একদিন যতীন সরকার নৌকা বিলাসে গমন করেন। তথায় তিনি পুঁজিবাদের নিষ্ঠুরতা কড়ায়-গন্ডায় অবলোকন করেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়। মাঝি নৌকা চালায়। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে। নৌকার মালিক নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। দিন শেষে টাকা আসে। পোলাও-মাংস খায়। বৌয়ের গালে চিমটি কাটে। আর বোকা মাঝি বৌয়ের সাথে পিঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তাভাত খায়।
বছর কয়েক আগে বাংলা একাডেমী কিংবা একুশের পদক তালিকায় যতীন সরকারের ছবি। ভিমড়ি খাই। গায়ে চিমটি কাটি। চোখে গুটি কয়েক পলক দেই। তালিকায় নাম দেখে বুঝি চশমা পাল্টানোর সময় এখনো হয়নি। মুখ দিয়ে বেরোয় – আরে, এতো যতীন সরকারই বটেন। কিন্তু ধূতি কোথায়? মনে হয় পাজামা জাতীয় একটা কিছু!
যুক্তিবাদী অনর্গল বক্তা হিসেবে ময়মনসিংহে যতীন সরকারের খ্যাতি আকাশচূম্বী। নাসিরাবাদ কলেজ থেকে অবসর নিয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিটি এখন নেত্রকোনা পৈত্রিক আবাসে নিবাস করছেন। অতি সাধারণ কাপড়ের সাদা পাঞ্জাবী, সাদা ধূতি আর পায়ে কালো ফিতাযুক্ত চপ্পল, মাথা ভর্তি চুল আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, তার নীচে মোটা গুম্ফ। রাস্তায় এরকম কাউকে দেখলে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন – নমস্কার, যতীনবাবু, ভাল আছেন? দিন যায়, বছর ঘুরে। কিন্তু পাঞ্জাবী, ধূতি আর চপ্পল থাকে অক্ষয়, অবিনশ্বর। একদিন রসিকতা করে বললেন, বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র হিন্দু, কারণ হিন্দু পোষাকেই তিনি সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন। বললেন – আজকাল ধূতি খুবই ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। কেননা, একটা রঙ্গিন প্যান্টকে ফাঁকি দেওয়া সহজ, কিন্তু ধূতি অবশ্যই পরিস্কার রাখতে হয় এবং পূনরায় পড়তে চাইলে যথাস্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে।
ধূতিহীন যতীন সরকারকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল মাত্র একবার। দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭৩ সালে জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিয়ে আন্তর্জাতিকে পর্যায়ে প্রচুর দেন-দরবার চলছে। সদস্য পদের জন্য ভারত আর রাশিয়া যত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান আর চীন বিপক্ষে চেষ্টা চালাচ্ছে তার দ্বিগুন। বিতর্ক হবে নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘে। তার মাস খানেক আগে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় একটি নকল বিতর্কের আয়োজন করে। ভারত, বাংলাদেশ, চীন আর পাকিস্তানের প্রতিনিধিদেরকেই বিতর্কে দেখানো হবে। অন্য প্রতিনিধিরা শুধুই বসে থাকবেন। বিতর্কে প্রধান আকর্ষণ যতীন সরকার। তিনি হলেন পাকিস্তানের প্রতিনিধি। মাথায় জিন্নাহ টুপি, গায়ে শেরোয়ানী। ধূতির বদলে এবার পাজামা। যুক্তির প্রেক্ষাপট পুরোনো কাঁসুন্দি – ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির পঠভূমি এবং বাংলাদেশ পৃথক কোন রাষ্ট্র হতে পারে না। তর্ক শুরু হল। পিন-পতন নিঃশব্দতা। ভারত আর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মুখ থেকে যুক্তি কেড়ে নিয়ে মূহুর্মূহু তাদেরকে পরাভূত করতে থাকলেন যতীন সরকার। পাকিস্তানী সেনা এবং আলবদর আর রাজাকার কর্তৃক হাজার হাজার মা-বোনদের অত্যাচার আর লাঞ্ছনার চিত্র তখনও সর্বত্র বিদ্যমান। আকাশে বাতাসে মৃতদেহের গন্ধ তখনও ভাসমান। পাকিস্তানী প্রতিনিধির যুক্তিকে ঘৃনাবত প্রত্যাখান করাই স্বাভাবিক। কী অদ্ভূত! মানুষ সেই পাকিস্তানের প্রতিনিধির কথাই শুনছে গভীর আগ্রহ নিয়ে। স্পষ্ট মনে আছে, হঠাত করেই একসময় বিদ্যুত বিভ্রাট হল। যতীন সরকার দম নিলেন। শ্রোতাদের সমস্বরে চিতকার। বিদ্যুতের দরকার নেই, আপনি থামবেন না, প্লিজ।
সংগীতের যন্ত্র সেতার অনেকেই বাজিয়ে থাকেন। কিন্তু পন্ডিত একজনই – রবিশংকর। যতীন সরকার বক্তৃতায় রবিশংকর। আমার তো মনে হয়, এটাই তাঁর সনদ পাওয়ার মূখ্য একটি কারণ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অনুষ্ঠানেই বিশেষত বামপন্থী রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদিতে যতীন সরকার প্রায়ই আসতেন। আমরা উনার ভাষন শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। আমি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর দেখলাম খগেশ তালুকদার নামে উনার একজন শিষ্য হয়েছেন। ক্ষুদ্রাকার অনুষ্ঠানে তালুকদার বক্তব্য রাখতেন আর সমাপ্তি টানতেন যতীন সরকার।
১৯৭৫ সাল। থাকি ধোপাখোলায় পেইং গেস্ট হিসেবে এক অধ্যাপকের সাথে। ইংরেজী ‘H’ আকৃতির বাসা। এক পাশে আমরা। অন্য পাশে কবি নির্মলেন্দু গুণ। স্ত্রী, নীরা লাহিড়ী তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। দুপাশের মাঝখানের কাঠিতে ‘low profile’ এ থাকে বাডিওয়ালার শ্যালক একা, কমিউনিস্ট পার্টির পাতি নেতা। মাঝে মাঝে আন্ডারগ্রাউন্ড। পার্টি থেকে অনেকেই খুঁজতে আসে। দুদুসাবকেই জিজ্ঞেস করে – এখানে দুদুসাব থাকেন? দুদুসাবের সচকিত হন – কোন গুপ্তচর নয়তো? নানাবিধ প্রশ্ন করেন। তারপর বলেন – আরে, আন্নে ইতা কিতা করচুইন! বাইরে খাড়াইয়া রইচুন! ভিতরে আইন, বইনযে। এই দুদুসাহেব এবং নির্মলেন্দু গুণের কাছে আসতেন খগেশ তালুকদার। মণীষীদের ‘বাদ’ এবং ‘বাণী’ সমন্বয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা। দুনিয়ার মজদুরদেরকে একীভূত করার অংগীকার। আমরাও আমন্ত্রণ পাই। শিক্ষকরাই পারে এই মহা মূল্যবান বাণী ছাত্রদের মাধ্যমে আপামর জনগুষ্টীর কাছে পৌঁছে দিতে। আফসোস, সেই শিক্ষকরদেরই কোন আগ্রহ নেই। হতাশ হন খগেশ তালুকদার। এঁরা “sub-human” ছাড়া আর কোন পর্যায়ে পরে না। দুদুসাব মাথা নাড়েন।
আমি যতীন সরকারের শ্বশুর বাড়ীতে সাবলেট থাকি মাস তিনেক ১৯৭৬এ। সেই সূত্রে যাতায়াত চলত অনেক দিন। ১৯৮০ দশকে একদিন যতীন সরকারের সাথে ওখানেই দেখা। মনের মত একটা ঘটনার সন্মূখীন হয়েছেন ইদানীং। পুঁজিজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার নিষ্ঠুরতার চাক্ষুষ প্রমাণ এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে!
যতীন সরকারের নৌকা বিলাস। ছৈএর নীচে বসে আছেন। মাঝির সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। মাঝিটি দৈনিক ৮০ টাকা কামায়। তার ৫০ টাকা মালিককে দিয়ে আসছে বিগত পাঁচ বছর যাবত। তাজ্জব ব্যাপার। এক হাজার টাকার নৌকা। যতীন সরকার হিসেব করলেন। তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। তারপরও নৌকাটি মালিকের রয়ে গেছে। বোকা মাঝিটির এ নিয়ে কোন অনুযোগ নেই। আরও তাজ্জব ব্যাপার।
অনুমান করি, আরও একটি তাজ্জব ঘটনা যতীন সরকারের অগোচরে ঘটে গেল। তিনি ছৈএর ছায়ায় আরামে বসে আছেন। জলরাশির কলতান কর্ণকোহরে প্রবিষ্ট হচ্ছে। মুগ্ধ বিস্ময়ে জলে ঢাকা বাংলার অপরূপ রূপ দর্শণ করছেন। গায়ে লাগছে মৃদু হাওয়া। বাইরে রোদ্রভরা আকাশ নীল হয়ে আছে আকাশে আকাশে। সামনে উপবিস্ট মাঝি্। মাঝির টাকু মাথা, নাক ও মুখে ঘাম। গামছা দিয়ে মুচ্ছে। যতীন সরকার ভাবে উদ্বেলিত হয়ে ঋষিবাক্য বর্ষণ করে যাচ্ছেন। তিনি একবারও বলেন নি – আমি কমিউনিস্ট। সব সময় তোমাদের নিয়ে বক্তৃতা করি। জনতা আমার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত নিমিলেষ নয়নে শুনে। আমার বক্তৃতায় শ্রোতাদের চোখ জলে ছলছল করে। হে মাঝি, তুমি ছৈএর তলায় এসে বস, হাওয়া খাও। আর আমি তোমার বৈঠা বাই। তিনি তা করেন নাই।
