ইসলামের ৫ টি স্তম্ভ। ইমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। এ পাঁচটি কাজ প্রতিটি মুসলমানদের জন্য ফরজ কাজ। ফরজ কাজ মানে হলো আবশ্যিক ও বাধ্যতামূলক। যে ব্যক্তি এই পাঁচটি কাজ না করে তাহলে সে মুসলমান নয়। যদি কেউ একটি বাদ দিয়ে চারটি ফরজ কাজ করে (অবস্থার প্রেক্ষিতে বাধ্য না হয়ে) তাহলেও সে পরিপূর্ন মুসলমান নয় আর তার জন্যে অপেক্ষা করছে মৃত্যূর পর কবরের আযাব , হাশরের ময়দানে বিচারের পর দোজখের আগুন। তবে যাকাত এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যার সামর্থ আছে শুধুমাত্র সেই যাকাত প্রদান করবে। ফকির মিশকিন যাদের সামর্থ্য নেই তাদের যাকাত আদায়ের দরকার নেই। সেটাও অবশ্য পরিস্কার করে বলা নেই তবে নিচের আয়াত ও হাদিসগুলো পড়লে দেখা যায় , যারা ফকির মিশকিন যারা কোন কিছু দিতে অসমর্থ তারা যাকাত প্রদান করা থেকে মাফ পেতে পারে।

আত্মীয়-স্বজনদেরকে তার হক দান কর, অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরদেরকেও। ১৭:২৬

তোমার কাছে জিজ্ঞেস করছে, কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দাও যে বস্তুই তোমরা ব্যয় করবে তা হবে পিতা মাতার জন্যে, আত্মীয় স্বজনদের জন্য, এতীম-অনাথ, অসহায় ও মুসাফিরদের জন্যে। ০৩: ২১৫

যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং দাস মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্য,আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্যে, মুসাফিরদের জন্য , এ হলো আল্লাহর বিধান। ০৯:৬০

যারা অদেখা বিষয়ের ওপর বিশ্বাস করে ও নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুজি প্রদান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। ০২:০৩

আর যাকাত দান কর, নামাজ কায়েম কর আর নামাজে অবনত হও তাদের সাথে যারা অবনত হয়। ০২:৪৩

তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর ও যাকাত দাও । ০২:১১০

যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত দেয় এবং যার কৃত প্রতিজ্ঞা পালনকারী এবং অভাবে , রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারনকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, তারাই হলো পরহেযগার। ০২:১৭৭

ইবনে উমর থেকে বর্নিত-প্রত্যেক মুসলমান দাস অথবা মুক্ত, বৃদ্ধ অথবা যুবক, নারী অথবা পুরুষ, তাদেরকে এক সা পরিমান ( ৩ কিলোগ্রাম প্রায়) খেজুর অথবা বার্লি যাকাত হিসাবে ব্যয় করার জন্য আল্লাহর নবী নির্ধারন করে দিয়েছেন। তিনি ঈদের নামাজ আদায় করার আগেই এ যাকাত পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সহি বুখারী, ভলুম-২, বই-২৫, হাদিস-৫৭৯

কিন্তু একজন দাস কিভাবে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় যাকাত দিতে পারে তা ঠিক পরিস্কার নয়। যহোক তার পরেও ধরে নেয়া যায় যে , যার সামর্থ নেই সে যাকাত দেবে না এটুকু ছাড় পরোক্ষভাবে হলেও কোরান থেকে বোঝা যায়। এটা হাদিস থেকেও বোঝা যায় , যেমন-

আবু হুরায়রা থেকে বর্নিত, নবী বলেছেন, যে আল্লাহ কর্তৃক ধনবান হয়েছে অথচ যাকাত দেয় নি , কেয়ামতের দিন তার সমস্ত সম্পদ একটা ভয়ংকর বিষাক্ত সাপের আকার নিয়ে তার গলা পেচিয়ে থাকবে, আর সে লোকটির গালে কামড়াতে কামড়াতে বলতে থাকবে- আমি তোর সমস্ত সম্পত্তি । সহি বুখারী, বই -২৪, হাদিস-৪৮৬

আবু সাইদ বর্নিত, যাকাত তাদের জন্য প্রজোয্য নয় যাদের পাঁচটি রৌপ্য মূদ্রা বা পাঁচটি উট বা পাঁচ ওয়াস্ক ( প্রায় ৯০০ কিলোগ্রাম) এর সমান বা এর বেশী সম্পদ নেই। সহি বুখারী, বই-২৪, হাদিস-৪৮৭

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা পরিস্কার ভাবে বোঝানো হচ্ছে যারা সম্পদশালী তারাই যাকাত দেবে আর কত সম্পদ থাকলে একজন মুসলমানের জন্য যাকাত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তাও পরিস্কারভাবে বলা আছে।

তবে সবচাইতে মজার কথা যেটা বলা আছে তা হলো-

আবু হোরায়রা বর্নিত, আল্লাহর নবী বলেছেন, কেয়ামতের দিন ততক্ষন পর্যন্ত আসবে না যতক্ষন পর্যন্ত মানুষের সম্পদ অতিশয় বৃদ্ধি পাবে আর যাকাত নেয়ার জন্য কোন লোক খুজে পাওয়া যাবে না। আর যাকে যাকাত প্রদান করা হবে সে বলবে- আমার এটা দরকার নেই। সহি বুখারী, বই-২৪, হাদিস-৪৯৩

তার মানে বোঝা যাচ্ছে- ইসলাম আসলে হত দরিদ্র মানুষদের জন্য। ধনবানদের জন্য নয়। ধন উপার্জনকে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে। যতই ধন উপার্জন করা হবে , কেয়ামতের দিন ততই ঘনিয়ে আসবে। তবে অন্য অর্থে এটা ভাল একটা দিকও । মানুষ যত বেশী ধন অর্জন করবে, যত বেশী মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে ততই কেয়ামত চলে আসবে আর মানুষ অযথা ঝামেলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। অতিরিক্ত বেশী মানুষ দুনিয়ায় আসার আর সুযোগ থাকবে না , ফলে তারা দোজখের আগুন থেকে বেচে যাবে। পক্ষান্তরে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ দুনিয়ায় বসবাস করলে আর তারা গরীব থাকলে যে বিপুল সংখ্যক লোক বেহেস্তে চলে যাবে , বর্তমানে তৈরী বেহেস্তে তাদের স্থান সংকুলান নাও হতে পারে , মনে হয় এ আশংকা থেকেই এ ধরনের হাদিসের উৎপত্তি। এর অন্য একটা অর্থও করা যেতে পারে। যেমন- যখন ইসলাম মোহাম্মদ প্রচার শুরু করেন সেই মক্কা ও মদিনাতে , বিশেষ করে হত দরিদ্র , দাস শ্রেনীর মানুষরাই সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করে। তাই তাদেরকে সান্তনা দেয়ার জন্যও মোহাম্মদ উক্ত বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। যাহোক, পরিশিষ্ট সিদ্ধান্ত হলো- জাকাত দেয়ার বিষয়টা সম্পদশালী মুসলমানদের জন্যই বাধ্যতামূলক, দরিদ্রদের জন্য এটা মাফ আর তাতে দরিদ্র মুসলমানদের মুসলমানিত্ব অটুট থাকবে।

কিন্তু অন্য চারটি স্তম্ভ যেমন- ইমান, নামাজ, রোজা আর হজ্জ এ ব্যপারে কোন রকম ছাড় দেয়া হয় নি কোরান মোতাবেক। আর এ থেকে বোঝা যায় , ইসলাম সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য ছিল না , এটা ছিল শুধুমাত্র আরব উপদ্বীপের আরবী ভাষাভাষী মানুষের জন্য। বর্তমানে যে সব ইসলামী পন্ডিতরা প্রচার করে যে- যার সামর্থ্য নেই তার হজ্জ করার দরকার নেই। এ ফতোয়া নিতান্তই তাদের মন গড়া ও বানোয়াট। এর সপক্ষে কোরানের কোন সূরাতে এ ছাড়ের ব্যপারে সামান্যতম ইঙ্গিত দেয়া হয় নি। এ ব্যপারে নিচের আয়াতটি প্রনিধানযোগ্য-

তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরা পরিপূর্নভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও তাহলে কোরবানীর জন্য যা কিছু সহজলভ্য তাই তোমাদের ওপর ধার্য্য। আর তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কোরবানী যথাস্থানে পৌছবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে বা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে বা খয়রাত দেবে কিংবা কোরবানী দেবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ ও ওমরা একই সাথে পালন করতে চাও তাহলে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী করাই তার ওপর কর্তব্য। বস্তুত যারা কোরবানীর পশু পাবে না তারা হজ্জের দিনগুলোতে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোজা পূর্ন হয়ে যাবে। ০২: ১৯৬

উক্ত আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে, কোরবানী করার চেয়ে বরং হজ্জ পালন করা সোজা। তার মানে সেই সময় এমন কিছু অতি দরিদ্র লোক ছিল যার কোরবানীর জন্য পশু যোগাড় করতে পারত না , কিন্তু হজ্জ পালন করতে তাদের কোন অসুবিধা ছিল না। যে কারনে বলা হচ্ছে- বস্তুত যারা কোরবানীর পশু পাবে না তারা হজ্জের দিনগুলোতে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোজা পূর্ন হয়ে যাবে। তার মানে যার কুরবানীর পশু যোগাড় করার সামর্থ নেই সে হজ্জের সময় তিনটি রোজা রাখবে আর হজ্জের পর আরও সাতটি রোজা রাখলে তার কোরবানী হয়ে যাবে। এখন একটি লোক কোরবানী করতে পারল না দারিদ্রের কারনে, অথচ সে হ্জ্জ পালন করতে পারল দারিদ্র সেখানে সমস্যা হলো না – এটা কিভাবে সম্ভব ? এটা একমাত্র তখনই সম্ভব যদি লোকটি মক্কার আশে পাশে বসবাস করে বা মক্কা থেকে খুব বেশী দুরে বসবাস না করে। তার মানে মোহাম্মদ কখনই কল্পনা করতে পারেন নি যে মক্কা থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দুরের মানুষ একসময় ইসলাম কবুল করবে আর তাদের মধ্যে অনেকেই কোরবানী করার সামর্থ রাখবে কিন্তু হজ্জ করার সামর্থ রাখবে না আর্থিক কারনে। আল্লাহর নবী মোহাম্মদ যিনি অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব কিছু জানেন তার পক্ষে সেটা বোঝা সম্ভব হয়নি আর তার আল্লাহও তাকে সে খবর জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। তা না হলে কোরানে এটা বলা থাকত, জাকাত ও কোরবানীর মত হজ্জ ব্রত পালনও আর্থিক সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। আরও বলা থাকত যে হজ্জ পালন করতে পারবে না সে কয়টা রোজা রাখলে তার হজ্জের সমান নেকি হাসিল হতো। কোরানের কোথাও হজ্জ পালনকে ছাড় দেয়া হয়নি। তার কারন মোহাম্মদের ধারনা ছিল ইসলাম বড়জোর মক্কা মদিনা আর তার আশে পাশের অঞ্চলের মানুষের জন্যই শুধুমাত্র নাজিল হয়েছে। আর যেহেতু হজ্জ জীবনে একবার করার বিধান, তাই মক্কা থেকে একটু দুরে যেমন দুই চারশ কিলোমিটার দুরে যাদের বসবাস তাদের পক্ষেও উটের পিঠে চড়ে সারা জীবনে একবার মাত্র হজ্জ করা সম্ভব ছিল। একারনেই ইসলামে হজ্জ পালনের ব্যপারে কোন ছাড় দেয়া হয়নি।

হজ্জের ব্যপারে কোন ছাড় যে দেয়া হয়নি তার প্রমান নিম্নের হাদিস-

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বর্নিত- এক নারী আল্লাহর নবীর কাছে পেশ করল, আমার পিতা এত বৃদ্ধ ও দুর্বল যে উটের পিঠে বসার ক্ষমতা তার নেই। আমি কি আমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করতে পারব? আল্লাহর নবী উত্তর দিলেন-হ্যা তুমি পারবে। সহি বুখারী, বই -২৬, হাদিস-৫৮৯

তার মানে শারিরীক ভাবে অক্ষম হলেও তার জন্য হজ্জ পালন আবশ্যিক আর সেটা তার পক্ষে অন্য কেউ পালন করতে পারে। এর অর্থ যে কোন মূল্যেই ফরজ কাজ হিসাবে প্রতিটি মুসলমানকে হজ্জ করতে হবে, কোন ছাড় নেই। কিন্তু কিভাবে তা পালন করা যাবে তার সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। অথচ হজ্জের সাথে অর্থকড়ির সম্পর্কই বর্তমানে প্রধান। বাংলাদেশ থেকে একজন মানুষকে হজ্জে যেতে হলে বর্তমানে প্রায় দু’ আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। যা করার সামর্থ্য ৯৯% লোকের নেই। তাহলে তারা সারা জীবনে অন্তত একবার হজ্জ পালন কেমনে করবে ? আর না করলে তো পুরোপুরি মুসলমান নয় যার মানে মরার পর দোজখের আগুনে পুড়ে খাক হওয়া ছাড়া কোন গতি নেই অথচ এ গুনাহের কাজটির জন্য তারা কোনভাবেই দায়ী নয়। অর্থাৎ ধনী নির্ধনী নির্বিশেষে সবাইকে হ্জ্জ পালন করতে হবে , এটা কিভাবে সম্ভব ? একমাত্র সম্ভব যদি তারা সবাই মক্কার আশে পাশে বা আরব দেশের মধ্যেই বাস করে। এসব দেখে শুনে মনে হয় মোহাম্মদ শুধুমাত্র মক্কার আশ পাশ লোকের জন্য অথবা বড়জোর দু একশ কিলোমিটার দুরে বসবাসকারী লোকদেরকে টার্গেট করে ইসলাম প্রচার করেছিলেন যাদের পক্ষে ছাগল বা উটের পিঠে চড়ে অথবা পায়ে হেটে সারা জীবনে একবার হলেও হজ্জ করা সম্ভব। অর্থ বা টাকা পয়সা সেখানে কোন বাধা হবে না কারন সাথে কিছু খাবার নিলেই হলো । তিনি কস্মিনকালেও ভাবতে পারেন নি বা সবজান্তা আল্লাহও তাকে অবহিত করেনি যে বাংলাদেশের মত কয়েক হাজার কিলোমিটার দুরের একটি দেশের সিংহভাগ লোক একদিন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহন করবে যাদের সিংহভাগই আবার দরিদ্র যাদের হজ্জ করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। তা যদি ভাবতে পারতেন তাহলে তিনি হজ্জের ব্যপারে কঠোর বিধান চালুর সাথে সাথেই যারা গরীব তাদের জন্য একটা ছাড় দিতেন, যেমন দেয়া হয়েছে যাকাত, কোরবানী, রোজা ইত্যাদির ব্যপারে।

তবে এ ব্যপারে নীচের আয়াতটি প্রনিধানযোগ্য-

৩:৯৭ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।

উক্ত আয়াতের সামর্থ্য এর অর্থ যদি শুধুমাত্র শারিরীক সামর্থ্য বুঝায় তাহলে তার হজ্জ পালনকে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে ধরে নেয়া যায় । অর্থাৎ যারা অতি বৃদ্ধ, বা অসুস্থ ইত্যাদি তাদের জন্য হজ্জ পালন না করলেও চলবে কিন্ত এর আগের হাদিসে কিন্তু তাদেরকেও সম্ভব হলে অন্য মানুষের মাধ্যমে হজ্জ পালন করার বিধান রাখা হয়েছে।তার মানে প্রকৃত অর্থে এখানে হজ্জের ব্যপারে কোন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে উক্ত আয়াত দিয়ে হজ্জের ব্যপারে অসমর্থ( শারিরীক বা আর্থিক) লোকদের জন্য ছাড় দেয়া হয়েছে। ধরে নেয়া যাক, এখানে আর্থিক সামর্থ্যের কথা বলা হয়েছে যদিও তা ভীষণ অস্পষ্ট। কিন্তু সে সামর্থ্যের মানদন্ড কিরকম হবে? এ ব্যপারে কোরান বা হাদিসে কোথাও সামান্যতম কোন ইঙ্গিত নেই। যদিও, হজ্জ করতে হবে , হজ্জের সময় কি পরতে হবে , আর কি কি আচার অনুষ্ঠান করতে হবে এ বিষয়ে বিস্তর কোরানের আয়াত ও হাদিস আছে। একই সময়ে যাকাতে একজন মানুষের কি পরিমান সম্পদ (পাঁচটি উট বা ৯০০ কিলোগ্রাম খাবার) থাকলে তার জন্য তা প্রদান বাধ্যতামূলক তা খুব পরিস্কার ভাবে হাদিসে দেয়া হয়েছে। যুক্তি হিসাবে বলা হচ্ছে – যাকাত আর্থিক ইবাদত তাই তা পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু হজ্জের সাথে তো যাকাতের চাইতে আরও অনেক অনেক বেশী অর্থের সম্পর্ক। ৯০০ কিলোগ্রাম খাবারের দাম বাংলাদেশে (প্রতি কেজি চাউল ৪০ টাকা হিসাবে) ৩৬,০০০ টাকা বড়জোর। তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। অথচ হজ্জ করতে লাগবে ২,০০,০০০ ( দুই লক্ষ) টাকারও বেশী যা যাকাতযোগ্য সম্পদের চাইতে প্রায় ছয়গুন বেশী। ইসলাম প্রচারের ১৪০০ বছর পর বাংলাদেশের মানুষ যে অর্থাভাবে হ্জ্জ করতে পারবে না একথা আর কেউ না জানুক বা বুঝুক আল্লাহর নবী তো জানতেন , তিনি না জানলে আল্লাহ নিশ্চয়ই তা তাকে জানাতেন কারন ইসলাম তো কিয়ামতের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে মুসলমানের জন্য। তো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আল্লাহ তো এ ধরনের সুস্পষ্ট বক্তব্য সহকারে কাকে অবশ্যই হজ্জ করতে হবে সে বিষয়ে একটা আয়াত নাজিল করত অথবা মোহাম্মদ তা হাদিসে বর্ননা করতেন। সেটা হতে পারত নিচের মত –

যে ব্যাক্তির এমন আর্থিক সামর্থ্য আছে যে হজ্জ এর জন্য ব্যয় করার পরও পরিবার প্রতিপালনের জন্য তার তিন মাসের সক্ষমতা আছে তার জন্য হ্জ্জকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হলো।

তাহলে এটা সেই ১৪০০ বছর আগেকার সময়, বর্তমান সময় ও কেয়ামতের আগ পর্যন্ত সব সময়কেই কভার করে ফেলে আর কোন বক্তব্য লাগে না। বলার দরকার নেই যে, যে কারও ৫ বা ১০ লাখ বা কোটি টাকা আছে তার জন্য হজ্জ বাধ্যতা মূলক। কেন এ ধরনের সুস্পষ্ট বক্তব্য দরকার হজ্জের ব্যপারে ? কারন আমরা দেখেছি, ইমান ,নামাজ , রোজা , যাকাত – এ চারটি ফরজ কাজের জন্য সুষ্পষ্ট বিধান বা বক্তব্য আছে। তা ছাড়াও – কে কয়টা/কাকে বিয়ে করতে পারবে , স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বা প্রহার করতে পারবে কিনা , তালাক দেয়ার পর কিভাবে আবার বিয়ে করা যাবে, একজন নারী কিভাবে কাপড় দিয়ে আপাদমস্তক কিভাবে ঢেকে রাখলে তা শালীন হবে, সম্পত্তির ভাগ কে কত পাবে, কাফের মুরতাদ বা ইহুদী নাসারাদের কিভাবে কখন হত্যা করতে হবে ,কিভাবে পশু জবাই করতে হবে , কি পশু বা পাখী খাওয়া যাবে, ওজনে কম দেয়া যাবে কিনা ইত্যাদি বিষয় সহ এমনকি বেহেস্তে হুররা কেমন আকর্ষণীয় হবে ও একজন বেহেস্তবাসী কতজন হুরদের সাথে ফুর্তি করবে তার মত আপাত তুচ্ছ বিষয়ের বর্ননা পর্যন্ত অত্যন্ত সুন্দর ভাবে দেয়া হয়েছে কোরান আর হাদিসে , অথচ হজ্জের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ একট ফরজ কাজের ব্যপারে উপরোক্ত আয়াতের মত একটা অস্পষ্ট বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর কোন বক্তব্যই নেই যাতে করে পুরো বিষয়টি পরিস্কার হয় – এ থেকে কি বোঝা যায় ? এ থেকে একটা বিষয়ই পরিস্কার আর তা হলো – হজ্জ শুধুমাত্র আরবদেশের মানুষের জন্য, প্রকারান্তরে ইসলাম ধর্মও মোহাম্মদ শুধুমাত্র আরবদেশের মানুষের কথা চিন্তা করেই প্রচার করেছিলেন।

