এই ব্লগটা অনেক দিন আগে লেখার ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম অনেকটা সময় নিয়ে লিখব। কিন্ত আপাতত হাতে সময় নেই-কাজ আর ফ্যামিলি প্রেসারের মাঝে সাজে যা সময় পায়, তার মধ্যেই লিখি। তাই লিখেই ফেললাম।
সাইরিল স্মিথের মার্ক্সকে নবমূল্যায়ন করার একটি প্রবন্ধের ভূমিকাটি আমার ভালো লেগেছিল-যদিও আমি তার অনেক বক্তব্যের সাথেই একমত না। তবুও সাইরিলের সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমি ব্লগটি লিখছি। বক্তব্য খুব সোজা। আমি আরেকটু বলি।
বিজ্ঞানে আইনস্টাইনবাদ বা নিউটনবাদি হয় না। কেন হয় না? কারন এখানে কোন তত্ত্বের প্রতিই আমাদের গোঁড়ামো থাকে না। সব তত্ত্বের ত্রুটি নির্ধারনের মাধ্যেমেই আমরা নব নতুন বিজ্ঞান লাভ করি। পর্যবেক্ষনের ওপর ভিত্তি করে সমালোচনা এবং ত্রুটিই যেকোন অভিজ্ঞতাবাদি দর্শনের ভিত্তিপ্রস্তর। সমালোচনাই জ্ঞানের উৎস, আনুগত্য না।
তাহলে মার্ক্সবাদি এল কি করে? মার্ক্সবাদের মূলেই আছে এন্টিথিসিস। অর্থাৎ ত্রুটি এবং বিপরীত মুখী সিদ্ধান্তটি খোঁজ। সেখান থেকে সিন্থেসিস কর। বিজ্ঞানের পদ্ধতির সাথে কোন পার্থক্যই থাকা উচিত না মার্ক্সবাদের-এবং সেই জন্যেই মার্ক্সবাদি বলে কোন প্রাণির জন্মও সম্ভব না। কারন সমাজ পরিবর্তনশীল- এবং থিসিস এন্টিথিসিসের মধ্যে দিয়ে যে সিন্থেসিসের জন্ম, সেই সিন্থেসিসের এন্টিথিসিসের মধ্যে দিয়েই নব নব তত্ত্বের উদ্ভাবন হওয়ার কথা। কিন্ত সেসব কিছুই হয় নি গত দেড় শতকে। মার্ক্সবাদ ঐতিহাসিক বস্তুবাদের মধ্যে প্রথমে ঢোকে-তাতেও কিছু সত্য ছিল-কিন্ত এর পরে লেনিনের হাতে পরে এর মধ্যেও যেটুকু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিছিল-সেটিও অচিরে কবরে ঢোকে। মার্ক্সবাদের ধর্ম হয়ে ওঠার কাহিনী আমি পাঁচ বছর আগেই লিখেছিলাম।
স্যার কার্ল পপার এবং তার অনুগামীরা যতই প্রমাণ করুন মার্ক্সবাদের কবর কিভাবে দেওয়া হয়েছিল, অধিকাংশ লোক, যারা নিজেদের মার্ক্সবাদি বলে মনে করে, তারা মার্ক্সকে বুঝেছে পার্টি লাইন অনুসারে।
আমাদের ভারতে অনেক মার্ক্সবাদি দল-সিপিএম, মাওবাদি, লিবারেশন। এদের সবার নিজস্ব মার্ক্সবাদ আছে। যিনি পার্টি মেম্বার হবেন, তাকে মার্ক্সবাদের সেই ব্যাখ্যাটিই মানতে হবে। ফলে মার্ক্সবাদ কি, তা দীর্ঘদিন নির্নয় করেছে সোভিয়েত কমিনিউস্ট পার্টি-কারন তাদের অর্থ সাহায্যেই চলেছে বিশ্বের বাকীদেশের কমিনিউস্ট পার্টিগুলি। এই জন্যেই মার্ক্সবাদের সঠিক এবং মুক্ত চর্চা মোটেও হয় নি-এবং মার্ক্সিয় সাহিত্য ও দর্শনের ওপরে প্রায় সব লেখাকেই আমার আবর্জনা বলেই মনে হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে লেখকের দর্শন শাস্ত্রে কোন জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও এখান ওখান থেকে না বুঝে টুকে দীর্ঘ সব প্রবন্ধ রচনা করে গেছেন তারা। ভারতেও সিপিএম, সিপি আই এম এল বা মাওবাদিদের মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা সেই একই ধরনের আবর্জনা।
এর মানে অবশ্যই এই নয় সোভিয়েতে ইউনিয়ানের সবাই গর্দভ ছিলেন-দর্শন শাস্ত্র তারা বুঝতেন না। মোটেও তা না। বরং ১৯৬০-৭০ সালের মাঝামাঝি পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দার্শনিকের কাছেই মার্ক্সবাদ বনাম লেনিনবাদের পার্থক্য ভাল ভাবেই ধরা পড়েছিল-তারা মার্ক্সবাদ সঠিক ভাবেই অনুধাবন করেছিলেন-কিন্ত যেহেতু পার্টিলাইনের বাইরে মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা দিতে গেলে সাইবেরিয়াতে কাটাতে হত বাকী জীবন-তারা একটি চতুর স্ট্রাটেজি নেন [1]। সাপ মেরে লাঠি না ভাঙার এই নীতি থেকে মার্ক্সীয় “বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লব” বলে একটি রাজনৈতিক দর্শনের তারা জন্ম দেন। কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে পার্টির কুনজর থেকে নিজেদের বাঁচাতে তারা মোটেও তাদের মতবাদই সঠিক মার্ক্সবাদ তা দাবি করেন নি। বরং কমিনিউস্ট বিপ্লবের পরিপূরক হিসাবে, ধণতান্ত্রিক সভ্যতার সাথে সমান তালে প্রতিযোগী করার জন্যে, তারা এটা উপস্থাপন করেন [২]। যদিও ১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পরে, ইউরোপের এক বিশাল অংশের একাডেমিশিয়ানরা মেনে নেন, জন বিপ্লব না, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লবই প্রকৃত মার্ক্সবাদি রাজনৈতিক পথ। কারন মার্ক্সীয় মতবাদের কোথাও লেখা নেই জনবিপ্লব বা কোন আদর্শবাদ দিয়ে সমাজ়ের পরিবর্তন হয়। মার্ক্সীয় মতবাদে সমাজের পরিবর্তন আসে এক মাত্র উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনে। আর উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন কি আদর্শবাদ দিয়ে হয়? একমাত্র বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতিই উৎপাদন ব্যাবস্থা বদলাতে পারে। অবশ্য অনেক মার্ক্সবাদিই বলবেন কেন? উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর জনগণের মালিকানা এলেই উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেল। এতেব সমাজও বদলে গেল। বেসিক্যালি এটাই ছিল দীর্ঘদিনের মার্ক্সবাদ-যা আদি মার্ক্সিয় তত্ত্বের অপব্যাখ্যা ছারা কিছু না এবং মার্ক্সের অধিকাংশ রচনার সাথে সম্পূর্ন ১৮০ ডিগ্রিতে এর অবস্থান। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়ানে খুব ভালোভাবেই প্রথম ব্যাখ্যাটিকে তাত্ত্বিক এবং বাস্তবভাবে গ্রহণ করা হয় এবং সেই অনুপাতে সোভিয়েত ইউনিয়ান আমেরিকার থেকে অনেক বেশী টাকা খরচ করেছে গবেষনাতে। কিন্ত বাস্তবে বর্তমান পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার এসেছে আমেরিকা থেকে। “ক্যাপিটাল” থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জনমুখী নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন সম্ভব হয় নি সোভিয়েত ইউনিয়ানে। ফলে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইলেকট্রনিক্স , টিভি, রেডিও থেকে ইলেকট্রিসিটি-সব কিছুই ধণতান্ত্রিক সভ্যতা থেকে এসেছে-কিছু মারণাস্ত্র ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ান সার্বিক ভাবে ব্যার্থই বলা যায়।
এই ব্লগে মার্ক্সীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিপ্লবের রাজনৈতিক লাইন নিয়েই আমি লিখছি।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিই মানুষের প্রতিটি জ্ঞানের ধারা নিয়ন্ত্রন করবে!
আমি পাঁচ বছর পূর্বে বিজ্ঞানবাদ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম-বক্তব্য ছিল –ভাববাদি বক্তব্য বলে আর কিছু থাকবে না। আস্তে আস্তে আমাদের জ্ঞানের প্রতিটি শাখাই বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হবে-এবং তার একটি দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছিলাম।
( এটি ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন-অনলাইন পড়লে অক্ষর ভেঙে যাবে)। বাস্তবে ১৪০ বছর পূর্বে বস্তুবাদের বিবর্তন হিসাবে মার্ক্স এবং এঙ্গেলেস ঠিক একই কথা বলে গেছেন । (অবশ্য তাতে এই প্রবন্ধ পড়ে কমিনিউস্টদের আমাকে গালি দেওয়া আটকায় নি। যদি লিখে দিতাম, মার্ক্স আর এঙ্গেলেসের কথাকেই এক বিংশ শতাব্দির পার্সপেক্টিভে লিখছি-তাহলে হইত ধন্য ধন্য করতেন! বাম বাঙালী শুধু নামে চেনে! )
Outlines of the critics of Political Economy প্রবন্ধে
মার্ক্স এর বক্তব্য ছিল বিজ্ঞানের বলেই মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে। এবং ধণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় “পুঁজির” উদ্ভাবনের মাধ্যমেই মানুষ বিজ্ঞানের দ্বারা উন্নততর উৎপাদন করছে-এই জন্যেই বিজ্ঞানকে একটি স্বয়ংপূর্ন শাখা হিসাবে দেখতে হবে, যেখানে উৎপাদন ব্যাবস্থাটিই বিজ্ঞান প্রযুক্তির একটি শাখা হিসাবে পরিণত হচ্ছে ( The productive process becomes sphere of application of science)।
শেষের কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরবর্তীকালে এরই সূত্র ধরে Buchholz, Burruchter and Hoffmann বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে মার্ক্সিয় দৃষ্টিভংগী নিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন [3]।
বুছোল্ড মূলত তিনটি কারনকে জোর দিলেন-অবশ্যই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ানের পরিপেক্ষিতে। কিন্ত তার বক্তব্যের বেশ কিছু অংশ এখনো মুল্যবান
(১) ঐতিহাসিত বস্তুবাদের আসল চালক, বা সমাজ পরিবর্তনের মূল ক্যাটালিস্ট প্রযুক্তি। সুতরাং সমাজতান্ত্রিক সিস্টেম প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে না গঠিত হলে তা ধণতান্ত্রিক সমাজের উৎপাদনের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে-
(২) সামাজিক বিবর্তন মানে একই সাথে রাজনীতি, চিন্তাধারা, পোষাক, উৎপাদন ব্যাবস্থা, অর্থনীতি-সব কিছুর বিবর্তন, যারা একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং মার্ক্সীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা কখনোই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন হতে পারে না-কারন এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মধ্যে দিয়েই সমাজের নানান বিবর্তনগুলির মধ্যে যোগসূত্র সংস্থাপন সম্ভব।
(৩) এই মুহুর্তে আমাদের সমাজের বৌদ্ধিক সংঘাত সাংঘাতিক রকমের বেশী-নানান ধরনের রাজনৈতিক ও আদর্শবাদের মধ্যে , তাদের অনুগামীদের মধ্যে হিংসা এবং যুদ্ধ অব্যাহত। এই সংঘাত কমাতে মানব জ্ঞানের প্রতিটি শাখাতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ আবশ্যক ( এই কথাটিই আমি বিজ্ঞানবাদ প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করেছি এবং লিখেছি)।
সোভিয়েত এস টি আর স্কুলের আরেকটি বিশেষ অবদান হল, তারা সামাজিক প্রগতিকে দেখছেন, সমাজে বিজ্ঞানের প্রচলন এবং বিজ্ঞানের ভিত্তি কত দৃঢ় তার ওপর ভিত্তি করে [1] । তাদের কাছে প্রতিটি সমাজের প্রগতিশীলতার নির্নায়ক হচ্ছে সেই সমাজে বিজ্ঞানের ব্যাবহার-আর পিছিয়ে থাকাটা মাপা যায় সেই সমাজে ধর্মর ব্যাবহার দিয়ে। এখানে ব্যাবহার কথাটা গুরুত্বপূর্ন-আমেরিকাতে ধার্মিক আছে-কিন্ত ধর্মের ব্যাবহার কিছু রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে সামাজিক আইন কিন্ত সমাজবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করেই বানানো হয়। অন্যদিকে মুসলিম দেশগুলিতে সামাজিক আইন ধর্ম নির্ভর-তাই এই সোভিয়েত স্কুলকে মানলে খুব পরিস্কার ভাবেই ভারতের তথা মুসলিমদেশ গুলির পিছিয়ে থাকার কারন হিসাবে ধর্মকে সরাসরি দায়ী করা যায়।
দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের বামপন্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের চেতনাটাই নেই-ফলে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গে এখন ৩০০ মাদ্রাসা তৈরী করছে মুসলিমদের খুশী করতে। অথচ সোভিয়েত মার্ক্সবাদের এই স্কুলের চর্চায় খুব পরিস্কার ভাবেই ধর্মকেই
প্রগতির বিরুদ্ধে প্রথম অন্তরায় বলে দায়ী করা হয় [১]। কারন এদের মার্ক্সবাদের ব্যাখ্যা সার্বিক-শুধু রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না-আর তা সার্বিক বলেই তারা মনে করেন মার্ক্সবাদের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে আরো বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে-এবং সেই পথের প্রথম অন্তরায় ধর্ম।
তাহলে শ্রেণীদ্বন্দের কি হইল? সাধের শ্রেনী বিপ্লবের কি হইবে?
