১৮৫২ সাল, লন্ডন, ইংল্যান্ড। বৃটেন সবেমাত্র পরাজিত করেছে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্ঞবাদী সৈন্যবাহিনী, বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে পৃথিবী বিস্তৃত বৃটিশ কলোনীগুলো, শিল্পবিপ্লল হু হু করে বাড়িয়েছে জনসংখ্যা, জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দারিদ্র, অশিক্ষা, জীবনযাত্রার নিন্মমান ও অপরাধ। গোটা লন্ডন শহর জুড়ে ছড়ানো শত শত বস্তির মধ্যে কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে মাঝে মাঝে উঠতো ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার রোল, পাশের বস্তিবাসী তার অপুষ্টিপুষ্ট শরীরটিকে বিরক্তির সাথে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ভাবতো মারা হয়তো গিয়েছে কেউ, ভেবে ভ্রু কুঁচকে ঘুমিয়ে পড়তো আবার। বলাই বাহুল্য যেই সময়ের কথা আমরা বলছি সেই সময়ে শিশুরা গন্য ছিলো খরচযোগ্য সম্পদ হিসেবে। ২৫% শিশু মারা যেতো একবছর বয়স পূর্তির পূর্বেই, আর ৫০% মারা যেতো দশবছর বয়স পূর্তির আগেই। বস্তুত একটি নির্দৃষ্ট সময় যেমন ১ বছরের মধ্যে ঘটা সকল মৃত্যুর ৫০%ই ছিলো শিশু বা অনূর্ধ্ব ১৬। শিশুকেও যে চিকিতসক দেখানো প্রয়োজন হতে পারে এমন ধারণা কারও দুঃস্বপ্নেও আসেনি কখনো, খুব সম্ভবত শিশুটি মারা যাবে এবং মারা যাবে বিনা চিকিতসায় অবর্ণণীয় যন্ত্রনায় এই সত্য মেনে নিতে কারোই কোন সমস্যা ছিলো না। শুধুমাত্র চার্লস ওয়েস্ট নামক এক ইংরেজ গাইনিকোলজিস্টের সমস্যা দেখা দিলো। তিনি বললেন, “আমি বৃটেনের প্রথম শিশু হাসপাতালটি স্থাপন করতে চাই।”
তো চার্লস ওয়েস্ট ভাবলেন একটি শিশু হাসপাতালের কথা। লোকে হাসলো, অনেকে করলো তিরষ্কার, কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো না; তবে তিনি দমলেন না। সম্পুর্ণ নিজের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এবং লর্ড শ্যাফ্টসবুরির মতো মহৎ মানুষের আর্থিক প্রচেষ্টায় ১০ বছরের মধ্যে স্থাপন করলেন ১০ শয্যা বিশিষ্ট ইংল্যান্ডের প্রথম শিশু হাসপাতাল, ৪৯ গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ঠিকানায়। পরবর্তী দেড়শো বছরে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এই পার্টনার হাসপাতালটির গ্রুথ আমরা দেখবো, অভাবিত গ্রুথ, ইনভেইসিভ, ম্যালিগ্নেন্ট, ক্যান্সারাস গ্রুথ। বস্তুত এখন যদি আপনি ৪৯ গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ঠিকানায় দাড়ান আপনি একটি হাসপাতাল দেখবেন না, বরং দেখবেন এক শহর হাসপাতাল। আপনার দুচোখের পক্ষে যতোটুকু দেখা সম্ভব, দেখবেন আপনি শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। নিজের অজান্তেই আপনার মন বলে উঠবে ‘এত্তোবড়ো শিশু হাসপাতাল আমি আমার জীবনে দেখিনাই।’ আপনি ভুল নন, বস্তুত এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল এবং বিশ্বের প্রথম তিনটি বড় পেডিয়াট্রিক হাসপাতালের একটি। এই হাসপাতালটির খেলার যায়গা বা প্লে গ্রাউন্ড কভার করতে ৫০ জন কর্মচারী প্রয়োজন হয়; শিশুদের অনেক অজব অজব রোগ হয় যেই রোগগুলোর চিকিতসা কিনা সময়সাপেক্ষ, এইসব দীর্ঘকালীন রোগীদের জন্য রয়েছে স্কুল, জীবনপ্রান্তিক রোগীদের জন্য সর্বাধুনিক পেডিয়াট্রিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমসম্বৃদ্ধ হস্পাইস সেবা এবং কি নয়। এর বিশালাকার অনেকের মনে এর সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে বিধায় সদর দরজায় বিশাল অক্ষরে লেখা দেখবেন আপনি ‘এটি একটি শিশু হাসপাতাল। এখানে কোন জরুরী বিভাগ নেই, জরুরী বিভাগের জন্য দয়া করে পার্শ্ববর্তী ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে যান।” এখানে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বিখ্যাত পেডিয়াট্রিক ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র। এই হাসপাতালেই উদ্ভুত হয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট যা কিনা বাঁচাচ্ছে হাজার হাজার শিশু ক্যান্সার রোগীর জীবন, এই হাসপাতালেই প্রথম সম্পুর্ণ কৃত্রিম হৃতপিন্ড নিয়ে একটি শিশু বেঁচে আছে, এই হাসপাতালেই প্রথম জিন থেরাপীর সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে, অর্থাৎ মানব কোষে কৃত্রিম ডিএনএ স্থাপন করে লিউকিমিয়ার চিকিতসা করা হয়। এরকম আরও কতো শত আলোড়ণ সৃষ্টিকারী আবিষ্কার যে এই হাসপাতালে হয়েছে তার সীমা নেই। এটি একটি উতপাদনশীল সেবাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং আমার মতে পৃথিবীর আর অন্যান্য এই তিন ধরণের প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে সুন্দরতম। তবে এই সৌন্দর্য জাগতিক কোন সৌন্দর্য নয়। এই সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে হবে মনের চোখ দিয়ে। মনের চোখ দিয়ে তাকাতে হবে প্রতি বছরে যেই ১০০,০০০ শিশুর জীবন এই হাসপাতাল রক্ষা করে সেইসব শিশুদের মুখগুলির দিকে।
এই হচ্ছে আমার গল্প, আমার গল্পটির মোরাল হচ্ছে usefulness is beauty. অথচ সুন্দরকে আমরা এই কোন কদাকারের বুকে পৃষ্ঠ হতে দেখি , ফুলের বাগানে কেনো দেখি শত শত শূঁয়োরের ঘোঁতঘোঁতানীপূর্ণ পঙ্ককেলি? গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ধরে সামনে হাঁটলে আপনার চোখে পড়বে বিশাল একটি লালরঙ্গা ভবন ‘রয়াল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল’ ফলক বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যতোটা আপত্তিকরভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব। (যদিও গত দুসপ্তাহ আগে ১৫ তারিখে এই ভবনটি তাদের নাম পরিবর্তন করে হোমিওপ্যাথি শব্দটি বাদ দেয় প্রচন্ড গনরোষের মুখে। গনরোষ কি হোমিওপ্যাথি শব্দটিকে কেন্দ্র করে কিনা আমি জানি না, তবে আমার রোষ হোমিওপ্যাথি শব্দটিকে কেন্দ্র করে নয়, আমার রোষ বরং হাসপাতাল শব্দটিকে কেন্দ্র করে।) তবে নাম বদলালেও কাম যে কতোটুকু বদলিয়েছে সেটা আমি যেমন জানি আপনিওতো জানেন। রিচার্ড ডকিন্সের তার এই http://www.youtube.com/watch?v=XJqfN_WfTQoভিডিওতে এই হোমিওপ্যাথি কেন্দ্রের কথাই বলছিলেন, ডকিন্স যেখানে দাঁড়িয়ে তার ঠিক পেছনেই গ্রেইট অর্মন্ড স্ট্রীট হাসপাতাল।
একটা জিনিষ আমি লক্ষ্য করলাম যে স্নাতক পূর্ববর্তী প্রাথমিক শিক্ষার সকল পাঠ্যক্রমই ছাত্রদেরকে সরলভাবে শিখিয়ে দেয় কি করে এই পৃথিবী কাজ করছে। তারা শিখে যায় গাড়ি কেনো চলে, ফ্রিজ কেনো ঠান্ডা রাখে, শ্বসন ও শালোকসংশ্লেষণ কি করে বাঁচিয়ে রাখে, কেনো ও কি প্রক্রিয়ায় মানুষ সমাজবদ্ধ হয়, কেনো বিশ্বযুদ্ধ বাধে, গ্রহ কেনো প্রদক্ষীণ করে, দাম কেনো বাড়ে, কি করে প্রজাতির জন্ম হয়, দুইয়ে দুইয়ে চার কেনো হয় ইত্যাদি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু তারা শেখে না, যেই প্রশ্নটি কিনা আমার এই লেখার শিরোনাম। ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হয়ে উঠেছে নানা ধরণের বিজ্ঞানবিরোধী সর্পতৈলব্যাবসায়ী বিরিঞ্চিবাবাদের এক আদর্শ প্রজননস্থল। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই রমরমা সাপের তেলের হাঁটকে কার্যকরীভাবে গরম করে রাখে কিছু কোয়্যাক-সমব্যাথী শিক্ষিত মানুষ, শিক্ষা কিনা যাদের মন থেকে ছিটকে ছিটকে পরিবেশে বেরিয়ে আসা ঘৃণ্য কনস্পিরেসি থিওরির নিস্ক্রমন-পথটি চিরতরে সিলগালা করে দিতে পারেনি। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে থাকে ইসলামের বিরুদ্ধে তুমি এতো প্রদাহী কেনো? আমার দুঃখ হয় তাদেরকে যদি আমি দেখাতে পারতাম বিজ্ঞানবিরোধিতা যেমন- হোমিওপ্যাথি, ক্রিয়েশনিজম, হুজুরের পানিপড়া, কমিউনিজম ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমি কতোটা প্রদাহী, অনুপাত হিসেব করে তারা বোধহয় তাদের পূর্বোক্ত প্রশ্নটি পরিবর্তন করে এই প্রশ্ন করতো যে- ইসলামের বিরুদ্ধে আনুপাতিকভাবে কেনো এতোটা অপ্রদাহী আমি। যাই হোক, আমার আমার এই লেখাটির উদ্দেশ্য হতে যাচ্ছে – ‘ঔষধ কি করে অসুখ ভালো করে’ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। সময়ের অভাবে আমার এই লেখাটির মান হতে যাচ্ছে তুলনামুলকভাবে খারাপ এবং লেখা হতে যাচ্ছে অবিস্তারিত ও অগোছালো। তবে কেউ যদি আসলেই জানতে ইচ্ছুক হন, ‘ঔষধ কি করে অসুখ ভালো করে?’, তার চিন্তার খোরাক যোগাতে পারে এটা।
ড্রাগ একটি অতীব প্রয়োজনীয় জিনিষ, ড্রাগের অভাবে আমরা প্রত্যেকটি হ্যাপ্লোরিন বানর মারা যাবো। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে আমরা হ্যাপ্লোরিন বানরেরা ভিটামিন সি জৈবসংশ্লেষ করতে পারি না কেননা আমাদের ভিটামিন সি জৈবসংশ্লেষ গমনপথের একটি অতীব প্রয়োজনীয় এনযাইম গুলোনোল্যাক্টোন অক্সিডেস আমাদের বংশধারায় লস অফ ফাঙ্কশন মিউটেন্ট। ভিটামিন সি এর অভাবে দেখা দেয় স্কার্ভি নামক একটি ঘাটতি রোগ বা ডিফিসিয়েন্সি ডিসিস। কোলাজেন হচ্ছে একটি কোষ-সংযুক্তি প্রোটিন বা সেল অ্যাঢেশন মলিকিউল যার কাজ একটি কোষকে অরেকটি কোষের সাথে বন্ধনযুক্ত করা। এই বন্ধনই কিন্তু আমাদের টিস্যুকে দেয় সংগঠনগত দৃঢ়তা, হাড়ের টিস্যু অনেক দৃঢ় কেননা তাদের অ্যাঢেশন অনেক দৃড়, রক্তটিস্যু তরল কেননা রক্তকোষগুলোর অ্যাঢেশন প্রায় নেই বললেই চলে। কোলাজেন একটি ফাইব্রাস বা তন্তুভিত্তক প্রোটিন। একটি একক তন্তু কিন্তু খুবই দুর্বল, কিন্তু একাধিক তন্তুকে যদি একটির উপর অপরটি রশির মতো পাকানো যায় তবে তার টেন্সাইল স্ট্রেন্থ বাড়তে থাকে, সেই তন্তু দিয়ে জাহাজ ঘাটে বাঁধা সম্ভব। একটি একক কোলাজেন চেইন দুটি অপর কোলাজেন চেইনের সাথে পাকিয়ে হিলিস গঠন করতে পারে বলেই অ্যাঢেশন হওয়া সম্ভব এতোটা দৃঢ়, বস্তুত এই প্রাণালীই এর পেছনে দায়ী যে- আমাদের চুলের টেন্সাইল স্ট্রেন্থ ইস্পাতের চেয়েও বেশী। যাই হোক কোলাজেনের এই তন্তু পাকানোর ক্ষমতা নির্ভরশীল তার চেইনের নির্দৃষ্ট ফাঁক পর পর যেই প্রোলিন রেসিডিউগুলো রয়েছে তাদের উপর। প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস নামক এই একটি এনযাইম প্রোলিনকে অক্সিডাইজড করে হাইড্রক্সিপ্রোলিনে রূপান্তর করে। ফলে, সহসাই চার্জহীন, হাইড্রোফোবিক প্রোলিন অ্যামিনো এসিড অন্য কোলাজেন চেইনের আরেকটি হাইড্রক্সিপ্রোলিনের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন স্থাপন করতে পারে। এই হাইড্রোজেন বন্ধনই বস্তুত কোলাজেনের পাকানো তন্তুকে ধরে রাখে। দেখা যায় যে, প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস এনযাইমের একটি কো-ফ্যাক্টর হচ্ছে অ্যাস্কর্বিক এসিড বা ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর অভাবে প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস প্রোলিনকে অক্সিডাইজডকরার আগে নিজেই অক্সিডাইজড হয়ে যাবে, অর্থাৎ ভিটামিন সি এর অভাবে কোলাজেন তন্তু পাকাতে পারবে না তাই কোষের অ্যাঢেশন দুর্বল হতে থাকবে এক সময় টিস্যু ঐক্যবদ্ধতা হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্কার্ভির প্রথম লক্ষণগুলোই তাই দাঁত পড়ে যাওয়া, মুখ হতে রক্তপাত, সারাশরীর হতে রক্তপাত, চামড়ায় অন্তস্থিত রক্তপাত বা ইন্টার্নাল ব্লিডিঙ্গএর ছোপ ছোপ দাগ, পরিশেষে মৃত্যু। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্কার্ভির চিকিতসা কি? এখন যদি একটি হাসপাতালে কেউ স্কার্ভি নিয়ে অপস্থিত হয় ডাক্তার তাকে কি ঔষধ দেবে? উত্তর হচ্ছে ভিটামিন সি, তাকে খাওয়ানো হবে পর্যাপ্ত পরিমানে সাইট্রাস ফল যেমন- আপেল, কমলা ইত্যাদি। ভিটামিন সিই হচ্ছে স্কার্ভির একমাত্র ঔষধ যা কিনা প্রকৃতি নিজেই আমাদের যোগান দিচ্ছে। নাহলে ভাবুন ভিটামিন সি এর মতো এতোটা গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুর সংশ্লেষ গমনপথ হারিয়ে ফেলাটা যে কোন জীবের জন্যই হতো প্রাকৃতিক নির্বাচনেরহিংস্র থাবার নীচে পড়ারই নামান্তর, কিন্তু নিজে ভিটামিন সি সংশ্লেষ করতে না পেরেও অন্যান্য জীব যারা কিনা এটা সংশ্লেষ করতে পারে তাদেরকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী চাপ আমরা হ্যাপ্লোরিন বানরেরা এড়িয়ে গিয়েছি। হৃদয়হীন মাপেট যারা কিনা দাবী করে থাকে যে গত তিনশোছত্রিশ বছর যাবত সে কোন ড্রাগ গ্রহন করেনি, তাদেরকে আপনি এখন এটা বলে দিতে পারেন যে ঐ মাপেট গত তিন চার ঘন্টা আগেই তার শেষ খাবারের সাথেই গ্রহন করেছে অ্যাস্কর্বিক এসিড নামক এই ড্রাগটি, এটা সে পছন্দ করুক আর নাই-ই করুক।
কোয়্যাক যারা কিনা সংজ্ঞাগতভাবেই বিজ্ঞান অশিক্ষিত, বিজ্ঞানের চেয়ে কাসাসুল আম্বিয়া কিনা যাদের কাছে অপেক্ষাকৃত বেশী মজাদায়ক, তারা মনে করে থাকে যে প্রমানভিত্তিক চিকিতসাবিজ্ঞানে আমরা রোগের বিরুদ্ধে আদা,রসুন, জিরা, মরীচ প্রভৃতি রোগীকে খাইয়ে দেখি কোন কাজ হয় কিনা, কাজ হলে হাত তালি মেরে বলে উঠি there we are! আসলে কি ঔষধ এইভাবে কাজ করে থাকে? মোটেই না। একটি ড্রাগ ডিজাইনের প্রথম ধাপই হচ্ছে টার্গেট নির্ধারণ। টার্গেট হচ্ছে অনু যার সাথে কিনা একটি ড্রাগ অ্যাগোনিস্ট বা এন্টাগোনিস্ট হিসেবে বন্ধন করবে। একটি রোগকে জানতে থাকলে আস্তে আস্তে প্রতীয়মান হয় একটি টার্গেট যেটিতে কিনা ঔষধ ব্যাবহার করা যায়। তারপর ঐ ঔষধটি ডিজাইন করে দেখা হয় কতোটা অশানুরুপভাবে সে টার্গেটের সাথে বন্ধন স্থাপন করছে, আরও দেখা হয় টার্গেট ছাড়া অন্য কোন অনুর সাথে বন্ধন স্থাপন করছে কিনা। তিনটি অনু ড্রাগ টার্গেট হতে পারে- প্রোটিন যেমন বিভিন্ন এনযাইম ও রিসেপ্টর, ডিএনএ এবং রাইবোযোম। আমি ড্রাগ টার্গেটিঙ্গ এর একটি উদাহারণ দিতে চাই-
যেইসকল জীবেরা প্রাণী তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটি প্রতিক্রিয়া বা রেসপন্স রয়েছে যাকে কিনা বলা হয় ফাইট অর ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া, যে কোন স্ট্রেস বা বিপদের মুখে এই রেসপন্স কার্যকর হয়। এটির অনুঘটক কিডনীর উপরস্থিত অ্যাড্রেনাল গ্লান্ড নামক দুটি ছোট অঙ্গ (ব্যক্তগতভাবে এটি আমার প্রাণীদেহের পাঁচটি প্রিয় অঙ্গের একটি) কত্বৃক নিস্ক্রিত অ্যাড্রেনালিন ও নোর্যাড্রেনালিন নামক হর্মোন। অ্যাড্রেনালিন হৃদকোষে এক্সপ্রেসড বেটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর টাইপ ১ নামক একটি ট্রান্সমেম্ব্রেইন রিসেপ্টর বন্ধন করে একটি সংকেত সঞ্চালন ক্যাসকেড সূচিত করে যার চুড়ান্ত ফলাফল হয় হৃতস্পন্দন হার বৃদ্ধি পাওয়া ও হৃদকোষের সঙ্কোচন বল বা কন্ট্রাক্টাইল ফোর্স বৃদ্ধি পাওয়া। হঠাত একটি বিকট শব্দ শুনলে কিংবা টিভিতে বসে ধারাবাহিক ডক্টর হু দেখার সময় কোন এক চরম মুহুর্তে আমাদের হৃদস্পন্দন যে বৃদ্ধি পায় এটা সেই কারণেই। ফ্লাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স একটি ভালো জিনিষ, তবে উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগী যাদের হৃদপিন্ড এমনিতেই বেশ ঝুঁকিপূ্র্ণ তাদের জন্য এটা অতোটা ভালো কিছু নয়। যখন তখন ফ্লাইট আর ফাইট রেসপন্স চালু হয়ে এরা হার্টঅ্যাটাকে মারা যায় অনেক বেশী, দেখেননি পত্রিকায় প্রিয় দল ফুটবল খেলায় গোল করলে পরে উত্তেজনায় দর্শকের মৃত্যু কিংবা ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে মায়ের মৃত্যু? যাই হোক, দেখা যাচ্ছে এই বেটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর টাইপ ১ প্রতীয়মান হচ্ছে একটি সম্ভাবনাপূর্ণ ড্রাগ টার্গেট হিসেবে, এই রিসেপ্টর এন্টাগনিজম করে আমরা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনতে পারি। আমরা একটা ইনহিবিটরও ডিজাইন ও সংশ্লেষ করলাম এটিনলোল নামে। এটিনোলল আড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের সাথে বন্ধনও করলো। নিঃসন্দেহে এটি ফ্লাইট আর ফাইট রেসপন্স সূচীত হওয়া রোধ করবে, এটি কাজ করবে যেই কারনে, একই কারনে একটি জিনিষ উপরে ছুড়ে ফেললে নীচে নেমে আসে। অথচ, কতোটা নির্দয় কোয়্যাকেরা যারা কিনা বলে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। কোয়্যাক বলে ওয়েল তোমার কেমিস্ট্রি ঠিকই আছে তবে সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ব বিস্তারিতিভাবে অধ্যয়ন করে আমি দেখাছি যে, তারপরেও ড্রাগ কাজ করে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি দেখতে পারো এইযে অধ্যক্ষ রুস্তম আলী পল্টুর ব্যক্তিগত ব্লগ, এবং আমার আপন খালুর আত্নজীবনী। এতোকিছুর পরও যদি কোয়্যাকটিকে আমি একটি অট্টহাস্য উপহার না দেই, কৃতজ্ঞাতাস্বরূপ কয় রাকাত নফল নামায কোয়্যাকটির আদায় করা উচিত, সেটি কোয়্যাকই বসে নির্ধারণ করুক এবার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরেকটি জিনিষ যা নিয়ে কোয়্যাক ও কোয়্যাক-সমব্যাথীদের অভিযোগের অন্ত নেই কোন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে প্রতিক্রিয়া যা কিনা আগে থেকে আশা করা হয়নি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিন্তু বিজ্ঞানীরাই, রসায়নবিদেরাই আবিষ্কার করে, কোন কোয়্যাক কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আবিষ্কার করে না। থালিডোমাইড ছিলো একটি সিডেটিভ ড্রাগ যেটি কিনা মেয়েদের মর্নিং সিকনেসের ঔষশ হিসেবে অবিষ্কৃত হয়, মর্নিং সিকনেস একটি নোংড়া নোংড়া যন্ত্রনা যেটি কিনা আমাদের সভ্যতার বিপুল পরিমান সময় এবং ফলশ্রুতিতে অর্থ নষ্ট করে। একটি চমতকার ড্রাগ হিসেবে এটি চলেই আসছিলো তবে সমস্যা দেখা যায় একটি। গর্ভবতী মহিলারা এটি গ্রহন করলে পরে দেখা যায় জন্ম নেওয়া সন্তানদের হচ্ছে ফকোমালি নামক একটি বিকাশবিকৃতিজনিত রোগ বা কঞ্জেনিটাল ডিসিস যেখানে কিনা হাত-পাগুলো হয় স্বাভাবিকের চেয় অনেক ছোট এবং অঙ্গুলগুলোর বিকাশও স্বাভাবিক হয় না, কান ও অন্ত্রের বিকাশও হয় অস্বাভাবিক। ভ্রুনগতবিকাশবিকৃতির অনুঘটক রাসায়নিককে বলা হয় টেরাটোজেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে থালিডোমাইডের টেরাটোজেনিসিটির উতস কি? দেখা যায় যে, টোটাল সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় কারখানায় সংশ্লেষিত থালিডোমাইড ধারণ করে আর ও এস এনান্টিওমারের অর্ধক অর্ধেক অনুপাত, একটি আইসোমার টার্গেট ইনহিবিট করে এবং অপরটি ইনহিবিট করে সম্পুর্ণই নতুন ও অনাকাঙ্খিত একটি টার্গেট যেই টার্গেটটি কিনা হাত-পা এর বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। থালিডমাইড টেরাটোজেন গর্ভধারণের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে, এরপর থালিডমাইড সম্পুর্ণই নিরাপদ। তাই বাজার থেকে তুলে নেওয়া থালিডোমাইড আবার বাজারে প্রবেশের অনুমতি পায় এবং এখন এটি ব্যাবহার হচ্ছে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সার চিকিতসায়। আমরা যেই টার্গেটের বিপরীতে একটি ড্রাগ পছন্দ করি একটি ড্রাগ ঐ টার্গেটের পাশাপাশি যদি অন্য কোন টার্গেটও ইনহিবিট করে তখনই দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এবং এটি কিন্তু খুবই স্বাভাবিক যে একটি ড্রাগ একাধিক টার্গেট ইনহিবিট করবে। আমাদের শরীরে মোত প্রোটিন তৈরী হয় ২০০,০০০-২৫০,০০০ ধরণের। অথচ কনসার্ভড ডোমেইনের সংখ্যা কিন্তু মাত্র ৬০ টি। অর্থাৎ, প্রতিটি প্রোটিনই এই ৬০ টি কনসার্ভড ডোমেইনের এক বা একাধিকটির কম্বিনেশন পার্মুটেশন। একটি ড্রাগে একটি নির্দৃষ্ট ডোমেইন সম্বৃদ্ধ একটি প্রোটিন ইনহিবিট করেই শুধু ক্ষান্ত থাকবে না বরং ইনহিবিট করবে ওই একই ডোমেইন সে আরও যেই যেই প্রোটিনে সে পাবে তাদের সবকটিকেই। এবং বলাই বাহুল্য সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই কিন্তু খারাপ কিছু হবে না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভালো কিছুও হতে পারে। একটি ড্রাগ যদি একটি মাত্র এনযাইমই শুধু ইনহিবিট করে এটাকে বলে ঐ ড্রাগের স্পেসিফিসিটি। যেমন- বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত সর্বাধিক স্পেসিফিসিটিসম্পন্ন (আমার মতে) ড্রাগ হচ্ছে ইমাটিনিব যা ব্যবহৃত হয় ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার চিকিতসা হিসেবে। যাই হোক, আমি আপনাদের অ্যাস্পিরিনের একটি ভয়াবহ ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলতে চাই।
অ্যাস্পিরিন সহ সকল NSAID ড্রাগের টার্গেট হচ্ছে সাইক্লোঅক্সিজেনেস এনযাইম যা কিনা প্রস্টাগ্লান্ডিন সংশ্লেষ গমনপথের একটি অপরিহার্য অংগ। থ্রম্বোক্সেন হচ্ছে প্রস্টাগ্লান্ডিনের মতোই আরেকটি প্যারাক্রাইন ফ্যাক্টর রাসায়নিক গঠনগত দিক থেকে যেটি কিনা প্রস্টাগ্লান্ডিনের খুবই কাছাকাছি, তাই বলাই বাহুল্য যে থ্রম্বোক্সেন সংশ্লেষ গমনপথও সাইক্লোঅক্সিজেনেস নির্ভর। অ্যাস্পিরিন সাইক্লোঅক্সিজেনেস ইনহিবিট করার মধ্য দিয়ে শুধু প্রস্টাগ্লান্ডিন সংশ্লেষ গমনপথেই বাধ সাধছে না, বাধ সাধছে থ্রম্বোক্সেন সংশ্লেষ গমনপথেও। প্রস্টাগ্লান্ডিন যেমন ইনফ্ল্যামেটোরি রেসপন্স বা প্রদাহী প্রতিক্রিয়ার অনুঘটক, থ্রম্বোক্সেন তেমনি ব্লাডক্লট রেসপন্স বা রক্তজমাটবদ্ধকারী প্রতিক্রিয়ার একটি অনুঘটক। অর্থাৎ, অ্যাস্পিরিন স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন রোগী যেমন হাইপারটেনশন রোগীদের স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক অনেক কমিয়ে দেয় রক্তজমাটবদ্ধকরণে অসহযোগীতা করার মধ্য দিয়ে। অ্যাস্পিরিনের কাছ থেকে তো এটা আমরা আশা করিনি, আমরা জানতামও না যে অ্যাস্পিরিন এটা করে। এটা অ্যাস্পিরিনের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। থ্যালিডোমাইডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলে বলে আপনি কোয়্যাকদের চারপাশ দুর্গন্ধ করে ফেলতে দেখবেন অথচ, অ্যাস্পিরিনের এই সাইড ইফেক্ট কিন্তু তারা চুপিসারে এড়িয়ে যায়। কতোটা অসত ও অজ্ঞান কোয়্যাক চিন্তা করুন।
