আটপৌরে রবীন্দ্রনাথ
[প্রায় দু’বছর আগে,২০০৮-এর ডিসেম্বরে,উত্তর আমেরিকা দ্বিতীয় রবীন্দ্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ফ্লোরিডার বোকা রেটনে। উদ্যোক্তাদের অনুরোধে আমাকে ছোটখাট একটা বক্তব্য দিতে হয় সেই অনুষ্ঠানে। সেই বক্তব্যটাই একটু ঘষেমেজে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য প্রকাশ করলাম।]
আমি রবীন্দ্র গবেষক নই, একজন সাধারণ পাঠক মাত্র। তাই একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকেই আমার বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করবো। আমাকে যখন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের কথা বলা হয়, আমার মনে প্রথম প্রতিক্রিয়াটাই ছিলো – প্রশ্নই আসে না, আমি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কী জানি? আমার কীই বা বলার আছে? তাও আবার জ্ঞানী-গুণীজনদের সামনে।
পরে মনে হলো, রবীন্দ্রনাথ তো আসলে আমার মতো সাধারণ পাঠকদের জন্যই লিখেছেন। তাঁর কবিতাগুলো আমার কেন ভাল লাগে সে কথা গুলো আমি বলার চেষ্টা করতে পারি।
পাখী নিজের আনন্দে গান করে, কেউ শুনলো কি শুনলো না তাতে পাখীর কি যায় আসে? ফুলও হয়তো প্রকৃতির খেয়ালেই ফোটে, মানুষের কাজে লাগলো কি লাগলো না তাতে মনে হয় ফুলের সার্থকতা নির্ভর করে না। কিন্তু সাহিত্য মানুষের জন্য। মানুষ শুধু নিজের আনন্দের জন্যই লিখে না, লিখে অন্যের জন্য। অন্যের কাছে নিজের মনের ভাবনা প্রকাশ করার জন্য। এখানেই রবীন্দ্রনাথের কবিতার অতুলনীয় সাফল্য। রবীন্দ্রনাথ নিজের মনের ভাবনাগুলোকে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছেন। তবে শুধু তাই নয়, তাঁর কবিতা পড়লে মনে হয়, এতো আমারও কথা, এমন ভাবনাতো আমারও মনে আসে। তাই রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় আমরা এত সহজে একাত্ম হতে পারি।
রবীন্দ্রনাথের গান ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,’ যখন শুনি, তখন আমার নিজের ক্লান্তির কথাও মনে আসে। যখন পড়ি, ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা’ তখন মনে হয় এ তো আমারও কথা। একাত্তরে রবীন্দ্রনাথের কবিতা “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই” আমাদের উদ্দীপ্ত করেছে। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” শুনতে শুনতে আমরা নয়নজলে ভেসেছি।
রবীন্দ্রনাথ যতই পড়ি আমি ততই মুগ্ধ বিস্ময়ে অবাক হই। প্রকৃতি, আধ্যাত্মিকতা, প্রেম-বিরহ, জন্ম-মৃত্যু, দেশাত্মবোধ, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবিক সব চিন্তা-চেতনা – কোনকিছুই তাঁর লেখা থেকে বাদ পড়ে নি।
সেই ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়ার সময় রবীন্দ্রনাথের কবিতা সম্পর্কে নোবেল কর্তৃপক্ষের ঘোষনায় বলা হয়েছিল(১), পুরস্কারটা দেয়া হচ্ছে –
“…because of his profoundly sensitive, fresh and beautiful verse, by which, with consummate skill, he has made his poetic thought, expressed in his own English words, a part of the literature of the West”
বলা দরকার, গীতাঞ্জলি-র কবিতাগুলো রবীন্দ্রনাথ নিজেই অনুবাদ করেছিলেন।
সেন্সিটিভ, ফ্রেশ এবং বিউটিফুল। রবীন্দ্রনাথের কবিতার বর্ণনার জন্য এই তিনটি শব্দ যথার্থ। রবীন্দ্রনাথের প্রত্যেকটা কবিতা যেন একেকটা সদ্যফোটা ফুলের মতোই টাটকা, সতেজ এবং সুন্দর। কিন্তু শুধু তাই নয়, সেন্সিটিভও। সেন্সিটিভ শব্দটার মধ্যে অনুভুতি এবং সংবেদনশীলতার কথা বলা হচ্ছে। এবং এখানেই রবীন্দ্রনাথের কবিতা স্বতন্ত্র, আপন ঔজ্জল্যে ভাস্বর।
এমন কোন মানবানুভুতি নেই যা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেন নি। এবং প্রায়শই এই অনুভুতিগুলো অসাধারণ কোন অনুভুতি নয়, সাধারণ মানুষের সাধারণ অনুভুতিগুলোকে অসাধারণ অনবদ্য হৃদয়ছোঁয়া ভাষায় প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় আর গানে। আনন্দ, বেদনা, উল্লাস, বিষাদ – এমন কোন অনুভূতি নেই যা তাঁর কোন না কোন গানে কিংবা কবিতায় ধরা পড়ে নি।
ধরা যাক, জন্মকথা কবিতাটির প্রথম কয়েক ছত্র –
“খোকা মাকে শুধায় ডেকে, ‘এলেম আমি কোথা থেকে
কোনখেনে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে?
