে সংশয় আরো বেড়েছে। ভাবছি স্টিফেন হকিং এর এই মডেল সেন্ট্রিক রিয়ালিজম ঠিক কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে একটি লেখা লিখব, যদিও সেটা বিতর্কের উর্ধে উঠবে না বোধ হয়। আর বিপ্লব যে প্রশ্নটা করেছে, ‘মানে রূপম দেখছে বলেই চাঁদ ওঠে?’ এটা এই সংক্রান্ত দর্শনের পুরোন সমস্যা। এ প্রশ্নটা আইনস্টাইনেরও ছিল, মানে সব কিছু যদি পর্যবেক্ষনের উপর নির্ভর করে, তাহলে ব্যক্তি নিরপেক্ষ সত্যগুলোর কি হবে? চাঁদ উঠা তো থেমে যেতে পারে না, কেউ দেখছে না বলে। গল্পটা আমারা সবাই জানি। একবার বোরের যুক্তিতে অনুপ্রাণিত এক বন্ধু তাকে রাস্তায় মানব পর্যবেক্ষণের সাথে কোয়ান্টামীয় ভৌত বাস্তবতার সম্পর্ক বোঝাতে চাইছিলেন। বিরক্ত আইনস্টাইন আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে উঠলেন –
’তুমি বলতে চাইছো, ওই যে চাঁদটা ওখানে আছে, আমরা না দেখলে চাঁদটার অস্তিত্ব থাকবে না?’
মডেল সেন্ট্রিক রিয়ালিজম দিয়ে এই প্যারাডক্সের কোন সার্থক ব্যাখ্যা দেয়া যায় কিনা সেটাও ভাবতে হবে ‘নৈর্ব্যক্তিকতা বিজ্ঞানসুলভ নয়’ বলার আগে বোধ হয়। তবে আমার কাছে এর একটা উত্তর আছে, সেটা আমি প্রবন্ধতেই বলব আশা করছি। দেখা যাক।
এক কালে পদার্থবিদ্যা দর্শনশাস্ত্রএর সাথে একীভূত ছিল । এখন দুইটি ভিন্ন বিষয় হিসাবে বিবেচিত । তাই দর্শনশাস্ত্র প্রকৃতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান থেকে পৃথক । বিজ্ঞান না হওয়া সত্তেও পদার্থবিদ্যা যেমন গনিত ব্যবহার করে, তেমনি প্রকৃতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানও দর্শনশাস্ত্র ব্যবহার করে ।
কার্ল পপারের ফলসিবিলিটি তত্ত্ব দর্শনশাস্ত্র ভুক্ত বিষয় । (Hypothesis) যুক্তিতর্ক বা ব্যাখ্যার সূচনাবিন্দুরূপে উপস্থাপিত ভাবকে গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞান মূল্যায়ন করে । কিন্তু পপারের ফলসিবিলিটি দর্শনের কাজ হলো বিজ্ঞানের ফলাফলের বৈধতা নির্নয়ের ফ্যাক্টরগুলিকে ফলসিফাইড প্রমান করা । কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে কোন থিউরী ফলসিফাইড হলেও নুতন পর্যাবেক্ষণের ব্যাখ্যা নিয়ে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে । তাই আন্তর্জাতিক ভাবে পপারের ফলসিবিলিটি তত্ত্ব গ্রহনযোগ্যতা পায় নাই ।
আপনিও লেখকের মত ফলসিফায়াবেল আর ফলসিফায়েডকে গুলিয়েছেন।
ঠিক তা নয়। পপারের ফলসিফায়াবিলিটি (ফলসিবিলিটি নয়)র ধারণার অর্থ হল যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্মানের ক্ষেত্রে পরীক্ষণ যোগ্যতা আর বাতিলযোগ্যতাকে বৈশিষ্ট হিসেবে রাখতে হবে, না হলে সেটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হয়ে উঠবে না কখনোই। যে তত্ত্ব পরীক্ষা করা যায় না কিংবা বাতিল করার মত গুণ নাই, সে তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক নয়। বাতিল করার গুন থাকা মানে তত্ত্বটা ‘বাতিল হয়ে যাওয়া’ নয়। বাতিল করার গুন থাকা মানে হচ্ছে – পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সত্য মিথ্যা যাচাই করার স্কোপ থাকতে হবে। এটাই ফলসিফায়াবিলিটির মূল ধারণা, ‘কোন থিউরী ফলসিফাইড হলেও নুতন পর্যাবেক্ষণের ব্যাখ্যা নিয়ে স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে কি হচ্ছে না’ সেটা নয়।
বরং আন্তর্জাতিক যে কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালে পপারের ফলসিফায়াবিলিটিকেই গ্রহণকরা হয়েছে অনেকটা সার্বজনীন ভাবে। যে তত্ত্ব পরীক্ষা করা যায় না, সত্য মিথ্যা নির্ধারণ করা যায় না, সেটা তত্ত্ব হিসেবে বৈজ্ঞানিক জার্নালে স্থান পায় না। দুই একটি ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। কিন্তু সার্বজনীনভাবে এটাই গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে ভুল প্রমাণের স্কোপ থাকতে হবে, নইলে সেটা হবে অপবিজ্ঞান।
লেখক কি করে সম্পূর্ন ভুল বুঝলেন সেটা ব্যাখ্যা করি।
১, কান্ট জার্মান আদর্শবাদের জনক এবং পপার হিউম সমস্যার সমাধানে কান্টের ট্রান্সেন্ডাল আইডিয়ালিজমের ধারনাকে “কাজে” লাগিয়েছিলেন।
২) মার্কস ও হেগেলিয়ান আইডিয়ালিজমকেই ( যা জার্মান আদর্শবাদের অংশ) ভিত্তি করেই দ্বান্দিক বস্তুবাদ তৈরী করেছেন। তার মানে কি মার্কসবাদ ভাববাদি? তা যদি না হয়, তাহলে পপার কান্টের ট্রান্সডেন্ডাল আদর্শবাদের ধারনাকে কাজে লাগালেই ভাববাদি হয়ে যান না। এবং কেন না, সেটা বোঝা দরকার।
৩) এর জন্যে পপার বিজ্ঞানের দর্শনের কি সমস্যার সমাধান করেছেন, কেন করেছেন বুঝতে হবে।
আ) হিউমসের সমস্যা ছিল এই যে -আমি পরীক্ষা করে দেখলাম পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। প্রশ্ন হচ্ছে গ্যারান্টি কি যে আগামী কাল বা বিলিয়ান বছর বাদেও তাই ঘুরবে? বিজ্ঞানের সব সূত্রের সার্বজনীনতা কি করে দাবী করা যাবে? শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে যা দেখছি, তাই দিয়ে কি করে দাবী করতে পারি সূত্রের সার্বজনীনতা? কারন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হয় স্বল্পপরিসরে-খুব কম টাইম ফ্রেমে?