হজ্জ পালন কেন এত আবশ্যিক ও গুরুত্ব পূর্ন সেটাও জানা যায় একটা হাদিসে-

আবু হুরায়রা বর্নিত- আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল -কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন- আল্লাহ ও তার নবীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- পরবর্তী উত্তম কাজ কোনটা ? তার উত্তর- আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। তাকে আবারও জিজ্ঞেস করা হলো-এর পরবর্তী উত্তম কাজ কোনটা ? তার উত্তর- হজ্জ পালন। সহি বুখারী, বই -২৬, হাদিস-৫৯৪

আর নারীদের ক্ষেত্রে হজ্জ আরও বেশী গুরুত্বপূর্ন, কারন তারা জিহাদের নামে যুদ্ধে যেতে পারবে না। তাই হাদিসে বলা হচ্ছে-

আয়শা বর্নিত- হে আল্লাহর নবী, আমরা মনে করি জিহাদ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ট ভাল কাজ। নবী উত্তর দিলেন- নারীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ট কাজ হলো- হজ্জ পালন করা। সহি বুখারী, বই -২৬, হাদিস- ৫৯৫

কেন হজ্জ পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্তভাবে ফরজ ও যার কোন ছাড় নেই, তার সবচাইতে ভাল কারন হলো –

আবু হুরায়রা বর্নিত- নবী বলেছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধনের জন্য হজ্জ পালন করে আর তা করার সময় নারী সঙ্গম করে না বা কোন পাপ কাজ করে না, হজ্জ পালন শেষে তার সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যেন নতুন করে জন্ম হলো । সহি বুখারী, বই -২৬, হাদিস-৫৯৬

ইসলাম প্রচারের আগে সবাই ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের, নাসারা বা মূর্তি পূজারী ছিল। তারা যখন ইসলাম গ্রহন করল, তখন কেউ যুবক, কেউ পূর্ন বয়স্ক, কেউ বা বৃদ্ধ ছিল। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠল, ইসলাম গ্রহনের আগে তারা তো ইসলামী দৃষ্টিতে অনেক পাপ কাজ করেছে, ইসলাম গ্রহনের পর সেসব পাপ কাজের জন্য কোন শাস্তি হবে কিনা , তার জন্যে বেহেস্তে গিয়ে হুর পরী নিয়ে ফুর্তি করতে কোন সমস্যা হবে কি না। সুতরাং তারা নবীর কাছে গিয়ে এর ফয়সালা জানতে চাইল। আর নবীরও ফয়সালা দিতে সামান্য দেরী হয়নি আর তা দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত হাদিসে। উক্ত হাদিস থেকে আরও বোঝা যাচ্ছে যে – গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য প্রতিটি মুসলমানকেই হজ্জ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়েসে হজ্জ করাই সব চাইতে বুদ্ধিমানের কাজ। কারন হজ্জ করার ফলে তার সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে আর অত:পর কিছুদিন পর পটল তুললে সোজা বেহেস্তে গিয়ে হুর পরীদের সাথে ফুর্তি করার অবাধ সুযোগ মিলে যাবে মুফতে। আর আর্থিক কারনে যে হজ্জ পালন করার সামর্থ রাখে না সে ব্যপারে কোরানে কোন ফয়সালা নেই , নেই হাদিসেও অথচ সেটা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক। তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব? উত্তর একটাই মোহাম্মদ ইসলাম প্রচারের মূল লক্ষ্যই ছিল মক্কা মদিনা বা তার আশ পাশের আরবদেরকে সংগঠিত করে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা, গোটা মানব জাতি তার লক্ষ্য ছিল না। মোহাম্মদের সবজান্তা আল্লাও বুঝতে পারেন নি যে পৃথিবীর দুর দুরান্তের মানুষ জন নানা কারনে একদিন ইসলাম গ্রহন করবে, তা যদি জানতেন তাহলে আর্থিক কারনে হজ্জ পালনে অসমর্থ মানুষজনের জন্য একটা নিদান তিনি অবশ্যই রাখতেন যেমন তিনি রেখেছেন পশুর অভাবে যারা কোরবানী করতে পারবে না তাদের জন্য। অবশ্য পশুর অভাবে কোরবানী না করতে পারা মানুষজনের জন্য আল্লাহর বা মোহাম্মদের সবজান্তা হওয়ার দরকার ছিল না কারন তখন মক্কা মদিনার অধিকাংশ মানুষই তো ছিল দরিদ্র বা দাস/দাসী যাদের কোরবানী করার মত পশু জোগাড়ের সামর্থ ছিল না। আর তাই কোরবানী দেয়ার পরিবর্তে ভিন্ন নিদান দেয়াও ছিল অতীব সোজা।

হজ্জের ব্যপারে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকেই যে শুধুমাত্র বোঝা যায় যে ইসলাম আরবদেশের আশেপাশের মানুষের জন্যই যে নাজিল হয়েছিল তাই নয়, অন্য বিষয় থেকেও বিষয়টা পরিষ্কার হয়। যেমন আরবী ভাষায় কোরান নাজিল হওয়ার বিষয়টি কোরানে বার বার উল্লেখ থাকা। উদাহরনস্বরূপ:

এমনি ভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরান নাজিল করেছি এবং এতে নানা সতর্কবানী ব্যক্ত করেছি যাতে তারা আল্লাহ ভীরু হয়, অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়। কোরান, ২০:১১৩

সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। কোরান, ২৬: ১৯৫

এ কোরান পরিস্কার আরবী ভাষায়। কোরান, ১৬: ১০৩

আরবী ভাষায় এ কোরান বক্রতা মুক্ত যাতে তারা সাবধান হয়ে চলে। কোরান, ৩৯:২৮

এমনিভাবেই আমি কোরান কে আরবী ভাষায় নির্দেশ রূপে অবতীর্ণ করেছি। কোরান, ১৩:৩৭

এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরান নাজিল করেছি। কোরান, ৪২: ০৭

আমি একে করেছি কোরান, আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার। কোরান, ৪৩: ০৩

আর এই কিতাব তার সমর্থক আরবী ভাষায়। ৪৬:১২

আমি কোরানকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। ১২:০২

এভাবে আরও অনেক আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই মোহাম্মদ ছিলেন আরবী ভাষী, সুতরাং তার কাছে কোরান অবতীর্ন হলে তা আরবী ভাষাতেই আসবে । আরবী ভাষায় কোরান অবতীর্ণ হওয়ার ব্যপারটা কোরানে বার বার উল্লেখ কেন, একবারও উল্লেখ করার দরকার নেই বা ছিল না। বার বার এটা উল্লেখ করার অর্থই হলো এটা শুধুমাত্র আরবী ভাষীদের জন্য তথা আরব দেশের মানুষদের জন্য। আসলে আগের কিতাব তোরাহ বা ইঞ্জিল আরামীক বা হিব্রু ভাষাতে আসার কারনে ইহুদি ও খৃষ্টানরা মোহাম্মদকে জিজ্ঞেস করত কেন তার কোরান আরবীতে আসল। এ বিষয়টাকেই সামাল দিতে গিয়ে তাকে বার বার আরবীর কথা বলতে হয়েছে। কিন্তু এত বেশীবার উল্লেখ করার কোন সঙ্গত কারন দেখা যায় না। একবার বললেই লেঠা চুকে যেত যদি সত্যি সত্যি কোরান আল্লাহর কাছ থেকে আসত। আল্লাহর কথা সত্য প্রমানের জন্য বার বার বলার দরকার নেই, একবারই উল্লেখ করাই যথেষ্ট। বিষয়টাকে এভাবে দেখা যেতে পারে, যদি কোন লোক কোন বিষয়ে কোন মিথ্যে কথাকে সত্যি বলে চালাতে চায় তখন সে বার বার তার কথা যে সত্য সেটাই বলার চেষ্টা করবে। আসলে কিন্তু তার কথা মিথ্যা। এটা অনেকটা মিথ্যেবাদীর বার বার কসম কাটার মত। হিটলারের গোয়েবলসীয় তত্ত্ব সবার পরিচিত। এ তত্ত্বের মর্ম কথা হলো- কোন মিথ্যে কথাকে সত্য বলে চালাতে গেলে তাকে একশ বার সত্য বলে প্রচার করো, তাহলে তা সত্যে পরিনত হয়ে যাবে। কোরানের আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার ব্যপারে বার বার কথা বলা অনেকটা গোয়েবলসীয় তত্ত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর একারনেই মনে হয় মুসলমানদের মধ্যে হিটলারের জনপ্রিয়তা ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা সৃষ্টির প্রবনতা বেশী। অবশ্য ইহুদি নিধনের ব্যপারটাও এর সাথে জড়িত। মিথ্যা প্রপাগান্ডার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চাঁদে অবতরনকারী প্রথম মানব নীল আর্মস্ট্রং এর ইসলাম গ্রহনের কিচ্ছা। কত জায়গায় কতবার স্বয়ং আর্মস্ট্রং স্বীকার করেছেন এমন কি ভয়েস অব আমেরিকার বেতার বা অন্য মিডিয়াতে বহুবার বিষয়টাকে অস্বীকার করার কথা প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু আজও ইসলামী ওয়াজ বা মজলিসে বিষয়টাকে স্বাড়ম্বরে প্রচার করা হয়। মিথ্যা প্রপাগান্ডা প্রচারের এ শিক্ষাটা খোদ আল্লাহর কিতাব থেকে প্রাপ্ত। কারন মোহাম্মদের আল্লাহ এ ধরনের মিথ্যা প্রপাগান্ডা মনে হয় বড়ই ভালবাসেন। যাহোক , মোহাম্মদ যে শুধুমাত্র আরব দেশে আরবদের জন্য ইসলাম প্রচার করেছিলেন তা কিন্তু চুড়ান্তভাবে পরিস্কার হয় নিচের আয়াত থেকে –

আমি কোরানকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার। ১২:০২

আমি একে করেছি কোরান, আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার। কোরান, ৪৩: ০৩

কোন রকম ভনিতা না করে সহজ সরল ভাষায় বলা হচ্ছে আরবী ভাষায় কেন কোরানকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। সে কারনটা হলো যাতে সহজে বোঝা যায়। কারা বুঝবে ? নিশ্চয়ই আরবী ভাষীরা। হিব্রু বা লাতিন বা গ্রীক বা সংস্কৃত বা ফার্সি ভাষীরা নিশ্চয়ই আরবী ভাষার কোরান সহজে কেন, কেউই কিছু বুঝবে না। কদাচিৎ দু একজন বুঝতে পারে যদি সে দীর্ঘদিন আরব দেশে থেকে আরবী ভাষা শেখে। আর আরবী ভাষীরা কোথায় থাকে ? আরব দেশে। তার মানে কোরান শুধুমাত্র আরবী ভাষী তথা আরব দেশের মানুষদের জন্য।

বিষয়টা ইদানিং আরও ভালভাবে বোঝা যাচ্ছে। বর্তমানে কোরান হাদিস নিয়ে মুসলমানদের চেয়ে অমুসলিমরাই বেশী গবেষণা করছে । তারা জানার চেষ্টা করছে এ কেমন ধর্ম যার মানুষগুলো গায়ে বোমা বেধে বা উড়োজাহাজ হাইজাক করে নিরীহ মানুষকে মারে আর নিজেও মরে। কিসের নেশায় বা লোভে এ ধরনের আত্মাহুতি দেয় মুসলমানরা। তথা কিছু মুসলমানদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মূল কারন খুজে বের করার উদ্দেশ্য থেকেই অমুসলিমদের কোরান হাদিস নিয়ে এত চর্চা বা গবেষণা। আর এটা করতে গিয়েই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে শান্তির ধর্ম ইসলাম বলে যতই প্রপাগান্ডা চালানো হোক না কেন , আসলে কোরান আর হাদিসে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের নামে খুন, খারাবি, ডাকাতি, নারী ধর্ষণ, মিথ্যা কথা , প্রতারনা -সব কিছুকে বৈধ করা হয়েছে। তার মানে ইসলাম হলো চুড়ান্ত অশান্তির একটা ধর্ম। যারা গবেষণা করে এ থলের বিড়াল বের করেছে , তারা বস্তুত আরবী ভাষার কোরান হাদিস পড়ে করেনি। তারা পড়েছে মূলত ইংরেজী বা অন্য ভাষায়। আর ইংরেজীতে অনুবাদ করেছে ইসলামী দুনিয়ায় অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিবর্গ যেমন- পিকথাল, ইউসুফ আলী প্রমুখ এরা। মজার ব্যপার হলো – যতদিন অমুসলিমরা গবেষণা করেনি ততদিন পর্যন্ত এদের অনুবাদ কর্ম নিয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় নি। যেই তারা গবেষণা করে ইসলামের প্রকৃত চেহারা বের করে ফেলেছে তখনই গোল বেধেছে আর গোল টা বাধিয়েছে খোদ মুসলমানরাই। এখন আর তাদের অনুবাদ কর্ম মুসলমানদের কাছে গ্রহনযোগ্য হচ্ছে না। খুবই মজার ব্যপার। এখন অনেকেই বলে থাকে – ইসলামকে ভাল ভাবে জানতে গেলে কোরান বা হাদিসকে খোদ আরবীতে পড়তে হবে, আরবীতে না পড়লে নাকি কোরান হাদিসের মূল ভাব ভাল করে জানা যায় না। কিন্তু তার চেয়েও মজার ব্যপার হলো – এ ধরনের উপদেশ যারা দেয় তারা মূল আরবী কোরান হাদিস পড়ে সামান্যতম কোন অর্থও বোঝে না , খালি তোতা পাখির মত আউড়ে যায়, আর নিজেদের মাতৃভাষায়ও খুব একটা কোরান হাদিস পড়ে না বা পড়েনি অথচ বিজ্ঞ মানুষের মত সবক দেয়। তার মানে উপসংহার হলো-আরবী ভাষী ছাড়া ইসলামের মাহাত্ম কেউ বুঝবে না, তথা ইসলাম হলো শুধুমাত্র আরবী ভাষীদের জন্য। যারা আরবী ভাষায় কোরান হাদিস পড়ার সবক দেয়, বলা বাহুল্য প্রকারান্তরে তারা ইসলাম যে শুধুমাত্র আরবী ভাষী আরবদের জন্য এ ধারনার পক্ষেই বলে সেটা বোঝার মত বুদ্ধি বা বিবেচনা তাদের আল্লাহ দেন নি। এটাই হলো – সব চাইতে দু:খ জনক ও হতাশা ব্যঞ্জক। পরিস্থিতি যখন এরকম- তখন অনারব মুসলমানদের কি হাল হবে কেয়ামতের মাঠে তা ভেবেই আমি দু:শ্চিন্তায় আছি। কারন তারা আদৌ মুসলমান কিনা সেটাই বিরাট প্রশ্ন এখন। প্রথমত: তাদের একটা বিরাট অংশই দারিদ্রের কারনে অত্যাবশ্যক হজ্জ করতে পারে না , আর তারা আরবী ভাষী নয়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় , মোহাম্মদের প্রথম লক্ষ্য ছিল আরবী ভাষী মক্কার মানুষ
জনদেরকে একত্রিত করে একটা শক্তিশালী মক্কা কেন্দ্রিক রাজ্য গঠন করা। হ তিনি আল্লার বানী বা ইসলামকে একটা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন।ইসলাম প্রচারের ১০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যখন তিনি তেমন কোন সুবিধা করতে পারেন নি তখন তিনি মদিনায় গমন করেন ভাগ্য পরীক্ষা করার জন্য। মদিনায় যাওয়ার পর পরই তার ভাগ্য খুলে যায়। অচিরেই সেখানকার রাজনৈতিক নেতায় পরিনত হন ও শক্তিশালী গোষ্ঠি নেতা হিসাবে আবির্ভুত হন। আর তখন তার মাথায় শুধু মক্কা নয়, গোটা আরব উপদ্বীপের সমস্ত আরবী ভাষী অঞ্চলকে নিয়ে একটা শক্তিশালী সাম্রাজ্য গঠনের উচ্চাকাংখা তার মনে মাথা চাড়া দেয়। যে কারনেই আল্লাহর কালাম কোরানের ভাষা কেন আরবী এ বিষয়টি বার বার উল্লেখ করতে থাকেন। অর্থাৎ এটা ছিল আরবী ভাষীদেরকে অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগানোর একটা কৌশল। বিষয়টা অনেকটা ইহুদীরা যেমন প্রচার করে থাকে তারা আল্লাহর নির্বাচিত জাতি – তেমন। মোহাম্মদ ইহুদীদের এ ধরনের মিথ থেকেই তার আরবী জাতীয়তাবাদের ভাব ধারা গ্রহন করেন। ইহুদীরা ছিল মেধাবী ও ধুরন্ধর জাতি আর তাই তারা বিষয়টা ভালই ধরতে পেরেছিল। যেকারনে দেখি মোহাম্মদ ইহুদীদেরকেই তার প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন সব সময়। তার রাজনৈতিক উচ্চাকাংখার বিষয়টি আরও প্রমানিত হয় অন্য একটা ঘটনার মাধ্যমে। দেখা যায়, মদিনাতে দশ বছরের বেশী সময় ধরে রাজত্ব করার পরও মক্কা দখল করা তার জন্য সম্ভব হচ্ছে না , তখন তিনি নানা কায়দায় হুদায় বিয়ার সন্ধি নামক এক সন্ধি করেন নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য। এ সন্ধির মেয়াদ ছিল দশ বছর। কিন্তু সন্ধি চুক্তির কিছুকাল পরেই মোহাম্মদের বাহিনী মক্কা দখলের মত শক্তি অর্জন করে ফেলে। তখন মোহাম্মদ অজুহাত খুজতে থাকেন কিভাবে মক্কায় আক্রমন করা যায়। দশ বছর পর আক্রমন করার মত সময় তার নেই কারন তার বয়স তখন ষাট হয়ে গেছে ও যথেষ্ট বৃদ্ধ। যে কোন সময় তার মৃত্যূ ঘটতে পারে। তাহলে তার স্বপ্ন সফল হবে না। অথচ মক্কা দখল না করলে তার স্বপ্নের লালিত আরব সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠিত হবে না। গোটা আরব উপদ্বীপে মক্কার একটা আলাদা মর্যাদা।তাই দেখা যায় সামান্য একটা অজুহাতে হুদায়বিয়ার সন্ধির মাত্র আড়াই বছর পর মোহাম্মদের বাহিনী প্রায় ১০,০০০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে মক্কা অভিযানে বের হন ও প্রায় বিনা যুদ্ধে মক্কা দখল করেন আর তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু হয় আর তখন তার বয়স ষাট। তার নেতৃত্ব যাতে কখনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন না হয় তাই বার বার আমরা দেখি কোরানে আল্লাহর সাথে মোহাম্মদের নাম উচ্চারন ও তাদের প্রতি বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস স্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি যে সত্যিই তাই তার জন্য আমরা নিচের হাদিসটি উল্লেখ করতে পারি।

আবু হুরায়রা বর্নিত- আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল -কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন- আল্লাহ ও তার নবীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন। সহি বুখারী, বই -২৬, হাদিস-৫৯৪

অর্থাৎ মোহাম্মদের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক নেতা হওয়া , ইসলাম সেখানে ছিল তার রাজনৈতিক দর্শন। তাই ইসলাম স্রেফ কোন ধর্ম নয়, সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনের মতই ইসলাম একটা রাজনৈতিক দর্শন। ইসলামী পন্ডিতরা বিষয়টি ভালমতো জানে বলেই তারা কোরান হাদিসে নানা রকম অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও সেগুলোকে এড়িয়ে মূলত মুসলমানদের রাজনৈতিক বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ইসলামের জয়গান করে ও তা প্রচার করে। কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের মধ্য দিয়ে যেমন সাম্যবাদী দর্শনের অপমৃত্যু ঘটেছে তেমনি ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনেরও যে অপমৃত্যু ঘটে গেছে চার খলিফার রাজত্বের সাথে সাথেই বিষয়টি তারা এখনও অনুধাবন করতে পারছে না। সাধারন মুসলমানরাও অনেকটা বুঝে বা না বুঝে ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর। আর সে কারনেই আজকে গোটা বিশ্ব ব্যপী ইসলাম নিয়ে এতরকম সমস্যা, এত হিংসা, এত সন্ত্রাসী ঘটনা। এখন মুসলমানরা যত তাড়া তাড়ি বুঝবে যে ইসলামী দর্শনের রাজনৈতিক কোন ভবিষ্যত নেই, বরং যতই তারা তা প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠবে তাতে মুসলমানরাই যে আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে -ততই তাদের মঙ্গল।