এক.
পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা ধারায় নয়নাভিরাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ৫,০৯৩ বর্গমাইল। বাংলাদেশের এক কোনে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান– এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্যঞ্চালে পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় ১৫ লাখ লোক বাস করেন।
মায়ানমার সীমান্তবর্তী দুর্গম বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭০ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং (উচ্চতা ১০০৩ মিটার) এই জেলায় অবস্থিত, যা বিজয় বা মদক মুয়াল নামেও পরিচিত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং (উচ্চতা ৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল রাইখিয়াং-ও বান্দরবানে অবস্থিত। [লিংক] জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ।
মায়নমার সীমান্তের দুর্গম মদক পাহাড়ে শঙ্খ নদীর উৎপত্তি। উত্তরে আরাকান পর্বত্ থেকে এর ভৌগলিক অবস্থান ২১.১৩ ডিগ্রি উত্তর ও ৯২.৩৭ ডিগ্রি পূর্বে। এর মোট দৈর্ঘ ২৭০ কি.মি.। শঙ্খ নদী অনেক উঁচু উঁচু দুর্গম পাহাড়, গহিন বনাঞ্চল ও অসংখ্য পাহাড়ি জনপদ ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম জেলার সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।
বান্দরবানে শঙ্খ নদীর দুপাড়ে বসবাসকারী ৯০ শতাংশই মারমা নৃ গোষ্ঠির আদিবাসী। তাদের অধিকাংশের পেশা জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরণের চাষাবাদ)। [লিংক]
নদীটির নাম বাংলায় ‘শঙ্খ’ কেন, তার কোন ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি। ধারণা করা যায়, ব্রিটিশ আমলে বাঙালি আমলারা গেজেটিয়ার করার সময় এটিকে ‘শঙ্খ নদী’ হিসেবে নথিভূক্ত করেন। যদিও ‘শঙ্খ’ বলতে যে ধরণের সামূদ্রিক শামুকের কথা বোঝায়, নদীর দুপাড়ে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী আদিবাসী পাহাড়িরা জানিয়েছেন, এ নদীতে আদৌ সে ধরণের শঙ্খের অস্তিত্ব কখনোই ছিল না।
সম্ভবত ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম গেজেটিয়ার প্রকাশকালে ব্রিটিশ শাসকেরা ইংরেজীতে একে ‘সাঙ্গু’ (Sangu) নদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে মারমা আদিবাসীরা তাদের ভাষায় শঙ্খ নদীটিকে ‘রিগ্রাই খিয়াং’ অর্থাৎ ‘স্বচ্ছ নদী’ নামে আদিকাল থেকে ডেকে আসছেন।
পাহাড়ি এলাকার প্রকৃতি অনুযায়ী অসংখ্য ছোটবড় ঝর্ণা থেকে সৃষ্টি হওয়া ছোট ছোট পাহাড়ি নদী বা ছড়া এসে মিশেছে শঙ্খ নদীতে। এর মধ্যে থানচি উপজেলার দুলুছড়ি, পানছড়ি, লিককে, ছোট মদক, বড় মদক, সিংকাফা, থানচি ও রুমা উপজেলার রেমাক্রি ছড়া, তিনদু, পরদা, সোনাখাল, চেমাছড়া, পানতলা ছড়া, রুমা খাল, পলি ছড়া, মুরুগু ছড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার ঘেরাও ছড়া, পালং ছড়া, বেতছড়া, তারাছা ছড়া, বান্দরবান সদরের পাইন ছড়া, সুয়ালক ছড়া এবং বান্দরবান-চন্দনাইশ সীমান্তের দুপাছড়ি অন্যতম।
দুই.
চার দশক আগেও শঙ্খ নদীর দুপাশে ছিল প্রচুর ঘন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এর মধ্যে নাম না জানা কয়েক ধরণের অসংখ্য বড় বড় গাছপালা এবং বাঁশ ও বেতের নিবিড় ঘনবন ছিল অন্যতম। এই বনে বড় বড় হাতি, বাঘ, কালো ও লালচে ভালুক, বুনো শুকর, সাম্বার হরিণ, দেশি লাল হরিণ, জংলি গয়াল, বন মোরগ, মথুরা, ময়ুর, হনুমান, উল্লুক, কয়েক প্রজাতির বানর, কয়েক ধরণের বন বেড়াল, অজগর সাপসহ প্রচুর পরিমান বন্য প্রাণীর প্রচুর্য ছিল।
বর্ষাকালে শঙ্খ নদীর রূপ ছিল ভয়ংকর। প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি নদীটি উঠতো ফুলে ফেঁপে; তখন এর স্রোতধারা হতো তীব্র। কোথাও কোথাও দেখা দিতো পাহাড়ি ঢল। অনেক উঁচু থেকে এর পানি গড়িয়ে বিনা বাধায় নীচের দিকে প্রবাহিত হতো। সে সময় দুপাশের জনবসতি ও বনাঞ্চলের তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। বিস্ময়করভাবে বৃষ্টিপাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে আসতো এর স্রোতধারা।
সে সময় পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর দুকূলে পড়তো প্রচুর পরিমানে পলিমাটি। কোন ধরণের সার প্রয়োগ ছাড়াই, সেখানে অনায়াসে চাষ করা যেত মৌসুমের ধান, ডাল, শাক-সব্জি, বাদাম ও দেশি তামাক পাতা।
শুকনো মৌসুমে হ্রাস পেতো শঙ্খ নদীর গভীরতা। তখন কোথাও গলা পানি, আবার কোথাও কোমড় বা হাঁটু পানি থাকতো এ নদীতে। নদীর তলদেশে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক পাথুরে কূপের দেখা মিলতো। কূপগুলোর গভীরতা ২০ থেকে ৫০ ফুট হওয়াও বিচিত্র নয়। সেখানে পাওয়া যেত ছোট-বড় বিভিন্ন ধরণের মাছ। এছাড়া শুকনো মৌসুমে নদীতে অনায়াসে শিকার করা যেত রুই-কাতল, কালি ঘোইন্না, বেলে, গলদা চিংড়ি, শোল, মাগুর, সিং, মৃগেল ইত্যাদি।
বরাবরই শঙ্খ নদীতে চলাচল ছোট-বড় ইঞ্জিন বিহীন দেশি কাঠের নৌকা। এই নৌ যোগাযোগই ছিল পুরো বান্দরবানের যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এ নদীতে দিনে বা রাতে চলাচলের ক্ষেত্রেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময়।
তিন.
কিন্তু চার দশকে শঙ্খ নদী যেমন তার রূপ পাল্টেছে, তেমনি আমূল বদলে গেছে এর চারপাশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। একই সঙ্গে বদলে গেছে জনজীবন যাত্রা।
আটের দশকে বান্দরবান একটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এদিকে বন বিভাগ স্বাভাবিক ক্রিয়াকর্মের পাশাপাশি বান্দরবান সদরে দুটি ও লামা উপজেলায় একটি ‘পাল্প উড ডিভিশন’ নামে তিনটি বিশেষ শাখা সম্প্রসারণ করে। এর পর বন বিভাগের নেতৃত্বে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করে কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পাহাড়িদের লক্ষাধিক একর জমি বন বিভাগ দখল করতে শুরু করে। সংকুচিত হয় জুম চাষের জায়গা। ফলে একই পাহাড়ে স্বল্প সময়ে বার বার জুম চাষ করায় হ্রাস পায় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সৃষ্টি; পাহাড়ের ভূমিক্ষয়ও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বন বিভাগের নেতৃত্বে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে কৃত্রিম বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। বন বিভাগের সহায়তায় অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে বনজ সম্পদ লুটপাঠ করতে থাকে।
এছাড়া বনায়নের নামে বন বিভাগ পুরো বান্দরবানের লাক্ষাধিক একর জমিতে পরিবেশবান্ধব নয় এমন গাছপালার বাগান গড়ে তুলতে শুরু করে। এর মধ্যে ইউক্যালিপটাস, আকাশিয়া, পাইন, সেগুন ইত্যাদি গাছ অন্যতম।
এছাড়া বান্দরবানকে জেলা হিসেবে ঘোষণার পর সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় ও বনাঞ্চল কেটে দূরদূরাঞ্চলের রাস্তা নির্মাণ করতে শুরু করে।
এদিকে কেটে ফেলা পাহাড়গুলোর মাটি প্রতিনিয়তই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে ঝর্ণা ও ছড়ার মাধ্যমে মিশছে শঙ্খ নদীতে। ফলে বছরের পর বছর পাহাড়-কাটা মাটি শঙ্খ নদীতে জমা হওয়ায় দিন দিন কমছে এর গভীরতা। ভরাট হতে বসেছে শঙ্খ নদী। বর্ষাকালে তাই এ নদীর গতি প্রবাহ এখন বাধাগ্রস্থ হয়। এর দুকূলে দেখা দেয় প্লাবন।