আ) এখানেই কান্টের এপ্রায়রী এনালাটিক ব্যাপারটা কাজে আসে। কান্টের বক্তব্যকে সোজা করলে বললে-নিঊটনের সূত্রের অস্তিত্ব নিউটনের জন্মের আগে, মানব জন্মের আগেও ছিল। এবং জ্ঞানের সবটাই অভিজ্ঞতা না-বাকীটা ডেরাইভ ও করা যায়। অর্থাৎ এক বিলিয়ান বছর বাদে পৃথিবী ঘুরবে কি না-সেটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্যে না থাকলেও, গণিতে মাধ্যমে নির্নয় করা সম্ভব।
অর্থাৎ কান্টিয় দর্শন মানলে বিজ্ঞানের সূত্রগুলিকে সার্বজনীন করার একটা সমাধান পাওয়া যায়।
ক) তবে কান্টের সাথে পপারের দর্শনের এই যোগসূত্রটুকুই আছে-তারপরে কিছু নেই। বিরোধই খুঁজে পাওয়া যাবে।
কান্টের দর্শনে বিজ্ঞানের সূত্রগুলিয়ে অনিশ্চয়তা (apodictic certainties) থাকতে পারে না। আর পপারিয়ান দর্শনে এই অনিশ্চয়তা ছারা সূত্রটি ফলসিফায়েবলই না।
Many of the modern philosophers believed in truth as a bivalent affair. Something was either true or false. Further to this, scientific knowledge was often linked to necessary knowledge, and special kinds of scientific knowledge (such as mathematics/theoretical physics) was of the highest certainty, and once we get it correct, relates to the a priori necessary truths of reality. Popper will have none of this, however and this is where perhaps Kant and Popper will part ways permanently. For Kant, apodictic certainties were an important part of true knowledge, Kant’s icon of a good claim knowledge would have been how Lavousier’s oxygen trumped phlogiston, or the success of the Newtonian science. Ironically, it is in Popper (and we shall later see in Einstein), that it is the limit of the applicability of scientific notions that is the exact reason why falsification should be adhered. In short, for Kant, certainty was the paradigm bliss of knowledge with Newton’s physics as an example of it. For Popper, a post-Newtonian world where it was expected that our best theories today would probably not be our best theories tomorrow, Popper goes into some detail about his ‘reservations’ of how Quantum Mechanics is interpreted.
http://sinistredestre.wordpress.com/2011/02/04/popper-two-philosophical-analogies-part-i-kant-popper-and-certainty/
হেগেলের ভাববাদকে যেমন মার্কস বস্তুবাদে কাজে লাগিয়েছেন-এখানেও কান্টিয় ভাববাদের একটি খুব স্পেসিফিক ধারনাকে পপার তার ফলসিফিকেশন তত্ত্বে কাজে লাগিয়েছে। হেগেলের ভাববাদকে কাজে লাগিয়েও মার্কস যে কারনে বস্তুবাদি, ঠিক একই কারনে কান্টিয় ভাববাদ কাজে লাগিয়েও পপার বস্তুবাদি-যার কারনটা আমি ওপরে উল্লেখ করলাম।
যদি দর্শন শাস্ত্রএ লেখকের নুন্যতম জ্ঞান থাকত, লেখক জানতেন এই ধারনাটি বাস্তবতাবাদের অংশ-এবং এটি ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজমের ভিত্তিপ্রস্তর যা পরে রে ভাস্কর এগিয়ে নিয়ে যান। অনেক মার্কসবাদি না বুঝে ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজমকে ভাববাদ ভেবে বসে 😀
বাস্তবে ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজমের এপ্রোচের সাথে মার্কসবাদি এপ্রোচের পার্থক্য খুব কমই! এগুলোর জন্যে মারামারি করার দরকার নেই-দর্শনে সামান্য জ্ঞান থাকলেই এগুলো লেখক বুঝতেন। কিন্ত না বুঝে সম্ভবত কোন ভুলভাল মার্ক্সিস্টের ইংরেজি লেখা থেকে লেখক টুকেছেন -ফলে এই সব ভুল ধারনার স্বীকার হয়েছেন লেখক।