মা শুনে কয় হেসে কেঁদে খোকারে তার বুকে বেঁধে –
ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে”
জন্মকথা’র এই ব্যাখ্যাটা কি পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের মনের কথা নয়? কিন্তু মনের কথার এমন সুন্দর প্রকাশ একমাত্র রবীন্দ্রনাথের পক্ষেই বোধ হয় করা সম্ভব।
গীতাঞ্জলী-তে আধ্যত্মিকতার কথা আছে। নেই চিরাচরিত ধর্মের কথা । ঈশ্বরের প্রচলিত ধারণা রবীন্দ্র কাব্যে অনুপস্থিত। তাই রবীন্দ্রনাথের ধর্ম কি ছিল, এই প্রশ্নের চাইতে রবীন্দ্র কাব্যপ্রতিভা বিচারে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাঁর দর্শন কি ছিল তাই।
আরেক নোবেল বিজয়ী বাঙালি অমর্ত্য সেন গীতাঞ্জলি-র কবিতাগুলি সম্পর্কে লিখেছেন(২),
The idea of a direct, joyful, and totally fearless relationship with God can be found in many of Tagore’s religious writings, including the poems of Gitanjali.
রবীন্দ্রনাথের এই দেবতাকে কোন ধর্মগ্রন্থে খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এই দেবতার সাথে ভক্তের সম্পর্ক ভীতির ওপরে প্রতিষ্ঠিত নয়।
রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা প্রচলিত ভগবানে বিশ্বাস বা ধার্মিকতার মধ্যে সীমিত ছিল না।
তাই লিখেছেন তার ধুলামন্দির কবিতায়,
ভজন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাক পড়ে,
রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে!
অন্ধকারে লুকিয়ে আপন-মনে
কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে,
নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে – দেবতা নাই ঘরে।।
তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙ্গে করছে চাষা চাষ –
পাথর ভেঙ্গে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারো মাস,
রৌদ্রে জলে আছেন সবার সাথে,
ধূলা তাহার লেগেছে দুই হাতে –
তারি মতন শুচি বসন ছাড়ি আয় রে ধূলার ‘পরে।।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারনার প্রকাশে এক ধরনের প্রচ্ছন্নতা বা হেঁয়ালির আশ্রয় নিয়েছেন। অমর্ত্য সেন একে বলেছেন ambiguity। তাঁর(২) ভাষায় –
An ambiguity about religious experience is central to many of Tagore’s devotional poems, and makes them appeal to readers irrespective of their beliefs; but excessively detailed interpretation can ruinously strip away that ambiguity.
