তাইরান আবাবিল
– মোকছেদ আলী*
প্রকাণ্ড একটা বই পড়ছি। বইয়ের ভিতর সবকিছুই আছে। অংক, ভূগোল, ইতিহাস, ব্যাকরণ সব। বইটা মনে হলো আই এ ক্লাসের সাজেশন বই। আমি ইতিহাসের অংশটুকু পড়ছি- কিন্তু অক্ষরগুলি সব উল্টাপাল্টা। কোনটা অক্ষর বড়, আবার কোনটা ছোট।
আমাদের এলাকার পৌর কমিশনার চাঁদ মিঞা এসে জিজ্ঞেস করল, কি কিতাব পড়ছেন? আমি কথার জবাব না দিয়ে বিরাট বইখানা তার হাতে দিলাম। চাঁদ মিঞা বইখানা হাতে নিয়ে ওজনটা অনুমান করে বলল, তা সের পাঁচেক হবে। একি অদ্ভুত কাণ্ড, চাঁদ আলির মুখে তো দাড়ি ছিল না। সকালেই দেখেছি, সেভ করা মসৃণ গাল। বইখানা হাতে নেয়ার সংগে সংগে তার মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি হয়ে গেল। ঠিক যেন স্যার সৈয়দ আহমদ। মনে মনে ভাবলাম বইটা কি যাদুর বই নাকি? আবার ভাবলাম, বইটা তো সাজেশন বই। চাঁদ আলী আমাকে ডেকে বলল, আকাশে দেখতে পাচ্ছেন কিছু, আর কানে কোন শব্দ? আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি অসংখ্য প্লেন। প্রচন্ড শব্দে সারা আকাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্লেনগুলি একেবারে কাঁচের মতো সচ্ছ। আকাশে সাদা মেঘের আড়ালে, রৌদের রশ্মি লেগে ঝিলিক মারছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি, লোকজন খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ছুটাছুটি করছে। লোকেরা বলাবলি করছে, এগুলি সব ইন্ডিয়ান যুদ্ধ বিমান, এখন বোমা বর্ষণ করে সমস্ত পাবনা শহর ধ্বংস করে দেবে। রাজিব গান্ধি বলেছে- বাংলাদেশের শহর বলতে আর কিছু রাখা হবে না। বোমা মেরে সব ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে শুধু পাড়া গাও রাখা হবে। শুনে চাঁদ আলী পাকা দাড়িতে হাতের আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো- আমাদের উপরে আল্লাহর রহমত আছে। আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আমরা সবাই মুসলমান। আমাদের ঈমানের তেজ আছে। আমাদের আত্মার শক্তি, প্রচণ্ড শক্তি। রাজিব গান্ধির বাবার বাবার ক্ষমতা নেই আমাদের এই পাবনা শহরে বোমা ফেলে, বলেই তার আঙ্গুলের ইশারায় আকাশের মেঘকে কি যেন বলল।
আল্লাহর মহা কুদরতের কি প্রচণ্ড শক্তি। মুহূর্তে উর্দ্ধাকাশে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় উঠল। ঝড়ের মধ্যে প্লেনগুলি দিশেহারা হয়ে পড়ল। সমস্ত প্লেনগুলি প্রচন্ড ঘূর্ণি ঝড়ের মধ্যে পড়ে প্লেন সব চূর্ণ হয়ে গেল। আমরা সকলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে লাগলাম। ৮/১০ খানা প্লেন নোটন কবুতরের মতো ডিগবাজী খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। কয়েকজন পাইলট প্লেনের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আমাদের উঠানে এসে দাঁড়ালো। আমি দ্রুত পদে তাদের কাছে এগিয়ে গেলাম। ৫/৬ জন পাইলটের মধ্যে একজনের মুখে চাপ দাড়ি। তার চেহারা দেখে মুসলমান বলে ধারণা হল। আমি তাকে ইসলামী কায়দায় সালাম দিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওয়ালায়কুম আচ্ছালাম বলে জবাব দিলেন।
আমি অপরাপর পাইলটদের ইংরেজীতে বললাম, আর ইউ ওয়েল? অর্থাৎ আপনারা কি সুস্থ? সংগে সংগে তারা উত্তর দিল, ইয়েস, উই আর অল ওয়েল। উই হ্যাভ নো গট এনি হার্ট। অর্থাৎ জ্বী, আমরা সবাই ভাল আছি, আমরা কোন আঘাত পাইনি। আমি তখন বললাম, কাম উইথ মি, বিকজ, নাউ ইউ আর মাই অনারেবল গেস্ট। আমার সাথে আসুন, আপনারা এখন আমার সম্মানিত অতিথি। তখন তারা আমার সঙ্গে সঙ্গে আমার বড় ঘরের দিকে আসতে লাগল। ইতোমধ্যে আকাশে ঝড় থেমে গেছে।