A development of Bhaskar’s critical realism lies at the ontological root of contemporary streams of Marxian political and economic theory.[1][2] The realist philosophy described by Bhaskar in A Realist Theory of Science is compatible with Marx’s work in that it differentiates between an intransitive reality, which exists independently of human knowledge of it, and the socially produced world of science and empirical knowledge. This dualist logic is clearly present in the Marxian theory of ideology, according to which social reality may be very different from its empirically observable surface appearance. Notably, Alex Callinicos, whom Göran Therborn calls the ‘most prolific of contemporary Marxist writers’ in the UK,[3] has argued for a ‘critical realist’ ontology in the philosophy of social science and explicitly acknowledges Bhaskar’s influence (while also rejecting the latter’s ‘spiritualist turn’ in his later work).[4] The relationship between critical realist philosophy and Marxism has also been discussed in an article co-authored by Bhaskar and Callinicos and published in the Journal of Critical Realism[5]
http://en.wikipedia.org/wiki/Critical_realism
বাকি ফলসিফায়েবিলিটি আর ফলসিফিকেশন নিয়ে কি ভুল করেছেন লেখক সেটা আগেই লিখেছি-অভিজিত ও লিখেছে।
মোদ্দা কথা নাল হাইপোথিসিস বিজ্ঞান সাধনায় আজ অপরিহার্য্য এবং গোটা বিজ্ঞান জগৎ নাল হাইপোথিসিস টেস্টিং এর মাধ্যমে পপারের দর্শন ই অনুসরন করে। তার দর্শনে খামতি ত আছেই-তার ছাত্ররাই তা নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্ত বিজ্ঞানের দর্শনে পৃথিবীর সব জার্নালে পপারের দর্শনই আজ গ্রহণযোগ্য। তাই কিছু অর্ধশিক্ষিত মার্ক্সিস্টদের পপারিয়ান সমালোচনা বিশুদ্ধ হাস্যরস ছারা কিছু না।
@বিপ্লব পাল,
যোগসূত্রটা কি? পপার কি “এপ্রায়রী এনালাটিক” এর ব্যাপারটা মানেন? ওটাকে তো আবর্জনা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না।
@রৌরব,
এটা ২১ শতকে দাঁড়িয়ে আবর্জনা বলা সহজ। কিন্ত তখন লেইবিনজ, হিযঊমের সাথে একটা ব্যাপারে গন্ডোগল ছিল কান্টের।
সেটা হচ্ছে এই – বিজ্ঞানের উৎস কি শুধুই অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান?
কারন তাই যদি হয়, বিজ্ঞানের সূত্রে সার্বজনীনতা আসবে কোথা থেকে? আমি কিভাবে দাবী করতে পারি বিজ্ঞানের সূত্রগুলো ১ বিলিয়ান বছর বাদে একই থাকবে?
বা ধারা যাখ একটি ঔষধ ১০০ টি লোকের ওপর পরীক্ষা করা হল-কিভাবে দাবি করবে তার থেকে প্রাপ্ত রেজাল্ট পৃথিবীর ৬ বিলিয়ান লোকের ওপর চলবে?
সেটা একটাই মাত্র অনুমানে করা যায়- সেটা হচ্ছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলির অস্তিত্ব আদিদেও ছিল এবং তা আবিস্কার নিরেপেক্ষ। পদার্থ বিজ্ঞানের জন্যে তা অতিসরল-কিন্ত সমাজবিজ্ঞান বা জীব বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি বেশ জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে-কারন সমাজ বিজ্ঞান বা জীব বিজ্ঞানে “বৈজ্ঞানিক সূত্রের” সার্বজনীনতা সব সময় প্রশ্ন বিদ্ধ। এবং সেই জন্যেই বিজ্ঞানের এই শাখাগুলিতে পপারের ফলসিফিকেশন বা নাল হাইপোথিসিসের এত ডিম্যান্ড।
@বিপ্লব পাল,
এই ধারণাগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করছি না। আমার আসলে প্রশ্ন, এ ব্যাপারে পপারের মতামতটি কি? তিনি কি কান্টের এই “বিজ্ঞানের সূত্র প্রথম থেকেই ছিল, আমরা তা আবিষ্কার করছি” ধারণাটি গ্রহণ করেছিলেন?
এই ধারণার বিষয়ে আমার নিজের মতটি হয়ত পরে দেব। কিন্তু আপাতত পপারের মতটা জানতে চাচ্ছি।
@রৌরব,
>>
ধরা যাক উনি এটা বর্জন করেছেন। তাহলে বৈজ্ঞানিক সূত্রের সার্বজনীনতা কি ভাবে কেও দাবী করবে?
@বিপ্লব পাল,
এধরণের দাবি না করাটাই শ্রেয়। বৈজ্ঞানিক তত্বগুলি টিকে থাকে যতক্ষন পর্যবেক্ষনের সাথে মিলে যাচ্ছে। এখানে ক্ষান্ত হওয়াটাই যথেষ্ট। সার্বজনীনতা নিয়ে দুশ্চিন্তা আমার কাছে একটি ধর্মীয় hangover বলে মনে হয়।
@রৌরব,
বৈজ্ঞানিক সূত্র আর পর্যবেক্ষনের মধ্যে তাহলে পার্থক্য কি?
সূত্রর সাথে পর্যবেক্ষণের পার্থক্য কি?
