ভূমিকা: আসন্ন ডারউইন দিবস উপলক্ষে আমার ইচ্ছা ছিলো বিবর্তনের উপর একটি লেখা প্রকাশ করার। তবে ব্যস্ততা এবং সময় স্বল্পতার কারণে ইদানীং লেখা তো পরের কথা অন্যদের লেখা পড়ারও সময় হয়ে উঠছে না। তাই মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আগে অন্যত্র প্রকাশিত, যখন আমি মুক্তমনায় লেখা শুরু করিনি, একই শিরোনামের এই লেখাটিতে আরও বেশ কিছু তথ্য সংযোজন করে এবং লেখাটিকে আরেকটু ঘষে মেজে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য এখানে প্রকাশ করলাম। তবে ডারউইন দিবসের আগেই কেন? কারণটা হল ঐ সময় ব্লগের হেভিওয়েট লেখকদের ভীড়ে আমার মত চুনোপুটির লেখা হয়ত কারও চোখে পরবে না সেই ভয়ে। আশা করো লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
——————————————————————-
বিংশ শতাব্দীর শেষ কয়েক দশকে ভূ-বিজ্ঞানের (Earth Science) অন্যতম বিস্ময় ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসের একদম শুরুর দিকেই যে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিলো এ ব্যাপারটি। ১৯৫০ এর দশকেও ভাবা হত “প্রাণের” বয়স ৬০০ মিলিয়ন বছরের বেশী নয়। কিন্তু ৭০ এর দশকের মধ্যেই কিছু বিজ্ঞানী তা ২.৫ বিলিয়ন বছরের বেশী বলে ভাবতে শুরু করেন। আর বর্তমানে বিজ্ঞানীদের তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী ৩.৮৫ বিলিয়ন বছরের হিসাবটা বিস্ময়কর ভাবেই অনেক তাড়াতাড়ি ছিলো বলতে হয়। পৃথিবীর বহির্ভাগ শক্তই হয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন বছর আগে।
প্রাণের উদ্ভবের পিছনে যে ঘটনাই থাকুক না কেন সেটা হয়েছে মাত্র একবারই। আর এটাই সম্ভবতঃ জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচাইতে অভূতপূর্ব ঘটনা। যা কিছুই বেঁচে আছে বা কোন একদিন বেঁচে ছিলো তার শুরুটা হয়েছিলো এক এবং অদ্বিতীয় প্রাগঐতিহাসিক স্পন্দন থেকে। অকল্পনীয় সূদুর অতীতের কোন এক মুহূর্তে কিছু রাসায়নিক পদার্থ যুথবদ্ধ হয়ে নড়াচড়া শুরু হয়। খাদ্যের কিছু পুষ্টি শোষন করে স্বল্প কিছু সময়ের জন্য শান্তভাবে স্পন্দিত হয়ে অস্তিত্ব ধারণ করে। এই একই ঘটনা হয়ত আগেও বহুবার ঘটেছে তবে রাসায়নিক পদার্থের এই নির্দিষ্ট জোটটি আরেকটি অসাধারণ কাজ করে ফেলে। এটা নিজেকে বিভাজিত করে একজন উত্তরাধিকার সৃষ্টি করে ফেলে। একটি ছোট্ট বংশানুগতির গুচ্ছ এক জীবন্ত সত্ত্বা থেকে আরেক জীবন্ত সত্ত্বায় বাহিত হলো। তারপর থেকে এটা আর কখনই থেমে থাকেনি। সেই বিশেষ মুহূর্তটাই ছিলো আমাদের সবার সৃষ্টির মূহূর্ত। জীববিজ্ঞানীরা সেই মুহূর্তটিকে বা ঘটনাটিকে বলে থাকেন The Big Birth.
পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন, যে কোন প্রাণী, উদ্ভিদ, পোকা-মাকড়, বা ক্ষুদ্র তরলীয় কিছুর দিকেই তাকাই না কেন, যদি তা জীবন্ত হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই প্রাণের এক অভিন্ন অভিধান ব্যবহার করে। জানে অভিন্ন সংকেত। সমস্ত “প্রাণ” আসলে অভিন্ন। আমরা সবাই বংশানুগতির অভিন্ন কৌশলের ফলাফল যা প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এমন ভাবে চলে আসছে যে যদি কোন মানুষের জিনের নির্দেশনার ক্ষুদ্র একটি অংশ নিয়ে কোন ত্রুটিযুক্ত এককোষী ছত্রাকে জোড়া লাগিয়ে দেই তবে সেই এককোষী ছত্রাকটি নির্দ্বিধায় সেই নির্দেশানকে এমন ভাবে কাজে লাগাবে যেন সেটা তার নিজেরই অংশ। সত্যি করে বলতে গেলে এটা আসলে তার নিজেরই।
কেমন ছিলো সে সময়কার পৃথিবীর পরিবেশ? সেই সময়কার পরিবেশ যে আমাদের কাছে অপরিচিত ছিলো তাতে কোন সন্দেহ নাই। আগ্নেয়গিরিরা ছিলো ভীষনভাবে সক্রিয়। সাগরের রঙ ছিলো তামার মত লালচে এবং উত্তপ্ত। আকাশের রঙটাও ছিলো লালচে। অগভীর জলাশয় গুলো ছিলো ব্যাকটেরিয়াচ্ছন্ন স্ট্রমাটোলাইট দ্বারা পরিপূর্ন। কোনভাবেই এমন একটি পরিবেশকে প্রাণের সহায়ক পরিবেশ হিসাবে ভাবা যায় না। কারও কারও মতে পৃথিবীর পরিবেশ ছিলো অনেক শীতল কারন সূর্য্যটা তখন অনেক দূর্বল ছিলো। বায়ুমন্ডলের অনুপস্হিতিতে অতিবেগুনি রশ্মি অনুদের যে কোন ধরণের বন্ধনকে ভেঙে দিত খুব সহজেই। কোন অর্থেই সেই পরিবেশটা প্রাণের সহায়ক ছিলো না। কেউ যদি টাইম মেশিনে করে সেই পুরোনো আর্কিয়ান সময়ে যেয়ে উপস্হিত হয় তবে নিশ্চিতভাবেই তড়িঘড়ি করে সে আবার টাইম মেশিনের ভেতরে ঢুকে যাবে। আজকের দিনে মঙ্গলগ্রহে যে পরিমান অক্সিজেন আছে পৃথিবীতে তাও ছিলো না। হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ন ছিলো পৃথিবী। সেই গ্যাস এতটাই তীব্র ছিলো যে তা যে কোন ধরণের কাপড় কিংবা চামড়া ফুটো করে দিতে সক্ষম ছিলো। বায়ুমন্ডলের এই রাসায়নিক মিশ্রণ ভেদ করে খুব কম পরিমাণ সূর্য্যের আলো ভূপৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারত। যে অল্প পরিমাণ দেখা সম্ভব ছিলো, যদিও দেখার কেউ ছিলোনা, সেটাও সম্ভব হতো ঘন ঘন উজ্জ্বল ব্জ্রপাতের কারণে। সংক্ষেপে, এটি ছিলো পৃথিবী তবে সে পৃথিবীকে আমরা নিজের বলে কখনও চিনতে পারতাম না।
