একদিন যতীন সরকার নৌকা বিলাসে গমন করেন। তথায় তিনি পুঁজিবাদের নিষ্ঠুরতা কড়ায়-গন্ডায় অবলোকন করেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়। মাঝি নৌকা চালায়। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে। নৌকার মালিক নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। দিন শেষে টাকা আসে। পোলাও-মাংস খায়। বৌয়ের গালে চিমটি কাটে। আর বোকা মাঝি বৌয়ের সাথে পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তাভাত খায়।

বছর কয়েক আগে বাংলা একাডেমী কিংবা একুশের পদক তালিকায় যতীন সরকারের ছবি। ভিমড়ি খাই। গায়ে চিমটি কাটি। চোখে গুটি কয়েক পলক দেই। তালিকায় নাম দেখে বুঝি চশমা পাল্টানোর সময় এখনো হয়নি। মুখ দিয়ে বেরোয় – আরে, এতো যতীন সরকারই বটেন। কিন্তু ধূতি কোথায়? মনে হয় পাজামা জাতীয় একটা কিছু!

যুক্তিবাদী অনর্গল বক্তা হিসেবে ময়মনসিংহে যতীন সরকারের খ্যাতি আকাশচূম্বী। নাসিরাবাদ কলেজ থেকে অবসর নিয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিটি এখন নেত্রকোনা পৈত্রিক আবাসে নিবাস করছেন। অতি সাধারণ কাপড়ের সাদা পাঞ্জাবী, সাদা ধূতি আর পায়ে কালো ফিতাযুক্ত চপ্পল, মাথা ভর্তি চুল আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, তার নীচে মোটা গুম্ফ। রাস্তায় এরকম কাউকে দেখলে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন – নমস্কার, যতীনবাবু, ভাল আছেন? দিন যায়, বছর ঘুরে। কিন্তু পাঞ্জাবী, ধূতি আর চপ্পল থাকে অক্ষয়, অবিনশ্বর। একদিন রসিকতা করে বললেন, বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র হিন্দু, কারণ হিন্দু পোষাকেই তিনি সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন। বললেন – আজকাল ধূতি খুবই ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। কেননা, একটা রঙ্গিন প্যান্টকে ফাঁকি দেওয়া সহজ, কিন্তু ধূতি অবশ্যই পরিস্কার রাখতে হয় এবং পূনরায় পড়তে চাইলে যথাস্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে।

ধূতিহীন যতীন সরকারকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল মাত্র একবার। দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭৩ সালে জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিয়ে আন্তর্জাতিকে পর্যায়ে প্রচুর দেন-দরবার চলছে। সদস্য পদের জন্য ভারত আর রাশিয়া যত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান আর চীন বিপক্ষে চেষ্টা চালাচ্ছে তার দ্বিগুন। বিতর্ক হবে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘে। তার মাস খানেক আগে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় একটি নকল বিতর্কের আয়োজন করে। ভারত, বাংলাদেশ, চীন আর পাকিস্তানের প্রতিনিধিদেরকেই বিতর্কে দেখানো হবে। অন্য প্রতিনিধিরা শুধুই বসে থাকবেন। বিতর্কে প্রধান আকর্ষণ যতীন সরকার। তিনি হলেন পাকিস্তানের প্রতিনিধি। মাথায় জিন্নাহ টুপি, গায়ে শেরোয়ানী। ধূতির বদলে এবার পাজামা। যুক্তির প্রেক্ষাপট পুরোনো কাঁসুন্দি – ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির পঠভূমি এবং বাংলাদেশ পৃথক কোন রাষ্ট্র হতে পারে না। তর্ক শুরু হল। পিন-পতন নিঃশব্দতা। ভারত আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মুখ থেকে যুক্তি কেড়ে নিয়ে মূহুর্মূহু তাদেরকে পরাভূত করতে থাকলেন যতীন সরকার। পাকিস্তানী সেনা এবং আলবদর আর রাজাকার কর্তৃক হাজার হাজার মা-বোনদের অত্যাচার আর লাঞ্ছনার চিত্র তখনও সর্বত্র বিদ্যমান। আকাশে বাতাসে মৃতদেহের গন্ধ তখনও ভাসমান। পাকিস্তানী প্রতিনিধির যুক্তিকে ঘৃনাবত প্রত্যাখান করাই স্বাভাবিক। কী অদ্ভূত! মানুষ সেই পাকিস্তানের প্রতিনিধির কথাই শুনছে গভীর আগ্রহ নিয়ে। স্পষ্ট মনে আছে, হঠাত করেই একসময় বিদ্যুত বিভ্রাট হল। যতীন সরকার দম নিলেন। শ্রোতাদের সমস্বরে চিতকার। বিদ্যুতের দরকার নেই, আপনি থামবেন না, প্লিজ।

সংগীতের যন্ত্র সেতার অনেকেই বাজিয়ে থাকেন। কিন্তু পন্ডিত একজনই – রবিশংকর। যতীন সরকার বক্তৃতায় রবিশংকর। আমার তো মনে হয়, এটাই তাঁর সনদ পাওয়ার মূখ্য একটি কারণ।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অনুষ্ঠানেই বিশেষত বামপন্থী রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদিতে যতীন সরকার প্রায়ই আসতেন। আমরা উনার ভাষন শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। আমি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর দেখলাম খগেশ তালুকদার নামে উনার একজন শিষ্য হয়েছেন। ক্ষুদ্রাকার অনুষ্ঠানে তালুকদার বক্তব্য রাখতেন আর সমাপ্তি টানতেন যতীন সরকার।

১৯৭৫ সাল। থাকি ধোপাখোলায় পেইং গেস্ট হিসেবে এক অধ্যাপকের সাথে। ইংরেজী ‘H’ আকৃতির বাসা। এক পাশে আমরা। অন্য পাশে কবি নির্মলেন্দু গুণ। স্ত্রী, নীরা লাহিড়ী তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। দুপাশের মাঝখানের কাঠিতে ‘low profile’ এ থাকে বাডিওয়ালার শ্যালক একা, কমিউনিস্ট পার্টির পাতি নেতা। মাঝে মাঝে আন্ডারগ্রাউন্ড। পার্টি থেকে অনেকেই খুঁজতে আসে। দুদুসাবকেই জিজ্ঞেস করে – এখানে দুদুসাব থাকেন? দুদুসাবের সচকিত হন – কোন গুপ্তচর নয়তো? নানাবিধ প্রশ্ন করেন। তারপর বলেন – আরে, আন্নে ইতা কিতা করচুইন! বাইরে খাড়াইয়া রইচুন! ভিতরে আইন, বইনযে। এই দুদুসাহেব এবং নির্মলেন্দু গুণের কাছে আসতেন খগেশ তালুকদার। মণীষীদের ‘বাদ’ এবং ‘বাণী’ সমন্বয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা। দুনিয়ার মজদুরদেরকে একীভূত করার অংগীকার। আমরাও আমন্ত্রণ পাই। শিক্ষকরাই পারে এই মহা মূল্যবান বাণী ছাত্রদের মাধ্যমে আপামর জনগুষ্টীর কাছে পৌঁছে দিতে। আফসোস, সেই শিক্ষকরদেরই কোন আগ্রহ নেই। হতাশ হন খগেশ তালুকদার। এঁরা “sub-human” ছাড়া আর কোন পর্যায়ে পরে না। দুদুসাব মাথা নাড়েন।

আমি যতীন সরকারের শ্বশুর বাড়ীতে সাবলেট থাকি মাস তিনেক ১৯৭৬এ। সেই সূত্রে যাতায়াত চলত অনেক দিন। ১৯৮০ দশকে একদিন যতীন সরকারের সাথে ওখানেই দেখা। মনের মত একটা ঘটনার সন্মূখীন হয়েছেন ইদানীং। পুঁজিজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার নিষ্ঠুরতার চাক্ষুষ প্রমাণ এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে!

যতীন সরকারের নৌকা বিলাস। ছৈএর নীচে বসে আছেন। মাঝির সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। মাঝিটি দৈনিক ৮০ টাকা কামায়। তার ৫০ টাকা মালিককে দিয়ে আসছে বিগত পাঁচ বছর যাবত। তাজ্জব ব্যাপার। এক হাজার টাকার নৌকা। যতীন সরকার হিসেব করলেন। তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। তারপরও নৌকাটি মালিকের রয়ে গেছে। বোকা মাঝিটির এ নিয়ে কোন অনুযোগ নেই। আরও তাজ্জব ব্যাপার।

অনুমান করি, আরও একটি তাজ্জব ঘটনা যতীন সরকারের অগোচরে ঘটে গেল। তিনি ছৈএর ছায়ায় আরামে বসে আছেন। জলরাশির কলতান কর্ণকোহরে প্রবিষ্ট হচ্ছে। মুগ্ধ বিস্ময়ে জলে ঢাকা বাংলার অপরূপ রূপ দর্শণ করছেন। গায়ে লাগছে মৃদু হাওয়া। বাইরে রোদ্রভরা আকাশ নীল হয়ে আছে আকাশে আকাশে। সামনে উপবিস্ট মাঝি্। মাঝির টাকু মাথা, নাক ও মুখে ঘাম। গামছা দিয়ে মুচ্ছে। যতীন সরকার ভাবে উদ্বেলিত হয়ে ঋষিবাক্য বর্ষণ করে যাচ্ছেন। তিনি একবারও বলেন নি – আমি কমিউনিস্ট। সব সময় তোমাদের নিয়ে বক্তৃতা করি। জনতা আমার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত নিমিলেষ নয়নে শুনে। আমার বক্তৃতায় শ্রোতাদের চোখ জলে ছলছল করে। হে মাঝি, তুমি ছৈএর তলায় এসে বস, হাওয়া খাও। আর আমি তোমার বৈঠা বাই। তিনি তা করেন নাই।

জ্ঞানী মানুষের জ্ঞানের কথায় মাঝিটি মুগ্ধ। স্যারটি খাঁটি কথা বলেছেন। শরীরের রক্ত জল করা পয়সা। এক হাজার টাকায় কেনা নৌকার জন্য পাঁচ বছরে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। তার পরেও নৌকাটি মালিকেরই রয়ে গেল! তিন হাজার টাকা দিয়ে সে নিজে তিনটি নৌকা কিনতে পারত।

স্বপ্নের মত মনে হয়। যতীন সরকার দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। তার নিজেরও স্বপ্ন ভাংগে। কথা ঠিক। কিন্তু মালিক যদি নৌকাটি না কিনে ব্যাংকে রাখতেন! তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হতেন। তিন হাজার পেতেন না। কিন্তু আমার ক্ষতি তো হত ষোল আনা। মালিক আরো দুটো নৌকা কিনে জলে নামিয়েছে। ঐ নৌকার মাঝি দুটোর অবস্থাও হত তথৈবচ। মালিক হাত-পা গোটালে তার লাভ কমে যাবে। পোলাও-মাংস না খেয়ে মাছ-ভাত খাবে। কিন্তু আমার পান্তাও মিলবে না। সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হব আমরাই।

সমাজতন্ত্রী আর কমিউনিস্টদের এটি এক ধরণের টানেল ভিশন বা জ্ঞানপাপী দৃষ্টিভংগী। সত্যটি চেপে রাখবেন। মানুষের ভীড়টা যেখানে বেশী, যে কথাটি তারা শুনতে চায়, যেটা বললে ভোট ও বাহবা দুটোই মিলবে, এঁরা সেটাই বলবেন। আগামীতে এরা গোল্লায় যাবে, যাক। পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রচুর “বাদ”, “বাণী” আর তত্বকথার অভাব নেই। সেগুলোকেই পুঁজি করে পুঁজিবাদ বিরোধী মগজ ধুলাইএর যত কথা বলা যায়, বল। সহজে হিরো হওয়ার এটাই মোক্ষম পথ। উচ্চবিত্তদের চেয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সংখ্যাই বেশী দুনিয়াতে। ফলে বাহবা পাওয়ার জায়গা এখানেই। পূঁজিবাদ ধ্বংশ হলে পুঁজিবাদীদের চেয়ে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেটি এখনই নয়। এখনকার পুঁজি যা আছে তা নিঃশেষিত হবে একটা প্রক্রিয়ায়। সময় লাগবে। আপাতত ঝুকি নেই। গলাবাজি চালিয়ে যাও।

বাংলাদেশে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী মালিকগন গ্রাম-গঞ্জের নিরীহ ছেলে-কিম্বা মেয়েদের সামান্য কিছু বেতন দিয়ে তাদের রক্ত চুষে নিজেরা কারি কারি টাকা বানাচ্ছেন। এর মধ্যে ভূড়ি যুক্তি প্রমাণ খাড়া করা যাবে। কথাটা এভাবে বললেই বাহবা পাওয়া যাবে। কিন্তু কথাটা অন্যভাবেও বলা যায়। তারা টাকা না বানালে স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হাজার কর্মীরা চাকুরী পেত না। কিন্তু তাতে কী? কৃষি জমিতে কাজ করত। তা ঠিক। কিন্তু আধা শিক্ষিতরা করবে না। তা ছাড়া ইন্ডাস্ট্রীতে রক্ত জল করে যে পয়সাটি পায় তা মাঠে কাজের চেয়ে বেশী। সে জন্যই ভিটাবাড়ী ছেড়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ভীড় করে। মালিকরা আরও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি করে আরো কারি কারি টাকা বানাক। ইন্ডাস্ট্রীতে দেশ ছেয়ে যাক। কর্মীরা বেতন নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ পাবে। তখন ওদের পেটেও চর্বি জমতে শুরু হবে। ব্লাড প্রেসার হবে, ডায়াবেটিস হবে বড়লোকদের মত।

কী হত বড়লোকরা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী বন্ধ করে দিলে? এত উদ্বৃত্ত শ্রমিক মাঠেও কাজ পেত না। এদের কিছু আবার আধা শিক্ষিত। হাই স্কুল পর্যন্ত যাতায়াত করা। মধ্যপ্রাচ্য যাবার সংগতি নেই। লাংগলে হাত দিবে না। তাহলে কি করত এরা! তপন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীতে কাজ করে। মালিকেরা কারি কারি হীরা পায়। তপন হীরা পায় না। হীরা দিয়ে সে করবেটা কী? সে মজুরী পায়। মজুরীর টাকায় বাড়ী করেছে। ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালায়। তপন জানেনা অন্যথায় কী করত সে। তাই সে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীর জিন্দাবাদ দেয়।

ধনতান্ত্রিক আর সমাজতান্ত্রিক গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। প্রাচুর্য আর বিলাসে আমেরিকা বিশ্বের শিরোমনি। আমরা তারই হাতছানিতে নিজে দেশকে পর করে প্রাচুর্যের লোভে এখানেই আস্তানা গেড়েছি। এই প্রাচুর্য নিঃশেষ হয়ে গেলে এর পর যাবটা কোথায়! ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে রাশিয়ার প্রধান মন্ত্রী ক্রুশ্চেভ জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন – কমিউনিজম উন্নত বিশ্বের জন্য। ১৯৬১ সালে ভিয়েনা সামিটে প্রেসিডেন্ট কেনেডির সাথেও কথা হয়। একই জ্ঞান বিতরণ করেন। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, গুণে এত উন্নত এই দেশ আমেরিকা। এই দেশের মানুষ কমিউনিজম বুঝে না তা কি হয়? তিনি ভবিষ্যত দেখেন। এই দেশে একদিন কমিউনিজম আসবেই। রাজনৈতিক নেতাদের যা বক্তৃব্য আর কর্মকান্ড। মনে হয় ক্রুশ্চেভ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন।

বিল গেইটস নিজে ধনপতি হয়েছেন। তাঁর ব্যবসা থেকে হাজার হাজার লোক ধনকুবের হয়েছেন। বাংলাদেশে আমার নাতির হাতে ল্যাপটপ। ভারতে আমার ভাগিনার ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ায়। সেলফোন কানেকশন দিয়ে আমার সাথে ভিডিও চ্যাট করে। আজ এ মাসির বাড়ি, কাল ও পিসির বাড়ি। এক দংগল লোকের সাথে কথা বলতে হয়। আমার সময় নষ্ট হয়, হউক। সবাই খুশী হয়। আমেরিকার সরকার যদি বলত – বিল, মাইক্রোসপ্ট বানাও ভাল কথা। তুমি কিন্তু টাকায় হাত দিতে পারবা না। ও টাকায় আপামর জনগনের হক আছে। ওর সবটাই যাবে কোষাগারে। কোষাগার জনগনের। তুমি তো বার্গার খেয়েই বড় হয়েছ। অসুবিধা কী! এখনও খাবে। বার্গার আপামর জনগনের খাদ্য। সরকার তোমার বার্গারের ব্যবস্থা করবে। আরে মিয়া, তোমার টাকা সরকারী কোষাগারে আসছে – এটাই তো দেশ প্রেম। দেশের সেবা বড় সেবা।

মাথায় এই খড়্গ থাকলে বিল নিশ্চয় হাতপা তুলে বসে থাকত। তখন দুনিয়াতে মাইক্রোসপ্ট আসত না। কিউবা বা ভেনিজুয়েলা আমাদের স্বপ্নের দেশ হয়নি। আমেরিকাও হত না। আমরা দেশত্যাগী হতাম না। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীও হত না।

ইদানীং এদেশে গনতন্ত্রের নামে যা হচ্ছে তা রীতিমত ভীতিপ্রদ। টেলিভিশনের সংবাদ – সরকারের ৭০% Revenue আসছে দেশের ৫% ধনপতির পকেট থেকে। কিন্তু ভোটের বেলায় সবাই কমিউনিজমের কাতারে। যিনি বেতনের এক বিরাট অংশ ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার একটি ভোট। যিনি সরকারের খেয়ে পেটে চর্বি জমাচ্ছেন তাঁরও একটি ভোট। দেশে নতুন নতুন্ ভোট ব্লক সৃষ্টি হচ্ছে। এই সর ব্লক গুলো ভোটে গিজগিজ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ম-নীতি বলতে অবশিষ্ট কিছু নেই আর। যেখানে ভোটের সংখ্যা বেশী সেদিকেই দৌড়াচ্ছে। দেশ ও জাতি গোল্লায় যাক। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থই আসল জিনিষ। ফলে গনতান্ত্রিক পদ্ধতির গায়ে আঁচড় লাগছে।

অবস্থা বিভেদে একের বেশী ভোট দানের ব্যবস্থা কি করা যায় না? সবাই নিম্নতম একটি ভোট দেবেন। যিনি ট্যাক্স দেবেন তার ভোটে একটি গুনক ব্যবহৃত হবে ট্যাক্স প্রদানের অনুপাতে। উদাহরণঃ যিনি 37.1205% ট্যাক্স দিবেন তার ভোটটি 1.371205 দিয়ে গুনিত হয়ে যাবে ভোট দেওয়ার সাথে সাথেই। গুনিতকটি IRS অফিসের ডাটা বেইজে আছে। ভোটের সাথে সংযোগ করে দিলেই হল। দেশের উতপাদনে অংশ গ্রহণে নতুন উদ্দীপনা/প্রয়োজনীয়তা পাবে জনতা। নৈতিকতা অবক্ষয় শ্লথ হবে রাজনৈতিক নেতা্দের। তাদের স্বার্থান্বেশী নখের আঁচড় থেকে মুক্তি পাবে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা।

টেক্সাস, ১২ জুলাই ২০১০।