@বিপ্লব পাল,
সূত্র predict করে।
@রৌরব,
কি করে জানবেন “প্রেডিক্ট” করে? পরীক্ষা যেভাবেই করুন না কেন, আপনার স্যাম্পল সেট সব সময় ছোটই থাকবে।
জ্যোতিষিও অপবিজ্ঞান দিয়ে ভবিষয়ত বাণী করে :lotpot: বৈজ্ঞানিক সূত্রও করে :-X
কমিনিউস্টরাও ভবিষয়তবানী করে , সমাজ বিজ্ঞানীরাও করে :-Y
তাহলে অপবিজ্ঞানের সূত্রর সাথে বৈজ্ঞানিক সূত্রের পার্থক্য কি? এটাকে বলে বৈজ্ঞানিক সূত্রের ডিমার্কেশন সমস্যা।
১০০ টা লোকের ওপর একটা ঔষধ টেস্ট করা হল। বিলিয়ান লোক এর সুফল পাবে কি করে জানবেন?
এই প্রেডিকশনের মধ্যেই সার্বজনীনতার সমস্যা বা যেটাকে হিউমস ইনডাকশন সমস্যা বলে বিজ্ঞানের দর্শনে তা নিহিত।
আরেকটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবেঃ
ধরা যাক অভিজিত যে ভালোবাসার বিজ্ঞান নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছে, তার পেছনে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক সূত্রের অবতারণা করা হয়েছে।
যেমন ধরূন এমন একটা দাবী-
পুরুষের অন্ডকোষের সাথে একটি প্রাইমেটের সামাজিক জীবনের সম্পর্ক
এখন যে পরীক্ষক যে হয়ত ১০-১২টা বা খুব বেশী হলে ৩০ টা বানর প্রজাতির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে অন্ডকোষের সাইজের ওপর কিছু পর্যবেক্ষন করল।
এবার অন্ডকোষের সাইজের সাথে প্রাইমেটদের সমাজ জীবনের একটা “সম্পর্ক” আছে সেটা বুঝবে কি করে?
অর্থাৎ সব পর্যবেক্ষণই সূত্র হয় না। কিছু কিছু পর্যবেক্ষণ যা প্যাটার্ন বা স্টাকচার তৈরী করে, তাই সূত্রের জন্ম দেয়। এটা বিজ্ঞানে সহজ-সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বা জৈব বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশ জটিল।
যেমন ধরুন মার্কসীয় বক্তব্য- সমাজে শ্রেণী এবং শ্রেণী দ্বন্দের অস্তিত্ব আছে। এটাকে বৈজ্ঞানিক সূত্র হিসাবে মানলে- প্রথমেই শ্রেণীর একটা সংজ্ঞা লাগবে-যা মার্কস দিয়েছেন। এবার দেখতে হবে, সামাজিক পর্যবেক্ষন গুলি থেকে শ্রেণীর বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করা যায় কি না। এবং তারপরেই আসে জটিল প্রশ্ন- গুটি কয়েক সমাজ-তাও খুব বড়োজর ১০ বছরের ডাটা কোন সমাজবিজ্ঞানী পেল। এবার সেই ১০ বছরের ডাটা আর লোকালাইজড কিছু সামাজিক ডাটা থেকে কিভাবে সে দাবি করবে শ্রেণি এবং শ্রেণী দ্বন্দ একটি বৈজ্ঞানিক সূত্র?
এই সমস্যার সমাধানেই নাল হাইপোথিসিস সব থেকে বেশী ব্যাবহার করা হয়, যার পেছনে আছে পপারের ফলসিফিকেশন দর্শন। ফলসিফিকেশন টেস্টেবিলিটি ছারা কোন সূত্রের ” প্রেডিক্টিবিলিটি” বা ভবিষয়তবাণী গ্রহণযোগ্য না। কারন সেটা দিয়েই ভুলের পরিমান কমানো হয়।
@বিপ্লব পাল,
বুঝলাম না। আপনি কি “প্রেডিক্ট” করে বলতে “সঠিক প্রেডিক্ট” করে ধরে বসলেন? আমি বলেছি ভবিষ্যৎবাণী করে, সঠিক-বেঠিক এর কথা পরে। ভবিষ্যৎবাণী করে কিনা সেতো সূত্রের মধ্যেই পরিষ্কার, তা আলাদা করে জানা লাগবে কেন?
স্ট্রাকচারাল পার্থক্য তো necessarily নেই। দুটোই সূত্র। আমি গঞ্জিকা সেবন করে e=mc^3 সূত্র দিয়ে বসলাম, সেকি হাত দেখে বলা যাবে বিজ্ঞান না অপবিজ্ঞান? পার্থক্য একটাই: বৈজ্ঞানিক সূত্রের ভবিষ্যৎবাণী মিলে যায়। যতদিন মেলে, ততদিন বিজ্ঞান হিসেবে টিকে থাকে।
জানার তো প্রশ্নই ওঠেনা। যদি আগে থেকেই জানি, তাহলে ফলসিফিকেশনের সম্ভাবনা থাকল কোথায়? বৈজ্ঞানিক সূত্র একদিকে ফলসিফায়েবল, অন্য দিকে আগেই তার সঠিকতা জেনে বসে আছি, ব্যাপার বুঝলাম না।
Lawrence Krauss তার A universe From Nothing লেকচারে বলেছিলেন, আজ থেকে ১০০ বিলিয়ন বছর পর ভবিষ্যতের প্রাণীরা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়া কিছুই দেখবে না। তখন আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়া বাকি সব এতই দূরে সরে যাবে যে, যত উন্নত টেলিস্কোপ দিয়েই অবজার্ভ করা হোক না কেন, মহাবিশ্বের প্রকৃত চিত্র আর পাওয়া যাবে না। বিগ ব্যাংগ, ডার্ক এনার্জির তথ্য-উপাত্ত আর থাকবে না। ফলসিফায়েবল বিজ্ঞান ভুল উত্তর হাজির করবে! :-X
এ ব্যাপারটা ভাববার মত, কারন এটা কিন্তু হাইপোথিসিস না। বিজ্ঞানে সূত্র যদি উল্টে না যায় এটাই কিন্তু ভবিষ্যৎ।
@আতিকুর রাহমান সুমন,
যা observable নয়, তা “প্রকৃত” কোন অর্থে?