এরা বলছেন, শ্রেনী দ্বন্দের ভিত্তিও অবৈজ্ঞানিক ভাববাদি সমাজ। বৈজ্ঞানিক সমাজে শ্রেণী দ্বন্দ এমনিতেই থাকতে পারে না-কারন দ্বন্দের উৎপত্তির মূলেই আছে অসাম্য-আর যেহেতু সামাজিক অসাম্য একটি আনস্টেবল হিংসাত্মক রাষ্ট্র বা সিস্টেমের জন্ম দেয়, যেকোন বৈজ্ঞানিক সমাজই-সমাজের সব দ্বন্দগুলিতে বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই দূর করবে-কারন সেটাই প্রগতিশীলতা। অর্থাৎ মানুষের মনোজগতে যে বৈজ্ঞানিক চেতনা আসবে সেটাই আসল মার্ক্সীয় বিপ্লব। কারন সেটা সাধিত হলে সামাজিক সাম্য যুক্তির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। অর্থাৎ এরা মানেন মনোজগতের বিপ্লবই আসল মার্ক্সীয় বিপ্লব।
এই মার্ক্সবাদি স্কুলের বক্তব্য অনুযায়ী বিজ্ঞান চেতনায় জনগনকে শিক্ষিত করা – রাষ্ট্র এবং উৎপাদন ব্যাবস্থার মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলির প্রতিষ্ঠাই আসল মার্ক্সবাদি লাইন। এবং এটি করতে গেলে সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে ভাববাদি বা ধর্মের প্রতিটি হাতকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে-সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যেটা বামবাঙালী ভোট হারানোর ভয়ে করে না। উলটে মাদ্রাসা স্থাপন করে।
( বহুদিন ধরে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি আসল মার্ক্সবাদি লাইন বলতে কি বুঝি। এবং আমি যা বুঝেছিলাম তা বাম বাঙালীর থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই লেখাটা আবিশ্যিক ছিল। )
[1] Soviet Marxist Philosophy of Technology : Friedrick Rapp
[2] Towards conceptual interaction among Soviet Philosophy, Neo-Thomism, Pragamatism and Phenomenology : T. J . Blakeley
[3] The scientific Technological Revolution and Soviet Ideology-Buchholz
ঠিক।
লেনিনবাদ সব জায়গাতেই দৈত্য তৈরী করেছে। এটা নিয়ে আমি অনেক লিখেছি। আর প্রযুক্তি বিপ্লব নিয়ে কোন সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট হয় নি। তাই তুলনা আনব কি করে? আপনি হঠাৎ আমার লেখা পড়ছেন বলে আপনার এটা মনে হচ্ছে। ধারাবাহিক পাঠকদের জন্যে সমস্যা নেই।
সাইরিল স্মিথের একটি বক্তব্য নিয়েই আমার শুরু ছিল-সেটা হচ্ছে
মার্কসবাদের পুনমূল্যায়ন করা দরকার-কারন লেনিনবাদি গুন্ডা্মোর জন্যে(পড়ুন পার্টি লাইনে মার্কসবাদের ব্যাখ্যা) মার্কসবাদের সঠিক বিবর্তন হয় নি।
তাছারা আমি কমেন্টে সেসব ব্যাখ্যাও করেছি-এটাত আনন্দবাজারের প্রবন্ধ না। সোশ্যাল মিডিয়াতে কমেন্টগুলোও প্রবন্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ-এবং সেখানে সাইরিল স্মিথের ব্যাখ্যা এবং প্রবন্ধটিও আমি দিয়েছি। আপনার এই মন্তব্য একদম সেকেলে চিন্তাধারার ফসল।
এই লাইনগুলোর মধ্যে কোন যুক্তি পেলাম না। বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত্তিই হচ্ছে সমালোচনা-বা ফলসিফিকেশন। যার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ যত শক্ত, সেই তত্ত্ব তত শক্তিশালী হয়।
আপনার এই বক্তব্য বিজ্ঞানের দর্শনে অজ্ঞতার প্রমাণ। বিজ্ঞানের
দর্শন দাঁড়িয়েছে ফলসিফিকেশনের ওপর-সেখানে কোন তত্ত্বই স্থায়ী না-নির্ভুল না-সেটাই তার স্বতঃসিদ্ধ। ডারউইনবাদি কথাটা আই ডি বা ইন্টালিজেন্ট ডিজাইনের লোকেরা বদমাইশি করে ব্যাবহার করে যাতে এদের সাথে স্টালিন এবং হিটলারের কুকীর্তি মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। একজন মার্কসবাদি নিজেকে মার্কসবাদি বলে, কিন্ত ডারুইনের চর্চা যারা করে, তারা নিজেদের কোন বাদি বলে জানা নেই। সবটাই কিছু অন্য ক্যাম্পের অন্ধ লোকেদের প্রচারনা।
ঠিক তাই। কারন আমার দেখা ৯৯% মার্কসবাদিই আসলেই এন্টিথিসিসের গুরুত্ব এবং প্রয়োগ বোঝে না। বুঝলে প্রথমেই তারা লেনিনের ঢপ বুঝতে পাড়ত। সেই জন্যেই তাদের কাছে মার্কসবাদ, বাইবেল, কোরানে পার্থক্য নেই। এবং তারা গোঁড়া।
দেখুন না, এখানে মাসুদ রানা নামে এক ব্যাক্তি অনেক বড় বড় কথা বলে গেলেন। আমি লেনিনের লেখাতে এন্টিথিসিস চাইতেই তাকে আর এ চত্ত্বরে দেখা যাচ্ছে না।
এই সব হাওয়াতে ওড়ানো বক্তব্য রেখে কোন লাভ নেই। যদি আপনার সিরিয়ার আলোচনা করতে চান-লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ থিসিসে এন্টিথিসিস আদৌকিছু আছে কি না -সেখান থেকে শুরু করুন। এই চ্যালেঞ্জটা মাসুদ রানাকে নিতে বল্লাম, উনি ত নিলেন না।
লেনিন আর মার্কসের লেখাকে পাশা পাশি রেখে ব্যাবচ্ছেদ করা যাক। তাহলেই দুধ বনাম জল পরিস্কার হবে।
@বিপ্লব পাল,
আমার পাঠ-প্রতিক্রিয়ার বাকী অংশ শেষ করে আপনার এই জবাবের জবাব দেব। এখন কেবল ‘ডারউইনবাদ/বাদী’ সম্পর্কে দুয়েকটি কথা বলে যাচ্ছিঃ ডারউইনবাদ বিষয়ক আপনার বক্তব্য সঠিক নয়। ‘ডারউইনবাদী’ কথাটি কোনভাবেই আইডি-অলাদের সম্পত্তি নয়। আমেরিকাতে তাদের জোরালো ক্যাম্পেইন আছে ঠিকই, কিন্তু আমেরিকায় এবং আমেরিকার বাইরে, বিশেষত য়ুরোপে ‘ডারউইনবাদী’ অভিধাটি বিজ্ঞানীমহলে বহুলভাবেই ব্যবহৃত হয়।
আপনি আরো দাবী করেছেন ডারউইনবাদের সমর্থকেরা নিজেদেরকে ডারউইনবাদী বলে না, এটিও সত্যি নয়। আপনি ‘বাদী’ বলার বিপক্ষে, তাই সম্ভবত ধরেই নিয়েছেন যে, সকলেই ‘বাদী’ বলার বিপক্ষে থাকবেন। আসলে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। খোদ রিচার্ড ডকিন্স নিজেকে ডারউইনবাদী বলেন। ডকিন্সকেও কি আপনি আইডি’র সমর্থক বলবেন? পাল সাহেব, আপনার দাবী কেবল ভিত্তিহীনই নয়, এক ধরণের সচেতন মিথ্যাও বটে।
বিতর্কে কোন বিষয়কে একটি যুক্তিও না দেখিয়ে ‘অন্য ক্যাম্পের অন্ধ-প্রচারণা’ বলে এড়িয়ে যাওয়াটা কিংবা মিথ্যার আশ্রয় নেয়াটা প্রেজ্যুডিসের এক ধরণের প্রকাশ বলে মনে হয়। এবং আমার ধারণা, আপনি একমত হবেন যে, চিন্তার ও তর্কের এ পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয়।
@আরিফ রহমান,
ডারউইন ক্যাম্পের লোকেরা নিজেদের ডারুইনবাদি বললেও সেই ব্যাবহার ব্যাঙ্গাত্বক। যা আমি নিজেও করি। আপনি এখান থেকে দুটো লাইন দেখে নিন।
While the term has remained in use amongst scientific authors, it is increasingly regarded as an inappropriate description of modern evolutionary theory.[7][8][9]
http://en.wikipedia.org/wiki/Darwinism
অন্যকে মিথ্যেবাদি ইত্যাদি বলার আগে নিজে একটু গুগল করে দেখলেই ত পারতেন।
@বিপ্লব পাল, daদাদা, মার্ক্সবাদ নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নাই। তবে যারা বিবর্তনবাদকে যারা ডারুইনবাদ বলে থাকে আর বিজ্ঞানে বাদ-বাদী আছে বলে লম্ফ-জম্ফ করে আর এর মাধ্যমে মার্ক্সবাদকেও জায়েজ করার চেষ্টা করে তাদের অপচেষ্টার প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বাংলার শ্রেষ্ঠ জোকার হিসেবে যার ফেসবুক ফ্যান ক্লাব আছে সেই হয়রানের কৌশল বাংগালী ‘বাম্পন্থী’রা কেন কপি-পেস্ট করছেন? তাদের বুদ্ধি-জ্ঞান কি সেই পর্যায়ে নেমে গেছে? বিবর্তনবাদ নিয়ে কিছুই না জেনে আমার লেজ কাটা পড়েছে বলে অন্যদের লেজ কেটে দেওয়ার মানসিকতা খুবই খারাপ লাগল। বিবর্তনবিরোধীরা ডারউইনবাদ শব্দটা উচ্চারণ করে কারণ তাহলে সোশ্যাল ডারউইনিজন টেনে এনে হিটলার-স্ট্যালিনের কুকীর্তি প্রচার করা সহজ হয়। এঈ সব ‘বাম্পন্থী’ দের উদ্দেশ্য কি?
ডারুইনবাদ ট্যাগিং করে অরিজিন অফ স্পিসিসের ভুল-ত্রুটি প্রচার করাই যায়। কিন্তু বিবর্তনবাদ গত দেড়শ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে। ভুল সংশোধন আর পরিমার্জন করে এগিয়ে যাওয়াই বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। অন্যরা যারা নিজেদের ‘বিজ্ঞান’ বলে দাবি করেন তারাও যেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
@পথিক,
অনেক পথ চলার পর আমি আবিস্কার করেছিলাম আসলে হিন্দুত্ববাদি, কমিনিউস্ট এবং ইসলামিস্টদের মধ্যে পার্থক্য নেই। এদের সবাই আসলেই বিজ্ঞান বিরোধি। কারন বিজ্ঞানের প্রথম স্বতঃসিদ্ধই হচ্ছে পরম সত্য নেই-আর সব তত্ত্বেই জল আছে। কিন্ত কোন কমিনিউস্ট কি মানতে চাইবে
ধণতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র থেকে কমনিউজমে উত্তোরনের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ভুল? ওই পরম সত্য না থাকলে কমনিউজম ও থাকে না।
অথচ ঐতিহাসিক বস্তবাদ মার্কসের রচনাতে এসেছে ১৮৫১ সাল নাগাদ। তাও মর্গান নামে এক আদি নৃবিজ্ঞানীর রূপকথার ওপর ভিত্তি করে।
সমস্যা হচ্ছে কমিনিউজমের ধারনাটাই আদি মার্কসবাদের বিপক্ষে যায়। কারন মার্কস একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়েই শুরু করেছিলেন।
@বিপ্লব পাল,
বটে! যেই না শুনলেন, রিচার্ড ডকিন্স নিজেকে ডারউইনবাদী বলে থাকেন, সাথে সাথে এখন ভোল পাল্টে আপনিও ডারউইনবাদী বনে গেলেন! তাও আবার ব্যাঙ্গাত্মক বিশেষণ হিসেবে! ডকিন্সও কি ব্যাঙ্গ করে নিজেকে ডারউইনবাদী বলেন নাকি, পাল বাবু?
আপনি কি বলেন আর কি বুঝান, ধরতে পারা মহা ঝক্কির কাজ! ক্ষণে বলছেন ডারুইনের চর্চা যারা করেন তারা নিজেদের ডারউইনবাদী বলেন না – ওটা ইন্টেলিজেন্ট ডিসাইন-অলাদের শয়তানি। ক্ষণে বলছেন, না না, ডারউইনের চর্চাকারীরাও নিজেদের ‘ব্যাঙ্গ করে’ ডারউইনবাদী বলে থাকেন!
আপনার ‘ডারউইন চর্চাকারীদের ডারউইনবাদী না ডাকার’ দাবী খন্ডন করতে গিয়ে আমি বলেছিলামঃ
জবাবে আপনি আপনার মিথ্যাকে সত্য বানাবার অপচেষ্টা করতে গিয়ে আমার জন্য নসিহত হিসেবে উইকিপিডিয়া কোট করলেনঃ
যার মর্মার্থ অনেকটা এরকম যে, যদিও ডারউইনবাদ শব্দটি বিজ্ঞানীমহলে এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে, তথাপি আধুনিক বিবর্তনীয় তত্ত্ব বুঝাতে এটি বেঠিক মনে করা হচ্ছে। কই, ডারউইন চর্চাকারীরা নিজেদেরকে যে ডারউউনবাদী বলেন না তা তো প্রমাণ করা গেল না! ফলে আপনার মিথ্যা মিথ্যাই রয়ে গেল।
আরো মজার ব্যাপার দেখুন, আপনার উল্লেখ করা ঐ উইকিরই পরবর্তী অংশে আছেঃ
জনাব পাল, যত্রতত্র কোট করার আগে, কেবল গুগোল করা নয়, গুগোলের সার্চ রেজাল্ট পড়ে সেটা বুঝবার সময় নেবার জন্য আপনাকে আহবান জানাচ্ছি।
আপনার লেখা থেকে এই বাক্যটি তুলে আনলাম একারণে যে কথাটি সাধারণ অর্থে যেমন সত্য, তেমনি আপনার লেখাটিতেই খুবই প্রাসঙ্গিক। যদি সমালোচনা গ্রহণ করতে আপত্তি না থাকে তাহলে আমার পাঠ-প্রতিক্রিয়া তুলে ধরছি।
এই লেখাটির শিরোনাম একজন পাঠকের মনে এই ধারণার জন্ম দেয় যে ভেতরে মার্ক্সবাদের আসল আর নকল রূপ সম্পর্কে আলোচনা পাওয়া যেতে পারে। আরো পাওয়া যেতে পারে জনবিপ্লব এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লবের তুলনামূলক আলোচনা। অর্থাৎ মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে আপনার অবস্থান পরিষ্কার, আপনি মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠার পক্ষে, কিন্তু কোন পথে প্রতিষ্ঠা হবে সেটি নিয়েই এই লেখা। লেখাটি পড়ার পর এই ধারণ হলো যে, আপনি দাবি করছেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লবই হচ্ছে মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠার আসল পথ, জনবিপ্লব নয়।
বেশ সিরিয়াস প্রসঙ্গ এবং ততোধিক সিরিয়াস আপনার দাবি। তাই আবার পড়লাম এবং হতাশ হলাম। আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও কোথাও পেলাম না মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠায় আপনার ‘কথিত’ দুই পথের তুলনামূলক আলোচনা, নিদেনপক্ষে যে পথটিকে বাতিল করছেন, সেটির বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ যুক্তিও পাওয়া গেল না, যেখান থেকে এই সিদ্ধান্ত টানা যায় যে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিপ্লবই হচ্ছে মার্ক্সবাদ প্রতিষ্ঠার আসল পথ, জনবিপ্লব নয়।
আপনি শুরু করেছেন সাইরিল স্মিথের মার্ক্সকে পুনর্মূল্যায় বিষয়ক কোন একটি প্রবন্ধের ভূমিকাতে আপনার মতানৈক্য সস্ত্বেও সেটি ভালো লাগা দিয়ে। কিন্ত অবাক কান্ড, একবারও উল্লেখ করেননি স্মিথ সাহেব কী কী বলেছিলেন, তার কোন কোন কথায় আপনি একমত, কোনগুলোতে নন। তাঁর সাথে আপনার মতৈক্য এবং মতানৈক্যের কারণগুলো কী কী। তাহলে কেন সেই প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করলেন?
এই কেন’র উত্তরে আমার ধারণা বলছি। আমার মনে হয়, এটি পাঠকের মনে এক প্রকারের প্রভাব তৈরির চেষ্টা। পাঠকের মনে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা যে মার্ক্সকেও বিনা-চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হয়নি, অনেক পন্ডিৎ তাঁর সথে দ্বিমত পোষন করেছেন। এতে সফল হলে সুবিধা হচ্ছে, লেখার পরবর্তী অংশে যদি আপনি আলোচ্য ব্যাক্তির বা মতের (মার্ক্স বা তার দর্শনের) বিরুদ্ধে স্বল্পযৌক্তিক বা অযৌক্তিক মতামতও দেন, পাঠক সেটিতে ততোটা অবাক হবে না, বরং একধরণের প্রচ্ছন্ন সহমত পোষণ করবে। পাঠককে এভাবে বিভ্রান্ত করে তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন আদায় করাকে আমি মনে করি অনৈতিক এবং অবশ্যই অবৈজ্ঞানিক।
এরপরে এনেছেন, ‘বাদ’ ও বাদীর কথা। বিজ্ঞানে বাদ ও বাদী হয় কি-না সেটা নিয়ে তর্কের সূচনা করেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, ‘বাদ’ যতদিন থাকবে ‘বাদী’ও ততদিন থাকবে। তার মানে এই নয় যে আজকে একজন মানুষ যদি এক ‘বাদে’র ‘বাদী’ হন তিনি আগামীকাল অন্য ‘বাদী’ হতে পারবেন না। খুব পারবেন। বাদের সংস্করণ/পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন রূপ ধারণ করলেই এক ‘বাদী’ আরেক ‘বাদী’তে রূপান্তরিত হবে। আর যে সকল ‘বাদী’ তাতে একমত হবেন না তারা পরিচিত হবে মৌলবাদী বলে। এখানে বিজ্ঞানকে ঢাল বানানোর প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞান কোন মতবাদ নয়, জ্ঞান সঞ্চারের পদ্ধতি। সুতরাং বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে গড়ে ওঠা মতবাদের অনুসারীদেরকে একধরণের ‘বাদী’ বলা যেতেই পারে। যেমন জীববিজ্ঞানে ডারউইনবাদের সমর্থককে বলা হয় ডারউইনবাদী। কেবল বিজ্ঞান নয়, চিন্তার প্রায় প্রতিটি শাখায়ই নানান বাদীর দেখা পাওয়া যায়। মানা বা না মানা আপনার অভিরূচি।
আবারও প্রশ্ন জাগে, কেন তাহলে এই বাদ-বাদীর প্রসঙ্গ আনলেন? কারণটা সম্ভবত এই আশায় যে, বিজ্ঞানে বাদ-বাদী নেই অথচ মার্ক্সবাদ ও মার্ক্সবাদীতে বাদ-বাদী আছে – পাঠককে এটি একবার বুঝাতে পারলে, মার্ক্সবাদ ও মার্ক্সবাদীরা যে ‘গোঁড়া’ সেটি পাঠককে বুঝানো সহজ হয়। বাঙালি শিক্ষিত সমাজে বিজ্ঞানের ভীষণ কদর! একই সঙ্গে বিজ্ঞান-বিরোধী কুসংস্কারের সবচেয়ে বড় ধারক এবং বাহকও তারাই! এই বৈপরীত্যের কারণে এদের মানসে বিজ্ঞান এমন একটা অদ্ভুত অবয়ব নিয়েছে যে, ঠিকঠাক মতো বিজ্ঞানের দোহাই দিতে পারলে হাতীকে কুলা, দড়ি, খাম্বা যাই বলা হোক না কেন তা-ই সত্য হয়ে ওঠে। সেই হাতীকে সাক্ষী রেখে আপনি ‘বাদ’ ও ‘বাদী’কে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণের প্রয়াস পেয়েছেন।
পাল সাহেব, আপনি কীভাবে জেনে গেলেন যে আমি স্মিথের লেখা পড়িনি? আমি তো আপনাকে বলিনি যে, আমি পড়িনি। কিন্তু তবুও আপনি রায় দিলেন, ‘সাইরিল স্মিথ আপনি পড়েন নি বলে এই কথা লিখলেন।‘ এটিই কি আপনার বিচার পদ্ধতি? এটি ‘অবজেক্টিভ’ না ‘সাবজেক্টিভ’? বাঙালী পাড়ায় বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কে একটাই সমস্যা, ‘আপনি জানেন না’; ‘আপনি বুঝেন না’; ‘আপনার কোনো ধারণা নেই’; ‘পড়ুন, তার পর কথা বলুন’। দয়া করে এ-সমস্ত ‘সাবজেক্টিভ’ কথা বলবেন না। আর অবশ্যই পড়ার উপদেশ দিবেন না। এটি রীতি-মতো বেয়াদবী। তর্ক ধরেছি, তর্ক করুন। আমার জ্ঞানের বিচারের ভার আপনাকে দিইনি। আমার উপস্থাপিত বিষয়ে কথা বলুন।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। বিজ্ঞানে নিউটনবাদ আছে কি নেই, তা আপনি বুঝতে চান পৃথিবীতে নিউটনবাদীর অস্তিত্বের দ্বারা। তার আগে আপনি ‘বাদ’এর অস্তিত্ব নির্ণয় করেছেন ‘গোঁড়ামো’র দ্বারা। আপনি ‘একটাই প্রশ্ন’ বলে আমাকে হুকুম করেছেন, ‘পৃথিবী খুঁজে বিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে একটি নিউটনবাদি বা আইনস্টাইনবাদি নিয়ে আসুন।’ আমি আপনার হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করছি। তবে ইন্টারনেটে খুঁজলে পেয়ে যাবেন।
আমার বক্তব্য ছিলো বিজ্ঞানে নিউটনবাদ আছে, এমনকি নিউটনিয়ান ফিজিক্সও আছে। নিউটনিয়ান ফিজিক্স আছে কি নেই? যদি থাকে তাহলে তাঁর নামে কেনো ফিজিক্স হতে যাবে? আপনি-যে নিউটনের সূত্রের কথা বলেছেন (উদাঃ গতির সূত্র), তা নিটনবাদের অংশ মাত্র – সমগ্র নয়। সমগ্র হচ্ছে তার বৈজ্ঞানিক দর্শন যা তার পূর্ববর্তী এ্যারিস্টটলীয় এবং তার অনুসারী আরবীয় বৈজ্ঞানিক মতবাদকে প্রতিস্থাপিত করেছে। গতি, আলো, বর্ণ, শব্দ, মধ্যাকর্ষণ, মহাকর্ষণ ইত্যাদি সূত্রে নিউটনের গণিত ভিত্তিক নতুন বৈজ্ঞানিক দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে। বিজ্ঞানের সূত্র পড়ে বিজ্ঞান বুঝার চেষ্টা কলেজ পড়ুয়াদের কাজ। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফিলসফী অফ সায়েন্স এবং তার সাথে বিজ্ঞানের ইতিহাস। তাহলে আমরা জানতে পারবো ক্যালীর অনুরোধে নিউটন তার লেখা প্রকাশ করার পর কী ভাবে দলে-দলে নিউটনবাদীর সৃষ্টি হয়েছিলো এবং এদের মধ্যে কী পরিমাণ ‘অবুঝ’ ছিলো। ষোলো-সতেরো শতকে ইউরোপ পরস্পর-বিরোধী বৈজ্ঞানিক মতবাদ ও বাদীদের তর্ক বিতর্কে মুখরিত। এমনকি ভিন্ন-মতবাদী বিজ্ঞানীদের রক্তে রঞ্জিত। বিজ্ঞানে মতাবাদ ছিলো এবং এখনো আছে, তা আপনি মানুন বা না-মানুন।
বিজ্ঞান সম্পর্কে রোমান্টিক ধারণা হলো, বিজ্ঞানে ১০০% অবজেক্টিভিটি সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। আর, উপরের দিকে বিজ্ঞান অতিমাত্রায় দার্শনিক এবং সে-অর্থে অবজেক্টিভ নয় (এমনকি সাবজেক্টিভ)। সেখানে বিভিন্ন মতবাদ ও মতবাদী বৈজ্ঞানিকের অস্তিত্ব রয়েছে। ওঁরা মিছিল করেন না বটে, তবে অবশ্যই কনফারেন্স করেন, দলা-দলি করেন দার্শনিক ও স্ট্র্যাটেজিক লাইনে এবং স্কলারলী জার্নালে বিস্তর তর্কাতর্কি করেন নিজেদের মতবাদের পক্ষে এবং ভিন্ন মতবাদের বিরুদ্ধে। বিজ্ঞান একটি ডিসকৌর্স যা আপনিতেই রিভিলড্ হয় না। মানুষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিজ্ঞান সৃষ্টি করে। এবং এ-উদ্দেশ্য অবশ্যই মূল্য-বোধ রহিত নয়।
আরকটি কথা, বিজ্ঞান ‘প্রমান’ করে বলে যা সাধারণভাবে যা মনে করা হয়, বিজ্ঞানের দার্শনিক পর্যায়ে কিন্তু তা মনে করা হয় না। এক্সপেরিমেন্টে আমরা হাইপোথেসিস ‘প্রমান’ করি নাল-হাইপোথেসিস ভ্রান্ত প্রমান করার মাধ্যমে এবং তাও ১০০% নয়। ইনফারেন্সে ‘জিরো পয়েন্ট জিরো ফাইভ লেভেল অফ সিগনিফিকেন্স’ই যথেষ্ট। আর সে-কারণেই বিজ্ঞান ধর্ম নয়। তাই এক কালের বিজ্ঞানীকে পর্ববর্তী কালের বিজ্ঞানীরা অপর্যাপ্ত – এমনকি ভুলও – প্রমাণিত করতে পারেন। পৃথিবীতে চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই।
আপনি মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন মার্ক্সবাদেরই উপর দাঁড়িয়ে। এটি হচ্ছে গাছের মগডালে বসে গাছের কাণ্ড কাটার মতো। মার্ক্সবাদী প্যারাডাইম থেকে বেরিয়ে লড়াইটা করুন। হেগেলীয় থিসিস-এন্টিথিসিস-সিন্থেসিস দিয়ে তা হবে না। আপনাকে সম্ভবতঃ নিজস্ব মতবাদ জন্ম দিতে হবে এবং তা এক সময় হয়ে উঠতে পারে ‘পালবাদ’।
@মাসুদ রানা,
:yes: :yes:
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম, বাদ-মতবাদ, বিজ্ঞান, দর্শন বুঝে নয়। আসলেই তা খুব একটা বুঝিও না, তবু পড়ি, বুঝার চেষ্টা করি। আপনাদের তর্কাতর্কি দেখে এইমাত্র আ ফ ম উবায়দুর রহমান অনুবাদিত বার্টেন্ড রাসেলের একটি পুরাতন বই দর্শনের সমস্যা পড়ে শেষ করলাম। কতটুকু বুঝেছি নিজেই জানি না। থ্যাঙ্ক ইউ দিয়েছি এ জন্যে যে, আপনার উভয় মন্তব্যে বাংলা বানান ভুল খোঁজে পেলাম না, পক্ষান্তরে বিপ্লব পালের উভয় লেখায় প্রচুর বাংলা বানান ভুলের ছড়াছড়ি যা সত্যিই দৃষ্টি কটু। এরকম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধে যদি বানান ভুল হয়, আমার মত সাধারণ পাঠক মনে করবে এটাই শুদ্ধ। তাই এ ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার জন্যে বিপ্লব পালের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
@আকাশ মালিক,
মালিক সাহেব, ভেবেছিলাম কোনো কিছুরই জবাব দেবো না। কিন্তু অতি সম্প্রতি বিনয়কে দূর্বলতা হিসাবে চিত্রিত করায় লিখতে হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু আপনিই প্রথম জবাব-দাতা, আপনাকে লেখার মধ্য দিয়ে শুরু করছি। আপনার উত্থাপিত ‘যত্নবান’ হবার কন্সেপ্টটা জরুরী। শুধু বানানে নয়, সবকিছুতে। ইতিবাচক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখা আমার ভালোলাগে। আপনি দারুন কাজ করেছেন। সে-জন্যে আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। সমালোচনার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
মাসুদ রানা
লন্ডন
@মাসুদ রানা,
মার্ক্সবাদ বা বিজ্ঞান – কোনটা নিয়েই আমার বেশি পড়াশোনা নেই। অল্প যা জানি বা বুঝি তাতে আপনার
এই কথাটার সাথে একমত পোষণ করি।
সামাজিক বিজ্ঞান বা সোশ্যাল সায়েন্সের অনেক কিছুই (বেশির ভাগ বললাম না কারণ টেকনিক্যালি অর্থনীতিও সোশ্যাল সায়েন্সের মধ্যে পড়ে, আর যদ্দুর জানি অর্থনীতির অনেক সূত্রই ঠিক সাবজেক্টিভিটির ওপর দাঁড়ানো বলা যাবে না।) আপেক্ষিকতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। মার্ক্সবাদ একটা দর্শন বা এ্যানালিটিক্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক, এটাকে কেন ‘বিজ্ঞান’ এর সূত্রের মতো করে প্রমাণিত হতে হবে?? ‘বিজ্ঞান’ নামক কনসেপ্টটার ব্যাপ্তি এখন অনেক অনেক বেশি বিস্তৃত। তা না হলে সামাজিক বিজ্ঞান নামক এই ঘরানারই তো জন্ম হতো না! বিপ্লব পালের এই বক্তব্য –
এটা একদমই বুঝতে পারি নি। বিশেষ করে যেখানে লেখক মার্ক্সবাদের এতোরকম বিবর্তন বা এর এতোগুলো ধারা উদ্ভূত হওয়ার সমালোচনা করছেন। যেমন পারিনি –
তো এই মনোজগতের বিপ্লব, তথা বিজ্ঞান চেতনা এবং যুক্তির বিস্তার – এটা ঠিক কীভাবে হবে বা করা হবে?
@বিপ্লব পাল – আপনি এক মন্তব্যের উত্তরে বলেছেন যে আপনার এই লেখাটা নাকি পশ্চিম্ বঙ্গের বামপন্থীদের উদ্দেশ্যে। তাহলে বোধহয় এটা পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা মার্ক্সবাদের নামে কী করেন বা না করেন, সেটার সপ্রমাণ বিবরণ বা বিশ্লেষণ হওয়াই উচিত ছিলো। পুরো মার্ক্সবাদকে টেনে, সেটাকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ প্রমাণ করার চেষ্টা করে, তার সাথে ক্যাপিটাল বা ধনতন্ত্র যে বিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে কত বড় সহায়ক সেটা দেখিয়ে, পুরো বক্তব্যটা আমার মতে খুব কনফিউজিংভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
@স্নিগ্ধা,
আমার মূল বক্তব্য থেকে দূরে সরে যেতে চাইছি না। সেটা হচ্ছে মার্কসীয় ফ্রেম ওয়ার্ক মেনে কি মার্কসীয় দর্শনের বিবর্তন হয়েছে? আমার বক্তব্য ছিল হয় নি। আমি মাসুদ রানাকে একটা সিম্পল টাস্ক দিয়েছি-ওটা ধরে খুঁজলেই আমার বক্তব্য আস্তে আস্তে পরিস্কার হবে।
কেন এমন হলো না? এটার জন্যে আরেকটা দীর্ঘ লেখা লিখতে হয়। গত শতাব্দিতে মার্কসিয় দর্শনে আধুনিক সমাজ এবং জৈব বিজ্ঞানের কিছুই
প্রায় ঢোকে নি। এটা কেন হল? কারন মার্কসীয় ফ্রেম ওয়ার্কটা সেই যবে থেকে কমিনিউজমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তবে থেকে মৃত্যু হয়েছে।
@বিপ্লব পাল,
আপনার স্পর্ধার তারিফ করছি। টাস্ক যে দিচ্ছেন, আপনি দিলেই যে অন্যে নেবে, এমন ভাবছেন কেনো? কিন্তু তার চেয়ে বড়ো কথা, বিনীত আমি জিজ্ঞেস করিঃ আপনি টাস্ক দেবার কে হে মশাই? আপনার সাথে আমার তর্ক তো মার্ক্সবাদ নিয়ে নয়। বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলছিলাম মশাই। প্রশ্ন যা করেছিলাম, তা আপনার প্রকাশিত লেখা থেকেই। তারই একটি উদ্ধৃতি স্নিগ্ধা দিয়েছেন। আপনি উত্তর না-দিয়ে, আপনার ‘বক্তব্য আস্তে আস্তে পরিষ্কার’ করার জন্য আপনি আমাকে টাস্ক দিয়ে দিলেন। চমৎকার! বড়ো জানতে ইচ্ছে করে, প্রশ্ন করলে উত্তর না-দিয়ে টাস্ক দেবার সংস্কৃতিটা আসে কোথা থেকে। বড়ো চেনা-চেনা লাগে। কেউ-কেউ একে দাদাগিরি বলে। তবে, জানেন কি-না জানি না, দাদাগিরির দিন ফুরিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। এখন যা করতে হবে, তা হলো মেনে নেয়া। আপনার বক্তব্য আপনাকেই ‘পরিষ্কার’ করতে হবে। ওটি আমার দায়িত্ব নয়। লোক-জনের কথা-বার্তায় কি বুঝতে পারছেন না, আপনার অবস্থান কোথায়?
মাসুদ রানা
লন্ডন
@Masud Rana,
দেখুন আমার প্রবন্ধের বক্তব্য পরিস্কার। লেনিনবাদিরা মার্ক্সের দর্শনের পিন্ডদান করেছে। সেটা প্রমান করতে এছারাত পথ নেই। এখন আপনি মার্ক্স বা লেনিন কি লিখেছেন, সেটা নিয়েও জানতে চাইবেন না, হঠাৎ হঠাৎ বিচ্ছিন্নভাবে মন্তব্য করবেন, সেটাতে কি লাভ? সবটাই ত ওপর চালাকি।
@মাসুদ রানা, :yes: :yes:
@রনি,
বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন! তাও আবার দুটো! একি বঙ্গীয় না কি ইঙ্গীয়? আশা করি বঙ্গীয় নয়। তবে হলেও ক্ষতি নেই।
মাসুদ রানা
লন্ডন
@Masud Rana,
ভাইয়া আপনার মন্তব্য ভালো লেগেছে তাই থামস আপ দিলাম। এটি বঙ্গীয় না কি ইঙ্গীয় তা সঠিক করে বলতে পারবো না। তবে ভালো লাগলে আমি এই ইমো টা ব্যবহার করি।
@মাসুদ রানা,
মুক্তমনায় স্বাগতম। আপনার মন্তব্য গোছানো, অতন্ত্য সুখপাঠ্য। আপনার মত শক্তিশালী লেখকেরা মুক্তমনায় লিখুন এই কামনা করি। কেবল একটি অংশে আমার আপত্তি আছে। আপনি বলেছেন,
নিউটনিয়ান ফিজিক্স আছে, কিন্তু সেটা নিউটনবাদ ভাবলে ভুল হবে। যে ব্যাপারটাকে নিউটনিয়ান ফিজিক্স বলা হচ্ছে সেটা রিলেটিভিটি এক্সক্লুডেড অংশ, এবং সেটা সব জায়গায় কার্যকরী নয় (যেমন আলোর গতিবেগের কাছাকাছি, কিংবা ব্ল্যাকহোলের প্রেক্ষাপটে ইত্যাদি)। কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেহেতু চরম অবস্থাগুলো নিয়ে কাজ করতে হয়না, নিউটনের ফিজিক্স দিয়েই কাজ চলে যায়, তাই আমরা সেটা ছোটবেলা থেকে শিখি, আর এর গণিতগুলো ব্যবহার করি – কিন্তু সেটাকে আলাদাভাবে ‘বাদ’ বলা যাবে না। একজন পদার্থবিদ কখনোই নিজেকে ‘নিউটোনিস্ট’ কিংবা ‘আইনস্টাইনিস্ট’ হিসেবে পরিচিত করেন না (অর্থনীতিবিদদের অনেকে যেমন নিজেকে ‘মার্ক্সিস্ট’ বলে ভাবেন, তার সাথে তুলনা করলে)। কারণটি খুবই সহজ। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র কিংবা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানেরই অংশ। কাজেই আলাদা করে কারো ‘আইনস্টাইনিজম’ বা নিউটোনিজম চর্চা করার কিছু নেই। একই কথা জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও খাটে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ কিংবা মেন্ডেলের বংশগতির তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এগুলো জীববিজ্ঞানেরই অংশ। সে হিসেবে প্রতিটি জীববিজ্ঞানীই কিন্তু বিবর্তনবাদী। ল্যামার্কের মতবাদ ভুল প্রমাণিত হওয়ার ফলে সেটা জীববিজ্ঞানের অংশ হতে পারেনি, সেটা অপাংক্তেয় হয়ে আছে ‘ল্যামার্কিজম’ অভিধায় অভিসিক্ত হয়ে। কাজেই আমার মতে যে কোন ধরণের ‘ইজম’ বৈজ্ঞানিক ধারণার পরিপন্থি।
আরো লিখুন মুক্তমনায়, এই কামনা রইলো।
@অভিজিৎ,
যতদূর বুঝতে পারলাম, মাসুদ রানা বলতে চাইছেন, বিজ্ঞানের একেবারে প্রান্তে কিন্তু সবই মতবাদ। যতদিন প্রমাণ না পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ধরুন প্রমাণ পেতে ২০০ বছর লাগল, এসময়টায় বিজ্ঞানের ওই প্রান্তটির চেহারা সমাজবিজ্ঞান বা ইতিহাসবিদ্যার মত আধা-খেঁচড়া নয় কি? যেমন পদার্থবিদ্যায় ঠিক এ মুহূর্তে কুৎসিত রকম ঝগড়া চলছে। এরকম আরো উদাহরণ দেওয়া যায়। এখন এসমস্ত বিতর্ককে বিজ্ঞানের বহির্ভূত ধরলে বলতে হবে স্বীকার করতে হবে বৈজ্ঞানিক সত্য আবিষ্কারের পদ্ধতিটাই অবৈজ্ঞানিক। সেটাই হয়ত ঠিক।
@রৌরব,
হ্যা। সেজনই ফলসিফিকেশনের ছাঁকনী আছে বিজ্ঞানের। ফলসিফিকেশনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হলেই কেবল তা বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠে, নাইলে তা ‘মতবাদ’ হিসেবেই থেকে যায় ( ফলসিফিকেশনের বৈশিষ্ট আরোপ করতে না পারলে তা এমনকি বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবেও গৃহীত হয় না)। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।
@অভিজিৎ,
নিশ্চয়ই। প্রমাণ না পেলে মানব কেন? কিন্তু প্রমাণ-পূর্ব যে তর্ক-বিতর্ক, টানা-হেঁচড়া, এটাকে যদি বিজ্ঞান না বলেন, তাহলে কিন্তু বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের একেবারে মূলে একটা অবৈজ্ঞানিক বা প্রাক-বৈজ্ঞানিক অংশ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
@রৌরব,
অবৈজ্ঞানিক বলা যাবে কিনা জানি না, তবে ‘প্রাক বৈজ্ঞানিক’ হয়তো বলা যেতেও পারে। কিন্তু যাই বলি না কেন, যে কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসাই শুরু হয় অনুকল্প বা হাইপোতথিসিস দেয়ার মাধ্যমে। মোটা দাগে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পদ্ধতির অনুক্রমটি হল এরকম –
১) প্রকৃতিক ঘটনা বা প্রপঞ্চের পর্যপেক্ষণ করা
২) প্রপঞ্চের কারণ অনুমান করে একটা সাময়িক বা অস্থায়ী ব্যাখ্যা বা অনুকল্প প্রদান ।
৩) কৃত্রিম পরিবেশে পরীক্ষা করা। পরীক্ষা থেকে পাওয়া যায় ডেটা বা উপাত্ত।
৪) প্রাপ্ত উপাত্ত পূর্বোক্ত অনুকল্প বা অনুসিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপুর্ণ কিনা তা যাচাই করা।
৫) প্রাপ্ত উপাত্তের বিশ্লেষণ অনুকল্পটির সাথে মিলে গেলে বার বার পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করা হয়। এতে কোন ব্যতিক্রম না পাওয়া গেলে অনুকল্পটিকে ‘তত্ত্ব’ হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। আর অনুকল্পের সাথে উপাত্তের বিশ্লেষন না মিললে পূর্বের অনুকল্পটি বাতিল করা হয় এবং শুরু হয় নতুন অনুকল্পের অনুসন্ধান।
৬) তত্ত্ব থেকে আরো নতুন নতুন অনুসিদ্ধান্তে বা অবরোহে উপনীত হওয়া, পূর্বাভাস প্রদান করা। নতুন পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ দ্বারা বারংবার এগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হলে, প্রপঞ্চটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য কিছু প্রপঞ্চকে তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করতে পারলে, তত্ত্বটিকে প্রকৃতিক আইনের (Natural Law) মর্যাদা প্রদান করা হয়, তা হয়ে উঠে বিজ্ঞানের অংশ।
কাজেই তত্ত্ব দেয়া থেকে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা ধোপে টিকবে কী না তা নির্ভর করে নিগূঢ় পরীক্ষার উপর, এবং সেটা থেকে পাওয়া সিদ্ধান্তের উপর। সেটা না করা গেলে কখনোই তা বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠবে না।
তবে আপনি ঠিকই বলেছেন যে, বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের একেবারে মূলে একটা অনুকল্প জাতীয় ব্যাপার কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু সেটা যাচাই করে সত্য প্রমাণিত হলেই তা বিজ্ঞানের অংশ হয়ে উঠে, নতুবা নয়।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ। কোন দ্বিমত নেই মনে হচ্ছে।
@মাসুদ রানা,
বিজ্ঞানে ১০০% অবজেক্টিভিটি সম্ভব না-সেটা সত্য-আর সেই জন্যেই বিজ্ঞানের দর্শন ফলসিফিকেশনের ওপর গঠিত। সমস্যা হচ্ছে মার্কসিস্টরা ত সেটাই মানে না। মানলে ত বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ঐতিহাসিক বস্তবাদই আস্তাকুঁড়ে যায়-কারন তার সপক্ষে কোন প্রমান নেই-বরং বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে আরো বেশী। কিন্ত মার্কসবাদিরা কি ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বাতিল করেছে? করে নি, সেই প্রশ্নটাই স্যার কার্ল পপার তুলেছিলেন।
তাহলে মার্কসবাদিরা বিজ্ঞানের দর্শনের মতন মার্কসবাদকে গ্রহণ করলো কোথায়?
আপনার মন্তব্য দিয়েই আপনাকে খন্ডন করি
এবার বলুন আপনার কথার প্রেক্ষিতে, মার্কসবাদে ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে চূড়ান্ত সত্য বলে ধরা হয় না ধরা হয় না? নাল হাইপোথিসি টেস্টিং এ কি ঐতিহাসিক বস্তুবাদ টিকবে?
বাইনারি উত্তর পেলে ভাল হয়।
প্রতিটি তত্ত্বের ফলসিফিকেশন হয় বলেই বিজ্ঞানে মতবাদ বলে কিছু হয় না-সবই প্রবাহমান একটি চিন্তার চিরন্তন ধারা।
আপনি মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন মার্ক্সবাদেরই উপর দাঁড়িয়ে। এটি হচ্ছে গাছের মগডালে বসে গাছের কাণ্ড কাটার মতো। মার্ক্সবাদী প্যারাডাইম থেকে বেরিয়ে লড়াইটা করুন
@মাসুদ রানা,
আচ্ছা আপনি একটা জিনিস আমাকে বোঝান ত। মার্কসবাদ দাঁড়িয়ে আছে এন্টিথিসিএর ওপর। তা মার্কসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলতে আপনি বলতে চাইছেন? এন্টিথিসিস মানেই ত প্রতিটা তত্ত্বের বিপরীত মুখী তত্ত্বকে ও যাচাই করতে হয়। তাহলে মার্কসবাদ বিরোধিতা ব্যাপারটা কি জিনিস? পোষ্ট মর্ডান দর্শন?
আমার বক্তব্যটা আপনি বোঝেন নি-সেটা হচ্ছে যারা মার্কসবাদি তারা মোটেও এন্টিথিসিস ফলো করে না-উদাহরণ স্বরূপ লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি থিসিসের লেখাটাই আমাকে এন্টিথিসিস দেখান। ওগুলো ত মার্কসবাদের নামে চালানো হয়।
আপনি শুধু একটা পয়েন্টে থাকেন-লেনিনের ঐ বিখ্যাত লেখাটিতে ৫ টি থিসিস আছে-লেনিন কোথায় তার এন্টি থিসিস দিয়ে সিন্থেসিস করেছেন আমাকে দেখান।
আসুন ছায়াযুদ্ধ ছেড়ে একটু মার্কসীয় সাহিত্যের গভীরে ঢোকা যাক। তাহলেই আমার বক্তব্য পরিস্কার হবে।
>>>
স্যোশাল মিডিয়াকে মেইন স্ট্রিম মিডিয়া বানানোর ইচ্ছা আমার নেই।
সাইরিল স্মিথ আপনি পড়েন নি বলে এই কথা লিখলেন। সাইরিলের বক্তব্য আজকে মার্ক্সবাদ যেহেতু লেনিনবাদি গ্যাংদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে, সেহেতু
মার্ক্সবাদকে উন্নত করার এটা একটা সুযোগ। এটা পড়ে নিন। আমি লেখাটা লিখেছি মূলতা আমাদের দিকের বামপন্থীদের উদ্দেশ্যে -যারা সাইরিলের লেখার সাথে পরিচিত।
নিউটনিয়ান , আইনস্টাইন মেকানিক্সকে যদি আপনি নিউটনবাদ বা আইনস্টাইন বাদ বলেন, তাহলে আমি একটাই প্রশ্ন করব-পৃথিবী খুঁজে বিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে একটি নিউটনবাদি বা আইনস্টাইনবাদি নিয়ে আসুন।
নিউটনের সূত্র নিউটনবাদ হয় না। কারন পৃথিবীর সর্বত্র এর ব্যাখ্যা এবং পরীক্ষা লদ্ধ প্রমান সমান হবে। এটি ১০০% অবজেক্টিভ। কিন্ত মার্ক্সীয় মতবাদের হাজার ব্যাখ্যা হয়-হাজার কিসিমের মার্ক্সবাদি রয়েছেন। ঠিক যেমন নানান ধরনের ইসলামিস্ট বা হিন্দুইস্ট রয়েছেন-কারন এখানে বেশ কিছু সাবজেক্টিভ দৃষ্টি ভংগী রয়েছে। কিন্ত ঠিক ঠাক এন্টি থিসিস ফলো করলে এটা আসা উচিত না। বলা যায় এন্টিথিসিসের কাজই হল, থিসিসকে অবজেক্টিভ করে তোলা-সেটা হয় নি বলেই মার্ক্সবাদি তৈরী হয়েছে।
পাল সাহেব, আপনার ফ্যামিলি প্রেশার পাঠাকদেরকে শোনাতে হবে কেনো? লিখতে হলে লিখে ফেলবেন। কৈফিয়ত-তো কেউ চায়নি আপনার কাছে। সময় পান কি পান না, সেটিও প্রসঙ্গ হওয়া উচিত নয়। বুদ্ধিবৃত্তিক লেখায় এ-অসমস্ত লিখতে যান কেনো? লেখার গুণেই লেখা দাঁড়াবে, কৈফিয়ত দিতে হবে না। স্মিথের লেখা অযথাই টেনে এনেছেন। তাকে যদি উদ্ধৃত করতে না চান, তাহলে কেনো তার কথা উল্লেখ করলেন? একে বলে বাহুল্যবাদ।
বিজ্ঞানে নিউটনবাদ বা আইনস্টাইনবাদ হয় না, এ-কথা কি ঠিক? মোটেও না। নিউটনিয়ান ফিজিক্স বলে একটা বিষয়ই আছে। তেমনি-ভাবে আইনস্টাইনিয়ান ফিজিক্সও রয়েছে। দয়া করে কর্তৃপক্ষীয় ভঙ্গিতে ‘হয় না’ বলে রায় দেবেন না। বিজ্ঞানে নিউটনবাদ ও আইনস্টাইনবাদ অবশ্যই আছে। আর, এ-রকম থাকা-না-থাকার কারণ হিসেবে আপনি যে ‘গোঁড়ামো’কে দায়ী করেছেন, তাতে বিজ্ঞান গোঁড়ামোর একটি আখড়াতে পরিণত হবে। বিজ্ঞানে বহু মতবাদের চর্চা আছে এবং এটি বিজ্ঞানী মাত্রই জানেন। ভ্যালু-ফ্রী কোনো বিজ্ঞান কখনও ছিলো না, এখনও নেই। আপনার লেখা প্রসঙ্গে এটি আমার প্রথম কর্তন। অন্যান্য বিষয়ে পরে আসছি।
প্রেমিজটা মনে হয় কিছুটা ধরতে পেরেছি, কিন্তু লেখাটা নিতান্তই ভূমিকা গোছের মনে হলো। আরেকটু ডিটেলড করতে পারতেন না?
“অর্থাৎ এরা মানেন মনোজগতের বিপ্লবই আসল মার্ক্সীয় বিপ্লব।”
আপনার এই লাইনটা পড়ে আমার ইসলামের জিহাদের কথা মনে পরে গেল। আমরা স্কুলে ইসলাম ধর্মে জিহাদের দুইটি ধরনের কথা পড়তাম। একটি রাজনৈতিক,অন্যটি ব্যক্তির নিজস্ব বা আত্তিক। অনেকে বলেন ইসলামে জিহাদ বলতে নাকি ব্যক্তিগত আত্তিক উন্নতিকেই বুঝায়। আপনার মার্ক্সবাদি ব্যাখ্যাটাও সেরকম মনে হচ্ছে। তবে এটাকেউ কেন জানি ভাববাদি, ভাববাদি লাগে।
@Atiqur Rahman Sumon,
মানুষকে নিয়েই সমাজ। তাহলে মানুষএর মনে বিপ্লব না এলে সামাজিক বিপ্লব আনা যায়-কিন্ত পেছনে লাঠি মেরে মানুষ মেরে বিপ্লব করতে হবে, যা কমিনিউস্টরা করার চেষ্টা করেছে। বস্তুবাদি দর্শনে উন্নতি করা কেন ভাব্বাদি হবে?