জ্ঞানী মানুষের জ্ঞানের কথায় মাঝিটি মুগ্ধ। স্যারটি খাঁটি কথা বলেছেন। শরীরের রক্ত জল করা পয়সা। এক হাজার টাকায় কেনা নৌকার জন্য পাঁচ বছরে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। তার পরেও নৌকাটি মালিকেরই রয়ে গেল! তিন হাজার টাকা দিয়ে সে নিজে তিনটি নৌকা কিনতে পারত।
স্বপ্নের মত মনে হয়। যতীন সরকার দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। তার নিজেরও স্বপ্ন ভাংগে। কথা ঠিক। কিন্তু মালিক যদি নৌকাটি না কিনে ব্যাংকে রাখতেন! তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হতেন। তিন হাজার পেতেন না। কিন্তু আমার ক্ষতি তো হত ষোল আনা। মালিক আরো দুটো নৌকা কিনে জলে নামিয়েছে। ঐ নৌকার মাঝি দুটোর অবস্থাও হত তথৈবচ। মালিক হাত-পা গোটালে তার লাভ কমে যাবে। পোলাও-মাংস না খেয়ে মাছ-ভাত খাবে। কিন্তু আমার পান্তাও মিলবে না। সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হব আমরাই।
সমাজতন্ত্রী আর কমিউনিস্টদের এটি এক ধরণের টানেল ভিশন বা জ্ঞানপাপী দৃষ্টিভংগী। সত্যটি চেপে রাখবেন। মানুষের ভীড়টা যেখানে বেশী, যে কথাটি তারা শুনতে চায়, যেটা বললে ভোট ও বাহবা দুটোই মিলবে, এঁরা সেটাই বলবেন। আগামীতে এরা গোল্লায় যাবে, যাক। পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে প্রচুর “বাদ”, “বাণী” আর তত্বকথার অভাব নেই। সেগুলোকেই পুঁজি করে পুঁজিবাদ বিরোধী মগজ ধুলাইএর যত কথা বলা যায়, বল। সহজে হিরো হওয়ার এটাই মোক্ষম পথ। উচ্চবিত্তদের চেয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সংখ্যাই বেশী দুনিয়াতে। ফলে বাহবা পাওয়ার জায়গা এখানেই। পূঁজিবাদ ধ্বংশ হলে পুঁজিবাদীদের চেয়ে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেটি এখনই নয়। এখনকার পুঁজি যা আছে তা নিঃশেষিত হবে একটা প্রক্রিয়ায়। সময় লাগবে। আপাতত ঝুকি নেই। গলাবাজি চালিয়ে যাও।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী মালিকগন গ্রাম-গঞ্জের নিরীহ ছেলে-কিম্বা মেয়েদের সামান্য কিছু বেতন দিয়ে তাদের রক্ত চুষে নিজেরা কারি কারি টাকা বানাচ্ছেন। এর মধ্যে ভূড়ি যুক্তি প্রমাণ খাড়া করা যাবে। কথাটা এভাবে বললেই বাহবা পাওয়া যাবে। কিন্তু কথাটা অন্যভাবেও বলা যায়। তারা টাকা না বানালে স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত হাজার কর্মীরা চাকুরী পেত না। কিন্তু তাতে কী? কৃষি জমিতে কাজ করত। তা ঠিক। কিন্তু আধা শিক্ষিতরা করবে না। তা ছাড়া ইন্ডাস্ট্রীতে রক্ত জল করে যে পয়সাটি পায় তা মাঠে কাজের চেয়ে বেশী। সে জন্যই ভিটাবাড়ী ছেড়ে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ভীড় করে। মালিকরা আরও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি করে আরো কারি কারি টাকা বানাক। ইন্ডাস্ট্রীতে দেশ ছেয়ে যাক। কর্মীরা বেতন নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ পাবে। তখন ওদের পেটেও চর্বি জমতে শুরু হবে। ব্লাড প্রেসার হবে, ডায়াবেটিস হবে বড়লোকদের মত।
কী হত বড়লোকরা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রী বন্ধ করে দিলে? এত উদ্বৃত্ত শ্রমিক মাঠেও কাজ পেত না। এদের কিছু আবার আধা শিক্ষিত। হাই স্কুল পর্যন্ত যাতায়াত করা। মধ্যপ্রাচ্য যাবার সংগতি নেই। লাংগলে হাত দিবে না। তাহলে কি করত এরা! তপন গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীতে কাজ করে। মালিকেরা কারি কারি হীরা পায়। তপন হীরা পায় না। হীরা দিয়ে সে করবেটা কী? সে মজুরী পায়। মজুরীর টাকায় বাড়ী করেছে। ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালায়। তপন জানেনা অন্যথায় কী করত সে। তাই সে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীর জিন্দাবাদ দেয়।
ধনতান্ত্রিক আর সমাজতান্ত্রিক গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। প্রাচুর্য আর বিলাসে আমেরিকা বিশ্বের শিরোমনি। আমরা তারই হাতছানিতে নিজে দেশকে পর করে প্রাচুর্যের লোভে এখানেই আস্তানা গেড়েছি। এই প্রাচুর্য নিঃশেষ হয়ে গেলে এর পর যাবটা কোথায়! ১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে রাশিয়ার প্রধান মন্ত্রী ক্রুশ্চেভ জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা করেন – কমিউনিজম উন্নত বিশ্বের জন্য। ১৯৬১ সালে ভিয়েনা সামিটে প্রেসিডেন্ট কেনেডির সাথেও কথা হয়। একই জ্ঞান বিতরণ করেন। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, গুণে এত উন্নত এই দেশ আমেরিকা। এই দেশের মানুষ কমিউনিজম বুঝে না তা কি হয়? তিনি ভবিষ্যত দেখেন। এই দেশে একদিন কমিউনিজম আসবেই। রাজনৈতিক নেতাদের যা বক্তৃব্য আর কর্মকান্ড। মনে হয় ক্রুশ্চেভ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন।
বিল গেইটস নিজে ধনপতি হয়েছেন। তাঁর ব্যবসা থেকে হাজার হাজার লোক ধনকুবের হয়েছেন। বাংলাদেশে আমার নাতির হাতে ল্যাপটপ। ভারতে আমার ভাগিনার ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ায়। সেলফোন কানেকশন দিয়ে আমার সাথে ভিডিও চ্যাট করে। আজ এ মাসির বাড়ি, কাল ও পিসির বাড়ি। এক দংগল লোকের সাথে কথা বলতে হয়। আমার সময় নষ্ট হয়, হউক। সবাই খুশী হয়। আমেরিকার সরকার যদি বলত – বিল, মাইক্রোসপ্ট বানাও ভাল কথা। তুমি কিন্তু টাকায় হাত দিতে পারবা না। ও টাকায় আপামর জনগনের হক আছে। ওর সবটাই যাবে কোষাগারে। কোষাগার জনগনের। তুমি তো বার্গার খেয়েই বড় হয়েছ। অসুবিধা কী! এখনও খাবে। বার্গার আপামর জনগনের খাদ্য। সরকার তোমার বার্গারের ব্যবস্থা করবে। আরে মিয়া, তোমার টাকা সরকারী কোষাগারে আসছে – এটাই তো দেশ প্রেম। দেশের সেবা বড় সেবা।
মাথায় এই খড়্গ থাকলে বিল নিশ্চয় হাতপা তুলে বসে থাকত। তখন দুনিয়াতে মাইক্রোসপ্ট আসত না। কিউবা বা ভেনিজুয়েলা আমাদের স্বপ্নের দেশ হয়নি। আমেরিকাও হত না। আমরা দেশত্যাগী হতাম না। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রীও হত না।
ইদানীং এদেশে গনতন্ত্রের নামে যা হচ্ছে তা রীতিমত ভীতিপ্রদ। টেলিভিশনের সংবাদ – সরকারের ৭০% Revenue আসছে দেশের ৫% ধনপতির পকেট থেকে। কিন্তু ভোটের বেলায় সবাই কমিউনিজমের কাতারে। যিনি বেতনের এক বিরাট অংশ ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার একটি ভোট। যিনি সরকারের খেয়ে পেটে চর্বি জমাচ্ছেন তাঁরও একটি ভোট। দেশে নতুন নতুন্ ভোট ব্লক সৃষ্টি হচ্ছে। এই সর ব্লক গুলো ভোটে গিজগিজ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ম-নীতি বলতে অবশিষ্ট কিছু নেই আর। যেখানে ভোটের সংখ্যা বেশী সেদিকেই দৌড়াচ্ছে। দেশ ও জাতি গোল্লায় যাক। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থই আসল জিনিষ। ফলে গনতান্ত্রিক পদ্ধতির গায়ে আঁচড় লাগছে।
অবস্থা বিভেদে একের বেশী ভোট দানের ব্যবস্থা কি করা যায় না? সবাই নিম্নতম একটি ভোট দেবেন। যিনি ট্যাক্স দেবেন তার ভোটে একটি গুনক ব্যবহৃত হবে ট্যাক্স প্রদানের অনুপাতে। উদাহরণঃ যিনি 37.1205% ট্যাক্স দিবেন তার ভোটটি 1.371205 দিয়ে গুনিত হয়ে যাবে ভোট দেওয়ার সাথে সাথেই। গুনিতকটি IRS অফিসের ডাটা বেইজে আছে। ভোটের সাথে সংযোগ করে দিলেই হল। দেশের উতপাদনে অংশ গ্রহণে নতুন উদ্দীপনা/প্রয়োজনীয়তা পাবে জনতা। নৈতিকতা অবক্ষয় শ্লথ হবে রাজনৈতিক নেতা্দের। তাদের স্বার্থান্বেশী নখের আঁচড় থেকে মুক্তি পাবে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
টেক্সাস, ১২ জুলাই ২০১০।
লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো…যতীন দা আমাদের একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেও মানুষ/বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী র একজন কর্মী হিসাবে আমার অনেকবার উনার বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য হযেছিল/ মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনতাম তার অসামান্য বক্তব্য/ শুরুতে ই বলে নিতেন “আমার কন্ঠ অনেকটা কর্কশ যা অনেকের ই ভালো লাগবেনা ” কিন্তু তার বক্তব্য বিশ্লেষণ আর যুক্তির সুর যখন উধার মুধারা থেকে তারা পর্যন্ত স্পর্শ করত তখন কন্ঠের চেয়ে বাণীর, যুক্তির কিংবা বিশ্লেষণের গুরুত্বই স্থান দখল করত …ধন্যবাদ নিপ্রেন্দ্র সরকার কে ….লন্ডন, ১৫/০৭/২০১০
@Ashim,
হ্যা। উনি এই কথাটা বলতেন – আমার কন্ঠ কর্কশ।
আমার কথাটা মনে রাখবেন – একটা রিভিউ।
আমি আর যতীন সরকারের স্ত্রী কাননদি একই সংস্থায় চাকরি করতাম। উনি ময়মনসিংহে কনসার্ন ( আইরিশ সংস্থা) এর এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আমি পরিদর্শনে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গেলে কাননদির বাসায় যেতাম যতীন স্যারের সঙ্গ ও উনার বইয়ের সংগ্রহ দুটোই উপভোগ করার জন্য।
উনার উদারপন্থী মনোভাব ও কথা বলায় আমি মুগ্ধ ছিলাম। উনার জানার পরিধি ব্যাপক ও গভীরতায় পূর্ণ।
পরবর্তীতে উনার প্রবাসী ছেলেকে নিয়ে উনার পারিবারিক দুঃখবোধের সৃষ্টি হওয়ার পর আর যাওয়া হয়নি।
উনার লেখা
এখন পড়ছি। এ মুহূর্তে নৃপেন্দ্র সরকারের লেখাটি আমার জন্যে বড্ড প্রাসঙ্গিক হল।
এ ধরনের আরও লেখা পড়ার প্রত্যাশায় রইলাম।
@গীতা দাস,
যতীন সরকারের সহপাঠী এবং brother-in-law শচীন আইচ কলেজিয়েট হাই স্কুলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইংরেজী শিক্ষক ছিলেন। বাবা-মা উনার সাথেই থাকতেন। আমরা বিয়ে করার পরই উনার বাসায় মাস তিনেক সাবলেট ছিলাম ১৯৭৬ সালে। ঐ সময় পৃথিবীতে আমাদের জন্য দ্বিতীয় অন্য কোন নিরাপদ আশ্রয় ছিল না। মাসিমা আমদেরকে উনার নিজ ছেলেমেয়ে, জামাইদের চেয়ে কোন অংশে কম দেখতেন না। ১৯৮৯ এর জানুয়ারীতে এদেশে চলে আসা পর্য্যন্ত উনাদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার লোভ সম্বরণ করতে পারিনি।
যতীন সরকার এক অনন্য চরিত্র। যতীন সরকারকে নিয়ে লেখার মত ধৃষ্টতা আমার নেই। এই নিবন্ধের মূল বক্তব্য যতীন সরকারকে নিয়ে নয়। উনাকে টেনে আনার কারণে আমার মূল বক্তব্য হারিয়ে গেছে।
আপনার হিসেবে মানুষের ভোট হবে ১ থেকে ২ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাতে কি আসলেই খুব একটা পরিবর্তন আসবে? আরো বড় কথা “দেশের উৎপাদনে অংশ গ্রহণে নতুন উদ্দীপনা”-র জন্য ভোটটাই কি বড় incentive? অনেক লোক তো ভোট দেয়ই না।
@রৌরব,
সবাই ভোট দিতেই যায় না। সেটা অবশ্যই ঠিক।
কিন্তু নেতারা ন্যায়-নীতি বহির্ভূত কাজ করতে দ্বিধা করছে
না ব্লক ভোট পাওয়ার নিমিত্তে।
আসলে সম্পূর্ণ ব্যাপারটি তর্কপূর্ণ। আলোচনা চলুক।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ব্লক ভোট বলতে ইভাঞ্জেলিকাল খ্রীস্টান, হিস্পানিক ইত্যাদি (কিছুটা হলেও) জোট বদ্ধ ভোটারদের বোঝাচ্ছেন ধরে নিচ্ছি। ভোটের সমীকরণ বদলালে ব্লকের সমীকরণও বদলাবে, কিন্তু উঠে যাবে কি? উদাহরণ দিই। ধরুন আপনার প্রস্তাব গৃহিত হল। আরো ধরুন দেখা গেল, কালোদের আয়-ইনকামের পরিসংখ্যান এমন যে কর-নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনলে তাদের সামষ্টিক ভোটার পরিমান বেশ কমানো বাড়ানো সম্ভব। তখন এটাকে কেন্দ্র করে একধরণের ব্লকিং, দলাদলি, নোংরা রাজনীতি শুরু হতেই পারে। ব্লক-এর ব্যাপারটা গণতন্ত্রের একটা অবধারিত বৈশিষ্ট বলে সন্দেহ হয়।
@রৌরব,
অংকে ২ + ৫ = ৭ হয়।
সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন কিছুই এরকম পারফেক্ট নয়। আমরা শুধু মন্দ থেকে ভালর দিকে আগানোর চেষ্টা করতে পারি।
Operations Research বইএর এর সূচনায় একটা বাক্য আমার খুব মরে ধরা। 1977 এ পড়েছিলাম। বাক্যটি এরকম
Operations research deals with making a bad decision which could otherwise be a worse decision.
আলোচনা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। রাজনীতি, সমাজনীতি কোনটাই আমার বিষয় নয়। আমি কোনটারই উত্তর দিতে পারব না। এগুলো শুধুই আমার বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা
@নৃপেন্দ্র সরকার,
প্রথমে একটা অফটপিক। গণিত কিন্তু অনিশ্চয়তা বা অবিশুদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে পারে। “সরলীকৃত” অর্থে “গণিত” বা “গাণিতিক” শব্দের ব্যবহারটা অনেক জায়গাতেই দেখি, কিন্তু এটি বোধহয় গণিত সম্বন্ধে ভুল ধারণা দেয়।
গণতন্ত্রের একটা বড় সমস্যা — গ্রুপিং বাজি, আপনি সঠিক ভাবেই তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমার ধারণা ভোটের সমীকরণের পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে silver bullet এর কাজ করবেনা। পরিস্থিতি অনুযায়ী গভীর অভিনিবেশ এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রয়োজন। তাছাড়া সুশিক্ষাও বোধহয় ধীরে ধীরে একটা ভূমিকা রাখতে পারে।
@রৌরব,
ধন্যবাদ আমার “বিক্ষিপ্ত ভাবনায়” আপনার কিছুটা সময় দেয়ার জন্য।
গুরুতর অসুস্থ অধ্যাপক যতীন সরকার
12. July, 2010, 4:17 AM MH Pias
Font size: Decrease font Enlarge font
image
মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ৯ জুলাই রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্পন্ডালাইসিস ও আর্কিও আর্থাইটিসে ভূগছেন।
ঢাকা নিউজ 24 ডট কম, ঢাকা (১২ জুলাই ২০১০)
মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, গবেষক, প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ৯ জুলাই রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্পন্ডালাইসিস ও আর্কিও আর্থাইটিসে ভূগছেন। এর আগেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার যতীন সরকারকে এ বছর স্বাধীনতা পদক প্রদান করে। বিজ্ঞান মনস্ক ও ইতিহাস সচেতন সমাজ বিনির্মাণে যতীন সরকার নিরন্তর লিখে যাচ্ছেন। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, রাজনীতিকে আশ্রয় করেই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্যদিয়েই একটি সচেতন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সে লক্ষ্যেই তাঁর বিভিন্ন গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধে লোকায়ত উপকরণ তুলে এনেছেন।
চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, ফিজিও থেরাপি ও আনুষাঙ্গিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে যতীন সরকারকে।
ঢাকা নিউজ 24 ডট কম/এমএইচপি.[img]http://www.dhakanews24.com/thumbnail.php?file=12-07-2010/Jatin%20Sarkar.jpg&size=article_medium[/img]
@কুলদা রায়,
বাহ! ছবি ও নতুন তথ্য সংযোগ যতীন সরকারের প্রতি আমাদের যথোযিত শ্রদ্ধাই প্রকাশ পায়। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
যতীন সরকারের লেটেস্ট নিউজ কে দিতে পারবেন?
এখানে, কেউ বলছেন- তিনি গুরুতর অসুস্থ।
কেউ বলছেন- পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোণায় থাকেন।
কেউ বলছেন- ঢাকায় থাকেন এবং আগের মত-ই বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান।
মনে হচ্ছে আবার সেই তথ্য বিভ্রাট। কেউ যদি সত্যিকার খবর দিতে পারেন। তাহলে প্লিজ খবর আপডেট করুন।
@মাহফুজ,
আমি বলতে পারি।
তার আগে বলতে হবে তুমি কোথায় থাক।
ময়মনসিংহ কলেজিয়েট হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, শচীন আইচ বলতে পারবেন। টেলিফোন নম্বর – ১৭১ ৬৯৩ ৮৭৮৭। আমার নমস্কার জানাইও।
@মাহফুজ, যতীন দা ময়মনসিংহ থাকেন একন ও বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান কিন্তু গত জাতীয় সন্মেলন থেকে উনি আর উদীচীর সভাপতি নন …..ধন্যবাদ
নৃপেন দা, ভোটের সথে একটা গোপন ব্যালটের ব্যপার আছে। কিন্তু আয় করের আসে ভোটের মান পুনঃনির্ধারণ করতে গেলে গোপনীয়তা কিভাবে রক্ষা করা যবে ?
@আতিক রাঢ়ী,
গোপনীয়তা নিয়ে কোন আসুবিধা হবে না।
IRS databse থেকে গুনিতক চলে আসবে social security এর হাত ধরে Electronic voting system এ।
বিশেষ ধন্যবাদ এই বিশেষ প্রশ্নটির জন্য।
আচ্ছা “পূঁজি” কি আসলে “পুঁজি” হবে না?
@পৃথিবী,
তাহলে দেখছি বারবারই ভুল বানানা করেছি। দুঃখিত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমারও খুব হয়। সেদিনই একটা সাগর কলাকে সবরি কলা মনে করে খেলাম 😀
এখন উনি উদীচীর সমগ্র বাংলাদেশের সভাপতি, ঢাকায় থাকেন এবং আগের মত-ই বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান।
আপনার ভোটের সিস্টেমটা ভাল বুঝতে পারলাম না। আরেকটু ভালভাবে ব্যাখ্যা করুন প্লিজ, বেশ গোলমেলে ঠেকছে আমার কাছে!
@পথিক,
ডিসেম্বর ২০০৯। যতীন সরকারের সহপাঠী এবং brother-in-law শচীন আইচের সহায়তায় তসলিমা নাসরিণের অবকাসে যাই। তিনি বললেন – যতীন সরকার এখন নেত্রকোনা থাকেন।
ভোটের ব্যাপারটি তর্কসাপেক্ষ একটি জটিল বিষয়। গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রস্তাব। একটা উদাহরণ আছে।
@পথিক,
এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এই তথ্যটি যোগ করে উনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছেন। অত্যন্ত ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার, যতীন দা গত দুই টার্ম মানে ২০০৩-২০০৫ এবং ২০০৬-২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সম্মানিত সভাপতির পদে আসীন ছিলেন. শারীরিক এবং বাক্তিগত সমস্যার কারণে উনি ২০০৮ সালের কেন্দ্রীয় সন্মেলনে হাউসে র সর্বসন্মতি থাকা সত্তেও সভাপতির পদ গ্রহণ করেননি. যদি সময় থাকে আর আগে পরে না থাকেন তাহলে তার লেখা “প্রসঙ্গ মৌলবাদ ” বই টি পরার অনুরুধ জানাচ্ছি. ধন্যবাদ
@Ashim,
আপনি একটা কাজ করুন না। বইটির একটি সংক্ষিপ্ত রিভিউ মুক্তমনায় পোষ্ট করুন। ওর সাথে প্রাপ্তিস্থানটিও উল্লেখ করুন।
ধন্যবাদ।
সত্যই দারুণ লাগলো।
অসাধারন একটা লেখা।
পুজিঁবাদ সভ্যতার বিষ ফোঁড়া। যত তাড়াতাড়ি এটাকে হটান যায় ততই মঙ্গল।
@সাইফুল ইসলাম,
মন্তব্যটা কি খোলসা করে বলা যায়? আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি না।
যতীনদা নিজেকে বলতেন–অমায়িক।
একবার ফাতেমানগরে কমিউনিষ্ট পার্টির মিটিংএ যতীনদা বক্তৃতা করবেন। শেষ বক্তা তিনি। ধুতি পাঞ্জাবি পরা। কিন্তু শুরুতে মাইক বিগড়ে বসল। সুমন ঠিকঠাক করার অনেক চেষ্টা করল। সময় লাগছে। লোকজন একটু উসখুস করছে। যতীনদা খালি গলায় শুরু করলেন। বললেন, তিনি হলেন–অমায়িক লোক, যার মাইক লাগে না। । মাইক ঠিক হলেও তিনি চালিয়ে গেলেন অমায়িক হয়েই। ততক্ষণে উপস্থিত লোকজন তার কথায় মুগ্ধ। পিন পতন নীরবতা।
বহুবার যতীনদার সভায় হাজির থেকেছি।
ছাত্রবন্ধুদের সামনে তিনি শুরু করতেন পাভলভীয় মনস্তত্ত্ব দিয়ে। এত কঠিন কথা বলতেন এমন সহজ সরলভাবে যে–শ্রোতৃবর্গের মগজ রীতিমত ধোলাই হয়ে যেত। জসীম মণ্ডলের শিক্ষিত সংস্করণ হলেন তিনি। এইখানে আমাদের কিছু আপত্তি ছিল।
তিনি জানতেন বলেই এলেন পিলসুজের আয়োজনে কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে। কৃষি অর্থনীতি গ্যালারিতে এই কমিউনিষ্ট বুদ্ধিজীবীর আলোচনা শুনতে অকমিউনিষ্ট ছাত্রছাত্রী এসেছে। আসাদুল আমীন দাদন নামে এক ছাত্র-কাম কমিউনিষ্ট গজ গজ করে আমাকে বললেন, রায়, কাজটা কিন্তু ঠিক করছ না। যতীনদার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
কুদ্দুস স্যার এসেছেন। তাহসীন স্যার আশরাফুজ্জামান সেলিম স্যারের পাশে বসেছেন। মুয়াজ্জাম হুসাইন স্যার একবার উঁকি দিয়ে হাওয়া খেতে নদীর পাড়ে চলে গেলেন।
সেদিন যতীনদা আমাদের মুখ চুন করে দিলেন। কবি জীবনানন্দ দাশকে সুকান্তর চেয়ে ছোট কবি প্রমাণ করে হাসতে হাসতে চলে গেলেন। পিলসুজের লোকজন হা হয়ে চেয়ে রইল। টু শব্দটি নেই। সবাই বিশ্বাস করে বসল–সুকান্ত অদ্বিতীয়। যতীনদাকে বললাম, দাদা–এটা কী হল! তিনি পিঠ চাপড়ে বললেন, আমার এক বক্তৃতাতেই তোদের বিশ্বাস টলে গেল? এই ঠুনকো বিশ্বাস নিয়ে চলবি কেমন করে?
এইখানেই যতীনদা অমায়িক। তার বিশ্বাস অবিচল। ঠুনকো নয়। সামান্য বাতাসে হেলে পড়ে না।
@কুলদা রায়,
যতীন দা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ মূলক এই মন্তব্য ভীষণ মু্গ্ধ হয়ে পড়লাম। ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।
ভালো লাগলো কথাটা।
@মাহফুজ, যতীনদা এখন খুবই অসুস্থ।
অই কথাটা আমার মনে আছে। আমরাতো জানি জীবনানন্দ দাশ অনেক বড়ো মাপের কবি। সুকান্তকে তুলানায় আনা অর্থহীন। কিন্তু যতীনদা তাঁর নিজস্ব বিশ্বাস থেকে জীবনানন্দকে সমালোচনা করেছেন। তরিকা দুর্বল হলে সামান্য বাতাসেই বিশ্বাসের দুর্গ ভেঙে পড়ে।
এত তরল বিশ্বাসে বস্তু মেলে না। মেরুদণ্ড খাড়া করে দাঁড়ানো দরকার।
@মাহফুজ,
মূল নিবন্ধটি কিন্তু স্মৃতিচারণ নয়।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা গো দাদা ও দাদা, আমি তো আপনার নিবন্ধটাকে স্মৃতিচারণ কই নাই। কইছি কুলদা রায়ের মন্তব্যে যে স্মৃতিচারণ রয়েছে সেটিকে।
@মাহফুজ,
তোমার কথা আঠার আনা হাচা।
আমি ধরা খাওয়ার ভয়ে একটা কিন্তু
শব্দ রেখে দিয়েছিলাম। কাজ হয়নি। অন্য কিছু রাখা দরকার ছিল।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, শব্দের মাইর প্যাচ কিন্তু আপনার কাছ থেকে শিখছি। এইজন্য আমি আপনারে :guru: মানি।
যতীন দার আপডেট সংবাদ শুনে ভালো লাগছে, তথ্য বিভ্রাট শেষ হলো। ব্যাথিত হচ্ছি তার অসুস্থতার জন্য। আশু রোগ মুক্তি/ সুস্থতা কামনা করি।
মাঝে মাঝে বরেণ্য ব্যক্তিদের মুক্তমনায় তুলে এনে যে উৎসাহ জোগান দেন তার জন্য আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে। এমন একদিন আসবে, যেদিন আপনার কর্ম জীবন ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে মুক্তমনায় আলোচনা হবে।
@মাহফুজ,
আমার মোটেই নয়। এটি তোমার প্রাপ্য। মোকসেদ আলী সাহেবের যে প্রজেক্ট তুমি হাতে নিয়েছ তার জন্য তোমার মূল্যায়ন অবশ্য অবশ্যই হবে।
তোমাকে একটা কন্টাক্ট নাম্বার দিয়েছি। মিস করোনি নিশ্চয়।
@কুলদা রায়,
একবার গান নিয়ে কথা বলছিলেন। উচ্চাংগ সংগীত। বড়ে গোলাম আলী খান। কী মধুর গলায় গান করেন। সাধারণ গানও কত শ্রুতি মধুর। আর স্লোগানের ছিড়ি দেখ। কান ঝালা পালা। অসহ্য।
@ নৃপেন দাদা,
কয়েক মাস আগে আমি নেত্রকোনা গেলাম। তার সম্পর্কে আগে জানলে দেখা করে আসতাম।
খুবই ভালো লাগলো। ধনতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক, চমৎকার বিশ্লেষণ। উদাহরণ এবং দোষত্রুটি।
অনেকদিন পর আঞ্চলিক ভাষা পেলাম। বড় মধুর লাগলো।
@মাহফুজ,
তোমরাই তো সব সময় ক্রেডিট নাও।
স্মৃতিটা একটু ঝালাই করলাম। সবই তো ভুলে গেছি।
ল্যাপটপ কি তোমাকে রাতেও কি ঘুমাতে দেয় না?
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা,
ল্যাপটপ রাতে ঘুমায়। ডেস্কটপ জেগে থাকে।
আচ্ছা দাদা, কালের কণ্ঠে ”বাংলা শেখার আসর: একই ভাষার কত রূপ” নামে যতীন সরকার লিখে থাকেন। আপনার বলা যতীন সরকার আর এই যতীন সরকার কি একই ব্যক্তি?
@মাহফুজ,
যতীন সরকার একজনই। তিনিই হবেন।
@মাহফুজ,
তিনিই হবেন না বলে বরং বলি – তিনি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। একটু নিরাপদে থাকলাম এই আর কি!
ইন্টারনেট ভার্সনে কি মিলবে? exact লিঙ্কটি কী? “পড়ালেখা” একটি লিংক আছে। স্কুলের পরীক্ষা সমন্ধেই বেশী বলছে এখানে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা, পড়ালেখার মধ্যেই আছে। তবে প্রতিদিন না। মাঝে মাঝে আসে। ২ জুলাই দেখুন।
@ দাদা,
http://dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=02-07-2010&type=single&pub_no=212&cat_id=1&menu_id=37&news_type_id=1&index=3
এই লিংকে গিয়ে দেখা যেতে পারে।
@মাহফুজ,
দেখে এলাম লেখাটি।
অনেক ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দাদা লিংক দেয়ার আগেই কি সেটা দেখলেন, নাকি পরে?
@মাহফুজ,
তোমার লিংক নিয়েই দেখে এসেছি। ধন্যবাদ। :rose2:
আমি ভেবেছিলাম শূন্যস্থানটা পূরণ করে নেবে।
তুমি আমার পেছনে লেগে আছ। :guli:
@ দাদা,
নাতীরা দাদার পিছনে এমনিভাবে লেগেই থাকে। এটাই আমাদের দেশের সংস্কৃতি। রাগ করেন আর গুলি ছোড়েন, আমি আপনারে ছাড়ছি না। আপনার টাকলু মাথায় আমি হাত বুলাবোই।
@মাহফুজ,
কে বলছে আমার আমার টাকু মাথা? তোমাকে আমার ছবি দেখিয়ে দেব। একটু অপেক্ষা কর। তখন বুঝবে।