বহু দুঃস্বপ্নের রাতের পর, রাম জন্মভূমি বনাম বাবরি মসজিদ মামলারা রায় আমরা পেলাম। গত দুদিন গোটা ভারত ছিল থমথমে- সর্বত্র পুলিশ মিলিটারি-এস এম এসে নিশেধাজ্ঞা-সব কিছু লাফিয়ে, অযোধ্যা মামলার রায় দিল লখণৌ হাইকোর্ট।
(রায়টি অনলাইন এখান থেকে সবাই দেখে নিন।)

বিতর্কটি কি? খুব সিরিয়াসলি পলিটিক্যালি কারেক্ট ভাবে বললে ১৯৯২ সালে হিন্দুত্ববাদিদের হাতে ধ্বংশপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদটির জমি নিয়ে গত ১৫০ বছর ধরে ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। বৃটিশরা বুদ্ধিমান জাত-তাই দাঙ্গা ঠেকাতে ১৮৫৯ সালে ফৈজাবাদের কালেক্টর মসজিদের জমিতে প্রাচীর দিয়ে হিন্দু আর মুসলিমদের উপাসনা স্থান পৃথক করেন। এই ভাবেই নিরুপদ্রব ভাবে চলেছে নব্বইটি বছর-যদিও মাঝে মাঝেই মন্দিরওয়ালা এবং মসজিদওয়ালাদের মধ্যে গন্ডোগল এবং কোর্ট কাছারি লেগেই থাকত। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আসল ঘটনা শুরু। কিছু হিন্দুত্ববাদি সংগঠন হঠাৎ করে রাতের বেলায় মসজিদের মধ্যে রামলীলা ঢুকিয়ে দিয়ে এলাহাবাদ কোর্টে মামলা করে, ঐ স্থল হিন্দুদের উপাসনার জন্যে খুলে দিতে হবে। নেহেরু এই সব উটকো ধার্মিক মালগুলোকে একদম পাত্তা দিতেন না। ফলে উনি কালেক্টরকে বললেন ঐ জায়গাটাই তালা ঝুলিয়ে দাও। কাউকেই উপাসনা করার নামে বাঁদরামো করতে দেবে না সরকার। ফলে সবাই ভুলেই গিয়েছিল বাবরি মসজিদের কথা। কিন্ত নেহেরুর নাতি রাজীব গান্ধী দাদুর মতন বিচক্ষন ছিলেন না। শাহবানু মামলায় কংগ্রেস মুসলিম মৌলবাদিদের নির্লজ্জ তোষন করাতে হিন্দুরা যখন অসন্তুষ্ট, তাদের মন টানতে ১৯৮৬ সালে উনি মসজিদের তালা খুলে দিলেন, হিন্দুদের উপাসনার জন্যে। কোন দরকার ছিল না-এই মরা সাপটিকে জ্যান্ত করার। কিন্ত রাজীবের অভিজ্ঞতা ছিল না নেহেরুর মতন-ফলে আধুনিক ভারতের সব থেকে কলঙ্কময় নদর্মার জলকে খালকেটে উনিই নিয়ে আসলেন। এবং এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত্বও করলেন-বিজেপি
১৯৮৪ সালে দুটী আসন থেকে ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে ৯০ টি আসন পেল। বাঘের পিঠে চাপতে গিয়ে, বাঘই খেল রাজীবকে-উনি গদিচ্যুত হলেন। বিজেপি ক্ষমতা পেল আংশিক ভাবে। ভারতের কমিনিউস্ট-হিন্দুইস্ট সরকার একজোটে চলল ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। উত্তর প্রদেশে কন্যান সিং সরকার ক্ষমতায় এল-পরিস্কার হল বাবরি মসজিদ ভাঙার কাজ। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে করসেবকরা যখন মসজিদ ভাঙছে-কল্যানের পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। তার পরেই এই জমিটা নিয়ে নিল সরকার এবং এই মামলার সূত্রপাত। এই দুই একর জমি কার?

রামের কোন ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নেই। স্পাইডার ম্যান, ফ্যান্টমের মত তিনি এক পৌরানিক সুপার ম্যান, যাকে হিন্দুরা খুব মানে। রামের জন্মস্থান অযোধ্যা বলা আর স্পাইডারম্যানের জন্মস্থান নিউয়ার্ক বলার মধ্যে পার্থক্য নেই। আমেরিকার অনেক শিশু যেমন মানে স্পাইডারম্যান ম্যানহ্যাটনে থাকেন-থাকতেই হবে-হিন্দুরাও মানে রামের জন্ম অযোধ্যায় কারন রামায়ন অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে। স্পাইডারম্যানের কার্যকলাপ যেমন ম্যানহ্যাটনকেন্দ্রীক।

এবার ধরুন কোন স্পাইডারম্যান ভক্ত দাবি করে বসল নিউইয়ার্কের এই বাড়িটিতে স্পাইডারমানের জন্ম, তাই বাড়িটি ভারা দেওয়া যাবে না, স্পাইডার ম্যান ভক্তরা সেখানে পুজো দিতে আসবেন। দাবি করলে ক্ষতি নেই-ধরুন মামলা করল। এবার কোর্ট কি করবে?

ঘাবরাবেন না। এর উত্তর ভারতের মহামান্য বিচারপতিরা গতকালই দিয়েছে-সেটা নিয়ে হাঁসাহাসি একটু পরে করব। তার আগে আমরা জানতে চাইব-হিন্দুদের অত রাগ কেন ঐ মসজিদের ওপর?

মসজিদটি কে বানিয়েছিল কেও জানে না-বাবারনামায় তার উল্লেখ নেই। কালকের রায় ও স্বীকার করেছে মসজিদটির জন্ম রহস্যর উদ্ঘাটন হয় নি। কিন্ত হিন্দুদের দাবী ওটিই ছিল রামজন্মভূমি মন্দির-অর্থাৎ ওখানেই রাম জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ঠিক ওইখানেই। এবং বাবরের সাগরেদ ঐ মন্দির ধ্বংশ করে মসজিদ স্থাপন করে। এর উৎস জেসুইট পাদ্রী জোসেফ স্টিফেন ফেলারের ভ্রুমন কাহিনী যা প্যারিসে তিনি ছাপিয়েছিলেন ১৭৬৮ সালে।

২০০৩ সালে পুরাতাত্ত্বিক খননে পরিস্কার হয় ওখানে একটি বিরাট মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। তারা যা হাইকোর্টকে জানিয়েছেন তা এই রকমঃ

Period 1000BC to 300BC:

The findings suggest that a Northern Black Polished Ware (NBPW) culture existed at the mosque site between 1000 BC and 300 BC. A round signet with a legend in Asokan Brahmi , terracotta figurines of female deities with archaic features, beads of terracotta and glass, wheels and fragments of votive tanks have been found.[6]

Sunga Period. 200 BC:

Typical terracotta mother goddess, human and animal figurines, beads, hairpin, pottery (includes black slipped, red and grey wares), and stone and brick structures of the Sunga period have been found.[6]

Kushan period. 100-300 AD:

Terracotta human and animal figurines, fragments of votive tanks, beads, bangle fragments, ceramics with red ware and large-sized structures running into twenty-two courses have been found from this level.[6]

Gupta era (400-600 AD) and post-Gupta era:

Typical terracotta figurines, a copper coin with the legend Sri Chandra (Gupta), and illustrative potsherds of the Gupta period have been found. A circular brick shrine with an entrance from the east and a provision for a water-chute on the northern wall have also been found.[6]

11th to 12th century:
A huge structure of almost fifty metres in north-south orientation have been found on this level. Only four of the fifty pillar bases belong to this level. Above this lied a structure with at least three structural phases।

কতগুলো ব্যাপার প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষনে পরিস্কারঃ

১। ওখানে নানান মন্দির ছিল খৃষ্টপূর্বাব্দ হাজার সাল থেকেই। কিন্ত কোনটাই রাম মন্দির না-বিষ্ণু শিব ইত্যাদি জনপ্রিয় হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ওখানে ছিল। সুতরাং ওখানে রাম জন্মভূমির মন্দির ছিল, এই দাবী টিকছে না।

২| যেটা পরিস্কার না-সেটা হচ্ছে মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ হয়েছে না, ধ্বংশাবশেষের ওপর মসজিদ হয়েছে। কোন প্রমান্য ইতিহাস পাওয়া যাচ্ছে না।

তা বিচারকরা [২] পয়েন্ট নিয়ে কি বললেন?

মুসলিম বিচারক খান সাহেব বললেন, মন্দির ভেঙে মসজিদ হয় নি। দুই হিন্দু বিচারক লিখেছেন, প্রমানাদি ঘেঁটে তারা নিশ্চিত, মন্দির ভেঙেই মসজিদ হয়েছে। বিচারকরা এত সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস হচ্ছে না? রায়টি পড়ে নিন।

যেখানে আদালাতের মহামান্য বিচারকরাই এত সাম্প্রদায়িক, সেখানে সাধারন জনগনের কাছ থেকে কোন অসাম্প্রদায়িকতা আশা করব?

এবার আসুন সব থেকে মজার ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি। আসলে সেই জন্যেই এই লেখা।

হিন্দুরা যে দাবী জানাল ঐ বাবরি মসজিদ, তাদের প্রাণপ্রিয় রামের জন্মস্থল, সেটা নিয়ে মহামান্য বিচারকদের বক্তব্য কি?
জাস্টিস ভীর শর্মার বক্তব্য শুনুনঃ

1. Whether the disputed site is the birth place of Bhagwan
Ram?

The disputed site is the birth place of Lord Ram. Place of
birth is a juristic person and is a deity. It is personified as the
spirit of divine worshipped as birth place of Lord Rama as a
child.
Spirit of divine ever remains present every where at all
times for any one to invoke at any shape or form in accordance
with his own aspirations and it can be shapeless and formless
also.

পরিস্কার হচ্ছে না?
তাহলে উদাহরন দিচ্ছি। ধরুন স্পাইডারম্যান ফ্যান ক্লাব দাবী করল ম্যানহাটনের ওমুক স্ট্রীটে ৬৭৮ নাম্বার বাড়িটাতে স্পাইডারম্যানের জন্ম। তাহলে জাস্টিস শর্মার রায়টা এরকম-

এই দাবি না মানার কোন কারন নেই। কারন স্পাইডারম্যান সর্বভূতে বিরাজমান এবং বিশ্বাসীরা যদি সেই বাড়িটিকেই বিশ্বাস করে, তাহলে সেটিই সত্য!

আমি উনার রায়টা পড়ে হাঁসতে হাঁসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম। যদিও কোর্ট বিতর্কিত জমিকে তিন ভাগে ভাগ করে হিন্দু মুসলিম এবং এক সেবাইত সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দিচ্ছে- কারন উনারা বলছেন জমির ওপর কারুর দাবীই আইন সম্মত না। কেওই তাদের দাবী প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি-তাই মন্দের ভাল হিসাবে মিলেমিশে চল। অর্থাৎ ১৮৫৯ সালে বৃটিশদের রায় বহালIndians dont want any more riot থাকল। জামি ভাগ করে “উপভোগ” কর।

তাহলে ব্যাপারটা কেমন হল? স্পাইডারম্যান ( রাম) এবং সুপারম্যান ( আল্লা) এর ফ্যান ক্লাবরা একটা জমি নিয়ে মারামারি করছিল-যে ওই জমিতে সঙ্গত অধিকার তাদের। কোর্ট বললো, জমিতে কারুরই আইনত অধিকার নেই-তাই জমিটা ভাগ করে স্পাইডারম্যানের পূজো কর আর সুপারম্যানের জন্য নামাজ পড়। বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করলে বড়রা যা করে আর কি!

কিন্ত রাম আর রহিমের এই নাবালকদের ছেলেমানুষিতে মাথা হেঁট হচ্ছে ভারতের বা ভারতবাসী হিসাবে আমাদের। ভারতে পৃথিবীর সব থেকে বেশী নিরক্ষর, গরীব এবং ভিখিরী বাস করে। এর পরেও গত দুই দশকে অসংখ্য তরুন ভারতবাসীর প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং ব্যাবসাতে ভারতের অগ্রগতি অভাবনীয়-এবং বিশ্বের এই মুহুর্তে তৃতীয় শক্তিশালী দেশ হিসাবে ভারত স্বীকৃত। প্রতিটি তরুন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার যত পরিশ্রম করে এই দেশটাকে উচ্চাসনে টেনে নিয়ে চলেছে , আমাদের সুবিধাবাদি রাজনীতির ঘা খেয়ে দেশটা ততটা পেছনেও হাঁটছে। আজকের রায় তার প্রমান।

যে দেশে খাদ্যের বিশাল সংকট-পরিবেশ প্রায় ধ্বংশ -সে দেশের রাজনীতি যদি খাদ্য বা পরিবেশের বদলে স্পাইডারম্যান এবং সুপারম্যান ফ্যানক্লাবের মারামারি নিয়ে বিবর্তিত হয়, আমাদের কপালে দুঃখ আছে।