আটের দশক থেকে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা ও নির্বাচারে বনাঞ্চল ধ্বংস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রাজনৈতিকভাবে ছিন্নমূল বাঙালিদের পাহাড়ে অভিবাসন, পাহাড় ও ভূমি ধ্বসের ফলে নদীতে মাটি ভারাট বৃদ্ধি–ইত্যাদি কারণে এখন এর পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক নির্মাণের ফলে বর্ষাকালে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ হচ্ছে বাধাগ্রস্থ। এ জন্য এখন সামান্য বৃষ্টিতে দুর্গম পাহাড়ে তো বটেই, এমন কি বান্দরবান জেলা সদরেও দেখা দেয় জলাবন্ধতা। বৃষ্টির পানি এখন আগের মতো সহজেই গড়িয়ে নেমে যায় না। শঙ্খ নদীতে নাব্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রাণ-বৈচিত্রের স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে মারাতœক বিপর্যয়।
অন্যদিকে বন বিভাগ ও অসংখ্য নিরাপত্তা বাহিনীর ছাউনি নির্মাণের ফলে মাইলের পর মাইল এলাকার বন-জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা হয়েছে। উপরন্তু এসব অতিরিক্ত জনসংখ্যার বাড়তি জ্বালানি কাঠের যোগান দিতে পুড়ছে বনাঞ্চল।
এমনি করে নির্বিচারে বন ধ্বংস করায় পাহাড়ে বাড়ছে ভূমিক্ষয়; যা শেষ পর্যন্ত নদীটিকে ভরাট করে ফলছে।
চার.
নদীর গভীরতার অভাবে এখন আর আগের মতো এর দুকূলে পলিমাটি জমে না। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নদীর দুপাশে চাষাবাদের প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার জমির উর্বরতার ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সব মিলিয়ে শঙ্খ নদীর দুপাড়ে এখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও আগের মতো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে নদীর তলদেশে মাটি ভরাট বৃদ্ধি সৃষ্টি ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধির কারণে মাঝি-মাল্লারা হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আবার বর্ষা মৌসুমে ইঞ্জিন-বোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইঞ্চিনের শব্দ দূষণে কমছে স্বাভাবিক মৎস্য প্রজনন। নদী ভরাট হতে থাকায় বিপন্ন প্রাণ-বৈচিত্রের তালিকায় রয়েছে কয়েক ধরণের মাছ তো বটেই, এমন কি শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া, পানির সাপ, পরিবেশের জন্য উপকারী পোকা-মাকড়, কয়েক ধরণের প্রাকৃতিক শাক-সব্জি।
বিচিত্র খাদ্যাভাসের কারণে আগে পাহাড়িরা এসব প্রাণ-বৈচিত্র থেকেই নিত্য দিনের আহার সংগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু এখন খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় রুমা ও থানচির মতো দুর্গম পাহাড়ি জনপদে সমতল ভূমি থেকে শাক-সব্জি আমদানী করে জনসাধারণের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
আগে শুস্ক মৌসুমে মাঝি-মাল্লারা অনায়াসে নৌ যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু শঙ্খ নদীতে অগভীরতার মাত্রা বৃদ্ধি ও সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এখন আগের এ পরিস্থিতি নেই। এখন সড়ক পথেই যাত্রীরা কম সময়ে দূর-দূরাঞ্চল সহজে যোগাযোগ করতে পারছেন।
এক দশক চারেক আগেও শঙ্খ নদীতে বর্ষার পানি সহজেই গড়িয়ে নেমে যেত। তাই নদীর পানি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে পেতো তার স্বাভাবিক স্বচ্ছতা। বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে এ নদী ছিল পানীয় জল ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের অন্যতম উৎস। আগে বর্ষাকালে খাওয়ার জন্য এ নদীর পানি শুধু ছেঁকে নিলেই চলতো। কিন্তু এখন বর্ষা বা শুস্ক মৌসুমে এ নদীর পানি আগের মতো আর নিরাপদ নয়। কিন্তু এখন নদীতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা, পানি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক স্বচ্ছতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ইঞ্জিন-বোটের সংখ্যা বাড়ায় নদীতে বাড়ছে দূষণ।
এছাড়া ব্রিটিশ–আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী এক দশক আগে শঙ্খ নদীর অববাহিকায় জুম চাষীদের তামাক চাষে উৎসাহিত করায় জুমের বদলে বেড়েছে তামাক চাষ। উৎপাদিত তামাক পাতা নদীতের ধোয়ার ফলে মাইলের পর মাইল নদীর পানি হচ্ছে দূষিত। আর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে এসব তামাক চাষের জমির রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিষ মিশছে শঙ্খ নদীতে। এছাড়া পানিতে বিষ মিশিয়ে মাছ শিকারের ফলেও বাড়ছে নদী-দূষণ।
পাঁচ.
এমন বৈরি পরিস্থিতিতে এ নদীকে ঘিরে গড়ে উঠা হাজার বছরের পাহাড়ি জনপদ বর্ষা ও শুস্ক মৌসুমে অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি নিয়েই এ নদীর পানি ব্যবহার করছেন। এর ফলে কত মাইল এলাকা জুড়ে কত জনসংখ্যা এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে কাটাচ্ছেন, প্রাণ-বৈচিত্রের ওপরেই বা এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কি মাত্রায় পড়ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও নেই।
বান্দরবান জেলা সদর ছাড়া পুরো জেলায় স্বাস্থ্য সম্মত পায়ঃ নিস্কাশন ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের কোন ধারণাই গড়ে ওঠেনি বলে সংশ্লিষ্ট পরিবেশকর্মীদের অভিমত। সরকারি বিভাগগুলোও সদিচ্ছার অভাবে সঠিকভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারেনি স্বাস্থ্য সম্মত পায়ঃ নিস্কাশন ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি । পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও রয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব। বেশিরভাগ অঞ্চলেই এখনো ঝুঁকিপূর্ণভাবে শঙ্খ নদীসহ অন্যান্য ছড়ার পানি পান এবং ঘর-গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হয়।
তবে থানচি উপজেলা সদর, রুমা উপজেলা সদর এবং বলিপাড়া বাজার এলাকায় স্বাস্থ্য সম্মত পায়ঃ নিস্কাশন ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি আগের চেয়ে এখন বেশ কিছুটা সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য সম্মত পায়ঃ নিস্কাশন ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে জনসচেতনতা।
সম্প্রতি বিদেশী, জাতীয় ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওগুলো বিদেশি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়ঃ নিস্কাশন ব্যবস্থা চালু এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবহারসহ স্থাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে। জেলা ও উপজেলা সদরের বাইরে শিক্ষা ও জনসচেতনতার অভাবে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী পাহাড়ি ও বাঙালিরা কাঁচা পায়খানা ব্যবহার, আবার অনেকে ঝোপ-ঝাঁড়ে যত্র-তত্র মলমূত্র ত্যাগ করে অভ্যস্ত।
—
তথ্যসূত্র: ১.ইউকেপিডিয়া। [লিংক], ২.জুয়ামলিয়ান আমলাই, পরিবেশকর্মী, বান্দরবান, ৩.কেওচিং কারবারি, বান্দরবান এবং ৪.এল. দৌলিয়ান বম, রুমা, বান্দরবান।
—
ছবি: শঙ্খ নদী, বান্দরবান, লেখক। মানচিত্র, পার্বত্য চট্টগ্রাম, লেখক, ইউকিপিডিয়া।
“সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডং (উচ্চতা ১০০৩ মিটার) এই জেলায় অবস্থিত, যা বিজয় বা মদক মুয়াল নামেও পরিচিত। ”
ভাই এখনো তথ্যে বড় রকমের ভুল রয়েছে। তাজিনডং ও মদকমুয়াল এক পিক না। মদক মুয়াল রেন্জের সর্বচ্চ পিক মদক টুয়াং (সাকা হাফং/ট্লাংময়)। পিক গুলার হাইট দেয়া হলো:
মদক টুয়াং: ১০৬৩ মিটার
মদক মুয়াল: ১০০৩মিটার
তাজিনডং (বিজয়): ৮৩০ মিটার।
সরকারি পেজে নদির নাম হিসাবে বগা লেকের নামও থাকে,উপরের তথ্য গুলার রেফারেন্স হিসাবে http://www.banglatrek.org বা উইকিপিডিয়া দেখতে পারেন। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য।
সবচেয়ে উঁচু পর্বত তাজিংডং (১,২৮০ মি.), মদক (১,০৫২ মি.) ও ক্রেওক্রাডং (১২৩০ মি.)
ভাই এই তথ্যের উৎসটা জানার ইচ্ছে
@Sazzad,
দুঃখিত, অনেক দেরীতে আপনার মন্তব্যটি চোখে পড়লো। খুব সম্ভবত, ওই তথ্যটি বাংলাপিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু অনেক খুঁজেও এখন ওই তথ্যটির স্বপক্ষে লিংক পেলাম না। বরং আনুষ্ঠানিক সরকারি তথ্যমতে:
[লিংক]
লেখায় সংশোধনী এনে আনুষ্ঠানিক সরকারি তথ্যটিই এখন সংযুক্ত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ধরিয়ে দেওয়ায় অনেক ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
আমার প্রিয় ভাই সংশোধনের পরও যে ভুল থেকে গেল। 🙁
বিপ্লব রহমান,
আপনি কি কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে প্রায়োগিক ভাবে সাহায্য করা যায় সে বিষয়ে একটি পোস্ট লেখার কথা বিবেচনা করবেন? হা হুতাশ ব্যতিত আর কিছু করা গেলে ভাল হত, সামান্য হলেও।
@রৌরব,
আপনার আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই।
বিনীতভাবে বলি, জনমত তৈরি করা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্যক্তিগতভাবে অনেক দিন হল, পাহাড়ের সরেজমিন সংবাদ এবং সংবাদ বিশ্লেষণ করে আমি এ কাজটি করার চেষ্টা করছি।
এ নিয়ে ই-বার্তায় আরো আলোচনা হতে পারে।
অনেক ধন্যবাদ। :rose:
শংখ নদীকে সাংগু বলতে অনেককেই শুনেছি।
আপনার লেখায় দেখতে পাচ্ছি যে তাজিংডং এর উচ্চতা কেওকারাডং থেকে বেশী দেখাচ্ছেন। সবসময়ই পড়ে আসছি যে কেওকারাডং দেশের সর্বোচ্চ পর্বত।
ভাল লাগল লেখাটা। জাফর ইকবালের টি-রেক্সের সন্ধানে ছবি শংখ নদী্র পটভূমিকায় করা। যদিও সেখানে ক্যামেরার কাজ তেমন ভাল মনে হয়নি, নদীর দৃশ্য তেমনভাবে ফোটেনি।
কাহিনী সেই একই, পরিবেশের চিন্তা না করে মানুষের দস্যূ বৃত্তি। চট্টগ্রামের অন্য নদীগুলি যেমন বোয়ালখালি, হালদা, নাফ এগুলি নিয়েও সচিত্র লিখুন।
@আদিল মাহমুদ,
:yes: :yes:
@বিপ্লব রহমান,
পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কিছু যায়গা আছে অপূর্ব সুন্দর, কিন্তু সাধারন মানুষের যাবার উপায় নেই। আগে খারাপ লাগত ভেবে, আহা এত সুন্দর সব যায়গা বাড়ির কাছে অথচ মানুষ উপভোগ করতে পারছে না। এখন মনে হয় ভাগ্যিশ পারছে না, নইলে দেখা যেত যে সহসা সেসব যায়গাও গায়েব হয়ে হাইরাইজ গজিয়ে উঠছে।
@আদিল মাহমুদ,
এ ক ম ত। দুর্গমতাই পাহাড়ের সৌন্দর্য্য বেশ খানিকটা রক্ষা করে চলেছে। :rose:
আপনি বোধহয় ‘নাব্য’ বলতে এখানে নদী ভরাট হওয়া বুঝিয়েছেন, কিন্তু আসলে ওটার সঠিক অর্থ হচ্ছে: ‘নৌচলাচলের উপযোগী’। একই অর্থে আপনি এই লেখাতেও সেটা ব্যবহার করেছেন।
তাই, ওপরে শব্দটির ভুল ব্যবহার সম্পর্কে আপনার সদয় দৃষ্টিআকর্ষণ কামনা করি।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
মারাত্নক ত্রুটিটুকু সংশোধন করেছি।
আপনার সহযোগিতার জন্য সবিশেষ ধন্যবাদ। :yes:
এ অংশটা আরেকটু বিস্তারিত করবেন? কি অবস্থা? হাতি-টাতি আর আছে?
@রৌরব,
অন্যদিকে,
শঙ্খ নদীর বৈরি দশায় এর দুপাড়ের নিবিড় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণীও উজাড় হতে বসেছে। তবে এখনো মায়ানমার ও মিজোরাম সীমান্তবর্তী গহিন অরণ্যে বুনো হাতি, বাঘ, ভালুক ও গয়ালের দেখা মেলে। আমি নিজেই বছর তিনেক আগে বান্দরবানের মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় টংকাবতীর পাহাড়ে বুনো হাতির সাক্ষাৎ পেয়েছি।
আপনার আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
আপনার লেখায় সত্যই এমন অনেক কিছু থাকে যা মানুষ কে মুগ্ধ করে।
@আফরোজা আলম,
পাঠের জন্য ধন্যবাদ। :rose:
বান্দরবন জেলা সম্পর্কে ধারণা পেলাম। তবে কয়েকটি বিষয় জানতে ইচ্ছে করে-
বান্দরবন জেলায় মোট থানা কিম্বা উপজেলা কয়টি?
‘কালি ঘোইন্না’ মাছ সম্পর্কে কিছু জানানো সম্ভব কিনা?
@মাহফুজ,
শঙ্খ নদী সর্ম্পকিত প্রশ্ন পেলে ভাল হতো।
তবু বলছি: সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষংছড়ি, লামা, আলিকদম–এই সাতটি থানা/ উপজেলা রয়েছে বান্দরবানে। [লিংক]
কালি ঘোইন্না মাছটি খানিকটা টাকি মাছের মতো দেখতে, অতি সুস্বাদু।
অনেক ধন্যবাদ। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
তবে ‘শঙ্খ’, ‘সাঙ্গু’ (Sangu) এবং ‘রিগ্রাই খিয়াং’ অর্থাৎ ‘স্বচ্ছ নদী’ নামের মধ্যে কোন ভাষাতাত্ত্বিক মিল অথবা একই ধরণের কোন উপকথা বা লোকগাঁথা রয়েছে কি না খুঁজে দেখা দরকার।
আমার কাছে ‘শঙ্খ’ এবং ‘স্বচ্ছ ’ শব্দ দুটির মধ্যে কেমন জানি অন্ত্যমিল লাগছে।
@গীতা দি,
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
রিগ্রাই খিয়াং নদী নিয়ে মারমা ভাষা লোককথা অনেক আছে। কিন্তু কোথাও ‘শঙ্খ’র অস্তিত্ব নেই। আমার মনে হয়, সব আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলকে বাঙালিকরণের প্রক্রিয়াতেই নদীর নাম বাংলায় শঙ্খ। স্মরণ করিয়ে দেই, বেশ কয়েক বছর আগে সরকার ‘তাজিনডং’ পাহাড়ের নাম বদলে ‘বিজয়’ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদিবাসীদের প্রতিবাদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। … :yes:
@বিপ্লব রহমান,
সংখ্যাগরিষ্ঠরা সব সময়ই আগ্রাসনে উদ্যত। বাংলাদেশে কিছু জেলা , উপজেলা ও স্থানের নামেও এর প্রমাণ। যেমন, জয়দেবপুর হয়েছে গাজীপুর, বিক্রমপুর হয়েছে মুন্সীগঞ্জ।ভারতে বোম্বে হয়েছে মুম্বাই আর মাদ্রাস হয়ে গেছে চেন্নাই।
@গীতা দি,
🙁
@বিপ্লব রহমান,
আমার মনে হয় আশির দশক Mean করেছেন। আটের দশক এভাবে বলে কিনা আমার জানা নেই। দারূণ তথ্যবহুল লেখাটি উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আরও একটি কথা
Myanmar – উচ্চারণটা কোথাও কোথাও মিয়ানমার দেখেছি। আপনারটা ঠিক ধরে নেব। মুক্তমনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আপনার চেয়ে কেউ বেশী জানে বলে আমি জানি না।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
‘আশির দশক’ বা ‘আটের দশক’ একই কথা। ‘আটের দশক’ বলাটাই এখন চলতি রীতি।
বাংলায় ‘মায়ানমার’ ও ‘মিয়ানমার’ দুটোই চলছে। বিবিসি বাংলা অবশ্য এখনও ‘বার্মা’ বহাল রেখেছে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। 🙂
আর এমনই উন্নয়ন ঘটে চলেছে দেশ জুড়ে। নদীর দেশ বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। আমরাই মেরে ফেলছি। সমতল থেকে আমাদের আগ্রাসী থাবা অপবিত্র করেছে পাহাড়। পাহাড়ের নদী, সবুজ।
@সন্ন্যাসী পাঠক,
এ ক ম ত। অপরিকল্পিত নগরায়ন আর লোভি মানুষেরা সব কিছু গিলে ফেলছে। :deadrose: