স্বাধীনতা ঘোষনা নিয়ে বিতর্ক অন্তহীন,বহু লেখাই এ সম্পর্কে এসেছে। তাই আমি সে বিষয় আর নুতন করে টানবো না, আমার কাছে যদিও বিতর্কের তেমন কিছু নেই। মুজিব নাকি জিয়া এই অর্থহীন বিতর্কে মাঝখান থেকে নেপথ্যে থেকে যান স্বাধীনতার ঘোষনার সাথে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে। যাদের নামও হয়ত অনেকে জানে না। এ লেখার উদ্দেশ্যে তাদের কয়েকজনের ভূমিকা নিয়ে কিছু আলোকপাত করা এবং একই সংগে ২৬ শে মার্চ কেমন করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হল ও বংবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা সম্প্রচার কিভাবে শুরু হল সে বিষয়টিও জানা।
২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরেই বংগবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী সহ দেশের আরো আরো বিভিন্ন এলাকায় বেতারে পৌছায়। উদাহরন হিসেবে ততকালীন ন্যাপ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের কথা বলা যায়। সিলেটে অবস্থানকালে তিনিও স্থানীয় থানার ওয়ার্লেসের মাধ্যমে এই বার্তা পান। চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধূরী,আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান বাবুসহ কিছু স্বেচ্ছাসেবকের সাহায্যে এই ঘোষনা হাতে হাতে লিখিত হ্যান্ডবিল আকারে শহরের বিভিন্ন যায়গায় প্রচারের ব্যাবস্থা নিলেন। এই হ্যান্ডবিলটি ছিল ইংরেজীতে। চট্টগ্রামের ডাক্তার মঞ্জুলা আনোয়ার এই হ্যান্ডবিলটির বাংলা অনুবাদ করেন যা ২৬ শে মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আবুল কাশেম সন্দ্বীপ পাঠ করেন। সেই অনুবাদটিঃ
“বাংগালী ভাইবোনদের কাছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমার আবেদন, রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্পে রাত ১২টায় পাকিস্তানী সৈন্যরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সংগে আমরা লড়ে যাচ্ছি। আমাদের সাহায্য প্রয়োযন এবং পৃথিবীর যে কোনও স্থান থেকেই হোক। এমতাবস্থায় আমি বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘোষনা করছি। তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে মাতৃ-ভূমিকে রক্ষা কর। আল্লাহ তোমাদের সহায় হউন।”
– শেখ মুজিবুর রহমান।
(দৈনিক বাংলা, ২৬শে মার্চ, ‘৮১ বিশেষ সংখ্যা)
সূত্রঃ প্রথম আলো।
অনুসন্ধানেঃ আমার ব্লগের ব্লগার যাত্রী।
এখন একটু ফিরে দেখি এই ঘোষনাটি কিভাবে সেদিনের সেই সেই ঐতিহাসিক দিনে ঘোষিত হল।
ডাঃ আনোয়ার আলী তখন থাকতেন সিডিএ আবাসিক এলাকায়। ২৬ তারিখ সকাল বেলাতেই তারা খবর পেলেন যে চট্টগ্রামের ইপিআর সদস্যরা পাক সেনাদের সাথে লড়ে চলেছে, তাদের খাদ্য রসদ প্রযোযন। আনোয়ার আলীর বাসায় শহরের আরো কিছু লোক একত্র হলেন কিভাবে এই বাংগালী বীর সেনানীদের সাহায্য করা যায় তা নির্ধারন করতে। তারা কিছু চাঁদা উঠালেন, সিদ্বান্ত নিলেন বাজার থেকে কিছু খাদ্য সামগ্রী কিনে আনার। তবে মুশকিল হল বাজারে যাওয়া, শহরময় ব্যারিকেড ডিংগিয়ে সেই রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে রসদ সংগ্রহ করতে হবে, তাও দুয়েকজনের নয়, বেশ কিছু লোকের। ওয়াপদার দুজন তরুন প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম ও দিলীপ চন্দ্র দাস বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যর হাত। আশিক একটি পিক-আপ গাড়ি (চট্টগ্রাম ট-৯৬১৫)যোগাড় করে দিলেন। গাড়ি চালিয়ে ডাঃ আনোয়ার আলী নিজেই বাজারে গিয়ে প্রয়োযনীয় জিনিসপত্র কিনে আনলেন।
ফেরার পথে আগ্রাবাদ রোডে (বর্তমান শেখ মুজিব রোড) তিনি খেয়াল করলেন যে একজন লোক টেলিগ্রাম বলে চেচাচ্ছিল আর এক টুকরা কাগজ বিলি করছে। তিনি কৌতূহলী হয়ে একটি কাগজ সংগ্রহ করলেন। সেটি ছিল বংগবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার ইংরেজী ওয়ার্লেস বার্তা। বাসায় এসে তিনি সেই ইংরেজী বার্তা তার স্ত্রী ডাঃ মঞ্জুলা আনোয়ারের হাতে দিলেন। মঞ্জুলা তাতক্ষনিকভাবে এর বংগানুবাদ করে ফেললেন এবং হাতে লিখে লিখে কপি করতে শুরু করে দিলেন। উদ্দেশ্য, বিলি করা। এ কাজে আরো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন আনোয়ার আলীর ভাইঝি চট্টগ্রাম বেতারের অনুষ্ঠান ঘোষিকা হোসনে আরা। সহসাই মঞ্জুলা আনোয়ার বুঝতে পারলেন যে এভাবে হাতে লিখে খুব বেশী কপি তাদের পক্ষে তৈরী সম্ভব নয়। হ্যান্ডবিল থেকে বেতারে বংগবন্ধুর ঘোষনা প্রচারই সবচেয়ে ভাল উপায়। তিনি তার স্বামী ডাঃ আনোয়ার আলীকে জানালে তিনিও তাতে সায় দিলেন।
আবারো প্রকৌশলী আশিক ও দিলীপ সহ পিক আপে করে তারা ছুটে গেলেন আগ্রাবাদস্থ চট্টগ্রাম বেতারে। সেখানে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বেতারের নিজস্ব শিল্পী বেলাল মোহাম্মদ বেতার চালু করার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাচ্ছেন। আরো উপস্থিত আছেন ফটিকছড়ি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপল জনাব আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। একটি পরিপূর্ন বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারের মূল পরিকল্পক বেলাল ছিলেন মোহাম্মদ। মুশকিল হল আগ্রাবাদস্থ এই বেতার কেন্দ্রটি ছিল খুবই কাছে চট্টগ্রাম নৌবন্দরে অবস্থানরত পাক নৌবাহিনীর শেলিং এর আওতার ভেতর। তাই চট্টগ্রাম বেতারের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক জনাব আবদুল কাহহার নিরপত্তার কারনে বেলাল মোহাম্মদকে পরামর্শ দিলেন কালুরঘাট ট্রান্সমিটারে চলে যাবার জন্য। এই পরিকল্পনানুযায়ী তারা বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কাজী হোসনে আরা, ডাঃ মঞ্জুলা আনোয়ার, ডাঃ আনোয়ার আলী, কবি আবদুস সালাম, ও ইঞ্জিনিয়র দিলীপ রওনা দিলেন কালুরঘাট বেতারের উদ্দেশ্যে, পিক আপ চালালেন ইঞ্জিনিয়র আশিক। তবে তারা তখনো জানতেন না যে তাদেরও আগে ইতোপূর্বে বেলা ২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হান্নান আনুমানিক ৫ মিনিটের এক সংক্ষিপ্ত ভাষন রেখেছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে,বংগবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার আলোকেই ছিল হান্নানের সেই সংক্ষিপ্ত ভাষন। নিরাপত্তাজনিত কারনে এই প্রচার দ্রুত সমাপ্ত করতে হয়েছিল।
কালুরঘাট কেন্দ্রে তারা পৌছানোর পর সেখানকার উপস্থিত বাংগালী নিরাপত্তা প্রহরীরা খুশী মনেই তাদের প্রবেশ করতে দেয়। অবশেষে কিছু কারিগরী প্রস্তুতির পর ২৬ শে মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হল ঐতিহাসিক স্বাধীন বাংলা বেতারের শুভ সম্প্রচার। আনুষ্ঠানিক ঘোষনার প্রারম্ভে বেতারের অনুষ্ঠান ঘোষিকা হোসনে আরা ও আবুল কাশেম সন্দ্বীপ কয়েকবার “বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি” এ জাতীয় কিছু কথা বলে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালালেন। ঘোষক আবুল কাশেম সন্দ্বীপের কন্ঠে ঘোষিত হল, “নাসরুম মিনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন করীব, আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তি”। এর পর পরেই তিনি সকালবেলা বেতারে প্রাপ্ত বংগবন্ধুর ইংরেজী স্বাধীনতার ঘোষনার বংগানুবাদ পাঠ করলেন যা ডাঃ মঞ্জুলা আনোয়ার আগেই করে রেখেছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করলেন চট্টগ্রাম বেতারের বর্ষিয়ান গীতিকার এবং কবি আবদুস সালাম। “নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লিহি আলা রাসূলীহিল করিম…আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় বাংলার বীর জননীর বিপ্লবী সন্তানরা। স্বাধীনতা হীন জীবনকে ইসলাম ধিক্কার দিয়েছে। আমরা আজ শোষক প্রভুত্ব লোভীদের সাথে সর্বাত্মক সংগ্রামে অবতীর্ন হয়েছি। এই গৌরবোজ্জ্বল স্বাধিকার আদায়ের যুদ্ধে, আমাদের ভবিষ্যত জাতির মুক্তিযুদ্ধে মরনকে বরন করে যে জানমাল কোরবানী দিচ্ছি, কোরানে করীমের ভাষায় তারা মৃত নহে, অমর। দেশবাসী ভাই-বোনেরা, আজ আমরা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম করছি……নাসরুম মিনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন করীব। জয় বাংলা”। সীমিত শক্তির এই প্রচারনা পুরো দেশবাসী শুনতে পায়নি। দূর্বল এই প্রচারনা বংগোপসাগরে অবস্থানকারী একটি জাপানী জাহাজ প্রথম গ্রহন করে। এরপর এই ঘোষনা রেডিও অষ্ট্রেলিয়া, ও তারপর বিবিসি প্রচার করে। ভারত সহ কিছু আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকাতেও পরদিন ২৭শে মার্চ এই ঘোষনার বরাতে মুজিব কোন এক গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন এমন সংবাদ ছাপা হয়।
যতদুর জানা যায়, ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে বংগবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা কয়েকবার বিভিন্ন কন্ঠে পাঠ করা হয়। কোন কোন সূত্রমতে সন্দ্বীপের আগে ইংরেজীতে মূল ঘোষনা পাঠ করেন ইঞ্জিনিয়র আশিক। আবদুল হান্নানও এক পর্যায়ে এখানে আসেন ও তার ভরাট কন্ঠে আবারো ঘোষনা দেন।
এরপর ২৬শে মার্চ রাত দশটার পর আরো একটি অতিরিক্ত অধিবেশন প্রচারিত হয় লন্ডন প্রবাসী সদ্য প্রত্যাগত তরুন ব্যাবসায়ী জনাব মাহমুদ হোসেনের উদ্যোগে। সহযোগী উদ্যোক্তা ছিলেন ফারুক চৌধূরী, রংগলাল দেব চৌধূরী, এবং আরো কিছু কলা কৌশলী।
এরপর পরদিন ২৭ শে মার্চ নিরাপত্তাজনিত কারনে বেলাল মোহাম্মদ নিকটস্থ পটিয়ায় অবস্থানকারী মেজর জিয়াউর রহমানকে তার বাহিনী দিয়ে প্রহরার অনুরোধ জানালে জিয়া সানন্দে রাজী হন ও বংগবন্ধুর পক্ষে আরেকটি ঘোষনা পাঠ করেন। ইতোমধ্যে বেতার সম্প্রচার আরো শক্তিশালী করা হয়। তার কন্ঠস্বর ইথারে পূর্ন শক্তিতে ধ্বনিত হলে মুক্তিযুদ্ধ পূর্নদমে সংগঠিত হয়ে যায়। বংগবন্ধুর নামে একজন বাংগালী সেনা অফিসারের এই ঘোষনা আকস্মিক আক্রমনে হতচকিত বাংগালীর মনে এনে দেয় নুতন আশার আলো। জিয়া ৩০ শে মার্চ পর্যন্ত আরো কয়েকটি ঘোষনাই পাঠ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারে দশজন সার্বক্ষনিক কর্মী ছিলেন বেলাল মোহাম্মদের নের্তৃত্বে। তারা ছিলেন জনাব সন্দ্বীপ, সৈয়দ আবদুস শাকের (বেতার প্রকৌশলী), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (প্রযোজক), মোস্তফা আনোয়ার (প্রযোজক), রাশেদুল হোসেন, ও আমিনুর রহমান (কারিগরী সহায়ক), শরিফুজ্জামান (টেকনিক্যাল অপারেটর), রেজাউল করিম চৌধূরী (টেকনিক্যাল অপারেটর), এবং কাজী হাবিবউদ্দিন (বেতার কর্মী নন)। ইঞ্জিনিয়র আশিক ও দিলীপ, ডাঃ আনোয়ার দম্পতি, ও কাজী হোসনে আরা ২৬শে মার্চ রাতে বেতারকেন্দ্র ত্যাগ করার পর আর ফিরে আসেননি।
ডাঃ আনোয়ার আলী, ইঞ্জিনিয়র আশিক, ও দিলীপের ছবি পাওয়া যাবে ৭২ সালে প্রকাশিত অভজার্ভারের এই লিংকে।
এই দশজন সার্বক্ষনিক কর্মীকে বিভিন্নভাবে নানা পর্যায়ে যারা সহায়তা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম; শহীদ ডাঃ মোহাম্মদ শফি, তার স্ত্রী বেগম মুশতারী শফি, মীর্জা নাসিরউদ্দিন (চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী), জনাব সুলতান আলী (বার্তা সম্পাদক), জনাব আবদুস সোবহান ও দেলোয়ার হোসেন (বেতার প্রকৌশলী), জনাব আবদুস শুকুর, সেকেন্দার হায়াত খান, জনাব মোসলেম খান,ও আরো অনেকে। এর মধ্যে ডাঃ শফি দম্পতির বাসা ছিল সে সময় চট্টগ্রাম প্রতিরোধের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ঘাটি। বেলাল মোহাম্মদ তখন সেখানেই অবস্থান করতেন। তার চরম মূল্য তাদের দিতে হয়েছিল। বেগম মুশতারী শফি হারান স্বামী ও ভাইকে। সন্তান বিহীন অবস্থায় তাকে ৭ মাস কাটাতে হয় কলকাতায়।
দুইদিন পর এই বেতার কেন্দ্রের নাম থেকে বিপ্লবী কথাটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। পাক বাহিনী অবশেষে এই গোপন বেতার কেন্দ্র ট্র্যাক করতে পেরে ৩০শে মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিটারে বিমান থেকে বোমা ফেলে। স্থলপথেও চলে কমান্ডো হামলা। জিয়া তার ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে টিকতে না পেরে জীপে করে পালিয়ে যান। গোলাগুলির মাঝে তিনি যখন জিপে করে গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে হঠাত জিপে পড়ে যেতে দেখা যায়,এতে পাক সেনাদের ধারনা হয়েছিল যে তিনি আহত হয়েছেন,যা ছিল ভ্রান্ত। তবে এতে নিরলস বেতারকর্মীরা ভেঙ্গে পড়েননি। বীর শব্দ সৈনিকগণ ইপিআর এর সহায়তার অসীম ঝুকি নিয়ে ক্ষুদ্র এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার বয়ে নিয়ে এলেন মুকাঞ্চলে। এই ভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রচার হয় আরো কিছুদিন। এরপর প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হবার পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন নিজেদের স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের অসীম গুরুত্ব অনুধাবন করে আবদুল মান্নান এমএনএ কে নুতন করে পূর্ন আকারে বেতার গঠনের নির্দেশ দেন। ফলে মুজিব নগরে পঞ্চাশ কিলোওয়াটের পূর্ন শক্তির বেতারের শুভ সূচনা ঘটল ২৫শে মে, ১৯৭১ সালে; যা পরবর্তি দিনগুলিতে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীকে দিয়ে গেছে দূর্দান্ত মানসিক বল।