প্ররোচনা বা সাজেস্টেবিলিলিটি তথ্যকে বিক্রিত করে। আমি একটি স্টাডি দেখেছি যেখানে দুটি গ্রুপকে দুটি মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্থ গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে যথাক্রমে প্রশ্ন করা হয় ‘গাড়ি দুটি কতো গতিবেগে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়’ এবং ‘গাড়ি দুটি দুর্ঘটনায় পতিত হবার সময় তাদের গতিবেগ কতো ছিলো’। দেখা যায় যে ‘সংঘর্ষ’ গ্রুপ ‘দুর্ঘটনা’ গ্রুপ থেকে গড়ে বেশ খানিকটা বেশী গতি রিপোর্ট করছে। একই স্টাডি বহুবার পুনঃপ্রতিপাদন করেও এই একই ফল পাওয়া যায়। কি কারণে এটা ঘটে? এটা ঘটে কেননা ওই স্টাডির কোয়্যারি প্রশ্নদুটি ছিলো সাজেস্টিভ বা প্ররোচনামূ্লক। যখন বলা হচ্ছে ‘সংঘর্ষ’ তখন মানব মন ধরেই নেয় যে এটার গতিবেগ একটি প্লেসিবো শব্দের চেয়ে বেশী কেননা আমাদের রয়েছে কনফার্মেশনাল বায়াস নামক একটি মানবিক প্রবৃত্তি, একজন অপেক্ষাকৃত বেশী এক্সপার্টিজধারীর বক্তব্যকে কনফার্ম করার পায়তারা খোঁজে আমাদের মন সবসময়। এমনকি বাজার বা মার্কেটপ্লেস যেখানে মানুষ মনস্থির করেই যায় যে কনফার্মেশনাল বায়াস দ্বারা আক্রান্ত হবে না, সেখানেও সে কিন্তু এই বায়াস এড়িয়ে চলতে পারে না, কেননা এটা বিবর্তনতাত্বিকভাবেই সংরক্ষীত, এটা কেমিস্ট্রি।
বায়াস আমরা কিভাবে নির্ধারণ করি তার একটি সহজ উদাহারণ আমি দিতে চাই। মনে করুন, আপনি মাল্টিপল চয়েস প্যাটার্নে চারটি বিকল্প সম্বৃদ্ধ ২৫ টি প্রশ্ন তৈরী করলেন যার প্রথম পাঁচটির উত্তর প্রথম বিকল্পটি। এখন পরবর্তী পাঁচটি প্রশ্নকে যদি আপনি প্লেসিবো প্রশ্ন রূপে স্থাপন করেন তবে আপনি নির্ধারণ করতে পারেন প্ররোচনা ঐ স্টাডিকে কতোটা প্রভাবিত করছে। পরবর্তী পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কয়টির জন্য উত্তরকারী প্রথম বিকল্পটি বেঁছে নেয় এটা দেখে আপনি পরিমানগতভাবে পরিমাপ করতে পারেন বায়াস দ্বারা উপাত্তকে কতোটুকু দূষিত করছে সে। তার দূষণটুকু আপনি আসল উপাত্ত থেকে বিয়োগ করে উপাত্তকে খাঁটি করে অন্য একটি কোহর্টে পুনঃপ্রতিপাদন করতে পারেন। কিন্তু হায় কাকে এই কথা বলছি, বিজ্ঞানের দর্শনতো কোয়্যাক বোঝে না।
ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পর্কে কোয়্যাকরা একটা মিথ্যাচার করে যে একাধিক কোহর্টের মধ্যে একটি পরীক্ষা সর্বদা একই ফল প্রকাশ করে না। এটি কি সত্য? উত্তর হচ্ছে না। একটি ফেইস ১ ট্রায়াল যদি ৫০০ জনের একটি কোহর্টে নিরাপদ নির্ধারিত হয় আর অন্য একটি ৫০০ জনের কোহর্টে ফেল মারে তবে সেটি ফেলই মারে। রিপ্রজিউসিবিলিটি হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রাণ, একই পরীক্ষা একই সেটিং এ একই ফল প্রদান না করলে আমরা চুপিসারে কেটে পরি। অবশ্যই ড্রাগ ট্রায়াল নিয়ে চুপিসারে কেটে পড়া যায় না। আইনগতভাবে আমরা বাধ্য একটি ট্রায়ালের ফলাফল ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক বা কেন তা প্রকাশ করতে। কোয়্যাকদের এই যুক্তিটা অনেকটা এইরকম যে- মধ্যাকর্ষণ বলে সব কিছু মাটিতে পড়বে, পাখি আকাশে ওড়ে, হা হা হা হা মধ্যাকর্ষণ তবে ভুল। বলাই বাহুল্য, মধ্যাকর্ষণ ভুল নয়, কোয়্যাকটি তার সেলফ ডিলুশনাল অলস মস্তিষ্ক দিয়ে মধ্যাকর্ষণকে যেভাবে বুঝেছে সেটি ভুল। একটি স্টাডি কিভাবে ডিজাইন করা হয় কোয়্যাক জানে না। তারা জানে না লিনিয়ার স্ট্যাটিস্টিকাল মডেল ব্যাবহার করে যে আমরা একটি ডিপেন্ডেন্ট চলকের বিরুদ্ধে একাধিক এক্সপ্লানেটোরি চলক স্থাপন করে নির্ধারণ করতে পারি অজানা চলকের ফাঙ্কশন। এই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা। এই প্রক্রিয়াতেই আমরা নির্ধারণ করি একটি গাড়ি নষ্ট হবার আগে কতোদিন চলবে এবং একবার দুর্ঘটনায় পড়ে এইটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হলে নেট আয়ু তার কতোখানি কমবে। এটাকে বলে কাপ্লান-মারিয়ার রিলেটিভ সার্ভাইবেবিলিটি প্লট। কিন্তু, কোয়্যাক তো পরিসংখ্যান বোঝে না। স্টাডিকে ডাবল ব্লাইন্ড রেখে সংগ্রহিত উপাত্তের সিলেকশন ও গ্রুপিং বায়াস যে আমরা শূণ্যতে নামিয়ে আনতে পারি এই কথা কোয়্যাক বলে না। অথবা, অন্যান্য প্রতিটি বায়াস যা কিনা উপাত্তকে দুষিত করে তার সবগুলো আমরা পরিমাপগতভাবে মেপে তা বিয়োগ করে যে উপাত্তকে শুদ্ধ করতে পারি এই ব্যাপারটিও কোয়্যাক আমলে নেয় না। ডিভিয়েশন, ভ্যারিয়েন্স, মিন, মেডিয়ান মেপে আমরা যে উপাত্তের সেন্ট্রাল ট্রেন্ড নির্ধারণ করতে পারি এটাও কোয়্যাক বলে না। সর্বোপরি প্রত্যেকটি পরীক্ষাই যে পরীক্ষা হয়ে ওঠে অনেকবার পুনঃপ্রতিপাদিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই জিনিষটাই কোয়্যাক বোঝে না।
অ্যালোপ্যাথি শব্দটি নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। জার্মান দেশে জন্ম নিয়েছিলো সামুয়েল হানিমান (ডক্টর হ্যানিবল নয়) নামক এক চরম ধুরন্ধর বাটপার কোয়্যাক। সেই সর্বপ্রথম হোমিওপ্যাথি করতো এবং অ্যালোপ্যাথিও তার কয়েন করাই একটি টার্ম। এভিডেন্স বেইজড মেডিসিনকে সে অ্যালোপ্যাথি নাম দেয় অনেকটা আমেরিকার ক্রিয়েশনিস্টরা বিবর্তনতত্বকে যেমন ডারউইনিজম নাম দেয় তাদের মতোই। অ্যালোপ্যাথি কি কোন মেশ টার্ম, না; বিজ্ঞানীরা জার্নালে কথা বলার সময় কি এই শব্দটি উচ্চারণ করে, না। মেডিসিন দুই প্রকার- মেডিসিন আর অল্টার্নেটিভ মেডিসিন। একটি এভিডেন্স বেইজড আরেকটি কোয়্যাকারি। অল্টার্নেটিভ মেডিসিন তাদের সপক্ষে কোন এভিডেন্স যোগাড় করতে পারে না বলেই তারা অল্টার্নেটিভ। যদি পারতো তবে তারা আর অল্টার্নেটিভ থাকতো না, তারা হতো শুধুই মেডিসিন। সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে- অ্যালোপ্যাথি শব্দটি চলুন আমরা কেউ ব্যাবহার না করি, যেই কারণে আমরা ব্যাবহার করিনা ডারউইনিজম শব্দটি। অ্যালোপ্যাথির একটি সুন্দর প্রতিশব্দ হতে পারে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বা প্রমানভিত্তিক ঔষধ।
তবে এটা আমি জানি কোয়্যাক থাকবেই। কোয়্যাক থাকবেই কেননা মানুষ একটি ১৩০০ সিসি আয়তনের মস্তিষ্কধারী জীব যারা বিবর্তনতাত্বিকভাবে নির্বাচিত একে অপরের উপর নির্ভর করার জন্য। কো-অপরেশন এমন একটি জিনিষ প্রকৃতির ইতিহাসে যা কখনই নাবোধক নির্বাচনের শিকার হয়নি। মানুষ তার ১৩০০ সিসি মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে ভাষা উদ্ভাবন করেছে যা কাজে লাগিয়ে কিনা তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। কি লাভ হয় যোগাযোগ স্থাপন করে? বেশ, যোগাযোগ হচ্ছে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারার অনুঘটক। এবং তথ্য হচ্ছে এমন একটা জিনিষ যা কিনা জীবন বাঁচায়। ভাবুন, নোংড়া নোংড়া ফেনিলকিটোনিউরিয়ার কথা। এই রোগের রোগীদের ফেনিলঅ্যালানিন হাইড্রক্সিলেস থাকে লস অফ ফাঙ্কশন মিউটেন্ট, ফলে মাত্রাতিরিক্ত ফেলিলঅ্যালানিন ফেনিলপাইরুভিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কে জমা হয় ও মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্থ করে। এই রোগের সিলেকশন কোএফিশিয়েন্ট .৮ অর্থাৎ, এই রোগাক্রান্ত ৮০% শিশুই প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে ব্যার্থ হয়। অথচ, শুধুমাত্র একটি তথ্য যে ‘ফেনিলকিটোনিউরিয়া রোগীকে ফেনিলঅ্যালানিনযুক্ত খাবার খাওয়ানো যাবে না ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ বিকাশপ্রাপ্র হয়েছে’ এই রোগের সিলেক্সন কোএফিশিয়েন্টকে নামিয়ে এনেছে .৮ থেকে ০ তে। ফেনিলঅ্যালানিনযুক্ত খাবার না খেলে ফেনিলকিটোনিউরিয়া রোগী বেঁচে থাকবে তেমনই যেমন বেঁচে আছি আমি কিংবা আপনি, প্রাকৃতিক নির্বাচন তার কিছুই করতে পারবে না। তথ্য জীবন বাঁচায়!!! যেই কম্পিউটারটিতে বসে আপনি এই তথ্য পাচ্ছেন, তথ্যের অভাবে এই কম্পিউটারের অস্তিত্ব থাকতো না। টিভিতে কেউ বিপদে পড়লেই যেমন অন্তর্বাস ফুলিয়ে সুপারম্যান হাজির হয়ে যায়, কোয়্যাকেরাও তেমনি নিজেদের মনে গাঁথা কনস্পিরেসি থিওরির মালা নিয়ে তাদের অজ্ঞানতার অন্তর্বাস ফুলিয়ে হাজির হয় যেখানেই কিনা তারা দেখে মানুষের কোন অর্জন, গর্ব করা যেতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ মানুষের। তারা শুধু মানুষের অর্জনকে আক্রমন করেই ক্ষান্ত থাকেনা, মিথ্যা অপপ্রচার আর অশিক্ষিত প্রলাপ দিয়ে মানুষের অগ্রগতির ভবিষ্যতকেও তারা পেছন দিকে ধরে রাখে।
কোয়্যাক থাকবেই কেননা আমরা মানুষ একে অপরের উপর নির্ভর করি। ল্যান্সেটে আমি একটা স্টাডি পড়েছিলাম যেখানে দেখানো হয় মানুষ স্ব্যাস্থ বিষয়ক উপদেশ গ্রহন করে ও পালন করে যে কারও কাছ থেকেই। শুধু স্বাস্থই নয় আপনার কথা শুনে যদি মনে হয় আপনি এভিয়নিক্স আমার চেয়ে ভালো জানেন তবে এভিয়নিক্স বিষয়ে আপনার বক্তব্যকে আমি মেনে নিবো। কোয়্যাকরাও একইভাবে শোনাতে চেষ্টা করে যে সে আমার চেয়ে সে স্বাস্থ ভালো বোঝে তাই তার কথাও আমি মেনে নেই কোনধরণের স্কেপ্টিসিজম ছাড়াই। স্কেপ্টিসিজম এমন একটা জিনিষ যা কখনই হ্যাবোধক প্রাকৃতিক নির্বাচনের শিকার হয়নি। এর কারণটাও সরল, উড়োজাহাজ, এন্টিবায়োটিক, রকেট অবিষ্কার করে নিজেদের জীবনকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের হিংস্র থাবা থেকে যতোটা সম্ভব দূ্রে রাখতে এখনও সমর্থ হয়নি এমন একটা জনপুঞ্জের জন্য স্কেপ্টিসিজম হচ্ছে নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড। এরও সাথে রয়েছে কনফার্মেশনাল বায়াস যা কিনা আমাদের প্ররোচিত করে একটি সাজেশ্চন পেলে সেটিকে নিশ্চিত করতে এবং ঐ সাজেশ্চনের বিরোধী কোন বক্তব্য পেলে তাকে প্রত্যখ্যান করতে। এইসব জিনিষ মিলিয়েই কোয়্যাকেরা টিকে থাকবে। কোয়্যাকারি সিলেক্টেবল, রিপ্রজিউসেবল এবং অনেক অনেক বেশী ফিট।
কোয়্যাক দুই প্রকার, অর্থনৈতিক কোয়্যাক যারা কিনা মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। আর আরেক প্রকার হচ্ছে জন্মগতভাবে কোয়্যাক, বংশগতভাবে কোয়্যাক। কোয়্যাকারি রয়েছে এদের জিনোমেই, নিজেকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে একমূহুর্তের জন্যও যদি তারা কাওকে ভয় অথবা কাওকে ঘৃণা করতে না পারে তবে তারা মরে যাবে, তাদের হৃতপিন্ড আর স্পদিত হবে না, জিহ্বা বেরিয়ে আসবে তাদের, মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ হিসেবে লাল ও নীল সুতা বের হতে থাকবে তাদের, ওয়েল কানের ছিদ্র দিয়ে। সম্ভবত এই শ্রেণীর মানুষদের জন্যই রবীন্দ্রনাথ তার ঘরে-বাইরের ভিলেন সন্দীপকে (আমি তার কোন ভক্ত নই, অবশ্যই সে একটি বিষফোঁড়া) দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে নিয়েছিলেন একটি অমর বাক্য ‘পদধূলিজীবী কিছু মানুষ রয়েছে, কপালে হোক আর পিঠেই হোক পদধূলি তাদের চাই-ই চাই।” এই শ্রেণীর মানুষের কোয়্যাকারি হয় মূ্লত কনস্পিরেসি থিওরি ভিত্তিক। যা কিছুই তাদের অবোধগম্য, দূরবর্তী মনে হয় তার পেছনেই তারা কনস্পিরেসি থিওরি ফাঁদে। হোয়াইট হাউসে তারা কখনও পৌছতে পারবে না বলে হোয়াইট হাউসের পেছনে কনস্পিরেসি থিওরি দাড়া করায়, একইভাবে বিজ্ঞানের ভেতরেও তারা কখনও ঢুকতে পারবে না বলে বিজ্ঞানের পেছনেও কনস্পিরেসি থিওরি দাড়া করায়। ড্রাগ কি বুঝবে তারা, কার্বনের এসপিথ্রি হাইব্রিডাইজেশন স্টেইটই কি তারা বুঝে, কিংবা বুঝে কি পরমানুর বোর-রাদারফোর্ড মডেল? আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করে, এটি কালক্রমে এতটাই জটিল ও অবোধগোম্য রূপ ধারণ করেছে যে পেশাদার ছাড়া অন্যান্য সকলকেই এটা বিকর্ষিত করে। আমি মনে করি আধুনিক বিজ্ঞানের এই গুন কিংবা দোষটিই এর বিপরীতে মানুষকে কনস্পিরেসি থিওরি ফাঁদতে অনুপ্রাণিত করে। এইসকল কোয়্যাকের কিছু বৈশিষ্ট আপনারা দেখবেন- ১। জীবনে এরা কখনও কোন ভুল করেনি, কখনও একটি ভুল কথা বলেনি। তাদের মুখনিসৃত কথা গনমানসে ভুল প্রতীয়মান হলে, ভুলটা তার কথার নয় বরং গনমানসেরই, এই ভাব তাদের কথায়, আচরণে সর্বদাই বিদ্যমান থাকে। আর ২। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ব্যাপারেই- রেডিওবায়োলজি থেকে নেপোলিয়নের ইতিহাস পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে তাদের একটি না একটি কোন মতামত রয়েছে। এই মতামত যদি ঐ নির্দৃষ্ট ফিল্ডের এক্সপার্টদের মতামতের সাথে অনৈক্য প্রকাশ করে তবে বিন্দুমাত্র লজ্জাশীলতা প্রদর্শন না করে ঐ ফিল্ডের সমস্ত এক্সপার্টের এক্সপার্টিজকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে কোয়্যাক।
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টান যেমন অক্সফোর্ড ও কেইম্ব্রিজের প্রতিটি কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, কিংস কলেজ ও রয়াল ভেট্রেনারি কলেজে বায়োমেডিকাল সায়েন্স স্কুলে মেডিসিন (এমবিবিএস) এবং বায়োমেডিকাল সায়েন্স (ক্যান্সার বায়োলজি, ফার্মাকলজি, ফিজিওলজি, মলিকিউলার বায়োলজি, রেডিওবায়োলজি ইত্যাদি) পড়তে হলে একটি পরীক্ষা দেওয়া লাগে যেটাকে কিনা বলা হয় বিম্যাট বা বায়োমেডিকাল অ্যাডমিশন টেস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটির প্রশ্নপত্র যদি কেউ দেখেন (আমি দেখেছি) আপনার মনে হবে বিম্যাট নাম না হয়ে এই পরীক্ষাটির নাম হওয়া উচিতি ছিলো ‘তোমাকে নিবো না’, বস্তুত পরীক্ষা যে কতোটা পেস্কি হতে পারে এর একটা আদর্শ উদাহারণ সম্ভবত হবে এই পরীক্ষাটি।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে কম্পিউটার সায়েন্স বা তাত্বিক পদার্থবিদ্যা পড়তে কিন্তু এইরকম কোন বিশেষ নির্বাচনী পরীক্ষা দেওয়া লাগে না। কেনো? কারণ হচ্ছে, বায়োমেডিকাল সায়েন্টিস্টেরা মাঠে নেমে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং জীবন কোন হেলাফেলার বিষয় নয়। এই কারণেই এই গৌরবান্বিত ইন্ডাস্ট্রিতে পাগল-ছাগলের অনুপ্রবেশ রাখা হয় সর্বনিন্ম, তারপরও তো পাগল ছাগল কিছু ঢুকে পড়ে। আট থেকে দশ বছরের একটি বিশাল প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করে যে কিনা পেশাদার হয় এবং পেশাদার হয় একমাত্র যদি কিনা সে অভাবিত ফলাফল করতে পারে তবেই, এইসমস্ত সকল পেশাদারদের এক্সপার্টিজকে যেই কোয়্যাক জলে ভাষিয়ে দিচ্ছে তার কাছে আমার প্রশ্ন হবে সে নিজে কি? কি শিক্ষাগত, কর্মগত যোগ্যতা তার রয়েছে যার জন্য কিনা পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ে তার বিচার আমাদের মেনে নিতে হবে? এই কারণেই আমি কোয়্যাকদের বিরুদ্ধে এতোটা প্রদাহী এবং আমি মনে করি এই একই কারণে আপনারও কোয়্যাকদের বিরুদ্ধে এতটাই প্রদাহী হওয়া উচিত। ভুলেও যদি আমরা কোন বিজ্ঞানবিরোধী কোয়্যাককে সন্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করি সেটা হবে মনের মুক্তির পক্ষে একটি শোচণীয় শোচণীয় পরাজয়।
@আল্লাচালাইনা,
আপনার লিখাটি তথ্যবহুল, ভাল লেগেছে। তবে এধরনের লিখা ইংরেজিতে পড়তেই বেশী সাচ্ছন্দবোধ হয়, অনেক বেশী Technical term ব্যবহারের আবশ্যকতার কারণে।
হেমিওপ্যাথ বিজ্ঞান সম্মত নয়, এর পরেও এটা দুইশত বছরেরও বেশী সময় ধরে টিকে আছে অন্যান্য Alternative Medicine এর সাথে। ‘Placebo effect’ চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমানিত। রুগী চায় সুস্থ হতে, কি পদ্ধতিতে সে ভাল হছ্ছে এটা তার কাছে কোন বড় বিষয় নয়। একারনেই Alternative Medicine পদ্ধতিগুলো টিকে থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে ঝাড়, ফুক, তাবিজ, পানি পড়া ইত্তাদির সাথে হেমিওপ্যাথির কি কোন মৌলিক পার্থক্য আছে? প্রশ্ন শুনে ভাব্বেন না যে আমি হেমিওপ্যাথিতে বিশ্বাসি, ঠিক তার উল্টো।
@Golap,
কে বলে পার্থক্য নেই? আমরা দেখেছি একটা প্লেসিবো ট্যাবলেটের চেয়ে প্লেসিবো ক্যাপসুল বেশী ভালো ফল দেয়। আবার একটা সাধারণ ক্যাপসুল থেকে বেশী ফল দেয় ক্যাপসুল যার ভেতর কিনা রঙবেরঙ্গের দানা দেখা যায়। ত্যাবলেট বা ক্যাপসুলের সংখ্যা যতো বেশী হয় ফল ততো ভালো হয়। ইঞ্জেকশন ও স্যালাইনের প্লেসিবো ইফেক্ট হয় সবচাইতে বেশী। এবং আমি নিশ্চিত সবচেয়ে বেশী ভালো ফল দেবে প্লেসিবো সার্জারি :laugh:। তবে প্লেসিবো সার্জারি করাটা বোধহয় একটু অমানবিক হয়ে যায়। ঝাড়-ফুকের চেয়ে হোমিওপ্যাথির প্লেসিবো ইফেক্ট বেশী কিনা এমন কোন পরীক্ষা হয়েছে বলে শুনিনি। তবে, একটির নাম ইংরেজী অপরটির বাংলা এই তথ্যটিরতো অন্তত কিছু প্লেসিবো ইফেক্ট থাকবে তাই না? 🙂
লেখাটা বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছে আমার জন্য। দুবার চেষ্টা করেও ভাল বুঝিনি। তবে শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ। একটা প্রশ্ন আছে। আপনি বলেছেন
গর্ভবতী মহিলাদের এটি গ্রহন করার দরকার কি? গর্ভাবস্থায় তো মেয়েদের মাসিকের সমস্যা থাকেনা। আর হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা নিয়েও আমি চিন্তায় আছি। এর আগে একটি লেখায় বলেছিলাম যে আমি এটা থেকে আমার মাকে জটিল রোগে উপকার পেতে দেখেছি যে সমস্যা নিছক মনের জোরে সমাধান হওয়া সম্ভব ছিলনা। একটু সহজবোধ্য উত্তর আশা করছি যেহেতু আমি আসলে মেডিকেল ফিল্ডের মানুষ না একেবারেই।
সুমিত্রা পদ্মনাভন এর “হোমিওপ্যাথি কতটা বিজ্ঞানসম্মত” লেখাটিতে আমার মন্তব্য এখানে তুলে দিলাম। আমি আসলেই কনফিউজড। 😕
আমি একই সাথে হোমিওপ্যাথিকে মনে প্রাণে বিশ্বাসও করতে পারিনা আবার ঠিক উড়িয়েও দিতে পারিনা। এ ব্যাপারে আলোচনা আশা করছি।
@লীনা রহমান, @লীনা রহমান, হোমিওপ্যাথি কাজ করে কি করেনা এই প্রশ্নটি করার আগে যেই প্রশ্নটি করতে হবে সেটি হলো হোমিওপ্যাথির পক্ষে কাজ করা সম্ভব কিনা। পদ্মনাভনের পোস্টটাতে অভিজিত একটি ভিডিও দিয়েছিলো রিচার্ড ডকিন্সের দেখুন, তত্বগত ভাবে হোমিওপ্যাথির পক্ষে কেনো কাজ করা সম্ভব না সেটি দেখতে পাবেন। তাহলে নিজে স্বয়ং বা কোন নিকটাত্নীয়ের কিওর হয়ে যাওয়ার যেই বোগাস রিপোর্ট পাওয়া যায় সেগুলোর রহস্য কি? দেখা যার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ঐসকল তথাবর্ণীত রোগীদের আদতে কোন রোগই ছিলো না to begin with। তাদের রিপোর্ট করা অভিযোগ গুলো হয় জ্বর, শর্দি, হাম, মাম্পস, কাশি, পাচড়া, ফোঁড়া, দাউদ,চুলকানি- যেই অভিযোগগুলো অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে যদিও তবে নিজেরা তারা কোন রোগ নয়; এই লক্ষণগুলো প্রদাহের লক্ষণ, প্রদাহ জন্ম নেয় যে কোন সংক্রমন এবং আঘাত বা ইঞ্জুরি থেকে । তবে এমন কোন মেডিকেল কন্ডিশন যার প্রগ্নসিস একটি পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করে কুলখানি যেমন- ক্যান্সার, পার্কিনসন্স, অল্টযাইমার ইত্যাদি সেগুলোর ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি কতোটুকু কি করতে পারে আপনার মতো সেটি আমারও একটি প্রশ্ন।
একটা জিনিষ কি জানেন, হোমিওপ্যাথরা যখন বলে যে এই এই রোগের চিকিতসায় হোমিওপ্যাথি ফলদায়ক তখন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা কোন রোগের কথা বলছে না, তারা বরং বছে রোগের লক্ষণের কথা। যেমন ধরুন- আপনি চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে একইসাথে যদি জন্ডিস, ডাইবিটিস, ওজন হ্রাস, ফ্যাটিগ বা ক্লান্তি ও অনিয়মিত বোয়েল মোশন নিয়ে যদি ডাক্তারের কাছে যান প্রথমেই কিন্তু ডাক্তার আপনাকে ডায়াগ্নোস করবে, বা রোগ নিরুপন করবে। একটা ভালো সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনার লক্ষণগুলো প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার হিসেবে ডায়াগ্নোসড হতে পারে। যদি হয় তবে আপনার প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের চিকিতসাই চলবে, ডাইবিটিস বা জন্ডিসের নয়। একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগেরই প্রথম লক্ষণ হচ্ছে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ। এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, রক্তনালীগুলো স্ফীত হয়ে ওঠে, ক্লান্তি বা ফ্যাটিগ বেড়ে যায় যা কিনা রোগীকে বিছানায় যায় ফলে রিকভারি হয় দ্রুত ইত্যাদি। প্রদাহ শরীরের একটি স্বাভাবিক রেসপন্স, এই মুহুর্তে আপনার শরীরের কোন না কোন অংশে প্রদাহ চলছে, আপনি টের পাচ্ছেন না। প্রদাহ আরেকটু বেশী হলে হোমিওপ্যাথের কাছে যাবেন হোমিওপ্যাথ প্লেসিবো দিলে সেটি খেয়ে ভালো বোধ কোরে ভালো হয়ে যাবেন। তবে প্রদাহ যদি সিরিয়াস আকার ধারণ করে বা সেপ্সিসে রূপান্তরিত হয় তখন কিন্তু হোমিওপ্যাথি আপনার কিছুই করবে না। প্রদাহ কোন রোগ নয় এটি রোগের লক্ষণ। এবং হোমিওপ্যাথি প্লেসিব ইফেক্ট প্রদর্শন করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু প্রদাহী লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রেই।
আপনার মায়ের নাকের মাংশ বেড়ে যাওয়ার যেই ঘটনাটি বললেন এটির সঠিক বর্ণণাটি আপনি দিতে পারছেন না। বেড়ে যাওয়া মাংশটি হতে পারে সিস্ট, পলিপ, আবসেস কিংবা টিউমার। ভালো যেহেতু হয়ে গিয়েছে এটি কোন টিউমার তবে নয়। শুধু রক্ত নয় রক্তের সাথে পুসও যদি নির্গত হয়ে থাকে সেটি একটি আবসেস, তরলভর্তি থাকলে সেটি সিস্ট, গোটা হলে সেটি পলিপ। প্রায় সবরকমের আবসেস, সিস্ট এবং পলিপই এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সিস্ট হোক আর পলিপ যাই হোক না কেনো ডাক্তার কেনো সর্বদাই সেটা কেটে ফেলার কিংবা তেজষ্ক্রিয়তা দিয়ে ধ্বংশ করে ফেলার আগ্রহ দেখায়? এর কারণ হচ্ছে একটি বিনাইন সিস্ট যদি আপনি অনেকদিন রেখে দেন সেটি ম্যালিগ্নেন্ট রূপধারণ করতে পারে বা কার্সিনোমা বা ক্যান্সার হিসেবে প্রতিয়মান হতে পারে। নাকে একটি অস্বাভাবিক গ্রুথ বিশেষ করে আলার্মিং কেননা নাক কিন্তু এপিথেলিয়া বা সর্বদাই বিভাজিত হওয়া ট্যিসু, নাক কি বস্তুত যে কোন মিউকোসা ঝিল্লীই এপিথেলিয়া, যা ক্যান্সার তার ৯০% কার্সিনোমা বা এপিথেলিয়ার ক্যান্সার। সার্কোমা, লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়া হচ্ছে বাদবাকী ১০%। নাকে এবনর্মাল গ্রুথের হোমিওপ্যাথিক চিকিতসা করানোটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। এইরকম সিদ্ধান্ত আপনার মাকে আর নিতে দিবেন না। এছাড়াও এবনর্মাল গ্রুথ না থাকলেও শুধুমাত্র প্রলাপ্স বা শরীর গহ্বর দিয়ে রক্তপাত কিন্তু সিরিয়াস মেডিকেল কন্ডিশন। এমনকি সেই প্রলাপ্স যদি বিনাইনও হয় আর একইসাথে রোগীর যদি হার্টেও সমস্যা থাকে, তবে ঐ প্রল্যাপ্সই কিন্তু হবে যথেষ্ট রোগীকে হাইপক্সিক বা অক্সিজেন অভাবী কোরে তুলতে।
পদ্মনাভনের পোস্টটাতে অভিজিত একটি পেপার সাইট করেছিলো দেখেন যেটি কিনা হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে সর্বাধিক সাইট করা একটি পেপার। পেপারের ফার্স্ট অথার একজন ডাক্তার একইসাথে একজন হোমিওপ্যাথও। তিনি কন্ট্রোল্ড সেটিং এ এই পর্যন্ত যতোগুলো হোমিওপ্যাথির ট্রায়াল হয়েছে তার সবগুল জড়ো কোরে একটি মেটারিভিউ লেখেন। মেটারিভিউ মানে হচ্ছে পেপারের উপর পেপার। একটি বিষয়ে অনেকগুলো পেপারের উতপাদিত তথ্যকে একীভুত করে লেখা হয় রিভিউ আর অনেকগুলো রিভিউকে একীভুত করে লেখা হয় মেটারিভিউ। একজন চিকিতসক হিসেবে তিনি একজন বিজ্ঞানী আবার একজন হোমিওপ্যাথ হিসেবে তিনি একজন বিশ্বাসী। নিজের বিশ্বাসকে তিনি বিজ্ঞানের মুখোমুখি করান এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যে ‘আসলেই হোমিওপ্যাথি কাজ করে কিনা।’ এবং তার মেটারিভিউ এর উত্তর হয়েছিলো যে ‘না, কন্ট্রোল্ড সেটিং এ এই পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি প্লেসিবোর চেয়ে ভালো ফল দেয়নি।’
@লীনা রহমান,
প্রথমত থালিডোমাইড একটি খুবই খুবই পটেন্ট ড্রাগ, দেখা গেছে গর্ভধারণের মাসেও যদি কেউ একটি মাত্র ট্যাবলেট গ্রহন করে সম্ভাবনা ৯০% এরও অধিক যে জন্ম নেওয়া সন্তান বিকৃত হবে। যতো আগাতে থাকবেন পটেন্সি ততোই কমবে কিন্তু তারপরও যেইটুকু পটেন্সি থাকবে ক্ষতি করার জন্য সেটা যথেষ্ট। আর ড্রাগের হাফলাইফ থাকে, মানে একটি ড্রাগ আপনার শরীরে ঢোকা থেকে যকৃতে মেটাবোলাইজড হয়ে কিডনী হয়ে বেরিয়ে যেতে কতো সময় লাগে। থালিডোমাইড এমনই একটি ড্রাগ যার হাফলাইফ এতোটাই পর্যাপ্ত লম্বা যে- প্রথম পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে নেওয়া ড্রাগ তখনও থেকে যায় শরীরে। আর হাফলাইফ কিন্তু এক্সপোনেন্সিয়াল ফাঙ্কশন আপনার জানার কথা। অর্থাৎ হাফলাইফ পেরিয়ে গেলেও শরীরে যথেষ্ট অনু থকে যায় টেরাটজেনিসিটি ঘটানোর জন্য। পটেন্সি যদি কম হতো তাহলে হয়তোবা এতো অল্প কনসেন্ট্রেশনে সেটার কোন প্রতিক্রিয়া থাকতো না। থালিডোমাইডের পটেন্সিটাই মূ্লত এর সবচেয়ে ভয়াবহ দিক। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে একই ড্রাগের একাধিক ব্যবহার। যেমন- শ্রেষ্ঠ এন্টিপাইরেটিক বা জ্বরনাশক হচ্ছে আইবিউপ্রফেন নামক একটি ড্রাগ। আপনার কোন জ্বর যদি নাও থাকে তারপরও আপনি আইবিউপ্রফেন নিতে পারেন ব্যাথানাশক হিসেবে। থালিডোমাইডও একটি সিডেটিভ হিসেবে যে শুধু পিরিয়ড পেইনেই রোগী ব্যাবহার করবেএমনটি নাও হতে পারে, অন্য কোন পেইনে ব্যাবহৃত হতে পারে এটা, কিংবা দুশ্চিন্তারোধে কিংবা ঘুমের ঔষধ হিসেবে। এইসব কারণেই পিরিয়ড বন্ধ হবার পরও গর্ভবতী মহিলারা থালিডোমাইডে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
লেখাটা আরো তথ্যভিত্তিক ও সচিত্র হতে পারতো, যেমনটা আপনার দ্বিতীয় লেখাটি। এটায় শুধু একজনের ওপর আপনার ঝাঁঝ আর রাগের তীব্রতাটা টের পেলাম।
আরো লিখুন ঔষধের এসব ভেতরকার ব্যাপারস্যাপার নিয়ে।
ভালো কথা, আপনার ইমেল আইডিটা কি পাওয়া যেতে পারে?
আমারটা: bornil1912এটyahooএকবিন্দু কম।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আপনার এই পর্যবেক্ষণ আসলে ঠিক না, কোন লেখাই আমি একজনের উপর ঝাঁঝ ঝাড়ার উদ্দেশ্যে লিখি না। ক্রিয়েশনিজমের বিরুদ্ধে লিখলে অবশ্যই সেখানে ক্রিয়েশনিস্টদের বিরুদ্ধে ঝাঁঝ থাকবে, একই কারণেই এভিডেন্সভিত্তিক মেডিসিন নিয়ে লেখায় কোয়্যাকদের বিরুদ্ধে ঝাঁঝ এসেছে। ঝাঁঝাওটা আরও বেশী এসেছে এই কারণে যে- ক্রিয়েশনিজমের হুমকী সম্পর্কে আমরা যতোটা সচেতন, কোয়্যাকারির হুমকী সম্পর্কে ততোটা নয়। আপনার ঠিকানায় মেইল পাঠিয়ে দিচ্ছি মন্তব্যগুলোর উত্তর দিয়েই।
চিকিৎসা বিষয়ক এমন মজাদার লেখা পড়ে অনেক তথ্য জানলাম। শুধু তা-ই নয়, অনেক সাবধানবাণীও পেলাম।
তবে গ্রামের মানুষ ইদানিং হার্বাল চিকিৎসার দিকে ঝুকছে। এ বিষয়ক কিছু লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
@মাহফুজ,
এই উদ্দেশ্যেই লেখাটা দেওয়া। ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং ভাল আছেন নিশ্চয়ই।
আমি বরাবর দেখেছি “এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন” বা ” প্রমানভিত্তিক ঔষধ” ভিত্তিক ডাক্তারদের এক বিশাল অনিহা রয়েছে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের উপর। হোমিওপ্যাথি ঔষধও তো প্রমানভিত্তিক যা খোদ মানুশের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা পর্বে প্রয়োগ করা হয় ও রোগ নিরাময়ের প্রমান্য বা অপ্রমান্য ঔষধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অনেক সময় অনুমোদিত হোমিওপ্যাথি কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তারদেরকেও তাঁরা কোয়্যাক বা হাতুড়ে ডাক্তার বলে সম্বধন করতে পিছপা হন না। নিজে ডাক্তার না, তাই আজ পর্জন্ত বুঝলাম না আসলে ব্যাপারটা কি ?
সে যাই হক আমাদের উপমহাদেশের দারিদ্র ক্লিষ্ট লাখ লাখ মানুশ এই হোমিওপ্যাথ ঔষধের উপর নিভর্র করছে ও ভাল ফলও পাচ্ছে।
চিকিৎসা-বিজ্ঞান ভিত্তিক এই লেখাটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
@সেন্টু টিকাদার,
আমি কোন ডাক্তার নই, ডাক্তার হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও হচ্ছি না, ডাক্তার হবার ইচ্ছাও নেই এই মুহুর্তে। আমি হোমিওপ্যাথির বিরদ্ধে কথা বলি একই কারণে যেই কারণে কথা বলি অ্যাস্ট্রোলজির বিরুদ্ধে, এরা উভয়েই মানুষের অর্জনের ফোঁয়ারায় মূত্রত্যাগ করার ঔধ্যত্ব প্রদর্শন করে। হোমিওপ্যাথির প্রতি আমার কোন অনিহাই নেই, আমি বরং জানার জন্য আগ্রহী এই পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি আমাদের কি কি দিয়েছে। আপনি জানেন উপযোগীতা আর উতপাদনশীলতাই হচ্ছে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য? আর ক্রোধ যদি কোন ডাক্তারের থেকেই থাকে হোমিওপ্যাথির প্রতি তবে সেটাতো খুবই স্বাভাবিক, ছয় বছর লাগে একজন ক্লিনিশিয়ান হতে বা একটা এমবিবিএস ডিগ্রী নিতে, পরিশ্রম আর উদ্যম লাগে মাত্রাহীন। আর কোথাকার কোন অশিক্ষিত পাগল-ছাগল হজরং-বজরং তুক-তাক পড়ে দুই দিনে নিজেকে একজন ক্লিনিশিয়ান হিসেবে পরিচয় দিবে এটা কি আপনি মেনে নিতেন নিজে একজন ডাক্তার হলে?
আপনার এই বক্তব্যটিকে আমি আপাত অজ্ঞানতাসুলভ একটি সৎ ও সরল ভ্রনি হিসেবেই গন্য করছি। আপনার এই দাবীটি একফোঁটাও সত্য নয়। এই পর্যন্ত কোন কন্ট্রোল্ড সেটিং এ হোমিওপ্যাথি প্লেসিবোর চেয়ে বেশি এফিকেসি প্রদর্শন করতে পারেনি। মানুষকে ভালো বোধ করানো চিকিতসাবিজ্ঞানের লক্ষ্য নয়, চিকিতসাবিজ্ঞানর লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের রোগমুক্তি ঘটানো। বোরকাওয়ালী ইসলামও দেখবেন যে বলে আমিতো বেশ ভালো আছি, এইটাকে কি ভালো থাকা বলে? কিংবা ভালো থাকাটাকি কোন সাবজেক্টিভ জিনিষ নাকি এটা অব্জেক্টিভ? যাই হোক, হোমিওপ্যাথিকে হোমিওপ্যাথি ঔষধ না বলে শুধু হোমিওপ্যাথিই বলি চলুন, একইভাবে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার শব্দটা এড়িয়ে গিয়ে শুধু হোমিওপ্যাথ শব্দটা ব্যাবহার করি চলুন।
হোমিওপ্যাথি কলেজ অনুমদিত না অনোনুমোদিত সেটা কোন প্রশ্ন হতে পারে না, হোমিওপ্যাথিই যদি কিনা কোয়্যাকারি হয়। অনুমোদিত উইচক্রাফট কলেজ যেমন একটি হাস্যকর শব্দ, একইসমান হাস্যকর হচ্ছে অনুমোদিত হোমিওপ্যাথি কলেজ শব্দটিও।
এটা সত্য, শুধু হোমিওপ্যাথিই নয় হুজুরের পানিপড়া, অয়ুর্বেদী চিকিতসা, ইউনানী হামদার্দ চিকিতসা ইত্যাদির উপরও তারা নির্ভর করছে। সহজ-সরল মানুষের মাথায় কিছু বিবেকবিবর্জিত অসত কোয়্যাক যেনো কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে না পারে এটাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।
@আল্লাচালাইনা,
আমার একটা প্রশ্ন আছে।
ধরে নিচ্ছি কিছু কিছু অজটিল রোগের ক্ষেত্রে প্লেসিবো কাজ করে, এবং সেসব ক্ষেত্রে হোমিও নামক প্লেসিবোও কাজ করে। এখন আমি যদ্দুর জানি, প্লেসিবো কাজ করবার ক্ষেত্রে মূল উপাদান হচ্ছে বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশে হোমিও প্যাথি কি একটি ভূমিকা পালন করছে না সুলভ মূল্যে “বিশ্বাস” বিক্রী করে? অন্য ভাষায়, এমনটা কি সম্ভব যে অবৈজ্ঞানিক আবর্জনা হওয়া সত্বেও স্রেফ বিশ্বাস্য প্লেসিবো হিসেবে বাংলাদেশের মত দেশে হোমিওপ্যাথির নীট ফল ধনাত্মক?
@রৌরব, অজটিল রোগ যদি বিশ্বাস দিয়ে সারিয়ে ফেলা যায়, তবে সেই কাজ তো মনে হয় চিকিৎসকরাও করতে পারবেন, তাঁদের মেডিক্যাল প্রশিক্ষণে এই ব্যাপারটা অন্তর্ভুক্ত করলেই হয়ে যায়।
@পৃথিবী, প্লেসিবো ইফেক্ট রোগ সারায় না, রোগীকে ভালো বোধ করায় শুধু। এখন যদি আপনার পা কেটে যায় তবে আপনাকে যদি কোন চিকিতসাই না করানো হয় আপনি যতোটা না ভালো বোধ করবেন এরচেয়ে বেশী ভালো বোধ করবেন কেউ আনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে। এখানে বলাই বাহুল্য মাথায় হাত বুলানো আপনাকে ভালো বোধ করালেও আপনার পা কিন্তু ভালো করবে না একফোঁটাও।
@রৌরব,
শুধু বাংলাদেশের কথা কেন বলছেন? সাথের ভিডিও লিংকটা কি দেখেন নি?
‘রয়াল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল’ এর বিশালর বিল্ডিংটা মিস করেছেন মনে হচ্ছে।
@Golap, এখন আর এটা রয়াল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল নয় যদিও এখন এটা রয়াল লন্ডন হসপিটল অফ ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন। 🙂 ধরা খেয়ে নাম চেঞ্জ করে ফেলছে মামারা।
@রৌরব,
বিশ্বাস না ঠিক ব্যাপারটা, ব্যাপারটা হচ্ছে বায়াস। আপনি স্টাডিকে ডবল ব্লাইন্ড করুন। মনে করুন আপনার জ্বর আপনাকে না জানিয়ে আমি প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলাম কোন ছল করে। বলাই বাহুল্য সেটা কিন্তু আপনার জ্বর কমাবে। কিন্তু আপনাক না জানিয়ে যদি হোমিওপ্যাথি খাইয়ে দেওয়া হয় আপনার কোন লাভই হবে না। হাওএভার, আপনাকে জানিয়ে যদি হোমিওপ্যাথি খাওয়ানো হয় তবে ভালো আপনি বোধ করবেন তবে জ্বর কিন্তু আপনার সারবে না। হোমিওপ্যাথির নিটফল ধনাত্নক না কারণ, হোমিওপ্যাথি চলে কাল্টের মতো। কিছু কিছু মানুষ মন্ত্রশিষ্য হয়ে যায় যে হোমিওপ্যাথি ভালো আর ঔষধ শয়তানী। তারা কিন্তু একজন মানুষ রক্তবমী করলেও হোমিওপ্যাথের কছেই নিবে। এইভাবে মারা যায় প্রচুর মানুষ বিনা চিকিতসায়।
@আল্লাচালাইনা,
🙂
ধন্যবাদ দাদা (বড় ভ্রাতা)
আরও এই ধরনের লেখা উপহার দিন।
আপনার ইংলিশের জ্ঞ্যান আসলেই ব্যাপক। অসাধারন ইংলিশের ব্যবহার।
অনেক চেষ্টা করেছি পড়তে পারিনি, না বুঝে খুব ভালো হয়েছে এমন কথা আমি বলতে শিখিনি তাই সরাসরি বললাম।
এটা আসলে কোন ভাষা রীতিতে লেখা? ইংলিশেই যদি লিখতে চান তাহলে
মুক্ত-মনায় ইংলিশ ব্লগ আছে। ইংলিশ খুব ভালো বুঝি এমন না তবে দু চারটা ইংলিশ বই পড়ার অভিজ্ঞতাও আছে আধো আধো ভাবে। সমস্যা হয় বাংলা ব্লগে ইংলিশ লেখা দেখলে। তখন ইংলিশকে চাঁন্দের ভাষা মনে হয়।
আমাদের মত ইংলিশ না জানা লোকেদের জন্য একটু সহজ ভাষায় লিখুন না, নইলে ইংলিশ ব্লগে লিখুন সেখান থেকেই পড়ে নেব।
মুক্তমনার নীতিমালার ২.৪ ধারায় বলা আছেঃ
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম, অবশ্যই আপনার ইংরেজী মুক্তমনা ব্লগ দেখিয়ে দেওয়াটা উপকারদায়ক হয়েছে। তবে এর চেয়ে স্লাইটলি বেশী উপকারদায়ক হতো যদি কিনা কিছু অপ্রয়োজনীয় ইংরেজী শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ প্রস্তাব করতেন মন্তব্যে যেমন উপরে ইরতিশাদ করেছেন। আমি অনেকগুলো ইংরেজীকে বাংলা শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছি, এইবার পড়ে দেখতে পারেন। পড়েন এবং আমাকে জানান এইবার বুঝতে পেরেছেন কিনা। না পারলে সর্বপ্রকার সহযোগীতা নিয়ে প্রস্তুত থাকার সাথে সাথে এই উপসংহারও সম্ভবত আমি টানতে যাচ্ছি যে- আগেরবার যে বোঝেননি সেটা আসলে পুরোটাই যে ভাষার কারণে তা নয়। 🙂
খুব অপরিণত লেখা।
আমি আগেও লেখককে দেখিয়ে ছিলাম, ড্রাগ শিল্পে কি বিপুল পরিমান ফ্রড হয় যার ফল ভোগ করে পঙ্গু মানুষ।
এবং এই সব ফ্রডের সাথে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও কর্পরেটদের চক্র খুব ভাল ভাবে প্রমাণিত। বে আই নি কাজে , ফার্মাসিউটিকাল শিল্প সবার সব শিল্পের ওপরে! এবং যে পরিমান ড্রাগ গত দশকে মার্কেট থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তাতে বলা চলে ড্রাগ শিল্পে লোভের বশবর্ত্তী হয়ে আরো বেশী ড্রাগ বেচে পয়সা করাই একমাত্র আইন। আমরা আমেরিকান টিভি দেখে এটা আরো ভাল বুঝি-যার দেখেন না, তারা ওপরে ওয়েব সাইট টা দেখুন। দেখলেই বুঝবেন পরিস্কার ভাবে লোভ দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান মেডিক্যাল “সায়েন্স”।
বিজ্ঞানের পদ্ধতিকে বৃদ্ধাষ্ঠুঙ্গ দেখিয়ে, নাল হাইপোথিসি ফেইল করা সত্ত্বেও অজস্র ড্রাগ বাজারে এসেছে-পরে ফাইন দিয়ে মার্কেট থেকে চলে গেছে।
আলটারনেটিভ মেডিসিনের ওপর গবেষনাও আশাপ্রদ না। আসলে মেডিক্যাল গবেষনাতে আমরা এখনো বেসিকেই আছি-তবে এই এটাও ঠিক, মেডিক্যাল ফিল্ডেই মানব গবেষনার সব থেকে বেশী টাকা খরচ করা উচিত। দুর্বাগ্য যে সামরিক খাতে মেডিক্যালের চেয়ে ৯ গুন বেশী গবেষনাতে খরচ হয়। এটা বন্ধ করা দরকার। আলটেরনেট মেডিসিনের ওপর ও আরো গবেষনা করে, তার যদি কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থেকে থাকে, তা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। গবেষনার ফল বলছে -সেটিও আশাপ্রদ না।
লেখক এই জন্যেই ছেলেমানুষ যে উনি এটা বোঝেন না বিজ্ঞানের প্রয়োগ রাজনৈতিক সিস্টেম নিরেপেক্ষ না। স্টালিনের আমলে যেমন বিজ্ঞানকে টেম্পার করে রাশিয়ার লোককে অভুক্ত করে রাখা হয়েছে-ঠিক তেমন করে বাজারের লোভ, ড্রাগ শিল্পে বিজ্ঞানকে অনবরত লঙ্ঘণ করেছে।
@বিপ্লব পাল,
আজকাল তো দেখি ‘অপরিণত’ বলাটা তোমার ডিফল্ট রিয়াকশান হয়ে যাচ্ছে। এখন তো মনে হচ্ছে আপত্তি জানান এর পাশাপাশি রামগড়ুড়ের ছানাকে ‘অপরিণত’ বলে ট্যাগ করার জন্যও একটা অপ্সহান তৈরি করতে হবে।
হ্যা, লেখক এখানে ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্সিউরেন্স কোম্পনি বা ডাক্তারদের করা কর্পোরেট যচ্চুরিগুলোর কথা উল্লেখ করেন নি, আমার কাছে মনে হয়েছে সেটার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। যেমন ধর, ইউরোপে বা ইংল্যান্ডে সমস্যাটা এত প্রকট নাও হতে পারে, বা তিনি এই লেখাতে বিজ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চেয়েছেন। সেই সেন্সে এটাকে খুব বেশী হলে ‘অসম্পূর্ণ’ বলা যেতে পারে, ‘অপরিণত’ কোনভাবেই না।
আচ্ছা এবার আমি কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি ( অবশ্য তোমার মন্তব্য পড়ে সেটা আমি ৯০% সময়েই হই 🙂 ) , দীপক চোপড়ার লেখাটায় বিতর্ক করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলেছিলে ওষুধ তৈরির বিজ্ঞানটাতেই সমস্যা আছে। তখনো প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তুমি কর্পোরেট দুই নম্বরিগুলোর কথাই বলছ, এবং সেজন্য তোমাকে ডিফেন্ডও করার চেষ্টা করেছিলাম কিছুক্ষণ। তারপর দেখলাম, নাহ তুমি বিজ্ঞানটাকেই ভুল বলার চেষ্টা করছো যার সাথে আমি একমত হইনি। আসলে তুমি কি বলতে চাইছো বা চাও সেটা কি একটু পরিষ্কার করে বলা যাবে? প্রশ্নটা ‘অপরিণত’ বলতে পারো, তবে ‘পরিণত’ একটা উত্তর দিলেই হবে।
@বন্যা আহমেদ,
আমি লিখেছিলাম ত-সমস্যা দুই স্থলেই
[১] প্রথমত সার্বজনীনতা বা ইনডাকশনিজমের সমস্যা-যে সব ড্রাগগুলি সব মানুষের জন্যে সমান ভাবে কাজ করে না। ডিসপার্সন এতই বেশী-যে অন্যান্য বিজ্ঞানের সাথে এটাকে গোলালে মুশকিল হবে। ওষুধের কার্যকারিতা আর বৈজ্ঞানিক সূত্র এক না।
[২] এর পরেও সমস্যা হচ্ছে যেটুকু বৈজ্ঞানিক গাইডলাইন মানার দরকার কর্পরেট সেটাও মানছে না। আমার লিংকটা দেখ। ফলে, ড্রাগ বিজ্ঞানকে খুব কম হাতুরে বিজ্ঞান এমন মনে করার কারন নেই যদিও এর পেছনে কর্পরেট লোভের ভূমিকা আছে।
এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই সার্বজনীনতা আছে যেমন মট্রিন খেলে সবার জ্বর কমে। আবার সেটাই মার্কেট থেকে বাচ্চাদের জন্যে উঠিয়ে নিতে বলছে। কফ সিরাপ ও বাচ্চাদের জন্য তুলে নিতে বলছে।
অথচ দীর্ঘদিন আমরা বাচ্চাদের কফ সিরাপ খাইয়েছি এবং তা “বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি” তেই এপ্রুভড হয়েছে। তাহলে ভুল কোথায় ছিল?
ড্রাগের ফ্রডগুলো ফলো কর। দেখবে বিজ্ঞানীরা ঠিকই সাবধানী দিয়েছিল -লাভের জন্যে কর্পরেট চেপে গেছে। বার বার একাধিবার ঘটছে এই ঘটনা। সব বড় বড় ফার্মা এইসব কেলেঙ্কারীর সাথে যুক্ত। এই সব দেখা শোনার পর, ড্রাগ শিল্পটা ডাকাতদের আড্ডা ভাবলে ভুল হবে?
আসলে দূর থেকে অনেক কিছু মনে হয়। তুমিও জান তোমার বা আমাদের কর্পরেট কত জনবিরোধি কাজ করে -এসব ম্যানেজমেন্টের কাছে না থাকলে জানা যায় না। তাই আমি নিজের কাজকে গ্লোরিফাই করি না। কারন আমরা জানি, আমরা সবাই ধনতান্ত্রিক জাঁতাকালে আবদ্ধ ইঁদুর। যে এটা না বুঝে নিজের ফিল্ড নিয়ে এই সব আদর্শবাদি গারবেজ লেখে, তাকে অপরিণত বলতে বাধ্য।
আল্লাচালাইনা,
অনেক ধন্যবাদ। এমন সাবলীল ভাষায় চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ওপরে শিক্ষনীয় লেখা আমি আগে পড়ি নি। আপনার কাছ থেকে চিকিৎসা-পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ্যে প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে আরো লেখা আশা করছি। যদি সম্ভব হয়, বিবর্তন-বিজ্ঞানের সাথে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়েও একটা তথ্যসমৃদ্ধ জ্ঞানগর্ভ লেখা আপনার কাছ থেকে আশা করছি।
আগেই বলেছি, আপনার ভাষা সাবলীল। আপনার বাক্যগঠন এবং শব্দচয়ন চমৎকার। বাংলায় বেশ কিছু সুন্দর শব্দও আপনার কাছ থেকে শিখলাম। যেমন, ‘প্রদাহী,’ ‘পঙ্ককেলি’ ।
কিন্তু আবার ধাক্কা খেলাম যখন দেখলাম কিছু ইংরেজি শব্দ আপনি বাংলায় বানান করে লিখেছেন। যেমন, ‘অফেন্ডিঙ্গলি’ (আপত্তিকর) ‘ডায়াগ্নোসড’ (রোগ-নিরুপণ)। এই জাতীয় শব্দগুলো বাংলায় লেখাই বাঞ্ছনীয়। কিছুটা অনধিকার-চর্চার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
ধন্যবাদ।
@ইরতিশাদ,
পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্যগুলর উত্তর দিয়ে পোস্টটা আমি একটা রভাইস দিতে বসছি। ইংরেজী শব্দগুলোর যতোগুলো সম্ভব তুলে নেবো। আপনার মতামত উপকর করলো।
@ আল্লাচালাইনা,
এখানেই মনে হয় একটা ফিলসফিকাল পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে। আপনি যে ন্যাচারাল রেমিডিকে ওষুধ বলছেন অনেক ডাক্তারই এগুলোকে ওষুধ বলে স্বীকার করেন না। তারা প্রথাগতভাবে যাকে ওষুধ বলে তাই দিয়েই শুধু চিকিৎসা চালিয়ে যান, একটার পর একটা কড়া থেকে কড়াতর ওষুধ দিতে থাকে, কিন্তু এর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ন্যাচারাল রেমিডিও অসুখের সিম্পটমের পুরো না হলেও যে আংশিক নিরাময় ঘটাতে পারে সেটার কথা আর উল্লেখ করেন না। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আবারো আমার মাইগ্রেনের উদাহরণটা দেই। ধরুন মাইগ্রেন একটি জেনেটিক রোগ, ক্রোমোজম ৩ এবং ১৯ এ মিউটেশনের কারণে মাইগ্রেন হয়ে থাকে। মাইগ্রেনের সিম্পটম একবার শুরু হয়ে গেলে ওষুধ ছাড়া কোন গতি নেই সেটা ঠিক, কিন্তু কতগুলো কমসেন্স প্র্যাক্টিস দিয়ে যে মাইগ্রেনের অ্যটাকগুলো কমিয়ে আনা যেতে পারে সেটার কথা কিন্তু ডাক্তাররা বলতে ভুলে যান। এখানে অক্সিজেন ইন টেক বাড়ানো, এ্যরোবিক এক্সারসাইজগুলো করা, ঠিকমত ঘুমানো, গভীর ঘুমে যেতে পারার নিশ্চয়তা, স্ট্রেস লেভেল কমানো, ইত্যাদি যে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা বেশীরভাগ ডাক্তারই বোঝেন না। আর সেখান থেকেও কিন্তু অল্টারনেটিভ মেডিসিনের মত দুই নম্বরি জিনিসগুলো হাত পা মেলে গজিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। আমেরিকায় কাইরোপ্র্যক্টরদের দৌরাত্ম দেখলে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। আমার আজকাল মনে হয়, আধুনিক মেডিসিনের সাথে বেশ কিছু জিনিসের সমন্বয় দরকার, যেমন ধরুন, ন্যাচারাল রেমেডি, কমন সেন্স প্র্যক্টিস, বিবর্তনীয়ভাবে আমাদের শরীর কিভাবে তৈরি বা কি কি সীমাবদ্ধতা আছে তা বোঝা ( অনেক ডাক্তারকেই যখন বলতে শুনি ডাক্তারির সাথে বিবর্তনের নাকি কোন সম্পর্ক নেই, তখন আঁতকে উঠি) এবং আজকের প্রযুক্তির যুগে বসে আমরা প্রাকৃতিকভাবে কোন কাজগুলো আর করছিনা এবনং তার ফলে কি কি আসুবিধার সম্মুখীণ হচ্ছি এগুলোকে সামগ্রিকভাবে বোঝা দরকার। আজকের আধুনিক মেডিসিন আর শৈশবস্থায় নেই, যান্ত্রিকভাবে শুধু ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা না বাড়িয়ে, যেখানে যেখানে সম্ভব ( সব ক্ষেত্রে যে সম্ভব নয় সেটা মেনে নিয়েই) সেখানে বৈজ্ঞানিকভাবেই এই সমন্বয়গুলো করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ওষুধ তৈরির জন্য যে বিজ্ঞানটা কাজ করে সে ব্যাপারে আপনার লেখার সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই, আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার বিকাশ না ঘটলে আমাদের সভ্যতাই আজকে এই অবস্থানে এসে পৌঁছাতে পারতো না। আপনি এখানে বেশ কয়েক ধরণের কয়্যাকারির কথা বলেছেন, যারা আজকে আধুনিক মেডিসিনকে অস্বীকার করছে তাদের নিয়ে কোন কথা বলার প্রয়োজন নেই, এ সম্পর্কে এখানে মনে হয় আমরা সবাই কমবেশী একমত। কিন্তু একে বাজারজাত করার জন্য এই বিশ্ব পুঁজির বাজারে অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক এবং রাজনৈতিক বদ উদ্দেশ্যগুলোও যে কাজ করে সেটাও কিন্তু একটা বিশাল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ তৈরির পিছনের বিজ্ঞানটা আমাদের টিকে থাকার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ বলেই হয়তো সে আজকে বিশ্ব পুঁজির বাজারে অনবরত জিম্মি হয়ে যাচ্ছে, ফার্মাসিউটিকালস, ইনসুরেন্সের ব্যাবসা বা বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আপনার আলোচনায় এডোয়ার্ড সাইদকে আনার কি প্রয়োজন ছিল তা বুঝিনি। ওনার একটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তার কারণে যদি মুসলমানেরা তাকে মাথায় করে রাখে সেটা থেকে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে তিনি বিজ্ঞান বিরোধী ছিলেন। আমি তার কিছু কাজ ভাষাভাষাভাবে পড়েছি, মনে হল আপনি নিজেও তার সম্পর্কে বেশী কিছু জানেন না। তাই এখানে ওনাকে টেনে আনাটা খুব প্রাসংগিক নাও হতে পারে বলেই মনে হচ্ছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
‘গ্রুথ’ নাকি ‘গ্রথ’ বলতে চেয়েছিলেন?
@বন্যা আহমেদ,
এই ব্যাপারে আপনার সাথে সম্পুর্ণই একমত।
এইখানে বোধহয় আমাকে দ্বিমত করতে হবে। আমি যেই দেশে থাকি সেখানে স্ব্যাস্থসেবা সরকারী খাতের অধীন, তাই টিভিতে ঔষধের রকমারি বিজ্ঞাপন, রাস্তায় ঔষধের বিশাল বিলবোর্ড এইসব চোখে পড়েনা। তবে উত্তর আমেরিকাতেও ঔষধ কিন্তু বাজারজাত হয় একই প্রক্রিয়ায় যেই প্রক্রিয়ায় বাজারজাত হয় গাড়ি কিংবা প্রসাধনী। ঔষধকে এই আলাদা চোখে দেখাটা কি জন্য বুঝি না। প্রতিটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানই চাইবে মুনাফা সর্বাধিক করতে এটাই তো স্বাভাবিক। ঔষধের অনানুপাতিক দাম নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এখানে আপনাকে চিন্তা করতে হবে একজন গবেষক হয়তো তার সারা জীবনের গবেষণা দিয়ে একটি ঔষধের পেটেন্ট লাভ করতেই শুধু সমর্থ হয়। তার সারা জীবনের গবেষণার বিপরীতে একটা চড়া দাম সে হাকতেই পারে। সেই দাম মেটাবে সরকার বা বীমা কোম্পানী। আমি বেশ কিছু রিসার্চারের সাথে কথা বলেছি, এটা বস্তুত সর্বস্বীকৃতই যে লাইফ সায়েন্স একটি আন্ডারপেইড ই্ডাস্ট্রি। কম বেতন পাওয়া সায়েন্টিস্টেরাও শোষিত, এজন্যই তারা সন্মানজনক টেনিওর ট্রাক ফেলে রোশ, ফাইসন্স, গ্লাক্সোস্মিথক্লিনে চা-কু-রী করতে যায়। সমস্যাটা আসলে সিস্টেমেটিক।
খুব বেশী কিছু জানিনা তবে শুনেছি ইসলামের প্রতি তার সহানুভুতি ছিলো। এডওয়ার্ড সাঈদ তুলে দিলাম পোস্ট থেকে।
গ্রুথ, গ্রথ, গ্রোথ যেটাই বলেন সেটাই সই। 🙂 আমি growth বোঝাতে চেয়েছিলাম। চিন্তা করছিলাম বৃদ্ধি, বর্ধন বা বেড়ে ওঠা এই ধরণের কোন বাংলা শব্দ ব্যাবহার করব কিনা। আমার করা বাংলা পছন্দ হয়নি বল growthই রাখলম।
@আল্লাচালাইনা,
দুঃখিত, আমি মনে হয় ঠিক মত ব্যাখ্যা করতে পারিনি, এই সমাজে বাস করে মুনাফা নিয়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করে লাভ নেই সেটা ছোটবেলায়ই শিখেছি 🙂 । আমি এখানে মুনাফা বা বেশী দামের কথা বলতে চাইনি। প্রায়শঃই আমেরিকায় ড্রাগ টেস্টের রেজাল্ট নিয়ে দুই নম্বরির কথা শোনা যায়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণেই ক্ষতিকর ওষুধ এখানকার এফডিএর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে বেড়িয়ে যায় যার ফলাফল ভোগ করতে হয় সাধারণ পাবলিকের। আমার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই, কিন্তু তারপরো কেন যেন মনে হয় ইউরোপের অবস্থা হয়তো এতটা খারাপ নয়। এখানে আমি ওষুধের কার্যকারিতা, ড্রাগ তৈরির পিছনের বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করিনি, বলেছি কিভাবে আজকে এই বিজ্ঞানটা স্বার্থান্বেসী বিভিন্ন মহল ব্যবহার করে এখন আপনি বলতে পারেন অন্যান্য ‘অনেক বিজ্ঞান’ই তো এভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং হয়ও, সেক্ষেত্রে ‘আপনি ঠিক বলেছেন’ ছাড়া আর কিছু মনে হয় বলার থাকবে না 🙁 । তবে ওষুধের সাথে মানুষের জীবন এত সরাসরিভাবে জড়িত যে এসব দেখলে বেশী খারাপ ( হয়তো অযথাই) লাগে।
@বন্যা আহমেদ,
এফডিএ এর এই রিপোর্টটা পড়তে পারেন। এখানে ২০০৫ সালে রিকল করা সকল ড্রাগের তালিকা রয়েছে। যেই করণগুলোতে একটি ড্রাস রিকল হয় তার এক নম্বরে রয়েছে আপনি দেখবেন- অপ্রত্যাশিত সাইক্লিক গুয়ানসিন মনোফসফেট ডিভিয়েশন। এটাকি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানীর কোন দোষ? উত্তর হচ্ছে না। ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানীকে সরাসরি দোষারোপ করা যায় এমন ড্রাগ রিকল হবার কারণ যেমন- মিসব্র্যান্ডিং রয়েছে আট নম্বরে। ল্যাক অফ এফিকেসি রয়েছে চার নম্বরে। তারপরও ৫০০ টি উইথড্র হওয়া ড্রাগের মধ্যে ২০ টিও ল্যাক অফ এফিকেসি ক্যাটাগরিতে পড়ে না। আপনার এই কথাটা মেনে নেওয়া যায় যে- হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রির অংগ হিসেবে অনেক ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানের জনস্বার্থে যতোটা নিষ্ঠাবান হওয়া উচিত তার চেয়ে বেশী নিষ্ঠাবান তারা হচ্ছে মুনাফা রক্ষায়। তবে আমার অভিযোগ হচ্ছে, কোয়্যাকেরা এই জিনিষটাকে কয়েক অর্ডার অফ ম্যাগ্নিচিউড বেশী প্রতিবর্ধিত করে বলে। এফডিএ এর ওয়েবসাইতে গেলেই পাওয়া যায় সমস্ত রিকল হওয়া ড্রাগের তালকা এবং কেনো তারা রিকল হয়েছিলো সেই বিষয়ক তথ্য। এছাড়াও পাওয়া যায় সফল/ব্যার্থ প্রতিটি ক্লনিকাল ট্রায়ালের তালিকা। কয়্যাকরা তাদের বক্তব্যে কখনও দেখবেন না যেএফডিএ কে সাইট করে। তারা বরং নিজেরা নিজেরা উপাত্ত বানায়, নিজেরা পরিসংখ্যান তৈরী করে, রিকল হওয়া ড্রাগের পেছনের কাল ইতিহাস নিজেরা নিজেরা বানায়। কোয়্যাকদের এই জিনষতার বিরোধীতাই আমি করছি।
আপনার এই উপলব্ধিকে সাধুবাদ জানাই।
@আল্লাচালাইনা, http://www.fda.gov/downloads/AboutFDA/CentersOffices/CDER/WhatWeDo/UCM078935.pdf দুঃখিত রিপোর্টের লিঙ্ক দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। ৪২ পৃষ্ঠা থেকে পড়তে পারেন।
চমৎকার লেখা। :yes:
@আফরোজা আলম, পড়ার জন্য ধন্যবাদ 🙂 ।
@আল্লাচালাইনা,
বেশ ভাল লেগেছে।
এডওয়ার্ড সাঈদকে পারলে বাদ দিয়ে দেন লেখা থেকে। ইংরেজি শব্দ ও সাধারণের জন্য অপরিচিত টার্মগুলোর ব্যাখ্যা না দিলে বা বাংলা না করলে বুঝা জটিল হয়ে যায়।
@সৈকত চৌধুরী,
দিয়ে দিচ্ছি,ধন্যবাদ।
এলোপ্যাথি শব্দটি যে হানিম্যানের দেওয়া জানা ছিল না। হোমিওপ্যাথির বই লেখক এক বাঙালি ভদ্রলোক তাঁর বইয়ের ভূমিকায় একবার অসামান্য এই লাইনটি লিখেছিলেন, এলোপ্যাথ হচ্ছে এলোমেলো পথ আর হোমিওপ্যাথ হচ্ছে অমিয় পথ। যেমন গুরু, তেমনই তাঁর শিষ্য!! 🙂
ওষুধপত্র, ডাক্তারি বিদ্যা, মেডিসিন গবেষণা এই সব খটমটে বিষয় নিয়েও যে সুখপাঠ্য কিছু লেখা যায় তার প্রমাণ রাখছেন আপনি নিয়মিত। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
@ফরিদ আহমেদ,
হোমিওপ্যাথির জন্য যে বইও লেখার দরার হয় এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় আশ্চর্য! অমিয় পথের সমস্যাটা হচ্ছে এইটা শুধু অমিয়ই, উপকারী না একেবারেই। আর এলোপ্যাথ তো এলোমেলো হবেই, এলোমেলো না হলে কি আর একটা ড্রাগ ডেভেলপ করতে ৫০০-১০০০ মিলিয়ন ডলার লাগে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ অনুপ্রেরণাদায়ী মন্তব্যের জন্য।
চমৎকার চিন্তাশীল লেখা। একই সঙ্গে অষুধ ব্যবহারের ইতিহাসটুকুও লিখে দিলে লেখাটি আরো পূর্ণাঙ্গতা পেতো। ছোটখাট বানান ভুলগুলোর কথা না হয় আপাতত থাক। :yes:
@বিপ্লব রহমান, আসলে ইতিহাসটা খুব একটা গুরুতবপূর্ণ নয় যতোটা গুরুত্বপূর্ণ এর কার্যপ্রণালী। তথাপিও, মডার্ন মেডিসিনের যাত্রা শুরু ১৯০০ দশকে। হ্যা ভুলগুলো ঠিক করা হচ্ছে তারাতারিই। ধন্যবাদ।
@আল্লাচালাইনা,
তারাতারি নয়, ধীরে দাদা ধীরে। বেশী তাড়াতাড়ি করলে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্ঞবাদী সৈন্যবাহিনীর মত আরো ভুল হতে পারে।
লেখা তো বুঝিই নাই, মন্তব্য করবো কিসে? তবে আপনার প্রশ্ন
ঔষধ কি করে অসুখ ভালো করে? এর উত্তর হলো, ঔষধ উছিলা মাত্র, অসুখ ভাল হয় আল্লাহর হুকুমে!
@আকাশ মালিক, :lotpot:
:lotpot: আকাশ মালিক আপনার মন্তব্যটির উত্তর দিতে গিয়ে নতুন ফিচার ‘আপত্তি জানান’ বাটনে ক্লিক করে ফেলেছিলাম ভুলবসত। কিন্তু আপনার এই বক্তব্যটা-
শুনে মন হলে ভুল বাটনে চাপ দেওয়াটা আল্লারই ইচ্ছা ছিলো।
@আল্লাচালাইনা,
আমি নিজেই এই কাজ করেছি 🙂 । বাটনের পজিশন ঠিক করতে হবে,আগে দেখা যাক কেমন কাজ করে।
@রামগড়ুড়ের ছানা, মন্তব্যের সরাসরি নীচে না রেখে এককোঁনায় সরিয়ে দিতে পারলে ভালো হয় বোধহয়।
@রামগড়ুড়ের ছানা, আপত্তি জানানোর বাটনটা নিচে দিলে মনে হয় ভাল হবে। আমি একটু আগ এক্ট ন্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য আরেকটু হলেই আপত্তি জানানোর বাটনে চাপ দিয়ে ফেলেছিলাম। কেলেংকারী হতে যাচ্ছিল আর কি :-/
আরেকটি ক্লাসিক আল্লাচালাইনা পিস! :yes:
কোয়েক্যারদের বিরুদ্ধে সদা জাগ্রত অতন্দ্র প্রহরী হয়েই থাকুন আমাদের মাঝে, এমনিভাবে!
আর-
তথাস্তু!
@অভিজিৎ,
আমাদের সবাইকেই হতে হবে একটু আট্টু। এই একবিংশ শতকে সে কোয়্যাকের উতপাত আর সহ্য করা উচিত না। :-/
@আল্লাচালাইনা,
একটা জেনুইন লেখা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। :rose2:
কনফার্মেশনাল বায়াসের চেয়েও বিরক্তিকর ‘ট্রুথ বায়াস’ । মানব মনের নানা রকম বায়াস নিয়ে টুক টাক কিছু কাজ শুরু করার পর আর এগুতে মন চায় নি কারন Hanlon’s Razor অনুসারে, “Never attribute to malice that which can be adequately explained by stupidity.”
@সংশপ্তক,
:laugh: :laugh: বড়ই মজাদার কোট!
হে হে। ভাল লাগল :rose: ।
বেশ কিছু বানান ভুল আছে, তবে যেহেতু usUfulness is beauty, কাজেই আপনার লেখার উপযোগিতা বিচারে ইহা ignore করা গেল 🙂
সাইদ সম্বন্ধে আপনার কিছু বলার আছে মনে হচ্ছে। অপেক্ষায় আছি।
যা বুঝাতে চাইছেন, অর্থটা উল্টো মনে হচ্ছে।
@রৌরব, না এডওয়ার্ড সাইদ সম্পর্কে আমার কিছুবলার নাই। আম শুধু একটা জিনিষ খেয়াল করলাম যে সমস্ত বিরিঞ্চিবাবারাই ওর খুব ভক্ত হয়। এখন এডওয়ার্ড সাঈদ নিজেই একজন বিরিঞ্চিবাবা কিনা নাহলে বিরিঞ্চিবাবাদের মধ্যে ওর এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা সম্পর্কে তার নিজের পার্সেপশন কি ইত্যাদি যদি কেউ জেনে থাকেন তবে আমাকে জানালে কৃতজ্ঞ হই, আপনি জানেন নাকি? আর usefulness ঠিক করে দিচ্ছি, ন্যাচারাল সিলেক্সশনেরব্যাপারটা দেখছি। যেমন পিটার সিঙ্গার এনিমেল রাইটস মুভমেন্টের জনক ও তো একটা বিরিঞ্চিবাবা তাই না? ও সরাসরি এন্টিসায়েন্স। ও ও হচ্ছে আরেকজন যার কিনা বিরিঞ্চিবাবাকুলে অনেক ভক্ত, এই কারণেই একটু নজর কাড়লোএডওয়ারর্ড সাঈদও।
@আল্লাচালাইনা,
পিটার সিঙ্গারের নাম এই প্রথম শুনলাম :laugh:
না সাঈদের সাথে কোয়াক্যারির কোন সহজ সংযোগসূত্র অনুমান করতে পারছি না। ভদ্রলোক এখন গোলকধাম নিবাসী, কিন্তু মরার আগে তার এ বিষয়ক কোন বক্তব্য ছিল কিনা তাও আমার অজানা। সাঈদ বেশ বিতর্কিত, কিন্তু বিজ্ঞানবিরোধী ছিলেন এমন কিছু শুনিনি। কাকতালীয় হতে পারে এই আপতন।
@রৌরব, পিটার সিঙ্গার হচ্ছে এনিমেল রাইটস একটিভিজমের ধাড়িপান্ডা। ও ও কোন এক আইভি লীগ প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর,বই টইও লিখে দেখা যায়। কর্মকান্ডতো সাঈদের মতোই এইজন্যই বললাম।ভালো লাগলো জেনে যে সাঈদ ঐরকম কিছু নয়। আসলে বরিঞ্চিবাবারা তাহলে ওর এতো ভক্ত হয় কিজন্য, ঠিক কি কথা বলে সাঈদ?
@আল্লাচালাইনা,
সাঈদ পোস্ট কলোনিয়ালিসম-এর একজন নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবি, তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই ওরিয়েন্টালিসম — পশ্চিমা বুদ্ধিজীবিদের ইউরো-কেন্দ্রিকতার বিরূদ্ধে লেখা। রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন প্যালেস্টাইনের স্বপক্ষে এবং প্যালেস্টাইনে মানবাধিকার লংঘনের বিরদ্ধে সরব ছিলেন। এসব ব্যাপার যতই বিতর্কিত হোক না কেন, এর সাথে বিজ্ঞানের তেমন কোন সম্পর্ক নেই বলেই মনে হচ্ছে ব্যাপারটা হয়ত কাকতালীয়।
@আল্লাচালাইনা, এডওয়ার্ড সাঈদ দাবি করেছেন পশ্চিমা প্রাচ্যবাদী বা Orientalist গবেষণা প্রাচ্যকে সবসময় পশ্চিম থেকে অধম হিসেবে উপস্থাপন করে। তাঁর গবেষণা, আমি যতদূর জানি, মূলত প্রাচ্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদকেন্দ্রীক। এমনিতে তিনি একাডেমিক অর্থে একজন মানবতাবাদী।
তাঁকে নিয়ে মোল্লাদের মধ্যে এত উল্লাসের কারণ তাঁর গবেষণা একদিক দিয়ে ইসলামী জাতীয়তাবাদীদের জেনোফোবিয়াকে উৎসাহিত করে। ইসলামিস্টরা সবসময়ই সেকুলার নৈতিকতাকে পশ্চিমা সংস্কৃতি হিসেবে দেখাতে পছন্দ করে। এডওয়ার্ড সাঈদের মত একজন বড় মাপের গবেষক যেহেতু প্রাচ্য নিয়ে পশ্চিমাদের প্রেজুডিস ফাস করে দিয়েছেন এবং সবার কাছে প্রসংশিত হয়েছেন, তার মানে সেকুলার/পশ্চিমা নৈতিকতা ভ্রান্ত! চলেন, আমরা ইসলাম কায়েম করে মানবজাতিকে মুক্তি দেই!
তবে আমি শুনেছি তিনি নাকি ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল। ফিলিস্তিন তাঁর জন্মস্থান হওয়ায় এবং ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের অত্যাচার দেখে তিনি ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেই পারেন। তিনি ইসলামকে পশ্চিমা প্রেজুডিসের শিকার হিসেবে দেখেছেন, তিনি বুঝতে পারেননি ইসলাম পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ থেকে কোন অংশেই কম যায় না। সুযোগের অভাবে সৎ হলে তো আর নৈতিক উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না।
@পৃথিবী,
:yes:
পশ্চিমা উদারপন্থীদের কমন ভুল। হিচেন্সের এ ব্যাপারে কিছু চমৎকার মন্তব্য রয়েছে।
@পৃথিবী,
তো পশ্চীম থেকে কি অধম না বাস্তবিকভাবেই? ইসলাম সিমপ্যাথাইজার হল্কে তো তাকে একটা ছোটখাটো বিরিঞ্চিবাবা বলা যায় নাকি?
@আল্লাচালাইনা, প্রাচ্যবাদীরা আমাদের সংস্কৃতি বা চিন্তাভাবনাকে অধম বলেনি, আমাদের পুরো অস্তিত্বকেই অধম বলেছে। সাঈদের “ওরিয়েন্টালিজম” বইতে প্রাচ্যবাদী সাহিত্য আর দর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আর উদ্ধৃতি আছে, তাই আমি এখানে আলাদাভাবে কোন উক্তি উদ্ধৃত করছি না। যৌনতার অধিকার, ধর্মপালন না করার অধিকার আর যুক্তিবাদের যুগে আমরা যখন কোরবানী সংক্রান্ত বিভ্রান্তি প্রচার নিয়ে আদালতে দৌড়াই, তখন একজন উপনিবেশপন্থী ব্রিটিশ যদি আপনাকে বলে “তোমাদের সংস্কৃতি খুব একটা সুবিধার না” তখন আপনি আপত্তি করতে পারবেন না। সে যদি একই সাথে একথাও বলে “বাঙ্গালীর অক্সফোর্ড-হার্ভার্ড-কেমব্রিজে পড়ার মত বুদ্ধি আছে দেখে আমি অবাক হয়েছি” তখন অবশ্যই আপনি প্রতিবাদ করবেন।
@পৃথিবী,
:laugh: হ্যা সেটা অবশ্যই করবো। পড়তে হবে কোন এক সময় এডওয়ার্ড সাঈদের ওই বইটা। তারপরও আপনি যদি বলে দিত পারেন ‘পশ্চীমারা আমাদের অস্তিত্বকই অধম বলেছে’ এই দাবীর পক্ষে এডওয়ার্ড সাঈদ ঠিক কি কি যুক্তি নিয়ে এসেছিলেন উপকার হয়।
@পৃথিবী, একটা কথা আমি ঠিক জানিনা। আপনার জানা থাকলে বুঝিয়ে বলবেন কি? এমনকি এই ব্লগ এও ইস্রেয়াল বিদ্বেষ? আমি মানি যে ইসরায়েল হয়ত ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে নির্যাতিত ইহুদিদের যে একটা আবাস ভুমি দরকার ছিল একথা আমরা কি অস্বীকার করতে পারি? হা আমি মানছি ইসরায়েল ভাল করছে না। কিন্তু ফিলিস্তিনি রাও কি এখন একটা সমঝোতায় আসতে পারেনা হামাস কে বাদ দিয়ে? মিশর ও তুরস্ক যদি ইসরায়েল কে স্বীকার করে তবে অন্য মুসলিম দেশ গুলো ইসরায়েল কে স্বীকার করে নিলে যদি সমস্যা সমাধান হয় ( জানিনা হবে কিনা ) তবে এতে অসুবিধা কোথায়? আরেকটা কথা, বিশাল এই পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরায়েল নামের অই একটা বিন্দু কি এতোটাই বড় বিষফোড়া যে কেউ কোন দিন তাকে সমর্থন করতে পারবে না? যাহোক প্রশ্ন তা আমার এই ব্লগ এর সবার কাছেই কিন্তু। ধন্যবাদ।