একটা চিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে বেঙ্গল গ্যালারীতে। কয়েকজন বন্ধু মিলে গেলাম সেখানে। সময় সন্ধ্যা। বেশ গরম পড়েছে। গ্যালারীর বদ্ধ পরিবেশে গরম আরো বেশি। ঢুকতেই প্রথম রুমে একটা সোফা আর কিছু চেয়ার টেবিল রাখা। চারপাশের দেওয়ালে ঝুলছে বিশাল আকারের সব পেইন্টিং। তেল রঙে আঁকা।সোফায় বসে আছে পাগলাটে এক লোক। পরনের লাল টি-শার্টটা খুলে একটা গামছার মত করে ফেলে রাখা কাঁধে। তাকে ঘিরে কিছু মানুষের জটলা। ছবি তুলছে কয়েকজন। কয়েকজন প্রশ্ন করছে। লোকটা দুহাত দু’দিকে প্রসারিত করে বাবরি দুলিয়ে দুলিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। তার কথাগুলো স্বরযন্ত্র থেকে নয়, যেন উঠে আসছে হৃদয় থেকে। আমি অবশ্য সেসব শুনছি না। ঘুরে ঘুরে দেখছি পেইন্টিংগুলো। শিল্পির নাম শাহাবুদ্দিন।

দেয়ালের একেকটা পেইন্টিং যেন ক্যানভাস ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে চাচ্ছে। কী জীবন্ত, কী ভয়ানক গতিশীল! আমি বিমুগ্ধ হতবিহব্বল হয়ে পড়ছি একেকটা ছবির সামনে এসে।এমন সময় পাশের বন্ধুটি বলে উঠলো, “ধুরো, কী সব আঁকছে, অস্পষ্ট! আমার তো মনে হয় আমারে ক্যানভাস আর রং-তুলি ধরায়া দিলে আমিও এর চে ভালো আঁকতে পারতাম।” আমি ঘুরে তাকালাম তার দিকে। না সে ‘ফান’ করে বলেনি। পুরোপুরি সিরিয়াস। আর তখন আরো একবার আমি পুরানো কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। প্রশ্নগুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এতটাই শক্তিশালী যে একজন মননশীল মানুষকে পুরোপুরি স্থবির করে দিতে সক্ষম। অন্তত আমাকে করেছিলো আগে এক সময়। এই লেখাটা কীভাবে সেই স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা যায়, সেই বিষয়ে।

প্রশ্নগুলো হলো কোনো কিছু ভালো বা খারাপ আমরা বিচার করি কীভাবে? কীভাবে একজন শিল্পিকে আরেকজনের চেয়ে যোগ্যতর ভাবি? একটা কবিতা কীভাবে আরেকটা কবিতা চেয়ে ভালো হয়? অথবা গান? আমি যেটাকে খারাপ ভাবছি সেটা কি আসলেই খারাপ? নাকি আমিই পুরোনো মানুষ, নতুনকে নিতে পারছি না?

জীবন যাপন করতে হলে এসব বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আর আপনি যদি সামাজিক জীব হন তাহলে আপনার এসব সিদ্ধান্ত আশে পাশের মানুষকেও আফেক্ট করবে। যদি হন শিক্ষক বা লেখক তাহলে তো কথাই নেই। উপন্যাস হোক বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ সব তথ্য-প্রমাণ বাদ দিলেও সেই লেখায় কিছু কথা থেকে যাবে যেটা আপনার ব্যক্তিগত ‘জাজমেন্ট’। ওটুকুই আসলে আপনার অরিজিনাল কন্ট্রিবিউশন। একটা আকাডেমিক সার্ভে বা বিশ্বকোষীয় নিবন্ধ থেকে আপনার লেখার পার্থক্য ওটুকুই। আর সামাজিক উদাহরণে আসুন, একজন ব্যক্তির রুচি খারাপ বলে আপনি তাকে এড়িয়ে চলছেন। আসলেই কি তার রুচি খারাপ? নাকি স্রেফ আপনার থেকে আলাদা?

এগুলো মাথায় রেখে বন্ধুদের সাথে শিল্পালোচনায় বসুন দেখবেন নিজের মতটা আর জোর দিয়ে জানাতে পারছেন না। শিল্প সৃষ্টি করতে বসুন। দেখবেন প্রকাশ করতে দ্বিধা হচ্ছে।যদি দুটি গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে ভালো খারাপ বিচার করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা বেশ সহজ হয়ে যায়। কোনটার জ্বালানী খরচ কেমন? থ্রাস্ট? কতটা টেকসই? আকার? ভর? নয়েজ? দাম? এমন সব পরিমাপযোগ্য বিষয় হিসাব করে চাহিদা অনুযায়ী সেরাটা বাছাই করাই যায়। কিন্তু স্কুলের পাঠ্য সূচিতে কোন গল্পটা রাখবেন? কোন কবিতাটা? কোন ভাস্কর্যটা স্থাপন করবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের সামনে? কোনো সামাজিক আন্দোলন করতে চাচ্ছেন আপনি, বা চাচ্ছেন শিক্ষা আন্দলোন। কী পদক্ষেপ নিলে সব চেয়ে ‘ভালো’ হবে? সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসটুকু সঞ্চয় করবেন কীভাবে? যেখানে এতগুলো বর্তমান এবং অনাগত জীবন জড়িত?

আমরা অনেকেই গাণিতিক ব্যাপার গুলোতে অন্তত নিশ্চিত বোধ করি। ভাবি যে ‘এইসব শিল্প সাহিত্য বড্ডো জ্বালাতন করে আমি নাহয় গণিতের কাছেই আশ্রয় নিই’। কিন্তু আসলেই কি তাই? এসব বিষয়ে গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য নিশ্চই জানা আছে আপনার। কার্ট গোডেল যে দুইটি অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য প্রমাণ করেছেন তার প্রথমটার অনুযায়ী,এমন কোনো সুসংহত গাণিতিক স্বীকার্য ব্যবস্থা থাকতে পারে না যার উপপাদ্যসমূহ কার্যকর ভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্বব এবং যা একই সঙ্গে নেচারাল নাম্বার(গণনাকারী সংখ্যা) সম্পর্কে সকল সত্য প্রমাণ করতে পারে। এমন যেকোনো সিস্টেমে সব সময়ই নেচারাল নাম্বার সম্পর্কে কিছু বাক্য থাকবে যেটা সত্য, কিন্তু সেই সিস্টেমের মধ্যে থেকে তার সত্যতা প্রমাণ করা অসম্ভব। দ্বিতীয় অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য অনুযায়ী, কোনো গাণিতিক ব্যবস্থা(সিস্টেম) যদি নেচারাল নাম্বার সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু সত্য প্রমাণ করতে পারে, তাহলে অন্তত একটা গাণিতিক সত্য সে প্রমাণ করতে পারবে না, সেটা হচ্ছে তার নিজের সুসংহতি (কনসিস্টেন্সি অফ দ্য সিস্টেম ইটসেলফ)। এই উপপাদ্য দুটি যৌক্তিক ও গাণিতিক দর্শনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি সত্য। তাই শুধু আর্টই নয়, গণিতের কাছে এসেও আমরা এক ধরণের ‘পরম আপেক্ষিকতার’ সম্মুখীন হয়ে পড়ি।

আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নৈতিক জীবন যাপন করব? প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ এ যৌক্তিক দর্শনের সাহায্যে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন। ডায়লগ আকারে লেখা এই সংকলনে তার কাছে উপস্থাপিত প্রশ্নটা ছিলো, ‘যদি দেব-দেবীরা নাও থাকে, যদি পরকাল নাও থাক, তাহলেও কেন নৈতিক জীবন রিওয়ার্ডিং হবে? কেন নৈতিক জীবন যাপনকারী ‘সুখিতর’ হবে?’ যুক্তি আর কিছু আরোপিত অ্যানালজির সাহায্যে তিনি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েই ফেলেছিলেন প্রায়। কিন্তু একদম শেষে এসে তাকেও আবার দেব-দেবীর আশ্রয় নিতে দেখি। আমার কাছে ব্যাপারটাকে গোডেল উপাদ্যের মত মনে হয়েছে। যে ধরণের আনালজিই তিনি ধরে নেন না কেন সেগুলো নির্দিষ্ট করে নিয়ে এর পর শুধু যুক্তির যোগ বিয়োগে এই প্রশ্নের উত্তর মেলানো দুঃসাধ্য। হয়তো অসম্ভব। (দেখলেন তো এখন আমি নিজের মতটা জানিয়ে দিতে পারি!)

তাহলে কী করব? আমরা কি সবাই বনে ফিরে যাবো? মননশীলতার কফিনে পেরেকগুলো ঠুকেই ফেলব কি? নিজের মতামত প্রকাশ করব কিসের ভিত্তিতে? কতটুকু জ্ঞান, কতটুকু শিক্ষা ‘যথেষ্ট’ ভাববো যেন মত প্রকাশ করতে পারি? যেন কোনো কর্মসূচী নিতে পারি নিজের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্ব-প্রকৃতির জন্য। কতটুকু শিক্ষা বা জ্ঞান আমাকে সেই ‘অধিকার’ দেবে? দেবে ‘নিশ্চয়তা’? কখন সিদ্ধান্ত নেব, ‘এখনই সময়’?

অনেকের সাথে যৌক্তিক তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে আমরা খেয়াল করি যে তাদের সাথে আমার পার্থক্য ঠিক ‘যুক্তিতে না’। বরং ‘সিদ্ধান্তে’।আমি হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘কৌতুহল ভালো জিনিশ’। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘অত বেশি কৌতুহল ভালো না। কিউরিওসিটি কিল্ড দ্য ক্যাট’। আমি কৌতুহলকে ভালো ভাবলেও ‘দশতলা থেকে পাকা রাস্তায় ঝাপদিলে ফ্রী ফলিং এর সময় কী কী চিন্তা হয়’ সেটা নিজে পরীক্ষা করতে যাবো না। কিন্তু ‘কেন সবাই এত ধুমপান করে? দেখিতো ট্রাই করে!’ এমন পরীক্ষা হয়তো করব। কিন্তু আমার মা হয়তো আমার সেই কৌতুহলটুকুও মেনে নিতে রাজি নয়। আমি ভাবি যত পড়বো ততই ভালো। আমার এক বন্ধু ভাবে বেশি পড়লে নিজের অরিজিনাল আইডিয়াগুলো অন্যদের চিন্তাভাবনা দ্বারা কলুষিত হয়ে যায়।এখন বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে হয়তো দীর্ঘ্য যুক্তি-তর্ক দিয়ে আমি তাকে আমার মতটা মোটামুটি গ্রহনযোগ্য ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু আমি নিজে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ‘পড়াশোনা ভালো’। তখন কিন্তু নিজের মনে বন্ধুটিকে দেখানো যুক্তিতর্কগুলো চিন্তা করিনি। স্রেফ নিজের জ্ঞান/অভিজ্ঞতাসৃষ্ট অনুভুতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তাহলে সব কিছুই শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় কিছু সিদ্ধান্তে। ‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোনো মহাত্ব নেই’। এটা আমি মেনে নিয়েছি। শুধু তাইই না আমি চিন্তারাজি প্রকাশ এবং অন্যদের সাথে সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতে ‘মজাও পাই’। এই মজাও একটা ফ্যাক্টর।

তাহলে এবার আসুন এই আলোচনার সমাপনী অংশে। এইযে এত সব মৌলিক প্রশ্ন যার একেকটার উত্তর খুঁজতেই একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়। যেগুলো আপনার চিন্তাশীল এবং মননশীল সত্তাকে রীতিমত স্থবির করে দিতে পারে। সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার উপায় কি?

হাজার হাজার মননশীল ব্যক্তি অনেক কিছুই করে যাচ্ছে। থেমে নেই অনেকেই। প্রত্যেকে নিশ্চই নিজের মত করে এসব প্রশ্ন কাটিয়ে উঠেছে। আমি বড়জোর এসব বিষয়ে আমার নিজের চিন্তারাজিকে প্রকাশ করতে পারি।আর চিন্তারাজির প্রকাশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

এই যে এই লেখায় এতক্ষণ অনেক রকম প্রশ্ন উত্থাপিত হলো। যার অনেকগুলোরই উত্তর হয়তো মৌলিকতর অন্য প্রশ্নের উত্তরের সাহায্যে দেওয়া যায়। অনেকগুলো নিজেই মৌলিক প্রশ্ন। এবং এ ধরনের আরো হাজারটা প্রশ্ন আসলে আমাদের সবার মনেই আছে। আমি যেটা করি সেটা হলো এসব প্রশ্নের উত্তর এবং সেইসব উত্তর সম্পর্কে আমার নিশ্চয়তার মাত্রার একটা লিস্ট করে রাখি। যেটাকে আমি বলি ‘মানসের ছাপচিত্র’। একই সঙ্গে আমার মন নতুন তথ্য এবং আইডিয়ার প্রতি খোলা। তাই সেই নতুনরা অনেক সময়ই আমার মানসের ছাপচিত্রকে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তন করতে চায়। তখন আমি একটা নোট রাখি যে ‘এই কারণে জীবনবোধ বিষয়ক এই গভীর প্রশ্নটির উত্তর আমি এতটুকু মডিফাই করলাম’।

আমি যখন নতুন একটা ল্যাবে যোগ দিই সেখানে এক সহগবেষক সবার প্রথমে আমাকে যে প্রশ্নটা করেছিলো সেটা হলো ‘তোমার হবি কী বা আদৌ কোনো হবি আছে কিনা?’ কারণ সে আসলে আমার ‘মানসের ছাপচিত্রের’ খোঁজ জানতে চাচ্ছিলো।বৃত্তবন্দী হয়ে যাওয়ার ঝুকি এড়াতে আমি এমন মানুষের সাথেও মিশি যাদের ‘মানসের ছাপচিত্র’ কিছুটা আলাদা। তাদের সঙ্গ দারুণ উপভোগ করি। কিন্তু সেই পার্থক্যের মাত্রা কতটুকু আমার জন্য সহনীয় সেটাও আমার মানসের ছাপচিত্রের একটা অংশ। অনেকেই আছে একটু ভিন্ন কারো সাথে আর মিশতে পারে না। আবার অনেকে আছে সব কিছু মিলে গেলেই বরং ব্যাপারটা ‘বোরিং’ ভাবে।

আর মজা একটা ফ্যাক্টর।আপনি যেভাবে জীবন যাপন করছেন তাতে যদি আপনি মজা পান। তাহলে আসলে আর এ নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি মনে হয় ‘এসব কী করছি আমি?’ যদি অপচায়িত হওয়ার বেদনা কাজ করে মনে। যদি অন্যের জন্য সহানুভুতি (‘এম্প্যাথি’) কাজ করে। তাহলে এগিয়েই আসুন না।নিজের মানসের একটা স্পষ্ট ছাপচিত্র তৈরি করে ফেলুন। আর সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন। একটা জিনিশ নিশ্চিত থাকুন, আপনি কখনোই সব কিছু শিখে ফেলবেন না। এবং আপনি অবশ্যই ভুল করবেন বেশ অনেকবারই। সব কিছুকে ‘হার্ট সার্জারি’ ভাবার দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি প্রথম সফল হার্ট সার্জারি করেছে অনেক রকম ভুল/দুর্ঘটনার সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই করেছে।

কোন দিকে পরিবর্তনকে আপনি ‘প্রগতি’ ভাবছেন সেটা আপনার মানসের ছাপচিত্রেরই একটা অংশ। তাই সেটা নিশ্চিত হয়ে সমমনা সঙ্গীদের খুঁজে নিন। চিন্তা ভাবনার দাবী করে তেমন কিছুর চেয়ে অনায়াসে গ্রহন করা যায় তেমন কিছুর গ্রাহক সব সময়ই বেশি। ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিক যে, যেই ডিস্ট্রিবিউশনে এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটে তাকে আমরা বলি ‘নরমাল ডিস্ট্রিবিউশন’।মানিকের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র পাঠকের চেয়ে ইন্দ্রিয়কে সুরসুরি দেওয়া উপন্যাসের পাঠক তাই বেশি। আমি কেন পুতুল নাচের ইতিকথাকে শ্রেয়তর বলছি? কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘মননকে নাড়া দেয়’ যেটা, সেটা ‘সহজেই ইন্দ্রিয়কে নাড়া দেয়’ এমন কিছুর চেয়ে শ্রেয়তর। এবং নিজের মননকে নাড়াচাড়া দিলে সেই জিনিশে আমার ‘মজা’ও লাগে বেশি। এটা আমার মানসের ছাপচিত্রের অংশ। অনেকের সাথেই মিলবে না। তাতে কী?

সৌন্দর্যবোধ একটা ক্রমপরিবর্তনশীল ব্যাপার। আমার বন্ধুটি সেদিন শাহাবুদ্দিনের পেইন্টিনংটা আপ্রিশিয়েট করেনি। কিন্তু আমি নিজেই এমন একটা সময় মনে করতে পারি যখন কোনো পেইন্টিং একটু আবস্ট্রাক্ট হয়ে গেলেই আমার আর ভালো লাগতো না। এখন তো লাগে। তাই বলে আবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম নামক চিত্রকলার অত্যাধুনিক ধারাটা এখনো আমি আপ্রিশিয়েট করতে শিখিনি। এখনো আমার কাছে ওগুলোকে হিজিবিজিই মনে হয়।

একটা জিনিশ আমি সব সময়ই মানি। যেটা কদিন আগে দেখলাম অ্যান্থ্রপলজিস্ট মার্গারেট মীড খুব সুন্দর ভাবে বাক্যে প্রকাশ করেছেন, ‘Never doubt that a small group of thoughtful, committed citizens can change the world. Indeed, it is the only thing that ever has.’ অনেকে হয়তো ভাবতে বা প্রশ্ন করতে পারে ‘কেন একটা স্মল গ্রুপের চিন্তাকে পুরো বিশ্ব রিফ্লেক্ট করবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আপনারই। আমি এটা মানি। এটা আমার মানসের ছাপচিত্রেরই অংশ। এবং এ বিষয়ে সমমনা মানুষদের আমি খুঁজে বেড়াই সব সময়। খুব বেশি তো লাগবে না। একটা ‘স্মল গ্রুপ’ হলেই চলবে।

আমাদের সবার জীবন দীপান্বিত হোক।

পরিশিষ্ট:
প্রথম চিত্রটি শাহাবুদ্দিনের সেই পেইন্টিং যেটার কথা বলা হচ্ছে।
দ্বিতীয় চিত্রটি আবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট জ্যাকসন পোলকের পেইন্টিং। নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে।