বাঁচা’র অধিকার,নারী অধিকার ও শিশু অধিকার অত্যন্ত মৌলিক অধিকার মানুষের।বাঁচা’র অধিকার বিশ্বে মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌছে যাওয়ার পর নারী ও শিশু নিয়ে বর্তমানে সবাই কাজ করছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক-রাজনীতিক-জনসংখ্যা-সামাজিক প্রতিটি বিভাগেই দুর্ভাগা।তার চেয়েও দুর্ভাগা এদেশের মানুষ।তার চেয়েও বেশি অভাগা দরিদ্র জনগোষ্ঠি এবং স্বাভাবিক ভাবেই নারী ও শিশুই সকল নির্যাতনে’র প্রধান শিকার!

৪০৯৫ কিঃমিঃ সীমান্ত এলাকা আছে আমাদের ভারতে’র সাথে,সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো চরম দারিদ্রতার শিকার। সারা বাংলাদেশ জুড়ে যে পরিস্থিতি,সে সব এলাকায় তার চেয়েও ভায়াবহ অবস্থা। তারই কারনে সেসব এলাকার মানুষ ভারতে যায় সাময়িক ও নিন্ম আয়ের কাজের খোঁজে। দারিদ্রতা’র আঘাতে সভ্যতার প্রায় সকল উন্নয়ন থেকে বন্চিত মানুষগুলো কোন বৈধ কাগজপত্র জোগাড় করে যায় না। তারা বি,এস,এফ ও বি,জি,বি’র সাথে ঘুষে’র সম্পর্কে জড়িত কিছু দালালের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে সীমানা পারি দেয়।সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো অবশ্য টাকা নিয়ে নিজেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদের পার করে না।তার মানে দরিদ্র মানুষগুলো সম্পুর্ন অবৈধ অবস্থায় বিপদজনক ভাবে সীমানা পাড়ি দেয়।তবে,ভারত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মুল্যে’র ফেনসিডিল নামক মাদক কিন্তু একই অবৈধ পথে তবে নিরাপদেই সীমানা পেড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে!

তেমনই শুক্রবার ভোরে নয়াদিল্লী’র এক ইটে’র ভাটায় কাজ করা পরিবারে’র বাবা ও মেয়ে সীমানা পারি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল।কিন্তু তারা কোন দালালে’র মাধ্যমে না এসে হয়তো নিজেদের উপর আস্থায় অথবা টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই প্রস্তুত মই বেঁয়ে চুঁপিচুঁপি সীমান্ত কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গানোর সিদ্ধান্ত নেয়।শনিবার দিন মেয়েটি’র বিয়ে নির্ধারিত ছিল তাই টাকা ও বিয়ের গয়নাগাঁটি নিয়ে তার বাবা’র হাত ধরে কাঁটাতারে উঠে।বি,এস,এফ এর ভয় ও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে মেয়েটি জামা-কাপড় সহ সীমান্ত কাঁটাতারে আটকে যায় তৎক্ষনিক আতংক ও ভয়ে তার গলা দিয়ে বের হওয়া চিৎকার শুনে বি,এস,এফ দুর থেকেই তারে ঝুলে থাকা অবস্থায় মেয়েটিকে গুলি করে,তার বাবা নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যায়!(সুত্রঃপ্রথম আলো)

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মেয়েটি ৪ ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে! সকাল ১০টায় বি,এস,এফ তার মৃত লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং ৩০ ঘন্টা পর পতাকা বৈঠক করে বি,জি,বি’র মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে লাশ ফেরৎ দেয়।(প্রথম আলো)

মেয়েটির বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর, তার মৃত্যুতে হয়তো একটি বাল্য বিবাহ যা নারী নির্যাতন আইনে দন্ডনীয় তা রোধ হল কিন্তু নারী ও শিশু হত্যা’র মত জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেল! বি,এস,এফ এর গুলিতে গত বছরের ৭০ জন বাংলাদেশি’র নামে’র সাথে এ বছরের প্রথম ২ সপ্তাহেই যোগ হল অন্তত ৩ জন।যাদের মাঝে এই বাচ্চা মেয়েটিও,যার চোখে কোনদিন কোন সপ্ন ছিল কিনা জানিনা তবে আমাদের অনেকে’র মত জীবনে’র প্রতি বিতৃষ্না হয়তো ছিল না।কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশের ছবি এসেছে আনন্দবাজার পত্রিকায়( সুত্রঃ প্রথম আলো)

পৃথিবী’র নানান জায়গায় প্রতিবেশী দেশে দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে,ভারতের সাথেই বৈরি দেশ পাকিস্তান,চীন,নেপাল ও ভুটানে’র সীমানা রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী মানুষ হত্যা ইসরাইল-ফিলিস্তুন নয় তা করা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেই!২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বি,এস,এফ এর গুলিতে মারা যায় ৩১৫ জন বাংলাদেশী(সুত্রঃহিউম্যান রাইটস ওয়াচ) ।মেয়েটিকে হত্যা’র পরদিন আরো ২ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা’র পর লাশ নিয়ে গেছে বি,এস,এফ(সুত্রঃযেকোন পত্রিকা)!!

সংক্ষেপে এটুকুই খবর! বেশি ব্যাখ্যা করে রগরগে করতে চাই না শুধু জানতে চাই, বাংলাদেশ সরকারের ৭% জিডিপি’র অর্থনীতি’র জন্য আড়িয়াল বিলে ৬ হাজার কোটি টাকা’র আধুনিক বিমানবন্দর প্রয়োজন নাকি সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মসংস্থান এর ব্যাবস্থা করে বাংলাদেশী জনগণকে কাঁটাতারে ঝুলন্ত মৃত্যু’র জন্য ভারতে কাজ করতে পাঠানো বন্ধ করা ও দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন?
কানাডা ও অপরদেশ যেভাবে বি,এস,এফ কর্মকর্তাদের ভিসা নাকচ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে, যদিও তাদের একজন নাগরিকও বি,এস,এফ এর গুলিতে মারা যায়নি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যখন বি,এস,এফ কে “ট্রিগার হ্যাপি” আখ্যা দেয় তখন বাংলাদেশের সরকার কি এরকম ধারাবাহিক হত্যা’র নিন্দা জানবে?এই সমস্যা সমাধানে দরিদ্রতা মোকাবেলায় কোন পদক্ষেপ নিবে?
দেশে’র সচেতন ও বুদ্ধিজীবিগণ কি এরকম মৃত্যু’র দায় কাঁধে নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে কলম ও মেধা ব্যায়ের কষ্টসাধ্য কাজটুকু করবে? ভারতে’র সরকার বা নুন্যতম পশ্চিমবঙ্গে’র বুদ্ধিজীবিরা কি কিছু বলবে?
মানুষের যে কটি অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে তার সবকটি কি লঙ্ঘিত হয়নি এক কিশোরী ফেলানী’র মৃত্যুতে?সবশেষে বিশ্বের উদিয়মান মহাশক্তিধর, পারমানবিক বোমা’র অধিকারী,বৃহৎ প্রতিবেশি ভারতে’র সাথে সুসম্পর্ক কামনা করি এবং কিছুটা সন্মান নাই হোক, মানুষ ও বাঙ্গালি হিসেবে আমাদের গুলি করে হত্যা করার আহব্বান করি ,সরকার হয়ত করবে না জেনেই নিজেরা করছি।
ফালানী’র বাবা কথা দিয়েছে,”পেটের ক্ষুধায়ও আগামিতে আর ভারত যাবে না”।