যুক্তিবাদী আরজ আলী মাতুব্বরকে তাঁর সত্যের সন্ধান বইটি প্রকাশের পর অনেক ধরনের প্রতিকূলতার সম্মখীন হতে হয়েছে। মুক্তচিন্তাবিদদের জীবনের পথটি যে কখনই সোজা ছিল না সেটা বোঝা যায়। বইটি প্রকাশ করতেও তাঁর অনেক রকম সংকটে পড়তে হয়েছে। বইটির ভূমিকাতে এইসব কঠিন বাস্তবতার কথাই প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরজ আলী মাতুব্বর নিজের আঁকা একটি আগ্রহ-উদ্দীপক চিত্র তাঁর বইয়ের প্রথমে দিয়েছেন। চিত্রখানি দেখে আমার একটি উদ্ধৃতি মনে পড়ে যায়, “Figuring out things is better than making shit up!”
ছবিটি দেখে মনে হয় তিনি মানুষের আদি ধ্যান ধারণার সাথে বর্তমানের বৈজ্ঞানিক দর্শনের তুলনা করেছেন। ছবিতে মহিষের দুটো শিংয়ের ওপর একটি থালার ন্যায় আমাদের পৃথিবী অঙ্কিত হয়েছে যার চারপাশে ঘূর্ণায়মান আছে সূর্য এবং চন্দ্র। মানুষ যতই আলোর (বিজ্ঞানের) কাছাকাছি যাচ্ছে সেই ভ্রান্ত ধ্যানধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। তাই গোলাকার পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে আলোক উৎসের ঠিক নিচেই। আমার বিশ্লেষণ ভুলও হতে পারে; চিত্রশিল্পে আমার জ্ঞান নেই বললেই চলে।
প্রকাশকাল [প্রথম সংস্করণ] কার্তিক ১৩৮০
আশা ছিল যে, ‘সত্যের সন্ধান’ পুস্তিকাখানার দ্বিতীয় মুদ্রণ সম্ভব হইলে তাহাতে কিছু নতুন তত্ত্ব জানার জন্য কিছু নতুন প্রশ্ন পরিবেশন করিব, কিন্তু নানা কারণে তাহা আর সম্ভব হইল না। এই বইখানা প্রথম প্রকাশের ব্যাপারে আমাকে যে সমস্ত প্রতিকূল অবস্হার সম্মুখীন হইতে হইয়াছিল এবং বর্তমানেও হইতেছে – আমি আশা করি যে, আমার লিখিত ‘মুক্তমন’ নামীয় পুস্তকখানার ‘ভূমিকা’-এ তাহা ব্যক্ত করিব। তবে সামান্য পরিবর্তন ও পরিবর্ধন যাহা করা হইল, তাহার মধ্যে ‘ঈশ্বর কি দয়াময়?’ শীর্ষক একটি প্রশ্ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় অধ্যাপক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ) সরদার ফজলুল করিম সাহেবের লিখিত (সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত) একটি অভিমত ছাড়া আর কিছুই উল্লেখযোগ্য নহে। কালোপযোগী পরিবর্তন করা গেল না সময়ের অভাবে।
‘সত্যের সন্ধান’ বইখানা প্রণয়নকালে ইহার একটি উপনাম দেওয়া হয়েছিল ‘যুক্তিবাদ’। কিন্তু বর্তমানে সুধীমহল এ পুস্তিকাখানাকে দর্শন শ্রেণীভূক্ত করায় ইহার উপনাম দেওয়া হইল লৌকিক দর্শন।
বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে এ পুস্তিকাখানার পুন:প্রকাশ আমার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব হইত না – ঢাকাস্হ বর্ণমিছিল প্রেসের অধিকারী তাজুল ইসলাম সাহেবের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া। আমি তাঁহার নিকট শুধু কৃতজ্ঞই নহি, অপরিশোধ্য ঋণে ঋণী।
১৮ জৈষ্ঠ্য ১৩৯০ আরজ আলী মাতুব্বর
১৩৫৮ সালের ১২ই জৈষ্ঠ। বরিশালের তদানীন্তন ল-ইয়ার ম্যাজিস্ট্রেট ও তবলিগ জামাতের আমির জনাব এফ. করিম. সাহেব আমাকে তাঁহার জামাতভূক্ত করার মানসে সদলে হঠাৎ তসরিফ নিলেন আমার বাড়ীতে। তিনি আমাকে তাঁহার জামাতভূক্তির অনুরোধ জানাইলে আমি তাঁহাকে বলিলাম যে ধর্মজগতে এরুপ কতগুলো নীতি, প্রথা, সংস্কার ইত্যাদি এবং ঘটনার বিবরণ প্রচলিত আছে, যাহা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নহে এবং ওগুলি দর্শন ও বিজ্ঞান এই তিনটি মতবাদের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে চিন্তা করিতে যাইয়া আমার মনে কতগুলি প্রশ্নের উদয় হইয়াছে এবং হইতেছে। আমি এগুলো সমাধানে অক্ষম হইয়া এক বিভ্রান্তির আঁধার কূপ হইতে উদ্ধার করিতে পারিলে আমি আপনার জামাতভূক্ত হইতে পারি। জনাব করিম সাহেব আমার প্রশ্নগুলি কি, তাহা জানিতে চাহিলে আমি আমার প্রশ্নের একখানা তালিকা (যাহা অত্র পুস্তকের ‘সূচীপত্র’ রুপে লিখিত আছে সেই রূপেই) তাঁহাকে প্রদান করিলাম। তিনি উহা পাঠ করিলেন এবং সঙ্গে লইয়া চলিয়া গেলেন, আর বলিয়া গেলেন – “কিছুদিন বাদে এর জওয়াব পাবেন”।
করিম সাহেবকে প্রদত্ত তালিকার প্রশ্নের ব্যাখ্যা ছিল না। ফৌজদারী মামলার জবাবদিহি করিবার উদ্দেশ্যে আমাকে প্রশ্নগুলির কিছু ব্যাখ্যা লিখিতে হয়। সেই ব্যাখ্যা লিখাই হইল এই পুস্তক রচনার মূল উৎস। নির্দোষ প্রমাণে মামলা চূড়ান্ত হইলে ঐগুলিকে আমি পুস্তক আকারে গ্রন্হিত করিলাম। গ্রন্হনায় আমাকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা দান করিয়াছিল স্নেহাস্পদ মো. ইয়াছিন আলী সিকদার।
এই পুস্তকখানার সম্পাদনা সম্পর্কে নানাবিধ উপদেশ, ভ্রম সংশোধন, এলোমেলো প্রশ্নগুলিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও শ্রেণীবিভাগ করিয়াছেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির সাহেব।
এই পুস্তকখানার সম্পাদনা শেষ হইয়াছিল বিগত ১৩৫৮ সালে। কিন্তু নানা কারণে এযাবত প্রকাশ করা সম্ভব হয় নাই। বর্তমানে ইহার কোন কোন কালের অংশের কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করিয়া প্রকাশ করা হইল। বর্ধিত অংশের ভ্রমাদি সংশোধনের শ্রম স্বীকার করিয়াছেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ শামসুল হক সাহেব এবং প্রকাশনায় আর্থিক সাহায্যপ্রদান করিয়াছেন মাননীয় অধ্যাপক শরফুদ্দিন রেজা হাই সাহেব। এতদকারণে সহযোগীদের নিকট আমি চিরকৃতজ্ঞ।
লামচরি, বরিশাল বিনীত
২০ শ্রাবণ, ১৩৮০ গ্রন্হাকার
বইটির প্রথম অংশ পড়ুন এখানে।
মুক্তমনার সৌজন্যে ইউনিকোড বাংলায় লিখিত।
নিশাচর
[…] সন্ধান ভূমিকা মূলকথা প্রথম প্রস্তাব দ্বিতীয় […]
Dear Muto-mona Editor, please let me know how to get the printed books of Mukto-mona writers, specially written by Aroj Ali Matbor, Akash malik, Mijan Rahman and so on. Thank you.
N.B.: If possible, please also let me know Mr. Akash Malik’s mobile or landline phone number, because I would like to talk to him on air as an expatriate and Mukto-mona reader.
@মাহফুজ,
ভাল লিখেছ। নিশাচর শুরুতে আরজ আলী মাতুব্বরের উপর এরকম একটা মুখবন্ধ দিতে পারতেন। হয়ত ভুলে গেছেন। তুমি একটা নিবন্ধ লিখে ফেল না কেন?
আমার কাছে আরজ আলী রচনা সমগ্র তিন খন্ড আছে। আমি কি কিছু মিস করছি?
@নৃপেন দা,
তৃতীয় খণ্ডের ফ্লিপ ব্যাক কভার দেখুন। আমি সেখান থেকেই পুরোটা টুকলিফাই করে দিয়েছি। একটা বাক্যও আমার নিজের নয়। আমার ক্ষমতা শুধুমাত্র কম্পোজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইচ্ছে তো জাগে কতকিছু করতে, কিন্তু জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই সবকিছু বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পাঠক সমাবেশ থেকে যেদিন আমি প্রথম খণ্ডটি কিনলাম, ঐদিনই আমি তাঁর প্রেমে পড়ি। পরে সেই প্রথম খণ্ডটিই আমি মোকছেদ আলীকে উপহার দিয়েছিলাম।
আরজ আলী মাতুব্বরের মোট ১৮ টি পাণ্ডুলিপি মোট ৩ খণ্ডে সমাপ্ত কিনা, আমি নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে আরো খোঁজ নিতে হবে। যারা আরজ আলী গবেষক হয়ে উঠছেন এমন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ কিম্বা সরাসরি লামচরিতে গিয়ে খবরাখবর নিতে হবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ভাল কথা মনে করেছেন। তবে দেরী হয়ে গেল। ওনার সম্পর্কে বিস্তারিত পোস্ট আলাদাভাবে দেওয়াটাই ভাল হবে। অন্য কেউ দিলে হয়ত আরো ভাল হয় (৩য় খন্ডের ব্যাক কভারে যেরকম সুন্দরভাবে লেখা ঐরকমভাবে)।
আমাকে আপনারা তুমি করে বলবেন।
অনেকদিন অফলাইনে থাকব। আপনারা সবাই ভাল থাকুন। :rose2:
আমার মত যাদের কাছে আরজ আলী মাতুব্বর রচনাবলী আছে তাদের কাছে লেখাটি ততটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারছে না বলে দুঃখিত।
শুধু ডিগ্রি নিলেই যে মানুষ মুক্তমনা হয়ে যাবে এমন কোন কথা নয়। গ্রামেগঞ্জে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কম শিক্ষিত অথচ মুক্তমনা। সাধারণত তাদের জ্ঞান এবং প্রশ্নকে দাবিয়ে দেওয়া হয়। আর আমরা তথা কথিত শিক্ষিত মানুষরা ওদের উঠে আসতে দেই না নিজের অহংবোধে। আরজ আলী মাতুব্বরের সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। উনার সম্পর্কে আমি ততটা জানতাম না । আরজ আলী মাতুব্বরকে আমার পক্ষ্য থেকে শত কোটী প্রণাম। আর লেখক নিশাচর ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার, আফরোজা আলম, সুমিত দেবনাথ
আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
ছবিটি আরজ আলী মাতুব্বরের নিজের হাতে আঁকা। শিক্ষার আলোক থেকে বঞ্চিত এই লোকটি বিবিধ গুণে গুণান্বিত ছিলেন।
মৃত্যুর সময় শেষ সম্বল নিজ দেহটিকে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে দান করে গেছেন, যদি মানবতার সেবায় কাজ লাগে। মাটিতে পঁচে গেলে লাভ কী?
Public Safety Office থেকে সবে ঘরে ফিরলাম। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার সময় আমার দেহের যা কিছু কাজে লাগতে পারে তার সব কিছুই লিপিবদ্ধ করে এলাম। মাতুব্বর সাহেবের অনুপ্রেরণায় সামান্য একটি কাজ আজ করতে পারলাম।
আসলে এম্ন মানুষ পাওয়া বিরল। আমার কাছে লেখকের বেশির ভাগ বই আছে। আরজ আলীর মা’র
মূত্যু ঘটনা বড্ড বেদনাদায়ক। এবং তারপর থেকে কী করে স্বল্প বিদ্যায় এমন লেখা লিখে যাওয়া। আমি সত্যই অভিভূত। কুর্নিশ এমন লেখক’কে।
@ নিশাচর আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি তাকে এমন করে তুলে আনার জন্য।
@আফরোজা আলম,
লেককের বই কোথা হতে পেতে পারি বলবেন দয়া করে? আমি সব গুলো পেতে চাই। বললে বড়ই উপকৃত হতুম।
ধন্যবাদ
@Russell,
আমি আপনাকে সত্যের সন্ধানের অনলাইন লিঙ্ক দিতে পারি। দেখুন যদি কাজে লাগে।
ই-বুক ডাউনলোড
অভিজিতদার অনুবাদ
@Russell,
শাহবাগের আজিজ মার্কেটে পাঠক সমাবেশে।