১৫ই জানুয়ারি, ২০১০, বাংলাদেশের একদম দক্ষিণ-পূর্ব দিয়ে চলে গেল বলয় সূর্যগ্রণের ছায়া। বাংলাদেশের ভাগ্য ভাল যে ছ’মাসের মধ্যে পর পর দুটো সূর্য গ্রহণ হল। এর আগে আমি পঞ্চগড়ে পূর্ণগ্রাস নিয়ে লিখেছি। দ্বিতীয় গ্রহণটি অবশ্য বলয়গ্রাস যখন চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারে না।এই সময়ে চাঁদ পৃথিবী থেকে তুলনামূলক ভাবে দূরে থাকে এবং সূর্য কাছাকাছি থাকে। বাংলাদেশে এই শতাব্দীতে আর পূর্ণ গ্রহণ হবে না এবং পরবর্তী বলয় গ্রহণ হবে ২০৬৪ সালে। আমি কথা দিচ্ছি সূর্যগ্রহণ নিয়ে এটাই আমার শেষ ব্লগ। বাংলাদেশে অবশ্য হাতে-কলমে বিজ্ঞান চর্চার জন্য সূর্যগ্রহণ বিশেষ কাজে লাগে। এই ব্লগে ২৩টি ছবি আছে।

সূর্যগ্রহণের পথঃ চাঁদের প্রতি বা বিপরীত ছায়াটি (লাল বিন্দু) আফ্রিকা থেকে ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে বাংলাদেশের কোণ ঘেঁষে চীন হয়ে হলুদ সাগরে শেষ। উৎসঃ নাসা।
এই বলয়গ্রাস উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠন এক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে। সারা দেশে অনুসন্ধিৎসু আয়োজিত ২০টি ক্যাম্পের মধ্যে কক্সবাজার ছিল একটি। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। এই ক্যাম্পে কিছু চমৎকার অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফি ও বিজ্ঞানের কাজ হয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য প্রথম।

বিশাল সমুদ্রতীরে দুপুরবেলা সূর্যগ্রহণ দেখতে ব্যস্ত উৎসাহীরা। প্রায় ৫০টা প্রজেকশান দুরবিন বানান হয়েছিল। ছবিঃ নাজমুল হক।

অনুসন্ধিৎসু চক্রের তৈরি ৮-ইঞ্চি প্রতিসরক দুরবিন দিয়ে সূর্য দেখছেন দর্শকরা। দুরবিনের ওপর সৌর ফিল্টার। ছবিঃ আতাউল হাকিম।

গ্রহণ রেকর্ড করার জন্য যন্ত্রপাতি। নীল জিন্স পড়া তরিফ রশিদ শান্ত ধৈর্য নিয়ে সৌর দুরবিন দিয়ে ৩.৫ ঘন্টা ধরে সূর্যের ছবি তোলেন।

নুর হোসেন তার Nikon D-700, NIKOR AF 70-300mm D (ED) Lens with ও 2X Kanko converter দিয়ে ৪ ঘন্টা ধরে ছবি তুললেন।

বলয় গ্রহণ হচ্ছে। চাঁদ সূর্যকে যতটুকু ঢাকার ততটুকুই ঢেকেছে, পুরো ঢাকতে পারে নি। বলয় গ্রহণের এই পর্যায়টি দুপুর ২:৩টায় শুরু হয়ে ৪ মিনিট ৪৫ সেকেণ্ড স্থায়ী হয়। ছবিঃ নূর হোসেন।

বলয় গ্রহণের আর একটি ছবি আরো দক্ষিণে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ থেকে তোলা। কক্সবাজারের তুলনায় চাঁদ সূর্যের আর একটু মাঝামাঝি অবস্থায়। ছবিঃ নাইমুল ইসলাম অপু।
কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন্সে তোলা ছবির পার্থক্য মেপে সূর্যের ব্যাস নির্ধারণ করা যায়।

হলুদ রেখাটি সূর্যগ্রহণের সময় আলোর পরিমাণের হ্রাস দেখাচ্ছে। সাথে সাথে দুটি তাপমান যন্ত্রে, লাল (উন্মুক্ত আলোয়) ও নীল (ছায়াতে), তাপমাত্রার হ্রাস সুস্পষ্ট।

চাঁদের প্রথম স্পর্ষ থেকে একদম শেষ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় ধরে এই ছবিগুলো করোনাডো সৌর দুরবিন দিয়ে তুলেছেন তরিফ রশিদ শান্ত। এডিটিং করেছেন সাদ্দাম হোসেন।
দীপেন দা প্রথমত আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই ফটোব্লগটার জন্য। আপনি সময় নিয়ে, যত্ন নিয়ে এই আয়োজনটা মুক্তমনায় শেয়ার করলেন – এই কাজটা হয়তো আমাদের আগেই করা উচিত ছিলো। ও, জোবায়ের ভাইয়ের একটা ছবি ছিলো না, সৈকতে শুয়ে শুয়ে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের? ওটা থাকলে বেশ মজা লাগতো। দ্বিতীয়ত আপনার গবেষণা নিয়ে একটা পোস্ট চাই মুক্তমনাতে।
আপনার এই পোস্টটা সেই দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিলো … ভালো থাকুন।
ছবি আর লেখা অনবদ্য। আপনার লেখা ব্লগে প্রথম পড়লাম।খুবই ভালো লাগছে।
দীপেনদা যেভাবে চমৎকার সব ছবি দিয়ে এতো কষ্ট করে ফটোব্লগ তৈরি করছেন, তাতে উনাকে একটা স্পেশাল থ্যাঙ্কস না দিলে অন্যায়ই হবে।
ছবিগুলো যাতে এলবামের মতো দেখা যায়, কিংবা একটু ওভারলে আকারে দেখা যায়, তার ব্যবস্থা করা যায় কিনা – আজকে রাতে দেখব।
রামগড়ুড়ের ছানা নামের এক “বিস্ময় প্রোগ্রামার” কে নিছি এই কাজে – ব্যাটা খালি পরীক্ষার ছুতা দেখায় পালায় :-X । এইটা লিখলাম, কারণ ব্যাপারটা যদি রামগড়ুড়ের ছানাের উপর দিয়ে পার পাওয়া যায়, তাইলে বেশ ভাল হয়, হেঃ হেঃ …। 😀
@অভিজিৎ, ইস্পিশাল থ্যাঙ্কসের জন্য ধন্যবাদ 🙂 । এই ছবিগুলোর উন্নত রেজোলুশান যদি দরকার হয় বলবেন।
@ দীপেন ভট্টাচার্য
শেষ ব্লগ কেন? আপনার দেওয়া ছবিগুলো অপূর্ব, এরকম আরও অনেক ব্লগ দিলেই বরং খুশি হব।
@বন্যা আহমেদ,
মনে হচ্ছে ২০৬৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে 😛
@ দীপেন ভট্টাচার্য
আপনাকে এই মুহুর্তে ঈর্ষা করছি। কক্সবাজার যাই। অথচ এমন একটা অভূত পূর্ব দৃশ্য দেখার ভাগ্য হল না। কি আবাগি আমি। এক কথায় অপূর্ব দৃশ্য কল্পনা করা যায়না। সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হচ্ছে,অনেক কিছু নিয়েই লেখা হয়।একই বিষয় বস্তু নিয়ে এক থেকে একাধিক রচনা হয়। কিন্তু, আপনার লেখায়ই একমাত্র লেখা যার পেছনে আপনার অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধা অকাতরে বিলানো আছে। আর এই বিষয় নিয়ে কেউ কিছু লিখেছেন বলে আমার জানা নাই।
তবে,একটা কথা, আপনি লিখেছেন এইটাই সূর্য গ্রহন বা এই যাতীয় শেষ লেখা ।কেন?
এতো মূল্যবান লেখা থেকে আমাদের বঞ্চিত করলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। :-X
তা হলে আমরা যারা আপনার এই লেখার ভক্ত তারা :-Y :-Y
করব। মাথা ফাটানোর দায়ভার আপনাকে নিতে হবে। 😛 :guli:
@আফরোজা আলম, থাক, থাক, মাথা ফাটাতে হবে না 🙁 । সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে লিখব না বলেছি, অন্য ধরণের জিনিস নিয়ে লেখা যেতে পারে 🙂 । তবে (অন্য প্রসঙ্গে বলি) বিদগ্ধ মানুষজন কি বলে আর কি বিষয়গুলোকে আসলেই মূল্য দেয় তার মধ্যে হয়ত কিছু গরমিল আছে 🙁 । আর এই গরমিল থাকার জন্যই আমরা পৃথিবীর সাথে পেরে উঠি না। কিন্তু সেটা একটি ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আমার লেখার ওপর আপনার বিশ্বাস আছে বলে ধন্যবাদ। আপনার পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষা করছি।
@বন্যা আহমেদ, রৌরবের কথাটা একেবারেই খাঁটি 🙂 । তবে পৃথিবীর অন্য অনেক জায়গায় গ্রহণ তার আগে দেখা যাবে, কিন্তু সেটা বাংলাদেশের মত exciting হবে না। সহৃদয় মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সুন্দর এবং কৌতূহলোদ্দীপক। সাথে এটাও বুঝলাম শুধু হুজুগে হয়েই এখানে কাজ সারা যায় না। যাঁরা এই কর্মযজ্ঞের পেছনে জড়িত ছিলেন নিরলস অধ্যবসায় আর ঘরের খেয়ে বন্যমহিষ বিতাড়নের অদম্য স্পৃহায়, সবাইকে শ্রদ্ধা। এরকম ‘বাজে’, ‘ভাদাইম্যা’ লোকেদের জন্যেই বোধহয় সভ্যতা এগিয়ে গেছে অনেকদূর।
দীপেনদা, আপনাকেও পেন্নাম।
@ব্লাডি সিভিলিয়ান, আপনি আমার মনের কথাটি বলেছেন। হুজুগে কোন কিছু সৃষ্টি করা যায় না, তার পেছনে চাই ধৈর্য ও অধ্যবসায়। বাংলাদেশের পরিবেশে পয়সা ও “মুখেই মারিতং জগতের” উর্ধ্বে উঠে এই কিশোর/কিশোরী ও তরুণ/তরুণীরা যে সৃজনীশক্তি দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আর “পেন্নাম” বলে আমাকে লজ্জা দেন কেন, আমি ইতিবৃত্তকার মাত্র।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
আপনার ও আপনাদের কাজ,গবেষনা ও ছবিগুলি এক কথায় অনন্য :yes: :yes: :yes:
এ বিষয়ে আপনার লেখা ব্লগ হয়ত শেষ কিন্তু নতুন নতুন লেখা আপনার কাছ থেকে আমরা সবাই আশা করছি।
ভালো থাকবেন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন, হাতে-কলমে কাজের মধ্যে প্রচুর আনন্দ। আপনার উৎসাহী মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।