Ambiguity-র অর্থ ‘দ্ব্যর্থক’ হতে পারে, কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে অর্থহীনও হতে পারে। কিন্তু গীতাঞ্জলির ভক্তিমুলক কবিতাগুলোতে যে ambiguity-র কথা অমর্ত্য সেন বলেছেন তা দ্ব্যর্থক নয় – হতেও পারে আবার নাও হতে পারে ধরনের দ্ব্যর্থতা এতে নেই। আবার একে অর্থহীনও বলা যায় না, কারণ এই ambiguity আবার গভীর ভাবে অর্থপূর্ণ। যে অর্থটা রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় প্রচ্ছন্ন রেখেছেন, ঢেকে রেখেছেন হেঁয়ালির আবরণে ইচ্ছে করেই।
অমর্ত্য সেন এই ambiguity র মাত্রাতিরিক্ত বিশ্লেষন করার পক্ষপাতী নন। কারণ তাঁর মতে এই প্রচ্ছন্নতা বা অসম্পূর্ণতাই কবিতাগুলোর প্রাণ। আমারও তাই মনে হয়।
যেমন ‘সীমায় প্রকাশ’ কবিতাটিতে
সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।
কত বর্ণে কত গন্ধে, কত গানে কত ছন্দে,
অরূপ, তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়-পুর –
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর।
এই কবিতার অসীম কি ঈশ্বর? না কি অজানা কিছু? রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট করে বলেন নি। কিন্তু এই অস্পষ্টতা বা অসম্পূর্ণতাই এই কবিতাটির বৈশিষ্ট্য। অস্পষ্টতা সত্বেও, বা বলা উচিত এই অস্পষ্টতাকে পুঁজি করেই, এই কবিতার মধ্যে আধ্যাত্নিকতার যে অপূর্ব প্রকাশ রবীন্দ্রনাথ ঘটিয়েছেন ধার্মিক-নাস্তিক নির্বিশেষে কবিতাপ্রেমী যে কেউ তার রস আস্বাদন করতে পারেন।
বাংলা ভাষার এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের একজন পাশ্চাত্য গবেষক, উইলিয়াম রাদিচে(৩) বলেছেন,
“… his blend of poetry and prose is all the more truthful for being incomplete”
রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পগুলি যেমন শেষ হয়েও শেষ হয় না, পড়ে শেষ করার পরেও মনের মধ্যে রেশ রয়ে যায়, তাঁর কবিতাও, বিশেষ করে আধ্যাত্নিক কবিতাগুলোর ‘অসম্পূর্ণতা’ই, পাঠককে দেয় এক বিশেষ ধরণের উপলদ্ধি।
আমার সৌভাগ্য যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনের ভাবনাগুলি প্রকাশ করেছেন বাংলা ভাষায়, কারন জন্মসূত্রে বাংলা আমার মাতৃভাষা। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যভান্ডার আমাদের বাঙালিদের জন্য এক বিরাট সম্পদ। আর আমরা এই সম্পদের মালিক হয়েছি শুধুমাত্র বাঙালি হয়ে জন্ম নেয়ার ফলে, বাংলা আমাদের ভাষা বলে।
আমি একজন নরওয়েজিয়ানের কথা শুনেছি, যিনি বাংলা শিখেছিলেন শুধু রবীন্দ্রনাথ পড়ার জন্য। আর একজন বিদেশীর কথা শুনেছিলাম যার অন্তিম ইচ্ছে ছিল তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা বিশেষ গান শুনতে শুনতে পরপারে পাড়ি দেবেন। ভাবা যায়!
উইলিয়াম রাদিচে যিনি রবীন্দ্রনাথের কিছু কিছু কবিতার অনুবাদ করেছেন ইংরেজীতে, বলেছেন, আসলেই রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুবাদ করাটা খুবই কঠিন, গানতো একেবারেই অসম্ভব। রাদিচে ভাল বাংলা জানেন।
লেখনের সেই বহুলপঠিত কবিতাটির কথাই ধরা যাক,
বহুদিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।।
একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু – তে যে চিত্রকল্পটি রবীন্দ্রনাথ এঁকেছেন, তাকে কি অনুবাদে ধরা সম্ভব?
কনিকা’র ছোট ছোট কবিতাগুলিতো আমরা পাই রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার আরেক বিস্ময়কর পরিচয়। আশেপাশের পরিচিত পরিবেশ থেকে তুলে এনেছেন তিনি এক বিশেষ ধরনের চিত্রকল্প, যাকে ব্যবহার করেছেন রূপক হিসেবে। একটা সাধারণ দৃশ্য থেকে অসাধারণ শিক্ষনীয় বক্তব্য বের করে এনেছেন। যেমন,
শৈবাল দীঘিরে কহে উচ্চ করি শির
লিখে রাখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির
কিংবা
ভিমরুলে মৌমাছিতে হল রেষারেষি,
দুজনায় মহাতর্ক শক্তি কার বেশি।
ভিমরুল কহে, আছে সহস্র প্রমাণ
তোমার দংশন নহে আমার সমান
মধুকর নিরুত্তর ছলছল আঁখি –
বনদেবী কহে তারে কানে কানে ডাকি,
কেন বাছা নত শির। এ কথা নিশ্চিত
বিষে তুমি হার মানো, মধুতে যে জিত।
বুঝতে কষ্ট হয় না এই কবিতার মৌমাছি আর ভিমরুল আসলে দুই ধরনের মানুষ। যারা মৌমাছি-জাতের মানুষ রবীন্দ্রনাথ তাদেরকে দিচ্ছেন অকুন্ঠ সমর্থন এই কবিতায়।
১৯৩০ সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাত ঘটে। দুই মনিষীর এই ঐতিহাসিক কথোপকথন থেকে রবীন্দ্রনাথকেই বেশি বিজ্ঞানমনস্ক মনে হয় আইনস্টাইনের চাইতে। আইনস্টাইন মনে করছেন সত্য চিরন্তন, মানুষের অনুভূতি বা উপলদ্ধির বাইরেও যা সত্য তা সত্যই। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, না, সুন্দর এবং সত্যের ধারণা একান্তই মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ। মানুষ আছে বলেই সুন্দর এবং সত্যের অস্তিত্ব আছে। সত্য মানুষের ভেতর দিয়েই প্রতিভাত হয়। তাই তিনি লিখেছেন,
আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে-
জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’
সুন্দর হল সে।
সুন্দর আর সত্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ছিল খুবই ব্যতিক্রমী। আরেকটি কবিতায় (সাধারণ মেয়ে) লিখেছেন, “হীরে বসানো সোনার ফুল কি সত্য, তবুও কি সত্য নয়?” বাল্মিকীপ্রতিভা’য় বলেছেন, রামের জন্মভূমি অযোধ্যা নয়, কবির মনোভূমি।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা এবং গান আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে বিষন্ন মন আনন্দে উদ্বেল হয়; ক্লান্ত হৃদয়ে জাগে কর্মস্পৃহা। নিরাশ মূহুর্তগুলো ভরে ওঠে উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ারে। হতবিহবল মন খুঁজে পায় প্রশান্তি। তাই রবীন্দ্রনাথ শুধু সুখপাঠ্য বইয়ের সমাহার নয়, আমার কাছে জীবনে চলার পথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।
আজ অনেক বছর ধরে আমি প্রবাসী। আমার মনেও আক্ষেপ, অনুশোচনা, একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু দেখার সময় আমার হয় নি। কিন্তু আমার-আপনার মতো প্রবাসীদের জন্যও রবীন্দ্রনাথ রেখে গিয়েছেন সান্তনার বাণী, শুনিয়েছেন আশার কথা।
তাই শেষ করছি, প্রবাসী কবিতার প্রথম স্তবক দিয়ে। আপনারা দেখবেন, আমাদের মতো প্রবাসী না হয়েও তিনি কি সুন্দর ভাবে আমাদের মনের কথা বুঝেছেন এবং আমাদের শোনাচ্ছেন,
সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।
দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি সেই দেশ লব যুঝিয়া,
পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই-
তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই,
কোথা দিয়া সেথা প্রবেশিতে পাই সন্ধান লব বুঝিয়া,
ঘরে ঘরে আছে পরমাত্মীয়, তারে আমি ফিরি খুঁজিয়া।।
সবাই ভাল থাকুন, দেশে দেশে মোর দেশ আছে, ঘরে ঘরে আছে পরমাত্মীয়, এই উপলদ্ধি নিয়ে সুখে থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে আমার কিছুটা অসংলগ্ন, কিছুটা উচ্ছ্বাসময় বক্তব্য শোনার জন্য।
ডিসেম্বর ১৩, ২০০৮
বোকা রেটন, ফ্লোরিডা।
উত্তর আমেরিকা দ্বিতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের জন্য লেখা।
(১) http://nobelprize.org/nobel_prizes/literature/laureates/1913/
(২) Sen, Amartya, “Tagore and his India,” http://www.countercurrents.org/culture-sen281003.htm
(৩) Radiche, William, Introduction to his Rabindranath Tagore: Selected Short Stories, Harmondsworth: Penguin, 1991,p. 28. cited in Sen, A. The Argumentative Indian, Picador, 2005.
অসাধারণ লেখা। লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগল, বাঙালি হিসাবে নিজেকে গর্বিত অনুভব করছি।
মানব জীবনের এমন কোন দিক নেই যা নিয়ে তিনি লেখেন নি। বিস্ময়কর প্রতিভা। আমার কাছে মনে হয় উপন্যাসের চেয়ে কবিতায় এনং গানে তার প্রতিভার স্বাক্ষর আমরা বেশী দেখতে পাই।
ইরতিশাদ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। তিনি যাই লিখেছেন এমন ভাবে মন ছুঁয়ে গেছে…
তিনি যাই লিখেছেন সোনা হয়ে উঠেছে। তিন শুধু কিন্তু লিখেই যাননি জমিদারি সামলেছেন আবার সমাজের কথাও ভেবেছেন। শান্তিনিকেতন আর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করা কি চাট্টিখানি কথা? তিনি আক্ষরিক অর্থেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন, এবং দারুণভাবে। উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার বা বিশ্বাস নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই কিন্তু আমি শুধু জানি তিনি এমন একজন অসাধারণ প্রতিভা যা সহজে সবসময় জন্মায়না।
:yes:
আমি খালি চিন্তা করি এই লোকটা যেন মানুষের মনের ভেতরে ঢুকে তার ভেতরটা খুলে তার ভেতরের অনুভূতিগুলো দেখে সেগুলো অসাধারণ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। অবাক হয়ে ভাবি কিভাবে সম্ভব এত অনন্যভাবে লেখা? এভাবে মন ছুঁয়ে যাওয়া?
লাইজু নাহারকে, মোঃ জানে আলম, সুজিত, সেন্টু টিকাদার, গীতা দাস, আফরোজা আলম,
আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, পড়ার জন্য আর সদয় মন্তব্যের জন্য।
পড়লাম। বেশ হয়েছে। কিন্তু তানবীরা তালুকদারের লেখাটায় আজো আছন্ন হয়ে আছি। তানবীরা আরো লিখতে পারেন না ?
অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলে আবার স্বরণ করিয়ে দিলেন যে ‘কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’
সর্বকালের,সর্ব সাধারণের জন্যে এমন একজন কবি,দার্শনিক, যার তুলনা করা যায়না কোনো কিছুর সাথে। সাগর যেমন সীমাহীণ কবির অগাধ পান্ডিত্য তেমন সীমাহীন। তাঁর লেখা কবিতা,গল্প,উপন্যাস কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো বলা মুশকিল।
তিনি যেন সীমার সাথে অসীমের এক যোগসুত্র। এককথায় তিনি এক বিস্ময়কর সৃষ্টি।
শুরু আছে শেষ নেই।
ভালো বলেছেন তাই লেখককে ধন্যবাদ।
শুধু চেষ্টা নয়। ঠিক ঠিক বলেছেন। দারুন লিখেছেন। রবিঠাকুর থেকেই ধার করে বলতে হয় —–
সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে/ সহজ কথা যায় না বলা সহজে, অথচ ইরতিশাদ সাহেব সহজ কথা সহজ করে বলে ফেলেছেন। ভাল লেগেছে।
সাধু সাধু ।
কি সুন্দর বলেছেন, লিখেছেন।
এই সাথে আমার মনে হয় এই বিশ্ব মাঝে যত আতঙ্কবাদী আছে তাদেরকে যদি বাংলা ভাষা শিখিয়ে রবীন্দ্র সংগীতের রস আস্বাদন করান যেত তবে তারা আর আতঙ্কবাদী থাকত না।
খুবই সুন্দর!
রবীন্দ্রনাথ কেবল প্রচলিত অর্থে একজন কবি বা সাহিত্যিক ছিলেন না।বস্তুতঃ তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক। প্রচলিত কোন ধর্মে তার বিশ্বাস ছিল না।তাকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে তার সামগ্রিক দর্শন নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
ইরতিশাদ ভাই,
সত্যি, অসম্ভব সুন্দর প্রকাশ!
