ভূমিকা: আসন্ন ডারউইন দিবস উপলক্ষে আমার ইচ্ছা ছিলো বিবর্তনের উপর একটি লেখা প্রকাশ করার। তবে ব্যস্ততা এবং সময় স্বল্পতার কারণে ইদানীং লেখা তো পরের কথা অন্যদের লেখা পড়ারও সময় হয়ে উঠছে না। তাই মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আগে অন্যত্র প্রকাশিত, যখন আমি মুক্তমনায় লেখা শুরু করিনি, একই শিরোনামের এই লেখাটিতে আরও বেশ কিছু তথ্য সংযোজন করে এবং লেখাটিকে আরেকটু ঘষে মেজে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য এখানে প্রকাশ করলাম। তবে ডারউইন দিবসের আগেই কেন? কারণটা হল ঐ সময় ব্লগের হেভিওয়েট লেখকদের ভীড়ে আমার মত চুনোপুটির লেখা হয়ত কারও চোখে পরবে না সেই ভয়ে। আশা করো লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে।

——————————————————————-

বিংশ শতাব্দীর শেষ কয়েক দশকে ভূ-বিজ্ঞানের (Earth Science) অন্যতম বিস্ময় ছিলো পৃথিবীর ইতিহাসের একদম শুরুর দিকেই যে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিলো এ ব্যাপারটি। ১৯৫০ এর দশকেও ভাবা হত “প্রাণের” বয়স ৬০০ মিলিয়ন বছরের বেশী নয়। কিন্তু ৭০ এর দশকের মধ্যেই কিছু বিজ্ঞানী তা ২.৫ বিলিয়ন বছরের বেশী বলে ভাবতে শুরু করেন। আর বর্তমানে বিজ্ঞানীদের তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী ৩.৮৫ বিলিয়ন বছরের হিসাবটা বিস্ময়কর ভাবেই অনেক তাড়াতাড়ি ছিলো বলতে হয়। পৃথিবীর বহির্ভাগ শক্তই হয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন বছর আগে।

প্রাণের উদ্ভবের পিছনে যে ঘটনাই থাকুক না কেন সেটা হয়েছে মাত্র একবারই। আর এটাই সম্ভবতঃ জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচাইতে অভূতপূর্ব ঘটনা। যা কিছুই বেঁচে আছে বা কোন একদিন বেঁচে ছিলো তার শুরুটা হয়েছিলো এক এবং অদ্বিতীয় প্রাগঐতিহাসিক স্পন্দন থেকে। অকল্পনীয় সূদুর অতীতের কোন এক মুহূর্তে কিছু রাসায়নিক পদার্থ যুথবদ্ধ হয়ে নড়াচড়া শুরু হয়। খাদ্যের কিছু পুষ্টি শোষন করে স্বল্প কিছু সময়ের জন্য শান্তভাবে স্পন্দিত হয়ে অস্তিত্ব ধারণ করে। এই একই ঘটনা হয়ত আগেও বহুবার ঘটেছে তবে রাসায়নিক পদার্থের এই নির্দিষ্ট জোটটি আরেকটি অসাধারণ কাজ করে ফেলে। এটা নিজেকে বিভাজিত করে একজন উত্তরাধিকার সৃষ্টি করে ফেলে। একটি ছোট্ট বংশানুগতির গুচ্ছ এক জীবন্ত সত্ত্বা থেকে আরেক জীবন্ত সত্ত্বায় বাহিত হলো। তারপর থেকে এটা আর কখনই থেমে থাকেনি। সেই বিশেষ মুহূর্তটাই ছিলো আমাদের সবার সৃষ্টির মূহূর্ত। জীববিজ্ঞানীরা সেই মুহূর্তটিকে বা ঘটনাটিকে বলে থাকেন The Big Birth.

পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন, যে কোন প্রাণী, উদ্ভিদ, পোকা-মাকড়, বা ক্ষুদ্র তরলীয় কিছুর দিকেই তাকাই না কেন, যদি তা জীবন্ত হয়ে থাকে তবে তা অবশ্যই প্রাণের এক অভিন্ন অভিধান ব্যবহার করে। জানে অভিন্ন সংকেত। সমস্ত “প্রাণ” আসলে অভিন্ন। আমরা সবাই বংশানুগতির অভিন্ন কৌশলের ফলাফল যা প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এমন ভাবে চলে আসছে যে যদি কোন মানুষের জিনের নির্দেশনার ক্ষুদ্র একটি অংশ নিয়ে কোন ত্রুটিযুক্ত এককোষী ছত্রাকে জোড়া লাগিয়ে দেই তবে সেই এককোষী ছত্রাকটি নির্দ্বিধায় সেই নির্দেশানকে এমন ভাবে কাজে লাগাবে যেন সেটা তার নিজেরই অংশ। সত্যি করে বলতে গেলে এটা আসলে তার নিজেরই।

কেমন ছিলো সে সময়কার পৃথিবীর পরিবেশ? সেই সময়কার পরিবেশ যে আমাদের কাছে অপরিচিত ছিলো তাতে কোন সন্দেহ নাই। আগ্নেয়গিরিরা ছিলো ভীষনভাবে সক্রিয়। সাগরের রঙ ছিলো তামার মত লালচে এবং উত্তপ্ত। আকাশের রঙটাও ছিলো লালচে। অগভীর জলাশয় গুলো ছিলো ব্যাকটেরিয়াচ্ছন্ন স্ট্রমাটোলাইট দ্বারা পরিপূর্ন। কোনভাবেই এমন একটি পরিবেশকে প্রাণের সহায়ক পরিবেশ হিসাবে ভাবা যায় না। কারও কারও মতে পৃথিবীর পরিবেশ ছিলো অনেক শীতল কারন সূর্য্যটা তখন অনেক দূর্বল ছিলো। বায়ুমন্ডলের অনুপস্হিতিতে অতিবেগুনি রশ্মি অনুদের যে কোন ধরণের বন্ধনকে ভেঙে দিত খুব সহজেই। কোন অর্থেই সেই পরিবেশটা প্রাণের সহায়ক ছিলো না। কেউ যদি টাইম মেশিনে করে সেই পুরোনো আর্কিয়ান সময়ে যেয়ে উপস্হিত হয় তবে নিশ্চিতভাবেই তড়িঘড়ি করে সে আবার টাইম মেশিনের ভেতরে ঢুকে যাবে। আজকের দিনে মঙ্গলগ্রহে যে পরিমান অক্সিজেন আছে পৃথিবীতে তাও ছিলো না। হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ন ছিলো পৃথিবী। সেই গ্যাস এতটাই তীব্র ছিলো যে তা যে কোন ধরণের কাপড় কিংবা চামড়া ফুটো করে দিতে সক্ষম ছিলো। বায়ুমন্ডলের এই রাসায়নিক মিশ্রণ ভেদ করে খুব কম পরিমাণ সূর্য্যের আলো ভূপৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারত। যে অল্প পরিমাণ দেখা সম্ভব ছিলো, যদিও দেখার কেউ ছিলোনা, সেটাও সম্ভব হতো ঘন ঘন উজ্জ্বল ব্জ্রপাতের কারণে। সংক্ষেপে, এটি ছিলো পৃথিবী তবে সে পৃথিবীকে আমরা নিজের বলে কখনও চিনতে পারতাম না।

আর্কিয়ান সেই পৃথিবীতে বছর ঘুরে প্রথম জন্মদিন পালন করা হতো না প্রায় কাররই। দুই বিলিয়ন বছর ধরে শুধু ব্যাকটেরিয়া জাতীয় প্রাণীদের অস্তিত্বই ছিলো বিদ্যমান। প্রথম বিলিয়ন বছরের কোন একসময় সায়ানো ব্যাকটেরিয়া বা সবুজাভ নীল এলজিরা কেমন করে যেন সমুদ্রের পানিতে অগাধ পরিমানে বিদ্যমান থাকা হাইড্রোজেন ব্যবহার করা শিখে ফেলে । এরা পানি শোষন করে তার থেকে হাইড্রোজেন রেখে দিয়ে বর্জ্য হিসাবে অক্সিজেন ছেড়ে দিতে শুরু করে। আর এটা করতে যেয়েই আবিষ্কার করে ফেলে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া। বিজ্ঞানী লীন মারগুলিস এবং কার্ল সেগানের মতে কোন সন্দেহ ছাড়াই প্রাণের ইতিহাসের সালোক সংশ্লেষনের আবিষ্কার হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন মেটাবলিক আবিষ্কার। আর এটা আবিষ্কৃত হয়েছিলো কোন উদ্ভিদের দ্বারা নয় বরং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা।

আমরা অবাক হই এই ভেবে যে, পৃথিবীর পরিবেশ প্রাণের বিকাশের জন্য কতটাই না উপযোগী! অবাক হই এই ভেবে যে, অক্সিজেন ছাড়া হয়ত প্রানের সৃষ্টি কখনো সম্ভব হত না। তবে আসল ঘটনা হলো অক্সিজেন নয় কার্বনের কারনেই প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানী পল ডেভিস লিখেছিলেন, “যদি কার্বন না থাকত তবে আজ আমরা প্রাণকে যেভাবে জানি সেটা কোনদিনই সম্ভব হত না। সম্ভবতঃ কোন ধরণের প্রাণই নয়।” আজকে আমাদের কাছে পৃথিবীর পরিবেশ যে আমাদের জন্য এতটা উপযোগী মনে হয় তার বড় একটা কারণ হলো পৃথিবীর আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিয়ে আমরা বিবর্তিত হয়েছি। আসলে আমাদের অবাক হওয়া উচিৎ এই ভেবে যে আমারা কিভাবে এই পরিবেশে টিকে আছি? আজকে যদি ভিনগ্রহ থেকে কোন অতিথী পৃথিবীতে আসে তবে হয়ত তারা খুবই অবাক হবে এই ভেবে যে তাদের জন্য খুবই বিষাক্ত একটা পরিবেশে আমরা কিভাবে বসবাস করছি। আমরা যারা অক্সিজেন ব্যবহার করে থাকি তাদের জন্য অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকার ব্যাপারটাই একটু বিস্ময়করই বটে। আমরা বিবর্তিত হয়েছি এমনভাবে যাতে আমরা অক্সিজেনকে আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পরিবেশের তুলনায় মাত্র দশভাগের একভাগ (১০%)। যদি কোন কারণে আমাদের দেহে অক্সিজেন অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে যায় তবে সেটার পরিনাম আমাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের শরীরে যদি অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে ৭০-৮০ ভাগে দাড়ায় তবে আমাদের মৃত্যু মোটামুটি সুনিশ্চিত। আমাদের দেহ এই অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহার করতে সক্ষম না।

সায়ানো ব্যাকটেরিয়াদের দ্রুত বংশবিস্তার ফলে পৃথিবীটা ভরে যেতে শুরু করে অক্সিজেনে। আর এই অক্সিজেন ছিলো অক্সিজেন ব্যবহার করতে অনভ্যস্ত (তখনকার দিনে প্রায় সব) এমন সব প্রাণীসত্ত্বার জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত । এখনও যেমন আমাদের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকারা আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াদের মারার জন্য অক্সিজেন ব্যবহার করে থাকে। যাই হোক, এই নতুন ধরণের অক্সিজেন ব্যবহারকারি প্রাণীসত্ত্বারা দুটো সুবিধা পেলো। প্রথমতঃ অক্সিজেন হলো শক্তি উৎপাদনের জন্য সবচাইতে কার্যকারি অনু। দ্বিতিয়তঃ এটা প্রতিদ্বন্দী অন্যান্য প্রাণীসত্ত্বাদের ঝাড়েবংশে নির্বংশ করে দিতে শুরু করল। এদের মধ্যে কিছু প্রাণীসত্ত্বা ঠাই নিলো জলাশয়গুলোর একেবারে নিচের দিকে অথবা ডোবা-নালায়। এদের কিছু কিছু বহু বছর পরে অভিবাসন নিয়ে প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্রে বসবাস করা শুরু করে। একটা বিশাল সংখ্যক আদিম প্রাণীসত্ত্বা আজও আমাদের দেহে খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু সামান্য পরিমান অক্সিজেনের উপস্থিতিও তাদের বিচলিত করে তোলে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তখনকার অক্সিজেন উপস্হিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অক্সিজেন উৎপাদনকারী সায়ানো ব্যাকটেরিয়াগুলো খুবই সফলভাবে বংশবিস্তার শুরু করে। প্রথমেই অতিরিক্ত অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে জমা হতে শুরু করেনি। লোহার সাথে বিক্রিয়া করে ফেরিক এসিড হিসাবে সমুদ্রের তলদেশে জমা হতে থাকে।

এই সময়ে আরও শক্তিশালী কিছু প্রাণীসত্ত্বার উদ্ভব শুরু হয়। অগভীর সমুদ্রে কিছু দৃশ্যমান অবয়বের আভির্ভাব শুরু হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে করতে সায়ানো ব্যাকটেরিয়াগুলো একটু চটচটে বা আঠালো হয়ে পরে। আর এই আঠালো অবস্হার কারণে ধূলাবালির মত মাইক্রোপার্টিকলের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীসত্ত্বারা একটা দৃড় কাঠামোর জন্ম দেয়। এগুলোকে বলা হয় স্ট্রমাটোলাইট। এগুলো ছিলো অনেকটা জীবন্ত পাথরের মত এবং পৃথিবীর প্রথম কো-অপারেটিভ উদ্যোগ। কিছু কিছু অর্গানিজম বাস করত সারফেস লেভেলে আর কিছু কিছু বাস করত সারফেসের ঠিক নিচেই। একে অপরের তৈরী করা এই পরিবেশ থেকে সুবিধা নিয়ে তৈরি হলো পৃথিবীর প্রথম ইকো সিস্টেম।
এর পরের ২ বিলিয়ন বছর এই ছোট ছোট প্রচেষ্টাগুলোই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ৩৫ ভাগে (বর্তমানে ২০ ভাগ)। পরবর্তিতে প্রাণের ইতিহাসের আরও জটিল প্রাণীর উদ্ভবের পরিবেশ তৈরী হলো ।

এইখানে আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়ে গবেষণাগারে বিবর্তন পর্যবেক্ষনের একটি ছোট্ট উদাহরণ দেব। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্যাকটেরিয়োলজিস্ট রিচার্ড লেন্‌স্কি এবং তার সহকর্মীরা ১৯৮৮ সালে মানুষের ক্ষুদ্রান্ত এবং বৃহদান্তে বসবাস করি উপকারী ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপর বিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষনের জন্য একটি অত্যন্ত দীর্ঘ গবেষনা শুরু করেন। তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ১২টি গ্রুপে বিভক্ত করে তাদের ৪৫০০০ প্রজন্মের মিউটেশন পর্যবেক্ষণ করেন। এই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলো সাধারণতঃ গ্লুকোজকেই তাদের খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে থাকে। লেনস্কি লক্ষ্য করেন ৩৩১০০ প্রজন্ম পরে হঠাৎ করেই ১টি গ্রুপের ব্যাকটেরিয়ার প্রজননের হার বেড়ে প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। কারণ অনুসন্ধান করে দেখেন যে এই স্পেসিফক গ্রুপটি গ্লুকোজের সাথে সাথে সাইট্রেটকে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। আরও অবাক করার মত ঘটনা এটি শুধুমাত্র ১টি নয় বরং কমপক্ষে দুটি মিউটেশনের সমন্বয়ের কারণে হয়েছে।

লেন্‌স্কির পর্যবেক্ষন থেকে প্রকৃতিতে বিবর্তন ঘটার বেশকিছু উপাদানের কয়েকটি বিজ্ঞানীরা তাদের চোখের সামনেই ঘটতে দেখেন। যেমন:

১) র‌্যান্ডম মিউটেশন এবং তার পরবর্তীতে ঘটা নন-র‌্যান্ডম প্রাকৃতিক নির্বাচন। (সাইট্রেটকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার ক্ষমতাটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদাহরণ)
২) স্বতন্ত্র পথ অবলম্বন করে একই পরিবেশে আরও কার্যকরীভাবে খাপ খাইয়ে নেয়া।
৩) কিভাবে পরবর্তি মিউটেশনগুলো পূর্ববর্তী মিউটেশনের উপর ভর করে বিবর্তনীয় পরিবর্তন সাধনে সাহায্য করে।
৪) কিভাবে কিছু কিছু জিন উপস্হিত অন্যান্য জিনকে নিজেদের সুবিধায় ব্যবহার করে।

আর পুরো ব্যাপারটাই ঘটেছে সাধারণতঃ বিবর্তন (মাইক্রো) ঘটতে যতটা সময় লাগে তার তুলনায় খুবই অল্প সময়ে। এই গবেষণায় দুটো জিনিষ স্পস্ট বোঝা গেছে যে, বাইরের কোন সাহায্য ছাড়াই জিনোমে নতুন নতুন তথ্য সংযোজিত পারে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচন বিভিন্ন জিনকে একসাথে মিলিত করার ক্ষমতা রাখে।

এবার ফিরে আসি আমাদের মূল প্রসঙ্গে। এই সময় কিছু ব্যাকটেরিয়ার অভিযানপ্রিয়তার কারণেই হোক অথবা ম্যালফাংশনের কারণেই হোক এরা অন্য ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে বসে এবং নিজেদের দেহের মধ্যে বন্দী করে ফেলে। কিন্তু আদতে সেটা উভয়েরে জন্যই অত্যন্ত সুবিধাজনক হিসাবে পরিগণিত হলো। ফলে প্রাণীসত্ত্বাগুলোতে উদ্ভব হলো এক নতুন ধরণের কোষের। যেটার মধ্যে ছিলো একটা নিউক্লিয়াস এবং তাকে ঘিরে অন্যান্য কিছু অংশ যেটাকে বলা হয় ওরগ্যানেল`স। বন্দী ব্যাকটেরিয়া হয়ে পরলো মাইটোকন্ড্রিয়া । আর এই মাইটোকন্ড্রিয়াল উদ্ভাবনের কারণেই পরবর্তীতে সম্ভব হলো আরও জটিল ধরণের প্রাণের উদ্ভবের।

মাইটোকন্ড্রিয়া এমনভাবে অক্সিজেনকে ব্যবহার করে যা কিনা খাদ্য থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ শক্তি নির্গত করে। মাইটোকন্ড্রিয়া ছাড়া পৃথিবীর বুকে প্রাণ বলতে হয়ত কিছু সরল অণুজীব ছাড়া আর কিছুই থাকতো না।
মজার ব্যাপার হলো মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে। ওরা ওদের আশ্রয়দাতার কোষ থেকে ভিন্ন একটা সময়ে রিপ্রডিউস করে। এরা দেখতে ব্যাকটেরিয়ার মত, বিভাজিত হয় ব্যাকটেরিয়ার মত এবং কখনও কখনও এন্টিবায়োটিকের কারণে রিয়্যাক্টও করে ব্যাকটেরিয়াদের মত। এমনকি এদের জেনেটিক ল্যাঙ্গুয়েজও এদের আশ্রয়দাতার কোষ থেকে আলাদা।

এই নতুন ধরনের সেলকে বলা হয় ইউক্যারিয়োট। আগের সিম্পল সেলকে হয় প্রোক্যারিয়োট। ইউক্যারিয়োট সাধারণতঃ প্রোক্যারিয়োট থেকে আকারে অনেক বড় হয়। কখনও কখনও ১০০,০০০ গুন বড়। আর এরা প্রায় হাজারের থেকেও বেশি ডিএনএ বহন করে। ক্রমে ক্রমে এমন এক সিস্টেমের উদ্ভব হলো যেখানে পৃথিবীতে দুই ধরণের প্রাণীসত্ত্বা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকলো। একটা গ্রুপ যারা অক্সিজেন বর্জ্য হিসাবে নির্গমন করে আর একটা গ্রুপ যারা সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে ।

এর পরের ১ বিলিয়ন বছর ধরে ইউক্যারিয়োটসরা আরও নতুন নতুন ধরণের কায়দা-কানুন শিখে ফেললো। তারা শিখে ফেললো কিভাবে বহু কোষী প্রাণীসত্ত্বা হতে হয়। আর তখনই পৃথিবী তৈরী হলো প্রাণের ইতিহাসের পরবর্তি অধ্যায়ের জন্য। প্রাণী ও উদ্ভিদ একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি বছর ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফসল হিসাবে লেন্‌স্কির উদাহরণের মত ছোট ছোট মিউটেশগুলির একটির সাথে আরেকটির মিলিত ফলাফলেই আমাদের আজকের এই জটিল পৃথিবী।

সূত্র:
১) The Short History of Nearly Everythin by Bill Bryson
২) The Greatest Show on Earth: The Evidence for Evolution by Richard Dawkins