‘পাপ ব্যক্তিগত; অপরাধ সামাজিক’।
১. একবিংশ শতাব্দী অতিক্রম করছি আমরা এখন, কিন্তু ব্যাপক অর্থে এখনও আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতার যুগে প্রবেশ করতে পারিনি। বাঙলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাটি এখনও এখানে অঙ্কুরিত অবস্থাতেই রয়ে গেছে, তাই প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত কাজকর্মও এখানে খুব বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে! ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি অন্য কারো ক্ষতি বা সমস্যার সৃষ্টি না করে একজন মানুষের যা ইচ্ছে তা করতে পারার অধিকার। ব্যক্তিস্বাধীনতার সাথে আধুনিকতার ধারণাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেই অর্থে ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপক বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত কোন সমাজকে কিছুতেই আধুনিক বলা যায় না- এই হিশেবে আমরা এখনও এক অনাধুনিক মধ্যযুগীয় সমাজেই বাস করছি।
ব্যক্তিস্বাধীনতার একটা সীমারেখা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন, নতুবা সমাজের উপর এর ক্ষতিকর একটা প্রভাব পড়তে বাধ্য। ব্যক্তিস্বাধীনতার এই সীমারেখা টানতে গিয়ে পাপ ও অপরাধের ধারণাদুটি চলে আসে। নির্দিষ্ট কোন ধর্মের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে গেলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে কিছুই থাকবে না আর, কারণ হাজারটা পাপকাজের শেকলে মানুষ বন্দী এখানে। ধর্মগুলো চিরকালই মানুষকে বন্দী করে রাখার দায়িত্ব বেশ সফলভাবে পালন করে এসেছে, আর মানুষকে বন্দী করার হাতিয়ার হিশেবেই এসেছে পাপের ধারণাটি। মানুষের তথাকথিত ‘নৈতিক অধঃপতন’ ঠেকাতে ধর্মগুলো নৈতিক কিছু বিধিমালা তৈরী করে, যা ভঙ্গ করাকে ‘পাপ’ বলে অভিহিত করা হয়। এখানে যে সমস্যাটি দেখা দেয় সেটা হচ্ছে, প্রতিটা মানুষের নৈতিকতাবোধ আলাদা; এজন্য এক ধর্মপ্রচারকের নৈতিকতার ধারণার সাথে অন্য ধর্মপ্রচারকের নৈতিকতার ধারণার অসামন্জস্যতা দেখা দেয়। ফলে প্রতিটা ধর্মের নৈতিকতার বিধিমালায় ভিন্নতা দেখা যায়। মজার ব্যাপার হল, প্রতিটা ধর্মই যথারীতি নিজেদের নৈতিকতার ধারণকেই পরম বলে দাবি করে, অন্যগুলোকে বাতিল করে অনৈতিক বলে!
২. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, ধর্মে প্রদত্ত নির্দেশাবলি অমান্য করাটাই পাপ (sin)। অন্যদিকে সামাজিক বা আইনী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ‘পাপ’ বলে কিছুই নেই, আইনভঙ্গ করাকে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী অপরাধ (offense/crime) বলা হয়। ধর্মে প্রচারিত পাপের তালিকাসমূহ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে আধুনিক আইন অনুযায়ী বিবেচিত অপরাধের অনেকগুলোকেই এসব পাপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আবার ধর্মগুলোতে এমন অসংখ্য পাপের ধারণা আছে যাদেরকে এখন আদৌ আর অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না। নৈতিকতার ধারণাটি স্বততঃ পরিবর্তনশীল ; এক যুগের নৈতিক আচরণ আরেক যুগের নৈতিক স্খলন হিশেবে বিবেচিত হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। ধর্মপ্রচারকরা একটি নির্দিষ্ট যুগে একটি নির্দিষ্ট ধর্ম প্রবর্তন করেছেন যাতে রয়েছে কতগুলো নির্দিষ্ট বিধিমালা যেগুলো কেবলমাত্র ওই নির্দিষ্ট যুগের ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির নৈতিকতার ধারণার সাথেই সামন্জস্যপূর্ণ; এ কারণে সব ধর্মেই এরকম অনেক নৈতিক বিধিমালা দেখতে পাওয়া যায় যা বর্তমান যুগের জন্য অসামন্জস্যপূর্ণ এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকরও বটে।
৩. পাপ ও অপরাধের ধারণাদ্বয় সামন্জস্যপূর্ণ নয়, আবার পুরোপুরি সাঙ্ঘর্ষিকও নয়। আসলে পাপ ও অপরাধের ধারণা দুটি পুরোপুরিই ভিন্ন প্রেক্ষিতে বিবেটিত দুটি ধারণা- পাপ ব্যক্তিগত, অপরাধ সামাজিক। পাপের ধারণা বিকশেত হয়েছে স্রষ্টা ও ধর্মের ধারণাকে ভিত্তি করে; অপরদিকে অপরাধের ধারণা বিকশিত হয়েছে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে। কোন একটি নির্দিষ্ট ধর্ম যদি সত্য হয়, তাহলে ওই ধর্মের নৈতিক সমস্ত বিধিমালাও সত্য হবে, ফলশ্রুতিতে ওই ধর্মে বর্ণিত সমস্ত পাপকাজও যুক্তিসিদ্ধ হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ধর্মই ‘সত্য’ প্রমাণিত হয় নি, এ কারণে পাপের ধারণাটাই এখনও পর্যন্ত অযৌক্তিক রয়ে গেছে। অন্যদিকে অপরাধের প্রায়োগিক দিকটা সহজেই আমাদের চোখের সামনে ধরা পড়ে; কারণ, অপরাধের ধারণাটি নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়, বরং এই ধারণা গড়ে উঠেছে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ও মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে যেসব ব্যাপার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদেরকেই অভিহিত করা হয়েছে অপরাধ হিশেবে- তাই অপরাধ সম্পূর্ণই বাস্তবসম্মত এবং একই সাথে প্রয়োজনীয় একটি ধারণা।
ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত অনেক পাপকেই বর্তমানে আর অপরাধ বলে গণ্য করা হয়না। এক্ষেত্রে একটি বহুল আলোচিত পাপের কথা উল্লেখ করা যায়- বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক। প্রায় সকল প্রধান ধর্মগুলোতেই বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে একটি মহাপাপ হিশেবে দেখানো হয়েছে; কিন্তু আধুনিক ধারণায়, এটা কোন অপরাধের মধ্যেই পড়ে না। বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক পুরোপুরিই একটা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার, সমাজের আর দশজনের উপর এই পাপের কোন প্রভাবই নেই। আর অপরাধ মানুষের সেইসব ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায় না যেসবের কোন সামাজিক প্রভাব নেই।
আমরা যদি আমাদের সমকালীন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা দেখব, বেশির ভাগ মানুষ এখনও পাপকাজের প্রতি মারাত্মক অসহনশীল, যেখানে অনেক গর্হিত অপরাধের প্রতি সেই একই মানুষেরা আশ্চর্য্যরকমভাবে উদাসীন থাকে। একটু আগে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের যে উদাহরণটা দেওয়া হয়েছে সেটার সাথে সম্পর্কিত পাপকাজের ভয়াবহরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায় আমাদের মত দেশগুলোতে। অনেক দেশে তো এহেন পাপকাজের শাস্তি হিশেবে মৃত্যুদন্ডের বিধানও আছে। অন্যদিকে আমাদের সমাজেই দেখি অনেক খুনী, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারী, চোরাকারবারীদেরকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে, এমনকী এদের বেশির ভাগকে এখানে বরং শ্রদ্ধার পাত্র হিশেবেই গণ্য করা হয়! হয়ত এদেরই অনেকে একসময় ‘জনদরদী’ নেতায় পরিণত হয়ে ওঠে!
কোন একটা কাজ পাপ বলে অভিহিত হবে কী হবে না তা কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে কতগুলো নিম্নশ্রেণীর ‘পবিত্র বই’ এর দুবোর্ধ্য ব্যাখ্যার উপর। যেহেতু পাপ ব্যাপারটা কোন যুক্তির ধার ধারে না, সেহেতু ‘পাপ’ এর ধারণাটা প্রায়শই খুব মারাত্মক এবং ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। কয়েকদিন আগে আমরা দেখলাম আমাদের এই বাঙলাদেশেই হেনা নামের এক কিশোরীকে ‘ধর্ষিত’ হওয়ার ‘পাপ’ এ কিভাবে দোররা মেরে হত্যা করা হল! পাপের ধারণাটা এখনও সমাজে তীব্রভাবে উপস্থিত, এই কারণে নিরপরাধ পাপীরা শুধুই যে সামাজিক ভোগান্তির শিকার হয় তা নয, মাঝে মাঝে এই ভোগান্তিটা ‘মৃর্ত্যু’ পর্যন্ত হতে পারে!
শেষ কথা: যতদিন ধর্ম থাকবে, ততদিন পাপ থাকবে, ততদিন কূপমন্ডুকতা, গোঁড়ামি, পশ্চাদপদতা, অনগ্রসরতাও থাকবে। মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার অবশ্যই, তবে তা অবশ্যই হতে হবে একটা যৌক্তিক কাঠামোর মধ্যে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে ‘পরম সত্য’ বলে হয়ত কিছু নেই, কিন্তু ‘অধিকতর কল্যাণমূলক সত্য’কে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ‘পাপ’ নামক মধ্যযুগীয় ধারণাটিকে পুরোপুরি ছুড়েঁ ফেলার কোন বিকল্পই নেই।
(০৮/০২/১০)
সহমত।
লিখাটি ভাল লাগলো। আরো বেশি বেশি লিখুন।
@গোলাপ,
ধন্যবাদ।
এক কথায় প্রকাশ করলে ব্যাপারটা কি এরকম-
পাপ হালাল, অপরাধ হারাম। কিন্তু ধর্ম বলে উল্টো।
@শ্রাবণ আকাশ,
😀 😀 😀 অনেকটা সেরকমই।
একটা গল্প লিখেছিলাম। লেখা শেষ করে আপনার এই পোস্ট পড়ে মনে হল গল্পটা আপনার পোস্টের উদাহরণ হয়ে গিয়েছে! অল্প কথায় বিষয়টি তুলে ধরায় গল্পটি প্রকাশ করা অনর্থক মনে হল। সুন্দরভাবে উপস্থাপনার জন্যে ধন্যবাদ।
@আনাস, অন্যের কথা জানি না- এই লেখাটা আরো সহজ ভাবে বোঝার জন্য আপনার গল্প আমার খুব পড়তে ইচ্ছে করছে।
@আনাস,
গল্পটা লিখে ফেলুন, গল্পের মাধ্যমে এসব ব্যাপার আরো ভালোভাবে বুঝা যায়।
ধন্যবাদ েলখাটার জন্যে। কোন কারণে আপনার লেখা আগে চোখে পড়ে নি।
দীর্ঘদিন আমি ধর্ম আর মুক্তচিন্তার সংঘাতের দর্শক। দেখে আসছি যে মুক্তচিন্তা বারবার “যতদিন ধর্ম থাকবে, ততদিন পাপ থাকবে, ততদিন কূপমন্ডুকতা, গোঁড়ামি, পশ্চাদপদতা, অনগ্রসরতাও থাকবে” এই উপসংহারে এসে পর্যবসিত হয়। বিশ্বাসের কারণে মানুষ অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতা লংঘের ইন্ধন পেয়ে থাকে ঠিক। তাই বলে বিশ্বাস উপড়ে ফেলা সমাধান?