আর্কিয়ান সেই পৃথিবীতে বছর ঘুরে প্রথম জন্মদিন পালন করা হতো না প্রায় কাররই। দুই বিলিয়ন বছর ধরে শুধু ব্যাকটেরিয়া জাতীয় প্রাণীদের অস্তিত্বই ছিলো বিদ্যমান। প্রথম বিলিয়ন বছরের কোন একসময় সায়ানো ব্যাকটেরিয়া বা সবুজাভ নীল এলজিরা কেমন করে যেন সমুদ্রের পানিতে অগাধ পরিমানে বিদ্যমান থাকা হাইড্রোজেন ব্যবহার করা শিখে ফেলে । এরা পানি শোষন করে তার থেকে হাইড্রোজেন রেখে দিয়ে বর্জ্য হিসাবে অক্সিজেন ছেড়ে দিতে শুরু করে। আর এটা করতে যেয়েই আবিষ্কার করে ফেলে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানী লীন মারগুলিস এবং কার্ল সেগানের মতে কোন সন্দেহ ছাড়াই প্রাণের ইতিহাসের সালোক সংশ্লেষনের আবিষ্কার হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন মেটাবলিক আবিষ্কার। আর এটা আবিষ্কৃত হয়েছিলো কোন উদ্ভিদের দ্বারা নয় বরং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা।
আমরা অবাক হই এই ভেবে যে, পৃথিবীর পরিবেশ প্রাণের বিকাশের জন্য কতটাই না উপযোগী! অবাক হই এই ভেবে যে, অক্সিজেন ছাড়া হয়ত প্রানের সৃষ্টি কখনো সম্ভব হত না। তবে আসল ঘটনা হলো অক্সিজেন নয় কার্বনের কারনেই প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানী পল ডেভিস লিখেছিলেন, “যদি কার্বন না থাকত তবে আজ আমরা প্রাণকে যেভাবে জানি সেটা কোনদিনই সম্ভব হত না। সম্ভবতঃ কোন ধরণের প্রাণই নয়।” আজকে আমাদের কাছে পৃথিবীর পরিবেশ যে আমাদের জন্য এতটা উপযোগী মনে হয় তার বড় একটা কারণ হলো পৃথিবীর আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিয়ে আমরা বিবর্তিত হয়েছি। আসলে আমাদের অবাক হওয়া উচিৎ এই ভেবে যে আমারা কিভাবে এই পরিবেশে টিকে আছি? আজকে যদি ভিনগ্রহ থেকে কোন অতিথী পৃথিবীতে আসে তবে হয়ত তারা খুবই অবাক হবে এই ভেবে যে তাদের জন্য খুবই বিষাক্ত একটা পরিবেশে আমরা কিভাবে বসবাস করছি। আমরা যারা অক্সিজেন ব্যবহার করে থাকি তাদের জন্য অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকার ব্যাপারটাই একটু বিস্ময়করই বটে। আমরা বিবর্তিত হয়েছি এমনভাবে যাতে আমরা অক্সিজেনকে আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিবেশের তুলনায় মাত্র দশভাগের একভাগ (১০%)। যদি কোন কারণে আমাদের দেহে অক্সিজেন অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যায় তবে সেটার পরিনাম আমাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের শরীরে যদি অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে ৭০-৮০ ভাগে দাড়ায় তবে আমাদের মৃত্যু মোটামুটি সুনিশ্চিত। আমাদের দেহ এই অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহার করতে সক্ষম না।
সায়ানো ব্যাকটেরিয়াদের দ্রুত বংশবিস্তার ফলে পৃথিবীটা ভরে যেতে শুরু করে অক্সিজেনে। আর এই অক্সিজেন ছিলো অক্সিজেন ব্যবহার করতে অনভ্যস্ত (তখনকার দিনে প্রায় সব) এমন সব প্রাণীসত্ত্বার জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত । এখনও যেমন আমাদের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকারা আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াদের মারার জন্য অক্সিজেন ব্যবহার করে থাকে। যাই হোক, এই নতুন ধরণের অক্সিজেন ব্যবহারকারি প্রাণীসত্ত্বারা দুটো সুবিধা পেলো। প্রথমতঃ অক্সিজেন হলো শক্তি উৎপাদনের জন্য সবচাইতে কার্যকারি অনু। দ্বিতিয়তঃ এটা প্রতিদ্বন্দী অন্যান্য প্রাণীসত্ত্বাদের ঝাড়েবংশে নির্বংশ করে দিতে শুরু করল। এদের মধ্যে কিছু প্রাণীসত্ত্বা ঠাই নিলো জলাশয়গুলোর একেবারে নিচের দিকে অথবা ডোবা-নালায়। এদের কিছু কিছু বহু বছর পরে অভিবাসন নিয়ে প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্রে বসবাস করা শুরু করে। একটা বিশাল সংখ্যক আদিম প্রাণীসত্ত্বা আজও আমাদের দেহে খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু সামান্য পরিমান অক্সিজেনের উপস্থিতিও তাদের বিচলিত করে তোলে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তখনকার অক্সিজেন উপস্হিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অক্সিজেন উৎপাদনকারী সায়ানো ব্যাকটেরিয়াগুলো খুবই সফলভাবে বংশবিস্তার শুরু করে। প্রথমেই অতিরিক্ত অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে জমা হতে শুরু করেনি। লোহার সাথে বিক্রিয়া করে ফেরিক এসিড হিসাবে সমুদ্রের তলদেশে জমা হতে থাকে।
এই সময়ে আরও শক্তিশালী কিছু প্রাণীসত্ত্বার উদ্ভব শুরু হয়। অগভীর সমুদ্রে কিছু দৃশ্যমান অবয়বের আভির্ভাব শুরু হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে করতে সায়ানো ব্যাকটেরিয়াগুলো একটু চটচটে বা আঠালো হয়ে পরে। আর এই আঠালো অবস্হার কারণে ধূলাবালির মত মাইক্রোপার্টিকলের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীসত্ত্বারা একটা দৃড় কাঠামোর জন্ম দেয়। এগুলোকে বলা হয় স্ট্রমাটোলাইট। এগুলো ছিলো অনেকটা জীবন্ত পাথরের মত এবং পৃথিবীর প্রথম কো-অপারেটিভ উদ্যোগ। কিছু কিছু অর্গানিজম বাস করত সারফেস লেভেলে আর কিছু কিছু বাস করত সারফেসের ঠিক নিচেই। একে অপরের তৈরী করা এই পরিবেশ থেকে সুবিধা নিয়ে তৈরি হলো পৃথিবীর প্রথম ইকো সিস্টেম।
এর পরের ২ বিলিয়ন বছর এই ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলোই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ৩৫ ভাগে (বর্তমানে ২০ ভাগ)। পরবর্তিতে প্রাণের ইতিহাসের আরও জটিল প্রাণীর উদ্ভবের পরিবেশ তৈরী হলো ।
এইখানে আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে গবেষণাগারে বিবর্তন পর্যবেক্ষনের একটি ছোট্ট উদাহরণ দেব। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্যাকটেরিয়োলজিস্ট রিচার্ড লেন্স্কি এবং তার সহকর্মীরা ১৯৮৮ সালে মানুষের ক্ষুদ্রান্ত এবং বৃহদান্তে বসবাস করি উপকারী ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপর বিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষনের জন্য একটি অত্যন্ত দীর্ঘ গবেষনা শুরু করেন। তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ১২টি গ্রুপে বিভক্ত করে তাদের ৪৫০০০ প্রজন্মের মিউটেশন পর্যবেক্ষণ করেন। এই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলো সাধারণতঃ গ্লুকোজকেই তাদের খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে থাকে। লেনস্কি লক্ষ্য করেন ৩৩১০০ প্রজন্ম পরে হঠাৎ করেই ১টি গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ার প্রজননের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। কারণ অনুসন্ধান করে দেখেন যে এই স্পেসিফক গ্রুপটি গ্লুকোজের সাথে সাথে সাইট্রেটকে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। আরও অবাক করার মত ঘটনা এটি শুধুমাত্র ১টি নয় বরং কমপক্ষে দুটি মিউটেশনের সমন্বয়ের কারণে হয়েছে।
লেন্স্কির পর্যবেক্ষন থেকে প্রকৃতিতে বিবর্তন ঘটার বেশকিছু উপাদানের কয়েকটি বিজ্ঞানীরা তাদের চোখের সামনেই ঘটতে দেখেন। যেমন:
১) র্যান্ডম মিউটেশন এবং তার পরবর্তীতে ঘটা নন-র্যান্ডম প্রাকৃতিক নির্বাচন। (সাইট্রেটকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার ক্ষমতাটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদাহরণ)
২) স্বতন্ত্র পথ অবলম্বন করে একই পরিবেশে আরও কার্যকরীভাবে খাপ খাইয়ে নেয়া।
৩) কিভাবে পরবর্তি মিউটেশনগুলো পূর্ববর্তী মিউটেশনের উপর ভর করে বিবর্তনীয় পরিবর্তন সাধনে সাহায্য করে।
৪) কিভাবে কিছু কিছু জিন উপস্হিত অন্যান্য জিনকে নিজেদের সুবিধায় ব্যবহার করে।
আর পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছে সাধারণতঃ বিবর্তন (মাইক্রো) ঘটতে যতটা সময় লাগে তার তুলনায় খুবই অল্প সময়ে। এই গবেষণায় দুটো জিনিষ স্পস্ট বোঝা গেছে যে, বাইরের কোন সাহায্য ছাড়াই জিনোমে নতুন নতুন তথ্য সংযোজিত পারে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচন বিভিন্ন জিনকে একসাথে মিলিত করার ক্ষমতা রাখে।
এবার ফিরে আসি আমাদের মূল প্রসঙ্গে। এই সময় কিছু ব্যাকটেরিয়ার অভিযানপ্রিয়তার কারণেই হোক অথবা ম্যালফাংশনের কারণেই হোক এরা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে বসে এবং নিজেদের দেহের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। কিন্তু আদতে সেটা উভয়েরে জন্যই অত্যন্ত সুবিধাজনক হিসাবে পরিগণিত হলো। ফলে প্রাণীসত্ত্বাগুলোতে উদ্ভব হলো এক নতুন ধরণের কোষের। যেটার মধ্যে ছিলো একটা নিউক্লিয়াস এবং তাকে ঘিরে অন্যান্য কিছু অংশ যেটাকে বলা হয় ওরগ্যানেল`স। বন্দী ব্যাকটেরিয়া হয়ে পরলো মাইটোকন্ড্রিয়া । আর এই মাইটোকন্ড্রিয়াল উদ্ভাবনের কারণেই পরবর্তীতে সম্ভব হলো আরও জটিল ধরণের প্রাণের উদ্ভবের।
মাইটোকন্ড্রিয়া এমনভাবে অক্সিজেনকে ব্যবহার করে যা কিনা খাদ্য থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ শক্তি নির্গত করে। মাইটোকন্ড্রিয়া ছাড়া পৃথিবীর বুকে প্রাণ বলতে হয়ত কিছু সরল অণুজীব ছাড়া আর কিছুই থাকতো না।
মজার ব্যাপার হলো মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে। ওরা ওদের আশ্রয়দাতার কোষ থেকে ভিন্ন একটা সময়ে রিপ্রডিউস করে। এরা দেখতে ব্যাকটেরিয়ার মত, বিভাজিত হয় ব্যাকটেরিয়ার মত এবং কখনও কখনও এন্টিবায়োটিকের কারণে রিয়্যাক্টও করে ব্যাকটেরিয়াদের মত। এমনকি এদের জেনেটিক ল্যাঙ্গুয়েজও এদের আশ্রয়দাতার কোষ থেকে আলাদা।
এই নতুন ধরনের সেলকে বলা হয় ইউক্যারিয়োট। আগের সিম্পল সেলকে হয় প্রোক্যারিয়োট। ইউক্যারিয়োট সাধারণতঃ প্রোক্যারিয়োট থেকে আকারে অনেক বড় হয়। কখনও কখনও ১০০,০০০ গুন বড়। আর এরা প্রায় হাজারের থেকেও বেশি ডিএনএ বহন করে। ক্রমে ক্রমে এমন এক সিস্টেমের উদ্ভব হলো যেখানে পৃথিবীতে দুই ধরণের প্রাণীসত্ত্বা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকলো। একটা গ্রুপ যারা অক্সিজেন বর্জ্য হিসাবে নির্গমন করে আর একটা গ্রুপ যারা সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে ।
এর পরের ১ বিলিয়ন বছর ধরে ইউক্যারিয়োটসরা আরও নতুন নতুন ধরণের কায়দা-কানুন শিখে ফেললো। তারা শিখে ফেললো কিভাবে বহু কোষী প্রাণীসত্ত্বা হতে হয়। আর তখনই পৃথিবী তৈরী হলো প্রাণের ইতিহাসের পরবর্তি অধ্যায়ের জন্য। প্রাণী ও উদ্ভিদ একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি বছর ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফসল হিসাবে লেন্স্কির উদাহরণের মত ছোট ছোট মিউটেশগুলির একটির সাথে আরেকটির মিলিত ফলাফলেই আমাদের আজকের এই জটিল পৃথিবী।
সূত্র:
১) The Short History of Nearly Everythin by Bill Bryson
২) The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution by Richard Dawkins
অনেক দিন পর আপনার লেখা দেখে ভাল লাগল।সময়াভাবে আগে পরে উঠতে পারিনি। আপনার একটা ক্ষমতা আছে পাঠকদের এরকম জটিল বিষয়ের ভেতরে টেনে নিয়ে যাওয়া। আমিও পড়তে পড়তে আশেপাশের সব ভুলে সেই “বিগ বার্থ” এর অবস্থা কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম। (পড়া শেষ হবার পর অবশ্য হা করে তাকিয়ে আছি এইসব কাহিনি চিন্তা করে, কত প্যাচঘোচ পেরিয়ে আজকে আমরা মানুষ!!! ভাল মত বুঝে উঠতে পারিনা পুরো ব্যাপারটা, যতই এসব নিয়ে পড়িনা কেন…..
আমারো দাবি রইল ডারউইন দিবসে একটা লেখা পাবার। ভাল থাকবেন
@লীনা রহমান, প্রশংসাটা বেশি বেশি হয়ে গেল না!!! 🙂
ডেভিড হিউম বলেছিলেন ,” “Beauty in things exists merely in the mind which contemplates them.” আসলে প্রশংসাতো আপনাদের মত পাঠকদেরই যারা কষ্ট করে পড়েন আর এত সুন্দর করে উৎসাহ দিয়ে যান। আমার তরফ থেকে আপনাকে (F) শুভেচ্ছা।
good writing
@নাজমুল, ধন্যবাদ। (F)
প্রানের শুরুটা নিয়ে শুধু ধারনা কিংবা হাইপোথিসিসের অন্ত নেই এবং সেখানে এই মূহুর্তে প্রচুর পরিমানে পর্যবেক্ষনগত সীমাবদ্ধতা আছে। ফলে মূল ধারার জীব বিজ্ঞানীদের মাঝেই এনিয়ে অনেক বিতর্ক আছে । ডিএনএ ভিত্তিক জীবন যেটা এখন আমরা দেখি এটারও বহু আগে আরএনএ এমনকি পিএনএ ভিত্তিক জীবনের কথা ধারনা করা হয়ে থাকে। চিন্তা করুন একটা সময় যখন ডিএনএর অস্তিত্ব ছিলোনা এবং সব জীবের আনবিক মেটাবোলিজম ছিল আরএনএ ভিত্তিক। এটা নিয়ে প্রচুর গবেষনা এখন চলছে তবে এখানে ক্রড তত্ত্বের চাইতে পর্যবেক্ষন নির্ভর ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী কারন জীব বিজ্ঞান বিজ্ঞানের সব চাইতে পর্যবেক্ষন নির্ভর শাখাগুলোর অন্যতম যা আশার কথা।
@সংশপ্তক,
আপনার সাথে সাথে আমিও আশাবাদী। ধন্যবাদ। (F)
খুবই সাবলীল কিন্তু তথ্যবহুল একটি লেখা। ডারউইন দিবসের জন্য খুবই মানানসই ছিলো। এটা যখন আগে ভাগে দিয়ে দিয়েছেনই, আপনার কাছ থেকে সেদিন একটি নতুন লেখা প্রত্যাশা করছি।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ। পাখীর পালক কিভাবে বিবর্তিত হলো সেটা নিয়ে কার্ল জিমারের একটা লেখা অনুবাদ করার ইচ্ছা আছে। এবছরে পারব কিনা জানিনা তবে আগামী বছরে অবশ্যই ট্রাই দিব। 🙁
আমরা জানি ভাইরাস হলো Simplest form of life যারা বংশবিস্তার করতে পারে। রাসায়নিক পদার্থের এমন কোন নির্দিষ্ট জোটের কথা কি আপনার জানা আছে , যারা নিজেকে বিভাজিত করে হুবহু অনুলিপি তৈরি করে উত্তরাধিকার সৃষ্টি করতে পারে? উত্তর যদি হ্যা হয় , তাহলে বলবেন কি সেটা কিভাবে ঘটে বা পরীক্ষাগারে সেটা করে দেখানো সম্ভব কি না?
@ফারুক,
ভাইরাসের যে প্রাণ নেই সেটা এতক্ষনে নিশ্চয়ই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
উপরে আল্লাচালাইনার কমেন্ট যে ট্রান্সপোজন, রেট্রো ট্রান্সপোজনের কথা বলেছেন সেগুলাই আপনার প্রশ্নের উত্তর।
আমি নিজেও অত ভাল করে জানিনা তবে ইন্টারনেটে এ সম্পর্কে তথ্য খুঁজে পেতে মনে হয় অসুবিধা হবে না।
@হোরাস,
না এটা এখনো পরিস্কার নয়। ভাইরাসের প্রাণ আছে কি নেই সেটা নিয়ে বিতর্ক ভাইরাস আবিস্কারের পর থেকে এখনো চলে আসছে। যেকারনে ভাইরাসকে এখনো অর্গানিজম বলা হয়।
কেন এটাকে প্রাণী বলা হয়?
Viruses may be defined as acellular organisms whose genomes consist of nucleic acid, and which obligately replicate inside host cells using host metabolic machinery and ribosomes to form a pool of components which assemble into particles called VIRIONS, which serve to protect the genome and to transfer it to other cells.
If one defines life from the simplest forms capable of displaying the most essential attributes of a living thing – one very quickly realises that the only real criterion for life is: The ability to replicate
The concept of replication is contained within the concepts of individual viruses constituting continuous lineages, and having an evolutionary history.
Thus, given this sort of lateral thinking, viruses become quite respectable as organisms:
they most definitely replicate,
their evolution can (within limits) be traced quite effectively, and
they are independent in terms of not being limited to a single organism as host, or even necessarily to a single species, genus or phylum of host.
http://www.mcb.uct.ac.za/tutorial/virwhat.html
আপনি কি এটা বুঝে বলেছেন নাকি না বুঝেই? ট্রান্সপোজন ও রেট্রো ট্রান্সপোজন ‘ডিএনএ’ ও ‘আরএনএ’ র ই অংশ। এরা আপনার বর্ননা মতো হটাৎ করে তৈরি হওয়া কোন রাসায়নিক পদার্থের নির্দিষ্ট জোটের মতো সরল কোন জোট নয়।
শুধু আপনি কেন , কেউই ভাল করে কিছু জানে না। ইন্টারনেটে খুজে বিজ্ঞানের নিজের দেয়া ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করে , এমন কোন তথ্য পাবেন না। যেটা পাবেন সেটা অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান। যে কারনে প্রাণের উদ্ভব নিয়ে যে তথ্য আপ[নি দিয়েছেন , তাকে অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান বল্লে মনে হয় অত্যুক্তি করা হবে না।
@ফারুক,
আপনির দেয়া কোট অনুযায়ী শুধু রেপ্লিকেট করতে পারলেই তাকে জীবিত বলা হবে এমনটা বোধহয় ঠিক নয়। উপরে আল্লাচালাইনার কমেন্টটা দেখুন। কোন কিছুকে জীবিত বলতে হলে এই কন্ডিশনগুলা স্যাটিসফাইড হতে হবে। যাইহোক, এটা যেহেতু পোস্ট রিলেটেড টপিক না আশা করি এ নিয়ে আর বেশীদূর এগোনোর দরকার নেই।
আপনার মূল প্রশ্নটা ছিলো….
আপনি কোথায় বলেছিলেন যে এই রাসায়নিক পদার্থ ডিএনএর অংশ হতে পারবে না? আপনি উদাহরণ চেয়েছেন আমি দিয়েছি।
প্রাণের উদ্ভব নিয়ে আমি যা বলেছি তা অনেকগুলো হাইপোথিসিসের একটা। এটা যদি ভুলও হয় তবে কোন অসুবিধা নাই কারণ প্রাণের উদ্ভব হওয়ার পরে যেভাবে বিবর্তন হয়েছে সেটা কিন্তু ঠিকই থাকবে। এই হাইপোথিসিসটা প্রামানিত না এই কারণে আপনি তাকে অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান বলতে চান শুনে না হেসে পারলাম না। হয়রান মোল্লা হলেতো কথাই ছিলো না।
স্ট্রিং থিউরী বা এম থিউরী প্রমানিত না….. আমি ভয়ে ভয়ে আছি আপনি এগুলোকে আবার অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান না বলে বসে। বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার বা হিগস বোসন খুঁজে পায়নি তাই ভয়ে ভয়ে আছি আপনি আবার সেগুলোকে অপবিজ্ঞান বা ছদ্মবিজ্ঞান বলে বসেন।
:lotpot:
@ফারুক,
আবার
ভাববেন না দুটোকে একই জিনিষ বলেছি। 🙂
@হোরাস,
এখন থেকে প্রমান করার ঝক্কি ঝামেলা মুক্ত করার জন্য, খাড়ান আমি ও একটু হাইসা লই।
:hahahee: :lotpot:
@ফারুক,
সময়াভাবে আমি এই থ্রেড আমি অনুসরণ করতে পারিনি। আমি ঠিক জানিনা হোরাস আর আপনার মধ্যে বিতর্কের মূল জায়গায় ঠিক কোনটি। বিতর্কটি যদি ভাইরাসের প্রাণ আছে কিনা তা নিয়ে হয়, তবে এটির কোন সহজ উত্তর নেই। ভাইরাসকে জীবিত এবং জড়ের যোগসূত্র বলা হয় কিছু বিশেষ কারণে। কারণ, ভাইরাসে ‘নিউক্লিয়িক এসিড’ আছে, যা প্রাণের একটি অত্যাবশকীয় নিয়ামক। সেজন্য অনেক ভাইরাসবাদিরা একে জীবিত হিসেবে দেখতে পারেন, কিন্তু আবার মনে রাখতে হবে যে, ভাইরাসের এ বঁচে থাকা সম্ভব হয় যখন হাতের কাছে সে জীবিত কোষের সাইটোপ্লাজম খুঁজে পায়।
আর প্রাণের বৈশিষ্ট কি তাও খুব জটিল প্রশ্ন। এ নিয়ে আমি আর ফরিদ ভাই মিলে একতা বই লিখেছিলাম একসময় ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খঁজে’ নামে। প্রজনন, বিপাক, পুষ্টি, জটিলতা, সংগঠন, তথ্যের সমাহার প্রভৃতি গুণাবলীর কথা মাথায় রেখেও আমরা বইয়ে দেখিয়েছি, মূলতঃ সাদামাঠা ভাবে, পঞ্চাশের দশকের পর হতে তিনটি বৈশিষ্টকে জীবনের পরিচায়ক বৈশিষ্ট বলে ভাবা হয় –
১) প্রতিলিপি তৈরি করার ক্ষমতা
২) মিঊটেশন ঘটানোর ক্ষমতা
৩) ডারুইনীয় বিবর্তন।
জীবন বলতে যা বুঝি – অর্থাৎ কোষীয় কিংবা অকোষীয় নির্বিশেষে উক্তি তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমাহার দেখতে পাওয়া যায়।
আজ এপর্যন্তই থাকুক, বিস্তারিত আলচনায় আর গেলাম না, সময় বড্ড অলপ। পরে আবার এ নিয়ে লেখা যাবে। আপনার ভিন্ন ধরণের প্রশ্ন এবং আলোচনাগুলো সবসময়ই মুক্তমনায় আলাদা আবেদন তৈরি করে। তবে বিতর্ক পারষ্পরিক রেষারেষি কিংবা গুতাগুতিতে চলে না যাওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
@ফারুক,
কথাটার মানে কি? প্রমান করার ঝক্কি ঝামেলা মুক্ত করা বলতে কি বুঝাচ্ছেন? আপনার হাসি আসলে হাসবেন কিন্তু বেক্কলের মত হাসবেন না প্লিজ।
হাতে সময় নিয়ে পড়বো। Bill Bryson এর বইটা দেখি কিনতেই হচ্ছে।
@স্বাধীন, কিনে ফেলুন। দারুন একটা বই। ওনার লেখার স্টাইলটা অসাধারণ।
বিবর্তনের সময় রেখায় ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে কোনটা আগে আবির্ভূত হয়েছিল?
@ফারুক, ভাইরাসের বংশবিস্তার করার জন্য অন্য একটি হোস্ট সেলের দরকার হয়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া নিজে নিজেই বংশবিস্তার করতে পারে। তাই ব্যাকটেরিয়ার আগে ভাইরাস থাকলে বিবর্তন সম্ভব হত না। এই যুক্তি থেকেই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে ব্যাকটেরীয়ার আভির্ভাব আগে হয়েছে।
@হোরাস, এতদিন তো জানতাম , বিবর্তনের ফলে সরল থেকে জটিল ও উন্নত প্রাণীর উদ্ভব হয়ে থাকে , এটা তো দেখি উল্টো হয়ে গেল। আশ্চর্য নয় কি?
@ফারুক, নাহ এটা একটা খুবই কমন একটা ভুল ধারণা। বিবর্তনের ফলে জটিলতা বাড়বেই বা উন্নততর জীব তৈরি হবেই এমন কোন কথা নেই। কোন একটা নির্দিষ্ট পরিবেশে যেটা উন্নত বলে মনে হচ্ছে সেটাই পরবর্তীতে বিলুপ্তির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন ধরুন, একটা উদাহরণ দেই, হিপোর মত একটা কোন কিছু থেকে তিমির উদ্ভব ঘটেছে, কোনটাকে আপনি উন্নত বলবেন? বা ধরুন, ডাইনোসরেরা তো তাদের পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছিল, কিন্তু তারপর বিলুপ্ত হয়ে গেল, ৯৯% জীবই এভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
@বন্যা আহমেদ,কোনটাকে ভুল ধারনা বল্লেন? সরল (simple) থেকে জটিল(more complex) ও উন্নত (more adaptable and improved quality) প্রাণীর উদ্ভব হওয়াকে? তাহলে সেলফিশ জ্বীনের খবর আছে!!
ডাইনোসর সহ ৯৯% জীবের বিলুপ্ত হওয়ার সাথে আমার মন্তব্যের কোন যোগ আছে কি বা আমি এব্যাপারে কোন সন্দেহ কি পোষন করেছি?
আগে ব্যাক্টেরিয়া (more complex) পরে ভাইরাসের (more simple) উদ্ভব , এই যে পিছন দিকে হাটা , এটা ঠিক বিবর্তনের উদ্দেশ্যের সাথে খাপ খায় না। সেকারনেই আশ্চর্য হয়েছি।
@ফারুক,
নাহ সেলফিশ জিনের খবর নেই আসলে 🙂 । উন্নত হতেও পারে নাও হতে পারে, এখানে পুরোটাই অভিযোজনের এবং টিকে থাকার উপর নির্ভরশীল। তবে বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় যে বৈশিষ্ট্যগুলো অভিযোজনের জন্য বাড়তি (বা অনেক সময় নিউট্রাল )সুবিধা জোগায় সেগুলোই টিকে থাকে, তাই জটিলতা বাড়তেই পারে বেশীরভাগ সময়। আপনি কাকে ‘উন্নত’ বলবেন সেটার উপর সব কিছু নির্ভর করছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার উদাহরণটা সেটা বোঝাতেই দিয়েছিলাম। যে জীবটা বিবর্তিত হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাকে কী উন্নত বলা ঠিক হবে? আরেকটা উদাহরণ দেই, আইস ফিশ মেরু অঞ্চলের তীব্র ঠান্ডার সাথে মোকাবেলা করার জন্য অভিযোজিত হতে গিয়ে লোহিত রক্তকনিকাই লোপাট করে দিয়েছে তাদের শরীর থেকে। একে কি উন্নতি বলবেন? আবার ধরুন তিমির যে উদাহরনটা দিয়েছিলাম উপরে… এদের পূর্বসুরীরা বহুকালের বিবর্তনের ফসল ডাঙ্গায় চড়ে বেড়ানো পাগুলোকে হাওয়া করে দিয়ে দিব্যি সমুদ্রে নেমে গেল, একে কী বলবেন উন্নতি না অবনতি?
@ফারুক, বিবর্তনে সংযোজন বা বিয়োজন দুটোই হতে পারে। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া যেহেতু দুটোই এককোষী, যদিও ভাইরাসের কোষ নিয়ে কথা হতে পারে, তাই আমার মনে হয় এটা অবাক হওয়ার মত তেমন কিছু না। আর যদি জটিলতার কথা বলেন তবে আমি তো বলব নিজে নিজে বিভাজিত হওয়ার তুলনায় অন্যের দেহ কোষকে ব্যবহার করে বংশবিস্তার করার এই পদ্ধতিটাই তো আসলে আরও বেশী জটিল।
@হোরাস,
আসলে ভাইরাস কিন্তু কোষী প্রাণী না, বস্তুত এটা ওর্গানিজম বা প্রাণীই না কোন। ভাইরাস অ্যাসাইটোট, সাইটোট যেমন মানুষ ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদির সাথে এর বিবর্তনের তেমন কোন সম্পর্ক নেই যদিও বর্তমানে একটি প্লজিবল হাইপথেসিস হচ্ছে- ট্রান্সপোজেবল এলিমেন্ট যেমন- ট্রান্সপোজন, রেট্রোট্রান্সপোজন ইত্যাদি থেকে ভাইরাস বিবর্তিত হয়েছে।
@আল্লাচালাইনা, ভাইরাস যে প্রাণের সংজ্ঞাকে স্যাটিসফাই করে না সেটা আমি জানি কিন্তু ফারুক ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমার এই অতিসরলীকরণ করার অপচেস্টা। ব্যাকটেরিয়ার সাথে যে ভাইরাসের বিবর্তনের সম্পর্ক নেই এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
@হোরাস,
আপনার এই ডিগবাজি দেখার মতো হয়েছে। :lotpot:
@ফারুক,এত হাসির কি হইল? আমার আগের কোন কমেন্টা পড়ে আপনার মনে হইল যে আমি বলছিলাম ভাইরাসের প্রাণ আছে? আপনার প্রশ্ন ছিলো ভাইরাস আগে না ব্যাকটেরিয়য়া আগে আবির্ভূত হয়েছে। আমার উদ্দেশ্য ছিলো এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া। ভাইরাসের প্রাণ আছে কি নাই সেটা আলোচনায় আনতে চাইনি সচেতনভাবেই।
আমি বলেছিলাম,
ভাইরাসের যে সেল নাই সেটাও পরোক্ষভাবে বলেছি…. এখান থেকে কি বোঝা যায়, আমি বলেছি ভাইরাসের প্রাণ আছে?
@হোরাস,
এখানে একটু ভূল হচ্ছে মনে হয় । আপনারা যদি DNA এবং প্রোটিন ভিত্তিক প্রানকে মূল premise ধরেন , তাহলে বলা যায় যে , ভাইরাস ব্যকটেরিয়ার পরে এসেছে। কিন্তু এখানে সমস্যা আছে – এমন কোন প্রমান নেই যে DNA ভিত্তিক প্রানই প্রথম প্রান।
এছাড়া , RNA থেকে DNA এর বিবর্তনের পক্ষেও ইদানিং শক্ত যুক্তি দেখা যাচ্ছে। DNA এর প্রায় সব কাজ এমনকি এনজাইম ফাংশন RNA করতে পারে। সে অনুযায়ী rRNA কে আদি RNA এর বিবর্তনীয় অবশিষ্ট বলে ধরা যায়। নিচের রিসার্চ পেপারটা দেখতে পারেন।
Orgel, L. E. (2004). “Prebiotic Chemistry and the Origin of the RNA World”
@সংশপ্তক,
এ অনেকটা যেন ‘ডিম আগে নাকি মুরগী আগে’ ধরণের সমস্যা। কারণ, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আজকের প্রোটিন অণু তৈরী করতে নিউক্লিয়িক এসিডের প্রয়োজন। আবার নিউক্লিয়িক এসিড তৈরী করতে দরকার এনজাইম – যেগুলো মূলতঃ প্রোটিন ছাড়া আর কিছু নয়। তাহলে কোন্টির অভ্যুদয় আগে ঘটেছিল – প্রোটিন নাকি নিউক্লিয়িক এসিডের? এর দুটি সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে। আদিমকালে প্রোটিন তৈরী হয়েছিল আগে, তারপর সরলতর প্রোটিন থেকে যখন আরএনএ/ডিএনএ’র উদ্ভব হয়েছিল, তখন হয়ত কোন এনজাইমের সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি। প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফ্রিম্যান ডাইসন এই ‘প্রোটিন আগে’ তত্ত্বের একজন জোরালো প্রবক্তা। তত্ত্ব দিলে কি হবে, এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি যে কিভাবে ওই আদি প্রোটিনগুলো প্রতিরূপায়নের ক্ষমতা অর্জন করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্যান ডিয়াগোর স্ক্রিপ্স ইন্সটিটিউটের রেজা ঘাদিরি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে কিছু পেপটাইডের শিকল সত্যি সত্যি প্রতিরূপায়ন ঘটাতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রতিরূপায়ন ঘটাতে গিয়ে ঘটা ভুলের সংশোধনও করতে চেষ্টা করে; দেখে মনে হয় সত্যই এগুলোর ভিতর ‘মন বলে কোন কিছু আছে’ (Philip Cohen, Can Protein spring into Life? New Scientist (1997) ; also published in Nature, vol 382, no. 525 (1996) দ্রঃ)! এ ছাড়া ‘ম্যাড কাউ’ রোগের উৎস হিসেবে যে প্রিয়নের কথা আমরা জানি তারাও কিন্তু স্রেফ প্রোটিন দিয়ে তৈরী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের প্রতিলিপি তৈরী করে রোগ ছড়াতে পারছে। আরেকটি সম্ভাব্য সমাধান যেটা আপনি বলেছেন সেই তথাকথিত ‘আরএনএ পৃথিবীর’ ধারণা, যেটি ইদানিং বিজ্ঞানীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ছে। ষাটের দশকে কার্ল উস, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং লেসলি অর্গেল পৃথকভাবে প্রস্তাব করেন যে, প্রোটিন এবং ডিএনএ তৈরীর আগে আরএনএ-ই প্রথম তৈরি হয়েছিল এবং গঠন করছিল সেই আরএনএ পৃথিবী। আপনি যে পেপারটা দিয়েছেন সেটা তারই সারসংক্ষেপ। এগুলো নিয়ে আমিও আগে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম এখানে।
আরেকটি সম্ভাবনা আছে। প্রোটিন এবং নিউক্লিয়িক এসিড একসাথেই হয়তো তৈরি হয়েছিলো। আমি ডেভিড কামিংস এর একটি বইয়ে এর পক্ষে ভাল যুক্তি দেখেছি। তবে যেটাই হোক, আপনি যেটা ইঙ্গিত করেছেন – নিউক্লিয়িক এসিডের আদি ভিত্তি সম্ভবতঃ আরএনএ ই হতে হবে, ডিএন এ নয়। আর বিভিন্ন পেপারে (যেমন, Kruger, K., Grabowski, P.J., Zaug, A.J., Sands, J., Dottschling, D.E., and Cech, T.R.(1982). Self-splicing RNA: auto excision and autocyclization of the ribosomal RNA intervening sequence ofTetrahymena. Cell31, 147-157 )এটাও দেখানো গেছে যে, আরএন এ গুলো এনজাইমের মত ফাংশন করতে পারে। কাজেই এটি সেই “আরএনএ না এনজাইম’ – এই প্রশ্নের সমাপ্তি দিতে পারে মনে হয়।
কিন্তু তারপরেও কথা থাকে যে, কীভাবে আরএনএ’র জটিল অনু প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছিলো, বা হতে পেরেছিলো- এর উত্তর কি আমরা জানি? আমার মতে দি দুভের ‘প্রটোমেটাবলিজম’ বোধ হয় এর সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য উত্তর বর্তমানে।
@অভিজিৎ,
হ্যা। প্রটোমেটাবলিজম এর ধারনাটা ‘আরএনএ বিশ্ব’ অনুকল্পের সাথেই সামন্জস্যপূর্ন এবং একে আরও সুসংহত করা যাবে যদি এই মেটাবলিজমের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌতিক ভিত্তি পাওয়া যায় অর্থ্যাৎ নিউক্লিউটাইড এবং এমিনো এসিডের মত এমন এক বা একাধিক ক্যটালিস্ট অনু যেগুলোর সাহায্যে আরএনএ’র জটিল অনু প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়েছিলো, বা হতে পেরেছিলো । এখানেই চলে আসছে পেপ্টাইড নিউক্লিয়িক এসিড (PNA) এর প্রসঙ্গ যা এই শর্তগুলো পূরন করতে পারে । ল্যাবে যদি এই প্রক্রিয়াটা দেখানো যায় , তাহলেই বাজীমাৎ ।
জীববিজ্ঞান ভাগ্যবান কারন আমাদের কাছে ডিএনএ-র মত একটা জীবন্ত মহা আর্কাইভ আছে যেখানে অতীত কখনও পুরোপুরি মুছে যায় না এবং কিছু না কিছু স্মৃতি অবশিষ্ট থাকেই। এক্ষেত্রে গনিত নির্ভর বিগ ব্যাঙওয়ালাদের চেয়ে আমরা কাজটা অনেক সহজে শেষ করতে পারবো বলেই বিশ্বাস । :))
@হোরাস,
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ভাইরাস কোন জীবই নয়, এর জীবন নেই! জীব হতে হলে মেমব্রেইন, জেনেটিক্স ও মেটাবলিজম থাকতে হয়, বেশীরভাগ ভাইরাসেরই এর প্রথম দুটিই নেই, অল্প কয়েকটির শুধু প্রথম দুটি রয়েছে। কোন ভাইরাসেরই মেটাবলিজম নেই! এছাড়াও ভাইরাস অন্যান্য সকল রাসায়নিক অনুর মতোই ক্রিস্টালাইজ করে ফেলা যায়। যেই কাজটি কিনা প্রথম করেন নিঃসন্দেহে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন, স্ট্রাকচারাল ভাইরোলজির জনক/জননী, কিংস কলেজে; যার ফলশ্রুতিতে কিনা ওয়াটসন ও ক্রিকের পক্ষে সম্ভব হয় ডিএনএ স্ট্রাকচার গননা করা। ভাইরাস নিছকই একটি সুপ্রামলিকিউলার কমপ্লেক্স।
এন্ডোসিম্বিয়টিক তত্ব নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো লাগতো, যেমন এন্ডোসিম্বিয়টিক তত্বের পক্ষের সবচেয়ে জোড়ালো প্রমানগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি।
@আল্লাচালাইনা,
এটুকু লিখতেই আমার খবর হয়ে গেছে। আর ভয় দেখায়েন না। 🙂
এটার চেয়ে বড় খোঁড়া কোন অজুহাত আগে মনে হয় শুনি নাই। শুধু এ কারণেই আপনাকে আরেকটা লেখা লিখতে হবে ডারউইন দিবসের জন্য 🙂 ।
একবারের বেশী যে এটা ঘটেনি সেটা কী আমরা নিশ্চিতভাবে জানি? প্রাণের উদ্ভব নিয়ে আমার জ্ঞান বেশ সীমিত। আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে খুব কাছাকাছি সময়ের ব্যবধানে অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট পরিবেশে হয়তো অনেকবার অনেকভাবে ট্রায়াল এ্যন্ড এররের মধ্যে দিয়ে গেছে পুরো প্রক্রিয়াটা, এর মধ্যে হয়তো একটা ( বা কয়েকটা ??) টিকে গেছে।
@বন্যা আহমেদ,
হ্যা সেটা অবশ্য গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না।
আমার ধারণা, কয়েকটা টিকে গেলে আমাদের ট্রি অব লাইফও একটির বদলে কয়েকটি থাকত, তাই নয় কি?
@হোরাস,
মন্তব্যটাতে সাবমিট ক্লিক করেই ভেবেছিলাম যে আপনি এটা বলবেন। হ্যা, এক্কেবারেই ঠিক কথা, আমরা যারা টিকে আছি তাদের পূর্বপুরুষ একটাই ( বা একজনই) সেটা নিয়ে বোধ হয় সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ধরুন এমন তো হতে পারে যে বেশ কিছু যুগ ধরে অনেকগুলো প্রুফ অফ কন্সেপ্ট টিকে ছিল এবং শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র একটা ধারাই টিকে গেছে। আমি আসলে এক্কেবারেই আন্দাজের উপর এগুলো বলছি, এরকমটা হয়ে থাকলেও সেটা প্রমাণ করার বোধ হয় কোন উপায় নেই।
আগেই পড়া ছিল (Y)
একটা তথ্য সংযোজন করার লোভ সামলাতে পারলাম না, অনুবাদ করতে আলসেমী লাগছে বলে হুবহু তুলে দিচ্ছি,
@পৃথিবী, ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। এ ধরণের কত বিচিত্র, আশ্চর্যজনক ব্যাপার স্যাপার যে আমাদের আসে পাশেই প্রতিদিন ঘটে চলেছে তা আমরা জানতেই পারিনা। স্পঞ্জের মতই আরেকটা উদাররণ আছে যা আমাকে বিস্মিত করে যেটাকে আমরা স্লাইম মোল্ড হিসাবে চিনি। আ্যমিবা হিসাবে জীবন শুরু করে বংশবিস্তার করে অনেকটা উদ্ভিদের মত। নিচে একটা ছবি দিলাম। ডিটেইলস উইকিতে পাওয়া যাবে।
[img]http://2.bp.blogspot.com/_Hc27foH9KAw/S9agw9VeJTI/AAAAAAAACiE/XyknvTS6GZU/s1600/slime_mold_lifecycle.gif[/img]