আজ থেকে প্রায় বত্রিশ বছর আগে ঢাকা কলেজের এক নবীন শিক্ষক পা বাড়িয়েছিলেন নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, অনেকেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। কিন্তু উচ্চাভিলাষী এই অধ্যাপক স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষের মাঝে স্বপ্ন সৃষ্টি করার, তাদের হৃদয়ের মাঝে থাকা আগুনকে হাওয়া দিয়ে আলো তৈ্রি করার এবং আলোকিত মানুষ তৈ্রী করার। তাই তিনি “আলোকিত মানুষ চাই” এই প্রত্যয় নিয়ে গড়ে তোলেন “বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র” নামে একটি সংস্থা।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশকে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আলোকিত মানুষ প্রয়োজন। আর তিনি জানতেন বই ছাড়া আর কোন জিনিস মানুষের মাঝে গভীর চিন্তা, দর্শন, ঊপলব্ধি, অনুভূতি, মননশীলতা ও বৈশ্বিক চেতনা তৈরী করতে পারেনা। তাই তিনি একটি পাঠাগার স্থাপনের চিন্তা করলেন যেখানে বাংলাদেশের এবং বিশ্বসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কিছু বই সদস্য পাঠকদেরকে পড়ার সুযোগ দেয়া হবে। এজন্য প্রথমেই দরকার অর্থ। আর পাঠাগারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা কতটা দূরুহ কাজ তা সবারই জানা থাকার কথা। কিন্তু অদম্য প্রাণশক্তির অধিকারী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই ব্যাক্তি নিজ উদ্যোগে মাত্র ৩৫ টাকা দিয়ে কিছুসংখ্যক বই কিনে পাঠাগারের কাজ শুরু করলেন। তার এই কাজ অনেকের কাছে ‘পাগলামি’ বলে পরিচিত হয়েছিল। যা হোক, বই তো কিছু কেনা হল কিন্তু পাঠকের অভাব রয়েই গেল। তাই তখন তিনি পাঠকদের আসার অপেক্ষা না করে নিজেই পাঠকের দোরগোড়ায় যাবার উদ্যোগ নিলেন। এভাবেই শুরু হল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান পাঠাগার যা বাস এ করে বই নিয়ে গেল ঢাকা শহরের কিছু এলাকার কিছু নির্দিষ্ট জায়গায়, একেবারে পাঠকদের হাতের নাগালে। এধরণের ভ্রাম্যমান পাঠাগার এদেশে ছিল সেই প্রথম এবং এখনো একমাত্র। এভাবে পাঠকদের কাছাকাছি চলে যাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে পাঠকসংখ্যা বাড়তে থাকল। তিনি এ কার্যক্রমের আওতায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরও নিয়ে এলেন। স্কুলের ৬ষ্ঠ-১২শ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা শুধুমাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে সদস্য হয়ে প্রত্যেক শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত বইগুলো পড়তে পারে। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ২২০০ স্কুল-কলেজ এই কর্মসূচীর আওতাভুক্ত এবং এই সংখ্যা এ বছর ১০,০০০ এ উন্নীত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে তাঁর শুরু করা বিপ্লবের ছোট্ট অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। সেদিনের সেই ৩৫ টাকা দিয়ে শুরু করা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভবনে এদেশের পড়ুয়া শ্রেণীর জন্য দেশের ও বিশ্বের উল্লেখযোগ্য হাজারো বই সন্নিবেশিত এক স্বপ্নরাজ্য তৈ্রি করছে।
যিনি এই অসাধারণ কাজটি শুরু করেছিলেন, এগিয়ে নিয়ে এসেছেন এ পর্যন্ত, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে যার নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তিনি হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় লেখক স্যার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার খ্যাতি তথা ‘স্টারডম’(স্যারের ভাষায়) দিয়ে তিনি এই কেন্দ্র পরিচালনা করেছেন এর শুরুর দিনগুলোতে। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফল হিসাবে একদা ‘পাগলামি’ বলে পরিচিত এ কর্মসূচী আজ শুধু দেশের অসংখ্য পাঠক ও সাহিত্যিক মহলেই নয় বরং আন্তর্জাতিক মহলেও ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মাঝে সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করার জন্য এবং বাংলাদেশের ও বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম বইগুলো পড়ার সুযোগ করে দেবার জন্য আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সৃজনশীল যোগাযোগ বিষয়ক কলা (Journalism, Literature and the Creative Communication Arts)ক্ষেত্রে ৯৭তম Ramon Magsaysay Award দেয়া হয় ২০০৪ সালে। আর ২০০৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র অর্জন করে ইউনেস্কোর Jan Amos Comenius Medal.
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কয়জন আলোকিত মানুষ তৈ্রি করতে পেরেছে জানিনা কিন্তু আমি এই সংস্থাটির প্রতি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রতি চির শ্রদ্ধাশীল এবং কৃতজ্ঞ। কারন এর স্কুল কর্মসূচী আমার সামনে বই পড়ার অবারিত সুযোগ করে দিয়েছিল সেই সময়ে যখন আমার বাড়িতে পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোন বই(যা অধিকাংশ মা-বাবার কাছে অবশ্য পরিত্যাজ্য ‘আউট বই’ হিসেবে পরিচিত)পড়া ও কেনা নিষিদ্ধ ছিল। সেই সময়ে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে রীতিমত অমূল্য (!!) ১০ টি টাকা দিয়ে নিজের জন্য নানা রুচির ও স্বাদের বই অসাধারণ সব বই পড়ার অমূল্য সুযোগ কিনে নিয়েছিলাম। বস্তুত আমার অনুভূতি, চিন্তা, মূল্যবোধ ও উপলব্ধির যতটুকুই বিকাশ হয়েছে তার ভিত্তি ছিল বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সেই অমূল্য সুযোগ। (অবশ্য কত রকম উপায়ে বাবা-মাকে ফাঁকি দিয়ে তাদের মার ও বকার হাত থেকে বেঁচে গল্পের বই পড়া যায় এই বুদ্ধিটির বিশেষ বিকাশ ঘটেছিল!) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুল কর্মসূচীতে প্রতি শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট বইগুলোর উপর নির্দিষ্ট সংখ্যক সপ্তাহ পরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং এর ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার দেয়া হয় যা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথমবার পুরস্কার পাওয়াতে যতটা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম আম্মুর ধারণার কিঞ্চিত পরিবর্তনে যে গল্পের বই পড়ে কিছুটা হলেও লাভ হয়েছে! আর আম্মু যখন দেখল যে আমি একাই নিজের পড়া-লেখা নষ্ট (!) করিনি, আরো লাখো ছেলে-মেয়ে এই কর্মসূচীর সাথে জড়িত। এরপর থেকে আব্বু গল্পের বই পড়ার জন্য বকা দিত তখন আম্মু মাঝে মাঝে আমার পক্ষ নিত। আর আমিও প্রতি বছর সদস্য হয়ে বই পড়তে থাকলাম এবং পুরস্কার পেতে থাকলাম। এর পরে স্কুলের এক বইমেলায় বই কেনার জন্য আম্মু আমাকে টাকা দিয়েছিল, আর একবার আমাকে একটা ‘তিন গোয়েন্দা’ কিনে দিয়েছিল! আজ যখন আমি প্রতি মাসে কয়েকটা করে বই কিনি আর আমার আম্মু আমার বইপত্র গুছিয়ে রাখে তখন আমি আমার ছোটোবেলার দিনগুলোর কথা, আম্মুর দেয়া সেই বইয়ের কথা এগুলো মনে করি আর আবারো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতি কৃ্তজ্ঞতা জানাই, স্যারকে শ্রদ্ধা জানাই। কিছুদিন আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রের সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে স্যারকে যখন আমার মায়ের এই পরিবর্তনের কথা বললাম তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন।
আজ ২৫ শে জুলাই, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের জন্মদিন। এই অসাধারণ স্বপ্নবাজ মানুষটিকে তাঁর জন্মদিনে জানাই অশেষ শুভকামনা এবং শ্রদ্ধা। তিনি আলোর স্বপ্ন দেখেছিলেন, আর আজ তার স্বপ্নের আলো ছড়িয়ে পড়ছে সকল আলোকিত ও আলোকপ্রত্যাশী মানুষের মাঝে, এ আলো আরো ছড়াক এই কামনা করি।
তিনি শুধুই স্বপ্নবাজ বা আলোকিত মানুষ নন, স্বপ্নবাজ মানুষ তৈরীও করতে জানেন। বাংলাদেশেও যে খুব বড় ধরনের উদ্যোগ ছাড়াই অনেক কিছুই করা সম্ভব তার উদাহরন তিনি চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
বাল্যকালে টিভিতে আনন্দমেলা অনুষ্ঠান দেখা দিয়ে ওনার সাথে প্রথম পরিচয়। এখনো চোখে ভাসে সেসব অনুষ্ঠানের টুকরো টুকরো স্মৃতি। আমারো মনে পড়ে কলেজের প্রথম বর্ষে প্রথম কিছুদিন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যেতাম। ঢাকা কলেজ থেকে বাংলা মটর হেটেই চলে যেতাম। ঢাকা কলেজে ছেলেপিলে ক্লাস করত না,সব পালিয়ে নিউ মার্কেটে চলে যেত। শুধু এই একজন স্যার এর ক্লাসে অন্য সেকশন,এমনকি অন্য কলেজ থেকে পর্যন্ত ছেলেপিলের আমদানী হত। এমনই যাদুকরী বাচন ভংগিমা তাঁর।
ওনার লেখা চমতকার কিছু বইও আছে। কিছুদিন আগে ওনার আত্মজীবনি মূলক লেখা “নিষ্ফলা মাঠের কৃষক” পড়েছিলাম। দারুন একটি বই। ঐ বই এ স্যার এর বাল্যকালের একটি ঘটনায় অভিভূত হয়ে এই লেখাটি লিখেছিলাম।
লেখিকাকে ধন্যবাদ স্যারকে নিয়ে চমতকার এই লেখাটি উপহার দেওয়ায়।
@আদিল মাহমুদ,
আপ্নে তো দেখি ওই পাড়াতেই নিয়মিত হয়ে গেছেন। এই দিকেও এইরকম কিছু ছাড়েন। ওইদিকে লেখা দিয়ে এইখানে খালি মন্তব্যের ঘরে পয়েন্টার দিলে হইবেক?
@অভিজিৎ,
গালি গালাজের ফ্রী লাইসেন্স নীতিমালায় আগে যোগ করেন 😀 ।
লীনা, ধন্যবাদ আপনাকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে লেখার জন্য। অনেকদিন পরে অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলেন। ক্লাস সেভেন থেকে কলেজ পর্যন্ত নিয়মতই যেতাম সেখানে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে মেম্বার হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই কে যেন আমাকে ( মনে হয় আমার মা) আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি নাম জিজ্ঞেস করলে বললাম, ‘আমার নাম বন্যা’। আমার বাড়িতে সবাই আমাকে ব-অ-ন্যা নামেই ডাকতো, সেভাবেই বললাম। উনিই প্রথম আমাকে উচ্চারণটা ঠিক করে দিয়ে বলেছিলেন ব-অ-ন্যা তো নয়, বলতে হবে ‘বোন্যা’, এবং ব্যাকরণগতভাবে কেন এখানে অ না হয়ে ও হবে সেটাও বুঝিয়ে দিলেন।
বাংলা মটরের সেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আরও কত যে স্মৃতি আছে! ভিকারুন্নেসার চার দেওয়ালের জেলখানা ভেদ করে কিছুই করা যেত না, তার উপর মায়ের কড়া নজর তো আছেই (তা তে করে যে কোন প্রলয় আটকানো গেছে তা কিন্তু নয় 🙂 )। তাই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রেই ‘নিষিদ্ধ’ অনেক কিছু সারতে হত ।
লীনা রহমানকে ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে চমৎকার লেখাটির জন্য। ঢাকা কলেজে পড়ার সময় কোন ক্লাসই করতাম না, তারপরেও যে ক’জন শিক্ষকের লেকচার মাঝে মধ্যে শোনার চেষ্টা করতাম তার মধ্যে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ছিলেন অন্যতম। তিনি অবশ্য পড়ানোর সময় কখনোই সিলেবাসের মধ্যে থাকতেন না। যত রাজ্যের মজার মজার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতেন। ফলে তার লেকচার সব সময়ই ছিলো ছাত্রদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, আর তাই শ্রেনীকক্ষ থাকতো ‘হাউসফুল’। আমি সৌভাগ্যবান যে, যে সময়টাতে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, ঠিক সেই সময়টাতেই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর মতো শিক্ষক পেয়েছিলাম। ছোট্ট সময়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
লেখার পাশাপাশি ছবিগুলোও দারুণ।
@অভিজিৎ,
আমি এই মানুষটিকে ছোটবেলায় অনেক শ্রদ্ধা করতাম আমাকে তথা হাজারো ছাত্র-ছাত্রীকে সহজে এত বই পড়ানোর কারণে। যত বড় হয়েছি তাকে শ্রদ্ধা করার কারণ হিসেবে আরো কতগুলো বিষয় যুক্ত হয়েছে। সেগুলো হল তাঁর আলোকিত মানুষে বোঝাই আলোকিত সমাজ ও দেশ গড়ার চেষ্টা, কাজের প্রতি অক্লান্ত নিষ্ঠা, সর্বোপরি তাঁর অসাধারণ বাকপটুতা। আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল যে বাংলাদেশে একজনের মানুষের বক্তৃতা যদি টিকেট কেটে শুনতে হয় তাও সে শুনবে। আর তিনি হচ্ছেন স্যার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। আর কথাটা যে কতটা সত্যি তা যারা তাঁকে কথা বলতে শুনেছেন তারাই ভাল জানেন।
কিছুদিন আগে পাঠচক্রের সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে সামনাসামনি তার সাথে কথা হল। কত যে খুশি হয়েছিলাম! এরপর আরেকদিন পাঠচক্রের কাজে গিয়ে অনেকক্ষন স্যারের কথা শোনার সুযোগ হয়েছে। খুব ভাল লেগেছিল।
@লীনা রহমান,
আমি সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন যে একবছর তাঁর বক্তৃতা ফ্রী শুনতে পেরেছিল। তিনি আমার বাংলার অধ্যাপক ছিলেন কলেজে। হ্যাঁ, তাঁর অসাধারণ বাকপটুতা ছিল তো বটেই, তার সাথে ছিল মার্জিত ও সুশীল ভাষা। এক দুর্লভ সমন্বয়। টিভি তে ধাঁধার অনুষ্ঠান পরিচালনাতেও তিত্নি অসাধারণ কৃতিত্ব ও জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিলেন। সব কিছুতেই তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী এপ্রোচ ছিল। বয়স যেন তাঁর মন ও দেহকে ছুঁতে পারছে না।
লীনা রহমান,
আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভূবন ভরা রবীন্দ্র সংগীতটি বাজিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিটি প্রতি শুক্রবার দিন আমাদের মণিপুরী পাড়ায়( ফার্মগেট সংলগ্ন ) আসে। আর আমি হাতের কাজ ফেলে একটু বারান্দায় উঁকি দিয়ে আসি। আফসোস লাগে ছোটবেলায় এ সুবিধাটি পাইনি বলে। পরক্ষণেই কৃতজ্ঞতা জানাই আলোকিত মানুষটিকে তাঁর স্কুল কার্যক্রমের মাধ্যমে আমার ছেলেমেয়ের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে দিয়েছে বলে।
ধন্যবাদ আপনাকে আর জন্মদিনের শুভেচ্ছা আলোকিত মানুষ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে ।
ভালো লাগলো।
শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ছোটবেলা থেকেই আমার খুব প্রিয় মানুষ। তাঁকে নিয়ে এ পোস্ট দেয়ায় লীনা রহমানকে অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভালো লাগল লেখাটা পড়ে। সায়ীদ স্যারের প্রতি থাকল অন্তর থেকে শ্রদ্ধা। তিনি বলেছেন “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়”,এতো সুন্দর কথা খুব মানুষই বলতে পারেন।
লেখাটা ভাল লাগল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অবদান আসলেই বলে বোঝানো যাবে না। আমিও ছয় বছর ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলাম। এখনো হঠাৎ-হঠাৎ চলে যাই বাংলামটর। ছাদে চা খেতে আর বিক্রয়কেন্দ্রের নতুন বইগুলো উল্টে-পাল্টে দেখতেই ভাল লাগে। তবে জ্ঞান-বুদ্ধি শুন্য পর্যায়ের বলে পাঠচক্রগুলোতে এন্ট্রি নিতে সাহস পাই না।
যাই হোক আসল কথাটা বলে যাই, শুভ জন্মদিন স্যার! বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র হোক চিন্তাশীল সমাজ গড়ার কেন্দ্রবিন্দু।
@পথিক,
ভাইয়া আমার মতন নাদান মানুষ যখন সাহস করে ফেলেছি আপনিও চলে আসেন। স্যার এবং আরো অনেকের সাথে কথা হবে যা আমাকে অনেককিছু জানতে, বুঝতে ও অনুপ্রাণিত হতে সাহায্য করবে এই লোভে আবেদন করেছি। জানিনা নির্বাচিত হব কিনা।
আহমদ ছফার কথা খুব বেশি জানিনা তবে যতদূর জানি উনিও অসাধারণ একজন মানুষ। অনেক দুঃখ হয় যখন ভাবি হূমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফাসহ আরো কত অসাধারণ মানুষের সাথে দেখা হয়নি, কথা হয়নি, হবেনা। বই আসলেই অসাধারণ একটি জিনিস যা আমাদেরকে তাদের সাথে পরিচয় করায়, তাদেরকে জীবনে ও চিন্তায় জড়িয়ে ফেলার, চিন্তা, মনন ও মহত্তকে অনুভব করবার সুযোগ করে দেয়।
স্যার যে কাজটি করেছেন এত নিষ্ঠা ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে সেরকম কাজ় করা করা সত্যিই অনেক কঠিন। আমার পুরোদমে বই পড়ার শুরু ও এগিয়ে চলা এই সংস্থার সাথেই। তাই ছোটবেলা থেকেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে ভালবাসি আর স্যারকে, স্যারের স্বপ্নকে শ্রদ্ধা করি।
স্যারের জন্মদিনে শুভকামনা রইল। :cake:
@লীনা রহমান,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ‘আলোকিত মানুষ’ সৃষ্টির কারিগর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের অবদান নিয়ে লেখার জন্য। :rose:
আলোকিত মানুষ হতে না পারলেও আটের দশকে কলেজে পড়ার সময় কোনো এক বন্ধুর সৌজন্যে বাংলা মটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রর সন্ধান পাই। সেখানের পাঠাগারের সদস্যপদ নিয়ে বই পড়ার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছিলাম ‘চীরায়ত পাঠচক্র’ নামে চমৎকার একটি পাঠচক্রে। এই পাঠচক্রটি স্যার নিজেই চালাতেন। আরো পরে কবিতার পাঠচক্রেও কিছুদিন ঘোরাফেরা করেছিলাম।
এখনো মনে আছে, একদিন এক পাঠচক্রে স্যারকে জানিয়েছিলাম, ‘প্রেক্ষিত’ বলে বাংলাভাষায় কোনো শব্দ নেই। মূল শব্দটি হবে–পরিপ্রেক্ষিত। স্যার সংসদ, চলন্তিকা, বাংলা একাডেমী ঘেঁটে, সামান্য এক কলেজ পড়ুয়ার কথায় নিশ্চিত হয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রর সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রেক্ষিত’ এক কথায় বন্ধ করে দেন। …
অনেকদিন হলো, ওই লাইব্রেরি চত্বরে আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু যখনই বাংলা মটরের ওই গলিটি পেরিয়ে যাই– এক মুহূর্তে মনে পড়ে খদ্দর পাঞ্জাবী পড়া স্যারের অমিত বাণী, নতুন বইয়ের গন্ধ, টুকরো সংলাপ, হাসি-গান-আড্ডা, আর আহমদ ছফা।…
@বিপ্লব রহমান, আচ্ছা আহমেদ ছফার সাথে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কি কোন সম্পর্ক ছিল? আহমেদ ছফা কি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আসতেন? আমি আহমেদ ছফার অনেক বইই পরেছি কিন্তু কোথাও এ ব্যাপারের কোনো উল্ল্যেখ দেখিনি।
ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্যে।
এক এক জন স্বপ্নবাজ মানুসের স্বপ্ন হাজারও মানুস কে স্বপ্ন দেখাতে উদবুদ্ধ করে। সুসমাজ গঠনে আপনার স্যারের মত মানুসদের ভুমিকা কোন নামি দামি সমাজ সংস্কারক হতে কোন অংশে কম না।
আজ স্যার আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর জন্ম দিনে ওনার সুস্বাস্থ কামনা করি।