আমার কাছে এই সমাধানটা অনেকটা ধার্মিক সমাধানের মত মনে হয়। মদ খেলে বিভিন্ন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে দেখে মদকেই বাতিল করার মত। মদের ব্যাপারে মুক্তচিন্তার দৃষ্টি যেরূপ, বিশ্বাসের ব্যাপারেও তেমনটাই হওয়া উচিত। দুটোতেই মানুষের আগ্রহ আছে। ফলে মানুষের সেই অধিকার বজায় রাখার পক্ষে থাকতে হবে। আমরা খুঁজতে চাই না, মদ খাওয়া ভালো না মন্দ। কারণ কিছু যায় আসে না। কেউ যদি খেতে চায়, সেটার অধিকার তার আছে। তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। অপরাধ হলে সেটা দমনের সংস্থা আছে।
বিশ্বাসীরও তেমন বিশ্বাসের অধিকার আছে। সেটা ভালো না মন্দ, ভুল না ঠিক ব্যাতিরেকে সে অধিকার তার আছে। কারণ সেটা তার ইচ্ছা। কিন্তু সেটার প্রেক্ষিতে সে যখন অন্যের অধিকার লংঘনে উদ্যত হয়, তখন আমাদের লক্ষ্য সেটা বন্ধ করা। সেটার জন্যে মানুষের বিশ্বাস পরিবর্তনের চেষ্টা অনেকটাই মশা মারতে কামান দাগার মত মনে হয় আমার কাছে!
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার কথাটা অনেকটা এরকম। চোর তো চুরি করবেই। তাতে কার কি? চুরি করলে আইন আছে, তাকে শাস্তি দেবে। সমাজে কেউ শান্তিতে ঘুমাতে পারুক আর নাই পারুক, চোর বাবাজীবনকে চুরি করতে দিতেই হবে। কেউ যদি বলে সমাজ থেকে চুরিকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে তাহলে আমরা সবাই গলা ফাটিয়ে বলব চুরি বন্ধ করতে CIA এর ব্যাবস্থা। :))
ধর্মান্ধ জানোয়ারগুলো এখানে সেখানে বোমা ফুটিয়ে যাবে আর আমরা বলব আরে ভাই, তাতে কি হয়েছে, ওদেরও তো বিশ্বাস করার অধিকার আছে নাকি?
বিশ্বাস করার অধিকার নিয়ে আসলে কারো কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হল ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে। ধংসাত্বক বিশ্বাস করার অধিকার যদি কারো থাকে তাহলে সেই কাজ করার অধিকারও তার থাকা উচিত। তা না হলে তাকে বিশ্বাসই বলা যায় না।
সমাজ থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস একদিন উঠে যাবে এটা হল একটা আশা, মহৎ আশা। এখন যদি কেউ বলে এই আশা করাটা মশা মারতে কামান দাগা তাহলে সেটা হবে অনেকটা বাংলাদেশ একদিন সাবলম্বী হবে এই আশা করাকে বোকামী বলার মত।
@সাইফুল ইসলাম,
না, আমার কথা মোটেও এরকম না। আমি মদ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছি। যে পর্যন্ত একটা বিষয়ে আপনি আক্রান্ত না, সেটা নিয়ে আপনার আমার মাথা ব্যাথা থাকার কথা না। মদ খাওয়া আর চুরি করা এক কথা না। আমি মদ খেলেই সাথে সাথে কারো ক্ষতি করছি না। কিন্তু আমি চুরি করার সাথে সাথেই কারো না কারো ক্ষতি করছি। ফলে আপনার চুরির উদাহরণ খুবই দুর্বল হয়েছে। বরং আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, মদ খেলে যেহেতু অপরাধ ঘটানোর সম্ভাবনা আছে, তাই আপনি মদ খাওয়া বন্ধ করে দিতে চান।
চোরকে চুরি করতে দেয়ার এবং না করতে দেয়ার একটা করে উপায় দেখান। এই কথাটার মানে কি? চুরি করলে তাকে অপরাধ দমন সংস্থা ধরবে এবং ব্যবস্থা নিবে। “চুরি করতে দেয়া” মৌলিকভাবেই “অপরাধ হলে সেটা দমনের সংস্থা আছে” কথাটার সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ চুরি করার সাথে সাথে অপরাধ ঘটে, ফলে দুইটা একসাথে পাশাপাশি বলা অবান্তর। আমি এই অবান্তর চিন্তা করি নি। আপনি আমার “অপরাধ হলে সেটা দমনের সংস্থা আছে” কথাটা উদ্ধৃত করে কিভাবে যেন দাবী করলেন যে আমার কথাটা অনেকটা এরকম যে “চোর বাবাজীবনকে চুরি করতে দিতেই হবে”। আরেকটু সতর্কতার সাথে যুক্তিগুলো সাজাতে হবে। তবে যদি স্বীকার করে নেন যে একটা স্থুল উদাহরণ দিয়েছেন, তবে এ নিয়ে আমার আর প্রশ্ন নাই।
মানে আপনি ধংসাত্মক বিশ্বাসের বিপক্ষে। কিন্তু তার মানে কি মোটা দাগে বিশ্বাসের বিপক্ষে? আমি তো ধংসাত্মক বিশ্বাসের পক্ষে সাফাই গাইছি না। ধংসাত্মক বিশ্বাসকে মোকাবিলা করার জন্যে বিশ্বাসকেই উঠিয়ে দেয়ার সংগ্রামকে মশা মারতে কামান দাগা বলছি। ধংসাত্মক বিশ্বাস নিয়ে কাজ করুন। কোনো বিশ্বাসীর যদি ধংসাত্মক বিশ্বাসে আপনার মতই আগ্রহ না থাকে, সেক্ষেত্রে তার ধরনের বিশ্বাস যদি অনাদিকাল পৃথিবীতে টিকে থাকে, তাহলে আর বাড়তি কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে যে তারপরেও বিশ্বাসকে সমূলে উঠিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়বে?
আপনার এই বক্তব্য দিতে পারার পেছনে ধর্ম বিশ্বাস = বোমা মারা, এই সরলীকরণ আছে। বহু মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে, বোমা মারে না, মারায় বিশ্বাস করে না, ধর্মকে ব্যাক্তিগত গণ্ডীর মধ্যে রাখে। তার বিশ্বাস উঠিয়ে দিবার আশাকে আপনি মহৎ বানান কোন পয়েন্টে?
কেউ কারো ব্যাক্তিগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না, হিংস্র হবে না, এটা বলতে পারেন ‘মহৎ’ আশা। এটা প্রতিষ্ঠা হবার পর কে মনে মনে কি বিশ্বাস করলো তাতে আপনার কি এখতিয়ার যে আপনি সমাজ থেকে সেটা তুলে দিতে চাবেন? বিশ্বাস বোমা মারার কথা বললে সেটার নিয়ে কাজ করতে পারেন। তার জন্যে “বিশ্বাস উঠিয়ে” দেয়া একটা উপায়। একমাত্র উপায় না। এবং এটা আমার কাছে মশা মারতে কামান দাগার উপায়ের মত।
আবার ইন্যাপ্রপ্রিয়েট উদাহরণ। সাবলম্বী হওয়াটা মিনস না, এটা গোল। কিন্তু সমাজ থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে দেওয়াটা আপনার ভাষ্য মতেই (বোমা মারা ও হিংস্রতামুক্ত সমাজের লক্ষ্যে) একটা মিনস। ইট ইজ নট দ্যি গোল। ফলে তুলনাটা যুতসই হল না। গোলের কোন চালাকি বা বোকামি উপমা হয় না যে আমি বলব বাংলাদেশকে সাবলম্বী করার আশা করা বোকামি। সাবলম্বী করা যদি আমার গোল বা উদ্দেশ্য হয়, তবে সেটা আমার চাই-ই। সেটা পাবার যে উপায়গুলো, সেগুলো নিয়ে আমার মতামত থাকতে পারে। মনে হতে পারে যে একটা উপায় বেশ কার্যকর, আরেকটা মশা মারতে কামান দাগার মত।
ফলে আগে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসুন যে বিশ্বাস তুলে দেয়াটা আপনার গোল না মিনস। মিনস হলে গোলটা কি? তারপর দেখান যে সেই গোল অ্যাচিভ করতে বিশ্বাস উঠিয়ে দেবার মিনসটা খুবই অ্যাপ্রপ্রিয়েট। মশা মারতে কামান দাগার মত না, মানে একটা গোল অ্যাচিভ করতে গিয়ে আর দশটা ক্ষতি বা অধিকারের লংঘন ঘটবে না। তাহলেই তো হল! আমার কথা তুলে নিব। আপনার কথা মেনে নিব। আমার নিজস্ব ধারণা থেকে কথাটা বললেও আলোচনা করার জন্যেই কথাটা তুলেছি। একতরফা শেখানোর চেয়ে শেখার আগ্রহই আমার বেশি।
যদি সমাজ থেকে বিশ্বাস তুলে নেয়া এত গুরুত্বপূর্ণ হয়, সেটার পক্ষে যুক্তিগুলোও শাণিত থাকা দরকার। বারবার বলতে পারা দরকার।
আলোচনা করার জন্যে ধন্যবাদ।
@রূপম (ধ্রুব),
কোন কিছু ‘বিশ্বাস’ করার কি আদৌ প্রয়োজন আছে ? বিজ্ঞান কি কখনও কোন কিছু ( এমনকি একটা পার্টিকল) ‘বিশ্বাস’ করে ? সন্দেহ করা ছাড়া বিজ্ঞানের অস্তিত্ব থাকতেই পারেনা আর যারা ‘বিশ্বাসে’ বিশ্বাসী তাদের দ্বারা কিভাবে সন্দেহপ্রবন হয়ে বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া সম্ভব ? আমি তো কিছুতেই মেলাতে পারি না যে কিভাবে একজন ব্যক্তি সন্দেহপ্রবন না হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবতে পারে । জীবনের সাথে এখন বিজ্ঞানের সম্পর্ক এত নিবিড় যে , বিশ্বাস বিজ্ঞানের জন্য একটা মূর্তমান হুমকি না হলেও হ্যাজার্ড তো বটেই।
@সংশপ্তক,
একজন প্রাপ্তবয়স্ক আমার জন্যে মদ খাওয়ার কি প্রয়োজন আছে? বা পায়ুকাম? কবিতা লেখা? রোলার কোস্টারে চড়া? লটারির টিকিট কেনা? অ্যাভাটার দেখা? ভূতের গল্প পড়া? এগুলোর প্রয়োজন বের করারই বা কি কোন প্রয়োজন আছে? অ্যাভাটার দেখে বা একটা ভূতের গল্প পড়ে যদি বিন্দুমাত্র কোন বিজ্ঞাননির্ভর উপযোগিতা খুঁজে পাওয়া না যায়, তাতে কি এগুলো চিরতরে সমাজ থেকে দূরীভূত হওয়া আমাদের কাম্য হবে? আমি যদি এগুলো পছন্দ করি, সমাজের কি এখতিয়ার আছে এগুলোর প্রয়োজন অপ্রয়োজন বিবেচনা করে তারপর আমাকে এগুলো করতে দেয়ার বা না দেয়ার? যে জায়গায় ব্যক্তির সংঘাত জড়িত, সেখানে সমাজ নাক গলাতে পারে। কিন্তু এইসব কোন চাওয়ার সাথেই কিন্তু ব্যক্তির সংঘাত নেসেসারিলি জড়িত না। বিশ্বাসের ব্যাপারেও ঠিক একই কথা খাটে। বিশ্বাসের প্রয়োজন অপ্রয়োজন দেখতে হলে ভূতের গল্পের প্রয়োজন অপ্রয়োজনও দেখতে হবে। কিন্তু আমি সেটা চাই না। ভূতের গল্প আমার ভালো লাগলে সেটা আমার পড়তে পারার সুযোগ থাকতে হবে, সেটা অন্য কারো প্রয়োজন অপ্রয়োজন বা সেটার বিজ্ঞানমনস্কতা ব্যাতিরেকে।
হয়তো কথা সত্য। হয়তো না। মানুষের সকল সম্ভাবনার কথা আমরা জানি না। কেউ যদি বিশ্বাসী আর বিজ্ঞানমনস্ক দুই হতে চায়, আমাদের সেই অকল্পনীয় সম্ভাবনাটা খুঁজে নিতে চায়, সেটার সুযোগ তার থাকা চাই।
কিন্তু তার চেয়ে বড় সমস্যা, এখানে অনেকটা এরকম ধরে নেয়া হচ্ছে যে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হতেই হবে। আমি বিজ্ঞানমনস্ক হতে চাই। কিন্তু সবাইকে কেন তেমনটা হতে হবে? ব্যবসায়িক জ্ঞান তো অনেক কাজের। তাই বলে কি আমাকে ব্যবসা ভাল বুঝতেই হবে? বা সবাইকে কি ইতিহাসমনস্ক হতে হবে? কেউ না হতে চাইলে তো জোর করার কিছু নাই। আমি বিজ্ঞানমনস্ক বলে তো সবাইকে তাই বানাতে পারি না।
হ্যাঁ, একটা বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ আমার একটা চাওয়া হতে পারে। তবে সেটার বিশেষত্ব কিছু নেই। কোন একটা ‘সার্বজনীন’ মানদণ্ডে এই চাওয়ার বিশেষ কোন শ্রেষ্ঠত্ব আছে তেমন মোটেই না। এটা সাম্যবাদ, অ্যানার্কিজমের মত একটা অ্যাজেন্ডা। একটা খায়েশ।
ফলে কেউ বিজ্ঞানমনস্ক না হলে বা না হতে চাইলে সে কোন প্রকার মানদণ্ডেই বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের তুলনায় lesser person হতে পারে না। বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার কোন অবলিগেশানও তার নেই। বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ হল অ্যাট বেস্ট একদল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সমাজ-রাজনৈতিক খায়েশ। আর সেটার পূরণের জন্যে বিশ্বাসকে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক মনে করাটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
@রূপম (ধ্রুব),
(Y) (Y) (Y)
@রূপম (ধ্রুব),
আপনি আমি আমরা সবাই একটি নিরুপদ্রব সমাজে থাকতে চাই। সেটা বিশ্বাস ছাড়া হতে পারে, আবার বিশ্বাস সহও হতে পারে( এখানে বিশ্বাস মানে যে ধর্মীয় বিশ্বাস সেটা বলা মনে হয় বাহুল্য হবে।)। এখন আমাদের দেখতে হবে এরকম আদর্শ একটা সমাজ, চমৎকার একটা পৃথিবী আমরা কি বিশ্বাস সহ পেতে পারি কিনা?
বিষয়টির কোন প্রকার গভীরে যাওয়া ছাড়াই বলা যায়, পারি না। মদের সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসটা এই জন্যেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, মদ আপনাকে কেউ পান করতে বলে না- কিন্তু বিশ্বাস করতে বলে। মদ আপনি কতটুকু পান করবেন সেটা আপনিই ঠিক করবেন- বিশ্বাস আপনি কতটুকু করবেন সেটা ঠিক করার মহাজন আপনি নন।
কথা আসতেই পারে তাহলে যারা বিশ্বাস করেও নিরুপদ্রপ জীবন যাপন করছে তারা কিভাবে করছে? বা তারা কি বিশ্বাসী নয়?
উত্তর হলঃ তারা বিশ্বাসী নয়, সুবিধাবাদী। মদ আপনি এক পেগ পান করতে পারবেন কিন্তু বিশ্বাস করে পাঁচ রাকাত নামাজের যায়গায় এক রাকাত পড়তে পারবেন না। তারমানে হল যারা বিশ্বাস করেও বোমাবাজী করে না, মানুষকে খুন করে না, নিজের ধর্মে ডাকে না তারা বিশ্বাসী নয়। তারা বিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
বিশ্বাস সমাজে থাকার দরকার আছে নাকি বা থাকলে কোন সমস্যা হবে নাকি তা বুঝতে হলে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, আমাদের দেশে যারা বোমাবাজী করেছে তারা কেউই অবিশ্বাসী নয়। এমন কি তারা সেই ধর্মের উপরে এক এক জন বড় বড় অথরিটি। সহজভাবে বললে বলা যায়, প্রত্যেক প্রকৃত বিশ্বাসীই বোমাবাজ বা মানুষের জীবনের ওপর হামলা করবে, কিন্তু কোন প্রকৃত অবিশ্বাসীই এই কাজ করবে না।
এখন আপনিই ঠিক করুন বিশ্বাস কি সমাজে থাকা যৌক্তিক না অযৌক্তিক।
🙂
আমি বলেছি ধ্বংসাত্বক বিশ্বাস করার অধিকার যদি কারো থাকে তাহলে সে কাজ করার অধিকারও তার থাকা উচিত। এবং এখনও আমি তাই বলব। আপনি যদি মনে করেন সমাজতন্ত্রে শোষিত মানুষের মুক্তি সম্ভব তাহলে সেই কথা প্রচারের অধিকারও আপনার থাকা উচিত। আপনি যদি মনে করেন ইসলামের মাধ্যমেই মানুষের মুক্তি সম্ভব তাহলে ইসলাম প্রচারের অধি্কারও আপনার থাকা উচিত। এখন কোন বিশ্বাসটা আসলেই মঙ্গল বয়ে আনবে সেটা কে ঠিক করবে? যুক্তি।
কিন্তু বিশ্বাসের বেলাতে যুক্তি কিন্তু ভিন্ন কথা বলে, কারন বিশ্বাস যুক্তি মানে না।
বিশ্বাস শুধু হুকুম পালনেই বিশ্বাসী।
সুতরাং আপনি যেই যুক্তির মাধ্যমে বলছেন বিশ্বাস থাকার না থাকার কথা, আরেকটু তলিয়ে দেখলে দেখা যায় সেই যুক্তিই বলে অযৌক্তিক বিশ্বাস সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে, বিশ্বাস সমাজে থাকা ক্ষতিকর।
ধন্যবাদ।
আলোচনা করে খুব ভালো লাগল।
@সাইফুল ইসলাম,
এরকমটা ভাবছেন কারণ ধরেই নিচ্ছেন বিশ্বাসের মহাজন বিদ্যমান। এরকমটা অনেক বিশ্বাসী মনে করে। কিন্তু আপনি এমনটা মনে করবেন কেন? অনেক বিশ্বাসী নিজের বিশ্বাসের নিজেই মহাজন। বিশ্বাস করতে বলে বিশ্বাসীরা। মানে কিছু মানুষ। নাকি মানুষের বাইরেও অন্য কিছু আছে। মদ খাওয়া সমাজে মদ খাওয়াটাও একটা শিশু তার মা বাবা সমাজের লোক জনের থেকে শেখে। ডাইনিং টেবিলেই মদটা থাকে।
এটা ভারি অন্যায় বললেন। এটা বলার মাধ্যমে আপনি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন যে বিশ্বাসের মাত্র একখণ্ড সহি ব্যাখ্যা আছে, যেমনটা মোল্লারা বলে। বাদ বাকি সকল ব্যাখ্যা ভুল, বিকৃত ও সুবিধাবাদী। কে বলেছে বিশ্বাস করলেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে? বোমা মারতে হবে? পুস্তকে লেখা এই তো? পুস্তক আর বিশ্বাস তো এক না। আপনি বিশ্বাসীর সংজ্ঞায়ন এভাবে করছেন যে পুস্তকের আক্ষরিক অর্থ পালনকারীরাই কেবল বিশ্বাসী। কিন্তু বিশ্বাসী শব্দটার অর্থ কিন্তু যে বিশ্বাস করে। সে বিশ্বাস যাই হোক, সেটা বিশ্বাস। ফলে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে মনে করে, সে যতটা বিশ্বাসী, যে মনে করে যে না, তার কাছে কোন কারণে মনে হচ্ছে পুস্তকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কথা লেখা থাকার পরেও সে যে কালেভদ্রে মাত্র এক ওয়াক্ত করে পড়ছে, সেটাও তার অধিপতির কাছে গ্রহণীয়, সেও ততটাই বিশ্বাসী। কোন মানদণ্ডে আপনি প্রথমজনকে বিশ্বাসী বলছেন আর দ্বিতীয়জনকে সুবিধাবাদী? বোমা মারার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বিশ্বাসী যদি মনে করে সে তার নিজের বিশ্বাসের নিজেই মহাজন, তাকে আপনি বিশ্বাসী বলবেন না কেন?
এখন ইনকন্সিসটেন্সির ব্যাপার আসতে পারে। কাউকে এমন দেখা যেতে পারে যে সে কিছু ব্যাপারে নিজেকে মহাজন মানছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে মহাজন মানছে রুমিকে, বা গাজ্জালিকে। বা একই বিষয়ে তার আচরণ বা পালন সময়ের সাপেক্ষে বদলে যাচ্ছে। এখন সে সুবিধাবাদী নাকি না, সেটা বিচার করে তো আপনি বলতে পারেন না যে সে বিশ্বাসী না। একজন বিশ্বাসী তার নিজের বিশ্বাসে ইনকন্সিসটেন্সি অ্যালাও করতে পারলে আপনি কেন পারবেন না তাকে তার ইনকন্সিসটেন্সিসমেত তাকে বিশ্বাসী মনে করতে? বিশ্বাসের যখন মানদণ্ড থাকে, তখন একটা স্বঘোষিত বিশ্বাসীকেও “বিশ্বাসী নয়, সুবিধাবাদী” বানানো যায়। বিশ্বাসের মানদণ্ড মোল্লাদের কাছে থাকে। আপনার কাছে আছে কি? নাকি আপনি মোল্লাদেরটাকেই মানদণ্ড মেনে নিচ্ছেন?
আবার। মদ খাওয়ার কারণে রোড অ্যাকসিডেন্ট বহুগুণ বেড়ে গেছে। তাই মদ খাওয়া যে বন্ধ করা উচিত, সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না এমনটাই বলতে চাচ্ছেন, নাকি? আপনি যদি যুক্তিশাস্ত্রের দ্বারস্থও হন।
ক = বিশ্বাসী
খ = বোমাবাজ
আপনি বলছেন, (খ) হলে (ক) সত্য।
কিন্তু এরপর আপনি একটা ধারণা দিতে চাচ্ছেন, “অতএব”, (ক) হলে (খ) সত্য। এটা যুক্তিশাস্ত্রে একটা ফ্যালাসি
http://en.wikipedia.org/wiki/Affirming_the_consequent
আবার মোল্লাদের মত কথা বললেন। এবার শুধু প্রকৃত বিশ্বাসী নির্ণায়কই হলেন না, প্রকৃত অবিশ্বাসী নির্ণয়ের মোল্লাও বনে গেলেন। কোন পুস্তক মেনে প্রকৃত অবিশ্বাসী চেনা যায় রে ভাই? আমি অবিশ্বাসী। আমি প্রকৃত অবিশ্বাসের পুলসিরাত পার হতে পারবো তো? :guru: :))
আপনি বলুন বিশ্বাস সমাজে না থাকার যথেষ্ট যুক্তি আপনি দিলেন কি? বিশ্বাসের মোল্লাদের দৃষ্টিতে না দেখে মানুষের বৈচিত্র্যকে স্বীকার করুন। অনেক অবোমাবাজ বিশ্বাসী দেখতে পাবেন। বিশ্বাসের বৈচিত্র অগুণতি। প্রত্যেকটা মুসলমানের বিশ্বাস ভিন্ন। সেখানে “প্রকৃত মুসলমান” যে নির্ণয় করে, সে পাঁড় মোল্লা।
এটার সাথে বিশ্বাসের অধিকারের সম্পর্কটা আরো ভালো করে দেখান। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে ইসলাম মাত্রই ধ্বংসাত্মক বিশ্বাস। এরকম বললে মানুষের চিন্তার বহুমাত্রিকতাকে আপনি অস্বীকার করছেন। যে ইসলামে বিশ্বাস করে কিন্তু যেকোনভাবেই হোক মনে করে তার চর্চিত ইসলাম কোনক্রমেই ধ্বংস সমর্থন করে না, তার বিশ্বাসকে আপনি ধ্বংসাত্মক বলবেন কিভাবে? নাকি ফতোয়া দিবেন যে আহমদীয়াদের মত ওরাও আসলে প্রকৃত ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয়? ইসলামকে একটা বিশ্বাস হিসেবে দেখে দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষকে আপনার নিজের বোঝা ইসলামের সংজ্ঞায় ঢালাওভাবে ক্লাসিফিক্যাশান করবেন না। প্রত্যেকটা বিশ্বাসীর বিশ্বাসের বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় আনুন। তখন আপনার যুক্তির পক্ষে কঠিন হবে এই কোটি কোটি বিশ্বাসকে অমঙ্গল বলে নাকচ করে দেয়া।
কই? সৌদি আরবের কল্লাকাটা শাসনতন্ত্রতো খুবই সুশৃঙ্খল। বুঝতেই পারছেন, সমাজের শৃংখলা-বিশৃংখলা দিয়ে এই বিচার করা অনর্থক।
এখানে আবার একটা ফ্যালাসি ঢুকে যাচ্ছে। সমাজে মঙ্গল না আনলেই সেটা অমঙ্গল, এমন একটা কিছু বোঝাচ্ছেন কি? বলতে চাচ্ছেন, কেবল যুক্তিই সমাজে মঙ্গল আনে। বিশ্বাস যেহেতু যুক্তি মানে না, ফলে সেটা মঙ্গল আনে না। অনেক বড়সড় ক্লেইম। বিশ্বাস সমাজে মঙ্গল আনে না। এর জন্যে অনেক বড়সড় এভিডেন্স দরকার। সেটা ছাড়াও, সমাজে যে মঙ্গল বয়ে আনে না, সে নিশ্চয়ই অমঙ্গলকর, এমন সরাসরি বলা যায় না। আমি সমাজের তেমন কোন মঙ্গল করি না। তার মানে কি আমি অমঙ্গলকর? তাতো না। কারণ আমি অমঙ্গলও করি না। সমাজে বহু মানুষ এমন। এখন তাদের কি করবেন? আপনার মঙ্গলের যুক্তি দিয়েও ফলত বিশ্বাস নাকচ করা যাচ্ছে না। বিশ্বাসীরা যদি মঙ্গল করতে না পারলো, তার মানে তো এই না যে তারা অমঙ্গল করছে। আমি তো দেখালাম যে বিশ্বাস বহুমাত্রিক। কেউ যদি ধ্বংসাত্মক বিশ্বাসের বিপক্ষে নিজের বিশ্বাসকে চালিত করে, তার বিরুদ্ধে আপনার উপরে বলা সকল যুক্তি খারিজ হয়ে যায়। বাকি থাকে কেবল এই যে, সে যেহেতু যুক্তি মেনে চলে না, সে সমাজে মঙ্গল করছে না। কিন্তু অমঙ্গলও তো করছে না। সমাজে মঙ্গল করার অব্লিগেশান একটা মুক্ত মানুষের কেন থাকবে? আমি এমন সমাজ চাই না, যেখানে আমি সমাজের মঙ্গল করতে বাধ্য থাকব। আমি সমাজে মঙ্গল বা অমঙ্গল কিছু না করেই পশ্চিমের এই সমাজে দিব্যি বেঁচে আছি। আমার আশেপাশের পশ্চিমারা যতজনকে দেখছি, অধিকাংশই সমাজের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে নিজের স্বার্থপর জীবনযাপন করে যাচ্ছে। সত্যি বলতে কি, এখানে সরকার অনেকটা যেন নিশ্চিত করে যে মানুষ যাতে স্বার্থপর ও মুক্তভাবে নিজের জীবনযাপন করে যেতে পারে, কোনপ্রকার মঙ্গল কর্মের অব্লিগেশান মাথায় না রেখে। সকল মঙ্গল কর্ম স্বেচ্ছাকর্ম এখানে। এই সমাজে অধ্বংসাত্মক বিশ্বাসীরা দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে তো কোন মঙ্গলকামীর চোখ রাঙানি ছাড়াই।
আপনার কন্সার্ন ব্যাক্তিস্বাধীনতায় আঘাত, ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ, অমঙ্গল কর্মকাণ্ড, এগুলোর বিপক্ষে। বিশ্বাস মাত্রই এগুলোর পক্ষে, এটা ঠিক না। বিশ্বাসের বহুমাত্রিকতা অসীম। বহু বিশ্বাসী আমি দেখেছি, আপনিও দেখে থাকবেন, যার বিশ্বাস আপনার কন্সার্নগুলোর সাংঘর্ষিক না। তার বিশ্বাসকে আপনার কন্সার্নগুলোকে রক্ষার জন্যে নস্যাৎ করতে চাওয়াকে মশা মারতে কামান দাগতে যাওয়া বলাটাও ভুল। বলা উচিত অনধিকারচর্চা, বা আগ্রাসী মনোভাবের প্রকাশ। বিশ্বাসের বিপরীতে অলআউট অবস্থান নিতে হলে ওই অসাংঘর্ষিক বিশ্বাসগুলোর ব্যাপারে আপনার আগ্রাসী মনোভাবকে ভ্যালিডেট করতে হবে। সেটার জন্যে আরেকটা নতুন কন্সার্ন নিয়ে আপনাকে আনতে হবে। আপনার বর্তমান কন্সার্নগুলোর সবগুলোর উত্তর করে ফেলেছি।
বিশ্বাসী তার অধ্বংসাত্মক বিশ্বাস নিয়ে সমাজের অমঙ্গল সাধন না করে কারো ব্যাক্তিস্বাধীনতায় ব্যাঘাত না করে যদি সবার সাথে বেঁচে-বর্তে থাকতে পারে, তাকে বা তার বিশ্বাসকে তারপরেও যে নস্যাৎ করতে চায়, সমস্যা তো মূলত তারই বেশি মনে হচ্ছে।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার সম্পূর্ণ বক্তব্যকেই আমার একটা কথার মাধ্যমেই মনে হয় ছেঁটে ফেলা যায়। আমি বুঝতে পারছি না আপনি এত গুলো কথা বললেন, আমার লেখা থেকে কোট করলেন কিন্তু এই লাইনটা চোখে পড়লনা কিভাবে। যেখানে আমি বলেছিঃ
কেউ চায়ে কফিতে বিশ্বাস করল নাকি সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু ধর্মের মহান বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কেউ আমার মত নাফরমানকে বোমা মারতে প্ল্যান করছে কি না সেটা আমার মাথাকে বাস্তবিকই ঘামিয়ে ভিজিয়ে ফেলবে। 🙂
আসলেই যদি একটা সহি ব্যাখ্যা থাকত তাহলে মনে হয় ভালোই হত। একটা মাত্র ফ্রন্টেই যুদ্ধ করা যেত। কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে ফ্রন্ট একটা না, অনেকগুলো।
ঐ প্যারায় এর পরে যা বলেছেন তার সবের একই উত্তর, আমি বিশ্বাস বলতে
ধর্মীয় বিশ্বাসকেই বুঝিয়েছি। কারন পাপ এর ধারনা( যেটা এই প্রবন্ধের মূল বিষয়) ধর্ম বিশ্বাস ছাড়া আর কোন বিশ্বাসে নেই। নাকি আছে?
মোটেই না। মদ খেলে এক্সিডেন্ট বাড়তে পারে, কিন্তু মদ না খেলে কি এক্সিডেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে? না এক্সিডেন্টের প্রধান কারন মদ? বুঝলাম না। মদের সাথে ধর্মের উদাহরন কোনভাবেই যায় না। মদ হল একটা বস্তু, ধর্ম একটা বস্তু নয়। ধর্ম একটা আইডিওলো্জি। এবং এই আইডিওলো্জিটা আপনাকে মোটিভেট করে কিভাবে তাকে আরো শক্তিশালী করা যায় যেকোন উপায়ে।
আমি যদি ওখানে পরিষ্কারভাবে বলতে না পেরে থাকি তাহলে এখানে আবারও বলছি, ধর্মে প্রকৃত বিশ্বাসী হলে সে তার ধর্মকে বিস্তৃত করার জন্যে বাধ্য হয়ে ধ্বংসাত্বক কাজ করবে। প্রকৃত কথাটা বার বার এজন্যই বলছি, ধর্ম কোন চলমান প্রক্রিয়া নয় বিজ্ঞানের মত যে এতে কোন শেষ কথা থাকবে না। বিজ্ঞানে শেষ কথা নেই বলেই বিজ্ঞানে মতবিরোধ থাকবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, যে যেই বিশ্বাসই করুক না কেন তাতে কিন্তু আমার বা কারোরই কোন সমস্যা নেই। আমার সমস্যা আমাকে কতল করতে এলে। এখন ঐ কতল করা বিশ্বাসকে উৎপাটন করতে কি আপনার কোন আপত্তি আছে? থাকলে অন্য কথা, আর যদি না থাকে তাহলে বিশ্বাসের মাধ্যমে যাতে এসব কাজ না হয় তার অন্তত একটা উপায় আপনি দেখিয়ে দিন।
কোন পুস্তক যারা না মানে আমি তাদেরকেই বুঝিয়েছি।
মানুষের চিন্তার বৈচিত্রকে মেনে নিতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। বরঞ্চ সেটাই সবার কাম্য। তবে আমার সমস্যা হল, আপনি বোমাবাজীকেও বৈচিত্রের নামে
সমাজে রাখার পক্ষে, আমি বিপক্ষে। 🙂
যাক, এতক্ষন পরে একটা বিনোদনের ব্যাবস্থা করলেন। আফনেরে ধইন্যা। :))
আর শেষের দিকের কথাগুলোর উত্তরতো মনে হয় আগেই দিয়েছি যে, আমার সমস্যা “”ব্যাক্তিস্বাধীনতায় আঘাত, ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ, অমঙ্গল কর্মকাণ্ড, “”সম্বলিত বিশ্বাস নিয়ে। এগুলোকে সমাজ ঝেটিয়ে বের করাই আমার উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে সেই কাজ করা হবে। সূর্যের লেখা থেকে কোটেশন দিয়ে বলা যায়ঃ
তাহলেই হয়তবা এই ফালতু বিশ্বাস উৎপাটিত হতে পারে।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
ভুল। আমার একটা লাইন কোট করে যদি না দেখাতে পারেন, তবে আপনার ভুল স্বীকার করে এই কথাটা তুলে নেবেন। আপনার সাথে যুক্তির তর্ক করতে আসলে আপনি তো মিথ্যা অভিযোগ করে তার্কিককে মোকাবিলা করতে পারেন না।
যা হোক। আমাদের উদ্দেশ্যে কোন পার্থক্য নেই তাই না? বিশ্বাস যাতে আমাকে কতল করতে আসতে না পারে, সেটা নিয়েই আমাদের কন্সার্ন।
ফলে আলোচনার মূল বিষয়টা এখন এটা:
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। এটাই চাই। উপায় নিয়ে আলোচনা হোক।
টু দ্য পয়েন্টে এখন আলোচনা করা চলে তাহলে। মুসলমানের ধর্ম বিশ্বাসের যে মূল কোরান, সেখানে হত্যা, মারামারি, পিটানো এগুলোর কথা বলা আছে। এগুলোর প্রতি নিষ্ঠাবশত মুসলমান এগুলো আমলে উদ্যত হয়। আমাদের উদ্দেশ্য মুসলমান যাতে এগুলো আমল করতে না পারে। মুসলমান যাতে বোমা বুকে লাগিয়ে না আসে, হেনাকে দোররা না মারে, অপররাষ্ট্র পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করার ইন্ধন না পায়।
আপনি আমার কাছে উপায় চেয়েছেন। দেখি কি কি উপায় চিন্তা করা যায়:
ব্যক্তিস্বাধীনতার বিপক্ষতাগুলোকে বিশ্বাসীর সামনে নিয়ে আসা, যাতে সে এগুলোর একটা জাজমেন্টে আসতে পারে। নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতাবিরোধী বিশ্বাসগুলোকে ইভ্যালুয়েট করার প্রয়াশ পায়। এগুলো এখানে করা হচ্ছে। এখন, একটা গোল যেহেতু আমরা সেট করেছি, আমরা অ্যাকশন নেবার সাথে সাথে আমােদর পার্ফরমেন্সও মেজার করতে পারতে হবে। কিভাবে বুঝবো আমাদের গোল অ্যাচিভ হয়েছে?
যখন দেখবো যে মারামারির বাণী দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ আমাকে কতল করতে আসছে না। এটাই মেজার। এটা সত্য হবার সাথে সাথে আমাদের অ্যাকশন নেয়া কার্যত থামা উচিত।
এখন “মারামারির বাণী দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ আমাকে কতল করতে আসছে না” এটা ঘটতে পারে যদি পৃথিবীতে মুসলমান না থাকে। কারণ মুসলমান না থাকলে মারামারির বাণীতে বিশ্বাসী মানুষও থাকবে না। ফলে “পৃথিবীতে মুসলমান নেই”, এই পরিস্থিতির মাঝে “মারামারির বাণী দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ আমাকে কতল করতে আসছে না” এই পরিস্থিতিটা সংযোজিত।
সমস্যা হল, এটা প্রাথমিক গোলের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বড়। এখন এই অপশনটা কেমন যে (ধরুন) মুসলমান তার বিশ্বাস থেকে কোরানের মারামারির বাণীগুলোকে কেবল দূরীভুত করে দিবে, কিন্তু সে অবিশ্বাসী হয়ে উঠবে না। কোরানের মারামারির আদেশগুলো মানতে কেবল সে মৌলিকভাবে অস্বীকার করবে। এই পরিস্থিতিটাতেও কিন্তু আমাদের গোলের মেজার “মারামারির বাণী দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ আমাকে কতল করতে আসছে না” সংযোজিত। ফলে এটা যদি ঘটে, তবে প্রস্তাবনা অনুসারেই আমরা দাবী করতে পারবো যে আমাদের গোল অ্যাচিভ হয়ে গেছে। খেল খতম। এর পরেও যদি আপনি মুসলমানের রেসিড্যুয়াল বিশ্বাসকে উপড়ে ফেলতে চান, সেটা আমাদের নির্ধারিত গোলের নামে করা যাবে না, কারণ আমাদের গোল অ্যাচিভ হয়ে গেছে, এবং আমার কল্পিত পরিস্থিতিটির সংজ্ঞা মতেই মুসলমানের রেসিড্যুয়াল বিশ্বাসে ব্যক্তিস্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক কিছু আর বাকি নেই।
এখন দুটো প্রশ্ন। শেষের পরিস্থিতিটি কি মুসলমানবিহীন পৃথিবীর চেয়ে অর্জন সহজ কিনা? নাকি কঠিন। যেটা সহজ ও সম্ভাব্য, সেই পথই তো নেব। আমি বলব, এটার উত্তর অভিয়াস না। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানবিহীন পৃথিবীর পরিস্থিতিটার টেবিলে “কোরানের মারামারির আদেশ মানতে মৌলিকভাবে অস্বীকার করেও মুসলমান থেকে যাওয়ার” পরিস্থিতিটা একটা বিকল্প হিসাবে মর্যাদা পাবার যোগ্য।
সেক্ষেত্রে ধর্ম উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত ব্যক্তিস্বাধীনতায় আঘাত আসতেই থাকবে, কথাটা আর এক বাক্যে মেনে নেয়ার মর্যাদাপ্রাপ্ত থাকে না।
তাছাড়া, যদি খ্রিস্টান ধর্মের দিকে তাকান তাহলেও মনে হতে পারে যে দ্বিতীয় পরিস্থিতিটা অর্জন প্রথমটার চেয়ে হয়ত সহজ। খ্রিস্টানদের বাইবেলে তো প্রচুর মারামারির কথা বলা আছে। কিন্তু খ্রিস্টানদের যাজকরা তো আর মারামারির আদেশ দেয় না। তাদের কোন পক্ষের ধার্মিকও এখন আর বাইবেল উদ্বুদ্ধ হয়ে কতল করতে আসে না। কারণ খ্রিস্টানের ধর্ম আর পুস্তকের বিশুদ্ধতা নির্ভর না। একসময় ছিল। ফলে, মুসলমানের ধর্ম যে এই মুহূর্তে পুস্তকের বিশুদ্ধতা নির্ভর, তার মানে কিন্তু এই নয় যে পুস্তকের বিশুদ্ধতা খর্বিত হলে তারা আর মুসলমান থাকবে না। তারা ঠিকই একটা ‘সুবিধাবাদী’ বিশ্বাসে স্থিত হবে। সেটাতে যদি ব্যক্তিস্বাধীনতার লংঘন ঘটার ইন্ধন আর না থাকে, মুসলমানের ওই পদের বিশ্বাস নিয়ে আমাদের আর তর্ক কিসে? অর্থহীন এই তো? ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে আমাদের আর তাতে কিছু যায় আসার কথা কি? তারপরেও যদি কথা থাকে সেটা বলতে পারেন। সেটা নিয়েও আলোচনা চলতে পারে। তবে সেটা হবে ব্যক্তিস্বাধীনতার নিমিত্ত ব্যতিরেকে ভিন্ন উদ্দেশ্যে করতে হবে।
@রূপম (ধ্রুব),
মিথ্যা বলার তো প্রশ্নই আসে না। এটা তো আর ব্যক্তিগত আলোচনা না যে মিথ্যা বলে সহজেই পার পেয়ে যাবো। সম্পূর্ণ পাবলিক ফোরামে আলোচনা।
যাই হোক, আপনার কথার জিস্ট ব্যাপারটা আমার কাছে এরকমই মনে হয়েছে। কেন মনে হয়েছে তাও বলছি। আপনি চিন্তার বৈচিত্রতার ভিত্তিতে ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমাজে রাখার পক্ষে( এখানে যে জোর করে বিশ্বাস না রাখার কথা বলা হচ্ছে না সেটা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি)। আপনি একযায়গায় বলেছেনঃ
আমিও এই একই কথা আমার বক্তব্যের শুরু থেকে চিৎকার করে বলে যাচ্ছি। পার্থক্য হল আমি বলেছি তারা প্রকৃত বিশ্বাসী আর আপনি বলছেন তারা নিষ্ঠাবান বিশ্বাসী। আপনার আপত্তির জায়গাটা কি ছিল শুধু ভাষাগত? যদি শুধু ভাষাগত হয়ে থাকে তাহলে একমাত্র যে অনুভুতি আমি প্রকাশ করতে পারি তাহল হতাশা।
আর যদি ভাষাগত না হয় তাহলে এখন আপনি কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে কোরানে হত্যা, মারপিট, পিটানো এগুলোর কথা বলা আছে? একটা স্ট্যন্ডার্ড আপনি ধরে নিচ্ছেন কি? কোন মোল্লার ব্যাখ্যা এটা?
আমি জানি আপনিও মারামারি কাটাকাটি চাননা। কেউই চায় না। কিন্তু আপনার কথায় ‘আমার’ কাছে অন্য ধারনা হয়েছিল। আমি আমার ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি।
পরবর্তিতে আপনি বিশ্বাসকে সমাজে রেখেই কিভাবে তার পূনর্বাসন করা যায় তার উপায় দেখিয়েছেন।
আপনি যখনই বলছেন বিশ্বাসকে মডিফাই করবেন, তারমানে আপনি ধরে নিচ্ছেন যে এর একটা স্ট্যন্ডার্ড আছে। তাই নয় কি? কারন স্ট্যন্ডার্ড না থাকলে আপনি কাকে মডিফাই করবেন, কিসের ভিত্তিতে দেখাবেন বিশ্বাসীদের, যে তোমরা যা বিশ্বাস করছ তা ভুল, সঠিক হল এটা?
বিশ্বাস কোন ললিপপ নয় যে বাচ্চাকে বলব এই কোম্পানিরটা ভালো নয় অন্য কোম্পানিরটা খাও। এখানে বিশ্বাসীদেরকে ললিপপ নিজেই বিশ্বাসীদের মোটিভেট করে।
পায়ে ঘা হলে ঔষধ খাওয়া যায়। কিন্তু গ্যংগ্রিন হলে পা কেটে ফেলতে হয়।
আপনি আপনার নিজেকে বাচাঁতে পারলেই সন্তুষ্ট। আর আমি সামগ্রিকভাবে ব্যাপারটা চিন্তা করেছি এই যা। এছাড়া মনে হয় আমার আপনার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কি বলেন? 🙂
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
ব্যাপার না। আমারই আসলে কথাটা এত সিরিয়াসলি নেয়া ঠিক হয় নি। কথাটা নেহায়েতই ভুল ছিল কিনা। আর আমারও ‘মিথ্যা’ শব্দটা বলা ঠিক হয় নি। এটাতো ভ্রান্তি। এর জন্যে আমিও দু:খিত।
মডিফাই বলতে বর্তমান অবস্থা থেকে মডিফাই বুঝিয়েছি। এর জন্যে স্ট্যান্ডার্ড জানা লাগে না। বিশ্বাসীকে আমি ভুল ঠিক কিছু দেখাবো না। এখন যেটা বিশ্বাস করে সেটাও ভুল, পরে যেটা বিশ্বাস করবে সেটাও ভুল। ওদের জন্যে ঠিকটা কোথা থেকে ধরে আনবে? আমরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী বিশ্বাসগুলোকে ওদের সামনে তুলে ওদের জাজমেন্টকে বিচলিত করা বলবৎ রাখলে ইনশাল্লা ওরা নিজেরা নিজেদের মডিফাই করে নিবে। ভুল থেকে ভুলে। এরকম ব্যক্তিস্বাধীনতার সাথে বিরোধহীন বিশ্বাসের তরিকা মুসলমানদের মধ্যেই বিরাজিত আছে। কিন্তু সেগুলো মোটেও মেইনস্ট্রিম না, এই যা। ওগুলো অর্থহীন হলেও মেইনস্ট্রিম বিশ্বাসের চেয়ে যে ঢের অহিংস, সেটা স্বীকার করতে তো আমাদের আপত্তি নেই। মুসলমানকে সেসবের দিকেও রেফার করে দিতে পারি, বলতে পারি, দেখ কত শান্তিপ্রিয় কথা বার্তা! কত শান্তি ওখানে! কেন শুধু শুধু মারামারি? এগুলো বলার জন্যে ভুল-ঠিকের পথ কিন্তু মাড়াতে হয় না। আর আমরা বিশ্বাস করি না দেখে কি ওগুলো নিয়ে আমাদের বলার হক নেই নাকি? 🙂
এখন বিশ্বাস যদি ললিপপ না হয়, অবিশ্বাসও তো ললিপপ না, তাই না। ওটা খাওয়ানোর চেষ্টা যে ঠিকই করি!
থাক, এবার আপনি কাটাকাটির কথা শুরু কইরেন না। :lotpot:
আরো অস্পষ্ট হয়ে গেল ব্যাপারটা। সামগ্রিক কোন ব্যাপারটা আপনি চিন্তা করছেন যেটা আমি করছি না, বললে ব্যাপারটা স্পষ্ট হত।
@রূপম (ধ্রুব),
বিভ্রান্ত হলাম। স্ট্যান্ডার্ড না ধরে মডিফাই করবেন কিভাবে? আপনার আমার ইচ্ছা সেজন্য?
আপনাকে তো বলতে হবে যে তোমরা যে কাজটা করছ সেটা ভুল, নাকি? আর যখনই আপনি ভুল বলবেন তার মানেই হল আপনি কোন কিছুকে আদর্শ ধরেই এটাকে ভুল বলছেন, তাই না?
শুধু ভুলই নয়, বিপজ্জনকও বটে। এই কথাটাই আমি এতবার বলেও পরিষ্কার করতে পারছি না। আপনি শুধু বলছেন ভুল, আর আমি সাথে বলছি বিপজ্জনক। আমার মাপার স্ট্যান্ডার্ড হল যুক্তি। আর আপনি কোন স্ট্যান্ডার্ড ছাড়াই বলে যাচ্ছেন ওদের বিশ্বাস ভুল।
বলিহারি ভাই আপনার বিপজ্জনক বিশ্বাস সমাজ থেকে ‘বিদায়’ করার প্রক্রিয়া।
আপনার কি ধারনা যারা বোমাবাজী বা সমাজে বিশৃংখলা করছে তারা না
জেনে করছে? তারা বেশ ভালো ভাবেই জানে যে তাদের হাতের ঐ বস্তুটা বিয়ে বাড়িতে ফাটানোর পটকা নয়। ওটা মারলে আওয়াজের সাথে সাথে বেশ ধ্বংস লীলাও হয়। যারা এই কাজ করে তারা আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতায় থোরাই কেয়ার করে। তারা কোন ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। সুতরাং “আমরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী বিশ্বাসগুলোকে ওদের সামনে তুলে ওদের জাজমেন্টকে বিচলিত করা বলবৎ রাখলে ইনশাল্লা ওরা নিজেরা নিজেদের মডিফাই করে নিবে।” এই কথাটা নিছক রোমান্টিসিজম ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না বলে স্বাভাবিকভাবেই দূঃখ প্রকাশ করছি। 🙂
আরেকটা ব্যাপার,
আমি ঠিকঠাক পড়লাম তো নাকি আপনারই টাইপো?? 🙁
অবশ্যই খাওয়ানোর চেষ্টা করব। আমি কি কোথাও বলেছি নাকি বিশ্বাসকে কাউকে খাওয়াতে দিতে আমার সমস্যা আছে।
আমাকে না পিটিয়ে আপনি যত খুশি তত বিশ্বাসের ললিপপ খাওয়ান।
আমি আমার কোম্পানির মাল খাওয়াতে চেষ্টা করব, আপনি আপনারটা। আপনি প্রমান করুন আমারটা ভুল। বিনয়ের সাথেই মেনে নেব। গর্দান নামিয়ে নেব না। গর্দান নামিয়ে নেয়ার সম্ভবনাটা প্রবল বলেই এখন এই প্রডাক্ট কে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চাচ্ছি। এই যা ব্যাপার।
আমার কাছে থাকা অপশন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালোটাকেই আমি নেব। অবশ্যই কারন দেখিয়ে। আমার মনে হয় বেশীরভাগ মানুষ তাই করবে।
বলছি। একটা ঘরে যদি দশজন মানুষ থাকে। তাদের চিন্তা ধারা যদি দশ ধরনের হয় এবং তাদের পরিচালনার জন্যে যদি একটা সাধারন পদ্ধতির দরকার হয় তাহলে আপনার কি মনে হয় দশ ধরনের চিন্তা ভাবনা সেই একটা পদ্ধতির মধ্যে রাখা সম্ভব? যখন কারো কারো চিন্তা ভাবনা আবার কারো সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে? কোনভাবেই না।
আমি ঠিক এটাই বলতে চাচ্ছি। আপনি বলছেন ইসলামে( আলোচনার সুবিধার্থে শুধু ইসলামকেই নিলাম) দাঙ্গা হাঙ্গামা ছাড়াও নাকি আরো বিশ্বাস আছে যেগুলো মোটেই মেইনস্ট্রিম নয়। এখন আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার পছন্দের বিশ্বাসের কথাই বলবেন। কিন্তু সেটা কি শুধুই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেল না? আর এই যে আপনি বলছেন যে ইসলামে দাঙ্গা হাঙ্গামা ছাড়াও বিশ্বাস আছে সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাখ্যা। আপনি যে আয়াত পড়ে দেখতে পাচ্ছেন আল্লার মহিমা সেই একই আয়াত পড়ে কেউ নিচ্ছে জিহাদ করার মন্ত্র। কিভাবে সম্ভব হল এটা? তার মানে এই বিশ্বাস সৃষ্টি করা আয়াতগুলো যতদিন থাকবে ততদিন জিহাদ করা পাবলিকও থাকবে(অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা, কুসংস্কার ইত্যাদি তো আছেই এই ছাইপাশ লেখাগুলোতে)। এখন দেখতে হবে এই ধর্মগ্রন্থগুলোতে এমন কিছু আছে নাকি যা অন্য কোথাও নাই( এটা একই সাথে ঐ ধর্মগ্রন্থগুলোর ঐশ্বরিক দাবীর বিপক্ষেও দৃঢ় যুক্তি)। আপনাকে বলার দরকার নেই, শুধু আছেই না বরঞ্চ খুব বেশী পরিমানেই আছে।
এখন, আমরা যদি একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই( যেখানে লিষ্ট পরিমান আবর্জনা থাকবে) সেখানে আমরা বিশ্বাসকে রাখব কোন যুক্তিতে? আপনি আপনার আগের লেখাতে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাকেই জোড় দিয়েছিলেন। সমাজ তো আপনাকে আমাকে এই দুএকজন নিয়েই হয় না। হয় বিপুল পরিমান মানুষ নিয়ে। সেজন্য কোন কিছু থাকবে নাকি থাকবে না সেটা সামগ্রিকভাবে চিন্তা করেই দেখতে হবে।
আবার বলছি, কোনভাবেই ধরে নিবেন না যে আমি বিশ্বাসকে জোড় পূর্বক অপসারন করব। মোটেও তা নয়।
চিন্তার পার্থক্য থাকবেই। ব্যাপার না। আপনার আমার উদ্দেশ্য একই, পথ আলাদা। যেটা খুবই স্বাভাবিক, সাথে সাথে কাংক্ষিতও বটে। সু্তরাং……. :))
আপানার সাথে আলোচনা করে অনেক ভালো লাগল.
অনেক ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম,
টাইপো না। আমি উচ্চারণেও ‘হ’ লাগাই না, তাই লেখার সময়েও ‘হ’ লাগাই না। 😛
@সাইফুল ইসলাম,
অর্থাৎ আপনি thought crime এর ধারণায় বিশ্বাসী। আপনি এই বিশ্বাসের যৌক্তিক পরিণতি সম্বন্ধে নিশ্চয়ই চিন্তা করেছেন। এটা totalitarianism এর দিকে যাচ্ছে।
@রৌরব,
উনি একটা ‘আদর্শ’ সমাজ চাইছেন:
যেটার জন্যে “বিশ্বাস সমাজে থাকা ক্ষতিকর”।
অনাদর্শ সমাজ (সে যেই মানদণ্ডেই হোক) সহ্য করা না, গেলে সেটা totalitarianism-এর দিকেই গড়াবে। বিশ্বাসী সমূলে উৎপাটন হলে তখন অপ্রকৃত, ভেজাল বা বেসহি অবিশ্বাসী উৎপাটনের প্রয়োজন পড়বে ‘আদর্শ’ সমাজের লক্ষ্যে।
আচ্ছা, thought crime নিয়ে আমেরিকার ভাবসাব কিরকম কিছু জানেন? অবস্থাদৃষ্টে তো মনে হয়, তাদের মধ্যেও এই totalitarianism-এর এলিমেন্ট বিদ্যমান।
@রূপম (ধ্রুব),
বিশেষ কিছুর প্রেক্ষিতে বলছেন কি একথা? totalitarianism-এর প্রবণতা মানুষের মধ্যে অল্প-বিস্তর থাকবেই, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কম বলেই তো মনে হত।
@রৌরব,
ইমেইল, ফোন এসবে আড়িপাতা নিয়ে বলছি। ইসলাম জঙ্গিবাদ, এসব নিয়ে কথা বলতে খুব সতর্ক থাকে দেখি মানুষজন। ইদানিং শুনলাম, কলম্বিয়া না কোন ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে উইকিলিক্স নিয়ে পাবলিকলি আলোচনার ব্যাপারে।
থট ক্রাইম আর ক্রাইম সংঘটনের মধ্যে ব্যারিয়ারটা ঠিক পরিষ্কার না আমার স্বীকার করছি।
আমি যদি বোমা মারি, সেটা ক্রাইম।
আমি যদি বোমা মারার চিন্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াই, সেটা থট ক্রাইম, নাকি? সেটা তো ডিটেক্টেবল না, ফলে সেটা নিয়ে আপাতত কারো মাথা ব্যাথা নেই।
কিন্তু হাউ অ্যাবাউট – আমি ইমেইলে বোমা মারার পরিকল্পনা করলাম? অথবা ব্লগে বোমা মারার আয়াত ছড়ালাম? বা স্বীকার করলাম যে আমি একদিন সুযোগ পেলে বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো।
আমার একটা ছাত্র ছিল (যাকে নিয়ে সচলায়তনে লিখেছিলাম), যে মাদ্রাসায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিল, একদিন মাঠে নেমে জিহাদের পরিকল্পনার কথা বলেছিল এবং সেই সাথে আমার প্রাণাতিপাত হবার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছিল। অনেকে বলেছে আমার নাকি দায়িত্ব বা সুযোগ ছিল ছেলেটাকে পুলিশে সোপর্দ করার। আমার কখনোই মাথায় আসে নি, ছেলেটা কোন অপরাধ সংঘটন করেছে। আলসেমি আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা তো ছিলই। কিন্তু আসলে কি এটা ঠিক? এখানে থট ক্রাইম আর ক্রাইমের ব্যারিয়ারটা কোথায়?
@রূপম (ধ্রুব),
এটা আমার কাছেও পুরো স্পষ্ট না, কিন্তু স্বাধীনতাবাদী হিসেবে আমি ব্যারিয়ারটি ঠেলে সুস্পষ্ট অ্যাকশনের কাছে নেব, শুধু মাত্র ভাবাভাবির কাছে নয়। আমার মটো: যেসব ক্ষেত্রে সন্দেহ আছে, সেসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতাকে বেছে নেয়াই শ্রেয়। এটা অবশ্য স্বীকার করব যে সম্ভাব্য সব scenario আমি think through করিনি, কাজেই নিশ্চয়ই কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে আমাকে মাথা চুলকাতে হবে। আপনার তিনটা উদাহরণের মধ্যে শুধু প্রথমটি: “ইমেইলে বোমা মারার পরিকল্পনা” আমাকে একটু ভাবাচ্ছে। অন্য দুটির স্বাধীনতার পক্ষে আমি। ইমেইলের ক্ষেত্রেও “পরিকল্পনা”-টি মোটামুটি ভালরকম ডিটেইলের পর্যায়ে না পৌঁছানে নাক গলাতে নারাজ। স্রেফ সাধারণভাবে “আসুন সব বোমা মেরে উড়িয়ে দিই” মার্কা ইমেইল বৈধ হওয়া উচিত। আপনার ছাত্রের ক্ষেত্রে “সোপর্দ” করার মত কিছুই ঘটেনি, যদি না সে আপনাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে ভুল বলেননি, প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট প্রভৃতির মধ্যে ওরকম একটা ধাঁচ তো আছেই।
এটা অবশ্য স্রেফ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফল হতে পারে। সেটা ভাল না মন্দ সে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু এটা আইনী স্বাধীনতার ব্যাপার নয়।
এটা তো চিন্তাজনক। কোথায়, পারলে একটু বের করুন তো, দেখি।
@রৌরব,
http://www.huffingtonpost.com/2010/12/04/state-department-to-colum_n_792059.html
@রূপম (ধ্রুব),
ভাল জিনিস দেখালেন। এই সরকারী ছাগলটা কে, জানতে ইচ্ছা করে :)। কলম্বিয়ার পরবর্তী অবস্থান অবশ্য আশাব্যঞ্জক। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এব্যাপারে বেশ ভাল, আমার অভিজ্ঞতায়, যদিও ডানপন্থীরা অভিযোগ করে যে বড় বড় “লিবারাল” বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তাদেরকে কথা বলতে দেয়া হয় না।
@রৌরব,
স্বাধীনতার সংজ্ঞা কী আপনার কাছে? 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। “বাংলাদেশের স্বাধীনতা” আর “ব্যক্তি-স্বাধীনতা” কাছাকাছি ধরনের জিনিস হলেও একেবারে এক নয়।
আমার নিজের কাছে ব্যক্তি-স্বাধীনতার ধারণা আসে সংশয়বাদ থেকে। আমাদের জ্ঞান অত্যন্ত সীমাবদ্ধ, কাজেই “আমরা এতই বেশি জানি যে অমুক-অমুক বিষয় নিষিদ্ধ করতে পারি” জাতীয় যে কোন মন্তব্যের প্রতি আমি ভীষণ ভাবে সন্দিহান, এমনকি শত্রুভাবাপন্ন। এর ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে (যেমন খুন করার অধিকার দেয়ার পক্ষে আমি নই 🙂 ), কিন্তু মোটের ওপর আমার defaut অবস্থান সন্দেহবাদের, অর্থাৎ স্বাধীনতাবাদের অবস্থান। বিশেষত মত প্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আমি রীতিমত গোঁড়া।
@রৌরব,
:))
@রৌরব,
ব্যাপারটা পরিষ্কার হল না মনে হয়। তার মানে কি স্বাধীনতা বলতে আপনি বোঝেন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন নাকি কিছু কিছু ব্যাপারে নাক গলানোও সম্ভব হবে? যদি নাক গলানো সম্ভব হয় তাহলে কোন কোন ব্যাপারে? 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
কোন কোন ব্যাপারে নাক গলানো সম্ভব তার লিস্ট বোধহয় দিতে পারব না, তবে উদারপন্থী গণতন্ত্রে সাধারণত যেসব আইন-কানুন দেখা যায় তার সাথে মোটামুটি একমত (ধরুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। তবে নীতিটি হল: আইনের সংখ্যা ও প্রয়োগ যতটা সম্ভব কম রাখা। মূলত, স্বাধীনতা রক্ষা করতে যতটুকু স্বাধীনতা ছাড় দেয়া প্রয়োজন, সেটুকু। পেইনের “সাধারণ জ্ঞান” লেখাটিতে এ ব্যাপারটা একটু আলোচিত হয়েছে।
এখন, “স্বাধীনতা রক্ষা করতে স্বাধীনতা ছাড় দেয়া” এটার মধ্যে একটা paradox আছে। সেটার ওষুধ আমার মতে স্রেফ দুরকম হতে পারে। এক হচ্ছে, Ayn Rand ধরণের চরম libertarian অবস্থান গ্রহণ করা, যারা কোন ধরণের আইন-কানুনেই বিশ্বাস করেনা। আমার মতে এই অবস্থান বাস্তবে প্রয়োগ সাধ্য নয়। দ্বিতীয় ওষুধ, বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে আলাদা ভাবে বিশেষ মর্যাদা দেয়া এবং রক্ষা করে চলা। কারণ, আইনের ফলে যে স্বাধীনতাটুকু হৃত হয়েছে সেটি যদি ভুল হয়ে থাকে, বা স্বাধীনতা-হরণের প্রক্রিয়াটি যদি ক্রমশ খারাপ দিকে যেতে থাকে, তাহলে তার বিরূদ্ধে শেষ দুর্গ হিসেবে বাক-স্বাধীনতা টিকে থাকে। সোজা কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “প্রথম অ্যামেন্ডমেন্ট”-এর অবস্থান। বাক-স্বাধীনতার বাইরে অন্যান্য স্বাধীনতার ব্যাপারে আমি অনেকটাই ছাড় দিতে রাজি আছি, রাজস্ব আদায় বা সরকারের social security-র ব্যবস্থা করা আমাকে খুব একটা বিরক্ত করে না।
@রৌরব,
বাহ্, কি সুন্দর করে বলেন!
আমার মতো পামর যদি ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রেমে পড়তে পারে, বাউলের দেশের বাঙালিরা নিশ্চয়ই এর প্রেমে পড়বে! পেইন থেকেই শুরু করব নাকি? প্রথম পাঠটা ধরায়ে দেন। আপনিও আবার লিখুন।
@রৌরব,
আলোচনা করার ইচ্ছা ছিল, তবে মনে হয় এই পোষ্টের বিষয়বস্তুর বাইরে চলে যাচ্ছে ব্যাপারটা। 🙂
ব্যাপান্না, আরেক সময় হবে। :))
@রূপম (ধ্রুব),
এখানে ‘বিশ্বাস উপড়ে ফেলা’ কথাটা মানানসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমরা যেন জোরপূর্বক বিশ্বাসী মানুষদেরকে তাদেরকে বিশ্বাস ত্যাগ করার জন্য বলছি! আপনি নিজেই পরবতীর্তে ব্যাক্তিস্বাধীনতার কথা বলেছেন। আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে দেখেই আমি বিশ্বাসীদের বিশ্বাস নিয়ে হাজারটা কথা বলতে পারি, আমার লেখার মাধ্যমে আমি দেখাতে পারি বিশ্বাস জিনিসটা কতটা পশ্চাদমুখী, কিন্তু কখনোই বিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বাস ত্যাগ করতে বাধ্য করতে পারি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘বিশ্বাস উপড়ে ফেলতে’ চাই না, আমি শুধু বিশ্বাসের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বিশ্বাসীদের চোখের সামনে তুলে ধরতে চাই; একসময় তারা নিজেরাই তাদের বিশ্বাস উপড়ে ফেলবে তাহলে।
মদ খাওয়া আর বিশ্বাস ব্যাপার দুটোকে একই মাপদন্ডে মাপা কি ঠিক হচ্ছে? আপনার কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আপনি যেকোন প্রকার বিশ্বাসের বিরূদ্ধে কথা বলার বিপক্ষে। দেখুন, বিশ্বাস ব্যাপারটা শুধু ধর্মীয় না, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকও হতে পারে। আপনার কথা মেনে নিলে বলতে হয়্ আমাদের নাৎসিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের বিরূদ্ধেও কিছু বলা উচিত নয়। বিশ্বাস করা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার- সুতরাং একজন বিশেষ ব্যক্তি নাৎসিবাদে বিশ্বাসী হতেই পারে, এতে কার কি বলার আছে?
বিশ্বাসীর অবশ্যই বিশ্বাসের অধিকার আছে, আর আমাদেরও অধিকার আছে তার বিশ্বাসকে আক্রমণ করা (শারীরিকভাবে না অবশ্যই :)) )। আর যখন আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে বিশ্বাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষকে সংকীর্ণ এবং উগ্র পন্থার দিকে নিয়ে যায়, তখন বিশ্বাসের বিরূদ্ধে লড়াই করাটা শুধু যৌক্তিক-ই নয়, একরকম কর্তব্য হয়ে যায়।
@সূর্য,
এই অবস্থানটা চমৎকার!
অথবা তারা বিশ্বাসের ক্ষতিকর প্রভাবগুলোই কেবল উপড়ে ফেলবে। আপনার প্রস্তাবনা অনুসারে বিশ্বাসী যদি ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করেও একজন বিশ্বাসীই থেকে যায়, তার বিশ্বাসের বিপক্ষে আপনার আর বলার কিছু থাকে না।
আপনি বলেছেন –
এই কথাটাতে পাপকে পুরোপুরি ছুঁড়ে ফেলার জন্যে ধর্মকে পুরেপুরি ছুঁড়ে ফেলার টার্গেট করছেন না কি? হেনার ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধের জন্যে পাপ ধারণা ছুঁড়ে ফেলা একটা বিশাল মাপের আহ্বান। পাপ ধারণার সহাবস্থানে হেনা ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ কেন অসম্ভব, সেটা আলোকপাত করেন নি। এ কারণে, পদ্ধতি হিসেবে এটাকে আমার মশা মারতে কামান দাগা মনে হয়েছে।
কথা বলার বিপক্ষে কিভাবে হলাম? বিশ্বাস যখন কারোই ব্যাক্তিস্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক না, সেক্ষেত্রেও বিশ্বাসহীন সমাজ কামনা করার যুক্তি বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জানতে চাইছি। আপনি ছুঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন, তাই আমিও বলছি, আপনি মানুষের একটা বিশ্বাসকে কিভাবে ছুঁড়ে ফেলেন? আপনি যদি বলেন আপনি ব্যাক্তিস্বাধীনতার বলে একথা বলেছেন, আমিও প্রশ্নটা ব্যাক্তিস্বাধীনতার বলেই করেছি। কোনো কথা বলার বিপক্ষে তো কিছু বলা হচ্ছে না। আমরা সবাই এখানে কথা বলছি ব্যাক্তিস্বাধীনতার বলে। ফলে সেটার আলাপ অবান্তর। আপনার কথাকে যখন প্রশ্ন করছি, তার মানে আপনার কথাটার পেছনে জোরালো যুক্তির দাবী করছি। যুক্তি দাবী করলে কি কন্ঠরোধ করা হয় নাকি? আরো আরো যুক্তি দেখান, বিশ্বাস কেন থাকাটা সমস্যার।
বলবেন না, কেন? অবশ্যই বলবেন। আপনার বলার অধিকার নিয়ে তো প্রশ্ন করা হয় নি? যথেষ্ট যুক্তি ছাড়া নাৎসিবাদের বিপক্ষে কথা বলা হলে সেখানেও যুক্তি চাওয়া হবে। যুক্তি জানা থাকলে দিতে তো সমস্যা নেই, নাকি?
খুব স্পষ্ট হলো না যে বিশ্বাস মাত্রই সমস্যাজনক। কোনকিছু সমস্যা হলেও সেটা ঠেকানো কর্তব্য হয়, এই কথা নিয়েও দ্বিমত আছে। তাছাড়া, আমার আশেপাশে বহু মানুষ বিশ্বাস নিয়ে ঘোরাফিরা করছে। ব্যাক্তিস্বাধীনতার সাথে তাদের কিছুই সাংঘর্ষিক না। তাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা কেন যৌক্তিক সেটা যদি না দেখাতে পারেন, তবে আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে বিশ্বাসমাত্রই সমস্যাযুক্ত কথাটা ঠিক না। হয়তো আরও নির্দিষ্ট কিছু বোঝাতে চাইছেন।
কথা খুব সত্য।
লেখাটা ভালো হয়েছে। এমনি আরো লেখা দরকার।
@আবুল কাশেম,
ধন্যবাদ!!!!!! :))
@সূর্য,
ধর্মের পবিত্র দৃষ্টিতে ভালবাসা দন্ডণীয় মহাপাপ।ভালবাসার পাপে পাপীদের মৃত্যুদন্ড ও দোররাঘাতের মত মহান বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে মহান ধর্মগুলোতে।কিন্তু বহুবিবাহের মত ঘৃণ্য প্রথাকে বেশ উচ্চমার্গের মাহান ব্যপার হিসাবে প্রচলিত প্রায় সব ধর্মগ্রন্থেই উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।কয়েকটি ধর্মে অবশ্য আইন করে বহুবিবাহ বাতিল করা হয়েছে।কিন্তু সে ধর্মবিরোধী আইন প্রণয়ন করতে মরণপণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল সাধারন মানুষকে।সে আইন প্রণয়ন করেছিল সাধারন মানুষ কোন প্রেরিত পুরুষ নয়।সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রেরিত পুরুষদের মাধ্যমে যে আইনগুলো প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেগুলো আর মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়।
বাংলাদেশে ৯০% আয়করের আওতাযোগ্য ব্যক্তি আয়কর প্রদান করেন না । কিন্তু সরকারী রাজস্বের টাকার হিসাব সবাই চায় যেখানে তাদের কোন হিস্যা নেই । সামাজিকভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়াটা অপরাধ বলে গন্য না করে ‘অধিকার’ ভাবা হয় । জনগনের টাকায় পড়ালেখা করে দিনে এক লক্ষ টাকা আয় করা ডাক্তারদের কাছে আয়কর চাইলে তারা কর্মবিরতি পালন করেন , এদিকে রোগীর অবস্থা মৃত্য প্রায় ।
নিজেরা বাসায় কাজের মেয়েকে প্রায় ক্রীতদাসের মত খাটিয়ে নারী-শিশু অধিকারের জন্য মুখে ফেনা এনে দেয়ার মানুষ আমাদের আশেপাশেই আছে।
কি আর বলবো ? অন্যের পাপ আর অপরাধ নিয়ে ভাবতেই মানুষ বেশী ভালোবাসে।নিজের বেলায় সবসময় ষোল আনা (@)
@সংশপ্তক,
হুমম। অন্যের বা নিজের ‘পাপ’ নিয়ে ভাবার কোন দরকারই নেই, কিন্তু অপরাধের ব্যাপারে এরকম উদাসীনতা তো চলতে দেওয়া যায় না।
@সূর্য,
এটা বাংলাদেশের মত আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে চলতেই থাকবে । কেন? এজন্য এখানকার অপরাধের সামাজিক ডাইনামিক্সটা বোঝা দরকার। জানেন নিশ্চয়ই যে , ইংরাজীতে wag the dog বলে একটা কথা আছে । এখানে কুকুর = রাষ্ট্র এবং লেজ মানে সমাজ । কুকুর লেজ নাড়াবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে লেজ (মানে সমাজ) কুকুরকে নাড়ায় । এই ডাইনামিক্সটা প্রতিটা আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজে দেখা যায় যা থেকে উত্তরনের জন্য সামাজিক বিবর্তনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই।
@সংশপ্তক,
কথা সত্যি, কিন্তু তাই বলে কি আমরা কিছু না করে দর্শকের মত সামাজিক বিবর্তন কখন হয় সেটার আশায় বসে থাকব?
@সূর্য,
বসে থাকবো কেন ? আপনি আমি যে এসব জিনিষ আলোচনা করছি তা ঐ সামাজিক বিবর্তনেরই অংশ। আপনার আমার মত লোক ধীরে ধীরে সম্পূর্ন জনগোষ্টীকে প্রতিস্হাপিত করবে এবং তখনই বিবর্তনটা খালি চোখে ধরা পরবে।
বিবর্তন বিপ্লবের মত ভোঁতা একটা বিস্ফোরণ নয় , বরং একটা চলমান প্রক্রিয়া যেটাকে ইচ্ছে করলেই কেউ বদলাতে পারে না। সফল বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফেরত যাওয়ার উদাহরণ ভুঁড়ি ভুঁড়ি দেয়া যায়।
@সংশপ্তক,
সহমত।
@সংশপ্তক,
রাষ্ট্র আর সমাজ নিয়ে বলেছেন বটে। আপনার শিক্ষক হলে নিয়ম ভঙ্গ করে ১০০% তে ১০০% দিতাম।
বিবর্তন না সামাজিক বিপ্লব?
অপেক্ষায় থাকবার মানুষের সংখ্যা (আমি নিজেও অন্তর্ভুক্ত) বেশি বলেই কালো টাকার সাদা মালিক:clap
@স্বপন মাঝি,
কি যে বলেন ? এটা শুনলে আমার নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের আব্দার এবং বিশেষ করে মাউন্ট অলিম্পাসে বসে থাকা ‘দেবীর্’ তদবীর পূরন করতেই আমার বারোটা বেজে যাবে। :))
সূর্যকে যা বললাম , বিবর্তন বিপ্লবের মত ভোঁতা একটা বিস্ফোরণ নয় , বরং একটা চলমান প্রক্রিয়া যেটাকে ইচ্ছে করলেই কেউ আর বদলাতে পারে না। সফল বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফেরত যাওয়ার উদাহরণ ভুঁড়ি ভুঁড়ি দেয়া যায়। (@)
@সংশপ্তক,
পুরোপুরি একমত। বিপ্লব-টিপ্লব দিয়ে সমাজের আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। যা হওয়ার একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার (সামাজিক বিবর্মতন) মধ্য দিয়েই হবে।
আসলে ইতিহাসের কোন বিপ্লবকেই কি সফল বলা যায়? প্রতিটা বিপ্লবইতো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে।
১১ বছরের মেয়ে প্রেগনেন্ট!কারণ, মাদ্রাসার হুজুর(৬০)…সে এই ঘটনা স্বীকার করেছে বলে সালিসে খুব উত্তম ব্যাবস্থা করেছে!তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।মেয়ের বাবা এটা মানেনি এবং মামমা করেছে বলে এলাকার লোক অসন্তুষ্ট!তাদের ধারণা এতে ওই শিক্ষকের ক্ষতি হবে!আরে নর্দমার কীটেরা ১১বছরের মেয়েটার ক্ষতি তোরা দেখসনা?শালা বেজন্মার দল,তোদেরকে জানোয়ারের বাচ্চা বলে জানোয়ারের অপমান করি কেন?তারা তো অপ্রয়োজনে মানুষের ক্ষতি করে না!অমানুষের ঝাড়!!!
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-02-08/news/129901
http://www.prothom-alo.com কিছু অংশ তুলে দিলামঃ
//অভিযুক্ত আবদুল জলিল এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি যেভাবেই ঘটেছে, বিয়ের মাধ্যমে তার সমাধান হয়ে গেছে। এখন মেয়ের বাবা এ বিয়ে মেনে নিলেই হয়। মেয়ের বাবা এলাকার সালিস বৈঠক না মেনে আদালতে মামলা করেছেন, এটা তাঁর জন্য ক্ষতির কারণ হবে।’ বিয়ের কাবিন হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জলিল বলেন, ‘কাবিনে আমি স্বাক্ষর দিয়েছি, মেয়ের স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।’
গভর্নিং বডির সদস্য আবদুর রব খাঁ বলেন, ‘আমরা মাদ্রাসা কমিটি ও এলাকাবাসী বসে মেয়েটির বিয়ে পড়িয়েছি। কিন্তু মেয়ের বাবা আমাদের সিদ্ধান্ত না মেনে আদালতে মামলা করেছেন। এতে ওই শিক্ষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।’//
এখানেই দেখুন ১৪ বছরের হেনাকে ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে মারা হয়েছিল গ্রাম্য সালিসে অথচ জলিল পিশাচটাকে দেয়া হল একটা কঁচি বৌ!!! সালিসের বিচারে!!!
একবার আমার এক ভাইয়ার সাথে আলাপ করছিলাম মেয়েদেরকে পাথর মারার ব্যাপারে…সে বলল এটা জরুরি কারণ মেয়েরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়!! আমি যখন বললাম ছেলেদের ক্ষেত্রে কেন এমন হয়না, আমতা আমতা করতে শুরু করল। আমি যখন বললাম মানুষ ইচ্ছে হলে ভালবেসে যৌনসম্পর্ক করতেই পারে পছন্দমত, এটা স্বাভাবিক, তখন তিনি আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালেন যেন আমি কত্ত বড় পাপ কথা বলেছি। অথচ এই এরাই গোপনে সব করে বেড়াবেন, মুখে লেকচার দেবেন পাপ-পূণ্য নিয়ে আর টাকা হলে শেষ বয়সে হজ্ব করে শিশুর মত পবিত্র হয়ে ফিরে আসবেন।
@লীনা রহমান,
পাপের এত জনপ্রিয়তার সাথে পুরুষতান্ত্রিকতার একটা সম্পর্ক রয়েছে। দেখা যায়, পাপের শাস্তি মেয়েদেরকেই বেশিরভাগ ভোগ করতে হয় (এমনকী অধিকাংশ সময়ে সরাসরি পাপ না করা সত্ত্বেও)। তাই পাপের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি না ঘটা পর্যন্ত নারী স্বাধীনতার ব্যাপারটাও একটা দূরাশাই থেকে যাবে।
@লীনা রহমান,
চুরির শাস্তি যদি হয় হস্তচ্ছেদন, তাহলে ধর্ষণের শাস্তি কি হওয়া উচিত? ধর্মে বিয়ের বয়সের কোন সর্বনিম্ন সীমারেখা নেই।বাল্যবিবাহ সেখানে খুবই আদরনীয় ব্যপার।সেটাও কি ধর্ষন নয়?ছোট্ট একটি অবুঝ শিশুকে বিয়ের নামে বৈধ করে নিয়ে তাকে ধর্ষন করা কতটুকু অমানবিক?
@তামান্না ঝুমু,
অপরাধের প্রতি সমাজের মানুষদের অবিশ্বাস্যরকম উদাসীনতাই এরমক জঘণ্য অমানবিকতাকে উসকে দিচ্ছে সন্দেহ নেই।
@লীনা রহমান,
এইটাই যে ১০০% ইসলামী পন্থা। যতখুশী পাপ করে যাও। বয়সের শেষে হজ্জ করলে সমস্ত গুনাহ মাপ।
এর চাইতে ইসলামে আঁকড়ে থাকার বড় প্রলোভন আর কি হতে পারে?
@লীনা রহমান, আপনার মত ধর্মের আবদ্ধ জীবন থেকে বেড়িয়ে আসুক আমাদের দেশটা।খুব ভাল লেগেছে…
ভাল লাগল। একটি ব্যাপার উল্লেখ করতে চাই। আধুনিক সমাজে আইনের সীমাবদ্ধতার ব্যাপারটাও একটা বৈশিষ্ট্য যা অনেক প্রাক-আধুনিক সমাজ থেকে তাকে আলাদা করে। অর্থাৎ, অনেক সম্ভাব্য “মন্দ” জিনিসও আইনসম্মত, আশা করা হয় আইন নয়, অন্য সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেসব জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ধর্মে ও অনেক প্রাক-আধুনিক সমাজে পরিস্থিতিটা অনেক বেশি সাদা-কালো, মাঝামাঝি বলে কিছু নেই।
@রৌরব,
যেসব জিনিস ‘আইনসম্মত’ সেসব জিনিসের নিয়ন্ত্রণে রাখার আর কি দরকার? :-s
@সূর্য,
আইনসম্মত মানে এটুকুই যে রাষ্ট্রের coercive শক্তি দিয়ে সেটিকে নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন নেই, বা করলে উল্টে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু আইনসম্মত জিনিস আমার পছন্দ না হতে পারে, এবং সেটিকে আইনের আওতার মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও আইনসম্মত। যেমন আমি বলতে পারি, যেসব দোকান দেশীয় পণ্য রাখবে না সেখানে আমি বাজার করব না, এবং অন্যদেরকেও একই কাজে উৎসাহিত করবার জন্য লিফলেট বিলি করব।
একমত। আরো লিখুন এমন লেখা।
@নিটোল,
ধন্যবাদ। :))
পুরো লেখাটা পড়লাম। পাপপূণ্যের ব্যাপারটা ধর্মের সাথে অঙ্গা-অঙ্গিভাবে জড়িত একটি বিষয়।অযৌক্তিক পাপবোধকে প্রকট করে তোলে র্ম।
@সিরাজুস সালেকীন,
হুমম, সেটাই। ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।