মনোবিজ্ঞানী বি. এফ. স্কিনার। অল্প কয়জন মনোবিজ্ঞানীর নাম নিতে গেলেও যার নাম অবধারিতভাবেই চলে আসে। প্রাণী আচরণ নিয়ে গবেষণা করতেন তিনি। ২০০২ সালে Review of General Psychology-এর একটি জরিপে স্কিনার বিংশ শতাব্দির সবচেয়ে প্রভাবশালী মনোবিজ্ঞানী হিসেবে নির্ণীত হন। ১৯৯০ সালে তার মৃত্যু হয়। একই বছর The Behavior Analyst-এ তার To Know the Future লেখাটি প্রকাশিত হয়। বর্তমান লেখাটি সে লেখারই অনুবাদ।
বার্ট্রান্ড রাসেলের জীবনের দু’টি মহৎ লক্ষ্যের একটি ছিল জ্ঞানের পরিধিকে জানা। অন্তত তেমনটাই রাসেল একবার বলেছিলেন। সেরকমভাবে যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আমি বলবো, জাননেওয়ালা বলতে আসলে কি বোঝায়, সেটা উদ্ধার করাটাই হল আমার জীবনের অন্যতম মহৎ উদ্দেশ্য। রাসেলের দৃষ্টিতে প্রকৃতিটা প্রস্তুত হয়ে পড়ে থাকে রাসেলের জেনে নেওয়ার অপেক্ষায়। তিনি এখন প্রকৃতি সম্পর্কে জানবেন কি জানবেন না, সেটা একান্তই যেন তার নিজের ব্যাপার। কিন্তু ব্যাপারটা হয়তো উল্টো। হয়তো প্রকৃতিই আসলে হাতে ধরে জ্ঞানটা শেখায়।
এ ধরনের বিপরীত দিক থেকে চিন্তা করার একটা উৎস খুঁজে পাওয়া যায় জেনেটিক্সে। আমরা একটা বাচ্চাকে বলি মায়ের সন্তান; মানে এটা তার নিজের সন্তান, তার নিজের উৎপাদন। এর মত অন্য কিছু কখনো ছিল না। যদিও সত্যি কথাটা হল এই যে, বাচ্চাটার কোন বৈশিষ্ট্যের কৃতিত্বই তার মায়ের নয়। । বাচ্চাটাকে কেবল অর্ধেক জিন দান করেছে সে, তবে সেটা সে একইভাবে পেয়েছে তার নিজের বাবা মায়ের কাছ থেকে। (আর এর মধ্যে কোন প্রকার তারতম্য যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটা কেবলই দৈবাৎ)। আমরা প্রজাতিকূলের বিবর্তনগত উৎপত্তির কথা যতটা জানি, প্রাণীর আচরণের উৎসের ব্যাপারে যদি ততটাই জানা যেত, জ্ঞানের পরিধি আবিষ্কারকদের ক্ষেত্রেও তখন মা-সন্তানের ক্ষেত্রের মত একটা উপমা ব্যবহার করা সম্ভব হত।
জ্ঞান তিন ধরনের নির্বাচন আর তারতম্যের মাধ্যমে জাননেওয়ালার কাছে ধরা দেয়। প্রথমটা প্রাকৃতিক নির্বাচন, যার মাধ্যমে প্রজাতির আচরণ গঠিত হয়। এর মাধ্যমে মানুষ থেকে শুরু করে সকল পশু টিকে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করে। দ্বিতীয় উপায়ের কারণে একটা সত্তা তার জীবদ্দশায় জ্ঞান-আহরণ করে। এই দ্বিতীয় ধরনটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মত এত স্পষ্ট করে আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারি নি। তবে এর পর্যবেক্ষণগত ও পরীক্ষামূলক গবেষণা প্রাকৃতিক নির্বাচনের চেয়ে অনেক সহজ এবং আমরা এ ব্যাপারে অনেককিছুই ইতোমধ্যে জেনেছি। আর তৃতীয় উপায়টা একটু ভিন্ন ধরনের। এই উপায়ে জ্ঞান আসে সামাজিক পরিবেশের বিবর্তনের মাধ্যমে, যাকে আমরা বলি সংস্কৃতি। এর মাধ্যমে একটা সত্তা অন্য আরেকটা (হয়তো ভিন্ন সময়ে বেঁচে থাকা) সত্তার অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান-আহরণ করতে পারে। রাসেল যাকে জ্ঞান বলেন, তার একাংশ আসে প্রকৃতির সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে, যাকে বলা যায় “অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান”। বাকিটা শেখা হয় অন্যদের শেখা থেকে ধার করে, অর্থাৎ সেটা “বর্ণনামূলক জ্ঞান”।
বিজ্ঞানী ও বিদ্বান পণ্ডিতগণের অধিকাংশের জ্ঞানই বর্ণনামূলক জ্ঞান। দর্শন আর গণিত নিয়ে রাসেল যা কিছু জানতেন, তার একটা ক্ষুদ্র অংশ হল অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান। স্যামুয়েল বাটলার একবার বলেছিলেন, একটা ডিম আরও ডিম উৎপাদনের নিমিত্ত হিসেবে মুরগিকে ব্যবহার করে। আধুনিক পরিভাষায় – একটা সত্তা হল তার জিনের দাস। একইভাবে আমরাও বলতে পারি, দর্শন আর বিজ্ঞানের সংস্কৃতি যাতে এমন আরও আরও সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে রাসেল হলেন সেটার নিমিত্তমাত্র। এ ধরনের কথা অবশ্য রাসেল মহাশয়কে নিয়ে বলার চেয়ে একটা মুরগিকে নিয়ে বলাটাই বেশি সহজ। কারণ আমরা প্রজাতিকূলের উৎপত্তি বা বিবর্তন নিয়ে অঢেল জানি, কিন্তু আচরণের উৎস নিয়ে সে অনুপাতে কিছুই জানি না (এবং একইভাবে আমরা জিন ও ক্রোমজোম নিয়ে অনেক জেনে গেলেও সে অনুপাতে, জটিলতার বিচারে, মস্তিষ্ক নিয়ে তেমন কিছুই জানি না)। আমরা যে মনে করি, ডিমকে মুরগি ব্যবহার করে আরেকটা মুরগি তৈরি করতে, বাটলার সে ধারণাটাকে ঠিক উল্টে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃত কথাটা হল যে ডিম-মুরগি-ডিম-মুরগি-ডিমের একটা অবিরাম ধারা বিরাজ করছে। একইভাবে বিরাজ করছে ব্যক্তি-সংস্কৃতি-ব্যক্তি-সংস্কৃতি-ব্যক্তির একটি অবিরাম ধারা। সত্তা এখানে অপরিহার্য। মুরগি না থাকলে আর কোন ডিমও তৈরি হবে না, দার্শনিক না থাকলে তৈরি হবে না আর কোন দর্শন। কিন্তু কালাতিক্রম করে যে বস্তুগুলো টিকে থাকে, তা হল কেবল জিন আর সংস্কৃতি।
উপমাটা মুরগির চেয়ে রাসেলের ক্ষেত্রে মেনে নেয়াটা আরও একটা কারণে কঠিন। এতে যেটা হয়, একজন সত্তাকে সামান্য একটা বস্তু হিসেবে কল্পনা করা হয়, যার উপর ঘটনা কেবল ঘটে যেতে থাকে। মুরগির ক্ষেত্রে ঘটে টিকে থাকার সংগ্রাম এবং তার সাথে হয়তো একান্ত দৈবক্রমে তার প্রজাতির বিবর্তনে কিঞ্চিৎ অবদানের মত ঘটনা ঘটে যায়। রাসেলের ক্ষেত্রেও একইভাবে টিকে থাকার সংগ্রাম ঘটতে থাকে। আর তার সাথে একটা দুর্ঘটনার মত করে দর্শন আর গণিতের বিবর্তনে অবদানের একটা ঘটনা ঘটে যায়। রাসেলের অবদান যে প্রকৃতির সাথে তার মিথস্ক্রিয়ার একটা বিশেষ তারতম্যের ফল, এমনটা ভাবতে আমাদের ভালো লাগে না। আমরা ভাবি, নিশ্চয়ই রাসেলের অবদান তার থেকে বেশি কিছু। আমরা ভাবতে পছন্দ করি, রাসেলের অবদান তার নিজের ভিতর থেকেই উৎসারিত। তেমনটা আমরা আমাদের নিজেদের ব্যাপারেও ভাবি। আমরা মনে করি, যা কিছু আমরা করি, তা আমাদের নিজেদের ভেতর থেকেই শুরু হয়। আমরা মনে করি রাসেল সত্তাটি নিজ থেকেই কিছু সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার জন্যে যথাযথ স্বীকৃতি তার প্রাপ্য। বিবর্তনকে আমরা প্রজাতি উৎপত্তির তত্ত্ব হিসেবে মেনে নিলেও একেকজন সৃষ্টিশীল ঈশ্বর হিসেবে জন্ম বলেই আমরা নিজেদের ব্যাপারে ভাবতে পছন্দ করি।
একজন ঈশ্বর আমাদেরকে জেনেসিসের বর্ণনানুসারে তৈরি করেছেন, এমনটা কল্পনা করাও কিন্তু আমাদের জন্যে সহজ। আলোর দুটো শ্রেষ্ঠ উৎস হিসেবে চন্দ্র ও সূর্যের উৎপত্তি, সেখান থেকে জল, স্থল, উদ্ভিদ, ফল এবং সবশেষে প্রাণী – স্ত্রী ও পুং। তুড়ি দিয়ে সৃষ্টির ক্ষমতা যদি আমাদের থাকতো, জগতটা কিন্তু আমরা এভাবেই তৈরি করার কথা ভাবতাম। এর থেকে অযুতগুণে কঠিন একটি বিগ ব্যাং থেকে সবকিছু সৃষ্টির কল্পনা করা, যেখান থেকে কতগুলো নিরন্তর সূত্রের প্রবাহমানতায় বাকি সবকিছু – ছায়াপথ, নক্ষত্র আর গ্রহ তৈরি হবে, আর গ্রহগুলোর মধ্যে কোথাও প্রাণের উৎপত্তির জন্য দৈবক্রমে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, সেখান থেকে ঘটবে বিবর্তন আর তৈরি হবে জটিল থেকে জটিলতর প্রাণী। আমরা এভাবে সৃষ্টির কথা কল্পনা করতাম না। আমরা কোনকিছুই এ পন্থায় তৈরি করি না, কিন্তু মহাকাশবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান আর জৈবরসায়ন জগতের উৎপত্তির ব্যাপারে এমন তথ্যই আমাদের দিচ্ছে।
আমরা ভেবে এসেছি যে মানুষ সৃজনশীল কারণ তার মন আছে। মন ভৌতজগতের ঊর্ধ্বে, “আধিবিদ্যক”, ফলে এর কোন ভৌত সীমাবদ্ধতা নেই। গত দু হাজার বছর ধরে দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানীরা অন্তর্দশনের মাধ্যমে তাদের নিজেদের মনকে বোঝার চেষ্টা করে গেছেন, কিন্তু তাদের এই দেখা নিয়ে তারা কখনোই একমতে পৌঁছাতে পারেন নি। অনেক মনোবিজ্ঞানী তাই মনের অন্তর্দশনকে পরিত্যাগ করে তত্ত্বের উপর নির্ভর করা শুরু করেছেন। যেকোন একটা সৃজনশীল কর্মের ব্যাখ্যামূলক তত্ত্ব প্রদান করা মোটেও কঠিন ব্যাপার না, কিন্তু কঠিন ব্যাপারটা হল তত্ত্বের যাচাই, আর সে কারণে মনোবিজ্ঞানীরা ঝুঁকতে থাকলেন মস্তিষ্ক-বিজ্ঞানের দিকে।
মনকে মস্তিষ্কের একটা “কর্ম” বলেই মনে হয় এবং এ কারণে একে ব্যক্তি-নিরপেক্ষভাবে যাচাইও করা সম্ভব। মস্তিষ্ক শরীরের একটা অংশ মাত্র। ফলে মনকে বলা যায় শরীরের একটা অংশের কর্ম মাত্র। পুরো শরীরের কর্ম উপরে বলেছি তিন ধরনের নির্বাচন আর তারতম্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। মস্তিষ্ক যেহেতু পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নের সূত্র মেনে চলা একটা কাঠামো, একে তাই একটা বিশেষ সৃষ্টিক্ষমতাসম্পন্ন কিছু মনে করার সুযোগও কম। (আমরা যেমনটা করি, আমাদের কর্মের কোন একটা কিছুকে ব্যাখ্যা করতে না পারলেই তাকে একটা বিশেষ সৃজনশীল বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করি, তবে বিজ্ঞানের এটাই বৈশিষ্ট্য যে এর প্রতিটি নতুন আবিষ্কারের সাথে আমাদের চির প্রত্যাশিত ও কল্পিত বিষয়গুলোর অস্তিত্বের সম্ভাবনা একটু একটু করে কেবল হ্রাস পায়।)
আমরাই আমাদের নিজেদের আচরণের সূত্রপাতকারী (এবং ফলশ্রুতিতে এ ব্যাপারে আমরা দায়বদ্ধও), এমনটা অত্যন্ত দৃঢতার সাথেই আমরা বিশ্বাস করি। এর কারণ আমরা কি করি সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকি, এবং নির্বাচন আর তারতম্যের ইতিহাসই যে আমাদের বিভিন্ন কর্মের জন্যে দায়ী সে ব্যাপারটা আমরা ভুলে থাকি। তবে এমনটা বিশ্বাস করার সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত এটাই যে এমনটাই আমাদেরকে সবসময় বলে আসা হয়েছে। এটা করা হয়েছে একটা ব্যবস্থায় প্রচলিত পুরস্কার আর শাস্তিগুলোকে বৈধ করার জন্যে। আমরা যখন কাউকে আঘাত করি কিংবা সরকারি আইন ভঙ্গ করি, আমাদেরকে তখন আমাদের হেন কর্মের জন্যে দায়ী সাব্যস্ত করে শাস্তি প্রদান করা হয়। আমাদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে কর্মের ব্যাপারে আমাদের দায়বদ্ধতাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যেমন, কারও জন্যে কাজ করলে বিনিময়ে আমাদের বেতন দেয়া হয়। ধর্মের আইন ভাঙ্গলে শাস্তির ভয় দেখানো হয়, মেনে চললে দেয়া হয় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। আমাদেরকে আমাদের কর্মের জন্যে দায়ী সাব্যস্ত করে পুরস্কার বা শাস্তি এ কারণেই দেয়া হয় যে আমদের দ্বারা যা ঘটে, যার জন্যে প্রকৃত অর্থে আমাদের জিনগত, ব্যক্তিগত আর সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার ইতিহাসই দায়ী, সেগুলো আমাদের আয়ত্ত্বের বাইরে। (মজার ব্যাপার হল, আমাদের যে প্রাত্যাহিক জীবনের পুরস্কার/তৃপ্তি আর শাস্তি/অতৃপ্তির ঘটনা, সেখানে কিন্তু আমরা নিজেদের দায়ের প্রশ্ন তুলি না। যেমন, কোন কিছু খেতে সুস্বাদু হলে আমরা সেটা আবার খাই। বিস্বাদ হলে অতৃপ্ত হই, সেটা আর খাই না। তখন কিন্তু আমরা বলি না যে আমরাই আমাদের এই খাওয়া না খাওয়ার আচরণের জন্যে দায়ী। খাবারটাই তখন আমাদের আচরণের জন্যে দায়ী হয়। কেবল রাষ্ট্র, শিল্প কারখানা আর ধর্ম যখন আমাদের আচরণের উপর প্রভাবমূলক নিয়মনীতি চাপিয়ে দেয়, ওই নিয়মনীতি নয়, বরং আমরাই তখন আমাদের আচরণের জন্যে দায়ী সাব্যস্ত হই। যারা চাপায়, তারা কিন্তু মাঝখান দিয়ে সুন্দর তাদের নিজেদের দায়টা এড়িয়ে চলে।)
কৃতকর্মের আলাপের ক্ষেত্রে এটা ভাবাটা সহজ হলো যে আমরা কেবল এক ধরনের বস্তু যার উপর ঘটনা ঘটে যেতে থাকে। কিন্তু এই ভাবনাটা অনেক বেশি আতঙ্কাজনক হয়ে দাঁড়ায় যখন আমরা ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে ভাবতে বসি। বিবর্তন তত্ত্বের প্রথম সারির শিকার হল একটা পরিকল্পিত জগতের ধারণা। একটা জীবন বা সংস্কৃতি একটা বিশেষ পরিকল্পনা মাফিক এগুতে পারে এমন ভাবনাও একই ভাগ্য বরণ করতে চলেছে। ঘটনীয়ের একটা বিরাট অংশ নির্ভর করবে দৈব নির্বাচন আর অদেখা তারতম্যের উপর। ভবিষ্যতটা হল অনিশ্চয়তার একটা ফলাফল, তাই ভবিষ্যত নিয়ে আলাপ করতে গেলে আশঙ্কিত হতেই হয়। যে দূষিত, জনাকীর্ণ, দারিদ্রতাপূর্ণ ভবিষ্যত আমাদেরকে হুমকির মুখে ফেলছে, তার অল্পই পরিকল্পিত ছিল। এই ভবিষ্যত বরং অনিবার্য বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে, এবং এর জন্যে দায়ী হচ্ছে বিবর্তনে নির্বাচন আর তারতম্যের প্রক্রিয়ার একটি দুর্লঙ্ঘনীয় ত্রুটি। সেই ত্রুটিটা হল এই যে, বিবর্তন একটি প্রজাতিকে, একটি সত্তাকে বা একটি সংস্কৃতিকে কেবল সেই ভবিষ্যতের পরিবেশের জন্যেই সক্ষম করে তোলে, যে রকমের পরিবেশে তারা অতীতে সফলভাবে টিকে গেছে। পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে, একটা প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। একটা পরিবেশে অর্জিত আচরণ অন্য পরিবেশে আর কার্যকর নাও থাকতে পারে। জগতের একটা অংশে বা অবস্থায় সমৃদ্ধিলাভ করা সরকার, শিল্প কারখানা বা ধর্মব্যবস্থা অন্য অবস্থায় সমৃদ্ধিলাভ নাও করতে পারে। যেমন, পৃথিবীর ইতিহাসে একটা সময়ে প্রজননগত আচরণের একটা মূল্য ছিল টিকে থাকার প্রেক্ষিতে। সে মূল্য আমাদের কেবল প্রজাতিগতভাবেই ছিল না, যে সংস্কৃতি এমন আচরণের কদর করেছে, তার কাছেও এই মূল্য যুক্ত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবী এখন জনাকীর্ণ হয়ে গেছে, এর মূল্য তাই বদলেছে। ইতিহাসের একটা পর্যায়ে খাদ্য ঘাটতির সময়গুলোতে কাজে লাগানোর জন্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ মজুদ করার আচরণের একটা শক্তিশালী বিবর্তনগত মূল্য ছিল। কিন্তু এখন এটা কেবল অপচয় আর দূষণ তৈরি করে। একটা সময়ে ধর্ম-বিশ্বাস মানুষকে জন্ম-মৃত্যু সংক্রান্ত জটিল সব প্রশ্নে উত্তরের নিশ্চয়তা দিয়ে আশ্বস্ত করে রেখেছিল। এখন সে মানুষকে তার ভবিষ্যত সম্পর্কে আরও কার্যকর প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বাঁধা দিচ্ছে।
আমরা আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে যতটুকু জানি, তার প্রায় পুরোটাই এসেছে বিজ্ঞান থেকে। বিজ্ঞান বলে আমরা দূষণ, ঘাটতি এবং জনবিস্ফোরণ দ্বারা আক্রান্ত হতে চলেছি। এর অনেকটা ইতোমধ্যেই বর্তমান; আমরা আমাদের সেই ভবিষ্যতটায় ইতোমধ্যেই কিছুটা ঢুকে গেছি। কেবল বিজ্ঞানের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, এই ভবিষ্যত কতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। কেবল বিজ্ঞানই আমাদেরকে সৌর বা নিউক্লিয়ার বিকিরণের সমসাময়িক বিপদগুলো সম্পর্কে জানায়। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রায় পুরোটাই বর্ণনামূলক জ্ঞান, যা পূর্বাভাস-নির্ভর এবং ফলতঃ অনেকটা কম নির্ভরযোগ্য । ফলে একটা মৌলিক পার্থক্যের নির্দেশ প্রয়োজন।
আমরা প্রকৃতির উপরে ক্রিয়া সাধনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান লাভ করি। আমরা সেই জ্ঞানকে ধারণ করি পরবর্তী ক্রিয়াসমূহ সাধনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক একটি আচরণ হিসেবে একে রপ্ত করে। আমরা বর্ণনামূলক জ্ঞান লাভ করি যখন অন্য কারও মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। সেই জ্ঞানকে আমরা ধারণ করি অন্যের বা নিজের কাছে বর্ণনাটার পুনরুচ্চারণের মাধ্যমে। ফলে এই জ্ঞান সরাসরি ক্রিয়ায় ধৃত হয় না। এই জ্ঞানটা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হওয়ার জন্যে আরেক ধাপ পার হতে হয়। একই ধরনের পার্থক্য আমাদের কাছে ধরা দেয়, যখন আমরা একটা শহর সম্পর্কে পড়া বা শোনা (বর্ণনামূলক) জ্ঞানের সাথে নিজে দেখে, শুনে, ছুঁয়ে, স্বাদ আস্বাদন করে নেয়া (অভিজ্ঞতামূলক) জ্ঞানের তুলনা করি। সে শহরে যতই থাকি, পার্থক্যটা ততই বড় হয়। এখন কিভাবে আমরা আমাদের অনাগত ভবিষ্যতকে মোকাবিলা করব, যেখানে ভবিষ্যতটাকে আমরা জানি কেবলমাত্র বর্ণনামূলক জ্ঞানের মাধ্যমে?
এখন আমাদের কি করা উচিত, এমন প্রশ্ন কিন্তু অসঙ্গতিপূর্ণ। আমরা কি করতে যাচ্ছি ভবিষ্যতে, কেবলমাত্র এই প্রশ্নটাই আমরা এখানে করতে পারি। আর আমাদের ভবিষ্যত ক্রিয়া নির্ভর করে আমাদের জিনগত ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের উপর। তবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের উপর নির্ভর করার এখানে কোন সুযোগ নেই। বর্তমানের পরিবর্তনের যে গতি, সেই গতির সাথে বিবর্তনগতভাবে তাল মিলিয়ে, ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা, ভয়ানক পানি কিংবা বায়ু দূষণের সাথে খাপ খেয়ে টিকে থাকা একটা প্রজাতিতে সহসাই অভিযোজিত হবার কোন আশা আমাদের নেই। নতুন সাংস্কৃতিক চর্চায় বিবর্তিত হওয়াটাই বরং অধিক সম্ভাবনাযুক্ত এবং এ ব্যাপারে আমাদের আশান্বিত হবার কিছু সুযোগ এখনই তৈরি হয়েছে। যদিও আমরা ক্রিয়ার সূচনা ঘটাতে পারি না, আমরা অন্তত ব্যাপারগুলো অবলোকন করে যেতে পারি।
ইতোমধ্যেই আমরা একটি অবিরাম বিবর্তিত সংস্কৃতিকে অবলোকন করছি, যেটাকে আমরা বলি বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভবিষ্যত ফলাফল উদ্ঘাটন করে যাচ্ছে। আর শিক্ষক, লেখক এবং সংবাদমাধ্যম প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের এই সকল উদ্ঘাটনকে আরও আরও সর্বজনগ্রাহ্য করে তুলছে। আমরা সরকারগুলোকে দেখতে পাচ্ছি, তারা অপব্যয়ীকে, পরিবেশ দূষণকারীকে শাস্তি দিচ্ছে, এবং অন্তত একটা ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি অধিক সন্তান গ্রহণকে শাস্তিযোগ্য করে তুলতে। এতে দেখে মনে হচ্ছে তারা ভবিষ্যতের প্রতিভূকেই যেন তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের এসব আচরণের জন্যে (দূষণ, অধিক জনসংখ্যা) যে বিপাকে পড়তে যাচ্ছি, সেই ভবিষ্যত ফলাফল বা দুর্ভোগটাকেই যেন সরকারগুলো বর্তমানে প্রদান করছে প্রতিরোধমূলক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আকারে। ক’টা দিন আগেও একটা সরকারের পক্ষে অপ্রতুল নয় এমন সম্পদের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করাটা ছিল নিজেদের ভবিষ্যতকেই বিপদাপন্ন করার নামান্তর। পূর্বে একটা শিল্প কারখানা যদি এমন পণ্য উৎপাদন করতো যেটা ব্যবহারে কিছুটা অসুবিধাজনক, কিন্তু যার ফলে পরিবেশের একটা অনুমিত দূষণের হার সামান্য কমে, তাতে তাদের বাজার হারানো ছাড়া কোন গতি ছিল না। যতদিন যাবৎ পৃথিবীতে সবার বসবাসের জন্যে যথেষ্ট স্থান ও রসদ ছিল, ধর্মগুলোর পক্ষে তাদের বিশ্বস্ততা হারানো ব্যতিরেকে জন্ম-মৃত্যু নিয়ে তাদের প্রচলিত বক্তব্যগুলো পাল্টানো সম্ভব ছিল না।
তবে অবস্থা বদলে গেছে। এমন পরিস্থিতি পূর্বে কখনোই তৈরি হয় নি। এ পরিবর্তন – সরকার, শিল্প কারখানা এবং ধর্ম থেকে ভিন্ন – একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তন। এখন ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের লব্ধ জ্ঞানটা (অবশ্যই তা বর্ণনামূলক) অজস্র মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে, এবং যেসব সরকার, শিল্প কারখানা আর ধর্ম এই জ্ঞানকে তোয়াক্কা করে না, মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একাট্টা হচ্ছে। বলা চলে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রচলিত চর্চা পরিবর্তনের জন্য চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমরা আসলে ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের বর্ণনামূলক জ্ঞানকে অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানে পরিবর্তন করছি। এভাবে ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানটা যদি যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে, তাহলে হয়তো পৃথিবীটা আরেকটু বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারবে।