সূত্রঃ একাত্তরের রনাংগন, শামসুল হূদা চৌধুরী, ১৯৮২।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ | স্বাধীনতা ঘোষনার পরে ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ হইতে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত এইদেশে হেড অব দ্য টেরিটরি কে ছিল ?? =প~
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বীর সেনানীদের শ্রদ্ধা। …
আদিল মাহমুদকে সাধুবাদ জানাই, মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথাকে আরেকবার উন্মোচনের জন্য। চলুক। (Y)
অসাধারণ লেখা।
আরেকটি দারুন পোস্ট। (Y)
লিঙ্কের এই ব্লগটি কি আপনার? ওখানে আপনার এই লেখাটি দেখলাম।
@হোরাস,
😀
নাহ, এটা আমি না।
ভালই, লেখা প্রচার হচ্ছে। তবে প্রচারক সাহেব মূল সূত্রের লিংক খানা দিলেই পারতেন।
এই ব্লগের নাম তো শুনিনি আগে। এত ব্লগে যান কখন।
@আদিল মাহমুদ, আরে না এতো ব্লগে যাওয়ার সময় কই? যেগুলাতে আছি তাতেই সময় বের করতে পারিনা। কালকে আপনার লেখাটা পড়ছিলাম কিন্তু কমেন্ট করার সময় ছিলো না। একটা ভুল চোখে পরেছিলো কিন্তু আজ সেটা আর খুঁজে পাইলাম না। মনে হয় ঠিক করছেন। যাই হোক, ঐটা খুঝতে একটু সার্চ দিছিলাম। সেখান থেকেই ওটার লিঙ্ক পাইছি।
ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই আপানাকে ও অন্যদেরকে যারা আলোচনায় অংশ গ্রহন করে নতুন নতুন তথ্য দিয়েছেন। (F)
কোন একটি বেতার কেন্দ্র দখল করে, একটি ঘোষণা পাঠ করতে পারলেই যদি স্বাধীনতা অর্জন হয়ে যেত, তাহলে রাজনৈতিক দলের কোন প্রয়োজন থাকতো না। কতিপয় সশস্ত্র ব্যক্তি বা সেনা বা সেনা কর্মকর্তা হয়ে উঠতো ইতিহাসের চালিকা শক্তি।
@স্বপন মাঝি,
আপনার কথা বোধগম্য হলনা। :-O
@আফরোজা আলম,
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অনেক আগেই সাড়া দেয়া উচিত ছিল, পারিনি। সপ্তাহে ৮০-৮৪ ঘন্টা কাজ করে, মুক্তমনায় চোখ বুলিয়ে যাই। অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করে, পারিনা। অল্প কথায় মন্তব্য করে বসি।
আমি মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার কথাটা অল্পকথা বলে ফেলেছি, এই আর কি।
ভাল থাকবেন।
@আদিল মাহমুদ,
আনেক ধন্যবাদ এমন একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধের জন্য। অনেক কিছু জানলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নবম শ্রেনীর ছাত্র ছিলাম। সেই বিভীষিকাময় সময় ও পরিস্থিতির কথা সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে আছে। আমাদের ‘মুক্তি সংগ্রামের’ পূর্ববর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও তার ধারাবাহিক খুটিনাটি ভাল মনে নেই। কিন্তু ‘সেই নয় মাস’ ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের স্মৃতি স্পষ্ঠ মনে আছে। সে ভয়াবহ দিনগুলোর কথা কখনোই ভুলার নয়!
@গোলাপ,
ধন্যবাদ।
আপনাদের অভিজ্ঞতাও লিখে ফেলুন।
আমি তো শুধু জোড়াতালির ওপর দিয়ে গেছি।
@আদিল মাহমুদ,
৭১ নিয়ে সব লেখাই আমাকে সেই সব ভয়ঙ্কর উত্তেজনাকর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। ৭১ নিয়ে যত লেখা হবে তত নতুন সত্যি হয়তো প্রকাশ পাবে। লেখার এই ভালো কাজটা করে সত্যি ইতিহাস প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করলেন, ধন্যবাদ সেজন্য।
পুরনো ঢাকার পূর্ব প্রান্ত থেকে এক অতি চঞ্চল রোমাঞ্চপ্রিয় কিশোরের চোখে দেখা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে এবারই লেখার ইচ্ছা ছিল। হোল না, তবে ওটা লিখবই।
যারা লিখলেন আর মন্তব্য করলেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকলো।
@কাজী রহমান,
এবার হল না কেন? কোন সময় সীমা তো নেই। সুবিধেমত সময়ে ধীরে সূস্থে লিখে ফেলুন। আফরোজা যেমন বলেছেন, আপনাদের প্রজন্মের পর নুতন প্রজন্মের কাছে দেবার মত আর কেউ থাকবে না।
কাজেই ঢিলেমী করলে চলবে না।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক আছে। ঢিলেমি করবো না। ভালো থাকুন।
আদিল ভাইকে ধন্যবাদ মূল্যবান লেখাটির জন্য।
(অ.ট. আপনার লেখা পড়ার জন্য অনেক দূর যেতে হয়। মুক্ত-মনায় যদি নিয়মিত লেখতেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো বড্ড ভাল লাগে।)
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ। আরে দূরে যাই তো ফাইজলামি আর গালিগালাজ করতে 😀
সৈকতের মতো আমিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি মূল্যবান লেখাটির জন্য। মুক্তমনায় নিয়মিত লেখার দাবী জানাচ্ছি।
লেখাটা পড়ছি আর ততোটাই অতীতে ফিরে যাচ্ছি। “চরম পত্র” শোনার জন্য
আমরা ক’ভাই বোন, মা ,বাবা সবার কি আকুলতা। চরম নিঃশব্দের মাঝে চলা ফেরা। এক একটা দিন কেমন ভয়ঙ্কর ছিল তা বলে বোঝাতে পারবোনা।
আমি ছোট ছিলাম বলে যতোটা না ভয় ভাবনা ছিল তার চাইতে ভাই,বাবা, মা বোনের দিকে তাকালে বুঝতে পারতাম। কি লোম হর্ষক দিন ছিল এক একটা।
এখনও গুলির শব্দ কোথাও শুনলে চমকে উঠি। আমার মত এমন অনেকেই আছেন হয়তো-।
@ আদিল মহাম্মদকে ধন্যবাদ এমন এক অনুভূতিময় লেখা দেবার জন্য।
@আফরোজা আলম,
আপনারা ভাগ্যবান, সেসব দিনের সরাসরি ছোঁয়া পেয়েছেন।
আর আমরা শুধুই সেসবের টুকরো টুকরো ছাপ এখান সেখান থেকে নেই।
@আদিল মাহমুদ,
কি করে বলি ভুলি,
নাই সেই দিনের কথা সেই ১০ মাস কি ভাবে কেটেছে-
ভুলি নাই কিছু। আমাদের বাসায় কালের স্বাক্ষী সেই ট্রাঞ্জিস্টারটা এখনো আছে।
মাঝে মাঝে ভাবি মুক্তি যুদ্ধ যাদু ঘরে দেয়া যায় কিনা। কিন্তু, মা জীবিত আছেন।
এও জানি তিনি দেবেন না। কেননা সেই সময়কার অনেক স্মৃতি জড়ানো আছে ট্রাঞ্জিস্টারটায়। বাবার স্মৃতি, প্রবাসী বড় ভাইয়ের স্মৃতি। যিনি সেই সময় এতো বিপদে পড়েও ট্রাঞ্জিস্টার টা কাছ ছাড়া করেননি।
এই নিয়েই এক বই লিখেছি। ভাবছি আগামী ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশ করব।
আপনি যেমন করে স্বরণ করলেন পরবর্তি প্রজন্ম যেন এমন করে মনে রাখে।
আমাদের মত যারা ছোট থেকেও অনেক ছোট ছিলাম সেই সময়। অথচ অনেক কিছু মনে আছে- আমাদের মৃত্যুর সাথে সাথে একটা অধ্যায়ের শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তি প্রজন্মের ঊপরে নির্ভর করবে তারা সেইটাকে কী ভাবে সংরক্ষিত করে রাখবে। হয়তো আমরা তখন থাকবো না।
শুনেছি স্বাধীনতার প্রথম ঘোষনা নাকি বলদা গার্ডেনের এক বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছিল। আমার চিন্তা ছিল–ঢাকার বলদা গার্ডেনে কোনরকম বেতার প্রচার বা গ্রহণ কেন্দ্র ছিল বলে আমি কোনদিন শুনি নাই। হতে পারে শেখ সাহেবের বক্তব্য মোর্স কোডে পাঠানো হয়েছে।
অনেকে বলেন পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ার কিছু আগেই নাকি শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষনার বানী লিখে রেখেছিলেন। সেই বানীটাই কেউ হয়ত পাঠ করেছিল অথবা টেলিগ্রাফের মাধ্যমে পাঠিয়েছিল। তবে শেখ সাহেবের স্বাধীনতার বানী যে ইংরেজিতে ছিল তাতে কারও দ্বিমত নাই।
আমরা ঢাকাবাসীরা প্রথম স্বাধীন বাংলা বেতার শুনি খুব সম্ভবতঃ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি। তখন বেতার ছিল খুবই দূর্বল—অতি ক্ষীন শব্দের। আবার কিছুক্ষন শোনার পর আর শোনা যেতনা–তার পর আবার ক্ষীন স্বর শুনতাম। শুধু রাত্রেই দ্বাধীন বাংলা বেতার শোনা যেত। মাস খানেক পর বেতারটি একটু শক্তি পেল—মনে হয় তখন বেতার প্রচারিত হত কোলকাতা অথবা এর নিকটবর্তী কোন অঞ্চল থেকে।
এর কিছুদিন পরেই নিয়মিতভাবে প্রচার হতে থাকল ‘জল্লাদের দরবার’ যা লিখতেন এবং পাঠ করতেন এম আর আখতার মুকুল। এই ‘জল্লাদের দরবার’ শোনার জন্য প্রতিটি বাঙ্গালি উন্মুখ হয়ে বসে থাকত বেতারের কাছে। আমার পরিস্কার মনে আছে–আমরা স্বাধীন বাংলা বেতারের কোন অনুষ্ঠান এক দিনের জন্যেও বাদ দিতাম না।
আপনার এই লেখাটি অনেক তত্ত্বপূর্ণ। এতে অনেক ঘটনা এবং নাম আছে যা আমি আগে যানতাম না।
@আবুল কাশেম,
শেখ সাহেব সেই ঘোষনা যে কি করে প্রচার করেছিলেন তার একেবারে নিশ্চিত তথ্য প্রমান আমি পাইনি। তবে এটা ১০০% নিশ্চিত যে যেভাবেই হোক, তার নামের ইংরেজী স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পরদিন ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম সহ দেশের অনেক যায়গায় পৌছে গেছিল, প্রধানত বেতারে।
আপনার বলা বলধা গার্ডেন থিয়োরীর ভিত্তি আছে। আমার ধারনা বংগবন্ধু অতি গোপনে একাধিক বেতার ব্যাবস্থা রেখেছিলেন একেবারে শেষ মুহুর্তের জন্য। যার একটি হল সেই বলধা গার্ডেন থিয়োরী। ততকালীন ইপিআর এর এক বেতার বিশেষজ্ঞ সুবেদার মেজর শওকতের কন্যা (বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা) দাবী করেছেন যে তার পিতা বংগবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা প্রচার করা অবস্থাতেই গ্রেফতার হন, পরে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। কেউ কেউ আবার দাবী করেন যে মগবাজার টেল্রিগ্রাফ অফিসের দুয়েকজন বিশ্বস্ত বাংগালী কর্মী এটি প্রচার করেন।
খুব সম্ভবত মে মাসের প্রথমে পূর্ন শক্তির বেতার কলকাতায় কাজ শুরু করার পর আপনারা ঢাকায় ভালভাবে শুনতে পান।
@আবুল কাশেম,
এখানে পড়তে পারেন, খুব ইন্টারেষ্টিং।
নূরূল উল্লা আমাকে ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে হবে। আমি যাওয়ার বেলায় শুধু একবার আমার দেশবাসীর কাছে কিছু বলে যেতে চাই। আমি শেষবারের মতো ভাষণ দিয়ে যাব।’
@আদিল মাহমুদ,
এই তথ্য আপনার কাছে প্রথমে জানলাম, আগে শুনি নাই।
হাঁ, নুরুল উল্লাহ স্যার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষক ছিলেন। উনি ছিলেন আমেরিকা থেকে সদ্যফেরত পি এইচ ডি–তড়িৎকৌশলে। ঐ রাত্রে (২৫-২৬ মার্চ) এবং দিনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে কী মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা তা আমরা দুই তিনজন স্বচক্ষে দেখেছি। নুরুল উল্লাহ স্যার ঐ ভিডিও ধরেছিলেন ২৬ মার্চের সকাল বেলায়। দেশ স্বাধীন হবার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ঐ ভিডিও দেখলাম প্রকৌশল বিশবিদ্যালয়ের চত্বরে। নুরুল উল্লাহ স্যার বললেন উনি উনার ফ্ল্যাটের গোসলখান অথবা রান্নঘরের জানালা থেকে–ঐ ভিডিও ধারণ করেছিলেন।
নুরুল উল্লাহ স্যার বলেছিলেন জগন্নাথ হলের ঐ নারকীয় হত্যাযোগ্য চলেছিল সমস্ত দিনব্যাপি। কিন্তু উনার কাছে তত দৌর্ঘের টেপ না থাকার কারনে অথবা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকার কারনে সম্পূর্ণ হত্যাযজ্ঞ্য ভিডিওতে ধারণ করতে পারেন নাই। আমরা যে টেপ দেখেছিলাম তা ছিল খুব সম্ভবতঃ আধ ঘণ্টার মত–বিভিন্ন সময়ে তোলা–বেশীরভাগ পাঁচ মিনিটের অন্তরায়।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার–বাংলাদেশ সরকার ঐ ভিডিও-কে তেমন গুরুত্ব দেয় নি–এবং আমার যতটুকু স্মৃতি তাতে মনে হয় সেই ভিডিও বাংলাদেশ টেলিভিসনে দেখানো হয়নি। এর বছরখানেক পরেই আমি দেশত্যাগ করি–তাই পরে বিটিভি ঐ ভিডিও প্রচারিত করেছিল কি না জানি না।
দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, নুরুল উল্লাহ স্যার তখনকার বাংলাদেশের সরকারের উপর বিতস্রদ্ধ হয়ে পড়েন যে তিনি আমারিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী যোগাড় করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সেই সাথে নিয়া যান ঐ ভিডিওর কপি। সুনেছি আমেরিকা এবং ব্রিটেন থেকে ঐ ভিডিও পরে প্রচার করা হয়।
আমি যা লিখলাম তা সম্পূর্ন স্মৃতি থেকে–তাই কোন সুত্র দিতে পারব না। আর আমার স্মৃতিও তেমন বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।
@আবুল কাশেম,
আপনিও যে সে রাতের গণহত্যা স্বচক্ষে দেখেছিলেন এটা তো জানা ছিল না। আপনি তো সেই ঘটনার বিরল স্বাক্ষী।
নুরুল উলা সম্পর্কে যা বললেন আমিও তেমনই জানি। সে রাতে উনি অতি গোপনে ভিডিও করেছিলেন। সে আমলের ভিডিও এখনকার মত এত উন্নত ছিল না, কট কট আওয়াজ করত। সে আওয়াজ পাছে শোনা যায় সেজন্য উনি ক্যামেরা কাঁথা মুড়ি দিয়ে নিয়েছিলেন।
উনি যে ততকালীন সরকারের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন তা জানতাম না। আমি অবশ্য দেশে থাকার সময় ওনার নামও শুনিনি। ভাসা ভাসা শুনেছিলাম যে বুয়েটের একজন শিক্ষল ভিডিও করেছিলেন। সেই ভিডিও এখন ইউটিউবে আছে, তবে প্রিন্ট খুবই দূর্বল।
আমি ঘটনাক্রমে আমেরিকার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম সেখানে ওনার ছোট ভাই সদরুল উলা শিক্ষক ছিলেন। ওনার সাথে ভাল যোগাযোগ ছিল, তবে তখন এই ভিডিওর কথা জানতাম না।
@আদিল মাহমুদ,
আমি ঐ রাত এবং দিনে কী দেখেছি তার বিশদ বিবরণ এই মুক্তমনাতেই আছে। লেখাটা হয়েছিল ইংরাজিতে। পরে লেখাটা বাংলাদেশের ইংরাজি পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল।
আমার হাতে এখন সময় নাই। আপনি অনুগ্রহপূর্বক মুক্ততমনার পুরোন অঞ্চল দেখুন–ঐ স্মৃতি চারণমূলক লেখাটার শিরোনাম হচ্ছে–The Nights and Days of Pakistani Butchers–Rminiscence those Bloody Days After 30 Years.
হাঁ, নুরুল উল্লাহ স্যারের ভিডিওটার মান ছিল খুবই নিম্ন–কারণ তখন ভিডিও ছিলনা–ছিল ভিটি আর। নুরুলুল্লাহ স্যারের ভিডিও ছিল সাদা কালো। ছবি ছিল ঝাপসা। এতদসত্যেও পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যাকাণ্ড–লাইন করে দাঁড়িয়ে—গ্রুপে গ্রুপে সেই সব দৃশ্য ঠিকই দেখা গেছে। হত্যা করার আগে কবর খোড়াঁর দৃশ্য এবং পরে বুলডোজার দিয়ে কবরে মাটি ফেলার দৃশ্যও ভালই দেখা যাচ্ছিল—এই সব দৃশ্যগুলো আমার পরিস্কার মনে আছে।
@আবুল কাশেম,
আপনার এ লেখা পড়িনি তো। পড়তে হবে সত্ত্বর।
তখন যে ভিটিআর বলা হত জানা ছিল না।
@আবুল কাশেম,
এটাই তো? –
Nights and Days of Pakistani Butchers
আপনার আরেকটি লেখা এ লেখা সম্পর্কিত-
My Response to a Pakistani School Student
@সৈকত চৌধুরী,
হাঁ, আপনি ঠিক লিখেছেন। এই লেখাটা আমি লিখছিলাম জাফর ভায়ের অনুরোধে–মনে হয় প্রায় দশ বছর আগে। আমি তখন লেখায় খুব কাঁচা ছিলাম।
এই লেখা দিয়েই মনে হয় আমার কলমপেশা শুরু হয়েছিল।
@আবুল কাশেম,
আপনার একটি লেখার লিংক ইরতিশাদ সাহেবের ‘আমার চোখে একাত্তর’ লেখায় আগেই দিয়েছিলাম। অন্যটি এখানে-
@আকাশ মালিক,
আপনি যে লিঙ্ক দিয়েছেন সেটা ২০০৬ সালে পূনঃ প্রকাশিত।
আসলে এই রচনাটি প্রায় প্রত্যেক বছর মার্চ মাসে কোন না কোন বাংলা সাইটে প্রকাশিত হয়। তাই এর প্রথম প্রকাশ তারিখ অনেকেই জানেন না।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখলাম লেখাটা সর্বপ্রথম প্রাকাশ হয়েছিল ৩০শে মার্চ ২০০১ সালে NFB ওয়েব সাইটে।
এর পর এরই এক ভার্সন প্রকাশ হয় বই আকারে –Leaving Islam–Apostates Speak Out. এই বইতে অনেক রচনার মাঝে এই রচনাটাও স্থান পায়। আশ্চর্য্যের ব্যাপার এই বইটি এখনও বিক্রি হচ্ছে।
@আবুল কাশেম,
এই বইটা কিনে দেশে নিয়ে গিয়েছিলাম। খুব ভাল বই। আপনাকে ধন্নবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক। মুক্তমনাতেই এর বিবরণ আছে –
Nights and Days of Pakistani Butchers
আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশ অবজারভারেও এটি একসময় প্রকাশিত হয়েছিল।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিত আপনাকে এই লিঙ্কটা দেবার জন্য। পড়তে গিয়ে চোখে জল এসে গেল বার বার। সেই দিন সেই রাত্রি–
এই সব আলোচনা যত পড়ছি মনে হচ্ছে যেন সেই ৭১ সেই দিনরাত্রি, আমরা মুক্তমনার ক’জন সবাই ঘন হয়ে বসে আছি- আর চোখের সামনে সব কিছু ছায়াছবির মত দেখতে পাচ্ছি।
@আবুল কাশেম,
দেখানো হয়েছিল। মনে হয় ১৯৭২ সনেই সাদা কালো টিভিতে দেখেছি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনার তথ্য সত্যি মনে হয়। আমি তখন বাংলাদেশে ছিলাম না।
@আবুল কাশেম,
২৬ তারিখের রাত ১২টা সাড়ে বারটা পর্য্যন্ত আড্ডা চলে জগন্নাথ হলে রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে। আড্ডা শেষে ছাত্র সুশীল মোদক চলে যায় তার রুমে এবং হলের সাধারণ সম্পাদক আর এক সুশীল দাস অন্যদিকে একবারে তোপের মুখে। হলের দারোয়ানদের পরেই সুশীল দাস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। যে কিছু ছাত্র হল থেকে বেরোতে না পেরে হলেরই আনাচে-কানাচে লুকিয়ে ছিল, পাক বাহিনীরা পরদিন তাদের দিয়েই মাটিতে গর্ত করে কবর তৈরী করে এবং মৃত দেহ হল থেকে টেনে এনে মাটি চাপা দেওয়ায়। পরদিন অধ্যাপক নুর উল্লাহ এই দৃশ্যই তাঁর ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করেন। কবর দেওয়া শেষে পাক বাহিনী এদেরকেও খুন করে চলে যায়। এদের মধ্যে মাত্র একজনই প্রাণে বেঁচে যান। নাম শেখর। বাংলাদেশের কোথাও এখনও তিনি জীবিত আছেন।
যে সুশীল মোদক অন্য দিকে চলে যান তিনি এবং আরও চার জন ডাইনিং রুমের পাশে লাকড়ি রুমে ঢুকে ছিটকিনী দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কারণ ছিটকিনীটি কাজ করছিল না। এই ভাংগা ছিটকিনীর কারণেই সুশীল সহ আর চার জন ছাত্র বেঁচে যান। বছর দশেক আগে ঘটনাটি সুশীল আমাকে বলেছিল। আজকেই এই বিশেষ দিনে তাকে কল করে আবারও স্মৃতি চারণ করি।
পাক বাহিনীরা তন্ন তন্ন করে জগন্নাথ হলের ছাত্রদেরকে খোজাখুজি করে। দুজন পাক সেনা লাকড়ি রুমেও আসে সেই রাতে। একজন বলে – দরজা খোলা, ভেতরে কারও থাকার কথা নয়। চল্ ওই দিকে।
সুশীল এখন ডঃ সুশীল মোদক। Texas Commission for Environmental Quality (TCEQ) তে কর্মরত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
জগন্নাথ হলের হরিধন দাসকে চিনতেন নাকি? উনি ছিলেন সে রাতের একজন বিরল জীবিত স্বাক্ষী যিনি গ্রেনেডের ঘায়ে মারাত্মক আহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। ওনার সাক্ষাতকার “সে রাতের কথা বলতে এসেছি” ডকুমেন্টরিতে আছে।
উনি এক সময় আমার বড় বোনের গৃহশিক্ষক ছিলেন চট্টগ্রামে, তখন আমি নিতান্তই শিশু, খুব স্নেহ করতেন। এসব কথা বলার মত সময় ছিল না।
কয়েক বছর আগে ভদ্রলোক মারা যান।
@আদিল মাহমুদ,
হরিধন নামে একজন ছিল শুধু এটুকুই ডঃ সুশীল মনে করতে পারছেন।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
উনি তখন ফিজিক্স এ পড়তেন, ২৯ নং রুমে থাকতেন। ওনার চেহারা পরিষ্কার মনে আছে আমার, ছোটবেলায় অসংখ্যবাদ দেখেছি। ওনার অভিজ্ঞতা বহু পত্রপত্রিকায় বহুবার এসেছে।
Heavy boot steps at the door. We parted from each other after hand shake. So far we clang together, all three. Now we moved to three corners. I was behind the door. Heavy brush fire cracked the door. Suddenly two massive explosions! Grenade charge. The killer said “ Say Joy Bangla, sister fucker, where is Sheikh Mujib?” With a pencil torch the marauders checked their ravage. Then those monsters marched towards the next door. Their relentless rampage continued till the morning. In the mean time fire broke out in my room. Smell of gunpowder was choking me. I was past all pains. Pressed under the cracked door. With great efforts I crawled out from under the door to see what happened to Sushil and the other friend. Where are they? Nothing was found as I went fiddling around the room. How on earth so much water and slime came into the room? As I was coming to my senses, I realized that their bodies were blown into pieces due to heavy brush fire and grenade charge. The whole floor was flooded with raw blood. Martyrs they were……I tried to stand. But I could not. My left leg felt like shorn off my body. Fingers of my hands were all numb. Bleeding and injuries all over my body. The foot of my left leg is almost severed from my body. I wrapped my foot with the short-sleeved shirt I was wearing. Surrounded me were gun shots, grenades and screams of the dying……..”
Recounted by Prof Haridhan Das, Department of Physics, Victoria College, Comilla.
Quoted from “Genocide in Dhaka University: 1971, The Jagannath Hall” by Prof Ratanlal Chakraborty, Dept of History, University of Dhaka
Heavy boot steps at the door. We parted from each other after hand shake. So far we clang together, all three. Now we moved to three corners. I was behind the door. Heavy brush fire cracked the door. Suddenly two massive explosions! Grenade charge. The killer said “ Say Joy Bangla, sister fucker, where is Sheikh Mujib?” With a pencil torch the marauders checked their ravage. Then those monsters marched towards the next door. Their relentless rampage continued till the morning. In the mean time fire broke out in my room. Smell of gunpowder was choking me. I was past all pains. Pressed under the cracked door. With great efforts I crawled out from under the door to see what happened to Sushil and the other friend. Where are they? Nothing was found as I went fiddling around the room. How on earth so much water and slime came into the room? As I was coming to my senses, I realized that their bodies were blown into pieces due to heavy brush fire and grenade charge. The whole floor was flooded with raw blood. Martyrs they were……I tried to stand. But I could not. My left leg felt like shorn off my body. Fingers of my hands were all numb. Bleeding and injuries all over my body. The foot of my left leg is almost severed from my body. I wrapped my foot with the short-sleeved shirt I was wearing. Surrounded me were gun shots, grenades and screams of the dying……..”
Recounted by Prof Haridhan Das, Department of Physics, Victoria College, Comilla.
হরিধন দাসঃ একজন নির্মোহ প্রগতিবাদীর প্রতিকৃতি
‘পাশ করা বিদ্যাকে শিক্ষা বলি না-‘ কথাটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অসম্পূর্ণতাকেই নির্দেশ করে। জ্ঞানের ভান্ডার যে ধনের ভান্ডার নয়- এ অনুধাবন আমাদের প্রতি মুহুর্তের। লাভালাভের হিসেবে পটু লোকেরা নিঃসন্দেহে চতুর। নিজেকে গড়তে চায় অপরকে ধ্বসিয়ে দিয়ে। প্রমথ বাবুর এ কথা তাই এখনও প্রাসঙ্গিক যদিও সময় সামনে গড়িয়েছে বৈ কি! এ সমাজ ধনীকে তোয়াজ করে চলে যথেষ্ট। যুক্তির তীক্ষ্মতার চেয়ে বক্তব্যের আড়ম্বর সর্বত্র। ধ্যানী-গুণীরা এখানে অবহেলিত থাকেন- সমাজের কথিত মূলধারায় মিশে যান না বলেই। অথচ প্রকৃত জ্ঞানীর তৃপ্তি অন্যের চাটুকারিতায় নয়, জ্ঞান আহরনে-অজনার সন্ধানে পরিব্যপ্ত হয়ে অধিকতর যোগ্য হয়ে ওঠায়। এ সমাজ অর্থে বিক্রীত বহু বিকৃত ব্যক্তির কৃতিত্বের স্বীকৃতির ভুয়া মানপত্র পাঠ করে। সমাজ সভ্যতার এ সংকটের মাঝেই একজন নিভৃতচারী মৃদুভাষী অধ্যাপক হরিধন দাস। ২০০৬ সালের ৪ জুলাই যিনি চলে গেলেন। আজ তাঁর মৃত্যুর পূর্ণ এক বছর গত হল।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সদা উদ্দীপ্ত এবং আগা-গোড়া বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের এ অধ্যাপক। খুবই সাদাসিধে জীবন চর্চায় অভ্যস্ত ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞানে ছিল অসামান্য পান্ডিত্য। সাহিত্য, ইতিহাস,দর্শন-বিশেষ করে কপিল মুনির সাংখ্য দর্শন এবং গৌতম বুদ্ধের দর্শনে এর প্রভাব, বেদান্তীয় দর্শন, ধর্ম-এর রাজনৈতিক ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল যথেষ্ট স্পষ্ট ও দৃঢ়।
প্রগতিবাদী এ শিক্ষক সৈয়দপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগ দেন ১৯৮১ সালে। এখানে তাঁর সাথে বিভিন্ন সময়ে যোগযোগ ঘটে অধ্যাপক সুবীর কুমার চক্রবর্তী, শেখর রঞ্জন সাহা, শান্তনু কায়সার প্রমুখ শিক্ষকের সাথে। শান্তনু কায়সার এর উদ্যোগে সে সময় এখানকার অগ্রসর মানসিকতার শিক্ষকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনার আয়োজন করত এ সংগঠন । অধ্যাপক হরিধন দাসের অংশগ্রহণ ছিল এখানে নিয়মিত।
১৯৯৫ সালে কাওসার চৌধুরী নির্মিত ‘‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’’ প্রামাণ্য চিত্রে একাত্তরে জগন্নাথ হল হত্যাকান্ড এবং নিজে আক্রান্ত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন হরিধন দাস। থাকতেন জগন্নাথ হলের নীচতলার ২৯ নম্বর কক্ষে। ‘‘রতন লাল চক্রবর্তী” সম্পাদিত জগন্নাথ হল হত্যাকান্ড বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায় হরিধন দাসের। বইটি আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের এক অনবদ্য দলিল। প্রামাণ্য চিত্রে ২৯ বছর পর ছাত্রাবাসের একই কক্ষে তিনি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি মিলিটারির নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ স্মৃতি পরিব্যক্ত করেন। সেই কক্ষে অবস্থান করা অপর দুজন ব্রাশ ফায়ার ও গ্রেনেড চার্জে ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও হরিধন দাস ঘটনাচক্রে বেঁচে যান। সংজ্ঞাহীন এবং আহত অবস্থায় তাঁকে ২৭ মার্চ সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে হরিধন দাস ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক। ক্লাসে নিয়মিত পাঠদানে ছিলেন সদা সচেষ্ট। গ্রাফ ও ম্যাথমেটিক্যাল টার্মের উপর গুরুত্ব দিতেন সব সময়। আপেক্ষিকতাবাদ, কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স ইত্যাদি বিষয়ে ছিলেন গভীর প্রাজ্ঞ। ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স ও মার্স্টাস ল্যাবের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক ল্যাবের উন্নয়নে তিনি নিরলস খেটে গেছেন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি, ক্রয় ও মেরামত করে সমৃদ্ধ গবেষণাগারে রূপ দেন। প্রতিটি ব্যবহারিক পরীক্ষায় বরাদ্দকৃত অর্থের বেঁচে যাওয়া অংশ নিজেদের মধ্যে পারিতোষিক হিসেবে বন্টন না করে ল্যাবরেটরি সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করেন। ঐ সময়ে করা এক বিভাগীয় অডিটে দেখা যায় ডিপার্টমেন্টের সব হিসেব ঠিক থাকলেও যন্ত্রপাতির হিসেবে মিল নেই। যত যন্ত্রপাতি থাকার কথা রয়েছে তার চেয়ে অধিক। এ সময় তাঁকে সব সময় সহযোগিতা দিয়ে গেছেন একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক অর্জুন চন্দ্র শীল।
২০০১ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে চাঁদপুর সরকারি কলেজে বদলি হন। এ সময় থেকেই তাঁর ক্রমাগত স্বাস্থ্যহানি ঘটতে থাকে। কিছুকাল পর প্রফেসর পদে পদোন্নতি পেয়ে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে বিভাগীয় প্রধান হয়ে যোগ দেন। আমৃত্যু ঐ পদেই ছিলেন।
আমাদের এখানে বিজ্ঞানের অনেক শিক্ষক বহু অবিজ্ঞানকে প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা করে। সস্তা আপোষ করে ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে। এ কলুষিত ধারার উজানে বিজ্ঞানের স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট লালন করতে দেখেছি অধ্যাপক হারিধন দাসকে। একজন সৎ ও প্রতিভাবান ব্যক্তিকে আমরা তাঁর যোগ্য সম্মানটুকু দিতে পারিনি। এতে তাঁর আপন মহিমায় কিছুমাত্র ঘাটতি হবে না বরং আমরাই অধিকতর ম্লান হয়ে যাই। তাঁর স্মৃতির প্রতি রইল আমাদের অকৃত্রিম প্রণতি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ডঃ সুশীল ্মোদককে কি অনুরোধ করা যায় ঐ রাত এবং দিনের বৃত্তান্ত দেবার জন্যে?
@আবুল কাশেম,
সুশীল মোদক সে সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ইদানীং বৃদ্ধা মা আর সংসার ছাড়া আর কিছু ভাবেন না। বৃত্তান্তের জন্য অনুরোধ করা বিড়ম্বনাই মনে করবেন বলে আমার ধারণা।
ধন্যবাদ আগ্রহের জন্য।
@আবুল কাশেম,
জল্লাদের দরবার নয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এম আর আখতার মুকুল চরমপত্র অনুষ্ঠানটি লিখতেন এবং পাঠ করতেন। জল্লাদের দরবার ছিল নাটক। ধারাবাহিকভাবে এটি প্রচারিত হত সেই সময়। এর রচয়িতা ছিলেন কল্যাণ মিত্র এবং মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বলিষ্ঠ অভিনেতা রাজু আহমেদ।
@ফরিদ আহমেদ,
হাঁ, আপনি সঠিক লিখেছেন।
স্মৃতি–তুমি যে বড়ই বেদনা….আজ চল্লিশ বছর পর কত কিছুই না মনে উঁকি ঝুঁকি মারছে….আমার কি হয়েছে? আমি ঐসব ভয়ঙ্কর দিন রাত্রির কথা স্মরণ করলে মনে হয় পাগল হয়ে যাব….এই চিন্তা মনে হয় তখনকার দিনের সব বাঙ্গালিরই।
আমরা দিনকে দিন বাঁচতাম…কোন সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে এই ভয়ে ভীত থাকতাম–বিশেষতঃ রাত্রিবেলায়। মনে পড়ছে কী আতঙ্কের মধ্যে আমরা গুটিসুটী মেরে ঘরের সবাই এক জায়গায় জড় হয়ে অতিশয় নিম্ন শব্দে স্বাধীন বাংলা বেতার শুনতাম।
একবার জানলাম পাকিস্তান সরকার নাকি ঘোষনা করেছে যে স্বাধীন বাংলা বেতার শুনবে তাকে গ্রেফতার করা হবে। হয়ত মেরেও ফেলা হবে। আরো গুজব উঠল যে ইসলামি দলগুলো গোয়েন্দাগিরি করছে রাতের বেলায়–চুপি চুলি প্রত্যেক ঘরে ঘরে কান পেতে রাখছে–কেউ স্বাধীন বাংলা বেতার শুনছে কি না। প্রাণ ভয়ে আমরা ভিত হয়ে গেলাম।
কিন্তু এত বিপদসঙ্কুল ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও আমরা যেন নেশার মত স্বাধীন বাংলা শুনতাম। আমার মনে হয় প্রত্যেকটি বাঙালি একটা দিন বেঁচে থাকত শুধু একটা মাত্র উদ্দেশ্যেই—তা হচ্ছে স্বাধীন বাংলা বেতার শোনার জন্য। মনে পড়ছে চরমপত্র বোধকরি প্রত্যেকদিন প্রচার হত না। তাই কি ব্যাকুল ভাবেই না আমরা চরমপত্রের জন্য হা হয়ে থাকতাম।
এর পর শুরু হল ‘জল্লাদের দরবার’। মনে হত সব বাঙালি বেঁচে থাকত স্বাধীন বাংলার এই দুটি অধিবেশন শোনার জন্য। দুঃখের বিষয় সেই যুগে রেডিও ক্যাসেট ছিল না। তাই আমরা শুনেই মুখস্ত করে ফেলতাম–যে যতটুকু পারি। সারাদিন আমরা ফিসফিস করে আলোচনা করতাম গত রাতে কী শুনেছি স্বাধীন বাংলা বেতারে।
ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ আমার স্মৃতিকে চাঙ্গা করার জন্য। আমার মতিভ্রম ঘটছে–বিশেষতঃ যখন ৭১এর সেইসব দিনরাত্রির স্মৃতিচারণ করি।
@আবুল কাশেম,
কল্যাণ মিত্রের ‘জল্লাদের দরবার’ নাটকের চেয়ে এম আর আখতার মুকুলের ‘চরম পত্র’ সম্ভবত বেশী জনপ্রীয় ছিল। বাংলা সিডনি ডট কম থেকে এর কিছুটা নমুনা-
httpv://www.youtube.com/watch?v=i0X5UFAAVN8
@আকাশ মালিক,
চরম পত্র ছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার চিন্তাই করা যায় না।
হাঁ, ‘জল্লাদের দরবার’ থেকে চরম পত্র অধিক জনপ্রিয় ছিল।
লিখিত চরম পত্র আর এক জনের আবৃত্তিতে শুনলাম—কিন্ত এম আর আখতার মুকুলের কণ্ঠস্বর ছাড়া চরম পত্র যে চরম পত্রই নয়।
হাঁ, মনে পড়ছে, ছক্কু মিয়া, বিচ্ছু, মেছুয়া—এই সব শব্দ যে প্রত্যেক ঘরে, প্রত্যেকের মুখে মুখে শুনতাম। চরম পত্রের পর বাংগালি সবাই মুক্তি যোদ্ধাদের ‘বিচ্ছু’ বলত।
কি যে ছিল সেইসব দিন রাত্রি—আমি মনে হচ্ছে অপ্রকৃতিস্ত হয়ে যাচ্ছি—চিন্তাই করতে পারছিনা আমি বেঁচে আছি।
@আবুল কাশেম,
কাশেম ভাই, আরো দু একটা যোগ করে দেই, গাব্বুইরা মাইর, ঠ্যাঠা মালেইক্কা, চিপায় পলাইছে, বিচ্ছু বাহিনীর মাইর……… ইত্যাদি।
আমার দাদু চার ব্যান্ডের সনি ট্রাঞ্জিসটারে দেদার ভলিউমে ঘরের সবাইকে নিয়ে শুনতেন আর অট্টহাসি হাসতেন। আমরা ভুলে যেতাম আমাদের দুটো ভাই মুক্তিযুদ্ধে, বাবা তাঁর সুপেরিওর অফিসারের সন্দেহের তালিকায়, আমাদের বাসাতে দুটো তরুণী বড় বোন, দাদুর অট্টহাসিতে আমাদের ভয় দূর হয়ে যেত। আতঙ্কিত প্রতিবেশিদের ঐ উচু ভলিউম নিয়ে প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও দাদু এই কাজটা করতেন অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে। হ্যাঁ এই চরমপত্র ছিল সে সময়ে ক্রমাগত বিজয় বার্তা আর আশার আলো। এক দু ঘণ্টার কার্ফু না থাকলে সবাই দৌড়ে দোকানে চাল, ডাল, কেরসিন সবচে আগে খুজত, আমাকে খুজতে হোতো ব্যাটারি প্রথমে; চাল, ডাল, কেরসিন, মোমবাতি, পরে, দাদুর নির্দেশ।
@কাজী রহমান, আরো দুএকটি যোগ করি “শাহনেওয়াজ ভুট্টোর ডাউটফুল পোলা জুলফিকার ভুট্টো”, “কাচা পাকা মোটামোটা ভুরু , পিতা আননোন” ইয়াহিয়াকে বলা হত। “ঠাস কইরা একটা আওয়াজ হইল, কি হইল? কি হইল?
না আমগো পিয়াজী সাব চেয়ার থেইক্যা পইড়া গেছেন”
@ফরহাদ, :lotpot:
আজকে এক জাতীয় দৈনিকে একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম।বিএনপি’র কোনো এক নেতা দিয়েছেন বিজ্ঞাপনটি।ওখানে অনেকটা এমন লেখা ছিলো-“আজ স্বাধীনতা দিবসে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা,শহীদ রাষ্ট্রপতি,মহান স্বাধীনতার ঘোষক– জিয়াউর রহমানে প্রতি শ্রধাঞ্জলী”!! :-X
এখন কুইজ। বলতে হবে বিজ্ঞাপনটি কোন পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। :))
@নিটোল,
প্রথম আলো কি?
তবে পত্রিকা নাম কি গুরুত্বপূর্ন? তাদের কাজই হল কে কি বলে তা প্রকাশ করা, তাই নয় কি?
@আদিল মাহমুদ,
না,প্রথমা আলো নয়।তারা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন সাধারণত খুব একটা ছাপায় না। ছাপালেও খুব কম।অন্তত আমার চোখে তেমন একটা পড়েনি।
উত্তর ছিলো খুবই সহজ- ‘আমার দেশ’। এ দেশে এ পত্রিকা ছাড়া আর কোন পত্রিকা এই কাজ করবে? :))
@নিটোল,
যদি বিজ্ঞাপন হয় তবে তা যে কোন পত্রিকাই দিতে পারে। কারণ আমাদের দেশের সংবাদপত্র নিম্নমানের পণ্যেরও বিজ্ঞাপন দেয়। ব্যবসায়িক স্বার্থ বলে কথা!
আর ইদানিং বাংলাদেশে সংবাদপত্র ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক খেলা। যেজন্য কুইজ দিয়েছেন।
@গীতা দাস, হ্যাঁ,যেকোন পত্রিকাই দিতে পারে।অনেক নিম্নমানের পণ্যেরও বিজ্ঞাপন হয়-এটাও সত্যি। কিন্তু এ বিষয়টি তো কোন পণ্য নয়। এখন যদি আমি বিজ্ঞাপন দেই- “আজ স্বাধীনতা দিবসে তিরিশ হাজার শহীদদের প্রতি রইল সশ্রদ্ধ সালাম”-তখন ব্যাপারটা কেমন হবে? সংবাদপত্রের ব্যবসায়িক স্বার্থ অবশ্যই আছে।কিন্তু তার যে সামাজিক দায়িত্ব আছে সেটাও সে এড়াতে পারে না। কোন পণ্যের বিজ্ঞাপনে কিছু মানুষ হয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়,কিন্তু এমন বিজ্ঞাপনে দেশের ইতিহাস ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা থাকে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বললাম। আর আমি বিজ্ঞাপনের বিষয়টি হাল্কা চালেই বলেছি,আমার চোখে পড়েছে তাই।
@আদিল মাহমুদ,
স্বাধীনতা ঘোষনা এবং স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্র সৃষ্টি বিস্তারিত ইতিহাস আগে শুনিনি। এখানে প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের ঐতিহাসিক লেখা প্রতি বছর যেন পূনঃপ্রকাশ হয়।
কে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করলেন তার একটা বিস্তারিত বিবরণ মুক্তমনায় এসেছিল অন্তত বছর খানেক আগে। জিয়াউর রহমানের আগে আর ও দশ জন একই ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেছিলেন এমন বক্তব্য ছিল সেখানে। একজন মেজরের মুখ দিয়ে একই ঘোষনা পাঠের গুরুত্ব অবশ্যই বেশী।
সাতাশে মার্চ “আমি মেজর জিয়া বলছি …” এই কথাটি ধামরাইয়ে আমার এক অগ্রজ রেডিওতে শুনতে পেয়েছেন দাবী করলেন। স্বাধীনতা বিষয়ক বক্তব্য অস্পষ্ট শুনতে পেলাম। কিন্তু আমার অগ্রজের কথা মত “আমি মেজর জিয়া বলছি …” কথাগুলো আমারও শুনতে ইচ্ছে করল। কিন্তু প্রানাতিপাত করেও শুনতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আপনার কথা ঠিক। আমি যত সূত্র পড়েছি তাতে মনে হয়েছে যে ২৬শে মার্চ সন্ধ্যাবেলা কালুরঘাট থেকে বিভিন্ন কন্ঠে অন্তত ৭ বার স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করা হয়। তবে তাদের সবারই দূর্ভাগ্য, দেশের লোকে তাদের ঘোষনা সেভাবে শুনতে পাননি।
জিয়ার ঘোষনার মূল্য অপরিসীম, এটাও বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
ধন্যবাদ ইতিহাস পুনঃপাঠের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু আজকে দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, এম পি ‘কুমিরার লড়াই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম যুদ্ধ’ নামে যে লেখাটি লিখেছেন তা একচেটিয়া মনে হয়েছে। উনারা বুঝতে চান না বা বুঝেন না যে এসব ঐতিহাসিক লেখা লেখার সময় অনেক দায় দায়িত্ব থাকে।
উনার লেখায় ১৯৭১ সালে মার্চ মাসে চট্টগ্রামে তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ডি আই জি এর নাম উল্লেখ প্রয়োজন ছিল। ওথচ উনি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সবার নাম উল্লেখ করেছেন।উনার লেখার লিংকটি দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Sports&pub_no=471&cat_id=3&menu_id=137&news_type_id=1&index=11
@গীতা দাস,
আপনার মূল অভিযোগ সত্য। আসলে জাতি হিসেবেই আমাদের যেসব দূর্বলতা আছে তার মধ্যে অন্যতম হল মুখের রাশ। অনেক সময় হয়ত তেমন কোন উদ্দেশ্যও থাকে না, তবে অবান্তর মন গড়া কথা, বা আন্দাজি কথা বলায় আমাদের জুড়ি নেই।
তবে সুবিদ আলী সাহেবের এই লেখায় আমি তেমন কোন আলামত দেখলাম না। আমি ওনার বই অনেক বছর আগে পড়েছিলাম, মোটামুটি এমনই পড়েছিলাম। হয়ত ইচ্ছেকৃতভাবেই সেই পুলিশ অফিসারদের নামে দেননি। সেসময় এমন আরো অনেক ঘটনাই ঘটেছিল। সব বাংগালী যে হৃষ্টচিত্তে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল তাতো নয়। কিছু বাংগালী পাক বাহিনীর সাথে ১৬ই ডিসেম্বর রেকোর্সে সারেন্ডার পর্যন্ত করেছিল।
(Y)