১৮৫২ সাল, লন্ডন, ইংল্যান্ড। বৃটেন সবেমাত্র পরাজিত করেছে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্ঞবাদী সৈন্যবাহিনী, বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে পৃথিবী বিস্তৃত বৃটিশ কলোনীগুলো, শিল্পবিপ্লল হু হু করে বাড়িয়েছে জনসংখ্যা, জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দারিদ্র, অশিক্ষা, জীবনযাত্রার নিন্মমান ও অপরাধ। গোটা লন্ডন শহর জুড়ে ছড়ানো শত শত বস্তির মধ্যে কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে মাঝে মাঝে উঠতো ইনিয়ে বিনিয়ে কান্নার রোল, পাশের বস্তিবাসী তার অপুষ্টিপুষ্ট শরীরটিকে বিরক্তির সাথে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ভাবতো মারা হয়তো গিয়েছে কেউ, ভেবে ভ্রু কুঁচকে ঘুমিয়ে পড়তো আবার। বলাই বাহুল্য যেই সময়ের কথা আমরা বলছি সেই সময়ে শিশুরা গন্য ছিলো খরচযোগ্য সম্পদ হিসেবে। ২৫% শিশু মারা যেতো একবছর বয়স পূর্তির পূর্বেই, আর ৫০% মারা যেতো দশবছর বয়স পূর্তির আগেই। বস্তুত একটি নির্দৃষ্ট সময় যেমন ১ বছরের মধ্যে ঘটা সকল মৃত্যুর ৫০%ই ছিলো শিশু বা অনূর্ধ্ব ১৬। শিশুকেও যে চিকিতসক দেখানো প্রয়োজন হতে পারে এমন ধারণা কারও দুঃস্বপ্নেও আসেনি কখনো, খুব সম্ভবত শিশুটি মারা যাবে এবং মারা যাবে বিনা চিকিতসায় অবর্ণণীয় যন্ত্রনায় এই সত্য মেনে নিতে কারোই কোন সমস্যা ছিলো না। শুধুমাত্র চার্লস ওয়েস্ট নামক এক ইংরেজ গাইনিকোলজিস্টের সমস্যা দেখা দিলো। তিনি বললেন, “আমি বৃটেনের প্রথম শিশু হাসপাতালটি স্থাপন করতে চাই।”

তো চার্লস ওয়েস্ট ভাবলেন একটি শিশু হাসপাতালের কথা। লোকে হাসলো, অনেকে করলো তিরষ্কার, কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো না; তবে তিনি দমলেন না। সম্পুর্ণ নিজের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এবং লর্ড শ্যাফ্টসবুরির মতো মহৎ মানুষের আর্থিক প্রচেষ্টায় ১০ বছরের মধ্যে স্থাপন করলেন ১০ শয্যা বিশিষ্ট ইংল্যান্ডের প্রথম শিশু হাসপাতাল, ৪৯ গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ঠিকানায়। পরবর্তী দেড়শো বছরে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এই পার্টনার হাসপাতালটির গ্রুথ আমরা দেখবো, অভাবিত গ্রুথ, ইনভেইসিভ, ম্যালিগ্নেন্ট, ক্যান্সারাস গ্রুথ। বস্তুত এখন যদি আপনি ৪৯ গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ঠিকানায় দাড়ান আপনি একটি হাসপাতাল দেখবেন না, বরং দেখবেন এক শহর হাসপাতাল। আপনার দুচোখের পক্ষে যতোটুকু দেখা সম্ভব, দেখবেন আপনি শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। নিজের অজান্তেই আপনার মন বলে উঠবে ‘এত্তোবড়ো শিশু হাসপাতাল আমি আমার জীবনে দেখিনাই।’ আপনি ভুল নন, বস্তুত এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল এবং বিশ্বের প্রথম তিনটি বড় পেডিয়াট্রিক হাসপাতালের একটি। এই হাসপাতালটির খেলার যায়গা বা প্লে গ্রাউন্ড কভার করতে ৫০ জন কর্মচারী প্রয়োজন হয়; শিশুদের অনেক অজব অজব রোগ হয় যেই রোগগুলোর চিকিতসা কিনা সময়সাপেক্ষ, এইসব দীর্ঘকালীন রোগীদের জন্য রয়েছে স্কুল, জীবনপ্রান্তিক রোগীদের জন্য সর্বাধুনিক পেডিয়াট্রিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমসম্বৃদ্ধ হস্পাইস সেবা এবং কি নয়। এর বিশালাকার অনেকের মনে এর সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে বিধায় সদর দরজায় বিশাল অক্ষরে লেখা দেখবেন আপনি ‘এটি একটি শিশু হাসপাতাল। এখানে কোন জরুরী বিভাগ নেই, জরুরী বিভাগের জন্য দয়া করে পার্শ্ববর্তী ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে যান।” এখানে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বিখ্যাত পেডিয়াট্রিক ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র। এই হাসপাতালেই উদ্ভুত হয় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট যা কিনা বাঁচাচ্ছে হাজার হাজার শিশু ক্যান্সার রোগীর জীবন, এই হাসপাতালেই প্রথম সম্পুর্ণ কৃত্রিম হৃতপিন্ড নিয়ে একটি শিশু বেঁচে আছে, এই হাসপাতালেই প্রথম জিন থেরাপীর সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে, অর্থাৎ মানব কোষে কৃত্রিম ডিএনএ স্থাপন করে লিউকিমিয়ার চিকিতসা করা হয়। এরকম আরও কতো শত আলোড়ণ সৃষ্টিকারী আবিষ্কার যে এই হাসপাতালে হয়েছে তার সীমা নেই। এটি একটি উতপাদনশীল সেবাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এবং আমার মতে পৃথিবীর আর অন্যান্য এই তিন ধরণের প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে সুন্দরতম। তবে এই সৌন্দর্য জাগতিক কোন সৌন্দর্য নয়। এই সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে হবে মনের চোখ দিয়ে। মনের চোখ দিয়ে তাকাতে হবে প্রতি বছরে যেই ১০০,০০০ শিশুর জীবন এই হাসপাতাল রক্ষা করে সেইসব শিশুদের মুখগুলির দিকে।

এই হচ্ছে আমার গল্প, আমার গল্পটির মোরাল হচ্ছে usefulness is beauty. অথচ সুন্দরকে আমরা এই কোন কদাকারের বুকে পৃষ্ঠ হতে দেখি , ফুলের বাগানে কেনো দেখি শত শত শূঁয়োরের ঘোঁতঘোঁতানীপূর্ণ পঙ্ককেলি? গ্রেইট অর্মন্ড ষ্ট্রীট ধরে সামনে হাঁটলে আপনার চোখে পড়বে বিশাল একটি লালরঙ্গা ভবন ‘রয়াল লন্ডন হোমিওপ্যাথিক হাসপাতাল’ ফলক বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যতোটা আপত্তিকরভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব। (যদিও গত দুসপ্তাহ আগে ১৫ তারিখে এই ভবনটি তাদের নাম পরিবর্তন করে হোমিওপ্যাথি শব্দটি বাদ দেয় প্রচন্ড গনরোষের মুখে। গনরোষ কি হোমিওপ্যাথি শব্দটিকে কেন্দ্র করে কিনা আমি জানি না, তবে আমার রোষ হোমিওপ্যাথি শব্দটিকে কেন্দ্র করে নয়, আমার রোষ বরং হাসপাতাল শব্দটিকে কেন্দ্র করে।) তবে নাম বদলালেও কাম যে কতোটুকু বদলিয়েছে সেটা আমি যেমন জানি আপনিওতো জানেন। রিচার্ড ডকিন্সের তার এই http://www.youtube.com/watch?v=XJqfN_WfTQoভিডিওতে এই হোমিওপ্যাথি কেন্দ্রের কথাই বলছিলেন, ডকিন্স যেখানে দাঁড়িয়ে তার ঠিক পেছনেই গ্রেইট অর্মন্ড স্ট্রীট হাসপাতাল।

একটা জিনিষ আমি লক্ষ্য করলাম যে স্নাতক পূর্ববর্তী প্রাথমিক শিক্ষার সকল পাঠ্যক্রমই ছাত্রদেরকে সরলভাবে শিখিয়ে দেয় কি করে এই পৃথিবী কাজ করছে। তারা শিখে যায় গাড়ি কেনো চলে, ফ্রিজ কেনো ঠান্ডা রাখে, শ্বসন ও শালোকসংশ্লেষণ কি করে বাঁচিয়ে রাখে, কেনো ও কি প্রক্রিয়ায় মানুষ সমাজবদ্ধ হয়, কেনো বিশ্বযুদ্ধ বাধে, গ্রহ কেনো প্রদক্ষীণ করে, দাম কেনো বাড়ে, কি করে প্রজাতির জন্ম হয়, দুইয়ে দুইয়ে চার কেনো হয় ইত্যাদি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু তারা শেখে না, যেই প্রশ্নটি কিনা আমার এই লেখার শিরোনাম। ফলশ্রুতিতে বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হয়ে উঠেছে নানা ধরণের বিজ্ঞানবিরোধী সর্পতৈলব্যাবসায়ী বিরিঞ্চিবাবাদের এক আদর্শ প্রজননস্থল। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই রমরমা সাপের তেলের হাঁটকে কার্যকরীভাবে গরম করে রাখে কিছু কোয়্যাক-সমব্যাথী শিক্ষিত মানুষ, শিক্ষা কিনা যাদের মন থেকে ছিটকে ছিটকে পরিবেশে বেরিয়ে আসা ঘৃণ্য কনস্পিরেসি থিওরির নিস্ক্রমন-পথটি চিরতরে সিলগালা করে দিতে পারেনি। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে থাকে ইসলামের বিরুদ্ধে তুমি এতো প্রদাহী কেনো? আমার দুঃখ হয় তাদেরকে যদি আমি দেখাতে পারতাম বিজ্ঞানবিরোধিতা যেমন- হোমিওপ্যাথি, ক্রিয়েশনিজম, হুজুরের পানিপড়া, কমিউনিজম ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমি কতোটা প্রদাহী, অনুপাত হিসেব করে তারা বোধহয় তাদের পূর্বোক্ত প্রশ্নটি পরিবর্তন করে এই প্রশ্ন করতো যে- ইসলামের বিরুদ্ধে আনুপাতিকভাবে কেনো এতোটা অপ্রদাহী আমি। যাই হোক, আমার আমার এই লেখাটির উদ্দেশ্য হতে যাচ্ছে – ‘ঔষধ কি করে অসুখ ভালো করে’ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। সময়ের অভাবে আমার এই লেখাটির মান হতে যাচ্ছে তুলনামুলকভাবে খারাপ এবং লেখা হতে যাচ্ছে অবিস্তারিত ও অগোছালো। তবে কেউ যদি আসলেই জানতে ইচ্ছুক হন, ‘ঔষধ কি করে অসুখ ভালো করে?’, তার চিন্তার খোরাক যোগাতে পারে এটা।

ড্রাগ একটি অতীব প্রয়োজনীয় জিনিষ, ড্রাগের অভাবে আমরা প্রত্যেকটি হ্যাপ্লোরিন বানর মারা যাবো। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে আমরা হ্যাপ্লোরিন বানরেরা ভিটামিন সি জৈবসংশ্লেষ করতে পারি না কেননা আমাদের ভিটামিন সি জৈবসংশ্লেষ গমনপথের একটি অতীব প্রয়োজনীয় এনযাইম গুলোনোল্যাক্টোন অক্সিডেস আমাদের বংশধারায় লস অফ ফাঙ্কশন মিউটেন্ট। ভিটামিন সি এর অভাবে দেখা দেয় স্কার্ভি নামক একটি ঘাটতি রোগ বা ডিফিসিয়েন্সি ডিসিস। কোলাজেন হচ্ছে একটি কোষ-সংযুক্তি প্রোটিন বা সেল অ্যাঢেশন মলিকিউল যার কাজ একটি কোষকে অরেকটি কোষের সাথে বন্ধনযুক্ত করা। এই বন্ধনই কিন্তু আমাদের টিস্যুকে দেয় সংগঠনগত দৃঢ়তা, হাড়ের টিস্যু অনেক দৃঢ় কেননা তাদের অ্যাঢেশন অনেক দৃড়, রক্তটিস্যু তরল কেননা রক্তকোষগুলোর অ্যাঢেশন প্রায় নেই বললেই চলে। কোলাজেন একটি ফাইব্রাস বা তন্তুভিত্তক প্রোটিন। একটি একক তন্তু কিন্তু খুবই দুর্বল, কিন্তু একাধিক তন্তুকে যদি একটির উপর অপরটি রশির মতো পাকানো যায় তবে তার টেন্সাইল স্ট্রেন্থ বাড়তে থাকে, সেই তন্তু দিয়ে জাহাজ ঘাটে বাঁধা সম্ভব। একটি একক কোলাজেন চেইন দুটি অপর কোলাজেন চেইনের সাথে পাকিয়ে হিলিস গঠন করতে পারে বলেই অ্যাঢেশন হওয়া সম্ভব এতোটা দৃঢ়, বস্তুত এই প্রাণালীই এর পেছনে দায়ী যে- আমাদের চুলের টেন্সাইল স্ট্রেন্থ ইস্পাতের চেয়েও বেশী। যাই হোক কোলাজেনের এই তন্তু পাকানোর ক্ষমতা নির্ভরশীল তার চেইনের নির্দৃষ্ট ফাঁক পর পর যেই প্রোলিন রেসিডিউগুলো রয়েছে তাদের উপর। প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস নামক এই একটি এনযাইম প্রোলিনকে অক্সিডাইজড করে হাইড্রক্সিপ্রোলিনে রূপান্তর করে। ফলে, সহসাই চার্জহীন, হাইড্রোফোবিক প্রোলিন অ্যামিনো এসিড অন্য কোলাজেন চেইনের আরেকটি হাইড্রক্সিপ্রোলিনের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন স্থাপন করতে পারে। এই হাইড্রোজেন বন্ধনই বস্তুত কোলাজেনের পাকানো তন্তুকে ধরে রাখে। দেখা যায় যে, প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস এনযাইমের একটি কো-ফ্যাক্টর হচ্ছে অ্যাস্কর্বিক এসিড বা ভিটামিন সি। ভিটামিন সি এর অভাবে প্রোলিন হাইড্রক্সিলেস প্রোলিনকে অক্সিডাইজডকরার আগে নিজেই অক্সিডাইজড হয়ে যাবে, অর্থাৎ ভিটামিন সি এর অভাবে কোলাজেন তন্তু পাকাতে পারবে না তাই কোষের অ্যাঢেশন দুর্বল হতে থাকবে এক সময় টিস্যু ঐক্যবদ্ধতা হারিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্কার্ভির প্রথম লক্ষণগুলোই তাই দাঁত পড়ে যাওয়া, মুখ হতে রক্তপাত, সারাশরীর হতে রক্তপাত, চামড়ায় অন্তস্থিত রক্তপাত বা ইন্টার্নাল ব্লিডিঙ্গএর ছোপ ছোপ দাগ, পরিশেষে মৃত্যু। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্কার্ভির চিকিতসা কি? এখন যদি একটি হাসপাতালে কেউ স্কার্ভি নিয়ে অপস্থিত হয় ডাক্তার তাকে কি ঔষধ দেবে? উত্তর হচ্ছে ভিটামিন সি, তাকে খাওয়ানো হবে পর্যাপ্ত পরিমানে সাইট্রাস ফল যেমন- আপেল, কমলা ইত্যাদি। ভিটামিন সিই হচ্ছে স্কার্ভির একমাত্র ঔষধ যা কিনা প্রকৃতি নিজেই আমাদের যোগান দিচ্ছে। নাহলে ভাবুন ভিটামিন সি এর মতো এতোটা গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুর সংশ্লেষ গমনপথ হারিয়ে ফেলাটা যে কোন জীবের জন্যই হতো প্রাকৃতিক নির্বাচনেরহিংস্র থাবার নীচে পড়ারই নামান্তর, কিন্তু নিজে ভিটামিন সি সংশ্লেষ করতে না পেরেও অন্যান্য জীব যারা কিনা এটা সংশ্লেষ করতে পারে তাদেরকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী চাপ আমরা হ্যাপ্লোরিন বানরেরা এড়িয়ে গিয়েছি। হৃদয়হীন মাপেট যারা কিনা দাবী করে থাকে যে গত তিনশোছত্রিশ বছর যাবত সে কোন ড্রাগ গ্রহন করেনি, তাদেরকে আপনি এখন এটা বলে দিতে পারেন যে ঐ মাপেট গত তিন চার ঘন্টা আগেই তার শেষ খাবারের সাথেই গ্রহন করেছে অ্যাস্কর্বিক এসিড নামক এই ড্রাগটি, এটা সে পছন্দ করুক আর নাই-ই করুক।

কোয়্যাক যারা কিনা সংজ্ঞাগতভাবেই বিজ্ঞান অশিক্ষিত, বিজ্ঞানের চেয়ে কাসাসুল আম্বিয়া কিনা যাদের কাছে অপেক্ষাকৃত বেশী মজাদায়ক, তারা মনে করে থাকে যে প্রমানভিত্তিক চিকিতসাবিজ্ঞানে আমরা রোগের বিরুদ্ধে আদা,রসুন, জিরা, মরীচ প্রভৃতি রোগীকে খাইয়ে দেখি কোন কাজ হয় কিনা, কাজ হলে হাত তালি মেরে বলে উঠি there we are! আসলে কি ঔষধ এইভাবে কাজ করে থাকে? মোটেই না। একটি ড্রাগ ডিজাইনের প্রথম ধাপই হচ্ছে টার্গেট নির্ধারণ। টার্গেট হচ্ছে অনু যার সাথে কিনা একটি ড্রাগ অ্যাগোনিস্ট বা এন্টাগোনিস্ট হিসেবে বন্ধন করবে। একটি রোগকে জানতে থাকলে আস্তে আস্তে প্রতীয়মান হয় একটি টার্গেট যেটিতে কিনা ঔষধ ব্যাবহার করা যায়। তারপর ঐ ঔষধটি ডিজাইন করে দেখা হয় কতোটা অশানুরুপভাবে সে টার্গেটের সাথে বন্ধন স্থাপন করছে, আরও দেখা হয় টার্গেট ছাড়া অন্য কোন অনুর সাথে বন্ধন স্থাপন করছে কিনা। তিনটি অনু ড্রাগ টার্গেট হতে পারে- প্রোটিন যেমন বিভিন্ন এনযাইম ও রিসেপ্টর, ডিএনএ এবং রাইবোযোম। আমি ড্রাগ টার্গেটিঙ্গ এর একটি উদাহারণ দিতে চাই-

যেইসকল জীবেরা প্রাণী তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটি প্রতিক্রিয়া বা রেসপন্স রয়েছে যাকে কিনা বলা হয় ফাইট অর ফ্লাইট প্রতিক্রিয়া, যে কোন স্ট্রেস বা বিপদের মুখে এই রেসপন্স কার্যকর হয়। এটির অনুঘটক কিডনীর উপরস্থিত অ্যাড্রেনাল গ্লান্ড নামক দুটি ছোট অঙ্গ (ব্যক্তগতভাবে এটি আমার প্রাণীদেহের পাঁচটি প্রিয় অঙ্গের একটি) কত্বৃক নিস্ক্রিত অ্যাড্রেনালিন ও নোর‌্যাড্রেনালিন নামক হর্মোন। অ্যাড্রেনালিন হৃদকোষে এক্সপ্রেসড বেটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর টাইপ ১ নামক একটি ট্রান্সমেম্ব্রেইন রিসেপ্টর বন্ধন করে একটি সংকেত সঞ্চালন ক্যাসকেড সূচিত করে যার চুড়ান্ত ফলাফল হয় হৃতস্পন্দন হার বৃদ্ধি পাওয়া ও হৃদকোষের সঙ্কোচন বল বা কন্ট্রাক্টাইল ফোর্স বৃদ্ধি পাওয়া। হঠাত একটি বিকট শব্দ শুনলে কিংবা টিভিতে বসে ধারাবাহিক ডক্টর হু দেখার সময় কোন এক চরম মুহুর্তে আমাদের হৃদস্পন্দন যে বৃদ্ধি পায় এটা সেই কারণেই। ফ্লাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স একটি ভালো জিনিষ, তবে উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগী যাদের হৃদপিন্ড এমনিতেই বেশ ঝুঁকিপূ্র্ণ তাদের জন্য এটা অতোটা ভালো কিছু নয়। যখন তখন ফ্লাইট আর ফাইট রেসপন্স চালু হয়ে এরা হার্টঅ্যাটাকে মারা যায় অনেক বেশী, দেখেননি পত্রিকায় প্রিয় দল ফুটবল খেলায় গোল করলে পরে উত্তেজনায় দর্শকের মৃত্যু কিংবা ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে মায়ের মৃত্যু? যাই হোক, দেখা যাচ্ছে এই বেটা অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর টাইপ ১ প্রতীয়মান হচ্ছে একটি সম্ভাবনাপূর্ণ ড্রাগ টার্গেট হিসেবে, এই রিসেপ্টর এন্টাগনিজম করে আমরা হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনতে পারি। আমরা একটা ইনহিবিটরও ডিজাইন ও সংশ্লেষ করলাম এটিনলোল নামে। এটিনোলল আড্রেনার্জিক রিসেপ্টরের সাথে বন্ধনও করলো। নিঃসন্দেহে এটি ফ্লাইট আর ফাইট রেসপন্স সূচীত হওয়া রোধ করবে, এটি কাজ করবে যেই কারনে, একই কারনে একটি জিনিষ উপরে ছুড়ে ফেললে নীচে নেমে আসে। অথচ, কতোটা নির্দয় কোয়্যাকেরা যারা কিনা বলে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। কোয়্যাক বলে ওয়েল তোমার কেমিস্ট্রি ঠিকই আছে তবে সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ব বিস্তারিতিভাবে অধ্যয়ন করে আমি দেখাছি যে, তারপরেও ড্রাগ কাজ করে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি দেখতে পারো এইযে অধ্যক্ষ রুস্তম আলী পল্টুর ব্যক্তিগত ব্লগ, এবং আমার আপন খালুর আত্নজীবনী। এতোকিছুর পরও যদি কোয়্যাকটিকে আমি একটি অট্টহাস্য উপহার না দেই, কৃতজ্ঞাতাস্বরূপ কয় রাকাত নফল নামায কোয়্যাকটির আদায় করা উচিত, সেটি কোয়্যাকই বসে নির্ধারণ করুক এবার।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে আরেকটি জিনিষ যা নিয়ে কোয়্যাক ও কোয়্যাক-সমব্যাথীদের অভিযোগের অন্ত নেই কোন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে প্রতিক্রিয়া যা কিনা আগে থেকে আশা করা হয়নি। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিন্তু বিজ্ঞানীরাই, রসায়নবিদেরাই আবিষ্কার করে, কোন কোয়্যাক কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আবিষ্কার করে না। থালিডোমাইড ছিলো একটি সিডেটিভ ড্রাগ যেটি কিনা মেয়েদের মর্নিং সিকনেসের ঔষশ হিসেবে অবিষ্কৃত হয়, মর্নিং সিকনেস একটি নোংড়া নোংড়া যন্ত্রনা যেটি কিনা আমাদের সভ্যতার বিপুল পরিমান সময় এবং ফলশ্রুতিতে অর্থ নষ্ট করে। একটি চমতকার ড্রাগ হিসেবে এটি চলেই আসছিলো তবে সমস্যা দেখা যায় একটি। গর্ভবতী মহিলারা এটি গ্রহন করলে পরে দেখা যায় জন্ম নেওয়া সন্তানদের হচ্ছে ফকোমালি নামক একটি বিকাশবিকৃতিজনিত রোগ বা কঞ্জেনিটাল ডিসিস যেখানে কিনা হাত-পাগুলো হয় স্বাভাবিকের চেয় অনেক ছোট এবং অঙ্গুলগুলোর বিকাশও স্বাভাবিক হয় না, কান ও অন্ত্রের বিকাশও হয় অস্বাভাবিক। ভ্রুনগতবিকাশবিকৃতির অনুঘটক রাসায়নিককে বলা হয় টেরাটোজেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে থালিডোমাইডের টেরাটোজেনিসিটির উতস কি? দেখা যায় যে, টোটাল সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় কারখানায় সংশ্লেষিত থালিডোমাইড ধারণ করে আর ও এস এনান্টিওমারের অর্ধক অর্ধেক অনুপাত, একটি আইসোমার টার্গেট ইনহিবিট করে এবং অপরটি ইনহিবিট করে সম্পুর্ণই নতুন ও অনাকাঙ্খিত একটি টার্গেট যেই টার্গেটটি কিনা হাত-পা এর বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। থালিডমাইড টেরাটোজেন গর্ভধারণের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে, এরপর থালিডমাইড সম্পুর্ণই নিরাপদ। তাই বাজার থেকে তুলে নেওয়া থালিডোমাইড আবার বাজারে প্রবেশের অনুমতি পায় এবং এখন এটি ব্যাবহার হচ্ছে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সার চিকিতসায়। আমরা যেই টার্গেটের বিপরীতে একটি ড্রাগ পছন্দ করি একটি ড্রাগ ঐ টার্গেটের পাশাপাশি যদি অন্য কোন টার্গেটও ইনহিবিট করে তখনই দেখা যায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এবং এটি কিন্তু খুবই স্বাভাবিক যে একটি ড্রাগ একাধিক টার্গেট ইনহিবিট করবে। আমাদের শরীরে মোত প্রোটিন তৈরী হয় ২০০,০০০-২৫০,০০০ ধরণের। অথচ কনসার্ভড ডোমেইনের সংখ্যা কিন্তু মাত্র ৬০ টি। অর্থাৎ, প্রতিটি প্রোটিনই এই ৬০ টি কনসার্ভড ডোমেইনের এক বা একাধিকটির কম্বিনেশন পার্মুটেশন। একটি ড্রাগে একটি নির্দৃষ্ট ডোমেইন সম্বৃদ্ধ একটি প্রোটিন ইনহিবিট করেই শুধু ক্ষান্ত থাকবে না বরং ইনহিবিট করবে ওই একই ডোমেইন সে আরও যেই যেই প্রোটিনে সে পাবে তাদের সবকটিকেই। এবং বলাই বাহুল্য সকল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই কিন্তু খারাপ কিছু হবে না, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভালো কিছুও হতে পারে। একটি ড্রাগ যদি একটি মাত্র এনযাইমই শুধু ইনহিবিট করে এটাকে বলে ঐ ড্রাগের স্পেসিফিসিটি। যেমন- বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত সর্বাধিক স্পেসিফিসিটিসম্পন্ন (আমার মতে) ড্রাগ হচ্ছে ইমাটিনিব যা ব্যবহৃত হয় ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ার চিকিতসা হিসেবে। যাই হোক, আমি আপনাদের অ্যাস্পিরিনের একটি ভয়াবহ ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলতে চাই।

অ্যাস্পিরিন সহ সকল NSAID ড্রাগের টার্গেট হচ্ছে সাইক্লোঅক্সিজেনেস এনযাইম যা কিনা প্রস্টাগ্লান্ডিন সংশ্লেষ গমনপথের একটি অপরিহার্য অংগ। থ্রম্বোক্সেন হচ্ছে প্রস্টাগ্লান্ডিনের মতোই আরেকটি প্যারাক্রাইন ফ্যাক্টর রাসায়নিক গঠনগত দিক থেকে যেটি কিনা প্রস্টাগ্লান্ডিনের খুবই কাছাকাছি, তাই বলাই বাহুল্য যে থ্রম্বোক্সেন সংশ্লেষ গমনপথও সাইক্লোঅক্সিজেনেস নির্ভর। অ্যাস্পিরিন সাইক্লোঅক্সিজেনেস ইনহিবিট করার মধ্য দিয়ে শুধু প্রস্টাগ্লান্ডিন সংশ্লেষ গমনপথেই বাধ সাধছে না, বাধ সাধছে থ্রম্বোক্সেন সংশ্লেষ গমনপথেও। প্রস্টাগ্লান্ডিন যেমন ইনফ্ল্যামেটোরি রেসপন্স বা প্রদাহী প্রতিক্রিয়ার অনুঘটক, থ্রম্বোক্সেন তেমনি ব্লাডক্লট রেসপন্স বা রক্তজমাটবদ্ধকারী প্রতিক্রিয়ার একটি অনুঘটক। অর্থাৎ, অ্যাস্পিরিন স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন রোগী যেমন হাইপারটেনশন রোগীদের স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক অনেক কমিয়ে দেয় রক্তজমাটবদ্ধকরণে অসহযোগীতা করার মধ্য দিয়ে। অ্যাস্পিরিনের কাছ থেকে তো এটা আমরা আশা করিনি, আমরা জানতামও না যে অ্যাস্পিরিন এটা করে। এটা অ্যাস্পিরিনের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। থ্যালিডোমাইডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলে বলে আপনি কোয়্যাকদের চারপাশ দুর্গন্ধ করে ফেলতে দেখবেন অথচ, অ্যাস্পিরিনের এই সাইড ইফেক্ট কিন্তু তারা চুপিসারে এড়িয়ে যায়। কতোটা অসত ও অজ্ঞান কোয়্যাক চিন্তা করুন।

প্ররোচনা বা সাজেস্টেবিলিলিটি তথ্যকে বিক্রিত করে। আমি একটি স্টাডি দেখেছি যেখানে দুটি গ্রুপকে দুটি মোটামুটি ক্ষতিগ্রস্থ গাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখিয়ে যথাক্রমে প্রশ্ন করা হয় ‘গাড়ি দুটি কতো গতিবেগে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়’ এবং ‘গাড়ি দুটি দুর্ঘটনায় পতিত হবার সময় তাদের গতিবেগ কতো ছিলো’। দেখা যায় যে ‘সংঘর্ষ’ গ্রুপ ‘দুর্ঘটনা’ গ্রুপ থেকে গড়ে বেশ খানিকটা বেশী গতি রিপোর্ট করছে। একই স্টাডি বহুবার পুনঃপ্রতিপাদন করেও এই একই ফল পাওয়া যায়। কি কারণে এটা ঘটে? এটা ঘটে কেননা ওই স্টাডির কোয়্যারি প্রশ্নদুটি ছিলো সাজেস্টিভ বা প্ররোচনামূ্লক। যখন বলা হচ্ছে ‘সংঘর্ষ’ তখন মানব মন ধরেই নেয় যে এটার গতিবেগ একটি প্লেসিবো শব্দের চেয়ে বেশী কেননা আমাদের রয়েছে কনফার্মেশনাল বায়াস নামক একটি মানবিক প্রবৃত্তি, একজন অপেক্ষাকৃত বেশী এক্সপার্টিজধারীর বক্তব্যকে কনফার্ম করার পায়তারা খোঁজে আমাদের মন সবসময়। এমনকি বাজার বা মার্কেটপ্লেস যেখানে মানুষ মনস্থির করেই যায় যে কনফার্মেশনাল বায়াস দ্বারা আক্রান্ত হবে না, সেখানেও সে কিন্তু এই বায়াস এড়িয়ে চলতে পারে না, কেননা এটা বিবর্তনতাত্বিকভাবেই সংরক্ষীত, এটা কেমিস্ট্রি।

বায়াস আমরা কিভাবে নির্ধারণ করি তার একটি সহজ উদাহারণ আমি দিতে চাই। মনে করুন, আপনি মাল্টিপল চয়েস প্যাটার্নে চারটি বিকল্প সম্বৃদ্ধ ২৫ টি প্রশ্ন তৈরী করলেন যার প্রথম পাঁচটির উত্তর প্রথম বিকল্পটি। এখন পরবর্তী পাঁচটি প্রশ্নকে যদি আপনি প্লেসিবো প্রশ্ন রূপে স্থাপন করেন তবে আপনি নির্ধারণ করতে পারেন প্ররোচনা ঐ স্টাডিকে কতোটা প্রভাবিত করছে। পরবর্তী পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কয়টির জন্য উত্তরকারী প্রথম বিকল্পটি বেঁছে নেয় এটা দেখে আপনি পরিমানগতভাবে পরিমাপ করতে পারেন বায়াস দ্বারা উপাত্তকে কতোটুকু দূষিত করছে সে। তার দূষণটুকু আপনি আসল উপাত্ত থেকে বিয়োগ করে উপাত্তকে খাঁটি করে অন্য একটি কোহর্টে পুনঃপ্রতিপাদন করতে পারেন। কিন্তু হায় কাকে এই কথা বলছি, বিজ্ঞানের দর্শনতো কোয়্যাক বোঝে না।

ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পর্কে কোয়্যাকরা একটা মিথ্যাচার করে যে একাধিক কোহর্টের মধ্যে একটি পরীক্ষা সর্বদা একই ফল প্রকাশ করে না। এটি কি সত্য? উত্তর হচ্ছে না। একটি ফেইস ১ ট্রায়াল যদি ৫০০ জনের একটি কোহর্টে নিরাপদ নির্ধারিত হয় আর অন্য একটি ৫০০ জনের কোহর্টে ফেল মারে তবে সেটি ফেলই মারে। রিপ্রজিউসিবিলিটি হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রাণ, একই পরীক্ষা একই সেটিং এ একই ফল প্রদান না করলে আমরা চুপিসারে কেটে পরি। অবশ্যই ড্রাগ ট্রায়াল নিয়ে চুপিসারে কেটে পড়া যায় না। আইনগতভাবে আমরা বাধ্য একটি ট্রায়ালের ফলাফল ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক বা কেন তা প্রকাশ করতে। কোয়্যাকদের এই যুক্তিটা অনেকটা এইরকম যে- মধ্যাকর্ষণ বলে সব কিছু মাটিতে পড়বে, পাখি আকাশে ওড়ে, হা হা হা হা মধ্যাকর্ষণ তবে ভুল। বলাই বাহুল্য, মধ্যাকর্ষণ ভুল নয়, কোয়্যাকটি তার সেলফ ডিলুশনাল অলস মস্তিষ্ক দিয়ে মধ্যাকর্ষণকে যেভাবে বুঝেছে সেটি ভুল। একটি স্টাডি কিভাবে ডিজাইন করা হয় কোয়্যাক জানে না। তারা জানে না লিনিয়ার স্ট্যাটিস্টিকাল মডেল ব্যাবহার করে যে আমরা একটি ডিপেন্ডেন্ট চলকের বিরুদ্ধে একাধিক এক্সপ্লানেটোরি চলক স্থাপন করে নির্ধারণ করতে পারি অজানা চলকের ফাঙ্কশন। এই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা। এই প্রক্রিয়াতেই আমরা নির্ধারণ করি একটি গাড়ি নষ্ট হবার আগে কতোদিন চলবে এবং একবার দুর্ঘটনায় পড়ে এইটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হলে নেট আয়ু তার কতোখানি কমবে। এটাকে বলে কাপ্লান-মারিয়ার রিলেটিভ সার্ভাইবেবিলিটি প্লট। কিন্তু, কোয়্যাক তো পরিসংখ্যান বোঝে না। স্টাডিকে ডাবল ব্লাইন্ড রেখে সংগ্রহিত উপাত্তের সিলেকশন ও গ্রুপিং বায়াস যে আমরা শূণ্যতে নামিয়ে আনতে পারি এই কথা কোয়্যাক বলে না। অথবা, অন্যান্য প্রতিটি বায়াস যা কিনা উপাত্তকে দুষিত করে তার সবগুলো আমরা পরিমাপগতভাবে মেপে তা বিয়োগ করে যে উপাত্তকে শুদ্ধ করতে পারি এই ব্যাপারটিও কোয়্যাক আমলে নেয় না। ডিভিয়েশন, ভ্যারিয়েন্স, মিন, মেডিয়ান মেপে আমরা যে উপাত্তের সেন্ট্রাল ট্রেন্ড নির্ধারণ করতে পারি এটাও কোয়্যাক বলে না। সর্বোপরি প্রত্যেকটি পরীক্ষাই যে পরীক্ষা হয়ে ওঠে অনেকবার পুনঃপ্রতিপাদিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই জিনিষটাই কোয়্যাক বোঝে না।

অ্যালোপ্যাথি শব্দটি নিয়ে আমার কিছু বলার আছে। জার্মান দেশে জন্ম নিয়েছিলো সামুয়েল হানিমান (ডক্টর হ্যানিবল নয়) নামক এক চরম ধুরন্ধর বাটপার কোয়্যাক। সেই সর্বপ্রথম হোমিওপ্যাথি করতো এবং অ্যালোপ্যাথিও তার কয়েন করাই একটি টার্ম। এভিডেন্স বেইজড মেডিসিনকে সে অ্যালোপ্যাথি নাম দেয় অনেকটা আমেরিকার ক্রিয়েশনিস্টরা বিবর্তনতত্বকে যেমন ডারউইনিজম নাম দেয় তাদের মতোই। অ্যালোপ্যাথি কি কোন মেশ টার্ম, না; বিজ্ঞানীরা জার্নালে কথা বলার সময় কি এই শব্দটি উচ্চারণ করে, না। মেডিসিন দুই প্রকার- মেডিসিন আর অল্টার্নেটিভ মেডিসিন। একটি এভিডেন্স বেইজড আরেকটি কোয়্যাকারি। অল্টার্নেটিভ মেডিসিন তাদের সপক্ষে কোন এভিডেন্স যোগাড় করতে পারে না বলেই তারা অল্টার্নেটিভ। যদি পারতো তবে তারা আর অল্টার্নেটিভ থাকতো না, তারা হতো শুধুই মেডিসিন। সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে- অ্যালোপ্যাথি শব্দটি চলুন আমরা কেউ ব্যাবহার না করি, যেই কারণে আমরা ব্যাবহার করিনা ডারউইনিজম শব্দটি। অ্যালোপ্যাথির একটি সুন্দর প্রতিশব্দ হতে পারে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বা প্রমানভিত্তিক ঔষধ।

তবে এটা আমি জানি কোয়্যাক থাকবেই। কোয়্যাক থাকবেই কেননা মানুষ একটি ১৩০০ সিসি আয়তনের মস্তিষ্কধারী জীব যারা বিবর্তনতাত্বিকভাবে নির্বাচিত একে অপরের উপর নির্ভর করার জন্য। কো-অপরেশন এমন একটি জিনিষ প্রকৃতির ইতিহাসে যা কখনই নাবোধক নির্বাচনের শিকার হয়নি। মানুষ তার ১৩০০ সিসি মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে ভাষা উদ্ভাবন করেছে যা কাজে লাগিয়ে কিনা তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। কি লাভ হয় যোগাযোগ স্থাপন করে? বেশ, যোগাযোগ হচ্ছে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারার অনুঘটক। এবং তথ্য হচ্ছে এমন একটা জিনিষ যা কিনা জীবন বাঁচায়। ভাবুন, নোংড়া নোংড়া ফেনিলকিটোনিউরিয়ার কথা। এই রোগের রোগীদের ফেনিলঅ্যালানিন হাইড্রক্সিলেস থাকে লস অফ ফাঙ্কশন মিউটেন্ট, ফলে মাত্রাতিরিক্ত ফেলিলঅ্যালানিন ফেনিলপাইরুভিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কে জমা হয় ও মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্থ করে। এই রোগের সিলেকশন কোএফিশিয়েন্ট .৮ অর্থাৎ, এই রোগাক্রান্ত ৮০% শিশুই প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে ব্যার্থ হয়। অথচ, শুধুমাত্র একটি তথ্য যে ‘ফেনিলকিটোনিউরিয়া রোগীকে ফেনিলঅ্যালানিনযুক্ত খাবার খাওয়ানো যাবে না ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ বিকাশপ্রাপ্র হয়েছে’ এই রোগের সিলেক্সন কোএফিশিয়েন্টকে নামিয়ে এনেছে .৮ থেকে ০ তে। ফেনিলঅ্যালানিনযুক্ত খাবার না খেলে ফেনিলকিটোনিউরিয়া রোগী বেঁচে থাকবে তেমনই যেমন বেঁচে আছি আমি কিংবা আপনি, প্রাকৃতিক নির্বাচন তার কিছুই করতে পারবে না। তথ্য জীবন বাঁচায়!!! যেই কম্পিউটারটিতে বসে আপনি এই তথ্য পাচ্ছেন, তথ্যের অভাবে এই কম্পিউটারের অস্তিত্ব থাকতো না। টিভিতে কেউ বিপদে পড়লেই যেমন অন্তর্বাস ফুলিয়ে সুপারম্যান হাজির হয়ে যায়, কোয়্যাকেরাও তেমনি নিজেদের মনে গাঁথা কনস্পিরেসি থিওরির মালা নিয়ে তাদের অজ্ঞানতার অন্তর্বাস ফুলিয়ে হাজির হয় যেখানেই কিনা তারা দেখে মানুষের কোন অর্জন, গর্ব করা যেতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ মানুষের। তারা শুধু মানুষের অর্জনকে আক্রমন করেই ক্ষান্ত থাকেনা, মিথ্যা অপপ্রচার আর অশিক্ষিত প্রলাপ দিয়ে মানুষের অগ্রগতির ভবিষ্যতকেও তারা পেছন দিকে ধরে রাখে।

কোয়্যাক থাকবেই কেননা আমরা মানুষ একে অপরের উপর নির্ভর করি। ল্যান্সেটে আমি একটা স্টাডি পড়েছিলাম যেখানে দেখানো হয় মানুষ স্ব্যাস্থ বিষয়ক উপদেশ গ্রহন করে ও পালন করে যে কারও কাছ থেকেই। শুধু স্বাস্থই নয় আপনার কথা শুনে যদি মনে হয় আপনি এভিয়নিক্স আমার চেয়ে ভালো জানেন তবে এভিয়নিক্স বিষয়ে আপনার বক্তব্যকে আমি মেনে নিবো। কোয়্যাকরাও একইভাবে শোনাতে চেষ্টা করে যে সে আমার চেয়ে সে স্বাস্থ ভালো বোঝে তাই তার কথাও আমি মেনে নেই কোনধরণের স্কেপ্টিসিজম ছাড়াই। স্কেপ্টিসিজম এমন একটা জিনিষ যা কখনই হ্যাবোধক প্রাকৃতিক নির্বাচনের শিকার হয়নি। এর কারণটাও সরল, উড়োজাহাজ, এন্টিবায়োটিক, রকেট অবিষ্কার করে নিজেদের জীবনকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের হিংস্র থাবা থেকে যতোটা সম্ভব দূ্রে রাখতে এখনও সমর্থ হয়নি এমন একটা জনপুঞ্জের জন্য স্কেপ্টিসিজম হচ্ছে নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড। এরও সাথে রয়েছে কনফার্মেশনাল বায়াস যা কিনা আমাদের প্ররোচিত করে একটি সাজেশ্চন পেলে সেটিকে নিশ্চিত করতে এবং ঐ সাজেশ্চনের বিরোধী কোন বক্তব্য পেলে তাকে প্রত্যখ্যান করতে। এইসব জিনিষ মিলিয়েই কোয়্যাকেরা টিকে থাকবে। কোয়্যাকারি সিলেক্টেবল, রিপ্রজিউসেবল এবং অনেক অনেক বেশী ফিট।

কোয়্যাক দুই প্রকার, অর্থনৈতিক কোয়্যাক যারা কিনা মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। আর আরেক প্রকার হচ্ছে জন্মগতভাবে কোয়্যাক, বংশগতভাবে কোয়্যাক। কোয়্যাকারি রয়েছে এদের জিনোমেই, নিজেকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে একমূহুর্তের জন্যও যদি তারা কাওকে ভয় অথবা কাওকে ঘৃণা করতে না পারে তবে তারা মরে যাবে, তাদের হৃতপিন্ড আর স্পদিত হবে না, জিহ্বা বেরিয়ে আসবে তাদের, মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ হিসেবে লাল ও নীল সুতা বের হতে থাকবে তাদের, ওয়েল কানের ছিদ্র দিয়ে। সম্ভবত এই শ্রেণীর মানুষদের জন্যই রবীন্দ্রনাথ তার ঘরে-বাইরের ভিলেন সন্দীপকে (আমি তার কোন ভক্ত নই, অবশ্যই সে একটি বিষফোঁড়া) দিয়ে উচ্চারণ করিয়ে নিয়েছিলেন একটি অমর বাক্য ‘পদধূলিজীবী কিছু মানুষ রয়েছে, কপালে হোক আর পিঠেই হোক পদধূলি তাদের চাই-ই চাই।” এই শ্রেণীর মানুষের কোয়্যাকারি হয় মূ্লত কনস্পিরেসি থিওরি ভিত্তিক। যা কিছুই তাদের অবোধগম্য, দূরবর্তী মনে হয় তার পেছনেই তারা কনস্পিরেসি থিওরি ফাঁদে। হোয়াইট হাউসে তারা কখনও পৌছতে পারবে না বলে হোয়াইট হাউসের পেছনে কনস্পিরেসি থিওরি দাড়া করায়, একইভাবে বিজ্ঞানের ভেতরেও তারা কখনও ঢুকতে পারবে না বলে বিজ্ঞানের পেছনেও কনস্পিরেসি থিওরি দাড়া করায়। ড্রাগ কি বুঝবে তারা, কার্বনের এসপিথ্রি হাইব্রিডাইজেশন স্টেইটই কি তারা বুঝে, কিংবা বুঝে কি পরমানুর বোর-রাদারফোর্ড মডেল? আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করে, এটি কালক্রমে এতটাই জটিল ও অবোধগোম্য রূপ ধারণ করেছে যে পেশাদার ছাড়া অন্যান্য সকলকেই এটা বিকর্ষিত করে। আমি মনে করি আধুনিক বিজ্ঞানের এই গুন কিংবা দোষটিই এর বিপরীতে মানুষকে কনস্পিরেসি থিওরি ফাঁদতে অনুপ্রাণিত করে। এইসকল কোয়্যাকের কিছু বৈশিষ্ট আপনারা দেখবেন- ১। জীবনে এরা কখনও কোন ভুল করেনি, কখনও একটি ভুল কথা বলেনি। তাদের মুখনিসৃত কথা গনমানসে ভুল প্রতীয়মান হলে, ভুলটা তার কথার নয় বরং গনমানসেরই, এই ভাব তাদের কথায়, আচরণে সর্বদাই বিদ্যমান থাকে। আর ২। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ব্যাপারেই- রেডিওবায়োলজি থেকে নেপোলিয়নের ইতিহাস পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে তাদের একটি না একটি কোন মতামত রয়েছে। এই মতামত যদি ঐ নির্দৃষ্ট ফিল্ডের এক্সপার্টদের মতামতের সাথে অনৈক্য প্রকাশ করে তবে বিন্দুমাত্র লজ্জাশীলতা প্রদর্শন না করে ঐ ফিল্ডের সমস্ত এক্সপার্টের এক্সপার্টিজকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে কোয়্যাক।

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টান যেমন অক্সফোর্ড ও কেইম্ব্রিজের প্রতিটি কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, কিংস কলেজ ও রয়াল ভেট্রেনারি কলেজে বায়োমেডিকাল সায়েন্স স্কুলে মেডিসিন (এমবিবিএস) এবং বায়োমেডিকাল সায়েন্স (ক্যান্সার বায়োলজি, ফার্মাকলজি, ফিজিওলজি, মলিকিউলার বায়োলজি, রেডিওবায়োলজি ইত্যাদি) পড়তে হলে একটি পরীক্ষা দেওয়া লাগে যেটাকে কিনা বলা হয় বিম্যাট বা বায়োমেডিকাল অ্যাডমিশন টেস্ট পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটির প্রশ্নপত্র যদি কেউ দেখেন (আমি দেখেছি) আপনার মনে হবে বিম্যাট নাম না হয়ে এই পরীক্ষাটির নাম হওয়া উচিতি ছিলো ‘তোমাকে নিবো না’, বস্তুত পরীক্ষা যে কতোটা পেস্কি হতে পারে এর একটা আদর্শ উদাহারণ সম্ভবত হবে এই পরীক্ষাটি।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে কম্পিউটার সায়েন্স বা তাত্বিক পদার্থবিদ্যা পড়তে কিন্তু এইরকম কোন বিশেষ নির্বাচনী পরীক্ষা দেওয়া লাগে না। কেনো? কারণ হচ্ছে, বায়োমেডিকাল সায়েন্টিস্টেরা মাঠে নেমে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং জীবন কোন হেলাফেলার বিষয় নয়। এই কারণেই এই গৌরবান্বিত ইন্ডাস্ট্রিতে পাগল-ছাগলের অনুপ্রবেশ রাখা হয় সর্বনিন্ম, তারপরও তো পাগল ছাগল কিছু ঢুকে পড়ে। আট থেকে দশ বছরের একটি বিশাল প্রশিক্ষণপর্ব শেষ করে যে কিনা পেশাদার হয় এবং পেশাদার হয় একমাত্র যদি কিনা সে অভাবিত ফলাফল করতে পারে তবেই, এইসমস্ত সকল পেশাদারদের এক্সপার্টিজকে যেই কোয়্যাক জলে ভাষিয়ে দিচ্ছে তার কাছে আমার প্রশ্ন হবে সে নিজে কি? কি শিক্ষাগত, কর্মগত যোগ্যতা তার রয়েছে যার জন্য কিনা পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ে তার বিচার আমাদের মেনে নিতে হবে? এই কারণেই আমি কোয়্যাকদের বিরুদ্ধে এতোটা প্রদাহী এবং আমি মনে করি এই একই কারণে আপনারও কোয়্যাকদের বিরুদ্ধে এতটাই প্রদাহী হওয়া উচিত। ভুলেও যদি আমরা কোন বিজ্ঞানবিরোধী কোয়্যাককে সন্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করি সেটা হবে মনের মুক্তির পক্ষে একটি শোচণীয় শোচণীয় পরাজয়।