আমরা বিজ্ঞানকে বুঝতে পেরে তার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি মনে হয় গত তিনশ বছর ধরে।এর আগেও আমরা বুঝতাম যে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার একটা কার্‍যকরী দিক আছে;কিন্তু যাকে বলে বিজ্ঞানের অভ্রান্ত তেজ,-তার সাথে আমরা খুব ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়েছি মাত্র কয়েক শতাব্দী হল।এখানে ‘আমরা’ শব্দটি ভুলভাবে উদ্বৃত্ত হল।কেননা বাংগালী এখনো বিজ্ঞান বুঝে না-তবে বিজ্ঞানের সুফল ভোগ করতে চায়।অর্থ্যাৎ বাংগালী ভোগ করতে চায় নিখাদ প্রযুক্তিকে।বাংগালীর এই পেটি বুর্জোয়া স্বভাবের জন্য বাংগালী এখনো বুঝে উঠতে পারে নি বিজ্ঞানকে;ফলে তৈরী হয়নি কোন বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্মের।আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমাগত মুখস্থ নির্ভর বিজ্ঞান পাঠ অন্ধ করে দিয়েছে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের।তারা বড় বড় সুত্র শিখে বুলি ঝাড়ে এবং আযানের সময় হলে দৌড়ে ঢুকে পবিত্র গৃহে।

বিজ্ঞানের একটি দর্শন আছে।বিজ্ঞানে অন্ধ বিশ্বাসের কোন জায়গা নেই।প্রতিটি বিষয়কে বিজ্ঞানের কঠোর পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়।এবং বিজ্ঞান স্বপ্নযোগে পাওয়া কোন সমাধানের ধার ধারে না।কিন্তু বাংগালী বোধহয় প্রচন্ড শাসন ও শোষণে থাকতে ভালবাসে।তাই বাংগালীর কাছে যুক্তি মানেই ভীতিকর কোন কিছু।আমরা চাপিয়ে দেয়া বিশ্বাস লালন করতেই স্বস্তি বোধ করি। এবং আমাদের কৃতিত্ত্বও যে ভাববাদের মধ্যে পোক্ত তা দেখা যায় রবী ঠাকুরের ভাববাদী গীতাঞ্জুলীর নোবেল পাওয়ার মধ্য দিয়ে।অথচ এরকমটি ছিল না ভারতবর্ষে-এখানে বিকশিত হয়েছিল কমপক্ষে চারটি নাস্তিক্যবাদী বা জড়বাদী দর্শন শুধুমাত্র এক ভাববাদী দর্শনের ভিত্তিভুমি বেদ-কে ধসিয়ে দিতে।কিন্তু এই যে পার্থিব ধারার চারটি জড়বাদী দর্শন কেন জন্ম দিল না আরো শক্তিশালী জড়বাদী দর্শনের?এটা কী এ জন্য যে ভারতীয়রা খুব ভাববাদী?তা বোধ হয় নয়।কেননা ভারতীয়রা অথবা বাংগালীরা প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধা পেলে কখনো হাতছাড়া করতে চেয়েছে-এ রকম খবর আমার জানা নেই।অবশ্য নব্বই এর দশকে খালেদ জিয়ার মূর্খ সরকার যে দেশকে সাইবার কেবলের সাথে যুক্ত করার সুযোগ পেয়েও আগ্রহ দেখায়নি সেটা কেবল মাত্র ঐ প্রযুক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকার ফল।কিন্ত যে প্রযুক্তি বাংগালীর কাজে লাগবে সে সম্বন্ধে জেনে বুঝেও বাংগালী ওটা হাতছাড়া করবে ইতিহাসে এরকম নজির নেই।তাহলে বুঝা যাচ্ছে বাংগালী ভাববাদী নয়।বাংগালী চরম বস্তুবাদী এবং একই সাথে চরম সুবিধাবাদী।সুবিধাবাদ বাংগালীর জীবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য কেন?বাংগালী কী ত্যাগ স্বীকার করে না?বাংগালীর কী ত্যাগ স্বীকার করার নজির নেই?ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায় ইতিহাস ভরে আছে বাংগালীর রক্তে।তাহলে এই ত্যাগ স্বীকার ও রক্ত দান আজকের এই শতাব্দীর জন্য কী বয়ে নিয়ে এসেছে?বাংগালী কেন শুধু প্রযুক্তি বুঝে?কেন বুঝে না বিজ্ঞান?অথবা কোন সেই কারণ যার কারণে বাংগালীর ভেতর ঢুকে গেছে বিজ্ঞানের প্রতি চরম অনাগ্রহ?এখানে চরম মৌলবাদীও ইলেক্টিকের মাইক,যা কি-না ইহুদি নাসারাদের তৈরী,ব্যাবহার করে ইহুদি নাসারাদের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধারে ব্যস্ত থাকে।তাহলে এটা বুঝা যাচ্ছে যে আজকের বাংগালী সমাজ পুরোটাই ভোগবাদী দর্শনে ডুবে আছে।এরা প্রযুক্তির পুজো করে-বিজ্ঞান বুঝেও না,বুঝার চেষ্টাও করে না;ফলে প্রযুক্তিও বুঝে উঠে না ঠিকমত।এই ভোগবাদী-প্রযুক্তিবাদী সমাজ তৈরী করছে ঐ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যারা উঠতে বসতে পুজি আর লাভের কথা ভাবতে থাকে।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই দেশে ২০২০ সালের মধ্যে মানবিক শাখা বিলুপ্তির প্রেসক্রিপশন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।আমাদের আমলারাও ওদের পা চাটতে চাটতে এটা মেনে নিয়েছে।এগুলো হল বিজ্ঞানমনস্ক না হওয়ার ফল।মানবিক শাখার গুরুত্ব বিজ্ঞানমনস্ক জাতির পক্ষেই বুঝা সম্ভব।আমরা বিজ্ঞানমনস্ক নই-ফলে আমরা জাতি হিসেবে চরমভাবে ব্যর্থ।

বাংগালীর এই লুম্পেন চরিত্রে আজকাল জোকার নায়েক ও তার চেলারা বেশ সার ও পানি ঢালছেন।ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ মানুষ পর্‍যন্ত মেনে নিয়েছে তাদের ভাগ্য।ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন-এটা এখন বাংগালী জাতির প্রধান আপ্তবাক্য।বাংগালী এখন নামায পড়ে, পতিতালয়ে যায়, সাররাত তসবি জপে,সারারাত ন্যুড ফিল্মে মজে থাকে,ওরছে যায়,ওয়াজ করে,চুরি করে,বাটপারি করে;আবার রোযা রাখে,হজ্জ্বে যায়,নামায পড়ে,চুরি করে——–এটা বাংগালীর এখনকার প্রথাগত রুটিন ।