একজন অপরিচিত লোক এসে বলল, থানা থেকে এক্ষুনি পুলিশ আসবে। এবং এসব ভারতীয় পাইলটদের এ্যরেস্ট করে থানায় নিয়ে যাবে। এরা আমাদের দেশে বোমা বর্ষণ করে আমাদেরকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল। যদি আকাশে ঝড় না হতো তাহলে পাবনা শহর বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দিত। একথা শুনে পাইলটগণ আমাকে বলল, আমরা আপনাদের দেশে বোমা বর্ষণ করে আপনাদের উপকার করার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু আপনাদের কপাল মন্দ, ভাগ্য খারাপ তাই আমরা বোমা বর্ষণ করতে পারলাম না। আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে, একটু ক্ষুন্ন হয়ে বললাম, বোমা মেরে কোনদিন কারো উপকার করা যায় কি? তারা বলল, যায়, খুব যায়। এই বোমা তো আর এটম বোমা নয়। এটা কেমিক্যাল ইনসেক্টিসাইড বোমা। এর ভিতর আছে গ্যাসোলিন জাতীয় মিশ্র কেমিক্যাল। ঐ বোমা ফাটলে গ্যাস বের হয়ে পোকা-মাকড়, মশা-মাছি-তেলাপোকা-ছারপোকাসহ যা মানুষের সমুহ ক্ষতি করে, সেই সব কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয়ে যেত। আর মাঠের ফসল বিনষ্টকারী ইদুর, মাজরা পোকা, লেদা পোকা সব মরে ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু গোল বাধালো ঐ সাইক্লোন। যদি সাইক্লোন না হতো তবে তোমাদের যে কি মহৎ উপকার হতো তা আর কি বলব।
পাইলটদের মুখে এরূপ কথা শুনে আমি খুব আফসোস করতে লাগলাম। বললাম, আপনারা যে প্লেনগুলি নিয়ে এসেছিলেন ওগুলো কাঁচের মত স্বচ্ছ কেন। আর ওর ভেতর যে সব বোমা ছিল সেগুলির কি হল? তারা আমার কথার জবাব না দিয়ে ভোজবাজীর মত আমার সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল? আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
দাড়িওয়ালা মুসলিম পাইলটটি হঠাৎ ঝড়ের বেগে কোথা থেকে ছুটে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, থানা থেকে পুলিশ আসছে, তোমাকে আমাকে এ্যরেস্ট করবে। বাংলাদেশের পুলিশ নয়, ওরা ভারতীয় পুলিশ। সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। আমাকে এ্যরেস্ট করবে ভারতীয় পুলিশ। আমাদের পুলিশ তো খবর পেয়েছে, তারা এক্ষুনি আসবে। আর ভারতীয় পুলিশ সীমান্ত পার হল কেমন করে? মুসলিম পাইলটটি বলল, তোমার চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে গেছে নাকি? দেখতে পাচ্ছ না প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা চিনি, হাজার হাজার বস্তা আলু পেয়াজ সীমান্ত পেরিয়ে আসে। আর হাজার হাজার গরু আসে। সেগুলি যদি আসতে পারে তবে ভারতীয় পুলিশ আসবে তাতে আশ্চর্যের কি আছে। তোমরা তো জানো যে সীমান্তে যেসব বিডিআর রাখা হয়, কোন কাজে তাদের সীমান্তে রাখা হয়? চোরা কারবার বন্ধ করার জন্য, কিন্তু তারা যে নিজেরাই চোরাকারবারী। আরো কী সব বলতেছিল, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। এয়ারপোর্টের মিলিটারী ফার্মের পেটা ঘড়িতে রাত দুইটার সময় সংকেত দিল। শিয়রে ডিম করা হেরিকেনটি ফোর্স দিলাম। উজ্জল আলোকে ঘরখানা আলোকিত হল।
বালিশের তলায় রাখা হত ঘড়িটা বের করে দেখি ২ টা বাজে। চিন্তা করতে লাগলাম এই স্বপ্নের অর্থ কী? এই স্বপ্ন কেন দেখলাম? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া তো সহজ কথা নয়। স্বপ্ন এমন একটা বিষয় যার উপর আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান কোনই সমাধান দিতে পারে নাই। স্বপ্ন তত্ব বই পড়ে কোন সদউত্তর পাই নাই। আমার কয়েকটি কিতাব আছে। একটির নাম স্বপ্ন তত্ব বা খোয়াব নামা, আরেকটির নাম ছহি বড় খোয়াবনামা। আরো একটি খোয়াবনামা ও ফালনামা। এসব কিতাব দেখে স্বপ্নের তাবীর করা সহজ হয় না। ঐগুলি বর্ণমালার আদ্যাক্ষর দিয়ে অভিধানের মত করে সাজানো, অভিধানে যেমন একটি শব্দের মানে দেওয়া থাকে, এই সব খোয়াবনামাগুলিও ঠিক সেই রকম। যেমন, আ বের করা হল, তাতে লেখা আছে আম দেখিলে, আমগাছ দেখিলে, আমের পাতা দেখিলে, আম কাঁচা দেখিলে, আম খাইতে দেখিলে, আম বেঁচিতে দেখিলে, আম কাটিতে দেখিলে এইভাবে আছে। স্বপ্নে শুধু আম দেখলাম আর কিছু দেখলাম না। তাহলে খোয়াবনামা দেখে অর্থ বের করে একটু স্বস্তি পাওয়া গেল। কিন্তু আমি যে স্বপ্ন দেখলাম, খোয়াবনামাতে কিভাবে বের করব। প্রথমে দেখলাম একটা প্রকান্ড বই। এখন বলতে পারেন, বই দেখলে কি হয়, জ্ঞান অর্জন হয়। বেশতো আমার না হয় খুব জ্ঞান অর্জন হবে। আমি লোক সমাজে একজন জ্ঞানী বলে বিবেচিত হব এবং সম্মানিত হব। সবাই আমাকে দারুনভাবে সম্মান করবে। এবার তাহলে বইপড়া দেখলে কি হয়- সেটা বের করতে হবে। আবার বইয়ের ভিতর অক্ষর ছোট বড় দেখলে কি হয়, সেটা আবার বের করতে হবে। বেশ তো ভালো কথা, বইয়ের ব্যাপারে কয়েক দফা তাবির স্বপ্নতত্ত্বে বের করা গেল। আবার মজা দেখেন- বইটা অন্যের হাতে দেখলে কী হয়- দেখতে হবে। আবার বইটা চাঁদ আলী তো পাঠ করলো না। সে বইটা হাতের তালুর উপর রেখে হাতটা একটু নাচাইয়ে ওজন অনুমান করলো। অনুমান করে বলল, পাঁচ সের পরিমাণ হবে। এখন এই কথাটা স্বপ্নতত্ত্বে কিভাবে পাব? তাহলে দেখতে হবে- বইটা অপরে অনুমানে ওজন করলে কী হয়? এই পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেই যদি আমার নিদ্রা ভঙ্গ হতো তাহলে না হয় একটা তাবির সামঞ্জস্য করে নেওয়া যেত। কিন্তু তারপর, চাঁদ আলী আমাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে বলল। তাহলে স্বপ্ন তত্ত্বের আদ্যাক্ষর অনুসারে, কেহ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে কী হয়- আচ্ছা আমি তো আকাশের দিকে তাকিয়ে অসংখ্য যুদ্ধ বিমান উড়তে দেখলাম এবং সেই সব যুদ্ধ বিমানগুলি একেবারে কাঁচের মত স্বচ্ছ। তাহলে স্বপ্ন তত্ত্বের কিতাব মতে কি দেখতে হবে। তাহলে এবার একসঙ্গে দুটো প্রশ্নের সমাধান পাওয়া যাবে। যথা: ১) আকাশে অসংখ্য যুদ্ধ বিমান উড়তে দেখলে ২) বিমানগুলো কাঁচের মত স্বচ্ছ দেখালে কী হয়। বিমানের প্রচন্ড গর্জনে কান তালা লাগার জোগাড়, তাহলে কিতাবে কি দেখতে হবে- বিমানের প্রচন্ড শব্দ শুনলে কী হয়? এরপর চাঁদ আলীর মুখের চেহারার পরিবর্তন হল। চাঁদের মত মসৃণ মুখ সাদা দাড়িতে পূর্ণ হয়ে ইতিহাসের সেই স্যার সৈয়দ আহমদের মত হল, যিনি ‘দি স্পিরিট অব ইসলাম’ লিখে খ্যাতি লাভ করেছেন। তাহলে, কারো মুখে সাদা দাড়ি দেখলে কী হয়? এবার চাঁদ আলী বললেন, রাজীব গান্ধির বাবার বাবা মানে রাজীবের ঠাকুর দাদারও ক্ষমতা নেই সোনার স্বাধীন বাংলার শহর ধ্বংস করে। এবারে একটু গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গেলেন স্বপ্নের বইয়ের লেখকেরা। রাজীব গান্ধির দাদার ক্ষমতা নেই বাংলাদেশ দখল করার। আচ্ছা ও প্যারাটা না হয় বাদই দিলাম। এবার, প্রচন্ড ঘূর্ণি ঝড় বা ঘূর্ণি দেখলে কী হয়? ঘূর্ণিঝড়ে ভারতীয় যুদ্ধ বিমানগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এখন এই বিষয় স্বপ্ন তত্ত্ব কিতাবে কিভাবে লেখা আছে, তা কিভাবে খুঁজে বের করব। হয়ত সেখানে লেখা থাকবে সাইক্লোন দেখলে কী হয়: আবার থাকবে সাইক্লোনে প্লেন ধ্বংস হওয়া দেখলে কী হয়: আবার প্লেনের পাইলট দেখলে কি হয়: আবার প্লেনের পাইলটদের কথা শুনলে কি হয়:
এখন চিন্তা করে দেখেন এই স্বপ্নটার তাবির বিভিন্ন রকমের হল। আমি কোন অর্থটা ধরে মনে শান্তি পাব। অতএব বই বিক্রেতার লাভ বাড়বে। কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টার প্রকৃত তাবির পাওয়া গেল না। সুতরাং বাজারের প্রচলিত খোয়াবনামা দেখে প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। স্বপ্নের প্রকৃত তাবির জানতে হলে ইবনে শিরিনের ন্যায় আলেম ব্যক্তির কাছে গেলে তাবির জানা যাবে। কিন্তু বর্তমান ফেৎনা ফ্যাসাদের যুগে সেরূপ আলেম কোথায়?
আমার ধারণা- শয়নের পূর্বে যেসব চিন্তা করা হয়, অথবা কোন কাহিনী বলা যায়- সে সবগুলি এলোমেলোভাবে স্বপ্নের মধ্যে দেখা যায়। এই স্বপ্নটা দেখার পূর্বে যে কাহিনী বলেছিলাম- সেই কাহিনীটাই এলোমেলো বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়।
চার পাঁচজন শ্রোতার কাছে প্রাক ইসলামী যুগের একটি কাহিনী বলেছিলাম, সেই কাহিনী নিজের বুদ্ধির আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, কাহিনীর বিষয়বস্তুর সঙ্গে স্বপ্নের বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্য আছে। কাহিনীটি আল কোরানের সুরা ফিলের ইতিহাস।
ফিল মানে হাতি। রসুল ছাল্লাল্লাহু আলায়হেস সালামের পয়দায়েশের পূর্বে, ইয়েমেন দেশে এক শক্তিশালী বাদশা ছিল। প্রতি বৎসর জিলহজ্জ মাসে মক্কার কাবাঘরের তাওয়াফ এবং হজ্জ উপলক্ষে একমাসব্যাপী একটি মেলা বসত। বিভিন্ন দেশের বনিকেরা তাদের বিপুল পরিমাণ পণ্য সম্ভার নিয়ে মেলায় আগমন করত। বিভিন্ন দেশ হতে আগত তীর্থ যাত্রিরা ঐসব পণ্য ক্রয় করত। খাজনা বাবদ মক্কার কর্তৃপক্ষ যে অর্থ আদায় করত তাতে তাদের সংবৎসরের খরচের সংস্থান হত। মক্কার এই বিশাল মেলা দেখে ইয়েমেনের পরাক্রমশালী বাদশাহ আবরাহার ইচ্ছে হল- তার রাজধানী সানওয়াতে একটা মেলার আয়োজন করে। সে কারণে সে কাবাঘরের অনুরুপ একটি মন্দির নির্মাণ করে নিজ রাজ্যের জনগণকে মেলায় অংশগ্রহণ করতে নির্দেশ দান করল। অন্যান্য দেশেও ঢোল সহরত দিয়ে মক্কার মেলায় অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে, তার নির্মিত কাবায় অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ করল।
কোন একজন লোক রাত্রের অন্ধকারে নবনির্মিত মন্দিরে প্রবেশ করে পায়খানা প্রস্রাব করে মন্দির অপবিত্র করে চলে গেল। এই সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। কেহই এই মেলায় আসল না। বাদশা আবরাহা এতে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে মক্কার কাবা শরিফ ধ্বংস করার জন্য সহস্র সহস্র সৈন্য এবং হাতি নিয়ে সানওয়া হতে মক্কা অভিমুখে রওনা হল। এই দুঃসংবাদ শুনে কাবার খাদেমগণ বিচলিত হল। মক্কার শাসকগণ এই মুহূর্তে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করা তাদের সম্ভব হল না। কাবার খাদেম কোরায়েশ নেতা আবদুল মোত্তালেব উপায়ন্তর না দেখে দুই হাত উর্দ্ধে তুলে আন্তরিকভাবে আল্লাহকে ডেকে প্রার্থনা করল, হে মহাশক্তি, হে সর্বশক্তিমান, হে আল্লাহ, আমরা দুর্মতি আবরাহার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে অক্ষম। আমাদের না আছে অস্ত্রবল, না আছে সৈন্যবল। সুতরাং কিসের বলে আবরাহার বিরাট বাহিনীকে পরাস্ত করব। বিশেষ করে আমরা কোনদিন হস্তীবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করি নাই, আমাদের জনগণ হস্তী দর্শনও করে নাই। তাই হে সর্ব শক্তিমান, কাবার অধিপতি আল্লাহ, তোমার ঘর তুমি রক্ষা কর। আমরা একেবারেই অপারগ। এরূপ বলে আবদুল মোত্তালিব কাবাঘর পত্যিাগ করে চলে গেল।
আবরাহা মহাতেজে তার বিপুল সৈন্য বাহিনী, হস্তীবাহিনী নিয়ে মক্কার দিকে অগ্রসর হতে লাগল। খ্রিস্টান সম্রাট পরাক্রমশালী আবরাহা মনে মনে ভাবল, মক্কার কাবাকে এবার ধ্বংস করে, আগামী বছর থেকে আমার কাবায় হজ্জ হবে, মেলা হবে। আমার রাজ্যের আয়ের পথ বেড়ে যাবে। আমি নতুন করে আরেক কাবা তৈরি করব।
হাতির বহর এগিয়ে চলেছে। মক্কার কাছাকাছি গিয়ে পৌছেছে। হঠাৎ সব হাতি মাটিতে বসে পড়ল। ঘোড়া উট আর এক পাও এগুচ্ছে না। আবরাহা স্বয়ং ঘোড়ার পিঠে। হঠাৎ কিছু দেখা গেল আকাশে। এক ঝাঁক পাখি। আমাদের দেশে চড়ুই বাবুই পাখির মত ছোট্ট। প্রত্যেক পাখির মুখে একটা করে পাথর বা কঙ্কর। বহু উচু থেকে ঝাকে ঝাকে পাখি পাথর ফেলতে লাগল। আর আবরাহা ও তাহার সৈন্যদল ও হাতী সব চূর্ণিত ভূষির ন্যায় হয়ে মরে গেল। আল্লাহপাক তাঁরই সৃষ্ট জীবকে তারই বিরোধীতা করার কারণে তিনি মুহুর্তমধ্যে তাকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, সে শক্তি যে তার আছে আমাদের মত দূর্বলচিত্ত মনুষ্যগণকে অহরহ তা প্রত্যক্ষ করে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়।
গত রাতে নিদ্রা যাবার পূর্বে এই কাহিনীটি বলেছিলাম। আবরাহার কাহিনী বলবার সময় মন খেয়ালে চলে গিয়েছিল ১৫ শত বৎসর পূর্বের ঘটনাস্থল মক্কায়, এবং আকাশের উড়ন্ত কোটি কোটি আবাবিল পাখি কঙ্কর মুখে হস্তিপৃষ্ঠে আরোহিত স্বয়ং আবরাহা ও তার বিশাল সেনা বাহিনীকে প্রত্যক্ষ করছিলাম। ঘুমের মধ্যে সেই দৃশ্যটি রূপান্তরিত হয়ে আবাবিল পাখিগুলিকে ইন্ডিয়ান যুদ্ধ বিমানরূপে দেখতেছিলাম। আর আল্লাহর কুদরতির প্রভাবে মুহুর্তে সাইক্লোন উঠে সমস্ত বিমানগুলিকে ধ্বংস করে দিল। তা প্রত্যক্ষ করলাম। তবে এই স্বপ্নেরও একটা তাবীর আছে যা কেবল অভিজ্ঞ, স্বপ্নের ব্যাখ্যাদানকারী আলেম বা পন্ডিত ব্যক্তিই বলতে সক্ষম। আমাদের ন্যায় অজ্ঞ লোকের পক্ষে বলা মোটেই সম্ভব নহে। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড হয়তো এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন, কিন্তু বেচারা বহু আগেই গত হয়েছেন।
অনুলিখন: মাহফুজ
*মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত।
@ আরিফ
এই ফীল সবার মধ্যে জাগ্রত হোক।
যদিও ইতোমধ্যে মরহুম মোকছেদ আলী সম্পর্কে কিছুটা জানানো হয়েছে।
ধন্যবাদ মন্তব্যর জন্য।
অনেক দিন পরে মন্তব্য করছি।আমি মুক্তমনায় নিয়মিত আসছি না ব্যস্ততার কারণে, তবে এখানে একটি প্রসঙ্গ শ্রদ্ধেয় ফরিদ আহমেদের মাধ্যমে উঠে এসেছে যার প্রেক্ষিতে কিছু বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনারা আমার ক্ষেত্রেও খেয়াল হয়ত করেছেন সম্প্রতি আমি নিজের পোস্ট ছাড়া খুব কম জায়গায়ই মন্তব্য করেছি। এর কতিপয় কারণ বিদ্যমান ছিলঃ
এক। সার্বক্ষনিক নেট সংযোগের অভার,
দুই। আমার নিজস্ব কাজে প্রচন্ড ব্যস্ততা; এই কারণে দেখা গেছে কিছু পোস্ট দিলেও তাতে খানিক মন্তব্য করা ছাড়া বেশী কিছু করি নাই।
আমি বলতে চাচ্ছি যেহেতু আমি আমার ক্ষেত্রে মুক্তমনায় নিয়মিত না হওয়ার পেছনে এই কারণগুলো পেয়েছি তাই আমার মনে হয়েছে মাহফুজ সাহেবেরও এরকম কোন কারন থাকতে পারে যার কারণ তিনি পোস্ট দিলেও আর মন্তব্য করছেন না বা মন্তব্য করার সুযোগ পাচ্ছেন না(আমার ব্যক্তিগত মতামত, মনে হল তাই বল্লাম)। অন্য কারণ ও থাকতে পারে,জানি না।
আর আরেকটি কথা না বলেই নয়, লেখক লেখা দেন কিছু জিনিষ মানুষের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য, হোক তা আনন্দ না হয় জ্ঞান ( আনন্দই জ্ঞানের স্থায়ী উৎস)। পাঠকও তা পাঠ করেন আনন্দের খোরাক মেটাবার জন্যই; আর জানার অদম্য কৌতুহলই আনন্দ দানে একেবারে সিদ্ধহস্ত।তাই লেখার বিষয়ে অথবা লেখকের বিষয়ে (মানে লেখার প্রেক্ষাপটে লেখকের দর্শন অথবা চিন্তা ধারা ) বিষয়ে পাঠকের কৌতুহল মেটানো লেখকের দায়বদ্ধতার ভেতর চলে আসে। কারণ এই কাজ লেখক সম্পাদন না করলে লেখকের লেখনির মাধ্যমে আনন্দ সবার সাথে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়(কারণ, কৌতুহল না মিটলে পাঠক আনন্দও পায় না)।
তাই সকল লেখকেরই ব্লগে লেখা ছাড়ার আগে এই বিষয়টি মাথায় আনা উচিত। যদি লেখক দেখেন যে তিনি পাঠকের পিছনে সময় দিতে পারবেন না তাহলে তাকে লেখা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত, এমনকি মন্তব্য করা থেকেও, কারণ মন্তব্যের প্রতিউত্তরেও মন্তব্য আসতে পারে যার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে, যদি লেখকের সন্দেহ হয় তিনি এই প্রতিউত্তরের প্রত্তুত্তর দিতে পারবেন না তবে মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকা উচিত বলে আমার ব্যক্তিগত মত (জানি না কতটুকু ঠিক!)।
(আমি বিশেষ ব্যস্ত, তাই এই মত্তব্যের প্রতিউত্তরের প্রত্তুত্তর করা হয়ত হয়ে উঠবে না বলে আমি ক্ষমা প্রার্থী) :rose2:
@মুহাইমীন,
আপনি সুন্দরভাবে গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন। আপনার বেলায় যেমনটি হয়েছে। ঠিক আমার বেলায়ও তাই-ই ঘটেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি আপনার মন্তব্য পড়ে ফরিদ ভাইসহ অন্যরা আমাদের মানসিক কষ্টটা উপলব্ধি করে একটু সদয় হবেন।
লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। কিন্তু বার বার এক জায়গাতে ধাক্কা খাচ্ছি, যে কি বুঝলাম এখান থেকে।
কোরান এর গল্পের সাথে স্বপ্নের গল্প মিলে গেল, তাই স্বপ্ন ভিত্তিহীন।
অথবা, কোরান এর শক্তিমত্তা, স্বপ্নকেও প্রভাবিত করে।
অথবা, মানুষের দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনা স্বপ্নে প্রতিফলিত হয়।
অথবা, স্বপ্নের মিরাকল এর মত কোরানের মিরাকল ও অর্থহীন।
তবে এই স্বপ্নেরও একটা তাবীর আছে যা কেবল অভিজ্ঞ, স্বপ্নের ব্যাখ্যাদানকারী আলেম বা পন্ডিত ব্যক্তিই বলতে সক্ষম।
বড়ই জ্ঞানী কথা।
আমাদের ন্যায় অজ্ঞ লোকের পক্ষে বলা মোটেই সম্ভব নহে।
ওহু…। আমি এই অজ্ঞের দলে মোটেই নেয়। পরিষ্কার বুঝতে পারছি ঘুমের সময় পেটে গ্যাস জমছিল।
@হেলাল, :rotfl:
মূল লেখকের পরিচয় নিয়ে মতামত দিয়েছি। আমি লেখাকেই মূল্যায়ন করবো, তাই লেখকের পরিচয়ে তেমন আগ্রহী নই।
কিন্তু লেখকের মিথিস্ক্রিয়া হতাশাজনক, যেটা আরো কয়েকজনের মন্তব্যেও এসেছে। লেখক লেখা দিয়ে এবং সকলকে মন্তব্য করতে অনুরোধ জানিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় দশটির উপর মন্তব্য পড়লেও লেখকের কোন প্রতি মন্তব্য নেই। আমার মনে হয় মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারে লেখককে আরো যত্নবান হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এডমিনের পক্ষ থেকে কিছু বলা দরকার। অবশ্য এডমিনের চেয়েও বড় হচ্ছে পাঠকবৃন্দ এবং আশা করি লেখক পাঠকদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারে আরেকটু সচেষ্ট হবেন। তাহলেই পাঠক সংখ্যা বাড়বে, না হলে পাঠক যদি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সেটা পাঠকের দোষ হবে না।
@স্বাধীন,
এই অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে এই অভিযোগ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি। জীবনে যদি আকস্মিক বিপদ আসে, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সময় তো লাগবেই।
ফরিদ ভাই এর অভিযোগ সত্য। মাহফুজ সাহেব কেন যেন মোকছেদ আলীর পূর্ণ পরিচয় দেব দিচ্ছি করেও দিতে চান না। আমিও একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আরজ আলীর আত্মীয় কিনা জিজ্ঞাসা করায় সেটি নয় এটাই শুধু নিশ্চিত করেছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জন্মে, আর মাহফুজ সাজেব একাই এই মোকছেদ আলীর সন্ধান কেমন করে পেলেন সেটাও জানতে ইচ্ছে করে। অবশ্য আগে অন্য কেউ একজনও মোকছেদ আলীকে চেনেন এমন কিছু লিখেছিলেন।
আগের লেখাগুলোতে মন্তব্য করা হয়নি। আপনি লিখে চলুন আরো। মূল লেখককে যদি পরিচয় করাতে সমস্যা থাকে তবে মূল পরিচয় গোপন করে পাঠকের কাছে কিছুটা পরিচিতি দিতে পারেন তাহলে হয়তো আরো বেশি পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারবেন।
চমৎকার। লেখকের ঢং আমার পছন্দ হয়েছে — একটা খোলা ভাব, মৃদু রসিকতা, আত্ম-deprecation (বাংলা কি হবে?), ভাল লাগল।
অনেক দিন পর মোকছেদ আলীর লেখা পোষ্ট করলাম। পাঠকবৃন্দ একটু মন্তব্য করুন, যাতে পোষ্ট করতে উৎসাহিত হতে পারি।
@মাহফুজ,
দুঃখজনক হচ্ছে যে, এই উৎসাহিত করার কাজটা আপনাকেও খুব বেশি করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। নিজের লেখা ছাড়া আর কারো লেখাতেই আপনি মন্তব্য করেন না বোধ হয়।
যাইহোক, মোকসেদ আলী সম্পর্কে আমার একটা জিজ্ঞাস্য ছিল। আগে একবার আপনাকে প্রশ্নটা করেছিলামও। আপনি অস্পষ্ট একটা উত্তর দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
এই ভদ্রলোকের চরিত্রটা আমার কাছে পুরোপুরিই এক ধরনের ধোঁয়াশা, কুহেলিকা। কে এই ভদ্রলোক, কোথায় তাঁর নিবাস, মুক্তমনার সাথেই বা তাঁর কী সম্পর্ক এই বিষয়গুলো যদি একটু পরিষ্কার করতেন তবে মনে হয় তাঁর দর্শনগুলো বুঝতে একটু সুবিধা হত।
আর ও হ্যাঁ, আপনার সাথেই বা তাঁর কী সম্পর্ক? আপনি তাঁকে আবিষ্কার করলেন কীভাবে?
আশা করি এগুলোর উত্তর দিয়ে দীর্ঘদিনের কৌতুহলকে নিবৃত্ত করবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
আমিও একই প্রশ্ন করেছিলাম। মাহফুজ সাহেব বলেছিলেন, সময়ে জানা যাবে। সময়টা কখন, অপেক্ষা করছি। লেখাগুলোতে নতুনত্ব আছে। আমার পড়তে বেশ ভাল্লাগে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ভদ্রলোক পাবনা নিবাসী বলে মনে হচ্ছে। হমম… :-/ :guli:
@রৌরব,
না, মৌলভীবাজারে সম্ভবত। আচ্ছা, মাহফুজ ভাই ব্যাপারটা পরিষ্কার করছেন না কেন? একজন লেখকের লেখা দিচ্ছেন, তাঁর পরিচয়টা দেয়া কি উচিত না?
@সৈকত চৌধুরী,
না কাহিনীটার মধ্যে পাবনা আছে তাই বললাম।
রসিকতাটা মাঠে মারা গেল মনে হচ্ছে 😥
@রৌরব,
নিজেই হয়তো তিনি। একমাত্র তিনিই জানেন।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই
পরিচয়টা জানা কি খুব জরুরী? আমার তো মনে হয় মূল লেখকের পরিচয় না জেনেও লেখার মূল্যায়ন করতে পারি। মাহফুজ ভাই এখানেও ক্ষুদ্র একটি পরিচয় দিয়েছেন। মোকছেদ আলী (১৯২২-২০০৯)। স্বশিক্ষিত। আমি ওনাকে আরজ আলী মাতুব্বরের মতই কোন স্বশিক্ষিত হিসেবে কল্পনা করে নিচ্ছি। লেখার মাঝে মাতুব্বরের মত ভাব আছে। মজার ব্যাপার হল এরকম স্বশিক্ষিত মানুষ অনেক আছে বলে মনে হয়, শুধু আমরা তার খোজ জানি না। আমার নানার ছোট ভাই ছিলেন এমনই একজন মানুষ। সারাজীবন নানান বই পড়ে গিয়েছেন কসবার এক ছোট্ট গাঁয়ে। নাস্তিকতার জিন মনে হয় উনারা কাছ থেকেই পেয়েছি। উনি মারা যাবার আগে উনারা সব বই আমাকে দিয়ে গিয়েছেন। তাই বলছিলাম পরিচয়টা হয়তো জরুরী নয়। আর মাহফুজ ভাইকেও যদি কেউ কল্পনা করে নিতে চায়, তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু দিন শেষে লেখাকেই মূল্যায়ন করবো, তাই নয় কি?
@স্বাধীন,
পরিচয় জানাটাও যে খুব একটা অজরুরি তাও নয়। খেয়াল করলে দেখবেন যে, বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠিত পত্র-পত্রিকাতেই প্রবন্ধের নীচের দিকে লেখক সম্পর্ককে এক বা দুই লাইনের হলেও একটা পরিচয় দিয়ে দেওয়া হয়। বেনামিতে কোন প্রবন্ধ ছাপা হলেও সেক্ষেত্রে বলে দেওয়া হয় কী কারণে সেটা বেনামিতে ছাপা হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রকাশিত গ্রন্থেই ফ্লাপে লেখকের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকে।
মাহফুজ সাহেব অনেকদিন ধরেই মোকছেদ আলীর লেখা পোস্ট করছেন। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই মোকছেদ আলীকে নিয়ে পাঠকদের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে। আমিসহ অনেকেই জানতে চেয়েছি ওনার সম্পর্কে। মাহফুজ সাহেবের উচিত ছিল সেই কৌতুহলকে মিটিয়ে দেওয়া। কিন্তু তার বদলে তিনি বিভিন্ন ধরনের হেয়ালি করেছেন, নতুবা চুপ করে থেকেছেন। যা সত্যিই হতাশাজনক। এতে করে পাঠকের কৌতুহলতো মেটেইনি বরং আরো ধন্দে পড়ে গিয়েছেন সকলে। ফলে, মাহফুজ সাহেব নিজেই মোকছেদ আলী কি না এমন কথাও উঠে আসা শুরু হয়েছে।
ব্লগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে পাঠক লেখককে সরাসরি পেয়ে যান। ফলে, পাঠ পরবর্তী অনেক ভাবনা লেখকের সাথে ভাগাভাগি করতে পারেন, কিংবা কোন কৌতুহল থাকলে সেটা মিটাতে পারেন লেখককে প্রশ্ন করে জেনে নেবার মাধ্যমে। সেখানে লেখক যদি উত্তর না দেন বা হেয়ালি করেন তাহলেতো মুশকিল।
মাহফুজ সাহেবের ভাষ্য অনুযায়ী মোকছেদ আলী মারা গিয়েছেন। কাজেই, নিরাপত্তাজনিত কারণে তাঁর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে এমন মনে হয় না। মোকছেদ আলী সাহেবের পরিচয়ের সাথে মাহফুজ সাহেবের পরিচয়ও যদি সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আমি মনে করি, মাহফুজ সাহেবের পরিষ্কার করেই এ বিষয়টি বলা প্রয়োজন ছিল। তাহলে আর কেউ এ নিয়ে কথা বাড়াতো না।
মাহফুজ সাহেবের নীরবতা এই পোস্টেও প্রচন্ডভাবে পীড়াদায়ক। এই যে এখানেও এত আলোচনা হচ্ছে, অথচ তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। লেখাটা পোস্ট করে দিয়েই মনে হয় তিনি হাওয়া হয়ে গিয়েছেন।
@ফরিদ ভাই
আপনার সাথে দ্বিমত নেই এই ব্যাপারে। পোষ্ট দিয়ে লেখকের এই হাওয়া হয়ে যাওয়াটা মোটেই সমর্থন যোগ্য নয়। আমার মনে হয় মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটিতে মুক্তমনারও জোর দেওয়া উচিত। কেউ দু’একটি মন্তব্য করলেই সরাসরি তাকে একটি একাউন্ট দেওয়া উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু মন্তব্যের জন্য একাউন্ট দেওয়া যেতে পারে। এটা শুধু একটি সাজেশন, চিন্তা করে দেখা যেতে পারে।
তবে বলছিলাম যে পরিচয়টার ব্যাপারে জোর না করলেও পারি। মাহফুজ সাহেব নিজেই যদি মোকছেদ আলী হোন, তাতেও সমস্যা দেখি না। অনেকেই ছদ্ম নামে লিখি, উনি না হয় আরো একধাপ এগিয়ে থাকলেন, ক্ষতি কি। যতক্ষন না ছদ্ম নামে কোন গালাগালি কিংবা ব্যক্তিগত আক্রমন করছেন না ততক্ষন আমি কোন সমস্যা দেখি না।
যা হোক, আজ স্পেনের কি হলো?
@স্বাধীন, আমি নিঃসন্দেহ যে উনিই তিনি, এটা নিয়ে এত প্রশ্ন করার কি আছে, মজা করে শুধু পড়ে যাবেন।
আমার তো মনে হয় সমস্যা হচ্ছে না, প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠলে তিনি ঠিকই জবাব দিচ্ছেন, কৌশলে, …এমন হতে পারে যে তিনি বলতে পারেন, ‘…এ বিষয়ে লেখা একটি পান্ডুলিপি রয়েছে মোকছেদ আলীর, সেখানে তিনি বলেছিলেন…’
এই রহস্যটা থেকে গেলে তো ভালোই লাগে। অন্যরকম একটা মজা রয়েছে এতে। (অন্তত আমি মজা পাই, অন্য কেউ কি ফীল করে, জানিনা।)
@ফরিদ আহমেদ,
আমার দোষ ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। উপলব্ধি করতে পারছি যে বিষয়ে অন্যের কাছ আশা করি, সেটা আগে আমার করা উচিত। ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো আপনার এই পরামর্শ মেনে চলতে।
মোকছেদ আলী সম্পর্কে জানার কৌতুহল অনেকেরই আছে। তার লিখিত একটি আত্মজীবনী রয়েছে। আমি সেটি অল্প অল্প করে পোষ্ট করবো। আমি তার সমস্ত পাল্ডুলিপি এখনও পড়ে শেষ করতে পারিনি। তার লেখা পড়ে আমি নিজে মুগ্ধ হই। তাই তার লেখা পোষ্ট করি।
আমি নিজে বুঝি মন্তব্যের প্রতিত্তর দেয়া উচিত। কিন্তু কেউ তো জানে না গত দেড়টি মাস আমি কী ভীষণ কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছি। একটার পর একটা বিপদ এসে আঘাত হেনেছে। তারপরও মুক্তমনায় ঢুকেছি একটু সময় পেলেই। দু একটা লেখা পোষ্ট করেই হাওয়া হয়ে গেছি।
শর্ট সার্কিটে ছোট ভাইয়ের অফিস পুরে ছাই হয়ে গেল ৫ টি তিনটি কম্পিউটারসহ।
ঘনিষ্টজনের এক্সিডেন্ট। হাসপাতালে যাওয়া, খাবার তৈরী করা, কাপড় কাচা।
সাংসারিক দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে অর্থ উপার্জনের পেছনে দৌড়ানো।
এসবের মাঝেও মুক্তমনার ভাবনা মন থেকে মুছে যায়নি। শুধুই ভেবেছি, আর আফসোস করেছি- যদি মুক্তমনার লেখাগুলো পড়তে পারতাম।