লিখেছেন,
আমিতো আপনার লেখা পড়ে আবেগে নয়ন জলে ভাসছি! এ বক্তৃতায় উপস্থিত অভ্যাগতদেরও নিশ্চয়ই আপনি নয়ন জলে ভাসিয়েছেন! কারন, প্রবাসী মনেতো আপন আলয়ের সুরধ্বণীটা প্রায়শঃই অনুপস্থিত থাকে, অথচ মন অনুক্ষন ওকে খুঁজে ফিরে। পায়না। মনটা থাকে সংকুচিত, মুখাবয়ব পাঙশুর, অন্তর হয়ে ওঠেনা বিদ্রোহী হয়ে। এ এক তৃষ্ঞা, অতৃপ্ততা। ওযে রবীন্দ্রকাব্যে উপচে আছে, কারণ আমরা তো –
-র মতোই রয়েছি।
তাই যখন এই লেখাটা পড়লাম আমিও অনুভব করেছি আপনার মতোই, মনে হলো তাইতো,
কংক্রিট আর কাঁচের শীতাতপ আধারের বাইরে আমার সেই চিরাচরিত ধুলো-ধূসরিত আমার “আমি”-কে ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। আমি আপ্লুত হই, আমি ব্যকুল হই, আমারো নয়নে আনন্দাশ্রু ঝরে। প্রচন্ড সাহস ফিরে পাই! অনুভব করি এই বিশ্বচরাচরে দুপায়ের উপর ভর করে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
সত্যিতো রবীন্দ্রকাব্য যেনো আমাদের বাঙালী হৃদয়ের পটভূমি। ‘প্রবাসী’-তো কবিগুরুর আন্তর্জাতিক মনোবৃত্তির স্বাক্ষর বহন করে। গোটা বিশ্বটাকেই আপন আলয় ভাবা, একি চাট্টিখানি কথা! অথচ বাঙালী কিন্তু তাই। রবীন্দ্রনাথ তার প্রকাশ।
লেখাটি খুবই প্রাঞ্জল! যথার্থ মূল্যায়ন!
@কেশব অধিকারী,
আপনার প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য কৃ্তজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনার ভালো লাগলো জেনে আমারও ভাল লাগলো।
লেখাটা পড়ে মনটা আনন্দিত হল!
এরকম লেখা আশা করি আরও পাব!
আপনিও আদিল মাহমুদের দলভুক্ত হয়ে রবীন্দ্রবন্দনা শুরু করবেন, ভাবতে পারিনি 😉
রাদিচে গল্পেরও অনুবাদ করেছেন, জানতাম না। ভেবেছিলাম উনি শুধু কবিতাই করেছেন। কেউ পড়েছেন? কেমন হয়েছে?
কণিকা?
আইনস্টাইন ০ – রবীন্দ্রনাথ ১
@রৌরব,
আদিল মাহমুদের দলভুক্ত কি করে হলাম জানি না, তবে আমিও রবীন্দ্রবন্দনা করতে পারি, ভাবতে পারেন নি কেন, বুঝলাম না।
অবশ্যই। আরো ঘষামাজার দরকার ছিল। আমি নিশ্চিত আরো অনেক টাইপো আছে লেখাটায়। অন্তত একটা ধরেছেন, অনেক ধন্যবাদ।
বক্তা, শ্রোতা, সঞ্চালক সবাই মুক্তমনার। আমি নিশ্চিত রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তিনিও মুক্তমনার সদস্য থাকতেন। 🙂
দারুন হয়েছে ইরতিশাদ ভাই। খুব সুন্দর।
@মইনুল রাজু,
আলোকচিত্র শিল্পিও মুক্তমনার সদস্য। বক্তা এবং সঞ্চালকের বিনা অনুমতিতে ছবি দেওয়া যাবে না বলে, অনুষ্ঠানের ছবিও দেওয়া গেলো না আর কি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ, @রাজু,
অনেক ধন্যবাদ।
একগাদা বিজ্ঞানের লেখার মধ্যে পড়ে রীতিমত হাঁসফাঁস করছিলাম কয়েকটা দিন ধরে। এই লেখাটা প্রখর গ্রীষ্মে এক পশলা নরম বৃষ্টি হয়ে এলো। 🙂
নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি এই ভেবে যে, এই লেখাটা বোকা রাটনের যে অনুষ্ঠানের সেমিনারে পঠিত হয়েছিল সেখানে দর্শক হিসাবে আমিও উপস্থিত ছিলাম। মুক্তমনার পাঠকদের জন্য আরেকটু তথ্য যুক্ত করি। সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন মুক্তমনারই আরেক সদস্য ক্যাথেরীনা রোজারিও কেয়া।