শুকনো লংকা মিঠুন চক্রবর্ত্তীর সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা। মিঠুনের বাংলা সিনেমা শুনলেই খুব সম্ভবত আমার অধিকাংশ পাঠক ঠোঁট উলটে হেঁসে পালাবে। এবার কোলকাতার নানান ফোরামে দেখছিলাম সিনেমাটা নিয়ে অনেকেই উচ্ছাসিত। ডেটাবাজারের সৌজন্যে এখন যেদিন কলকাতাতে সিনেমা রিলিজ হয়, সেই দিনই
ডিঙ্গোরা সাইটে বাংলা সিনেমাটি চলে আসে। আমেরিকা এবং কানাডা থেকে একদম হাই ডেফিনিশনে দারুন দেখা যায় সিনেমাটি। ফলে রবিবার দুপুরের ভাবলাম দেখেই নিই-সিনেমাটিকে নিয়ে সবাই যখন এত উচ্ছাসিত।
সত্যি বলতে কি এত ভাল বাংলা সিনেমা বহুদিন দেখি নি। গল্পটা “বাঙাল” চিনু নন্দীকে ( মিঠুন) নিয়ে। চিনু সিনেমাতে এক্সট্রা বা সাইডরোলের কাজ করে। সিনেমা শিল্পের রোজমজুরে। আগে কোল ইন্ডিয়াতে চাকরি করত-অভিনয়কে ভালোবেসে সে দশকের পর দশক শত অপমান এবং দারিদ্র্যের মধ্যেও টালিগঞ্জের মাটি কামরে পড়ে আছে। প্যাশনকে প্রফেশন করার সাহস সবার থাকে না। কিন্ত চিনুর ছিল-এবং অভিনয়ের প্রতি সেই অর্জুনের চোখ, তাকে ভুলিয়ে রেখেছিল দৈনন্দিন অপমানের রোজতালিকা। সেই চিনুই একদিন সুযোগ পাবে বিশ্ববন্দিত পরিচালক জয় সুন্দর সেনের ( সব্যসাচী চক্রবর্ত্তী) ছবিতে নায়কের ভূমিকায়! চিনুর পাশের পৃথিবীটা বদলে যায়।
গল্পটা সাধারন-কিন্ত চিনুর মেটামরফসিসের মধ্যে দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক প্রশ্নই দর্শকদের ছুঁড়ে দিয়েছেন পরিচালক। সত্যিই নেশাকে পেশা করার সাহস এবং তার জন্যে যেচে দারিদ্রকে বরণ করার সাহস আমরা কজন রাখি? মৃত্যুকে স্বীকার না করে কি তাকে জয় করা যায়?
সব থেকে আকর্ষনীয় মিঠুনের স্ত্রীর ভূমিকায় অঙ্গনা বোসের অভিনয়-দুই বাঙালের দাম্পত্য কথোপকপোন এর আগেও অনেক নাটক এবং বাংলা সিনেমাতে দেখেছি-কিন্ত এই ক্ষেত্রে অঙ্গনাকে দশে দশ দিলাম। বরং জয় সুন্দর সেনের স্ত্রীর ভূমিকাতে দেবশ্রী অনেক ডুবিয়েছে। সব্যসাচী তার স্টিরিওটাইপ ভেঙে বেড়োতে পারেন নি-তবে এই সিনেমাতে সেটা করার দরকার ও ছিল না-তাই জয় সুন্দর সেনের চরিত্রায়নটা দারুণ মানিয়েছে। বিশেষ করে ওর ওই ডায়ালোগটা-To be global , you have to be intensely local” -দারুন। এই কথাটা আমি নিজেও সর্বত্র বলি। লালনের মতন যারা “ইনটেন্সলি লোকাল” তারাই একমাত্র সার্বজনীন।
মিঠুনের সিরিয়াস অভিনয় বড়াবরই ভাল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অঙ্গনার অভিনয় মিঠুনকেও ঢেকে দিয়েছে। এমা গারেট ব্রাউনকেও বেশ ভাল লাগল।
যাইহোক ভাল বাংলা সিনেমা তৈরী হচ্ছে দেখে দারুন লাগছে। এই মাসেই আরেকটা ভাল বাংলা সিনেমা আসছে-রবীন্দ্রনাথের ল্যাবেরাটরী গল্পের চলচ্ছিত্রায়ন ( ট্রেলারটা এই লিংকে দেখে নিন)। শুকনো লংকা সিনেমাটা উত্তর আমেরিকার দর্শকরা ডিঙ্গোরার লিংক থেকে এখুনি দেখে নিতে পারেন। আরো ভাল লাগছে এই দেখে অনেক অবাঙালী দর্শক ও এখন এই ভাল বাংলা সিনেমারগুলি দেখছেন। জাপানিজ ওয়াইফ, বাঙালীর থেকে অবাঙালীরা বেশী দেখেছে। সিনেমা একটি সংস্কৃতির ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। বাংলা সিনেমাতে সেখানে বছরে দশ বারোটি ভাল রিলিজ হচ্ছে-এটা ভেবেই দারুন লাগছে।
মন্তব্য করিনা বল্লেই চলে কিন্তু পড়ি।
আমি আপনার লেখার ভক্ত বলতে পারেন।
বামপন্থিদের নিয়ে লেখাটা আমার খুব ভাল লাগছে।
সে ধরনের আরো লেখা চাই।
অনেক দিন অনিয়মিত ছিলাম।
উঁহু। সিনেমাত অনেক দেখলাম। ডিঙ্গোরা তে আরো বাংলা সিনেমা আছে যদি একদিন ( লাইফ ইস ম্যাজিক), একটি তারার খোঁজে এবং অংশুমানের ছবি।
এর মধ্যে অংশুমানের ছবি সিনেমাটা আমার বেশ ভাল লেগেছে।
এখন বেশ কিছু ভাল বাংলা সিনেমা তৈরী হচ্ছে। দর্শক হিসাবে না দেখলে, নিজেদের দ্বায়িত্বটা পালন হবে না। এই সিনেমাটাতে মিঠুন কে বাঙালের ভূমিকায় দারুন লাগল-মিঠুন আসলেই বাঙাল-মনে হচ্ছিল বহুদিন বাদে সে নিজের ভাষায় কথা বলছে।
তুমিতো একেকটা রিভিউ করে মাথার ভিতরে সিনেমা দেখার পোকাটাকে উসকে দাও। জাপানিজ ওয়াইফ দেখলাম পরশুদিন। এবার এটাও দেখতে হবে দেখছি। 🙂