@রৌরব, অভিজ্ঞতা অর্থে।
@রৌরব,
এই প্রসংগে আপনাকে দুটো দার্শনিক প্রশ্ন করি। যদি আগে থেকে আপনার জানা থাকে তাও আশা করি উপভোগ করবেন, বিশেষ করে যদি বিবাহিত হন। প্রশ্নগুলো ইংরেজীতেই করছি, কারন বাংলাতে করলে ওগুলোর মূল রস নষ্ট হয়ে যায়।
১। A leaf fell from a tree in the forest. There is no one to hear it. Did it *really* make a sound?
২। A man speaks in the forest. There is no woman to hear him. Is he still wrong?
আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। অন্যেরাও উত্তর দিতে পারেন।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
বোকা প্রশ্ন হয়ে গেলে মাফ করবেন কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে একটা পাতা একটা গাছ থেকে যে পড়লো এটা জানলেন কীভাবে? শোনারই যদি কেউ না থাকে তবে জানলেন কীভাবে একটা পাতা পড়লো?
একটা মানুষ বনে গান গাইলে আপনি না শুনে কীভাবে জানলেন? মানে আমি বুঝছিনা, আপনার দুটো কথাতেই বলছেন শোনার কেউ ছিলোনা কিন্তু আবার পরিস্কার স্টেটমেন্ট দিচ্ছে কিছু একটা ঘটেছিলো।
@টেকি সাফি, পাতা যে পড়েছিল এটা জানা কি খুবই মুশকিল? গাছের নীচে গিয়ে দেখা গেল কোটি কোটি পাতা পরে আছে। তারমানে এটা তো একসময় গাছেই ছিল এবং খসেও পরেছিল। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, আমরা তো জানি গাছ থেকে পাতা পরলে শব্দও হয়, কিন্তু যে শব্দ শোনার কেউ থাকে না তার কি আদৌ কোন অস্তিত্ব আছে বা ছিল? অনেক পুরনো ধাঁধাঁ। আর আমি যতটুকু জানি, এর সমাধানও হয়েছে এবং উত্তরটা ইতিবাচকই।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
দ্বিতীয়টা পইড়া মজা পাইলাম। আগে দেখিনি এটা — উত্তরটা কি?
@রৌরব,
(C)
@রূপম (ধ্রুব),
কি চান? :))
@রৌরব,
[img]http://i43.photobucket.com/albums/e367/gatsby6306/Smileys/thsmiley_swordfight1.gif[/img] চাই।
সাথে কিছু চা চু। :))
ভাববাদ ও বস্তুবাদের সংজ্ঞা দিলে ভাল হত।
লেখক ফলসিফায়েবিলিটি ব্যাপারটাই বোঝেন নি।
ফলসিফায়েবল মানে পরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমানের চেষ্টা করা। তত্ত্বটা ভুল হতে হবে ত না। পরীক্ষার অস্তিত্ব থাকা দরকার, যা “ভুল” প্রমান করতে সক্ষম। এটিকে সব বিজ্ঞানের জার্নালই গ্রহণ করেছে নাল হাইপোতিসিস টেস্টিং এর মাধ্যমে। নাল হাইপোথেসিসি টেস্টিং ছারা খুব কম জার্নালই কোন কাজকে বিজ্ঞানের কাজ বলে গ্রহণ করে। সুতরাং বিজ্ঞানের দর্শনের ক্ষেত্রে পপারের দর্শনে ত্রুটি থাকলেও, সেটিই সেরা এবং সর্বত্র গ্রহণযোগ্য।
এই ভাবে এখান ওখান থেকে টুকে অনুবাদ করে পপারকে জানার চেষ্টা রীতিমত হাস্যকর।পপার বিজ্ঞানের কি সমস্যার সমাধান করেছেন লেখক সেটাই বোঝেন নি। উনি বিজ্ঞানের দর্শনে ইনডাকশন সমস্যা ( হিউমস ইনডাকশন সমস্যা) র সমাধান করেছিলেন।
সমস্যা এরকমঃ
সব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাই খুব অল্প স্যাম্পল স্পেসে হয়-তাহলে বৈজ্ঞানিক সূত্রের সার্বজনীনতা কি করে প্রমান করা যায় বা গ্রহণযোগ্য হয়?
এই সমস্যার সমাধানে ফলসিফিকেশন ছারা আর কোন ভাল বিকল্প নেই। এবং বিজ্ঞানের সব জার্নাল পপারের দর্শন ( নাল হাইপোথিসিস) মেনেই চলে।
কিছু “মার্কসবাদি পন্ডিত” পপারের দর্শন না বুঝে যা খুশি তাই লিখে গেছে। সেগুলোকে নিয়ে হাঁসাহাঁসি করা ছারা উপায় নেই। তবে পপারের ছাত্ররা পপারের যেসব সমালোচনা করেছেন, সেগুলি পড়া দরকার পপারকে আরো ভাল করে জানতে। আমি রাতে এসে লাইন বাই লাইন তুলে দেখাব, এই লেখাতে কিভাবে না বুঝে টোকা হয়েছে পপারিয় দর্শন।
@বিপ্লব পাল,
আপনি এই কাজটি আগে করে তারপরে হাসাহাসি করতেন সেটা বেশি ভালো হতো। আগেই হাসাহাসি করে পরে বক্তব্য দিলে সে বক্তব্য কয়জন শুনবে সেটা নিয়ে দ্বিধায় আছি। আপনার যদি ইচ্ছে থাকে যে আপনার জ্ঞান অন্যের কাছে পৌছাবেন সেক্ষেত্রে অন্যদের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধাশীল থেকেই মন্তব্য করা উচিত। আর না হলে এভাবে মন্তব্য করে যান, আপনার কথা মানুষ এক কান দিয়ে নিয়ে আরকে কান দিয়ে বের করে দিবে। মন্তব্যটা রূঢ় হয়ে গেলো, কিন্তু আপনার মন্তব্যই বাধ্য করলো রূঢ় মন্তব্য করতে। ভালো থাকবেন।
@স্বাধীন,
আমি আমার সংক্ষিপ্ত উত্তরেও ভুলটা ধরিয়েছি-অভিজিত ও বেশ কিছু উদাহরণ দিয়েছে।
লেখাটা এতই হাস্যকর-এটাকে নিয়ে কে কি ভাবল যায় আসে না। বস্তুবাদের সেরা স্বীকৃত দার্শনিককে ভাববাদি বলে যে লেখাতে, সেই লেখা নিয়ে এর থেকে বেশী কিছু বলা যায় না।
পপারকে ভাববাদি আর গান্ধীকে বস্তুবাদি বলা একই রকম হাস্যকর মন্তব্য।
এ লেখাটা ব্যতিক্রমী। ভাল লাগলো। কিন্তু লেখাটির সাথে দ্বিমত করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আমার মনে হচ্ছে ‘ফলসিফায়াবিলিটি’ এবং ‘ফলসিফিকেশন’কে বোধ হয় একটু গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।
বিষয়টা একটু পরিস্কার করা যাক।
এখানে দুটো ব্যাপারকে আলোচনায় আনা হচ্ছে -১) ফলসিফায়াবিলিটি ২) ফলসিফিকেশন। বিষয়ের গভীরে যাবার আগে দুটোর পার্থক্য পরিস্কার করা দরকার। কার্ল পপার তার ‘ফলসিফিকেশন ভার্সেস কনভেনশনালিজম’ প্রবন্ধে পরিস্কার করেই বলেছেন –
‘We must clearly distinguish between falsifiability and falsification. We have introduced falsifiability solely as a criterion for the empirical character of a system of statements. As to falsification special rules must be introduced which will determine under what conditions a system is to be regarded falsified. ’
আমি দুটো বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে লিখছি।
ফলসিফায়াবিলিটি
‘ফলসিফিফায়াবিলিটি’ বা ‘বাতিলযোগ্যতা’ একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অন্যতম গুণ। এটা যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্মাণের অপরিহার্য শর্ত। মুলতঃ এই গুনটিই বিজ্ঞান থেকে অপবিজ্ঞানকে পার্থক্য করে দেয় পরিস্কারভাবে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন, ‘যুধিষ্ঠির স্বশরীরে স্বর্গে গেছেন’ – এটি এমন একটি বক্তব্য যেটা পরীক্ষা করে আমরা সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি না। কাজেই এটি একটি টটোলজিকাল স্টেটমেন্ট – ফলসিফায়াবেল নয়। কারণ আমরা কোনভাবে পরীক্ষা করে এর যথার্থতা নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু ‘ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারী’ –এটি একটি ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। কারণ পরীক্ষা করে আমরা এর সত্যমিতথ্যা যাচাই করতে পারি। কার্ল পপার তার ‘দ্য লজিক অব সায়েন্টিফিক ডিস্কভারি’তে পরিস্কার করে বলেছেন – ‘A theory is scientific to a degree to which it is testable.’
এ ব্যাপারটা মোটা দাগে সঠিক বলেই আমার মনে হয়। ফলসিফায়াবিলিটি না থাকলে অলৌকিকতা, আত্মা, পারলৌকিকতা, তুক তাক, কোয়ান্টাম চিকিৎসা সব কিছুই বিজ্ঞান বলে দাবী করা হবে। মূলতঃ ফলসিফিকেশনের বৈশিষ্টই আমার মতে যাবতীয় অপবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান থেকে পৃথক করে।
এবার আসা যাক ফলসিফিকেশন প্রসঙ্গে।
ফলসিফিকেশন
ধরুন আমি বললাম ‘ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারি’। আগেই বলেছি এটি একটি ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। কারণ এর মধ্যে ‘বাতিলযোগ্যতা’ একটি গুন হিসেবেই ছিলো। এটি টেস্টেবল। এখন পরীক্ষা করে দেখা গেল না – ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ওজনে হাল্কা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমার স্টেটমেন্ট ফলসিয়ায়েড বা বাতিল হয়ে যাবে। ঠিক একই কারণে টলেমীর ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেল কারণ পর্যবেক্ষনের সাথে বাস্তবতা মিললো না। কিন্তু টলেমীর তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক তত্ত্বই ছিলো, কারণ ফলসিফায়াবিলিটি এর গুণ হিসেবেই যুক্ত ছিল। কিন্তু পরীক্ষার সাথে পর্যবেক্ষণে না মিলায় সেটি বাতিল হয়ে গেছে, মানে ফলসিফায়েড। কাজেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ফলসিফায়েড হতে পারে।
রবিউল বলেছেন –
অবশ্যই। প্রতিটা নতুন ফসিল আবিষ্কার বিবর্তন তত্ত্বের জন্য একটি পরীক্ষা। একটি ফসিলও যদি বিবর্তনের ধারার বাইরে পাওয়া যায় সেই মাত্র তত্ত্বটি ভুল বলে প্রমানিত হবে। একবার বিজ্ঞানী জেবি এস হালডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কিভাবে বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করা যায়? উত্তরে হালডেন বলেছিলেন,
কেউ যদি প্রক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পায়।
বলা বাহুল্য এ ধরনের কোন ফসিলই এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয় নি। না হওয়ারই কথা, কারণ বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের যে ধারাটি আমাদের দিয়েছেন তা হল –
মাছ [img]http://mukto-mona.com/evolution/image/arrow.jpg[/img]উভচর[img]http://mukto-mona.com/evolution/image/arrow.jpg[/img] সরীসৃপ[img]http://mukto-mona.com/evolution/image/arrow.jpg[/img] স্তন্যপায়ী প্রানী।
খরগোশ যেহেতু একটি পুরোপুরি স্তন্যপায়ী প্রাণী, সেহেতু সেটি বিবর্তিত হয়েছে অনেক পরে এবং বিভিন্ন ধাপে (মাছ থেকে উভচর, উভচর থেকে সরিসৃপ এবং সরিসৃপ থেকে শেষ পর্যন্ত খরগোশ), তাই এতে সময় লেগেছে বিস্তর। প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল পাওয়ার কথা নয়, কারণ বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এ সময় (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে) থাকার কথা কতকগুলো আদিম সরল প্রাণ – যেমন নিলাভ সবুজ শৈবাল, সায়নোব্যকটেরিয়া ইত্যাদি (ফসিল রেকর্ডও তাই বলছে)। আর স্তন্যপায়ী প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছে ট্রায়োসিক যুগে (প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগ শেষ হওয়ার ৩০ কোটি বছর পরে)। কাজেই কেউ সেই প্রিক্যাম্বরিয়ান যুগে খরগোশের ফসিল খুঁজে পেলে তা সাথে সাথেই বিবর্তনতত্ত্বকে নস্যাৎ করার জন্য যথেষ্ট হত[1]।
অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স এবং জেরি কয়েন তাদের একটি প্রবন্ধে সেজন্যই বলেছেন –
সত্যি কথা বলতে কি, একটি খাঁটি ফসিলও এখন পর্যন্ত কোন ‘ভুল’ জায়গায় পাওয়া যায়নি – যা বিবর্তনের ধারাবাহিকতাকে ক্ষুন্ন করতে পারে। যদি এমন কোন ‘বেমানান’ ফসিল কখনও পাওয়া যেত, তাহলে এক নিমেষেই বিবর্তনতত্ত্বের সলিল সমাধি ঘটতো।
এর চেয়ে ভাল ফলসিফায়াবিলিটির গুণ আর কি হতে পারে?
এ ছাড়া নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো সহজেই বিবর্তন তত্ত্বকে মিথ্যা-প্রতিপাদন করতে পারে –
* যদি কেউ স্ট্যাটিক ফসিল রেকর্ড (অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে ফসিল রেকর্ডের কোন পরিবর্তন না পাওয়া গেলে) খুঁজে পায়।
* যদি কেউ বোরাক, সেন্টুর (অশ্বমানব) কিংবা মারমেইডের (মৎসকন্যা) মতো হাইব্রিড প্রাণী খুঁজে পায় – যারা বিভিন্ন প্রজাতির কিংবা পরষ্পর সম্পর্কহীন বিভিন্ন শ্রেনীর জীবদেহের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত হবে, এবং যে সমস্ত প্রাণীর উদ্ভবকে আনুভূমিক জিন সঞ্চালন, সিমবায়োসিস বা অন্য কোন উপায়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
* জুরাসিক যুগের শিলায় (১ কোটি ৪৪ লাখ বছর পুরনো) ডায়নোসরের ফসিলের সাথে আধুনিক মানুষের জীবাশ্ম খুজে পেলে।
* যদি কোন প্রক্রিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় যা পরিব্যক্তিকে পুঞ্জীভূত হতে বাঁধা দিবে।
* অলৌকিক উপায়ে (বা জেনেটিক ধারা ভেঙ্গে) কোন প্রানীর ‘সৃষ্টি’ হওয়া পর্যবেক্ষণ করা গেলে।
* ফসিল রেকর্ডের সাথে জেনেটিক্সের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের যদি মিল না পাওয়া গেলে কিংবা আনবিক জীববিজ্ঞান এবং তুলনামূলক জেনেটিক্সের তথ্য থেকে একই উপসংহারে পৌঁছনো না গেলে । অর্থাৎ জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে পাওয়া তথ্য যদি পরষ্পরবিরোধী হয় তাহলেই বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে আবার নতুন অরে চিন্তা করার প্রশ্ন আসবে, ইত্যাদি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই হয়। সেজন্যই টলেমীর ভূকেন্দ্রক তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেছে। যখন কোন তত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন যদি সেটাকে বাতিল না করে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়, তখনই সেটা আমার মতে বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করে।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
আমার কিন্তু বাক্যটিকে ফলসিফায়েবল মনে হচ্ছে। আমরা যদি স্বর্গ আবিষ্কার করি এবং দেখি যে সেখানে যুধিষ্ঠির নামে কেউ স্বশরীরে বসে নেই তাহলেই হল।
@রৌরব,
‘আমরা যদি স্বর্গ আবিস্কার করি’ অ্যাবস্ট্রাক্টভাবে বললে শুধু হবে না, কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় করব, তা বলতে হবে। এই ধারনাটি ল্যাবে টেস্ট করে ফলাফল যাবে কি? গেলে ফলসিফায়েবল, না গেলে নয়। 🙂
যুধিষ্ঠির অবশ্য এখানে মূল ব্যাপার ছিলো না, এটা যাস্ট একটা উদাহরণ। মূল ব্যাপার হল সায়েণ্টিফিক থিওরীর সংজ্ঞাই হচ্ছে যে, এটি মুলতঃ ফলসিফায়েবল হতে হবে। পরীক্ষণযোগ্যতা আর বাতিলযোগ্যতা সায়েণ্টিফিক থিওরীর অবিচ্ছেদ্য অংগ।
@অভিজিৎ,
হুঁ। অ্যাবস্ট্রাকশনের গ্রহণযোগ্য মাত্রার একটা unsaid assumption তাহলে এখানে আছে। এই মাত্রাটি কি?