আমরা ঘটনার সূচনাকারী নই, আমরা বরং এমন বস্তু যার উপর ঘটনা ঘটে যায়, অনেকে এমন চিন্তাকে মানুষের আচরণের একটি হতাশাজনক ও নিরৎসাহিত দৃষ্টিভঙ্গি মনে করবেন। তারা বলবেন, আমরা আমাদের ভবিষ্যতকে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো যদি আমরা এই বিশ্বাসেই স্থিত থাকি যে আমাদের ভাগ্য আমাদের হাতেই নির্ভর করে। এই বিশ্বাস বহু শতক ধরে টিকে থাকা একটি বিশ্বাস এবং এর ফলে হয়তো অনেক অর্জনও আমরা করেছি। কিন্তু সে সকল অর্জনই কিন্তু আমাদের কর্মের কেবল তাৎক্ষণিক পরিণতি। এখন ওগুলোর অন্যান্য পরিণতিও আমরা জেনে গেছি। আমরা জেনে গেছি যে ওগুলোর কারণে আমাদের ভবিষ্যত এখন আরও হুমকির সম্মুখীন। যে কর্মের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাগ্যের এই দশা করেছি, সে কর্মকে আমরা হয়তো হিতোপদেশ হিসাবে আর রেখে যেতে চাইব না।
স্কিনারের কাজ নিয়ে বাংলায় বোধ হয় খুব বেশি লেখা নেই। এই চমৎকার অনুবাদের মাধ্যমে স্কিনারের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে রৌরবের মতোই কিছু কিছু জায়গায় স্কিনারের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত আছে। তবে সেই দ্বিমতগুলোতে তর্ক করে আলোচনায় পৌঁছুতে পারবো তা নয়। অনেক বিষয়ই আছে খুব প্রান্তিক। আবার কিছু ব্যাপার নিয়ে তর্ক করাটাই হয়তো অনর্থক মনে হবে। স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্ব থাকা না থাকা নিয়ে তর্ক এমনি ধরণের! দার্শনিক লেভেলে অবশ্য তর্ক করা যায়, কিন্তু প্রায়োগিক স্তরে এর উপযোগিতা বোধ হয় খুব বেশি নয়।
স্কিনার একটি চমৎকার কথা বলেছেন –
অত্যন্ত সঠিক কথা। কিন্তু মুশকিল হল, মানুষের আচরণ অনেক জটিল। জটিল এ অর্থে যে, এর পেছনে চলক এতো বেশি এবং ফাংশনগুলোর কাজের ব্যাপ্তি এতোই বেশি যে, এর সঠিক মডেল করা প্রায় দুঃসাধ্যই বলা যায়। সেজন্যই দেখা যায়, বিবর্তনের অনেক গানিতিক মডেল থাকা সত্ত্বেও বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের অধিকাংশ উপসংহার গুলো এখনো বর্ণনামূলক। অধিকাংশ উপসংহারই আনা হয় সীমিত নমুনা ক্ষেত্রের উপর টানা কিছু পারিসাংখ্যিক উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে। আর তার সাথে জুড়ে দেয়া হয় বিবর্তনীয় কারণের এক ধরণের বর্ণনা। আর বিভেভিয়ারাল জেনেটিক্স তো মোটামুটি অচ্ছুতই বলা যায়, এমনকি বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরাও শাখাটিকে নিজেদের গবেষণার সাথে জুড়তে চান না।
তবে স্কিনার ‘আমরা বরং এমন বস্তু যার উপর ঘটনা ঘটে যায়’ বলে যে উপসংহারে পৌঁছেছেন তা হয়তো খুবই সরলভাবে পৌঁছে যাওয়া খুব বড় একটা উপসংহার মনে হল। প্রবন্ধ পড়ে আমার মনে হয়নি যে এর স্বপক্ষে খুব বেশি জোড়ালো যুক্তি তিনি হাজির করেছেন। যা বলেছেন তার অধিকাংশই কিন্তু বর্ণনামূলক, যার বিরুদ্ধে তিনি এতোটা সোচ্চার!
লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
এই যায়গাটা আমার ভালো করে জানা দরকার,একটু ব্যাখ্যা করবেন? মাঝে মাঝেই এই কথাটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আটকে যাই যখন কেও যুক্তিবাদ দিয়ে মানুষের আচরন ব্যাখ্যা করতে বলে।
ধন্যবাদ!
@অভিজিৎ,
বিষয়টা আসলে একটু জটিল। বিভেভিয়ারাল জেনেটিক্স নিয়ে অনেকের মাঝে কিছু বিভ্রান্তি আছে যেটা পরিস্কার করা প্রয়োজন মনে করি। বিভেভিয়ারাল জেনেটিক্স সাধারনভাবে দার্শনিক , ধার্মিক এবং আইনগতভাবে যাকে “presumption of freedom and responsibility” বলা হয় তার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে।
১০০% পূর্বাভাস সক্ষমতার দাবী বিজ্ঞানের কোন শাখাই করতে পারবে না। সবসময়ই কোয়ান্টাম ইভেন্টের কারনে বিচ্যুতির সম্ভাবনা থেকেই যায় ।
বিভেভিয়ারাল জেনেটিক্সে মানব আচরনের ব্যাখ্যা এবং পূর্বাভাস দেয়ায় যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা সবসময়ই probabilistic কখনই deterministic নয়। যে কোন probabilistic মডেলে একটা ইলাস্টিসিটি বা বেছে নেয়ার সুযোগ থাকে যা দিয়ে কারও আচরণ ব্যাখ্যা করা যায় কারন ‘সম্ভাব্যতা’ আর ‘নিশ্চয়তা’ দুটো সম্পূর্ন ভিন্ন জিনিষ। এছাড়া কোয়ান্টাম ইভেন্টের সাথে মানুষের পছন্দের কোন সম্পর্ক নেই । কোন কোয়ান্টাম ইভেন্টের জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। কোয়ান্টাম ইভেন্ট স্বাধীন ইচ্ছা কিংবা নৈতিক এবং আইনী দায়বদ্ধতার ধারনার সাথেও সম্পূরক নয়। স্বাধীনতা বলতে বোঝায় যে কারও কিছু করার বা না করার মধ্যে যে কোন একটা পছন্দ করার ক্ষমতা। কেউ কিছু করলে তাকে সেটার দায় অবশ্যই বহন করতে হবে যদি না তাকে সেটা করতে বলপূর্বক বাধ্য করা হয়।
জনসমষ্টিগত উপাত্ত ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করেনা বরং “Presumption of freedom” এর ধারনা কাজ করে ব্যক্তি পর্যায়ে। জীন , পরিবেশ , ব্যক্তি আচরণ এবং কোয়ান্টাম ইভেন্টের মধ্যে যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে তার কারনে বিভেভিয়ারাল জেনেটিক্সে ব্যাখ্যা ও পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষমতা সীমিত। এই বাকী সীমাবদ্ধতাটুকু পূরন করা যায় “Presumption of freedom and responsibility” দিয়ে। ক্ষেত্র বিশেষে এমনকি এথিক্সের সাহায্য নেয়া অন্যায় কিছু নয় ।
@সংশপ্তক,
আমি ঠিক এই ব্যাখ্যার সাথে একমত নই। মানুষের আচরণকে কোয়ান্টাম ইভেন্টের সাথে তুলনা করা যেতে পারে বটে, কিন্তু এই ‘বর্ণনা’র পেছনে কোন ‘বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ সম্ভবতঃ নেই। বরং ভিক্টর স্টেঙ্গর, মার্ক টেগমার্ক সহ অনেকেই দেখিয়েছেন যে, মস্তিস্কের গঠণ বিশ্লেষণে ক্লাসিকাল পদার্থবিদ্যার সূত্রই অধিকতর প্রযুক্ত হবার কথা, কোয়ান্টাম মেকানিক্স নয়। তাই যদি হয়, তাহলে আচরণের ক্ষেত্রে কোয়াণ্টাম ইভেন্টের দোহাই পাড়া কেন? 🙂 আসলে আমার মনে হয় মানুষের আচরণ বিশ্লেষণের গানিতিক মডেল সঠিকভাবে বের করা (এই মুহূর্তে) সম্ভব নয়, কারণ এটার ভ্যারিয়েবল অনেক বেশি। চিন্তা করে দেখুন – মস্তিস্ক সরল হলে অর্থাৎ সরল প্রানীদের ক্ষেত্রে আমরা অনেক কিছুই গনিতের ছকে বন্দি করতে পারি। আমরা ব্যাকটেরিয়ার বা ভাইরাসের ক্ষেত্রে অনেক কিছুরই গানিতিক মডেল উপস্থাপন করতে পারি, কারণ, তাদের মস্তিস্ক তথা আচরণ এত জটিল নয়। এমনকি স্তন্য পায়ী জীবের ক্ষত্রেও কিছু ব্যাপার চেষ্টা করলেই মেলানো যাবে। যেমন, আমরা জানি বাঘ হরিণের মাংসই খাবে, কলা কিংবা কাঁঠাল নয়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে আম, কাঁঠাল, কলা, ব্যাং, সাপ, গরু ভেরা, সবজি, আগাছা – কোন কিছুকেই আপনি বাদ দিতে পারেন না মডেল করতে গেলে। নিরামিশাষী ভারতীয় থেকে সজারু খাওয়া চাইনিজ সবই গোনায় রাখতে হবে। অর্থাৎ ভ্যারিয়েবল বাড়ার সাথে সাথে কমপ্লেক্সিটি বাড়িছে। এত কেবল গেল কেবল খাবারের কথা। মেটিং চয়েস আর সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভ্যারিয়েবল আসলে এতই বেশি – যে গানিতিক ছকেই ফেলা বোধ হয় সম্ভব নয়। ফলে আমরা যেটা করি – সেটা হল গড়পরতা হিসেব। ছেলেরা গড় পরতা মেয়েদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, কিংবা মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে বেশি স্নেহ পরায়ন, অধিকাংশ ছেলেরা পয়সাওয়ালা মেয়ের চেয়ে সুন্দরী মেয়ে পছন্দ করে, গড়পরতা মেয়েরা তাদের চেয়ে লম্বা ছেলে পছন্দ করে … ইত্যাদি। যা আসলে পুরোটাই বর্ননা মূলক। এ ধরনের বর্ণনামূলক মডেলের সমস্যা হল এক্সেপশন অনেক বেশি থাকে।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিৎ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য। শর্ট নোটিসে ভ্রমণে যাচ্ছি। নয়তো আপনাকে বিস্তারিত উত্তর করতাম। 🙂
পুরাটা পড়া হয়নি। প্রথম দিকে কিছুটা পড়লাম। অনুবাদ ভালই হয়েছে। এখন একটু ব্যস্ত আছি। পরে আবার ভাল করে পুরোটা পড়ে মন্তব্য করব।
আমার দুরবল মস্তিষ্কে এই লজিক গুল ঠিক ভালভাবে ঢুকলোনা।অরধেক আত্তিকরন হয়েছে।আরো কএকবার পড়ে মন্তব্য করব।
অনুবাদ ভাল হয়েছে।
তবে সব কিছু পরিষ্কার বুঝলাম না। আবার পড়তে হবে।
@আবুল কাশেম,
ধন্যবাদ।
স্কিনারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি তাঁর নাম বা কাজের সাথে পরিচিত ছিলাম না, এখন একটু উইকিপিডিয়া ঘেঁটে কিছু জিনিস জানলাম। আপনি কি উনার বইগুলি পড়েছেন? Beyond Freedom and Dignity সম্বন্ধে আপনার কি মত?
@রৌরব,
নাহ্। মাত্র শুরু। আমি ভালো পাঠক নই। কিছুই পড়ি না বলতে গেলে। বলতে পারেন আমিও আপনাদের সাথে স্কিনারের সাথে পরিচিত হলাম লেখাটি লিখে। আরও কিছু ভালো লাগলে, ছোট খাটো, সেগুলোও দিবো, বা বইয়ের একটা ছোট অংশ।
স্কিনার ভবিষ্যত সম্পর্কে ওনার বক্তব্যটাতে স্বাধীন-ইচ্ছার অনস্তিত্ব-সংক্রান্ত ভাষিক অসঙ্গতিকে যদি আমলে না নিতেন, তাহলে কথাটা দাঁড়ায় যে, ভবিষ্যত সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানটাকে বিভিন্নভাবে আমল করার মাধ্যমে যে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, সেটাই আমাদের এই নিজেদের ডেকে আনা সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে টিকিয়ে দিবে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের উপর ভরসার মাধ্যমে সেটা হবে না।
@রৌরব,
আর আপনাকে আলোচনার জন্যে (C)
@রূপম (ধ্রুব),
চায়ের সাথে টা জুটবে না? (^)
@রৌরব,
নিশ্চয়ই! 🙂
(^)
@রৌরব,
বাই দ্য ওয়ে, আপনার অভিযোগ ফুরিয়ে গেল? সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে এমন আচরণবাদী (behaviorist) অ্যাপ্রোচ দেখে তো আপনার রীতিমত আশঙ্কিত হবার কথা। 🙂
ভবিষ্যত সম্পর্কে বিজ্ঞানের জানাটা তো তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরযোগ্য। সেটার ব্যাপারে কঠোরতা বিশেষ শুভ ব্যাপার ঠেকছে না। স্কিনার নাকি অবশ্য শাস্তি বিরোধী ছিলেন। ভবিষ্যতের জ্ঞানের পক্ষের শক্তিগুলো একটা প্রেসার হিসেবে থাকতে পারে। পক্ষের চর্চাগুলো না-বলপ্রয়োগমূলক হলে চলে। ডাইভার্সিটি এখনো আমার কাছে শ্রেষ্ঠ সমাধান মনে হয়। জ্ঞানের স্বল্পতার প্রতি স্কিনার কতটা সতর্ক, সেটা স্পষ্ট নয়। অজানা, স্বল্পনির্ভরযোগ্য জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে জোরাজুরির কথা ভাবলে কয়েকটা সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ মনে পড়ে যায়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে আমি গবেষককে অনুদার হতে দিতে চাই। বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর সমাজে তার প্রয়োগকে আমি আলাদা চোখে দেখি। স্কিনারের এই আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমার মতে প্রাণী আচরণ (এবং ফলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার) গবেষণায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক সংশয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গি নয়। তবে এটার দেবার এখনো অনেক কিছু আছে। বর্তমান জানাশোনা তাত্ত্বিক ও গাণিতিক কাঠামো মানুষের স্বাধীন-ইচ্ছা, সৃজনশীলতা, কনশাসনেসের মত বায়বীয় বিষয়ে কোনকিছুই করতে পারবে না বলে আমি মনে করি। (উদাহরণস্বরূপ) রজার পেনরোজের কোয়ান্টাম মন ধরনের নতুন তাত্ত্বিক বা গাণিতিক কাঠামো লাগবে। তবে খুব সম্ভব আমরা আমাদের বর্তমান কাঠামোতেই আমাদের আচরণের পর্যাপ্ত অংশ উদ্ধার করে নিতে পারবো, এবং কনশাসনেসের মত ধারণাগুলো ইথারের ধারণার মত উবে যাবে। এর জন্যে দরকার এই কঠোর আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি (অন্তর্জ্ঞানবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে)। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষ ও সমাজের গবেষণাতেও নিতে হবে। সেখানে পলিটিকাল কারেক্টনেসের হস্তক্ষেপ চলবে না। তবে, সেই অনুদার জ্ঞানের উপজাত যখন সমাজে প্রযুক্ত হবে, তখন তাকে উদারতার ফিল্টার পার হয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে এই প্রাপ্ত জ্ঞানকে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার স্বীকারোক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। বিশেষ করে মানুষ, সমাজের মত জটিল বস্তু যখন সাব্জেক্ট। গবেষক তার গবেষণায় অনুদার হবার স্বাধীনতাভোগ করবে। বিজ্ঞানমনস্ক বা দার্শনিক হবে সংশয়ী। আর সামাজিক হবে উদার। খুব অসঙ্গতিপূর্ণ নয়!
@রূপম (ধ্রুব),
হে হে। আশংকিত বলেই খোঁচাচ্ছিলাম আপনাকে Beyond freedom and dignity বিষয়ে। উইকিপিডিয়ায় উহার সরলার্থ পড়ে খুব খুশী হতে পারিনি 🙂
(Y) ছাড়ুন কৌতুক কতকগুলি। আমার মতে স্কিনারীয় তথা ক্লাসিকাল বৈজ্ঞানিক চিন্তার একটা মূল সমস্যা আছে। এঁরা জটিলতা (complexity) জিনিসটা খুব ভাল বোঝেন না বলে আমার সন্দেহ। মানুষের আচরণ যদি প্রায়োগিক ভাবে পূর্বাভাস যোগ্য না হয়, তাহলে “আসলে” মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা আছে কিনা তাতে কিছু এসে যায় না, functionally তাদের স্বাধীন ইচ্ছা আছে বলে ধরে নেয়া যায়। স্কিনার মনে হচ্ছে “স্বাধীন ইচ্ছার অভাব = পূর্বাভাস যোগ্যতা ও নিয়ন্ত্রণ যোগ্যতা” এই সরলীকৃত সমীকরণটি ধরে নিচ্ছেন।
এখানে আমি পুরো একমত। স্বাধীন ইচ্ছা বিষয়ে সামাজিক বিশ্বাসের বা এই বিশ্বাসের উপকারিতার পরোয়া উনি না করুন, তাই চাইব। কিন্তু দুটো কথা এখানে। এক, স্কিনার কিন্তু নিজেই সামাজিক প্রয়োগ বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন। আর দুই, যেটা আগেই বলেছি, ওঁর বক্তব্য বৈজ্ঞানিক মাপকাঠিতেই পুরো উৎরোয়নি বলে সন্দেহ হয়েছে।
বোঝা যাচ্ছে রজার পেনরোজের কোয়ান্টাম মন বিষয়ে আমার করা মন্তব্য গুলি আপনি পড়েন নি 😀
আমি নিজে পর্যবেক্ষণবাদী (আমার মনে আছে আপনার সাথে আমার প্রথম মন্তব্য চালাচালিতে এই বিশেষণটি ব্যবহৃত হয়েছিল)। এর সাথে কি আচরণবাদের কোন পার্থক্য আছে? আমার কাছে খুব স্পষ্ট নয় এটা। যাহোক, “পলিটিকাল কারেক্টনেসের হস্তক্ষেপ”-এর ব্যাপারে আবারো একমত। কিন্তু আচরণবাদীদের কাছে বিশ্বাস্য গপ্প নয়, শক্ত বিজ্ঞান চাই।
উল্টেও বলতে পারি এটা। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থেকেই সংশয়বাদ এবং উদারপন্থা এসেছে। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত।
“কেবল রাষ্ট্র, শিল্প কারখানা আর ধর্ম যখন আমাদের আচরণের উপর প্রভাবমূলক নিয়মনীতি চাপিয়ে দেয়, ওই নিয়মনীতি নয়, বরং আমরাই তখন আমাদের আচরণের জন্যে দায়ী সাব্যস্ত হই। যারা চাপায়, তারা কিন্তু মাঝখান দিয়ে সুন্দর তাদের নিজেদের দায়টা এড়িয়ে চলে।)”
সম্পূর্ণ লেখাটিই ভাললেগেছে। তবে উপরের উদ্ধৃত অংশটি কে বেশী সত্য বলে মনে হয়েছে।
@রঞ্জন বর্মণ,
ধন্যবাদ।
আমার হয়তো মস্তিষ্কের ক্ষমতা খুব ভাল না, বলতে লজ্জ্বা নেই প্রবন্ধটি আমার ৪/৫ বার পড়তে হয়েছে 😛 তারপরও কিছু যায়গাতে প্রশ্ন জেগেছে।
(১)
ধারাটি বাটলারের মতই ধরে নিলাম। এখন আবার বলা হচ্ছে, (এবং এটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারেবারে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে)
(২)
(৩)
আমি যে সহজ জিনিসটা বুঝলামনা সেটা হলো, বাটলার কিংবা স্কিনার সংস্কৃতি আর ব্যক্তিকে এত আলাদা হিসেবে দেখছেন কেন? আমার যেমনটা মনে হলো যে উনারা এমন ভাবে বলছেন যেন দুটি বিষয় খুব পাশাপাশি থাকা দুটি চার্জিত পরিবাহী যেগুলো একটা আরেকটার উপর অনেক প্রভাব বিস্তার করছে যেখানে আমার মনে হয় ব্যক্তিই সংস্কৃতি তৈরী করছে, চাহিদা আর আয়েশের নিমিত্তে।
(১) পড়ে মনে হলো, আমি আপেল খাইনা, আপেলই আমাকে খাওয়াই। কিন্তু আমি একটু আগেই যেটা বললাম যে আমারতো মনে হয় এই খাওয়ানোর সংস্কৃতিটাই আমি/আমাদের কতৃক তৈরী হচ্ছে।
(৩) এ বোল্ড করা অংশটুকু দেখুন। (ক) জীনগত পরিবর্তনঃ এখানে আমাদের একটুও হাত নেই মানতে কেমন লাগছে, একটু গবেষনা করে দেখবো, জীব-বিজ্ঞানীরা একটু হেল্পাইবেন? 🙂
(খ)সাংস্কৃতিক বিবর্তনেরঃ সস্কৃতি যদি মানুষ কতৃকই সৃষ্টি হয় তাহলে এর বিবর্তনের জন্যও ব্যক্তিই দায়ী নয়? আমারতো দায়ীই মনে হয়।
আর তাহলে আবার (২)কে কিভাবে পুরোপুরি মেনে নিব?
দুর্লঙ্ঘনীয় ত্রুটি! শব্দটাই বলে দিচ্ছে এটা অলঙ্ঘনীয় নয়।(আরেকটা কথা উনি কিভাবে এতটা নিশ্চিত হলেন? মানে দুর্লঙ্ঘনীয় নাকি লঙ্ঘনীয় নাকি পুরোপুরিই অলঙ্ঘনীয়?)
দুঃখিত এবং ধন্যবাদ। দুঃখিত আমার জ্ঞান ও বোঝার সীমাবদ্ধতার জন্য আর ধন্যবাদ যে নিয়ে কোনোদিন চিন্তা করতে বসিনি সেটা নিয়ে আপনার পোষ্ট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই মাথায় গ্যানজাম :-X লাগিয়ে দেয়ার জন্য :))
@টেকি সাফি,
মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড থর্নডাইকের নির্ণয় করা শিক্ষণতত্ত্বের দ্বিতীয়টিই হল – শেখা বর্ধনমূলক, অন্তর্জ্ঞানমূলক নয়। ফলে মস্তিষ্কের স্ট্যাটিক কোন ক্ষমতা নিয়ে হা পিত্যেশের দিন ফুরালো। এ ধরনের লেখা হল পাঠের চর্চার বিষয়। আর বাকিটা আমার অনুবাদের দুর্বোধ্যতা। 🙂
ধরে নিলে তো সমস্যা। স্কিনার তো ধরে নেন নি। স্কিনারের কথার সাথে এখন মিলাবেন কিভাবে? বাটলারের কথাটা স্কিনার তুলেছেন এটা দেখাতে যে আমরা যেভাবে ভাবি, সেটাকে উল্টো করে দেখাটাও অবৈধ বলা যায় না। ধারাটা আসলে ঠিক কোন রকম সেটা তর্কের বিষয়। কিন্তু ডিম-মুরগি-ডিমের একটা অবিরাম ধারা যে আছে, সে নিয়ে তর্ক নেই।
যেটা এইমাত্রই বললাম। এভাবে বলা যায়। এভাবে ব্যাপারটাকে দেখা যায়। আবার বাটলারের মতও দেখা যায় যে সংস্কৃতি তার বর্ধনের প্রয়োজনে ব্যক্তিকে ব্যবহার করছে। কিন্তু স্কিনার বলছেন, এটা হল কেবল দেখার বিষয়। ব্যক্তি-সংস্কৃতি-ব্যক্তির একটি অবিরাম ধারা আছে, এটুকুই কেবল তর্কাতীতভাবে বলা যায়। সত্যিকারের এজেন্সি বা ক্রিয়ার উৎসটা কোথা থেকে, সেটা তর্কসাপেক্ষ। ফলে আমরা নিত্যদিনের কথোপকথনে ‘ব্যক্তির দ্বারা সংস্কৃতির সৃষ্টি’ বলে চালিয়ে দিতে পারি। কিন্তু ব্যক্তির সত্যিই নিজের পছন্দে কিছু করার সুযোগ আছে, নাকি তার সকল ক্রিয়াই প্রকৃতির সাথে মিথস্ক্রিয়ার সময়ে প্রাপ্ত প্রণোদনার ফল (এবং ফলত তার নিজের বেছে নেয়া কোন বিষয় নয়), এমন প্রশ্নের উপর জোর দিলে তখন ব্যক্তিই সংস্কৃতি সৃষ্টি করে ধারণাটা বিপদাপন্ন হয়ে পড়ে। স্কিনার এ জায়গাটাতে জোর দেয়াটা থেকে বিরত থাকেন না।
এখানে আপনার প্রশ্ন আর বক্তব্যটা বুঝি নি।
সংস্কৃতি মানুষের নিজের পছন্দে সৃষ্টি, এভাবে দেখলে তো এমনটা মনে হবেই। কন্তু এভাবে দেখাটা তর্কাতীত কিংবা একমাত্র দেখা নয়।
স্কিনার লিখেছিলেন unavoidable fault। মানে দাঁড়ায় অনিবার্য বা এড়ানো যায় না এমন ত্রুটি। সেক্ষেত্রে আসলে অলঙ্ঘনীয়ই মানেটা দাঁড়ায়।
উনার নিশ্চয়তার উপায়ের চেয়ে আমরা দেখতে পারি বক্তব্যটা ঠিক কিনাঃ
বিবর্তনের বিষয় আমি সিদ্ধহস্ত না হলেও যতটুকু বুঝি কথাটা ঠিকই মনে হয়। তবে এর মানে কিন্তু এটা নয় যে ভিন্ন পরিবেশে প্রজাতি বিপদে পড়বেই।
স্বার্থকবোধ করছি। 🙂
তথাকথিত স্বাধীন ইচ্ছা হচ্ছে স্কিনারের লেখাটির মূল তান। স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসের পরিবর্তে স্কিনার নিজেকে একজন hard-nosed বাস্তববাদী হিসেবে দেখছেন। এই বিশেষ প্রবণতাটা মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ লক্ষণীয়, কেন জানিনা। ডেনেটের একটা ভিডিও একবার দেখেছিলাম, যার প্রতিপাদ্য ছিল অনেকটা এরকম: কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে একদল মনোবিজ্ঞানী “প্রমাণ” করেছেন যে স্বাধীন ইচ্ছা নেই, এবং তাঁদের দাবী ছিল যে তাঁদের এই আবিষ্কার যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে আইনের জগতে। ডেনেট দীর্ঘক্ষণ ভ্যান ভ্যান করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কেন এটা ঠিক নয়। ডেনেটের সাথে আমি একমত, কিন্তু এটা যে আদৌ এত আলোচনার বিষয় এটি আমাকে বিস্মিত করেছিল। তাত্বিক একাডেমিশিয়ানদের পক্ষেই মনে করা সম্ভব যে আইনী ব্যবস্থা আসলেই “স্বাধীন ইচ্ছা” বিষয়ক তাত্বিক assumption এর উপর নির্ভর করে, এবং তাঁদের এসব দাবি আমাকে Carlin অমর উক্তির কথাই মনে করায়।
ঠিক, কিন্তু শুধুই বিজ্ঞানীদের জ্ঞান? “সাপ দেখলে দূরে সরে যেতে হবে, নইলে ছোবল খেতে হতে পারে” কজনের মধ্যে এই জ্ঞান অভিজ্ঞতামূলক?
সাবাস hard-nosed স্কিনার! আমাদের যা ভাবতে ভাল লাগেনা তা ভাবিয়ে ছাড়ছেন। কিন্তু “স্বীকৃতি প্রাপ্য” এটাকে অত তুরীয় ভাবে না নিয়ে একটা সাংস্কৃতিক নির্মান হিসেবে ধরে নিলেই হয়।
সত্যি? স্বাধীন ইচ্ছার যে অনুভূতি সেটা আমাদের বলে আসা হয়েছে বলে তৈরি হয়েছে? আমার তো মনে হয় এর চেয়ে জোরালো কারণ রয়েছে — যেমন, আমাদের ইচ্ছার সাথে আমাদের কাজ-কর্মের জোরালো correlation। এ জায়গাটায় স্কিনারের যুক্তিক্রম আমার কাছে বিভ্রান্তিকর ঠেকেছে। মনে হচ্ছে, সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক শক্তির কেন্দ্রগুলিকে উনি আকাশ থেকে পড়া হিসেবে ধরে নিচ্ছেন, আমাদেরই বিশ্বাস ও প্রবণতার একধরণের যোগফল হিসেবে না ধরে।
আমি দুঃখিত, এজায়গাটার সাথে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করছি। শক্তির অপব্যবহারের বাস্তবতা এক জিনিস, আর শাস্তি/পুরস্কার/আইন ওই অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়, এই মতামত সম্পূর্ণ আরেক জিনিস। এত বড় সিদ্ধান্তে স্কিনার কিভাবে পৌঁছাচ্ছেন? আমার তো মনে হয় এসবের সরলতর ব্যাখ্যা আছে। আইনের ও নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে, কারণ আমরা learning system, এবং উদাহরণ থেকে আমরা শিখি।
বাক্যটা বুঝতেছিনা। ইংরেজীটা কি ছিল?
হমমমমম। আমি কি ঠিক বুঝলাম? স্কিনার বলতে চাইছেন, শাস্তিগুলি এমন (বা এমন হওয়া উচিত) যাতে পরিবেশদূষণের ফল আইন অমান্য কারীরা একেবারে বাস্তব ভাবে উপলব্ধি করতে পারে — মানে ফাইন বা জেল নয়, “অভিজ্ঞতামূলক” জ্ঞান আহরণের জন্য তাদেরকে toxic waste এর মধ্যে বসিয়ে রাখতে হবে, এরকম কিছু?
@রৌরব,
সেটা ঠিক। তবে মূল বক্তব্য হল ভবিষ্যত নিয়ে করণীয়। কিন্তু স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্বের বিপক্ষে তিনি যেহেতু আগেই সরব হয়ো গিয়েছিলেন, এখন এসে করণীয়ের কথা বলতে গিয়ে অসঙ্গতির ভেতরে পড়ে যেতে বাধ্য ছিলেন। তাই স্বাধীন ইচ্ছার বিপক্ষে তানটা ধরে রেখে লেখাটা লিখলেন।
সম্ভবত এ কারণে যে তাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য হল প্রাণীর আচরণের কারণ নির্ণয়। এখন কোন আচরণের জন্যে যদি তারা স্বাধীন ইচ্ছার প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন, যেটার কোন যাচাই-ই সম্ভব না, তখন স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসীদেরও হাসির খোরাকে পরিণত হতে হয়। একটা কর্মের ব্যাখ্যায় স্বাধীন ইচ্ছার আনয়ন কিন্তু আই ডি ওয়ালাদের চিন্তাচেতনাদের মতই। এই অব্যাখ্যেয় জিনিসটার উপর নির্ভর করে আর যাই হোক, গবেষণা সম্ভব না।
আমি আপনার সাথে একমত যে তেমন যোগাযোগটা থাকতে বাধ্য না। স্কিনারও আপনার সাথে একমত হতেন বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু তাত্ত্বিক অ্যাকাডেমিশিয়ান নয় কেবল, সাধারণ মানুষের মাঝেও এ ধারণা বিরাজ করে, সেটা আপনি মনে হয় দেখতে পান নি।
সচলায়তনে একবার “স্বাধীন-ইচ্ছা বলে কি কিছু আছে?” শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। ওখানে একজন পাঠক লিখেছিলেন
মানে স্বাধীন-ইচ্ছার সাথে আইনের সংযোগের অপরিহার্যতা আপনি আমি না দেখলেও এই দেখাটা প্রায়ই চলে আসে।
সেরকম কিছু বোঝান নি মনে হয়। কেবল মনে করিয়ে দিয়েছেন যে তাদের জ্ঞান মোটা দাগে অভিজ্ঞতামূলক না।
বটেই। রাসেল বা তার নিজের স্বীকৃতি নিয়েও তার আপত্তি ছিল বলে মনে হয় না। এটা তার মূল বক্তব্যও না। তবে কথা আগানোর একটা নিমিত্ত। চিন্তার একটা খোরাক। আমাদের সাধারণ ভাবনার উপায়টাকে সাধারণ উদাহরণ দিয়ে প্রথমে ভাঙ্গিয়ে নিচ্ছেন তিনি। স্বাধীন-ইচ্ছা না থাকার ঝাণ্ডাটা কোন কারণে তিনি লেখার মূল বক্তব্য – ভবিষ্যতকে জানা – এর উপরেই রাখতে চান।
সেটাকে তিনি প্রথম কারণ হিসেবেই আগে উল্লেখ করেছেন। এ দুটোর মধ্যে বড় কারণ কোনটা, সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে।
এটাতো মানতে হবে স্বাধীন ইচ্ছার সাথে দায়দায়িত্বের ভাবনা সরল মনে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। আমাদের আচরণে আমাদের দায় আছে, এটা না বোঝানো গেলে পুরস্কার আর শাস্তি ব্যবস্থা কি টিকতো? সকল প্রাণীই তো লার্নিং সিস্টেম, ভুল থেকে শেখে। মানুষের শাস্তিব্যবস্থায় শাস্তি যে পায়, তাকেও কিন্তু তার দায় মেনে নিতে দেখা যায়। এই দায় মানার ব্যাপারটার সাথে শাস্তিব্যবস্থা খুব ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। লার্নিং সিস্টেমের কথাটা দিয়ে সেটা পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছি না।
গুড ক্যাচ! মনে হচ্ছে আমি অনুবাদটা করেছি ঠিক উল্টো। আমি প্রথম বাক্যটা কিভাবে আলাদা করে পড়লাম, বুঝলাম না। হঠাৎ এই শব্দটা আনার দরকার ছিল না, যেখানে সেটা আর ব্যবহারই হয় নি। এটা ধরে দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ!
উনি ভবিষ্যতকে বিপদসঙ্কুল করে এমন আচরণের জন্যে শাস্তির পক্ষে বলেই মনে হচ্ছে, কিন্তু সেটা একেবারে বাস্তবভাবে উপলব্ধিযোগ্য হতে হবে এমন জোর তো নেই। শাস্তির ধরন নিয়ে তো উনি চিন্তিত নন। জরিমানাই তো যথেষ্ট। কারণ উনি তো প্রণোদনামূলক (রি-ইনফোর্সমেন্ট) শিক্ষায় বিশ্বাসী। আর জরিমানা একটা ঋণাত্মক প্রণোদনাটা। সব শাস্তি যেহেতু পরিশেষে প্রণোদনায় রূপান্তরিত হয়, শাস্তির বাস্তবভাবে উপলব্ধিযোগ্য হওয়াটা জরুরি না। পাভলভের কুকুরের যেমন ঘন্টা-ধ্বনি শুনেই লালা ঝরতে শুরু করে, কারখানাগুলোও জরিমানার নামে সাধের পুঁজি খোওয়াবার কথা ভাবার সাথে সাথেই দূষণমুক্ত উৎপাদনের জন্যে চাঙ্গা হয়ে নড়ে চড়ে বসবে। ভাগ্যিশ কারখানাগুলো স্বাধীন-ইচ্ছা নিয়ে তর্ক জুড়ে দেয় না। 😉
@রূপম (ধ্রুব),
ধন্যবাদ 🙂
তা ঠিক। আসলে আমি বলতে চাইনি যে স্বাধীন ইচ্ছা ধরে নিয়ে আগানো উচিত। আমার বক্তব্য, মনোবিজ্ঞানীরা এই স্বাধীন ইচ্ছা না থাকার “আবিষ্কার”-টাকে যেন বড় বেশি গুরুত্ব দেন। আমার নিজের সবসময়ই মনে হয়েছে “স্বাধীন ইচ্ছা”-র যে দার্শনিক সংজ্ঞা, সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাধীন ইচ্ছার অসম্ভবতা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাষা অবশ্যম্ভাবী-রূপে একটি course tool, কাজেই “স্বাধীন ইচ্ছা” শব্দদ্বয় স্রেফ আরো জটিল একটি ধারণাকে বিমূর্তায়িত করে।
এটা ঠিকই। আমি যেটা বলেছি সেটা ভুল। আবার চেষ্টা করি। স্বাধীন ইচ্ছা একটি abstraction, এবং বহু মানুষের কাছে আক্ষরিক ভাবে সত্য। কিন্তু ধারণাটিকে পরখ করলে অনুমান করা সম্ভব, এটি আসলে জটিলতর একটি ধারণা-সমষ্টির প্রকাশমাধ্যম মাত্র। ফলে স্বাধীন ইচ্ছা-র প্লাটোনিক সংজ্ঞার বিনাশ ওই ধারণার উপজাত আইন/শাস্তির ধারণাকে বদলে দেবে, যারা একটু বেশি তাত্বিক — তাদের পক্ষেই এটা ভাবার সম্ভাবনা বেশি।
না টিকতো না। এটা একটা ঘোষণা। আমরা ঘোষণা করছি, অমুক অমুক কাজ করলে “দায়” আপনার ঘাড়ে পড়বে, শাস্তি পেতে হবে। আর পাঁচটা সামাজিক ধারণার মত (পহেলা বৈশাখ বাসন্তী পরতে হবে) এটার ব্যাপারেও আমরা একমত হই (বা দ্বিমত পোষণ করি)। “প্রাপ্য মর্যাদা”-র মত এটাও একটা সামাজিক ধারণা। আমার আপত্তিটা ছিল, স্কিনার মনে হচ্ছে এই ধারণাটিকে শুধুমাত্র ক্ষমতাবানদের একটি অস্ত্র হিসেবে দেখছেন।
কারণ দায় মানাটা সামাজিক কন্ট্রাকটের অংশ। সরাসরি হোক, আর implicitly হোক, আমরা দায় এর ধারণাটা মেনে নিয়ে সমাজে আছি। এখানে আসলে স্বাধীন ইচ্ছার প্রয়োজনটাই আমি দেখতে পাচ্ছিনা (কাজেই তার মহাপ্রয়াণও আমার মতে অবান্তর)। মানুষ যেহেতু empathy গুণসম্পন্ন, কাজেই অন্য কাউকে শাস্তি পেতে দেখলে ওই ঘটনাটিকে নিজের সাথে মিলিয়ে সে বুঝতে পারে যে সেও শাস্তি পেতে পারে, এবং সে যেহেতু লার্নিং সিস্টেম, তাই ওটা তার ব্যবহার পরিবর্তন করে।
তা তো ঠিক, কিন্তু উনি বার বার অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান বনাম বর্ণনামূলক জ্ঞানের ব্যাপারটা টেনে সেটার সাথে গণজাগরণের একটা ধারনা কেন একীভূত করছেন সেটা তাহলে আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। যেমন…
একথার অর্থ কি?
@রৌরব,
দেখি অর্থ-অনর্থের কিছু উদ্ধার করতে পারি কিনা। বর্ণনামূলক জ্ঞান খালি জানার মধ্যে থাকে। কর্মে ধৃত জ্ঞান না। কর্মে ধৃত সে হতে পারে। তবে কর্মে ধৃত জ্ঞান হল অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞান। কর্ম প্রণোদনা থেকে উৎসারিত। ফলে জানা আর করার মাঝখানের ধাপ হল প্রণোদনা। ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমাদের জানাশোনাটাকে, সেটার অনুকূলের ক্রিয়ার চর্চায় পরিণত করতে হলে প্রণোদনার প্রয়োজন। কোন কারখানা সেই জানাশোনা মেনে না চললে সরকার তাকে জরিমানা করে ভবিষ্যতের সেই বর্ণনামূলক জানাশোনাকে মেনে চলার প্রণোদনা দিতে পারে। আবার সরকার সেই ভবিষ্যতের জানাশোনাকে তোয়াক্কা না করলে মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ করে সরকারকে সেই জানাশোনাটা মেনে চলার প্রণোদনা প্রদান করতে পারে। ভবিষ্যতের বিপদগুলো যে প্রণোদনা বা শাস্তি দেবার কথা, সেটারই একটা প্রতিভূ শাস্তির মাধ্যমে জানাশোনার বর্ণনামূলক জ্ঞানটা কর্মে ধৃত অভিজ্ঞতামূলক জ্ঞানে পরিণত হবে।
জটিল একটা বিষয়কে দারুন কৌতূহল উদ্দীপক আর সহজ ভাবে লেখার জন্য ধন্যবাদ। বিজ্ঞান ভাবনার পরিধি বড় হোল।
@কাজী রহমান,
ভাবনার চমৎকারিতার সব কৃতিত্ব স্কিনারের।
ভাল লাগল!
অনেক কিছু জানতে পারলাম!
@লাইজু নাহার,
ধন্যবাদ।
ভাল অনুবাদ। আরো লেখা চাই এরকম। লেখকের বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই অবশ্য। একটু গুছিয়ে একটা মন্তব্য করার চেষ্টা করব।
@রৌরব,
বর্তমান লেখায় বহু ভুল ত্রুটি থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
এখানে বলে নেয়া ভাল, এটা আমার প্রথম অনুবাদ। অনুবাদ কর্ম ভয়ঙ্কর কঠিন একটি কাজ। প্রথম বুঝেছিলাম, যখন সচলায়তনের শুভাশীষ দাশ আমাকে সুসান ব্রাউনমিলারের Against our will: men, women, and rape বইটার বাংলাদেশ অংশটা অনুবাদ করার জন্যে অনুরোধ করেন। লেখাটি পড়তেই আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। লেখাটা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আর তাদের দোসর রাজাকারদের দ্বারা নারীদের উপর অকথ্য নির্যাতনের গাঁথা। সেটা অনুবাদ করতে আমি ব্যর্থ হই। অনুবাদক হিসেবেও আমার কোনপ্রকার অভিজ্ঞতা ছিল না। কেউ যদি ওই অনুবাদে হাত দেন, খুব ভালো হয়। আমি মূল লেখাটা সরবরাহ করতে পারবো। কোন নারী এগিয়ে এলে আরও ভালো হয়।
ফ্রেডরিক স্কিনারের গবেষণা নিয়ে সরকারী একটা প্রজেক্টে কিছু কাজ করেছিলাম একটা হ্যান্ডবুক তৈরী করার জন্য। মানুষের বাহ্যিক আচরনের সাথে মনস্তত্বের যোগসূত্র নিয়ে উনার গবেষনা রীতিমত অবাক করার মত। উনার গবেষণার উপর ভিত্তি করে যে হ্যান্ডবুকটা নিয়ে কাজ করেছিলাম তার থেকে ডিক্লাসিফাইড কিছু অংশ এখানে পাবেন। 🙂
@সংশপ্তক,
বাহ, খুব কাজের লিঙ্ক দিলেন। এগুলো নিয়ে একদিন লিখুন না!