একটা চিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে বেঙ্গল গ্যালারীতে। কয়েকজন বন্ধু মিলে গেলাম সেখানে। সময় সন্ধ্যা। বেশ গরম পড়েছে। গ্যালারীর বদ্ধ পরিবেশে গরম আরো বেশি। ঢুকতেই প্রথম রুমে একটা সোফা আর কিছু চেয়ার টেবিল রাখা। চারপাশের দেওয়ালে ঝুলছে বিশাল আকারের সব পেইন্টিং। তেল রঙে আঁকা।সোফায় বসে আছে পাগলাটে এক লোক। পরনের লাল টি-শার্টটা খুলে একটা গামছার মত করে ফেলে রাখা কাঁধে। তাকে ঘিরে কিছু মানুষের জটলা। ছবি তুলছে কয়েকজন। কয়েকজন প্রশ্ন করছে। লোকটা দুহাত দু’দিকে প্রসারিত করে বাবরি দুলিয়ে দুলিয়ে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। তার কথাগুলো স্বরযন্ত্র থেকে নয়, যেন উঠে আসছে হৃদয় থেকে। আমি অবশ্য সেসব শুনছি না। ঘুরে ঘুরে দেখছি পেইন্টিংগুলো। শিল্পির নাম শাহাবুদ্দিন।
দেয়ালের একেকটা পেইন্টিং যেন ক্যানভাস ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে চাচ্ছে। কী জীবন্ত, কী ভয়ানক গতিশীল! আমি বিমুগ্ধ হতবিহব্বল হয়ে পড়ছি একেকটা ছবির সামনে এসে।এমন সময় পাশের বন্ধুটি বলে উঠলো, “ধুরো, কী সব আঁকছে, অস্পষ্ট! আমার তো মনে হয় আমারে ক্যানভাস আর রং-তুলি ধরায়া দিলে আমিও এর চে ভালো আঁকতে পারতাম।” আমি ঘুরে তাকালাম তার দিকে। না সে ‘ফান’ করে বলেনি। পুরোপুরি সিরিয়াস। আর তখন আরো একবার আমি পুরানো কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। প্রশ্নগুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এতটাই শক্তিশালী যে একজন মননশীল মানুষকে পুরোপুরি স্থবির করে দিতে সক্ষম। অন্তত আমাকে করেছিলো আগে এক সময়। এই লেখাটা কীভাবে সেই স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা যায়, সেই বিষয়ে।
প্রশ্নগুলো হলো কোনো কিছু ভালো বা খারাপ আমরা বিচার করি কীভাবে? কীভাবে একজন শিল্পিকে আরেকজনের চেয়ে যোগ্যতর ভাবি? একটা কবিতা কীভাবে আরেকটা কবিতা চেয়ে ভালো হয়? অথবা গান? আমি যেটাকে খারাপ ভাবছি সেটা কি আসলেই খারাপ? নাকি আমিই পুরোনো মানুষ, নতুনকে নিতে পারছি না?
জীবন যাপন করতে হলে এসব বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আর আপনি যদি সামাজিক জীব হন তাহলে আপনার এসব সিদ্ধান্ত আশে পাশের মানুষকেও আফেক্ট করবে। যদি হন শিক্ষক বা লেখক তাহলে তো কথাই নেই। উপন্যাস হোক বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ সব তথ্য-প্রমাণ বাদ দিলেও সেই লেখায় কিছু কথা থেকে যাবে যেটা আপনার ব্যক্তিগত ‘জাজমেন্ট’। ওটুকুই আসলে আপনার অরিজিনাল কন্ট্রিবিউশন। একটা আকাডেমিক সার্ভে বা বিশ্বকোষীয় নিবন্ধ থেকে আপনার লেখার পার্থক্য ওটুকুই। আর সামাজিক উদাহরণে আসুন, একজন ব্যক্তির রুচি খারাপ বলে আপনি তাকে এড়িয়ে চলছেন। আসলেই কি তার রুচি খারাপ? নাকি স্রেফ আপনার থেকে আলাদা?
এগুলো মাথায় রেখে বন্ধুদের সাথে শিল্পালোচনায় বসুন দেখবেন নিজের মতটা আর জোর দিয়ে জানাতে পারছেন না। শিল্প সৃষ্টি করতে বসুন। দেখবেন প্রকাশ করতে দ্বিধা হচ্ছে।যদি দুটি গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে ভালো খারাপ বিচার করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা বেশ সহজ হয়ে যায়। কোনটার জ্বালানী খরচ কেমন? থ্রাস্ট? কতটা টেকসই? আকার? ভর? নয়েজ? দাম? এমন সব পরিমাপযোগ্য বিষয় হিসাব করে চাহিদা অনুযায়ী সেরাটা বাছাই করাই যায়। কিন্তু স্কুলের পাঠ্য সূচিতে কোন গল্পটা রাখবেন? কোন কবিতাটা? কোন ভাস্কর্যটা স্থাপন করবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের সামনে? কোনো সামাজিক আন্দোলন করতে চাচ্ছেন আপনি, বা চাচ্ছেন শিক্ষা আন্দলোন। কী পদক্ষেপ নিলে সব চেয়ে ‘ভালো’ হবে? সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসটুকু সঞ্চয় করবেন কীভাবে? যেখানে এতগুলো বর্তমান এবং অনাগত জীবন জড়িত?
আমরা অনেকেই গাণিতিক ব্যাপার গুলোতে অন্তত নিশ্চিত বোধ করি। ভাবি যে ‘এইসব শিল্প সাহিত্য বড্ডো জ্বালাতন করে আমি নাহয় গণিতের কাছেই আশ্রয় নিই’। কিন্তু আসলেই কি তাই? এসব বিষয়ে গোডেলের অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য নিশ্চই জানা আছে আপনার। কার্ট গোডেল যে দুইটি অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য প্রমাণ করেছেন তার প্রথমটার অনুযায়ী,এমন কোনো সুসংহত গাণিতিক স্বীকার্য ব্যবস্থা থাকতে পারে না যার উপপাদ্যসমূহ কার্যকর ভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্বব এবং যা একই সঙ্গে নেচারাল নাম্বার(গণনাকারী সংখ্যা) সম্পর্কে সকল সত্য প্রমাণ করতে পারে। এমন যেকোনো সিস্টেমে সব সময়ই নেচারাল নাম্বার সম্পর্কে কিছু বাক্য থাকবে যেটা সত্য, কিন্তু সেই সিস্টেমের মধ্যে থেকে তার সত্যতা প্রমাণ করা অসম্ভব। দ্বিতীয় অসম্পূর্ণতার উপপাদ্য অনুযায়ী, কোনো গাণিতিক ব্যবস্থা(সিস্টেম) যদি নেচারাল নাম্বার সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু সত্য প্রমাণ করতে পারে, তাহলে অন্তত একটা গাণিতিক সত্য সে প্রমাণ করতে পারবে না, সেটা হচ্ছে তার নিজের সুসংহতি (কনসিস্টেন্সি অফ দ্য সিস্টেম ইটসেলফ)। এই উপপাদ্য দুটি যৌক্তিক ও গাণিতিক দর্শনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি সত্য। তাই শুধু আর্টই নয়, গণিতের কাছে এসেও আমরা এক ধরণের ‘পরম আপেক্ষিকতার’ সম্মুখীন হয়ে পড়ি।
আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নৈতিক জীবন যাপন করব? প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ এ যৌক্তিক দর্শনের সাহায্যে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেয়েছেন। ডায়লগ আকারে লেখা এই সংকলনে তার কাছে উপস্থাপিত প্রশ্নটা ছিলো, ‘যদি দেব-দেবীরা নাও থাকে, যদি পরকাল নাও থাক, তাহলেও কেন নৈতিক জীবন রিওয়ার্ডিং হবে? কেন নৈতিক জীবন যাপনকারী ‘সুখিতর’ হবে?’ যুক্তি আর কিছু আরোপিত অ্যানালজির সাহায্যে তিনি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েই ফেলেছিলেন প্রায়। কিন্তু একদম শেষে এসে তাকেও আবার দেব-দেবীর আশ্রয় নিতে দেখি। আমার কাছে ব্যাপারটাকে গোডেল উপাদ্যের মত মনে হয়েছে। যে ধরণের আনালজিই তিনি ধরে নেন না কেন সেগুলো নির্দিষ্ট করে নিয়ে এর পর শুধু যুক্তির যোগ বিয়োগে এই প্রশ্নের উত্তর মেলানো দুঃসাধ্য। হয়তো অসম্ভব। (দেখলেন তো এখন আমি নিজের মতটা জানিয়ে দিতে পারি!)
তাহলে কী করব? আমরা কি সবাই বনে ফিরে যাবো? মননশীলতার কফিনে পেরেকগুলো ঠুকেই ফেলব কি? নিজের মতামত প্রকাশ করব কিসের ভিত্তিতে? কতটুকু জ্ঞান, কতটুকু শিক্ষা ‘যথেষ্ট’ ভাববো যেন মত প্রকাশ করতে পারি? যেন কোনো কর্মসূচী নিতে পারি নিজের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্ব-প্রকৃতির জন্য। কতটুকু শিক্ষা বা জ্ঞান আমাকে সেই ‘অধিকার’ দেবে? দেবে ‘নিশ্চয়তা’? কখন সিদ্ধান্ত নেব, ‘এখনই সময়’?
অনেকের সাথে যৌক্তিক তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে আমরা খেয়াল করি যে তাদের সাথে আমার পার্থক্য ঠিক ‘যুক্তিতে না’। বরং ‘সিদ্ধান্তে’।আমি হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘কৌতুহল ভালো জিনিশ’। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘অত বেশি কৌতুহল ভালো না। কিউরিওসিটি কিল্ড দ্য ক্যাট’। আমি কৌতুহলকে ভালো ভাবলেও ‘দশতলা থেকে পাকা রাস্তায় ঝাপদিলে ফ্রী ফলিং এর সময় কী কী চিন্তা হয়’ সেটা নিজে পরীক্ষা করতে যাবো না। কিন্তু ‘কেন সবাই এত ধুমপান করে? দেখিতো ট্রাই করে!’ এমন পরীক্ষা হয়তো করব। কিন্তু আমার মা হয়তো আমার সেই কৌতুহলটুকুও মেনে নিতে রাজি নয়। আমি ভাবি যত পড়বো ততই ভালো। আমার এক বন্ধু ভাবে বেশি পড়লে নিজের অরিজিনাল আইডিয়াগুলো অন্যদের চিন্তাভাবনা দ্বারা কলুষিত হয়ে যায়।এখন বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে হয়তো দীর্ঘ্য যুক্তি-তর্ক দিয়ে আমি তাকে আমার মতটা মোটামুটি গ্রহনযোগ্য ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু আমি নিজে যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ‘পড়াশোনা ভালো’। তখন কিন্তু নিজের মনে বন্ধুটিকে দেখানো যুক্তিতর্কগুলো চিন্তা করিনি। স্রেফ নিজের জ্ঞান/অভিজ্ঞতাসৃষ্ট অনুভুতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তাহলে সব কিছুই শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় কিছু সিদ্ধান্তে। ‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোনো মহাত্ব নেই’। এটা আমি মেনে নিয়েছি। শুধু তাইই না আমি চিন্তারাজি প্রকাশ এবং অন্যদের সাথে সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতে ‘মজাও পাই’। এই মজাও একটা ফ্যাক্টর।
তাহলে এবার আসুন এই আলোচনার সমাপনী অংশে। এইযে এত সব মৌলিক প্রশ্ন যার একেকটার উত্তর খুঁজতেই একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়। যেগুলো আপনার চিন্তাশীল এবং মননশীল সত্তাকে রীতিমত স্থবির করে দিতে পারে। সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার উপায় কি?
হাজার হাজার মননশীল ব্যক্তি অনেক কিছুই করে যাচ্ছে। থেমে নেই অনেকেই। প্রত্যেকে নিশ্চই নিজের মত করে এসব প্রশ্ন কাটিয়ে উঠেছে। আমি বড়জোর এসব বিষয়ে আমার নিজের চিন্তারাজিকে প্রকাশ করতে পারি।আর চিন্তারাজির প্রকাশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এই যে এই লেখায় এতক্ষণ অনেক রকম প্রশ্ন উত্থাপিত হলো। যার অনেকগুলোরই উত্তর হয়তো মৌলিকতর অন্য প্রশ্নের উত্তরের সাহায্যে দেওয়া যায়। অনেকগুলো নিজেই মৌলিক প্রশ্ন। এবং এ ধরনের আরো হাজারটা প্রশ্ন আসলে আমাদের সবার মনেই আছে। আমি যেটা করি সেটা হলো এসব প্রশ্নের উত্তর এবং সেইসব উত্তর সম্পর্কে আমার নিশ্চয়তার মাত্রার একটা লিস্ট করে রাখি। যেটাকে আমি বলি ‘মানসের ছাপচিত্র’। একই সঙ্গে আমার মন নতুন তথ্য এবং আইডিয়ার প্রতি খোলা। তাই সেই নতুনরা অনেক সময়ই আমার মানসের ছাপচিত্রকে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তন করতে চায়। তখন আমি একটা নোট রাখি যে ‘এই কারণে জীবনবোধ বিষয়ক এই গভীর প্রশ্নটির উত্তর আমি এতটুকু মডিফাই করলাম’।
আমি যখন নতুন একটা ল্যাবে যোগ দিই সেখানে এক সহগবেষক সবার প্রথমে আমাকে যে প্রশ্নটা করেছিলো সেটা হলো ‘তোমার হবি কী বা আদৌ কোনো হবি আছে কিনা?’ কারণ সে আসলে আমার ‘মানসের ছাপচিত্রের’ খোঁজ জানতে চাচ্ছিলো।বৃত্তবন্দী হয়ে যাওয়ার ঝুকি এড়াতে আমি এমন মানুষের সাথেও মিশি যাদের ‘মানসের ছাপচিত্র’ কিছুটা আলাদা। তাদের সঙ্গ দারুণ উপভোগ করি। কিন্তু সেই পার্থক্যের মাত্রা কতটুকু আমার জন্য সহনীয় সেটাও আমার মানসের ছাপচিত্রের একটা অংশ। অনেকেই আছে একটু ভিন্ন কারো সাথে আর মিশতে পারে না। আবার অনেকে আছে সব কিছু মিলে গেলেই বরং ব্যাপারটা ‘বোরিং’ ভাবে।
আর মজা একটা ফ্যাক্টর।আপনি যেভাবে জীবন যাপন করছেন তাতে যদি আপনি মজা পান। তাহলে আসলে আর এ নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু যদি মনে হয় ‘এসব কী করছি আমি?’ যদি অপচায়িত হওয়ার বেদনা কাজ করে মনে। যদি অন্যের জন্য সহানুভুতি (‘এম্প্যাথি’) কাজ করে। তাহলে এগিয়েই আসুন না।নিজের মানসের একটা স্পষ্ট ছাপচিত্র তৈরি করে ফেলুন। আর সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন। একটা জিনিশ নিশ্চিত থাকুন, আপনি কখনোই সব কিছু শিখে ফেলবেন না। এবং আপনি অবশ্যই ভুল করবেন বেশ অনেকবারই। সব কিছুকে ‘হার্ট সার্জারি’ ভাবার দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি প্রথম সফল হার্ট সার্জারি করেছে অনেক রকম ভুল/দুর্ঘটনার সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই করেছে।
কোন দিকে পরিবর্তনকে আপনি ‘প্রগতি’ ভাবছেন সেটা আপনার মানসের ছাপচিত্রেরই একটা অংশ। তাই সেটা নিশ্চিত হয়ে সমমনা সঙ্গীদের খুঁজে নিন। চিন্তা ভাবনার দাবী করে তেমন কিছুর চেয়ে অনায়াসে গ্রহন করা যায় তেমন কিছুর গ্রাহক সব সময়ই বেশি। ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিক যে, যেই ডিস্ট্রিবিউশনে এ ধরণের ঘটনাগুলো ঘটে তাকে আমরা বলি ‘নরমাল ডিস্ট্রিবিউশন’।মানিকের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র পাঠকের চেয়ে ইন্দ্রিয়কে সুরসুরি দেওয়া উপন্যাসের পাঠক তাই বেশি। আমি কেন পুতুল নাচের ইতিকথাকে শ্রেয়তর বলছি? কারণ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘মননকে নাড়া দেয়’ যেটা, সেটা ‘সহজেই ইন্দ্রিয়কে নাড়া দেয়’ এমন কিছুর চেয়ে শ্রেয়তর। এবং নিজের মননকে নাড়াচাড়া দিলে সেই জিনিশে আমার ‘মজা’ও লাগে বেশি। এটা আমার মানসের ছাপচিত্রের অংশ। অনেকের সাথেই মিলবে না। তাতে কী?
সৌন্দর্যবোধ একটা ক্রমপরিবর্তনশীল ব্যাপার। আমার বন্ধুটি সেদিন শাহাবুদ্দিনের পেইন্টিনংটা আপ্রিশিয়েট করেনি। কিন্তু আমি নিজেই এমন একটা সময় মনে করতে পারি যখন কোনো পেইন্টিং একটু আবস্ট্রাক্ট হয়ে গেলেই আমার আর ভালো লাগতো না। এখন তো লাগে। তাই বলে আবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজম নামক চিত্রকলার অত্যাধুনিক ধারাটা এখনো আমি আপ্রিশিয়েট করতে শিখিনি। এখনো আমার কাছে ওগুলোকে হিজিবিজিই মনে হয়।
একটা জিনিশ আমি সব সময়ই মানি। যেটা কদিন আগে দেখলাম অ্যান্থ্রপলজিস্ট মার্গারেট মীড খুব সুন্দর ভাবে বাক্যে প্রকাশ করেছেন, ‘Never doubt that a small group of thoughtful, committed citizens can change the world. Indeed, it is the only thing that ever has.’ অনেকে হয়তো ভাবতে বা প্রশ্ন করতে পারে ‘কেন একটা স্মল গ্রুপের চিন্তাকে পুরো বিশ্ব রিফ্লেক্ট করবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আপনারই। আমি এটা মানি। এটা আমার মানসের ছাপচিত্রেরই অংশ। এবং এ বিষয়ে সমমনা মানুষদের আমি খুঁজে বেড়াই সব সময়। খুব বেশি তো লাগবে না। একটা ‘স্মল গ্রুপ’ হলেই চলবে।
আমাদের সবার জীবন দীপান্বিত হোক।
পরিশিষ্ট:
প্রথম চিত্রটি শাহাবুদ্দিনের সেই পেইন্টিং যেটার কথা বলা হচ্ছে।
দ্বিতীয় চিত্রটি আবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিস্ট জ্যাকসন পোলকের পেইন্টিং। নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে।
লেখাটায় অনেক ভাবনার খোরাক আছে। লেখক’কে অভিনন্দন।
@তনুশ্রী রয়,
তাই তো মনে হলো, কেউ তো বারন করল না ছবি তোলার সময়। দেখলাম আরও অনেকে ছবি তুলছে। ল্যুভর ভাল করে ঘুরে মজা করে দেখতে গেলে কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর পর যেতে হবে , না হলে সব দেখা সম্ভব নয় । টিকেটের দাম একেবারে কম না, ১৮.৫০ ইউরো।
চিন্তাকে সক্রিয় করার মত লেখা। লেখায় পাঁচ তারা।
আসলে কোন কিছুর মূল্য নির্ভর করে এর উপযোগীতার উপরে। মানে এটা সমাজের বা ব্যাক্তির কোন প্রকার প্রয়োজন মেটায় কিনা তার উপরে। আর্ট, সাহিত্য, সঙ্গী্ত এসবের সাথে ভরা পেটের প্রত্যক্ষ যোগ আছে। ক্ষুধার্ত ব্যাক্তির কাছে এসবের কোন মূল্য নেই। মানে এই উপযোগীতাটা আবার ব্যাক্তি ও পরিস্থিতি নির্ভর।
জীবনটা অর্থহীন, এই সীদ্ধান্তে আসতে পেরে আমরা কিন্তু পুলকিত। সেটা সীদ্ধান্তের ফলাফলের জন্য নয় বরং সীদ্ধান্তে আসতে পারার আমাদের এই যে ক্ষমতা তার উপলব্ধি পুনরায় টের পাবার জন্য।
মানুষ বোধকরি সবচেয়ে বেশী উপভোগ করে প্রতিযোগিতা। জীবনটাকে উপভোগ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে আমার খুব সুবিধা হয়। আমার মনে হয় মানুষ যা কিছু করে, ভাল লাগার জন্যই করে। প্রশ্ন করা যায়, রিকশা চালক যে রোদের মধ্যে রিকশা চালায়, তার কি ভাল লাগে ? আসলে সকাল বেলা ওকে সীদ্ধান্ত নিতে হয়, আজকে সে রিকসা চালাবে কিনা ? যদি না যায়, সে ও তার পরিবারকে উপোস করতে হবে। অথবা ধার করতে হবে। এই তিনটা পরিস্থিতির মধ্যে তার কাছে যেটা ভাল মনে হবে সে সেটাই করবে। ব্যাক্তির এই সব সীদ্ধান্ত, ব্যাক্তি ছাড়া অন্যরা যখন মূল্যায়ন করতে আসে তখন তারা দেখে ঐ সীদ্ধান্ত তার বা তাদের জীবন উপভোগের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলছে কিনা বা কি ধরনের প্রভাব ফেলছে?
মানে জীবন উপভোগের জন্য। সেটা কারো ক্ষেত্রে যুদ্ধে যাওয়া, কারো কাছে বই পড়া হতে পারে। তাই যাদি হয় তাহলে মানুষ আত্মহত্যা করে কিভাবে ?
সেতাট আসলে উপভোগ। জীবন থেকে সে মুক্তি চায়, এর চেয়ে সহনীয় কিছুর আশায়।
@আতিক রাঢ়ী,
রিকশা চালক যে রোদের মধ্যে রিকশা চালায়, তার কি ভাল লাগে ? আসলে সকাল বেলা ওকে সীদ্ধান্ত নিতে হয়, আজকে সে রিকসা চালাবে কিনা ? যদি না যায়, সে ও তার পরিবারকে উপোস করতে হবে। অথবা ধার করতে হবে। এই তিনটা পরিস্থিতির মধ্যে তার কাছে যেটা ভাল মনে হবে সে সেটাই করবে।
এই ধরনের বিষয় নিয়ে আমি আগেও ভবেছি,আপনার ব্যাখ্যাটা বেশ ভাল লেগেছে……আমারো তাই মনে হয়,যখন থেকে আমি নিশ্চিত ভাবেই সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি যে জীবন অর্থহীণ তখন থেকেই আসলে জীবনকে আরো ভালভাবে বুঝতে ও উপভোগ করতে শিখেছি ……….. এত সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য,ধন্যবাদ…………।।
সত্যি বলতে কি আমি নিজেও পেইন্টিং এর মাহাত্ম তেমন বুঝি না। বিমূর্ত ছবি বলে কিছু ছবি আছে যা আমার কাছে সব সময়ই দুর্বোধ্য। আর মনে করি ওর যদি কোন অর্থ থেকে থাকে তা একমাত্র চিত্রকর ছাড়া আর কেউ জানে না। গতবার ইউরোপ সফরের সময় বড় সখ করে প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে গেছিলাম শুধুমাত্র মোনালিসা ছবি দেখার জন্য। দেখে তো আমি হতাশ। আগে ধারনা ছিল বিশাল কোন ফ্রেমে আকা এক মহা কোন ছবি। পরে দেখি ছোট একটা ফ্রেমে আকা ছোট একটা ছবি। দেখতে আহামরি কিছু নয়। অবশ্য এখন কাছ থেকে তেমন দেখার সুযোগও নেই। অনেক উপরে কাচে ঘেরা বাক্সের মধ্যে। ক্যমেরা দিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলাম দেখি ঠিকমতো ছবিও ওঠে না , মানে অনেকটা লাইট প্রুফ কায়দা, ছবি তুললে প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন ছবি ওঠে। যাহোক আমি আগেই জানতাম মোনালিসার বৈশিষ্ট্য যা হলো- যে কোন অ্যঙ্গেল থেকে ছবিটা দেখতে একই রকম আর মুখের হাসিটা রহস্যময়। তবে যেভাবে এখন মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে তাতে ওসব বিষয় পরখ করে দেখার সুযোগ নেই। সোজা কথা এত কষ্ট করে পয়সা খরচ করে প্যরিসে গিয়ে কোন লাভ হয়নি এটাই আমার সর্বশেষ মূল্যায়ন।
@ভবঘুরে,
অন্য সব মিউজিয়ামের মত ল্যুভর মিউজিয়ামেও কিন্তু ছবি তোলা নিষিদ্ধ। কর্তৃপক্ষেরও Protection দেওয়ার বুদ্ধি মন্দ না। অন্ধকারাচ্ছন্ন ছবি ওঠে। আমার ১৯৯৭ সালের ল্যুভর মিউজিয়াম পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা আপনারই মত। যদিও কাজটি আইনানুগ হয়নি। যাহোক , তখনকার বয়সে বেআইনী এ কাজ করতে মন বাধা দেয়নি।
তানভীরুল ইসলাম ,
লেখাটি একধিকবার পড়তে হবে ভাল মত আত্মস্থ করার জন্য। ধন্যবাদ চিন্তা জাগানিয়া লেখাটির জন্য।
@গীতা দাস,
আপনিও প্যারিসে ‘হজ’ করে এসেছেন! বাহ্! কবে যে আমিও যেতে পারবো 🙁
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ 🙂
@গীতা দাস, লুভরে এখন ছবি তুলতে দেয়।
@ভবঘুরে,
প্যারিস ঘুরে এসেছেন!!
মরার আগে ‘টুডু লিস্টে’ প্যারিস ভ্রমন আছে আমার। কিন্তু এ কি বলেন! ‘কোনো লাভই হয়নি?’!!! প্যারিসে কত কিছু! লুভরেইতো মোনালিসা বাদেই কত কিছু আছে দেখার!
লিখেই ফেলুন না আপনার প্যারিস ভ্রমনের কাহিনি 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
মরার আগে প্যারিস না গেলে আসলেই খেদ থাকবে আপনার। দুর্দান্ত জায়গা। লুভ ছাড়াও দেখার মত আছে নটরডাম, রডিনের মিউজিয়াম, আইফেল টাওয়ার সহ অনেক কিছুই। মিউজিয়ামগুলা বাদ দেন, প্যারিসের রাস্তায় লোকজন অনেকটা বাঙালি কায়দায় আড্ডা দেয় রাস্তার দোকানগুলোতে। চা সিগারেট ওয়াইন – কোন কিছুরই কমতি নেই। অদ্ভুত দৃশ্য। আমার মনে হয় না কোন দেশ ভ্রমণ করে এত আনন্দ পেয়ছি। অবশ্য আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়।
@অভিজিৎ,
আপনি একেবারে আমার মনের কথা বলেছেন। আমস্টারডাম, বন, লুক্সেমবার্গ, ব্রাসেলস, ভিয়েনা কত জায়গায় ঘুরলাম প্যারিসের মত একটাও দেখলাম না। বড় মজার জায়গা প্যারিস। সত্যিই লোকজন ওখানে কাফে বা বারে বাঙালীদের মত জোরে জোরে কথা বলে আড্ডা দেয়, হৈ চৈ করে। মমার্ত বলে একটা যায়গা আছে পাহাড়ের উপর যেখানে শিল্পীরা বসে বসে মানুষের পোর্ট্রেট আকে সে তো এক আজব জায়গা। টাউট বাটপারও আছে ওখানে। দেখলাম সন্ধার দিকে এক লোক মুকাভিনয় করছে , অভিনয় করার সময় সামনে একটা টুপি উপুড় করে রেখেছে, লোকজন তাতে টাকা দিচ্ছে। আমিও দুই ইউরোর এক কয়েন দিলাম। আর গর্বে বুকটা আমার ভরে উঠল , ফকির দেশের এক লোক আমিও সাহেবদের ভিক্ষা দিলাম এই ভেবে। ওর কাছেই একটা হোটেলে ছিলাম দুরাত, একদিন গভীর রাতে হঠাত হৈ চৈ এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, বাইরে রাস্তায় কয় মাতাল চিল্লা চিল্লি করে মাতলামো করছে। ইউরোপের অন্য যে কোন যায়গায় গেলে মানুষের কথা বলার কোন শব্দ শোনা যায় না , মনে হয় সব মরা মানুষ ঘোরা ঘুরি করছে। তখন ভেবেছিলাম যদি কোনদিন ইউরোপে ঘাটি গাড়ি তো প্যারিসেই গাড়ব কারন এখানেই বাঙালী সংস্কৃতির কিছুটা ছাপ আছে গোটা ইউরোপে। তবে প্যারিসে বেকারত্বের পরিমানও বেশী। আইফেল টাওয়ারের নীচে যে কত ফেরীঅলা টাওয়ারের রেপ্লিকা বিক্রি করছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় যে এসব দেশেও বাংলাদেশের মত এত ফেরিঅলা থাকতে পারে।তবে অধিকাংশই কালো আদমী। ইন্ডিয়ানও কিছু আছে। ওখানে কথা হলো এক নোয়াখাইল্যার সাথে যে ফেরী করছিল, শোনা গল্প, নীল আর্মস্ট্রং চাদে গিয়ে চায়ের টং ঘর দেখে এগিয়ে দেখে নোয়াখাইল্যারা চা বিক্রি করছে চাদের বুকে। আর আছে রাস্তার পাশে গাড়ীর ওপর খাবারের দোকান অনেকটা আমাদের দেশের মত তবে তাদেরটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এই যা।
আপনার শিল্প-ভাবনা সত্যিই ভাবাচ্ছে। চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
ভাবাচ্ছে? তাহলে খুশি 🙂
আমার ধারনা আমি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নুতন মতবাদ তখনই গ্রহন করি যখন নুতন মতবাদটি,ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রচলিত অন্যান্য মতবাদের অকার্যকারিতা ও কার্যকারিতা আমার সামনে তুলে ধরে এবং এই মতবাদটি কেন অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকর তাও ব্যাখ্যা করে যদিও আমি খুব ভালো করেই জানি যে এই মতবাদটিও যে কোন মুহূর্তে অকার্যকর মনে হতে পারে ,আর আমি এভাবেই প্রতিনিয়ত আরো ভালো করে ভাবতে শিখি।
লেখককে ধন্যবাদ এমন একটি বিষয়ে লেখার জন্য……।
@রনি,
হ্যাঁ মতবাদ গ্রহণ বিষয়ে আপনারটাই আসলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। আবার, কিছু বিষয় থেকেই যায় যেগুলো ‘কার্যকারিতা বা অকার্যকারিতা’র নিক্তিতে মাপা মুশকিল।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
চমৎকার একটা লেখা।
আপনি, রৌরব আর রামগড়ুড়ের ছানা মিলে মুক্তমনায় সম্পূর্ণ নতুন দিককে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
@ফরিদ আহমেদ, ধন্যবাদ 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক ধন্যবাদ আমাকেও সম্মানিত করার জন্য। তবে এটা বলতেই হবে যে তানভীরুল ইসলাম আর রৌরব যা করছেন তার অর্ধেক কাজও আমি করিনি।
একটা ভালো উদাহরন হবে মনে হয় আমার এই কবিতাটা। ‘মানি’ নামের এক ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিমার কাছে আমার কবিতাটা অখাদ্য মনে হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের সনামধন্য কবি হাসানআল আব্দুল্লার কাছে ঠিকই ভালো লেগেছে। এখন আমরা আসলে কোন মতামতটা নেব? মানি নামের পাঠকের নাকি যে নিজ নামে কবি হিসেবে খ্যাত হাসান ভাই, তার?
আমার মনে হয় এটা সম্পুর্নই ব্যক্তিগত উপলব্ধি। আমার কাছে যেটা ভালো লাগছে সেটা আপনার কাছে লাগছে না। সেজন্যই আমাদের সবার ভাবনাকে মুল্য দিতে হবে। আমার মনে হয় এই বিভিন্ন ভালো লাগার ব্যখ্যা দেয়াটা অসম্ভব।
ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার এই লেখাটা উপহার দেয়ার জন্য।
@সাইফুল ইসলাম, ধন্যবাদ আপনাকেও মন্তব্যটির জন্য 🙂
গতকালকে Watchmen দেখলাম। মন আলোড়িত হয়েছিলো জীবন সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্নে। চমৎকার লেখাটা পড়ে আলোড়িত হলো আরেকবার।
যতদিন যায় জীবনটাকে ধীরে ধীরে একটা ভয়ংকর কৌতুক ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না 🙂
@রায়হান আবীর, কউ কি! নিহিলিস্টিক কথাবার্তা! :O
ওয়াচম্যান মুভিটা কেমন?? দেখলে আমিও কি নিহিলিস্টিক হয়ে যাব? :-s
-আপনার বন্ধুর উপলব্ধি।
-আপনার উপলব্ধি।
আমার উপলব্ধিটা:-
ছবি বা আর্ট কিছুই বুঝি না। বুঝি না বলেই আমার অজ্ঞানতা বেশি বেশি করে প্রকাশ পায়। বুঝি না বলেই যে দেখবো না তা কিন্তু নয়, বরং দেখতে ভালোই বাসি। অনেক গান রয়েছে মুগ্ধ হয়ে শুনি, বুঝি বা না বুঝি। ছবির বেলাতেও তাও। মাঝে মাঝে বিভিন্ন চিত্রকলা প্রদর্শনীতে ঢু মারি। চিত্রের নীচের বিশাল অংকের দাম বসানো থাকে। তখন ভাবি- কাগজ রং ফ্রেমে বাধানো এগুলোর দাম আর কতই বা হবে। তাই বলে এত দাম! এখানে ধনীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। গরীবরা অচল। কিন্তু প্রকৃতির বিশাল আর্ট দেখি। আকাশের দিকে তাকালেই অন্যরকম অনুভবের সৃষ্টি হয়। পয়সাবিহীন এই সৌন্দর্য গিলি, বার বার গিলি, না বুঝলেও গিলি।
ড. হুমায়ুন আজাদের ‘শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ’ নামে একটি বই রয়েছে। এই বইটি পড়লে নাকি চিত্রকলা সম্পর্কে জ্ঞান জন্মে। এবস্ট্রাক্ট আর্টগুলির যে মাহাত্ম্যর রয়েছে, তা নাকি অনুধাবন করা যায়।
আমি শতভাগ একমত।
আপনার এই পোষ্টটি পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তে নিজের মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণের দিকে চলে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে উঠে আসতে কিছুটা সময় লাগে। কেনো এই বিচ্যুতি ঘটলো?
আমার মনে হচ্ছে, আপনার এই পোষ্টটি ‘দর্শন’ ‘মনোবিজ্ঞান’ ‘চিত্রকলা’ বিভাগে যোগ করা উচিত। (ব্যক্তিগত অভিমত)
@মাহফুজ,
এবার দেশে গেলে হুমায়ুন আজাদের বইটা সংগ্রহ করার চেষ্টা করব। ‘সত্য এবং সুন্দর’ এই দুটোইতো যে কোনো মানবীয় অভিক্ষার মূল কথা। তাই না?
তবে শিল্পকলার মত এই চমতকার জিনিশটার এই প্রচন্ড অর্থনির্ভরতা কষ্ট দেয়। লোকগাথা থাকে অনেকের নাগালের মধ্যেই। তারপরও কত কইছুই অধরা রয়ে যায়। আর্থিক বৈসম্যে। 🙁
ট্যাগ আপডেট করলাম। ‘চিত্রকলা’ ট্যাগটাও দিয়েছি কিন্তু সেটা দেখাচ্ছে লেখার শেষে নিচে। বাকিগুলো উপরে। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
আপনার সুন্দর লেখাটার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। আপনি দর্শনের একটা অত্যন্ত পুরনো বিষয়, ব্যক্তিনির্ভরতা (সাবজেক্টিভিটি) নিয়ে লিখেছেন। আমাদের জীবনে, কর্মকান্ডে এবং সমস্ত উপলব্ধিতে, শিল্প থেকে রাজনীতিতে, এমনকি বিজ্ঞানেও, ব্যক্তিনির্ভরতার সর্বময় উপস্থিতিকে অত্যন্ত নৈপুন্যের সংগে তুলে ধরেছেন। বিষয়টা পুরনো হলেও আপনার লেখাটা একেবারে মৌলিক এবং সত্যিই অনবদ্য। :rose2:
তবে আপনার লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনি ব্যক্তিনির্ভরতা, আপেক্ষিকতা, অসম্পূর্ণতা এবং অনিশ্চয়তা কে এক কিংবা প্রত্যক্ষ সম্পর্কযূক্ত মনে করেন। আমার মতে এই কনসেপ্টগূলোর মধ্যে কিছু সম্পর্ক আছে, কিন্তু সেটা প্রত্যক্ষ কিংবা সরল নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগূলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
@মোঃ হারুন উজ জামান,
ধন্যবাদ। আমি মনে হয় আপনি যে মাত্রায় ‘সম্পর্কযুক্ত’ মনে করছেন তেমন একটা মাত্রাই ধরে নিচ্ছি। (কয়েকটা মন্তব্যে অবশ্য সাবজেকটিভিটি শব্দটা একটু ব্যাপক ব্যবহার করেছি বলে মনে হচ্ছে) মূলত লেখাটা ছিলো এসব দার্শনিক প্রশ্ন কীভাবে চিন্তার এবং কর্মের জগতে ‘স্থবিরতার’ জন্ম দিতে পারে সেটা নিয়ে। এবং এটা কাটিয়ে উঠতে কী ধরণের চিন্তাপদ্ধতি আমরা আপ্লাই করতে পারি।
আমার আপ্রোচটা এমন। যেহেতু আমাদের জগতটা ভৌত জগত। এবং যেহেতু আমাদের অনেক ভৌত কর্মকান্ডই শেষবিচারে ‘আপেক্ষিক’ বা আমার নিজস্ব ‘ভ্যালুজ’ (values) এর উপর নির্ভর করছে। তাই অনেক সময় আমি বেশ কিছু ‘অনিশ্চিত’ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি। যেটা কিনা আমি ‘প্রপারলি এক্সপ্লেইন’ করতে পারছি না। (যদিও অবশ্যই অন্য কেউ প্রমাণিত ভাবে ‘শ্রেয়তর’ কিছু প্রস্তাব করলে আমি সেটা মেনে নেব)।
আমি বলতে চাচ্ছি শুরুতে ধরে নেওয়া এই যে মৌলিক অনুমিতিগুলো, সেগুলোই শেষমেষ আমাদের ‘ব্যক্তি স্বত্তার’ নির্নায়ক। আর এই ভ্যালুগুলো যেহেতু আসাইন করছে ব্যক্তি নিজেই বা ব্যক্তির জীবন-কালের পারিপার্শ, সেখান থেকেই আসছে ‘সাবজেক্টিভিটি’।
অর্থাৎ অনিশ্চিত বলেন, আপেক্ষিক বলেন, অসম্পূর্ণতা বলেন এগুলোকে মাথায় রেখেই কোনো ব্যক্তি যখন তার কোনো ভৌত কর্মকান্ড সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা একান্তই ‘সাবজেক্টিভ’ হয়ে দাঁড়ায়। যে সব ভ্যালুজ বা নর্ম(?) সে তখন ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহনে সেগুলো মিলেই তার মানসের ছাপচিত্র।
ক’দিন ধরে জৈব রাষায়নিক ক্রিয়া, মোহ, মোহ ভঙ্গ, মোহ মুক্তি নিয়ে ভাবছিলাম। ভাবছিলাম কগ্নিটিভ ডিসোনেন্সের আর নিউরাল নেটওয়ার্কের কথা। সেপারেট রিয়ালিটি কিভাবে তৈ্রী হচ্ছে- কে তাকে আকার দিচ্ছে। সোশাল রেকগনিশান বা সোশাল স্লিপেজের ভয় তাতে কেমন করে আগল বসাচ্ছে-নিয়ন্ত্রণ করছে।
এর মাঝে আপনার লেখা পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম। রশুনের খোশা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে পরতে পরতে আমরা ব্যাখা দাড়ঁ করাচ্ছি বিষয়ের , বস্তুর আর ব্যাক্তির আর পর মুহুর্তে পাড়িয়ে যাচ্ছি নিজেই নিজের বোধকে। এর সব ই কিন্তু মন গড়া। সম্ভাবনাকে হয় পড়ছি সম্ভব অথবা সম্ভব না।
কঠিন কথাকে তরল নয় সহজ করে বলার জন্যে ধন্যবাদ তানভীর।
@কেয়া রোজারিও, ব্রেইনের যে ব্যাপারটা আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করে সেটা হলো এটা একটা ভৌত কাঠামো। ইট-কাঠ-বালু-পাথর এর মতই অনু-পরমাণুর তৈরি। আমাদের ব্রেইন যখন নতুন কিছু শেখে তখন রীতিমত এসব অনু-পরমাণুকে নেড়ে চেড়ে পুনর্বিন্যাস করে নতুন নতুন নিউরাল পাথ সৃষ্টি করে তবেই তো!
এসবের রহস্য উদ্ধার হয়ে গেলে কী মজাটাই না হবে! 🙂
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দারুণ লেখা! এত চিন্তার জন্ম দিচ্ছে যে লেখাটাকে ঠিক কায়দায়ই করতে পারছি না!
গোদেল অসম্পূর্ণতা বিষয়ক দুটি মন্তব্য। প্রথমত, এটা নিয়ে পোস্ট দেয়ার অনুরোধ করছি। আগে টুরিং অম্পূর্ণতা নিয়ে লিখেছিলেন, এখন অন্য ব্যাপারের মধ্যে গোদেল অসম্পূর্ণতা। এভাবে অসম্পূর্ণ ভাবে 😉 না লিখে একটা সিরিজ করলে অনেকেই হয়ত উপকৃত হবে।
দ্বিতীয়ত, আর্টের সাবজেকটিভিটির সাথে গাণিতিক অসম্পূর্ণতার তুলনাটা গ্রহণ করতে পারলাম না :-P।
@রৌরব, আসলে আর্ট এর মত আবস্ট্রাক্ট ব্যাপার থেকে শুরু করে। গণিতের মত (যেটাকে আমরা আবসলিউট) ধরে নিই। তার সব কিছুই যে কিছুটা সাবজেক্টিভ সেটাই ছিলো পয়েন্ট।
মূলত জীবনের সব আসপেক্ট অই সাবজেক্টিভ। আপনার নিশ্চই এমন হয়েছে- কোনো তর্কে অনেক যুক্তি দেখিয়ে আপনি আপনার বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করলেন তারপরও আপনার কথা মানলো না। কারণ ঐ ব্যক্তি ‘যুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করে না।
তার মানে আমরা যারা ‘যুক্তি মনস্ক’ তারা ‘বাই চয়েস’ এমন। ব্যাপারটাকে বা এরকম অনেক কিছুকেই(আসলে সবকিছুকেই) এভাবে ভাংতে ভাংতে আপনি এমন একটা যায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। যেখানে আসলে আপনি কিছু একটা ‘আসিউম’ করে নিচ্ছেন। হোক সে ইউক্লিডিয়ান জিওমেট্রি বা হোক ‘জীবনের অর্থ’।
ইনফ্যাক্ট জীবন তো কিছু ক্রমাগত রাসায়নিক বিক্রিয়া ছাড়া কিছুই না। তারপরেও তা নিয়ে আমাদের কত মাতামাতি। কারণ আমরা কীভাবে কীভাবে যেন এতে ‘ভ্যালু আসাইন’ করে নিয়েছি। এই আসাইন করা ভ্যালুগুলোই একেকজন ‘আলাদা আমি’। একেকটা মানসের ছাপচিত্র। এটাই বলতে চেয়েছি। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
অন্য ব্যাপারে এটা মানছি, কিন্তু গোদেল অসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে ঠিক নয়। ব্যাপারটা তো এই নয় যে আপনার কাছে একটা প্রমাণ আছে, কিন্তু আমি সেটা সাবজেকটিভিটির কারণে কিছুতেই গ্রহণ করছি না। প্রমাণই নেই (বা আসলে প্রমাণের দৈর্ঘ্য অসীম)।
@রৌরব, কিন্তু ব্যাপারটা ভাবুন। গোডেলের প্রথম উপপাদ্য বলছে- ইলিমেন্টারি আরিথমেটিক করতে সক্ষম এমন কোনো কার্যকর তত্ব থাকতে পারে না যেটা একই সঙ্গে ‘কনিসিস্টেন্ট’ এবং ‘কম্পলিট’
তাই আমি আমার ব্যবহার্য অংশটুকুর কন্সিস্টেন্সি এনশিওর করতে চাইলে নিশ্চিত জানবো আমার হাতের সিস্টেমটা তখন আর কম্পলিট না।…
যাই হোক। আর এভাবে না ভাবলেও যেকোনো গাণিতিক ব্যবস্থাই আসলে কিছু আজাম্পশন এর উপর দাড়িয়েই গঠিত হয়।
যেমন একটা সিস্টেমে, আডিটিভ আইডেন্টিটী আছে কিনা। মাল্টিপ্লিকেটিভ আইডেন্টিটি আছে কিনা। এই অপারেশনগুলো কমিউটেটিভ কিনা। বা পুরো গাণিতিক ব্যবস্থাটা ‘ক্লোজার প্রোপার্টি’ হোল্ড করে কিনা… এমন বিবিধ প্রাথমিক স্বীকার্যের ভিত্তিতেই আর সব গাণিতিক সত্য প্রতিষ্টিত হবে।
এই প্রাথমিক স্বীকার্যগুলো হিসাবে রেখে যে বাক্যগুলো প্রমাণ করা হবে সেগুলো নিশ্চই সত্যবাক্য। কিন্তু সবার শুরুতে ঠিক ‘কেন’ আমি এই অক্সিওম গুলো ধরে নিয়েছিলাম তার উত্তরে রসায়নবিদ পিটার আটকিন্স এর মত করে আমাকেও বলতে হবে, ‘Sir, The ‘Why’ question is just a silly question.’
উদাহরণস্বরূপ ধরুন গণিতের একটা মৌলিক উপাদান ‘সেট’। এটারই কোনো ‘কার্যকর সংজ্ঞা’ নেই। সেটের আভেইল আভেল সব সংজ্ঞাই ‘সার্কুলার’। তাই আমরা জাস্ট এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা করতে পারি এবং আশা/’হোপ’ করতে পারি যে শিক্ষার্থী বা পাঠক আমার মনে ‘সেট’ এর যে চিত্রটা আছে ঠিক সেই চিত্রটাই আঁকতে সক্ষম হয়েছে! :-Y
এই যে আলোচনার সূচনাতে বিভিন্ন মাত্রায় মানুষের ‘গুড সেন্স’ এর উপর নির্ভর করা। এটাকেই বোঝাতে চেয়েছি।
@তানভীরুল ইসলাম,
ও হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনার শেষাংশের সাথে পুরো একমত। অ্যাসাম্পশনগুলো অবশ্যই সাবজেকটিভ, শেষ বিচারে। কেন কোন একটা বিশেষ অ্যাসাম্পশন মেনে নেয়া হচ্ছে, ওটা মনস্তত্বের প্রশ্ন।
@তানভীরুল ইসলাম,
কি অদ্ভুত, আপনিই এ কথাটা বলে দিলেন! সকালে আপনার লেখাটা পড়েই কেন যেন এটা মনে হয়েছিল। তারপর ভাবলাম, থাক এগুলো বলার দরকার নেই, আপনার লেখার বিষয়বস্তু তো ঠিক এটা ছিল না, তাই অপ্রাসঙ্গিক দিকে আলোচনা না নেওয়াই ভালো। কিন্তু এখন আপনি নিজেই বললেন যখন… 🙂
জীবন নিয়ে মানুষের যে এত আয়োজন এত মাতামাতি এর পিছনে বুদ্ধিমত্তার বিকাশটাই তো মূল কারণ। প্রকৃতিতে আর কোন প্রানী আমাদের মত করে চারপাশে এত বিচিত্র মানসচিত্র আঁকতে পারে না। এটা কেমন যেন একটা ধাঁধার মত। আমরা নিজেরাই নিজেদের ঘিরে হাজারটা নিয়ম কানুন, এবসোলিউট, ভেরিয়েবল বানাই, নিজেরাই ভাঙ্গি, নিজেরাই তাকে ঘিরে একটা মূল্য দাঁড় করাই… বেশীরভাগ সময় জেনেশুনেও এই ধরণের ইল্যুশান থেকে বের হয়ে আসতে পারি না। মাঝে মাঝে ভাবি প্রাচীন (ভাববাদী হয়তো) অনেক কবি সাহিত্যিক দার্শনিকেরা আমাদের মত এত কিছু না জেনেও যে বুঝতে পেরেছিলেন যে জীবনটা আসলে একটা ‘মায়া’ ছাড়া আর কিছু নয় এটাই তো আসলে অনেক বড় পাওয়া। নিজেদের ঘিরে এত ভেরিয়েবল তৈরি করা, মায়াজাল বিস্তার করা সবই হয়তো আমাদের সার্ভাইভালে সহায়তা করেছে। আমরা এপ বা নরবানরদের মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল, শারীরিকভাবে আমাদের মত দূর্বল প্রানী কমই আছে। কিন্তু পৃথিবীতে সবচেয়ে সার্থকভাবে টিকে গেলাম আমরা। আমরা এতটাই সাক্কসেস্ফুল যে সারা পৃথিবীটাকে গ্রাস করে প্রায় ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেছি। এতটা সাব্জেক্টিভিটি আছে বলেই, বা অন্যভাবে বললে বলতে হয়, নিজেদের ঘিরে এতটা সাব্জেক্টিভিটি তৈরি করছি দেখেই হয়ত এটা সম্ভব হয়েছে।
@বন্যা আহমেদ, ডেভিড ডাচেস এর একটা টেড লেকচার শুনেছিলাম। মহাবিশ্বের এই যে ক্রমবিবর্তণ। গ্যালাক্সি, স্টার, সুপার মইয়াসিভ ব্লাক হোল, মহাবিশ্বের একদম অন্য কোনো প্রান্তে কোনো কোয়েজার এগুলোর ভৌত গঠন আমাদের ব্রেইন থেকে কত আলাদা! কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার যে আমরা এইসব ঘটনার ‘আকুরেট’ মডেল তৈরি করতে পারি। বিলিওন লাইট ইয়ার দূরে ঘটে যাওয়া এই বিশাল ব্যপ্তির ঘটনাগুলো মহাবিশ্বের কোনো এক প্রান্তে আমাদের ব্রেইন তাঁর ভাষায় ‘বাঞ্চ অভ কেমিক্যাল স্কাম’ কী চমতকার মডেল করে ফেলছে!
এই ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্রেইনটা আছে বলেই একই সঙ্গে আমরা প্রশ্ন করতে পারি, ‘বেচে থাকার অর্থ কী’? একই সঙ্গে তাতে অর্থ আরোপও করতে পারি। এগুলোইতো সেই ব্যাপার ‘that makes life interesting’ 🙂
@তানভীরুল ইসলাম, আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশটা বেশ অদ্ভূত, একদিন হয়তো সবটাই বুঝতে পারবো, কিন্তু এখন যে এর অনেক কিছুই বুঝি না তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আইবিএম এর একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বেশ মজার একটা কথা বলেছিলেন …
‘ If the human brain was so simple that we could understand it, we would be so simple that we couldn’t. ‘
@বন্যা আহমেদ,
কোন মা’রেফতি ব্যাপার স্যাপার না কি? :-/
@আকাশ মালিক, আসলে কথাটা পরিষ্কার করা উচিত, ঠিক মত বলা হয়নি ঘুমের ঘোরে মন্তব্য করেছিলাম। আমি আর অভি ক’দিন এগেই এ নিয়ে কথা বলছিলাম, আমরা যতই জানতে পারছি যে আসলে এই পৃথিবীর জীবনটার পিছনে কোন উদ্দেশ্য নেই, লক্ষ্য নেই, পরকাল নেই – এই ব্যাপারগুলো মেনে নেওয়া আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটু কঠিনই। আমাদের মত এত বুদ্ধিমান প্রানীর চারপাশে এত্ত আয়োজন, সব কিছুই উদ্দেশ্যবিহীন? তা কি করে হয়? এই জন্যই ( এবং আরো অনেক কারণে) আমরা এত গভীরভাবে পরকালে বিশ্বাস করি, তাহলেই সব কিছুর একটা ‘আল্টিমেট অর্থ’ তৈরি করা যায়। আমার এক বন্ধু আছে যে বিবর্তনের কথা শুনলেই ক্ষেপে যায়। সে কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, কিন্তু সবটুকুই উদ্দেশ্যবিহীন এটা শুনলেই নাকি ওর বুকের ভেতর কেমন করে :brokenheart: । আমি প্রাচীন দার্শনিকদের ‘মায়া’র কথা বলেছিলাম একটু অন্য সেন্সে। আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে, এই যে আমরা চারপাশে এত মায়াজাল (ভেরিয়েবল, নিয়ম কানুন, পছন্দ অপছন্দ বা যাই বলুন না কেন) সৃষ্টি করে রেখেছি এগুলো যে আসলে শুধুই মায়া এবং অর্থহীন, আমাদের নিজেদের তৈরি সেটা ওনারা বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু তারপর সেটাকে ঘিরে কি মারফতি ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন সেটা অবশ্য আরেক প্রসংগ, সে নিয়ে আর আলোচনা করে লাভ কি!
@বন্যা আহমেদ,
খুবই স্বাভাবিক। সচেতন মানুষ মাত্রেই এ নিয়ে ভাবে। আমি জেনে বুঝেই আপনাকে কথা বলানোর জন্যে একটু জৌক করেছিলাম।
এবার একটু ভিন্নভাবে আমার মনের ভাবনাটুকু আপনার সাথে শেয়ার করি। বিষ্ময় আর রহস্যে ঘেরা এই বিশ্বের সবকিছু আমরা জানতে পারি নাই, অনেক কিছুই আমাদের নাগালের বাইরে এবং সর্বোপরি আমাদের মৃত্যুপরবর্তি অবস্থা নিয়ে আমরা সদা চিন্তিত, আসলে মানুষ তা নিয়ে ভাবতেও বাধ্য। তবে আমি নিশ্চিত (আগে নয় এখন) মনে করি এই পৃথিবীর জীবনটার পিছনে কোন উদ্দেশ্য নেই, লক্ষ্য নেই, পরকাল নেই। মৃত্যুর পর আমাদের দেহ আর স্ক্রাপইয়ার্ডে পরিত্যক্ত একটা গাড়ির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদিও এখনও মাঝেমাঝে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, মৃত্যু যদি না হতো তাহলে আমরা কি এমনভাবে ভাবতাম? জন্মের পর থেকে মানুষ এক পা এক পা করে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। তারপর সে জানে সে আর কোনদিন তার এই সুন্দর সপ্নেঘেরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেনা, যেখানে রেখে গেছে তার অতি প্রীয় আপনজন। কোনদিন জানতেও পারবেনা এরা কেমন আছে কীভাবে আছে কোথায় আছে। শুনতেও পাবেনা তাদের হাসি-কান্নার ধ্বনি, সুখ-দুঃখের কাহিনি। তাহলে কিসের এত আয়োজন? আমার মনে হয়না মানুষ এক সময় (আমি বলছি নিয়ান্ডার্থাল যুগের বহু পূর্বের কথা) এভাবে এসমস্ত নিয়ে ভাবতো। এই ভাবনা জেগেছে অনেক পরে। যদি আমার অনুমান ঠিক হয়, আর আপনার জানা থাকে তাহলে বলে দিবেন, সময়ের সেই সন্ধিক্ষণ কখন কোনকালে ঘটেছিল। আমি বিশ্বাস করি এটা আমাদের মস্তিস্কবৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত, জৈব বা বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা ভাল বলতে পারেন।
@আকাশ মালিক,
মনে হয় ভাবতাম না, বা অন্য কি সব ভাবতাম কে জানে।
আমার মনে হয় মানুষ অমর হতে চায়, এখান থেকেই এ সবকিছুর উৎপত্তি। উদ্দেশ্যর প্রশ্নটা চাইলে ধর্মবিশ্বাসীরাও চালিয়ে যেতে পারেন — জীবনের উদ্দেশ্য নাহয় অনন্ত স্বর্গলাভ, কিন্তু অনন্ত স্বর্গলাভের উদ্দেশ্য কি? ওটার কোন উদ্দেশ্য নেই, অনন্তকাল বেঁচে থাকা যাচ্ছে, এটাই উদ্দেশ্য।
@রৌরব, একদম খাটি কথাটা বলেছেন। নেন একটা ফুল :rose2:
@তানভীরুল ইসলাম,
ফুলটা অনন্তকাল তাজা থাকবে তো? নইলে নিমু না 😀
বন্যা, আকাশ মালিক, রৌরব, তানভীর। এই লেখাটা র আলোচনা কিন্তু ক্রমাগত জীবনের অসারতা আর অসাড়তা কে ইঙ্গিত করছে, কি ভয়ংকর উপলব্ধি!! জানিনা অমর হবার প্রত্যাশায়, প্রক্রিয়ায় অথবা শেষ সৃতি চিহ্ন রেখে যাবার ইচ্ছেতেই কি মানুষ সংসার সাজাচ্ছে কিংবা শিল্প সাহিত্য স্থাপত্য কর্ম তৈ্রী করে যাচ্ছে কিনা। অথবা এমন ও হতে পারে যে মরতে পারছে না বলেই দিনগত পাপক্ষয় করে যাচ্ছে কেউ কেউ।
তবে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এই মোহ মুক্তির চর্চাও কিন্তু অসম্ভব নয়। আর নিউরাল নেটওয়ার্ক ও তাকে সাহায্য করে বৈকি।
অফ টপিকঃ সবার পড়া তবু রবীন্দ্রনাথের শেষ লেখার একটা কবিতা “রুপনারানের কুলে” সহভাগীতা করতে ইচ্ছে হোল।
রুপনারানের কুলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রুপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারূণ মুল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ ক’রে দিতে।
@কেয়া রোজারিও,
মনে হয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকেই বলতে শুনেছিলাম জীবনের অর্থ নিয়ে। তিনি বলেছিলেন অনেকটা এমন, ‘জীবন তো অর্থহীন, আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ডই এতে অর্থ আরোপ করার নিমিত্তে’।
আর একটা জিনিশের ‘পূর্বনির্ধারিত উদ্দ্যেশ্য’ না থাকলেই যে সেটা ‘অসার’ বা ‘অর্থহীন’ আমি তেমন ভাবি না। আমার কাছে বরং ওটা আমার ইচ্ছা আর ভালোলাগা মতো ‘অর্থ আরোপ’ করে নেওয়ার স্বাধীনতা।
কবিতাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@কেয়া রোজারিও,
সহভাগীতা, দারুণ শব্দ!
কবিতাটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@কেয়া রোজারিও, তানভীরুল ইসলাম, উদ্দেশ্যহীনতা মানেই কিন্তু হতাশা নয়। জৈবিক উদ্দেশ্যহীনতা, বিবর্তন বা জিন স্তরে স্বার্থপরতা ইত্যাদির সাথে আমাদের প্রজাতির বিকাশ এবং টিকে থাকার সমানুপাতিক সম্পর্ক থাকতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই। বুদ্ধিমত্তার অভূতপূর্ব বিকাশের কারণে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই জৈবিক অনেক নিয়মকেই উপেক্ষা করতে করতে পারি। প্রাকৃতিক নির্বাচনই তো আমাদেরকে এই হাতিয়ারটা দিয়েছে। এ ব্যাপারটা কিন্তু সৃষ্টিবাদীরা সব সময়েই নিয়ে আসে, তাই এ প্রসংগটা নিয়ে আলোচনা করেই বিবর্তনের পথ ধরে বইটার উপসংহার টেনেছিলামঃ
‘অনেকেই মনে করেন মানুষকে কেন্দ্রে বসিয়ে প্রচলিত বিধি বিধান অনুযায়ী জীবন না চলালে নাকি মানব সভ্যতার মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে যাবে। বিবর্তনবাদ নাকি মানুষকে অবক্ষয়ের পথে ঠেলে দিচ্ছে! ব্যাপারটা যেনো এরকম যে ডারউইন বিবর্তনের তত্ত্ব দেওয়ার আগে পৃথিবীতে অনৈতিক ব্যাপারগুলোর অস্ত্বিত ছিল না। মানুষের আর বেঁচে থাকার, ভালো কাজ করার কোন অনুপ্রেরণা থাকবে না। কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে ঠিক তার উলটো নয়? অনেকেই আমাদের নিজেদের কল্পনায় বানানো এই ‘সৃষ্টি’র মহত্ত্বকে ত্যাগ করতে ভয় পান – কিন্তু ভেবে দেখুন তো আজকে আমরা যতই নিজেদের সম্পর্কে জানতে পারছি, যতই বুঝতে পারছি যে ‘আমরা প্রকৃতিরই একটা অংশ মাত্র, কেউ আমাদেরকে বিশেষভাবে পরিকল্পনা করে বানায়নি, কেউ আমাদের সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে এই মহাবিশ্বকে সাজায়নি’ ততই কি আমাদের চিন্তার পরিসর বিস্তৃত হচ্ছে না, দায়িত্বশীল হওয়ার দায় বেড়ে যাচ্ছে না? হয়তো সারাটা মহাবিশ্বই পড়ে রয়েছে আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত পদচারণার অপেক্ষায় – হয়তো এরকম আরও মহাবিশ্বের পর মহাবিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, হয়তো আমাদের মত জীবনের সমারোহে, প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে আছে আরও অনেক বিশ্ব! কিংবা কে জানে, হয়তো বা আমরা ছাড়া আর কোন বুদ্ধিমান প্রাণীরই উদ্ভব ঘটেনি অন্য কোথাও! অতিকায় ডায়নোসররা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কেউ তো একবারও ফিরে তাকায়নি; কয়েকশো কোটি বছরের যাত্রাপথে আরও কোটি কোটি প্রজাতি বিলুপ্তির পথ ধরেছে, প্রকৃতি তো এক ফোঁটাও চোখের জল ফেলেনি; আমাদের প্রজাতিও হয়তো এক সময় হারিয়ে যেতে পারে প্রাকৃতিক নিয়মেই। কেউ তো আমাদেরকে রক্ষা করার পবিত্র দায় নিয়ে বসে নেই। আমাদের নিজের দায়িত্ব আজকে নিজেকেই নিতে হবে, নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই এক সুস্হ মানব সমাজ গড়ে তুলতে হবে, নিজেদের বিলুপ্তি ঠেকাতেই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। নিজেদের অকল্পনীয় বুদ্ধিমত্তার আলোয় বলিষ্ঠ হয়ে ‘রহস্যময়’ এই ‘প্রায় অচেনা’ মহাবিশ্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আর কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান না পাওয়া যাচ্ছে, এই টিকে থাকার, বিকশিত হওয়ার, ছড়িয়ে পড়ার প্রাণের মেলায় আমরাই আমাদের সাথী, কান্ডারী এবং ত্রাণকর্তা। ঠিক যেমনটি বলেছিলেন স্টিফেন জে গুল্ড তার Wonderful Life (১৯৮৯) বইটিতেঃ ‘আমরা ইতিহাসের সন্তান এবং এই বৈচিত্রময় মহাবিশ্বের বিস্তীর্ণ পরিসরে আমাদের নিজের পথ নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে – এই মহাবিশ্ব আমাদের দুঃখ বেদনার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন আর তাই আমরা আমাদের সমৃদ্ধির কিংবা পতনের ব্যাপারে সম্পুর্ণভাবে স্বাধীন। আমরা কোন পথ বেছে নেব তার উপরই নির্ভর করছে আমাদের সমৃদ্ধি বা পতনের সম্ভাবনা।’
@বন্যা আহমেদ,
এত কিছু বুঝে তাহলে কি হল? হিমালয়ে বসে অনেক দিন আগে থেকেই মুনি ঋষিরা বলে দিয়েছে এই জন্ম মায়া-দৃশ্যমান জগত ও মায়া-আসল সত্য ব্রহ্ম! যদিও ব্রহ্ম কি ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে না।!!!
বিবর্তন থেকে আমরা বলতে পারি কি জীবন উদ্দেশ্যহীন? মনে হয় না। প্রাকৃতিক এবং জৈবিক উদ্দেশ্য আছে-ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য বাদ দিলেও।
@বিপ্লব পাল, মর জ্বালা! জীবন উদ্দেশ্যহীন এ কথা কখন বললাম :-Y । আমি ঠিক এর উলটো কথাটা বলার জন্যই তো এত ফালতু প্যাচাল পারলাম!!!
জৈবিক বিবর্তন মানুষের জন্য কোন উদ্দেশ্য সামনে রেখে কাজ করে না, যা টিকে থাকতে পারবে তাই টিকবে অন্যরা ধ্বংস হয়ে যাব। নাহ, আমাদের ঘিরে প্রাকৃতিক এবং জৈবিক কোন উদ্দেশ্য নেই, তবে প্রাকৃতিকভাবে চিন্তা করলে অন্যান্য প্রজাতির মতই টিকে থাকাতে পারাটাকেই উদ্দেশ্য বলতে পারো। বুদ্ধিমত্তার কারণে আমরা অনেক কিছুই অন্যভাবে ভাবতে বা করতে পারি, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আমরা ঠিক করে নিতে পারি, এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতিকেও টেক্কা দিতে পারি। আমাদের প্রজাতির উদ্ভব কোন উদ্দেশ্য বা নীল নক্সাকে সামনে রেখে নয়। বিভিন্ন রকমের চান্স ফ্যাক্টর এবং প্রকৃতির বিভিন্ন নিয়মের সমন্বয় ঘটেছে দেখেই আমাদের উৎপত্তি ঘটেছে, এর একটু এদিক ওদিক হলেই আমরা এখানে এভাবে নাই থাকতে পারতাম। আমরা ভাববাদী বা ঐশ্বরিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যাকে এতদিন উদ্দেশ্য বলে মনে করে এসেছি এবং আমাদেরকে কেন্দ্রে বসিয়ে মহাবিশ্বকে সাজিয়েছি সেটা যে ভুল তা বলারই তো চেষ্টা করলাম। প্রকৃতির অংশ হিসেবে নিজেদেরকে দেখতে পারলেই এবং এ জীবনের উদ্দেশ্য যে পরকালকে ঘিরে নয় তা বুঝতে পারলেই আমরা আমাদের উদ্দেশ্য ঠিক করে নিতে পারবো এটাই তো বলতে চাচ্ছিলাম।
যাক গিয়া, তানভীরের লেখার বিষয়বস্তু থেকে এই মন্তব্যগুলো অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, আমি এবার ক্ষ্যামা দিলাম!!
@বিপ্লব পাল,
বিবর্তনের উদ্দেশ্য না থাকা আর জীবনের উদ্দেশ্য থাকার মধ্য কোন যৌক্তিক সংঘর্ষ দেখতে পাচ্ছিনা। যদি ধরে নিই যে বিবর্তন একটা নৈর্ব্যক্তিক, অন্ধ, উদ্দেশ্যহীন প্রক্রিয়া যা অনেক বিচিত্র প্রজাতি সৃষ্টি করেছে, তারপর সেই প্রজাতিগূলোর কারু কারু মধ্যে “মন” (যেটা হয়ত একটা ইলেক্ট্রো-কেমিকাল সিস্টেম) নামে একটা সত্বা তৈরী হয়েছে যা “উদ্দেশ্য” এবং আরো অনেক ধারনা ও অনুভূতি (যেমন “সৌন্দর্য”, “ভালবাসা”, “নৈতিকতা”, “ব্লগ আঁতেল”, “জীবনটা মহামায়া” ইত্যাদি) তৈরী করেছে, তাহলে উদ্দেশ্যহীন একটা ম্যাক্রো প্রক্রিয়া আর উদ্দেশ্যসমৃদ্ধ অনেক গূলো মাইক্রো প্রক্রিয়া এই মহাবিশ্বে একই সাথে কাজ করছে, এটা বিশ্বাস করা সম্ভব।
@মোঃ হারুন উজ জামান, বিপ্লব,
আমি একটা Epistemological সমস্যা দেখছি এখানে। বিবর্তনের কারণে মানুষের মনের মধ্যে “জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণার” উদ্ভব হওয়াটাকে “জীবনের উদ্দেশ্য” বলা ঠিক নয় । জীবনের উদ্দেশ্য কে সংজ্ঞায়ন করবে? মানুষের বাইরের কোন সত্বাকেই করতে হবে। মানুষ তো তার বিবর্তনজাত চেতনার মধ্যেই আবদ্ধ। বিবর্তনের কারণেই যেহেতু ঐ “জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণা” র সৃষ্টি কাজেই এক অর্থে বিবর্তনেরই উদ্দেশ্য মানুষের মনের মধ্যে “জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণার” সৃষ্টি করা (যা ভুল করে জীবনের উদ্দেশ্য বলা হচ্ছে)। কিন্তু আর একটু উপরে যাই। বিবর্তন তো নিজে কোন স্বতন্ত্র সত্বা নয়। এটা প্রকৃতির নিয়মেরই (পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের) এক ম্যাক্রো লেভেল বহিঃপ্রকাশ। তাই বিবর্তনের উদ্দেশ্য থাকা না থাকাটা বলাটা অর্থহীন। প্রশ্ন করা যেতে পারে পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা। এটা জানতে হলে আমাদের আর এক ধাপ উপরে উঠে জানতে হবে পদার্থ বিজ্ঞানের কারণ। এটা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু এত উঁচু স্তরে গিয়ে উদ্দেশ্য কথাটার মানেটাই গোলমেলে হয় যায়। গোডেলের অসম্পূর্ণতার কারণেই আমাদের মানতে হবে যে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন উদ্দেশ্য বা কারণ জানতে হলে পদার্থ বিজ্ঞানের বাইরের কোন সত্বাকে ইনভোক করতে হবে। পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের মধ্যে থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের উদ্দেশ্য (->জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণ) সংজ্ঞায়ন বা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। যেমনটি ইউক্লিডের আক্সিওমের কারণ জানতে হলে ইউক্লীডীয় জ্যামিতির বাইরে যেতে হবে।
@অপার্থিব,
প্রথমেই বলে রাখি আমার মন্তব্যটা ঠিক বিবর্তনের সত্যি সত্যি কোন উদ্দেশ্য আছে কি নেই সে সম্বন্ধে ছিলনা। শুধু বলতে চেয়েছিলাম যদি ধরে নিই যে বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য নেই, সেটার সাথে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য থাকার কোন যৌক্তিক বিরোধ নেই। এটা আগে পরিস্কার করে লিখিনি সেজন্য দূঃখিত।
আমার মনে হয় সমস্যাটা epistemological নয়, সমস্যাটা semantic. আমি বলিনি “জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণার উদ্ভব হওয়া” কিংবা “জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণা” আর “জীবনের উদ্দেশ্যে” এক জিনিষ। বরং বলতে পারি জীবনের উদ্দেশ্যের ধারণাটা যে জিনিষ নিয়ে, সে জিনিষটাই জীবনের উদ্দেশ্যে। আমি শুধু হাইপোথেটিকালি উদ্দেশ্যেহীন বিবর্তন আর উদ্দেশ্যেতাড়িত মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যের মধ্যে একটা প্রক্রিয়াগত সম্পর্ক টানার চেষ্টা করছিলাম। দর্শন নিয়ে কিছু লিখতে পরিস্কার করে লেখা বেশ দুরুহ, অন্তত আমার জন্য।
এখানে একটা সত্যিকার epistemological সমস্যা দেখছি। মানুষের বাইরের কোন সত্বা যদি জীবনের উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়ন করে, মানুষ সেই সংজ্ঞা কিভাবে জানতে পারবে (সেত তার বিবর্তনজাত চেতনার মধ্যে আবদ্ধ)এবং এই নিয়ে মানুষের পক্ষে কোন অর্থপূর্ণ উপলব্ধি, চিন্তা কিংবা আলোচনা সম্ভব কিনা এসব প্রশ্ন চলে আসে।
আপনার এই কথাটা ঠিক বুঝতে পারলামনা। কোন কিছু যদি প্রকৃতির নিয়মের বহিঃপ্রকাশ হয়, তাহলে তার উদ্দেশ্যর প্রশ্নটা কেন অর্থহীন হবে।
……….চলবে
অন্যমাত্রার লেখাটা ভাল লাগল!
@লাইজু নাহার, ধন্যবাদ। 🙂
আপনার লেখা সত্যই অনবদ্য। শিল্পের আপেক্ষিকতার ব্যাপারটি আমাকেও ভাবায়। আমার কাছে যেটা পছন্দের অনেকের কাছেই সেটা অপছন্দনীয় নয়। এই পছন্দের সাবজেক্টিভিটির ব্যাপারটা অপার্থিব একটি লেখায় খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন – শিল্পানুরাগে আত্মনিষ্ঠতার বিষয়ে কিছু ভাবনা। তবে আমার আরো ভাল লেগেছিল – বিজ্ঞান, শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব নামের লেখাটি। আপনার লেখাটি পড়তে পড়তেই ও দুটোর কথা মনে পড়ে গেল। এ ধরণের বিষয়ের উপর লেখা বোধ হয় বাংলায় একেবারেই নেই। আমাদের মত পাঠকের জন্য আপনার আরো লেখা উচিৎ এই বিষয়গুলো নিয়ে।
@অভিজিৎ, লেখাটা কিছুটা হলেও ভাবাতে পেরেছে জেনে আনন্দিত। আর লিঙ্ক দুটোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@অভিজিৎ,
এই বাক্যটির অন্তর্নিহিত অর্থ আমার বোধগম্য নয়। আপনি দয়া করে বলবেন কি, বাক্যটি দিয়ে আপনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? আপনার ‘অপছন্দনীয়’-এর ‘অ’ কি অকারণে যোগ করেছেন, নাকি স্বকারণে?
@মাহফুজ,
ওটা টাইপো ছিলো। সঠিক বাক্যটি হবে – আমার কাছে যেটা পছন্দের অনেকের কাছেই সেটা পছন্দনীয় নয়।। অ টা বাদ যাবে।
কিন্তু এটা নিয়ে আপনি একটা আলাদা পোস্ট দিয়ে দিলেন? আপনার ব্যাপার স্যাপার আসলেই আমি কিছু বুঝি না। 🙂
অভিজিৎ, তানভীর,
ধন্যবাদ অভিজিৎকে আমার লেখার লিঙ্ক দুটো দেয়ার জন্য। এই দুটো লিঙ্ক যখন দেয়াই হল তাহলে আরেকটা বাদ যাবে কেন। যেহেতু তানভীর অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এক্সপ্রেশনাজিম নিয়ে লিখেছে তাই এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ধারণা সার্রিয়ালিজম(অধিবাস্তবতা) নিয়ে আমার লেখার লিঙ্কটাও দিলাম। আরেকটা কথা ডঃ হারুন এর সাথে আমিও একমত যে শিল্পে ব্যক্তিনির্ভরতা (আত্মনিষ্ঠতা) র সঙ্গে গোডেল এর অস্পম্পূর্ণতা প্রতিজ্ঞার কোন সম্পর্ক নেই বলেই জানি। তবে গোডেল এর অসম্পূর্ণতার মত এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিজ্ঞার কথা তুলে এর প্রতি পাঠকদের ইন্টেরেস্ট জাগ্রত করবে এই আশায় তানভীরকে ধন্যবাদ।
@অপার্থিব, আসলে গোডেল ত্বত্তটা এখানে কোনো ‘সমতুল অর্থে’ আনা হয়নি। আমার তুলোনার ক্ষেত্রে পয়েন্টটা ছিলো- ‘পরম নিশ্চয়তা’র বুকে আপনি আশ্রয় পাবেন না এমনকি যদি সব ছেড়ে শুধু গণিতের আশ্রয়ও নেন। এটুকুই। তাই সক্ষিপ্ত একটা রেফারেন্স করেছি শুধু।
মন্তব্য এবং লিঙ্কটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
@তানভীরুল ইসলাম,
ঠিক আছে। প্রসংগটা বুঝলাম। তবে পরম নিশ্চয়তার থেকে অনিশ্চয়তাই বরং বিশ্বাসের জন্ম দেয়। অজানা থাকা মানেই তো একটা সম্ভাবনার দ্বার খোলা থাকা, সেটা যেরকম সম্ভাবনাই হোক, যার যার পছন্দমত। অমরত্ব একটা উদাহরণ। গোডেলের অসম্পূর্ণতা সেই অনিশ্চয়তাকেই পাকাপোক্ত করেছিল। আর গোডেলের ব্যাপারে অনেকেই হয়ত জানেন না যে তিনি মোডাল লজিক ব্যবহার করে এক সংশোধিত অ্যান্সেমের Ontological argument দিয়ে ইশ্বরের অস্তিত্ব (ধর্মের অর্থে ইশ্বর নয়, মহাবিশ্বের কারণ অর্থে) প্রমাণ করেছিলেন। এটা বলার অর্থ যে ভবিষ্যতে পদার্থ বিজ্ঞানের সম্পুর্ণ তত্ব দিয়ে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করা গেলেও পদার্থবিজ্ঞানের কারণকে ব্যাখ্যা করার জন্য মহাবিশ্বের বাইরের কিছুকে আনতে হবে বা কল্পনা করতে হবে। যাইহোক পরম অনিশ্চয়তাকে বিশ্বাসের কাজে লাগানোর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল ফ্র্যাঙ্ক টিপলারের “Physics of Immortality” বইটি। বইতে তিনি কতগুলি শর্তসাপেক্ষে দেখিয়েছেন কিভাবে অমরত্ব সম্ভব, পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মেই। বইএ পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের ভুল কোন ব্যবহার নেই। টিপলার একজন প্রথম শ্রেনীর পদার্থবিজ্ঞানী। স্টিভেন হকিং এর আগেই তিনি কালভ্রমণ নিয়ে কিছু পথিকৃৎ কাজ করেছিলেন। তবে যেহেতু এর ব্যবহার করা হয়েছে এক অতীব অবাস্তব এক ক্ষেত্রে তাই পেশাদার পদার্থবিজ্ঞানীরা এট নিয়ে মাথা ঘামাননা।
@অভিজিৎ, আপনার সমকামীতা বইয়ের নবম অধ্যায় ধর্মে সমকামীতা, এটা কি কোনোভাবে মেইলের মাধ্যমে পেতে পারি pdf হিসেবে, ভৌগোলিক কারণে কিনতে পারছি না বলে দুঃখিত।
আমার মেইলঃ [email protected]
@তনুশ্রী রয়,
অফিস থেকে ফিরে মেল করে দিব।