@অভিজিৎ,
উত্তর দিতে একটু দেরী হয়ে গেল । অভিজিত বাবুর বেশীরভাগ বক্তব্য বিশেষ করে ফলসিফায়েবিলিটি ও ফলসিফিকেশনের পার্থক্য নিয়ে যে আলোচনা বা ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ দিয়েছেন তার সাথে আমি একমত ।
একটি তত্ত্বকে ফলসিফায়েব্ল হতে হলে, তাকে ফল্সিফিকেশন attempt-এর অধীনে যেতে হয় । অর্থাৎ, কেউ তত্ত্বের এম্পিরিক্যাল(empirical) প্রেডিক্শনগুলিকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন । পর্যবেক্ষণ ওপরীক্ষণের ফলাফল যদি প্রেডিক্শনের সঙ্গে বিরোধ করে তখন বোঝা যাবে যে তত্ত্বটি ভুল এবং অবশ্যই বাতিল করতে হবে ।
“বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীগণ সেইসব তত্ত্বগুলিকে কি পরিত্যাগ করেন যখন একটি প্রেডিক্শন মিথ্যা প্রমাণিত হয় ?”-অভিজিত বলছেন যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় । কিন্তু আমি বলছি যে অনেক ক্ষেত্রে তা ঘটেনা । লিখেছি যে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে এমনভাবে পরিবর্তিত করা যায় যে, তত্ত্বের শাঁস বা কেন্দ্রীয় অনুমানগুলিকে
সত্য ও প্রশ্নাতীত বলে মেনে নেয়া হয়, কিন্তু কিছু পারিপার্শ্বিক বা প্রান্তিক অনুমানকে পরিবর্তিত করা হয় যাতে সেগুলো আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী নজীরের সংগে মেলে । ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দে জোতির্বিদ লে ভেরিয়ার থেকে শুরু করে জোতির্বিদ্গণ লক্ষ্য করে আসছিলেন যে, নিউটনীয় মেকানিক্সে মার্কারীর কক্ষপথ যেভাবে প্রেডিক্ট করা হয়েছে তাদের পর্যবেক্ষিত কক্ষপথ তার চেয়ে ভিন্ন । নানা প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছিল উপরোক্ত Anomaly(তত্ত্ববিরোধী পর্যবেক্ষণ ফলাফল) নিউটনীয় মেকানিক্সের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যার জন্য । উদাহরণস্বরুপ মার্কারী গ্রহের আওতাধীন নতুন একটি গ্রহের অস্তিত্ত্ব অনুমান করার মাধ্যমে । গ্রহটিকে আবিষ্কারের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো । এই
Anomaly বা নিয়মবহির্ভূত প্রপঞ্চের ব্যাখ্যা শেষ পর্যন্ত ১৯১৫ সালে করা হয়েছিল আইন্ষ্টাইনের জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটির মাধ্যমে ।
যদি কেউ Falsificationist Doctrine আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করে, তাকে ঘোষণা করতে হবে যে নিউটনীয় মেকানিক্স ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগেই Falsified হয়ে গিয়েছিল মার্কারী গ্রহের কক্ষপথের Anomalous(তত্ত্ববিরোধী পর্যবেক্ষণ ফলাফল) বৈশিষ্টের কারণে ।
বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে Anomaly একটি স্বাভাবিক ঘটনা । Anomaly ঘটলেই কোন তত্ত্ব যদি অবৈজ্ঞানিক হয়ে যায়-পপারের এই ফতোয়া মানলে বিজ্ঞান গবেষণা বহু শতাব্দী পূর্বেই বন্ধ করে দিতে হতো বা ধীরগতিতে এগোতো-বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতি ঘটতোনা ।
পপারের ফলসিফায়েবিলিটি ও ফলসিফিকেশন মেথড হিসেবে ভালই, যদিও লাকাটোসের রিসার্চ প্রোগ্রামই সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মধ্যে বেশী গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে ।